শোভা সেনকে 888sport app download for android

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শোভা সেন : শতবর্ষের মানচিত্রে

১৩.৮.২০১৩-তে 888sport live chatী শোভা সেনের ৯৩ বছর বয়সে জীবনাবসান আক্ষরিক অর্থেই বাংলা live chat 888sport-নাটক-যাত্রা888sport live chatের একটি ধারার অবলুপ্তির স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত হয়ে
থাকবে। তিনি ছিলেন বাংলা live chat 888sportের মধ্যবয়স থেকে সে-888sport live chatের সঙ্গে যুক্ত, বাংলা নাটকের আধুনিক যুগ তাঁর প্রসন্ন প্রশ্রয় পেয়েছে, আর সেসঙ্গে যাত্রা888sport live chatের সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্তি ছিল সম্ভ্রান্ত ও তাৎপর্যময়। তাঁর সুদীর্ঘ জীবন তাঁকে প্রাচীন ও নব্যযুগের 888sport live chatীদের সঙ্গে কাজ করায় যেমন সুযোগ করে দিয়েছে, একই সঙ্গে তাঁর 888sport live chatচেতনায়, তাঁর অভিনয়ধারায় বেণিবন্ধন ঘটেছে সাবেকি ঘরানার সঙ্গে অধুনাতনের। প্রগতিশীল ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মে তিনি আশৈশব লালিত হয়েছিলেন মুক্তচিমত্মা ও সদ্ভাবনার উদার পরিবেশে, যা তাঁর কারু-বাসনাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল, আনুকূল্য করেছিল তাঁর অভিনয়-জীবনকে সাবলীল ও নিরঙ্কুশ করতে, যদিও জীবনযাপনের প্রতিকূলতা, ব্যক্তিগত জীবনে চড়াই-উৎরাই তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে বরাবর।

পিতা ছিলেন ডাক্তার নৃপেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। জন্ম ১৯২৩-এ, ভারত তথা উপমহাদেশীয় ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের সূচনা হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুবিধ ঘটনার ঘনঘটায়। ১৯১৯-এ রচিত হলো ভারত-শাসন আইন, তৈরি হলো রাউলাট আইন নামে দমনমূলক ব্যবস্থা, যার প্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগ কা- এবং এরই পাশাপাশি খিলাফত আন্দোলন। ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী, চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষচন্দ্র প্রমুখের প্রবল কর্মচাঞ্চল্য একদিকে, অন্যদিকে ১৯২৩-এই বাংলার ‘মুকুটহীন সম্রাট’ মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের প্রয়াণ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে লেনিনের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে, তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক গড়ে তুলছেন আধুনিক তুরস্ক, জাপানে হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও অধিক লোকক্ষয়কারী বিপর্যয় ঘটে এই ১৯২৩-এরই ১ সেপ্টেম্বর, ফুজিয়ামার অগ্ন্যুৎপাতে এবং ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় দুই লাখ মানুষের। এই দশকেই মৃত্যু হবে লেনিনের (১৯২৪), সান ইয়াত সেনের (১৯২৫), স্বামী 888sport apk download apk latest versionনন্দ (১৯২৬) ও সৈয়দ আমীর আলীর (১৯২৯)। এ-সময়ে আবিষ্কৃত হয় বেয়ার্ড নামক ইংরেজ বৈজ্ঞানিকের হাতে ‘টেলিভিশন’ যন্ত্র। ১৯২৩-এ প্রকাশিত হলো রবীন্দ্রনাথের বসন্ত গীতিনাট্য, যে-গ্রন্থ তিনি উৎসর্গ করলেন কাজী নজরুল ইসলামকে, আর সেই একই বছরে বেরোল নজরুলের কাব্যগ্রন্থ দোলনচাঁপা। বাংলা 888sport live footballে কলেস্নাল যুগের দাপট দেখা দিলো।

শোভা সেনের যখন জন্ম, সে-সময়ে বাংলা নাটক আর live chat 888sportের অবস্থা কীরকম ছিল? প্রথমে বলা যাক নাটকের কথা। তখন বাংলা নাটক পৌঁছেছে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর
(১৮৮৯-১৯৫৯) যুগে। শিশিরকুমার বাংলা নাটককে শাসন করে গিয়েছেন দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকাল পর্যন্ত, আর জীবিতকালেই এই কিংবদন্তিপ্রতিম নাট্যপ্রতিভা নিজ অস্তাচল দেখে গেছেন। এরই পরবর্তী অধ্যায় নবনাট্য আন্দোলন, যার হাত ধরে আসে গ্রম্নপ থিয়েটার। এক উজ্জ্বল অধ্যায় সেটা বাংলা নাটকের বিকাশ ও পরিপুষ্টিতে।

অন্যদিকে শোভা সেনের জন্মসময় থেকে তাঁর live chat 888sportে আবির্ভাবের কালে বাংলা live chat 888sport শৈশবাবস্থা কাটিয়ে তারুণ্যে পৌঁছে গিয়েছে। প্রথমদিকে ছবি ছিল নির্বাক, কিন্তু বিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে ছবি সবাক হয়। শোভা সেনের জন্মবছর ১৯২৩-এ তেরোটি বাংলা ছবি মুক্তি পায়। মূলত ম্যাডান-ই তখন ছবি তৈরির মুখ্য ভূমিকায়, তাই তেরোটি ছবির পাঁচটির প্রযোজক ছিলেন ম্যাডান। পরিচালকদের মধ্যে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জে. জে. ম্যাডান, চিত্তরঞ্জন গোস্বামী। অভিনেতাদের মধ্যে অহীন্দ্র চৌধুরী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন গোস্বামী প্রমুখ। সে-সময় অভিনেত্রীদের মধ্যে ছিলেন পেসেনস কুপার, আঙুরবালা, মিস শরিফত, মিস জলবেলি ও অন্যরা।

১৯২৩ থেকে ১৯৫০ বাংলা ছায়াছবি কি 888sport free betর দিক থেকে, কি নতুন নতুন পরিচালক-অভিনেতা-অভিনেত্রীর আগমনে ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। সে-সময়ের অভিনেতা ছিলেন নির্মলেন্দু লাহিড়ী, নরেশ মিত্র, জীবন গাঙ্গুলী, ধীরাজ ভট্টাচার্য, অমর মলিস্নক, প্রমথেশ বড়ুয়া, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী, ভূমেন রায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, যোগেশ চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্ন্যাল, কে. এল. সায়গল, রবীন মজুমদার, অসিতবরণ, রাধামোহন ভট্টাচার্য, কমল মিত্র, দেবী মুখোপাধ্যায়, কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবেন বসু, নীতিশ মুখোপাধ্যায়, অভি ভট্টাচার্য, বিকাশ রায়, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ১৯৪৯-এ উত্তমকুমারকেও পাচ্ছি কামনা ছবিতে।
এ-সময়কার, অর্থাৎ প্রাক্-শোভা সেন বাংলা live chat 888sportে অভিনেত্রীদের 888sport free betও নেহাত কম নয় – নিভাননী, কানন দেবী, প্রভা দেবী, রানীসুন্দরী, উমাশশী, চন্দ্রাবতী, মলিনা দেবী, জ্যোৎস্না গুপ্ত, ইন্দুবালা, চুনিবালা, সরযূবালা, রানীবালা, যমুনা দেবী, ছায়া দেবী, রাজলক্ষ্মী, সাধনা বসু, লীলা দেশাই, সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়, মেনকা দেবী, সন্ধ্যারানী, পদ্মা দেবী, রেণুকা রায়, বিনতা বসু, দীপ্তি রায়, বিজয়া দাশ (সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী), 888sport sign up bonusরেখা বিশ্বাস, সুমিত্রা দেবী, অপর্ণা দেবী, অনুভা গুপ্তা প্রমুখ।

