বেগম আকতার কামাল
বস্তু মাত্রে ত্রিমাত্রিক কাঠামোর মধ্যে অন্তরীণ। এই ত্রিমাত্রিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকে সময়ের চতুর্থমাত্রা। তেমনি 888sport live chat ও জীবন – এসবেরও কাঠামো রয়েছে, যা সময়ের আবর্তনে ভাঙে ও গড়ে। কাঠামোর বাইরে সভ্যতাও গতি পায় না। কিন্তু এখানে আরো একটি অসিত্মত্ব রয়ে গেছে, যা এসব কাঠামোর মধ্যে আকারবদ্ধ হতে চায় না, হয়ও না। এই অসিত্মত্বটি হচ্ছে ব্যক্তি – আরো নিবিড় করে বললে বলতে হয় সৃষ্টিক্ষম প্রজ্ঞা – এককথায় কবি। এই কবি কাঠামোর মধ্যে আকৃত হতে চান না, তা-সে পরিবার-কাঠামো বা রাষ্ট্রকাঠামোই হোক না কেন। তাঁর সত্তা-স্বপ্ন-বাসনা আর সৃষ্টির তাগিদ প্রথমে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়, তারপর আধুনিক সভ্যতাসৃষ্ট রাষ্ট্র ও নগর কাঠামোর বিপরীতে যেতে চায়। অধুনা 888sport live footballতত্ত্বের উত্তর-কাঠামোবাদ এ-কারণেই নির্দিষ্ট কাঠামোকে অস্বীকার করে। ঠিক এমনটাই আমরা লক্ষ করি সম্প্রতি প্রয়াত কবি শহীদ কাদরীর চারটি কাব্যগ্রন্থের শব্দমালায়, কাব্যপঙ্ক্তিতে, উপমায়নে-প্রতীকায়নে। তাঁর প্রত্যাশা-বাসনার যে একটি নান্দনিক জগৎ সৃষ্ট হয়ে রয়েছে তাঁরই চেতনায়-ভাবনায়, সেরকমটিই খুঁজে ফেরেন পিতার কাঠামোতে ‘শেষ বংশধর’ 888sport app download apkয় (তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা)।
অগ্রজ কবি শামসুর রাহমান যেমন পিতৃত্বের কাঠামো-ছায়ায় কখনো আশ্রয়ী হন, কখনো আশ্বাস খুঁজে পান, কখনো-বা পিতার বয়স্ক অবসন্ন দেহমূর্তি দেখে বিষণ্ণ হন, সেরকমটি শহীদ কাদরীর মধ্যে লক্ষণীয় নয়। সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের রাজধানী 888sport app নগরীর ঘটমান সময়কালটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির চেতনাছন্দ ও গড়নেরও পটভূমি ছিল। আর তাতে জড়িয়ে ছিল শিক্ষিত বাঙালি বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে অবাঙালি ধনিক বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের প্রচ্ছন্ন বিরোধ। অবাঙালি উর্দুভাষী উচ্চপদস্থ পিতার পুত্র শহীদ কাদরীর মধ্যে এই সূত্রে দেখি একটি আত্মসংকট, আরেক দিকে বাঙালি মায়ের 888sport live footballপাঠপ্রীতি তাঁকে করেছিল 888sport live chatতায় আবিষ্ট। নিজের পরিবারের মূল্যবোধ তাঁকে এই বীক্ষা দেয় যে, সংস্কৃতিবান সম্পাদক থেকে তাঁর পিতা হয়ে গেলেন জাঁদরেল অফিসার, দীর্ঘকায় বিশাল ব্যক্তিত্ববান আহমাদ কাদরীর স্বপ্নের ভেতর ছিল শুধু টাকা নিয়ে লোফালুফি খেলার বাসনা, ছিল স্টুডিও বেকারে ঘরে ফেরার দাপটত্ব ইত্যাদি। এসব নিয়েই লিখেছেন ‘একটি উত্থান-পতনের গল্প’ 888sport app download apkটি (কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই কাব্য)। কবি তাঁর পিতার কাঠামোতে দেখেন এক মিশ্র সংস্কৃতি – ব্রিটিশের পরিত্যক্ত ঔপনিবেশিকতার পাকিসত্মানি প্রতিচ্ছায়া, আবার ‘দামেস্কে তৈরি কারুকাজ করা একটি বিশাল ভারী তরবারি’র মতো পিতার এই প্রতিমূর্তির পাশে তাঁর নিজের নাম ও শরীরী কাঠামো হ্রস্ব – ‘ঝোড়ো নদীতে/ কাগজের নৌকার মতোই পলকা/ কাগজের নৌকার মতো পলকা।’ (‘একটি উত্থান-পতনের গল্প’) কেন নিজেকে পলকা বলেন বা 888sport app download apkটির নামই বা কেন উত্থান-পতনের গল্প হয়? তবে কি শহীদ কাদরীর চেতনায় কোনো রক্তীয় গৌরব-অগৌরবের সংকট ছিল? মনে হয় এটি তাঁর ব্যক্তিচেহারা বা কাঠামো হলেও মূলত শহীদ কাদরী কাগজের নৌকার মতোই নির্ভার হতে চেয়েছেন, ভেসে বেড়াতে চেয়েছেন শহরের দারুণ বৃষ্টির মধ্যে অলিগলি জুড়ে। এই যে বৃষ্টি (‘বৃষ্টি বৃষ্টি’ 888sport app download apk) তা নিছক নগরানুষঙ্গ নয়, এই বৃষ্টি বিধ্বস্ত শক্তি যা নগরের সভ্যতাও তার ধারক-শাসকদের ধ্বংস করে আর সেই ধ্বংসপটে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করে ভিখারি ও প্রলেতারিয়েতরা। চিত্রকল্পাত্মক বৃষ্টি প্রতীকটি তাঁর মতাদর্শেরই ভাবকল্প।
উত্তরাধিকার কাব্যের ‘উত্তরাধিকার’ 888sport app download apkয় কবির যে-888sport live chatসত্তা (পার্সোনা) মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই সন্ত্রস্ত শহরে বস্ন্যাকআউটের রাতের আঁধার দেখতে পাচ্ছে তা অতঃপর আক্রমণ করে বি-জীবনায়নের রাষ্ট্রকাঠামোকে। এ-কথাটি সুবিদিত যে, শহীদ কাদরী আপাদমস্তক নাগরিক কবি, তাঁর দীপ্র ভাষা, দৃঢ় চিত্রকল্প – যাতে মনন আবেগকে শাসনে রেখেছে – সবকিছুই মার্জিত, স্মার্ট। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের নাগরিকমনস্ক যে-আভিধানিক শব্দকৃতি তার পাশে শহীদ কাদরীর নগরভাষ্যচিত্র অনেক বেশি প্রাত্যহিক, অনেক বেশি কোলাজধর্মী, অনেক বেশি দৃশ্যমান এবং জীবন ও সময়-সংকট আচ্ছন্ন। এই সংকট নিজেকেই কুরে-কুরে খায়, উদ্বাস্ত্তর মতো শুধু শহরে নয়, মহাব্রহ্মা– নিজের একাকিতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে। বিচ্ছিন্নতাবাদের যেসব সূত্র কার্ল মার্কস
উৎপাদন-কাঠামোজাত রূপে দেখেছিলেন, আমরা শহীদ কাদরীর কবিসত্তায় সেই বিচ্ছিন্নতার সবগুলো সূত্র যেমন দেখি, তেমনি দেখি এই বিচ্ছিন্নতা শুধুই নাগরিক বিচ্ছিন্নতা নয়, মানুষ হিসেবে এই বিশ্বে নিঃসঙ্গ প্রাণী হওয়ার বিচ্ছিন্নতা, যার ঈশ্বর নেই, অসিত্মবাদী হওয়ার মতো কোনো মহাশক্তির প্রতি নতজানু বিনীত সমর্পণ নেই, নেই সমাজ-সংসারের কাঠামো – তা সে প্রেম, রক্তীয় বন্ধন কিংবা উৎপাদনব্যবস্থা যা-ই হোক না কেন। তৎকালীন কবিরা যেখানে প্রথম কাব্যের পরে দ্বিতীয়-তৃতীয় কাব্যে এসে হয়ে যান স্বজাতি-স্বদেশ লগ্ন, আশাবাদে-সংগ্রামে-উত্তেজনায় যোগমুক্ত, সেখানে যেন শহীদ কাদরী এক নির্বাসিত আত্মার মতো একলা ঘুরে বেড়ান শহরেই, যে-শহরে তুমুল বৃষ্টিও হয়, যেখানে ‘তীক্ষনধার জনতা এবং তার একচক্ষু আশার চিৎকার।’ শোনা যায়, কিন্তু তারা কেমন? তারা ‘পূর্ণিমা-প্রেতার্ত তারা নির্বীজ চাঁদের নিচে, গোলাপ বাগানে/ ফাল্গুনের বালখিল্য চপল আঙুলে, রুগ্নঊরু প্রেমিকার/ নিঃস্বপ্ন চোখের ’পরে নিজের ধোঁয়াটে চোখ রাখে না ভুলেও;/ কম্পমান অবিবেকী হাতে গুঁজে দেয় মস্নান ফুল/ পীতাভকুমত্মলে তার, প্রথামতো সেরে নেয়ে কবির ভূমিকা’ – এই যে ‘নপুংসক সমেত্মর উক্তি’র মধ্যে প্রথাগত কাব্যিক কাঠামোর চাঁদ ফুল ইত্যাদির রংরূপ হরণ করেন কবি তা তো কাঠামো ভাঙারই অমত্মর্বেদনা – কারণ নপুংসক, অন্ধ হলেও কবি কিন্তু ‘সত্যসন্ধ দুরমত্ম সমত্মান।’ নিজেকে বধ্যভূমে বলির পশুরূপে প্রত্যক্ষ করে কেবল দেখে যান উজ্জ্বল আতশবাজিতে বিচিত্র আলোকসাজে সজ্জিত রাত্রির নকটার্ন, আর ‘ভেল্কি কাড়া নাকাড়ায় সাড়া তুলে/ যূথচারী মানুষদের;’ একই সূত্রে দেখেন ‘আমার শরীরের শব্জীক্ষেতে/ অসীম উৎসাহ ভরে একটি কবর খুঁড়ে রাখে’, এখানে ‘শরীরের শব্জীক্ষে’ রূপকার্থে নিজেরই কৃষিসংস্কৃতির স্বদেশ, অথচ স্বদেশসংলগ্ন থেকেও তিনি ‘নিঃসঙ্গ উদ্বাস্ত্ত/ জনতার আলিঙ্গনে অপ্রতিভ, অপ্রস্ত্তত, অনাত্মীয় একা।’ নিজেকে আঁধার টানেলে ভূতলবাসীর মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন আর জনতার সঙ্গে অনাত্মীয়তা আরো মনে করিয়ে দেয় সুধীন্দ্রনাথের যূথবদ্ধতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশের কাব্যপঙ্ক্তি – ‘সহে না সহে না জনতার জঘন্য মিতালি।’
শহীদ কাদরীর কবিস্বভাবের এই একাকিতার ধরনটিই কি টেনে নিয়ে গেছে প্রবাসে – স্বদেশ থেকে নির্বাসনে? বলতেই হয়, এই একাকিত্বের জন্ম হয়েছে 888sport apkের সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে। পরিবার-কাঠামো পরিহার করলেও শহরের জীবনে রাষ্ট্রীয়
প্রতাপ-ক্ষমতা-কাঠামোর মধ্যে তো অমত্মরীণ থাকতেই হয়। এরই প্রকল্প রূপে তিনি লিখলেন তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা কাব্য। প্রতীচ্য 888sport app download apkর আদল বা কবির প্রভাব থাকলেও এই কাব্যটি শহীদ কাদরীর অসমর্থ 888sport app download apkস্ত্রকে (‘888sport app download apk, অক্ষম অস্ত্র আমার’ দ্রষ্টব্য) তৎকালীন পাকিসত্মানি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বা বলা চলে সকল আধুনিক বা আধা-সামরিক আধা-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্ররূপকে বদলে দিতে চেয়েছে, নিজের বাসনার পরিমাপে গড়তে চেয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত উক্ত কাব্যটি ‘স্বাধীনতার