শকুন্তলার বঙ্গায়ন ও সেলিম-সপর্যা

শকুন্তলা অর্দ্ধেক মিরন্দা, অর্দ্ধেক দেস্‌দিমোনা। পরিণীতা শকুন্তলা দেস্‌দিমোনার অনুরূপিণী, অপরিণীতা শকুন্তলা মিরন্দার অনুরূপিণী।

– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘শকুন্তলা, মিরন্দা এবং দেস্‌দিমোনা’, বিবিধ 888sport live

শকুন্তলা। নামটি শুনলেই আমাদের অনেকের মনে অচিনকালের এক অরণ্যবালার ছবি ভেসে ওঠে। কত বাঙালি বাপ-মা যে সাধ করে মেয়ের নাম শকুন্তলা রেখেছেন তার ইয়ত্তা নেই। অথচ শকুন্তলার সঙ্গে বাঙালির আলাপ অনেক দিনের নয়। ভারতের 888sport app অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ বা পশ্চিম প্রদেশ শকুন্তলাকে যেভাবে চেনে সেভাবে আমরা শকুন্তলাকে চিনি না। ভারতীয় পুরাণের কোষগ্রন্থ মহাভারতের আদিপর্বে শকুন্তলার কথা আছে। বাংলায় মহাভারত এসেছে কম-বেশি পাঁচশো বছর আগে। তুর্কো-আফগান সুলতানদের পৃষ্ঠপোষণায়। সে আমল থেকে সাহেবি আমল অবধি মহাভারতের বাংলা তরজমা হয়েছে এমন্তার। তার মধ্যে কাশীরাম দাসের মহাভারত আজো মহাসমারোহে টিকে আছে। তাতে যে-শকুন্তলাকে আমরা পাই তা মোটের ওপর ব্যাসের মহাকাব্যের সঙ্গে মেলে। তার কথা খানিক বাদে আমরা আলোচনা করব।

আরেকজন শকুন্তলাকে আমরা কিঞ্চিৎ বেশি চিনি। তিনি নাটকের শকুন্তলা। কালিদাসের সৃষ্টি। তাঁর বিখ্যাত নাটক অভিজ্ঞান  নামে সমাবেশিত করিবার অভিলাষ করে; তাহা হইলে, হে অভিজ্ঞান শকুন্তলা! আমি তোমার নাম নির্দেশ করি; এবং তাহা হইলেই সকল বলা হইল।’১

এই দরাজ দিলখোলা শংসাপত্র আজো শকুন্তলার গায়ে এঁটে আছে। গোটা উনবিংশ শতকজুড়ে ইংরেজ বা জার্মানরা তো বটেই, ফরাসিরা, এমনকি রাশিয়ানরাও শকুন্তলা নিয়ে কম আদিখ্যেতা করেননি। তাকে নিয়ে কত 888sport app download apk লেখা হয়েছে! কত ছবি আঁকা হয়েছে! ফ্রাঞ্জ শুবার্টের মতো জাঁদরেল জার্মান কম্পোজার তাকে নিয়ে অপেরা লিখতে শুরু করে শেষমেশ কুলিয়ে উঠতে পারেননি। রাশিয়ান ব্যালের জন্য তাকে নিয়ে লিব্রেটো লেখা হয়েছে। এমনকি মস্কো আর্ট থিয়েটারের রমরমার দিনে আলেক্সি টাইরভ নামে এক প্রতিভাধর রাশিয়ান নাট্যকার মস্কোর বুকে শকুন্তলার মঞ্চায়ন করেছেন। আমরা যারা কনস্টানটাইন স্তানিসস্নাভস্কির নামে জয়ধ্বনি দিই তাঁর মেথড অ্যাক্টিংয়ের আন্দাজেই এই রাশিয়ান 888sport app download apk latest versionের অভিনয় হয়েছিল এ-খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে সাতকাহন করার জায়গা এটি নয়, যাঁদের কৌতূহল প্রবল তাঁরা এ বিষয়ে বিদুষী রোমিলা থাপারের গবেষণাগ্রন্থটি২ উলটেপালটে দেখতে পারেন।

আমরা বরং বাংলায় ফিরি। বুঝতে চেষ্টা করি সাহেবদের কাছে কলকে পাওয়ার পর গঙ্গা-পদ্মাবিধৌত ভূমিতে শকুন্তলার খাতিরদারি কেমন হলো।

একটি কথা বলা হয়নি। উইলিয়াম জোনসের 888sport app download apk latest version যদি শকুন্তলার পালে হাওয়া আনে, তবে তাকে আরো মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিল ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বেরোনো মনিয়ের উইলিয়ামসের 888sport app download apk latest version। বাংলা লিপি নয়, সিধা দেবনাগরী থেকে তরজমা করেছিলেন বলে উইলিয়ামসের 888sport app download apk latest versionের মান্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাছাড়া ঔপনিবেশিক রাজনীতির চোখ ততদিনে খানিক বদলে গেছে। আবিষ্কারের নেশা ঘুচে গিয়ে উপনিবেশের পক্ষে যা যা দরকারি সেসব জিনিস ঝাড়াই-বাছাই চলছে। এই ধোপে শকুন্তলা যে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিল তা বলাই বাহুল্য! তবে ভিক্টোরিয়ান আমলের যে নীতিবাগীশরা প্রেমের সঙ্গে পরকীয়াকে হামেশাই এক করে দেখতেন, 888sport promo codeকে নজরবন্দি রাখাটাই যারা কাজের কাজ বলে জানতেন, তাদের চোখের বালি হয়েছিল শকুন্তলা। এদের মধ্যে সাহেবরা যেমন ছিলেন, তাদের কাছেপিঠে থাকা বাঙালিরাও ছিলেন।

বাংলায় তখন একদিকে ‘বাবু’ শ্রেণি, অন্যদিকে ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণির দাপট কায়েম হয়েছে। উভয় শ্রেণির কাছেই আদরণীয় হয়ে উঠল শকুন্তলা। টুলো প–তদের মাতববরি যত কমল, ইংরেজি শেখা মানুষের খবরদারি তত বাড়ল। এই বদলে যাওয়া সময়ের অভিজ্ঞান হয়ে উঠল কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম্। বঙ্কিমচন্দ্রের যে উক্তিকে শিরোভূষণ করে এই পরিচ্ছদের সূচনা হয়েছে তার মধ্যে প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি আবিষ্কারের যে-উন্মাদনা আছে তা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

 

দুই

কালিদাস তাঁহার এই আশ্রমপালিতা উদ্ভিন্ননবযৌবনা শকুন্তলাকে সংশয়বিরহিত স্বভাবের পথে ছাড়িয়া দিয়াছেন, শেষ পর্যন্ত কোথাও তাহাকে বাধা দেন নাই। আবার অন্যদিকে তাহাকে অপ্রগল্‌ভা, দুঃখশীলা, নিয়মচারিণী, সতীধর্মের আদর্শরূপিণী করিয়া ফুটাইয়া তুলিয়াছেন।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শকুন্তলা, আশ্বিন ১৩০৯

 

ব্যাসের মহাকাব্যের আদিপর্বে যে শকুন্তলা আছেন তার সঙ্গে বাঙালির নিবিড় পরিচয়ের কোনো সাক্ষ্য যে পাওয়া যায় না এ-কথা আমরা আগে বলেছি। কাশীরাম দাসের বাংলা বয়ানে লক্ষণীয় কোনো অদলবদল নেই। মৃগয়ায় বেড়িয়ে বনজঙ্গল ছারখার করতে করতে দৈবাৎ কণ্বমুনির আশ্রমে ঢুকে পড়েছেন রাজা দুষ্মন্ত। কণ্ব অনুপস্থিত। ঘটনাচক্রে আশ্রমকন্যা শকুন্তলার ওপর দায়িত্ব পড়েছে অতিথি সৎকারের। পয়ারের ছন্দে ফুটেছে অনুরাগের ছোঁয়া।

 

হেনকালে শকুন্তলা মুনির নন্দিনী।

পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তুষ্ট কৈল নৃপমণি \

দেখিয়া কন্যার রূপ নৃপতি মোহিত।

জিজ্ঞাসিল কন্যা প্রতি হয়ে বিমোহিত \

দুষ্মন্ত নৃপতি আমি শুন সুবদনি \

হেথা আইলাম আমি ভেটিবারে মুনি \

কোথায় গেলেন মুনি কহত সুন্দরি।

তুমি বা কাহার কন্যা কহ সত্য করি \

 

এভাবে যে-সংলাপ গড়ে উঠেছিল তার জল অনেক দূর গড়িয়েছিল। শকুন্তলা যে ঋষি বিশ্বামিত্র ও অপ্সরা মেনকার অদ্ভুত প্রণয়ের অলৌকিক সমন্তান সে-বিষয় জানার পর তাঁকে বিবাহপ্রস্তাব দেন দুষ্মন্ত। শকুন্তলাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে গান্ধর্ব বিবাহে রাজি করান। তবে শকুন্তলা রাজার প্রেমে পড়লেও তার কা-জ্ঞান লোপ  শকুন্তলমে্র নায়িকা। সন-তারিখ হলফ করে বলা না গেলেও নাটকটি খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যেই লেখা। পা-ববর্জিত বাংলায় অত তাড়াতাড়ি না এলেও সাতশো-আটশো বছর আগেই তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হওয়ার কথা। বাংলায় সংস্কৃতচর্চার সূচনাপর্বেই। কিন্তু সেই পরিচয়ের কোনো 888sport sign up bonus আমাদের নেই। মনে হয় প্রথম দর্শনে প্রেম হয়নি। কালিদাসের শকুন্তলাকে তখন আমাদের তেমন মনে ধরেনি। আকবর বাদশার আমলে আবুল ফজলের উদ্যোগে রাজভাষা ফারসিতে মহাভারতের তরজমা হয়েছে। নাম হয়েছে রাজমনামা। শোনা যায়, রাজকবি ফৈজিও নাকি এতে কলম চালিয়েছিলেন। এর কোনো পাতা সুবে বাংলায় এসে পড়েছিল বলে খবর নেই। শ-খানেক বছর বাদে আরেক মোগল বাদশা ফারুকশিয়ারের আমলে খোদ কালিদাসের নাটকের তরজমা হয়েছে ব্রজবুলিতে। নওয়াজ কাব্যেশ্বর নামে এক সামন্ত সভাকবির হাতে। সেসবও আমাদের গোচরে আসেনি। পরে সাহেবরা এ-দেশের দখল নিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবরা যখন নিজেদের গরজেই আমাদের দেশের পুরনো পুঁথিপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করলেন, সংস্কৃত আর ফারসির দিকে তাদের নজর গেল সবার আগে। কলকাতায় গড়ের মাঠে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ মাথা তুলল মূলত সাহেব-সুবোদের ভারতীয় রীতি-রেওয়াজ, আদব-কায়দা আর জবান শেখানোর জন্য। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে উর্দু শেখাতে এলেন মির্জা কাশিম আলি নামে এক যুবক। তাঁর ছদ্মনাম ছিল জওয়ান। কলেজের কর্তাব্যক্তিদের হুকুমে ওই ব্রজবুলি পুঁথির উর্দু তরজমা করলেন তিনি। ফারসি কেতায় দুরস্ত এই তরুণ অধ্যাপক যে 888sport app download apk latest versionটি করেছিলেন তাতে শকুন্তলা-দুষ্মমেত্মর প্রেমের আখ্যানের মধ্যে লায়লা-মজনু, শিরি-ফারহাদের দসত্মাঁন মিশে গিয়ে যে এক আশ্চর্য কা- হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। মুশকিল হচ্ছে এসব সাহেবদের জিম্মাতেই রয়ে গেছিল। বাঙালির হাতে আসেনি।

