শত্রু কিংবা শত্রুসম্পত্তি

রাশেদ রহমান

উৎসর্গ : মাহবুব আলম, আমার গল্প-888sport app download apkর মুগ্ধপাঠক

মঠের সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদছে যতু পাল। ‘বাবা, তুমিই বলো, লোকে এইসব কী বলে – আমরা নাকি দ্যাশের শত্রু? তোমার দেহ এখানে, ঠাকুরদার হাড়মাংস মিশে গেছে জয়শ্রীর মাটিতে; তারপরও আমরা দ্যাশের শত্রু! বাবা, বাবা গো…।’

প্রতিদিন সকালে স্নান-আহ্নিক করার মতো পুকুরপাড়ে মঠের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলা যতুকাকার নৈমিত্তিক কাজ। কত জল যে আছে যতুকাকার চোখে, কে জানে! কমল বলে, পুকুরের সব জলই যতুকাকার চোখের জল…।

কমল আবার কে, জানতে চান? কমল মানে অর্ঘ কমল; কবি। কবি ছাড়া কে আর বলতে পারে – পুকুরের সব জলই যতুকাকার চোখের জল! পাগল আর কাকে বলে? পাগলরাই এ-ধরনের উদ্ভট কথাবার্তা বলতে পারে। ‘বাঁশি বড়ো, নাকি বংশীবাদক’ – এই ধন্দে পড়ে কমল পাগল হতে শুরু করেছে। যাই হোক, কমল অর্ধেক পাগল নাকি পুরোপুরি পাগল তা আমরা পড়ে দেখতে পাবো। একসময় গল্পে ঢুকে পড়বে সে…।

আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি – সকালে কিংবা দুপুরে কিংবা বিকেলে যতুকাকা মঠের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদে। আপনারাও হয়তো কেউ-কেউ – যারা পালবাড়ির সামনের হালট দিয়ে গালা-সদুল্লাপুর যান কিংবা হাটবাজারে যান, তারা দেখে থাকবেন; যতুকাকা মঠের সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কিংবা আপনাদের গ্রামেও কেউ-কেউ মঠ-মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদে, যারা দেশের শত্রু; আমরা সে-খবর জানি

না। সব খবর তো আমাদের কানে আসে না…।

পালপাড়া দক্ষিণমুখী। জয়শ্রীতে অল্প কঘর পাল এখনো আছে। যতুকাকার ভেতরবাড়ি-বারবাড়ি দুটো উঠোন। বারবাড়ির উঠোন বড়ো, ভেতরবাড়িরটা ছোট। বড়ো উঠোনের পশ্চিমপাশে আম-কাঁঠালের বাগান। বাগানের উত্তরপাশে ভাঙা পুন। বাড়িতে অনেকদিন ধরে হাঁড়ি-পাতিল তৈরির কাজ নেই। অব্যবহৃত পুন ভেঙে পড়ছে। উঠোনের সামনে পুবে-পশ্চিমে হালট। হালট পাড় করে ঘাটবাঁধা পুকুর। পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মঠ। যতুকাকার ঠাকুরদা ঋতু পাল, বাবা নিতু পালের শবদেহ এখানে দাহ করা হয়। বাবার মৃত্যুর পর যতুকাকা মঠ স্থাপন করে…।

মঠের সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদে যতুকাকা। কিন্তু তার কান্নার শব্দ কেউ কোনোদিন শোনেনি, শোনে না; বরং বলা ভালো, যতুকাকার কান্নার শব্দ শোনার উপায় নেই। সে তো শব্দ করে কাঁদে না। ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদে। এ প্রসঙ্গে কমলের যুক্তি শুনুন…। কমল বলে – যতুকাকারা যেহেতু দেশের শত্রু, রাষ্ট্র তাদের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছে; শব্দ করে কান্নাকাটি করার সাহস নেই তাদের। জোরে, অন্যকে শুনিয়ে কান্নাকাটি করলে রাষ্ট্র আরো ক্ষেপে যেতে পারে। পৃথিবীর কোথাও 888sport free betলঘু মানুষের প্রাণখুলে কাঁদারও অধিকার নেই…।

কমলের যুক্তি খন্ডন করা কঠিন। এসব নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে তুমুল তর্ক হয়; সেই গল্পে আসছি একটু পরে…।