পরিচালকদের মধ্যে নামোলেস্নখের দাবি রাখেন নীতিন বসু, দেবকুমার বসু, চারু রায়, মধু বসু, হীরেন বসু, তুলসী লাহিড়ী,  সেতু সেন, সুশীল মজুমদার, সুকুমার দাশগুপ্ত, পশুপতি চট্টোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র। হ্যাঁ, ১৯৩২-এ নটীর পূজা live chat 888sportটির পরিচালনাসূত্রে রবীন্দ্রনাথ, এবং ১৯৩৪-এ ধ্রম্নব ছবিতে অভিনয় এবং সংগীতের সূত্রে কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪৬-এ গ্রেট  ক্যালকাটা   কিলিং।  ছবি    করছেন ওবায়েদ-উল-হক। আর ছবিতে এক বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করছেন বাংলা live chat 888sportে সর্বপ্রথম বাঙালি মুসলমান অভিনেতা ফতেহ লোহানী। কিন্তু ওই দুরূহ সময়ে দু-দুজন মুসলমানের নাম থাকলে আশঙ্কা ছিল অশান্তি বাধার। তাই ওবায়েদ-উল-হক হয়ে গেলেন ‘হিমাদ্রী’ (ভুল বানানসহ) চৌধুরী, আর ফতেহ লোহানী হলেন ‘কিরণকুমার’। ছবিটির নাম দুঃখে যাদের জীবন গড়া, মুক্তি পায় শ্রী, রূপম ও রূপালি প্রেক্ষাগৃহে, ১৯৪৬-এর ২০ ডিসেম্বর। এ-ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী, রেণুকা রায়, রাজলক্ষ্মীরাও। প্রসঙ্গত, এঁরা দুজনেই
’৪৭-পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গে গিয়ে live chat 888sport888sport live chatে নিয়োজিত থাকেন।

’৪৭-এর স্বাধীনতা 888sport app 888sport live chatের ক্ষেত্রে যেমন, live chat 888sportেও নিয়ে এলো নতুন গতি। আগের বছর যেখানে চোদ্দটি ছবি তৈরি হয়েছিল বাংলাতে, ’৪৭-এ 888sport free betটি বেড়ে দাঁড়াল তিরিশে। এটা যে আপতিক নয়, তার প্রমাণ, পরবর্তী পাঁচ বছরে ছবির 888sport free bet ছিল যথাক্রমে ৩৯, ৪৭, ৪৪, ৪৩ এবং ৪৭। তার চেয়েও যা উলেস্নখযোগ্য, ১৯৪৭-এ-ই তৈরি হলো ‘ক্যালকাটা ফিল্ম ক্লাব’, সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত প্রমুখের প্রয়াসে। বিদেশি ছবি দেখার নিয়মিত সুযোগ পেতে শুরু করল সাধারণ দর্শক, যা বিশ্ব live chat 888sportের ধারণাকে স্বচ্ছ করে তুলল। live chat 888sport নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশিত হতে শুরু করে এঁদের সম্পাদনায়। এবং এরই পরিণতিস্বরূপ এলো কলকাতায় আন্তর্জাতিক live chat 888sport উৎসব। ১৯৫১-তে অনুষ্ঠিত এই উৎসব কী যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছিল, তা ঋত্বিক ঘটকের লেখাতেই ব্যক্ত, ‘যে-হলিউড চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম দিয়েছে, সেই গ্রিফিথের হলিউড, সেই আমলের ডিয়েটার্লের হলিউড, গ্রেপস অব রথের জন ফোর্ডের হলিউড, মানবতার ধ্বজাবাহক সে হলিউড আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজকের বলিষ্ঠ জীবনের ধারা চলে এসেছে ইতালিতে, রাশিয়ায়, চেকোসেস্নাভাকিয়ায়। এসব দেশের ছবি কোনোদিনই আমাদের দেখানো হতো না-ই বলা চলে। আজ আমরা, সাধারণ দর্শকরা, প্রথম দেখার সুযোগ পেলাম, বুঝলাম – কত বড় মিথ্যার ধোঁকা দিয়ে আমাদের রাখা হয়েছিল।…
যথাযথ জীবনের দর্পণ বাইসাইকেল থিফ (ছবিটির নাম Thieves, Thief  নয় কিন্তু। তবু ঋত্বিক লিখেছেন, সম্ভবত অনবধানতায়,
‘থিফ’)। ওপন সিটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। কলকাতার দর্শকের কাছে এই উৎসব শিক্ষার একটি উৎস হিসেবে দেখা দিয়েছে। আগে আমরা যেমন ছিলাম, ঠিক তেমনটি আমরা থাকতে পারিই না। আমরা জীবনকে এবার চাইব-ই live chat 888sportের কাছ থেকে।’

হ্যাঁ, এই চাওয়া থেকেই ঋত্বিকের নাগরিক ছবি নির্মাণ, যে-ছবির একটি বিশেষ চরিত্রে শোভা সেনকে অভিনয় করতে দেখি। ১৯৫৩-তে হাওড়া জেলার একটি মফস্বল সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। যদিও এ-ছবিতে শোভা সেনের প্রথম আত্মপ্রকাশ নয়। আর নাটকে তো তারও ঢের আগে থেকে তিনি অভিনয় করছিলেন।

 

