সংগীতের অনন্য উৎসব

গোলাম মুস্তাফা

bengal foundation ITC SR
bengal foundation ITC SR

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ভারতের আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির উদ্যোগে 888sport appয় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চার দিনব্যাপী উচ্চাঙ্গসংগীতের উৎসব। নভেম্বরের ২৯ থেকে ডিসেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত 888sport appর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই উৎসব ছিল এ পর্যন্ত 888sport appsে আয়োজিত সর্বাপেক্ষা বৃহৎ এবং সবচেয়ে সুব্যবস্থিত সংগীত-সম্মেলন। উপমহাদেশের খ্যাতনামা 888sport live chatীদের সঙ্গে এতে অংশগ্রহণ করেছেন 888sport appsের কয়েকজন 888sport live chatী। সমগ্র উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীত-সাধক উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর উদ্দেশে। আর আলাদাভাবে চাররাতের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয়েছিল যথাক্রমে সংগীতসাধক ওয়াহিদুল হক, পণ্ডিত উদয়শঙ্কর, উস্তাদ বিলায়েত আলী খান ও উস্তাদ আলী আকবর খাঁকে।
২৯ নভেম্বর সন্ধ্যে ৬টায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। 888sport appsের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বিশেষ অতিথি ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ ও আইটিসি এসআরএ-র নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের শুভেচ্ছাজ্ঞাপক বক্তৃতা দেন।
এই উপমহাদেশের ঐতিহ্যে সানাইয়ের মাঙ্গলিক ধ্বনি দিয়ে শুভকর্ম সূচনার একটি রেওয়াজ আছে। সেই রীতি মেনেই প্রথমদিনের সংগীতানুষ্ঠানের সূচনা হয় উস্তাদ আলী আহমেদ হুসেন খানের সানাই বাদন দিয়ে। বেনারস ঘরানার উস্তাদ ওয়াজির আলী খানের পৌত্র এবং উস্তাদ আলী জান খানের পুত্র প্রবীণ সানাই888sport live chatী আলী আহমেদ হুসেন খান তাঁর বাদনে গায়কীরীতি, সুর-মীড়, তানকারি ও পুকারের উদ্ভাবনী প্রয়োগে সিদ্ধ। ভারতীয় দূরদর্শনের সূচনাসংগীতটি তাঁরই বাজানো; অবশ্য এটি  রচনা করেছেন পণ্ডিত রবিশংকর।
ইমন রাগের এক সুনিপুণ পরিবেশনা শোনা গেল আলী আহমদ হুসেন খানের সানাই বাদনে। সানাইয়ে গমকের চমক তো ছিলই, অসাধারণ ছিল মীড় ও তানের কাজ। সানাইয়ে তাঁর সঙ্গে সংগত করেন হাসান হায়দার খান ও আহমদ আব্বাস খান। সংগতকার হিসেবে এই দুজনের কাজও শ্রোতাদের তৃপ্ত করেছে। তবলায় পণ্ডিত সমর সাহা ছিলেন বরাবরের মতোই অনবদ্য। মধ্য ও দ্রুত-লয়ে তিনি, বলা যায়, আসর মাত করার মতোই কাজ করেছেন। তবে তাঁর পারদর্শিতা মাঝেমধ্যে বেশ প্রকট হয়ে উঠেছিল, ছাপিয়ে যাচ্ছিল প্রধান 888sport live chatীর পরিবেশনাকে। একটু সংযমী হলে হয়তো ভালো হতো।
শ্রীকান্ত ওঙ্কার দাদারকার পরিবেশন করলেন রাগ হামীর। তবলায় ছিলেন পণ্ডিত কুমার বসুর শিষ্য সঞ্জয় অধিকারী। বিস্তারে পারঙ্গম এই 888sport live chatী তাঁর সপ্তকে ছিলেন স্বচ্ছন্দ। প্রক্ষেপণ ও স্বরে স্থিরতা ছিল উপভোগ্য।
