সৈয়দ আজিজুল হক
নববই বছর পূর্ণ হওয়ার এক মাস আগেই জীবন থেকে বিদায় নিলেন সফিউদ্দীন স্যার। 888sport appsের পথিকৃৎ 888sport live chatীদের মধ্যে তিনিই দীর্ঘজীবী হয়েছিলেন। জয়নুল আবেদিন মারা যান মাত্র বাষট্টি বছর বয়সে। আর কামরুল হাসান যান সাতষট্টিতে। এসএম সুলতান তাঁর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান একাত্তর বছরে। সেদিক থেকে সফিউদ্দীন স্যারই ভাগ্যবান। শুধু তাই নয়, এই দীর্ঘ জীবনে সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে একান্তভাবে ছবি অাঁকায় তিনি যে নিমগ্ন থাকতে পেরেছেন সেটাও এদেশের চিত্রকলা জগতের এক বড় প্রাপ্তি। জীবনের শেষ চার-পাঁচ বছর অসুস্থতার জন্য অাঁকাঅাঁকি করতে পারেননি। কিন্তু ১৯৩৬ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কোনো বিরতি ছাড়া জীবনভর শুধু ছবিই এঁকে গেছেন। ছবি ছাড়া আর কোনোদিকেই তাঁর কোনো মনোযোগ ছিল না। ছবিই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ধ্যানের বিষয়।
পঁচিশ বছর আগে, ১৯৮৭ সালের জুন মাসে, আমি যখন চারুকলায় বাংলা 888sport live footballের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই তখনই তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। প্রথম পরিচয়েই তাঁর ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর হাস্যোজ্জ্বল, কোমল ও নিরহংকার আচরণে ক্রমশ আকৃষ্ট হই। তারপর দেখা হলেই বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হতো। তাঁর নিজের ছবি অাঁকা, কলকাতায় তাঁর ছাত্রজীবন, ছবি অাঁকার জন্য পূজার ছুটিতে কলকাতার বাইরে যাওয়া, শিক্ষকদের সান্নিধ্য, কলকাতা ও 888sport appর শিক্ষকতা, কলকাতা ছেড়ে 888sport appয় আসা, লন্ডনের ছাত্রজীবন – এরকম নানা বিষয় উঠে আসত এসব আলোচনায়। একসময় উপলব্ধি করি, তিনিও আমাকে এসব বলার ব্যাপারে আগ্রহ ও উৎসাহ বোধ করেন। ফলে এসব আলোচনার বিষয় লিপিবদ্ধ করে রাখার চিন্তা মনে আসে। এখন ডায়েরি খুলে দেখতে পাচ্ছি, স্যারের সঙ্গে আলাপের কথা প্রথম লিখে রেখেছিলাম ১৯৯৮ সালের ২৬ আগস্ট। এ-সময় স্যারের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপও হতো। সেসবেরও কিছু কিছু লিখে রাখতাম। ১৯৯৮ সালের এমন সাতটি লেখা আমার ডায়েরিতে আছে। এ-সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, 888sport live chatীদের সম্পর্কে আমার প্রথম বইটি কামরুল হাসান : জীবন ও কর্ম ওই বছরই সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। বইটির একটি কপি স্যারকেই আমি প্রথম উপহার দিই। সেদিন ছিল ২৪ সেপ্টেম্বর। আমার ইচ্ছা ছিল, স্যারের বিভাগে গিয়ে বইটি তাঁকে দেব। কিন্তু স্যার আমাকে চমকে দিয়ে নিজেই আমার রুমে চলে এসেছিলেন। এটি আমার জীবনের একটি 888sport app download for androidীয় ঘটনা। চারুকলা ক্যাম্পাসের পেছনের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে 888sport live chatকলা ইতিহাস বিভাগের দোতলায় ছিল আমার বসার জায়গা; স্যার নিরিবিলি আলাপের জন্য সেখানে চলে এসেছিলেন। সেখানেই স্যারের হাতে প্রথম বইটি দিয়ে নিজে কৃতার্থ বোধ করেছিলাম।
২০০০ সালের আগস্টে আমি চারুকলা থেকে বাংলা বিভাগে চলে আসি। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত স্যারের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে নয়দিনের লেখা আমার ডায়েরিতে আছে। এর অধিকাংশই ফোনালাপ। তবে বাংলা বিভাগে চলে এলেও স্যারের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ১৯৯৮ সালে কামরুল হাসানের ওপর বইটি বের হওয়ার পর কিছু কিছু সেমিনারে 888sport live chatকলা সম্পর্কে বক্তৃতার আমন্ত্রণ পেতে থাকি। সেমিনারের সেসব লেখা পত্রিকায়ও বের হয়। এগুলো স্যার পড়তেন এবং আমাকে কিছু পরামর্শও দিতেন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে 888sport live chatকলা একাডেমী থেকে বের হয় কামরুল হাসান নামে আরেকটি বই। এটিও আমি স্যারকে দিই। স্যার আমার লেখা আগ্রহসহকারে পড়ে তাঁর মতামত আমাকে বলতেন। 888sport live chatকলাসম্পর্কিত লেখার ক্ষেত্রে আমার দুর্বলতাগুলো আমাকে ধরিয়ে দিতেন। আমার সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝিয়ে দিতেন। 888sport live chat-প্রদর্শনী দেখার ব্যাপারে আমাকে তাগিদ দিতেন। আমাকে সঙ্গে নিয়ে প্রদর্শনী দেখার, ছবির ভালো-মন্দ দোষ-গুণ সরাসরি বুঝিয়ে দেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করতেন। তবে এমন সুযোগ খুব বেশি পাওয়া যায়নি। 888sport live chatকলা নিয়ে লেখার ব্যাপারে আমার হতাশার কথা স্যারকে বলতাম। স্যার আমাকে উৎসাহিত করতেন। যেটি ছিল আমার জন্য সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক তা হলো, স্যার খুব জোর দিয়েই বলতেন, ‘এটা আপনি ছাড়বেন না।’ স্যার আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন; অনেক চেষ্টায়ও আমি স্যারের এ-অভ্যাসের বদল ঘটাতে সমর্থ হইনি।
