দিনটির শুরু আকস্মিক শোকের বজ্রপাতে। বঙ্গবন্ধু আর নেই। লেলিহান শিখা গ্রাস করে তাঁর চারপাশে কাছে থাকা আপনজন সবাইকে। একই ছকের গ্রাস আরো কজন। ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানে। দিনটি পনেরোই আগস্ট। উনিশশো পঁচাত্তর।
ঘটনার বিবরণ মোটাদাগে এখন সবার আয়ত্তে। এক সুপরিকল্পিত সেনা অভ্যুত্থানে খুব ভোরে আক্রান্ত হয় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল। কোনো রাষ্ট্রীয় নিবাস তিনি নেননি। আগের মতো অভ্যস্ত আপন ঘরে ছিল তাঁর সপরিবারে বসবাস। স্ত্রী, সদ্যবিবাহিত বধূসমেত দুই ছেলে, কনিষ্ঠ পুত্র বালক রাসেল, সবাই। শুধু দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, আপন-আপন স্বামীগৃহে বাইরে। সাধারণ পাহারাদার ছাড়া বাড়তি কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা তিনি রাখেননি। যেন তেমন করলে ঘটতো আপন সত্তা ও সত্যের খণ্ডন। ‘সবার সাথে, সবার মাঝে’ তাঁর হয়ে ওঠা। রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও তিনি আপন প্রেরণার এই উৎস থেকে, অভিজ্ঞানের বস্তুভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। আর পাঁচজন সাধারণের মতোই তাঁরও নির্বিশেষ গৃহস্থ জীবন।
ঘাতকেরা কিন্তু এইটিকেই তাদের চক্রান্তের নকশায় প্রাথমিক গুরুত্ব দেয়। তাদের কারো কারো ওই বাড়িতে অবারিত দ্বার। ছেলেদের সমবয়সী। একসঙ্গে বড় হওয়া। দুদিন আগেও খুঁটিয়ে দেখে গেছে বাড়িঘরের কোথায় কী। তারাই এসেছে ঘাতক দলে পথ দেখিয়ে। মারো, মারো – একটিই নির্দেশ। ‘শিশুঘাতী 888sport promo codeঘাতী কুৎসিত বীভৎসা’ও পায় বীরত্বের ছাড়পত্র। প্রতিদিনের কাপুরুষও মুখ ঢাকে লজ্জায়।
ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত এই হামলায় শুধু বঙ্গবন্ধু নন, তাঁর পরিবারের আপনজন, যাঁরা একই ছাদের তলায় ছিলেন, সবাই নিহত হন। বাদ যায় না শিশু রাসেল। দুই পুত্রবধূর হাতে মেহেদির রং তখনো শুকোয়নি। তারাও হয় নিকৃষ্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার। ফটকে পাহারাদারদের কিছু বুঝে ওঠার আগেই সরাসরি খুন করে ঘাতকদলের দরজা ভেঙে হামলা। নিখুঁত ছক কষে। যাদের আমরা বলি ‘পশু’ তারাও এতো নির্মম হয় না। মানুষের বিকার পশুর সহজাত বৃত্তিকে পরাস্ত করে। তবু বলি তারা মনুষ্য পদবাচ্য। অবিমিশ্র ঘৃণার রাজ্যে সংবর্ধনার পাত্র। সবাই কিন্তু এই দেশেরই সন্তান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার।
সেদিনের হত্যাকাণ্ডের এইখানেই শেষ নয়। আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মণির বাড়িতেও চলে একই সময়ে একই রকম পূর্বপরিকল্পিত হামলা। নিশ্চিহ্ন হন তাঁরাও।
তবে নৃশংসতারও শেষ নেই। শেষ নেই আত্মাবমাননার ও আত্মলজ্জার। দেশবাসীর নামেই রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করে তারা কারাগারে নিক্ষেপ করে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের চার প্রধান নায়ক তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানকে। পরে তেসরা নভেম্বরের রাতে দখলদার রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ওই চারজনকে একই ঘাতকচক্র যাকে বলা হয় আইনসম্মতভাবে সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান, সেই জেলখানায় একদল খুনিকে পাঠিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই কলঙ্ক মাথায় নিয়েই আমাদের পথচলা। এখনো। আমাদের অভিজ্ঞতা কোনো আত্মানুসন্ধানের বা নৈর্ব্যক্তিক কল্যাণের নির্দেশ কতটুকু দেয়, বুঝতে পারি না। তাই ক্ষতলাঞ্ছিত হৃদয়ে আর একবার পেছনে তাকাই। রবীন্দ্রনাথ জীবনের সায়াহ্ণ বেলায় বিপুল বিকারের নগ্ন উল্লাসে বেদনার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে আর্তনাদ করেছিলেন, ‘সজ্ঞানে নিষ্ঠুর যারা উন্মত্ত হিংসায়/ মানবের মর্মতন্তু ছিন্ন ছিন্ন করে/ তারাও মানুষ বলে গণ্য হয়ে আছে!/ কোন নাম নাহি জানি বহন যা করে/ ঘৃণা ও আতঙ্কে মেশা প্রবল ধিক্কার -/ হায়রে নির্লজ্জ ভাষা! হায় রে মানুষ!’ (১৯৪০) এই অতল গভীর হাহাকার এখনো আমাদের পরাস্ত করে চলে। তারপরেও ফিরে তাকাই। নরকের স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করি। তা বাস্তব। এবং এই 888sport appsে আমাদের কৃতকর্মেই তার লালন-পালন। প্রবল বিস্ফোরণ তার পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। নির্লজ্জ-নৃশংস পুনঃকম্পন ক’মাস পর তেসরা নভেম্বরে। বিকট মুখব্যাদানে ‘প্রচ্ছন্ন পশু’র আতঙ্ক আমাদের যায় না।
দুই
পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর কেটে গেছে প্রায় অর্ধশতক। ১৯৭১-এ ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport appsের অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েও বিশ্ব-মানচিত্রে তা একই রকম দৃশ্যমান। তবে বাস্তব তার নিজের তাগিদে বদলায়। হাঁ-না, নতুন-পুরোনো, জানা-না-জানা, সবই তাতে তালগোল পাকিয়ে থাকে। যদিও অনিবার্য চলমানতা। কাল নিরবধি। এখানে পঁচাত্তরের পরে যার জন্ম, বেঁচে থাকলে সে আজ প্রৌঢ়। এদেশে আনুমানিক জন888sport free betর শতকরা প্রায় পঁচাত্তর ভাগ এই রকম। আরো প্রায় পাঁচ ভাগের ওই সময়ের কোনো 888sport sign up bonus নেই। কারো বোধ-বুদ্ধি বিবেচনা গড়ে ওঠে একটু একটু করে। এবং তার পেছনে কাজ করে প্রত্যেকের আপন-আপন মন-মেজাজ ছাড়াও চারপাশের সমাজ-সংস্কার সবকিছু। কেউ স্বয়ম্ভূ নয়। কালের পুতুল সবাই। প্রতি মুহূর্তে পড়ে প্রত্যক্ষের অভিঘাত। তার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে পথ চলা। জেনে, অথবা না-জেনে। ওই পনেরোই আগস্ট বা তার অব্যবহিত পরের ঘটনাগুলি তাই তাদের সরাসরি অভিজ্ঞতার অংশ নয়, পরে শোনে – জানে। সাড়া দেয় তার আপন আপন পরিমণ্ডলে ঘাত-প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠার সঞ্চয় দিয়ে। এখানে কথাগুলি বলা তাদের জন্যেও। অর্জনে-বিসর্জনে বন্ধুর চলার পথ। সব সময়েই। বর্তমানের পশ্চাৎপটে হয়তো, দিকচিহ্নের ইঙ্গিত ফোটে। তাদের খোঁজেই পেছন ফেরা। নইলে ‘কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা’ জাগায়!
