লালমোহন গাঙ্গুলী আর গড়পারের মানিক

একজনের উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, আর অন্যজন প্রায় সাড়ে ছ-ফুট! একজনের ইংরেজির নমুনা – ‘দি সার্কাস হুইচ এসকেপড্ ফ্রম দি গ্রেট ম্যাজেস্টিক টাইগার’ (ছিন্নমস্তার অভিশাপ) আর অন্যজনের ‘ব্যারিটোন’ ভয়েসে নিখুঁত সাহেবি উচ্চারণে রবীন্দ্রনাথ তথ্যচিত্রের ধারাভাষ্য শুনে নাকি প্রাচীনপন্থীরাও বিস্ময়ে বলেছিলেন – ‘ছোকরা ইংরেজিটা সত্যিই জানে বটে, সাহেবদেরও জুতিয়ে দিয়েছে।’ আপাতদৃষ্টিতে কোনোই মিল নেই এই দুজনের মধ্যে। সত্যজিৎ রায়ের অনবদ্য সৃষ্টি ‘জটায়ু’ ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলীর সঙ্গে তাঁর স্রষ্টার অমিল সুপ্রচুর। সে-কথা অনেকেই বলেছেন অবশ্য। সত্যজিৎ রায়ের জীবনী লিখতে বসে অরূপ মুখোপাধ্যায়ের যেমন মনে হয়েছে যে, ফেলুদা ‘সত্যজিতের alter ego বা দ্বিতীয় ব্যক্তিসত্তা’, আর জটায়ু? – ‘নিতান্ত সরল, সাদাসিধে ভদ্রমানুষের প্রতীক – কিছুটা কমিক রিলিফ।’ কিন্তু সত্যিই কি তাই? ‘চেহারায় খানিকটা তফাৎ থাকলেও, স্বভাবে আর রুচিতে এমন মিল যমজ ভাইদের মধ্যেও দেখা যায় কিনা সন্দেহ।’ – সন্দেশ পত্রিকায় ১৩৭৭-এর কার্তিক-অগ্রহায়ণ দু-কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের গল্প ‘রতনবাবু আর সেই লোকটা’। সে-গল্পে রতনবাবু খুঁজে পেয়েছিলেন ‘চেহারায়’ নয়, ‘স্বভাবে আর রুচিতে’ আশ্চর্য মিল তাঁর সঙ্গে, এমন একজন মানুষকে। গল্প তারপর কোনদিকে এগিয়েছিল, আপাতত তা আমাদের আলোচ্য নয়। আমরা শুধু বলতে চাইছি, এই যে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ফেলুদার হরেক মিল তো প্রায় সকলেরই চোখে পড়েছে। কেউ কি লক্ষ করেছেন, ‘চেহারায়’ নয়, কিন্তু ‘স্বভাবে আর রুচিতে’ এবং আরেকটু বেশি করে বংশপরিচয়ের দিক থেকে ‘জটায়ু’র সঙ্গে তাঁর স্রষ্টার আশ্চর্য মিলের দিকগুলিকে?

‘এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্স’

‘এবার কাণ্ড কেদারনাথে’ গল্পে অকৃতদার জটায়ুকে ফেলুদা পূর্বপুরুষদের কথা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই গড়গড় করে অনেকখানি ইতিহাস শুনিয়ে দেন লালমোহনবাবু। বলেন – ‘গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার ললিতমোহন ছিলেন পেপার মার্চেন্ট। এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্সের দোকান এই সেদিন অবধি ছিল। ভালো ব্যবসা ছিল। গড়পারের বাড়িটা এলএমই তৈরি করেন। ঠাকুরদাদা, বাবা দুজনেই ব্যবসায় যোগ দেন। বাবা যদ্দিন বেঁচে ছিলেন তদ্দিন ব্যবসা চালান। ফিফটি টুতে চলে গেলেন। তারপর যা হয় আর কি। এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্সের নামটা ব্যবহার হয়েছিল কিছুদিন, কিন্তু মালিক বদল হয়ে গেসল।’ সব্বোনাশ করেছে! এই যদি জটায়ুর পারিবারিক ইতিহাস হয়, তবে তো বলতেই হয় সত্যজিৎ রায়েরই ছদ্মনাম ‘জটায়ু’! কেন? বেশ, বুঝিয়ে বলা যাক। না, সত্যজিতের ‘গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার’ নয়, বরং তাঁর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীই গড়পারে পাকাপাকি বাসা বাঁধেন। ‘পেপার মার্চেন্ট’ ছিলেন না, তবে তাঁর ছাপাখানা ও প্রকাশনা সংস্থা ছিল বইকি। কী নাম ছিল তার? সত্যজিৎ তাঁর যখন ছোট ছিলাম বইয়ে লিখেছেন গড়পারের সেই বাড়ি আর ছাপাখানার কথা –

শুধু এ বাড়ি নয়, বাড়ির সঙ্গে আবার ছাপাখানা। ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর নিজে নকশা করে বাড়িটা তৈরি করে তাতে থাকতে পেরেছিলেন মাত্র বছর চারেক। … বাড়ির সামনের দেয়ালে উপর দিকে উঁচু উঁচু ইংরিজি হরফে লেখা ছিল ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স, প্রিন্টারস্ অ্যান্ড ব্লক মের্কাস’।

