বাদল সরকার
পিতামাতার
ইচ্ছায় এঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি, পরে নিজের ইচ্ছায় এবং উপার্জনের টাকায় টাউন প্ল্যানিং,
কিন্তু একটা সুপ্ত ইচ্ছা অনেকদিন ধরে ছিল মনে।
হয়েছে কী, বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, তারপর
সুকুমারীদির ঠেলা ছিলো, কিন্তু বিশাল বিশাল বই পড়ে ওঠা হতো না বড় একটা। জানতাম,
ঘাড়ে একটা জোয়াল না পড়লে সেসব বই পড়া হবে না।
আমি 888sport apkের দিকের ছাত্র। ইংরিজি নিয়ে পড়তে
গেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ঠেকে যায় – একবার চেষ্টা করে দেখেছি।
তখন আমার বয়স চৌষট্টি, যাদবপুর স্টেশনে রেললাইন
পার হলে পূর্বদিকে সন্তোষপুর, সেইখানে বাসা। অর্থাৎ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
হাঁটাপথ। ওখানকার তুলনামূলক 888sport live footballের এক ছাত্রীর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানলাম,
888sport apkের দিক থেকে গেলেও ওই বিষয়ে এম.এ পড়া যাবে, যদি ওদের প্রবেশিকা পরীক্ষায়
উতরাতে পারি। সে অবশ্য এক ভীষণ পরীক্ষা চারদিনের, দুদিন চার ঘণ্টা করে, দুদিন তিন
ঘণ্টা।
আমি ভর্তি হবো শুনেই প্রবল আপত্তি ওখানকার
অধ্যাপকদের। যার মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছিলাম, তার কাছে শুনলাম এ-কথা। আপত্তির কারণ
জানতে দেখা করলাম গিয়ে তাঁদের সঙ্গে। একজন বললেন, ‘আপনি ক্লাস করতে পারবেন?’ আমার
হালচাল জানা ছিল, বললাম, ‘আপনাদের সব ছাত্রছাত্রী কি নিয়মিত ক্লাস করে? তাদের
অনেকের থেকে আমি বেশি ক্লাস করব।’ ওঁদের বোধহয় মনে হয়েছে – আমি ডাকসাইটে পন্ডিত,
স্রেফ ওঁদের জব্দ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ভর্তি হতে চাইছি। শেষ অবধি বললাম, ‘অ্যাডমিশন
টেস্টে পাস করতে না পারলে নেবেন না; কিন্তু পারলে নেবেন না কেন?’ অবশেষে বোধহয়
বিশ্বাস হলো – আমার কোনো বদ মতলব নেই।
সেই দুরূহ পরীক্ষায় উতরে ছিলাম শুধু আমি আর
প্রাণি888sport apkের স্নাতক একটি ছেলে। বিশ্ব888sport live football সম্বন্ধে সাধারণ জ্ঞানের ওপর আর
ইংরিজি-বাংলা ভাষার দখলের ওপর প্রশ্নপত্র, বই পড়ার নেশা থাকলে ওটুকু জ্ঞান আয়ত্ত
হয়ে যায়। সেটুকু জ্ঞানও ছিল না বাকি ডজনখানেক পরীক্ষার্থীর।
তা-ও শেষ মুহূর্তে কেঁচে যাচ্ছিল। কলেজ
ইউনিভার্সিটির কেরানিরা মনে করে – তারাই সবকিছু চালাচ্ছে, অধ্যাপকরা ফালতু মাইনে
খায়। সেই দর্পে এক কেরানি তার সামনে চেয়ার থাকলেও আমাকে বসতে বলেনি, যদিও আমি তার
বাপের বয়সী। মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট না কী একটা যেন লাগে, আগে যেখান থেকে পাশ করেছি
সেই প্রতিষ্ঠানের, সেটা নেই বলে ভর্তি হতে পারব না আমি – বেশ কড়া করে বলে দিলো সে।
ততক্ষণে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে, বললাম, ‘ওসব কিছু নেই আমার, দিতে পারব না।
ভর্তি হওয়ার দরকার নেই আমার, চললাম।’ ঘরের অন্য কেরানিরা বোধহয় কানাঘুষোয় আমার কথা
শুনেছিল, আটকে দিয়ে খাতির করে বসালো, বললো, ‘রেজিস্ট্রারকে ফোন করছি, একটু বসে
যান।’ খানিক পরে ডাক পড়লো, রেজিস্ট্রারের ঘরে নয়, খোদ ভাইস চ্যান্সেলারের ঘরে।
সেখানে বড়ো এক মিটিং চলছে। টেবিলের কাছে পৌঁছোবার আগেই তিনি বললেন, ‘বিখ্যাত হলে
কি ক্লাসমেটকে ভুলে যেতে হয়?’