শোভা সেন : নাটকের অঙ্গনে

এ-দেশে, বিশেষ করে বাংলায়, বিংশ শতাব্দীর তিনের দশকে গড়ে ওঠে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ (১৯৩৬), আর তার হাত
ধরে ১৯৪২-এ ‘ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও 888sport live chatী সংঘ’। এরপর ১৯৪৩-এ তৈরি হয় ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’, ইংরেজিতে যার নাম Indian People’s Theatre Association, সংক্ষেপে IPTA। এর ছত্রছায়াতেই বাংলায় নবনাট্যের সূত্রপাত। এই নাট্যধারার ভগীরথ বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, স্নেহাংশু আচার্য, সুজাতা মুখোপাধ্যায়, তৃপ্তি মিত্র, বিনয় রায়, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ। ‘নবনাট্য’ কেন, এবং কী ছিল এর এষণা, আবির্ভাবের যথাযথ কারণ? শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বাংলার নবনাট্য আন্দোলন’ 888sport liveে এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখছেন, ‘নবনাট্য মানে সেই নাট্য যেটা জীবনসম্পর্কে আমাদের গভীরতম বোধ এনে দেবে,… যেটা আমাদের বুদ্ধি ও হৃদয়কে একসঙ্গে বেঁধে মহৎভাবে বাঁচবার অনুপ্রেরণা দেবে।’ নবনাট্যের তাই দরকার ছিল সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা, যুগের সঙ্গে সম্পৃক্তি, এতাবৎকালের বাংলা নাটকে, নবনাট্যের ঊষালগ্নে পর্যন্ত যেমনটা দেখা যায়নি বাংলা নাটকে। শিশিরকুমার ভাদুড়ীর প্রতি যথার্থ 888sport apk download apk latest version ছিল শম্ভু মিত্রের, তবু তাঁর মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি নির্মোহভাবে শিশিরকুমারের যে সীমাবদ্ধতার কথা উলেস্নখ করেছিলেন, তার মধ্য দিয়েও নবনাট্য আন্দোলনের উচ্চাকাঙক্ষাটি ধরা পড়ে। যে-শম্ভু মিত্রের বিবেচনায় শিশিরকুমার ‘রাতের পর রাত দেশের সমস্ত লোকের কল্পনাকে জ্বালিয়ে দিয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটা অসহ ঔজ্জ্বল্য নিয়ে’ এসেছিলেন, ‘কলেজের ছাত্রদের মনে হতো রবীন্দ্রনাথ আর শিশিরকুমার, একই পঙ্ক্তির যেন দুটো নাম’, সেই শিশিরকুমারকে নিয়েই একটু পরে ওই একই 888sport liveে শম্ভু মিত্রের আক্ষেপোক্তি, শিশিরপ্রতিভা ‘শরৎচন্দ্রের নাটকের পর আর এগোল না সম্মুখে। আটকে রইল অপসৃয়মাণ অতীতের বালুচরে।’ শম্ভু মিত্র এমনকি আরো অধিক নির্মম, আশাহত ও নিষ্কুণ্ঠ হয়ে লেখেন, ‘আজ তাই দেখি (১৯৪৭ সালের ‘আজ’) রামের ভূমিকা আবৃত্তি করতে গিয়ে বারবার ছন্দ ভুল করেন শিশিরকুমার। লোকে দেখে হাসে। তাঁকে দেখে হাসে, তাঁর সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখে হাসে, তাঁর ‘সখীর দল’ দেখে হাসে। সমস্ত মিলিয়ে একটা শ্বাসরোধকারী অ-সভ্য আবেষ্টনী’ (যুদ্ধোত্তর যুগে বাংলা মঞ্চে সংকট, রচনাসমগ্র, প্রথম খ-, পৃ ৪)। নবনাট্য এই আবেষ্টনীকে ভেঙে দিলো, রচিত হলো যুগের প্রয়োজনে নাটক, আর এ-যুগের নবনাট্যকারেরা হলেন বিজন ভট্টাচার্য, ঋত্বিক ঘটক, তুলসী লাহিড়ী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। শহরে ও বিশেষ করে গ্রাম-গ্রামান্তরে অভিনীত হতে লাগল বিজন ভট্টাচার্যের নাটক আগুন, জবানবন্দী এবং নবান্ন, বিনয় ঘোষের ল্যাবরেটরি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের হোমিওপ্যাথি, ঋত্বিক ঘটকের জ্বালা। এই গণনাট্য সংঘের পক্ষছায়ায় শোভা সেনের নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতে আসা, যদিও তাঁর নাট্যাভিনয়ের সূচনা হয়েছিল তারও আগে থেকে, ১৯৩৪-এ মাত্র এগারো বছর বয়সে যখন তিনি ‘বীণাপাণি পর্দা হাইস্কুল’-এর ছাত্রী। বেথুন কলেজে পড়তেন যখন, সেই ১৯৩৯-৪২ পর্বেও তাঁকে একাধিক নাটকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে – শেষরক্ষ, কাঠুরিয়া, সীতা, রাজা ও রানী। কিন্তু যে-নাটক তাঁকে রাতারাতি প্রবল খ্যাতি এনে দেয়, তা হলো নবান্ন। এ-নাটক রচনার ইতিহাস, প্রযোজনা, মঞ্চসজ্জা, আলো, অভিনয়, সমস্ত কিছুই দিশারি হয়ে দেখা দিলো।
১৯৪২-এ ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও 888sport live chatীসংঘের নাট্য বিভাগরূপে আবির্ভূত হয় ‘গণনাট্য সংঘ’। এর উদ্যোগ নিয়েছিল তখনকার কমিউনিস্ট পার্টি। গণনাট্য সংঘ ছিল পার্টির সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট। সমগ্র দেশে এই গণনাট্য-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দ্রম্নত।

১৯৪৪-এ শোভা সেন গণনাট্যে যোগ দেন। এর আগে ১৯৪২-এর ৪ জুলাই শোভা সেনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর উৎসাহ ও প্রশ্রয় ছিল গোড়ায়, এজন্যই শোভা নাটকে যোগ দিতে, নাটকের প্রয়োজনে বাংলার গ্রামে-গ্রামান্তরে নির্বাধে যাতায়াত করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে এই অভিনয় নিয়েই কিন্তু স্বামীর সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় তাঁর, এবং তা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, একটি পুত্রসমত্মান নিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। পুত্র মায়ের কাছেই থেকে যায়। এটা ১৯৬০ সালের ঘটনা।
১৯৬১-তে উৎপল দত্তের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বাংলা নাটকে শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্রের মতোই উৎপল দত্ত-শোভা সেন দম্পতি অক্ষয় অবদান রেখে গেছেন। আমরা সে-প্রসঙ্গে পরে আসব।

নবান্ন নাটকে বিজন ভট্টাচার্য এবং শম্ভু মিত্রের দ্বৈত পরিচালনা রয়েছে। বিজন অভিনয়ের মহড়া নিতেন মূলত, আর শম্ভু মঞ্চসজ্জা, সংগীত, আলোকসম্পাতের দায়িত্বে ছিলেন। এ-নাটকে তৃপ্তি মিত্রও অভিনয় করেন। তাছাড়া পরিচালকদ্বয় তো ছিলেন-ই, ছিলেন সুধী প্রধান, গঙ্গাপদ বসু, চারুপ্রকাশ ঘোষ, সজল রায় চৌধুরী, মণিকুন্তলা সেন, কল্যাণী মুখোপাধ্যায়, বিভা সেন, ললিতা বিশ্বাস ও 888sport app।

নবান্ন বাংলা নাটকে যুগান্তর নিয়ে এলো নানাদিক থেকে। নাটকের কেন্দ্রে ছিল ১৩৫০ (১৯৪৩)-এর দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কালোবাজারি এবং লাখ লাখ লোকের অসহায় মৃত্যু। সরকার নীরব। এই দুঃসময়ের নাটক নবান্ন, অভিনীত হলো ১৯৪৪-এর ২৪ অক্টোবরে। নাটকের অভিনব বিন্যাসে, বিষয়বস্তুতে দলগত অভিনয়ে, মঞ্চসজ্জায়, সবদিক দিয়েই অভিনবত্ব নিয়ে এলো এ-নাটক। শহর, শহর ছাড়িয়ে গ্রামে, যেখানেই অভিনয় হয়েছে এ-নাটকের, দর্শকের অফুরন্ত অভিনন্দন আর সাধুবাদ অর্জন করেছে।

শোভা সেন এ-নাটকে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করলেন এবং এর ফলে তাঁকে আমরা পরবর্তী প্রায় সত্তর বছর ধরে বাংলা নাটকে অভিনয় করতে দেখি। এই সাত দশকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন নিজেকে দেশ-বিদেশে গিয়ে সেখানকার বিচিত্র নাটকের অসামান্য প্রদর্শন দেখে, যুগন্ধর নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা উৎপল দত্তের নিয়ত সাহচর্যে।

