বিদেশ থেকে বা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এয়ারপোর্টে নেমেছেন শায়লা মুরসালিন – জিনস এবং শার্ট পরে। পিঠের পেছনে একটা রুকস্যাক। চুলের রং এবং গোছা নিজের নয়। অনেক প্রকার উইগ আছে তার। কোনোটা লম্বা, কোনোটা বব, কোনোটায় খোঁপা, কোনোটায় বেণি। সবমিলিয়ে শায়লার বয়স যে কত ঠিক অনুমান করা শক্ত। চোখের নিচে, নাকের পাশে একটু কাকের পাখা, বকের পায়ের রেখা আছে। তবে ফাউন্ডেশন নামের কারবারের কারণে খুব নিবিড়ভাবে না তাকালে ঠিক ওগুলো চোখে পড়ে না। স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়েরা বিদেশে। একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে। 888sport appয় এলে সেখানে ওঠেন। এবং পুরো তিন মাস দেশে কাটিয়ে শায়লা আবার আমেরিকায় ফিরে যান। ওখানে পেনশন-টেনশনের ব্যাপার থাকে। কাজেই ফিরে যেতে হয়।
শায়লার দেশ ভালো লাগে।
যখন দেশে? প্রথমেই যান রেকর্ডের দোকানে। নানা প্রকার রেকর্ড কিনে ফিরে আসেন। তারপর আড়ং নামের দোকান। রং- বেরঙের কাপড়-চোপড় কেনেন। শাড়ি শায়লার কাছে দায়িত্ব, যাকে সামলানো মাঝে মাঝে একেবারেই অসম্ভব মনে হয়। মনে হয় এক লাথ্যি দিয়ে শাড়িটাকে ছুড়ে ফেলে একটা ট্রাউজার আর টপ এবং একটা বব চুলের উইগ পরে বেরিয়ে পড়বেন। ওদেশে সিটি দিয়ে গাড়ি থামাতে পারেন। এখানে তা পারেন না। 888sport appয় জীবন সহজ তবে ট্রাফিক জটিল। শায়লার মোবাইলে তিনটে গাড়ির ড্রাইভারের নাম নোট করা। যখন যাকে মনে হয় ডাকেন। ড্রাইভারদের বলা আছে, গাড়িতে এয়ারকন্ডিশনার থাকবে এবং গান। জ্যামে পড়ে ঘামবেন ঠিকই তবে গান থাকলে ঘামতে সুবিধা। দেশে শাড়ি পরলে তিনি লম্বা চুলের উইগে খোঁপা পরতে ভালোবাসেন। যখন এমন কোনো পার্টি বা সমাবেশ। একজন চুলের দিকে তাকিয়ে বলেছিল – বেশ তো কালো চুল আপনার। মুখ ঘুরিয়ে হেসে সেই বিশেষ ভালো মানুষটিকে বলেছিলেন শায়লা – আমার চুল? দুই নম্বরি। লোকজন চুল নিয়ে বিভ্রান্ত হোক এ তিনি চান না।
এমন উত্তর শুনে বিশেষ ভদ্রলোক বেশ ভালোভাবে তাকিয়েছিলেন। তবে সকলকে এত সরলভাবে সবকিছু বলেন না। কেউ তেমন প্রশ্নও করে না। কেউ বুঝতে পারে, কেউ নয়। একজন একবার কোনো এক 888sport liveে তার উইগ নিয়ে কিছু কমেন্ট করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন – এরপর কি তুমি আমার ব্রা এবং নিকারের সাইজ নিয়ে লিখবে? মেয়েটি বিব্রত হয়েছিল। তবে উইগ নিয়ে কেন লেখা যাবে না বুঝতে পারেনি।
অ্যাপার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে জনস্রোত দেখছেন। হাজার রকম ফেরিওয়ালা। আওয়াজ চারপাশে। ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ির চারপাশে লোকজন নেই। বেশ একটু নিরিবিলি বাড়ি। মুরসালিন চলে যাওয়ার পর বড় বাড়িটা বিক্রি করে ছোট বাড়িতে চলে আসা। লেখার অভ্যাস আছে। ইউটিউব ছেড়ে দিয়ে পুরনো হিন্দি গানে উদাস হওয়ার। এবং কিছু কিছু জমাটি ইংরেজি, স্কারবরো ফেয়ার বা স্টারি স্টারি নাইট। তখন কিন্তু তার বুকের ভেতর এক ধরনের চিনচিনে ব্যথা বাজে। সেটা কারো জানবার কথা নয়। এই বুকের ভেতরের ব্যথাটা এক এক সময় কারণ নেই ওঁকে অশ্রুসজল করে। তখন ভাবেন হরমোনের বাড়াবাড়ি। কারণ নেই তবু ব্যথা। হরমোনের বাড়াবাড়ি ছাড়া আবার কী। কখনো ভাবেন, ইস্ সকলে যদি সকলের ভাবনা দেখতে পেত, তাহলে এই গ্রহে ভাবনার ট্রাফিকজ্যাম লেগে যেত। ভাগ্যিস!