ইতওয়াহ ঘরানার উস্তাদ শাহিদ পারভেজ সেতারিয়া হিসেবে সংগীতমোদীদের বরাবরই আকর্ষণ করে থাকেন তাঁর পেলব পরিবেশনার জন্য। এই অনুষ্ঠানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাদনের সূচনাতেই বাগেশ্রী রাগের আবহে শ্রোতাদের তিনি মগ্ন করে ফেললেন। তাঁর আলাপ এতটাই সিদ্ধ ছিল যে, এতেই পাওয়া গেছে পরিপূর্ণতার স্বাদ। এরপর জোড় ও ঝালা তো ছিলই। প্রতিটি অংশেই শাহিদ ছিলেন সাবলীল, স্বচ্ছন্দ ও পারদর্শী। পারদর্শিতার প্রদর্শনে অনেক সময় রস হারিয়ে যায়। কিন্তু শাহিদের বাদনে সেরকম ঘটেনি। এমন আবেগঘন ও বাক্সময় পরিবেশনা সচরাচর শোনা যায় না। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত দিনকর কায়কিনির পুত্র ও উস্তাদ আল্লারাখার সুযোগ্য শিষ্য পণ্ডিত যোগেশ শামসি। একতাল ও দ্রুত ত্রিতালে সমান পারদর্শিতা ছিল তাঁর। যোগেশ সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর আঙুল ও তালুর স্পর্শে তবলা যেন কথা বলে। বোঝা গেল, এই খ্যাতি ভিত্তিহীন নয়।
আগ্রা ঘরানার ওয়াসিম আহমেদ খান এই অঞ্চলে কিছুটা কম পরিচিত। উস্তাদ বশির খানের পৌত্র ও উস্তাদ আতা হুসেন খানের দৌহিত্র ওয়াসিম আহমেদ খান পরিবেশন করলেন রাগ চন্দ্রকোষ। পণ্ডিত ভাতখান্ডে এই রাগটিকে কোনো ঠাটভুক্ত করেননি, তবে সাধারণত একে কাফি ঠাটের রাগরূপে বিবেচনা করা হয়। এই রাগটি পরিবেশন করা কিছুটা সহজ বটে। অন্তর্ভেদী স্বভাবের জন্য রাগটি শ্রোতাদের আকর্ষণ করে সহজেই। সন্দেহ নেই, ওয়াসিম আহমেদ খান কুশলতার সঙ্গেই তাঁর কাজ সম্পাদন করেছেন। সঞ্জয় অধিকারীও সংগত করেছেন পরিবেশনার দাবি অনুযায়ী।
888sport appsের সরোদিয়া শাহাদাত হোসেন খান বাজালেন রাগ ঝিঁঝিট। আলাপ-বিস্তারে ভালই ছিলেন, ঝালায় গিয়ে মনে হলো, বাদনকে প্রকট করতে গিয়ে তিনি সুরের প্রতি অবিচার করেছেন।
প্রথমরাতের অনুষ্ঠানে ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করলেন বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র। ওড়িয়া 888sport live footballের স্নাতকোত্তর সুজাতার ওড়িশি নৃত্যের শিক্ষা পণ্ডিত কেলুচরণ মহাপাত্রের কাছে। কেলুচরণ ওড়িশি নৃত্যের কিছুটা পুনর্বিন্যাস করেছেন। এই রাতে সুজাতা শুরু করেছেন মঙ্গলাচরণ ও গুরুবন্দনা দিয়ে। এরপর রবীন্দ্রনাথের ‘নৃত্যের তালে তালে হে নটরাজ’ গানটির সুরে পরিবেশিত নৃত্যটি ছিল মুগ্ধকর। চারুকেশী ও মিশ্র খাম্বাজ রাগের নৃত্যরূপও তাঁর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর। সুজাতার প্রতিটি পরিবেশনাই ছিল দৃষ্টিনন্দন। মুদ্রায় তিনি নিপুণ, অভিব্যক্তিতে সৌম্য। তাঁর সঙ্গে রূপক মজুমদারের কণ্ঠ-সংগতও শ্রুতিমধুর।
ধ্রুপদ আঙ্গিকের বিশিষ্ট 888sport live chatী পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকারের সংগীতে পাওয়া গেল অন্যরকমের স্বাদ। উস্তাদ জিয়া মহিউদ্দীন ডাগর ও জিয়া ফরিদউদ্দীন ডাগরের সুযোগ্য শিষ্য উদয় ভাওয়ালকার পরিবেশন করলেন রাগ যোগ। কাফি ঠাটের এই রাগটি শেষ সন্ধ্যায় গেয়।
রাতের শেষ প্রহরে সরোদিয়া তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার বাজালেন রাগ ললিত। পিতামহ বিভূতিরঞ্জন মজুমদার ও পিতা শ্রীরঞ্জন মজুমদারের কাছে তালিমের সূচনা হয় তাঁর। পরে উস্তাদ বাহাদুর হোসেন খাঁ ও উস্তাদ আলী আকবর খাঁর কাছেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি।
ললিত মূলত মারওয়া ঠাটের, তবে কোমল ধৈবতের প্রয়োগে এটি আবার হয়ে ওঠে পূরবী ঠাটের। তখন এটি ঊষাকালে পরিবেশনীয়। তেজেন্দ্রনারায়ণের আলাপ ছিল অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। তবে জোড়ে বিস্তার ছিল। তাঁর বাজনায় কুশলতা ছিল, রসের সঞ্চার করেছেন তিনি অনায়াসেই।