১৯১০ সালে উপেন্দ্রকিশোর এই প্রতিষ্ঠানটির সূচনা করেন। আর ১৯১৪ সালের শেষে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে নিজের নকশামাফিক তৈরি করা ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে’র ‘১০০ নম্বর গড়পার রোডে’র বাড়িতে সপরিবারে পাকাপাকিভাবে থাকতেও শুরু করেন তিনি আর লালমোহনবাবু? তাঁর ‘গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার’ ললিতমোহন গাঙ্গুলীর নামেই তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল ‘এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্স’ আর সেই ললিতমোহনের তৈরি করা গড়পারের বাড়িতেই এখনো অবধি বাস করছেন জটায়ু! কী বলবেন একে? নিছক মিল? নাকি শৈশবেই পৈতৃক বাড়ি থেকে স্থানচ্যুত সত্যজিতের এ এক অপূর্ণ বাসনা-স্বপ্নের আশ্চর্য পরিপূরণ?

শেষ নয় এখানেই। লালমোহনবাবু বলেন, তাঁর বাবা-ঠাকুরদা দুজনেই নাকি ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক! কারণ, সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় আর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, দুজনেই কিন্তু ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে’র কাজকারবার পুরোদমে দেখভাল করেছেন। প্রথমে ১৯১৫-য় উপেন্দ্রকিশোরের এবং পরে ১৯২৩-এ সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর কমে আসে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে’র ব্যবসাপত্র। লালমোহনবাবুও তাই বলেন – ‘বাবা যদ্দিন বেঁচে ছিলেন তদ্দিন ব্যবসা চালান। ফিফটি টুতে চলে গেলেন। তারপর যা হয় আর কি।’

জটায়ুর বাবা মারা যাওয়ার পর নাকি – ‘এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্সের নামটা ব্যবহার হয়েছিল কিছুদিন, কিন্তু মালিক বদল হয়ে গেসল।’ ফিরে তাকানো যাক উপেন্দ্রকিশোরের সাধের প্রতিষ্ঠান ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে’র শেষবেলার দিকে। পার্থ বসু তাঁর সত্যজিৎজীবনীতে জানিয়েছেন – ‘কোম্পানির এক ঘনিষ্ঠ কর্মী, অফিস-ম্যানেজার করুণাবিন্দু বিশ্বাস ১৯২৫-এ নামমাত্র মূল্যে নিলামপূর্বক প্রসেস বিভাগসহ ইউ রায় কোম্পানির নামের স্বত্ব কিনে নিয়েছিলেন। … মূল কোম্পানির নাম ব্যবহার করে করুণাবিন্দু অধিকাংশ বই ১৯৬০ পর্যন্ত প্রকাশ করে গেছেন।’ এজন্যই লালমোহনবাবুর বাবা ঠাকুরদার ‘এলএম গাঙ্গুলী অ্যান্ড সন্স’ও মালিকানা বদল হয়ে বেশকিছু বছর জীবিত থাকে।

বংশ-পরিচয়

গোঁসাইপুরের মল্লিকবাড়ি থেকে চিঠি এলে ফেলুদাকে দেখি বংশ-পরিচয় বইখানি খুলতে। না, এ-বই সত্যজিৎ-কল্পিত নয়। জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার-সংকলিত বংশ-পরিচয় বইটি খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩২৮ থেকে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের মধ্যে এগারোখানি খণ্ড যে বেরিয়েছিল, তা আমরা নিজেরাই দেখেছি। এ-বইয়ে থাকত 888sport appsের বিখ্যাত সব ‘বংশে’র ‘পরিচয়’। আচ্ছা, তাতে কি কোথাও আছে রায়-পরিবারের কথা? জানবার দরকার নেই, কারণ স্বয়ং জটায়ু লিখে গেছেন রায়েদের ‘বংশ-পরিচয়’!

জটায়ুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর জ্যাঠা ‘মোহিনীমোহন’ ছিলেন ‘হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার’। ছোটবেলায় লালমোহন তাঁর কাছে ‘আরণিকা রাসটকস বেলাডোনা পালসেটিলা’ যে কত খেয়েছেন ‘তার ইয়ত্তা নেই।’ সত্যজিতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর ‘ঠাকুর-দাদার বোন’ ‘সোনাঠাকুমা’র পরিবারের সঙ্গে। ‘সোনাঠাকুমা’র নাম মৃণালিনী বোস, যাঁর স্বামী ছিলেন সেকালের ‘কুন্তলীন’, ‘দেলখোস’ এবং ‘এইচ বোসেস রেকর্ডিং’খ্যাত এইচ বোস বা হেমেন্দ্রমোহন বসু। এই ‘কুন্তলীনে’র কথা আজীবন মনে ছিল সত্যজিতের। যখন ছোট ছিলামে লিখেওছেন সে-কথা – ‘হেমেন বোসের ছিল পারফিউমারি বা গন্ধদ্রব্যের কারবার।

