আবুল আহসান চৌধুরী
বছর সতেরো আগে এক বিকেলে অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি তাঁর আশুতোষ চৌধুরী এভিনিউয়ের আবাসে। সেখানেই দেবকুমার বসুর সঙ্গে আলাপ। সেদিন সেখানে পি.ই.এন.-এর সভা ছিল। পি.ই.এন.-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন অন্নদাশঙ্কর, আর দেবকুমার তার সম্পাদক। অন্নদাশঙ্করই পরিচয় করিয়ে দিলেন। নানা বিষয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হলো দেবকুমারের সঙ্গে। আলাপের এক ফাঁকে তিনি জানালেন, ‘গ্রন্থ-জগৎ’ নামে তাঁর একটি বইয়ের দোকান আছে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায়, বইও ছাপেন। শুরু করেছিলেন দেশভাগের সামান্য আগেই, ১৯৪৬-এর শেষদিকে। প্রথমে পন্ডিতিয়া রোড, পরে ৬ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রিট, শেষে টেমার লেনে এসে থিতু হন। 888sport live football-সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। প্রায় ৪০ বছর ধরে দর্শক নামে একটি পত্রিকা বের করে চলেছেন। নিজেও লেখক – 888sport live-888sport app download apk লিখে থাকেন। তবে নিজের লেখার চাইতে নবীন লিখিয়েদের প্রেরণা জোগাতে – তাঁদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিতেই তাঁর বেশি আনন্দ। কলকাতার লেখকমহলে তাঁর খ্যাতি ও খাতির আছে। অনেক নামি লেখকেরই প্রথম বইয়ের প্রকাশক তিনি। এক্ষেত্রে নাম করতে হয় শক্তিপদ রাজগুরু, কুমারেশ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, তারাপদ রায় কিংবা বেলাল চৌধুরীর। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র আমার কথা (১৯৫৬) তিনিই প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, পরে তাঁর অনুমতি নিয়ে আনন্দ পাবলিশার্স নতুন করে ছাপে।
শিশুতোষ বইও তিনি প্রকাশ করেছেন। এই ধরনের একটি বই দিয়েই তাঁর প্রকাশনার হাতেখড়ি – সে-হলো ছোটদের ছবিঅলা রামায়ণ-কাহিনির ছোট্ট একখানা বই। কথায় কথায় তিনি জানালেন, এ-বইয়ের অলংকরণের কাজ করেছিলেন 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬)। খবরটি জেনে খুশি যেমন হলাম, পাশাপাশি আবার বিস্ময়ও জাগল মনে এই ভেবে যে, 888sport live chatাচার্যের এমন একটি কাজের কথা এতদিন আমাদের অজানাই থেকে গেছে। দেবকুমারকে চেপে ধরলাম এই বইয়ের একটি কপি পাওয়ার জন্যে। দেবেন বলে কবুল করলেন। যেতে বললেন একদিন টেমার লেনে তাঁর ‘গ্রন্থ-জগতে’। পাঠককে বিশ্বাস করতে হবে, পরিচয় হওয়ার পর সাত বছরে অন্তত বার কুড়ি তাঁর বইয়ের দোকানে গিয়েছি – আর ফোন যে করেছি কতবার তার কোনো লেখাজোখা নেই। সাক্ষ্য দেবেন আমাদের কবি বেলাল চৌধুরী – তাঁর সামনেও দেবকুমার বসুর সঙ্গে দরবার হয়েছে এই বইয়ের জন্যে। কোনোদিন গিয়ে দেখি বড়ো এক তালা ঝুলছে ‘গ্রন্থ-জগতে’র দরোজায়। আবার হয়তো কোনোদিন শুনি তিনি অসুস্থ, আজ আর আসবেন না। আবার কখনো-বা ফিরে আসতে হয়েছে এই কথা শুনে যে, তিনি এখন কলকাতার বাইরে সফরে আছেন। যে-কয়দিন তাঁকে ধরতে পেরেছি, কোনোবার হয়তো অমায়িক হাসি উপহার দিয়ে বলেছেন, ‘ভাই, দোকান-মেরামতের জন্যে সব বইপুস্তক বস্তা-বন্দি করে রাখা হয়েছে। ভাই না লক্ষ্মী, আর ক’টা দিন সবুর করো।’ কখনো শুনতে হয়েছে, ‘বুঝলে ভাই, এখন খুবই ব্যস্ত, পুজোটা বেরিয়ে না গেলে তো কিছু করা যাবে না!’ আবার হতাশ ভঙ্গিতে বিব্রত কণ্ঠে কখনো-বা বলেছেন, ‘ভাই রে, অনেকগুলো কপিই তো বান্ডিল-বাঁধা ছিল, কিন্তু এখন তো একটাও পাচ্ছি না। কোথায় যে ঢুকে আছে!’ এভাবেই আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দুলে প্রতিবারই কলকাতা-সফরে আমার হাতেগোনা দিনগুলো শেষ হয়ে যেত।
