অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) পেশা সূত্রে অখণ্ড বঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক ও জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেকালের নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ায় মহকুমা শাসক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন ১৯৩৫-৩৬-এ। এই কালপর্বে নানাসূত্রে যেসব মানুষের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রচিত হয়, তাঁদের কথা সময়ের দীর্ঘ-ব্যবধানেও তিনি বিস্মৃত হননি। কুষ্টিয়ায় তাঁর কর্মস্থলে একজন উদার-অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনের 888sport live footballপ্রেমী মানুষকে তিনি পেয়েছিলেন-বাঙালি মুসলমানের জাতীয়তা ও স্বদেশ সম্পর্কে ভ্রান্তি নিয়ে যাঁর খেদ ও ক্ষোভ ছিল-888sport sign up bonusচারণায় সেই মানুষটি সম্পর্কে অকপটে তিনি বলেছেন : ‘আমার প্রতিবেশী ফজলুল বারি চৌধুরী প্রায়ই আসতেন আলাপ করতে। তিনি একদিন আমাকে বলেন, ‘মুসলমানরা জানে না কোনটা তাদের দেশ।’ অর্থাৎ হিন্দুদের দেশ যেমন হিন্দুস্থান, বাঙালিদের দেশ যেমন 888sport apps, মুসলমানদের দেশ তেমন কী? এই জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া গেল পাঁচ বছর বাদে মুসলিম লীগের নেতাদের মুখে। সাতশো বছর ধরে হিন্দুস্থানে বাস করার পরে তাঁরা কলম্বাসের মতো আবিষ্কার করেন যে, তাঁদের দেশ পাকিস্তান’ (জীবন যৌবন, কলকাতা, জানুয়ারি ১৯৯৯, পৃ ৯৯)। অন্নদা শঙ্কর তাঁর লালন ও তাঁর গান বইয়েও প্রসঙ্গক্রমে ফজলুল বারি চৌধুরীকে (১৯০৪-৭৪) 888sport app download for android করেছেন এইভাবে- ‘একজন সত্যিকার উদারমনা মহাপ্রাণ ভদ্রলোক, যাঁর পরিচয় ধর্মে নয়, সহৃদয়তায়’ (প্রথম ‘মিত্র ও ঘোষ’ সংস্করণ, কলকাতা, চৈত্র ১৩৯৮, পৃ ২৩)। আবার অন্যত্র তাঁকে ‘আমার প্রিয়বন্ধু’ (ওই, পৃ ২৬) এবং তাঁর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র (ওই, পৃ ৩৫) কথা উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র এক লেখায় অন্নদাশঙ্কর ফজলুল বারিকে 888sport app download for android করেন সামান্য বড়ো পরিসরে যাতে তাঁর পরিচয় আরো স্পষ্টহয় : ‘কুষ্টিয়ায় আমি মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলুম ১৯৩৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে কুড়িমাস। সে সময় আমি যেকয়জন স্থানীয় ভদ্রলোকের সংস্পর্শে এসেছিলাম তাঁদের অন্যতম ছিলেন … ফজলুল বারি চৌধুরী সাহেব। তিনি মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে আলাপ করতে আসতেন ও অনেকক্ষণ থাকতেন। … তাঁর মার্জিত রুচি, শান্ত স্বভাব, বিবিধ বিষয়ে ঔৎসুক্য, 888sport live footballপ্রীতি, হিন্দু-মুসলমানেসমদর্শিতা ও সাদাসিধে জীবনযাত্রা আমাকে আকৃষ্ট করত। আমার দ্বার ছিল তাঁর জন্যে অবারিত। … মুসলমানদের মধ্যে তেমন যোগ্য ব্যক্তির 888sport free bet বেশি ছিল না। সদ্বংশীয় ও বিত্তবান তথা সুশিক্ষিত বলে উপযুক্ত বিবেচনা করে আমি তাঁকে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট পদের জন্যে সুপারিশ করেছিলুম। ঠিক মনে পড়ছে না। হয়তো তিনি আগে থেকেই সে পদে ছিলেন আমিতাঁর ক্ষমতাবৃদ্ধির সুপারিশ করেছিলুম।’
তিরিশের দশকের গোড়ার দিকে কুষ্টিয়ায় মহকুমা শাসক হিসেবে অন্নদাশঙ্করের পূর্বসূরি ছিলেন হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৫-৮৫)। এই কর্মস্থলের বিষয়ে 888sport sign up bonusচর্চা করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন : ‘আর একজন স্থানীয় যুবক আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তাঁর নাম ছিল ফজলুল বারি চৌধুরী। তাঁর আচরণে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কোনো চিহ্ন আমি খুঁজে পাইনি। বাঙালীর সংস্কৃতি, বিশেষ করে বাংলা 888sport live footballের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ। আমি চলে যাবার আগে একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করে আমাকে দিয়ে তার দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন’ (যা দেখেছি, কলকাতা, জানুয়ারি ১৯৯৭, পৃ ৯৬)। আবার তাঁর সম্পর্কে ভিন্ন এক 888sport sign up bonusচারণায় হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন : ‘সরকারী কর্মচারী হিসাবে আমি কুষ্টিয়ার মহকুমা শাসক হিসাবে ১৯৩১-৩৩ এই দুই বছর ছিলাম। তখন যাঁদের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ গড়ে ওঠে জনাব ফজলুল বারি চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। তাঁরমতউদারহৃদয়, সমাজ-সচেতন, কল্যাণ-ব্রতী মানুষ আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি। সমাজকল্যাণমূলক কার্যসম্পর্কেই আমার তাঁর সহিত ঘনিষ্ঠতা। স্বল্পদিনের পরিচয় হলেও তাঁর চরিত্রগুণ আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।’
বুদ্ধিরমুক্তি-আন্দোলনের পুরোধা, লেখক-শিক্ষাবিদ-888sport apkসাধক জাতীয় অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১) তাঁর এই প্রিয়জন সম্পর্কে উল্লেখ করেন : ‘মরহুম ফজলুল বারি চৌধুরীর … হাসি-মুখখানি আমার এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে। ওর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় কুষ্টিয়ার পুরাতন হাইস্কুলের একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে। আমি যখন ঐ স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে [বর্তমান দশম শ্রেণি] পড়ি তখন ও পড়তো আমার কয়েক ক্লাস নীচে। আমি কিছুকাল ওর পিতা, নামজাদা ব্যবসায়-জীবী, কওসের উদ্দীন চৌধুরী সাহেবের বাড়ীতে গৃহশিক্ষক রূপে কাজ করেছি। তাতে বুঝতে পেরেছিলাম-ছেলেটার প্রতিভা আছে। ভালছেলেকে পড়াতে স্বভাবতঃই ভাললাগে। বিশেষ করে অংক ও ইংরেজীতে ওর অনুরাগ আছে দেখে অংকের সঙ্গে কিছুটা ইংরেজীও পড়াতাম। … ফজলুর দক্ষতা লক্ষ্য করে ওর প্রতি আমার অনুরাগ বৃদ্ধি হয়েছে। আবার পরবর্তীকালে জনাব কওসের উদ্দীন চৌধুরী সাহেবের উদ্যোগে আমার মেজোবোন সালেহা খাতুনের সহিত ফজলুর বিবাহবন্ধন হয়। … এইভাবে ফজলুর সঙ্গে আমার গুরু-শিষ্যের চেয়েও দৃঢ়তর কুটুম্ব-সম্পর্ক গড়ে ওঠে’ (‘ফজলুল বারি চৌধুরী 888sport sign up bonusকথা’, কাজী মোতাহার হোসেন রচনাবলী, ৩য় খণ্ড, 888sport app, মে ১৯৯২, পৃ ৫০)। সারস্বত সমাজের এই তিন মনস্বীর 888sport sign up bonus-মূল্যায়নেআশা করি এক বিস্মৃতমফস্্সল-এলিটেরমন-মনন-মেধা-কৃতির কিছু আভাস পাওয়া যাবে।
দুই