বেলা বাড়ে। ছাতিমতলার ছায়া দূরে সরে যায়। যতুকাকা কোনো-কোনোদিন মঠের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। ওঠার নাম নেই। স্নান-আহ্নিক শিকেয় ওঠে। ঘুড়ি-হারানো বালকের মতো ডুকরে কেঁদে ওঠে খানিকটা পরপর। ‘বাবা, বাবা গো, তরুর মা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, হাতে একটা তামার পয়সা পর্যন্ত নাই; পুব চকের জমিটা বেচে তরুর মার চিকিৎসা করাবো, তাও পারছি না। শত্রুসম্পত্তি বেচাকেনা বন্ধ। বাবা গো…।’

ছাতিমগাছে পাখি ডাকে – ‘চোখ গেলো, চোখ গেলো…।’

চোখ গেলো পাখি সকালে ডাকে নাকি? আজ তো ডাকছে। পাখিটি বলছে – চোখ গেলো – যতুকাকার কানে বাজে – ‘তোরা শত্রু, তোরা দেশের শত্রু…।’

যতুকাকার দেরি দেখে তরুদি আসে। চোখ পাকিয়ে বলে – ‘বাবা, আজো তুমি…?’

তরুদি আসলে কিছুই বলে না। বলবে কী! সে তো বোবা। কথা বলতে পারে না। তরুদি এসে যতুকাকার পেছনে দাঁড়িয়েছে, একটা শুকনো ছাতিমপাতার ওপর পা পড়েছে তার; মচমচ করে পাতাভাঙার শব্দ শুনেই কাকা টের পায় তরু এসেছে। যেন, চোখ পাকিয়ে বলছে – ‘বাবা, আজো তুমি দুপুরবেলা নাগাদ এখানে বসে আছ। এতবেলা পর্যন্ত না-খেয়ে থাকলে তোমার অম্বল বাড়ে, ভুলে গেছ…?’

যতুকাকা ত্রস্তভাব করে উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘যাই মা, স্নানটা সেরে এখনই আসছি…।’

 

দুই

‘হে আমার প্রাচীন মাতার পুত্রগণ, হে জোয়ার-ভাটার তরঙ্গ-আরোহী নাবিকদল… আমি যেতে প্রস্ত্তত, আমার ব্যাকুলতা পাল তুলে দিয়ে বাতাসের প্রতীক্ষায় আছে…।’

অন্ধকার ঘরে বসে 888sport app download apk আবৃত্তি করছে কমল। কার 888sport app download apk এটা? কমল নিজের 888sport app download apk শব্দ করে পড়ে না।

– কার 888sport app download apk রে, কমল?

– জিবরানের। কাহলিল জিবরান।

– অন্ধকারে বসে আছিস কেন? কারেন্ট নেই?

– আছে।

– আছে! তাহলে?

– সুইচ অফ করে রেখেছি। অন্ধকারেই ভালো লাগছে।

– তাই?

– মানুষ তো আসলে অন্ধকারেরই জীব। মাতৃজঠরে কি আলো আছে? নাই। গহন অন্ধকার। কবরের ভেতরেও আলো নাই। অন্ধকার…।

– ভাত খেতে হবে না আমার? অন্ধকারে ভাত খাবো কী করে?

কমল কিছু বললো না। আবার 888sport app download apk আবৃত্তি শুরু করলো – ‘আর অল্প কিছুক্ষণ, আমি বায়ুভরে এক মুহূর্ত বিশ্রাম করবো/ তারপর অন্য কোনো 888sport promo code আমাকে তার গর্ভে ধারণ করবে…।’

কমলকে আজ রাতেও আমার ঘরে দেখে আমি সন্ত্রস্ত হয়ে উঠি। আজো তুমুল তর্ক বাধবে। কাল রাতের তর্ক অমীমাংসিত রয়ে গেছে। কমল হয়তো প্রস্ত্ততি নিয়েই এসেছে। আমি ভেবেছিলাম, অন্তত সাতদিন কমল রাতে আর আমার ঘরে আসবে না। কাল রাতে, রাত দুটোর দিকে, ধমক দিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি। পরে অবশ্য মনে হয়েছে কাজটি ঠিক হয়নি। এ আমি কী করলাম? অর্ঘ কমল আর প্রিয় কবি, প্রিয় বন্ধু। মুহূর্তের রাগে কসাইয়ের মতো আচরণ করলাম? ছিঃ! ঘুমিয়েই স্বপ্নে দেখেছি ওর অসহায় মুখ – ‘জহিরভাই, আপনি আমাকে আপনার ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন…?’