তিনি শঙ্কর সেন, পরে বামফ্রন্টে বিদ্যুৎমন্ত্রী
হয়েছিলেন। আমার ক্লাসে অবশ্যই ছিলেন না – হয় আগের, না হয় পরের। যা-ই হোক, বললেন,
‘ওই সার্টিফিকেটটা লাগবেই, দুই বছরের মধ্যে কোনো একদিন এনে দিও।’
বেঙ্গল ল্যাম্পের বাসস্টপে নেমে ফটক দিয়ে ঢুকে
বাঁ-দিকে প্রথম যে তিনতলা বাড়িটা, তার দোতলায় আমাদের বিভাগ। তিনতলায় ইংরিজি আর
বাংলা। প্রথম দিন গিয়ে দেখি, গিজগিজ করছে ছাত্রী; ছাত্র চোখেই পড়লো না। যে-ভদ্রলোক
আমার কাগজপত্র দেখে লিখে-টিখে নিলেন, পরে জেনেছি তিনি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার
মতো তিনিও 888sport apk শাখা থেকে এসে এখানে পড়ে ডক্টরেট করে অধ্যাপক হয়েছেন।
ছোট ছোট ক্লাসরুম। চারটে কি পাঁচটা বেঞ্চির সারি।
ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রী যদি একদিনে আসতো, তবে বোধহয় স্থানসংকুলান হতো না। তা কখনো
আসে না। কারণ, উপস্থিতির হিসাব, যাকে পার্সেন্টেজ বলে, তা রাখা হয় না, রোলকল বলে
কিছু নেই। অরুণ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে সুমনকে ক্লাসে কোনোদিন দেখিনি। সে অবশ্য
আমেরিকা চলে গেছিলো বলে পরীক্ষা দিয়েছিলো পরের বছর। মাস কয়েক পরে একটি ছেলের সঙ্গে
বারান্দায় আলাপ হয়েছিলো। সে আসানসোলে চাকরি করে, এখানে নাম-লেখানো ছাত্র।
প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসে কিন্তু নাম ডাকলেন
অধ্যাপিকা। যারা এখানেই বি.এ পাশ করেছে, তারা সবাই তো তাঁর চেনা, নতুনদের চেনবার
জন্যে নাম ডাকা। সুধীন্দ্র সরকার নামে ইয়েস প্লিজ বলায় তিনি চমকে চোখ তুলে
তাকালেন। তাঁর জানা ছিল, বাদল সরকার ভর্তি হয়েছে, ইনি আবার কিনি?
তুলিকা নামে একটি মেয়ে আমার প্রথম দিনের
বিভ্রান্তি অনুভব করে নিজে থেকে আমার সঙ্গে ভাব করে নানাবিধ সাহায্য করলো।
‘ক্লাসমেট যখন, তখন তুমিই বলবো?’ পরে সকলেই তুমি বলতো। আজকাল অবশ্য এইটাই রেওয়াজ।
আমাদের ‘শতাব্দী’র প্রবীণরা এখনো আমায় ‘আপনি’ বলে, ছোটরা বলে ‘তুমি’।
তুলিকা আমায় লাইব্রেরি, রেফারেন্স লাইব্রেরি,
ক্যান্টিন – সব চিনিয়ে দিলো। মেয়েটির দুটি গুণ – খুব ভালো গান করে আর আশ্চর্য রকম
মানুষের নকল করতে পারে। অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের কথাবার্তা ভাবভঙ্গি এমন সুন্দর নকল
করেছে, আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি।
নবনীতা দেবসেন প্রথম ক্লাস নিতে এসেই বললেন,
‘আপনি ক্লাসে থাকলে ভয় করে মশাই।’ আমি
বললাম, ‘ভয়ের কোনো লক্ষণ তো দেখছি না আমি?’
