আমার লালন
আবুল আহসান চৌধুরী
ঐতিহ্য * 888sport app, ২০২৪ * ১১০০ টাকা
আমার লালন বইটি গবেষক ও অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর দীর্ঘ ৫০ বছরের লালনচর্চার ঋদ্ধ প্রতিফলন। বইটি বিন্যাসে, ভাষার সৌকর্যে ও গবেষণার সৌন্দর্যে অনন্য।
শুরুতে ‘বাউলের কথা, লালনের কথা’ পর্বে ‘বাউল’ শব্দের উৎপত্তি, জন্ম ও বাঙালি সমাজে বাউলমতের বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। জানা যায়, ‘বাউলের মত বা সাধনা শুধু যে বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনার ধারা বেয়েই জন্ম নিয়েছে তা কিন্তু নয়। বাউল মতের সঙ্গে বৌদ্ধ, ইসলাম ও হিন্দু – এই তিন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সহজিয়া রূপের সম্পর্ক আছে।’ মূলত ‘ইসলামিয়া সুফিবাদ ও বৈষ্ণব সহজিয়া ধারার মিলনে গড়ে উঠেছে বাউলধর্ম।’
বাউল সাধনায় যুক্ত বেশিরভাগ মানুষ ছিলেন নিম্নবর্গের। তাঁদের সংগীত ও সাধনার জীবনে অনেক বিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে। বইয়ের ভাষ্যমতে, ‘888sport apk ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন-উন্নতি আমাদের জীবন-যাপন পদ্ধতিতে এনেছে মৌলিক রূপান্তর। বস্তুবাদী চেতনা প্রচণ্ড আঘাতে ভাববাদের ভিত দিয়েছে নড়িয়ে। … বাউল বা সমজাতীয় সাধক সম্প্রদায়ের জন্যে এ বড় দুঃসময় – বলা যায় ক্রান্তিকাল।’ বাউল সাধনার ক্রমবর্ধমান সময়েও তাঁদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। ‘ভণ্ড ফকির’, ‘ব্রাত্য’, ‘কদাচারী’ এসব নানা মন্দ কথায় পর্যুদস্ত হতে হতো বাউলদের।
‘লালনজীবনের কথকতা’ পর্বে লেখক লালনের জন্ম, জীবন-কাহিনি, জন্মস্থান, সংগীত ও সাধন, মৃত্যু এবং তাঁর উত্তরাধিকার সম্পর্কে সুবিন্যস্ত আলোচনা করেছেন। একজন মানুষের জীবন কতটা বর্ণাঢ্য ও রহস্যাবৃত হতে পারে এই অংশে তা সবিস্তারে জানা যায়। লালন তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা, অনন্য সাধনা ও অপূর্ব গান রচনার মাধ্যমে দুই শতাধিক বছর পর আজো বর্তমান এবং প্রাসঙ্গিক। সমাজের ব্রাত্যজন থেকে শুরু করে ‘শিক্ষিত নাগরিক বিদ্বজ্জনকেও স্পর্শ ও প্রাণিত করেছে’ তাঁর সংগীত, সাধনা ও দর্শন। তাই বাঙালির জীবন ও সাধনায় লালন সাঁই অবিচ্ছেদ্য ও অমূল্য এক নাম।
ব্যক্তিজীবনে লালন ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ, সংস্কারমুক্ত ও প্রচারবিমুখ। তবে ‘তাঁর ধর্মচেতনা ছিল আনুষ্ঠানিক ধর্ম নয়, লোকায়ত মরমি-সাধনার অন্তর্গত।’ অনেকের মধ্যে লালনসাধনা নিয়ে ব্যভিচারের যে ধারণার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই লালন ও তাঁর সম্প্রদায়ের। বইয়ের ভাষ্যমতে, ‘বাউল-বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কেউ কেউ অনেক ক্ষেত্রে ধর্মসাধনার নামে ইন্দ্রিয়সুখের জন্য সাধুসেবায় যোগ দিয়ে যে অবাধ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, লালন ও তাঁর সম্প্রদায় সেই কলঙ্ক থেকে মুক্ত ছিলেন বলে হিতকরী পত্রিকা জানিয়েছে।’ তাই বলা যায়, ‘লালন ছিলেন পুণ্যাত্মা ও সচ্চরিত্রের অধিকারী।’