আমাদের এই 888sport appsের অভ্যুদয়ের পেছনে অখণ্ড পাকিস্তানের স্বীকৃত ভূমির ওপরেই ধারাবাহিক তিনটি সংগ্রাম তাদের স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। অভিজ্ঞতায়-অভিজ্ঞতায় তারা বিবর্তিত-প্রসারিত হতে হতে এক অনিবার্য পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। তবে বিষয়টি মোটেই একতরফা ছিল না। পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থচক্রের উত্থান তার অসহিষ্ণু দখলদার মনোভাব ও সর্বাংশে নির্বিবেক আচরণ একই সঙ্গে এখানে গণচেতনায় বিরূপতার প্রসার ঘটিয়েছে। আত্মপরিচয়ের ভিত্তি রচনা করেছে বাহান্নোর ভাষা-আন্দোলন, সমর শাসনকে চোখে চোখ রেখে মোকাবিলার প্রথম সফল পাঠ বাষট্টির ছাত্র বিক্ষোভ। লৌহমানব ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকেও ডুমুর পাতার আড়াল খুঁজতে বিদেশের স্বার্থবাহী চক্রের পরামর্শ মেনে বুনিয়াদি গণতন্ত্র (না বুনিয়াদি, না গণতন্ত্র) নামে এক হাঁসজারুর প্রবর্তন করতে হয়। গণঅবিশ্বাস বিন্দুমাত্র কমে না। বরং তা আরো সুনির্দিষ্ট হওয়ার সুযোগ পায়। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ছেষট্টির ছয়-দফা আন্দোলনে তার বিস্ফোরণ। সব রকম জেল-জুলুম-অত্যাচারে মাথা নত না করার এক বিরল নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে চলে তাঁর ব্যক্তিসত্তায়। তৃতীয় সংগ্রামটিও ঘটায় ছাত্র-নেতৃত্বই। ঊনসত্তরের ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে গণআন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল কারাবন্দি শেখ মুজিবের মুক্তি, সেই সঙ্গে আইয়ুবশাহির পতন। দুটো লক্ষ্যই অর্জিত হয়। আসন্ন ফাঁসির সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হন শেখ মুজিব। পরদিন ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ডাকা বিপুল জনসমুদ্রের সামনে তাদের আবেগঘন সমর্থনে তিনি অভিষিক্ত হন বঙ্গবন্ধু নামে। তবে তখনই কোনো প্রত্যক্ষ সংগ্রামের বার্তা কেউ দেয় না। তার শুরু আসলে আমরা করিনি। পাকিস্তানি সমর শাসকরাই তা চাপিয়ে দেয় আমাদের ওপর। যদিও ওই সময়ের বাস্তবতায় এখানে অধিকাংশ মানুষের কাছে আগে-পিছে না ভেবে বিচ্ছিন্নতাই ছিল কাম্য। এটা স্পষ্ট প্রতিফলিত হয় একাত্তরের সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে ও জনগণের তাতে স্বতঃস্ফূর্ত একাত্মতায়। কোনো তৈরি বিবৃতি এটা ছিল না। কিন্তু কথার বাঁধুনিতে কোথাও সরাসরি বিচ্ছিন্নতার ঘোষণা না থাকলেও দেশের কর্তৃত্ব যে জাতীয় সংসদে নির্বাচনের রায়ে তাঁরই হাতে, এটা বোঝানোতে কোনো ঘাটতি ছিল না। জনগণও তখন থেকে পঁচিশে মার্চ পর্যন্ত এখানে তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। কোথাও শান্তি-শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটেনি। সমরশাসকের আজ্ঞাবাহকরাও তাঁর বিরুদ্ধে আইন ভাঙার কোনো অভিযোগ খাড়া করার সুযোগ পায়নি। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রসজ্জা সম্পূর্ণ হলে কোনো অনুমোদিত নীতির তোয়াক্কা না করে পঁচিশে মার্চ রাতে তারাই এখানে নিরস্ত্র জনগণের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ঠিক তারপরেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন হানাদার। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে রাতের অন্ধকারে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে তারা কারাগারে আটকে রাখে। শুরু হয় আমাদের মুক্তিসংগ্রাম। অঙ্ক কষে ছক কেটে আগে থেকে হিসাব করে নয়। বঙ্গবন্ধুর পূর্বঘোষিত নির্দেশে হানাদারদের হামলার মুখে সবার পথে নামা। পথই পরে পথ দেখায়।
মুক্তিসংগ্রাম কিন্তু গড়ে তোলে ধারাবাহিকতার ভেতরে অনিবার্য তাগিদে বিবিধ উদ্যোগ। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে নানাদিক থেকে একই লক্ষ্যে তাদের পরিচালনা। কিন্তু মুক্ত স্বাধীন দেশে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দৃষ্টিপথ রচনায় ও পারস্পরিক প্রভাববলয় প্রসারের দ্বান্দ্বিকতায় তাদের বিভাজন মাথাচাড়া দেয়। ঐতিহ্যলালিত আত্মপরিচয়ের বিকার যাদের মজ্জাগত, তাদের কাছে 888sport appsের অভ্যুদয়ে ছিল পরাজয়ের গ্লানি। এক বিধ্বংসী প্রতিশোধস্পৃহার বিকৃতি সুযোগ পেলেই ফণা তোলে শুরু থেকেই। বিভিন্নমুখী অপতৎপরতার, এমনকি হঠকারী উন্মত্ততার সংযোগও ঘটে কোনো কোনো ত্র্যহস্পর্শ বেলায়। যেমন পঁচাত্তরের পনোরোই আগস্টে। ‘এ আমার এ তোমার পাপ’ – এই মর্মচ্ছেদী স্বীকারোক্তি উচ্চারণের দায় বয়ে যেতে হবে চিরকাল আমাদের সবার। একই রকম কদিন পর তেসরা নভেম্বরের জেল-হত্যাকাণ্ডের। তবে শুধু আক্ষেপে আত্মশুদ্ধি মেলে না। ঘটনারাশির পশ্চাৎপটেও নজর দিই। নিজেদের আত্মোপলব্ধির জন্যেই তা প্রয়োজন। অনুরূপ বিকারের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা যে ভবিষ্যতে আর কখনো দেখা দেবে না, একথা সাহস করে বলতে পারি না। হিংসা ও লোভের বশবর্তী মানুষ যে-কোনো সময়ে অধঃপাতে যেতে পারে। প্রলোভনের বিকার মরে না। তার রাজ্যপাট চারদিকে খোলা। সুযোগ-সুবিধার আপেক্ষিক অপ্রতুলতা বাস্তব কাড়াকাড়িতে ইন্ধন জোগায়। ন্যায়ভাবনা ও মানবিক বোধ অনেক সময় অবান্তর হয়ে পড়ে। মুক্ত স্বাধীন 888sport appsে হাঁ-না’র দ্বন্দ্ব আমাদের নিত্যসঙ্গী। স্থান-কাল পাত্রের বিরতিহীন চলায় মিশ্রণে-মিশ্রণে বহুরূপী ছায়া ক্ষমতার অলিন্দে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে চলে।
৭ই মার্চের ভাষণে অমর নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে … সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। …’ এ যেন মন্ত্রবাণী। বাস্তবে ঠিক এমনই ঘটেছিল। ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি …’ – তাতেও ছিল দৃশ্যমান ভবিষ্যৎ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো অনিবার্য, একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। যার পরিণামে, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মিশে ঘটে পনেরোই আগস্ট। আর তারই ধারাবাহিকতায় তেসরা নভেম্বর। ২৬শে মার্চ প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঠিক পরপরই পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তাঁর বন্দি হওয়া যে পরিস্থিতি তৈরি করে, তাতে এক বিপুল অনিশ্চয়তাও মিশে থাকে। সংগ্রাম ও দুঃখবরণ ভাগ্যলিখন। কিন্তু কোথায় মিলবে প্রতিদিনের নির্দেশ? কীভাবে মুক্ত হবে 888sport apps?