প্রসঙ্গত, উৎপল দত্ত এ-সময়ে তাঁর অভিনয়যাত্রায় ভারত পরিক্রমা করে বেড়াচ্ছিলেন (১৯৪৭-১৯৫৪)। The Shakespearean International Theatre (SITC), যাঁর সর্বেসর্বা ছিলেন জিওফ্রে কেন্ডেল, উৎপলকে দিয়ে অভিনয় করাচ্ছে Pygmalion, The Merchant of Venice, Macbeth, Hamlet, Julius Caesar-সহ আরো বহু নাটক ইংরেজিতে। এরই মধ্যে ১৯৪৯-এ তিনি গঠন করলেন নিজের নাট্যদল Little Theatre Group বা LTG. এই দলেরই ম্যাকবেথ নাটকের বাংলা ভাষায় মঞ্চায়নের সূত্রে শোভা সেন লেডি ম্যাকবেথ চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬৯ পর্যন্ত এই গোষ্ঠীর প্রায় সব নাটকে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। নাটকগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ম্যাকসিম গোর্কির নীচের মহল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অলীকবাবু, শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ, দ্বাদশ রজনী, ওথেলো, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটচৈতালী রাতের স্বপ্ন। তা ছাড়া উৎপল দত্তের লেখা একাধিক নাটকে বহু বিচিত্র চরিত্রে তাঁর অভিনয়প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। যেমন ছায়ানট, ফেরারি ফৌজ, তীর, মানুষের অধিকারে। তবে এই পর্যায়ে সবচেয়ে যুগান্তকারী ঘটনা ১৯৬৫-তে উৎপল দত্ত রচিত-পরিচালিত কলেস্নালের মঞ্চায়ন এবং সে-নাটকে
কৃষ্ণাবাঈ চরিত্রে শোভা সেনের অবি888sport app download for androidীয় অভিনয়।

কলেস্নাল নিয়ে একটু বিশদ না লিখলেই নয়। এ-নাটকটি রচিত হয়েছে ভারতে নৌবিদ্রোহের পটভূমিকায়। সমসাময়িকতা আনার জন্য এর সঙ্গে নাট্যকার উৎপল দত্ত জুড়ে দিয়েছিলেন তখনকার কংগ্রেসের বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপ। যে-কারণে নাটকটি তৎকালীন শাসকদল কংগ্রেসের কোপানলে পড়ে এবং স্বয়ং উৎপল দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। সরাসরি উৎপল দত্তের গ্রেফতারের কারণ কলেস্নাল নাটক নয়, কারণ তাঁর একটি 888sport live, ‘সংগ্রামের আরেক দিক’। প্রতিক্রিয়াশীল একাধিক সংবাদপত্র কলেস্নালের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে নাটকটি মঞ্চায়নে অসহযোগিতা করল। কিন্তু এ-নাটকের অগণিত দর্শক নিজেরাই নাটকটিকে জিইয়ে রাখার জন্য স্বেচ্ছায় পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। এ-নাটকের সঙ্গে, বা বলা যায় LTG-র বরাবরের আলোকসম্পাতের দায়িত্বে
থাকা তাপস সেন সেস্নাগান তৈরি করলেন ‘কলেস্নাল চলছে চলবে’। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশনে ছেয়ে গেল পোস্টার। আরো উলেস্নখযোগ্য, উৎপল দত্তের মুক্তির দাবিতে মিছিল হলো, তাতে পথে নামলেন অন্যদের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়সহ বহু 888sport live chatী-বুদ্ধিজীবী। তারিখটি ১৯৬৬ সালের ১৩ মার্চ। এরই কিছুদিন পর উৎপল দত্ত জেল থেকে ছাড়া পান, আর অচিরেই ৭ মে কলেস্নালের বিজয়োৎসব সোৎসাহে পালিত হলো, যে-উৎসবে শামিল হয়েছিলেন লাখ লাখ লোক মনুমেন্টের পাদদেশে। বাংলা নাটকের ইতিহাসে এ জিনিস অভূতপূর্ব। মার্কসবাদী নেতারা প্রায় সবাই যোগ দিলেন, মিছিলের পর মিছিল এসে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে মনুমেন্টে জড়ো হয়েছিল সেদিন।

কলেস্নাল নাটকের উৎস হচ্ছে শাহাদাত আলীর লেখা নৌবিদ্রোহ, যা ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নাটকটি সোভিয়েতেও অভিনীত হয় সে-সময়, রুশ 888sport app download apk latest versionে। শুধু কলকাতাতেই নয়, এ-নাটকের সমর্থনে এবং উৎপল দত্তের মুক্তির দাবিতে বিশ্বের অন্যত্রও আলোড়ন উঠেছিল। সোভিয়েত কবি দোলমাতভস্কি, জার্মান নাট্যকার ফনকুবা ও পরিচালক হানস পের্টেন, প্রাগের দুসান জ্বাভিতেল, লন্ডনের ওয়ালটার নান, অবজারভার-গার্ডিয়ান-টাইমস পত্রিকা, মার্কিন আন্ডারগ্রাউন্ড থিয়েটারের জোসেফ সেলবি উৎপল দত্তের সমর্থনে মতপ্রকাশ করেন।

এ-নাটকে ঐতিহাসিক বিচ্যুতির কথা বলেছেন সমালোচকেরা। উত্তরে উৎপল দত্ত লেখেন, ‘খাইবার জাহাজ আত্মসমর্পণ করে না কেন, যেহেতু বাস্তবে তা-ই করেছিল?… ঠিক যে-কারণে আইজেনস্টাইনের পোটেমকিন জাহাজ live chat 888sportে আত্মসমর্পণ করে না, বাস্তবে করা সত্ত্বেও, সেই কারণে খাইবার করে না। তারা বৈপস্নবিক সত্যের অগ্রদূত, তথ্য যা-ই হোক না কেন। পোটেমকিন ১৯১৭ সালের সফল বিপস্নবের অগ্রদূত, খাইবার ভারতের স্বাধীনতার।’

শোভা সেন ছাড়াও মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনও এ-নাটকে অভিনয় করেছিলেন। নাটকের প্রধান চরিত্র শার্দুলের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন শোভা সেন (কৃষ্ণাবাঈ), আর স্ত্রী লক্ষ্মীবাঈয়ের চরিত্রে গীতা সেন। শোভা সেন জানাচ্ছেন, ‘এ-চরিত্রে অভিনয় করে আমি ধন্য হয়েছি।’

দুটি উলেস্নখযোগ্য তথ্য হলো, নাটকটির প্রথম অভিনয়রজনী ২৯ মার্চ, ১৯৬৫। তারিখটি উৎপল দত্তের জন্মদিন। আর টালিগঞ্জ ম্যুর এভিনিউতে উৎপল-শোভার যে-বাড়ি, সে-বাড়িটির নাম ‘কলেস্নাল’।

জীবন ও নাটক (এবং live chat 888sportও) সমধারায় এগিয়ে চলে তাঁর। ১৯৬১-র ২৯ মার্চ শোভা সেন রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন উৎপল দত্তকে, পূর্বতন স্বামী দেবপ্রসাদ সেনের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার পর। শোভার বয়স তখন ৩৯, উৎপলের ৩২। ওই বছরেরই ১০ নভেম্বর তাঁদের একমাত্র কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়ার জন্ম। ‘উৎপলের মতো স্বামী পেয়ে আমি সব হারানোর দুঃখ ভুলে গেলাম। অমন প্রশস্ত হৃদয়, উদারচেতা পুরুষ এ-দেশে বিরল’, লিখছেন শোভা সেন।