বদলটা এলো ইংরেজি তরজমার হাত ঘুরে। আজ থেকে ২৩৫ বছর আগে কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে এশিয়াটিক সোসাইটি গড়ে উঠল এসব পুঁথিপত্র নিয়ে গুছিয়ে চর্চার জন্য। তৈরি হলো একদল ইংরেজ, যারা কতক ঠেকায় পড়ে কতক প্রেমে পড়ে এই চর্চায় ডুবে গেলেন। ইতিহাস এদেরকে ‘ওরিয়েন্টালিস্ট’ তকমা দিয়েছে। এদের চর্চা থেকেই ‘ইন্ডোলজি’র সূচনাবিন্দু ধরার রেওয়াজ আজো চালু। এদের মধ্যে প–তচূড়ামণি ছিলেন এক ওয়েলশ সাহেব। নাম উইলিয়াম জোনস। তিনিই টুলো প–তদের কথায় কান দিয়ে, তাঁদের সাহায্য নিয়ে কালিদাসের ওই সংস্কৃত নাটকের একটি বাংলা পুঁথি আগাপাশতলা পড়েন। মুগ্ধ হন। শেকসপিয়রের খুব ভক্ত ছিলেন জোনস। শকুন্তলার মধ্যে মিরান্দা বা রোসালিন্ড-গ্যানিমিডের ছায়া তিনি দেখবেন তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে! মুগ্ধতার যখন সীমা-পরিসীমা রইল না তখন কালিদাসকে ‘দ্য ইন্ডিয়ান শেকসপিয়র’ বলতে তাঁর বাধল না। জোনস খুব তাড়াতাড়ি প্রথমে ল্যাটিনে, পরে ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version করে ফেলেন শকুন্তলার কথা ও কাহিনিকে। তবে হুবহু 888sport app download apk latest version নয়। একাধারে কোম্পানির বড়লাট, মেজলাট, ছোটলাট ও বিলেতি পাঠকদের পছন্দসই করে তোলার তাগিদ থেকে কালিদাসের রচনার যৌন আশেস্নষকে নিজের মর্জিমাফিক ছেঁটেকেটে নেন জোনস। শকুন্তলাকে গড়ে তোলেন কতক গাঁয়ের বঁধুর আদলে। লন্ডন থেকে সেই বই অর্থাৎ Sacontala or The Fatal Ring ছেপে বেরোয় ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে। মনে রাখতে পারি যে, ওই সময়ই 888sport live chatবিপস্নলবের ধাক্কায় টালমাটাল ইংল্যান্ডে এক নতুন 888sport live chatবিপস্নব দানা বাঁধছে, যার নাম রোমান্টিসিজম। আর এক অলৌকিক সমাপতনে ওই বছরই ছেপে বেরোচ্ছে উইলিয়াম বেস্নকের সংস অফ ইনোসেন্স অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স যাতে টেমসের ধারে মাথা তুলে দাঁড়ানো কলকারখানাকে ‘ডার্ক স্যাটানিক মিলস’ বলে গাল পাড়ছেন বেস্নক, কুলিবস্তির অলিগলিতে অল্পবয়সী মেয়েদের দেহব্যবসায় নামতে দেখে নষ্ট গোলাপের চিত্রকল্প খুঁজে নিচ্ছেন। এর উলটোপিঠে দাঁড় করাতে চাইছেন এক স্বর্গীয় ভেড়াকে। এমন সময় লন্ডনের বিদগ্ধ মহলে বনরাজিনীলা পৃথিবীর কোলে-কাঁখে বেড়ে ওঠা ও হরিণশিশুর খেলার সাথি শকুন্তলা এসে পড়ায় সোনায় সোহাগা হয়েছিল।

তারপর যা হয়েছিল তা অলোকসামান্য। চোখের নিমেষে শুধু ইংল্যান্ড নয়, গোটা ইয়োরোপ মাত করেছিল শকুন্তলা। শ-খানেক বছরের মধ্যে ল্যাটিন, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালিয়ান, এমনকি আইসল্যান্ডিকেও 888sport app download apk latest version হলো কালিদাসের নাটকের। কোনো কোনো ভাষায় একাধিক 888sport app download apk latest version হলো। এদিকে জার্মানদের সঙ্গে তখন ইংরেজদের দহরম-মহরম চলছে। ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে জোনসের 888sport app download apk latest version থেকে এই নাটকের জার্মান 888sport app download apk latest version বের করলেন গেয়র্গ ফরস্টার। পাঠালেন তাঁদের ভাষার কবিকুলপতি ইয়োহান উলফগাং ভন গ্যেটের কাছে। ভারতের সবকিছু সম্পর্কে গ্যেটে যে আহ্লাদে আটখানা হতেন এমন নয়। কিন্তু শকুন্তলা পড়ে তাঁরও মাথা ঘুরে যাওয়ার দাখিল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যে-চারটি লাইন লিখে ফেললেন গ্যেটে, তা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমের লেখাপড়ার দুনিয়াতে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের সমান মর্যাদা পায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 888sport app download apk latest versionে তা এ-রকম, ‘যদি কেহ বসমেত্মর পুষ্প ও শরদের ফল লাভের অভিলাষ করে, যদি কেহ চিত্তের আকর্ষণ ও বশীকরণকারী বস্ত্তর অভিলাষ করে, যদি কেহ প্রীতিজনক ও প্রফুলস্নকর বস্ত্তর অভিলাষ করে, যদি কেহ স্বর্গ ও পৃথিবী এই দুই এক  পায়নি। মাতৃত্ব তো বটেই, অনাগত সমন্তানের সামাজিক স্বীকৃতির কথাও মাথায় ছিল তার। বৈদিক যুগের স্বাধীনচেতা 888sport promo codeর মতো একটি শর্ত দিয়েছিলেন শকুন্তলা। রাজা কথা দিয়েছিলেন। তবেই শকুন্তলাকে নিজের করে পেয়েছিলেন তিনি।

 

রাজার বিনয় বাক্য শকুন্তলা শুনি।

রাজারে বলিল সত্য কর নৃপমণি \

বেদের বিহিত যদি আছে পূবর্বাপর।

গান্ধবর্ব বিবাহ হৈবে শুন নৃপবর \

আমার উদরে যেই জন্মিবে কুমার।

সত্য কর তুমি তারে দিবে রাজ্যভার \

কামে মত্ত ভূপতি করিল অঙ্গীকার।

গান্ধবর্ব বিবাহে হৈল মিলন দোঁহার \

তবে নরপতি কহে কন্যারে চাহিয়া।

রাজ্যেতে লইব তোমা লোক পাঠাইয়া \

 

কথা রাখেননি দুষ্মন্ত। পুত্র ভরতের জন্মের বেশ কিছুদিন পর তাকে নিয়ে হস্তিনাপুরের রাজসভায় গিয়েছিলেন শকুন্তলা। নিজের জন্য ততটা নয়, ছেলের পিতৃত্বের স্বীকৃতি আদায় করাই ছিল তার লক্ষ্য। ওদিকে দুষ্মন্ত পড়েছিলেন ফাঁপরে। গান্ধর্ব বিবাহের ঢালাও প্রচলন থাকা সত্ত্বেও নবজাতকটিকে নিজের ঔরসজাত হিসেবে মেনে নিতে তার রাজধর্মে বাধছিল। লোকে কী বলবে তা নিয়েও তার মাথাব্যথা ছিল খুব। ইচ্ছে করেই শকুন্তলাকে না চেনার ভান করেছিলেন তিনি। শকুন্তলাও ছাড়বার পাত্রী নন। সভার মধ্যে আচ্ছা করে দু-চার কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন দুষ্মন্তকে।

 

এত শুনি শকুন্তলা হইয়া লজ্জিত।

ক্রোধেতে অধর ওষ্ঠ সঘন কম্পিত \

পুনঃ ক্রোধ সম্বরিয়া বলে শকুন্তলা।

পূবর্বসত্য পাসরিলা রাজভোলে ভোলা \

কি বাক্য বলিলা রাজা, নাহি ধর্ম্ম ভয়।

তুমি হেন মিথ্যা বল উচিত না হয় \

দৈবে সেই সব কথা কেহ নাহি জানে।

আপনি ভাবিয়া রাজা দেখ মনে মনে \৩

 