আসলে প্রবাসী 888sport apps সরকারের গঠন, পরিচালনা ও সার্বিক দিকনির্দেশনা কতগুলি অনুকূল সমাপতনের পরিণাম। ১৬ই ডিসেম্বর যে দেশ শত্রুমুক্ত হয় এবং ’৭২-এর ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সগৌরবে স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন, তা-ও এর ধারাবাহিকতায়। কিন্তু একাধিক বিকল্প সম্ভাবনাও ইতিহাসে মাথা গুঁজে থাকে, অথবা নতুন বাস্তবতা তাদের জন্ম দেয়। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এই রকম অশুভ সংযোগে ঘটে পনেরোই আগস্টের চূড়ান্ত বর্বর বিস্ফোরণ। তার রেশ বয়ে চলি আমরা অতি দীর্ঘকাল। সেই অভিজ্ঞতার ছাপ পড়ে সবার ওপর। এখনো তা আমাদের দীর্ণ করে।
এখন বলা যায়, ’৭১-এর ১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে 888sport appsের মুক্তাঞ্চলে যে স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport apps সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ নেয়, ২৫শে মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বাত্মক অহিংস সংগ্রামের পূর্বাপর বিবেচনায় তা নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না। স্বয়ং তার গতিপথ সে রচনা করে, এবং মুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে তা পূর্ণতা পায়। আমাদের চলমান ইতিহাসেরও এ এক শীর্ষবিন্দু। তার প্রতিপদে তাকে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন সংকট পেরোতে হয়েছে। তারা উবে যায়নি। ক্রমাগত বিবর্তিত হতে হতে সমাজ ও রাষ্ট্রের পথ চলায় মিশেছে। যেমন মিশে আছে অতীতের পাকিস্তান-আন্দোলনের ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে বসবাসের অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সুযোগসন্ধানী বৈরী শক্তিও নাক গলাতে পারে। ফাঁক-ফোকরের অভাব কখনো হয়নি। এসবের মিলিত পরিণাম পনেরোই আগস্টের মর্মচ্ছেদী আক্ষেপ; তেসরা নভেম্বরের বিকৃত বীভৎসা।
এলোমেলো কাটাছেঁড়া যেটুকু তথ্য হাতে মেলে, তা থেকে অনুমান, অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে ভারতীয় পক্ষের কারো সঙ্গে কোনো সরাসরি যোগাযোগ কখনো ঘটেনি। তখন কলকাতায় বসবাসরত চিত্তরঞ্জন সুতারের মাধ্যমে সেখানকার কোনো কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথাবার্তা কিছু হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার কোনো রূপরেখা আদৌ কিছু গড়ে ওঠেনি। আসলে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও বাঙালি বিতাড়ন নির্মমতার যে মাত্রায় পৌঁছেছিল, তা আগে থেকে ধারণা করা ছিল কল্পনাতীত। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারাও ছিলেন তাদের আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য। এমন সময় অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে তাঁদের প্রায় সবাই ছোটেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ওই দেশটিও তখন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সীমান্তপথ উন্মুক্ত করে দেয়। তবে প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বিশেষ নির্দেশনা থাকে।
এভাবেই বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আর সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর স্থানীয় প্রধানের যোগাযোগ ও পরিণামে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ৪ঠা এপ্রিল তাঁর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা। একই সময়ে কটা শুভ যোগাযোগ ঘটে। সীমান্ত পেরিয়ে আগেই দিল্লিতে পৌঁছেছেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বিশ্ববরেণ্য অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তখন দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিকসে। আমাদের দুই গুণিজন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তাঁর বাসাতেই ওই সময়ে তাঁদের অবস্থান। পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর অশোক মিত্রও তাঁদের সহমর্মী আপনজন। ওই সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নীতি-নির্ধারণে আর যাঁদের ওপর নির্ভর করতেন তাঁদের ভেতর উল্লেখযোগ্য ডি.পি. ধর ও পি.এন. হাকসার। এঁদের সবার চিন্তা সম-তরঙ্গদৈর্ঘ্য। নুরুল ইসলাম ও রেহমান সোবহান ছিলেন তাজউদ্দীনের গুণগ্রাহী। তাঁর মাধ্যমেই তাঁরা ছয় দফা-প্রস্তাবনায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দাবিগুলি সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপিত করায় সফল হন। এঁদের সবার আন্তরিক উদ্যোগে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে তাজউদ্দীন আহমদের এক সৎ-সাহসী-ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা সহজ হয়। পরে মুখোমুখি দেখা হলে পারস্পরিক আস্থা ও 888sport apk download apk latest versionর একটা সম্পর্ক তাঁদের ভেতর গড়ে ওঠে। ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম উদ্বিগ্ন প্রশ্ন ছিল অবশ্য বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে।
এই বৈঠকেই স্থির হয়, যত দ্রুত সম্ভব তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে 888sport apps পাকিস্তানের সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনে বিজয়ী সদস্যদের নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবে। তা না হলে ভারতের দিক থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যোগাযোগের কোনো পথ উন্মোচিত হবে না। স্বীকৃতির প্রশ্ন নির্ভর করবে এই অস্থায়ী সরকারের কার্যকারিতার ওপর। এই বৈঠক থেকে ফিরে এসেই তাজউদ্দীন সব সীমান্ত এলাকায় ঘুরে নির্বাচিত প্রতিনিধি যাঁদের পেলেন, তাঁদের একত্র করেন। ১০ই এপ্রিল রাতে তিনি বেতারে মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দেন। সাতদিন পর বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে তার প্রকাশ্য শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া শপথ নেন আরো তিন মন্ত্রী – ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ. এইচ. এম কামারুজ্জামান। কর্নেল ওসমানী নিযুক্ত হন মুক্তিসংগ্রামে সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