আসলে, আমি আর পারছিলাম না। তর্ক শুরু হয়েছিল যতুকাকাকে নিয়ে। আর কত কাঁদবেন তিনি? তর্কে উঠে এসেছিল শত্রুসম্পত্তি। কমল এমনসব কথাবার্তা বলছিল…। যাক, আমার সন্ত্রস্ত ভাব কেটে যায়। তর্ক হয় হোক। কমল তো রাগ করে আমার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি, আজ রাতেই আবার এসেছে…।

কমলের সঙ্গে প্রায় প্রতিরাতেই, আমার ঘরে, তর্ক বাধে। তর্কের বিষয় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, পঞ্চপান্ডব, হালের 888sport app download apk, 888sport promo codeর শরীর, প্রেম-পরকীয়া, বাইবেল, আরো কত কী – তার কোনো লেখাজোখা নেই। কমলের মধ্যে সবকিছুকেই বাতিল করে দেওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। এ নিয়েই তর্ক বাধে। রাত বাড়ে। কোনো-কোনোদিন ভোর হয়। অবশেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কমল আর বাড়িতে যায় না। তবে, আমরা রাজনীতি নিয়ে খুব একটা তর্ক করি না। রাজনীতি, আমরা দুজনেই আমাদের বিতর্কের বাইরের বিষয় মনে করি। চায়ের টেবিলে রাজনীতি নিয়ে তর্ক করার লোকের অভাব নেই দেশে। কিন্তু সেদিন, যতুকাকাকে নিয়ে তর্ক শুরু হলে চলে আসে শত্রুসম্পত্তি; আর শত্রুসম্পত্তির তর্কে অবধারিতভাবেই আসবে রাজনীতি – এটা তো পাগলেও বোঝে। না-বোঝার কিছু নেই…।

– আপনি কি সত্যি-সত্যিই মনে করেন জহিরভাই তখন আইয়ুব খান সঠিক কাজটিই করেছিলেন? এই দেশের যেসব হিন্দু ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিল তারা দেশের শত্রু ছিল?

– আমার মনে করা না-করায় কিছুই যায়-আসে না। আইয়ুব খান তাই মনে করেছিলেন। আর দেখো, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধরত দুই দেশ পরস্পরকে শত্রুদেশ মনে করবে, তাই তো স্বাভাবিক। তুমি কী বলো?

– আসলে যুদ্ধটা দুই দেশের মধ্যে ছিল না। যুদ্ধ শুরু হয়েছিল আইয়ুব খান আর লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মধ্যে। দুই নেতার জেদ আর নির্বুদ্ধিতার ফসল ছিল ওই যুদ্ধ…।

– তর্কের খাতিরে তোমার কথা মেনে নিলেও বলতে হবে, যুদ্ধ একবার শুরু হয়ে গেলে তখন আর সে-যুদ্ধ দুই নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর প্রমাণ। কত শহর-বন্দর ধ্বংস হয়েছে, কত নিরীহ মানুষ মরেছে – তার কি কোনো হিসাব আছে? নেই। ১৩ দিনের যুদ্ধ ১৩ মাস স্থায়ী হলে কী হতে পারতো, কল্পনা করতে পারো? আমাদের নয় মাসের যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এখনো চোখে পড়ে…।

– 888sport appsের স্বাধীনতাযুদ্ধ আর পাক-ভারত যুদ্ধকে একসঙ্গে মেলানো যাবে না।

– না, তা মেলাচ্ছি না। আর, এই তো তুমি বললে পাক-ভারত যুদ্ধ। হ্যাঁ, পাক-ভারত যুদ্ধই ছিল ওটা। এখন চিন্তা করো, পাকিস্তান পারলে বোমা ফেলতো দিল্লিতে, ইন্ডিয়া করাচি কিংবা 888sport appয়। ইন্ডিয়া 888sport appয় বোমা ফেললে শুধু মুসলমানরাই মরতো, হিন্দুরা মারা পড়তো না?