এই বলে ছেলেকে নিয়ে সটান বনে ফিরে গিয়েছিলেন শকুন্তলা। পরে দৈব মধ্যস্থতায় ব্যাপারটি মিটে যায়। শকুন্তলা ক্ষমা করেন দুষ্মন্তকে। পাঁচশো বছর আগে সুবে বাংলায় 888sport promo codeর যা অবস্থান তাতে এমন স্বয়ংসিদ্ধাকে মেনে নেওয়া কিঞ্চিৎ কঠিন ছিল। আমাদের মঙ্গলকাব্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের যে মাত্রা বাঁধা আছে, যেখানে ‘আমার সমন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’ মাতৃত্বের চূড়ান্ত মহিমাকে প্রচার করে, সেদিকে নজর দিলেই শকুন্তলা কেন আদরণীয় হয়ে ওঠেননি তার হদিস মিলবে। অধিক বলা বাহুল্য মাত্র।

মহাকাব্যের এই আধার নিয়ে কালিদাস যখন অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ লিখলেন তখন শকুন্তলার গল্পের সঙ্গে আরো অনেক নাটকীয় উপাদান জুড়ে গেল। চেনা গল্প নিয়ে নাটক লেখার সুবিধে ষোলো আনাই উসুল করলেন কালিদাস। তাঁর পূর্বসূরি ভাসের মতোই। তবে আম-আদমির ওরাল ট্র্যাডিশনে যে মহাভারত ছিল, তাতে যে শকুন্তলা ছিলেন, তুলনামূলকভাবে রইসদের কোর্ট ট্র্যাডিশনে তাকে পালটে দিলেন কালিদাস। কাঠামো এক রেখে তাতে
রক্ত-মাংস জুড়লেন। যুগধর্মের দিকে খেয়াল রেখেই এ-কর্মটি তিনি করেছিলেন। নগরের উলটোপিঠে রাখলেন তপোবনকে। কালচারের সঙ্গে নেচারের আড়াআড়ি ঘটিয়ে দিলেন। নগরনাট্যের দাবিদাওয়া মেনে জুড়ে দিলেন কয়েকটি অনু-আখ্যান, যাদের সাবপস্নট বললে আমাদের চিনতে সুবিধে হবে। জাতকের গল্প থেকে নামমুদ্রার প্রসঙ্গ ধার নিলেন। ব্যাকট্রিয়ান গ্রিকদের কাছ থেকে ধার করলেন মাছের পেট কেটে আংটি উদ্ধারের গল্প। বন ছেড়ে যাওয়ার আগে শকুন্তলাকে নিজের ওই অভিজ্ঞান দিয়ে গেলেন দুষ্মন্ত। শচী সরোবরে চান করতে গিয়ে সেটি শকুন্তলার আঙুল থেকে খসে গেল। তার ওপর আমদানি করা হলো বদমেজাজি ঋষি দুর্বাসাকে। হুট করে কণ্বমুনির আশ্রমে এসে পড়ে শকুন্তলার কাছে যেমন খাতির তিনি চেয়েছিলেন, তেমনটি পেলেন না বলে দুর্বাসা অভিশাপ দিলেন যার কথা ভেবে অতিথি সৎকারের কথা ভুলে গেলেন শকুন্তলা, সে শকুন্তলাকে ভুলে যাবে। পরে ইন্দ্রকে দিয়ে দুর্বাসার অভিশাপ কাটালেন। রাজসভার জন্য লেখা নাটকে রাজা দুষ্মন্তকে ক্লিন চিট দেওয়ার জন্য যেন উঠেপড়ে লেগেছিলেন কালিদাস। তাকে মাথায় তুলে রাজচক্রবর্তী বানিয়েছিলেন। ব্যাসের শকুন্তলা কড়া ভাষায় তিরস্কার করেছিলেন দুষ্মন্তকে। মনুবাদী শাসনের শেকলে তাকে বেঁধে রেখেছিলেন কালিদাস। বহুগামী স্বামী ও পতিব্রতা স্ত্রীর পুরুষতান্ত্রিক ছাঁচে ঢালাই করেছিলেন দাম্পত্য প্রেমকে। ধর্মপত্নী হয়ে উঠেছিল শুক্র-রোপণের ক্ষেত্রমাত্র। তার ওপর মৃগয়াপর্বে বীররসের ভিয়েন চড়িয়েছিলেন। শৃঙ্গার রসের দোলায় মাতিয়ে দিয়েছিলেন। মিলন-বিরহ-মিলনের টানাপড়েনে গড়েছিলেন নাটককে। আর পরম কবিত্বশক্তি তো তাঁর ছিলই। নইলে এতশত লেখালেখির মধ্যে তাঁর নাটকটিই রয়ে গেল কী করে!

এই নাটকটিই উইলিয়াম জোনস, মনিয়ের উইলিয়ামসের হাত ঘুরে, গ্যেটের সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে শিক্ষিত বাঙালির হাতে এলো কম-বেশি দুশো বছর আগে। ততদিনে আমাদের পাঠশালা আর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার বারোটা বাজানোর জন্য যা যা করণীয় ছিল সবই প্রায় সেরে ফেলেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইংরেজদের হাতে চলে এসেছে শিক্ষাব্যবস্থার চাবিকাঠি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজদের গড়া সংস্কৃত কলেজে পড়েছেন, পরে পড়িয়েছেন। তাছাড়া ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে চাকরি করেছেন। অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ তাঁর বিলক্ষণ জানা ছিল। কালিদাসে তাঁর মুগ্ধতা
ছিল নিরঙ্কুশ। কিন্তু সাহেবদের তাঁবে থাকা স্কুল-কলেজে সংস্কৃত পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল তাঁকে। এই মর্মে ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বেথুন সোসাইটিতে ‘সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃত888sport live footballশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’ নিয়ে বলেছিলেন বিদ্যাসাগর। পরে তা পুস্তিকা হয়েও বেরোয়। তাতে জোনস, ফরস্টার আর গ্যেটেকে উকিল ঠাউরে কালিদাসের চরম স্ত্ততি করেন তিনি।

সংস্কৃতভাষায় যত নাটক আছে, শকুন্তলা সে সকল অপেক্ষা সর্বাংশে উৎকৃষ্ট, তাহার সন্দেহ নাই। এই অপূর্ব নাটকের, আদি অবধি অন্ত পর্যন্ত, সর্বাংশই সর্বাঙ্গসুন্দর। যদি শত বার পাঠ কর, শত বারই অপূর্ব বোধ হইবে। এই নাটক সাত অঙ্কে বিভক্ত। ইহাতে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার বৃত্তান্ত বর্ণিত হইয়াছে। প্রথম অঙ্কে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার সাক্ষাৎকার, তৃতীয় অঙ্কে উভয়ের মিলন, চতুর্থে দুষ্মমেত্মর প্রস্থান, পঞ্চমে শকুন্তলার দুষ্মন্তসমীপগমন ও প্রত্যাখ্যান, ষষ্ঠে রাজার বিরহ, সপ্তমে শকুন্তলার সহিত পুনর্মিলন; এই সকল স্থলে সহৃদয় ব্যক্তি ঐ সকল স্থল পাঠ করিলে, অবশ্যই তাঁহার অমত্মঃকরণে এই দৃঢ় প্রতীতি জন্মিবেক যে মনুষ্যের ক্ষমতায় ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট রচনা সম্ভবিতে পারে না। বস্ত্ততঃ, কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ অপূর্ব পদার্থ।৪

এর কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর হাত থেকে বেরোয় অভিজ্ঞান শকুন্তলমে্র গদ্য রূপান্তর। শকুন্তলা। বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলে যাঁরা ধন্য ধন্য করেন তাঁদের কাছে এই বইটি উৎকর্ষের এক পরাকাষ্ঠা। বিদ্যাসাগরের জীবৎকালে এই বইয়ের অজস্র সংস্করণ হয়েছে। শিক্ষিত বাঙালির ঘরে ঘরে ঠাঁই পেয়েছে। পরে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের নানা পাঠ্যপুস্তকে এই বইয়ের অংশবিশেষ শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা, ভরত ও দুষ্মমেত্মর মিলন এসব নামে সংকলিত হয়েছে। বাংলা হরফ চেনার প্রাইমার হিসেবে বর্ণপরিচয় বা একটু বড়ো ছাত্রছাত্রীদের বেলায় শকুন্তলা দ্রম্নতপঠন হিসেবে বিদ্যাসাগর পাঠ্যসূচিতে থাকলেও পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস ছিল না। তাঁকে ব্রিটিশদের হাতের পুতুল হিসেবে দেখতে চেয়েছেন কেউ কেউ। তাঁকে ঔপনিবেশিক স্বার্থরক্ষার তাগিদে বাংলা ভাষার ‘সংস্কৃতায়ন’-এর হোতা হিসেবে দেখা হয়েছে। স্বাধীন 888sport appsেও বিদ্যাসাগরের পুনর্বাসন সম্পূর্ণ হয়নি। সে-কথা অন্য একদিন হবে। আপাতত শকুন্তলায় তাঁর গদ্যের প্রসাদগুণ পরখ করতে পারি আমরা।

প্রথমে সেই শিশুকে দেখিয়া রাজার অমত্মঃকরণে যে স্নেহের সঞ্চার হইয়াছিল, ক্রমে ক্রমে সেই স্নেহ গাঢ়তর হইতে লাগিল। তখন তিনি মনে মনে কহিতে লাগিলেন, কেন এই অপরিচিত শিশুকে ক্রোড়ে করিবার নিমিত্ত আমার মন এমন উৎসুক হইতেছে! পরের পুত্র দেখিলে মনে এত স্নেহোদয় হয়, আমি পূর্বে জানিতাম না। আহা! যাহার এই পুত্র, সে ইহারে ক্রোড়ে লইয়া যখন ইহার মুখচুম্বন করে; হাস্য করিলে যখন ইহার মুখমধ্যে অর্ধ বিনির্গত কুন্দসন্নিভ দন্তগুলি অবলোকন করে; যখন ইহার মৃদু মধুর আধ আধ কথাগুলি শ্রবণ করে; তখন সেই পুণ্যবান্ ব্যক্তি কি অনির্বচনীয় প্রীতি প্রাপ্ত হয়। আমি অতি হতভাগ্য। সংসারে আসিয়া এই পরম সুখে বঞ্চিত রহিলাম। পুত্রকে ক্রোড়ে লইয়া তাহার মুখচুম্বন করিয়া সর্ব শরীর শীতল করিব; পুত্রের অর্ধ বিনির্গত দন্তগুলি অবলোকন করিয়া নয়নযুগলের সার্থকতা সম্পাদন করিব; এবং অর্ধোচ্চারিত মৃদু মধুর বচনপরম্পরা শ্রবণে শ্রবণেন্দ্রিয়ের চরিতার্থতা লাভ করিব; এ জন্মের মত আমার সে আশালতা নির্মূল হইয়া গিয়াছে।৫