এই সাংবিধানিক বিশ্বাসযোগ্যতা অন্তত নীতিগতভাবে তৈরি করা আমাদের জন্য ছিল একান্ত জরুরি। কোনো সন্দেহ নেই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহানুভূতি পেতে এর অবদান কম ছিল না। অবশ্যই আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি। কিন্তু আমরা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো মনোবল ধরে রাখতে পেরেছিলাম। এবং তা দেশে দখলদারদের হত্যা-উচ্ছেদ-লুণ্ঠন লাগামহীন মাত্রায় বাড়তে থাকার পরেও। ওখানে দেশ থেকে বিতাড়িত শরণার্থীর 888sport free bet এক কোটি ছাড়ায়। একটা কার্যকর সরকারি কাঠামো
থাকায় এর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার পথ বের করায় মিলিতভাবে এগোনো যায়। অনেক দুঃখ-কষ্টের ভেতরেও আমাদের মনোবল আমরা একেবারে হারিয়ে ফেলি না। স্বাধীনতার পক্ষে সর্বদলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলী গড়ে তোলায় কার্যকরভাবে এই সরকার আমাদের সব মুক্তিকামী মানুষের সমন্বিত মুখ হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু একেও সামলাতে হয় অন্তর্ঘাত। খন্দকার মোশতাক ভেতর থেকে দলবল নিয়ে আমেরিকান কনস্যুলেটের কূটকৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তানে ফেরার ছক করেন। কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুকেও তিনি তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চান। ভাগ্য ভালো শেষ মুহূর্তে তাঁর চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়। তিনি ও তাঁর অনুসারী মাহবুব আলম চাষী সেই মুহূর্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত গৃহবন্দি থেকে যান। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে তিনি আবার ক্ষমতার অন্দরমহলে ঢুকতে পারেন।
পাকিস্তান-আমেরিকার সহযোগিতায় নানামুখী চক্রান্তের প্রকাশ ঘটে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। পৈশাচিক আক্রোশ চরিতার্থ হয় তেসরা নভেম্বর। এ একরকম গণপ্রজাতন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন 888sport appsের মূলমন্ত্রকেই প্রত্যাখ্যান। তেমন করার শক্তি-সাহস তারা সঞ্চয় করে কিন্তু এই দেশেরই আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা থেকে। পাকিস্তান পর্বে চব্বিশ বছরের চিন্তা ও কর্মাভ্যাস এক লহমায় মুছে যায় না। সত্তরের নির্বাচনে স্বকীয় আবেগ শিখর স্পর্শ করেছিল। বৈষম্যের অভিযোগ সুস্পষ্ট রূপ নিয়েছিল। কিন্তু সবই ওই ধিকৃত কাঠামো পাকিস্তানেরই প্রেক্ষাপটে। 888sport appsের মূল্যমানে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবেশ তখনো স্বাভাবিকতায় মেশেনি। সেই সুযোগই কাজে লাগায় কুৎসিত নষ্টচক্র। মানুষের ইতিহাসে তারা সবসময়ে সক্রিয়। চাক বাঁধলেই আশঙ্কা জাগে বিস্ফোরণের। তেমনটিই ঘটেছিল পঁচাত্তরের কালবেলায়।
আজ নিরাসক্ত মনে ভাবতে গেলে ধরা পড়ে বাহাত্তর থেকে চুয়াত্তর, এই তিন বছরে বাস্তবের চূর্ণ দশায় আমাদের অর্জন যেমন অসামান্য, তেমনই বিড়ম্বনার তালিকাও ছিল দীর্ঘ। সবচেয়ে বড় কীর্তি, – যদিও স্বল্পকাল স্থায়ী, কিন্তু মূল্যে অসীম এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্ন-সম্ভাবনার প্রেরণা, – গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport appsের রাষ্ট্রীয় সংবিধান প্রণয়ন, অনুমোদন ও ’৭২-এর ১৬ই ডিসেম্বর কার্যকরভাবে তা চালু করা। যে-কোনো নিরিখে সেরা সংবিধানের এ এক উদাহরণ। মুক্তির ও মানবতার পূর্ণ সমন্বিত প্রকাশ এতে ঘটে। বিশ্বসভায় আত্মসম্মানের সঙ্গে মাথা তুলে আমরা দাঁড়াতে পারি। বলার মতো দ্বিতীয় কাজটি হলো, আমাদের অর্থনীতির দিকদর্শন ও কর্মের অভিমুখ নির্দেশ করে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যাত্রারম্ভ (নভেম্বর, ১৯৭৩)। দুটো উদ্যোগই অবশ্য শেষ পর্যন্ত মহৎ ইচ্ছার দলিল হয়ে থাকে। তবে মুক্ত স্বাধীন সমষ্টি চেতনার বস্তুনির্ভর প্রকাশ কার্যকর ও সফল করার উদ্যোগটুকু সব ভবিষ্যতেই প্রেরণা জোগাবে। হয়তো প্রত্যক্ষের কর্মকাণ্ড বদলে যাবে আমূল। এখনই অনেক কিছু চলে গেছে বাতিলের তালিকায়। তবু তাদের শুদ্ধ-শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন চিরকালের প্রেরণা হয়ে থাকবে। শুধু প্রেরণাই। কারণ সব বাস্তবই অসংখ্য ইতি-নেতির অনিঃশেষ দ্বন্দ্বে কণ্টকাকীর্ণ। আমরা কেবল সজাগ ও সতর্ক থাকার কথা ভাবতে পারি। তবে তাও হবে অনিবার্যত আপেক্ষিক। আজ এটুকু অন্তত বলা যায়, ওই সময়ের বহু স্বরের কোলাহলের ভেতর এই দুই কীর্তির রূপকাঠামো গড়ে তোলার পেছনে বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত ব্যক্তিত্বের প্রেরণা মূল আস্থার জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছিল। চাটুকারবৃন্দ – সবাই তাঁর শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন না – আগ বাড়িয়ে মুজিববাদ আদর্শের ঢাক বাজাতে শুরু করে। এটা কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। বরং ছিল সর্বনাশের পথ দেখানো বাজনদারদের মনোরম বিভ্রম ছড়ানোর অপকৌশল।
মুক্ত স্বাধীন 888sport appsে কোনো সুস্থির পরিমণ্ডল তৈরি হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের অন্তর্ঘাতে বিরাম ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। অভ্যন্তরীণ সংযোগ পথ, বিশেষ করে বড় বড় সেতু, প্রায় সব বিধ্বস্ত। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রাথমিকতা পায় টিকে থাকার লড়াই। পুরনো অভ্যাসের গোড়ায় ধুনো জ্বেলে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িকতাকে আবার সহজ হাতিয়ার বানাতে উঠেপড়ে কসরত শুরু করে। অবাক হই না, তবে দুঃখ পাই, যখন দেখি, ইন্ধন জোগাচ্ছেন কোনো কোনো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। আর চরমপন্থী হক-তোয়াহা চক্রের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হকও ১৯৭৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর (তারিখটি চোখে পড়ার মতো) পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী’ সম্বোধন করে ‘অনেক দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে’ দরবার করেছেন, তিনি যেন ‘অর্থ, অস্ত্র-শস্ত্র ও বেতার ব্যবস্থার সাজ-সরঞ্জাম’ দিয়ে সাহায্য করেন, যাতে ‘জনগণ বিচ্ছিন্ন পুতুল মুজিব চক্রে’র বিরুদ্ধে তাদের যথোচিত প্রয়োগ ঘটানো যায়। (দেখুন Stanley Wolpert, Zulfi Bhutto of Pakistan : His Life and Times, Oxford University Press, 1993, p 248) ভুট্টোও এই ‘সৎ ব্যক্তির’ আবেদনে অনুকূল সাড়া দেওয়ার তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। এদিকে দিনের পর দিন বিষোদ্গার করে চলে হককথা, গণকণ্ঠ, Holiday – এই সব মুখপত্র। লক্ষ্য একটিই। সদ্য স্বাধীন দেশটির – নাজুক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা।