ধৈর্যহারা হয়ে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। মনে কিছুটা সংশয় ও ক্ষোভও জমেছিল। কিন্তু অবশেষে সবুরে মেওয়া ফলল। ২০০৪-এর নভেম্বরে কলকাতায় গিয়েছিলাম কয়েকদিনের জন্যে। ফলাফল শূন্য ধরে নিয়েই ৮ তারিখ সকালে ফোন করলাম। দেবকুমার কোনো ভূমিকা ছাড়াই একটু নাটুকে গলায় বললেন, ‘তোমার বই পাওয়া গেছে। কাল বিকেলে চলে এসো।’ এতদিনের নৈরাশ্যজনক অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে খবরটা একটু আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতই এবং সেইসঙ্গে যে খুশিরও, সে-কথা বলাই বাহুল্য। পরদিন বিকেল চারটেয় ‘গ্রন্থ-জগতে’ গিয়ে দেবকুমার বসুর কাছ থেকে বইটা সংগ্রহ করি। আনন্দ হলো এই ভেবে যে, 888sport live chatাচার্যের গ্রন্থ-অলংকরণের একটি অজ্ঞাত ও প্রায়-বিলুপ্ত নিদর্শন সম্পর্কে আলোকপাতের সুযোগ এবারে মিলবে।
দুই
বইটির নাম ছোটদের সচিত্র কৃত্তিবাস – কৃত্তিবাসী রামায়ণের অতিসংক্ষিপ্ত কিশোর-সংস্করণ। এখানে পরিবেশিত হয়েছে রামায়ণের চুম্বক-কাহিনি। এটি সংকলন করেছিলেন কল্যাণী দত্ত। ইনি ছিলেন কলকাতার বালিগঞ্জে দেশবন্ধুর স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত বাসন্তী দেবী কলেজের সংস্কৃতের অধ্যাপিকা। 888sport app download apk ও 888sport live লিখতেন – দুটি বইও বেরিয়েছিল। বছর দুই আগে এই নিঃসঙ্গ চিরকুমারী বিদুষীর মৃত্যু হয়েছে। বইটির অলংকরণের কাজ করেন সেই সময়ের কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলের শিক্ষক খ্যাতিমান চিত্র888sport live chatী জয়নুল আবেদিন। আখ্যাপত্রের পরিচিতিতে লেখা আছে – ‘সঙ্কলন/ কল্যাণী দত্ত ও জয়নুল আবেদিন/ চিত্রিত’।
ছোটদের সচিত্র কৃত্তিবাসের প্রথম প্রকাশ ১৯৪৭-এ। ‘গ্রন্থ-জগতে’র পক্ষে বইটি দেবকুমার বসু কলকাতার ৭-জে পন্ডিতিয়া রোড থেকে প্রকাশ করেন। কার্তিকচন্দ্র পালের প্রযত্নে কলকাতার ১ রাজেন্দ্র দেব রোডে অবস্থিত যোগমায়া প্রিন্টিং ওয়ার্কসে এটি ছাপা হয়। ১/৮ ডবল ক্রাউন সাইজের বইয়ের পৃষ্ঠা888sport free bet ১৬ এবং মূল্য ছিল এক টাকা। বইটির যে খুবই কাটতি হয়, তা বেশ বোঝা যায় এর দ্রুত সংস্করণের তথ্যে। এ-বইয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ মুদ্রণ প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৯৫১, ১৯৫২ ও ১৯৫৫ সালে। প্রথম প্রকাশের পরের সংস্করণগুলোতে পৃষ্ঠা-888sport free betও বেড়ে দাঁড়ায় ২২-এ।
তিন