 

অভিজ্ঞান শকুন্তলমে্র সবচেয়ে পুরনো যে বাংলা 888sport app download apk latest version আমাদের হাতে এসেছে সেটি ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দের। রামতারণ ভট্টাচার্যের করা। এরপর আরো অনেকে এ-কাজে মনোযোগী হয়েছেন। এর সাত বছর পর করা নন্দকুমার রায়ের 888sport app download apk latest version তো মঞ্চস্থও হয়েছে। কলকাতায় তখন পাবলিক থিয়েটার বলতে সাহেবপাড়ার দু-চারটে হাউস। সাহেবদের দেখাদেখি বাবুদের বাড়িতে প্রসেনিয়াম থিয়েটারের চল হচ্ছে। এমন সময় ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি সিমলায় আশুতোষ দেবের বাড়িতে জ্ঞান প্রদায়িনী সভার উদ্যোগে অভিনীত হয় শকুন্তলা। ইংরেজিতে নয়, বাংলায়। এই মঞ্চায়নের স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন কেশবচন্দ্র সেন। আর মূল উদ্যোগী তথা শকুন্তলার চরিত্রাভিনেতা ছিলেন ছাতুবাবু ওরফে অনাথ নাথ দেবের নাতি শরৎচন্দ্র ঘোষ। 888sport promo codeচরিত্রে পুরুষরাই অভিনয় করেছিলেন। রাত ১০টায় অভিনয় শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টা চলেছিল। যখন বাঙালি বড়ঘরের ছেলেরা ইংরেজি নাটকে মন দিয়েছে তখন ‘স্বজাতীয় আমোদে রসাস্বাদন গৃহীতা’ হওয়ার জন্য শরৎচন্দ্রকে সাধুবাদ জানিয়ে সে আমলের খবরের কাগজ সমাচার চন্দ্রিকা ৯ ফেব্রম্নয়ারিতে লিখেছিল :

আর্যপুত্র রাজা দুষ্মমেত্মর সহিত সম্ভাষণের মাধুর্য্যে অধিকন্তু  রাজা দুষ্মমেত্মর শকুন্তলার সহিত পবিত্র-প্রণয়-পূরিত কথার চাতুর্য্যে উপস্থিত ব্যক্তিরা মোহিত হইয়াছিলেন। সময়ে সময়ে চমৎকার চমৎকার কেবল এই শব্দ করিয়াছেন।

এই প্রযোজনার দ্বিতীয় অভিনয় সম্পর্কে ২৬ ফেব্রম্নয়ারির সংবাদ প্রভাকর লিখেছিল যে, ‘প্রায় ৪০০ ভদ্রলোক বিবিধপ্রকার বিচিত্র পরিচ্ছদে পরিবৃত্ত হইয়া সভার শোভা অতিশয় বৃদ্ধি করিয়াছিলেন।’

এই শরৎচন্দ্র বছর পনেরো পরে তাঁদের বিডন স্ট্রিটের বাড়ির উলটোদিকে খালি জমিতে খোলার চালা দিয়ে বেঙ্গল থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। তাতেও মঞ্চস্থ হয়েছিল শকুন্তলা। বাংলায়। ১৮ জানুয়ারি ১৮৭৮ তারিখে পশুক্লেশ নিবারণী সমিতির সাহায্যার্থে যে বিশেষ অভিনয় হয় তাতে এসেছিলেন বড়লাট লর্ড লিটন, লেডি লিটন, ছোটলাট স্যার রিচার্ড টেম্পল ও 888sport app রাজপুরুষ। কানায় কানায় ভরা ছিল প্রেক্ষাগৃহ। সেদিন দুষ্মন্ত সেজেছিলেন শরৎচন্দ্র। শকুন্তলা হয়েছিলেন নারায়ণী। হ্যাঁ, ততদিনে গণিকাপলস্নীর মেয়েরা পাবলিক থিয়েটারে চলে এসেছেন। শোনা যায়, এ-ঘটনায় বিরক্ত হয়ে বেঙ্গল থিয়েটারের ম্যানেজিং কমিটি থেকে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

তবে বিদ্যাসাগরের গদ্য শকুন্তলার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীকালে যেসব বাঙালি কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলমে্র দিকে হাত বাড়িয়েছেন তাঁদেরকে প্রভাবিত করেছে এই 888sport app download apk latest version। যেমন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যখন অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ 888sport app download apk latest version করছেন তখন কালিদাসের নাটকের ‘গৌড়ীয় গ্রন্থ’ আর ‘উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল প্রচলিত গ্রন্থ’কে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করছেন তিনি। বাঙালির শকুন্তলার স্বাতন্ত্র্যকে চিনতে ভুল করছেন না তিনি। বলছেন, ‘এই শেষোক্ত গ্রন্থ, বঙ্গদেশ ছাড়া আর সমস্ত প্রদেশেই সমাদৃত।’ যখন তিনি বলেন,
‘প–ত-চূড়ামণি স্বর্গীয় বিদ্যাসাগর মহাশয়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আদেশ-ক্রমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল প্রচলিত গ্রন্থ অনুসরণ করিয়াই শকুন্তলার নব-সংস্করণ প্রচার করেন’৬, তখন কালিদাস স্কলার হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে চিনতে আমাদের অসুবিধে হয় না। এর চার বছর আগে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একেবারে ছোটদের জন্য রূপকথার মেজাজে বেঁধেছিলেন শকুন্তলাকে। তাঁর চিত্রকর সত্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করেছিল। বড় সুখপাঠ্য সেই গদ্য আদতে বিদ্যাসাগরের আখ্যানের অনুসারী।

বিদ্যাসাগরের সুপারিশ সত্ত্বেও সাহেবি রীতির উচ্চশিক্ষার পাঠ্যসূচিতে কালিদাস ও তাঁর অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের অন্তর্ভুক্ত হতে দেরি হয়েছিল। টোল-চতুষ্পাঠীর প–তদের প্রবল প্রতিরোধে পিছু হটতে হয়েছিল বিদ্যাসাগরকেও। নৈতিকতার দোহাই ছিল। ফলে সংস্কৃত কলেজের উঠোনের বাইরে বেরোতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল শকুন্তলাকে। এর প্রতিফলন পড়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকার পাতায়। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকার অষ্টম 888sport free betয় জনৈক প্রাণনাথ প–ত গ্যেটেকে উদ্ধৃত করে লিখছেন :

একজন বিদেশীয় কবি শকুন্তলার এতাদৃশ প্রশংসা করিয়াছেন, কিন্তু আমাদিগের ভট্টাচার্য্য মহাশয়েরা যথার্থ কবিত্ব রস পানে এক কালে বিমূঢ় – তাঁহারা নস্য লইয়া গম্ভীরস্বরে কহিবেন, ‘মাঘ উৎকৃষ্ট কাব্য’। তাঁহারা চতুষ্পাঠীতে ছাত্রগণকে কালিদাস কৃত কোন কাব্য পাঠ করিতে না দিয়া ব্যাকরণের সঙ্গে ‘ভট্টী’ ও ‘নৈষধ’ পড়িতে উপদেশ দিয়া থাকেন। এক্ষণে সংস্কৃত কলেজের ছাত্রগণ ভিন্ন কালিদাসের গ্রন্থের ব্রাহ্মণ প–তগণ তাদৃগ্‌ আদর করেন না – এমন কি এক ব্যক্তি মেঘদূত অপেক্ষা জীব গোস্বামীর ‘গোপালচম্পূ’ নামক আধুনিক অপকৃষ্ট কাব্যের প্রশংসা করিলেন।’৭

বঙ্কিমচন্দ্র নিজেও শকুন্তলা নিয়ে কলম ধরেছেন। বিবিধ 888sport liveতে সংকলিত একটি রচনায় শকুন্তলার সঙ্গে দুই শেকসপিয়র হিরোইন মিরান্দা ও দেস্দিমোনার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন তিনি। ‘শকুন্তলা সরলা হইলেও অশিক্ষিতা নহেন। তাঁহার শিক্ষার চিহ্ন, তাঁহার লজ্জা’ এ-জাতীয় কথায় বঙ্কিমচন্দ্রের অতি রক্ষণশীল সামাজিক অবস্থান প্রকট হয়। দুষ্মমেত্মর সাপেক্ষে শকুন্তলাকে যখন তাঁর ‘করিশু– পদ্মমাত্র’৮ মনে হয়, তখন রক্ষণশীলতার মাত্রায় কালিদাসকেও ছাপিয়ে যান বঙ্কিমচন্দ্র।

এর বছর-কুড়ি পরে, ১৩০৮ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন শকুন্তলাকে নিয়ে লিখতে বসেন (‘কুমারসম্ভব ও শকুন্তলা’) তখন তাঁর সামনে ইয়োরোপীয় ও ভারতীয় 888sport live footballদর্শনের ফারাক সাফ হয়ে যায়।

… আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধীবরের হাত হইতে আংটি পাইয়া যেখানে দুষ্মন্ত আপনার ভ্রম বুঝিতে পারিয়াছেন, সেইখানে ব্যর্থ পরিতাপের মধ্যে য়ুরোপীয় কবি শকুন্তলা নাটকের যবনিকা ফেলিতেন। শেষ অঙ্কে স্বর্গ হইতে ফিরিবার পথে দৈবক্রমে দুষ্মমেত্মর সহিত শকুন্তলার যে মিলন হইয়াছে তাহা ইয়ুরোপীয় নাট্যরীতি-অনুসারে অবশ্যঘটনীয় নহে। কারণ, শকুন্তলা নাটকের আরম্ভে যে বীজবপন হইয়াছে এই বিচ্ছেদই তাহার চরম ফল। তাহার পরেও দুষ্মন্ত-শকুন্তলার পুনর্মিলন বাহ্য বিচারে দৈবানুগ্রহে ঘটাইয়া তুলিতে হইয়াছে। নাটকের অন্তর্গত কোনো ঘটনাসূত্রে, দুষ্মন্ত-শকুন্তলার কোনও ব্যবহারে, এ মিলন ঘটিবার কোনো পথ ছিল না।