– হ্যাঁ, হিন্দুরাও মরতো।

– তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে শত্রুদেশ ছিল ইন্ডিয়া। যুদ্ধের সময় তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা বাড়িঘর ফেলে শত্রুদেশে যাবে কেন? তখন তো বেড়াতে যাওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না…। সুতরাং, তখন যারা বাড়িঘর ফেলে ইন্ডিয়া চলে গেছে, আইযুব খান তাদের শত্রু মনে করতেই পারেন, তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তিকে শত্রুসম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা দিতেই পারেন…।

চুপ মেরে গেল কমল। তাই স্বাভাবিক। কমল কল্পনাও করেনি আমি এ-ধরনের কথা বলবো। ও ভাবছে, ওর সামনে সুমিত, জহির নয়, বসে আছে আইয়ুব খানের প্রেতাত্মা; তার মুখ থেকেই বেরোলো…।

– কী চুপ মেরে গেলে যে! কিছু বলো…।

– না। কী আর বলবো? এখনই আইয়ুব খান যা বললেন…।

পাঠক, দেখুন – কমল আমাকে সত্যি-সত্যিই আইয়ুব খান ভাবছে। ভাবুক। আসলে, কবি হোক আর যাই হোক, ধর্মে বিশ্বাস করুক কিংবা নাই করুক, হিন্দুর ঘরে জন্ম; জন্মসূত্রে হিন্দু – 888sport appsে 888sport free betলঘু। পৃথিবীর কোথাও কোনোদিন 888sport free betলঘুরা মন খুলে কথা বলতে পারেনি; এখনো পারে না। একটা ভয় তাদের সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়। ভয় থেকে তাদের ভেতর ঘৃণার সৃষ্টি হয়। কমলও এখন আমাকে ঘৃণা করতে পারে। করলে করুক। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম – তোমার কী মনে হয় কমল? তখন হিন্দুরা কেন বাড়িঘর ফেলে চলে গিয়েছিল…?

কমল আগের মতোই চুপচাপ। নিঃশব্দে সিগারেট (আসলে গাঁজার স্টিক) পুড়ে ছাই করছে। হয়তো ভাবছে – 888sport free betলঘুরা সিগারেটের মতোই; পুড়ে-পুড়ে ছাই হওয়াই তাদের নিয়তি…।

– তুমি বলবে না। তাহলে শোনো, আমি বলি। হিন্দুরা মুসলমানদের বিশ্বাস করতে পারেনি। তাদের মধ্যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল – যুদ্ধ লেগেছে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে। লাঙলটানা গরুর ঘাড়ের দগদগে ঘায়ের মতো অভিজ্ঞতা ছিল তাদের। তারা মনে করতো, যুদ্ধে যারই জয় হোক – যুদ্ধকালেই কিংবা যুদ্ধশেষে হিন্দুদের কচুকাটা করা হবে। অবিশ্বাস থেকেই শত্রুতার সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ বাধে; দাঙ্গা লাগে। আর দাঙ্গায় 888sport free betলঘুরাই কচুকাটা হয়…। মনে করে দেখো, কলকাতায় কী হয়েছে; গুজরাটে কী হয়েছে!

এতক্ষণে মুখ খুললো কমল। ‘তাই বলে 888sport apps স্বাধীন হওয়ার ১৫ বছর পরও আমরা দেশের শত্রু? যতুকাকাদের কেউ তখন দেশত্যাগ করেনি, সতুদা স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হয়েছে; অরুদিকে রাজাকাররা তুলে নিয়ে গেল, তার খোঁজ মিললো না কোনোদিন – তারপরও তারা দেশের শত্রু? বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে কাকিমা, যতুকাকা জমি বিক্রি করতে পারছে না; শত্রুসম্পত্তি কেনাবেচা বন্ধ! কেন তরুদি…?

কমল হঠাৎ সিগারেটের আগুন হাতের তালুতে ঠেসে ধরলো।

– কী করছিস পাগলের মতো?

– কেন, আইয়ুব খানের অধ্যাদেশ এখনো কেন 888sport appsে বলবৎ থাকবে জহিরভাই?

আমি কমলের দগ্ধ হাতটা আমার হাতে তুলে নিলাম। তালুর অনেকটা পুড়ে গেছে…।

 

তিন

জয়শ্রী পালপাড়ার বেশ নামডাক। মেঘা পাল, শশী পাল, মহী পালের দারুণ সব হাতের কাজ। হাঁড়ি-পাতিল বলো, কুয়ার চাক বলো; দুর্গা, সরস্বতী কিংবা পদ্মাদেবীর মূর্তি বলো – মেঘা-শশী-মহীরা যা বানায় – দেশে যেন তার জুড়ি নেই। ‘হাঁড়ি-পাতিল লাগবে, মাটির হাঁড়ি-পাতিল…’ – কোনো গাঁয়ে এ-ডাক শুনলে বাড়ির বউ-ঝিরা বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করবে – ‘জয়শ্রীর জিনিস তো?’