প্রফেসর অমিয় দেব অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ পড়াবেন। প্রথম দিনে জানতে চাইলেন – নাটকটা
888sport app download apk latest versionে কে কে পড়েছে। সুনীল চট্টোপাধ্যায়, অর্থাৎ পল্টুদার কাছ থেকে ধার করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সংস্কৃত নাটকের 888sport app download apk latest version পড়েছিলাম, একমাত্র আমিই হাত তুলেছি। উনি বললেন, ‘ইউ
আর এক্সেম্পটেড স্যার।’ যাববাবা, কী ধারণা করে রেখেছেন আমার সম্বন্ধে এঁরা? এদিকে
পড়ায় অনেক খামতি আছে বলেই তো ভর্তি হয়েছি এখানে।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, মাত্র দুজনের পড়ানো
ভালো লেগেছে আমার। একজন নবনীতা দেবসেন, কিন্তু তিনি ক্লাস নিতে খুব কমই আসতেন। অথচ
তাঁর নামেই বুদ্ধদেব বসু প্রতিষ্ঠিত এই বিভাগের যেটুকু আন্তর্জাতিক খ্যাতি। অন্যজন
শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বয়স অল্প। তিনি ক্ষয়রোগে আক্রান্ত, তবু পঞ্চাশ-ষাটটা
সিগারেট খান দিনে, নিয়মকানুনের পরোয়া না করে এক ঘণ্টার ক্লাসেই গোটা তিনেক খেতেন।
তিনি বাংলা কাব্য পড়িয়েছেন – রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ ইত্যাদি, আবার ইংরিজি
শেক্সপিয়র, ড্রাইডেন, মলিয়ের, রাসিন, কর্নেই – ওঁদের নাটকও পড়িয়েছেন। বাংলা পড়াবার
সময় একটাও ইংরিজি শব্দ ব্যবহার করতেন না, শিক্ষিত বাঙালির পক্ষে এটা দুঃসাধ্য কাজ।
হয়তো কোনো ছাত্রীকে একটা প্রশ্ন করেছেন, সে তো ইংরিজি মাধ্যমে পড়েছে, একটা বাক্যের
মধ্যে তিনটে ইংরিজি শব্দ। ‘ওটার কোনো বাংলা প্রতিশব্দ নেই?’ মেয়েটি দিশেহারা।
তারপর আমাদের মাথার ওপর দিয়ে জানলার বাইরে চোখ রেখে বলতেন, ‘একটা ভাষাহীন প্রজন্ম
তৈরি হয়েছে – না বাংলা, না ইংরিজি। পরের প্রজন্মেও কিছু হবে না, তার পরের প্রজন্মে
যদি কোনো বদল হয়।’
শিবাজীর পড়াবার গুণে পড়বার ইচ্ছে তৈরি হতো, না
পড়ার জন্যে লজ্জাবোধ আসতো। এইটাই তো অধ্যাপনার প্রধান গুণ। 888sport app download apk পড়ায় আমার বেশ
অনীহা আছে, বিশেষ করে ইংরিজি 888sport app download apk। সঞ্চয়িতারও
অর্ধেক 888sport app download apk পড়া ছিল না। শিবাজীর পড়ানোর খোঁচায় প্রতিজ্ঞা নিয়ে বসে বইটার সব কটা
888sport app download apk টেনে পড়েছি।
লাইব্রেরি থেকে বই নেওয়ার চেষ্টা করা দেখলাম
বৃথা। সকালে খেটেখুটে ক্যাটালগের কার্ড ঘেঁটে খান চার-পাঁচ বই স্লিপে লিখে জমা
দিলাম, বিকেলে গিয়ে তার একটাও পেলাম না। অগত্যা লাইব্রেরির একতলার আর দোতলার তিনটে
রেফারেন্স লাইব্ররিতে গিয়ে বসে পড়তাম। আমাদের একতলার বিভাগীয় লাইব্রেরি থেকে অবশ্য
বই নেওয়া যেতো, এখানে বসে পড়াও চলতো। ন্যাশনাল লাইব্রেরির বাড়ির ভিতর আজ অবধি
ঢুকিনি, একবার একজন নিয়ে ওখানকার ক্যান্টিনে চা খাইয়েছিলো। তেমনি রামকৃষ্ণ মিশন,
ম্যাক্সমুলার ভবন – ওসব লাইব্রেরিতে পদার্পণ করিনি। অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা রেফারেন্স
বই বলে লম্বা লিস্টি দিতেন প্রতি বিষয়ে, দুদিন পরে আমি সেসব নাম টুকতামও না, আর
জানি তো যাবো না কোনোদিন ওসব লাইব্রেরিতে। আমার তো শুধু বই পড়তে ভর্তি হওয়া।
ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার কথাও ভাবিনি তখন। বেশির ভাগ সাধারণ ছাত্রী বাছাই করতো – এই
এই বড়ো 888sport alternative link বাদ দেওয়া যায় বিকল্প প্রশ্নের ভরসায়, আর আমি কোনো লেখকের একটা বই
পাঠক্রমে থাকলে তাঁর অন্য বইও যতোটা পারি জোগাড় করে পড়ে যেতাম। এমনি করে জেন
অস্টেন, ডস্টয়েভস্কি, কাফকা প্রমুখ লেখকের বেশ কটা বই পড়া হয়ে গেলো। আবার
রেফারেন্স লাইব্রেরিতে বসে বাংলা গল্প-888sport alternative linkও পড়েছি, যা আগে পড়া ছিল না।