শায়লা ভাবছেন, এই তিন মাসে তিনি তার বিশেষ বড় বই ‘প্রেম ও বিরহ’ শেষ করবেন। একজন পাবলিশার আগ্রহী। তাছাড়া বইটা লিখতে তার ভালো লাগছে। তিনি বলতে চান, প্রেম ও বিরহ আসলে এক ধরনের অনুভব। সেদিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে যখন বাংলার বৃষ্টি দেখছিলেন মনে পড়ছিল, সেই বইটার একটি বা দুটি চ্যাপটার লিখে ফেলবার কথা। ওর বোন মৌটুসি একবার লিখেছিল – বাংলায় বৃষ্টি ছাতা নিতে ভুলো না/ বাংলায় বৃষ্টি নেই কোনো তুলনা।
ঘরে আসতেই লন্ডন থেকে আদিত্যের ফোন পেলেন। আদিত্য বলছে, সামনের মাসে ও চলে আসবে। পুরো দুই মাস থাকার ইচ্ছা। যদি শায়লা বলেন ওর বাড়িতেই থাকবেন। শায়লা ভাবছেন, ছুটি কাটাতে এসে পুরো দুমাস একজনকে সহ্য করতে হবে? না করলে মন খারাপ করবে খুব। কী উত্তর দেবেন বুঝতে পারছেন না। তখনি ‘ইউটিউবে’ একটা গান বাজান। ওখানে একটা বাজাতে চাইলে আর দশটা গান চলে আসে। ‘মথুরানগরপতির কাহে তুম গোকুল যাও’। অপূর্ব গানটা। ‘প্রেম ও বিরহ’ লিখবার আগে তিনবার এই গানটা শোনেন। বলরাজ সাহানির সেই বিখ্যাত গান ‘ও মেরে মাহেরজাবিনও’ শুনতে বেশ। এই সেই অভিনেতা না যার বিএ অনার্স ছিল ইংরেজিতে। ওঁর আগে এত শিক্ষিত বোধকরি আর কেউ আসেনি মুম্বাইয়ের সিনেমাজগতে। বলরাজ সাহানি আর চাঁদ উসমানির অবি888sport app download for androidীয় গান। শুনতে শুনতে শায়লা কাপড় গোছান। মানে ওয়ার্ডরোব শর্টআউট করেন। জিনসের আরো কয়েকটি ট্রাউজার কিনে নিয়ে যাবেন ভাবছেন। ও টপগুলো দেখেন। বাটিকের কাজ করা আরো কিছু টপ কিনে নেবেন ‘আড়ং’ থেকে, ভাবছেন। আর তখনি চোখে পড়ে গলার কাছের সেই ভাঁজ। বয়সটা বড় স্পষ্ট। ইস্! এটাকে কীভাবে সরানো যাবে। লেজার দিয়ে? কোথায় আছে লেজারের ডাক্তার। আয়নায় যখন একটা সুন্দর মুখ এবং সে-মুখ নিজের, তখন বেশ লাগে শায়লার। আসলে কখনো কখনো নিজেকেও ভোলাতে হয়। আর আয়নায় সুন্দর মুখ জীবনকে টানতে সহজ করে।
হ্যালো। ফোন বাজছে।
আমি আদিত্য!
তুমি কী করছ?
হিন্দি গান শুনছি।
তুমি একেবারে ছেলেমানুষ শায়লাভাবি।
তাই মনে হয় তোমার?
একদম।
আর তুমি একেবারে বুড়ো।
খানিকটা। আমি আসছি শায়লাভাবি।
শায়লা চুপ হয়ে যায়। সে কী বলবে – দুই মাস! এতদিন তোমাকে সহ্য করতে হবে। কিন্তু সহজাত শিক্ষা ওকে এমন কথা বলতে বাধা দেয়; কিন্তু তেমন উৎসাহ দেখাতে পারেন না। শায়লার বিশ্বাস যখন কেউ নিজে একা থাকে সে-ই তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। অন্য আর একজন নয়। কারণ তখন আর কারো সঙ্গে সমঝোতার কোনো ব্যাপার থাকে না। এই যে হিন্দি চাঁদের গান আর রাজকাপুর কিংবা অন্য আর কেউ? অপূর্ব হন্টিং টিউন। আদিত্য এলে কী এসব নিজের মনে শুনতে পারবেন? বলবে হয়তো আদিত্য – কবে বড় হবে তুমি!
তিনি কী বলবেন – এসবে যদি বড় হওয়া বোঝায় তাহলে কোনোদিন নয়।
এসব শুনলে কেন বড় হওয়া বোঝায় না। কী যে বোঝায় কে জানে। বড় হওয়ার সংজ্ঞা কী? বয়স? ঠিক তা নয়। কেউ কেউ বলে – এজ? জাস্ট অ্যা নাম্বার।
আচ্ছা ফোন রাখছি। শায়লার গলায় আবাহনও নেই, বিসর্জনও নয়। আদিত্য মনে মনে ভাবছে, তবু আসব। এক ধরনের কৌতূহল শায়লাকে নিয়ে, যে দশ বছর হলো স্বামী হারিয়েছে। প্রেমের গল্প-888sport alternative link লেখে এবং যখন-তখন হিন্দি গান শোনে। জিনস আর টপ, পেছনে রুকস্যাক। একেবারে ক্ল্যাসিক আমেরিকান। পার্লারে গিয়ে মুখ সুন্দর করে আসে। আবার কখনো সাঁতার দিতে যায়। এমন একজন বিপরীতধর্মী 888sport promo codeর জন্য এক ধরনের কৌতূহল। ইউফোরিয়া। আদিত্য বউ তালাক দিয়েছে পাঁচ বছর। এখনো পার্মানেন্টলি ওর জীবনে কেউ ইন করেনি। কিছু তরুণীর আসা-যাওয়া। এর মধ্যে ষাট পার হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি একজনের জন্য কৌতূহল! পৃথিবীর রহস্যের কি কোনো শেষ আছে? শায়লা মনে মনে ভাবে, দেখা যাক। ঘরের দরজা বন্ধ করে লেখা, গান শোনা, চলবে না যে তা ঠিক নয়। দরজা বন্ধ করলেই ওর জগৎ। সেখানে কারো অনুপ্রবেশ থাকবে না। ও আর ল্যাপটপ। তখন মনে হয় জীবনটা মন্দ নয়।
