শেষ বিছানা

আমি পঙ্কজ এবং ওর বিছানার কথা বলতে বসেছি। কিন্তু একটা ঘটনা বলতে গেলে আরেকটা চলে আসে, এর পেছনে মানুষের ইতিহাস, তার মস্তিষ্কের গঠন অথবা আমার ব্যক্তিগত স্বভাব দায়ী হতে পারে। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে একটা বিশেষ পদবাচ্য শব্দ আছে। জীবনে নেই, যদিও জীবন একটা রাজনৈতিক বাস্তবতা। তাহলে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র মতো শব্দ এলো কোথা থেকে? জীবনে রাজনীতি আছে, অথচ রাজনীতি জীবনহীন বলে? আমি অন্য কাহিনিতে চলে যাচ্ছি। দক্ষ গল্পকার হতে হলে আমাকে একজন মানুষের সমগ্র জীবনের একটা নির্দিষ্ট অংশে আলো ফেলতে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট অংশটি জীবনের কোনো একটা সর্বজনীন সত্যের প্রতীক হতে হবে। আমার স্বভাব আমি এক কথার লেজ ধরে অন্য কথায় চলে যাই। গল্পকার হিসেবে ব্যর্থ হওয়ার সকল সম্ভাবনা উন্মুক্ত। পঙ্কজ আমার বন্ধু। ওর সামনে আমি বড় হয়েছি, আমার সামনে ও। তবে কেউই সেটা বুঝতে পারিনি। সামাজিকভাবে ও আমাকে একই রকম দেখেছে সবসময়। আমি ওর পরিবর্তন দেখেছি। দরিদ্র থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত আর সেখান থেকে মধ্যবিত্ত হয়ে উঠেছে। আর এই যাত্রায় কোনো দুর্নীতির আশ্রয় সে নেয়নি। অবিশ্বাস্য হলেও আমি ওর কথা বিশ্বাস করি। কত টাকা কোথায় বিনিয়োগ করলে কী ফল হবে, সে-বুদ্ধি বরাবরই ওর ভালো ছিল। বিশ্বাস না করলে বন্ধুত্ব কিসের, তাই না? তবে বন্ধুত্বও এই কাহিনির বিষয়বস্ত্ত নয়। ছোটগল্পের প্রচলিত সংজ্ঞা অনুসারে একটা ভালো গল্প লিখতে পারব, এমন কথা দিতে পারছি না। আমি একটা শোনা ঘটনা আপনাদের বলছি। মানুষ যখন একটা ঘটনা শোনে, তখন সে নিজের অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাধারা মিশিয়ে নিজস্ব উপায়ে সেই ঘটনার কল্পমূর্তি তৈরি এবং গ্রহণ করে। আমি শোনা ঘটনার বর্ণনাকারক মাত্র। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংস্রব নেই। তার মানে এই নয় যে, আমার কোনো ঘটনা নেই। কিন্তু সেটা এই গল্পের বিষয়বস্ত্ত হিসেবে আমি নির্বাচন করিনি।

মধ্যবিত্ত হিসেবে স্থির হওয়ার পর জীবনের মধ্যবয়সে এসে পঙ্কজ বুঝতে পারল যে, বাকি জীবন মধ্যবিত্তই থাকতে হবে। তখন পঙ্কজ খানিকটা বিমর্ষ এবং 888sport sign up bonusকাতর স্বভাবের হয়ে পড়ল। তেমনি একটা দিনে মোটামুটি আট মাস পরে ওর সঙ্গে আমার দেখা হলো। সেই আড্ডাতেই পঙ্কজ ওর একটা বিবর্তনের কথা আমাকে বলল। আমি তৃতীয় পুরুষের বর্ণনাভঙ্গিতে ঘটনাটা বয়ান করব। কারণ ইনভার্টেড কমাসহ প্রথম পুরুষে ঘটনাটা বললে এটা হুবহু পঙ্কজের গল্প হয়ে যাবে। ঘটনা পঙ্কজের, কিন্তু গল্পটা আমার, আমি লিখছি। অন্য কেউ বললে হয়তো এই ঘটনাই অন্য রূপ বা মাত্রা পাবে। শুধু একজন দক্ষ লেখকই এই ঘটনাকে সর্বজনীন বৈশিষ্ট্যম–ত গল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে সমর্থ আর রুচিশীল পাঠক সেই গল্পে কোনো একটা সামাজিক-রাজনৈতিক বার্তা খুঁজে পাবেন। এইমাত্র যে চারটি বাক্য লিখলাম, অনুগ্রহ করে সেখানে ‘গল্প’ আর ‘ঘটনা’র ব্যবহার লক্ষ করুন। ধন্যবাদ।

