রবিশংকর বল
স্তব্ধতার 888sport app download apk latest version 888sport alternative linkে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, ‘আমাদের ভেতরে এক উলঙ্গ মানুষ বাস করে, অতঃপর সেই উলঙ্গ মানুষটিকে 888sport app download for android করে আমাদের কথা শুরু করি – আপনি কি তাকে চেনেন?’ সেই উলঙ্গ মানুষটির অস্তিত্বের ছবি : ‘সে আপনার ভিতরেও বাস করে, বড় গভীরে এবং সমস্তক্ষণ প্রস্তুত হয়ে; আপনার নিদ্রা আছে, তার নেই। আপনি যখন কারফিউ দেয়া শহরে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাতি নিভিয়ে চৌকির নিচে লুকিয়ে আছেন, সে তখন আপনার ভেতর থেকে লাফ দিয়ে বেরোয় এবং বাইরে সড়কে ঐ যে বুটের শব্দ তুলে হেঁটে যাচ্ছে ঘাতক, চোখের পলকে তাকে খতম করে সে বেতার কেন্দ্র দখল করে ঘোষণা করে স্বাধীনতা – অথচ আপনি তখনো চৌকির নিচেই আছেন। কিংবা আপনি যখন শ্রাবণের একটি প্রভাতে শোনেন আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছে আপনার পিতা এবং তার লাশ পড়ে আছে সিঁড়িতে, আপনার ভেতর থেকে সে বেরোয়, সুবাসিত পানিতে তাঁকে গোসল করিয়ে নগরীর কেন্দ্রস্থলে দাফন করে এবং তারপর এই হত্যার বিচার সে চিৎকার করে চায় – অথচ আপনি তখন ভাষাহারা নপুংসকের ভূমিকায়।’
মানুষের এই অসহায়, অবলম্বনহীন, অ্যাবসার্ডিটি-আক্রান্ত ছবিটাই লেখকের করোটির ভেতরে পাক খেতে থাকে। বহু গল্প-888sport alternative link, সাক্ষাৎকারে
ফিরে ফিরে এসেছে করোটির অনুষঙ্গ। এখানে আরেক রকম নগ্নতা, আদিমতা; এডভার্ড মুংখের ছবির সেই ভাষাহীন চিৎকারের মতো বা এমন এক ভাষা যা এখনো বীজ ফেটে বেরিয়ে আসেনি। ‘চিন্তার ভেতরে’, ‘চেতনার ভেতরে’ – এর বদলে সৈয়দ শামসুল হক বলতে চান ‘করোটির ভেতরে’। ১৯৯৬-তে একটি সাক্ষাৎকারে (ব্রাত্য রাইসু ও রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে) এমনটাই বলেছিলেন লেখক, ‘ভাবনা চলে করোটির মধ্যে। করোটির যে অর্থটা তোমরা জানো যে করোটি হচ্ছে স্কাল, এটাকে আমি একটা বিশেষ অভিধায় ব্যবহার করি। সেটা হচ্ছে, দ্য হোল থিংকিং প্রসেস… করোটি ইজ মোর ট্যানজিবল্।’ এই যে ‘হোল থিংকিং প্রসেস’, একে কি আমরা এক ধরনের আর্কিরাইটিং (ধৎপযবৎিরঃরহম) বলতে পারি? করোটি যেন এক গুহা, যার অমসৃণ দেয়ালে এখনো আবিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায় জেগে আছে এক লিপিমালা। জীবন কি এই গূঢ় সংকেতেরই প্রকাশ নয়?