কেশে মাখো কুন্তলীন

রুমালেতে দেলখোশ,

পানে খাও তাম্বুলীন

ধন্য হোক এইচ বোস।

– এই চার লাইনের 888sport app download apk দিয়ে বিজ্ঞাপন বেরোত তখন কাগজে কাগজে।’ জীবনের উপান্তে ১৯৯০-তে সত্যজিৎ লেখেন ‘নয়ন রহস্য’। এই গল্পে তারকনাথ ঠাকুর ওরফে ‘টি.এন.টি’ বলে – ‘আমার অঢেল টাকা। … কিসের টাকা জান? গন্ধদ্রব্য। পারফিউম। কুন্তলায়নের নাম শুনেছ?’ বোঝো কাণ্ড! এইচ বোসের ‘কুন্তলীন’ হলো ‘নয়ন রহস্যে’র  ‘কুন্তলায়ন’। সত্যজিৎ কী জানতেন না এই এইচ বোসের জ্যাঠা ‘মোহিনীমোহন’ বোসের কথা, যিনি, পার্থ বসুর ভাষায় – ‘এই দেশে প্রথম হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন।’

লালমোহনবাবুর এই ‘হোমিওপ্যাথি’ করা জ্যাঠার – ‘ছেলে নেই, তিন মেয়ে, তিনজনের স্বামীই ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন।’ সত্যজিতের বংশলতিকার দিকে তাকালে টের পাওয়া যায়, উপেন্দ্রকিশোরের তিন ছেলে সুকুমার-সুবিনয়-সুবিমল, আর তিন মেয়ে সুখলতা-পুণ্যলতা আর শান্তিলতা। হিতেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী উপেন্দ্রকিশোরের 888sport sign up bonusচারণ করতে গিয়ে তাঁর মেয়েদের সম্বন্ধে লিখেছেন – ‘সুখলতার ডাকনাম ছিল হাসি – বিয়ে হয়েছিল কটকের ডাক্তার জয়ন্ত রাওয়ের সঙ্গে। পুণ্যলতার বিয়ে হয়েছিল অরুণ চক্রবর্তীর সঙ্গে – উনি বিহার এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে ছিলেন; আর শান্তিলতার বিয়ে হয়েছিল প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে – ইনি sericulturist ছিলেন।’ ভারতবর্ষময় ছড়িয়ে ছিলেন উপেন্দ্রকিশোরের তিন মেয়ে, ঠিক জটায়ুর জ্যাঠতুতো বোনেদের মতোই!

শুধু পিতৃকুল নয়, লন্ডনে ফেলুদাতে লালমোহনবাবু তাঁর মাতৃকুলেরও সংবাদ দিয়েছেন – ‘দাদামশাই নাকি খানত্রিশেক ওস্তাদী গান রেকর্ড করেছিলেন।’ সত্যজিৎ রায়ের প্রমাতামহ কালী নারায়ণ গুপ্ত ছিলেন সুগায়ক। তিনি ‘ভক্তিসংগীত’ রচনা করতেন এবং পার্থ বসু জানাচ্ছেন – ‘স্বয়ং ব্রহ্মনাথ কীর্তন’ করতেন। মোদ্দা কথা, সত্যজিতের ‘বংশ-পরিচয়’কে আত্মসাৎ করেই জটায়ুর জন্ম।

শুধু ‘বংশ-পরিচয়’? সত্যজিতের একজন প্রিয় মানুষের বিশেষ 888sport sign up bonusও কি ক্রিয়াশীল থাকেনি জটায়ুর নির্মাণে? সত্যজিতের প্রিয় দাদু ছিলেন ‘ধনদাদু’ ওরফে কুলদারঞ্জন রায়। একবার ‘আরা’তে ঘুরতে গিয়ে সেই ধনদাদুকে এক ‘হিংস্র গরু’র মোকাবিলা করতে দেখেছিল ছোট্ট মানিক। যখন ছোট ছিলামে মিলবে সত্যজিতের সেই ফটোগ্রাফিক মেমোরির বর্ণনা – ‘দাদু গরুর দিকে মুখ করে দুপা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে হাতের লাঠিটা এরোপ্লেনের প্রপেলারের মতো বন বন করে ঘোরাচ্ছেন, … দাদুর এই তেজ পাগলা গরু মিনিটখানেকের বেশি সহ্য করতে পারেনি।’ মনে পড়ছে, ‘নেপোলিয়নের চিঠি’ গল্পে সাধন দস্তিদারের পাঠানো গুণ্ডাদের কীভাবে জব্দ করেছিলেন জটায়ু? – ‘মোক্ষম ওয়েপন এই হামানদিস্তা’, বললেন লালমোহনবাবু, ‘হাতে নিয়ে মাথার উপর তুলে হেলিকপ্টারের মত বাঁই বাঁই করে ঘুরিয়ে গেলাম। আমার ধারেকাছেও এগোয়নি একটি গুণ্ডাও।’ ফেলুদার এ-কথা নিশ্চয় 888sport app download for androidে ছিল। ছিল বলেই ‘এবার কাণ্ড কেদারনাথে’তে জটায়ুকে ফেলুদা বিপদহরণ-বুদ্ধি বাতলেছিল – ‘আপনি আপনার ওই হাতের লাঠিটা প্রয়োজনে পাগলা জগাইয়ের মতো মাথার ওপর ঘোরাবেন।’ ১০০নং গড়পার রোডের মানিকের সঙ্গে গড়পারের বাসিন্দা লালমোহন গাঙ্গুলীর বংশগত আত্মীয়তা বেশ লতায়-পাতায়।