ক্লাস টু-তে পড়ার সময় থেকে পঙ্কজকে চিনি। আমরা দোতলায় ভাড়া থাকতাম আর তার পেছনের বস্তিতে পঙ্কজ ওর বাবা-মা, পিঠাপিঠি দুই বড়ভাই, এক বোন আর দাদির সঙ্গে থাকত। পুরো সংসার এক ঘরে। পিতা-মাতা-সন্তান-দাদি সব মিলে দেয়ালহীন এক পরিবার। সন্তানের সামনে দাম্পত্য কলহ, বাবা-মার সামনে মেয়ের ঋতুবতী হওয়া, রাতের অন্ধকারে কামকাতর নিশ্বাস সবই চলত বলে এখন অনুমান করি। তখন বুঝতাম না কিছুই। ওর দাদি অনেক বয়সে আর বাবা-মা অকালে মরে গেল। মানে, বয়স কমবেশি হলেও যাত্রাকাল মোটামুটি কাছাকাছি। পঙ্কজ নিজ যোগ্যতায় উঠে এলো বস্তি থেকে পাকা দালানে। বোনের বিয়ে হুট করেই একজন শ্রমিকের সঙ্গে হয়েছিল। তবে ওর অন্য দুই ভাই বস্তিতেই কিছুদিন থাকার পর 888sport appয় টিকতে না পেরেই বোধকরি কোনো জেলা শহরে চলে গেল। পঙ্কজের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ রইল না। আমি মাঝে মাঝে ওর ভাইদের কথা জিজ্ঞেস করতাম। বলত, মোবাইল কেনার পর থেকে বারো বছর ধরে হঠাৎ হঠাৎ যোগাযোগ হয়। পঙ্কজের দাবি, সে ওদেরকে আসতেও বলে। ওরাই নাকি পঙ্কজকে ত্যাগ করেছে। আমার অবশ্য ধারণা পঙ্কজের প্রতি ওদের অনুভূতিটা হয় হিংসাত্মক অথবা বিব্রতকর। তবে সেদিন পঙ্কজ আমাকে যে ঘটনা বলল, গল্প হিসেবে সেটা মোটামুটি অদ্ভুত।

পিঠাপিঠি দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোটজন প্রথমে পঙ্কজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। সে তার বড় ছেলেকে নিয়ে পঙ্কজের বাসায় আসতে চায়। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে। অনেক কষ্টে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সে ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি মেধার জোরে সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে খরচে অনেক সাশ্রয় হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াতে হলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া গতি থাকবে না। আর এই ছেলেটিই তার বুড়ো বয়সের ভরসা। ভাইয়ের বিব্রত কণ্ঠ শুনে পঙ্কজ একই সঙ্গে বিব্রত এবং আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ল। সে তার ভাইকে নির্দ্বিধায় ছেলেকে নিয়ে তার বাসায় চলে আসতে বলল। পঙ্কজের বউকে আমি ভালো করে চিনি। অতি ভদ্র মেয়ে। সে ভাশুরকে যত্নের ত্র‍ুটি করল না। বহুকাল পর দেখা হওয়ায় দুই ভাইয়ে কী আবেগাপস্নুত দৃশ্য হয়েছিল, সেটা কি কল্পনা থেকে লিখব? … থাক, আবেগ এই গল্পের প্রতিপাদ্য নয়। সমস্যা হলো, পঙ্কজের ভাড়া বাসায় ডাইনিংসহ তিনটি মাত্র ঘর আর তার ভাই ছোট ছেলে, একমাত্র মেয়ে আর বউকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ভাইয়ের মেয়েকে কোনো রাজনৈতিক দলের যুবনেতা যেন নিয়মিত বিরক্ত করে। হুমকিও দিয়েছে। শেষে পঙ্কজের ভাই রাজনৈতিক নেতার হাত-পা ধরে একটা বোঝাপড়ায় এলেও ঝুঁকি কাটেনি। স্থানীয় একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর কিছুটা সহায়তা করেছে। আরেক রাজনৈতিক নেতার উপস্থিতিতে আবার কী এক নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। পরিবারকে ওখানে রেখে