এই লেখক, শামসুল হক তো তাহলে বলতেই পারেন, ‘আমি নিজের নিজের কাছে স্পষ্ট হতে চাই। নিজের কাছে স্পষ্ট হই, এটিই আমার কাছে জরুরি।’ লেখা তবে যাবতীয় মুখোশ ছুড়ে ফেলে দিয়ে মুখশ্রীর অনুসন্ধান? তাই তা যুগপৎ প্রেমপত্র ও হত্যার নির্মাণ :
১. 888sport live football – সময়ের কাছে লেখা প্রেমপত্র। আমরা যখন প্রেমে পড়ি, চিঠি লিখি, তখন আমাদের প্রেমপত্রে থাকে আমাদেরই অস্তিত্ব-অনুভবের কথা, আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা, থাকে আমাদের অন্তর্গত বিষণœতা, আনন্দ, ইচ্ছা, প্রত্যাশা, বিশ্লেষণ এবং আত্মআবিষ্কারের সংকেত।
২. খুনটা করে ফেলবার পর খুনী যেমন আঁতকে ওঠে, আহ্, আমি খুনী; একজন প্রথম লেখাটির অক্ষরপাত করে উঠেই, আঁতকে নয় – এখানে তফাৎ – আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন – আমি লিখে ফেলেছি। তারপর ঝোঁকের মাথায় খুন করা কোনো কোনো খুনী হয় পেশাদার খুনী, ঝোঁকের মাথায় লিখতে শুরু করে কেউ কেউ লেখক হয়ে পড়েন।
(মার্জিনে মন্তব্য থেকে)
নিজের কাছে স্পষ্ট হওয়ার সূত্রে শামসুল হক খুনির আরেক তাৎপর্যের কথা বলেননি : নিজের একেকটি সত্তাকে খুন করতে করতে মানুষ কীভাবে নিজের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তার নগ্নতার মুখোমুখি দাঁড়ায় এবং নিজেকেই প্রশ্ন করে : আপনি কি তাকে চেনেন?
সৈয়দ শামসুল হক ও তাঁর 888sport live football সম্পর্কে নানা বিতর্কের সূত্রপাত, সম্ভবত, এই প্রশ্নের ভিতরেই লুকানো আছে।
দুই
সৈয়দ শামসুল হকের খেলারাম খেলে যা (১৯৭৩) একই সঙ্গে তাঁর বিখ্যাত এবং সবচেয়ে ভুল-বোঝা 888sport alternative link। একদা ‘অশ্লীল’, ‘পর্নোগ্রাফি’ হিসেবে চিহ্নিত 888sport alternative linkটি এখনো অনেকের কাছেই তীব্র নিন্দার লক্ষ্য। বাবর আলী নামের টেলিভিশনের বিখ্যাত তারকা, যে বিয়েতে বিশ্বাসী নয়, একের পর এক কিশোরীদের সঙ্গে যৌনক্রীড়ায় মেতে উঠতে অনলস, শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়
গাড়ি-দুর্ঘটনায়, তারই শিকার এক কিশোরীকে বাঁচানোর জন্য পালাতে গিয়ে। সে তার বোন হাসনুকে বাঁচাতে পারেনি। 888sport alternative linkের শেষে জাহেদা ও হাসনু একাকার হয়ে যায় : ‘হঠাৎ তার গাড়ি পুলের শেষ থামে ধাক্কা খেয়ে ডান দিকে ঘুরে যায় একবার। তারপর সেই নক্ষত্র প্রতিফলিত নদীতে গড়িয়ে পড়ে জাহেদাকে নিয়ে বাবরকে নিয়ে। আরও একজন ছিল, সে হাসনু।’
বাবর আলী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর সেই মানুষ, যে অস্তিত্বের অ্যাবসার্ডিটির মধ্যে ঘুরপাক খায়। এই অ্যাবসার্ডিটির বিবরণ আলবের কামু লেখেন, ÔA world that can be explained by reasoning, however faulty, is a familiar world. But in a universe that is suddenly deprived of illusions and of light, man feels a stranger. His is an irremediable exile, because he is deprived of memories of a lost homeland as much as he lacks the hope of a promised land to come. This divorce between man and his life, the actor and his setting, truly constitutes the feeling of Absurdity.’