‘শকুন্তলা’ (আশ্বিন ১৩০৯) শিরোনামে অন্য একটি রচনায় আমাদের আজকের পাঠাভ্যাসকে হতাশ করে শকুন্তলার ‘পতন’, ‘পরাভব’ তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠে। 888sport promo codeর সতীত্বের প্রশ্নে বঙ্কিমচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় মিলে যান।

আমাদের বিস্ময় জাগে। এই সময়েই শান্তিনিকেতনে ছেলেদের জন্য বিকল্পধারার ইশ্কুল খুলছেন রবীন্দ্রনাথ। নাম দিচ্ছেন ব্রহ্মচর্য্যাশ্রম। তাতে যে তপোবনের শিক্ষার আদর্শটিই নবীকৃত হবে এ-কথা বারবার বলছেন তিনি। সেখানে যে প্রথম প্রথম মেয়েরা জায়গা পাবে না এতে আর আশ্চর্যের কী আছে! এসবের পেছনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দৌলতে মুকুলিত প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার অনুপ্রেরণা আছে ভাবলে আরো অবাক লাগে।

অবাক লাগে এরপর সেলিম আল দীনের আগে আর তেমন কেউ শকুন্তলাকে নিয়ে বড় করে নাড়াঘাঁটা করলেন না। শকুন্তলা আবিষ্কারের একশ বছরের পর্বটি যেমন হুট করে শুরু হয়েছিল, তেমন হুট করে শেষ হয়ে গেল। উত্তর-ঔপনিবেশিক কালখ-ও তাকে উত্তেজিত করল না। গ্রম্নপ থিয়েটার বা প্রফেশনাল থিয়েটার কোনো মহলস্নাতেই তার দেখা প্রায় মিলল না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ঢুকে পড়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের ইশ্কুল-কলেজের নাটকের অনুষ্ঠানে মাঝেসাঝে তাকে দেখা গেল। বাংলায়, ইংরেজিতে ও সংস্কৃতে।

এইমাত্র!

 

তিন

আপনি তো প্রিয় কবি, আমাদের প্রিয় কালিদাস;

মূল্যহীন অমরাবতী; আমরা কি ঐতিহ্যের দাস?

– মুহম্মদ নূরুল হুদা, শুক্লা শকুন্তলা ৩২৯

 

উত্তর-ঔপনিবেশিকতার যে স্বাদ পশ্চিমবঙ্গের নাটকে উত্তর-১৯৪৭ কালপর্ব পেয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান তা পায়নি। একদিকে উর্দু লবজ, অন্যদিকে শরিয়তি ইসলাম চাপানোর তোড়জোড় – এই দুয়ে মিলে ‘হিন্দু’ পুরাণচর্চার পূর্ববঙ্গীয় ধারাবাহিকতায় এক ধরনের যতিচিহ্ন টেনেছিল বলা যেতে পারে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধ ও 888sport appsের আত্মপ্রকাশ এই স্থিতাবস্থাকে বদলে দেয়। নাটকের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির ভাঙা সাঁকো মেরামতের তাগিদ দেখা দেয়। পুরাণ তো বটেই, মৃত্তিকালগ্ন লোকসংস্কৃতিকে নয়া আন্দাজে দেখবার-বুঝবার আগ্রহ তৈরি হয় নাটকের মহলস্নায়। মহাভারতের ভাগে কিছু কম পড়েনি।

এই ঐতিহ্যের প্রথম প্রতিশ্রম্নতি সেলিম আল দীনের শকুন্তলা নাটক। এতে মহাভারতের আকর ছিল। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে 888sport app থিয়েটারের নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফের প্রয়োগনৈপুণ্যে তা 888sport app download for androidীয় প্রযোজনা হয়ে উঠেছিল। ১৮৮ বার মঞ্চস্থ হয়ে নজিরও গড়েছিল। ওই দলের আর কোনো নাটক এযাবৎ এতবার মঞ্চস্থ হয়নি।

কিন্তু এহ বাহ্য। নাটক হিসেবে শকুন্তলার স্থানাঙ্ক সেলিম আল দীনের রচনাধারার এক অনিবার্য বাঁকে। পশ্চিমি ধাঁচের নাট্যভাষ থেকে ক্রমে সরতে সরতে মধ্যযুগীয় বাংলা নাট্যের যে অমৃতকুম্ভের সন্ধান পেয়েছিলেন গবেষক সেলিম, তার আলম্ববিন্দুতে অবস্থান করছে তাঁর শকুন্তলা। অ্যাবসার্ড থিয়েটারের যে সারস্বত উত্তরাধিকার এতকাল বহন করছিলেন সেলিম এ-নাটকে তার লেশমাত্র নেই এমন বলা বাতুলতা হবে। বিশ্বামিত্র বা শকুন্তলার চরিত্রায়ণে এগজিস্টেনশিয়ালিজমের অভিঘাত আমাদের চোখ এড়ায় না। আমাদের মনে রাখতে হয় যে, এর অনতিপূর্বে জাঁ পল সার্ত্র, আলবেয়ার কামু তাঁকে উদ্বেল করেছেন, ক্যালিগুলা পড়ে তাঁর রাতের ঘুম ছুটে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে কোণঠাসা বাঙালিকে দেখে মার্কিন দেশে সিভিল রাইটস মুভমেন্টে তেতে ওঠা বস্ন্যাক আমেরিকানদের সঙ্গে তিনি একাত্ম বোধ করেছেন। বিষয় হিসেবে সমকালীন বাস্তবতা ও আঙ্গিক হিসেবে মূলত প্রহসনকে কাছের মনে হয়েছে তাঁর। কিন্তু এ-প্রহসনের মধ্যে সংস্কৃত নাট্যভাষ নেই। আছে পশ্চিমের অনুবর্তন। শকুন্তলার মধ্য দিয়ে যেন পূর্ব দিগমেত্মর রক্ত-লাল সূর্যোদয়কে প্রত্যক্ষ করলেন সেলিম। বিষয় তো বটেই, আঙ্গিকের দিক দিয়েও।

যদি বিষয়ের দিকে নজর রাখি তবে তাঁর এই রচনার মূলে ছিল ভারতীয় পুরাণের নবীকরণ ও সম্প্রসারণের বাসনা। এবং শকুন্তলার ঔপনিবেশিক পাঠের সপাট প্রত্যাখ্যান।

888sport app থিয়েটারের প্রযোজনা পুস্তিকায় লেখা হয়েছিল :

কবিগুরু গ্যেটের জীবনে শকুন্তলা এনেছিলো আলোড়ন। শকুন্তলার প্রশস্তিতে লেখা একটি অবি888sport app download for androidীয় 888sport app download apkও আছে গ্যেটের। যাতে তিনি মর্ত্যের ও স্বর্গের একীভূত এক অত্যাশ্চর্য রূপ দেখেছিলেন।

কিন্তু স্বর্গ ও মর্ত্যের মিলনের দৃষ্টান্ত শকুন্তলা কীভাবে হতে পারে? যাঁর জন্ম বিশ্বামিত্রের তপস্যাভঙ্গে, স্বর্গ ও মর্ত্যের বিরোধে, তাঁর জীবন দ্বন্দ্বহীন গল্প হয় কী করে? কালিদাস আর গ্যেটে শকুন্তলার মধ্যে কেবলই সৌন্দর্য আর মিলনই দেখেছেন, বিরোধকে নয়; আমরা এই বিরোধকে প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের শকুন্তলা এই বিরোধ প্রত্যক্ষকরণের ফল।১০

 

এ-কথা যেন স্রেফ 888sport app থিয়েটারের নয়, এ যেন নাটককার জীবনের এক নির্ণায়ক বাঁকে এসে সেলিম আল দীনের নান্দনিক ইশতেহার। অনেক দিন বাদে একটি অন্তরঙ্গ আলাপনে মুনতাসীর ফ্যান্টাসির রচনার পর তাঁর সেই সময়ের আকাঙক্ষার কথা আরো খোলাসা করে বলেছিলেন সেলিম।

আমার কিন্তু তখন মনে হচ্ছিল যে, আমার জন্য 888sport live chatের প্রকৃত পথ কোনটি? যখন যা গভীরভাবে তাড়না করতো তখন তাই লিখতাম কিন্তু মনে হত এটা আসলে আমার পথ না। বাঙলা নাটককে মুক্তি দিতে হলে আমাকে অন্য পথ ধরতে হবে। এবং তারপর আমি লিখলাম শকুন্তলা। আমি কালিদাসের বিপরীতে দাঁড়ালাম এবং গ্যাটের শকুন্তলা বিষয়ক একটি 888sport app download apkকে অগ্রাহ্য করেছি এই ভেবে যে – এটা হতে পারে না, স্বর্গ-মর্ত্য কখনো মিলন হয় না। কেউ কেউ তখন বলেছে যে – হ্যাঁ, থার্ড ওয়ার্ল্ড এবং ডেভেলপড কান্ট্রিতে কোনো মিলন হয় না। যদি হয়ও সেটা অস্থির কিছু।১১