‘সাধক লালন’ পর্বে বাউল-মতবাদের উদ্ভব ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে জানা যায়। বাউলগানের শাব্দিক ব্যবহার, তত্ত্ব-দর্শন ও সাধনার ধারণাও পাওয়া যায় এই পর্বে। লালনের গানে ব্যবহৃত বিভিন্ন রূপক শব্দ দেহতত্ত্বের সন্ধান দেয়। মূলত ‘বাউলের সাধনা দেহকেন্দ্রিক।’ তাই ‘দেহঘরের বসতির পরিচয়-সন্ধানের ব্যাকুলতা লালনের গানে প্রকাশিত।’ ‘আমার এ ঘরখানায় কে বিরাজ করে’, ‘আমার ঘরের চাবি পরের হাতে’ বা ‘ঘরের মধ্যে ঘরখানা/ খুঁজে দেখ মন এই থানা/ ঘরে কে বিরাজ করে’ – ইত্যাদি গান দেহতত্ত্বের পরিচায়ক।
এছাড়াও লালন জাত-ধর্মের চিরায়ত বিভেদকে মানতে পারেননি। তিনি সবসময় ‘জাতপাত ও ছুঁতমার্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম করে এসেছেন।’ লালন সবসময় চেয়েছেন সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতার জীবনাচার। বিভেদ ও বিদ্বেষের যে বিভ্রম, তা থেকে তিনি ছিলেন বিচ্ছিন্ন। জাতধর্মের বিরুদ্ধে তাঁর উচ্চারণ ছিল বলিষ্ঠ।
জাত না গেলে পাইনে হরি
কি ছার জাতের গৌরব করি
ছুঁসনে বলিয়ে।
লালন কয় জাত হাতে পেলে
পুড়াতাম আগুন দিয়ে ॥
‘গানের লালন, প্রাণের লালন’ পর্বে লালনের গানের শব্দবৈভব ও রূপবৈচিত্র্যের যে অপূর্ব সংযোগ, তার পরিচয় পাওয়া যায়। ‘লালনের মতো একজন নিরক্ষর গ্রাম্য সাধককবির 888sport live chat-ভুবনে প্রবেশ করলে তাঁর অসাধারণ প্রতিভা বিস্ময় জাগিয়ে তোলে।’ তৎসম শব্দের ব্যবহার ছাড়াও ‘তাঁর শব্দ নির্বাচন ও প্রয়োগের নৈপুণ্য ও সচেতনতা লক্ষ করলে বিস্মিত হতে হয়।’
‘লালনের চিন্তারেখা’য় লেখক লালনকে ‘কালান্তরের পথিক’ বলে সম্বোধন করছেন। লালনের মুক্তচিন্তার যে চর্চা ও সাধনা, তা এখনো চলমান। লালন নৈরাজ্য ও বিভেদের বিপরীতে চেয়েছেন মানুষের চিরমুক্তি ও শান্তি। তিনি ‘জাত মানেননি, শাস্ত্র মানেননি, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে আস্থা ছিল না – কোনো সাম্প্রদায়িক পরিচয়েও মতি ছিল না। নির্বিচার অন্ধবিশ্বাসকে খারিজ করে সেখানে যুক্তিকে বসিয়েছেন।’ এছাড়াও এই পর্বে লেখক লালনের ঈশ্বর ও 888sport promo codeভাবনার মতো ‘ভারি শক্ত’ বিষয় নিয়ে সরল ও সুনিপুণ আলোচনা করেছেন। এমন দুরূহ বিষয়কেও সরল-সমীকরণ ও যৌক্তিক উপস্থাপনে বাক্সময় করে তুলেছেন আবুল আহসান চৌধুরী।
লালনচর্চার ধারা যেমন পুরনো, তেমনি এর বিরোধিতা এবং বিদ্বেষও পুরনো। কাঙাল হরিনাথ, মীর মশাররফ হোসেন, সরলা দেবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেকেই লালনের অনুসন্ধান ও চর্চা করে গেছেন। লেখক ‘লালনচর্চার পূর্বাপর’, ‘লালনের সন্ধানে বসন্তকুমার পাল’, ‘প্রসঙ্গ লালন : হিতকরী পত্রিকার 888sport world cup rate’ ইত্যাদি লেখায় সুবিন্যস্তভাবে লালনের অন্বেষণ ও অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে উঠে এসেছে ‘বাউল-বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ ও বাউল নিগ্রহের পরম্পরা’ও।