একটা ছোট মাইক্রোবাসে আদিত্য। এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি চলেছে ওরা। নিজের কথা বলছে আদিত্য। একা থাকার কথা। বউ চলে যাওয়ার কথা। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতার কথা। গাড়ির গান ‘আজা সনম মধুর চাঁদিনি মে হাম’ খুব বেশি ওকে দখল করতে পারেনি। না হলে এখন কেউ এত জোরে কথা বলতে পারে? শায়লার মনে আছে, একবার জিমির সঙ্গে চাঁদনী দেখতে যাওয়ার কথা। সুনসান পথ। আকাশে বিশাল এক চাঁদ। চারপাশে মোহরবৃষ্টি। আর সে-পথ ধরে শায়লা চলেছিল এক পার্টিতে। জিমি ওর প্রতিবেশী। লিফট দিয়েছিল সেবার। কিন্তু ওই পথে জিমি একবারও থামেনি বকবক থেকে। ইস্! কীভাবে মাঠে মারা গেল সেই পথের সুখ। ওর কাছে চাঁদ-ফাঁদ, জোছনা-টোছনা, মোহরবৃষ্টি এসবের কোনো অর্থ নেই। তাই তো সারাপথ ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানের গল্প করে গেল। তাদের জন্ম, গুণাগুণ, বৈষম্য এসব। একসময় পথটা ফুরিয়ে গেল এই করতে করতে। বরং চুপচাপ পথটা যদি ফুরিয়ে যেত নামতে নামতে জিমির গালে একটা ‘পেক’ করতে পারতেন। কিন্তু পথের শেষ মাথায় এসে ওর মনে হলো লোকটার টাইট জিনসের ভেতর যে-অ-কোষ সেখানে একটা লাথি মারেন। এরপর চাঁদ উপলক্ষে যে-বারবিকিউ সেখানেও চাঁদ নেই। কেবল খাবার, হইচই আর হুলেস্নাড়। 888sport appয় একজন বুড়ো মানুষ চাঁদ উদ্যাপন করেন। চমৎকার। তিনি কখনো বুড়ো হবেন না এবং দীর্ঘদিন লোকের মনে সজীব থাকবেন এই একটি কারণে – লোহালক্কড়, কম্পিউটার, টেলিভিশন, কেনাবেচার জগতে একজন আপনমনে চাঁদের কারণে টাকা-পয়সা খরচ করে গায়ক এনে এই জোৎস্না-চাঁদ উদ্যাপন করেন। সৌন্দর্যকে স্বাগতম! অসাধারণ! ভদ্রলোকের নাম যেন কী? ঠিক মনে পড়ছে না।
তারপর শায়লাভাবি তোমার খবর বলো? ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আদিত্য। আদিত্য আশরাফ। লন্ডনে পাউন্ড ধরা নাকি শিখে ফেলেছে, বলে সকলে।
আমার আবার কী খবর?
মানে একা এখানে। কতদিন থাকবে?
দেখি কতদিন থাকা যায়। শায়লা জানালা দিয়ে 888sport app দেখতে দেখতে কথা বলছেন।
তুমি একা। যেন আপনমনে নিজের সঙ্গে কথা বলছে এভাবে কথা বলছে আদিত্য।
একা আবার কী? লেখা আছে না।
কিন্তু সে-প্রসঙ্গে কোনো কথা বলে না আদিত্য। লেখা! সেটা কী একটা বলার বিষয় হলো? শায়লা লেখা প্রসঙ্গ আর দীর্ঘ করেন না। তিনি খেয়াল করেছেন এই প্রসঙ্গ এলে সবাই চুপচাপ। কারণ ও 888sport promo code তাই! কী জানি। সে নিয়ে ওর ভাবনা নেই। আহা আমার আনন্দময় সময়। লেখাকে ও এই নামেই ডাকে। আসতে আসতে এতসব কথার ভেতরে ‘প্রেম ও বিরহে’র একটা চ্যাপটার ওর মনে খেলা করছিল। অনীশ যখন চলে গেল। আর সোহিনী যখন একা। তারপর থেকে একার নিজের জীবন! সোহিনীর নাম তখন হয়ে গেছে একা। আসলে ‘প্রেম ও বিরহে’র নাম ‘একাও’ হতে পারত।
শায়লা বলে – ড্রাইভার গাড়িটা একটু থামাও। কিছু কচি ডাব নেব। আর দেখ কী চমৎকার সবজি। ওগুলোও দেখব একটু।
গাড়িটা থামে। শায়লা গাড়ি থেকে নেমে বাজার সারেন। বোঝা যায় এই বাজারের ব্যাপার তাকে খুশি করেছে; কিন্তু আদিত্য নামে না। ওর শেয়ারের গল্পটা থেমে গেল বলে কী ওর রাগ হলো? হোক।
নামলেই পারত আদিত্য। শীতকাল! কতসব শাকসবজি। আদিত্য হাত বাড়িয়ে রেখেছে সিটে। শায়লা বসলেই ওর মাথা পড়বে আদিত্যের দুই হাতের মাঝখানে। ও একটু গলায় শব্দ তুলে বলেন – এক্সকিউজ মি আদিত্য!
আদিত্য হাত সরায়। বলেন শায়লা – নামলেই পারতে। নতুন আলু, টমাটো, কাঁচামরিচ, পালংশাক, শালগম, ওলকপি। কত কী। এইসময় 888sport appয় আসা বেশ। ইচ্ছা করলে রোজদিন মটরশুঁটির পোলাও।
ওসব দেখবার কী আছে? লন্ডনে একজন রান্না করে দিয়ে যায় সাতদিনের জন্য। বাকি ভাত ফোটানো রাইস কুকারে, আমি সেরে ফেলি।
ও তুমি বাজার করো না?