আসা ঝুঁকিপূর্ণ। যাক, আমি রাজনৈতিক গল্প লিখছি না। ঘুমানোর আয়োজনের ঘোরপ্যাঁচে কী হলো, পঙ্কজ একা হয়ে গেল। একজন সংসার অমত্মঃপ্রাণ-মধ্যবিত্ত মানুষ হিসেবে টাকা বাড়ানো আর সন্তানকে সামাজিক নিয়মে লালন করাই তার সাধনা। বহুকষ্টে বেশি বয়সে পাওয়া একমাত্র মেয়েকে ছুঁয়ে রাতে ঘুমানো তার অনেক বছরের অভ্যাস। সেই পঙ্কজকেই বাসার অতিরিক্ত জাজিমটা বারান্দায় পেতে শুতে হলো। বাসায় দুটো মেয়েমানুষ অতিথি। ভাইকে শুতে দিতে হয়েছে তার ছেলের সঙ্গে, যাতে ছেলের পড়াশোনার তদারকি হয়। যাদের সঙ্গে পঙ্কজ একসময় দেয়ালহীন নির্লজ্জ সংসারে দিন কাটিয়েছে, তাদের সঙ্গে এক বাসায় থেকেও তখন প্রত্যেকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এই অনুভূতি পঙ্কজ আমাকে বলেনি, ভাবেওনি হয়তো, এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি। পঙ্কজ না বললেও আমি বুঝেছিলাম যে সেই রাতে ওর ঘুম হয়নি। একে তো বিছানা বদলে গেছে, তার ওপর বউ-মেয়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা, তারও ওপরে বারান্দায় শোয়া। পঙ্কজ আমাকে এও বলেনি যে, দিন-পনেরো বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে একসময় রাতে এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে দেয়ালহীন সংসারে বাপ-মায়ের কামার্ত ভারী নিশ্বাসের কথাও ভেবেছিল। প্রথম কয়েকদিন সে খুবই মন খারাপ করে ছাড়া ছাড়া ঘুমে কাটিয়ে দিলো। ভাইপোর ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেলেও যখন ভাই সপরিবারে পঙ্কজের বাসায় আরো কিছুদিন রয়ে গেল, তখন একদিন পঙ্কজ জানতে পারল তার ভাই রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে তার কাছে এসেছে। মফস্বলের চেয়ে 888sport appর রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতাবান হওয়ার কথা আর সেরকম কেউ অথবা কোনো পুলিশকর্তা পঙ্কজের পরিচিত আছে কিনা তার ভাই জানতে চাইল। ভদ্র-মধ্যবিত্ত হিসেবে পঙ্কজ কখনো রাজনীতি বা পুলিশের কাছে যায়নি। পঙ্কজের সমমানের সামাজিক মানুষকে কেউ থানার আশেপাশে ঘুরতে দেখতে চায় না। অদ্ভুত ব্যাপার, পঙ্কজ নাও বলতে পারল না। শুধু বলল যে, সে চেষ্টা করছে আর তেমন কাউকে পেলেই সে সরাসরি অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা রফায় আসবে। তারপর যখন বারান্দায় ঘুম গাঢ় হওয়া শুরু করল, তখনি তার ভাই সপরিবারে বিদায় নিল। এসবই আমার পঙ্কজের কাছ থেকে শোনা ঘটনা। 888sport promo code কেলেংকারিতে জড়িত কোনো রাজনৈতিক নেতাকে আমি চিনি না। সুখের বিষয়, রাজনীতির অংশটুকু বাদ দিলেও এই গল্পের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। কাজেই সম্পাদক মহোদয় যদি আশঙ্কা করেন যে, তাঁর পত্রিকা বা প্রকাশনীর ওপর হামলা হতে পারে অথবা বইমেলায় স্টল পেতে আমার বই বাধা হতে পারে, নির্দ্বিধায় তিনি রাজনীতির অংশটুকু কেটে দিয়ে এটাকে একটা পারিবারিক গল্প করে তুলতে পারেন।