কয়েক পর্বে শিয়ালদহ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত রেললাইন বসেছিল উনিশ শতকের সাতের দশকে। শহর কুষ্টিয়ার বুক চিরে চলে গিয়েছিল সেই লাইন। সেই রেলপথের এপারে-ওপারে মজমপুর মৌজায় একচাকলায় প্রায় দুশো বিঘে জমি কেনেন ও বন্দোবস্ত নেন বড়োকর্তা অর্থাৎ চৌধুরী কওসের উদ্দিন আহমদ (১৮৬৫-১৯৬১) নলডাঙ্গার জমিদার রাজা প্রমথভূষণ দেবরায়ের কাছ থেকে। নলডাঙ্গার রাজাদের সঙ্গে তাঁদের কয়েক পুরুষের সম্পর্ক রাজস্ব আদায়ের সুবাদে। নলডাঙ্গার নিষ্কর জমিও তাঁরা ভোগ করতেন। তো এই রেললাইনের ঠিক পাশেই শেষ-কোঠাবাড়িটিবানানবড়োকর্তা। তাঁদের পাঁচ পুরুষের আদিবাড়িও ছিল এরই কাছাকাছি মজমপুর গ্রামের কেন্দ্রে। বেশিদিন তিনি এক বাড়িতে থাকলে হাঁপিয়ে উঠতেন, তাই ঘনঘন আবাস বদলানোর প্রয়োজন হতো। এইকারণে কুষ্টিয়া শহর ও শহর-সংলগ্ন মজমপুর অঞ্চলে তাঁকে বেশ কয়েকটি বাড়ি বানাতে হয়।
তিন
বড়োকর্তার তখন বয়স হয়েছে, চলতে-ফিরতে তেমন পারেন না। তাই সংসার ও সহায়-সম্পত্তি দেখাশোনার দায় বর্তেছে ছোটোকর্তা মানে পুত্র ফজলুল বারি চৌধুরীর ওপরে। কিন্তু এ-সবে তাঁর মন ও মতি নেই। সে-কারণে ম্যানেজার রামপদ সাহাকিং বা ননী গোপাল বিশ্বাসের ওপরই ভরসা করতে হয়। নতুন বাড়ির প্রশস্ত অলিন্দে নিত্যই মুখে সিগ্রেট ও হাতে চায়ের পাত্র নিয়ে পায়চারি করেন ছোটোকর্তা। কোণের টেবিলে দু-একটা বই পৃষ্ঠা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে থাকে। একই ধূম্র শলাকার আগুন থেকে একটার পর একটা সিজর্স সিগ্রেট ধরিয়ে যান। কেমন যেন আনমনা ভাব। কান পাতলে শোনা যায় মৃদু স্বগতোক্তি-আবার কখনো অতুল প্রসাদের (১৮৭১-১৯৩৪) গানের কলি গুনগুনিয়ে ওঠে তাঁর গলায়- ‘ওগো আমার নবীন শাখী, ছিলে তুমি কোন্্বিমানে’ কিংবা ‘কে আবার বাজায় বাঁশি এ ভাঙাকুঞ্জবনে’। হয়তো তাঁর অস্থিরতা ও নিঃসঙ্গতার বেদনা ফুটে ওঠে এসবের ভেতর দিয়ে। এই ছবিটি আসন্ন দেশভাগের কালের।
চার
ফজলুল বারি চৌধুরী জন্মেছিলেন ১৯০৪-এ ডিসেম্বরের ১ তারিখে, মজমপুরের আদিবাড়িতে। বাবা-মায়েরএকমাত্রপুত্র, তাঁর সঙ্গীকে বলদু-বছরের বড়ো ভগ্নি। বংশ পুরাণ ঘাঁটলে দেখা যায়, এঁদের পূর্বপুরুষ বাংলামুলুকের বাইরে থেকে সওদাগরি ব্যবসার সূত্রে নদীপথে এই অঞ্চলে এসে বসতি গড়ে তোলেন। একসময় গড়াই নদীর একটি ধারা মজমপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতো, সওদাগরের বজরার বহর এই গ্রামের যে-ঘাটে বাঁধা হয়, তালোকমুখে ‘বালক মাঝির পোল’ নামে পরিচিত ছিল। বিত্ত, বিদ্যা ও বংশকৌলীন্যে এই পরিবার ন্যূন ছিল না। তাঁর জন্মকালে চৌধুরী পরিবারের খুবই রমরমা। পূর্বপুরুষের জোতদারি ও লাখেরাজ সম্পত্তির আয় তো ছিলই, তার ওপরে পিতা চৌধুরী কওসের উদ্দিন তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল বিত্তের অধিকারী। শুধু তাই নয়, বিশ শতকের একদম গোড়ায় কওসের উদ্দিন কুষ্টিয়া অঞ্চলে 888sport live chat-কলকারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ‘কুষ্টিয়া সুগার ফ্যাক্টরি’ নামে খান্দেশ্বরি চিনির কল, ইট ও সুরকি-মিল, ‘আলফালাক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেড’, ‘রেবেকা মিলস্্লিমিটেড’ –এইসব প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন। কুষ্টিয়া অঞ্চল শুধু নয়, সেকালের নদীয়া জেলায় তিনিই ছিলেন প্রথম মুসলিম 888sport live chatপতি। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তরকালে তাঁর দৌহিত্র এ এমআগাইউসুফ (১৯২৪-২০০৩) 888sport live chatোদ্যোগে নিয়োজিত হন এবং দেশে সফল 888sport live chatপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও সেইসঙ্গে বিদেশেওপরিচিতি লাভ করেন।
সামাজিকপ্রভাব-প্রতিপত্তিও কওসের উদ্দিনের কম ছিল না। মজমপুর পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন-সফল ও কুশলী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছোটোলাটের আদেশে বাংলার প্রাদেশিক সরকারের তরফ থেকে অনেকবারইপ্রথম শ্রেণির সার্টিফিকেট ও সোনার মেডেল লাভ করেন। দীর্ঘকাল পালন করেন আদালতের জুরির দায়িত্ব। সমাজ-সংস্কার ও শিক্ষা-প্রসারেও তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ-বিষয়ে তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের প্রখ্যাত সমাজ-সংস্কারক সৈয়দ আবদুল কুদ্দুস রুমী (১৮৬৭-১৯২৩), খ্যাতিমান জনসেবক ও মোক্তার খোদাদাদ খান (১৮৬৬-১৯৩৫), বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রজব আলী খান চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯৫৮) ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও সহযোগী। নিজে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ ও প্রভাব যথেষ্টই ছিল। মুসলিম লীগকে বাংলার মুসলমান সমাজের অধিকার-আদায়ের যোগ্য প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করেননি-লীগকে বলেছেন ‘আত্মঘাতী’ এবং ‘উহা বঙ্গীয় মোস্লেমনেতৃগণ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত’। ১৯২৭ সালে বেঙ্গল লেজিস্লেটিভ কাউন্সিলের তৃতীয় নির্বাচনে মুসলিম লীগ-প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রচারপত্র ছাপিয়ে সমর্থন করেছেন নির্দলীয় [স্যার] আজিজুল হককে (১৮৯২-১৯৪৭)।
অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনের মানুষ ছিলেন। হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি-রচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কওসের উদ্দিনের উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনারপরিচয় মেলে সেকালের সাময়িকপত্রে। একসময়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর (১৮৯৭-১৯৪৫?) ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও রাজনৈতিক সঙ্গীজন নেতা হেমন্ত কুমার সরকার-সম্পাদিত কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জাগরণ পত্রিকার ‘হিন্দু-মুসলমান বিরোধ মিটমাট’ শিরোনামের একটি খবরে (১৬ আষাঢ় ১৩৩১/ ৩০ জুন ১৯২৪) জানা যায় : ‘গত রবিবার, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ জগতি উদিবাড়ী মসজিদ ঘরের সামনে দিয়া হিন্দুরা কীর্ত্তন করিয়া যাইবে ইহা সেখানকার মৌলবী সাহেবের সহ্য হয় নাই, তাই তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে কোরাণের পদ আওড়াইয়া তাহার অন্য ব্যাখ্যা করিয়া উত্তেজিত করেন যে হিন্দুরা আমোদআহ্লাদ করিতে করিতে পবিত্র মসজিদঘরের সামনে দিয়া গেলে মসজিদের অবমাননা হইবে। ফলে, সেখানে বেশ বিরোধের সৃষ্টি হয় এবং দাঙ্গাহাঙ্গামা হইবে বলিয়া এস. ডি. ওর নিকট কয়েকজন এজাহার দেয়। এদিকে কংগ্রেস কমিটীতেও খবর আসে। কংগ্রেস তরফ হইতে শ্রীযুক্ত মোহিনী মোহন মজুমদার, শ্রীযুক্ত নিশিকান্ত পাত্র ও শ্রীযুক্ত মোহিনীমোহন চক্রবর্তী মহাশয়গণ শনিবার সন্ধ্যার সময় জগতি গমন করেন। হিন্দুদের প্রধান প্রধান সকলেই হরিসভার স্থানে উপস্থিত হন এবং মিটমাটের কথা চলিতে থাকে। মৌলবী ইসমাইল হোসেন মুসলমানদিগের পক্ষহইতে কংগ্রেস কর্ম্মীদের সহিত যান। সকলেই ভালভাবে মিটমাটের জন্য উৎসুক আছেন। এমন সময় মৌলবী কওছের উদ্দিন আহম্মদ স্থানীয় প্রেসিডেন্ট পঞ্চায়েৎ, তিনি ঐ স্থানে উপস্থিত হন। মৌলবী ইসমাইল হোসেনের সহিত মৌলবী কওছের উদ্দিন আহম্মদ সাহেবের কোরাণের ব্যাখ্যা ও ধর্ম্ম সম্বন্ধে তর্ক চলিতে থাকে। স্থানীয় মুসলমানরা সকলে উপস্থিত হন এবং মৌলবী ইসমাইল সাহেব তাঁদের বুঝিয়েছেন যে মসজিদের সামনে দিয়া কীর্ত্তন করিয়া গেলে মসজিদের অবমাননা হয় [। ] পরে অনেক তর্কবিতর্কের পর মুসলমান ভাইগণ হিন্দু ভাইদের কর্ত্তব্যের উপর ভার দিয়া মিটমাট হয়। এ স্থলে মৌলবী কওছের উদ্দিন আহম্মদ সাহেবের দেশপ্রাণতা, ধর্ম্মের মহানুভবতা ও উদারহৃদয়েরপরিচয় পাইয়া হিন্দুমুসলমানসকলেইচমৎকৃতহইয়াছেন।’
