শামসুদ্দীন আবুল কালামের 888sport alternative link : মায়ের টানে মাটির কাছে

বদিউর রহমান

শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-৯৭) একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক। বাংলার দক্ষেণাঞ্চল বরিশালে তাঁর জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ ১৯৪১-এ। এরপর পড়াশোনার জন্য কলকাতা এবং কার্য উপলক্ষে 888sport appয় বসবাস। ১৯৫৯-এ তেত্রিশ বছর বয়সে তিনি দেশান্তরী হন; স্থায়ী আবাস খুঁজে নেন ইতালির রোম নগরীতে। সেখানেই কাটান জীবনের বাকি আটত্রিশ বছর। তাঁর আসল নাম আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এই নামে তাঁর লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল প্রথমদিকে। পরে তিনি পরিচিত হন শামসুদ্দীন আবুল কালাম নামে।

ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর লেখায় হাতেখড়ি। যেখানেই থেকেছেন – তিনি অবিরাম লিখেছেন, লিখেছেন 888sport alternative link আর ছোটগল্প। তাঁর প্রায় সব লেখাই বাংলার মাটিছোঁয়া। বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের জীবনপ্রবাহ তাঁর রচনার মূল বিষয়। দীর্ঘকাল ভিনদেশে, ভিন্ন পরিবেশে, পর-ভাষার প্রতিবেশে জীবন কাটালেও তাঁর রচনার বিষয় ও ভাষা বাংলার মাটি আর মানুষের বাইরে যায়নি কখনো। বিশ শতকের চারের দশকে তাঁর ‘জাহাজঘাটের কুলি’ ছোটগল্প ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই গল্পটি ১৯৪৫-এ কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাঁর শাহের বানু গল্পগ্রন্থভুক্ত হয়।

এযাবত তাঁর প্রকাশিত 888sport alternative linkের 888sport free bet চোদ্দো এবং ছোটগল্পগ্রন্থ আটটি। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় তাঁর 888sport alternative link।

শ্রেণিবিভাগের ধারায় শামসুদ্দীন আবুল কালামের 888sport alternative linkের অবস্থান বলা যায় দুটি দিকে। এক. উপজাতি, বেদে, জেলে, নাবিক প্রভৃতি আঞ্চলিক ও কর্মজীবী মানুষের জীবনচিত্রপ্রধান এবং দুই ইতিহাসচেতনা ও ঐতিহাসিক বিষয়নির্ভর। শামসুদ্দীন আবুল কালামের সৃষ্টিধারা নির্ধারণে এই শ্রেণি বা ধারাবিন্যাসই শেষ কথা নয়। এর বাইরেও আছে তাঁর রচনার বিসত্মৃতি। শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রকাশিত 888sport alternative linkধারা এরকম : কাশবনের কন্যা (১৯৫৪), আলমনগরের উপকথা (১৯৫৪), আশিয়ানা (১৯৫৫), জীবন কাব্য (১৯৫৬), কাঞ্চনমালা (১৯৬১), জায়জংগল (১৯৭৮), মনের মত ঠাঁই (১৯৮৫), সমুদ্রবাসর (১৯৮৬), যার সাথে যার (১৯৮৬), নবান্ন (১৯৮৭), কাঞ্চনগ্রাম (১৯৯৮) এবং আত্মজৈবনিক 888sport alternative link ঈষদাভাস  (২০১৬)। এছাড়াও আছে শাহের বানু (১৯৪৫), অনেক দিনের আশা (১৯৫২), পথ জানা নেই (১৯৫৩), ঢেউ (১৯৫৩), দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫), মজা গাঙের গান (১৯৮৭), পুঁই ডালিমের কাব্য (১৯৮৭) প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ। আরো আছে তিনটি কিশোর 888sport alternative link : রাতের অতিথি (১৯৪৫), কাকলীমুখর (১৯৪৮-এর পূর্বে), সবাই যাকে করল হেলা (১৯৬১)।

888sport alternative linkের মধ্যে একমাত্র আলমনগরের উপকথা ইতিহাসের চেতনায় রচিত, এছাড়া বাকি সব প্রায় লোকস্পর্শী। আর কাঞ্চনগ্রাম রচিত 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।

কাশবনের কন্যার প্রথম প্রকাশ বাংলা ১৩৬১, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৩৬৪ এবং তৃতীয় প্রকাশ ১৩৭৫-এ। প্রকাশক ওসমানিয়া বুক ডিপো, 888sport app। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে লেখকের নাম ছাপা হয়েছে ‘আবুল কালাম শামসুদ্দিন’। প্রসঙ্গত ১৩৬৪ সালে কলকাতার নবযুগ প্রকাশনী প্রকাশিত শাহের বানু গল্পগ্রন্থেও একইভাবে (আবুল কালাম শামসুদ্দিন) নাম মুদ্রিত দেখা যায়। পরবর্তীকলে সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিনের সঙ্গে নামবিভ্রাট দেখা দিলে তিনি শামসুদ্দীন আবুল কালাম নামে লেখা শুরু করেন। এ-প্রসঙ্গে লেখকের বয়ান : ‘আজাদ-সম্পাদক  সাহেবের নামের সঙ্গে আমার নাম এক হওয়াতে যেসব অসুবিধা সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা নিরসনের জন্য এখন হইতে আমার নাম ‘শামসুদ্দীন আবুল কালাম’ লিখিতেছি’  (জীবনকাব্য গ্রন্থের ভূমিকা)।

শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রথম 888sport alternative link কাশবনের কন্যা। 888sport alternative linkের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দেশের মাটি আর মানুষের প্রতি গভীর আগ্রহ। দক্ষেণ বাংলার কর্মজীবী মানুষের অন্যতম ‘নায়ের মাঝি’র জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, কাঠিন্য-কোমলতা কিংবা দৃঢ়তা,  প্রেম-বিরহ এ-888sport alternative linkে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। তীরহারা মাঝিদের জীবনের আর্থিক অনটন, অভাব, শূন্যতা, হাহাকার, শান্তির নীড় রচনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, প্রেমিকের অভিমান আর অনুশোচনা, সামাজিক উৎপীড়নে জীর্ণ নায়িকার সাহসিক গৃহত্যাগ, সামাজিক বিধিনিষেধের গভীরে নিমজ্জিত হয়ে অনুশোচনার পরিণতিতে অসহায় আত্মসমর্পণ এ-888sport alternative linkের অধ্যায়ে অধ্যায়ে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। 888sport alternative linkে দুটো কাহিনি পাশাপাশি, পরিণতির প্রচেষ্টায় কখনো কোনো একটি কাহিনি পারস্পরিক পরিমিতির অভাবে অপেক্ষাকৃত শস্নথ হয়ে পাঠকমননে পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। কাশবনের  কন্যায় ঘাটের মাঝির জীবনের অসংখ্য খ-চিত্র উজ্জ্বল হয়েছে লেখকের সংবেদনশীল মনের মাধুরীমিশ্রিত বাণীবন্ধনে। লেখক অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন এই 888sport alternative linkে। অথচ এ-ভাষা কখনো কোনো পাঠকের মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না অবোধ্যতার অজুহাতে, পাঠের গতিকেও শস্নথ করে না। ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম লোক-ঐতিহ্যকে কীভাবে ধারণ করেছেন তাঁর মননে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় 888sport alternative linkের প্রতিটি অধ্যায় বিন্যাসে সংযুক্ত লোকগীতির সংযোজনে। অধ্যায়ে অধ্যায়ে :

মনের মানুষ নইলে

মনের কথা কইও না

কথা কইও না, প্রাণ সজনী গো (পৃ ০)

আবার

সুখেরে কইরাছি বৈরী রে বন্ধু

দুঃখেরে দোসর।

আমি পরের পীরিতে মজাইয়া

আপন করলাম পর? (পৃ ৭৫)

পরের অধ্যায়ে

তুমি তো সুন্দর কন্যা

মোরে দিছ মন

বাঁশীর সুরে তোমার কথা

কহিব এখন! (পৃ ৮৭)

আবার

আমি এমন করইয়া সাজলাম সাজাইলাম

তবু বন্ধু আইলা না

এত রৌদ মাথায় লইয়া

এত দেয়ই মাথায় লইয়া

এত কাদা-জোঁকের কামড় খাইয়া

ক্ষেতে লাঙল দিলাম, ফসল দিলাম

সেই ফসল সিজাইলাম, রান্ধিলাম

তবু ভাতে সোয়াদ পাইলাম না। (পৃ ১১৩)

আবার

বধু হৃদয় যে আর মানে না বারণ

অঙ্গর যৌবন-জ্বালা না মানে শাসন। (পৃ ১৯১)

আবার

ও আমার গুরুর কথা বলবো কি,

আমার ভরইয়া গেছে দুই আঁখি (পৃ ১৬১)

পরের অধ্যায়ের শুরুতে :

আমি তো অবলা 888sport promo code হইলাম অন্তর পুরা

কূল ভাঙ্গিলে নদীর জল মধ্যে পড়ে চড়া (পৃ ১৭৯)

আবার

আবার কী আইসবারে মাঝি

এই ঘাটে নাও লইয়া

আমি যে রইমু দিবারাতি

আসার পন্থ চাইয়া। (পৃ ২১০)

এবং শেষ অধ্যায়ের শুরুতে :

গুরু তোমার চরণ

করলাম সার

তুমি বিনে কেমনে কমবে

এই দুঃখের ভার (পৃ ২১৫)

 

এসব উদ্ধৃতির শেষে ‘সংগ্রহ’ কথাটি  লেখা আছে। লোকগীতি ভাটির সুরে সুর মিলিয়ে যেন নদীর কলতানে একাত্ম হয়ে মিলিয়ে যায় এই কথামালা। প্রতিটি উদ্ধৃতি পূর্ণপৃষ্ঠাব্যাপী এবং তার সঙ্গে আছে 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা স্কেচ। এমন মনোরম অঙ্গসজ্জা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কাশবনের কন্যার অন্তত তিনটি সংস্করণ।

এই 888sport alternative linkের অন্যতম চরিত্র শিকদার একজন লোককবি। কথায় কথায় গান গেয়ে যার পরিচয় তারও জীবনে প্রেম আসে, আসে বিরহ; শেষাবধি শিকদার ঘর-সংসারের বাঁধনে ধরা পড়ে না, বরং ভাটির স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে যায় সুদূর ভাটির দেশে। শুধু বলে যায় ‘দেহ সাধনার লইগ্যাই পরবাসে চললাম’।

ফলে সাধারণ মানুষের সরল জীবনপ্রবাহের রোমান্টিক আবেগ আর ব্যাকুলতাই এ-888sport alternative linkের প্রধান উপজীব্য। এ-888sport alternative linkের চরিত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তেমন স্থান পায়নি; তা যেন স্রোতের টানে বিলীন হয়ে মিশে গেছে, ভেসে গেছে জলস্রোতে।

 