শহর’ গড়তে চেয়েছে যেখানে কবি ‘দেয়ালের পোস্টারগুলো সকালের হিরণ্ময় রৌদ্রে/ নিবিষ্ট মনে পড়তে পড়তে চ’লে যাবো -/ স্বাধীনতা তুমি কাউকে দিয়েছো সারাদিন টো টো কোম্পানির উদ্দাম ম্যানেজারি করার সুবিধা’ ইত্যাদি দৃশ্যকল্প এটাই জানায় যে, কবির স্বাধীনতা আসলে ‘মধ্যরাত পেরুনো মেঘলোকে ডোবা সকল রেসেত্মারাঁ/ স্বাধীনতা, তোমার জরায়ু থেকে/ জন্ম নিলো নিঃসঙ্গ পার্কের বেঞ্চি/ দুপুরের জনকলেস্নাল/ আর যখন-তখন এক চক্কর ঘুরে আসার/ ব্যক্তিগত, ব্যথিত শহর, স্বাধীনতা।’ অর্থাৎ কবিসত্তাটি নিঃসঙ্গ পার্কের বেঞ্চি আর ভবঘুরের মতো জীবনযাপনের মধ্যেই স্বাধীনতাকে খুঁজে পাচ্ছে। আর রাষ্ট্রের একটা নান্দনিকায়ন ঘটাতে চাচ্ছে। যে-কবির চুল হচ্ছে বেপরোয়া উদ্দামতার প্রতীক (চুল যৌনতারও প্রতীক) আর ‘নিজস্ব সম্পত্তি ভেবে অপরের নীলিমাকে/ ছেঁড়েখোঁড়ে আর হৃদয়হীনের মতো/ অনবরত, অনবরত,/ ব্যবহার করে।’ সেই কবি আরো বলেন, ‘মূক ও বধির চুল মাস না যেতেই/ আহত অশ্বের মতো আবার লাফিয়ে উঠছে অবিরাম’ – এসব কাব্যপঙ্ক্তি কবিস্বভাবের অস্থিরতার যেমন দ্যোতক তেমনি রাষ্ট্রকাঠামোর ‘লেফট রাইট’-এর সাঁজোয়া বাহিনীকে প্রত্যক্ষ করে এবং আরো-আরো ক্ষমতাকাঠামোর জেলখানা, ১৪৪ ধারা, ছাত্র-আন্দোলন ইত্যাদি দেখে-দেখে তিনি নিজস্ব এক রাষ্ট্রব্যবস্থাপত্র কাব্যায়িত করেন। ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ 888sport app download apkটি তারই স্মারক যা পাঠককে খুবই আহ্লাদিত ও চমৎকৃত করে। স্বাধীন দেশটির জন্যে কবি কী-কী ব্যবস্থা করবেন, তার বিসত্মৃত বর্ণনায় জড়িয়ে আছে কবির সকল বাসনা-আকাঙক্ষা-স্বপ্ন এবং একই সঙ্গে স্বদেশকে প্রিয়তমা 888sport promo codeর রূপকল্পে বর্ণনায়িত করার নতুন ধরন। স্বদেশকে মাতৃমূর্তিতেই 888sport app download apkয়িত করার রেওয়াজ, কিন্তু কবির কাছে তা প্রিয়তমা। মাতৃরূপ আর প্রিয়ারূপ এখানে একীভূত, একটি আরেকটিতে বিগলিত।
শহীদ কাদরীর দেশচেতনা আপাত প্রিয়তমার রূপ পেলেও তাঁর জীবন-বাসনা, বাল্যকৈশোর, প্রেমপ্রত্যাশা সবই যেন জতুগৃহের মতো। বিপস্নব বা প্রেম, গৃহাঙ্গন বা পার্কের বেঞ্চি কোনো কিছুই তাঁকে বাসনাতৃপ্তি দান করেনি। কারণ এই শহরে বাগানঅলা হলুদ নতুন বাড়ি কিনবেন বলে প্রস্ত্ততি নিলেও তাঁর নির্বিকার বিবেকীমন সব বাসনাকে উড়িয়েই দিতে চেয়েছে। কোনো নির্বেদের প্রত্যাশায় কী? কোন ব্যথাহত অভিমানে এই কবিসত্তা কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই কাব্যগ্রন্থখানি লিখলেন অথবা প্রবাস থেকে পাঠালেন আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও? তাঁর নির্বেদ প্রাপ্তি কি ঘটেছিল নাকি ভাঙার অন্বেষা কখনোই থেমে যায়নি? তাঁর কি পায়ের তলে ছিল না কোনো ভূমি? এই উদ্বাস্ত্ত সত্তা শুধু নগর-জীবনের ফলাফল নয় – এ-কথা আমরা আগেই বলেছি যে, তিনি নৈঃসঙ্গ্যে নিমজ্জিত এক সত্তা, একে ঠিক আত্মবিচ্ছিন্নতা বলা যাবে না। বরং অনেক বেশি আকাঙক্ষালিপ্ত – তাঁর তো সাধ ছিল ‘এখন তোমার সঙ্গে ক্ষেত খামার দেখে বেড়াবো’, এবং ‘আমি করাতকলের শব্দ শুনে মানুষ/ আমি জুতোর ভেতর, মোজার ভেতর সেঁধিয়ে যাওয়া মানুষ/ আমি এবার