রাতের শেষ 888sport live chatী ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। পাতিয়ালা ঘরানার বর্তমান সময়ের যোগ্যতম প্রতিনিধি অজয় চক্রবর্তী পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য। তিনি প্রথমে শোনালেন রাগ আহীর ললিত। পণ্ডিত রবিশংকর এই রাগের স্রষ্টা। পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের নির্দেশ মেনে অজয় চক্রবর্তী প্রচলিত বন্দিশের পরিবর্তে গাইলেন স্বরচিত বন্দিশ ‘চহুদিশ পান্ছি মাচায়ে শোর, রাতভর গুণীজন গায়ে বাজায়ে, আজ আনন্দময় ভোর’। বিলম্বিত একতালে  ‘জাগো সাভেরা’ যখন গাইছিলেন, তখন যেন ধীরে ধীরে ঊষা জেগে উঠছিলো এই ধরণিতে। অজয় চক্রবর্তীর এই পরিবেশনার সঙ্গে শেষ হলো প্রথম রজনীর সংগীত আয়োজন। আকাশে তখন ঊষার আভাস।
দ্বিতীয় রজনীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন 888sport appsের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ট্রান্সকম গ্র“পের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। এদিন চমকে দিলেন দেবর্ষি ভট্টাচার্য। বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর সংগীতকেই জীবনের আরাধ্য হিসেবে বেছে নেওয়ার দুঃসাহসিক পথে পা বাড়িয়েছেন তাঁর পিতার অনুপ্রেরণায়। তিনি গেয়ে শোনালেন শুদ্ধকল্যাণ। আরোহে ভূপালি এবং অবরোহে ইমন-কল্যাণের সঙ্গে সাদৃশ্যের কারণে এই রাগকে অনেকে ভূপকল্যাণ আবার কেউ কেউ শুদ্ধভূপাল নামেও অভিহিত করে থাকেন। রাগটি গাওয়া সহজসাধ্য নয়। সাধারণত কুশলী 888sport live chatী না হলে এ-রাগটি কেউ পরিবেশন করেন না। দেবর্ষি অপেক্ষাকৃত তরুণ হলেও অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে এ-রাগটি গেয়েছন। তাঁর কণ্ঠ-সামর্থ্য লক্ষণীয়। সরগম তানে দক্ষ, বোল-তানে সিদ্ধ এই 888sport live chatী অসাধারণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাগটি পরিবেশন করে শ্রোতাদের তৃপ্ত করেছেন। তবলায় সমান পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন সন্দীপ ঘোষ।
উনিশ বছরের তরুণ যশবন্ত বৈষ্ণব এরই মধ্যে তবলা বাদক হিসেবে ভারতের সংগীতবোদ্ধাদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। এই রাতের পরিবেশনায় যশবন্ত ছিলেন অনবদ্য।  আল্লারাখা কলাবন্তের সারেঙ্গী ছিল তাঁর সঙ্গী। এই দুজনের যুগলবন্দি প্রশংসনীয়। বিশেষত ত্রিতালে নৈপুণ্য ছিল মনে রাখার মতো।
সন্দীপ ভট্টাচার্য গাইলেন কল্যাণ ঠাটের রাগ কেদার। তবলা সংগতে ছিলেন আগ্রা ঘরানার আকরাম খা। সন্দীপের গানে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ আছে। তান ও লয়কারী প্রশংসনীয়।
দ্বিতীয় রাতে আসর মাতিয়েছেন উস্তাদ রাশিদ খান। রামপুর-সাহাসওয়ান ঘরানার রাশিদ খান এরই মধ্যে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। এই ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ ইনায়েত হুসেন খানের পৌত্র রাশিদ খান মাত্র এগারো বছর বয়সেই মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করে সমঝদারদের অভিভূত করেছিলেন। নানা উস্তাদ নিসার হুসেইন খানের কাছে তালিম পেয়েছেন রাশিদ খান।
