বদিউদ্দিন নাজির – কথাপ্রকাশ – 888sport app, ২০২২ – ৪৫০ টাকা
লেখকেরও প্রয়োজন আছে কিছু বিত্তের; তাঁরও অপরিহার্য খানিকটা বৈভব। লেখার জন্যে তাঁর ব্যক্তিগত প্রস্তুতিই সেই
বিত্ত-বৈভব। আর তা নিয়ে বেশ আটঘাট বেঁধেই একটি বই লিখেছেন গ্রন্থ-প্রকাশনা ও সম্পাদনার সঙ্গে পুরো কর্মজীবনজুড়ে সম্পৃক্ত লেখক-চিন্তক বদিউদ্দিন নাজির। বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি – তাঁর বইটির এ-নাম থেকেই পরিষ্কার, কী এর বিষয়-আশয়।
বলার বা লেখার অপেক্ষা রাখে না, একজন লেখকের লেখালেখির প্রস্তুতির সঙ্গে তাঁর বই প্রকাশের প্রস্তুতির বেশ দূরত্ব রয়েছে। বই প্রকাশের জন্যে লেখালেখির প্রস্তুতি অপরিহার্য, কিন্তু এর পরেও অনেক বিষয় রয়েছে যা সেই লেখাকে প্রকাশযোগ্য করে তোলে এবং পাঠকের কাছে নিয়ে যায়। অনেক লেখকই আছেন, কম বয়সেই যাদের পাণ্ডুলিপি আলোর মুখ দেখেছে – বই আকারে প্রকাশ পেয়েছে। আবার এমন লেখকও আছেন, পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করতেই যিনি মধ্যবয়সে পৌঁছেছেন; আছেন এমন অনেক লেখক – যাঁরা বই প্রকাশের প্রত্যাশা না করেই প্রস্তুত করে গেছেন একাধিক লেখার পাণ্ডুলিপি। মৃত্যুর পর বই প্রকাশ পেয়েছে, এমন লেখকের 888sport free betও একেবারে কম নয়। তো এসবের পরিপ্রেক্ষিত যাই হোক না কেন, কারণ যাই হোক না কেন, একটা বিষয় পরিষ্কার, লেখার প্রস্তুতি আর বই প্রকাশের প্রস্তুতির মধ্যে দূরত্ব রয়েছে এবং এই দূরত্বের কারণেই লেখালেখির ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও বই প্রকাশের বিষয়টি বিলম্বিত হতে পারে। দুইয়ের মাঝখানে একটি সেতু রয়েছে – সম্পাদনা। যেটি পোক্ত না হলে প্রকাশের চেয়ে বরং পাণ্ডুলিপি ফেলে রাখা ভালো। বদিউদ্দিন নাজিরের বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি বইটি পড়তে পড়তে এসব বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে থাকে আমাদের কাছে।
বাংলা ভাষায় প্রকাশনা 888sport live chatের বয়স নেহায়েত কম নয়। কিন্তু প্রকাশনা 888sport live chat আর গ্রন্থ-উন্নয়ন চিন্তার বিষয়টি যে একে অপরের পরিপূরক, এ-সত্যটি প্রথম থেকেই আমরা খুব হালকাভাবে নিয়ে আসছি। এই বাস্তবতা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না যে, বিশেষত বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে একটি কথা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বারবার আলোচিত হয়েছে যে, দেশের প্রকাশনা 888sport live chat তার মান হারাচ্ছে, প্রকাশিত বইয়ের পাণ্ডুলিপি অনেক ক্ষেত্রে উন্নত নয় এবং সম্পাদনা ছাড়াই বই প্রকাশিত হচ্ছে; আর এই সূত্রে থলের এই বেড়ালটাও বেরিয়ে আসছে যে, দেশে শক্তিশালী সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদেরই অভাব রয়েছে – যদিও বেশিরভাগ প্রকাশক এই অভাব কতটুকু অনুভব করেন, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এরকম প্রেক্ষাপটে বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি নামের বইটির প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
যিনি এ-বইটির লেখক, তাঁর নিজের দিক থেকে এই বই লেখার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বোধকরি, তাঁর সারা জীবনের অভিজ্ঞতা ও অর্জনের আলোকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া, যাতে কোনো লেখক তাঁর চিন্তিত ও লিখিত পাণ্ডুলিপিকে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চূড়ান্ত করতে পারেন। পাঠক ও প্রকাশকের দৃষ্টি আকর্ষণের উপযোগী করে তুলতে পারেন।
দুই
বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনা 888sport live chatের যাত্রা শুরু সেই ১৭৭৮ সালে, হ্যালহেডের ইংরেজিতে প্রণীত বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। তার পর মুদ্রণ ও প্রকাশনার উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যে তা অব্যাহত থাকবে, এতে কোনো সংশয়, সন্দেহ নেই। লেখার অপেক্ষা রাখে না, প্রকাশনা 888sport live chat এখনো এদেশে একটি শক্তিশালী 888sport live chat হিসেবে দাঁড়ায়নি। ফলে এ-888sport live chatের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যাঁরা জড়িত, সেই প্রকাশক-সম্পাদকদের অপ্রত্যাশিত সব সংকটে জড়িয়ে পড়তে হয় এবং সেগুলি থেকে উত্তরণের জন্যে নানা অচিন্তিত, অনির্ধারিত, অবিবেচিত পদক্ষেপ নিতে হয়।
এ-কারণে লেখকদের কেউই এখন পর্যন্ত শুধু লেখালেখিকেই একমাত্র পেশা হিসেবে গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেননি এবং অদূর ভবিষ্যতেও তেমন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। একটি 888sport live chat যখন বিকশিত হতে থাকে, সেই 888sport live chatে যখন ইতিবাচক সব সম্ভাবনা দেখা যায় কি অর্থনৈতিক বিবেচনায়, কি শৈল্পিক বিবেচনায়, তখন সেটিকে পরিচর্যা করার লক্ষ্যেও নানা চিন্তাভাবনা ঘটতে শুরু করে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, কেউ কেউ প্রকাশনা 888sport live chatকে ‘সম্ভাবনাময়’ বিবেচনা করলেও অনেক কারণেই অনেকে আবার এটিকে বরাবরই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ পেশা হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। যেমন লেখালেখিকেও এখনো অনেকেই সংগত কারণেই ‘অলাভজনক’ ‘বাস্তব জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কহীন’ একটি বিষয় বলে মনে করে থাকেন। এমন ঘেরাটোপে যত কথাই হোক না কেন, প্রকাশনা ও লেখালেখিকে ঘিরে প্রস্তুতিমূলক বইয়ের সংকটও 888sport appsে বেশ প্রকট। বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি বইটি পড়তে গিয়ে এবং নির্ঘণ্টতেও লক্ষ করেছি, এ-ধরনের অন্য কোনো বইয়ের বা লেখকের নাম বলা চলে অনুপস্থিত। হতে পারে, লেখক সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত এ-ধরনের অন্য সব বইকে একপাশে সরিয়ে রেখেছেন; এর বদলে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে যে প্রক্রিয়া আত্মস্থ করেছেন, তার ভিত্তিতেই বিষয়গুলিকে বিন্যস্ত করেছেন, মূলত নিজের ধারণাকেই বাস্তব উদাহরণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যে-কারণে এ-ধরনের অন্য কোনো বইয়ের তেমন কোনো সাহায্যের প্রয়োজনই পড়েনি। অথবা, হতে পারে, যে গুটিকয় বই রয়েছে, সেগুলিকে বদিউদ্দিন নাজির এত নিবিড়ভাবে আত্মস্থ করেছেন যে, উদ্ধৃতি দিয়ে, ফুটনোট দিয়ে কিংবা উদাহরণ আকারে উপস্থাপন করার প্রয়োজন পড়েনি। বরং মিথস্ক্রিয়া এত প্রবলভাবে ঘটেছে যে, পূর্ববর্তীদের কথাও নাজিরীয় আদল পেয়েছে। এ-বইটি পড়তে গিয়ে তাই আমার মতো লেখালেখিতে যুক্ত অনেকের নিশ্চয়ই বারবার মনে পড়বে, জসিম উদ্দীনের বাঙালির হাসির গল্প বইটির সেই নাপিতের কথা। মনে হবে, এতদিন লেখালেখি করেছি শুধু খানিকটা অভিজ্ঞতা ও চালাকির ওপর ভর করে গ্রামবাংলার সেই অজ্ঞ নাপিতের কুশলতা, ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতা দিয়ে। কিন্তু নিশ্চয়ই এই বই পড়ে ওঠার পর লিখতে গেলেই হাত কাঁপবে, প্রতিটি বাক্যেই থেমে যেতে হবে – কেননা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেই নাপিত যেমন ক্ষুর বসাতে গেলেই ভাবতেন, ঠিক জায়গায় কাটছি তো, ঠিক তেমনি আমাদেরও ভাবতে হবে, ঠিকমতো লিখছি তো?