গাঁও-গেরামে গিয়ে/ যদি ট্রেনভর্তি শিউলি নিয়ে ফিরি/ হে লোহা, তামা, পিতল এবং পাথর/ তোমরা আমায় চিনতে পারবে তো হে।’ (‘এখন আমি’) এই যে প্রাকৃতায়নের মধ্যে হাঁটার বাসনা তা নিছক মধ্যবয়সের রোমান্টিসিজম নয়। বিবর্ণ, রং হীন, শহুরে জীবনকায়ার মধ্যে ‘একটা দিন’ ডাঙায়-ডাঙায় ঘুরতে চেয়েছেন, মাছের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছেন, ‘ঊরু আর নাভি অনেক খুঁড়লে/ প্রেমের সঙ্গে একটা দিন’ – কাটাতে চেয়েছেন। যে-দিকটি শেষের দিকে প্রবলতা পেয়েছে তা হচ্ছে সভ্যতার ধীমান মেধাবী মানুষগুলোর চতুরতা, প্রজ্ঞা বা বৌদ্ধিক মনন কাঠামো এড়িয়ে যাবার তাড়না, সহজিয়া হয়ে ওঠা, এই কাঠামো যদি বাষ্পের মতো উবে যায় ‘তবেই গোপাল, টিয়ে/ এবং তাদের আত্মীয়স্বজন বেশি উপকার পাবে।’ (‘এক চমৎকার রাত্রে’ 888sport app download apk)। তিনি আবিশ্বের মানুষজনকেও এবং প্রত্যহ যারা আসে দুধ খবরের কাগজ নিয়ে তাদেরকেও আপন করে নিতে চাইছেন, পাশাপাশি বিপ্রতীপ চিত্ররূপে দেখেন মার্কিন ও ফরাসি রণতরী আর বোমারু বিমানের আওয়াজ। এই যে সরলতার দিকে টান, সহজ জীবনের কাছে যাওয়ার আকাঙক্ষা তা অত্যমত্ম আমত্মরিক, নির্ভেজাল। তিনি যেমন বহুজনের সংস্কৃতির দিকেই অভিগমন করছিলেন, তেমনি মাছ, পাখি, গোলাপ, শিউলি ইত্যাকার কাব্যপ্রতিমাকেও নতুনভাবে প্রয়োগ করছিলেন তাঁর জীবনবীক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে, তাঁর নিঃসঙ্গ হৃদয়ের বেদনা মাখিয়ে দিয়ে। তাঁর বীক্ষায় সরল বালক, জীবন ও মাছ, গোলাপ ও প্রকৃতির উপাদান এলেও বিপ্রতীপভাবে তাতে ছায়া ফেলে পারমাণবিক বোমাতঙ্ক। বালকের বিশ্বাসের মতো কবিরও বিশ্বাস যে, মহাবিস্ফোরণের পরেও ‘লাল নীল সবুজ মার্বেলগুলো/ পরীদের চোখের মতো অখ- অটুট থেকে যাবে।’ (‘বালকেরা জানে শুধু’ 888sport app download apk)। এবং থেকে যাবে ‘আমাদের ভালোবাসার প্রাক্তন প্রহরগুলো আমার কামরার জলে/ লাল, নীল, সোনালি মাছের মতো লেজ তুলে ঘুরছে, প্রিয়তমা।’ সোনালি, লাল-নীল মাছ তো অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে সাঁতার কাটে তথা বন্দি বনসাই জীবন তাদের। কবির এই যে জীবনবোধ তা আত্মজৈবনিকতা থেকেই উৎসারিত। 888sport app download apkয় তিনি diversified autobiography-কেই রূপান্বিত করে 888sport app download apkর পার্সোনা তৈরি করেছেন।