কোনোদিন নয়। শায়লা বলেন – বাজারে কখন স্ট্রবেরি ওঠে, কোন ঋতুতে লাল চেরি পনেট ভর্তি করে পাওয়া যায়, কখন তরমুজের পাহাড় জমে, কখন জাফা থেকে কমলা এসে ইসরায়েলের পরিশ্রমের কথা বলে তার তুমি কিছুই জানো না আদিত্য! কখনো নতুন জার্সি আলু কিনতে কিনতে ভাবো না, এক শিশি খাঁটি সরিষার তেল কিনি নতুন আলুর ভর্তা খেতে? লাল মরিচকে তেলে ভেজে সর্ষের তেল দিয়ে ভর্তা করা, তার সঙ্গে মেশাতে হবে ধনেপাতা। ভীষণ ভালো খেতে।
না। না জানলেও জানি কীভাবে টাকা বানানো যায়। ওপেন মার্কেটে যাই না। সুপার মার্কেটে সারাবছরই ওসব পাওয়া যায়।
শায়লা চুপ করে আছেন। ড্রাইভারকে বলেও গান বন্ধ করতে।
বাঁচা গেল। কীসব বাসি-পচা হিন্দি গান। এসব তুমি শোনো এখনো।
গম্ভীর গলায় শায়লা বলেন – শুনি। বলো না এখনো কত ছেলেমানুষ তুমি। এসব শুনলেই ছেলেমানুষ আর এসব না শুনলেই বুড়ো মানুষ, এসব আমি মানি না। আমি তো এসব ছেড়ে দিয়ে গলা ছেড়ে সিংগালং করি।
ছেলেমানুষ! বলে এবার হাসে আদিত্য। একটুখানি ‘সেন্স অব হিউমার’ মাইক্রোবাসের আবহাওয়া একটু হালকা করে।
তিনটে সামসোনাইটের একটিতে কোনো এক বন্ধুর জন্য শার্ট। বলে ও – বিশাল বড়লোক। বউ মারা গেছে। একটা শার্টের দাম দুশো ডলার। টাকার পাহাড়। চলবে?
মানে? কী চলবে?
এমনি বললাম এই আর কী। একেবারে ‘গেট রিচ কুইক’ ওভারনাইট। ভাবতে পারো। টাকার পাহাড়! মনে আছে বড়লোক হবার খুব শখ ছিল তোমার! ওকে ভাবতে পারো। বউ খুঁজছে।
মনে থাকবে।
শায়লা হেসেই চলে যান। ব্রিটেন থেকে যে শুভানুধ্যায়ী তার একাকিত্ব নিয়ে ভাবতে ভাবতে এসেছে তার কথার সবকিছু বড় পরিষ্কার। যদি তুমি সুখী হতে চাও টাকা বানাও এবং বড়লোককে বড়শিতে গাঁথো। ও মটরশুঁটি কখন বাজারে ওঠে জানে না, কখন পালংশাক এসে নামে ঝাঁকায় করে সেসব নিয়েও ভাবে না। কিন্তু শেয়ারবাজারের কারবারে লোকটা মোটামুটি ভালো অবস্থায় এবং কিছু বন্ধুও টাকার পাহাড়ে বাস করে। বোধকরি ওর এই ভালো অবস্থা দেখাতে এসেছে।
নিজের ঘর পছন্দ করে আদিত্য। একটি বুক-শেলফ খাট। লিখবার টেবিল। স্যুটটুট রাখবার জন্য একটি ওয়ার্ডরোব। টেবিলে ওর কম্পিউটার রাখা। শায়লা বলে – ঘুমানোর আগে কি বই পড়ার অভ্যাস আছে?
না। মাঝে মাঝে এক আধটু…।
শায়লা ওর 888sport alternative link ‘প্রান্তরের গান আমার’ পাশের সাইড টেবিলে রাখেন। আদিত্য বইটার দিকে একবার তাকায়; কিন্তু বইটা নিয়ে কোনো কৌতূহল প্রকাশ করে না।
শায়লা নাইটির ওপরে ড্রেসিংগাউনের ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বলেন – সিস্নপ ওয়েল আদিত্য।
ইউ টু শায়লা। বলেই হাসে আবার আদিত্য। হাসিটা খারাপ নয়। কেমন একটা শাহরুখ খান ভাব আছে হাসিটায়।
শায়লা দু-একবার ওর সঙ্গে বাইরে গেছেন; কিন্তু তেমন করে যাওয়া উপভোগ করেননি। চায়ের কাপ সামনে রেখে যে-প্রশ্নটা ও আদিত্যকে করেছিলেন, আদিত্য তার উত্তর দিতে পারেনি। বলেছিলেন – আচ্ছা বলো তো, আদিত্য, কৃষ্ণ কেন তার রাজকাজ, মাথার মুকুট মথুরায় রেখে সেই গোকুলে বারবার আসতে চাইতেন। খানিক আগে যে-গান হয়েছে তারই সূত্র ধরে বলেন শায়লা। প্রশ্ন করেন আবার – কিসের জন্য? তিনি তো দেবতা, কেন তবু তাকে গোকুলে আসতে হয়? বলতে পারো? ওকে তো বারবার বলা হয়েছে – মথুরানগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও।
রাধাকে দেখতে বোধকরি।
কিন্তু কেন সেটা তো বলছ না। মথুরায় কী আর কোনো সুন্দরী 888sport promo code নেই?