অধিকাংশ আত্মোন্নয়নমূলক বইয়েরই একটি বড় দুর্বলতা হলো, ভাষার অসংলগ্নতা, অগোছালো বিন্যাস, প্রায়োগিক বিষয়গুলির বুনোটের দুর্বলতা, লাগসই তথ্য ও উদাহরণের সংকট। কিন্তু এ-বইয়ের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দিকটিই হলো, এটিতে এগুলি অনুপস্থিত। মোট ১১টি অধ্যায় রয়েছে বইটিতে। অধ্যায়গুলির একেকটির শিরোনামের ক্ষেত্রে একেক নামপুরুষ প্রধান হিসেবে বিবেচ্য হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো অধ্যায়েই ঘটেছে বই প্রস্তুতের প্রক্রিয়ায় জড়িত সবার মিথস্ক্রিয়া। ধরা যাক, প্রথম অধ্যায়ের কথা। এর শিরোনাম, ‘পাণ্ডুলিপির বিষয়ে প্রকাশকদের পছন্দ-অপছন্দ’। প্রথম অধ্যায়েরই এমন শিরোনাম হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে পড়ার আগে মনে হতে পারে, বইয়ের নাম বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি হলেও এটিতে বোধকরি প্রকাশকরাই গুরুত্ব পাচ্ছেন এবং লেখকদেরও এমন দীক্ষা দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা প্রকাশকের ও প্রকাশনার উপযোগী, আরো স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখার ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কিন্তু পড়ার পর উপলব্ধি করা যায়, এই অধ্যায়ের কেন্দ্রে প্রকাশক ও প্রকাশনা প্রসঙ্গ থাকলেও এটি মূলত প্রকাশক, লেখক ও পাঠকের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ারই বিবরণ। আমরা শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করি, বদিউদ্দিন নাজির এতে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের পাণ্ডুলিপির সঙ্গে, আমাদের অনুধাবন করতে সাহায্য করছেন সেই অমোঘ সত্য – কেন লেখকের কাছ থেকে একটি পাণ্ডুলিপির জন্যে প্রকাশক তৃষিত হয়ে ওঠেন, পাণ্ডুলিপির অন্তর্নিহিত কোন উপাদান প্রকাশককে লেখকের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন; একজন ভালো লেখক তাঁর লেখা দিয়ে এবং একজন ভালো পাঠক তাঁর পাঠরুচি দিয়ে প্রকাশককেই বা কীভাবে বিশেষ ধরনের পাণ্ডুলিপির ব্যাপারে আগ্রহী/ অনাগ্রহী করে তোলেন। পাণ্ডুলিপি প্রকাশের মুখ দেখার ক্ষেত্রে অর্থ বা টাকাও যে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে, সেটি আমরা জেনে যাই প্রথম অধ্যায়েই। বদিউদ্দিন নাজির এ-কাজটি করেন বোধকরি
এ-কারণেই যে, প্রথম অধ্যায় থেকেই একজন লেখক যাতে বুঝে নিতে পারেন সৃজনশীল হোক আর মননশীল হোক, স্পন্সরড হোক আর কমিশনড হোক, প্রকাশের জন্যে কোন ধরনের পাণ্ডুলিপি তিনি তৈরি করতে চান। তিনি আমাদের পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের প্রচলিত প্রকরণের কথা বলেন বটে, কিন্তু তাতে স্পষ্টতই থাকে এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ, যেগুলি মূলত একটি পাণ্ডুলিপিকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া। তিনি যে মূলত লেখকদের জন্যেই এই গৌরচন্দ্রিকা দিয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যায় দ্বিতীয় অধ্যায়েই যেটির শিরোনাম ‘লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা’। হ্যাঁ, লেখা আসলে অভ্যাসেরও ব্যাপার, যা মানুষকে গড়ে নিতে হয় নিবিড় অধ্যবসায়ের মধ্যে দিয়ে। কারণ লেখককে, এবং সম্পাদককেও বটে, চিন্তা করে দেখতে হয়, নিজেকে বর্ণনা করে দেখার মতো কোনো মেটাফোর তাঁর নিজের কাছে আছে কি না। তাঁকে এ-ও ভেবে নিতে হয়, তিনি সত্যিই এমন কোনো পথে তাঁর লেখার শুরুটা করতে পেরেছেন কি না, যা নতুন কোনো বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে ও করাতে সক্ষম। লেখকের সামনে এইসব প্রশ্ন দেখা দেয়, যেসবের উত্তর তাঁর নিজেরই জানা থাকে না। এমনকি প্রশ্নের উত্তর জানা দূরে থাক, এটিই তাঁর ধারণায় থাকে না যে, কোন ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। কিন্তু ধারণায় থাকুক বা না থাকুক লেখককে এ-ধরনের প্রশ্নে জর্জরিত করার সুযোগ কেউই ছাড়বেন না কিংবা লেখকের নিজের মনেও যদি এ-ধরনের প্রশ্ন জাগে, তা তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। এমনসব বিপদ ও চিন্তা থেকে লেখক কীভাবে মুক্ত হতে পারেন? এ নিয়ে ভাবতে আমরা পড়ে নিতে পারি এ-বইয়ের এক অধ্যায় – যেখানে লেখক ও লেখার গুপ্ত বিবিধ বিপদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তিন
প্রসঙ্গত মনে পড়ছে, এ-বইটিরই কোনো এক অধ্যায়ে বদিউদ্দিন নাজির লিখেছেন, বই লেখার মতো নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়ার মতো কষ্টকর কাজে একজন মানুষ কেন যুক্ত হয়, তা বুঝে নেওয়া রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। জর্জ অরওয়েলের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনিও মন্তব্য করেছেন, অবোধ্য, অপ্রতিরোধ্য কোনো দৈত্যই বোধকরি মানুষকে পরিচালিত করে এই কাজের দিকে। আর অবোধ্য, অপ্রতিরোধ্য সেই দৈত্যের সঙ্গে লেখকের ঐকতান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন আরো কিছু তূণ। কপিরাইটের বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি, আলোচনা করেছেন অনুমতিপত্রের ব্যাপারে। এইভাবে কেবল লেখা নয়, বইটির ভবিষ্যৎ ও লেখকের স্বার্থ নিশ্চিত করার প্রাথমিক বিষয়গুলির সঙ্গেও পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন তিনি আমাদের। বিশেষত মননশীল লেখক ও গবেষকদের তিনি পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন এমন খুঁটিনাটি বিষয়ের সঙ্গে, যেসব ক্ষেত্রে প্রায়শই ভুল হতে দেখা যায়। গবেষকরা থিসিস করেন, তা থেকে বই করতে চান; কিন্তু অনেকেই জানেন না, কিংবা মানতে চান না যে, থিসিস ও বইয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যও রয়েছে; বই করতে গেলে সেই পার্থক্য মেনে নিয়ে থিসিসের ওপর আরো কিছু কাজ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ-বিষয়গুলি নিয়ে বদিউদ্দিন নাজির আলোচনা করেছেন পুরো একটি অধ্যায়জুড়ে। সংগত কারণেই রিভিশন এবং সেলফ এডিটিংয়ের বিষয়টিও এসেছে তাঁর এ-বইয়ে। লেখার অপেক্ষা রাখে না, এ একজন লেখকের জন্যে কেবল প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্যও। বইটির শেষে পরিশিষ্ট হিসেবে রয়েছে কপিরাইট দলিলের নমুনা, পরিভাষা আর নির্ঘণ্ট।