এরই মধ্যে সুবীরদা (বেঙ্গল 888sport live chatালয়ের পরিচালক সুবীর চৌধুরী) একদিন বললেন যে, সফিউদ্দীন স্যারের সমগ্র কাজের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনা তাঁরা নিয়েছেন। এবং এটি লেখার ব্যাপারে আমার কথা ভেবেছেন। আমি সানন্দে এ-প্রস্তাবে সম্মত হলাম। এ উপলক্ষে ২০০৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সকালে সুবীরদার সঙ্গে স্যারের ধানমন্ডির বাসায় গেলাম। তারপর প্রতি মাসে তিন-চারদিন করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট তেইশ দিন প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা করে স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্যারের জীবন নিয়ে, তাঁর 888sport live chatচিন্তা নিয়ে, তাঁর প্রতিটি ছবি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি কিছু গোপন করেননি। নিজের কোথায় সবলতা আর কোথায় দুর্বলতা তা বলতেও দ্বিধান্বিত হননি। এসব আলোচনায় দেখেছি, তাঁর 888sport sign up bonusশক্তি কত প্রখর। প্রতিটি ছবির সৃষ্টি-ইতিহাস তাঁর নখদর্পণে। দেখেছি তাঁর সততার সুউচ্চতা। নিজের ভূমিকা বা অবস্থান সম্পর্কে এতটুকু বাড়িয়ে বলার কোনো প্রবণতা তাঁর মধ্যে দেখিনি। দেখেছি, অসাধারণ তাঁর বিনয়। কী বর্ণাঢ্য তাঁর জীবন! অথচ এ নিয়ে দেখিনি সামান্যতম অহংবোধ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আরো মনে হয়েছে, সর্বদাই প্রচারবিমুখ তিনি; এবং নিভৃতপরায়ণতাই তাঁর স্বভাবের আসল বৈশিষ্ট্য। কখনো ছোটেননি অর্থ কিংবা খ্যাতির পেছনে। 888sport live chatচর্চাকেই সার্বক্ষণিক ধ্যানের বস্ত্ত করে তুলেছিলেন। তাঁর প্রতিটি 888sport live chatকর্মের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে গভীর চিন্তা, পরিকল্পনা, আবেগ, মমতা আর ভালোবাসা।
এসব দেখে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কথাই আমার মনে পড়ত। তৃণাঙ্কুর নামক দিনলিপি-গ্রন্থে বিভূতিভূষণ লিখেছেন, ‘জীবনের সার্থকতা অর্থ উপার্জনে নয়, খ্যাতি-প্রতিপত্তিতে নয়, লোকের মুখের সাধুবাদে নয়, ভোগে নয় – সে সার্থকতা শুধু আছে জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার ভেতরে, বিশ্বের রহস্যকে উপলব্ধি করার আনন্দের মধ্যে।’ সফিউদ্দীন স্যারও একইভাবে জীবনের সার্থকতা অর্থ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, জনপ্রিয়তা কিংবা ভোগের মধ্যে খোঁজেননি, খুঁজেছেন 888sport live chatকে, 888sport live chatের রহস্যকে গভীর থেকে গভীরতরভাবে উপলব্ধি করার ভেতরে।
এ-কারণেই প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়ার নিরন্তর প্রয়াসই হয়ে উঠেছিল তাঁর 888sport live chatযাত্রার মূলকথা। রুচিশীল, সংগীতানুরাগী, 888sport live footballপিপাসু, 888sport apkমনস্ক, মুক্তদৃষ্টির অধিকারী এই 888sport live chatী মনে কখনো লালন করেননি কোনো আভিজাত্যের গৌরব। বরং তিনি ছিলেন এক প্রখর নীতিবোধের অধিকারী, যা তাঁকে করে তুলেছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাঁর এই কঠোর ব্যক্তিত্বের মূলে সক্রিয় ছিল 888sport live chatক্ষেত্রে পরিশুদ্ধি অর্জনেরও এক নিরন্তর প্রয়াস। সে-কারণে 888sport appsের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক সফিউদ্দীন আহমেদকে এদেশের শুদ্ধতম 888sport live chatী বললেই বোধ করি যথার্থ হয়।