আবার পঙ্কজ ফিরে এলো মেয়ের কাছে। বারান্দার জাজিম তাকে উঠে গেল। খুব দ্রুতই, পঙ্কজের কথায়, মাসখানেকের মধ্যে পিঠাপিঠি দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়জন যোগাযোগ করল। নিতান্ত ঠেকায় পড়ে তার 888sport appয় আসা দরকার। শরীর খুব খারাপ করেছে তার। স্থানীয় চিকিৎসক সন্দেহ করছে উচ্চমাত্রার রক্তচাপের ফলে হৃদরোগ। এবারো পঙ্কজ বিব্রত ও আবেগপ্রবণ হয়ে নিমন্ত্রণ দিলো। সেই ভাইও বউ-ছেলেমেয়েসহই এলো। একজন রোগী সপরিবারে কেন 888sport app শহরে এসেছিল? আমরা ধরে নিতে পারি রোগীর দেখাশোনা আর হাসপাতালে দৌড়-ঝাঁপ করার জন্য যথেষ্ট লোকবল দরকার। নাকি শিশুপার্ক-চিড়িয়াখানা-জাদুঘর দেখবে বলে? ওগুলো তারা দেখেছে ঠিকই, তবে সেটা তাদের উদ্দেশ্য নয়।

পঙ্কজের এই ভাই ভুল সময়ে ভুল পেশা নির্বাচন করেছিল। শহর মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে আসছে, এমন এক গ্রামে সে বর্গাচাষি হয়েছিল। সেই গ্রামের সবচেয়ে কাছের শেষ জলাশয়ের ওপরও যখন ‘দেশজুড়ে আধুনিক যোগাযোগ’ প্রকল্পের অধীনে ভারী যানবাহন চলাচলের মতো একটা সেতু হয়ে গেল, তখন 888sport appর কাছাকাছি হওয়াতে বনভোজন দলের আনাগোনা শুরু হলো। ইটের ভাটা বসল, প্রাথমিকভাবে কয়েকটা সিরামিক কারখানা আর গার্মেন্টস দাঁড়িয়ে গেল, সেগুলোর মালিকদলের কারণে বাইরের লোকের আনাগোনা বাড়ল, ওই অঞ্চলের মানুষ লোভে-ফাঁদে-ভয়ে-প্রয়োজনে নিজেদের মাটির মালিকানা বহিরাগত ধনকুবেরদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের জমিতে অন্যের তৈরি কারখানার শ্রমিক বনে গেল। জমির দাম তরতরিয়ে বাড়ল আর জমিটার মালিক সেখানে ফসল ফলানো প্রকল্প বাদ দিলো। গ্রামে সুলভ খড়-বাঁশ-কাঠ দিয়ে চার-পাঁচটা 888sport appsি কুঁড়েঘর তুলে একটা ইংরেজি নাম দিয়ে জায়গাটাকে ‘পিকনিক প্যালেস’ করে ফেলল। বেশ তাড়াতাড়িই জমে গেল জায়গাটা। পঙ্কজ আমাকে এটুকু বলেছিল। আমি তার সঙ্গে কল্পনা করে নিলাম – লোকজন প্রতি শীতকালে ফসলের প্রাক্তন ক্ষেতে গাড়ির ধুলো উড়িয়ে ‘কটেজে’ বিশ্রাম নিতে আসতে থাকল। অদূরেই ইটের ভাটার কুয়াশা আর যে-নদীতে তারা নৌ888sport slot game করে, সেটা কারখানার বর্জ্যে রাঙা। গ্রামের বাচ্চা-বুড়ো সকলেই সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে ভাবতে থাকে, গ্রামে 888sport appবাসী কী দেখতে আসে? এত হইচই করে কেন? এত জোরে গান কেন বাজায়? পুকুর কী এমন জিনিস যে তার সামনে ছবি তুলতে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর না জানলেও তাদের লোভ জাগে। গ্রামজোড়া সিংহভাগ দারিদ্র্য, চেয়ারম্যান ইলেকশন নিয়ে রোখরোখি, তালগাছ নিয়ে পঞ্চায়েত আর মামলা, পুকুর দিঘির ছড়াছড়ির মধ্যে খাবার পানির অভাব, ফসলের বীজ-সার নিয়ে কারচুপি, অন্যের পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলা আর জমির সীমানা নিয়ে দঙ্গলের মধ্যে 888sport app থেকে গাড়িভর্তি ফুর্তির আমদানি দেখে তারা কৌতূহলী হয়। অনুভব করি, সেইসঙ্গে তারাও 888sport appয় গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে বনভোজনের উদ্দেশ্যে গ্রামে বেড়াতে আসার শখ লালন করে। পঙ্কজের ভাই যেহেতু শুধু ফসল ফলানোই শিখেছিল আর জমির মালিকের সঙ্গে কৃষিজমি নিয়ে একজন মানুষের কী করা উচিত সে-ব্যাপারে তর্কে জড়িয়েছিল, সে হুট করে বেকার হয়ে গেল। বস্ত্তত ওই গ্রামে অধিকাংশ মাঠেই আর ধান ফলানো হচ্ছে না। বেশি হলে আলু বা ফুলকপি-পালং শাকের চাষ হয়, যে-কাজে কিষানি ভাড়া করার কোনো দরকার পড়ে না। গৃহিণীর মনে বাগান করার সামান্য শখই যথেষ্ট। 