এই বিচ্ছিন্নতার বার্তাই বাবর দেখতে পায় এয়ারপোর্টের বাথরুমে : কে লিখে রেখেছে লাল পেনসিল দিয়ে বড় বড় হরফে – খেলারাম খেলে যা।… বাক্যটি আজ পর্যন্ত ভুলতে পারেনি বাবর। যে লিখেছে জগৎ সে চেনে। যে লিখেছে সে নিজে প্রতারিত। পৃথিবী সম্পর্কে তার একটি মাত্র মন্তব্য বাথরুমের দেয়ালে সে উৎকীর্ণ করে রেখেছে – ‘খেলারাম খেলে যা’।
কথাটির দুরকম মানে দাঁড়ায়। মানুষ ও তার জীবন যখন বিচ্ছিন্ন, অভিনেতা যখন তার মঞ্চসজ্জা থেকে আলাদা হয়ে গেছে, নেই হারানো জন্মভূমির 888sport sign up bonus বা ভবিষ্যৎ ভূখ-ের ইশারা, তখন সবকিছুই অনুমোদনযোগ্য, অতএব ‘খেলারাম খেলে যা’। অথবা অদৃশ্য থেকে সুতো-নাচানো পুতুল খেলার 888sport live chatীর উদ্দেশে এ যেন মানুষের এক নিস্পৃহ ঠাট্টা, ‘খেলারাম খেলে যা’। দুটি অর্থ একই বিন্দুতে এসে মেশে : ‘আমি খেলারাম, খেলে যাব’ আর ‘খেলারাম, যা খেলবার খেলে যাও আমাকে নিয়ে।’
বাবর আলী আর খেলাটার মধ্যে টিকে থাকতে পারে না, জাহেদা – জাহেদার মধ্য দিয়ে হাসনুকে সে এবার বাঁচায়। বিচ্ছিন্নতা পেরিয়ে সে নিজেই নিজের কাছে স্পষ্ট হতে চায়।
তিন
তাই সৈয়দ শামসুল হককে গড়ে নিতে হয় নিজস্ব উপনিবেশ – রংপুরের পটভূমিকায় তাঁর কল্পিত শহর জলেশ্বরী, জন্মস্থান কুড়িগ্রামের আদলে তৈরি। আমাদের মনে পড়বে, উইলিয়াম ফক্নারের উচ্চারণ : ‘The past is not dead. In fact, it’s not even past.’ ফক্নারও এক কল্পিত কাউন্টি তৈরি করেছিলেন ‘Yoknapatawpha County’
নামে, যার মডেল মিসিসিপির লাফেয়েল কাউন্টি। যেমন গাবরিয়েল গারসিয়া মার্কেসের মাকোন্দো, আর কে নারায়ণের মালগুড়ি। শামসুল হক জানান, ‘জলেশ্বরী তোমার করোটির ভেতরে, জলেশ্বরী তো আমারই নির্মিত; কিন্তু সে শূন্য থেকে গৃহীত নয়, বাংলার মাটি থেকেই তার উপাদানগুলো নেওয়া। বাংলার মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ খুব নিবিড় করে, আমার সৃষ্টির দুটি হাতের ভেতর ধরবার জন্যই জন্ম দিয়েছি জলেশ্বরী, তার পটভূমিতে স্থাপন করেছি মানুষগুলোকে।’ জলেশ্বরীর চারদিকে কয়েকটি গ্রাম ও জনপদ – মান্দারবাড়ি, হস্তিবাড়ি, হাগুরারহাট, রাজারহাট, নবগ্রাম, বুড়িরচর, বল্লারচর, শকুনমারি এবং একটি নদী – ধরলাকে মনে রেখে রেখে – আধকোশা। আসে
পিতৃ-বংশের অতীত 888sport sign up bonus – কুতুবুদ্দিন মাজার। লেখক ছোটবেলায় তাঁর চিকিৎসক পিতার সহকারী কবিরাজ দেওয়ান খাঁর কাছে এক পুরাণকথা শুনেছিলেন। ঈশ্বরী একদিন নৌকোর পাটাতনে রাখেন তার রাঙা পা, পাটনি দেবীকে চিনতে পারেনি, যখন চিনতে পারে তখন তিনি অন্তর্হিত। সেই জলের ঈশ্বরী থেকেই জলেশ্বরী।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রোজ একটু একটু করে দ্বিতীয় দিনের কাহিনি লিখতে শুরু করেন শামসুল হক। এ-888sport alternative linkেই জলেশ্বরীর আত্মপ্রকাশ। যতি চিহ্নিত, দীর্ঘ একটি অনুচ্ছেদেই লেখা হয় 888sport alternative linkটি। আটত্রিশ বছর আগে যে জলেশ্বরীতে তাহের মাস্টারের জন্ম হয়েছিল, সেই শহরে পৌঁছে সে দেখে, ‘জলেশ্বরী এখন ভয়াবহ গোরস্তান ছাড়া আর কিছুই নয়।’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি জলেশ্বরীকে বদলে দিয়েছে, মৃত্যুকে এখানে কেউ 888sport app download for android করে না; জীবিতকে এখানে কেউ সম্মান করে না। একে একে নিষিদ্ধ লোবান, অন্তর্গত, ত্রাহি, শকুনমারির খবরাখবর, না যেয়ো না, স্তব্ধতার 888sport app download apk latest version, শঙ্খলাগা যুবতী ও চাঁদ, ময়লা জামার ফেরেশতারা, বকুল রঙিন স্টুডিও, গুপ্ত জীবন প্রকাশ্য মৃত্যু, উড়ে যায় মালতি পরি, কুয়াশায় সাদা ঘোড়া গল্প-888sport alternative linkে তার 888sport sign up bonusসত্তা নিয়ে জেগে ওঠে জলেশ্বরী। এই সিরিজের শ্রেষ্ঠ 888sport alternative link, আমার কাছে, নিষিদ্ধ লোবান (১৯৭৯)। জলেশ্বরীতে