আবার আঙ্গিকের দিকে নজর দিলে দেখব যে শকুন্তলার গড়ন কতক সংস্কৃত নাটকের আদলে। তাতে সূত্রধারের সক্রিয় ভূমিকা আছে। দৃশ্যকাব্য কথাটি তাঁর মনে ধরেছে। ‘সুধীম-লী’কে সম্বোধন করে ‘আজ এই রঙ্গভূমিতে দৃশ্যকাব্য শকুন্তলার অভিনয় হবে’ এই উচ্চারণের মধ্যে সংস্কৃত নাটকের বিশ্বস্ত অনুবর্তন দেখা যাচ্ছে। ওদিকে আবার অঙ্ক-দৃশ্যের ধ্রম্নপদী রীতিকে ইতিমধ্যেই ‘অনাবশ্যক’ বিবেচনা করেছেন সেলিম। ফলে অঙ্ক-দৃশ্য বিভাজন নেই, আছে খ-বিভাজন। কতক মঙ্গলকাব্যের গতে। আর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, সেলিমের শকুন্তলাতে কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের আভাস আছে মাত্র। গ্যেটে বা রবীন্দ্রনাথের মুগ্ধতার তাতে লেশমাত্র নেই। মিলনান্তক নাটকের ধারাকে কার্যত তুলাধোনা করছেন সেলিম। গড়ছেন বিয়োগান্তক গাথা।
বিষয়-বিন্যাসেও বিস্ময়কর রূপান্তর। শকুন্তলার ঋতুলগ্নে এর যবনিকা পড়ছে। ফলে দুষ্মমেত্মর নাম-গন্ধ তাতে নেই। শকুন্তলার কথা বলার আগে দ্বিধাবিভক্ত এ-নাটকে গোড়ায় ‘স্বর্গীয়-ষড়যন্ত্র খ-’ রচনা করেছেন সেলিম। ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দের মধ্যে স্বর্গের বিরোধিতার সুর স্পষ্ট। ক্রিয়াপদের ব্যবহারে তা আরো প্রকট। ‘বিশ্বামিত্র তপস্যায় রত হলেন। তাঁর তপস্যার ভয়ে ভীত ইন্দ্র লিপ্ত হলো এক সুগভীর ষড়যন্ত্রে।’ এখানে বিশ্বামিত্র যেন মর্ত্যলোকের প্রতিভূ। মানবশ্রেষ্ঠ। তাঁর ধ্যানভঙ্গে মেনকার ভূমিকা আদতে দেবকুলের অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে তা গোপন রাখা হচ্ছে না। এ-নাটকের দ্বিতীয়ার্ধ, অর্থাৎ ‘শকুন্তলা খ–’ কণ্ব ও গৌতমীর মুখে নিজের জন্মরহস্য জানছেন সদ্য ঋতুমতী শকুন্তলা।

আজ, এই ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এসে মনে হয়, ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’ ও ‘ডেভেলপড কান্ট্রি’র সাবেক বিরোধাভাসকে মাথায় রাখলে আরো বেশি করে মনে হয় যে শকুন্তলার মধ্যে কি 888sport appsের রূপক খুঁজেছিলেন সেলিম আল দীন? যেমন করে ঘরে বাইরে 888sport alternative linkে বিমলার মধ্যে ভারতবর্ষকে বুনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কতক সেভাবে শকুন্তলাকে সদ্যোজাত 888sport appsের প্রতীক করতে চেয়েছিলেন সেলিম? এ-নাটকের গোড়ায় পৌরাণিক রাজা ত্রিশঙ্কুর কথা পেড়েছিলেন নাটককার। তা যেন উপমহাদেশীয় রাজনীতির সাপেক্ষে হামেশাই উচ্চারিত ত্রিশঙ্কুদশার স্পষ্ট সূচক। ঔপনিবেশিক শাসকদের বঙ্গবিভাজনের চক্রান্ত যেন ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গের সমতুল। অপ্সরী মেনকা যেন রাষ্ট্রক্ষমতার সম্মোহন। আর শিশু শকুন্তলা যেন কীটদষ্ট পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমবঙ্গ। সদ্যযুবা অসুস্থ শকুন্তলা যেন মুক্তিযুদ্ধে ধ্বস্ত 888sport appsের বীরাঙ্গনা। চার দশক আগে শকুন্তলার অন্তিম উচ্চারণের মধ্যে কি 888sport appsের ইতিহাসের ভাবীকালের সূত্র পড়েছিলেন সেলিম?

এ-নাটক শেষ হয়েছিল খোলা মঞ্চে ঝরা পাতা পায়ে দলে দূর থেকে ভেসে ওঠা সুরেলা আলাপকে কানে নিয়ে ধূপাধার হাতে সামনে এসে দাঁড়ানো শকুন্তলার হাহাকার দিয়ে :

যা, যা, অনেক দূর নীলিমার দিকে চলে যা। পূর্ণিমার হরিদ্রা আলোতে পথ চিনে যা, চৈত্য সিঁড়ি! যেখানে মা আমার, সুগন্ধি লবঙ্গ-বলস্নরী। চির সুস্মিতা। আমার কষ্টের কথা, শোণিত ক্ষরণের গন্ধ, নিয়ে যা। আমার কথা ভুলে যাসনি তো মা? হাড়গোড়, মাংস-মেদ আর রাতে বদলে দিবি? দাও, নীল অভ্রের ডানা। যেরকম কিন্নরমিথুন ওড়ে, নমেরুবনের ওপর দিয়ে, ওরকম পাখা দাও। মা দাও। আ-হ, তবু আমার মাংসের মধ্যে, দেখো, বিষ মাখানো অঙ্কুশ, ত্বকের ভেতরে দাহ। … এই রক্ত ক্ষরণের পর। … মা তুলে নে। তুলে নে। আমি যাবো, আমি যাবো, ওইখানে যাবো। আহ-হ,! … আ-হ। মা। আ-হ। তবে কি এইখানেই থেকে যাবে, আমার শরীর। … কেবলি কানামাছি, কেবলি অন্ধকার!১২

শকুন্তলা সাধারণভাবে নন্দিত হয়েছিল। টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠেছিল। আর নাট্য-সমালোচনার যে-ধারাটি বিষয়ের গভীরে ডুব দিতে চায় ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের 888sport appয় তা পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় ছিল বলে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, আযাদ, দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা, রোববার, সচিত্র সন্ধানী, থিয়েটার, The Holiday সর্বত্র তা আলোচিত হয়েছে। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে। কমেডিকে ট্র্যাজেডি বানানো নিয়ে কারো কারো আপত্তি থাকলেও পুরাণের নবমূল্যায়ন বা স্বর্গ-মর্ত্যের দ্বন্দ্বমূলক নির্মাণকে মোটের ওপর অনুমোদন দিয়েছিলেন সমালোচককুল। তাঁদের মধ্যে বামপন্থি চিন্তকদের প্রাধান্য এই অনুমোদনের সহায় হয়েছিল বলে আমাদের ধারণা।

দৈনিক সংবাদের পাতায় রাজা রহমান লিখেছিলেন :

শকুন্তলার পুরাণ ধ্বংস ও পুরাণ নির্মাণের প্রশ্নটি জটিল। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটিও বাংলা নাটক সম্ভবত লেখা হয়নি। মেঘনাদ বধ কাব্যের রাবণকে পুরাণ থেকে তুলে, ভেঙে নতুন নির্মাণ করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন। সেলিম আল দীন শকুন্তলা রচনায় সেই পুরাণ ভাঙার ও নির্মাণের রীতি ফলো করেছেন।১৩

আশৈশব মধুসূদনের অনুরাগী সেলিম এমন প্রতিতুলনায় তৃপ্তি পেয়ে থাকবেন এ আমাদের নিশ্চিত অনুমান। আবার থিয়েটারের পাতায় মফিদুল হক অত সদয় হচ্ছেন না। এই প্রযোজনার ভূমিকাপত্রে, ‘মুসলমানদের হাতেই মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। মহাভারত প্রভৃতি ভারতীয় ক্লাসিক গ্রন্থে 888sport live footballরস আস্বাদনের ইচ্ছাটাই ছিল মুসলমানদের। সেজন্য সংস্কৃতের অনুস্বর বিসর্গ ভেদ করে তাঁরা মহাভারতকে নিয়ে এলেন বাঙালীর লোকায়ত জীবনে’ – এই ঘোষণাটি উদ্ধৃত করে 888sport app থিয়েটারের কর্মীদের ‘বিনয়ের অভাব’কে চিহ্নিত করেছিলেন। ‘কালিদাস আর গ্যেটে শকুন্তলার মধ্যে সৌন্দর্য আর মিলনই দেখেছেন – বিরোধকে নয়’ – 888sport app থিয়েটারের এই অনুভব যে ‘চিরায়ত 888sport live footballের তরল ও একপেশে ব্যাখ্যারই পরিচায়ক এবং নিজেদের কবন্ধ 888sport live chatবোধ আর কিছুই প্রকাশ করে না’ এমনই লিখেছিলেন মফিদুল।

এই তত্ত্ববৃত্তের বাইরে তাঁর শকুন্তলা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুলস্নাহসহ আরো অনেককে আপ্লুত করেছিল বলে সেলিম কিঞ্চিৎ আত্মশস্নাঘা অনুভব করেছিলেন।১৪ কিন্তু যে কানামাছি ও অন্ধকারের ইশারা দিয়েছিলেন সেলিম, তা ফুটে বেরিয়েছিল দৈনিক আযাদে
নাট্য-সমালোচনায়। এটি বেরিয়েছিল ‘ফারাজি মুনশির হপ্তানামা’ শিরোনামে। তার খানিক না পড়া গেলে 888sport app থিয়েটারের এই উচ্চাশী প্রযোজনার নান্দনিক স্থানাঙ্ক নির্ণয় করা যাবে না।

জনাব কালিদাস যে শকুন্তলা পয়দা করিয়াছিলেন, তাহা হইতেছে একখানি ক্লাসিক। কাব্যমাধুর্যে, অনুভূতি প্রকাশের মুনশিয়ানায় এবং আওরত ও প্রকৃতির খুবছুরত বর্ণনার কারুকার্যে তাহার শায়েদ দুছরা কোনও মিছাল নাই। লেকিন জনাব সেলিম আল দীন উহার এইছা হাজামত করিয়াছেন যে, ঐ ক্লাসিক্যাল খাছিয়ত একেবারে আববাজান-আববাজান করিয়া ডাক ছাড়িয়া পলাইয়া গিয়াছে। ঐ নাটকের দুছরা খাছিয়ত হইতেছে হিন্দু ধর্মবিশ্বাস, হিন্দু পৌরাণিক কারবার, হিন্দু পরিবেশ এবং হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান। জনাব সেলিম আল দীন এই খাছিয়তটি বহাল রাখিয়াছেন।