সফিউদ্দীন আহমেদের 888sport live chatীসত্তার গভীরে লালিত ছিল এক সূক্ষ্ম অতৃপ্তির বোধ। এই অতৃপ্তি একজন মহৎ 888sport live chatীরই সহজাত বৈশিষ্ট্য। এ-কারণেই ছবি এঁকে তাঁর কখনো মনে হয়নি যে, তিনি ভালো কিছু এঁকে ফেলেছেন। এরকম অপূর্ণতা নিয়েই সবসময় কাজ করার ফলে এক জায়গায় তিনি আটকে থাকেননি। পরিণামে রেখাচিত্র, ছাপচিত্র ও তেলচিত্র – এই তিন মাধ্যমেই তিনি অর্জন করেছেন এক শিখরস্পর্শী কৃতিত্ব। ব্যক্তিজীবনের মহৎ ভাবনাও তাঁর 888sport live chatবোধকে সর্বদা সজীব ও সমৃদ্ধ করেছে। আর্থিক উন্নতির চেয়ে তিনি সবসময়ই চেয়েছেন আত্মিক উন্নতিসহ 888sport live chatের উন্নতি ঘটাতে। সেজন্যে সবসময় যুগের পরিবর্তনের ধারাকে নিজ চিত্রে অঙ্গীকার করারও চেষ্টা করেছেন। সবসময়ই চেষ্টা করেছেন চিত্রের জমিনে নতুন কিছু যোগ করার। মূলত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই আয়ত্ত করতে চেয়েছেন যুগের পরিবর্তনশীলতার দাবি। স্বল্পভাষী, কোমল স্বভাবের অধিকারী এই 888sport live chatীর মনে সর্বদাই ছিল এক গভীর প্রশান্তির ভাব, যা তাঁর চিত্রের জমিনকেও দিয়েছে অসামান্য প্রশান্তির ব্যঞ্জনা।
জীবনবোধ
কলকাতা মহানগরীতেই সফিউদ্দীন আহমেদের জন্ম (১৯২২) এবং পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই তাঁর বসবাস। ১৯৪৭ সালে 888sport appয় আসার পর এই নগরীতেই বাস করেছেন আমৃত্যু। অর্থাৎ জন্মকাল থেকেই তিনি অভ্যস্ত ছিলেন নাগরিক জীবনে। ফলে তাঁর আচার-আচরণ ও উচ্চারণে এবং তাঁর সৃষ্টিতে নাগরিক বৈদগ্ধ্যের ছাপ খুবই স্পষ্ট।
একটি শিক্ষিত ও উন্নত সাংস্কৃতিক পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। ফলে পারিবারিক এই আবহ এবং সুর ও সংগীতের প্রতি নিজের অনুরাগ তাঁর 888sport live chatকেও দিয়েছে এক চমৎকার সাংগীতিক ব্যঞ্জনা। অন্যদিকে বাবা-মায়ের পরিচ্ছন্নতাপ্রিয় জীবনবৈশিষ্ট্য তাঁর ব্যক্তিজীবনের আচার-আচরণেই শুধু অনুসৃত হয়নি, তা তাঁর 888sport live chatস্বভাব ও চিত্রকর্মকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুল থেকে ১৯৩৬-৪২ কালপর্বে তিনি স্নাতক সমমানের ছবছরের শিক্ষা কোর্স এবং ১৯৪৪-৪৬ পর্বে কৃতিত্বের সঙ্গে দুবছরের শিক্ষকতার (টিচারশিপ) কোর্স সমাপ্ত করে ১৯৪৬ সালেই ওই স্কুলের শিক্ষকতায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর 888sport live chatীসত্তা গঠনে ওই স্কুলের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে তিনি সবসময়ই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে 888sport app download for android করেছেন। এঁরা হলেন : মুকুল দে, বসন্তকুমার গাঙ্গুলি, অতুল বসু, মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রহ্লাদ কর্মকার, ঋষেণ মিত্র, আবদুল মঈন প্রমুখ। এসব শিক্ষক তাঁর সাধনাধর্মী নীতিনিষ্ঠ মনোগঠনে পালন করেছেন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা।
কলকাতা আর্ট স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী বহির্দৃশ্য অনুশীলনসূত্রে তিনি সতীর্থদের সঙ্গে চলে যেতেন কলকাতার শিয়ালদা রেলস্টেশনে, আলিপুরে কিংবা শহরতলিসহ আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে। চিত্রে প্রকৃতির রূপ-রসকে পরিস্ফুটিত করার আগ্রহে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে প্রতি বছরই পূজার ছুটিতে কলকাতার বাইরে বেড়িয়ে পড়তেন। ১৯৩৬-৪১ কালপর্বে তিনি গিয়েছেন বিহারের মধুপুর, দেওঘর, জসিডি, গিরিডি, চাঁইবাসা, ঝাঝা প্রভৃতি অঞ্চলে। এছাড়া ১৯৪২, ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালের পূজার ছুটিতে সাঁওতাল পরগনার দুমকায় গিয়ে প্রচুর ছবি এঁকেছেন। দুমকার নিসর্গ ও জীবন অবলম্বনে তাঁর মতো এত চিত্র অখন্ড বাংলার 888sport live chatীদের মধ্যে আর কেউ অাঁকেননি। প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর নিবিড় বোধ গড়ে ওঠে দুমকায়। সেখানকার প্রকৃতি এবং মানুষ ও প্রাণিজগৎ তাঁর 888sport live chatে নিয়ে আসে সুগভীর সমৃদ্ধি। এসব নিয়ে আছে তাঁর বেশকিছু জলরং, কালি-কলম, ড্রাই পয়েন্ট, উড এনগ্রেভিং ও তেলরং মাধ্যমের চিত্র।
মুকুল দে, রমেন চক্রবর্তী প্রমুখ 888sport live chatী ভারতের ছাপচিত্রকে বিশ শতকের ত্রিশের দশকে যে উন্নত 888sport live chatের পর্যায়ে উন্নীত করেন সফিউদ্দীন আহমেদকে তা আকৃষ্ট করে। তিনিও এ-বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণসহ শিক্ষকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছাপচিত্রকে পৌঁছে দেন 888sport live chatের উন্নত মহিমায়। ফলে সমগ্র ভারতের আধুনিক ছাপচিত্রের অগ্রণী 888sport live chatীদের তালিকায় তাঁর নামও অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে।
দুমকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, তার শালবন, ময়ূরাক্ষী নদী, আদিবাসী সাঁওতাল রমণীর দেহবল্ল-রীসহ তাদের সামগ্রিক জীবনকোলাহল তাঁর 888sport live chatবোধকে যেমন জাগ্রত করে, তেমনি তাঁর চিত্রের জমিনকেও করে তোলে চিত্রগুণে সমৃদ্ধ। এর স্বীকৃতিও মেলে ১৯৪৫-৪৭ পর্বে চার-চারটি 888sport app download bdপ্রাপ্তির ঘটনায়। এর মধ্যে আছে : কলকাতায় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্ট প্রদত্ত ‘অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ (১৯৪৫), নয়াদিল্লি¬তে আন্তর্জাতিক সমকালীন চারুকলা প্রদর্শনীতে (১৯৪৬) পাশ্চাত্য ধারার সাদা-কালো বিভাগে প্রথম 888sport app download bd, নয়াদিল্লিতে আন্তঃএশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে (১৯৪৭) সাদা-কালো বিভাগে প্রথম 888sport app download bd এবং পাটনা 888sport live chatকলা পরিষদ প্রদত্ত ‘দ্বারভাঙ্গা মহারাজার স্বর্ণপদক’ (১৯৪৭)। অতএব ১৯৪৭-এ দেশবিভাগের সময়ই পঁচিশ বছর বয়স্ক সফিউদ্দীন আহমেদ সর্বভারতীয় পর্যায়ে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় একজন 888sport live chatী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
দেশভাগ তাঁর জীবনে নিয়ে আসে এক গভীর পরিবর্তন। জন্মভূমি কলকাতার স্থায়ী আবাস থেকে উন্মূলিত হয়ে তাঁকে নতুন বসতি নির্মাণ করতে হয় 888sport appয়। এ-ঘটনা তাঁর কাজের ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। 888sport appয় চারুকলা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গঠনে জয়নুল আবেদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে অন্যতম উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করেন তিনি। অতঃপর ১৯৪৮-এ প্রতিষ্ঠিত 888sport app সরকারি চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগের প্রধান পদে নিযুক্ত হন। শুধু আর্ট ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার আন্দোলনেই নয়, এই নতুন দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনানির্ভর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও তিনি নিজেকে যুক্ত করেন।
এরই মধ্যে আসে বন্যা। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে পরপর দুবছর বন্যায় প্লাবিত হয় সারাদেশ, এমনকি 888sport appও। সফিউদ্দীন আহমেদের স্বামীবাগের বাড়িও আক্রান্ত হয় বন্যায়। তাঁর ঘরের মেঝে থেকে পানির অবস্থান ছিল মাত্র চার ইঞ্চি নিচে। কলকাতায় অবস্থানকালে এমন বন্যার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল না। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। নৌকায় করে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা। প্রতিমুহূর্তে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। স্বচ্ছ পানির মধ্যে দেখছেন মাছের খেলা। বন্যার পানির ওপরে দেখছেন বৃষ্টি পতনের এক ছন্দোময় রূপ আর শুনছেন জলের গীতময় ধ্বনিমাধুর্য। দেখেছেন প্লাবিত বাংলার রূপ আর জলের সীমাহীন বিস্তার। ফলে তাঁর পরবর্তী চিত্রধারায় অনিবার্যভাবেই বিষয় হিসেবে অন্বিত হয়েছে বন্যা, মাছ, জাল, নৌকা ও পানির বৈচিত্র্য। এর মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন বাংলার অন্তরাত্মাকে।
১৯৫৬ সালে সফিউদ্দীন আহমেদ উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডনে গিয়ে সেখানকার সেন্ট্রাল স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয়ে ডিস্টিংশনসহ ডিপ্লোমা লাভের পরও ওই স্কুলে আরো এক বছর (১৯৫৯) উচ্চতর পাঠ গ্রহণ করেন। এ-সময়ে পরিদর্শন করেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উন্নত 888sport live chatসমৃদ্ধ নানা জাদুঘর। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি তাঁর পুরো সময়ই ব্যয় করেন শেখার কাজে। লন্ডনের স্কুলে সফিউদ্দীন আহমেদের শিক্ষক ছিলেন মেলুয়িন ইভানস। তিনি ছিলেন আধুনিক ছাপচিত্রের জনক স্ট্যানলি হেটারের বন্ধু। লন্ডনের এই উচ্চতর শিক্ষা, ফলাফল, শিক্ষকদের প্রশংসা এবং ইউরোপের বিভিন্ন মিউজিয়াম ও গ্যালারি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা তাঁর মনে সৃষ্টি করে এক গভীরতর আত্মবিশ্বাস। ফলে তাঁর সৃষ্টিধারায় সঞ্চারিত হয় এক নতুন বেগ, উদ্যম ও সেইসঙ্গে সুগভীর পরিবর্তন।