এই সংগীত-উৎসবে রাশিদ খান গাইলেন মারওয়া ঠাটের পুরিয়া-কল্যাণ। আলাপের শুরুতেই রাশিদ খান রাগের আবহ ফুটিয়ে তোলেন। দার্ঢ্য ও কোমলতার অপূর্ব সমন্বয় তাঁর কণ্ঠে। নদীর অবিরল প্রবাহের মতো গেয়ে গেছেন রাশিদ। আলাপে, বিস্তারে, তানে, বোলতানে এমন পারদর্শী ও সুরেলা পরিবেশনা সচারচর শোনা যায় না। কিন্তু এসব রাশিদের মজ্জাগত, তাই সাবলীল স্বচ্ছন্দতা ছিল তাঁর গানে। এই রাতে রাশিদ বেশ মেজাজে ছিলেন, বোঝা গেল। শেষে তিনি গাইলেন ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’ – উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খাঁর গাওয়া এই বিখ্যাত ঠুমরিটি। বড়ে গুলাম আলীর গাওয়া ঠুমরি পুনরাবৃত্তি করা যে-কোনো 888sport live chatীর জন্যই ঝুঁকির কাজ। রাশিদ খান সেই ঝুঁকি সার্থকতার সঙ্গেই সামলেছেন। তাঁর ঠুমরি অনেকটা বিস্তারিত। বারবার তুলনা এসে যায়, বড়ে গুলাম আলী খাঁর গাওয়া কানে অনুরণন তোলে। কিন্তু রাশিদ খাঁ এর মধ্যেও এই ঠুমরিতে নিজের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। তাঁর কালোয়াতিতে মুগ্ধ হয়ে পণ্ডিত ভীমসেন যোশী মন্তব্য করেছিলেন, ‘রাশিদ খাঁ হিন্দুস্থানি সংগীতের ভবিষ্যৎ।’ ভীমসেন যোশীর এই কথা সত্য হয়ে উঠছে।
কিরানা ঘরানার উস্তাদ মাশকুর আলী খান পরিবেশন করলেন রাগ মালকোষ। উস্তাদ আবদুল করিম খান ও উস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খানের বংশজাত এই 888sport live chatীর তালিম শুরু হয় পিতা বিখ্যাত সারেঙ্গীবাদক উস্তাদ শাকুর খানের কাছে। মাশকুর আলী খানের পরিবেশনায় কিরানা ঘরানার আমেজ ভালোভাবেই অনুভব করা গেছে। কণ্ঠে ততটা পেলবতা ছিল না, কিন্তু আলাপে, বিস্তারে  তাঁর কুশলতার কারণে সে-অভাব খুব একটা প্রকট হয়নি।
রাধিকামোহন মৈত্রের শিষ্য পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সরোদে কৌশিকী কানাড়া বাজানোর সময়ে সেই অসুস্থতা খুব একটা বোঝা যায়নি। আলাপ, জোড়, ঝালায় ছিলেন সাবলীল। তাঁর বাদনে তো কুশলতার সঙ্গে মিষ্টতা সবসময়ই পাওয়া যায়। তিনি নিজে অবশ্য বলেছেন, তাঁর হাত মাঝেমধ্যে ঠিকমতো কাজ করেনি।
বুদ্ধদেব বেশ কিছুদিন ধরেই রবীন্দ্রসংগীতের বাণীকে বন্দিশ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তারই খানিকটা নমুনা শোনালেন তিনি। পিলু রাগাশ্রিত ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’র সুরকে বন্দিশরূপে ব্যবহার করে তাঁর উদ্ভাবন শোনালেন সরোদে। বন্দিশের সঙ্গে কিছু ছোট ছোট কাজের নতুনত্বও ছিল।
কৌশিকী দেশিকান গাইলেন বসন্ত-মুখারিতে ‘নায়না মোরে বাওরে দেখনা চায়ে তুমকো শাম সাভেরে’। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও বাবা অজয় চক্রবর্তীর কাছে তালিম পাওয়া কৌশিকী হিন্দুস্থানি কণ্ঠসংগীতের একালের অন্যতম সেরা 888sport live chatী। বসন্ত রাগটিকে বিবেচনা করা হয় কর্নাটি রাগ বাকুলাভরনমের হিন্দুস্থানি সংস্করণ রূপে। ভোরের এ-রাগটি যখন কৌশিকী শুরু করেন, তখন রাতের প্রায় শেষ প্রহর। রাগটির পরিবেশনা সহজ কাজ নয়। কৌশিকী জানালেন, এ-রাগটি তিনি সদ্য শিখেছেন, এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর গাওয়া ছিল অসাধারণ। তার সপ্তকে সুরের প্রয়োগ, স্বরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাজ ও বোলতানে কৌশিকী অসাধারণ পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। পরের পরিবেশনা ছিল কৌশিকী কানাড়ায় দ্রুত তিনতালে গাওয়া ‘ভায়ো ভোর ভোর করে শোর শোর’। এই গানে সরগম ও দ্রুতলয়ের তান ছিল অনবদ্য।