ছোটদের সচিত্র কৃত্তিবাসের সংকলক অধ্যাপিকা কল্যাণী দত্তের অগ্রজ বিনয়কৃষ্ণ দত্ত ছিলেন জয়নুল আবেদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁর মাধ্যমেই প্রকাশক দেবকুমার বসু জয়নুলকে অলংকরণের অনুরোধ জানালে তিনি সানন্দে রাজি হন। খুবই অল্পসময়ে – মাসখানেকের মধ্যেই – জয়নুল ছবিগুলো এঁকে দেন। জয়নুলকে রামায়ণের সংকলিত অংশটুকু দেওয়া হয় ছবির বিষয়-নির্বাচনের জন্যে। কার্টিজ কাগজে চায়নিজ ইংক দিয়ে ছবিগুলো তিনি আঁকেন। কাহিনির অনুষঙ্গে মোট উনিশটি ছবি আঁকলেও একটি ছবির ওপর অসাবধানে কালি পড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আঠারোটি ছবি বইয়ের সঙ্গে ছাপা হয়। বইয়ের ভেতরের রাম-লক্ষ্মণের ছবিটি ব্যবহৃত হয় প্রচ্ছদে। একটি তথ্য গুরুত্বপূর্ণ যে, জয়নুল এই বইয়ের ছবি আঁকার জন্যে কোনো সম্মানী গ্রহণ করেননি।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, জয়নুলের আঁকা ছবিগুলো সে-সময়ে খুবই প্রশংসা পেয়েছিল। মূলত তাঁর ছবির কারণেই স্কুল-পর্যায়ের এই বইটি খুব ভালো চলে। প্রকাশক দেবকুমার 888sport app download for android করতে পারেন, এক 888sport live footballের আড্ডায় প্রেমেন্দ্র মিত্র আলাপ-প্রসঙ্গে জয়নুলের এই অলংকরণ-কাজের খুবই প্রশংসা করেছিলেন। সেই আড্ডায় উপস্থিত ভবানী মুখোপাধ্যায়, 888sport live chatী অনিল ভট্টাচার্য ও আরো কারো কারো অভিমতও ছিল অভিন্ন। এমনকী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্কে দেবকুমার এককপি বই উপহার দিলে ছবি দেখে তিনিও খুব খুশি হন, মন্তব্য করেন – ‘ছবিগুলোর ভেতর দিয়ে রামায়ণের কাহিনি চমৎকার ফুটে উঠেছে।’
চার
‘ছবি আঁকার ভুবনে জয়নুল এক ব্যতিক্রমী বিস্ময়। এক রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হয়ে তাঁর আঁকিয়ে হওয়ার স্বপ্নপূরণ খুব সহজ ছিল না। সেই ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার নেশায় মগ্ন ছিলেন। কী করে এর প্রেরণা পেয়েছিলেন, সে-কথা ছেলেবেলার 888sport sign up bonusচর্চা করতে গিয়ে বলেছেন সহজ-সরল ভাষা ও ভঙ্গিতে :
যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ছবি আঁকতে শিখলাম কী করে? বা কার কাছ থেকে?… বলব আমার দেশের প্রকৃতি আর পরিবেশ আমাকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এদেশের আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, বন, এখানকার মানুষের চলাফেরা, ওঠা-বসা, হাসি-কান্না আমাকে ছবি আঁকতে বলেছে।…
ব্রহ্মপুত্রের ধারে ধারে ছেলেবেলায় খেলে বেড়াতাম। শীতের নদী কুলু কুলু করে বয়ে যেত। জেলেরা মাছ ধরত, মেয়েরা কাপড় কাচতো, কলসী ভরে পানি নিয়ে যেতো বাড়ী, যাত্রী এপার ওপার করতো খেয়া নৌকার মাঝি। আমি তন্ময় হয়ে দেখতাম মানুষের এই আসা যাওয়া। নদীর ওপারে ছিল ঘন বন, তাকালে দেখা যেতো দূরে নীল আকাশের কোল ঘেঁসে ধূসর গারো পাহাড়। সব কিছু মিলে মায়ার মতো লাগতো আমার কাছে। একদিন সকালে উঠে বুঝতাম কেমন যেন মিষ্টি বাতাস বয়, দূরে বকুল ডালে কোকিল ডাকে। বুঝতাম বসন্ত এসেছে।…
হঠাৎ একদিন আকাশ অন্ধকার করে ঈশান কোণ থেকে ছুটে আসতো কালো মেঘ, সঙ্গে সঙ্গে আসতো ঝড় – কালবৈশাখী।… শ্রাবণের বিকালে চুপচাপ একা বসে থাকতাম বারান্দায়। একটানা ঝর ঝর করে ঝরে পড়তো বৃষ্টি।… একদিন দেখতাম আকাশে সাদা সাদা ভেসে চলা মেঘ। বাড়ীর সামনে শিউলি গাছটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। নদীর ওপারে সাদা-কালো বন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতো। বুঝতাম শরৎকাল এসেছে। মাঠে মাঠে সোনার ফসল বুকে করে মানুষের মুখে মুখে হাসি ফুটিয়ে আসতো হেমন্তকাল। চাষীরা মাঠে ধান কাটতো। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে তাদের ধান কাটা দেখতাম। ওরা ধান কেটে, কেউবা মাথায় করে আবার কেউবা গরুর গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যেত। পাশের গাঁয়ে মেলা বসতো, আমি দেখতে যেতাম সে মেলা। কতো মানুষ আর কতো জিনিস। আমি যেন দিশেহারা হয়ে যেতাম।… আবার শীত আসতো। এমনিভাবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত আর বসন্ত – কতো রূপ কতো রঙ কতো রেখা আর কতো বৈচিত্র নিয়ে এলো গেলো।
… ছেলেবেলায় আমার দেখা এই যে আমার দেশের রূপ, এ-ছবি আমার মনের পর্দায় আঁকা ছিল। তারপর যখন ছবি এঁকেছি, তখন মনের পর্দায় সেই ছবি, রঙ আর তুলির আঁচড়ে বেঁধে রাখতে চেয়েছি। কতোখানি পেরেছি জানি না।… আমি চেয়েছি, আমার ছবিতে আমার দেশের মানুষের জীবন, তাদের হাসিকান্না, আমার দেশের প্রকৃতিকে বেঁধে রাখতে। এর পরও যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ছবি আঁকতে শিখলাম কী করে, কার কাছ থেকে – তবে বলবো আমার দেশের মানুষ, মাটি আর আকাশের কাছ থেকে’ (জয়নুল 888sport sign up bonus : মতলুব আলী-সম্পাদিত, 888sport app, এপ্রিল ১৯৯৪)।
জয়নুলের এই আত্মভাষ্য সাক্ষ্য দেয় ব্যক্তি ও 888sport live chatী হিসেবে তিনি ছিলেন দেশের মাটি-মানুষ-নিসর্গের কাছে দায়বদ্ধ ও সমর্পিত।
পাঁচ
ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার নেশায় মজেছিলেন তিনি। স্কুলের লেখাপড়ায় তেমন মন বসেনি। তাই স্কুলের গন্ডি পেরোনোর আগেই পিতাকে নিমরাজি করিয়ে আঁকিয়ে হওয়ার জন্যে কলকাতায় পাড়ি জমান। হাতে টাকাকড়ি তো তেমন কিছুই ছিল না। মা তাঁর সামান্য গয়নাগাটি বিক্রি করে রেস্ত জোগালেন। এবারে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পালা। সেও এক বিস্ময়। কেননা, নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে জয়নুল প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েই ১৯৩২-এ কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন নিজের প্রতিভার জোরে। অবশ্যি এই প্রায় অসাধ্য কাজটি হতে পেরেছিল আর্ট স্কুলের সেই সময়ের অধ্যক্ষ 888sport live chat-প্রতিভা অন্বেষণের জাত-জহুরি 888sport live chatী মুকুল দে-র আনুকূল্যে। ময়মনসিংহের স্কুলে জয়নুল ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই সাধারণ মানের, কিন্তু কলকাতার আর্ট স্কুলে তাঁর প্রতিভার পরিচয় নানা ধারায় ফুটে উঠলো – অল্পদিনেই নজর কাড়লেন সবার। পরম নিষ্ঠা ও শ্রমে তাঁর পুরো মনোযোগ তখন নিবেদিত ছবি আঁকায়। কিন্তু তাঁর এই পথ সহজ ছিল না। তাঁকে অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে – অভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে ‘বিদেশ’-বিভুঁই কলকাতা মহানগরীতে। সহায় ছিল শিক্ষকদের আনুকূল্য, সুহৃদ-শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহ-প্রেরণা আর খাইখরচার জন্যে জলপানির মাসিক পনেরো টাকা। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা ও অন্তরায়কে সরিয়ে তিনি তাঁর গন্তব্যের পথকে ঠিকই চিনে নিতে পেরেছিলেন। ১৯৩৮-এ কলকাতা আর্ট স্কুলের পাঠ শেষ করে পরীক্ষার ফলাফল ও 888sport live chat-কৃতিত্বের সুবাদে সেখানেই স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অবশ্যি শেষ পরীক্ষার ফল বেরুনোর আগেই আর্ট স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষকের পদে বহাল হয়েছিলেন। ছ’বছরের ছাত্রজীবনে তাঁর ছবি আঁকার কাজের ভেতর দিয়ে ভবিষ্যতে খ্যাতিমান 888sport live chatী হওয়ার স্পষ্ট আভাস লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এটা ছিল জয়নুলের 888sport live chatখ্যাতির সূচনাকাল। তখন থেকেই বাংলার নিসর্গ ও মানুষ হয়ে উঠেছিল তাঁর ছবির উপকরণ-উপজীব্য। লোকায়ত জীবন ও সংস্কৃতি তাঁর 888sport live chatলোককে গভীরভাবে প্রাণিত ও প্রভাবিত করেছে। এক্ষেত্রে তাঁর 888sport live chatীজীবনের সূচনাপর্বে দুটি স্থানের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় : বীরভূমের দুমকা এবং ময়মনসিংহের গ্রামীণ অঞ্চল। এই পর্বে দুই বঙ্গের দুই নদী, ময়ূরাক্ষী ও ব্রহ্মপুত্র, তাঁর 888sport live chatচর্চার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। এই দুই অঞ্চলের প্রকৃতি ও নদীর রূপ ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের, এই ভিন্নতাকে তিনি স্বতন্ত্রভাবেই রূপায়িত করেছেন রঙ-তুলিতে, কখনো বা কালি-কলমের আঁচড়ে। এর পরের পর্ব লোকজীবনের আরো গভীরে প্রবেশ এবং সেইসঙ্গে সমাজবাস্তবতার মন্ত্রে দীক্ষাগ্রহণ। জয়নুল জানতেন, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতেন : লোকসংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারা। তাই তাঁর 888sport live chatচর্চায় নানা আঙ্গিকে এই সত্যকে প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ‘জীবনের জন্যে 888sport live chat’ – এই তত্ত্ব এবং 888sport live chatীর সামাজিক দায়বদ্ধতা তাঁকে সমাজের নগ্ন বাস্তবতাকে উন্মোচিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কথা888sport live chatী শওকত ওসমান তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘বিশ্বে ভ্রাম্যমাণ গ্রাম্যজন’ – এই অভিধা যে কতো অভ্রান্ততা তাঁর 888sport live chatকর্ম প্রমাণ দেয়।
ছয়
১৯৭৪-এ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় জয়নুল আবেদিনকে সাম্মানিক ডি.লিট. উপাধি প্রদান করে। এই উপলক্ষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জয়নুল যে ভাষণ দেন, তাতে তিনি যেসব কথা বলেছিলেন তার ভেতর দিয়ে তাঁর ছবি-আঁকার সূচনাপর্ব ও 888sport live chatদর্শনের কথা অনেকখানি প্রকাশিত। তিনি স্পষ্টই 888sport app download for android করেছেন : ‘শৈশবে আমার ভেতরকার তীব্র এক তাড়া আমাকে ছবি আঁকার জগতে টেনে এনেছে।’ তাঁর 888sport live chatদর্শনের সার-কথাটি সংক্ষিপ্ততম বাক্যে প্রকাশ করেছেন এইভাবে : ‘আমি শুধু জানি কেন আমি আঁকি এবং কী আঁকি।’ একজন আঁকিয়ে হিসেবে সবসময়ই তিনি 888sport app download for androidে রেখেছেন : ‘আমার কাজগুলো দর্শকদের নিকট যেন দুর্বোধ্য মনে না হয়।’ 888sport live chatী হিসেবে তাঁর অঙ্গীকার : ‘সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া ও তাদের জীবনকে ছবিতে তুলে ধরাই আমার সব সময়ের কামনা’ (‘জয়নুল আবেদিন : তাঁর কাজ ও কথা’, নজরুল ইসলাম, 888sport app, ফেব্রুয়ারি ২০০২)।
সাত
কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলের মেধাবী ছাত্র ও শিক্ষক এবং অঙ্কন888sport live chatী হিসেবে কলকাতার সুধীসমাজে জয়নুলের পরিচিতি ও সমাদর ছিল। পঞ্চাশের মন্বন্তরের (১৩৫০/ ১৯৪৩) ছবি এঁকে তিনি মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করেন এবং খ্যাতির তুঙ্গে ওঠেন। আকালের এই রেখাচিত্র সম্পর্কে তাঁর অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘আমি দুর্ভিক্ষের দৃশ্যগুলো এঁকেছি প্রায় উন্মাদের মতো। কেন আমি এমন করেছিলাম? কেনই বা আমি ওসব স্কেচ এঁকেছিলাম? ওটা ছিল আমার একটি ক্রুদ্ধ অভিব্যক্তি; একটি প্রতিবাদ। ওই সময়কার পরিস্থিতির বিরুদ্ধে, মানুষের ভয়াবহ ভোগান্তির বিরুদ্ধে আমার একটি বক্তব্য। আজও আমি ভাবি সেই দুর্ভিক্ষের কথা যা ছিল মানুষেরই তৈরি। মানুষই মানুষের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। আমি শুধু চেষ্টা করেছি আমার মতামত ও অনুভূতি তুলে ধরার’ (‘জয়নুল আবেদিন : তাঁর কাজ ও কথা’, নজরুল ইসলাম, 888sport app, ফেব্রুয়ারি ২০০২)। মন্বন্তরের এই 888sport live chatকর্ম জয়নুলকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিত করে তোলে। কলকাতা-পর্ব তাই তাঁর 888sport live chatীজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর তিনি কলকাতা ছেড়ে 888sport appয় চলে আসেন। 888sport appয় তাঁর 888sport live chatীজীবনের আরেক সংগ্রামের অধ্যায় শুরু হয়। এখানে পূর্ববঙ্গের প্রথম আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই দেশে 888sport live chat-আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তিনি। এই ভূখন্ডেই আকালের ছবির ধারাবাহিকতায় আঁকা জলোচ্ছ্বাসে মানবিক বিপর্যয়ের স্মারক স্ক্রলচিত্র ‘মনপুরা ’৭০’ কিংবা ‘নবান্ন’ – সমাজসম্পৃক্ত এই 888sport live chatীর অন্তরঙ্গ পরিচয় তুলে ধরে। এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তির লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for android করতে হয়। তিনি জীবন, সংস্কৃতি, 888sport live chat ও স্বদেশকে এক করে দেখেছিলেন। দুর্ভিক্ষ-জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়ের ‘মানবিক বিপর্যয়’, আবহমান বাংলার চালচিত্র এবং নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামের ছবি তিনি এঁকেছেন পরম মমতায় দায়বদ্ধ এক 888sport live chatীর অঙ্গীকারে। লোকজ জীবন ও সংস্কৃতি ছিল তাঁর প্রেরণার এক প্রধান উৎস। গ্রন্থের প্রচ্ছদ-অঙ্কন ও অলংকরণের কাজেও তিনি এই চেতনাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
আট
888sport live chatাচার্য তাঁর মূল কাজ ছবি আঁকার পাশাপাশি বেশকিছু বইয়ের প্রচ্ছদও এঁকেছিলেন – করেছিলেন বইয়ের অলংকরণের কাজও। তাঁর এই ধরনের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে জসীম উদ্দীনের নকশীকাঁথার মাঠ, রঙিলা নায়ের মাঝি, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গাঙের পাড়, পদ্মাপার, মাটির কান্না, তুর্গেনিভের ভার্জিন সয়েলের আবুল কালাম শামসুদ্দীন-কৃত 888sport app download apk latest version অনাবাদী জমি, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের হারামণি (২য় খন্ড), শামসুদ্দীন আবুল কালামের কাশবনের কন্যা কিংবা আবুল আহসান চৌধুরী-সম্পাদিত লোক888sport live football পত্রিকার প্রচ্ছদ-রচনা। লক্ষ করা যাবে, এসবই লোকসংস্কৃতি ও লোকজীবন-আশ্রয়ী বই ও পত্রিকা। 