খ্রিষ্টান-সমাজের সঙ্গেও ছিল তাঁর সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক-তাইকুষ্টিয়া শহরে তাঁদের গির্জা-নির্মাণে সাহায্য করেন প্রয়োজনীয় ইট দিয়ে। জনহিতকর কোনো কাজেই তিনি সাড়া না দিয়ে পারেননি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলের উন্নয়নে, কুষ্টিয়া শহরের চারু লতা বালিকা বিদ্যালয় ও মিউনিসিপ্যাল একাডেমী নির্মাণে এবং কুষ্টিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদার হাতে সহায়তা করেছেন। গ্রামের মসজিদ নির্মাণ, লাইব্রেরি, নিম্ন প্রাইমারি স্কুল ও নাইট স্কুল প্রতিষ্ঠা, দরিদ্র ছাত্রদের জায়গিরের ব্যবস্থা- এসব কাজেও তিনি ছিলেন অগ্রণী। কাজী মোতাহার হোসেন তাঁর বাড়িতে জায়গির থেকেই কুষ্টিয়া হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন। মাড়োয়াড়ি ও হিন্দু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন মার্চেন্টস্্ অ্যাসোসিয়েশন। আবার স্বদেশি আন্দোলনের প্রভাবে কুষ্টিয়া শহরে ‘মাতৃ-ভাণ্ডার’ নামে দেশজ পণ্যের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে তাঁর প্রেরণায়। শৌখিন মানুষ ছিলেন। যাত্রা-থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তাঁর উৎসাহে নিজের গ্রাম মজমপুরে গড়ে ওঠে সার্কাসের দল ও লাঠিখেলার বাহিনী। ‘আঞ্জমানে এত্তেফাক এসলাম’সহ অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাঁর 888sport live chatোদ্যোগ ও সমাজসেবার অবদানের উল্লেখ মেলে নানা সূত্রে। শচীন্দ্রনাথ অধিকারীর (১৮৯৭-১৯৭৯) শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৭৪) বইয়ে কুষ্টিয়া-অঞ্চলের কৃতী মানুষের তালিকায় তাঁর নাম পাওয়া যায়। জেড. এ. তোফায়েলের Sociology of Kushtia (১৯৭১) ও শ. ম. শওকত আলীর (১৯৩৯-২০০১) কুষ্টিয়ার ইতিহাস (১৯৭৯) এবং কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত জাগরণ ও দীপিকা পত্রিকাতেও তাঁর কর্মকাণ্ডের বিবরণ মেলে। তাঁর সামাজিক কাজের নানা সরকারি স্বীকৃতিও মিলেছিল। চৌধুরী কওসের উদ্দিন আহমদের নামে দেশভাগের অনেক আগেই পৌরসভার সৌজন্যে মজমপুর রেলগেট থেকে রেন উইক অ্যান্ড কোম্পানি পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি ছিলেন কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটির সরকার-মনোনীত কমিশনার। এমন পারিবারিকঐতিহ্যের উদার প্রেক্ষাপটেই ফজলুল বারিচৌধুরীর আবির্ভাব।
পাঁচ
ফজলুল বারি চৌধুরী লেখাপড়ায় আগাগোড়া মেধার পরিচয় দিয়েছেন। গ্রামের খোন্দকার দিলবার হোসেনের পাঠশালায় লেখাপড়ার হাতেখড়ি। তারপর ভর্তি হন কুষ্টিয়ার মিশন স্কুলে (১৮৯৮)। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ১৯২১-এ, কুষ্টিয়া হাইস্কুল (১৮৬১) থেকে। এই পরীক্ষায় কয়েক বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগেই শুধু পাশ করেননি, ফলাফলের ভিত্তিতে মাসিক ১০ টাকা জলপানিও পান। এই স্কুল থেকে তাঁর আগে উল্লেখযোগ্য মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অসাধারণ ফল করে বৃত্তি পেয়েছিলেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ১৯১৫-তে। ফজলুল বারি চৌধুরী কলকাতায় গিয়ে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। এখান থেকে ১৯২৩-এ প্রথম বিভাগে আইএসসি ও ১৯২৫-এ বিএসসি পাশ করেন। এরপর পিতার আগ্রহে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যখন তিনি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, হঠাৎই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন-জীবন-সংশয় হয়ে ওঠে তাঁর। বিচলিত পিতা তখন তাঁকে নিয়ে যান সেই সময়ের উত্তরপ্রদেশের জেলা-শহর-নৈনিতাল থেকে প্রায় আট মাইল (১১ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত স্বাস্থ্যনিবাস ভোওয়ালিতে-এই হিল-স্টেশনটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪২৭ ফুট উঁচুতে। সেখানকার কিং এডওয়ার্ড স্যানেটোরিয়ামে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন। এই ঘটনার পর একমাত্র পুত্রকে আর চোখের আড়াল করতে চাননি বড়োকর্তা। ফলে ফজলুল বারির চিকিৎসা বিদ্যাশিক্ষার এখানেই সমাপ্তি ঘটে।
ছয়
কুষ্টিয়ায় ফিরে এসে ফজলুল বারি চৌধুরী নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে নিজেকে যুক্ত করেন। তিরিশের দশকের গোড়াতেই নির্বাচিত হন মজমপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। একনাগাড়ে প্রায় বিশ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই গড়ে তোলেন কুষ্টিয়া মহকুমা ইউনিয়ন বোর্ড অ্যাসোসিয়েশন। এই কাজে সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার খানসাহেব হারুন-অল-রশিদ (১৮৯৮-১৯৭৪), কুমারখালীর সৈয়দ আবুল ফজলের মতো স্থানীয় উৎসাহী সমাজ নেতাদের। ফজলুল বারি চৌধুরী ছিলেন এই অ্যাসোসিয়েশনের কখনো সম্পাদক কিংবা কোষাধ্যক্ষ, কখনো বা সভাপতি। পল্লিমঙ্গল ও পল্লিবাসীর সেবাই ছিল এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। এই সংগঠনের কাজ সেকালে বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছিল-এসবের বিবরণ মেলে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায়, বিশেষ করে দীপিকায়।
এর কিছু পরে অর্থাৎ ১৯৩৩ সালে আরো গুরুদায়িত্ব পান অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। তাঁকে ওই পদে নিয়োগের প্রস্তাব করেছিলেন কুষ্টিয়ার সেই সময়ের মহকুমা শাসক হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায়-কবি ও প্রাবন্ধিক, আরো পরে ডক্টর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফজলুল বারি চৌধুরী প্রথমে ছিলেন কুমারখালী বেঞ্চের হাকিম। পরে মহকুমা শাসক অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর ক্ষমতা-বৃদ্ধির সুপারিশ করেন এবং তিনি তখন কুষ্টিয়া বেঞ্চের ভার পান। অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব তিনি ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর পালন করেন। কেবল গ্রাম নয়, শহরের নানা প্রতিষ্ঠানও তাঁর সেবা পেয়েছে। ১৯৩৫ ও ১৯৩৯-এ তিনি পরপর দুইবার কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার নির্বাচিতহন।