লালনচর্চার পরিধি কেবল লোকায়ত বাংলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং সমাজের বিদ্বজ্জনকেও স্পর্শ করেছেন লালন। একই সঙ্গে মরমি অনুভূতির অনন্য লালন 888sport app download apk latest version-সহযোগে বাংলার গণ্ডি অতিক্রম করে পৌঁছেছেন বিশ্বমঞ্চেও। কিছু লালন পদাবলির ভাষান্তর, লালনগীতির 888sport app download apk latest version প্রসঙ্গে লেখকের বয়ান ও মনের মানুষ live chat 888sportের সন্ধান দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘অনূদিত ও live chat 888sportায়িত লালন’ পর্বকে।
‘রবীন্দ্রনাথের লালন’ পর্বে ঠাকুরবাড়িতে বাউলগান, রবীন্দ্র-জীবন ও 888sport live footballে লালনের প্রভাব এবং রবীন্দ্রনাথের লালনচর্চাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখায়, গানে ও জীবনে লালনের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। ‘বাউলসংস্কৃতির প্রতি রবীন্দ্রনাথের আন্তরিক অনুরাগের কথা নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর গল্প-888sport alternative link-নাটক-888sport live-888sport app download apk-গানে বাউলের প্রসঙ্গ বারবার ঘুরে-ফিরে এসেছে।’ তাই ‘বাঙালি সমাজে লালন সম্পর্কে আগ্রহ জাগানোর জন্যে রবীন্দ্রনাথের চেষ্টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি লালনের গানের যে পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছেন, সেটিও পরবর্তী সময়ে লালনচর্চার প্রসারে ভূমিকা পালন করেছে।
লালন সাঁই, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ও মীর মশাররফ হোসেন – তিন নক্ষত্রের উদয় একই সময়ে, একই স্থান কুষ্টিয়ায়। এই ‘তিন ব্যক্তিত্বই গভীর প্রভাব রেখেছেন বাংলার মননে ও সমাজে।’ তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংযোগের গল্প করেছেন লেখক ‘তুলনামূলক আলোচনায় লালন’ পর্বে।
আমার লালন বইটি সমাপ্ত হয়েছে ‘লালন বিষয়ক আলাপন’ নামে অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর গৃহীত সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে। লালনকে ঘিরে যাঁদের জীবন, বাউল ও মরমি গানে যাঁরা পেয়েছেন মুক্তি ও যুক্তির উপাদান এবং লালনের সন্ধানে নিরন্তর যাত্রা যাঁদের, তাঁদের কথা ও অনুভূতি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই পর্ব।
অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর আমার লালন গ্রন্থটির মতো বাংলা 888sport live footballে লালনকে নিয়ে এমন অনুসন্ধিৎসু ও গবেষণালব্ধ কাজ অপ্রতুল। লালন যে কেবল কালের গণ্ডিতে আবদ্ধ নন, বরং সর্বকালের – এমন উপলব্ধি জাগায় বইটি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.