এই আমি যেমন তোমাকে দেখতে এসেছি।
কিন্তু কারণ তো বলোনি। কেন আমাকে তুমি দেখতে চাও? কেন কৃষ্ণ রাধাকে দেখতে চায়।
ঠিক এই প্রশ্নের যে-উত্তর চেয়েছিলেন শায়লা, ঠিক সে-উত্তরটা জানে না আদিত্য। কৃষ্ণ তার সেই মানুষ রূপ দেখতে চান, যেখানে হৃদয় থাকে, হৃদয়ের ব্যথা থাকে; যেখানে বয়ে যাওয়া যমুনার পাশে এক সাধারণ 888sport promo code রাধাকে পেয়ে তিনি ভালো করেই জানেন কেবল দেবতা নয়, তাকে মানুষও হতে হবে। বাঁশির টানে তিনি তখন আর একজন। যাকে বলে ‘হিউম্যান ফিলিং’, সেটা জানতেই তো যমুনার পারে যাওয়া। হৃদয়ের কামনাব্যথা শেষ হয় না।
অন্যদিকে কথা ঘুরিয়ে বলে আদিত্য – তোমার কামনাব্যথা বোধকরি সব শেষ?
শায়লা শান্ত-গম্ভীর গলায় বলেন – আমার বই পড়ো, উত্তর পাবে।
বই পড়লে আমার মাথা ধরে। বই কেন? তুমি বলতে পারো না।
শায়লা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ান – চলো রকিং হর্সে একটু দোল খাওয়া যাক। ফান ফেয়ারে গেলেই শায়লা একবার রকিং হর্সে উঠতে চান এবং হাতে একটি ক্যান্ডিফ্লস নিয়ে। আদিত্য বলে – তুমি ওঠো। আমি ওই চেয়ারটায় বসি। এরপরও তোমাকে ছেলেমানুষ বলা যাবে না?
শায়লা বলে – জানো আদিত্য, আমাদের জীবনে আনন্দ একটি বিশেষ শব্দ। ঠিক রকিং হর্সে ওঠা নয়, আরো নানা কাজে শব্দটা কিন্তু বারবার চলে আসে।
আদিত্য উত্তর দেয় না। শায়লা বলেন – তাই কি হয়, আমি রকিং হর্সে উঠব আর তুমি কেবল আমাকে দেখবে?
এরপর দুজন ফানফেয়ার থেকে বেরিয়ে আসে।
ঘাসের পথটা চুপচাপ পার হয়ে যায় এবং আদিত্য এক জায়গায় কয়েকটা চেয়ার দেখে বলে – বসো। এবার আমি তোমাকে বলব 888sport appয় আসার প্রধান কারণ। আমি আর বড়লোক বন্ধু রেজা শাহ একটি ব্যবসার কথা ভাবছি। তুমি কি আমাদের সঙ্গে কাজ করবে, তাহলে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ব্রাঞ্চ খোলা যাবে।
ব্যবসা? আমি? প্রশ্নই ওঠে না।
সময় তো প্রচুর তোমার। যথেষ্ট স্মার্ট তুমি। কথা ভালোই বলো। তোমাকে পেলে আমরা অনায়াসে একটা ব্রাঞ্চ ওখানে খুলতে পারি।
আমি লেখালেখি নিয়ে থাকতে চাই।
ওসব প্রেম-ট্রেম নিয়ে লিখে কয় পয়সা পাও তুমি?
সে হিসাব আমার। ও নিয়ে তুমি কোনো কথা বলো না।
আদিত্য ওঠে। গাড়িটা দূরে ছিল। শায়লা ফোন করে গাড়িটাকে কাছে আসতে বলেন।
এবং গাড়িতে বেশ স্পষ্ট ভাষায় আদিত্য যা বলে সে এই – ববিভাই চলে গেছেন দশ বছর হলো। আমার বউকে তালাক দিয়েছি পাঁচ বছর হলো। তুমি একা এবং আমিও। তোমার বাকি জীবনের জন্য আমি কি উপযুক্ত নই?
শায়লা খানিক চুপ করে থাকেন। যে-লোক তার বইয়ের দুই পাতা পড়েছে প্রায় বিশ দিনে এবং বলেছে 888sport promo codeদের প্যানপ্যানানি। তাকে কী বলবেন? এখন যা লিখছেন, সে তো ‘প্রেম ও বিরহে’র চারশো পাতার 888sport alternative link। বলেন কেবল – বাকি জীবন একা থাকতে চাই আদিত্য। তুমি যথেষ্ট যোগ্য মানুষ। যেসব তরুণী তোমার জীবনে পাখিদের মতো যাওয়া-আসা করে, তাদের কোনো একজনকে ধরে খাঁচায় ভরে ফেলো। চিরদিন ও তোমার থাকবে। দানাপানি ঠিকমতো দিও, ও কোথাও যাবে না।
বুঝতে পারছি, 888sport live footballে পিএইচ.ডি পাওয়া কোনো একজনকে পছন্দ তোমার। আমি কাপড়ের ব্যবসায়ী। ক্লথ মার্চেন্ট। পছন্দ হবে কেন?
রবীন্দ্রনাথ তো স্কুল লিভার। তাকে কেন পছন্দ আমার?
ওই বুড়োই তো সর্বনাশটা করলেন। একেবারে নাম্বার ওয়ান বস্ন্যাকমেলার। যেন এক আফিমের নেশার মতো কোনো ব্যাপার। আমি লক্ষ করেছি, ওইসব গান শুরু হলেই তোমার চোখ ছলছল। ঠিক বলিনি?
বেদনা যে আনন্দ দেয় তা তুমি জানো আদিত্য?
দাঁতের ব্যথা দাঁতের ব্যথাই তার মধ্যে আবার আনন্দ কী?