গ্রিক নাটক – একটা নতুন জগৎ। খুঁজে পেতে, ধার
করে, উপায়ান্তর না থাকলে কিনে পুরো বত্রিশটা গ্রিক ট্র্যাজেডি পড়ে ফেলেছি।
অ্যারিস্টোফেনিসের নাটক আমাদের কোর্সে ছিল না, তাঁরও সব কটা কমেডি পড়েছি।
শেক্সপিয়রের তিনটে নাটক ছিল সিলেবাসে, উঠেপড়ে আরো পড়েছি, কিন্তু সব কটা পড়ে ওঠা
হয়নি। পরীক্ষার পাট চুকে গেলে বাকিগুলো বাকিই রয়ে গেলো।
মহাকাব্য – আর এক দুনিয়া। কৃত্তিবাসের রামায়ণ আর কাশীরাম দাসের মহাভারত পড়া ছিল আগে। রাজশেখর বসুর
সংক্ষিপ্ত দুটোও। সেগুলোর আয়তন দেখে ধারণা হয়েছিলো, মহাকাব্য মানেই এ রকম ওজনের
বই। আবিষ্কার করলাম – ইলিয়াড আর ওডিসি মাত্র তিন-চারশো পাতার বই।
জার্মান এপিক নেবুলুঙ্গেনলিয়েড,
আগে নামই শুনিনি। নামটা আয়ত্ত হওয়ার আগে ওটাকে নিজের মনে ‘নেবুলঙ্কা’ করে
নিয়েছিলাম। সেও বেশি বড়ো নয়। ডন
কুইক্সোটে, যেটার নাকি প্রকৃত উচ্চারণ ডন কিহোটে, তার অতি সংক্ষিপ্ত রূপ
বাংলা 888sport app download apk latest versionে পড়েছিলাম। এখন দুটো খন্ডই পড়ে ফেললাম, হাজার দুই পাতা। পড়ে দেখলাম,
দ্বিতীয়টা অনেক বেশি ভালো প্রথমটার চেয়ে। ভিক্তোর হুগো যে কবিও বটে – সে-কথা
এখানেই প্রথম জানলাম। তাঁর 888sport app download apkই শুধু ছিল কোর্সে। কিন্তু আমি হাঞ্চ ব্যাক অব নোতরদাম 888sport alternative linkটা পড়ে
ফেললাম। গ্যেটে, শিলার – এসব কি পড়তাম কোনোদিন? হেনরি ফিল্ডিংয়ের নামই শুনিনি, টম
জোন্সকে লন্ডনে অনেকদিন আগে সিনেমায় দেখেছিলাম। সিলেবাসে ছিল না, তবু পড়ে ফেললাম,
আটশো পাতার 888sport alternative linkটা।
গ্রিন পার্কের বাসায় থাকার সময়ে কালিন্দী হাঁটা
পথ, সেখানে অধ্যাপক বিষ্ণু বসুর বাড়ি। উভয়ত যাতায়াত ছিল। তাঁর বইয়ের সংগ্রহ বিপুল,
সেখান থেকে অনেক বই ধার করেছি। পল্টুদার কাছ থেকেও।
মাঝখানে ঘা পড়লো। ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে পটল
তোলার অবস্থা হলো। আটদিন জ্ঞান নেই, ‘কোমা’ যাকে বলে। তবু যে মরিনি, তার একটা কারণ
– বাইরে যতোই দুবলা চেহারা হোক, শরীরের ভিতরে কলকব্জা মজবুত। হৃৎপিন্ড সতেজ,
রক্তচাপ স্বাভাবিক, রক্তে মিষ্টতার আধিক্য নেই। অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সের যাবতীয় রোগ
আমাকে অস্পৃশ্যজ্ঞানে ত্যাগ করেছিলো। দ্বিতীয় কারণ বোধহয় চিকিৎসা888sport apkের
অগ্রগতি।
বেঁচে ফিরলেও অনেক কিছু মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতো
পারতো, এমনকি মস্তিষ্ক জখম হয়ে জড়বুদ্ধি হয়ে যাওয়াও। সে-কথা শুনে মনু ভেবেছিলো,
তার থেকে বাদলদার মরে যাওয়াই ভালো। ঠিকই ভেবেছিলো। এসব কিছু হয়নি, জরিমানা গেছে
ফুসফুস।
নতুন করে হাঁটতে, সিঁড়ি ওঠানামা করতে শিখছি,
যাদবপুরে ক্লাস করতে যাওয়ার প্রশ্ন নেই, পড়াশুনোরও না। দুমাস তুবুলের আতিথ্যে
কাটিয়ে আবার প্যারী রো। প্রথম বছরের বার্ষিক পরীক্ষাটাও দিতে পারিনি, নাইন্থ
পেপারে চল্লিশ নম্বর ওটার জন্যে থাকে।
সুস্থ হলে গেলাম একবার। প্রফেসর অমিয় দেব তখন
বাংলা-ইংরিজি তুলনামূলক 888sport live footballের ডিন। জিজ্ঞেস করলাম, আগামী বছরের ক্লাসে ভর্তি
হওয়া সম্ভব কি না। শুনলাম – সিলেবাস বদলে যাবে, এবারই বসা ভালো, ও চল্লিশ নম্বরের
মায়া ছেড়ে। তাতে অসুবিধে নেই, আমি তো তখনো পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তই নিইনি।
মানিকতলা থেকে যাদবপুর, শরীরটাও মজবুত নেই,
প্রচুর কামাই। শুধু শিবাজী ব্যানার্জির ক্লাস থাকলে যেতাম। আর নবনীতা দেবসেনের।
একদিন দুটো নাগাদ তাঁর ক্লাস ছিল। বার্ষিক ‘ফেস্ট’ চলছিলো, মিনিট কুড়ি বসে থেকে
মেয়েরা সব চলে গেলো, সেখানে রইলাম শুধু প্রাণি888sport apkের ছেলেটি আর আমি। খানিক পরে