888sport app download for androidীয় যে, কলকাতা আর্ট স্কুলে তাঁর পাঠগ্রহণকালে ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক ধারাই অনুসৃত হতো। তারপর সরাসরি ব্রিটেনের শিক্ষা ছাপচিত্রের কলাকৌশলগুলোকে আরো গভীরভাবে রপ্ত করতে তাঁকে সাহায্য করেছে। এচিং অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যম সম্পর্কে তাঁর ধারণা কলকাতা-পর্বেই ছিল; সেটি আরো সমৃদ্ধ, পরিপক্ব ও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে লন্ডনে যাওয়ার ফলে। কিন্তু তাম্রতক্ষণ (কপার-এনগ্রেভিং) পদ্ধতিটি তিনি সম্পূর্ণ নতুনভাবে আয়ত্ত করেন সেখানে এবং এক্ষেত্রেও সাফল্য দেখান। টেকনিকের সূক্ষ্ম কারুকাজের বাইরে তাঁর চিত্রে দৃশ্যমান যে পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে তা হলো : অবয়বের প্রস্থান। এরপর থেকে তাঁর চিত্রমালা হয়ে ওঠে কখনো বিমূর্ত, কখনো আধা-বিমূর্ত। বিশ শতকের ষাটের দশকে 888sport appsের চিত্র888sport live chatের ইতিহাসে বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার চিত্র রচনার যে-জাগরণ ঘটে, সেক্ষেত্রে তাঁর আধা-বিমূর্ত চিত্রমালা এই ধারার বিকাশ ও পরিপুষ্টি সাধনে নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি 888sport appর স্বামীবাগে নিজ বাড়িতেই একপ্রকার অবরুদ্ধ জীবনযাপন করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সীমাহীন নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞে সারাদেশ তখন এক আতঙ্কপুরীতে পরিণত। তারই মধ্যে তিনি প্রতি মুহূর্তে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়েই মোকাবেলা করেন নানা বিভীষিকাপূর্ণ পরিস্থিতির। মৃত্যুপুরীর এই বীভৎস রূপকে প্রত্যক্ষ করে যে-চোখ সে-চোখ তাঁর পরবর্তীকালের চিত্রে মোটিফ হিসেবে অন্বিষ্ট হয়ে রূপক-প্রতীকের সুগভীর ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে।
স্বাধীন 888sport appsে এক নতুন পরিস্থিতিতে সফিউদ্দীন আহমেদের 888sport live chatসাধনা নতুন স্ফূর্তি লাভ করে। যে-অবয়ব তাঁর চিত্রভূমি থেকে বিদায় নিয়েছিল, কিছুটা অস্পষ্ট রূপ নিয়ে হলেও তা আবার তাঁর চিত্রে ক্রমশ উঁকি মারতে থাকে। ১৯৭৯ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর চিত্রাঙ্কনের ক্ষেত্রে যে নতুন বেগ সৃষ্টি হয় তাতে তাঁর 888sport live chatকর্মের 888sport free bet দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। রেখাচিত্র, ছাপচিত্র, তেলচিত্র প্রভৃতি সব মাধ্যমেই তিনি এ পর্বে নিজ প্রতিভাশক্তিকে উজাড় করে দিয়ে প্রতিটির উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হন।
888sport live chatভাবনা
জীবনের শুরু থেকেই সফিউদ্দীন আহমেদ ছবির ভেতরে কখনো কোনো ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেননি। ছবি অাঁকার সঙ্গে আবিষ্কার করেছেন নিজ মনের বিপুল আনন্দের এক গভীর সম্পর্ক। নিসর্গ অনুশীলনের সূত্রেই তিনি অনুধাবন করেছেন প্রকৃতির বিশালত্বকে; তাঁর চিত্রে এসেছে বিরচন-কৌশলের (কম্পোজিশন) দক্ষতা; এসেছে উন্নত পরিপ্রেক্ষিতের (পারস্পেকটিভ) বোধ। দুমকায় গিয়ে তিনি যথার্থভাবে অনুধাবন করেছেন প্রকৃতির স্বরূপসহ তার আত্মাকে। ফলে চিত্রের ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির বিশাল পরিপ্রেক্ষিতকে। ক্ষুদ্রায়তনে বিশালত্বের ব্যঞ্জনা সৃষ্টির বিষয়টি পরিণত হয়েছে তাঁর চিত্রধারার অন্যতম বৈশিষ্ট্যে।
১৯৪৭-এ 888sport appয় নতুন বসতি নির্মাণের পর তিনি নতুন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পূর্ববাংলার প্রকৃতি ও জনজীবনকে দেখেছেন নতুন চোখ দিয়ে। দুই বাংলার প্রাকৃতিক স্বাতন্ত্র্য সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। ওখানকার প্রকৃতিতে ছিল ধূসরতা, এখানে এসে দেখেন নীলাভ সবুজের ছড়াছড়ি। পূর্ববাংলার প্রকৃতির রঙের এই বিশিষ্টতা অনুধাবন করতে, নীল ও সবুজকে মিশিয়ে আকাঙ্ক্ষিত এফেক্ট আনতে তাঁর লেগেছে বেশ কয়েক বছর। তাঁর তেলচিত্রে নীল ও সবুজের সূক্ষ্ম ও পরিমার্জিত ব্যবহার দেখলে এই সাধনার বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। এছাড়া তিনি পরিচিত হন এখানকার বন্যা, জাল-মাছ ও নৌকার সঙ্গে। তিনি দেখেন লোকজীবনের বৈচিত্র্য। ফলে তাঁর ছবিতে পরিস্ফুটিত হয় লোক888sport live chatের বৈশিষ্ট্য।