শায়লা বুঝতে পারেন ওরা কোনোদিন কখনো চিমত্মার সমান্তরালে যাবে না। ও যা বোঝাতে চাইবে আদিত্য কোনোদিনই তা বুঝবে না। ‘থট ওয়েভলেন্থে’ ওদের দুজনের দূরত্ব যোজন যোজন মাইল। কাজেই শায়লা আর সেই শব্দ উচ্চারণ করেন না যার ‘কনসেপশন’ আদিত্যের কাছে একেবারেই অন্য কিছু।
বলে ও আসলে আনন্দ-বেদনা একই গস্নাসের শরবত। যিনি চাঁদ উদযাপন করেন প্রতিমাসে একবার তিনি বলেছিলেন – সেই মানুষ চাই যে বেদনাবান হতে পারে। এক ধরনের বিশেষণ এই শব্দে। বেদনাবান! এবং এটি একটি বিশেষ শব্দ।
মাথাটা ধরেছে। তোমার ব্যাগে কি প্যারাসিটামল আছে?
শায়লা ছোট পস্নাস্টিকের কাপে একটু পানি ঢেলে বলেন – নাও তোমার প্যারাসিটামল। তুমি কি চাও সারাজীবন তুমি মাথার ব্যথায় ভোগো। আমার কথা মানেই তোমার মাথাব্যথা তাই তো! তারপরেও আমাকে চাও?
চাই। এবং তোমাকে চাই যখন ফট করে একটা পস্নাস্টিকের কাপ বের করে জাদুর মতো একটা প্যারাসিটামলের বড়ি বের করতে পারো। মাথার বেদনায় যখন আমি বেদনাবান তুমি যদি থাকো তাহলে ব্যাপারটা সহনীয় হবে না কী?
একেবারে রাবিশ হবে সবকিছু। ওই যে মেয়েটা তিশা না কী যেন নাম, ওকে এবার বলো তোমার জীবনে পার্মানেন্টলি ইন করতে।
ঠাট্টা করছ?
ডেড সিরিয়াস। ঠাট্টা কেন হবে?
আদিত্য সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে। বন্ধের দিনে 888sport appয় রাস্তায় মোটামুটি ভালোভাবেই গাড়িটা চলছে। একটা গাড়ি নিয়েছে আদিত্য, যে টাকাটা ও দেবে। ওর নানাসব মিটিং-টিটিং। কাজেই দুয়ারে প্রস্ত্তত গাড়ি, সবসময়।
স্কুলে কাজ করতে যে-অভ্যাস হয়েছে শায়লার, সেটা সাতটার ভেতরে রাতের খাওয়া শেষ করা। মিজান দুটো রুটি আর কিছু সবজি এনে দেয়। আদিত্য দশটার আগে কখনো খায় না। শায়লা এ নিয়ে কিছু বলেননি। কেবল মিজানকে বলেছে – যখন তিনি খেতে চান। দেবে। তারপর তোমার বিশ্রাম। মিজান ভালো ছেলে, মাথা নেড়ে বলেছে – তাই হবে আম্মা।
শায়লার বইটা শেষ করতে হবে। বইমেলা চলে আসবে। হাতে অল্প কিছু সময়। তবু বলেন – কোনো সিনেমা দেখবে?
কী আছে তোমার। শায়লা বলে – চলো রেনকোটটা দেখি।
বিষাদ কেবল তাই নয়?
তা হলেও বেশ। আমি চারবার দেখেছি। আবার দেখতে আপত্তি নেই।
আদিত্য রাজি হয়। বলে আসবার সময় তোমার জন্য এক বোতল ‘ভিনসেমেত্মা’ এনেছিলাম। চলো পান করতে করতে সিনেমাটা দেখা যাক। ‘ভিনসেমেত্মা’ গ্রিক দেশের সামেত্মারিনি দ্বীপের মদ।
না থাক তোমার ‘ভিনসেমেত্মা’। লেবু চা না হলে বস্ন্যাক কফি। যা তোমার পছন্দ।
তুমি ঠিক জানো তো, ওটা কি? মানে ‘ভিনসেমেত্মা’ জিনিসটা কী?
কী আবার মদ। তুমিই তো বললে। ওয়াইন।
বলতে পারো স্বর্গীয় মদ। সামেত্মারিনি ছাড়া ও জিনিস আর কোথাও পাবে না। ধূপের গন্ধভরা। আমার মনে হয় একেই বোধকরি বলা যায় ‘শরাবন তহুরা’। শায়লা বলে – না থাক। দুজনে বসে বসে মদ পান ঠিক পছন্দ নয়।
রেনকোটের সেই বিশেষ গান। মথুরানগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও। কেবল মথুরার দেবতাই বলতে পারে কেন সে আবার মথুরা যেতে চায়। বোধকরি মানুষ জীবন ফিরে পেতে। আবার বলেন শায়লা। বিষয়টা বেশ। মনে মনে ভাবছেন শায়লা, এ-বিষয়ে একটা ছোটগল্প লিখে ফেলবেন। মথুরার দেবতা কেন তুমি আবার গোকুল যেতে চাও।
ছবিটায় হুকড শায়লা। শেষের দিকে এসে লক্ষ করেন বা বুঝতে পারেন আদিত্য ঘুমিয়ে গেছে। ডাক দিয়ে বলেন – এখন মানে এখন কী করে ঘুমাও তুমি? শেষটা না দেখে?