রাতের শেষ 888sport live chatী ছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। সানতুর বাদনে তিনি এই উপমহাদেশের প্রধান 888sport live chatী। কাশ্মীরের এই লোকবাদ্যকে শিবকুমারই ধ্র“পদী সংগীতের বাদ্যযন্ত্রে পরিণত করেছেন। সানতুরের আদি উৎস অবশ্য পারস্যে। প্রাচীন সংস্কৃতসংগীত বিষয়ক রচনায় একে শততন্ত্রী বীণা নামে অভিহিত করা হতো।
শিবকুমার বাজিয়েছেন রাগ অন্তরধ্বনি। রাগটি তাঁরই সৃষ্টি। এই রাগের আরোহে গান্ধারের প্রয়োগ নেই, অবরোহে আছে সবগুলি স্বর। শিবকুমার এই রাগ সৃষ্টি করেছেন সাধনার, বিশেষত যোগসাধনার, অনুষঙ্গ হিসেবে। তাঁর বাজনায়ও সেই ধ্যানমগ্নতা আছে। আলাপে-বিস্তারে তিনি তন্ময় ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ শামসি। শিবকুমারের বাদনে যে-মগ্নতা ছিল, সে-আবেশ নিয়েই ভোরের প্রথম প্রহরে শ্রোতারা ফিরে গেছেন।
তৃতীয় রাতের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন 888sport appsের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং চিত্রাভিনেত্রী ও সমাজকর্মী শাবানা আজমি। সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বক্তব্য প্রদান করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং আইটিসি-এসআরএ-র নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর।
এদিন শশাঙ্ক মুকতেদার ‘তরণ মোরি লাগি রে’ বন্দিশ দিয়ে শুরু করলেন দেশ রাগ। গোয়ার এই 888sport live chatী আলাপে, বিস্তরে ও তানে ছিলেন স্বচ্ছন্দ; তাঁর মীড়ের কাজও প্রশংসনীয়।
এই রাতে আবীর হোসেন সরোদে বাজালেন রাগ পুরিয়া-ধনেশ্রী। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই 888sport live chatীর আলাপে ছিল সংবেদনশীলতা। দ্রুতলয়েও তাঁর বাজনার মিষ্টত্ব ছিল; আলাপ, জোড় ও ঝালা – এর কোনো অংশেই তাঁর পরিবেশনা শ্রোতাদের অতৃপ্ত রাখেনি। তাঁর সঙ্গে ফররুখাবাদ ঘরানার সন্দীপ ঘোষের তবলাও ছিল সমান শ্র“তিসুখকর।
888sport appsের এবাদুল হক রাগ হেমন্ত বাজালেন সেতারে। প্রিয়াঙ্কা গোপ শোনালেন রাগেশ্রী। দ্রুতলয়ে সরগম ও তানের কাজ তিনি বেশ ভালোই করেছেন; কিন্তু তাঁর গুরু পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ির কুশলতা খুব একটা ধ্বনিত হয়নি প্রিয়াঙ্কার কণ্ঠে। সেনিয়া মাইহার ঘরানায় তালিমপ্রাপ্ত এবাদুল হকের বাজনায়ও এরকম অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিশীলন ছিল না।
উস্তাদ মাশকুর আলী খানের পুত্র আরশাদ আলী খানের ললিত রাগটি ছিল সুপরিবেশিত। তানকারি ও দ্রুত বোলতানে তাঁর পারদর্শিতা বোঝা গেল।
সেতারে যোগকোষের বাদনে পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন অসাধারণ। ইংরেজি 888sport live football নিয়ে লেখাপড়া করেছেন পূর্বায়ন, সেতারের তালিম পেয়েছেন তাঁর পিতা পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। পার্থপ্রতিম ছিলেন পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্য। কণ্ঠসংগীতেও পূর্বায়ন সমান দক্ষ। তাঁর বাজনায় আলাপ ও রাগদারি ছিল, ছিল মুকরিও। তাঁর বাদনে পাওয়া যায় ধ্র“পদ ও খেয়ালের যুগল মিশ্রণ।
তৃতীয় রাতের অনুষ্ঠানে মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছিলেন বিদুষী গিরিজা দেবী ও পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। গিরিজা দেবী প্রথমেই বললেন, ‘ম্যায় উমর দরাজ হো গেয়ি, পর সংগীত সাধনা মে উমর নেহি হোতি’ – আমার অনেক বয়স হয়েছে, কিন্তু সংগীতসাধনার কোনো বয়স নেই। এই কথা সত্য হয়ে উঠেছে তিরাশি বছর বয়সের এই 888sport live chatীর পরিবেশনায়।