‘ছেলেবেলার দিনগুলি’

রায়-পরিবারের সকলেই তাঁদের আশ্চর্য রঙে-রসে ভরা ছোটবেলার গপ্পো শুনিয়েছেন আমাদের। পুণ্যলতা চক্রবর্তী, নলিনী দাস, লীলা মজুমদার – সকলেই। তার মধ্যেও সত্যজিতের শৈশব888sport sign up bonusর উদ্যাপন যখন ছোট ছিলাম – সে এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। জটায়ুর ‘ছেলেবেলার দিনগুলি’র মধ্যেও ভরা রয়েছে গড়পারের মানিকের 888sport sign up bonus।

জয় বাবা ফেলুনাথ 888sport alternative linkের কাশীর গলিতে ‘কালো গোরু’ দেখে লালমোহনবাবু বলেন – ‘এথিনিয়াম ইনস্টিটিউশনে হাইজাম্পের রেকর্ড ছিল মশাই আমার। তারপর একবার ডেঙ্গু হয়ে বাঁ হাঁটুটা …।’ সামান্য ডানবামের পার্থক্য, নইলে এ তো সত্যজিতের জীবনেরই ঘটনা – ‘ছেলেবেলায় ডেঙ্গু নামে এক বিটকেল অসুখে আমার ডান পা-টা কমজোর হয়ে যাবার ফলে আমি লম্ফ-ঝম্পে কোনদিনই বিশেষ পারদর্শী হতে পারিনি।’

যখন ছোট ছিলমেই আছে সত্যজিতের ছেলেবেলায় সার্কাস দেখার খবর – ‘তখনকার দিনে হার্মস্টোন সার্কাসে সাহেবরা খেলা দেখাত।’ এ-সার্কাস কি আর সত্যজিৎ একলা দেখেছেন নাকি? ছিন্নমস্তার অভিশাপে শুনি লালমোহনবাবুর ছোটবেলায় সার্কাস দেখার 888sport sign up bonusকথা – ‘ছেলেবেলায় হার্মস্টোন আর কার্লেকার সার্কাসে যা ট্র্যাপিজ দেখিচি তা ভোলবার নয়।’ সাঁতারেও এঁদের দুজনের ভারি মিল। হত্যাপুরীতে জটায়ু বলে – ‘দেখো তপশে, তোমাদের বয়সে রেগুলার সাঁতার কেটেছি। আমার বাটারফ্লাই স্ট্রোক দেখে লোকে ক্ল্যাপ পর্যন্ত দিয়েছে।’ এতটা নয়, তবে সাঁতারটা ভালোই জানতেন সত্যজিৎ, তা যখন ছোট ছিলাম থেকে জানা যায় – ‘বকুল বাগানে থাকতেই প্রথম সাঁতার শিখতে যাই পদ্মপুকুরে ভবানীপুর সুইমিং ক্লাবে।’

এই বাল্য888sport sign up bonusর সূত্রেই মনে আসে সন্দেশের কথা। উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার-সুবিনয়-সম্পাদিত সন্দেশের সঙ্গে বাল্যেই ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে গেছিল গড়পারের মানিকের – ‘একতলায় ছাপাখানায় সন্দেশ ছাপা হচ্ছে, তার তিন রঙের মলাট ছাপা হচ্ছে, একথা আমার পরিষ্কার মনে আছে।’ সন্দেশের টান এড়াতে না-পেরেই রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষে সন্দেশ পুনঃপ্রকাশ করলেন সত্যজিৎ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। ‘বৈষয়িক দিক থেকে’ খুব একটা ‘সুবিধা’ না-হলেও দীর্ঘ আড়াই দশক সন্দেশ সম্পাদনায় রত রইলেন সত্যজিৎ। এই সন্দেশের সঙ্গে কোনো যোগ আছে কি জটায়ুর? ‘গোঁসাইপুর সরগরম’ থেকে আমরা জানি তুলসী চক্রবর্তী, যিনি জটায়ুর পূর্বপরিচিত, তাঁর দু-একটি গল্প সন্দেশে বেরিয়েছে। না, জটায়ুর নিজের কোনো লেখা প্রকাশিত হয়নি বটে, তবে জটায়ু যে সন্দেশ পড়তেন তা আমরা জানি। কীভাবে?