এটা ঠিক, মুক্ত স্বাধীন দেশে এক কোটির মতো ছিন্নমূল উদ্বাস্তু আপন আপন ঘরবাড়িতে কোনো অঘটন ছাড়াই প্রায় নিঃশব্দে ফিরে এসে আগের মতো থিতু হয়েছে। এ এক অসাধারণ ঘটনা। বঙ্গবন্ধুও ফিরে আসায় সবাই আশ্বস্ত বোধ করেছে। কিন্তু মুক্তিসংগ্রামের এক অনিবার্য পরিণাম, গ্রামে-গ্রামে পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক আধুনিক মারণাস্ত্রের বিস্তার। কিছু আসে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতে; কিছু বা পলায়নপর পাকিস্তানিদের হাত ঘুরে তাদের এদেশি অনুগতদের জিম্মায়। অতি বাম সন্ত্রাসবাদীরাও পিছিয়ে থাকে না। পরিস্থিতির টানে পারস্পরিক শত্রুতা ও মিত্রতা ভোল পাল্টায়। গায়ের জোরে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করার পাঁয়তারা চলে। কোথাও-কোথাও সফলও হয়। চূর্ণ-বিচূর্ণ অবকাঠামোয় এরা বাড়তি আতঙ্ক জাগায়। সত্য কথা, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র সরকারি ভাণ্ডারে জমা পড়ে। কিন্তু অনেক অস্ত্র বাইরে রয়ে যায়। তা কম নয়।
১৯৭৩-এর ৭ই মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport appsের অভ্যুত্থানের পর সংবিধান অনুযায়ী প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্যই এ এক বিরাট অর্জন। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতার উত্তরাধিকারে তা এর অন্তর্নিহিত অসংশোধনীয় দুর্বলতাও চিনিয়ে দেয়। প্রাক-সাতচল্লিশ পর্ব থেকেই কোনো সাধারণ নির্বাচনে পছন্দের রায় বরাবর পড়ে এসেছে একচেটিয়া। সত্য কথা, তার ভিত্তিতে প্রথমে পাকিস্তান হয়েছে। পরে একই পথে অগ্রসর হয়ে ছিনিয়ে নিয়েছি আমরা 888sport apps। তবে এতে বিবিধ ধ্যানধারণার সমন্বিত বিকাশ ঘটেনি। বরং ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটেছে। আর একই ছাতার তলে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ আত্মবিধ্বংসী পাশা খেলায় মেতেছে। পঁচাত্তরে অমোচনীয় কলংকের একাধিক বজ্রপাতের পশ্চাৎপটে তার মনুষ্যত্বহীন বিকারের কূটচাল কম দায়ী নয়।
আমরা জানি, আমাদের আত্মচেতনার বিকাশে ছাত্রসমাজের অবদান এখানে অবি888sport app download for androidীয়। বাহান্নোর ভাষা-আন্দোলন আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব মাতৃভাষার মর্যাদার প্রতীক। বাষট্টিতে তাদের বিক্ষোভ সিপাহসালার ঘরে বসে স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের তখত্-ই-তাগদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ঊনসত্তরে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের দুর্বার আন্দোলনই ওই সময়ের জননেতা শেখ মুজিবকে মৃত্যুকূপ থেকে উদ্ধার করে আনে। সবারই কেন্দ্রভূমি ছিল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশে শিক্ষার হার যেখানে নগণ্য, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ছাত্রসমাজ দিকনির্দেশনায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, সেইখানে, যেখানে ক্ষমতার দখলদাররা বাইরের। স্বাধীন 888sport appsের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে সবই অন্তর্গত। কায়েমি স্বার্থের উপাদানও সব মিশ্র। বাইরের বহুমুখী অশুভ শক্তিও তাতে নাক গলায়। পাশাপাশি শিক্ষার ও কাজের যথেষ্ট না হলেও বহুমুখী বিস্তারে গণমানুষের দৃষ্টি আর আগের মতো বিশ্ববিদ্যালয়মুখো থাকে না। তবে আমাদের স্বাধীনতার পরপর আচরণের ধারা পালটায় না। পুরনো অভ্যাসের সঙ্গে নতুন ক্ষমতা কেন্দ্রের সংযোগ নির্দ্বান্দ্বিক হয় না। স্বার্থের বহুমুখী সংঘাত অস্থিরতা বাড়ায়। বিস্ফোরণের বিভীষিকা আস্থার ভিত ভেঙে টুকরো-টুকরো করে।
চুয়াত্তরের ৫ই এপ্রিল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়েই অন্তর্ঘাতে প্রাণ হারান সাতজন ছাত্রলীগকর্মী। শফিউল আলম প্রধান ছিলেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। শোনা গিয়েছিল, সে নৃশংস ঘটনার পেছনে ছিল, শেখ ফজলুল হক মণির অনুসারীদের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বাধীন চক্রের সংঘবদ্ধ অভিযান। সূর্য সেন হল থেকে বিপক্ষ কর্মীদের চোখ বেঁধে ধরে এনে মহসীন হলের টিভি রুমের সামনে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে দাঁড় করিয়ে উল্লাসে ব্রাশফায়ারে খুন করা। পৈশাচিক এই হত্যাকাণ্ডে প্রধান গ্রেফতার হন। পনেরোই আগস্ট জেলেই ছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান 888sport app চিহ্নিত ঘাতকের মতো তাঁকেও আপন দলের ছত্রছায়ায় পুনর্বাসিত করেন।
আস্থার সংকট যে একটা তৈরি হচ্ছিল, তা অস্বীকার করা যায় না। তবে আরো বেশি ভাবনায় ফেলেছিল অর্থনৈতিক দুরবস্থা। তিয়াত্তর-চুয়াত্তরে পরপর দু-বছর খরা ও বন্যা। পরিণাম দুর্ভিক্ষ। বঙ্গবন্ধু দেখলেন, এই বিপর্যয় দাবি করে ব্যতিক্রম পদক্ষেপ। এবং নেতৃত্ব দেবেন তিনি সামনে থেকে। বহু দলের কামড়া-কামড়িতে শুধুই সক্ষমতার অপচয়। আমাদের ওই সময়ের ভঙ্গুর বাস্তবতায় তা বিলাসিতা; – যদিও সুস্থ-স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সেইটিই কাম্য। কিউবা, যুগোশ্লাভিয়া, তানজানিয়া, ভিয়েতনাম – এই সব দেশের অভিজ্ঞতা তাঁকে প্রেরণা জোগায় নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। তবে এও তিনি জানান, ব্যবস্থা আপৎকালীন ও সাময়িক। স্বাভাবিক উন্নতির পথ দেখা দিলে তখনই আবার বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দরজা সব সময়ে খোলা। তাঁরও লক্ষ্য সমাজতন্ত্র – এক শোষণহীন সমাজ নির্মাণ। তবে তা 888sport appsে মানুষের জীবনযাপনের ঐতিহ্য ও কর্মকলার ওপর দাঁড়িয়ে। তাতে ধর্মীয় সহনশীলতা এক প্রাথমিক উপাদান। তিনি শুধু চান বাধ্যতামূলক পারস্পরিক সহযোগিতা – আর তা বহুমুখী পরিকল্পিত কর্মবিন্যাসে। ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণসঞ্চার তাতে প্রাথমিকতা পায়। এটা আরো স্পষ্ট করা হয়, একদলীয় ব্যবস্থা মানে আদর্শিকভাবে কারো আত্মাবলুপ্তি নয়, তা একত্রীকরণে সমন্বয় সাধন, যাতে বহুমুখী পথ চলার অহেতুক ব্যয়ভার বয়ে চলতে না হয়। এবং এ বাধ্যতামূলক নয়, সম্পূর্ণত প্রত্যেকের স্বেচ্ছাধীন। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর থাকবে শুধু একটিই দল : 888sport apps কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ – বাকশাল। যেসব দল বা ব্যক্তি 888sport appsের অভ্যুদয়ে বিরোধিতা করে চিহ্নিত, তাদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের জনগণ এই একক দলে প্রাপ্তবয়স্ক হলে সদস্য হওয়ার যোগ্য। আওয়ামী লীগ শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাকশালে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই ব্যবস্থা যাঁদের মনঃপূত ছিল না, তাঁদের মধ্যে ছিলেন খন্দকার মোশতাক, জেনারেল ওসমানী, তাহেরউদ্দীন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ওবায়দুর রহমান, নুরুল ইসলাম মনজুর, নূরে আলম সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। পঁচাত্তরের ২৫শে জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী হিসেবে একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রস্তাবটি বিতর্কহীনভাবে পাশ হয়। ওইদিনই রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় ব্যবস্থা।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ কিন্তু বাকশালে যোগ দেয় না। এই দলটি গড়ে ওঠার পেছনে আছে ’৭১-এ মুজিব বাহিনীর প্রভাব। মুক্তিসংগ্রামকালে তারা তাদের আলাদা কর্মকাণ্ড বজায় রেখেছিল। নেতৃত্ব প্রধানত গড়ে উঠেছিল ’৬৯-এর ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের পরিচালনায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের এক বড় অংশ থেকে। প্রচার ছিল, মুক্তিসংগ্রামে তাঁরা তাজউদ্দীন-প্রশাসনকে নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখতেন। স্বাধীন 888sport appsে ফিরে এসে তাদের নেতৃত্বের বৃহদংশ চরমপন্থার দিকে ঝোঁকে। তবে কোনো কোনো ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। শেখ মণি ও শেখ শহিদুল ইসলাম অবশ্য আওয়ামী লীগেই থেকে যান।
স্বাধীন 888sport apps কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এক জরুরি দায়িত্ব সরকারে বর্তায়। তা হলো, পাকিস্তানে আটকে পড়া আমাদের নাগরিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে আনা। পাকিস্তান যে এটাকে তাদের স্বার্থে, বিশেষ করে এখানে বন্দি পাকিস্তানি সেনা প্রত্যর্পণের লক্ষ্যে, একটা চাল হিসেবে ব্যবহার করবে, তা অপ্রত্যাশিত ছিল না। আমাদের তখন প্রয়োজন ছিল মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও তাদের মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর প্রভাব খাটানো। এছাড়া অতীত সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠাও নৈতিক এবং ব্যবহারিক ঐতিহ্যে ছিল অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। 888sport apps এসব কারণে যে অনেকখানি নমনীয় ছিল, তা অস্বীকার করা যায় না। ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের সংগঠনে আবার যুক্ত হওয়ার তাগিদও এখান থেকে আসে। পরিণামে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও 888sport appsের আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা, দুই-ই সম্ভব হয়। ১৯৭৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান 888sport appsকে স্বীকৃতি দেয়। পরদিন লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগ দেন। এপ্রিলে তাঁর সম্মতিতেই ভারতে আটক ২৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিপরীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত 888sport appsিরাও ফিরে আসতে পারেন। 888sport apps সেনাবাহিনীতে তাঁরা কোনো শর্ত ছাড়াই আপন আপন পদে পুনর্বাসিত হন। এর মানবিক দিকটি অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে পরিণামে যে নানা অসঙ্গতির সূত্রপাত হয় তার পরিণামফল পরে ভুগতে হয় আমাদের বহুদিন। তাছাড়া তারা যে ছিল প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্য, এর মনোজাগতিক প্রতিক্রিয়া কারো কারো ভেতরেই প্রবল ছিল। 888sport apps-পরিচয় তাদের স্বতঃস্ফূর্ত চেতনায় খুব কমই সাড়া জাগাত।
পঁচাত্তরের শুরু থেকে দেখি প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনে উচ্চকণ্ঠ জনসমর্থন; কিন্তু তারই সঙ্গে এক চাপা উদ্বেগ, অনিশ্চিত যাত্রা আমাদের কোথায় নিয়ে যায়। এই রকম বাস্তবতাতেই চক্রান্ত ঘনায়। তাতে থাকে পাকিস্তান-আমেরিকা-চীনের কুশলী মদদ। অনেক ক্ষেত্রে আলাদা-আলাদা চক্রের সঙ্গে তাদের কারবার, কিন্তু সবার সাধারণ লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর পতন। অতি-বাম তৎপরতায় মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চালু ছিল স্বাধীনতার শুরু থেকেই। মুক্তিসংগ্রামের অভিজ্ঞতা মারণাস্ত্রের সরবরাহ সহজতর করে। তাদেরও থাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। কিন্তু আমেরিকা-পাকিস্তান সম্ভবত একাত্তরের বদলা নিতে সিঁদ কাটে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরেই। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত মদদ জোগায় বিভিন্ন দলে উচ্চাভিলাষীদের। খুবই সম্ভব, বিভিন্ন জন বা গোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন যোগসূত্র। কিন্তু দক্ষ হাতে রাশ ধরে থাকে কোনো একক চালক। নিজেদের ভেতরে একে অন্যে যোগাযোগ কতটুকু তা আন্দাজ করা শক্ত। আবছা অনুমান একটা, কুমিল্লা একাডেমি এতে যোগসূত্রের কাজ করেছে। মাহবুব আলম চাষী সেখানে যথাযোগ্য আতিথেয়তার সুবন্দোবস্ত রেখেছেন। কাজ ফুরোলে চাষীর পরিণামও রহস্যজনক। সৌদি আরবের মরুভূমিতে এক গাড়ির ভেতরে তাঁর মরদেহটি শুধু পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিশ্চয় যথাযোগ্য সেবাদানের পর প্রভুস্বার্থের কাছে তাঁর কদর ফুরিয়েছিল।