যাযাবর বেদের জীবনকাহিনি নিয়ে গড়ে উঠেছে 888sport alternative link কাঞ্চনমালা। গৃহস্থ কৃষকপুত্র কাঞ্চন আর ভাসমান বেদের পালিত কন্যা মালার রোমান্টিক আলেখ্য নিয়েই এ-888sport alternative linkের দেহ নির্মাণ। নদীর বুকে ভাসমান জীবন-মরণে অভ্যস্তবেদে-আলেখ্যই এ-888sport alternative linkের মূল উপজীব্য। বেদে পরিবারে লালিত মালার সঙ্গে চাষির ছেলে কাঞ্চনের প্রেমমিলনে অন্তরায় বেদে সম্প্রদায়ের মদন। এর আগে অবশ্য দরিদ্র কৃষকপুত্র কাঞ্চন মালার প্রেমের টানেই বেদে-জীবনকে বরণ করে নিয়েছিল স্বচ্ছন্দে। মদনের কূটকৌশলে কাঞ্চন বেদের আশ্রয় থেকে হলো বিতাড়িত। গ্রামে ফিরে কাঞ্চন পেল মালার আসল পরিচয় – সে বেদের মেয়ে নয়। কাঞ্চন ফিরে গিয়ে মালাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এই সাদামাটা কাহিনি অবলম্বনে রচিত কাঞ্চনমালা 888sport alternative linkের বৈশিষ্ট্য অন্যত্র। কাঞ্চনমালার ঔপন্যাসিক 888sport alternative linkকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন বেদে-জীবনালেখ্যর মরমি উপাখ্যান উপস্থাপনের মাধ্যমে। 888sport alternative linkের কাহিনিবিন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে বৈষ্ণবপদ উচ্চারণ, সাপুড়ের গান, গাড়লির পুঁথি পাঠ, সাপ খেলানো বেদে নাচ প্রভৃতি 888sport alternative linkকে গীতিময় করে তুলেছে। গীতিকাধর্মী রোমান্টিক চরিত্রবিন্যাসই যেন এ-888sport alternative linkের প্রধান প্রতিপাদ্য। শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাধারণ কর্মজীবী মানুষের প্রতি মমত্ববোধই এ-পরিবেশ সৃষ্টির সহায়ক। কাঞ্চনমালার ভাষার গাঁথুনি সতেজ ও বেগবান, তার সঙ্গে আছে উদ্ধৃতির বাহার।

রাধার কি হইল অন্তরে ব্যথা

বসিয়া বিরলে থাকায় একলে

না শুনে কাহার কথা

কিংবা

ছুঁইওনা ছুঁইওনা বধূ ঐখানে থাকো

মুকুর লইয়া চাঁদ মুখখানি দেখো

নয়নের কাজল বয়ানে লেগেছে

কালোর উপর কালো

প্রভাতে উঠিয়া ও মুখ দেখিনু

দিন যাবে আজি ভালো

888sport alternative linkের বিষয়নির্ভর শ্রেণিবিচারে কাঞ্চনমালাকে আঞ্চলিক 888sport alternative link শ্রেণিভুক্ত বলা যায়। আর এই অঞ্চল স্বাভাবিকভাবেই 888sport appsের দক্ষেণ অঞ্চলের জনপদ, অর্থাৎ লেখকের জন্মভূমি এবং শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত বরিশাল অঞ্চল। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, শামসুদ্দীন আবুল কালামের মুখনাম বা ডাকনাম ‘কাঞ্চন’। আপন-মহলে ‘কাঞ্চন ভাই’ নামে তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন। আপন সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। লিখলেন কাঞ্চনমালা, আবার কাঞ্চনগ্রাম। বিষয়টির দিকে  গুরুত্ব দিয়ে বলা যায়, কাঞ্চনমালা তাঁর জীবনকাহিনি হয়ে ওঠেনি। কাঞ্চনমালাকে লেখকের জীবনভিত্তিক বা আত্মজৈবনিক 888sport alternative link বলা যায় না। কাঞ্চনমালা হয়ে উঠেছে লেখকের চিরচেনা পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশের জীবন্ত আখ্যান।

কাঞ্চনমালা দক্ষেণ বাংলার বিশেষ এক জনগোষ্ঠী বেদেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, আশা-নিরাশার জীবন্ত আলেখ্য। বেদেদের কোনো স্থায়ী বাড়িঘর বা ঠিকানা নেই। নৌকায় ভাসমান বিচিত্র এদের জীবন। যাযাবর শ্রেণির এই জনগোষ্ঠীর অস্থায়ী ভাসমান আবাস-বিচরণের বিচিত্র বর্ণনা ফুটে উঠেছে এই 888sport alternative linkে। বেদেসমাজের মধ্যেই জীবনপ্রবাহের বাইরে গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার এমনকি নদী-নালা, খাল-বিলের নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে কাঞ্চনমালায়। গ্রামবাংলার বিচিত্র চালচিত্র ফুটে উঠেছে এই 888sport alternative linkের পাতায় পাতায়। মাটিছোঁয়া কথা888sport live footballিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের বর্ণনাকৌশলে মাটির মউ মউ সুবাস পাঠককে আপস্নুত করে তোলে সহজেই।

আলমনগরের উপকথা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে দুই মহল রাখা হলেও তা আলমনগরের উপকথা নামেই বেশি পরিচিত। এটি একই সঙ্গে উপকথা এবং ইতিহাস। আলমনগরের উপকথা গণজাগরণ আর সমাজবিবর্তনের কাহিনিময় চিত্রকল্প। যুগপরম্পরায় বিসত্মৃত ইতিহাসের নানা উপকরণ 888sport live chatীর সার্থক তুলির টানে উপস্থাপিত হয়েছে ইতিহাসকথায়। সে-কাহিনিতে বিধৃত হয়েছে যুগ মানসিকতার নির্যাসরূপ, আর সে-ইতিহাস হয়ে উঠেছে সমাজবিবর্তনেরই ইতিহাস।

মধ্য-ভারতের পীর হজরত জামালউদ্দীন ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এ-দেশে এসে আস্তানা গেড়েছিলেন আলমনগরে। আলমনগরে ধর্মীয় চেতনা বিকাশের জোয়ার এলো। পীরের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররা ধর্মীয় চেতনাকে গৌণ ভেবে ঐশ্বর্য বৃদ্ধি আর তা রক্ষণাবেক্ষণকেই মুখ্য ভাবলেন। গড়ে তোলেন নবাবি আর নবাবি জৌলুসে ভরা রাজপ্রাসাদ। প্রেমের ফাঁদ পেতে নবাবের হাত ধরে প্রাসাদে প্রবেশ করল গহরবাঈ। কিন্তু গহরবাঈর প্রেম হার মানল নবাবি দম্ভের কাছে। নবাব সৈয়দ আসলামের বিলাসবৈভবের দিন শেষ হয়ে এলো। বিলাত থেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এলেন নবাবজাদা আলমগীর। উদার মানসিকতাসম্পন্ন উচ্চশিক্ষিত এ-যুবক মানুষ আর তার ভালোবাসার মর্যাদায় বিশ্বাসী। রোশনাবাঈকে ভালোবাসতে তার আপত্তি নেই – বরং আছে উৎসাহ। মানুষকে মর্যাদাবান দেখতে, শোষণমুক্ত দেখতেও তার উৎসাহের অন্ত নেই।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে নব্য শোষক 888sport live chatপতির আগমনের মতোই 888sport alternative linkে এলেন মীর খাঁ। আধুনিক জীবনের জঘন্যতম শোষণের মন্ত্রে হলেন দীক্ষিত। ঐশ্বর্যবান মীর খাঁর আগমন বয়ে আনল দুর্বল সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে নতুন অসাধু 888sport live chatপতির সংঘাত। সে-সংঘাতের মীমাংসিত পরিণতির আগেই উজ্জ্বল হলো গণচেতনার অভিব্যক্তি এবং জয়ও হলো গণচিমত্মার। নতুন মানবজীবনের এ-ইঙ্গিতপূর্ণ সূচনায় 888sport alternative linkের সমাপ্তি।

 

বাঙালি কিশোরচরিত্র সাবেরের জীবনের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে সবাই যাকে করল হেলা 888sport alternative linkের দেহনির্মাণ। নিম্নবিত্ত ঘরের লেখাপড়ায় অমনোযোগী কিশোর সাবের। লেখাপড়ায় মন নেই অথচ চারদিকের নানা বিষয়ে তার আগ্রহ। নানাজনের নানা কাজে সাহায্য করার প্রচেষ্টা তার সবার আগে। একদিন স্কুলের ম্যাজিক লণ্ঠন মেরামত করে দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অথচ নিজ পরিবারের কেউ পছন্দ করে না সাবেরকে। সবাই এড়িয়ে চলত, একমাত্র বোন মঞ্জু ছাড়া। বড়ভাই মালেক ছিল সম্পূর্ণ আলাদা চরিত্রের, লেখাপড়া করা ভালো ছাত্র। একসময় সাবের পরিচিত হয় খেলার মাঠের বন্ধু রফিকের পরিবারের সঙ্গে। রফিকের আমেরিকা প্রবাসী আত্মীয় আহমদ সাহেবের কাছে স্বীকৃতি পায় সাবেরের কারিগরি মেধা। আহমদ সাহেবের অচল হয়ে যাওয়া সিনেমা প্রজেক্টরটি মেরামত করে দিয়ে সাবের তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে। সাবেরের পুতুল তৈরির কৌশলও মুগ্ধ করে আহমদ সাহেবকে। এই পুতুল তৈরির কৌশলের সূত্র ধরেই আহমদ সাহেব সাবেরকে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর আমেরিকান বন্ধু ম্যাক সাহেবের সঙ্গে। ম্যাক সাহেবের অচল গাড়ি সচল করে দিয়ে বিস্মিত করে সবাইকে। ম্যাক সাহেব খুশি হয়ে তাঁর গাড়িটিই দিয়ে দেন সাবেরকে। কিন্তু সাবের সে-গাড়ি নিতে অস্বীকার করে। সাবের একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করায় বাবা-মা। একদিন আহমদ সাহেব ও ম্যাক সাহেব সাবেরের বাড়িতে এসে সাত হাজার টাকার চেক দেন। পুতুলের নতুন নতুন ডিজাইন করার জন্য চার হাজার টাকা, আর সাবের যে-গাড়ি (মেরামত করা) নেয়নি, তার দাম হিসেবে তিন হাজার টাকা, এই মোট সাত হাজার টাকা। এই সাত হাজার টাকাই সাবেরের পরিবারের পালাবদলের চাবিকাঠি।

তাহলে কেমন ছিল সাবেরের পরিবার। সেই কাহিনি দিয়েই 888sport alternative linkের বিসত্মৃতি। সমসাময়িক সময়ের নিম্নবিত্তের সামাজিক অবস্থা-অবস্থানের ওপরই গড়ে উঠেছে সবাই যাকে করল হেলা। সাবেরের বাবা গ্রাম ছেড়ে শহরে যান ভাগ্যের অন্বেষণে। ছোট চাকরি করেন। সে-চাকরির আয় এত কম যে, তাতে ছয়জনের সংসার চালানো দায়। দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ ছয়জনের সংসার। সামাল দিতে অফিসের বাইরে সাবেরের বাবা ছোটদের জন্য পাঠ্যবই রচনা করেন। সেখানেও প্রকাশক নামের ধুরন্ধর ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়েন। একসময় অনেক কষ্টের আয়ে 888sport appর শান্তিনগর এলাকায় একটা ছোট বাড়ি কেনার চুক্তি করে সেখানে ওঠেন, কিন্তু বাকি টাকা শোধ করতে না পারায় ছেড়ে চলে আসতে হয় সে-বাড়ি থেকে। সাবেরের এই টাকা ফিরিয়ে দেয় সেই বাড়ি। চেক পাওয়ার পর ঔপন্যাসিক পাঠককে সাবেরের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ করে তোলে :