মা-বাবা-ভাইয়ের খোঁজে এসে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্বে বিলকিস আবিষ্কার করে হত্যাকা- ও একের পর এক মৃতদেহ। রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহকে কবর দিতে দেবে না সেনাবাহিনী, যার মধ্যে বিলকিসের ভাই খোকার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহও আছে। বিলকিসের সঙ্গী হয় সিরাজ ওরফে প্রদীপ নামের কিশোর। মরদেহগুলো কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় বিলকিস, সিরাজকে বলে, ‘ঐ যারা মরে গেছে, তুমি ওদের আলাদা করে দেখছ বলেই একথা বলতে পারছ। যদি মনে করতে এরা তোমারই অংশ, তাহলে দেখতে ওদের সৎকার করে তুমি জীবনকে 888sport apk download apk latest version করছ, সম্মান দিচ্ছ।’ 888sport app থেকে জলেশ্বরীতে এসে, যুদ্ধের পটভূমিকায়, বিলকিস হয়ে ওঠে এই বাংলার আন্তিগোনে।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় জলেশ্বরীর গল্পগুলো – করিমন বেওয়া, বিলকিস, নেয়ামত, মনোহর, শরবতি, আজহার, বর্গুনবিবি, সমিরন, তাহেরদের কাহিনি। জলেশ্বরী দিনপত্রী বেরোয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে। গল্পরা হয়ে উঠতে থাকে গল্প-888sport live। জীবন ও স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধ ও জলেশ্বরী একাকার হয়ে যায়।
জলেশ্বরী খুলে দিলো ইতিহাসের সেই পর্ব, যেখানে ধুলো-ওড়া পথ আর তার বুকে শ্রমজীবী মানুষের পদচিহ্ন আঁকা আছে। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে ফিরে এলো নূরলদীন, ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দের রংপুর বিদ্রোহের কৃষক নেতা। শামসুল হক লিখলেন নূরুলদীনের সারাজীবন নাটক। ‘আমাদের মাটির নায়কদের নিয়ে নাটকের মাধ্যমে কিছু করা’র ভাবনা থেকেই নূরলদীন। তিনি লিখেছিলেন, ‘…এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন যেসব গণনায়কদের আমরা ভুলে গিয়েছি তাদের আবার আমরা সম্মুখে দেখব এবং জানব যে আমাদের গণআন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ও অনেক বড় মহিমার – সবার ওপরে, উনিশশো একাত্তরের সংগ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’ রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা এই নাটকে নূরলদীনের আহ্বান ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়?’ নাট্যবস্তুর বয়ান ভেঙে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয় (কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র সম্প্রতি নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে)।
খেলারাম খেলে যার বাবর আলীর বিচ্ছিন্নতা থেকে তাহের, বিলকিস ও জলেশ্বরীর মানুষদের সংলাপ, দুশো বছর পরে নূরলদীনের ফিরে আসা – সৈয়দ শামসুল হকের করোটি-লিপি এভাবেই লেখা হয়। এসবই তাঁর পরানের গহীন ভিতরের কথা।
[কৃতজ্ঞতা : পিয়াস মজিদ, 888sport app, 888sport apps। কিশোর সেনগুপ্ত, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র।]

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.