সেও বেরিয়ে গেলো, আমি লাস্ট বেঞ্চে জানালার কাছে বসে নভেল পড়ছি, এমন সময় নবনীতার
আবির্ভাব। অন্য ছাত্রটিকেও পথে পেয়ে ধরে এনেছেন। ‘এর মধ্যে সবাই চলে গেলো কেন?’ এক
ঘণ্টার ক্লাসের আধঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর এই প্রশ্ন। ভাবলাম, এবার উনিও যাবেন। তা
না, আমাদের প্রথম সারিতে বসিয়ে গল্প করতে শুরু করলেন। এমনি করে ঘণ্টা কাবার হলো,
আমি স্টেশনের রাস্তা ধরলাম।
ওখানে ছাত্রী যারা ছিল, এমনকি খুব ভালো ছাত্রী,
যারা ফার্স্ট ক্লাস পাবেই, তাদেরও আসল লক্ষ্য পরীক্ষার নম্বর। 888sport live footballের প্রতি অনুরাগ
বিশেষ দেখিনি। এবং ইন্দ্রজিৎ এককালে ঐচ্ছিক বিষয় ‘মডার্ন ইন্ডিয়ান লিটারেচারে’
ছিল, পরে সেটা ফেলে দিয়ে উৎপল দত্তর নাটক নেওয়া হয়, তাও মৌলিক রচনা নয়। ইংরিজি
নাটকের ভাবানুবাদ। তিনতলার বাংলা বিভাগে অবশ্য ছিল তখনো।
ভর্তি হওয়ার পরে ছাত্রীদের প্রশ্ন ছিল – আমি এম.ফিল
করবো কিনা, পিএইচডি করবো কিনা ইত্যাদি। একবার গিরিশ কারনাড এসেছে কলকাতায়, সেদিন
সন্ধ্যায় প্রতিভা অগ্রবালের বাড়িতে নাট্যকর্মীদের জমায়েত। বিভাগীয় লাইব্রেরিতে
কিছু ছাত্রীর সঙ্গে দেখা, তার মধ্যে ফার্স্ট ক্লাস পানেওয়ালি দেবালীও আছে। সে
আধুনিক ভারতীয় 888sport live football নিয়েছিলো, যেটায় গিরিশের তুঘলক নাটকটা আছে। দুষ্টবুদ্ধি চাপলো, বললাম, ‘তোমাদের তুঘলক নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে? গিরিশের
সঙ্গে সন্ধেতে আমার দেখা হবে, জেনে নিতে পারি।’ শুনে কী উৎসাহ! দেবালী বললো, ‘তুমি
গিরিশ কারনাডকে চেনো? আমাদের সঙ্গে আলাপ হয় না?’
আসরে গিয়ে গিরিশকে বললাম, ‘তোমার সৌজন্যে আমি
‘রিফ্লেক্টেড গ্লোরি’তে উজ্জ্বল হতে পেরেছি আজ।’ গল্পটা শুনে গিরিশ বলো, ‘ও তো
আমার লেখার জন্যে নয়, ও হলো আমার ছায়াছবির ‘ইমেজ’।’
দেবালী শতকরা চৌষট্টি নম্বর পেয়ে স্কলারশিপ নিয়ে
আমেরিকায় চলে গেছিলো। এখন কোথায় আছে, কী করছে জানি না।
তবে হ্যাঁ, একদিন আমার অনুরোধে পড়ে দেবালীসমেত
ওদের কয়েকজন লিন্ডসে স্ট্রিটে সিন্ধুভবনে আন্দ্রোক্লিস
ও সিংহ দেখতে এসেছিলো। পরদিন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেলাম। ‘সিংগু পিংগু আমার
সোনা সিংগু’ গানটা ওদের কাছে ‘হিট সং’ হয়ে গেছে।
দিন পিছিয়ে আমাদের পরীক্ষাটা ১৯৯১ সালে না হয়ে
বিরানববইয়ের জানুয়ারিতে হলো। একানববইয়ের পুজোর পর আমি পরীক্ষায় বসা ঠিক করেছি। তখন
মাথায় হাত – সেই মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট! সেটার কথা তো ভুলে মেরে দিয়েছিলাম। একবার
ভাবলাম, চুলোয় যাক পরীক্ষা। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একটা ঝোঁক চেপে যায়। গেলাম
এক সকালে বি.ই. কলেজে।
অদলবদল এতো হয়েছে আমাদের আমলের পরে যে
রেজিস্ট্রারের অফিস খুঁজে বের করতেই অনেক সময় লেগে গেলো। তারপর পাকা চুল, পাকা
দাড়ি টাক মাথা এক বৃদ্ধ এঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তুলনামূলক 888sport live footballে এম.এ পরীক্ষা
দেবে, এ-কথা বুঝতে আরো সময় লাগলো। এবার ডাকলেন তাঁর অফিসের এক নাট্যোৎসাহী
কর্মীকে, থিয়েটারের ধানাই-পানাই। ওদিকে আমার দুপুরের খাওয়ার সময় পার হয়ে যায়। শেষে
সেই কর্মীটিই আমাকে দোতলা না তেতলায় একটা ঘরে নিয়ে গেলো, সেখানে সব রেকর্ড থাকে।
আমি সাতচল্লিশে এঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছি, শুনলাম স্বাধীনতার আগের সব নথিপত্র ভস্ম
করে ফেলা হয়েছে। ভরসা এখন ১৯৫২-তে পাস করা টাউন প্ল্যানিং। তার সূত্র ধরে খোঁজ করা
যেতে পারে যদি আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা দিতে পারি। সে কি
মনে থাকা সম্ভব?