কলেস্নালের আগে হাজার রজনী অতিক্রান্ত, অঙ্গার বা পরবর্তীকালে তীর কিংবা মানুষের অধিকারে নাটকেও শোভা সেন তাঁর অভিনয়ের আগ্নেয় উত্তাপে ভরিয়ে দিয়েছেন দর্শকহৃদয়। পরবর্তীকালে LTG-র নাম পালটে যখন PLT বা People’s Little Theatre হলো, সেই পর্বেও টিনের তলোয়ার (১৯৭১), ব্যারিকেড (১৯৭২), টোটা (১৯৭৩), দাঁড়াও পথিকবর (১৯৭৯), মালোপাড়ার মা (১৯৮৩), একলা চলো রে (১৯৮৯), লাল দুর্গ (১৯৯০) ইত্যাদি নাটকেও তাঁর অবিসংবাদী জোরালো চরিত্রায়ণ ছিল। তাঁর নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে উৎপল দত্তের মূল্যায়নটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ, ‘কলেস্নালে কৃষ্ণাবাঈ ও তার পরবর্তী চরিত্রগুলিতে এমন এক শোভা সেনকে আমরা দেখতে পাই যিনি আগে যা আদৌ ছিলেন না।’

শোভা সেনের অভিনয়প্রতিভা গড়ে উঠেছিল উৎপল দত্তের পরিচালনায় যেমন, তেমনি বিদেশে যাওয়ার সূত্রে নাটকের মহড়া ও অভিনয় দেখে দেখে।
১৯৬২-তে তাঁদের (অর্থাৎ উৎপল দত্ত ও শোভা সেনের) প্রথম বিদেশ 888sport slot game সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেখান থেকে জার্মানি, সেখানে ‘বের্লিনার অনসম্বল’-প্রযোজিত থ্রি পেনি অপেরা দেখছেন, দেখছেন গোর্কির লোয়ার ডেপথস, ওথেলো, যে-নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন বিশ্বখ্যাত ফেলসেনস্টাইন। দেখছেন প্রফেসর মামলক, অভিনয়ে ভোল্ফগাঙ হাইনটস। জার্মানিতে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয় ব্রেখটের স্ত্রী হেলেনে ভাইগেলের। এঁর অভিনয়ও দেখেন তিনি, এবং শোভা সেনের অভিনয়ধারায় ভাইগেলের প্রভাব পড়ে অতঃপর। ‘ওঁর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বোধহয় বিস্তার করেছিলেন বার্লিনের হেলেনে ভাইগেল’, লিখেছেন উৎপল।

মস্কো আর্ট থিয়েটারে তাঁরা দেখলেন টলস্টয়ের বিখ্যাত নাটক ফ্রুটস অফ এনলাইটেনমেন্ট। মায়াকভস্কি থিয়েটারে দেখলেন ওশেন, মালি থিয়েটারে অস্ত্রোভস্কিরচিত থান্ডারস্টর্ম। বলশয় থিয়েটারও বাদ যায়নি, দেখলেন ব্যালে গিসেলে

এরপর ১৯৬৪-তে গেলেন জার্মানি ও ইংল্যান্ড। জার্মানির কামেরশ্পিল হলে দেখলেন মলিয়েরের তারত্যুফ, কোমিশেওপেরেতে ফেলসেনস্টাইন-পরিচালিত অপেরা ওথেলো। দেখলেন বের্লিন অনসম্বলের শোয়াইক আর আরটুরো উই আর ডায়েটশেস থিয়েটারে শেক্সপিয়রের চারশো বছর পূর্তি উপলক্ষে হ্যামলেট, কিং লিয়ার, রিচার্ড দ্য থার্ড, মেজার ফর মেজার, টিমন অফ এথেনস। চিলির নাট্যকার হোজে কামপোর সঙ্গে তাঁদের আলাপ হয় জার্মানিতে এবং তাঁর লোরকা নাটকের মহড়া দেখার সুযোগ পান।

এরপর লন্ডনপর্ব। শেক্সপিয়র-তীর্থ স্ট্র্যাটফোর্ডে গিয়ে দেখলেন তাঁর লেখা একাধিক নাটকের অভিনয়। চিসেস্টারে ওথেলো দেখলেন, নাম-ভূমিকায় স্যার লরেনস অলিভিয়ের। হলিউড থেকে লন্ডন আসেন তিনি, সপ্তাহে দুদিন, এ-নাটকে অভিনয় করার জন্য, ভাবা যায়! প্রসঙ্গত, শোভা’দের অলিভিয়ের-দর্শনের চোদ্দ বছর আগে সত্যজিৎ-বিজয়া ১৯৫০-এ দেখেছিলেন অলিভিয়েরের নাট্যাভিনয়। বিজয়া রায় আমাদের কথায় লিখছেন, ‘একত্রিশ জুলাই আমাদের কাছে এক 888sport app download for androidীয় দিন। সেদিন আমরা লরেনস অলিভিয়েরের ভেনাস অব জার্ভড দেখতে গিয়েছিলাম। তখন অলিভিয়ের আমাদের প্রথম পছন্দ, বিশেষ করে ওঁর ‘হ্যামলেট’ দেখার পর।’ অন্যদিকে শোভা সেনের প্রতিক্রিয়া, ওথেলো দেখার পর, ‘প্রথম দর্শনেই মনে হলো, উনি ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। কেমন যেন দমে গেলাম।… এর চেয়ে আমাদের ‘ওথেলো’ অনেক বেশি উৎকৃষ্ট প্রযোজনা।’

বিদেশে বহুবার গিয়েছেন শোভা। বেশি গিয়েছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর জার্মানি। এছাড়া চীন, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, 888sport apps। বেজিংয়ে চীনা অপেরা দেখছেন, ইউনানে লান হুয়া হুয়া অপেরা। আবার লু শু্যনের 888sport sign up bonus সংগ্রহশালা বা নর্মান বেথুনের জীবনী অবলম্বনে তৈরি live chat 888sportও সময় করে দেখে নেন। 888sport appয় একাধিকবার যাওয়ার
সূত্রে সেখানকার মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী নাটকে গতিজাড্য এনে দেয় উৎপল দত্ত-শোভা সেন-তাপস সেনের ঋদ্ধ আলোচনা। টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সিদ্দিকী তাঁদের দুটি মেডেল উপহার দেন। অদ্ভুত উপহার, কেননা যে-সোনা দিয়ে নির্মিত সেই মেডেল, সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের অ্যাকশনে পাওয়া সোনা দিয়ে তৈরি। কাদের সিদ্দিকী এক জোতদারের মাথা কেটে টাঙিয়ে রেখেছিলেন। অভিনেত্রী শোভা সেনের কাছে কাদের সিদ্দিকী যেন এক মূর্তিমান অভিনেতা, ধীরোদাত্ত বীর। পারিও ফো থেকে কাজিমির কারোলি, চিলির কার্লো মেদিনা থেকে পিটার ভাইসের মতো নাট্যপরিচালক-অভিনেতার নাটক দেখে যে অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করেছেন, নিজ দেশের, নিজ ভাষার নাটকে তিনি তা প্রয়োগ করে গিয়েছেন। এ-প্রসঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘যা-কিছু জীবনে শিখেছি তার অনেকখানির জন্যই আমি জি. ডি.
আর-এর কাছে ঋণী, এ-কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করব। ‘ব্যারিকেড’ নাটক থেকে শুরু করে যে-কটি নাটকে ইউরোপীয় মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছি, তার ওপর বেশিরভাগ প্রভাব পড়েছে আমার দেখা এখানকার 888sport live chatীদের অভিনয়ের। হেলেনে ভাইগেলের অভিনয় দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়ধারার প্রভাব অজান্তেই এসে পড়ে আমার চরিত্রচিত্রণে। তাই যদি সেসব অভিনয়ের কিছুমাত্র কৃতিত্ব থেকে থাকে তার জন্য আমি ঋণী জি. ডি. আর-এর কাছে।’