সন্দেশে বেশকিছু পুনর্মুদ্রণ করেছিলেন সত্যজিৎ – ‘… আমরা যেটা আরম্ভ করেছিলাম পুরনো প্রথম পর্যায়ের সন্দেশ থেকে কিছু লেখা নতুন ‘সন্দেশ’-এ ছাপাতে লাগলাম। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ ছিল যে এখনকার ছেলেমেয়েরা কিভাবে নেবে। কিন্তু দেখা গেল সেগুলো ভীষণ পছন্দ করত ছোটোরা।’ সুকুমার রায়ের সম্পাদিত সন্দেশে যেমন ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল প্রিয়ম্বদা দেবীর পঞ্চুলাল (১৩২৫-২৬)। এটি ছিল কার্লো কল্লোদির বিখ্যাত পিনোচ্চিত্ত কাহিনির বঙ্গানুবাদ। প্রিয়ম্বদা দেবীর এই 888sport app download apk latest versionটি ধারাবাহিকভাবে আবার সন্দেশে প্রকাশিত হয় ১৩৭০ বঙ্গাব্দের ভাদ্র থেকে পৌষে (সেপ্টেম্বর ১৯৬৩-ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪)। পঞ্চুলালের রোমাঞ্চকর জীবনকথার শেষ পর্যায়ে পাই – ‘পঞ্চু তো মাছের পেটে বন্দী, কে তাকে উদ্ধার করবে? প্রথমে অন্ধকারে পঞ্চু কিছুতেই দেখতে পায়নি, তারপরে খানিক বাদে হঠাৎ দেখলে, যেন আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।’

১৯৮৯-তে লন্ডনে যাওয়ার পথে লালমোহনবাবু প্লেনে উঠে সিটবেল্ট বেঁধে বলেন – ‘সেই পঞ্চুলালের গল্পে পড়েছিলাম না – তিমি মাছের পেটে ঢুকেছিল পঞ্চু – এও যেন সেই তিমি মাছের পেট।’ প্রিয়ম্বদা দেবীর পঞ্চুলাল, সত্যজিৎ-সম্পাদিত সন্দেশ ছাড়া আর কোথায়ই বা পড়বেন জটায়ু? মোদ্দাকথা, ছেলেবেলার দিনগুলিতে সত্যজিৎ যা-কিছু দেখেছেন শুনেছেন শিখেছেন পড়েছেন, তার সবটা দিয়েই গড়ে তুলেছেন জটায়ুকে।

সোনায় সোহাগা

নয়ন রহস্যে জটায়ুকে বলা ফেলুদার কথাগুলো মনে পড়ে? – ‘আপনি-আমি ত পরস্পরের পরিপূরক। সোনায় সোহাগা।’ কথাগুলো লালমোহনবাবুকে স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও বলতে পারতেন; এতটাই আশ্চর্য সমান্তরাল স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির জীবনযাপন।

১৯৮৬-এর দেশে দার্জিলিং জমজমাট প্রকাশিত হয়। তাতেই জটায়ু বলেন – ‘ধূমপান করতুম এককালে’, হাত কাচলাতে কাচলাতে বললেন লালমোহনবাবু, ‘কিন্তু সিগারেট ছেড়েছি দশ বছর হল।’ তার মানে জটায়ু সিগারেট ছেড়েছেন আনুমানিক ১৯৭৫-৭৬ সাল নাগাদ। আর বাস্তবে? বিজয়া রায় তাঁর 888sport sign up bonusকথায় লিখেছেন – ‘ওঁর ব্লাডপ্রেসারটা বেড়েছে। সিগারেট খাওয়া চলবে না। … উনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিগারেট ছেড়ে পাইপ ধরেছেন।’ কবে সিগারেট ছাড়লেন সত্যজিৎ? পার্থ বসু সত্যজিৎ-জীবনীতে জানাচ্ছেন, ১৯৭৫ থেকে সত্যজিৎ সিগারেট ছেড়ে পাইপ ধরেন – ‘নভেম্বর ১৯৭৪-এ উডল্যান্ড নার্সিং হোমে সত্যজিতের শরীরে এক অস্ত্রোপচার হয়। … সিগারেট ছেড়ে সত্যজিৎ এবার পাইপ ধরলেন।’ ১৯৭৫ নাগাদ সিগারেট ছাড়েন সত্যজিৎ। ফলে ১৯৭৫-এই সিগারেট ছাড়তে হয় লালমোহনবাবুকেও।

সিগারেট ছাড়ায় যেমন, শাল ব্যবহারেও তেমনি জটায়ু সত্যজিতেরই প্রক্ষেপ। বিজয়া রায় লিখেছেন – ‘একটা বিষয়ে ওঁর শৌখিনতা লক্ষ করেছিলাম। শালের ব্যাপারে। ওঁর ঠাকুরদাদার একটা ভারী সুন্দর শাল ছিল, সেটা প্রায়ই শীতের সময় নেমন্তন্ন-বাড়িতে যাবার সময় গায়ে দিতেন।’ এর সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যাক গোলাপী মুক্তা রহস্যের জটায়ুর বর্ণনা – ‘লালমোহনবাবু  একটা নকশাদার কাশ্মিরী শাল চাপিয়েছিলেন, বললেন সেটা ওঁর ঠাকুরদাদার ছিল।’ আগেই বলেছি আমরা ‘স্বভাবে আর রুচি’তে জটায়ু সত্যজিতের ‘যথার্থ দোসর’।