মা এসে যখন বুকে টেনে নিয়ে আনন্দে মাথায় চুমু খেলেন, কেবল সেই সময়ে সে তার হাতে সেই চেকখানা গুঁজে দিয়ে তার বুকে মুখ লুকিয়ে বলল : বাবাকে বলে আমাদের সেই শান্তিনগরের বাড়িতে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করো মা। মা বার বার তার মাথায় চুমো খেয়ে বললেন : করবো করবো বাবা, কেউ যা পারলো না, তুমি সেই অসাধ্য সাধন করেছো।

(সবাই যারে করল হেলা,  ১৯৬১, পৃ ১০৭)

 

এমন একটা পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত 888sport alternative link সবাই যাকে করল হেলায় উঠে এসেছে সমসাময়িক সময়ের সামাজিক, আর্থিক পালাবদলের বাস্তব চিত্র। দেশবিভাগের পর অর্থাৎ গত শতকের পাঁচের দশকের বাঙালি নিম্ন-মধ্যবিত্তের গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার প্রবণতা এবং শহুরে জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার সুকঠিন সংগ্রামের কাহিনি ফুটে উঠেছে এই 888sport alternative linkে। এর সঙ্গে আছে কিশোর মনস্তত্ত্বের যথার্থ বিশেস্নষণ।

প্রচলিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমত্মান, বিশেষ করে ছেলেরা লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি করে ভালো আয়-উপার্জন করবে, সংসারের গরিবি হটাবে, এই থাকে বাবা-মার প্রত্যাশা। শত আর্থিক অনটনেও ছেলের শিক্ষায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে থাকে সজাগদৃষ্টি। সহজ কথায় খেয়ে-না-খেয়েও ছেলেকে শিক্ষিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে লেখাপড়ার বাইরে সৃজনশীল মেধা বিকাশে সহায়তার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এই প্রচলিত ধারণা থেকে অন্যদিকে পাঠকের চোখ ফিরিয়েছেন ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম। সাবেরকে তিনি দাঁড় করিয়েছেন প্রচলিত ধারার বাইরে সৃজনশীল মেধাবিকাশের ধারার প্রতীক হিসেবে।

 

888sport appsের গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জীবনের বিচিত্র কাহিনি, ঘটনা সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বর্ণনা নিয়ে গড়ে উঠেছে জায়জংগলের অবয়ব। সাগরপারের বনভূমির নানাশ্রেণির মানুষের জীবনের বিচিত্র কাহিনি ফুটে উঠেছে এই 888sport alternative linkে। সুন্দরবন এলাকার মানুষের জীবন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। হিংস্র পশুপাখির সঙ্গেই এদের জীবনযাপন। বাঘ, সাপ, কুমির, হরিণ, বাঁদর যেমন আছে, তেমনি আছে সুন্দরী, গজারি, গোলপাতার সঙ্গে আরো কত গাছপালা, লতাপাতা। আছে নানা জাতের মাছ। এ-অঞ্চলের মানুষকে জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে। হিংস্র জন্তু-জানোয়ার আর প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রামই এদের জীবন। এই জীবনপ্রবাহের বাস্তবনির্ভর ও সরল বৃত্তান্ত জায়জংগলের মূল আকর্ষণ। সেসঙ্গে আছে সুন্দরবনের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের প্রতি গভীর মমত্বভরা আক্ষেপ। লেখকের ভাষায় :

নানারকম বিরাটাকার বৃক্ষ, ঘন ঘন বাঁশ-ঝাড়, অজস্র লতা ও গুল্ম, দশবারো হাত লম্বা হোগলা, গোলপাতা, নল-খাগড়া, কাশ ও শনবন আশ্চর্য রকম জীবনীশক্তি লইয়া স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে এই অরণ্যকে এক মহামহিম রূপ দিয়েছে।

(জায়জংগল, ১৯৭৮, পৃ ২)

 

এই সৌন্দর্যের বর্ণনা ফুটে উঠেছে 888sport alternative linkটির পরতে পরতে। সেই সঙ্গে আছে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের লোভ-লালসা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ষড়যন্ত্রের কাহিনি। আছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের নানা ফন্দি-ফিকির। শোষক-শোষিতের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে কখনো ভারী হয়ে ওঠে সুন্দরবনের আকাশ-বাতাস।

888sport alternative linkে বেদেসমাজের জীবন-পরিচিতিও উঠে এসেছে সার্থকভাবে।

ভিন্ন পরিবেশে বসবাসকারী একদল মানুষের জীবন সংগ্রাম যেমন ফুটে উঠেছে জায়জংগল 888sport alternative linkে, তেমনি এই বিশাল অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়েও সজাগ হয়ে ওঠেন 888sport alternative linkের সচেতন পাঠক। নানা চরিত্র নির্মাণে মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর রেখেছেন শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর জায়জংগলে

 

জায়জংগল প্রকাশের প্রায় এক দশক পর প্রকাশিত হয় মনের মত ঠাঁই। ভিন্নধারার 888sport alternative link মনের মত ঠাঁই। এক ভিন্ন পরিবেশে এর কাহিনি বিন্যাস; উপস্থাপন কৌশলও আলাদা। এক পর্যটক চরিত্রকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে মনের মত ঠাঁই। কাহিনি বর্ণনা অনেকটা সংলাপনির্ভর।

পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ইতালির ভেনিসের জীবনযাত্রা বর্ণনার মধ্য দিয়ে এর পট উন্মোচন। পর্যটক চরিত্রকে কেন্দ্র করেই শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাবনা ব্যক্ত করেছেন এই 888sport alternative linkে। আমির এই কাহিনির প্রধান চরিত্র। নামই বলে দেয় সে ইতালীয় নয়। অপর দুই চরিত্রের একজন ভেনিস শহরের এক হোটেল মালিক পরিবারের মেয়ে মারিয়া আর একজন মার্কিন তরুণী ক্যারল – সমাজ888sport apkে স্নাতক সে। এই তিন চরিত্রকে কেন্দ্র করে কিছুটা হালকা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি যেন মনের মত ঠাঁই। তবে একে নিছক প্রেমের কাহিনি বলা যাবে না, বরং এর উদ্দেশ্য অন্য কিছু, ঠিকানা অন্য কোথাও। এই অন্য কিছু হলো রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার; আর সে-মতাদর্শ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব। এই 888sport alternative linkের মূল প্রতিপাদ্য বলা যায় মানুষের স্বদেশ অন্বেষা।

কাহিনির মূল বা কেন্দ্রীয় চরিত্র বাঙালি যুবক আমির দেশ888sport slot gameে ইতালি এসে যা দেখেছে, যা খেয়েছে সব উলেস্নখ করেছে, অর্থাৎ ঔপন্যাসিক এসব বলিয়েছেন তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মুখে। কেবল বলেই ক্ষান্ত হননি, তুলনা করেছেন 888sport appsের দৃশ্য বা খাদ্যের সঙ্গে। ইতালির সমাজ দেখে আমিরের অভিব্যক্তি :

এখানেও অভাব দেখেছি, দারিদ্র্য দেখেছি, আর তার পাশাপাশি চিত্তবৃত্তির অজস্র ঐশ্বর্য, ঐতিহ্য। এদেশের মানুষের জীবন সাধনা আমার সেই দেশের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।

(মনের মত ঠাঁই, ১৯৮৫, পৃ ৫২)

মানুষের জীবন সাধনার অভিন্ন সংগ্রাম সাধনার কথা উঠে এসেছে এই 888sport alternative linkে। দুই দেশের মানুষের যে মানবিক ঐক্য বা সাযুজ্য ঔপন্যাসিক তার দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে অচেনা পথে পথ হাঁটিয়েছেন আমিরকে। 888sport alternative linkের প্রায় শেষের দিকে আমির ভেনিসের একটি ছোট রেসেত্মারাঁয় সেদেশের খাবার ‘পিৎসা’র অর্ডার দেয়, সঙ্গে তার বান্ধবী মার্কিন তরুণী ক্যারল। ঔপন্যাসিকের অবলোকন :

পিৎসা এসে গেল। আমির ছুরি কাঁটা হাতে নিয়ে বলল :  জানো, এ জিনিসটা  অনেকটা আমাদের দেশের তন্দুরি রুটির মতো। কেউ কেউ বলে পিঠা। কেবল গোশত তরকারি নিজ রুচির সঙ্গে মিশিয়ে মিশিয়ে খেতে হয়।

(মনের মত ঠাঁই, ১৯৮৫, পৃ ৭৬)

888sport alternative linkের সমাপ্তিতে শামসুদ্দীন আবুল কালামের বর্ণনা-নৈপুণ্য পাঠকমাত্রকেই আকর্ষণ করে। তাঁর ভাষায় :

পুবের আকাশ তখন প্রায় ফর্সা হয়ে আসতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বকবক করে উঠবে পায়রার দল। ঘণ্টা বেজে উঠবে গির্জার চূড়ায়। বহু শতাব্দীর বহু মানুষের নিঃশ্বাস আর হৃদয়ের অভিযাত্রী স্বপ্নপুরী আবারও জেগে উঠবে ব্যস্ততায়, মানুষের ভিড়ে। রূপকথার বইয়ের পৃষ্ঠা কেটে কেটে তৈরি ভেনিসের রঙ্গমঞ্চে আবারও অভিনীত হবে পানা লীলানাট্য। যতোই জোরে বয়ে যেতে চাক ঝড়ের বাতাস, লাগুনার কালো পানি হামাগুড়ি দিয়ে উঠে এসে মুছে নিয়ে যেতে চাক তার উপরকার খর চরণচিহ্ন, আজও সে ধরিত্রীর মতো ঔদাস্যে তার বীর সমত্মানদের ঠাঁই দেবে। শীতের শেষে বসন্তকালের মতো ঘরে ঘরে জানালায় জানালায় ফুলের মেলার প্রায় ধ্বসেপড়া বিবর্ণ ঘরবাড়িগুলোকে উজ্জ্বল করে জীবনের প্রতি বিশ্বাসটাকেই আবার প্রকট করে তুলবে। দূর দূরান্ত থেকে আসা নাবিকও তার মায়া ভুলতে পারে না।   (মনের মত ঠাঁই, ১৯৮৬, পৃ ৯১)

বর্ণনার এই মুন্সিয়ানা শামসুদ্দীন আবুল কালামের স্বাতন্ত্র্যকেই 888sport app download for android করিয়ে দেয়।

শামসুদ্দীন আবুল কালাম প্রায় যৌবনে মাতৃভূমি 888sport apps ছেড়ে বসতি পেতেছিলেন ইতালির রোমে। তাঁর সেই আবাসকে তিনি মনের মত ঠাঁই মনে করে ভিনদেশে প্রথম প্রবেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই 888sport alternative link লিখে থাকতে পারেন।

সমুদ্রবাসর 888sport alternative linkের শুরুতে (প্রথম সংস্করণ) ‘সমুদ্রবাসর’ শিরোনামে দুটি বাক্য ছাপা আছে এরকম :

মূল 888sport alternative linkটির রচনাকাল ১৯৪৭-৪৮ সাল; বর্তমান আংশিক পুনর্লিখন ও সংস্করণ ১৯৮০-৮১ সালে। আঞ্চলিক সাদৃশ্য রক্ষার উদ্দেশ্যেই প্রাচীন গদ্যরীতি ব্যবহৃত।

(সমুদ্র বাসর, ১৯৮৬, পৃ ৭)।

 