এবং এই নাটকগুলি অভিনয় করা হইতেছে 888sport appsে। যে দেশের অধিকাংশ বাসিন্দা হইতেছে তৌহিদবাদী মুসলমান। যাহারা এক আলস্নাহ ছাড়া দুছরা কোনও দেব-দেবী অথবা মুনি-অপ্সরা মানে না, এবং এই তৌহিদবাদ যাহাদের মুলুকের দস্ত্তরে ইজ্জতের সহিত লিখিয়া রাখা হইয়াছে। যাহাদের জিন্দেগানির সহিত কলিকাতা, গড়ের মাঠ, গঙ্গার ধার, অথবা বিশ্বামিত্র, মেনকা, তপোবন অথবা কোনও কিছুরই কোনও তায়ালস্নুকাত নাই।১৫

এই কটুকাটব্য দুটি কারণে 888sport app download for androidীয়। প্রথমত, ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে 888sport appsের রাষ্ট্রক্ষমতা যেদিকে পা ফেলছিল, আপাতভাবে 888sport app থিয়েটারের নাটক শকুন্তলা তাতে পা মেলায়নি। হিন্দু দেব-দেবীদের গল্পগাছার মধ্যে, কৌম নৃত্যাদির মধ্যে যে সাংকেতিক ব্যঞ্জনা খুঁজেছিলেন সেলিম বা নাসির উদ্দীন তা নিশ্চিতভাবেই ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ছিল। দরবারি বামপন্থার দিকে যে ঝোঁক 888sport app থিয়েটারের সেই আমলের প্রযোজনাকে আলাদা করে চেনাত তারই অনুসারী ছিল শকুন্তলা। কারণ ‘মার্ক্সীয় শ্রেণিব্যাখ্যান তখনকার প্রচলিত অদ্বিতীয় বুলিবিশেষ ছিল।’১৬

তবু মৌলবাদী আধিপত্যবাদের চক্ষুশূল হতে হয়েছিল তাঁদের। এই আধিপত্যবাদের টিকি-টোপর বাঁধা ছিল শরিয়তি ইসলামের কাছে। দ্বিতীয়ত, 888sport appsের নাট্য-আন্দোলনে স্বৈরাচারবিরোধিতার যে পরম্পরা তৈরি হয়েছে তা এমন খবরদারির কাছে মাথা নোয়াবে এমন ভাবার কারণ নেই।

আবার শকুন্তলার চমকপ্রদ সাফল্য সত্ত্বেও দীর্ঘদিন 888sport appsের মঞ্চে মহাভারতের সূত্র নিয়ে নাটক হয়নি, এ-কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। একদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের দোসর হয়ে উঠে আসা নিখাদ নিজস্ব নাট্যরীতির সন্ধান, অন্যদিকে পশ্চিমি ধাঁচার নাট্যচর্চা, এই দুই স্রোতের কোনোটাই অনুকূল পরিস্থিতির জন্ম দেয়নি। শকুন্তলা নামে আরেকটা নাটক লিখেছিলেন আবদুল মতিন খান। আমাদের কাছে সে-বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য নেই বলে এ-আলোচনায় বড় করে আনা গেল না। জানা যায়, আবদুল মতিন খান মোটের কালিদাসের অনুসরণ করলেও সমসাময়িক রাজনীতিকে বুনে দিয়েছিলেন তাঁর নাট্যভাষে।১৭

তবে শকুন্তলা যে সেলিম আল দীনের নাটককার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট এটি শুধু আমাদের একান্ত উপলব্ধি নয়, আরো কোনো কোনো নাট্যবিদ এ-মত পোষণ করেন। যেমন সিকি শতক আগেই রামেন্দু মজুমদারের মনে হয়েছিল সেলিমের ‘সিরিয়াসধর্মী নাটক রচনায়’ যে সিদ্ধি সে ‘পর্যায়ের প্রথম নাটক’১৮ শকুন্তলা। আনু মুহাম্মদ বুঝেছিলেন যে, ‘এখানেই সেলিম আল দীনের আরেক অধ্যায় শুরু বলে আমার ধারণা।’১৯ আবদুলস্নাহেল মাহমুদ দেখেছেন যে, ‘সেলিম আল দীনের নাট্যযাত্রায় শকুন্তলা একটি গভীর বাঁক। যে বাঁকের পর সেলিম আল দীন অনেক বেশি প্রকাশিত।’২০ যাঁর নাট্যনির্মাণ সৌকর্য সেলিমের নাটককার জীবনের অনন্ত আশ্রয়, যাঁর সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দি আন্তন চেকভ-কনস্টানটাইন স্তানিসস্নাভস্কি জুটির মতো অমোঘ, সেই নাসির উদ্দীন ইউসুফ একবার বলেছিলেন, ‘শকুন্তলায় সেলিমের ধ্রম্নপদী ভাষার ব্যবহারের কৌশল আমাদের জানান দিয়ে যায় নতুন কালের এক লেখকের, যার সাক্ষাৎ আমরা পাই কিত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল এবং হাতহদাই নাটকে।’২১

লুৎফর রহমান বুঝেছিলেন, ‘যে জীবন অগাধ তাকে বৃত্তায়িত করার প্রয়াস ভারতীয় মানসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী’ এই অনুভবই সেলিমের নজর নিজস্ব নাট্য-ঐতিহ্যের দিকে ঘুরিয়েছিল। ‘স্বদেশ ও স্বজাতির ঐতিহ্যের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও 888sport apk download apk latest versionই’ তাঁকে প্রাচ্যবাদী আঙ্গিকের সন্ধানে ছুটিয়েছিল। এই আলম্ববিন্দুতে শকুন্তলার অবস্থান। আবার ‘আঙ্গিক-নিরীক্ষায় এ ক্ষেত্রে নাট্যকার ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত নাট্যাদর্শের অনুসারী হলেও জীবনের নবতর ব্যাখ্যায় আধুনিক জীবনজিজ্ঞাসার প্রতি আনুগত্যশীল।’২২ অন্য একটি 888sport app download for androidীয় রচনায় আরো একধাপ এগিয়ে সেলিমের উত্তরকালের নাটকের বিষয়ের দিকে চোখ রেখে, তাদের আঙ্গিকের দিকে চোখ রেখে স্থির প্রত্যয়ে লুৎফর বলছেন :

শকুন্তলা সেলিম আল দীনের আবির্ভাবের অভিজ্ঞান। অর্থাৎ পরিণত সেলিম আল দীন তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার আভায় শকুন্তলাকে উদ্ভাসিত করে আপনার আবির্ভাব ঘোষণা করেন। শকুন্তলার নাম চরিত্রের যন্ত্রণার উৎস জীবনের অমরত্বের শাশ্বত আকাঙক্ষা। পরবর্তী সময়ে রচিত যৈবতী কন্যার মন কথানাট্যে দেখা যায় দেবদ্রোহী 888sport promo code কালিন্দী জীবন থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যা করে – কিন্তু জীবনের প্রতি পৃথিবীর প্রতি তার অপরিসীম মায়া। ঈশ্বরের করুণায় তার পুনর্জন্ম হয় পরী নামে। অন্য মাতৃগর্ভে ভিন্ন পরিবেশে। পরীর জীবনের পরিণতিও অভিন্ন হলো। অর্থাৎ মানুষের নিয়তি অপরিবর্তিত – জনম বদলালেও ভাগ্যরেখা থাকে হাতের তালুতে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে শকুন্তলা এবং যৈবতী কন্যার মন নাটকের মধ্যে একটা সাদৃশ্য আবিষ্কার করা অসম্ভব নয়। ভ্রূণের বিনষ্টি দেখে যন্ত্রণা কাতর কেরামত মূলত মানবিকতার অপচয় রোধে সোচ্চার –  তাই জীবনের অজস্র বৃত্তে ঘুরেও সে নারকীয় যন্ত্রণা ব্যতীত সুখের শান্তির কোনো স্পর্শ লাভ করেনি। সামাজিক নরকে কেরামতের অনুসন্ধেয় বিষয় মানবতা। শকুন্তলার অস্তিত্বের সংকট কেরামত মঙ্গলে পার্থিব বিষয় সংশিস্নষ্টতার ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। সূত্রধারের গল্প বলার ঢংটি শকুন্তলায় পরিলক্ষিত হয় তা আরো পরিশীলিত এবং পরিপূর্ণতা লাভ করেছে কিত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, হাত হদাই, চাকা, হরগজ, যৈবতী কন্যার মন, বনপাংশুল, প্রাচ্য, একটি মারমা রূপকথা, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, পুত্র ইত্যাদি নাটকে। নৃত্য-সঙ্গীত-কথা-সংলাপ এবং চিত্রধর্মী কাব্যিক বর্ণনার আশ্রয়ে সেলিম আল দীন যে নাট্যরীতি সৃজন করেন তা ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের ধারায় আধুনিক জীবন উপস্থাপনার 888sport live chatভাষা। গভীর অনুসন্ধানে দেখা যাবে যে, এরও সূত্রপাত শকুন্তলায়।২৩

এই মন্তব্যের খেই ধরে আমাদের মনে হয় যে, শকুন্তলা সেলিম আল দীনের রচনাধারায় একটি জলবিভাজিকা। মধ্যযুগীয় বাংলা নাট্য ও ঐতিহ্যবাহী নাট্যের পাশাপাশি সংস্কৃত নাট্যের মাধুকরী আজীবন স্বীকার করেছেন সেলিম। শকুন্তলার মধ্য দিয়ে তিনি যেন কেবল ভারতীয় নয়, সদর্থে প্রাচ্যবাদী নাট্যাদর্শে তাঁর প্রবল আগ্রহ জানান দিলেন। প্রত্যাখ্যান শুরু হলো পশ্চিমি নাট্যভাষের। প্রতিভাষের প্রস্ত্ততিপর্ব শুরু হলো। এই নাটকের মধ্য দিয়ে ভরতের নাট্যশাস্ত্রের নিবিড় পাঠের অভিজ্ঞতা গোপন করলেন না সেলিম। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার বিরোধাভাসকে নাট্যশরীরে বুনে দিয়ে আর্য-অনার্য সংস্কৃতির দ্বন্দ্বকে আড়াল করলেন না। আড়াল করলেন না শ্রেণি সংগ্রামের মৌল তাগিদকে। জানান দিলেন ঔপনিবেশিক দৃষ্টিপাতকে অগ্রাহ্য করার উত্তর-আধুনিক স্পর্ধা। ধ্রম্নপদী সংস্কৃত ভাষার চলনে খানিক অদলবদল ঘটিয়ে নিজস্ব নাট্যভাষা খুঁজে পেতে শুরু করলেন শকুন্তলা থেকে। তা অন্যতর মৃত্তিকালগ্ন লোকায়ত নাট্যের খোঁজে বেরোতে তাঁকে উদ্দীপ্ত করল। তাঁকে উপমহাদেশীয় নাট্যপরম্পরার সঙ্গে নির্ণায়কভাবে জুড়ে দিলো শকুন্তলা। এ যেন সেই কোদ–র টঙ্কার, যা কেবল তাঁর আবির্ভাবকে জানান দিলো না, জ্যামুক্ত তিরের সঙ্গে তুলনীয় তাঁর পরবর্তী নাট্যজীবনের চলনকে চিনিয়ে দিলো। নাগরিক নাট্যের অন্দরমহলে যাতায়াত সত্ত্বেও বাংলানাট্যের আঁতের কথা এবার থেকে তাঁর আকর্ষণের কেন্দ্রে চলে এলো।