শোভা সেন যখন বাংলা নাটকের অঙ্গনে একের পর এক চরিত্র ফুটিয়ে তুলছেন, সমসাময়িককালে আরো দুই অভিনেত্রীও তাঁদের অভিনয়প্রতিভার বিচ্ছুরণে ভরিয়ে তুলছিলেন নাটকের আকাশ। এঁদের একজন হলেন তৃপ্তি মিত্র, অন্যজন কেয়া চক্রবর্তী। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কেয়ার, মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে। এই স্বল্পজীবনে আমরা তাঁর কাছে পেয়েছি বিস্ময়কর অভিনয়দক্ষতা। নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র থেকে শুরু করে তিন পয়সার পালা, বিনোদিনী, ভালোমানুষ, মুদ্রারাক্ষ অথবা বীতংস নাটকে তাঁর অভিনয় এখনো দর্শকের 888sport sign up bonusধন্য হয়ে আছে। অন্যদিকে তৃপ্তি মিত্রের রক্তকরবী, রাজা, অপরাজিতা, গ-ার, চার অধ্যায়, ঘরে বাইরের অভিনয় অবি888sport app download for androidীয় হয়ে আছে। এই তিন অভিনেত্রী বাংলা নাটককে যা দিয়ে গেছেন, তার মূল্যায়ন এখনো অপেক্ষেত। এ-সময়ে পেশাদারি নাটকের দলগুলোর জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে এঁদের, এ-কথা মনে রাখলে এই অভিনেত্রীদের ভূমিকাকে আরো সম্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে দেখতে শিখব আমরা।

মৃত্যুর কয়েক মাস আগেও নববই-উত্তীর্ণ বয়সে তাঁকে মঞ্চে আবির্ভূত হতে দেখা গিয়েছে। একলা চল রে নাটকে অভিনয় করেন সে-রাতে। মৃত্যুর পর দেহদান করে আরো অধিক সম্মাননীয় হয়ে উঠলেন তিনি আমাদের কাছে। এক যথার্থ আধুনিক মানসিকতার প্রমাণ রাখলেন তিনি এভাবে।

 

শোভা সেন : live chat 888sportাভিনেত্রী

শোভা সেনের live chat 888sportাভিনেত্রী জীবনের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা হলো, নিমাই ঘোষের ছিন্নমূল এবং ঋত্বিক ঘটকের নাগরিক ছবিতে অভিনয় করা। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবিকে বাংলা live chat 888sportের ইতিহাসে যুগান্তকারী আখ্যা দিলেও এ-কথা মনে রাখা জরুরি, পথের পাঁচালী ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে
নবতরঙ্গ-পরিবাহিত এই ছবিদুটি নির্মিত হয়েছিল। শোভা সেন যখন ১৯৪৪-এ নাটক করছেন নবান্ন, সেই সময় থেকেই ঋত্বিক ও নিমাইয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। সেই সূত্রেই ১৯৪৭-এর দেশভাগের কাহিনিকে ভিত্তি করে যখন সিনেমা তৈরির কথা ভাবছিলেন নিমাই, ছবিতে বাতাসী বলে চরিত্রে তিনি শোভাকে নির্বাচন করেন। এ-ছবিটিতেই অভিনয়ের সূত্রে তাঁর প্রথমবারের মতো live chat 888sportে অভিনেত্রীরূপে আবির্ভাব, যদিও এ-ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে (১৬.২.১৯৫১) সত্যেন বসুর পরিবর্তন (২৫.১০.৪৯) আর প্রেমেন্দ্র মিত্রের কাঁকনতলা লাইট রেলওয়ে (৭.৭.১৯৫০) মুক্তি পায়, কালীপ্রসাদ ঘোষের ছবি বিদ্যাসাগরও (২৯.৯.১৯৫০)। তবু ছিন্নমূল নানা কারণে বাংলা live chat 888sportের ইতিহাসে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শোভা সেনের live chat 888sportে যোগদানের ক্ষেত্রেও। ছবিটি এ-দেশে খুব একটা সাফল্য পায়নি, কিন্তু ১৯৫৩-তে যখন সোভিয়েত চিত্রপরিচালক পুদভকিন আর অভিনেতা চেরকাশভ কলকাতায় এলেন (চেরকাশভ আইজেনস্টাইনের ছবি ইভান দ্য টেরিবল আর আলেকজান্ডার নেভস্কির মুখ্য চরিত্রাভিনেতা) তাঁরা ছিন্নমূল দেখে এতটাই মোহিত হলেন যে, তাঁদেরই উদ্যোগে ছবিটি সোভিয়েতে পাড়ি দিলো। নিমাই ঘোষ সোভিয়েত দেশে আমন্ত্রিত হলেন, এবং ছবিটি সোভিয়েত দেশময় সাতশোটি হলে দেখানো হলো। এ-ছবিতে শোভা সেন ছাড়াও নবান্ন নাটকের বহু
অভিনেতা-অভিনেত্রীই অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করেন ঋত্বিক ঘটকও।

সত্যেন বসুর ছবি পরিবর্তন করার সময়ে শোভা পরিচিত হন অজয় করের সঙ্গে, পরবর্তীকালে live chat 888sport-পরিচালক হলেও সে-সময় যিনি ছিলেন ক্যামেরাম্যান। কানন দেবী-প্রযোজিত ছবিতে পরিচালকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। শরৎচন্দ্রের বামুনের মেয়ে ছবি করছেন অজয় কর, শোভাকে অনুরোধ করলেন অভিনয় করতে। এটা শোভার কাছে ছিল একটা অগ্নিপরীক্ষা, কেননা সে-ছবিতে অভিনয় করবেন পাহাড়ী সান্ন্যাল, তুলসী চক্রবর্তী, অনুভা গুপ্তার মতো সেকালের নামিদামি অভিনেতারা, এবং সর্বোপরি প্রভা দেবী, যাঁর সম্পর্কে পরবর্তীকালে লিখতে গিয়ে শোভা সেন জানাচ্ছেন, ‘তিনি বিশ্বের অন্যতমা শ্রেষ্ঠা অভিনেত্রী ছিলেন।… একমাত্র পূর্ব জার্মানির ব্রেশ্টের স্ত্রী শ্রীমতী হেলেনে ভাইগেলের অভিনয় দেখে আমার মনে হয়েছিল, অন্যতমা শ্রেষ্ঠা অভিনেত্রীকে দেখছি।’