বোরিং। এক ঘরের মধ্যে তখন থেকে কথা কেবল। তার চেয়ে কভি খুশি কভি গম দিতে পারতে? এরপর ও পাশ ফেরে। সোফায় প্রগাঢ় ঘুম। শায়লা ছবি বন্ধ করে উঠে চলে যান নিজের ঘরে। একা মেয়ের গল্প ‘প্রেম ও বিরহ’। আসলে এ হলো অনুভবের গল্প। যে-মেয়েটা প্রায় রোজদিন তার গল্প বলে কাউকে চিঠির ভাষায়; কিন্তু একদিন মেয়েটা কি জানবে, ও ক্রমাগত নিজেকে চিঠি লিখে চলেছে। এর ভেতরে লেসোথোর মাশেরু। ডেকেন্সবার্গ পর্বতমালা। মেয়েরা। গোল্ড উইডো। লোকজন। তাদের নানাসব জীবনযাপন। উইচ ডাক্তার। স্কুল। মালতি পাহাড়। টাকা-পয়সা বা র্যান্ড। আর লেসোথোতে যাকে বলে মালুতি সেসব নিয়ে ‘প্রেম আর বিরহ’।
লিখতে লিখতে রাত বাড়তে থাকে। হয়তো মিজান আদিত্যকে খাইয়েছে। ও আর এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। দুজনের চিমত্মার বিশাল ফাঁকটা দিন দিন স্পষ্ট হয়। ভাগ্যিস! বলা তো যায় না, শায়লা হঠাৎ করে যদি বলে ফেলেন – চলো তাহলে আবার শুরু করা যাক। যদিও বয়সটা কারো কম নয়। কিন্তু কখনো বয়সও সঙ্গী হয় না। আর শায়লা বেসিক্যালি একজন নরম মনের 888sport promo code। আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে একটা কোমল মন ওকে মাঝে মাঝে বিব্রত করে।
সকালের আলোতে চায়ের সঙ্গে একবাটি পরিজ খেয়ে পায়ে একটা প্রিমসোল চাপিয়ে হাঁটতে যান। দশটার আগে আদিত্য উঠবে না। তারপর দীর্ঘ শাওয়ার। নাশতা এগারোটায়।
ফিরতি পথে মাছ, মিষ্টি কুমড়ো, শাক নিয়ে বাড়ি ফেরে ও। ঝুপঝুপ বৃষ্টি। ব্যালকনির চারপাশে বৃষ্টি পড়ছে। ভেজা মুখে আর জলের ঝাপটায় বুঝতে পারেন আসলে বয়সটা মনের ব্যাপার। এখন শায়লা ছাদে গিয়ে ভিজে আসতে পারবেন এবং এনজয় করবেন।
আদিত্য কাপড় বদলাতে বদলাতে প্রশ্ন করে ওকে – কী করছ আজ সারাদিন।
শায়লা বলেন – তেমন কিছু না।
যাবে নাকি আমার বড়লোক বন্ধুর বাগানবাড়িতে। রেজা শাহের বাগানবাড়ি। বাগান ও পুকুর চমৎকার!
শায়লা বলেন, না। ওর এখন কোথাও যেতে ভালো লাগছে না। এখন লিখবেন।
বলে আদিত্য – আজ রাতে ‘ভিনসেমেত্মা’টা খুলো। আর কভি খুশি কভি গম।
হাঁটতে গিয়েছিলেন শায়লা জিনস আর শার্ট গায়ে। শার্টটা লম্বা। চাদরের তলায় শার্ট না কামিজ না পিরহান কে বুঝবে। ওপরে চাদর। পোশাক নিয়ে ভাবেন না কোনোদিন। বলেন – কথা দিতে পারছি না।
তুমি তো একেবারেই প্রাচীন। পরেছো তো জিনস আর শার্ট! আর শোনো নানা হিন্দি গান।
শায়লা বলেন – তাতে কী।
আজ রাতে তোমাকে আমি একটা বিশেষ কথা বলব।
কী বিশেষ কথা?
যখন বলব, জানবে। আমার সঙ্গীসাথির বয়স বেশি নয়। আমি বলছি তরুণী মেয়েদের কথা। ওরা আমাকে পছন্দ করে।
কী কথা বলতে চায় আদিত্য। শায়লা হেসে বলেন – যুগটাই যৌবনের। ভায়াগ্রা, হর্স আরো কত কী!
আদিত্য বলে – তাহলে?
শায়লা বলে – তুমি যাবে কবে?
খুব তাড়াতাড়ি। তখন বুঝবে – কী হারাইতেছ জানো না।
বৃষ্টির ছাঁটটা যেখানে এসে পড়েছে শায়লা তার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বলে – তোমার তাই মনে হয়? তুমি তো আজ সকালের বৃষ্টি দেখোনি। রাতের চাঁদও দেখো না। আমি আর্লি রাইজার। তুমি ওঠো দশটা-এগারোটায়। রেনকোটে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। বেদনাবান তোমার কাছে মাথাব্যথা। আমি বোধহয় জানি আমি কী হারাইতেছি। আমার ‘প্রান্তরের গান’ মাত্র তিন পাতা পড়েছ।
ওসব লিখে কী হবে বলো তুমি। একটা উঁচু ক্লাসে ওঠার পথ আমি তোমাকে দিতে পারি।
শায়লা বলেন – জীবনটা যখন আমার, পথটাও আমার পছন্দের হোক।
শায়লা ওর বইয়ের ধুলো ঝাড়ছেন। আদিত্য বলে – টাই বাঁধতে পারো?
না। কাজটা আজো শেখা হয়নি। ববির টাই বাঁধাই থাকত। ও কেবল গলায় মালার মতো পরে ফেলত। তাই আর শিখলাম কোথায়।
শায়লা অবাক হয় এখনো রেগে উঠছেন না। বা চলে যাওয়ার নোটিশ জারিও করছেন না। বলেন কেবল – ভালো সময় কাটুক তোমার বন্ধুর বাগানবাড়িতে।
রাত কত কে জানে। শায়লার ঘরে হালকা আলো। দরজাটা একটু খোলা। আলোটা টেবিল বাতির। মিজান ছুটি নিয়েছিল। আদিত্য বাইরে খাবে এমনই তো কথা। শায়লার ঘরের দরজা সচরাচর বন্ধ থাকে। দরজার ওপারে নিজের ঘরে যে-জগৎ শায়লার সেখানে ও একা এবং দীর্ঘদিনে একটু একটু করে সে-জগৎ ওর একান্ত। যেখানে চাঁদ তারা নক্ষত্র পাখি প্রজাপতি সব ওর একার। ‘প্রান্তরের গানে’র ভূমিকায় এমন কথা লিখেছিলেন শায়লা। আজ একটু টিপসি ও। বড়লোক বন্ধুর সঙ্গ। একসময় বলেছিলেন তিনি – যে-জীবন ওর পছন্দ সেখানে তুমি কে হে ওকে তা বদলাতে বলবে। তোমার মতো করে ভাবতে বলবে।
তুমি এমন কথা বলছ?