প্রথমে তিনি গাইলেন বিলম্বিত ও দ্রত একতালে বেহাগ। এই বয়সেও তাঁর কণ্ঠসামর্থ্যে বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি। গিরিজা দেবীর অসাধারণ পরিবেশনায়, মধ্যরাতে গেয় বিলাওয়াল ঠাটের এই রাগটির রোমান্টিক ভাব যেন মুখর হয়ে উঠেছিল।  এরপর তিনি গাইলেন ঠুমরি ‘সব নিশি জাগি তুমহার মিলন কো’। বেনারসের এই 888sport live chatী ঠুমরিতে প্রবাদপ্রতিম পারদর্শিতা ও খ্যাতির অধিকারী। দাদরায় এই ঠুমরিটি তিনি পরিবেশন করেছেন তাঁর সহজাত অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে। এরপর শোনা গেল ‘ঝনন ঝনন মোরি বাজে পায়েলিয়া’। দূরে সরে যাওয়া প্রিয়জনের উদ্দেশে অভিমানী নিবেদন ‘যাও ওহি তুম শ্যাম যাহা সারি রৈন জাগে উও’ গেয়ে গিরিজা দেবী সেই রাতের আসরকে প্রাণময় করে তুলেছেন। প্রিয়জন দূরে, তবু তাকে তিরস্কার করা যাবে না, বরং আকুতি দিয়েই বিরহী ও প্রতীক্ষারত ভাব প্রকাশ করতে হবে। এই কথাটিই বুঝিয়ে দিলেন, গায়কিতে দুইরকম ভাবের তারতম্য প্রদর্শন করে। পরিবেশনায় রস তো ছিলই, রসিকতাও ছিল।
লখনউয়ের কলকা বিন্দদিন ঘরানার  কথক নৃত্যের প্রসিদ্ধ 888sport live chatী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবেশনায় ছিলেন অনবদ্য। প্রকৃতি ও জীবনের সর্বত্র যে তাল-লয়ের প্রকাশ আছে, এই বিষয়টিই প্রদর্শন করেছেন বিরজু মহারাজ তাঁর নৃত্য-মুদ্রায়। তাঁর ভাষায়, ঘুঙ্রু দিয়ে তিনি প্রকৃতির লয়-ছন্দকে রচনা করেন। মানুষের সব কাজে ও কথায় আবিষ্কার করা যায় ছন্দ ও তাল। সবকথা শেষ হয় সমে। কীভাবে এই ছন্দ ব্যক্ত হয় প্রকৃতি, বস্তু ও মানুষের অভিব্যক্তিতে, তা-ই প্রদর্শন করলেন তিনি। তবলা ও বাঁয়া যখন কুমার-কুমারী ছিল তখন তাদের বোলে অপূর্ণতা ছিল। দুইয়ের মিলনে কী করে তাল-বোল পূর্ণ হয়ে উঠল, তার নমুনা দেখালেন। পাখি তার শাবককে যখন খাবার দেয় তখন তাল-বোল কেমন হয়, তা স্পষ্ট করলেন, দেখালেন হাঁসের চলনের ছন্দ। কৃষ্ণ ও গোপীদের তিনি অভিহিত করলেন সম ও তাল রূপে। কৃষ্ণ ও ষোড়শ গোপীর সম্পর্ককে করে তুললেন তালবদ্ধ। বর্ষায় ময়ূরের উচ্ছ্বাসকে প্রদর্শন করলেন  বোল-তালে। মুদ্রা ও বোলের ছোটো ছোটো অভিব্যক্তিতে তাঁর পরিবেশনায় ছিল ধ্রুপদী আমেজ। বিরজুর কাজে নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো দর্শকদের। তবে অসুস্থতার কারণেই বোধহয় কথকের পূর্ণাঙ্গ শৈলী দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে।
গিরিজা দেবী তাঁর অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানিয়েছিলেন, বিরজু মহারাজের নাচের সঙ্গে তিনি গাইবেন। এ-কথা বলতেও ভুললেন না, ‘উও দেখনি কি লায়েক হোগি’ – সেটা হবে দর্শনীয় বিষয়। কথা রেখেছেন তাঁরা দুজনে। গিরিজা দেবী গাইলেন ‘হে বৈরন রে কোয়েলিয়া’ ও ‘লারে কঙ্কর মোহে লাজ দে’। তাঁর গাওয়া  চৈতির সঙ্গে অভিব্যক্তি দিলেন বিরজু মহারাজ; অবশ্য বসে বসে। এটাই নাকি নিয়ম।
বিরজু মহারাজের নৃত্যে সঙ্গী ছিলেন তাঁরই শিষ্যা শাশ্বতী সেন। শাশ্বতী স্বীয় যোগ্যতাতেই স্বনামধন্যা। সত্যজিতের সতরঞ্জ কি খিলাড়িতে তাঁর কথক নাচে অভিভূত হননি এরকম দর্শক বিরল। ‘অহল্যা-উদ্ধার’ নামে একটি অনবদ্য নৃত্য এখানে তিনি পরিবেশন করেন।
গিরিজা দেবী ও বিরজু মহারাজের সঙ্গে তবলায় ছিলেন সঞ্জয় অধিকারী এবং সারেঙ্গি বাজিয়েছেন সারওয়ার হোসেন। দুজনেরই সঙ্গত ছিল মনোমুগ্ধকর।