যা হোক, live chat 888sportে শোভা সেনের অভিনয়-তালিকা সুদীর্ঘ। বহু বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতেই তিনি কাজ করেছেন, যেমন নিমাই ঘোষ, অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় (কপালকু-লা ১৯৫২), নরেশ মিত্র (অন্নপূর্ণার মন্দির ১৯৫০), মৃণাল সেন (তাঁরও প্রথম ছবি রাতভোরে ছিলেন শোভা সেন।
তাছাড়া মৃণালের আকাশকুসুম ১৯৬৫-সহ আরো কিছু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি), অজয় কর (পরেশ ১৯৫৫, মধুবন ১৯৮৮), অগ্রদূত (সবার উপরে ১৯৫৫, ত্রিযামা ১৯৫৭), অগ্রগামী (888sport live chatী ১৯৫৬, ডাক হরকরা ১৯৫৮, লালুভুলু ১৯৫৯, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ১৯৬০), দেবকীকুমার বসু (চিরকুমার সভা ১৯৫৬), মধু বসু (পরাধীন ১৯৫৬, শুভলগ্ন ১৯৫৬), চিত্ত বসু (বন্ধু ১৯৫৮), অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (কিছুক্ষ ১৯৫৯), সুশীল মজুমদার (হাসপাতাল ১৯৬০), সলিল দত্ত (খুঁজে বেড়াই ১৯৭১), তরুণ মজুমদার (ঠগিনী ১৯৭৪), সুশীল মুখোপাধ্যায় (রোদনভরা এ বসন্ত ১৯৭৪, স্বয়ংসিদ্ধা ১৯৭৪), ইন্দর সেন (অর্জুন ১৯৭৬), দীনেন গুপ্ত (সানাই ১৯৭৭), গুরু বাগচী (পেন্নাম কলকাতা ১৯৯৭), গৌতম ঘোষ (পদ্মা নদীর মাঝি ১৯৯৩)। দুয়েকটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি, ১৯৫৪-তে বাবলা এবং ওই একই বছরে বকুল। উৎপল দত্ত-পরিচালিত ছবি (মেঘ ১৯৬১, ঘুমভাঙার গান ১৯৬৫, বৈশাখী মেঘ ১৯৮১ এবং
মা-তেও অভিনয় করেছেন। মা মুক্তি পায় ১৯৮৪-তে)। এছাড়া বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন তিনি, যেগুলো তাঁর
অভিনয়-কুশলতার স্বাক্ষরবাহী। যেমন ১৯৫৩-তে মুক্তি পাওয়া মধু বসু-পরিচালিত শেষের 888sport app download apk, বা হারানের নাতজামাই, ১৯৯০-তে মুক্তি পায় যে-ছবি। দূরদর্শনের জন্য উৎপল দত্ত নির্মাণ করেন In search of Theatre, আর রাজা সেন মুখুজ্যেমশাই। এ-দুটি ছবিতে আমরা পাই শোভা সেনকে। সব মিলিয়ে দেড়শোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পুরনো যুগের অভিনেতা-অভিনেত্রী, যেমন পাহাড়ী সান্ন্যাল, অসিতবরণ, গঙ্গাপদ বসু, সন্ধ্যারানী, মলিনা দেবীদের সঙ্গে সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন যেমন, পরবর্তী যুগের 888sport live chatী সুচিত্রা সেন, অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়, বাসবী নন্দী, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে-র সঙ্গেও তাঁর অভিনয়স্বাচ্ছন্দ্য দর্শক ও সমালোচকদের সাধুবাদ অর্জন করেছে। বাংলা ছবিতে স্নেহময়ী মা হিসেবে অভিনয়ে জনপ্রিয় ছিলেন যেমন সন্ধ্যা রানী আর মলিনা দেবী, ছায়া দেবীকে যেমন live chat 888sportে পাই ললিতে-কঠোরে, সেইরকম বিধবার চরিত্র বাঁধা ছিল বহুকাল ধরেই শোভা সেনের। তাই বলে অভিনয়-জীবনে নায়িকার ভূমিকাতেও তিনি কম অভিনয় করেননি। জনপ্রিয়তা ছিল নায়িকা হিসেবে, তাই লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপনে ১৯৫৬-তে দেখি শোভা সেনের কমনীয় মুখাবয়বের ছবি। সঙ্গে ক্যাপশন, ‘একমাত্র বিশুদ্ধ সাবানই এত শুভ্র হতে পারে’, এবং পরবর্তী সংযোজন, ‘তিনি বলে থাকেন’।

নাটকের ক্ষেত্রে যেমন হেলেনে ভাইগেল, তেমনি live chat 888sportে তাঁর আদর্শ ছিল প্রভা দেবীর অভিনয়। তবে কানন দেবী, ভারতী দেবী বা সরযূবালা-সন্ধ্যা রানীদের অভিনয়ও কখনো কখনো তাঁর আদর্শ মনে হতো। সুচিত্রা সেনের অভিনয় মুগ্ধ করেছে তাঁকে, যদিও তাঁকে অনুকরণের প্রশ্ন নেই শোভা সেনের। বিদেশ888sport slot gameে নাটকের মতো সিনেমাও সুযোগমতো দেখতেন তিনি, যদিও বিদেশি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি খুব সরব ছিলেন না তিনি।

 

শোভা সেন : যাত্রার জগতে

নাটক ও live chat 888sportের পাশাপাশি উৎপল দত্তের মতো শোভা সেনকেও যাত্রার মতো জনপ্রিয় 888sport live chatমাধ্যমের প্রতি উৎসাহী ও 888sport apk download apk latest versionনত হতে দেখি। ১৯৬৮-তে উৎপল দত্ত তৈরি করেন বিবেক যাত্রা সমাজ। এ-সময়ে তাঁর দল LTG আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে সে-সময় যাত্রা888sport live chatের রমরমা। আর্থিক অনটন কাটিয়ে উঠতেই উৎপল দত্তের যাত্রাদল গঠন এবং এই যাত্রার জন্যই তিনি শোন রে মালিক আর রাইফেল লিখলেন। গ্রামেগঞ্জে অভিনীত হয়ে তা তুমুল সাফল্য পেল। উৎপল দত্ত অন্য যাত্রাদলের জন্যও যাত্রাপালা লিখেছিলেন। সত্যম্বর অপেরার জন্য তিনি লিখলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ, লোকনাট্যের জন্য লিখলেন দিল্পী চলো (১৯৭০), সমুদ্রশাসন (১৯৭০), আর ভারতী অপেরার জন্য নীলবিদ্রোহ নিয়ে যাত্রাপালা নীল রক্ত। বছরদশক ধরে উৎপল দত্ত যুক্ত ছিলেন নিবিড়ভাবে যাত্রাপালার রচনা ও পরিচালনার কাজে, নিজের দল ছাড়াও অন্য যাত্রাদলের পরিচালকরূপেও।