এই বাক্যদুটি থেকে পাঠক সহজেই জানতে পারেন এটি ১৯৪৭-৪৮ অর্থাৎ দেশবিভাগ এবং দেশবিভাগের পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত, এটি আঞ্চলিক 888sport alternative linkের পর্যায়ভুক্ত এবং এর ভাষারীতি স্বতন্ত্র। 888sport alternative linkের শুরুতে এর কাহিনি সম্বন্ধে লেখকের ভাষ্য :

এ কাহিনী এক হিসাবে পৃথিবীর ইতিহাসের মতই পুরাণ-কথা। দেশ কাল এবং মানুষ গোষ্ঠীভেদে তাহার ভাষা ও একই রকম নয়। লিপিবদ্ধ ইতিহাসে রাজ্যরাষ্ট্র ভাঙাগড়া তাঁহার রাজ-রাজন্যের বিবরণ আছে। শিলালিপি, তাম্র, এমনকি স্বর্ণপাত্রেও বহু কীর্তি-কাহিনী এবং জয় পরাজয়ের খ- খ- অধ্যায় মিলাইয়া যে ইতিহাস সাধারণত লিখিত হয়, তাহারও বাহিরে জীবন-কথা পড়িয়া রয়, সেইদিকে কাহারও দৃষ্টিপাত বড় সহজ হইয়া ওঠে না। ভূর্জ্জ অথবা তালপত্রেও যে গাথা-উপগাথা মানুষের মন্দিরে মন্দিরে শোভা পাইয়াছে, তাহার মধ্যেও এর কোনও উলেস্নখ নাই।

(সমুদ্র বাসর, ১৯৮৬, পৃ ৩৩৭)

শিলালিপি, তাম্রলিপি, ভূর্জপত্র, তালপত্রে লিপিবদ্ধ কিংবা ইতিহাসে যাদের স্থান নেই এমন মানবগোষ্ঠীর জীবনালেখ্য নিয়েই সমুদ্রবাসরের দেহ, নির্মাণ। সাগরতীরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিচিত্র পেশার মানুষের জীবনের বিচিত্র কাহিনি উঠে এসেছে এই 888sport alternative linkে। এদের জীবনকাল নির্ধারিত হয়েছে ১৯৪৭-এর দেশবিভাগের পূর্ব বা ব্রিটিশ শাসনকালের শেষ পর্যায় এবং ব্রিটিশ বিদায়ের পরের সময়। সাগর উপকূলের জনজীবনের বর্ণনার পাশাপাশি নগরজীবনের প্রতি আকর্ষণের কথাও বিবৃত হয়েছে সমুদ্রবাসরে

সাগরতীরে বসবাসকারী জেলে, বেদে, কুমার, মগ, বৈদ্য বা ব্যবাইজ্জার জীবনালেখ্য যেমন বর্ণিত হয়েছে এই 888sport alternative linkে; আবার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে প্রয়োজনীয় লাঠিয়ালদের কথাও ভোলেননি মাটিছোঁয়া ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম। সেই সঙ্গে আছে সুরের পাগল বয়াতি, আর নৌকার ছইয়ে তার দোতারা-সারিন্দা হাতে মন-মাতানো গানের সুর। খেটে খাওয়া মানুষের কঠিন জীবনালেখ্য বর্ণনা এই 888sport alternative linkের প্রধান উপজীব্য হলেও তার পাশাপাশি জোতদার ধনিক শ্রেণির শান-শওকতের বর্ণনা দিতেও ভোলেননি এই সমাজসচেতন ঔপন্যাসিক।

এই 888sport alternative linkে যেসব অঞ্চলের কথা উলেস্নখ আছে তার অনেক নামই কল্পিত নয়, বাস্তব। আছে বাহাদুরপুর, সুবিদপুর,  বাকেরগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠি, পার্দিশীবপুর, চরফ্যাশন, সুজাবাদ, কুয়াকাটা, মাটিভাঙ্গা, বেতাগী, কামদেবপুর ইত্যাদি। 888sport alternative linkের সূচনায় যে-আঞ্চলিকতার কথা বলা হয়েছে সে-অঞ্চল বরিশাল অঞ্চল। লেখক ভাষা ব্যবহারে সচেতনভাবে বরিশালের আঞ্চলিকতার গুরুত্ব দিয়েছেন। 888sport alternative linkে উলিস্নখিত গান বা গানের অংশ উলেস্নখেও তিনি আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন সচেতনভাবে :

রাইত কালা জাইত কালা

কালা সমুদ্দুরের ঢেউ

উপরে আছে আলোর মালা

দেখছো চাইয়া কেউ!

ওরে আমার ভাই বেরাদর চাচা

না হয় দেখ জোনাক পোকের খেলা

বাঁচিয়া আছি এই কথাটাই সাঁচা

বাঁচিয়া থাকুক রঙ্গ-রসের মেলা-

(সমুদ্রবাসর, ১৯৮৬, পৃ ২৪৫)

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে অতিবাহিত হয় সাগরতীরবাসীদের জীবন। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে। এ-প্রতিকূলতা থেকে মুক্তি নেই সাগরতীরের মানুষদের। তারই সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় 888sport alternative linkের একেবারে শেষ পর্যায়ে। লেখকের বর্ণনা পাঠকমাত্রকেই বিচলিত করে তোলে :

কোথাও কোনও কিছু আঁকড়াইয়া ধরিবার সুযোগও সে পাইল না। কয়েকটি মুহূর্তের মধ্যে সে ক্রমাগত পাক খাইয়া শব্দহীন দৃশ্যহীন অনুভূতিহীন এক ঘোর অন্ধকারের মধ্যে হারাইয়া গেল। ঘূর্ণির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র হইতে উঠিয়া আসিল পাহাড়ের মত উঁচু উঁচু ঢেউ, যেন তাহারই-চেলাচামু-া দলবল, নানারকম গর্জন ও কোলাহল তুলিয়া তাহারা মত্ত হইল নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞে। চরের কেউই বা কোনও কিছুই তাহাদের অক্রোশ হইতে আত্মরক্ষার সুযোগ পাইল না।

(সমুদ্রবাসর, ১৯৮৬, পৃ ৩৩৫)

 

এর পরই আছে :

নৌকা পাড়ের ঢালু মাটি স্পর্শ করিবার সঙ্গে সঙ্গে সে উদ্বেগে আগ্রহে লাফাইয়া পড়িল নিচে, যদিও কোনও দিকে নিত্যদিনের পরিচিত ঘরবাড়ি গাছপালা কিছুই যেন আর অবশিষ্ট ছিল না, তবু সে প্রায় উন্মাদের মত সেই ধ্বংসসত্মূপের মধ্যে সব কিছু খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিল। একে একে ডাকিতে শুরু করিল সকলের নাম ধরিয়া, কিন্তু কোনদিক হইতে কাহারও কোনও সাড়া মিলিল না। সব দিক দেখিয়া মনে হইল ঝড় আর তুফান যেন সব কিছু ধুইয়া মুছিয়া লইয়া গিয়াছে।

(সমুদ্রবাসর, ১৯৮৬, পৃ ৩৩৭)

এই সবকিছু ধুয়ে-মুছে নিয়ে যাওয়া যাদের নিত্যদিনের সাথি, তাদেরই ঠিকানা সমুদ্রবাসরসমুদ্রবাসর তাই হয়ে ওঠে ইতিহাসের এক অমর মহাকাব্য।

 

একদিন জ্যোৎস্নারাতে এসো

আমাকে শোনাবে তুমি এদেশের সেই রূপকথা

শঙ্খমালা, রাজপুত্র, শস্যশালা, আহা মরি,

আরও কত কিছু!

সব গিয়ে তবু কিছু থাকে

একদিন আমাদেরও ভালোবাসা হবে

‘ভালোবাসা হোক’

– যে যেখানে আছে ভালো হোক

তালুর ভেতরে তামা দগ্ধ দেশ তুলে বলি,

‘ভালো হোক যে যেখানে আছে ভালো হোক।’

(যার সাথে যার, ১৯৮৬, পৃ ৭)

বিশ শতকের ছয়-সাতের দশকের সাড়া জাগানো কবি আবুল হাসানের 888sport app download apkর এই ছত্র কটি দিয়ে শুরু শামসুদ্দীন আবুল কালামের 888sport alternative link যার সাথে যার। উলেস্নখ্য, শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর পুঁই ডালিমের কাব্য গল্পগ্রন্থের শুরুতেও কবি আবুল হাসানের রচনা থেকে বারোটি ছত্র উলেস্নখ করে তার নিচে লিখেছেন : ‘অকাল-প্রয়াত আবুল হাসান-এর অতিকায় দেবদারু বংশ নামক অসমাপ্ত 888sport app download apk থেকে।’

যার সাথে যার 888sport alternative linkের কাহিনি গড়ে উঠেছে 888sport appsের কৃষিনির্ভর জনজীবনের গভীর অনুভূতিশীল মর্মবাণী নিয়ে। খেটে খাওয়া নিরীহ গ্রামবাসীর জীবনযাপনে জোতদার মুনাফাখোরদের লোলুপতা; তার বিরুদ্ধে কৃষককুলের সচেতন আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামে সফলতা ইত্যাদি বিষয়-আশয় নিপুণভাবে উঠে এসেছে এই 888sport alternative linkে। কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে মহাজন-জোতদারদের অত্যাচার ষড়যন্ত্রের নানা কলাকৌশল মোকাবিলা করে বিজয় ছিনিয়ে আনার কাহিনিতে উজ্জ্বল এই 888sport alternative link। সেই সঙ্গে উন্মোচিত হয়েছে সামাজিক রীতিনীতির স্বরূপ।

‘বাংলার মাটি বাংলার জলে’ পূর্ণ স্বর্ণগর্ভা মাটি সোনার ফসলের জননী। যত ফসল এই বাংলার মাটিতে ফলে তাতে কারোর অনাহারে থাকার কথা নয়। অথচ এখানেও দুর্ভিক্ষ হয়; অনাহারে প্রাণ হারাতে হয় অগণিত মানুষকে। সমাজসচেতন ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের কলমে সেই দুর্ভিক্ষের করুণ বিবরণ ফুটে ওঠে সার্থকভাবে।

যার সাথে যার 888sport alternative linkের একটি উলেস্নখযোগ্য দিকের বর্ণনা বৈশিষ্ট্য। 888sport alternative linkের শুরুতে :

শীতের সকালে সূর্যও হয়তো ঘুম ভেঙে জাগতে গড়িমসি করে। কিছুটা ঘুমে কিছুটা শীতে হয়তো সেও কুঁকড়ে গুটিয়ে আপন গায়ের লেপকম্বল এলোমেলো করে ফেলে সবখানে। একসময় ধানক্ষেতের ওপর তার খসখসে পাতায় এমন করে আটকে যায় যে তার আর ছাড়িয়ে নেবারও উদ্যম থাকে না। হাতের টানে সেই কুয়াশা-কম্বল দূর করে দিতে দিতে চোখ পড়ে ইতিমধ্যে হয়তো কিছু উম পেয়েই ধানগুলো বেশ পোক্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিটি গাছের চেহারা গর্ভিণী যুবতীর মতো, ধানে চাপ দিলে স্তনের বোঁটায় বেরিয়ে আসা দুধ-এর মতো রস। তার স্বাদ মিষ্টি, রঙে প্রতিশ্রুতি।

(যার সাথে যার, ১৯৮৬, পৃ ৯)

উপমা-রূপকাশ্রয়ী এমন বর্ণনা বাংলা 888sport live footballে বিরল বলা যায়। প্রকৃতি বর্ণনায় শামসুদ্দীন আবুল কালামের মুন্সিয়ানা সর্বজনস্বীকৃত। এমন বর্ণনা পাঠককে বাংলার প্রকৃতির গহিনে প্রবেশের দ্বারপ্রামেত্ম নিয়ে যায় সহজেই।

 

যখন হৃদয়ের আগুন নিভে আসে

সমস্তকিছুই নুয়ে পড়ে যেন অধোমুখি লতা,

সূর্যের ডাকে জাগে না সাড়া

চন্দ্রতাপে না শিহরণ,

এমনকি বৈশাখের মাতাল ঝড়েও

দোলে না শরীর, না প্রতিবাদে, না উলস্নাসে

যেমন হয়ে থাকে উদ্ধত পলস্নব

 

একদা যে-লোক

জোছনার নিবিড়ে

হরিণের সাথে করতে চেয়েছে স্বপ্নাকুল জলপান

বাঘের ডোরাকাটা ছায়ায় বসে

মেতেছে অসম বিশ্রম্ভালাপে

সে কেন,

ঘর ঘর 888sport promo code 888sport promo code বন্ধু বন্ধু

বলে অবিরাম চিৎকার অকস্মাৎ রুদ্ধ করে

একেবারে চলে যেতে চায় 888sport sign up bonusর পরপারে

যদিও শিকড় তার ছেঁড়েনি মোটেও!