হাল ছেড়ে ফিরে এলাম, পরীক্ষা না দেওয়ার সঙ্গে
মানসিক মোকাবিলা করতে করতে।
কলেজ স্ট্রিটে সিনেট হলের পেছনে একটা ছোট্ট অফিস
ছিল তখন অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের। এখন তো সিনেট হলটাই নেই। তার কিছু কর্মী আমার
হট্টমালার ওপারে নাটকটা অভিনয়
করে প্রতিযোগিতায় প্রাইজ পেয়েছে। আমাদের থিয়েটার দেখতো খুব, যোগাযোগ রাখতো। কোনো
আশা না রেখেই সেই অফিসে গিয়ে সমস্যাটা নিবেদন করলাম। আশ্চর্য, আমাকে বসিয়ে রেখে
ওদের একজন দপ্তরের থলি খুঁড়ে আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বের করে আনলো! আমার পরীক্ষায়
বসার পথ পরিষ্কার হলো।
একদিন আমাদের বিভাগীয় পাঠাগারে এক সুন্দরীকে
দেখলাম, একজন পরিচয় করিয়ে দিলো। সে বছর তিন-চার আগে এখানে ছাত্রী ছিল, পরীক্ষার
আগেই বিয়ে করে কানপুরে চলে গেছে পতিগৃহে। এখন তার পরীক্ষাটা দেওয়ার বাসনা হয়েছে,
কিন্তু পাহাড়প্রমাণ সিলেবাস দেখে ঘাবড়ে গেছে। দুহাজার পাতার ডন কিহোটে কী করে সে পড়ে এখন? একটা
পাজি মেয়ে ‘বাদলদা সংক্ষেপে বলে দেবে’ বলে কেটে পড়লো, সেও কুটো অাঁকড়ে ধরছে।
সেইখানে বসে মিনিট কুড়িতে তাকে 888sport alternative linkটার সংক্ষিপ্তসার বোঝালাম। সে যে কী বোঝানো,
তা আন্দাজ করা শক্ত নয়। সে কিন্তু তৃপ্ত এবং বাকি দিন কটা কুটোটা ধরেই রইলো।
পরীক্ষার দিনগুলোয় দূর পথ পার হওয়ার ঝামেলা এড়াতে
আগের রাতে যোধপুর পার্কে কানু-মনুর বাড়িতে থাকতাম, যতোটা পারি নোট পড়তাম। সকালে
ওখানে খেয়ে হেঁটে কলেজে যেতাম পরীক্ষা দিতে। চার ঘণ্টার পরীক্ষা এক এক দিনে বেলা
বারোটা থেকে।
‘ভাইভা’র দিনে এক মজা। আমাকে অধ্যাপকরা কী প্রশ্ন
করেন, তা নিয়ে আমার কৌতূহল, অন্যদেরও। আমার পদবির আদ্যাক্ষরের কৃপায় সকালে গেলেও
আমার পালা আসবে বিকেলে। কানুপুরবাসিনীর পালা তারও পরে, যদিও তার নাম-পদবি ভুলে
গেছি। সে তো বেরিয়ে আসা অন্যদের কাছে প্রশ্নাদি শুনে আমাকে পাকড়াও করে উত্তর জানার
চেষ্টা করে চলছে ক্রমাগত।
বিকেলের দিকে আসর প্রায় ফাঁকা, তখন ডাক পড়লো
আমার। ওনারা মাথা খাটিয়ে প্রথমদিকে প্রশ্ন করার ভার দিয়েছেন এক্সটার্নাল
একজামিনারকে। যেহেতু আমাদের পরিচয় ছিল না, তিনি সাহস করে আমায় প্রশ্ন করতে পারবেন
বলে। সেসব চুকে গেলে বিভাগের অধ্যাপকদের প্রশ্ন শুধু একটাই – ‘আপনি তো এখানে
পড়লেন, পাঠক্রমে কী কী বদলানো যায় আগামী দিনে, একটু বলুন।’ তার আমি কী জানি?