এইসব দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশকয়েকটি কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। পশ্চিমদিক থেকে কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশদ্বার মঙ্গলবাড়িয়ার মরা-গড়াইয়ের ওপরে যে সেতু তৈরি হয়েছিল ‘হিরণ¥য়ব্রিজ’ নামে, তার পুরো দায়িত্ব বর্তেছিল তাঁরই ওপর। আবার মজমপুর থেকে মেটন গ্রাম পর্যন্ত পাটাতন করা মসৃণ যে-রাস্তা নির্মিত হয়, তা-ও তাঁরই অবদান। শহরের চারুলতা বালিকা বিদ্যালয় কিংবা কুষ্টিয়া কলেজের ভবন-নির্মাণের দায়িত্বও পিতার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তিনিই পালন করেছিলেন। কুষ্টিয়া কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ যখন অর্থাভাবে আটকে যায় তখন তিনি সেই ১৯৪৬-৪৮ সালে কয়েকপর্যায়ে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা দান করেন।
এইসব কাজের বাইরে খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাতেও তাঁর একটা ভূমিকা ছিল। তাঁর সহপাঠী-বন্ধু শিবকালী মণ্ডল ছিলেন বিপ্লবী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। এই স্বরাজকামী সুহৃদ শিবকালী যখন ব্রিটিশ পুলিশের নির্যাতনে ১৯৩০-এ কৃষ্ণনগর জেলে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর 888sport app download for androidে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি মুখ্য ভূমিকা নেন। শিবকালীর 888sport sign up bonusরক্ষায় থানাপাড়ায় ছয়রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠে ‘শিবকালী মেমোরিয়াল লাইব্রেরী ও ক্লাব’। শিবকালীর নামে প্রবর্তিত হয় ফুটবল-শিল্ড। ফজলুল বারি চৌধুরী ছিলেন এই কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা। হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক 888sport sign up bonusচর্চায় জানাচ্ছেন, তিনি যখন ১৯৩৫-এ কুষ্টিয়া থেকে বিদায় নেন, তখন ফজলুল বারি চৌধুরী একটি লাইব্রেরি স্থাপন করে তাঁকে দিয়ে তার উদ্বোধন করান (যা দেখেছি, পূর্বোক্ত, পৃ ৯৬)। এর অনেক পরে ১৯৫৮ সালে তাঁর বাড়ির বৈঠকখানায় ‘তরুণ সংঘ লাইব্রেরী’ ও ষাটের দশকের মাঝামাঝি মজমপুরে আদি ভদ্রাসনের আঙিনায় পিতার 888sport sign up bonusতে ‘কে. চৌধুরী মেমোরিয়াল লাইব্রেরী’ নামে যে-গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, তার পেছনেও ছিল তাঁর প্রেরণা। পরিমল থিয়েটার কিংবা কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি- এ-সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠ যোগ। বেশকিছুকাল প্রাক্তন কোর্ট-কাচারির উলটোদিকে অবস্থিত কুষ্টিয়া শহরের প্রধান জামেমসজিদ কমিটির ছিলেন সম্পাদক। কুষ্টিয়ায় তাঁর উদ্যোগেই রিকশা-শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কিছু আগে এবং প্রথম থেকেই তিনি এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গেও তাঁর যে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল এ-থেকে তা বেশ বোঝা যায়।
সাত
ফজলুল বারি চৌধুরী কখনো সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েননি, তবে তিনি ছিলেন রাজনীতিসচেতন। এই পরিবার প্রথম থেকেই মুসলিম লীগের রাজনীতি সমর্থন করেনি। মুসলিম লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে যখন [স্যার] আজিজুল হক বেঙ্গল লেজিস্লেটিভ কাউন্সিলে (বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা) নির্দল প্রার্থী হন, তখন তাঁকেই সমর্থন করেছিলেন ফজলুল বারির পিতা চৌধুরী কওসের উদ্দিন। এই ধারা অব্যাহত ছিল। পরে কৃষক-প্রজা পার্টি চৌধুরী-পরিবারের সমর্থনপায়। বরাবর এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, এমএলএ ও মন্ত্রীশামসুদ্দীনআহমদকে (১৮৮৯-১৯৬৯) সমর্থন দিয়েছেন এবং দেশভাগের আগে কুষ্টিয়ার এই আসনে কখনো মুসলিম লীগ জয়ী হতে পারেনি। পরেও ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয়যুক্ত ফ্রন্ট-প্রার্থী কাজী কফিল উদ্দীনআহমদ (১৮৯৯-১৯৬৭) মোক্তারকেসমর্থন করেন ফজলুল বারি চৌধুরী। যুক্তফ্রন্ট-প্রার্থীর পক্ষেপ্রচারপত্রের জন্যে ভোটের 888sport app download apkও লিখে দেন তিনি। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়। মুসলিম লীগের প্রতি এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে এই পরিবারকে ক্ষতির মাশুলও গুনতে হয়। দেশভাগের পরপরই স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতাদের কারো কারো প্ররোচনায় চৌধুরী কওসের উদ্দিনের কুষ্টিয়া শহরের সুদৃশ্য দোতলা বাড়িটি পুলিশ সুপারের বাসভবনের জন্যে সরকার রিকুইজিশন করে (১৯৪৭-৭১)। অথচ সে-সময়ে ভারতে চলে-যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিত্যক্ত বাড়িও কম ছিল না-ছিল রিকুইজিশন করার মতো মুসলিম লীগ নেতাদের যোগ্য বাড়িও। সংগত কারণেই অনেক চেষ্টা-তদবির করেও এই বাড়ি ছাড়ানো যায়নি সরকারের হাত থেকে। বরং কুষ্টিয়ার প্রথম জেলা শাসক ও পুলিশ সুপার এই পরিবারের প্রতি অনুচিত বিদ্বেষ ও বিরূপতার পরিচয় দেন। কমরেড সুধীর সান্যাল (নন্দসান্যাল) (১৯১৫-৯৭) তাঁর এক লেখায় এ-প্রসঙ্গে বলেছেন : ‘দেশ বিভাগের পর তাঁদের … সুন্দর অট্টালিকাটি জিলা ম্যাজিস্ট্রেট … অন্যায়ভা বেদখল (Sociology of Kushtia) করে পুলিশ সুপারের ‘বাংলো’ করেছিলেন ‘পাকিস্তানের স্বার্থেই’। একবারও ভাবলেন না বৃদ্ধ ও অসুস্থ পিতা এবং পুত্র বারিসাহেবের নিদারুণ অসুবিধার কথা-মর্যাদা, অবদান ও সরকারি-বেসরকারি সমাজসেবার কথা। সেদিনের কথা আজও আমার মনে পড়ে গভীর দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে। [ফজলুল] বারি সাহেবের অসাম্প্রদায়িক কাজ-কারবার ও মানবিক মূল্যবোধের জন্যই বেশকিছু ভেদ সৃষ্টিকারী উগ্র সাম্প্রদায়িক নেতাদের (?) পরামর্শ মত নাসিরুদ্দিন সাহেব-এর পক্ষে ঐ কুকর্ম করা অতি সহজেই সম্ভব হয়েছিল।’