কে তাকে দুহাতে মেরেছে অমন

কে তাকে দু’হাতে মেরেছে অমন যে

প্রাণরস নিঃশেষে ঝরে গেছে অবিকল

সে কি অনুক্ষণ ফসলের বিলীন হয়ে যাওয়া?

ভাষা যেন সর্বাংশে অপর হাতের ছায়া,

সুঠাম নীলভ জাহাজে চড়ে ক্রমাগত

সমস্তমানবিকতা ধুষকার অধিকার

মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যাওয়া?

সে কি কোমলাঙ্গ ভালোবাসার নির্ঘাত নাভিশ্বাস,

সৎ প্রতিবেশী শততার দম বন্ধ হয়ে আসা,

প্রতারকের বিশাল দুর্দান্ত মূর্তিতে

আপসের বাকশক্তির নিরুপায় দাম কত লিখে দেয়া?

সে কি অসম্ভব অনেক রক্তপাত, ছুরির ছায়ার নীচে

জীবনের সর্বস্ব পতন?

এত কিছু মারে কেন মানুষেরে যখন তখন?

শুধু হাওয়া আর রৌদ্রজলে অনির্বাণ থাকে না কি

নিজেই নিজেকে অমৃতের সুধারস, চিরকাল অনাহত?

মানুষের ছায়া কেন মানুষকেই কাটে, কালান্তক,

কেবলি নেভায় আগুন?             (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৭)।

হাসান হাফিজুর রহমানের এই দীর্ঘ 888sport app download apk দিয়ে নবান্ন 888sport alternative linkের শুরু। শামসুদ্দীন আবুল কালামের ভিন্নধর্মী 888sport alternative link নবান্ন প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭-র এপ্রিলে। প্রকাশক : মুক্তধারা, 888sport app।

লেখকের কল্পনার জনপদ ‘রূপার ঝোর’। এই জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা, প্রেম-ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, প্রভাব-প্রতিপত্তির কাহিনি নিয়ে 888sport alternative linkের শরীর-নির্মাণ। কিন্তু কোথায় এই ‘রূপার ঝোর’? এর কোনো ভৌগোলিক অবস্থানের হদিস মেলে না এই 888sport alternative link পাঠে। বরং 888sport alternative linkের শুরুতে লেখক এক অচিন ‘রূপার ঝোর’-এর সন্ধান দেন। মনে হয় এ-এক কল্পনার ‘রূপার ঝোর’। ঔপন্যাসিক স্পষ্ট করে বলেন :

কবে কখন এবং কারা যে প্রথম এ এলাকায় এসে বসতি করেছিলো এখনকার অধিবাসীদের  কারোরই তা ভালো করে জানা নেই। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যারা এর নামকরণ করেছিল ‘রূপার ঝোর’ তারা আরেক যুগের, আরেক সভ্যতার মানুষ। এক সময় তারা কাছের বিশাল গাঙের স্রোতে যেখানে এসেছে, তারপর একদিন আবার কালস্রোতে ভেসে গেছে। খ- খ- চরভূমির মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা জলস্রোত যেখানে প্রবলবেগে গাঙে গিয়ে মিশেছে, প্রখর রৌদ্রে তার ঝলমলে রূপ এখনো চোখ ঝলসে দেয়। একসময় তার এককোণে একটা পাকা কাছারীবাড়ি পর্যন্ত ছিলো। সামনে খাড়া ছিল বিরাট একটা বটগাছ আর চতুর্দিকে তাল-নারকেল-সুপারির বন। সপ্তাহে একবার হাট বসতো ঐ বটমূলে, দূরে দূরান্তর থেকে আসতো খদ্দের আর ব্যাপারীরা। কিন্তু খামখেয়ালী নদী মতিগতি বদলে তা খুঁড়ে কুরে নিজের গহবরে পুরেছে, না হয় নামার সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এক সময় যে কিনারায় দাঁড়িয়ে গাঙের এদিক-সেদিক কী আছে দেখার জন্য উৎসুক হতো, এখন তার কাছে যেতেও ভয় হয়। এক এক খ- খাড়া পাড় গাছগাছালি সমেত যেভাবে ভেঙে পড়ে লুপ্ত হয়ে যায়, তা দেখে দেখে মনে হয় ভুবনে সবই অনিত্য, কিছুই স্থায়ী নয়, অর্থহীনভাবে কোনও মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে কিছু লাভ নেই। আর কেবল ঐ গাঙই নয়, দক্ষিণ থেকে হঠাৎ ফুঁসে আসা দানবের মতো ঝড় তুফান কতোবার ছারখার করে দিয়ে গেছে সব কিছু, তবু মানুষ শামুকের মতো পাড়ের মাটি আঁকড়ে টিকে থাকতে চেয়েছে, হার মানতে চায়নি প্রতিকূল ভাগ্য অথবা ভবিতব্যের কাছে। সেই অপরাজেয় মনোবল ছিলো বলেই দয়াল চৌকিদার এখনো এ ভুবনে টিকে আছে।

(নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৯)।

এই দয়াল চৌকিদারই 888sport alternative linkের মুখ্য চরিত্র। দয়াল-জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বিচিত্র কাহিনি ফুটে উঠেছে এই 888sport alternative linkে। হাজারো কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রামে বিজয়ী দয়াল চৌকিদার হার মানে না নিজের সমত্মানের কাছেও। মৃত্যুকে বরণ, তবু নীতি থেকে পিছু হটা নয়। বলা যায় নিজের ছেলের হাতেই জীবন দিতে হয় এই আজীবন সংগ্রামী দয়াল চৌকিদারকে। দয়াল চৌকিদারের শহরবাসী ছেলে মজিদ ধনসম্পত্তির লোভে বাবার কাছে আসে জমি লিখিয়ে নিতে, কিন্তু বাবা তাতে রাজি হয় না। মজিদ জোর করে স্বাক্ষর নিতে চাইলে

দয়াল চৌকিদার এক ঝামটায় তার হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে : পাগল আমি? নিজের মাটি, এই মাটি যার প্রত্যেকটি কণায় বংশের কতো ঘাম কতো রক্ত পুণ্য হয়ে মিশে আছে, তা বিকিয়ে দেবার নেশা কি কোনও সুস্থবুদ্ধির কাজ?

(নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৯২)

কিন্তু মজিদ নাছোড়বান্দা। নানা যুক্তি দেখায়। তাতেও হার মানে না দয়াল।

মজিদ আবারো শক্তভাবে এগিয়ে গেছে তার কাছে : ‘সই করো নইলে ফল ভালো হবে না।’

দয়াল তখন নিঃসাড়প্রায়। উঠতে চায় উঠতে পারে না ভাঙা চেয়ারটা ছেড়ে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে দয়ালের। পানির জন্য হাহাকার করে। ছেলে মজিদের সাফ জবাব, আগে সই, তারপর পানি। তারপর :

কলমটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে দয়াল চৌকিদার। জোর করে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে গিয়েও মজিদের ধাক্কায় সে সেই কেদারাটার উপর হুড়মুড় খেয়ে পড়েছে। একেই চেয়ারটা একদিকে কাত হয়ে কোনও রকমে খাড়া ছিলো, এবার আর ধস্তাধসিত্মর ধাক্কা সামলাতে পারেনি। একেবারে মাটির উপরেই আছড়ে পড়েছে দয়াল চৌকিদার, আর সেই সুযোগে মজিদ তার গায়ের উপর গিয়ে একরকম জোর করে চেপে ধরেছে : কর বলছি, সই কর!

দয়াল চৌকিদার হাঁসফাঁস করেছে উঠে দাঁড়াতে, হাত দিয়ে যেন বাতাস ধরে খাড়া হতে চেয়েছে, তারপর অকস্মাৎ নিসেত্মজ হয়ে ধীরে ধীরে মাটির উপর এলিয়ে পড়ে গেছে। মজিদ তাকে কয়েকবার নাড়াচাড়া দিয়েও আর কোনও সাড়া পায়নি।       (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৯৩)।

দয়াল চৌকিদারের মৃত্যুর পর তার ছেলে মজিদের আচরণ :

একধারে খুঁটির কাছে ফুঁপিয়ে ওঠা তমিজের দিকে চেয়ে মজিদ হাঁক দিয়েছে : এই এই ছোঁড়া, ভালো করে তামাক সেজে নিয়ে আয়।

মোড়াটাকে পায়ে ঠেলে একধারে বসে পড়েছে মজিদ। কিন্তু উঠানের ভিড়ের দিকে এক এক করে তাকিয়ে কেমন একটু পাংশু হয়ে গেছে তার মুখ।           (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ : ৯৪)

 

মজিদের আর কোনো আচরণ-বিচরণের উলেস্নখ নেই 888sport alternative linkে; আছে প্রতীকী প্রতিবাদ। দয়াল চৌকিদারের পৌত্র তমিজ মজিদের হুকুম তামিল করে তামাক সাজাতে যায় না; বরং ফোঁপানো মুখ নিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে মজিদের দিকে। তারপর একদিকে পড়ে থাকা বড়দাদুর লাঠিখানা এগিয়ে দেয় বড়দাদুর অসাড় হাতের কাছে।

হয়তো একমাত্র তারই বিশ্বাস হয় না যে বড়দাদু এমন করে মরে যেতে পারে। মালেকও তাকে বলেছে বটগাছ কখনো মরে না। একটা না একটা অবলম্বনের উপর খাড়া থাকেই। যুগ যুগ ধরে ছায়া দেয়, আশ্রয় হয়, ঠিকানা হয়, নিশানা হয়।

(নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৯৪)

এভাবেই 888sport alternative linkের সমাপ্তি। মজিদের এই আচরণের পূর্বাভাস পাওয়া যায় 888sport alternative linkের প্রায় শুরুতে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। মজিদের ইচ্ছা ‘জায়-জমি সব বেচে শহরে গিয়ে উঠতে’। কিন্তু দয়াল চৌকিদার তাতে রাজি না। শহরে ছেলের বাড়িতে নাতি-নাতনিদের নিশ্চিত আদর-যত্নের কথা জেনেও দয়াল সেদিকে পা বাড়ায় না। মাটির টানই তার কাছে বড় আকর্ষণ। যে-মাটি তাকে লালন করেছে সেই মাটিতেই মিশে থাকল দয়াল চৌকিদার।