888sport appয় আসার পেছনে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক হওয়ার একটা বাসনাও, আমার ধারণা, পঙ্কজের ভাইয়ের ছিল। সামাজিক অবস্থান আর শিক্ষার দৌড় মিলে ওটাই তার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা। সেই সময়ে তার স্ত্রী সংসারের হাল খানিকটা ধরতে সমর্থ হলো। তার ভাতার যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেই ‘কটেজে’ সে বনভোজন দলের ফেলে যাওয়া বর্জ্য ঝাড়মোছ করার কাজ জোগাড় করে ফেলল। এই 888sport promo code সংসার আবার সামলে ওঠার আগেই তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ল।

জাজিম আবার নামাতে হলো। পঙ্কজ আবারো বারান্দায়। এবার অবশ্য তার ঘুম আসতে দেরি হলো না। যুক্তিগতভাবে আমরা ভাবতেই পারি যে, অফিসে হঠাৎ কাজের চাপই তাকে ক্লান্ত করেছে। অথবা সে মেহমানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলে পঙ্কজ বলতে পারেনি তার একা ঘুমাতে ভালো লাগতে শুরু করেছিল কিনা। তবে ঘুমাতে অসুবিধা হয়নি। একদিন তার ভাই লজ্জিত কণ্ঠে ছোটভাইয়ের কাছে জীবিকার জন্য হাত পাতে। পঙ্কজের কোনো বড়লোক বন্ধু আছে কিনা যার শখের বাগানবাড়ি সে দেখাশোনা করতে পারে, সে জানতে চায়। মাটিতে ফসল ফলানো-সংক্রান্ত যে-কোনো কাজ সে চোখ বুজে করতে পারবে বলে ভাইকে আশবস্ত করে। পঙ্কজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে জানতে চায়, গ্রামের সবাই যা করছে সে তা কেন করছে না। একটা কারখানায় যোগ দিলেই হয়। জানতে চেয়ে পঙ্কজ জানতে পারে যে, কারখানায় নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের দেন-দরবার চলছে এবং জমির সাবেক মালিকরাই কারখানায় যোগ দিয়ে কূল পাচ্ছে না, জমিহীন বেকার চাষির জন্য দরবার কে করবে? তবে আমার বিশ^াস, পঙ্কজের ভাই এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। বস্ত্তত সে চাষ ছাড়া অন্যকিছু করতে চায় না। যেহেতু জীবনযাপন একটা অভ্যাস, সে-অভ্যাসের বাইরে যেতে চাচ্ছিল না। এতে অবশ্য এটাও অনুমান করা যায় যে, সে এখনো যথেষ্ট ঠেকায় পড়েনি। ঠেকায় পড়লে অভ্যাসের তোয়াক্কা করার কথা নয়। অথবা সে এমন একজন যার অন্য কোনো অভ্যাসই নেই। বাগানবাড়িওয়ালা বড়লোক বন্ধুর খোঁজ করবে বলে আশ্বস্ত করে পঙ্কজ উঠে পড়ে এবং স্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করে। তার স্ত্রী আসন্ন বিপদ সম্পর্কে তাকে সাবধান করে আর একই সঙ্গে ভাইকে সাহায্যও করতে বলে। প্রথম বিপদ – তার অন্য ভাইবোনও জীবিকার দাবি নিয়ে মেহমান হয়ে আসতে পারে। দ্বিতীয় বিপদ – যদি বাগানবাড়িতে কোনো সমস্যা হয়, যেমন চুরি, তবে বাগানবাড়িওয়ালা বন্ধুর কাছে আজীবন মুখচোরা হয়ে থাকতে হবে। পঙ্কজ আমাকে বলেছিল তার বাগানবাড়িওয়ালা কোনো বন্ধু নেই। তবে আমার ধারণা, বন্ধু না হলেও পরিচিত কেউ আছে। নইলে