প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতি ফজলুল বারির যে একটা মৌন সমর্থন ও সহানুভূতি ছিল তার সাক্ষ্য দিয়েছেন বিশিষ্ট বামপন্থি রাজনীতিক রাজশাহী জেলের খাপড়াওয়ার্ডে পুলিশের গুলিবর্ষণে আহত কমরেড সুধীর সান্যাল (নন্দসান্যাল) –সেই পরিচয় আরো মেলে নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ফকির চাঁদ সাহা (১৯২০-২০০৩) ও শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল ওয়াহেদের (১৯১৭-২০০৭) বক্তব্যে। ষাটের দশকে আইয়ুববিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হুলিয়া ও গ্রেফতারি পরওয়ানা মাথায় নিয়ে স্থানীয় ছাত্রনেতারা আশ্রয় নিতেন ফজলুল বারি চৌধুরীর বাড়িতে। আত্মগোপনকারী এইসব ছাত্রনেতার মধ্যে পরবর্তী সময়ে কেউ কেউ জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত হন, যেমন-নূর আল মজিকু (১৯৩৮-২০১৭, মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ, জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরে বিভক্ত দলের একাংশের সভাপতি), খোন্দকার আমিনুল হক বাদশা (১৯৪৪-২০১৫, ছাত্রলীগের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, পরে লন্ডন-প্রবাসী), খোন্দকার শামসুল আলম দুদু (ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক), বিমল ত্রিবেদী (ছাত্র ইউনিয়নের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ও পরে সিপিবি-র পাবনার আঞ্চলিক কমিটির নেতা)। পুত্রদের ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে এবং তাঁদের খবর জানার জন্যে প্রায় ৭০ বছরের বৃদ্ধ অসুস্থ ফজলুল বারি চৌধুরীকে ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি পাক-মিলিটারি কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতনচালায়। ফলে তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে। ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে জীবনকে টেনে নিয়ে যান ১৯৭৪-এর ১৮ মার্চ পর্যন্ত।
আট
স্কুলে থাকতেই ফজলুল বারি চৌধুরীর লেখালেখির সূচনা। তাঁর বাল্য বা কৈশোরের কোনো লেখার হদিস মেলে না। তবে ১৯ বছর বয়সে লেখা একটি মুদ্রিত বিয়ের পদ্য (আষাঢ় ১৩৩০) থেকে বেশ বোঝা যায় যে, এ-বিষয়ে তাঁর হাত-মকশো শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। কলকাতার ছাত্রজীবনের কোনো লেখার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে কলকাতায় সওগাতের 888sport live football-মজলিশকিং বাগানের আসর-বাসরে তাঁর হাজিরার কথা জানা যায়। তাঁর 888sport live footballচর্চার নিয়মিত অনুশীলন শুরু হয় তিরিশের একদম গোড়া থেকে, যখন তিনি মেডিক্যাল কলেজের পড়া অসমাপ্ত রেখে ভোওয়ালি থেকে স্বাস্থ্যোদ্ধারের পর বাড়ি ফিরে আসেন। এই ঝোঁকটা বেশি করে জাগে যখন ১৯৩২-এ দেবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৮৩) ও গোপীপদ চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৯৯-১৯৮৭) উদ্যোগে কুষ্টিয়া থেকে দীপিকা নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ পায়। বলা চলে, এই দীপিকা পত্রিকাই তাঁর লেখক-পরিচয়টুকু ধরে রেখেছে। এ-ছাড়া তিনি কুষ্টিয়ার জাগরণ, সন্ধানী, যুগের আলো-এইসবপত্র-পত্রিকাতেও লিখতেন। মূলত গল্প-888sport app download apkর ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁর লেখার প্রয়াস। এর বাইরে দু-চারটে গানও রচনা করেছেন। দীপিকা পত্রিকায় তাঁর উদ্যোগে ‘পান্থশালা’ নামে একটি বারোয়ারি 888sport alternative link লেখার আয়োজনও হয়েছিল। খুব যে বেশি লিখেছেন তান য়। কিন্তু এই অল্প লিখেও নজর কেড়েছিলেন সেকালে। দীপিকার প্রতিষ্ঠাতা দেবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক লেখায় বিশেষ প্রশংসা করেছেন ফজলুল বারি চৌধুরীর ছোটগল্পের। তিনি বলেছেন : ‘প্রথম থেকেই গল্পলেখায় হাত তার পাকা। তার রচনার ভাষা, প্রকাশভঙ্গী, প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ এবং সবচেয়ে বড় কথা বিষয়বস্তুর শুচিতায় আমি তার লেখার উৎসাহী পাঠক ও সপ্রশংস সমালোচক ছিলাম। … ‘দীপিকা’ প্রকাশ বন্ধ হওয়ার পরও ফজলুল বারির 888sport live football-সাধনা চলেছিল কি না আমি জানি না। মনে হয় চলেনি। যদি চল্ত, আমার বিশ্বাস এতদিনে ছোটগল্প-লেখক রূপে সে দুই বাংলাতেই আজ স্বীকৃতি পেত’ (ফজলুল বারি চৌধুরী 888sport app download for androidিকা, কুষ্টিয়া, মার্চ ১৯৭৫, পৃ ১১)। তাঁর এক অনুরাগী কবি আবুল হোসেনেরও (১৯২২-২০১৪) প্রশংসা পেয়েছে এই গল্পগুলো। চকিত অবলোকনে তিনি আবিষ্কার করেছেন : ‘ফজলুল বারি চৌধুরীর গল্পগুলো পড়ে মনে পড়লো তার পরিহাসপ্রিয়তার কথা। কথা বলার সময় তার চোখমুখ মাঝে মাঝে হেসে উঠতো। কৌতুক থেকে ব্যঙ্গ খুব বেশি দূর নয়। তবু কাউকে কি কোন বিষয় নিয়ে তাঁকে ব্যঙ্গ করতে দেখিনি। তাঁর গল্পগুলোতে ব্যঙ্গপ্রচ্ছন্ন তো নয়ই, কোন কোনটি নিছক ব্যঙ্গের। কোথাও কোথাও করুণরস। তাঁর দেখার চোখটা তীক্ষè। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে একটা পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গিও লক্ষণীয়’ (শৈলী, 888sport app, ১ মে ১৯৯৮, পৃ ২২)। হালেওতাঁর গল্পগুলো পড়ে কারো কারো ভালো লেগেছে, -সে-কথা তাঁরা লিখেও জানিয়েছেন-যেমন বিচারপতি কে এম সোবহান (১৯২৪-২০০৭) বা ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ (জ. ১৯৫৮)।
বিচারপতি কে এম সোবহান তাঁর এক লেখায় (আসলে যা ছিল তাঁর ১ ডিসেম্বর ২০০৪-এর এক অভিভাষণের পরিমার্জিত লিখিতরূপ) প্রসঙ্গত ‘888sport live footballিক, সমাজসেবী ও আইনজ্ঞ’ ফজলুল বারি চৌধুরীর 888sport live footballকর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বিশেষ করে তাঁর ছোটগল্প কে এম সোবহানকে বেশি আকৃষ্ট করে। তাই তিনি মন্তব্য করেন : ‘ফজলুল বারি চৌধুরীর ছোটগল্পকে যদি যথাযথভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত যে আজকের দিনে মানুষ জানতে পারবে সত্তর [এখন প্রায় নব্বই-লেখক] বছর আগের মফস্বল শহরের একজন লেখকের মধ্যে কিরকম আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা ছিল।’ সেসঙ্গে উপসংহারে এ-কথাও বলতে তিনি দ্বিধা করেননি : ‘ফজলুলবারি চৌধুরীর 888sport live footballকর্ম আমাকে ভাবিয়েছে-মুগ্ধ করেছে। তাঁরবাঙালিয়ানা ও সেক্যুলার মনোভাবের কথা তাঁর কালের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বাঙালি পরিবারের কথা তিনি লিখেছেন এবং বাঙালির ঘরোয়া-জীবনের অনুভূতিকে তিনি প্রকাশ করেছেন। এই যে মা ছেলেকে কোলে টেনে নিয়ে বলছেন, ‘তুই ঘুমো’ – এ একান্তভাবেই স্নেহসিক্ত বাঙালিমায়ের অনুভূতির কথা। অন্য কোন দেশের কোন মা তার সন্তানের অনাগত ভবিষ্যৎ অকল্যাণের আশঙ্কায় এমন করে বুকে টেনে নেবে কি না জানি না। ‘অপরাজিতার স্নিগ্ধ নীলনয়ন’ বাঙালির চোখেই ধরা পড়বে-অন্য কারো চোখে ধরা পড়বে না। সেই বাঙালির জীবন ও অনুভূতির কথা আন্তরিকতার সঙ্গে ফজলুল বারি চৌধুরী ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর 888sport live footballে। আমি একজন বাঙালি বলেই তাঁর লেখা আমার মনকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। যেকোন বাঙালিতাঁরগল্পপড়েনিজেরবাঙালিত্বেরঅনুভূতিকেখুঁজেপাবেন।’