এগারোটি অধ্যায়ে সমাপ্ত এই ছোট 888sport alternative linkে বিবৃত হয়েছে ইতিহাসের দীর্ঘ সময়ের নানা ঘটনা-কাহিনি। বাঙালি সমাজের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়-আশয় উঠে এসেছে নবান্নর পাতায় পাতায়। এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বিচিত্র সব কাহিনি। 888sport alternative linkের তৃতীয় অধ্যায়ে এর সময়কালের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায় :

ইতিমধ্যে ইংরেজ-জার্মান যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই আরেক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে। যারা এতোকাল এর বিশেষ কোনোদিকেই তেমন ঝুঁকে পড়েনি তারাও শহর-বন্দরের গণ্যমান্যদের টানাটানিতে বেশ একটু মুশকিলে পড়ে গেল। পরস্পরের বিশ্বাস আর স্বার্থের প্রশ্নে চতুর্দিকে যেরকম রেষারেষির ভাব জেগে উঠতে শুরু করলো তা কারুর পক্ষেই তেমন খুব স্বসিত্মকর ছিলো না। তখন ঠিক সেই সময় যখন গাঙের ভাঙ্গন রূপার ঝোরের কাছাড়ীবাড়ির ভিত পর্যন্ত এসে পৌঁছেচে। (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ২১)।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে চিড় ধরার সঙ্গে নদীর ভাঙনের প্রতীকী ব্যবহারে শামসুদ্দীন আবুল কালাম  যে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন তা অতুলনীয়। সেই সঙ্গে পাঠকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ‘শহর-বন্দরের গণ্যমান্যদের টানাটানিতে’ই গ্রামবাংলার মানুষ এমন অবিশ্বাসের পথে পা বাড়িয়েছে। এ-কথা ইতিহাস-স্বীকৃত যে, বাংলায় যত সাম্প্রদায়িক হানাহানি বা দাঙ্গা, তার অধিকাংশই ঘটেছে শহর এলাকায়। তা ঘটেছে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের উৎসাহ ও প্ররোচনায়। অবশ্য তার পেছনে কাজ করেছে ইংরেজ বেনিয়া শাসকের কূটকৌশল। এই রেষারেষি যে বাংলার মানুষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য ছিল না, সে-কথারও উলেস্নখ পাওয়া যায় 888sport alternative linkে।

দয়াল চৌকিদারের পরিবারে যে-ভাঙন, তারও মূল শহর ও গ্রামের বিরোধের সূত্রে। দয়াল চৌকিদারের দুই ছেলে মজিদ আর মালেক; মজিদ লেখাপড়া শিখেছে বাবা-দাদার আগ্রহে। শিক্ষিত মজিদ শহরে যায়, চাকরি করে, সুবিধাভোগীদের সঙ্গে দহরম-মহরমও আছে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না মজিদ।

শহরে যাবার পর এফিডেভিট করে নাম বদলেছে মজিদ। নিজের কানে শুনে এসেছে দয়াল চৌকিদার, নাম নিয়েছে আবদুল মজিদ কোরাইশী। তারপর শেখ চেপে এখন লিখছে এস এ মজিদ কোরাইশী। নিজের ছেলের নামও রেখেছে সৈয়দ আলী কোরাইশী।               (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৫২)।

নাম আর বংশপরিচয় পালটিয়ে সৈয়দ বনার এই চতুরতায় হতবাক দয়াল চৌকিদার।

ভাই মজিদের আগ্রহে মালেকও শহরে যায় একসময়। কিন্তু বিষয়-বৈভব তাকে আকর্ষণ করতে পারে না। কারণ মালেক অন্য ধাঁচের মানুষ। তেমন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেনি। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার গভীর আগ্রহ। যুক্ত হয় গোপন বিপস্নবী সংগঠনের সঙ্গে। পড়ে বিপস্নবী বই, যা তাকে দেশপ্রেমী করে তুলেছে; জেলও খাটতে হয়েছে। দীক্ষা দেয় কঠিন দেশপ্রেমের। অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একশ্রেণির মানুষের কর্মকা- দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে :

বিদেশি অত্যাচারীদের তাড়িয়ে দিতে পারলেই কি সব দুঃখের অবসান হবে? (নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৪২)

 

তার আগেই মালেকের উক্তি :

স্বাধীনতা এসেছে ঠিকই, কিন্তু নানান শত্রম্ন এখনো যেন পায়ে পায়ে চলছে। (প্রাগুক্ত, পৃ ৪০)

শহরের মায়া কাটিয়ে মালেক একসময় ফিরে আসে নিজের গ্রামে, বাবার কাছে।

হ্যা বাপজান। আমি মনস্থির করেই এসেছি। থাকতে এলাম তোমার কাছে দেশের কাজে, দশের কাজে। তুমি ঠিকই বলো বাপজান, আপন মাটির মতো সাচ্চা জিনিস মানুষের কাছে আর কিছুই নেই। আঃ! এই আকাশ বাতাস মাটি জলের ছোঁয়া পেয়ে আমি আবার সরস সতেজ হয়ে উঠছি। মনে হচ্ছে, আমার যদি কোনও কর্তব্য থাকে, তবে তা বাস্তবিকই এইখানে। বাপজান, তুমি বারে বারে ঝড়তুফানে ঘা-খাওয়া বহু বছরের পুরানো বটগাছের  মতো, অনেক দূর অবধি তোমার শিকড়, অনেক তোমার শক্তি। আমি কেবল তোমার কাছে একটু আশ্রয় চাই। হ্যা একটু আশ্রয় চাই।

(নবান্ন, ১৯৮৭, পৃ ৩৭)।

মজিদ আর মালেক এই দুই ভাই হয়ে ওঠে গ্রাম আর শহরের দ্বন্দ্বের প্রতীক। আর মালেক চায় গ্রামে থেকে বাবার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের উন্নয়ন। সুখে-দুঃখে সবাই মিলে সম্প্রীতির সমাজ গড়ায় দৃঢ়প্রত্যয়ী মালেক। আর মজিদ লোভ দেখায় বাবাকে, ভাইকে। তাদেরকে শহরে নিয়ে নিজের বাড়িতে রাখতে চায় পরম যত্নে। কিন্তু সেই যত্ন-সুখ আকৃষ্ট করতে পারে না মাতৃভূমির মাটির টানে আকৃষ্ট বাবা আর ছোটভাই মালেককে। কৌশল আর বুদ্ধিতে না পেরে নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নেয় মজিদ। পৈতৃক সম্পত্তি লিখে দিতে সম্মত না হওয়ায় ছেলে মজিদের হাতেই নিহত হয় বাবা দয়াল।

যে-মাটির প্রতি দয়ালের মমত্ব, সেই মাটির মানুষ, মানুষের জীবন, তাদের নানা পেশা, ধর্মমত, সহমর্মিতা, সকলের মিলন উৎসব নবান্ন, সামাজিক অনুষ্ঠান বিয়ে এবং প্রচলিত আরো নানান রীতি-রেওয়াজ এসবের বিবরণ যেমন ফুটে উঠেছে 888sport alternative linkে, তেমনি জমিদারের অন্যায়-অত্যাচার, জমিদারি প্রথার জুলুম-শোষণ, ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, জন888sport free bet বৃদ্ধি, তা রোধে পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার প্রচলন, বেকারত্ব ইত্যাদিরও বর্ণনা পাওয়া যায় নবান্নে। আছে নিখাদ দেশপ্রেমের কথা, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা।

888sport alternative linkে নবান্নের কথা উলেস্নখ দুবার। দয়াল চৌকিদারের জবানিতে প্রথম নবান্ন এসেছে 888sport app উৎসব-আনন্দ প্রসঙ্গে, উলেস্নখ এরকম :

তখন একের জমিতে হাল দেবার সময় রীতিমতো একটা উৎসব হতো, উৎসব হতো ধান বোনা আর ধান কাটার সময়ও। এখনো মনে আছে বাড়ির কামলাদের সঙ্গে আমিও গেছি ধানক্ষেতের পাশে। আমিও মাথায় বেঁধে নিয়েছি হাট থেকে কিনে আনা লাল গামছা, গলায় ছোট ঢোল। হাঁটুসমান কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে সারিন্দা দোতারা কী গানের সঙ্গে তাল দেওয়া খুব সহজ ছিলো না। তালে তালে ধান বুনেছে এ বাড়ি সে বাড়ির লোক। উঠানের একধারে পেলস্নায় টেকদান তৈরী করে ব্যবস্থা হয়েছে তাদের ভোজনের। নবান্নের সময় সেই উৎসবের যেন আর শেষ ছিলো না, ছোট হোক, বড় হোক প্রত্যেকের বাড়ি লোকে জমজম।           (নবানণ, ১৯৮৭, পৃ ৬৩)

888sport alternative linkে নবান্নের দ্বিতীয় উলেস্নখ পাওয়া যায় একেবারে শেষের দিকে দশম অধ্যায়ে। দয়াল ভাত খেতে বসে জমিলার বাড়িতে। খেতে বসে নতুন চালের গন্ধ পেয়েছে দয়াল, বলছে,

এই ভাত একেবারে নোতুন ধানের সুবাস ছড়াচ্ছে।

জমিলা খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলেছে :

নবান্নের চাল। কিছু বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। তুমি পছন্দ করেন বলেই রেঁধেছি।

উত্তরে দয়াল বলে :

আসলে প্রতিটি অন্নই নোতুন অন্ন। মনে আছে সবাই এক সাথে ধান কেটে মলে জ্বাল দিয়ে যে সিন্নি খেতাম। কতোদিন ভেবেছি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এই রহমতে প্রতিদিন কেন উৎসব করি না।           (নবানণ, ১৯৮৭, পৃ ৮৫)

উভয় ক্ষেত্রেই নবান্নের চিরায়ত রূপ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নবান্ন বাঙালি জীবনের একটি উলেস্নখযোগ্য আনুষ্ঠানিকতা। শামসুদ্দীন আবুল কালাম জীবনের প্রতিদিন সেই আনন্দের প্রত্যাশী। তাই তো 888sport alternative linkের নাম হয়ে ওঠে নবান্ন

নবান্ন 888sport alternative linkের প্রধান বা কেন্দ্রীয় বা নায়ক চরিত্র দয়াল চৌকিদার। আছে তার দুই ছেলে মজিদ আর মালেক এবং তাদের মা মোসলেমা। আরো আছে দয়ালের ছোটবেলার সাথি জমিলা, জমিলার স্বামী মুজফ্ফর আর তাদের মেয়ে জ্যোৎস্না। আছে  গফুর, সবদার পিয়ন, কয়েকজন কামলা, কিছু গ্রামবাসী। লেখক কারো ভূমিকাকে ছোট করে দেখেননি।

888sport alternative linkে নানা বিষয়-আশয় উঠে এসেছে শামসুদ্দীন আবুল কালামের নিখুঁত বর্ণনায়। যার মাধ্যমে বাঙালি পাঠক সহজেই খুঁজে পেতে পারেন অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবগাথা। ভাষা-প্রয়োগের ব্যাপারেও তিনি ঐতিহ্যসন্ধানী। বরিশালের মানুষ শামসুদ্দীন আবুল কালাম অনেক জায়গায় বরিশালের আঞ্চলিক বা প্রচলিত বা কথ্য শব্দ ব্যবহার করেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 888sport alternative linkের পঞ্চম অধ্যায়ে ‘আইল’, ‘জিয়ল মাছ’, ‘খাটাল’, ‘খোড়ল’,  ‘গরজ’,  ‘দাঁত কিড়মির’, ‘বিতং’, ‘খাছলত’, আবার সপ্তম অধ্যায়ে ‘বিয়ের সরা’, ‘চোখ টাটানি’, দশম অধ্যায়ে ‘তালাফি’, ‘কোলা’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের কথা। এমন অজস্র শব্দ স্থান পেয়েছে নবান্নে