হ্যাঁ-সূচক জবাব পেলে মহিলারা দ্রুত টুল-পিঁড়ি এগিয়ে দেবে। ‘বসেন দাদা, বসেন, হাঁড়ি-পাতিল রাখমু আমরা…।’

বর্ষাকালটা পালপাড়া নিঝুমপুরী। মাটি বারির শব্দ নেই, চাকা ঘোরানোর শব্দ নেই; পুন গলে পড়ে বৃষ্টিতে। বর্ষা বাদে আর সারাবছরই পালপাড়া সরগরম থাকে। বর্ষায় পালেরা নৌকায় করে পাহাড়ের কষমাটি সংগ্রহ করে। পালপাড়ার পেছনে খাল। খাল বেয়ে কিছুটা উজানে লৌহজং। লৌহজং পড়েছে ঝিনাই নদীতে। মেঘা পাল, শশী পাল, মহী পালরা কষমাটি এনে খালপাড়ে ঢিবির মতো করে রাখে। ওই মাটি কেটে নিয়ে সারাবছর কাজ করে। হাঁড়ি-পাতিল টেকসই হয় কষমাটির গুণে…।

পালপাড়ার সব বাড়িতে মাটি পেটানোর শব্দ, মাটির চাকা ঘোরানোর শব্দ। ব্যতিক্রম যতু পালের বাড়ি। যতু পালের বাড়িতে মাটির কাজ আছে, তবে কম। না-থাকার মতোই। পুন আছে বাড়িতে। আমবাগানের উত্তরপাশে। পুনে অন্যরাই বেশি পাক-পাতিল পোড়ে। যতু পাল গেরস্থালি করে। তার বাপ-ঠাকুরদাও গেরস্থ ছিল। তারা বিঘা পাঁচেক হালের জমি রেখে গেছে, তাই চাষ করে যতু পাল। বাড়িতে পাঁচটে গরু। দুধেল গাভি একটি, বলদ দুটি, ষাঁড় একটি, গাইয়ের বাছুর একটি। বছরচুক্তি কামলা আছে একজন – জয়নুদ্দী। জয়নুদ্দী মুসলমান, কিন্তু তার থাকা-খাওয়া সব যতু পালের বাড়িতে, কোনো বাছ-বিচার নেই; শুধু রসুইঘরে ঢোকে না। যতু পালের স্ত্রীর শুচিবাই আছে। জয়নুদ্দী এটুকু মেনে নেয়; কারণ, যতু পালের স্ত্রী তাকে নিজের ছেলে সতুর মতোই আদর করে। খাওয়ার সময় ভাতের গামলা, তরকারির বাটি সামনে রেখে দেয়। আম-দুধ-মিষ্টি থেকেও বঞ্চিত করে না। হিন্দুবাড়িতে আর কী চাই…?

পালপাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপূজা হয় যতু পালের বাড়িতে। তার বাড়িটিই পালপাড়ার সবচেয়ে বড় বাড়ি। পূজার মন্ডপ, যাত্রামঞ্চ সব করতে সুবিধে। যতু পালেরও না নেই। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে চলে আসছে। আর এখন তো ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। ছেলে কলেজে পড়ে। বড় মেয়ে স্কুলে পড়ে। ওরাও পছন্দ করে এসব…।

দেখুন, যতুকাকা শুধু গেরস্থ, এটাই ব্যতিক্রম না। পালপাড়ার কোনো বাড়িতে লেখাপড়ার চল নেই, যতুকাকার বাড়িতে আছে। আরও ব্যতিক্রম আছে, অরুদি গান শেখে। বাড়িতে ওস্তাদ আসে। ভোরবেলা গলা সাধে অরুদি – ‘অঞ্জলি লহ মোর…।’