প্রাবন্ধিক-সমালোচক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষও তাঁর ছোটগল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। এক মূল্যায়ন-মন্তব্যে ড. ঘোষ বলেছেন : ‘ফজলুল বারি চৌধুরী (১৯০৪-১৯৭৪) 888sport appsের 888sport live footballের ধারায় বিস্মৃত একটি নাম। অথচ উনিশশ’ ত্রিশ-চল্লিশের দশকে অবিভক্ত বাংলায় কবি-ছোটগাল্পিক-প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি যথেষ্ট প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সেকালে তাঁর লেখা ছাপা হতো ‘দীপিকা’, ‘জাগরণ’, ‘সন্ধানী’, ‘বুলবুল’ প্রভৃতি সাময়িকপত্রে। সমাজসেবার মতো 888sport live football সেবাতেও তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধেই হঠাৎ করে লেখার জগৎ ছেড়ে দেন তিনি। ফলে অকালেই হারিয়ে যায় প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষররাখাএকজন888sport live footballিক। তবু, স্বল্পসময়ের সাধনায় তিনি যা রচনা করেছেন, তাতেই পাওয়া যায় তাঁর প্রতিভার পরিচয়, অনুধাবন করা যায় তাঁর ছোটগাল্পিক 888sport live chatিসত্তারস্বকীয়তা।’
নয়
খুঁজে-পেতে তাঁর মাত্র আটটি গল্পের হদিস মিলেছে। নানা প্রসঙ্গের গল্পে ব্যক্তির সমস্যার পাশাপাশি সমাজের নানা সংকট-অসংগতিও ধরা পড়েছে। লেখকের কৌতুক ও পরিহাস এইসব গল্পের শরীরে মিশে আছে। ফজলুল বারি ছিলেন 888sport apkের ছাত্র, তার আভাসও মিলবে এখানে। তাঁর ইংরেজি 888sport live footballপাঠের কিছুপরিচয়ও কখনো কখনো আবিষ্কার করা যায়। আর-একটি বিষয় হয়তো সচেতন পাঠকের চোখ এড়িয়ে যাবে না, তা হলো আর্থ-সামাজিক-ধর্মীয় সমস্যা-সংকট এবং সেইসঙ্গে পরাধীনতার প্রচ্ছন্নজ¦ালাও। অবশ্য স্থান বিশেষে সে-ও অনেকটা ব্যঙ্গ-কৌতুকের ভেতর দিয়েই প্রকাশ করেছেন, যেমন- ‘বোলান পাসের মহারাজা’। বোলান পাসের মহারাজা বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বাংলা-রাজ্য সফরশেষে বাড়িফেরার পর রানি দেশটি কেমন জিজ্ঞেস করলে মহারাজা জবাব দিয়েছেন- ‘চমৎকার’। ‘কি দেখলে’ –এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন- ‘ফিরিঙ্গী, মেড়ুয়া, ভাটিয়া, শিখ।’ রানির কৌতূহলী প্রশ্ন- ‘বাঙ্গালী নেই?’ রাজার নির্লিপ্ত জবাব- ‘না’, -তারপর ছড়া কেটে খোলাসা করে বলেছেন- ‘888sport apps আগাগোড়া বন্য।/ সাত ভূতে লুট্্ছেতার অন্ন ॥’ বাংলামুলুকে একচেটিয়া আধিপত্য যে অবাঙালিদেরই-বাঙালি যে নিজভূমে পরবাসী, রঙ্গ-রগড়ের ভেতর দিয়ে সে-কথাটিই এখানে উঠে এসেছে।
ধর্মীয়বিভাজন ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কুফল থেকে মুক্তি-চিন্তার আভাস মেলে ‘বিকার’ গল্পে। ধর্মই যে মানুষে মানুষে বিভক্তি ও বিরোধের মূল সেই কথাটিই এই গল্পে ফুটে উঠেছে। ‘সমুদ্র’ নামে এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সংগতভাবেই প্রশ্ন তুলেছে- ‘পৈতৃক সূত্রে আমি হিন্দু বটে। তবে উত্তরাধিকারে ধর্মজিনিষটা সন্তানে বর্তায় কি না বহুদিন থেকেভাবছি।’ ধর্মীয় কলহ ও কোলাহল থেকে রেহাই পেতে তাই তারা গড়ে তুলেছে ‘ইব্রাহিম সমিতি’র মতো এক অভিনব সংগঠন। এই সমিতির স্বাপ্নিক-পরিকল্পকদের ভাষ্য হলো- ‘… ভারতে ধর্মই প্রধান সম্পত্তি। ধর্মের নামে লাঠালাঠি এ বহুদিন থেকেই চলে আসছে। … তাই আমরা ‘ইব্রাহিম সমিতি’ স্থাপন করেছি। এতেই সায়িবাখৃস্ট, ইহুদি, ব্রাহ্ম, হিন্দু বা মুসলিম সবধর্মেরই সার বজায় রয়েছে। বৌদ্ধ, পারসীক, কনফুসিয়ান, সিন্তো কিছুই বাদ যায়নি। ধর্মের এমন একটা মিলনক্ষেত্র তৈরী করায় ভারতের একটা মস্ত সমস্যা সমাধান হয়েছে। … ধর্মের মারমুখী দিক্্টা শিথিল হলেই আর্থিক, রাজনীতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে সবাই এক হয়ে দাঁড়াতে পারব।’ শুধু তাই নয়, এমন আশাও পোষণ করা হয়েছে যে, ধর্মীয়বিবাদ-বিরোধ যখন থাকবে না ‘তখন সবাই একযোগে বিদেশীকে তাড়িয়ে দেব’। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আভাস ‘বোলান পাসের মহারাজা’ গল্পেও হাস্য-পরিহাসের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে বেয়াদব দাস আর পলেস্তারাখাঁ-র সহিংস কলহ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হয়েছে- ‘এটা হিন্দু-মুছলিম শক্তি-সংঘর্ষ। হয়তোএমন দিনআসবে যে সংঘর্ষ বদ্্লে সংঘে দাঁড়াবে।’
দেশসেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ একদল তরুণের ব্রত ও ব্রত-ভঙ্গের কাহিনি ‘পথ’ গল্পটি। দেশের মানুষের দুরবস্থা তাদের বিচলিত করেছিল। তাদের অন্তর থেকেই এই উপলব্ধি জেগেছে- ‘নিন্দা করি ভারতকে এবং তাহার কৃষ্টিকে যাহার আওতায় কোটী কোটী লোক অস্পৃশ্য হইয়া গিয়াছে।’ এই বেদনাও তাদের বিক্ষত করেছে যে, ‘লক্ষ লক্ষ শ্রীহীনপল্লীকাহারো সত্যিকার দৃষ্টিআকর্ষণ করিতেছে না’। অন্নের অভাব ক্লিষ্ট দেশে ‘এমন লোক … বিরল নয়, চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যার হয়তো জোটে না।’ দেশপ্রেমের আদর্শে প্রাণিত এই তরুণের দল সহজেই বলতে পারে, ‘দেশকে ভালবাসি। দেশের লোককে ভালবাসি। প্রত্যাশায় নয়, আনন্দে।’ কিন্তু এ-ও তাদের অজানা নয় যে, ‘এ দেশের সেবকও হরিজন।’ নানাবিদ্রƒপ-অপমানও তাদের সইতে হয়। একে একে প্রায় সকলেই যখন দেশসেবার কঠিন ব্রত থেকে আরাম-আয়েশের স্বচ্ছন্দ জীবনের প্রলোভনে সরে দাঁড়িয়েছে, অবশ্য এই নিরাশার ভেতরেও অল্পকয়েকজন হাল ছাড়েনি। গল্প শেষ হয় এক জীবনমুখী আশাবাদের প্রতীকী বর্ণনার ভেতর দিয়ে- ‘পূূর্বের আকাশফরসাহইয়াআসে। মেঘগুলিকাঁদিয়াপরিশ্রান্তহইয়াছে। রাস্তা দিয়া আবার মানুষের চলার আভাস পাই। খুরের শব্দ, ঘোড়ার হ্রেষা, চাকার ঘর্ঘর!’
অন্য গল্পগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি ও মেজাজের পরিচয় ছড়িয়ে আছে। জীবনযুদ্ধে পরাভূত থিয়েটারের এক বাতিল অভিনয়888sport live chatীর করুণ পরিণতির সূত্রে এক মানবিক আবেদন মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘অভিনেতা’ গল্পে। ‘ফেরিওয়ালা’র কাহিনিও ওই একই সুরে বাঁধা। জটিল মানব-মনস্তত্ত্বের গল্প ‘পরিহাস’। প্রিয়-পরিজন ও প্রীতিময় গ্রাম ছেড়ে আসা জলজীবনের সঙ্গী জাহাজের এক 888sport sign up bonusতাড়িত ফায়ারম্যানের মানসিকপ্রতিক্রিয়ার স্বরূপ অঙ্কিত হয়েছে ‘আগুনেরখেলা’ গল্পে। আসলে এক গভীর জীবনবোধ, মানবিকউপলব্ধি ও সমাজ-সংলগ্নতা তাঁর গল্পে বরাবর মিশে রয়েছে।
গল্পের বাইরে যে দু-চারটে গান লিখেছিলেন তাতে নজরুলের (১৮৯৯-১৯৭৬) রোমান্টিক গজলের ছায়া এসে পড়েছে। তাঁর 888sport app download apkর 888sport free betও প্রচুর নয়। এর মধ্যে ‘জিজ্ঞাসা’ নামে একটি 888sport app download apkর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। আত্মজিজ্ঞাসায় ব্যাকুল একক বিরদার্শনিক উপলব্ধি এখানে প্রকাশিত। এই 888sport app download apk সম্পর্কে আবুল হোসেন যে-কথা বলেছেন তা 888sport app download for android করা যায় : ‘… তাঁর মধ্যে যে একজন সত্যিকার লেখক ছিলো তা বুঝতে পারি তাঁর 888sport app download apkটি [‘জিজ্ঞাসা’] পড়ে। … সাধারণ মানের 888sport app download apk। কিন্তু এর একটি লাইন পড়ে আমি চমকে উঠি। গভীর রাত্রে প্রিয়তমাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করার মুহূর্তে কবির মনে হচ্ছে- ‘এ কে?’ আর তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন- ‘কে আমি?’ বিদ্যুৎবেগে আমার মাথায় এলো মৃত্যুশয্যায় লেখা রবীন্দ্রনাথের সেই অনবদ্যক বিতাটি-প্রথম দিনের সূর্য, যে সত্তার নতুন আবির্ভাবে প্রশ্ন করেছিলো- ‘কে তুমি?’ ১৯৩২ সালে যিনি ‘কে আমি’ বলে আত্মজিজ্ঞাসায় নিজেকে উন্মোচিত করেছিলেন, তিনি শেষ পর্যন্ত 888sport live footballের মাঠে নামলেন না, কিছু অনুশীলন করেই ক্ষান্ত ছিলেন, যখন ভাবি খুবই খারাপ লাগে’ (শৈলী, পূর্বোক্ত,পৃ ২২)।