বলছি। শোনো এবার ফিরে যাও। এবং তিশার সঙ্গে একটা সিরিয়াস সম্পর্ক করো। রেজা শাহ যিনি কোনোদিন শায়লাকে দেখেননি, এমন অদ্ভুত কথা বলেছেন।
শায়লার দরজার সামনে আদিত্য। কী বলতে চায় এখন আদিত্য। দরজা আসেত্ম করে খোলে। টেবিল বাতির আলোতে চোখে পড়ে শায়লা। পিঠ দরজার দিকে। ও কোনো কিছু শুনতে পায়নি। ‘প্রেম ও বিরহ’ শেষ হয়েছে। ওর নায়িকা একা এখন অসটিও আরথ্রাইটসে হাতের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। শেষ পর্বে একা ভাবছে এক বাক্স চিঠি জমে আছে। কখন কী করে আমি উত্তর লিখব। ‘প্রেম ও বিরহে’র শহর থেকে একা এখন নিঃসঙ্গতার কাচভুবনে – সঙ্গী কোনো সুহৃদয়েষু নয়, অসটিও আরথ্রাইটিস। দিনের পর দিন চিঠি লিখে গেছে কোনো এক সুহৃদয়েষুকে একা, নিজের সঙ্গে কথা বলে। শায়লার চুলগুলো যখন ওর নিজের বড় করুণ লাগে ওকে। লিখতে লিখতে ভুলেই গেছিল দরজা বন্ধ করবার কথা, চুলের ওপরে আর কোনো চুল পরার কথা। ‘ভিনসেমেত্মার’ বোতল খোলা। দেখা যায় টিস্যুর বাক্স থেকে একটা একটা টিস্যু নিয়ে একা চোখ মুছছেন। চোখের পানিতে ম্যাক্সির বুকের কাছের অংশ বারবার ভিজে উঠছে। স্রষ্টা কাঁদছে সৃষ্টির জন্য। বুকের অসহ্য ব্যথা, সামনে রাখা সামেত্মারিনির ‘ভিনসেমেত্মা’। শায়লার হাতে একটা কাচের গস্নাস। এমন দৃশ্য আগে দেখেনি আদিত্য। কী যে বলতে এসেছিল ভুলে গেছে। ব্যথায় ও এসব পান করে না। আজ না হয় একটু ব্যতিক্রম হোক। এত করে বলছে আদিত্য ‘ভিনসেমেত্মার’ গুণাগুণ, ধূপ-মেশানো শরাবন তহুরা। না হয় ওর সৃষ্টির কোনো একজনার জন্য একটু পান – ব্যস এই তো। এমন ও করে না, আজ ব্যতিক্রম।
একা, গভীর রাতে ওর সৃষ্টির 888sport promo codeর জন্য কাতর, কেবল জানতে পারছেন আর একবার, বাকি জীবন এদের কোনো একজনের সঙ্গে বসবাসের জন্য কাউকে নির্বাচন করবেন না। বাছবেন না। আদিত্যর বন্ধু ওকে বলেছিল – হু দ্য হেল ইউ থিংক ইউ আর! হাউ ডেয়ার ইউ আসকড্ হার টু টেক ইয়োর পাথ। লিভ হার অ্যালোন।
লিভ মি অ্যালোন। কখনো বলেননি শায়লা; কিন্তু এখন আদিত্য জানে এ-সত্যি। রেনকোট বুঝতে না পারলেও নিজের সৃষ্টির জগতে এই একা 888sport promo codeকে কেন জানি বুঝতে পারছে। শায়লার জগৎ, এদের সঙ্গে বসবাস। তারপরেও নিজের কারণে সময় বিশেষে অনমনীয় 888sport promo code।
তুমি কী খেয়েছো আদিত্য?
যখন একটু সুস্থির প্রশ্ন করেন শায়লা।
খেয়ে এসেছি। পরশু দিন চলে যাচ্ছি। এবার গিয়েই তিশাকে বিয়ে করব।
বেশ তো। শায়লার গলার স্বর খানিক আগের কান্নার কারণে একটু হাসকি।
রাত বাড়ছে। সাইড টেবিলে ‘প্রান্তরের গান’। কোনোদিন ওর কোনো বই বা 888sport live football নিয়ে কথা বলেনি আদিত্য। এখন কেন যেন মনে হলো আরো কয়েক পাতা পড়লে হয়। তারপর কী ভেবে বই রাখে। তিশা লিখেছে – আই মিস ইউ টেরিবলি।
মি টু। বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে আদিত্য ফিরে যাবার কথা ভাবতে ভাবতে। ভাবছে ও – যদি প্রেম রক্ত-মাংস নয় কেন? এবং তিশার সঙ্গে ওর চিমত্মার এইখানে আশ্চর্য মিল। তারপর শায়লাকে ভাবে – পুওর ওম্যান গড হেল্প ইউ। বলতে বলতে পাশ ফেরে আদিত্য।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। একা শায়লা বৃষ্টির মুখোমুখি। মাঝে মাঝে বেদনাকে মনে হয় উপাদেয় সুখ। আর গান? পরিত্রাণ। এসব নিয়ে বাকি জীবন? কঠিন নয়।

