সমরজিৎ রায় চৌধুরী
১৯৫৫ সালে গভর্নমেন্ট. ইনস্টিটিউট অব আর্টসে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর 888sport live chatগুরুর দর্শন লাভ করি। অতি সুদর্শন ও দীর্ঘদেহের অধিকারী 888sport live chatগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ ছিলেন সে-সময়ে বয়সে যুবক। চলনে-বলনে গুরুগম্ভীর ভাব ছিল তাঁর সর্বাঙ্গে। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্যে তিনি ছিলেন অনন্য। আমি যখনই যেখানে তাঁকে দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে – এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। কথা বলতে ভালোবাসতেন, তবে বেশ ধীরে ধীরে মেপে মেপে কথা বলতেন।
888sport live chatগুরুর সময়কালকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম পর্যায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায় পরবর্তী ২০ বছর অর্থাৎ ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং শেষ পর্যায়টি মৃত্যু পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত।
প্রথম পর্যায়ে আমরা দেখেছি তাঁর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্ব, পরস্পর সম্পর্কের পরিমাপ, সততা, পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা – এগুলো ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ। সেকালে যে-কেউই তাঁর দর্শন বা সান্নিধ্যলাভ থেকেই চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে উপলব্ধি করতে পারতেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি নিজেকে একটু দূরত্বে রেখেই চলতেন। তখন তাঁকে বেশ কঠোর ও কঠিন মনে হতো। সে-সময়ে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সামান্যতম
অন্যায়-অভিযোগও তিনি বেশ তির্যকভাবে দেখতেন, প্রতিবাদ করে শাসাতেন। সে-সময়ে ইনস্টিটিউটে তাঁর ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা ধীরস্থিরভাবেই চলাফেরা করতো। যদিও প্রায় সব শিক্ষকই এরূপ আদর্শবান ছিলেন, তবু 888sport live chatগুরু সফিউদ্দীন ছিলেন অন্যদের চাইতে একটু ব্যতিক্রম। সামান্যতম অন্যায়কেও তিনি কঠিন স্বরে শাসিয়ে দমিয়ে রাখতেন। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর প্রতিটি শাসনে সূক্ষ্ম রসিকতাও থাকতো। সূক্ষ্ম লজ্জা দিয়ে সতর্ক করে দিতেন। ৫০ বছর বয়সের পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আন্তরিক হতে থাকেন। যেমন কঠোরের পরিবর্তে কোমল হওয়া। কথার মধ্যে শাসন ও রসিকতা দুটোই থাকতো। তবে কঠিন শাসন কমে এলো। আন্তরিক হতে থাকলেন, কিন্তু আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে নয়। ১৯৫৭ সালের দিকে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যান। দুবছর পর অর্থাৎ ’৫৯-৬০-এর দিকে print making-এ বিশেষ করে রঙিন লিথোগ্রাফিতে সম্মানের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফেরেন। তখন তাঁর বয়স ৪০-৪২ হবে। দেশে ফেরার পর তিনি চলনে-বলনে আরো বেশি ছিমছাম হয়ে গেলেন। আরো বেশি মেপে মেপে কথা বলতে লাগলেন। ইতোমধ্যে প্রথমদিকের ছাত্রদের অনেকেই এ-ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। 888sport live chatগুরু তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে বন্ধুভাবাপন্ন হলেন। তাঁর কথাবার্তা, পোশাক-আশাক, রুচিবোধ – সবই ছিল 888sport live chatসম্মত ও ঈর্ষণীয়।
আমরা যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন তিনি আমাদের শ্রেণিশিক্ষক ছিলেন। আমরা আগে থেকেই জেনেছিলাম – তিনি ভীষণ কঠোর প্রকৃতির। প্রতিদিন outdoor-এ গিয়ে sketch করে এনে দেখাতে হতো। তাঁর তীব্র ভৎর্সনার ভয়ে আমরা সবাই তাঁর নির্দেশমতো কাজ করতাম। তিনি শ্রেণির প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে কাজের প্রতি যত্নবান হতে বলতেন। বলতেন – ‘ড্রইং নিখুঁত হওয়া চাই’। সাজানো বিষয়বস্ত্তর গায়ে আলো-ছায়ার পার্থক্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে বলতেন। দেখেছি কী আন্তরিকভাবে তিনি ছাত্রছাত্রীদের পেছনে সময় ব্যয় করতেন। 888sport live chatকর্ম যে জীবনের একটি বিশেষ অঙ্গ, তা তিনি সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে শেখাতেন। তিনি বলতেন, মনপ্রাণ দিয়ে কষ্ট না করলে ছবি অাঁকা শেখা যায় না।