যথেষ্টচর্চা ও অনুশীলন করলে হয়তো আরো পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা পেতে পারতেন। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও কেন যে লেখার জগতে টিকে থাকেননি-লেখার চর্চা চালিয়ে যাননি- সেই রহস্য অনুদ্্ঘাটিতই থেকে গেছে। কবি আজিজুর রহমান ষাটের দশকে যখন একটি জাতীয় দৈনিকের 888sport live footballসম্পাদক, তখন তাঁকে বারংবার লেখার অনুরোধ জানালেও তিনি সাড়া দেননি। তাঁর এই নীরবতা-নিস্পৃহতার পেছনেকোনোহতাশা কিংবা অভিমান লুকিয়ে ছিল কীনা সেখবর জানা যায় না।
দশ
তবে লেখার জগৎ থেকে অকালে অবসর নিলেও তাঁর পড়ার অভ্যাস শেষ পর্যন্ত টিকেছিল। ইংরেজি 888sport live football সম্পর্কে সেই ছাত্রকালেই আগ্রহ জাগে। কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরির 888sport free bet loginের খোঁজ আক্ষরিক অর্থেই ছিল তাঁর নখদর্পণে। ছিলেন নিবিষ্টপাঠক। এই পাবলিক লাইব্রেরির এককালের গ্রন্থাগারিক অধুনা প্রয়াত রাজীউদ্দীন মুসা আলী ফজলুল বারির পড়ার ঝোঁক ও পঠিত বিষয় সম্পর্কে প্রাঞ্জল ধারণার কথা আলাপচারিতায় প্রায়ই উল্লেখ করতেন। তারই সূত্র ধরে তাঁর এক 888sport sign up bonusচর্চায় বলেছেন : ‘খুব অল্পসংখ্যক সদস্য ইংরাজী বই পড়তেন, যেমন জেলাম্যাজিস্ট্রেট এ. কে. বি. করিম, অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট মরহুম ফজলুল বারি চৌধুরী এবং 888sport app ৩/৪ জন সরকারী অফিসার। উল্লিখিত দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন পাঁড়-পড়ুয়া এবং তিনি লাইব্রেরীর প্রায় সমস্ত ইংরাজী বই পড়েছিলেন’ (কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী প্লাটিনাম জুবিলী স্মারকগ্রন্থ, কুষ্টিয়া, ১৯৮৫, পৃ ৪৪)। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে যখন তিনি দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানিরকেন্্ডিপার্টমেন্টেউচ্চ পদে চাকরিকরেন, তখনতাঁরবইপড়া ও আলোচনার সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন এই কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খাসবিলেতি সাহেব ই. র্যান্ডল্্ফ্কে (E. Randolph)। এই 888sport live footballপ্রিয় মানুষটি চাকরি ছেড়ে বিলেতে চলেযা ওয়ারসময় তাঁর সংগ্রহের সববই ফজলুল বারিকেউপহার দিয়ে যান।
বিদেশি লেখকদের মধ্যে তাঁর প্রিয় ছিলেন শেক্সপিয়র, চার্লস্্ডিকেন্স, কীট্্স ও টলস্টয়। সাগ্রহে পড়তেন বঙ্কিমচন্দ্র (১৮৩৮-৯৪), রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১)। বনফুল (১৮৯৯-১৯৭৯) ও সৈয়দ মুজতবা আলীর (১৯০৪-১৯৭৪) লেখা পছন্দ করতেন। জানা নেই, চিকিৎসাশাস্ত্র পড়েছিলেন বলেই বনফুলের প্রতি তাঁর একটা বাড়তি টান ছিল কিনা! বই পড়তে, পড়াতে ও উপহার দিতে ভালোবাসতেন। ছেলেমেয়েদের ছোটো বেলায় হ্যান্সঅ্যান্ডারসনকিং বা গ্রিমভাইদের রূপকথার বই আনিয়ে দিতেন বিদেশ থেকে। আর-একটি বই খুব পড়তে বলতেন ছেলেদের- ‘মৌমাছি’ ছদ্মনামে লেখা বিমল ঘোষের (১৯১০-৮২) জ্ঞান-888sport apkের মধুভাণ্ড। আইনের বইয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁকছিল-পেশাগত কারণে নিজে তো কিনতেনই, তার ওপরে আইনজীবী জামাতা ও পুত্রের জন্যে বিদেশ থেকে বেছে বেছে আইনের প্রয়োজনীয় বই আনিয়ে দিতেন।
গান ভালোবাসতেন। বাড়িতে ছিল পুরোনো কালের ধুতরো ফুলের আকৃতির চোঙঅলা গ্রামোফোন। এই কলের গানেকে. মল্লিক (১৮৮৮-১৯৫৯), আব্বাসউদ্দীন (১৯০১-৫৯) থেকে শুরু করে আঙুরবালা (১৯০০-৮৪), ইন্দুবালার (১৮৯৮-১৯৮৪) গানও শোনা যেত। মনে হয় অতুল প্রসাদের গান তাঁকে বেশি টানতো। নজরুলের গজলও প্রিয়ছিল। তাঁর প্রশ্রয়ে বাড়িতে গান-বাজনাএকটু-আধটুহতো। পরে পুত্রকন্যাদের সুবাদে বাড়িতে খালিদ হোসেন, আনোয়া রউদ্দীন খান (১৯৩৫-২০০০), মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (১৯৩৮-২০১৭), বাণীমিত্র-এঁদেরও আনাগোনা ছিল।
এগারো
ফজলুল বারি চৌধুরী নিজে বড়ো লেখক হতে পারেননি, কিন্তু উত্তরকালে 888sport live footballচর্চায় প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন এমন কেউ কেউ তাঁর কাছ থেকে উৎসাহ-প্রেরণা-দিশা পেয়েছেন তাঁদের 888sport live footballচর্চার নবিশী পর্যায়ে। এঁদের মধ্যে কবি হিসেবে আবুল হোসেন, গোলাম কুদ্দুস (১৯২০-২০০৬), আজিজুর রহমান (১৯১৪-৭৮) কিংবা নাট্যকার হিসেবে মহম্মদ নেজামতুল্লাহর (১৯০৮-৬৬) কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। আবুল হোসেন 888sport app download for android করেছেন : ‘[কুষ্টিয়া] পাবলিক লাইব্রেরীর পাশে হার্ডকোর্টে বিকেলে অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে মাঝে মাঝে হংসমধ্যেবকযথার মতো টেনিস খেলার সুযোগ হয়েছে। তবু তাঁর সঙ্গে লেখালেখি অথবা 888sport live football সম্পর্কে কথা বলার দুঃসাহস আমার একদিনও হয়নি। আমরা বরং এসব আলাপ-আলোচনা করতাম ফজলুল বারি চৌধুরীর সঙ্গে। লেখক হিসেবে সেকালে কুষ্টিয়ায় তিনিই ছিলেন আমাদের নাগালের মধ্যে। নেজামতুল্লাহর কথা আগেই বলেছি। সেই সময় কুষ্টিয়ায় আরও একজন লেখালেখি সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন। হাটস-হরিপুরের আজিজুর রহমান। … কিন্তু আজিজুর রহমান কিংবা নেজামতুল্লাহ, এঁদের কারও রুচি তেমন উন্নত ছিলো না, পড়াশুনাও-আধুনিক, বিশেষভাবে নাগরিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা ছিলো সীমাবদ্ধ। সেদিক দিয়ে ফজলুল বারি চৌধুরী আমাদের মনের অনেকটা খোরাক মিটিয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই সেই সময় কুষ্টিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে তাঁকেই আমার সবচেয়ে শিক্ষিত ও রুচিশীল মনে হয়েছিলো, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী কয়েকজন মুসলমান ভদ্রলোক শহরেই বাস করতেন’ (শৈলী, পূর্বোক্ত, পৃ ২২)। কবি গোলাম কুদ্দুসের অভিমতও অভিন্ন। কবি আজিজুর রহমানও এক 888sport sign up bonusচর্চায় তাঁদের888sport live football-সংস্কৃতিচর্চায় ফজলুল বারি চৌধুরীর প্রেরণার কথা উল্লেখ করেছেন।