বাঙালি জীবনে প্রচলিত বেশ কিছু প্রবাদ-প্রবচনও ব্যবহার করেছেন লেখক, কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কয়েকটি উদাহরণ : 888sport alternative linkের নবম অধ্যায়ে ‘চোরের নজর বোঁচকার দিকে, আর নাপিত তাকায় চুলের দিকে’, ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’, ‘এক মাঘে শীত যায় না’, ‘সাবধানের মার নেই’, আবার একাদশ অধ্যায়ে ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ ইত্যাদি। এমন আরো প্রবাদ-প্রবচন ছড়িয়ে আছে এই 888sport alternative linkে।

ছোট পরিসরে অথচ বিশাল ক্যানভাসে রচিত নবান্ন যেন মহাকাব্যের ইঙ্গিতবাহী।

 

শামসুদ্দীন আবুল কালামের পরের 888sport alternative link কাঞ্চনগ্রাম প্রকাশিত হয় ১৯৯৮-তে 888sport appর 888sport live football প্রকাশ থেকে। কাঞ্চনগ্রামের এই সংস্করণে আছে বিচিত্র বিষয়ের বর্ণনা। এই বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘প্রথম রচনা-খসড়া : জুন-জুলাই, ১৯৭২ 888sport app এবং রোম। প্রথম বাংলা ও ইংরেজি চিত্রনাট্য : জুন-জুলাই, ১৯৭২ এবং জানুয়ারি, ১৯৭৩। পুনর্লিখন : অক্টোবর, ১৯৮৬-জানুয়ারি, ১৯৮৭, রোম, মিলান হাসপাতাল (সান রাফায়েল) এবং মার্চ-এপ্রিল, 888sport app।’ (সূত্র : গ্রন্থ শুরুতে মুদ্রিত)।

এতে কাঞ্চনগ্রাম রচনার কালসীমার যে ইতিহাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা কোনো 888sport alternative linkের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়। একে আরো অসাধারণ করে তোলে লেখকের নিজের বর্ণনায়। গ্রন্থের শুরুতে লেখকের ভাষ্য : সহৃদয় পাঠকবরাবরেষু, সাধারণত কোনও 888sport alternative linkের স্বতন্ত্র ভূমিকার প্রয়োজন হয় না; কিন্তু দেশ-কাল-পাত্র
প্রভৃতি পর্যালোচনা করিয়া কিছু বক্তব্য নিবেদন কর্তব্য মনে করিতেছি।

একটি নিজস্ব গৃহ-গোষ্ঠী এবং স্বদেশ-বাসনা মানুষের সভ্যতার অত্যন্ত গভীর এবং মৌল বিষয়; কোনও 888sport alternative linkে তাহার যথাযথ রূপ-কল্পও অত্যন্ত দুরূহ কর্ম। সেই রকম স্বদেশ ও স্বভূমির বিভিন্ন কাহিনী যেমন প্রধান প্রধান মহাকাব্যের বিষয়বস্ত্ত, তেমনি লোকগাথা-উপকথা-রূপকথা এবং ইতিহাসেরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। প্রাচীন গ্রীসের অটোকলনুস এবং দক্ষেণ-পূর্ব এশিয়ার ভূমিপুত্রদের সঙ্গে সকল কাহিনীরই অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক  আছে – এই রকম একটি ধ্যানের সূত্র অবলম্বন করিয়া বক্ষ্যমাণ কল্পিত 888sport alternative linkটির কথকতা; কোনও বিশেষ জনপদ গোষ্ঠী অথবা চরিত্রসমূহের হুবহু আখ্যান নয়; বরং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হইতে মৌল জীবনবাসনাকেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার চেষ্টা; একই সঙ্গীতের মূলধারার বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও কণ্ঠের স্বননে উপস্থাপনে একটি অভিজ্ঞানকে রূপ-কল্পদানের প্রয়াস; ধ্রম্নপদী সঙ্গীতের মত এর কোনও খ-াংশই হয়ত কিছুমাত্র মূল্যবান নয়, পূর্ণাঙ্গস্বরূপ এই উপস্থাপনও কোনও রস-সৃষ্টিতে সক্ষম হইয়াছে কি না তার বিচারও কেবল সহৃদয় পাঠকবৃন্দই করিতে পারিবেন। বিষয়টি প্রাচীন এবং যে-ভাষা অনুরূপ ধ্রম্নপদী চারিত্রের সহযোগী ও অনুকূল তাহাই অবলম্বনে বাধ্য হইয়াছি।

বর্তমান গ্রন্থটির সূচনা নিজ দেশ-স্বপ্ন হইতে, স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ গঠনের প্রাক্কালে। মূল প্রথমত ইংরেজি ভাষায় ‘ব্যাটল অব 888sport apps’ নামে লিখিত হইলেও বহুবিধ কারণে তাহা প্রকাশযোগ্য মনে হয় নাই। পরে নিজের জীবন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে প্রায় বিধ্বস্তঅবস্থায় এর মূল বিষয়বস্ত্তটি আবারও অনুরণিত হইয়া ওঠে এবং একজন রেখ-চিত্রকারক অথবা সঙ্গীত-রচয়িতার মত তাহার কতকগুলি খ- খ- রূপ একই সঙ্গে গ্রথিত করার অনুপ্রেরণা বোধ করিয়াছিলাম, আরও পরে তাহাকে প্রকাশোপযোগী রূপ দিতে গিয়া অনেক সংশোধন ও সম্মার্জনের চেষ্টাও করিয়াছিলাম; কিন্তু আমার নিজেরই মনে হয় এই গ্রন্থের সঙ্গে নিজ দেশের বর্তমান বাস্তবতার কোনও সম্পর্ক নাই; প্রবাস-জীবনে নিজ দেশ-স্বপ্নের একটি রূপ-কল্পনার আবহেই এর সূত্রপাত এবং সকল ঘটনা ও চরিত্রগুলিও কল্পনার সৃষ্টি; অধিকন্তু সেই সবই আমার কথকতাকে প্রেরণা দিয়াছে, আগাইয়া লইয়া গিয়াছে।

…আরও একটি কথা – 888sport sign up bonus, শ্রুতি এবং কল্পনা এই উপাখ্যানের সর্বপ্রধান কুশীলবদের অন্যতম। বলা বাহুল্য, অংকনে চিত্রে ও সজ্জায় এই আলেখ্য উপাখ্যান মাত্র, কল্পিত চরিত্র এবং ঘটনা সমাবেশ হয়ত-বা কেবল নিজেকেই প্রবুদ্ধ করিবার প্রয়াস, কোনও বিশেষ মত অথবা পথ-এর প্রচারণা আদৌ এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য নয়; একমাত্র যে ইচ্ছাটি ইহার পশ্চাতে সক্রিয় তাহা এই যে সর্বত্র সকলের সুবুদ্ধি হউক, মঙ্গল হউক।         (কাঞ্চনগ্রাম, ২০০০, পৃ ৯-১০)

বলা যায় বিশাল 888sport alternative linkে প্রবেশের আগেই ঔপন্যাসিক তাঁর সৃষ্টিবৈচিত্র্যের দিকনির্দেশনা দিলেন ‘সহৃদয় পাঠকবরাবরেষু’কে। বললেন তাঁর এই রচনার পূর্বসূত্র-সূত্র, কাহিনি, চরিত্র, কাহিনির কালসীমা ইত্যাকার নানা বিষয়। এই লেখার শেষ বাক্যে শামসুদ্দীন আবুল কালাম পাঠককে আরো জানান :

হৃদয় হইতেই নিজ দেশ, একটি জনপদ, কতকগুলি চরিত্র এবং এক বিপুল গোষ্ঠী মানুষ যেন আপনা হইতেই ফিরিয়া আসিয়াছিল, সমস্তপ্রতিকূলতা সত্ত্বেও এক ভালোবাসার অংকুর উদগত হইয়া উঠিয়াছিল। (প্রাগুক্ত)

দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি সেই ভালোবাসার বর্ণাঢ্য প্রকাশ এই কাঞ্চনগ্রাম। ‘কাঞ্চন’ লেখকের নিজের ডাকনাম, তাঁর নিজের গ্রামই তো ‘কাঞ্চনগ্রাম’। কিন্তু 888sport alternative linkের কাহিনি কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ‘গ্রামে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি, হয়ে উঠেছে নিজ দেশ, মাটি আর মানুষের বিসত্মৃত বিচরণভূমি এক অঞ্চল; ‘গ্রাম’ এখানে এক বিশাল ভূখ–র প্রতীক কেবল।

বাঙালির হাজার বছরের জীবনপ্রবাহের পরিসরে শামসুদ্দীন আবুল কালামের কাঞ্চনগ্রাম 888sport alternative link-কাহিনির বিসত্মৃতি। অনেক সমালোচক একে উচ্চাভিলাষী 888sport alternative link বলে অভিহিত করতে চান। দীর্ঘদিন প্রবাসজীবনে অতিষ্ঠপ্রায় নিজের মা আর মাটির প্রতি 888sport sign up bonusকাতরতা (নস্টালজিয়া) তাঁকে এ-পথে হাঁটিয়েছে। বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাস, দেশের মানুষ – তাদের শ্রেণি, তাদের পেশা, নানা সম্প্রদায় – তাদের আনন্দমুখর জীবনের সুখ-দুঃখ আবার বিরোধিতা সংঘর্ষের কাহিনি, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ধারা থেকে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদির ব্যাপক পরিচয় ফুটে উঠেছে কাঞ্চনগ্রামেকাঞ্চনগ্রাম যেন মহাকাব্যিক ধারায় প্রবহমান। তুলনীয় কেবল ‘কত ছবি কত গান’ (খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস) আর ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ (আবু জাফর সামসুদ্দীন)।

শামসুদ্দীন আবুল কালামের 888sport alternative linkের এক বৈশিষ্ট্য, 888sport alternative linkের শুরুতে কোনো 888sport app download apkর উপস্থাপন। কাঞ্চনগ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়। 888sport alternative linkের শুরুতে আঠারো ছত্রের উদ্ধৃতির নিচে কেবল লেখা আছে, ‘বোধিসত্ত্বদান কল্পলতা’।

মাঙ্গলিক, উপক্রমণিকা, অবতরণিকা, প্রথমা অন্তরা, দ্বিতীয়া অন্তরা, বিস্তারণা, স্বতঃশীলা, অববাহিকা, অন্তর্লীনা, ক্রমান্তরা, স্বয়ংবরা, মধ্যমিকা, ধারা-উপধারা, উপলব্যয়িতা, নিশিথ গম্ভীরা, গোপনাভিসার, পরম্পরা, দিক পরিক্রমা, অমত্মঃসলিলা, জীবন বন্যা, কূল-উপকূল, তরঙ্গ রঙ্গ, বায় বাতাস, উদারা, বেপথু ব্যাকুলা, উপসংহার, পরিশিষ্ট – এই সাতাশ অধ্যায়ে বিভক্ত বিশাল আয়তনের 888sport alternative link কাঞ্চনগ্রাম। কাহিনির পরিচ্ছেদ বিন্যাসে ঔপন্যাসিকের অভিনবত্ব লক্ষণীয়।