শিক্ষক সফিউদ্দীন ছিলেন এক ভিন্ন ধরনের মানুষ। পর্যবেক্ষণ, অনুভব, কাজের প্রতি স্পৃহা – এগুলো থাকলেই সাফল্য। তিনি আজীবন ছাত্রছাত্রীদের তা-ই বলেছেন। তিনি ছিলেন একজন perfectionist; ত্রুটিপূর্ণ কোনো কাজই তিনি পছন্দ করতেন না। শ্রেণিতে পেছনে দাঁড়িয়ে তিনি নির্দেশ দিতেন। এভাবে প্রতিদিন তিনি কাজ করাতেন ও দেখতেন। তিনি সারাক্ষণ ক্লাসেই থাকতেন। শিক্ষক ক্লাসে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে – এই জ্ঞানটি আমরা তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি ও শিখেছি। ইনস্টিটিউটে আমরা কখনো তাঁকে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। তিনি কাজের প্রতি বেশ যত্নবান ছিলেন। অপচয়কে ঘৃণা করতেন। কাজ করা ও দেখা দুটোতেই তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান। অতি যত্নে কাজের ওপর হাত বুলিয়ে কাজের নানান দিক নিয়ে কথা বলতেন – যেমন, কম্পোজিশন, আলো-ছায়া, রঙের প্রলেপ, ব্রাশিং, ড্রইং এসব নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করতেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটি ছিল পরম শিক্ষা। বড় বড় 888sport live chatীর নাম বলেও – যেমন ড্রইং ও জলরঙে বসন্ত গাঙ্গুলী, এচিংয়ে রমেন চক্রবর্তী প্রমুখ – তাঁদের কাজ সম্পর্কে উদাহরণ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতেন। এটি ছিল তাঁর সহজাত প্রকৃতি। এখন বুঝতে পারি, কেন তিনি এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করে কথা বলতেন। এতো বড়মাপের চিত্র888sport live chatী হওয়ার পেছনে তাঁর নিষ্ঠা, সততা, দৃঢ়চেতা ভাবটিই মুখ্য কারণ বলে এখন আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তিনি বলতেন, যা করবে মন-প্রাণ দিয়ে করবে – nature study যখন করবে, vividly copy করবে। এখনো মনে পড়ে, আমার ছাত্রাবস্থায় তিনি আমাদের এভাবেই উপদেশ দিতেন। ১৯৯৭ সালে এশিয়ান বিয়েনালের প্রদর্শনীতে আমার কাজ দেখে তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন – ‘সব সময়ে এভাবে কাজ করো। পরিশ্রমের ফল পাবে।’
তিনি অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দিতেন না। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এমনকি 888sport live chatাচার্যের সঙ্গে অনেক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে; কিন্তু কখনো মনান্তর হয়নি বা সম্পর্কের ছেদ ঘটেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন এক সৌম্য-সুন্দর মানুষ। তাঁর মুখোমুখি হতে গেলে আপনাতেই ভক্তি ও 888sport apk download apk latest versionয় মাথানত হয়ে আসতো। আমার পরম সৌভাগ্য, ১৯৯০ সালে 888sport appর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে তিনি আমার একক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। সে-প্রদর্শনীতে আমার কিছু এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্টের কাজ ছিল। তিনি সেগুলো দেখে কোথায়, কীভাবে করেছি জানতে চেয়েছিলেন। আমার পুত্র-কন্যারা কে কী করে তাও জানতে চেয়েছেন। আমার স্ত্রী এক সময়ে বেশ অসুস্থ ছিল। তখনো দেখেছি তিনি বেশ আন্তরিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন মাঝেমধ্যেই। এমনই একজন মানুষ ছিলেন 888sport live chatগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ।
888sport live chatগুরুর কাজ সম্পর্কে একটু না বললেই নয়। যদিও আমরা জানি যে, তিনি ছিলেন একজন great master printmaker। তাঁর wood engraving-এর কাজগুলো অসাধারণ। ইদানীং করা charcoal-এর কাজগুলোও তেমনি দেখার মতো, বিস্ময়কর। তাঁর কাজ দেখে বোঝা যায় – কত যত্ন করে তিনি কাজ করতেন। কাজে নানান technic-এর ছোঁয়াও দেখা যেত। মৃত্যুর বছরখানেক আগে বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে তাঁর চিত্রকর্মের বিভিন্ন মাধ্যমের একটি চমৎকার প্রদর্শনী হয়ে গেছে। তেলরঙেও তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিনের মুখেও তাঁর তেলরঙের সুখ্যাতি শুনেছি। 888sport live chatকর্মের প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর জুন মাসেও বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে তাঁর নানা মাধ্যমে অাঁকা অতীত-বর্তমানের 888sport live chatকর্মের একটি চমৎকার প্রদর্শনী হয়েছে।
তাঁর অনুসরণীয় আদর্শের কারণে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তি। তিনি আমাদের সবার কাছে ভালোবাসা ও 888sport apk download apk latest versionয় সিক্ত হয়ে থাকবেন। ৭০ বছর বয়সের পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে একজন ঋষির মতো হয়ে গেলেন। কথা বলা আরো কমিয়ে দিলেন। চিত্রকর্ম নিয়ে অল্পস্বল্প কথা বলতেন। অতীত 888sport sign up bonus রোমন্থন করতেন বেশি। আরো বেশি ছবি অাঁকতে লাগলেন। মগ্ন হয়ে গেলেন ছবিতে। হঠাৎ তাঁর মৃত্যুতে সব যেন কেমন হয়ে গেল। চিত্রকলাজগতে অন্ধকার নেমে এলো। আমরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর নিজের ভাবনা-চিন্তা ও কর্মে 888sport appsের চিত্রকলাকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে আলোকিত করেছেন তাঁর হৃদয়স্পর্শে। শোকাহত আমরা তাঁর এই কর্মনিষ্ঠ গুণের অনুসারী হয়ে ধন্য হতে চাই। তাঁর পরমাত্মা পরম শান্তি লাভ করুক – সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের এই প্রার্থনা।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.