সেই তিরিশের দশকের গোড়ায় কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র-সংবর্ধনার আয়োজন থেকে শুরু করে চল্লিশের দশক পর্যন্ত 888sport live football-সংস্কৃতির অঙ্গনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। তিরিশের দশকে কবি নজরুলের সঙ্গে কুষ্টিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। রাজনীতিক ও জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক হেমন্ত কুমার সরকারের (১৮৯৬-১৯৫২) সৌজন্যে এইসময়ে একনাগাড়ে তিনি বেশকিছুকাল ছিলেনও এখানে। স্থানীয় পরিমল থিয়েটারে নজরুল-সংবর্ধনার যে-আয়োজন হয় তাতেও ফজলুল বারির একান্ত যোগ ছিল। নজরুলের অনুরাগী হিসেবে কবির সঙ্গে তাঁর এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেইসঙ্গে ফজলুল বারি নজরুলের একান্ত সুহৃদ কাজী মোতাহার হোসেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন বলে এই সম্পর্ক ভিন্ন এক মাত্রা পায়।
তিরিশের দশকের মাঝামাঝি অন্নদাশঙ্কর রায় যখন কুষ্টিয়ার মহকুমা হাকিম, পাবলিক লাইব্রেরিতে তখন প্রায় নিয়মিতই 888sport live footballবাসর হতো। এইসব সভায় ফজলুল বারির উপস্থিতি ছিল প্রায় নিয়মিত। আর হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, 888sport live footballরসিক মুন্সেফ মতিলাল দাশ (১৮৯৯-১৯৭১), কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক ও পরে বাংলার বাউল ও বাউলগান এবং রবীন্দ্র888sport live football সম্পর্কে সমালোচনামূলক গ্রন্থের লেখক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (১৮৯৯-১৯৭০) –এঁদের সঙ্গে 888sport live football নিয়ে ঘরোয়া আড্ডা-আলোচনা তো হতোই। নবীন লিখিয়েদের প্রেরণা যেমন তিনি জোগাতেন, তেমনি উদ্যোগী তরুণদের সাময়িক পত্রপ্রকাশেও তাঁর সহায়তা ও উৎসাহ থাকতো। তিরিশের দশকে মুহম্মদ আবুবকরের (১৯১২-৭৩) সন্ধানী ও মোহাম্মদ হারেস উদ্দীনের যুগের আলো পত্রিকা প্রকাশের পেছনে তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, প্রেরণা ও পরামর্শ ছিল।
১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ –মোটামুটি এই পনেরো বছর তাঁর 888sport live footballচর্চার কাল। এই কালপর্বে তিনি শুধু লেখালেখিই করেননি, নানা 888sport live football-সম্মেলনবাসভায়ও সাগ্রহে যোগ দিয়েছেন। ১৩৪৬ সনে (১৯৩৯ সালে) কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় মুসলমান 888sport live football-সম্মিলনে’ তিনি কুষ্টিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই ষষ্ঠ 888sport live football-সম্মিলনের 888sport world cup rateপ্রকাশিত হয় পত্র-পত্রিকায়-বুজরচেহ্মেহের-লিখিত এমন একটি 888sport world cup rateে তাঁর নামের উল্লেখ মেলে (মোহাম্মদী, মাসিক, কলকাতা, জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৬, পৃ ৫৯২)। আরো যেসব সভা-সমিতিতেতিনিযোগদেন, তার বিবরণ এখনো সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।
লেখক ফজলুল বারি চৌধুরী একালেবিস্মৃতবটে, কিন্তু দু-একজন সন্ধিৎসুগবেষক তাঁকে আবিষ্কার ও তাঁর মূল্যায়নেআগ্রহী- ড. রবিউল হোসেন (জ. ১৯৭৭) তাঁদেরই একজন। তাঁর বাঙালির জাগরণ বঙ্গীয় মুসলমান888sport live football-সমিতি (888sport app, ফেব্রুয়ারি ২০১৫) বইটি ফজলুল বারি চৌধুরীসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের তিনজন 888sport live footballকর্মী ও সমাজসেবীকে উৎসর্গ
করেন, যাঁরা ‘বঙ্গীয় মুসলমান 888sport live football-সমিতি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বারো
পঞ্চাশের দশক থেকে তাঁর মানসিক নৈঃসঙ্গ্য ও সামাজিক নির্বাসনের শুরু। একে একে তাঁর হিন্দুবন্ধুরা-কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউ আইনজীবী, কেউবা রাজনীতিক-দেশত্যাগ করতে শুরু করেন। শিক্ষা-888sport live football-সংস্কৃতি-সমাজ-রাজনীতির ক্ষেত্রে যাঁরা ছিলেন বিশিষ্টব্যক্তিত্ব, তাঁদের স্থান শূন্য হয়ে পড়ে। নতুন রাষ্ট্রের চেতনা ও আদর্শের সঙ্গে তাঁর মনের মিল হয়নি। ক্রমে তিনি হয়ে পড়েন গৃহাবদ্ধ ও নিঃসঙ্গ। কথা বলার-ভাব-বিনিময়ের লোকের অভাবখানিকপূরণ করেবই। চা-সিগ্রেট আরবই বা পত্র-পত্রিকা একসময়ের এই সামাজিক মানুষটির প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ওঠে-পরিবেশের চাপে বাধ্য হয়ে এইভাবে গড়ে তোলেন তাঁর বেঁচে থাকার কষ্টকর আপন ঘরোয়া ভুবন-যাতি নিটে নিয়ে গেছেন মৃত্যুকাল পর্যন্ত।
তেরো
ফজলুল বারি চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হয় কুষ্টিয়ায় ২০০৪-এর ১ ডিসেম্বর। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি কে এম সোবহান। তাঁর দীর্ঘ ভাষণে ফজলুল বারির ব্যক্তিত্ব ও 888sport live footballসাধনা সম্পর্কে হৃদয়গ্রাহী আলোচনা করেন। এই অনুষ্ঠানেই জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তাব গৃহীতহয়। কবি আবুল হোসেন সানন্দে ও সাগ্রহে এই স্মারক গ্রন্থ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী (১৯৩২-২০১৪) দ্রুতএর প্রচ্ছদ এঁকে দেন। চিত্রকর মুর্তজা বশীরের (১৯৩২-২০২০) সৌজন্যে পাওয়া যায় একটি রেখাচিত্র। কবি-গবেষক তপন বাগচী (জ. ১৯৬৮) ও আরো কেউ কেউ লেখা-সংগ্রহে পালন করেন সক্রিয় ভূমিকা। পাণ্ডুলিপি দুই প্রকাশকের হাতঘুরে এখন তৃতীয় প্রকাশকের হাওলায়, তিনি এর কাজ সম্পন্ন করেছেন।
দুই দফায় কবি আবুল হোসেন এই শতবর্ষ-স্মারকের অনবদ্য ভূমিকা লিখেদেন-তাতে তিনি বলেন : ‘এই স্মারক গ্রন্থটিদেখে পাঠক সঙ্গে সঙ্গেই ফজলুল বারি চৌধুরীকে শনাক্ত করতে পারবেন, আশা করি না। তিনি কোন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নেতা কিংবা পরিচিত 888sport live chatী অথবা লেখক ছিলেন না। তাহলে তাঁরজন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন কেন এবং সেই উপলক্ষে একটিস্মারক গ্রন্থ প্রকাশের প্রয়োজন কি এবং সার্থক তাই বাকোথায়, এ কথা মনে উঠতেইপারে। যেকোন ব্যক্তিকে তাঁর প্রিয়জন 888sport app download for android করবেন সে তো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁর কথা দেশের বহুমানুষের জন্য বলা হয়, তাঁর মধ্যে এমন কিছু থাকে যা বলতে লোকে যেমন আগ্রহান্বিত হয় তেমনি অন্যেরা তা শুনে আনন্দবোধ করেন ও উৎসাহ পান। ফজলুল বারি চৌধুরী এইরকম একজনলোক, যাঁর পরিচিত গণ্ডির বাইরে লোকে তাঁকে চিনুক আর নাই চিনুক। এই কথাটা সত্যি না হলে এত গুণীজনের রচনায় এইস্মারক গ্রন্থটি সমৃদ্ধ হতে পারত না। … প্রীতি ও অনুরাগ, কৃতজ্ঞতা ও 888sport apk download apk latest versionয়সিক্ত এইসব লেখা নিয়েই এই স্মারকগ্রন্থ।’
চোদ্দো তাঁর বিক্ষত হৃদয়ের গোপন রক্তক্ষরণ-তাঁর বিপন্ন অস্তিত্বের নিঃশব্দ ক্রন্দন-তাঁর আত্মবিনাশীঅ ব্যক্ত অভিমানের কারণ বৈরী সমাজ ও প্রতিকূল সময় সন্ধান করেনি। বলতে হয়, এক মহৎ সম্ভাবনার অসফল পরিণতির নাম- ফজলুল বারি চৌধুরী। এক মেধাবী অথচ অপচয়িত জীবনের প্রতীক তিনি। যাঁর হওয়ার কথা ছিল বিস্তৃত-পরিসর তরঙ্গমুখর স্রোতস্বতী, তিনি হয়ে রইলেন নিস্তরঙ্গ ক্ষুদ্র বদ্ধ জলাশয়। লালন সাঁইয়ের (১৭৭৪-১৮৯০) আক্ষেপই হয়তো সত্যি হয়ে উঠেছিল তাঁর জীবনে- ‘রাখলেন সাঁইকূপ জল করে আন্ধেলা পুকুরে।’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.