কুমার বসুর তবলাবাদনও ছিল এই রজনীর অন্যতম উপাদেয় পরিবেশনা। পণ্ডিত কিষণ মহারাজের শিষ্য, বেনারস ঘরানার কুমার বসু সেই রাতে তবলায় যেন ঝড় তুলেছিলেন। অবশ্য ঝড়ের মধ্যেও তাল-লয়ের মাধুর্য ব্যাহত হয়নি। তবলা বাদন কতটা নিপুণ ছন্দোময় হতে পারে তারই উদাহরণ পাওয়া গেল তাঁর বাদনে।
তৃতীয় রজনীর শেষ 888sport live chatী ছিলেন আগ্রা ঘরানার বিদুষী শুভ্রা গুহ। আগ্রা ঘরানার গায়কির দার্ঢ্যরে সঙ্গে কমনীয়তা মিশিয়ে গায়কি উদ্ভাবন করেছেন শুভ্রা গুহ। এই কারণে হিন্দুস্থানি সংগীতে তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত। ঠুমরিতেও তাঁর পারদর্শিতা স্বীকৃত। রাতের শেষ প্রহরে তিনি শুরু করলেন রাগ টোড়ি। আলাপ-বিস্তার-তান সবদিকেই পারদর্শিতা প্রদর্শন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। তাঁর টোড়িতেই  ভোরের উন্মোচন হলো সেদিন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা ছিল মধ্যরাতে। শেষ হলো ঊষার প্রান্তে এসে। মনে হলো শুভ্রা গুহের টোড়ির জন্যই আয়োজনের এই দীর্ঘায়ন।
চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ রজনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
এদিন ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায় শোনালেন মারু-বেহাগ। বিলম্বিত একতালে শুরু করলেন ‘মিতুয়া ম্যায় ক্যায়সে আউ তোরে পাস’ – এই বোল দিয়ে। এর পরে ত্রিতালের বোল ছিল ‘পিয়া বিনে তড়প্তে নয়না’। ব্রজেশ্বর সরগম ও তানে অনায়াস পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, – এ-কথা স্বীকার করতে হবে। তাঁর আলাপ ছিল সংক্ষিপ্ত; বিস্তার অবশ্য করেছেন বিস্তারিতভাবেই। তবলায় ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বোল-বাদনে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। দুজনের সওয়াল-জওয়াব ছিল উপভোগ করার মতো।
888sport appsের আলিফ লায়লা সেতারে বাজলেন দেশ রাগে উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর একটি রচনা। গুরু উস্তাদ মীর কাসিম খাঁর মতোই মিষ্টি তাঁর হাত। আলাপ, বিলম্বিত ও দ্রুত – সব ক্ষেত্রেই ছিলেন সাবলীল। আলিফ লায়লার বাজনায় প্রতিশ্র“তির স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে।
কর্ণাটী সংগীতের অন্যতম প্রসিদ্ধ গায়িকা পদ্মশ্রী অরুণা সাইরাম আসরে নিয়ে এসেছিলেন ভিন্নস্বাদের আমেজ। প্রথমে মালকোষ রাগে ‘সর্বমঙ্গালম মঙ্গল’ গেয়েই শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিলেন। এরপর শুরু করলেন ‘রাধা কারহারা প্রিয়া’, মধ্যলয়ে। আলাপ, তানের পর কুকৃতি। তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল দক্ষিণি সংগীতের তানসেন নামে খ্যাত ত্যাগরাজার অসাধারণ এক রচনার সুমধুর পরিবেশনা। এরপর নমদম। দক্ষিণি সংগীতের রেওয়াজ অনুযায়ী শ্রীগিরিধর মৃদঙ্গমে এবং ঘটমে কুচিভোটলাও দেখালেন তাঁদের বাদনকুশলতা। অরুণা শেষে গাইলেন একটি বাংলা ভজন ‘হে ভগবতী মহামায়া’। শেষ করলেন চারশো বছরের পুরনো একটি তারানা গেয়ে।
শেষ রজনীর উল্লেখযোগ্য আয়োজনের মধ্যে ছিল বিদুষী আলারমেল বাল্লির ভরতনাট্যম। চেন্নাইয়ের আলারমেল বাল্লি ভরত নাট্যমের পাদনাল্লুর ধারার 888sport live chatী। এই ধারায় তালিম নিয়েছেন তিনি পাদনাল্লুর চোক্কালিঙ্গম পিল্লাইয়ের কাছ থেকে। ওড়িশি নাচও শিখেছেন পণ্ডিত কেলুচরণ মহাপাত্রের তত্ত্বাবধানে। ‘বীনা ধানম্মল’ ধারার সংগীত শিখেছেন পণ্ডিত টি মুক্তার কাছে, শিখেছেন অভিনয়ও। বলা যায় একজন পরিপূর্ণ 888sport live chatী তিনি।