সৃষ্টি আর স্রষ্টার জীবনের আশ্চর্য সামীপ্য আমাদের হতচকিত করে! জটায়ুর লেখা বইয়ের অনুপ্রাসিত শিরোনামের সঙ্গে স্বয়ং সত্যজিতের ফেলুদা-গল্পমালার গ্রন্থনামের মিল চোখ এড়াতে পারে না। অনায়াসে মিলে যায় ‘করাল কুম্ভীর’ আর কৈলাসে কেলেঙ্কারির লেখকযুগল। এমনকি নামের মিল রয়েছে দুজনের গোয়েন্দাযুগলেরও : প্রদোষ মিত্র আর প্রখর রুদ্র। এহ বাহ্য। মিল আরো গভীরে। ফেলুদার গল্পগুচ্ছে বারবার ফিরে এসেছে জটায়ুর রোজগারের প্রসঙ্গ। শকুন্তলার কণ্ঠহারে যেমন শুনি – ‘রোজগারের দিক দিয়ে লালমোহনবাবুকে টেক্কা দেওয়া মুশকিল। একবার বলেছিলেন ওঁর বইয়ের থেকে বার্ষিক আয় নাকি প্রায় তিন লাখ টাকা।’ এর সঙ্গে একটু মিলিয়ে পড়া যাক বিজয়া রায়ের আমাদের কথা থেকে শ্রীরায় এবং শ্রীমতী রায়ের মন্তব্যগুলি – বললাম, ‘টাকা তো আসে তোমার গল্পের বই থেকে। … বই না-লিখলে যে সংসার চলত না, এটা তুমি নিজেও স্বীকার করেছ।’ … ‘বই ছেপে বিক্রি হয়ে আসতে লাগল টাকা। গোটা সংসার তাতেই চলেছে।’ … ‘বই বিক্রির টাকা তো কম পাই না আমি, তাতেই তো সংসার চলে যায় …।’ বই-বিক্রির থেকে টাকা আসত, সংসার চলত, কারণ সত্যজিতের বইয়ের অসম্ভব জনপ্রিয়তা। পার্থ বসু তাঁর সত্যজিৎ-জীবনীতে লিখেছেন – ‘তারপর থেকে সত্যজিতের যে-কোনো বই ‘বেস্ট সেলারে’র প্রথমদিকেই জায়গা পায়!’ ‘জনপ্রিয় লেখকের বিনয় কিংবা সত্যকথন’ নামে এক রচনায় সমরেশ মজুমদার সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে লেখেন – ‘একথা তো নির্দ্বিধায় বলা চলে, তিনি বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। প্রতি সপ্তাহের বেস্ট সেলার লিস্টে তাঁর নাম প্রথমে থাকে। দশ হাজার বই মাত্র কয়েক মাসে বিক্রি হয় তাঁর।’ আর জটায়ু? রবার্টসনের রুবিতে তিনি নিজেই নিজের সম্বন্ধে বলেছেন – ‘বাংলার জনপ্রিয়তম থ্রিলার রাইটার।’ এতেই ফেলুদা জটায়ুর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – ‘জনপ্রিয়তায় উনি নাম্বার ওয়ান বললে বেশি বলা হবে না।’ আর ‘এবার কাণ্ড কেদারনাথে’তে শুনি – ‘পয়লা বৈশাখ জটায়ুর ‘অতলান্তিক আতঙ্ক’ বেরিয়েছে, আর আজ পাঁচই বৈশাখের মধ্যেই নাকি সাড়ে চার হাজার কপি বিক্রী হয়ে গেছে।’

একেই বলে শুটিং

নিজেকে 888sport live footballিক বলতে আপত্তিই ছিল সত্যজিতের। মনেপ্রাণে তিনি জড়িত ছিলেন live chat 888sport পরিচালনার সঙ্গে। ক্যামেরা থেকে সংগীত – live chat 888sportের সকল ক্ষেত্রেই অনায়াস পদচারণা করেছে সত্যজিৎ-প্রতিভা। সে-প্রতিভার লেশমাত্রও কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব লালমোহন গাঙ্গুলীর মধ্যে?

প্রথমে সংগীতের কথা। দার্জিলিং জমজমাটে পুলক ঘোষালের কথা শুনে লালমোহনবাবু বলেন – ‘পাখোয়াজের বোলটা পর্যন্ত এখনো মনে আছে, – ধা ধা ধিন্তা কত্তা গে, গিন্নী ঘা দেন কর্তাকে! – ওঃ! সে কি …, ভোলা যায়?’ ‘পাখোয়াজে’র ‘বোলটা’ ভুলতে পারেননি লালমোহনবাবু। ভুলবেনই বা কি করে! সুবিমল রায়ের ডায়েরি উদ্ধৃত করে পার্থ বসু তাঁর সত্যজিৎ-জীবনীতে জানিয়েছেন সেই না-ভোলার রহস্য – ‘ইতিমধ্যে সত্যজিৎ সকালে সময় পেলেই একটি ছোট ঘরে পাখোয়াজ বাজানোর অভ্যাস করতেন। সুবিমল রায়ের জুলাইয়ের প্রথমদিকের ডায়েরিতে দেখা যাচ্ছে, ‘৬ জুলাই ১৯৬২। মানিক ছোট বসবার ঘরে একা ব’সে পাখোয়াজ বাজাচ্ছে। কিছুদিন ধরে অভ্যাস করছে।’