পনেরোই আগস্টের পৈশাচিক কাণ্ডের পেছনে যোগসূত্রগুলো এখন অনেকটা অনুমান করা যায়। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে জিয়াউর রহমান, ডালিম, নূর, ফারুক, হুদা, মহিউদ্দিন – এই রকম একটা চক্র, বাইরে আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে খন্দকার মোশতাক ও তাঁর অনুগতদের নিয়ে এক বৃত্ত। কিন্তু এটাই সব নয়। জাসদের কারো কারো সাথেও ছিল তার যোগাযোগ। তবে সম্ভবত তা আকস্মিক সহযোগিতার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। প্রত্যেকে মনে করে তার গুরুত্বই প্রধান। অনেকটা প্রকাশ্যে আসে তেসরা নভেম্বরের বর্বরতার পর। তবে রাশ টেনে ধরা ছিল আমেরিকা-পাকিস্তান-অনুগতদের হাতে। আগেই আওয়ামী লীগের ভেতরে কোণঠাসা তাজউদ্দীন। মোশতাক-জিয়াউর রহমান কিন্তু কাউকে ছাড় দেয় না। তাদের অন্তর্জাল অনেকটা উঁকি দেয় ৩রা থেকে ৭ই নভেম্বরের ভেতরের বিস্ফোরণকাণ্ডে।
পনেরোই আগস্টের ঘটনাক্রম এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। ‘হৃদয় খুঁড়ে বেদনা’ জাগানোও। তবে তেসরা নভেম্বরের জেলহত্যা আদিমতম বর্বরতারও সীমা ছাড়ায়। ঘটে মূল পান্ডা খন্দকার মোশতাকের নির্দেশেই। চার জাতীয় নেতাকে মৃত্যু কিন্তু অমরতা দেয়। পরের চারদিনে ভেতরের যোগসাজশের কিছু কিছু উঁকি দেয়। আন্দাজ একটা মেলে।
জেলহত্যার অন্যায় মুক্তিসংগ্রামী খালেদ মোশাররফের সহ্যের বাঁধ ভাঙে। পরিকল্পনা ছাড়াই এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ৪ঠা নভেম্বর তিনি ক্ষমতা দখল করেন। জিয়াউর রহমান বন্দি হন। কিন্তু একদিন পরেই অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীতে উঁচু-নিচু ভেদাভেদের বিরুদ্ধে গণবাহিনীর নামে বিদ্রোহের ডাক দিয়ে একত্রে অভিযান চালিয়ে খালেদ মোশাররফকে খুন করে জিয়াউর রহমানের মুক্তি ঘটিয়ে তাঁকেই সমর-শাসনের দায়িত্বে প্রতিষ্ঠিত করেন। (৭ই নভেম্বর ১৯৭৫) আর ক্ষমতা করায়ত্ত হলে প্রথম সুযোগেই সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ঘটানোর অপরাধে কর্নেল তাহেরকে সামরিক আদালতের বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করে জিয়াউর রহমান নিজে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পথে হাঁটেন। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জাসদের যোগসূত্র অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। একই সঙ্গে এ থেকে পনেরোই আগস্টের পশ্চাৎপটও অনেকটা ফুটে ওঠে। তাতে অন্যতম মূল কেন্দ্রীয় চরিত্র খন্দকার মোশতাক শুরুতে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু খালেদ মোশাররফ তাঁকে বিতাড়িত করেন। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সফল বিদ্রোহ জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসায় ঠিকই; কিন্তু সামরিক শাসনে খন্দকার মোশতাককে ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ থাকে না। ঘৃণ্য দুর্বৃত্তটি পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। তবে তাঁর কোনো বিচার হয় না। ক্ষমতার নতুন নায়ক জিয়াউর রহমান তা হতে দেন না। শুধু তাই নয়। পনেরোই আগস্টের সরাসরি খুনিদেরও তিনি দায়মুক্তি ঘোষণা করেন। অনেক পরে যথোচিত বিচারে তাদের কারো কারো মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। তবে সব এখনো কার্যকর হয়নি। খুনিরা বিদেশে বহাল তবিয়তে বাস করছে।
পালের গোদা খন্দকার মোশতাকের কিন্তু স্বদেশেই স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। তাঁর অনুসারীরা অনেকে এখনো জীবিত। রাজনীতিতেও সরব। এদেশে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণাও আমাদের মজ্জায় মিশেছে। যেন অনিবার্য নিয়তি। চাইলেও তাকে এড়াতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব নির্মাণে তাঁর চল্লিশের দশকের অভিজ্ঞতাও ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাঁর সর্বাত্মক মানবতা তাঁকে বাদ দিয়ে নয়। তাঁকে উদার প্রেক্ষাপটে অন্তঃস্থ করে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি, সেই সঙ্গে পঁচাত্তরে তাঁকে হারানোর বিপুল শূন্যতা ও সর্বগ্রাসী অন্যায় এখনো আমাদের চেতনাকে বারবার আলোড়িত করে। তাঁর হাত ধরে আমরা মানুষ হওয়ার পথে এবং মানুষ থাকার অভিযানে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু আজকের বাস্তবতা একাত্তরের নয়, পঁচাত্তরেরও নয়। তাঁর পথেই আমরা চলবো, একথা বলায় তাই স্ববিরোধ ঘটে, – যদিও তাঁর জীবন মহাকাব্যিক। প্রেরণা তার অনিঃশেষ। সাহস করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাকে সবার জন্যে তুলনায় কল্যাণকর ও ন্যায়সঙ্গত মনে হয়, তার জন্যে শত ঝুঁকি মাথায় করেও এগিয়ে চলা, এই শিক্ষাই তাঁর কর্মসাধনা থেকে আমরা পাই। বিচার-বিবেচনা অবশ্য আপন-আপন চলমান অভিজ্ঞতায়।
আমরা জানি, পঁচাত্তরে ভঙ্গুর প্রেক্ষাপটে তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার ছিল না। ছিল গণমানুষের ক্ষুধা, বঞ্চনা ও সার্বিক বিশৃঙ্খলা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে চূড়ান্ত পদক্ষেপ। আরো জেনেছি, সমকালীন বিশ্বে শোষিত জনগণের সংগ্রাম ও সাধনা তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। সমাজতন্ত্রকে তিনি লক্ষ্য হিসেবে সামনে ধরেছিলেন; যদিও কোনো ধরাবাঁধা পথে নয়; এদেশে গণমানুষের অভিজ্ঞতাজাত নির্যাস থেকে সংকট মোচনের নির্দেশনার অনুসরণে।
তবে তখনই কিন্তু বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্র ভেঙে পড়ার পূর্বলক্ষণ সব দেখা দিতে শুরু করেছে। বিবিধ প্রচারণার মায়ায় তখন আমরা তাদের খেয়াল করিনি। যে বাধ্যতামূলক সমবায়কে বঙ্গবন্ধু চালিকাশক্তি হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলেন, খোদ চীন গণরাষ্ট্রে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২-এর ভেতরে মাও-জে-দংয়ের নির্দেশনায় মহাউল্লম্ফনকাণ্ডে (মৎবধঃ ষবধঢ় ভড়ৎধিৎফ) তার জবরদস্তি প্রয়োগে তিন কোটির ওপর গ্রামবাসীর প্রাণ যায়। উৎসন্নে যায় আরো কত।