888sport live chatাচার্যের লোকজ 888sport live chatকলার প্রতি অনুরাগের স্বাক্ষর এই কাজগুলো। এদিক দিয়ে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, রামকিঙ্কর বেইজের যোগ্য উত্তরসূরি। তাঁর এই প্রচ্ছদ-অলংকরণের কাজে ফোক-মোটিফ এবং গ্রামীণ জীবন ও নিসর্গের চালচিত্র স্থান পেয়েছে। 888sport live chatাচার্যের গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অলংকরণের কাজ আমাদের সেই 888sport sign up bonus ও শ্রুতির কাছে নিয়ে যায়, যেখানে কিংবদন্তির বাংলা – আবহমান বাংলার ছবি স্থির হয়ে আছে।
নয়
প্রাসাদ-চক্রান্ত ও যুদ্ধবিগ্রহের এক রাজকীয় কাহিনিকে কৃত্তিবাস বাঙালি-জীবন ও মানসের অনুকূলে নির্মাণ করেছেন। বাঙালির গার্হস্থ্য ও পারিবারিক জীবনের কোমল অনুভূতি এই কাহিনির সঙ্গে মিশে আছে। তাই লঙ্কা-বিজয় কিংবা রাবণ-বধের চাইতে ভ্রাতৃপ্রেম, পিতৃ-আজ্ঞা-পালন, মধুময় দাম্পত্যজীবন ও সীতার বনবাসের করুণ রস বাঙালিকে বেশি করে টেনেছে। কৃত্তিবাস বাল্মিকীর রামায়ণ-কথাকে অনেকাংশে লোকজীবনের কাহিনিতে রূপান্তরিত করেছেন। সেই চেতনা থেকেই জয়নুল ছোটদের সচিত্র কৃত্তিবাসের অলংকরণের কাজটি করেছেন। এই ক্ষুদ্র কলেবরের বইয়ের অলংকরণে তাই লোকজ 888sport live chatচিন্তার ছাপ পড়েছে।
১৯৪৭-এর আগে 888sport live chatাচার্য আর কোনো শিশুতোষ বইয়ের প্রচ্ছদ বা অলংকরণের কাজ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সেই হিসেবে ছোটদের কৃত্তিবাসই 888sport live chatাচার্য-অলংকৃত প্রথম শিশুতোষ বই। আর সম্ভবত 888sport live chatাচার্যের ছোটদের বইয়ের অলংকরণ-কাজের একমাত্র নিদর্শনও এ-বইটি।
দশ
888sport live chatাচার্যের এই অলংকরণ-কাজের বৈশিষ্ট্য বা 888sport live chat-ব্যাখ্যার চেষ্টা করলে তা হবে আমার পক্ষে অনধিকারচর্চা। যাঁরা 888sport live chat-বোদ্ধা বা সমালোচক, এ-দায়িত্ব তাঁদের। আমি শুধু কালিক পটভূমিতে এই কাজের সমকালীন তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা করতে পারি। সাতচল্লিশের দেশভাগের সামান্য আগে 888sport live chatাচার্য ছোটদের সচিত্র কৃত্তিবাসের ছবিগুলো এঁকেছিলেন। মনে রাখতে হবে, ছেচল্লিশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তাক্ত 888sport sign up bonus তখনো মুছে যায়নি – দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারায় দেশভাগ তখন আসন্ন ও অনিবার্য – পাকিস্তানের মোহ বাঙালি মুসলমানকে তখন আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং জাতিগত বিদ্বেষ ও স্বাতন্ত্র্যের এই কালে 888sport live chatীর নিরপেক্ষ বিবেচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে জয়নুল আন্তরিক নিষ্ঠায় রামায়ণ-কাহিনির ছবি এঁকেছেন, কোনো আর্থিক প্রাপ্তির আশায় নয় – সানন্দে-স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এর তাৎপর্য কম নয়। এখানে 888sport live chatী ও মানুষ হিসেবে উদার মন ও মতের জয়নুলকে সহজেই আবিষ্কার করা যায়।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.