দশ বছর আগে 888sport app থিয়েটারের ডাকে সেলিম আল দীনের ষাটতম জন্মজয়মত্মীতে একটি 888sport live উপস্থাপন করেছিলেন পবিত্র সরকার। সেলিমের ‘অভিনব স্বাতন্ত্র্য’ বিশেস্নষণ করতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, ‘তিনি আখ্যান ও নাটকের মধ্যে সঙরূপ বা জঁনর-গত দেয়ালটিকেই ভেঙে দেন, অর্থাৎ লেখা ও মুদ্রণে গল্প-888sport alternative linkের বর্ণনা এবং লোকসংস্কৃতির কথকতা নাটকের অঙ্গনে খুব সহজে নিয়ে আসেন।’২৪ এই ‘পাঁচিল-ভাঙা’কে উত্তর-আধুনিকতার লক্ষণ বলে দেগে দেননি পবিত্র। বরং ‘বাংলার নিজস্ব এক এপিক থিয়েটার’-এর মর্যাদা দিয়েছেন। শকুন্তলাকে আমরা ওই ‘এপিক থিয়েটার’-এর ইশতেহারের চূড়ান্ত খসড়া হিসেবে দেখতে চাই।

জীবনের একেবারে শেষ প্রামেত্ম এসে ‘888sport live chatে একাঙ্গীকরণ বা ফিউশন তত্ত্ব’ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলেন সেলিম। লিখেছিলেন :

মহাভারত রামায়ণে প্রতি অনুচ্ছেদের একাঙ্গীকরণ রীতি আলোচনা করলে দেখা যায় – কোথাও কোথাও – এর দুটি অনুচ্ছেদের ভেতর – সেকালে – এবং এর পূর্ণাঙ্গ গড়নের কালে – নতুন একটি কাহিনীর একাঙ্গীকরণ সম্ভব হয়েছিল।২৫

শকুন্তলার মধ্যে সেই একাঙ্গীকরণের প্রাথমিক সূত্রের তালাশ করেছিলেন সেলিম। কতক অগোচরেই।

খালি একটি জিজ্ঞাসার উত্তর এখনো মেলেনি। শকুন্তলাকে কেন বিয়োগান্তক করলেন তিনি? এ তো প্রাচ্যবাদী নাট্যাদর্শে মানানসই নয়! শুধুই কি অ্যাবসার্ডিজম আর এগজিস্টেনশিয়ালিজমের দাপটের কাছে মাথা নুইয়ে? আমাদের তা মনে হয় না। শকুন্তলার সঙ্গে তৎকালীন 888sport appsের অভেদ কল্পনাও শেষমেশ দাঁড়াতে পারে না। সেটি সম্ভবত তাঁর অস্থির অনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাসের চোরাবালিতে মিলিয়ে গেছে।

 

 

তথ্যসূত্র

১.       ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা, ‘সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃত888sport live footballশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব’, বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ : তৃতীয় খ-, 888sport live football (সং গোপাল হালদার), পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭২, পৃ ১১৫।

২.       Romila Thapar, Sakuntala : Texts, Readings, Histories, Women Unlimited, New Delhi, 2010.

৩.      কাশীরাম দাস, কাশীদাসী মহাভারত (সং আশুতোষ ভট্টাচার্য), অখিল ভারত জনশিক্ষা প্রসার সমিতি, কলকাতা, ১৯৬০।

৪.       ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা, ‘সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃত888sport live footballশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব’, বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ : তৃতীয় খ-, 888sport live football (সং গোপাল হালদার), পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭২, পৃ ১১৫।

৫.       ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা, ‘শকুন্তলা’ (সপ্তম পরিচ্ছেদ), বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ : তৃতীয় খ-, 888sport live football (সং গোপাল হালদার), পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭২, পৃ ১৬৪।

৬.      জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, সংস্কৃত নাটকসংগ্রহ : প্রথম খ- (সং সুনীল জানা), কমলিনী, কলকাতা, ২০১৪, পৃ ১৫।

৭.       প্রাণনাথ প–ত, ‘কালিদাস’, বঙ্গদর্শন (সং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), অগ্রহায়ণ ১২৭৯, বঙ্গদর্শন (প্রথম খ- ১২৭৯ অব্দের বৈশাখ হইতে চৈত্র পর্যন্ত), ব্রজমাধব বসু, কলকাতা, ১৮৭৩, পৃ ৩৬০-৩৬২।

৮.      বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘শকুন্তলা, মিরন্দা এবং দেস্‌দিমোনা’, বঙ্কিম রচনাসংগ্রহ : 888sport live খ-, প্রথম অংশ (সং গোপাল হালদার), পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭৩, পৃ ২৫৭।

৯.       শান্তনু কায়সার, ‘প্রেক্ষাপট সংস্কৃত নাটক’, 888sport appsের নাটক ও নাট্যদ্বন্দ্বের ইতিহাস, কথাপ্রকাশ, 888sport app, ২০১৪, পৃ ৩৩।

১০.    বিপস্নব বালা, আধুনিক বাংলা থিয়েটার : 888sport live chat ও রাজনীতি, সোনার বাংলা প্রকাশন, কলকাতা, ২০১৫, পৃ ২৬২।

১১.    ‘আলাপনে সেলিম আল দীন। সাক্ষাৎকার : বিপস্নব বালা, সোহেম হাসান গালিব ও হাসান শাহরিয়ার’, থিয়েটারওয়ালা (সং হাসান শাহরিয়ার), 888sport app, জানুয়ারি-জুন ২০০৮, পৃ ১৬৭।

১২.     সেলিম আল দীন, তিনটি নাটক, বাংলা একাডেমি, 888sport app, ১৯৮৬, পৃ ৯৩।

১৩.    বিপস্নব বালা, আধুনিক বাংলা থিয়েটার : 888sport live chat ও রাজনীতি, সোনার বাংলা প্রকাশন, কলকাতা, ২০১৫, পৃ ২৬৫।

১৪.     ‘আলাপনে সেলিম আল দীন। সাক্ষাৎকার : বিপস্নব বালা, সোহেম হাসান গালিব ও হাসান শাহরিয়ার’, থিয়েটারওয়ালা (সং হাসান শাহরিয়ার), 888sport app, জানুয়ারি-জুন ২০০৮, পৃ ১৬৮।

১৫.    বিপস্নব বালা, আধুনিক বাংলা থিয়েটার : 888sport live chat ও রাজনীতি, সোনার বাংলা প্রকাশন, কলকাতা, ২০১৫, পৃ ২৭০।

১৬.    বিপস্নব বালা, ‘888sport appর মঞ্চে মহাকাব্য-প্রাণিত নাট্য’, 888sport appsের নাগরিক থিয়েটার : অনেকান্ত অবলোকন, বিশ্ব888sport live football ভবন, 888sport app, ২০১৫, পৃ ৪৩।

১৭.     শান্তনু কায়সার, 888sport appsের নাটক ও নাট্যদ্বন্দ্বের ইতিহাস, কথাপ্রকাশ, 888sport app, ২০১৪, পৃ ৩৩।

১৮.   রামেন্দু মজুমদার, ‘888sport appsের নাটক : ১৯৭২-৮৬’, নির্বাচিত রচনা, কথাপ্রকাশ, 888sport app, ২০১৮, পৃ ১১৬।

১৯.   আনু মুহাম্মদ, ‘সেলিম আল দীনের সৃষ্টিকথা’, থিয়েটারওয়ালা (সং হাসান শাহরিয়ার), 888sport app, জানুয়ারি-জুন ২০০৮, পৃ ৯৬।

২০.     আব্দুলস্নাহেল মাহমুদ, ‘পাখির চোখে দেখা’, থিয়েটারওয়ালা (সং হাসান শাহরিয়ার), 888sport app, জানুয়ারি-জুন ২০০৮, পৃ ৭৯।

২১.     নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ‘বাংলা নাটকের স্বরূপ অন্বেষণ ও সেলিম আল দীনের নাটক’, নতুন দিগন্ত : জানুয়ারি-মার্চ ২০১৩ (সং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী), সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র, 888sport app, ২০১৩, পৃ ১৪৬।

২২.     লুৎফর রহমান, ‘888sport appsের সাম্প্রতিক থিয়েটার চর্চা ও হরগজ’, সাত সওদা : সেলিম আল দীন ৫০তম জন্মবার্ষিকী 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য (সং মফিদুল হক, অরুণ সেন), 888sport live footballপ্রকাশ, 888sport app, ২০০৮, পৃ ১৪৮।

২৩.    লুৎফর রহমান, কালের ভাস্কর সেলিম আল দীন, রোদেলা, 888sport app, ২০০৯, পৃ ৬৩-৬৪।

২৪.     পবিত্র সরকার, ‘নতুন নাট্যভাষা : রবীন্দ্রনাথ, বাদল সরকার, সেলিম আল দীন’, নতুন দিগন্ত, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৯ (সং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী), সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র, 888sport app, ২০০৯, পৃ ১৬।

২৫.         সেলিম আল দীন, ‘888sport live chatে একাঙ্গীকরণ বা ফিউশন তত্ত্ব’, থিয়েটার স্টাডিজ : জুন ২০০৬ (সং সেলিম আল দীন), নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, 888sport app, ২০০৬, পৃ ১০।