পঞ্চাশের দশকে লোক888sport live chatকে অঙ্গীকার করে 888sport appsের চিত্র888sport live chatে যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় সে-সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। তবে তিনি লোক888sport live chatের রং, রেখা কিংবা উপাদান দ্বারা সরাসরি নিজের 888sport live chatকে সমৃদ্ধ করার পথে অগ্রসর হননি। তিনি লোক888sport live chatের সামান্য কিছু বৈশিষ্ট্যসহ সরাসরি লোকজীবনকে আশ্রয় করে এ-ধারার চিত্রে সৃষ্টি করেন নতুন ভাষা।
মাধ্যমগত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্রতী হওয়ার বিষয়টিও তাঁর 888sport live chatবৈশিষ্ট্যের অংশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি দুটি মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন। এ দুটি হলো : রেখাচিত্র ও তেলচিত্র। অন্য মাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি কিছুদিন অনুশীলনের পর সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। যেমন, নিয়মিত ছাত্রজীবনের পর তিনি আর জলরং মাধ্যমে ছবি অাঁকেননি। ছাত্রজীবনেই শুরু করেছিলেন উড এনগ্রেভিং মাধ্যমের চর্চা, সেটি লন্ডন যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কলকাতায় শিক্ষকতা কোর্সে অধ্যয়নকালে ড্রাই পয়েন্ট মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন, তারপর আর অাঁকেননি। ওই সময়েই কোর্সের প্রয়োজনে লিথোগ্রাফি ও ম্যুরাল পেইন্টিং মাধ্যমের চর্চা করেছিলেন, কিন্তু পরে আর এ-বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। ওই সময়েই তিনি অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে চিত্র রচনা করেছেন। 888sport appয় এসেও এ-মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন। এবং লন্ডন গিয়ে এচিং মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা লাভের পর এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, সফটগ্রাউন্ড, লিফটগ্রাউন্ড, ডিপ এচ প্রভৃতি মাধ্যমের মিশ্রণ ঘটিয়ে চিত্র রচনা করেছেন। লন্ডনে কপার এনগ্রেভিং (তাম্রতক্ষণ) শেখার পর উড এনগ্রেভিং পরিত্যাগ করে এই নতুন মাধ্যমেই তক্ষণ888sport live chat রচনা করেছেন। তাঁর ছাপচিত্রের অনুশীলন শুরু হয়েছিল উড-এনগ্রেভিং দিয়ে, শেষ হয়েছে কপার-এনগ্রেভিংয়ের মাধ্যমে।
লন্ডন যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সফিউদ্দীন আহমেদের চিত্রধারায় অবয়বধর্মী বাস্তবতাই ছিল মুখ্য। অবয়বকে তিনি ইতোমধ্যে ভাঙলেও তা নিজ পরিচিত রূপকে পুরোপুরিভাবে বিনাশ করেনি। কিন্তু লন্ডনে যাওয়ার পর অবয়বকে তিনি এতটাই ভাঙচুর করেন যে তা তার পরিচিত রূপকে পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলে। এভাবেই তিনি বিশ শতকের মধ্যলগ্নে বিশ্ব888sport live chatে সংঘটিত আধুনিক ধারাকে অঙ্গীকার করেন। ফলে তাঁর চিত্রের জমিনে এসে ভিড় করে নানা অপরিচিত রূপকল্প (ইমেজ)। প্রতীক ও রূপকের ব্যাপক ব্যবহারে তাঁর চিত্র সম্পূর্ণ নতুন রূপ ধারণ করে। সেইসঙ্গে তিনি ব্রতী হন টেকনিকের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। সূক্ষ্ম রেখার পাশাপাশি ছাপচিত্রে স্থূল ও মোটা রেখা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরীক্ষায় রত হন তিনি।
লন্ডনের শিক্ষা তাঁর চিত্রে যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটায় তাতে রূপক-প্রতীকের আশ্রয় গ্রহণ হয়ে ওঠে অনিবার্য। স্বাধীনতা-উত্তরকালেও অব্যাহত থাকে এই ধারা। এ-কালে চোখ তাঁর ছবিতে বিশেষভাবে প্রতীকী ব্যঞ্জনার দ্যোতক হয়ে ওঠে। এ-কথা ঠিক, ষাটের দশকে মাছের রূপাবয়ব ও নৌকার গলুই তাঁর চিত্রে চোখের আদল পেয়েছে। ‘বিক্ষুব্ধ মাছ’ (১৯৬৪) শীর্ষক চিত্রে মাছের চোখটি প্রকাশ করছে তাঁর বদ্ধাবস্থাজনিত প্রতিবাদ। এসবই হয়তো বিক্ষিপ্ত চিত্র। কিন্তু আশির দশকে তিনি সরাসরি চোখের মোটিফ ব্যবহার করে অাঁকেন ‘কান্না’, ‘888sport cricket BPL rateে 888sport app download for androidে’, ‘একাত্তরের 888sport sign up bonus’ ও পরবর্তীকালে ‘একাত্তরের 888sport app download for androidে’ শীর্ষক তাম্রতক্ষণ মাধ্যমের একগুচ্ছ চিত্র যা চোখের এক নতুন রূপ বা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসলীলা থেকে সৃষ্ট আতঙ্কজনক পরিস্থিতির ভয়াবহ 888sport sign up bonus তাঁর মস্তিষ্ককোষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান ছিল। চোখের নানা অভিব্যক্তি পরিস্ফুটিত করার মধ্য দিয়ে তিনি ওই পরিস্থিতিকেই যেন আভাসিত করেন এসব চিত্রে। এ-পর্বেই তেলচিত্রে 888sport promo codeর বিষাদমাখা চোখ এঁকেও তিনি একাত্তরের নির্যাতন-নিপীড়নসহ ভয়ংকর দুঃখকাতর পরিস্থিতিকে প্রতীকায়িত করেছেন।
এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, মেটাল এনগ্রেভিং মাধ্যমে তিনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করেন সার্থক সব চিত্রকর্ম। তাঁর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সবচেয়ে সার্থক দৃষ্টান্ত তাঁর ‘জলের নিনাদ’ (১৯৮৫) শীর্ষক 888sport live chatকর্মটি। এটি করার জন্য তিনি ছাপচিত্রের প্রায় সব মাধ্যমকে একসঙ্গে ব্যবহার করেন। এর আইডিয়াটা তিনি নেন অর্কেস্ট্রা থেকে। অর্কেস্ট্রায় একসঙ্গে শত লোক বাদ্যযন্ত্র বাজায়, কখনো তার সুর হয়ে যায় ভীষণ চড়া, আবার কখনো তা নামতে নামতে নেমে যায় একবারে সূক্ষ্ম খাদে, আচ্ছন্ন হয়ে যায় বিষাদে। এই যে চড়া সুর থেকে খাদে নামিয়ে আনা, সব যন্ত্রকে একসঙ্গে বাজানো এবং তার মধ্যে এক অপূর্ব সমন্বয় সাধনের অসাধারণ দক্ষতা অর্কেস্ট্রায় আছে তা থেকেই তিনি পরিকল্পনা করেন ছাপচিত্রের সব মাধ্যমকে ব্যবহার করে একটি চিত্র সৃষ্টির। এভাবেই তিন বছরের সাধনার ফল হিসেবে সৃষ্টি হয় ‘জলের নিনাদ’ ছবিটি, যাতে এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, সুগার অ্যাকুয়াটিন্ট, মেজোটিন্ট, লিফটগ্রাউন্ড, এনগ্রেভিং, ডিপ এচ, ড্রাই পয়েন্ট প্রভৃতি মাধ্যমের আশ্রয় নেওয়া হয়।
ছাত্রাবস্থা থেকেই কালো রঙের প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা সৃষ্টি হয় সফিউদ্দীন আহমেদের মনে। কালো তাঁর কাছে বিবেচিত হয় রঙের রাজা হিসেবে। এই রংকে আয়ত্ত করা রীতিমতো দুরূহ মনে হয় তাঁর কাছে। ফলে কালো রঙের অনুশীলনের জন্য ত্রিশ-চল্লিশের দশকেই বহুবার রাতের বেলা গেছেন কলকাতার শিয়ালদা স্টেশনে। উড এনগ্রেভিং মাধ্যমে চিত্র রচনার সময়ে তিনি এই রঙের সমৃদ্ধি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। লন্ডনে গিয়েও তিনি কালোর প্রতি তাঁর এই আকর্ষণ ও কৌতূহল থেকে দূরে যেতে পারেননি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কালোর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার করেন এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে। তারপরও কালোর এই অনুশীলনে তৃপ্ত হয়নি তাঁর মন। নববইয়ের দশকে এসে তিন বছরেরও অধিককাল যাবৎ তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাপৃত হন একগুচ্ছ রেখাচিত্র রচনায়, যেসব চিত্রে কালো রঙের বিচিত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে 888sport live chatীজীবনের শেষ প্রান্তে এসে যেন কিছুটা পরিতৃপ্তি লাভ করেন। এসব চিত্রকে তিনি নাম দেন ‘ব্ল্যাক সিরিজ’ বা ‘কালো চিত্রমালা’। এসব চিত্রে কালো রং ব্যবহারে তাঁর এক প্রকার সিদ্ধিকে আমরা দেখতে পাই। প্রশ্ন উঠতে পারে, কালোর প্রতি কেন তাঁর এই পক্ষপাত? অাঁধার আছে বলেই হয়তো আলো এত আদরণীয়, তাই আলোর আকাঙ্ক্ষায়ই কালোর এরূপ তপস্যা।
আলোর এই আকাঙ্ক্ষাটি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর বহু চিত্রে সূর্যের রূপকল্প ব্যবহারের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানা চিত্রে ব্যবহৃত সূর্যের রূপকল্প 888sport live chatীর অচেতন মনের গভীরে লালিত সুন্দরের প্রত্যাশাটিকেই যেন বাঙ্ময় করে তোলে।
বিষয়-গৌরব কিংবা রূপক-প্রতীকের ব্যঞ্জনা সফিউদ্দীন আহমেদের 888sport live chatকর্মকে গভীরভাবে তাৎপর্যময় করে তুললেও এ সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে তাঁর নির্মাণকৌশল ও সৃষ্টিশৈলীর দক্ষতা। মাধ্যমগত আন্তঃধর্মীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও তিনি সফলতা দেখিয়েছেন। অর্থাৎ এক মাধ্যমের বৈশিষ্ট্যকে অন্য মাধ্যমের চিত্রে প্রয়োগ করেছেন সাবলীলভাবে। যেমন, ছাপচিত্র ও তেলচিত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন রেখাচিত্রে। এচিংয়ের সূক্ষ্ম-সরু রেখা, এনগ্রেভিংয়ের বঙ্কিম গতিশীল রেখা, ড্রাই পয়েন্টের কাব্যিক মাধুর্যময় রেখা যেমন রেখাচিত্রে অন্বিষ্ট হয়েছে, তেমনি অ্যাকুয়াটিন্টের মিহি দানাদার বৈশিষ্ট্য, তেলচিত্রের নানা স্তরময় রঙের প্রলেপগত মসৃণতা প্রভৃতি সমৃদ্ধ করেছে তাঁর রেখাচিত্রের জমিন। আবার ছাপচিত্রের বিচিত্রগামী রেখা যেমন তেলচিত্রের জমিনকে বৈচিত্র্যময় করেছে, তেমনি অ্যাকুয়াটিন্টের মিহি-দানাদার বৈশিষ্ট্যও তেলচিত্রের তলকে করেছে আকর্ষণীয়। এনগ্রেভিংয়ের গুণাগুণও তিনি সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন তেলরং মাধ্যমে। অন্যদিকে তেলচিত্রের টেক্সচারসহ 888sport app গুণও কখনো কখনো অন্বিষ্ট হয়েছে ছাপচিত্রে কিংবা রেখাচিত্রে।