কিন্তু ওটাই ওঁদের চাল।
বেরিয়ে দেখি – দু-তিনজন মাত্র বাকি, তার মধ্যে
কাঁদো কাঁদো মুখে সেই মেয়ে। আমাকে রিহার্সালে যেতে হবে, বাধ্য হয়ে ওকে একা ফেলে
চলে যেতে হলো। তখন কাঁদেনি, কিন্তু পরে শিবাজীর মুখে শুনেছি, সে ঘরে ঢুকে কোনো
প্রশ্ন শোনার আগেই ভ্যাঁ করে কেঁদে দিয়েছে। শিবাজী বললেন, এ ঘটনা নাকি নতুন কিছু
নয়।
যা-ই হোক, সে মেয়ে কিন্তু পাস করে গেছিলো। পরে
কানুপুর থেকে চিঠি লিখেছিলো। তার পতিদেবতা কানপুর আইআইটিতে পড়ায়, দুজনের হয়ে তার
নিমন্ত্রণ – একবার যদি যাই ওদের আতিথ্যে দু-চার দিন কাটাতে। যাওয়া অবশ্য হয়নি।
এলোমেলো ঘাঁটছি কাসুন্দি, তাই পরীক্ষার আগের কিছু
চুটকি গপ্পো এখানেই করা যেতে পারে। আমি দুপুরে গেটের বাইরে এক ঝুপড়ির দোকানে টোস্ট
ডিম ভাজা খেতাম, মাঝেমধ্যে ক্যান্টিনেও যেতাম খেতে। সেখানে আলাপ হয়েছিলো আমার আগের
বছরের এক ছাত্রের সঙ্গে। সে মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। যথারীতি নাম ভুলে
গেছি, মনে হয় তালব্য শ দিয়ে আরম্ভ তার নাম, ‘শ’ বলেই চালাই। সে তার বাবার গল্প
বলেছে কিছু মজার মজার। ভদ্রলোকের ব্লাড সুগার ছিল। বাজার করে ফেরার সময় থলিতে একটা
ক্যাডবেরি চকোলেটের ছেঁড়া মোড়ক পাওয়া গেলো একদিন। বাড়ির লোক চেপে ধরেছে, তিনি
বললেন, ‘ফ্যালাইয়া দিছিলাম তো, আবার থলির মধ্যে ক্যামনে আইলো?’ অর্থাৎ দুষ্কর্মটা
তিনি বাজারে গেলেই করে থাকেন, আজ কপালদোষে খোসাটা উড়ে থলিতে আটকেছে।
তিনি আর তাঁর এক সহকর্মী নিমন্ত্রিত হয়ে নরওয়েতে
গেছেন এক সেমিনারে। মিডনাইট সান দেখার উদ্দেশ্যে উত্তরাঞ্চলে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে
মধ্যরাতের সূর্য দেখতে দেখতে ফেরার বাস ছেড়ে গেছে। নির্জন জায়গা, একটা বাড়ির দরজায়
টোকা দিতে এক বৃদ্ধা বেরোলেন। তিনি দয়াবতী, আশ্রয় দিলেন, কিন্তু বললেন – আর কিছু
নেই, ডিম ভেজে দিতে পারেন। এটা পরম ভাগ্য তাঁদের, কিন্তু ‘শ’-এর পিতা সেই অমলেট
খেয়ে বললেন, ‘এইডা কী খাইলাম? এতো আমাগো পাইকপাড়াতেই পাওন যায়, এর লেগ্যা নরওয়েতে
আইলাম?’