১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর যে সামুদ্রিক ঝড় আমাদের উপকূলকে ও মানুষজনকে বিধ্বস্ত করেছিল সেই সূত্র ধরে শহীদ কাদরী তাঁর ‘একটি ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের জার্নাল’ 888sport app download apkটি রচনা করেন। এখানে ‘জীবিতের মুখ যেন/ মিশে গেছে মৃতের আদলে, শবযাত্রার মতো গম্ভীর মিছিলে/ ছেয়ে গেলো আমার শহর, ভরে গেলো বঙ্গোপসাগরের গর্জনে’, অথচ নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইল যথাস্থানে শহরের রেসেত্মারাঁগুলি। বিবেকি কবির মধ্যে যে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক জাগে তা দেখে যে নিজের ‘ওয়ার্ডরোব থেকে অনর্গল বেরিয়ে আসছে/ আমারই কাপড় চোপড় ফুলে যাওয়া লাশের মতো/ যেখানেই হাত রাখি সবকিছু মৃতের দেহের মতো/ শীতল, ঠান্ডা, হিম…।’ কবি আর রেসেত্মারাঁর নীল আলোর মধ্যেও আত্মগোপন করতে পারেন না। পরাবাস্তব জগতের মতো তাঁর প্রিয়তম ‘রেসেত্মারাঁটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে/ পড়ে আছে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে।’ অর্থাৎ কবিকে ছুঁয়ে যায়, পরিবর্তন ঘটায় ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এহবাহ্য, কবির আসল বিবর্তনটা ঘটে প্রাকৃতায়ন আর নগরায়ণের বৈপরীত্য উপলব্ধিতে – যা তিনি উত্তরাধিকার কাব্যে উপলব্ধি করেননি। যে-সূত্রে তাঁকে শুধুই বলা হয়ে থাকে নাগরিক কবি।
‘দাঁড়াও আমি আসছি’ 888sport app download apkটি (কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই কাব্য) তাঁর বাসনাকে আরো প্রাকৃতায়নের অভিমুখী করে। পুরো 888sport app download apkটি দার্শনিকতায় রূপকান্বিত আবার একই সঙ্গে বাহ্যিক অর্থের ব্যাপ্তিতেও শক্তিশালী, ছিপ হাতে অপেক্ষমাণ একজন তুমি-কে উদ্দেশ করে 888sport app download apkটির অমত্মর্বয়ন ঘটেছে। জলের প্রতীকতায় মুক্ত জীবনকে ধারণ করা হয়েছে, আর মাছ হচ্ছে যৌনতা-প্রজননের রূপক। জল আর ডাঙার বৈপরীত্যে 888sport app download apkটিতে দ্বিমুখী টান তৈরি হয়েছে – ‘আমি কোনদিন যাবো – দুই দিকেই প্রবল টান/ আমার, হ্যাঁ এই, চিরকাল/ এমনটাই হলো/ এমনি করেই ডাঙার ধার ঘেঁষে-ঘেঁষে আমার বসবাস/ কোনোদিনও হলো না’, কোন টানে কবি ডাঙা ছেড়ে ভেসে গেছেন ‘মাঝনদীতে একাকী খেলাচ্ছলে/ চোরা ঘূর্ণির ভেতরে/ এখন আমি কোনোদিকেই আর যেতে পারছি না’। এই জলে ভাসা 888sport app download apkর মধ্যে থাকা যেখানে ডুব সাঁতার-চিৎ সাঁতার-উবু সাঁতার সবই করেছেন কবি। ‘জলের ওপর আমার কৈশোর, আমার যৌবন/ কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে কি দারুণ সবুজ।’ এবং কবির ‘তুমি’কে হঠাৎ দেখেন সেও জলে সাঁতার দিচ্ছে। এই ‘তুমি’ কি কোনো দয়িতা, না-কি স্বয়ং 888sport app download apk? নাকি কবির জীবনটাই এই তুমি – যে ছিপ হাতে তীরে বসেছিল, এখন জলে নেমে কবির সঙ্গে সাঁতার দিচ্ছে? মৃত্যুর আবছায়াও আছে। কাব্যপঙ্ক্তিতে – ‘একটু পরেই রাত, তার পর জল তার ঠান্ডা করাত দিয়ে ফালি-ফালি/ কাটবে দুজনকে – ।’ বহুমাত্রিক দ্যোতনায় 888sport app download apkটি ভরপুর, কেবল আত্মজৈবনিকতাই নয়, 888sport app download apkর সত্তাকেও এখানে দ্যোতিত করা হয়েছে – ‘দাঁড়াও আমি আসছি/ তোমাকে চাই ভাসতে-ভাসতে/ ডুবতে-ডুবতে/ ডুবে যেতে-যেতে আমার/ তোমাকে চাই…।’ 888sport app download apk ও দয়িতা এখানে একাকার হয়ে গেল যা সকল জাতকবির মধ্যেই প্রত্যক্ষ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ যেমন শেষ লেখায় তাঁর ঈশ্বরীসত্তাকে সৃষ্টির বিচিত্র ছলনাজালে আকীর্ণরূপে দেখেছিলেন, অত বড় মাত্রিকতায় না হলেও শহীদ কাদরীর জীবনদর্শন শেষে এসে ভাসমান সত্তার মধ্যে তুমিকে পেয়েছে। এই ভাসমানতা প্রবাসজীবনসঞ্জাত হলেও তার উৎসারণে আছে স্বদেশেও উন্মূল হয়ে থাকার অমত্মর্বেদনা। তাই তিনি চতুর্থ কাব্যে তাঁর চুম্বনগুলিকে – তাঁর যাবতীয় আবেগ স্পর্শেন্দ্রিয়কে স্বদেশের ডাঙার দিকে প্রেরণ করতে চেয়েছেন। এই যে তাঁর জীবন-ভূমির প্রতি টান তবে তা কোনো তত্ত্বীয় কাঠামো বা রাষ্ট্রীয়-পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নয়, তা মুক্তই থাকতে চেয়েছে – নদীর জলধারার মতো, অনমত্ম প্রবহমান স্রোতেই চেয়েছে ভেসে যেতে। যাকে বলতে পারি মহাকাল, তাই তিনি গিয়েছেন মৃত্যুর হাত ধরে দেহহীন ভাসমানতায় লীন হয়ে গিয়ে। জল এখানে কাঠামোহীন বহমান জীবন আর ডাঙা হচ্ছে তাঁর শ্রেণিসত্তা, স্বদেশ ও নগর এবং পঠন-পাঠনঋদ্ধ মেধাবী সৃষ্টিশীলতা। দুইয়ের দ্বন্দ্বময়তায় তাঁর 888sport app download apk দীপ্র ও সংহত, মিথকথনে ছন্দ আর শব্দের চিত্রকাল্পিক বিন্যাস নিয়ে একামত্মই আধুনিক – যদিও 888sport app download apkর 888sport free bet স্বল্প, যেরকমটি লক্ষ করা যায় কবি সমর সেনের মধ্যেও। যে-বৃষ্টিমুখর নগর ও চিত্র এঁকে শহীদ কাদরীর কাব্যজীবন শুরু হয়েছিল শেষ 888sport app download apkয় (‘দাঁড়াও আমি আসছি’) সেই জল আর ডাঙার দ্বৈরথেই তা সমাপ্ত হয়েছে, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও কাব্যের কথা 888sport app download for androidে রেখেই আমরা এ-কথা বলছি। জল হচ্ছে কবির জীবনকাল আর ডাঙা তাঁর অন্বিষ্ট স্পেস যা তিনি মনে হয় পাননি বা পেলেও সেখানে স্থিত হতে পারেননি। এই কাল আর স্পেস বা ভূমির সন্ধিৎসা ‘তুমি’র দিকেই ধাবমান ছিল। এই ‘তুমি’কে বলা যাবে না প্রেমিকা-সত্তা, বরং তা অনির্ণেয় হলেও বহুমাত্রিক এক দিশার প্রতীকতা


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.