সে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে যাবে কেন? উচ্চমধ্যবিত্ত হওয়ার একটা আকাঙক্ষা বরাবরই ওর ছিল। আমি জানি, এই পর্যায়ে কেউ কেউ আমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইবেন, গল্পের শুরুর দিকে বলেছিলাম যে, বিশ্বাস না করলে বন্ধুত্ব কিসের? আসলে বন্ধু হিসেবে আমি ওকে ভীষণ বিশ্বাস করি, কিন্তু গল্পকার হিসেবে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কিছুই করি না। আর বিশ্বাসে বিশ্বাসে তফাৎ আছে। ভাইকে সাহায্য করা যেমন তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, উপায় থাকা সত্ত্বেও সে ভাইকে সাহায্য করছে না, এটা বলাও লজ্জাজনক। এখন আপনারা বলতে পারেন, এবার আমি অজুহাত খুঁজে নিজের যুক্তি চালিয়ে দিতে চাচ্ছি। বলতেই পারেন। পঙ্কজ স্বাধীন ঘটনা বলায়, আমি স্বাধীন লেখায়, আপনারা স্বাধীন বোঝায়। পাশের গলির গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে কথা বলে ভাইকে একটা চুক্তিভিত্তিক অটোরিকশা বা রিকশার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাও তার স্ত্রীই বলে। গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা তার সমগোত্রীয় সামাজিক বন্ধুদের কানে যাবে না। সেইসঙ্গে তার স্ত্রী এও জানতে চায়, পঙ্কজ যেখানে সবার সঙ্গে নিজের দারিদ্র্য জয়ের গল্প করে, সেখানে ভাইয়ের জীবিকার জন্য কারো কাছে হাত পাতা কতটা দৃষ্টিনন্দন হবে! পঙ্কজের চিন্তাজগৎ ভাইয়ের প্রতি মমতা আর দুর্বলতা ফাঁস হওয়ার ভয়ের মাঝামাঝি দোদুল্যমান থাকে। কিছুদিন বিব্রতমনে ভাইকে এড়িয়ে চলার পর এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখে এই ভাইও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মেনে বিদায় নিয়েছে।

মাস দুয়েক আবার মেয়ের গায়ে হাত রেখে শোয়া। পঙ্কজের কথায়, ওই দুই মাস তার বউ-বাচ্চার সঙ্গে শোয়া অসহ্য হয়ে ওঠে। সে মেহমানের অপেক্ষা করতে থাকে। শেষে তার বোন, বোনঝি এবং বোনজামাই একদিন এলো। ধারণা করি, সে তার ভাইদের কাছে শুনেছে যে পঙ্কজের বাসায় যাওয়া কোনো ব্যাপার নয় এবং 888sport app শহর ভালোই বেড়ানো যায় এবং দারিদ্রে্যর দৈনন্দিন অত্যাচার থেকে কিছুদিনের জন্য রেহাই পাওয়া যায়। এবার পঙ্কজের বউ খানিকটা বিরক্ত হলেও পঙ্কজ একা শোয়ার সুবিধা পায়। এই দফায় নাকি পঙ্কজের মিশ্র অনুভূতি হয়েছিল। বউ-বাচ্চার সঙ্গে শোয়ার অভ্যাসও জাগে, আবার একলা শুয়ে ঘুমও আসে। তবে 888sport app পরিদর্শন এবারকার মেহমানদেরও উদ্দেশ্য নয়। পঙ্কজের বোন স্থানীয় যে-রেস্টুরেন্টে রুটি-ভাজি তৈরি এবং ভাত-তরকারি রান্না করত, সদলবলে সেখানে রুটি-ভাজি খেয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ছাত্রনেতা অসুস্থ হয়ে পড়ে। একই রেস্টুরেন্টে পঙ্কজের বোনজামাই বাজার করত আর মাংস-সবজি কাটাকাটি করত। পঙ্কজের মতে, ওর বোন এখানে নির্দোষ। রেস্টুরেন্টের লোভী মালিকই তার বোনজামাইকে দিয়ে আধাপচা আটা আর সবজি বাজার করাত, যা জোগান দেবে, তা দিয়েই তো খাবার বানাতে হবে। ওই খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে কিনা জানা যায় না, তবে ছাত্রনেতা ওই দোকানেই খেতে এসে দোকানেই কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, এর পেছনে পুরো পচা আটা-সবজি বা সময় দায়ী হতে পারে। নেতার সঙ্গীরা মালিকের গলা চেপে ধরতেই সে সোজা রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো। সবজি কাটতে থাকা পঙ্কজের বোনজামাইকে নেতাধোলাই দেওয়া হলো। বোন মাংস ফেলে বঁটি তুলে তার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে ওই বঁটির আঘাতেই তার একহাত কোনোরকমে শরীরের সঙ্গে ঝুলতে থাকে। হাতছাড়া মানুষকে কাজে রাখার কোনো যুক্তি রেস্টুরেন্টের মালিক খুঁজে পায় না। বোন এক রাতে গাছের ছায়ায় অদৃশ্য হয়ে থেকে এক হাতেই সেই বঁটি দিয়ে ছাত্রনেতাকে মারাত্মক আহত করে প্রতিশোধ নিল। প্রতিক্রিয়ায় বছরখানেক আগের এক মসজিদের দানবাক্সের লাখ টাকা চুরির অপরাধে তাকে সপরিবারে ফাঁসানো হলো। তার ধর্ম এবার মামলা হয়ে ধাওয়া করল। পঙ্কজ দীর্ঘশ্বাস সহকারে বলেছিল যে, টাকাটা আসলে তার বোনজামাই চুরি করেছে। তবে সে মসজিদের টাকা বলে চুরি করেনি, টাকাকে টাকা ভেবেই নিয়েছে। টাকা দরকার তার। সেবার তার বোনজামাই 888sport appয় এসেছিল পাসপোর্ট করবে বলে। পুলিশ আর নেতাদের হাত থেকে বাঁচতে পরিবারসহ ভারত চলে যাওয়ার ইচ্ছা। এবার পঙ্কজ খানিকটা সাহায্য করল, সে পাসপোর্ট অফিসের একজন পরিচিত দালালের সঙ্গে বোনজামাইয়ের যোগাযোগ করিয়ে দিলো, যাতে পাসপোর্টটা তাড়াতাড়ি হয় আর দ্রুতই ওরা ভারত চলে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত বোনজামাইও পাসপোর্ট অফিসের দালাল হয়েছিল। পয়সা খেয়ে দ্রুত পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করে দিত, যতদূর জানি।

যাক, সেটা একটা আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমি আবারো গল্প না বলে গল্পের লেজ ধরছি। গল্পের মধ্যে রাজনীতি বা ধর্ম এনে আমি কারো রোষানলে পড়তে চাই না। পঙ্কজও রাজনীতি নিয়ে একেবারেই সচেতন বা চিন্তিত নয়। রাজনৈতিক জনসভার কারণে যদি শহরের কোথাও রাজপথ বন্ধ থাকে আর সেই বন্ধ পথে যদি তার চলাচলের প্রয়োজন হয়, তবেই কেবল সে মনে মনে দু-চারটে গালি দিয়ে থাকে। আমার গল্পের ঘটনার সঙ্গে ওসবের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতি আমার গল্পের বিষয়বস্ত্ত নয়। আমি একজন পঙ্কজ এবং একটি অস্থায়ী বিছানার কথা বলতে বসেছি – যে-বিছানা কেবল মেহমান এলেই পাতা হয়। পঙ্কজের বোনের পরিবারও একদিন চক্ষুলজ্জায় কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে ফেলে। আমার গল্পের মূলকথা এই – পরপর তিনটি মেহমান-পরিবার পঙ্কজকে অদ্ভুতভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে শুলে তার ঘুম হয় না, হয় ঘোর। দিনভর ক্লান্তি। বিছানা গুটিয়ে তুলে রাখা হয়েছে পরবর্তী যে-মেহমানের অপেক্ষায়, সে কবে আসবে পঙ্কজ কেন যেন আমার কাছে জানতে চায়। আমি চায়ে চুমুক দিই। দেয়ালের ওপাশে না শুলে ঘুম আসে না তার, কিন্তু স্ত্রী-সন্তানওয়ালা একজন ভদ্র-মধ্যবিত্ত একা শোবে কী করে? একা শুতে পারার অবস্থানে থাকার অপরিহার্যতা সে আগে বোঝেনি।