এবার নাটক-সিনেমার কথা। দার্জিলিং জমজমাটে পুলক ঘোষালের মুখে শুনি  লালমোহনবাবুর অভিনয়-দক্ষতার খবর – ‘নাইনটিন সেভেনটিতে গড়পারে ফ্রেন্ডস ক্লাবে ‘ভূষণ্ডীর মাঠে’ প্লে হয়েছিল। … আপনি তাতে নদু মল্লিকের পার্ট করেছিলেন, …।’ নামটা অবশ্য ‘নাদু মল্লিক’, একটু গণ্ডগোল করেছে পুলক ঘোষাল। কিন্তু আসল কথা এই যে, ‘ভূষণ্ডীর মাঠে’র নাদু মল্লিক আসলে ভূত! ১৯৭০-এ লালমোহনবাবু সেই ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, আর তার ঠিক আগের বছর, মানে ১৯৬৯-এ সত্যজিৎ রায় গুপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমায় ভূতের রাজাকে তাঁর সেই বিখ্যাত ‘ব্যারিটোন’ কণ্ঠস্বর ধার দিয়েছেন! কী আশ্চর্য সমান্তরাল মানিক আর জটায়ুর জীবনকথা!

গড়পারের লালু আর মানিকের বন্ধুত্বের গভীরতা টের পাওয়া যায় নেপোলিয়নের চিঠি থেকেও। তাতে জটায়ু বলে – ‘নাটকও হয়েছে একটা গল্প থেকে। গড়পারের রিক্রিয়েশন ক্লাব করেছিল সেভেনটি এইটে।’ সে না-হয় হলো। কিন্তু এর সঙ্গে সত্যজিতের সম্পর্ক কোথায়? হিতেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁর 888sport sign up bonusকথায় জানাচ্ছেন – ‘আমি নাটক লিখতে ভালবাসি বলে মানিককে (সত্যজিৎ) মাদ্রাজ থেকে লিখলাম তার লেখা প্রফেসর শঙ্কুর ‘গোলক রহস্য’ গল্পের নাটক লিখে সেটা মঞ্চস্থ করতে চাই। তার উত্তরে মানিক আমাকে লিখল, ‘নেপাল কাকা, তোমার চিঠি পেলাম, তুমি আমার গল্প থেকে নাটক লিখবে সে তো আনন্দের কথা। … প্রফেসর শঙ্কুর গল্প মঞ্চস্থ করলে আমি সুখীই হব।’ এই নাটক কবে মঞ্চস্থ হয়েছিল? হিতেন্দ্রকিশোরের 888sport sign up bonus অনুসারে ‘কলা-মন্দিরে’ গোলক-রহস্য মঞ্চস্থ হওয়ার দিন সত্যজিৎ উপস্থিত থাকতে পারেননি কারণ – ‘কলা-মন্দিরের দিন সে ‘সতরঞ্চ কে খিলাড়ি’র শুটিংয়ে লখনৌ ছিল।’ পার্থ বসুর জীবনী অনুসারে লখনৌতে সত্যজিৎ সতরঞ্চ কে খিলাড়ির শুটিং করেন ১৯৭৭-এর জানুয়ারি নাগাদ। তার মানে সত্যজিতের গল্প থেকে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে ১৯৭৭-এ আর ‘রিক্রিয়েশন ক্লাব’ জটায়ুর গল্পের নাট্যরূপ অভিনয় করেছে ১৯৭৮-এ। বোঝো কাণ্ড!

সিনেমার সুবাদে জটায়ু আর সত্যজিতের মিল আরো গভীরে। ১৯৭৪-এ সত্যজিৎ প্রদোষ মিত্রের গল্প নিয়ে তৈরি করেন সোনার কেল্লা সিনেমাটি। ব্যস্, অমনি ১৯৭৬-এ জটায়ুর বোম্বাইয়ের ‘বোম্বেটে’ নামক গল্পও live chat 888sportায়িত হয়। ১৯৭৯-তে সত্যজিৎ তৈরি করেন ফেলুদা-সিরিজের দ্বিতীয় ছবি জয় বাবা ফেলুনাথ। আর ১৯৮৬-তে জটায়ুর নরকের নাম কারাকোরাম বইটি live chat 888sportে রূপান্তরিত হয়। সেই live chat 888sportায়নের গল্প আমরা শুনেছি দার্জিলিং জমজমাটে। এরপর ১৯৮৮-তে মারা গেলেন পর্দার ‘জটায়ু’ সন্তোষ দত্ত। সত্যজিতের সখেদ মন্তব্যের কথা জানাচ্ছেন পার্থ বসু – ‘আর ফেলুদার গল্প ছবি করা যাবে না। কারণ ওকে ছাড়া আর কাউকে জটায়ু আমি চিন্তাও করতে পারি না।’ ফলে সত্যজিৎ আর ফেলুদার গল্প নিয়ে কোনো সিনেমা বানালেন না। জটায়ুর গল্প থেকে তৈরি-সিনেমার 888sport free betও ওই ‘দুই’তেই আটকে রইল। জীবদ্দশায় ১৯৮৮-র পর আরো ছটি ফেলুদা-888sport alternative link লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়। কলম তাঁর হাতেই ছিল, তবু জটায়ুর গল্প থেকে আর সিনেমা হলো না! বোঝা যায়, ‘জটায়ু’ তাঁর স্রষ্টার কত গভীরে বসত করেন।