তবে তাঁর সৃষ্টিকর্মে শৈলীগত ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকলেও তা টেকনিকসর্বস্ব নয়, বিষয়ের বৈচিত্র্যে ও সৃজনশীলতায় তা সমান সমৃদ্ধ।
তাঁর চিত্রবৈশিষ্ট্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তাঁর সব ছবির ভেতরেই স্পষ্ট হোক কিংবা অস্পষ্ট হোক বিষয়বস্ত্তর উপস্থিতি লক্ষযোগ্য। তাঁর চিত্র-পরিকল্পনার মধ্যেই রয়েছে এই বিষয়গত উপাদানের বৈভব। বিষয়ের এই মহিমা সৃষ্টি হয়েছে দেশের উপাদান থেকে। এদিক থেকে তাঁর ছবি বাস্তবধর্মী। বিষয়-আহরণে তিনি দেশের আত্মাকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন। কলকাতা-পর্বে যেমন অন্বিষ্ট হয়েছে সেই মহানগরীর বস্তিজীবনের পারাবত, বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলের নিসর্গ, দুমকার প্রকৃতি ও সাঁওতাল-জীবন, তেমনি 888sport app-পর্বে বন্যা, জাল, মাছ, নৌকা, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি তাঁর চিত্রের উপজীব্য হয়েছে নানা শ্রমজীবী মানুষ : 888sport app নগরীর শরবত-বিক্রেতা, বাদাম-বিক্রেতা, ফল-বিক্রেতা, কাপড় বিক্রেতা, ছাদ-পেটানো মজুরসহ পূর্ব বংলার কৃষক, জেলে, মাঝি, ছুতার, কুমোর, তেলি প্রমুখ। এদেশের সংগ্রামশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক জীবনধারাকেও তিনি অবলোকন করেছেন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে। এই গৌরবময় সংগ্রামের একদিকে বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন, অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন মাধ্যমে রচিত তাঁর চিত্রমালায় বায়ান্ন ও একাত্তরের 888sport app download for androidে সৃষ্টি হয়েছে নানা চোখের ফর্ম, তার অশ্রু ও বিষাদের আখ্যান।
এ-প্রসঙ্গে 888sport app download for androidীয় তাঁর দেশাত্মবোধের বিষয়টি। তাঁর চিত্রে তিনি সবসময়ই দেশের স্বরূপসহ একটি জাতির যন্ত্রণাকে তার আবেগসহ তুলে ধরতে চেয়েছেন। তাঁর দুমকাবিষয়ক চিত্রমালা কিংবা বন্যা-জল-মাছ-জাল শীর্ষক চিত্রগুচ্ছে গভীর স্বদেশানুরাগসহ আপন মাটির টান অনুভব করা যায়। তবে এই দেশচেতনা তাঁকে স্লোগানমুখরিত করে না, জীবনের মর্মমূলে গভীর বোধের কাছে তা আবেদন সৃষ্টি করে। এর কারণ, বিষয়বৈভবের সঙ্গে সবসময়ই সমৃদ্ধ শৈলীর একটা অসামান্য সমন্বয় ঘটাতে তিনি চেয়েছেন। এই সমন্বয়চেতনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবনারও সম্মিলন ঘটেছে। তিনি প্রাচ্যের বিষয় ও পাশ্চাত্যের কলাকৌশল – এ দুয়ের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। বিশ্ব888sport live chatের সমকালীন আধুনিকতার সকল নির্যাসকে আয়ত্ত করে নিজ 888sport live chatভুবনকে সার্থকতায় মন্ডিত করেছেন।
888sport live chatগুরু হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি আখ্যায়িত হয়েছেন। যথার্থই এ অভিধা। 888sport appsের 888sport live chatজগতের এক আদর্শ শিক্ষক তিনি। 888sport appsের 888sport live chatকলাকে বিশ্বমানে উন্নীত করে গেছেন তিনি। 888sport live chatচর্চা যে একটি সাধনার বিষয়, সে-সম্পর্কেও তিনি স্থাপন করে গেছেন এক উত্তম দৃষ্টান্ত। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, তিনি তাঁর ছবি বিক্রির ব্যাপারে অনাগ্রহী হওয়ায় তাঁর সারাজীবনের সৃষ্টির প্রায় সবটাই আমরা দেখার সুযোগ পাচ্ছি। তিনি যেমন নিজের ছবির মান প্রতিনিয়ত উন্নত করার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন, তেমনি আমাদের 888sport live chat পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিকেও প্রসারিত ও গভীর করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম ব্যাপক ও গভীর বিশ্লেষণ ও গবেষণার দাবি রাখে। এটা নিশ্চিত যে, তাঁর সৃষ্টিই তাঁকে অমর করে রাখবে। এবং এ-কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যত দিন যাবে তিনি তত বেশি আলোচিত, বিশ্লেষিত ও প্রশংসিত হবেন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.