নিঃসংশয়েই বলা চলে, প্রকাশক ও লেখকের মধ্যের এবং লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার বেশ স্পর্শকাতর সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ-বইটিতে। আর সেই আলোচনার জন্যে তিনি বিভিন্ন লেখক ও প্রকাশকের বক্তব্যও নিয়েছেন অকৃপণভাবে এবং নিয়মনিষ্ঠ রীতিতে। তবে উল্লেখ না করলেই নয়, আর তা হলো, বিশেষ ধরনের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে গ্রন্থচিত্রণের দিকটি, সেই সূত্রে লেখক, 888sport live chatী ও প্রকাশকের মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারগুলি বদিউদ্দিন নাজির তাঁর আলোচনায় আনেননি। অথচ অনেক বই-ই আছে, বিশেষত শিশুদের, যেগুলি রচনার আগেই লেখককে অলংকরণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হয়। হুগলিতে হ্যালহেডের ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশের প্রায় চার দশক পরে ১৮১৬ সালে বাংলা ভাষায় প্রথম সচিত্র গ্রন্থ প্রকাশের ঘটনা ঘটেছিল, যার পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানির ছাপাখানা থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানে বেরিয়েছিল ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের অন্নদামঙ্গল। এ-পর্যন্ত যেসব তথ্য মিলেছে, তাতে বলা চলে, এটিই বাংলা ভাষায় এবং বাঙালি 888sport live chatীদের চিত্রিত প্রথম বই। অর্থাৎ বাংলায় প্রকাশনা 888sport live chatের প্রায় প্রথম থেকেই অলংকরণের আবির্ভাব ঘটেছে। তার পর যত দিন গেছে, সকলেই উপলব্ধি করেছেন মানুষের শিখনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে এই অলংকরণের বিশেষ যোগ রয়েছে। গ্রন্থবিন্যাসে চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেমন রাখে পাঠকের উপলব্ধি ও অনুভবকে তীক্ষ্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে। কাজেই বই প্রকাশে লেখকের প্রস্তুতি বইটিতেও যদি বিষয়টির উল্লেখ থাকত, যদি এ ক্ষেত্রে লেখকের নিজ অভিজ্ঞতার বিবরণ থাকত, তা হলে নিশ্চয়ই পাঠক হিসেবে আমরা ঋদ্ধ হতাম। অবশ্য বদিউদ্দিন নাজির বলতেই পারেন, শ-দেড়েক পৃষ্ঠার পরিকল্পিত এ-বই শেষ হয়েছে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠায় গিয়ে … আর কত!? সেটি তিনি হয়তো ঠিকই বলেছেন, তবে এও তো ঠিক যে, ভালো খাবারের স্বাদ খাদককে আরো ক্ষুধার্ত করে তোলে।
সামগ্রিকভাবে এ-কথা নিশ্চয়ই বলা যায়, আত্মোন্নয়নমূলক একটি গ্রন্থকে বদিউদ্দিন নাজির রীতিমতো মননশীল গ্রন্থে উন্নীত করেছেন। তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন সেই পথরেখা – যে-পথে হেঁটে একজন লেখক সমৃদ্ধ হতে পারেন, লেখকের অপরিহার্য বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হতে পারেন। আমাদের মাতৃভাষায় লিখতে উৎসাহী নতুন নতুন প্রজন্মের কাছে এটি সব সময়ই অন্যতম উল্লেখযোগ্য বই হিসেবে বিবেচিত হবে, এতে কোনো সংশয় নেই।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.