এই 888sport alternative linkের কাহিনি, ঘটনা, ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির বিন্যাস যতটা না বর্ণনায়, তার চেয়ে অনেক বেশি বিচিত্র সব চরিত্রের কথকতা এবং ভাবনার মাঝে; ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নাটকীয় আবহ। পাত্র-পাত্রীর কথোপকথনের মধ্য দিয়েই উন্মোচিত হয়েছে 888sport alternative linkের কাহিনি। এই কথোপকথনের এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে স্বগতকথন, যা নাটকের ভাষায় স্বগত-সংলাপ। দীর্ঘ কালসীমার প্রেক্ষাপটে রচিত কাঞ্চনগ্রামে বর্ণিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগ এবং এর পরবর্তী দুই দশক কালের মানুষের ব্যক্তিক, সামাজিক, আর্থনীতিক, রাজনীতিক ইত্যাদি বিষয়-আশয়। 888sport alternative linkের পটবিন্যাসে কালিক ধারাবাহিকতা তেমন গুরুত্ব পায়নি। কাহিনির পথচলায় কখনো পেছনে তাকিয়ে আবার কখনো সামনে এগিয়ে পথ হেঁটেছেন ঔপন্যাসিক। পূর্বের ও পরের নানা বিচিত্র বিষয় যেন পাঠকের কাছে ধরা দিয়েছে। ঔপন্যাসিকের ভাষায় :

সমস্তভারতবর্ষ জুড়িয়া যখন বাস্ত্তভিটা ত্যাগের হিড়িক পড়িয়া গিয়াছিল, বিত্তবান এবং ধর্ম-ব্যাকুল জনগোষ্ঠী যখন প্রাণের ভয়ে অন্যত্র ছুটিতেছিল, আবদুল মাস্টার তখন সবেমাত্র জন্মলাভ করিয়াছে। তাহারাও সনাতন পিতৃ-পুরুষের ভিটা-ভূমি ত্যাগ করিয়া অন্যত্র ছিটকাইয়া পড়িতে বাধ্য হইয়াছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং প্রায় তাহারই সমসাময়িক কালে দেশের দুই প্রধান সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরোধের কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাহার হয় নাই।

(কাঞ্চনগ্রাম, ২০০০, পৃ ২৭)

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশভাগ, পাকিস্তানি শাসন, সামরিক জামত্মা আইউব-ইয়াহিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাক, মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকসেনাদের অত্যাচার-নিপীড়ন কোনো কিছুই বাদ যায়নি  কাঞ্চনগ্রামের চৌহদ্দি থেকে। তিতুমীর থেকে শেরেবাংলা – সবাই এসেছেন এই কল্পনার কাঞ্চনগ্রামে। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে গ্রামের মানুষের ভাবনার কথা বলতে ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের বর্ণনা :

হেতায়েতউলস্নাহ্ একটু ইতস্তত করিয়া বলিয়াছিল : ‘আমাদের এইখানে তেমন ডরের বাস্তবিকই কোনও কারণ আছে?  ঐসব মিলিটারী-ফিলিটারী আমরা কোনওদিন চৌখেও দেখি নাই বললেই হয়। আমাদের জানমাল, ঝি-বৌর উপর হামলার সম্ভাবনা থাকলে আমাদেরও তো নিশ্চিন্ত হইয়া থাকন যায় না’।

ইছু-নসুর মুখে-চোখেও বেশ দুর্ভাবনা ঘনাইয়া উঠিতেছিল : ‘শেখ মুজিব তা হইলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়িয়া তোলনের কথা একেবারে বেহুদা কয় নাই। সে ইসারা দিছে ঘরে ঘরে মোখালেফ ঠেকাইবার জন্য তার আর উপায় নাই’।

(কাঞ্চন গ্রাম, ২০০০, পৃ ৩০৩)

বিচিত্র চরিত্রমালার বিচিত্রতর কথোপকথনের মাধ্যমে এক বিশাল জনপদের হাজার বছরের উত্থান-পতন, কীর্তি-কাহিনি বর্ণিত হয়েছে প্রায় ছয়শো পৃষ্ঠার বিশাল এই 888sport alternative linkে। ‘শেষ হয়েও হইল না শেষে’র ধ্বনি অনুরণিত হয় কাঞ্চনগ্রাম 888sport alternative linkের সমাপ্তির পর। উপসংহার অধ্যায়ের পর পরিষ্কারভাবে ‘সমাপ্ত’ কথাটি লেখা সত্ত্বেও ঔপন্যাসিক জুড়ে দিয়েছেন ‘পরিশিষ্ট’, যা কেবল 888sport alternative linkের পরিশিষ্ট হয়েই থাকেনি, হয়ে উঠেছে 888sport alternative link নির্মাণের উদ্দেশ্য-বিধেয়র নির্যাসবাণী। কাঞ্চনগ্রামের ‘পরিশিষ্ট’ বয়ান এমন :

বর্তমান গ্রন্থ ‘কাঞ্চনগ্রাম’ – 888sport alternative link মাত্র; কিন্তু সমগ্র দেশের সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় যে এই প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের 888sport free bet ত্রিশ লক্ষের কাছাকাছি। ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের 888sport free bet চলিস্নশ হাজারের বেশি এবং শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, 888sport live chatী, 888sport live footballিক, সাংবাদিক, live chat 888sportকার এবং প্রকৌশলীদের হত্যার 888sport free bet প্রায় এক হাজার। বহু তরুণ এই যুদ্ধে তাহাদের জীবন-যৌবন সম্পূর্ণ উৎসর্গ করিয়াছেন; অগণন আহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও দেশের সর্বাঙ্গীণ দুঃখ অবসানের মৌন প্রতীক্ষায় দেশবাসীর মধ্যেই রহিয়াছেন।  সাধারণভাবে এই দেশের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বার্ষিক আড়াইশত ডলার হইলেও ইতিমধ্যে বিভিন্ন রকম দুর্ভাগ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ মাথাপিছু আটশত ডলার পরিমাণও ছাড়াইয়া গিয়াছে; ক্রমবর্ধমান জন888sport free bet এবং আরও বহুবিধ দুর্গতি-দুর্দশার চাপে। এতদ্্সত্ত্বেও দেশের স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার সকল দুরবস্থা অতিক্রম করিয়া তাহাকে সুষ্ঠুভাবে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিতেছেন। বহু যুগবহ দুঃখমোচনের সংকল্পে দেশের জনসাধারণের মনোবল এখনও অটুট এবং প্রবাসীরাও তাহাদের নিজ দেশস্বপ্ন সার্থক করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। (কাঞ্চন গ্রাম, ২০০০, পৃ ৫৮৪)

মহাকাব্যধর্মী এই 888sport alternative link প্রসঙ্গে কেবল বলা যায়, সুদূর প্রবাসে বসবাসরত সহৃদয়-সংবেদনশীল এক বাঙালি ঔপন্যাসিক  888sport alternative linkের আদলে একটা গোটা জনপদ এবং সে-জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘজীবনধারা তথা জীবন-দর্শনের মূল তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। অতীতের নানা 888sport sign up bonus, অনুভব, অনুভূতির যেন এক সার্থক দূর-দর্শক শামসুদ্দীন আবুল কালাম। বাংলা 888sport live footballে এর তুলনা বিরল, বলা যায়। জনপদ নির্বাচন, কাহিনি বর্ণন এবং চরিত্র নির্মাণের কৌশলে কাঞ্চনগ্রাম সমগ্র বাঙালি জাতির এক অমোঘ জীবনগাথা হয়ে উঠেছে; যা পাঠকমাত্রের সামনে আশার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।

এর কাহিনি বর্ণন এবং পাত্র-পাত্রীর কথোপকথনে এক বিশেষ অঞ্চলের ভাষার সার্থক ব্যবহার পাঠককে সজাগ করে ঘোষণা করে ‘ফিরে চল মাটির টানে’র অমোঘ উচ্চারণের অসীম সাহস।

 

এযাবতকালে শামসুদ্দীন আবুল কালামের মুদ্রিত-প্রকাশিত সর্বশেষ গ্রন্থ ঈষদাভাস ঈষদাভাস 888sport alternative link নয়, আত্মজৈবনিক রচনা। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৬-র বইমেলায় (ফেব্রম্নয়ারি)। 888sport alternative linkের ধাঁচে রচিত ঈষদাভাস পাঠে পাঠক সহজেই শামসুদ্দীন আবুল কালাম, তাঁর কৈশোরকাল, সে-সময়ের প্রতিবেশ, পূর্বপুরুষের কথা, মানুষের জীবনযাপন, জীবনবোধ ইত্যাদির নৈকট্য লাভ করতে পারেন সহজেই। রচনার শুরুই পাঠককে সে-পথে নিয়ে যায় :

আমি যদিও দক্ষিণাঞ্চলের লোক, কিন্তু 888sport appর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৪৮-এর শেষে। শৈশব, কৈশোর এবং প্রথম যৌবন কেটেছে বরিশালের কামদেবপুর গ্রামে, শহরে এবং কলকাতায়। আন্তবাসী বরিশাল থেকে কলকাতার রাজধানীতে কিছুটা শিক্ষাগত কারণে, কিন্তু প্রধানভাবে সংস্কৃতির আগ্রহে। সেই সংস্কৃতিচেতনার সঙ্গে কোনরকম ধর্মান্ধতার দিকে আমাদের কোন উৎসাহ ছিল না। (ঈষদাভাস, ২০১৬, পৃ ৯)

লেখকের এই অভিব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় গ্রন্থের পাতায় পাতায়। ঈষদাভাস যেন সমসাময়িক কালের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির ইতিহাসেরই। এতে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে সরস 888sport alternative linkের ভঙ্গিতে, যা পাঠকের মনচেতনায় সঞ্চারিত হয় অতিসহজে।

 

শামসুদ্দীন আবুল কালাম জীবনের দীর্ঘসময় কাটিয়েছেন প্রবাসে, ইতালির রাজধানী রোম শহরে। সেই ভিন পরিবেশেও তিনি দেদার লিখেছেন, লিখেছেন তাঁর মাতৃভাষায় – একেবারে নিজ এলাকার মানুষের মুখের কথায়। জীবিকার প্রয়োজনে লিখেছেন অন্য ভাষায়ও, নির্মাণ করেছেন live chat 888sport, অভিনয় করেছেন সেই live chat 888sportে – যেখানে নিজের ভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগই থাকে না। কিন্তু তাঁর শোনিতধারায় একাকার তাঁর স্বদেশ, আর দেশের নিরহংকার আর অলংকারহীন আপন মানুষগুলো। তাই তাঁর দীর্ঘ কথা888sport live footballধারার সবটাই জুড়ে আছে 888sport apps, বিশেষ করে দক্ষিণবাংলার বরিশাল অঞ্চলের মানুষের জীবন-সংস্কৃতি আর হাজারো প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য। বাঙালির প্রবহমান জীবনের শেকড় ছুঁয়ে যায় তাঁর বিশাল সৃষ্টিসম্ভার। শামসুদ্দীন আবুল কালামের এই বোধ-ব্যাপকতা দীর্ঘদিনের সাধনার ফসল, যার সঙ্গে তুলনা কেবল ‘রোম একদিনে গড়ে ওঠেনি’ আপ্তবাক্যটির।