এই সিনেমার সূত্রেই মানিক-লালুর আরেক আশ্চর্য মিলের কথা বলা যাক। ১৯৭৫-৭৬ জুড়ে চলে সত্যজিতের একমাত্র হিন্দি পূর্ণদৈর্ঘ্য live chat 888sport সতরঞ্চ কে খিলাড়ির শুটিংপর্ব। আর যাবে কোথায়! অমনি জটায়ুর গল্পও হিন্দি ফিল্মের জন্য বিক্রি হয়ে গেল আর তার থেকে সিনেমাও তৈরি হলো পুলক ঘোষালের পরিচালনায়। ১৯৭৬-এর ফেলুদা-কাহিনি বোম্বাইয়ের বোম্বেটেতে মিলবে তার সবিস্তার বিবরণ। অনেক পরে ১৯৮৭-তে অবশ্য দ্বিতীয়বার জটায়ুর গল্প হিন্দি live chat 888sportে ব্যবহার হলো। দার্জিলিং জমজমাট বইতে তার উল্লেখ মেলে। আর সে-সময় সত্যজিৎ কী করছেন? ১৯৮৬ সালে দূরদর্শনের জন্য হিন্দিতে সন্দীপ রায় বানালেন সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস্ আর ১৯৮৭-তে এর দ্বিতীয় পর্ব – সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস-২। এই দ্বিতীয় পর্বেই ছিল প্রথম হিন্দি ফেলু-কাহিনি – কিস্সা কাঠমান্ডুকা। অসুস্থ শরীরেও এর চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ। জটায়ুর দ্বিতীয় হিন্দি live chat 888sportের রহস্য এবার বোঝা যাচ্ছে কি?

খেল খতম্!

সত্যজিতের সঙ্গে জটায়ুর শরীরে-মনে অমিলটা এত সহজে চোখে পড়ে যে, মিল খুঁজে পাওয়ার চিন্তাই মাথায় আসতে চায় না! অথচ মিল যে কত গভীরে তাও আশা করি বোঝানো গেছে। পূষণ গুপ্তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় জানান – ‘আমার ‘সোনার কেল্লা’র প্রতি একটা দুর্বলতা আছে, কারণ সেখানেই প্রথম জটায়ুর আবির্ভাব।’ সংগত এই ‘দুর্বলতা’ কারণ, ‘জটায়ু’ তো সত্যজিতেরই আরেক পরিচয়, তাঁর সত্তারই এক ভিন্নধর্মী প্রকাশ। সেই গোপন বোঝাপড়ার কথাটা আরেকভাবে লক্ষ করা যাক। ১৯৩৬ সালে প্রায় পনেরো বছর বয়সে ‘ম্যাট্রিক’ পরীক্ষা পাশ করেন গড়পারের মানিক। শেষ হয় তাঁর ছোটবেলা; শেষ হয় সেই ছোটবেলার গপ্পো যখন ছোট ছিলাম। 888sport sign up bonusর ভাণ্ডার হাতড়ে যেসব মানুষের, যেসব ঘটনার কথা তিনি শোনান সে-বইতে, সেসব ঘটনা ও মানুষের ‘888sport sign up bonus’ই কী সম্ভাবিত করে তোলেনি গড়পারের লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে ‘জটায়ু’কে? নচেৎ ওই ১৯৩৬ সালেই কেন জন্ম নিলেন লালমোহনবাবু – ‘আমার জন্ম থার্টি সিক্সে’?

[বাংলা live chat 888sport ও 888sport live footballের কালজয়ী রূপকার সত্যজিতের জন্মশতবর্ষ চলতি বছর, ২০২১ সালে। তাঁর 888sport sign up bonus ও কর্মের প্রতি জানাই গভীর 888sport apk download apk latest version। ]

বই-পত্তর

১.        পার্থ বসু, সত্যজিৎ রায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৫।

২.       অরূপ মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় বিশ্বজয়ী প্রতিভার বর্ণময় জীবন, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৭।

৩.       হিতেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, উপেন্দ্রকিশোর ও মসুয়া রায় পরিবারের গল্পসল্প, ফার্মাকে এলএম প্রা. লি., কলকাতা, ১৩৯০।

৪.       দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়-সম্পাদিত, পরিকথা, মে ২০০৭, শিশু ও শিশুমন।

৫.       বিজয় রায়, আমাদের কথা, আনন্দ, কলকাতা, এপ্রিল ২০১৭। ৬.       সোমনাথ রায়-সম্পাদিত, এখন সত্যজিৎ, দশম বর্ষ, প্রথম-দ্বিতীয় 888sport free bet, ২০১৫, সাক্ষাৎকার 888sport free bet।