২ মার্চ ১৯৭১। 888sport appয় সংসদ অধিবেশন বসার কথা। গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ 888sport free betগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। বাঙালি স্বপ্ন দেখছে – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। এতদিনে বুঝি দুঃখ কাটলো। কিন্তু না। 888sport appsের মানুষের দুঃখ দূর হতে আরো দেরি আছে। অপেক্ষা করতে হবে। যুদ্ধ করতে হবে। ৩০ লাখ মানুষের জীবন দিতে হবে। অগণিত 888sport promo codeর সম্ভ্রম হারাতে হবে। ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দিয়ে সংসদ অধিবেশন স্থগিত করলেন। সারাদেশ আন্দোলনে উত্তাল। মিছিল-স্লোগান। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ 888sport apps স্বাধীন করো’। সা’দত কলেজেও অবিরাম মিছিল আর স্লোগান। সতুদাও মিছিলে যায়। স্লোগান ধরে – ‘তোমার-আমার ঠিকানা/ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা…।’

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন – ‘তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্ত্তত থাকো। ঘরে-ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো… এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…।’

– এখন কী হবে রে সতু? কথা বলতে গলা কাঁপে যতুকাকার।

– যুদ্ধ অনিবার্য বাবা। আলোচনা করে আর কোনো লাভ হবে না। বললো সতুদা।

– যুদ্ধ লাগলে উপায়?

– সবার যে-পরিণতি, আমাদেরও তাই হবে। এখনই দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই।

অরুদি এখন গান করে – ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা…।’

১০ এপ্রিল ১৯৭১। গভীর রাত। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে। জয়শ্রীর কেউ এখন আর জেগে নেই। রাজাকাররা দিনে এসে বলে গেছে – রাতে কেউ জেগে থাকলে তাকে ধরে নিয়ে তার পুরুষাঙ্গের মাথায় ঝুলে থাকা চামড়া কেটে ফেলা হবে। রক্ত ঝরতে-ঝরতে তাতেও মৃত্যু না-হলে তখন গুলি করে হত্যা করা হবে। ভয়ে কে আর জেগে থাকে? সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন, ঘরের চালে বরই পড়লে যেরকম টুপ করে শব্দ হয়, সতুদাদের ঘরের চালে, তেমনি শব্দ হলো দুবার। নিঃশব্দে ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো সতুদা। জলিল, আববাস, মতিন – ওরা উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। সবার পরনেই কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। অন্ধকারের সঙ্গে মিশে আছে। জলিল বললো, ‘সতু তাড়াতাড়ি করো।’

– এক মিনিট। বাবাকে বলে যাই।

– কাকাকে বললে যেতে দেবে।

– দেবে। আমার কথা হয়েছে।

যতুকাকা বারান্দার চকিতে শুয়েছিল। সতুদা ডাক দিতেই উঠে বসলো। যেন সে জানতো, তার সতু আজ রাতে চলে যাবে। এখনই তাকে ডাক দেবে।

– বাবা যাই। আশীর্বাদ করো, যেন স্বাধীন 888sport appsে ফিরতে পারি। আর ফিরতে না-পারলে দুঃখ করো না। তোমার সতুর মতো অনেক সতুর জীবন দিতে হবে, তবেই না পাওয়া যাবে স্বাধীন 888sport apps। মাকে, অরু-তরুকে দেখে রেখো…।

যতুকাকাকে প্রণাম করলো সতুদা। তারপর ওরা সবাই অন্ধকারে মিলিয়ে গেল…।

সতুদারা যে যুদ্ধে গেছে, খবর গোপন থাকলো না। এ-ধরনের খবর গোপন থাকে না। রাজাকার কমান্ডার জিন্নত এসে হুমকি দিলো – সাতদিনের মধ্যে সতুকে ফিরিয়ে আনতে হবে। না-হলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে, অরুকে ধরে নিয়ে ক্যাপ্টেন হাবিবের ক্যাম্পে দেওয়া হবে। ক্যাপ্টেন হাবিব হিন্দু তরুণীদের খুব পছন্দ করে, সে পাল-মাইঠাল-ঠাকুর যাই হোক না কেন…।

সাতদিন, তারপর আরও সাতদিন। না। মালাউনের বাচ্চাকে আর সময় দেওয়া ঠিক না। সুযোগ পেলেই পালাতে পারে। ভোরবেলা অরুদি গাইছিল – ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা…।’ জিন্নত রাজাকার দলবল নিয়ে এসে অরুদিকে ধরে নিয়ে গেল…।

দুদিন পর খবর এলো – বাংড়ার যুদ্ধে সতুদা শহীদ হয়েছে। জলিলরা লাশটাও নিয়ে যেতে পারেনি। লাশ হানাদারদের দখলে, নাকি খাল দিয়ে ভেসে গেছে, তাও কেউ জানে না।