বাকি সব গল্প ভুলে গেছি, তবে জানি – সে-ছেলে
মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিয়ে সাংবাদিকতার পেশা নিয়েছিলো। ঢোকবার
কিছুদিন পরে উপরের রেফারেন্স লাইব্রেরিতে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেছিলো এক সুন্দরী,
খানিকটা হিন্দি ছবির রাভিনা ট্যান্ডনের মতো চেহারা। সে নাকি আমার সহপাঠিনী।
অ্যাদ্দিন এলাহাবাদ না কোথায় ছিল বলে ক্লাস করতে আসেনি। আজ এসে আমার কথা শুনে
খুঁজে পেতে আলাপ করতে এসেছে। ব্যস, তারপর আর পাত্তা নেই তার। শুনলাম, কমপ্লিট পাস
করে চাকরির কোনো আশা নেই বলে সে একটা কম্পিউটার কোর্স নিতে গেছে। সুতরাং, আমার
থেকে এক বছর জুনিয়র হয়ে গেলো সে। এই মেয়ের নাম শর্মিষ্ঠা। এর আর মৌসুমীর নাম আগে
করেছি আমার ছাত্রী বলে, সেই সুবাদে এরা আমার ছাত্রী। কারণ, এরা আর অন্য দুজন মেয়ে
আমার কাছে পড়তে আসতো, আমি যথাসম্ভব জ্ঞান বিতরণ করতাম নোট ঘেঁটে, ওদের তাতে কতোটা
কাজ হচ্ছে তার পরোয়া না রেখে।
তিনতলায় বাংলা বিভাগে শঙ্খ ঘোষ পড়ান, দারুণ ভালো
নাকি তাঁর পড়ানো। শুনেছি, তাঁর গলা খারাপ বলে ছাত্রছাত্রীরা চাঁদা তুলে একটা মাইক
কিনে দিয়েছিলো তাঁকে। খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর ক্লাস করি একদিন, কিন্তু হয়ে ওঠেনি। একদিন
যাদবপুর স্টেশনে পৌঁছেছি, বাংলা বিভাগের একটি মেয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বললো। সে
আমায় চেনে। বললো, সে শঙ্খবাবুর ক্লাস করতে যাচ্ছে। এই সুযোগ, সময়টা জেনে নিলাম।
সময়মতো সিঁড়ি দিয়ে উঠছি, দেখি শঙ্খবাবুও উঠছেন। প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
মহোৎসাহে বললাম, ‘আপনার ক্লাস করতে।’ দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি, বললেন, ‘তবে আমি ক্লাস
নিতেই যাবো না।’ ব্যাপারটা বুঝতে আমার সময় লেগেছে। বললাম, ‘কিন্তু আমাকে তো আমাদের
বিভাগের সবাই পড়ান?’ জবাব এলো, ‘ওদের সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।’ যখন বুঝলাম
তিনি দৃঢ়সংকল্প, তখন বাধ্য হয়ে নেমে আসতে হলো।
নিয়ম অনুসারে দুবছর অন্তর বিভাগীয় প্রধানের বদল
হয়। বাংলার সুবীরবাবু তখন প্রধান, তাঁর সঙ্গে আমার খুব হৃদ্যতা ছিল। সোজা তাঁর ঘরে
গিয়ে গরম হয়ে তাঁর কাছে নালিশ জানালাম, ‘শঙ্খবাবু আমাকে তাঁর ক্লাসে ঢুকতে দেননি।
আর বলেছেন, আপনাদের সাহস দেখে তিনি অবাক হয়ে যান।’ সুবীরবাবু খুব মজা পেলেন,
বললেন, ‘তবে তো তাঁকে কাপুরুষ বলতে হয়?’ বললাম, ‘বলবেন তো ওঁকে!’
শিবাজীর মুখে শোনা গল্প। নবনীতা দেবসেন, অমিয় দেব
আর মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তুলনামূলক 888sport live footballে সহপাঠী ছিলেন গোড়ার দিকে।
নবনীতার স্বভাব, তাঁর গল্পে চেনা লোকের কথা ঢোকানো। কোনো এক গল্পে লিখেছেন – তাঁর
অমুক বইটা পাচ্ছেন না, বোধহয় মানবের কাছে আছে। তাই নিয়ে তুলকালাম কান্ড। মানববাবু
চ্যাঁচাচ্ছেন, তাঁর কাছে মোটেই নেই। নবনীতা বলছেন – আহা্, ওটা তো উনি কমপ্লিমেন্ট
হিসেবে লিখেছেন, ও ধরনের বই মানব ছাড়া কে পড়তে চাইবে? মানববাবুর উষ্মা কমে না।
শেষে নবনীতা বললেন, ‘বেশ করেছি লিখেছি, শালা কী করবি?’
কিছু ক্লাস নবনীতার ছোট্ট ঘরটায় হতো, আমরা চেয়ার
ভাগাভাগি করে বসতাম। পোপের কাব্য পড়াচ্ছেন। ‘পোপ বলছেন – দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষের
নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র আছে, তার বাইরে যেন কেউ না যায়। যেমন : তুমি নবনীতা দেবসেন,
নাটক লিখতে যেও না, ওটা বাদল সরকারের ওপর ছেড়ে দাও। তুমি গল্প লিখছো, তাই লেখো।’
পাশেই বসা আমার দিকে না তাকিয়ে খুব অনায়াসে বলে গেলেন এসব।
পরীক্ষার ফল বেরোলো। দেবালী আর রিনা ফার্স্ট
ক্লাস। সেকেন্ড ক্লাসে দুটি মেয়ের পর আমি। ৫৪.৩%, পাঁচ নম্বরি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.