সেসূত্রেই যতটা যাত্রাভিনয়ের 888sport free betর দিক থেকে নয়, বরং যাত্রার আবহ তাঁর ঘরে এসে পড়ায় যাত্রা888sport live chatের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন অভিনেতা ও বিশেষ করে অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগও হয় তাঁর, যাত্রায় যাঁদের অসাধারণ অভিনয়ে মুগ্ধ হন তিনি। বীণা দাশগুপ্তা, বর্ণালী ব্যানার্জি, ছন্দা চ্যাটার্জি, জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়দের অভিনয় দেখে এই 888sport live chatমাধ্যমটির ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। নট্ট কোম্পানির যাত্রাপালা নটী বিনোদিনী পালায় বীণা দাশগুপ্তা অনবদ্য, যাঁর অভিনয়বিদ্যার সূত্রপাত পথনাটিকার মাধ্যমে। প্রসঙ্গত, শোভা সেন বহু পথনাটিকায় তাঁর দীপ্ত অভিনয়ক্ষমতা দেখিয়েছেন। দিন বদলের দ্বিতীয় পালা (১৯৭৭), চক্রান্ত (১৯৭৯), কালো হাত (১৯৮১-৮২) পথনাটকগুলোতে তাঁর অভিনয়কালের সাক্ষ্য হয়ে চিরকালের জন্য রয়ে যাবে।

এসব মিলিয়ে শোভা সেন। এবং এর বাইরেও আরো একটি পরিচয় রয়ে গিয়েছে তাঁর। সেটি হলো তাঁর লেখকসত্তা। আমরা এর ভূমিকাকেও লঘু করে দেখতে পারি না।

 

শোভা সেন : গ্রন্থকর্ত্রী

নাটক, live chat 888sport আর যাত্রায় অভিনয়ের বাইরে নিজের নাটকের দলের সাংগঠনিক দিকগুলোও কিন্তু সামলাতে হতো শোভা সেনকে। তাঁর সাংগঠনিক দিকটি নিয়ে জানা যায় খুব কম, তবে দলের প্রয়োজনে একদিকে যেমন তিনি চাঁদা চাইতে কুণ্ঠিত হননি এর ওর তার কাছে থেকে, তেমনি প্রয়োজনে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে সেই টাকা দিয়ে দলের আর্থিক সংকট মিটিয়েছেন। আবার স্থিরচিত্তে মোকাবিলা করেছেন শত্রম্নপক্ষকে। উৎপল দত্ত লিখছেন এ-প্রসঙ্গে, ‘স্টার থিয়েটারের সামনে ‘দুঃস্বপ্নের নগরী’-র ওপর আক্রমণের সময়ে সশস্ত্র গুন্ডারাও শ্রীমতী সেনের সামনে এসে অস্ত্র নামিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে।’ আবার কলেস্নাল চলাকালে উৎপল দত্ত গ্রেফতার হলে সেই সংকটময় মুহূর্তে দল যাতে অভিনয় চালিয়ে যেতে পারে অবাধে, সেই দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন তিনি।

এত কিছু সামলে লেখালেখিতেও তাঁর অবদান রয়েছে, বিশেষ করে PLT-র নিজস্ব পত্রিকা এপিক থিয়েটারকে ঘিরে। ১৯৬৪ থেকে পত্রিকাটি উৎপল দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। পত্রিকাটি প্রকাশের পেছনে ছিল উৎপল দত্তের উদ্যোগে ‘দ্য ব্রেখট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠা, যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, সমর সেন, অশোক মিত্র, মৃণাল সেন, তাপস সেন প্রমুখ। এই সোসাইটিরই মুখপত্র ছিল এপিক থিয়েটার। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ এঁকে দিতেন সত্যজিৎ রায়।

এই পত্রিকায়, এবং অন্যত্রও শোভা সেন লেখালেখি করতেন। মূলত শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ উপেক্ষা না করতে পেরেই তাঁর লেখার জগতে আসা, এবং এর ফলেই আমরা পেয়েছি শোভা সেনের অনুপম আত্মজীবনী 888sport app download for androidে বি888sport app download for androidে নবান্ন থেকে লালদুর্গ। বাল্যকাল থেকে শুরু হয়েছে এ-লেখা, আর শেষ হয়েছে উৎপল দত্তের মৃত্যুকাহিনি বর্ণনার মধ্য দিয়ে, আটপৌরে ভাষা, ইতিহাস-সচেতনতা আর বর্ণনার সরসতার ত্র্যহস্পর্শে গ্রন্থটি একদিকে সুখপাঠ্য, অন্যদিকে নাটক ও live chat 888sport জগতের অপূর্ব তথ্যের আকর। বাংলা নাটক-live chat 888sportের বহু কৌতূহলকর তথ্য মিলবে এ-বইতে।

এছাড়া শোভা সেনের আরো একটি উলেস্নখযোগ্য বই হলো ওঁরা, আমরা, এঁরা অর্থাৎ 888sport live chatজগতের তিন যুগের (এবং নাটক, live chat 888sport ও যাত্রা, এই তিন 888sport live chatমাধ্যমের) মহিলা 888sport live chatীদের নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক লেখা। বইটি পড়লে একদিকে যেমন জানা যায় ইন্দুবালা, প্রভা দেবী, কানন দেবী, নীলিমা দাস, মাধবী মুখোপাধ্যায়, বর্ণালী ব্যানার্জিদের অভিনয়-জীবনের কথা, তেমনি কী সুতীব্র সংগ্রামের মাধ্যমে উঠে আসতে হয়েছিল তাঁদের পাদপ্রদীপের আলোয়, সে-কথাও জানা যায়। এঁরা যে কী পরিমাণ শোষিত হতেন, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে শোভা সেন লিখছেন, ‘অর্থের চিমত্মা এঁরা করেননি বিশেষ। তাই শোষিত হয়েছেন প্রায় সব মালিকের কাছেই। শুনেছি প্রভা দেবী তিন বছরে ভাদুড়ীমশায়ের কাছে পেয়েছিলেন সর্বসাকুল্যে আঠারো টাকা। বিশ্বাসযোগ্য না হলেও কথাটা সত্যি।’ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ব্যক্তি কানন দেবী সম্পর্কে তাঁর অন্তিম অনুভবটি বড় মর্মান্তিক। ‘শেষ বয়সে কাননদির ব্যক্তিগত জীবন খুব সুখের হয়নি। সব প্রতিকূলতার মুখে তিনি শেষ পর্যন্ত বুকে করে রেখেছিলেন তাঁর গোপাল ঠাকুরকে।’ তারপর কানন দেবীর সঙ্গে নিজের প্রতিতুলনা করছেন এভাবে, ‘আমরা রাজনীতি থেকে আসা মেয়েরা সারাজীবন যুদ্ধ করে মাথা উঁচু করে থাকি নিজেদের আদর্শ নিয়ে। আমি মনের মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছিলাম বলেই হয়তো গোপাল ঠাকুরের প্রয়োজন হয়নি, নিজেই যুদ্ধ করে চলেছি।’

নিজের জীবনসঙ্গী উৎপল দত্তের মূল্যায়ন কি শোভা সেনকে নিয়ে? স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর একটি 888sport app download apkর দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক, ‘অনাগতের কুয়াশা888sport app এক ভোরে/ আমি চোখ মেলে দিয়ে দেখি/ ব্যারিকেডে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি/ লড়ে যাচ্ছি দুই কমরেড।’ আর উৎপলের প্রয়াণে শোভা, ‘আমি একা হয়ে গেলাম কমরেড।’ ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট শোভা সেনের মৃত্যু দুই কমরেডকে চিরতরে মিলিয়ে দেয়। r