 

চার

স্বাধীন 888sport appsে কেন যে এখনো আইয়ুব খানের অধ্যাদেশ বলবৎ আছে – এটাই তো প্রশ্ন? এ-প্রশ্ন কমলের একার না, আমারও। এ-প্রশ্ন নাকি আমাদের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও। খবরটা পত্রিকায় এসেছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতিরা ক্ষমতাসীন থাকার সময় এই গর্হিত অধ্যাদেশ বাতিল করেননি? 888sport appsে হিন্দুরা কেন শত্রু হিসেবে গণ্য হবে? এটা অন্যায়, ভারী অন্যায়। দেশের একটা সম্প্রদায়ের মনে এভাবে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। আর হিন্দুদের জায়গা-জমি কিনে মুসলমানরাও তো কম ভুগছে না। রাষ্ট্রপতি এরশাদ নাকি ভীষণ মনোপীড়ায় ভুগছেন। কিন্তু কে জানে, কেন – তিনিও আইয়ুব খানের অধ্যাদেশে হাত দিচ্ছেন না।

– এই ব্ল্যাক এনিমি প্রপার্টি অর্ডিন্যান্স তো প্রয়াত রাষ্ট্রপতিই বাতিল করতে পারতেন। তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি যা বলতেন দেশের মানুষ তা-ই শুনতো। বেদবাক্যের মতো মানতো তাঁর কথা।

– হ্যাঁ, তাঁর করারই কথা ছিল। মানুষ আশাও করছিল – দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন আর কেউ দেশের শত্রু থাকবে না, কাউকে আর শত্রু বলা হবে না। একজন মানুষ, দেশের বৈধ নাগরিক; স্থায়ী বাসিন্দা; দেশেই আছে; তার বাপ-ঠাকুরদাও দেশেই ছিল; এখানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে, শেষকৃত্য হয়েছে – তাদের ভারতের দালাল বলা হলে, দেশের শত্রু গণ্য করা হলে তাদের মনে কী কষ্ট যে দেওয়া হয় – বঙ্গবন্ধু নিশ্চয়ই বুঝতেন। কেন বুঝবেন না? স্বাধীনতার ডাক দেওয়ায় তাঁকেও ভারতের দালাল, পাকিস্তানের শত্রু বলা হতো। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর রচনা করে যিনি 888sport apps প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন, তিনি আইয়ুব খানের অধ্যাদেশে কেন হাত দিলেন না, কে জানে! এ এক মহারহস্য। হয়তো সময় পাননি। বেঁচে থাকলে হাত দিতেন। কিংবা ছিল কোনো গুপ্তরহস্য – জটিল রাজনীতি – সাদা চোখে যা দেখা যায় না। হয়তো এখনো বিদ্যমান সেই রাজনীতি কিংবা রহস্য – যে কারণে এরশাদ মড়াকান্না কেঁদেই দায়িত্ব শেষ করছেন…।

– অর্ডিন্যান্সে ছিল, যারা ঘরবাড়ি ফেলে ইন্ডিয়া চলে গেছে – তাদের সম্পত্তিই শত্রুসম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু, এখন তো সব হিন্দুর জমিই…।

– এটা একটা আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র। আমলা তো এখনো তারাই। এক শ্রেণির লোক এর সুযোগ নিয়েছে – অনেক হিন্দুর জায়গা-জমি বেদখল করে রেখেছে। পালপাড়ার অর্ধেক যেমন গ্রাস করেছে মইনুদ্দিন ভূঁইয়া – পুরোটাই হয়তো একদিন গ্রাস করে ফেলবে…।

– এ-যন্ত্রণা থেকে কি কোনোদিন নিষ্কৃতি নেই, জহিরভাই?

– জানি না। হয়তো আছে, কোনো রাষ্ট্রনায়ক একদিন উদ্যোগ নেবেন। হয়তো নেই…!