১৯৬২-তে মাও এই উন্মত্ততা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন, তবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাস্তব সংকটের চাপে। তাঁর আক্রোশ রূপান্তরিত হয় মুখ্যত শহরকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক বিপ্লবে (ষাট দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সত্তর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত)। তাতেও কোনো সুফল আসে না। এই দুই কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় চীনে ভিন্নমত দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৭৬-এ মাও-এর মৃত্যুর পর বিপরীতপন্থীরাই দলে ক্ষমতার দখল নেন। আজ সেখানে অর্থব্যবস্থা পাশ্চাত্যে মুক্ত অর্থনীতির যে-কোনো দেশ থেকে বেশি মুক্ত, যদিও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আগের মতোই একই কমিউনিস্ট পার্টির অধীন। দলীয় প্রধানরা প্রায় সবাই এখন বিলিয়নিয়ার। যৌক্তিকভাবে এমন অবস্থার ব্যাখ্যা মেলা খুব কঠিন। তবে কমিউনিস্ট পার্টি টানা ক্ষমতাসীন, এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশটি সমাজতান্ত্রিক, এমন দাবি আর মেনে নেওয়া খুব সহজ নয়। মুক্ত অর্থনীতি যে দাবি করে বাক-স্বাধীনতা, তা কিন্তু বাধা পায় পদে পদে। অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি যে বিশ্বমঞ্চে দেশটির বাড়ে, তা অবশ্য অস্বীকার করা যায় না।
ওই সময়ে সোভিয়েত রাশিয়া ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাথমিক আদর্শ। কিন্তু তখন সত্তরের দশকে দেখা দেয় তার ভেতরেও ভাটার টান। সৃষ্টিশীলতায় নতুন কোনো অভিযান নয়, বরং আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা তার ইচ্ছাশক্তিকে গ্রাস করে চলে। পরে আশির দশকে পার্টিপ্রধান গর্বাচভ কিছু-কিছু ব্যক্তিস্বাধীনতা (পেরিস্ত্রৈকা ও গ্লাসনস্ট) দিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় মস্কোর নগরপাল ইয়েলেৎসিন দলের ভেতর থেকেই বিদ্রোহ করেন। তা দাবানলের মতো ছড়ায়। গোটা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। সমাজতান্ত্রিক দলের কোনো অস্তিত্ব আর থাকে না। অঙ্গরাজ্যগুলোও আলাদা-আলাদা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় – যেমন বেলারুশ, ইউক্রেন, জর্জিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ইত্যাদি। সমাজতন্ত্রের গৌরবের জায়গা কোথাও আর কিছু চোখে পড়ে না। রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান নিজেকে জারের উত্তরসূরি বলে হুংকার ছাড়েন।
জোটনিরপেক্ষ অর্থনীতিসমেত বাজারব্যবস্থাতেও তখন অস্থিরতার ছাপ। শুরু ’৭৩-এ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির আকস্মিক তেলের দাম চারগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায়। সব জায়গায় উৎপাদন-খরচ বাড়ে। কিন্তু প্রকৃত রোজগার কারো বাড়ে না। এখানেও বাণিজ্যচক্রের সাধারণ প্রবণতায় তখন ভাটার টান। সব মিলিয়ে একই সঙ্গে স্থবিরত্ব ও মূল্যস্ফীতি (Stagflation)। বিশ্বজুড়ে উৎকণ্ঠা। 888sport appsেও বাড়তি অস্থিরতা। এসব নিয়ন্ত্রণ করার অপরীক্ষিত হাতিয়ারও ছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা। তার প্রায়োগিক ফলাফল দেখার সুযোগ মেলেনি। তবে রোগ ছিল গভীরে। এরই দাপটে আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রে রিগান ও গ্রেট ব্রিটেনে থ্যাচার-জামানার উত্থান। যা ঘটেনি, তা নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত। আবারো, এখন, পরিপার্শ্বে চোখ রেখে ভাবতে গেলে মনে হয়, একদলীয় শাসনবিধি চালু করলেও বঙ্গবন্ধু হয়তো বেশিদিন বজায় রাখতে পারতেন না। বিশ শতকের শেষ ভাগে ওই ঘটনাবহুল পর্যায়েই যেসব দেশের অভিজ্ঞতা এখানে একদলীয় শাসন প্রবর্তনে প্রেরণা জুগিয়েছিল, তাদের পার করতে হচ্ছিল তখন কঠিন সময়। যুগোশ্লাভিয়াও তিন টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। তাও জাতিগত বিদ্বেষের পরিণামে। মানুষের মর্মঘাতী নৃশংসতা আমাদের আবার বাকরুদ্ধ করে। অবশ্য পঁচাত্তরের অভিজ্ঞতা আমাদের কম হৃদয়বিদারক ছিল না। আমরা বুঝি, শুধু সদিচ্ছা দিয়ে কাক্সিক্ষত কল্যাণ আসে না। চাই তার সঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত তাগিদ।
এটা আমাদের আক্ষেপ কমায় না, যখন দেখি পঁচাত্তরের পর থেকে আজ পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় কেটেছে এখানে পাকিস্তানি ভাবধারায় পুষ্ট ক্ষমতার নির্দেশনায়। বোঝা যায়, প্রভাব-বলয়ে পাকিস্তান-আন্দোলন ও সেই রাষ্ট্রে বসবাসের অভ্যাস কতটা ছাপ রেখে গেছে। এটা সরল যোগ-বিয়োগের ব্যাপার নয়। চেতনায় মিশ্রণে তারও অস্তিত্ব থেকে যায়। পঁচাত্তরেও এই ছাপ ছিল দগদগে। আজ অধিকাংশ মানুষের 888sport sign up bonus তাকে ধারণ করে না। কিন্তু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তা ঐতিহ্যে মেশে। বহুজনকে সক্রিয়ও করে। এই রকম আরো অনেক উপাদানে গণমানুষের মনোজগৎ ঠাসা। তাতে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিমায়া ও কীর্তিগাথা এক স্থায়ী সম্পদ। তবে প্রতিদিন পূজারতি ও নাম-সংকীর্তন স্বয়ং কোনো কল্যাণ আনবে না। তাঁর জীবনকথা থেকে সঞ্চিত প্রেরণায় মিলিত উদ্যোগে লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে পারলেই সার্বিক মঙ্গল হয়তো কিছু না কিছু আমরা ধারাবাহিক যোগ করে যেতে পারব। অন্তত ততদিন, যতদিন যৌথ 888sport sign up bonusর সঞ্চয়ে তাঁর ব্যক্তিমায়া ও কর্মপ্রতিভা জাগ্রত থাকবে।
সবশেষে আর এক সান্ত্বনাহীন আক্ষেপ। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এটা অনেকেরই জানা, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের অন্তত মাস চারেক আগে থেকে বঙ্গবন্ধু ও 888sport appsের প্রকৃত হিতৈষী কেউ কেউ তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁকে ঘরে-বাইরে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি সেসব উড়িয়ে দেন। তিনি যে জাতির পিতা, এই মর্যাদাবোধই কি তার কারণ? মোজেস বা নূহর মতো প্রাচীন গোষ্ঠীপিতার মর্যাদার অহংকার কি তাঁর অবচেতনে বাসা বেঁধে অবিচল ছিল? যেন এ নিয়ে কোনো সংশয় জাগাও তাঁর সুবিস্তৃত আত্মসত্তার অপমান? সদুত্তর জানা নেই। তবে মাশুল গোনার শেষ নেই। এখনো না।
দেখুন
১. শেখ সাদী, বঙ্গবন্ধু অভিধান, কথাপ্রকাশ, 888sport app, ২০২০।
২. কামাল হোসেন, তাজউদ্দীন আহমদ : 888sport appsের অভ্যুদয় এবং তারপর, অঙ্কুর প্রকাশনী, 888sport app ২০১৭।
৩। Bass, Gary J, The Blood Telegram, Random House, India, 2014.
৪। Raghavan, S., 1971 : A Global History of the Creation of Bangladesh, Harvard University Press, Cambridge, Massachusetts, 2013.


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.