 

পাঁচ

তরুদি বোবা ছিল না। অরুদির চেয়েও গানের গলা ভালো ছিল তরুদির। সাত বছর বয়স তখন। অরুদির ১৩ কি ১৪। তরুদি ওই  শিশু-বয়সেই কী যে মনপ্রাণ ঢেলে গান গাইতো – ‘যেদিন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…।’

ভোরবেলা বারান্দায় পাটি পেতে গলা সাধতো দুবোন। কখনো অরুদি, কখনো তরুদি সংগত করতো ডুবি-তবলায়। ঘরের পূর্ব কোণে শিউলিগাছ। থোকা-থোকা দুধসাদা ফুল পড়ে থাকে উঠোনে। রেওয়াজ শুরুর আগে তরুদি ফুল খুঁটে দুটো মালা গাঁথতো। একটি নিজে পরতো, আরেকটি পরিয়ে দিত অরুদির গলায়। দুবোনের গানের সুর ছড়িয়ে পড়তো পালপাড়াজুড়ে…।

সেদিনও ভোরবেলা দুবোন গলা সাধছিল। অরুদি গাইছিল – ‘ও আমার দেশের মাটি…।’ হঠাৎ উঠোনে চার-পাঁচ যুবক। সবার হাতেই বন্দুক। সামনে জিন্নত রাজাকার। ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জিন্নত রাজাকার লাথি মেরে হারমোনিয়াম-ডুগি-তবলা সব ভেঙেচুরে ফেললো। তারপর ধরলো অরুদির হাত। ‘মাগিদের ঢং কত! দেশে যুদ্ধ লাগছে, এর মধ্যেই প্যা-প্যা করে…।’

অরুদিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যেতে দেখে তরুদি চিৎকার দিয়েছিল – ‘মা, মা গো, দিদিকে ওরা…।’

কাকিমা ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে, অরুদি হাত-পা ছুড়ছে। জিন্নত রাজাকার কামড় বসিয়েছে ওর স্তনে…।

তরুদির ওই চিৎকারই শেষ চিৎকার। তারপর থেকে আর কথা বলে না। কথা না-বলুক, যতুকাকা ঠিকই মেয়ের গলা শুনতে পায় – ‘বাবা, তুমি এখনো মঠের সামনে বসে আছ? ওঠো, তাড়াতাড়ি ওঠো…।’

 

ছয়

রাত বাড়ে। ঘরের জানালা-দরজা খোলা। আকাশে চাঁদ। জোছনা ঢুকছে ঘরের ভেতর। ঘরের অন্ধকার কেটে গেছে। কিন্তু কমলের চোখ-মুখ অন্ধকার। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। ভয় পাচ্ছি। কমল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইছে। মুক্তির পথ খুঁজছে। আমি কোনো পথের সন্ধান দিতে পারছি না। পথ নেই, সন্ধান দেবো কী করে?

আমি মনে-মনে কী বলছি – কমল হয়তো তা ধরে ফেলেছে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে, সিগারেটের বর্জ্য ছুড়ে ফেলে বললো – কিছুই করার নেই তা ঠিক নয়, জহিরভাই। কিছু তো আমরা করতেই পারি…।

আমার মুখের দিকে তাকালো কমল। ওর চোখ-মুখের অন্ধকার এখন কেটে যাচ্ছে। চোখ যে লাল তা বোঝা যাচ্ছে। এতগুলো গাঁজার স্টিক পুড়িয়ে শেষ করলো, চোখ লাল হবে না…!

– আমরা কী করতে পারি রে কমল…?

কমল আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। 888sport app download apk আবৃত্তি করতে লাগলো – ‘নদী ও সমুদ্র যেমন এক, তেমনি জীবন ও মৃত্যুও এক…।’

আমি বললাম, এ-888sport app download apk আবৃত্তির অর্থ কী রে, কমল?

কমল বললো – আমরাও 888sport appsের মানুষ। আপনারাও 888sport appsের মানুষ। জয়শ্রীতে আমাদের চৌদ্দপুরুষের ভিটে আছে। তারপরও আপনারা আমাদের বিশ্বাস করেন না। আমাদের নাকি দেশপ্রেম নেই। আমরা দেশের শত্রু। শত্রুর অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। আমরা সবাই মিলে আত্মহত্যা করতে পারি…।

আমি কমলের হাত চেপে ধরলাম। ‘পাগলের মতো কী বলছিস এসব…?’

কমলের পোড়া হাত আমার হাতে। একটু আগেই হাতের তালুতে সিগারেটের আগুন ঠেসে ধরেছিল। কমল কাঁদছে। আমিও কাঁদছি…।

 

পাদটীকা : গল্পটি পড়ে অর্ঘ কমল যে-প্রতিক্রিয়া জানালো, তা শুনে আমি আরেকপ্রস্থ কাঁদলাম…।