আলারমেলের প্রথম নৃত্য ছিল ‘পৃথিবীর সৌরভ’। প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৃষ্টির পর্যায়ক্রমিক নানারূপ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মুদ্রা ও অভিব্যক্তিতে। এরপর ছিল ‘বর্ণম’। রূপময় সৃষ্টির বর্ণময়তা অনুভূত হয়েছে তাঁর এই পরিবেশনায়। আলারমেল বলেছেন, ‘একজন চিত্র888sport live chatী যেমন রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন, একজন নৃত্য888sport live chatী তেমনি ছবি তৈরি করেন তাঁর শারীরিক অভিব্যক্তিতে।’ এই কথারই প্রতিফলন দেখা গেল তাঁর নৃত্যে।
কাঁকড়া-সংগীতে দেখালেন কী করে একটি ডুমুরকে কাঁকড়া কুরে-কুরে খাচ্ছে। 888sport promo codeর অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণার বর্ণনা পাওয়া গেল এই কাঁকড়া-সংগীতে। দুই শতক পুরোনো একটি সঙ্গম 888sport app download apkরও নৃত্যরূপ পরিবেশন করে দর্শকদের নতুন ধরনের এক অভিজ্ঞতা লাভের আনন্দ দিলেন। একটি জাবেলি নৃত্যে প্রিয়জন-উপেক্ষিতার বিরহ-বেদনার গল্প তুলে ধরলেন আলারমেল। শেষে একটি প্রাচীন তামিল 888sport app download apk-অবলম্বনে পরিবেশন করলেন রসিকাপ্রিয়া।  তামিল 888sport app download apkটির বাংলায় 888sport app download apk latest version করলে মোটামুটি এরকম দাঁড়ায় : ‘হে শক্তিমান স্বদেশ আমার, শক্তিমত্ততায় তোমার মহিমার প্রকাশ ঘটে না। পর্বত-উপত্যকায়ও তোমার মহিমা কীর্তিত হয় না। মহামানবের আবাসভূমি হলেই তুমি মহিমান্বিত হও।’ আলারমেল 888sport live chatী হিসেবে কতটা পরিশীলিত তা বোঝা গেছে তাঁর প্রতিটি পরিবেশনায়।
রাজন মিশ্র ও সাজন মিশ্র নায়কি-কানাড়ায় পরিবেশন করলেন খেয়াল। ‘বানারা মোরা পেয়ারা বাহন ময়ি জঙ্গল পাথরুয়ারে’ – এই বন্দিশ দিয়ে শুরু করেছেন মিশ্রযুগল তাঁদের অনুষ্ঠান। এরপর দ্রুত তিনতালে গাইলেন ‘সজন বিনা ভই নিরাশ হু’। রাজন-সাজনের বিস্তারে ছিল মুগ্ধ হওয়ার মত মীড়ের কাজ। এরপর রাগ সোহিনিতে একটি তারানা গেয়ে শোনালেন দুইজনে। সবশেষে ছিল একটি ভজন ‘জগৎ মে ঝুটি দেখি হ্যায় প্রীত’। প্রতিটি পরিবেশনাই শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তাঁদের স্বরের প্রক্ষেপণ, ওঠানামা এতটাই জোরালো ও সাবলীল ছিল যে, শ্রোতৃমণ্ডলী রীতিমতো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার সপ্তকে তাঁদের কণ্ঠ যেন বীণা-ধ্বনির মতেই অনুরণিত হচ্ছিল।
শেষরজনীর অনুষ্ঠানে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বংশীধ্বনির শোনার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। হরিপ্রসাদ মঞ্চে এসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘কী বাজাবো জানি না, তবে বাজাচ্ছি।’ বোধহয় তেমন মেজাজে ছিলেন না। বাজিয়েছেন মারু-বেহাগ। প্রথম বাজনায় অনেকের মন ভরল না। এরপর শ্রোতাদের কাছে নিজেই জানতে চাইলেন, ‘আপনারা কী শুনতে চান?’ ফরমায়েশ-অনুযায়ী শোনালেন হংসধ্বনি। ততক্ষণে বাজানোর মেজাজ এসে গেছে, কাজেই উপভোগ্য হয়ে উঠল তাঁর বংশীবাদন। তাঁর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, তবু শ্রোতা এবং উদ্যোক্তদের অনুরোধে বাজালেন কীর্তনের একটি সুর। শ্রোতারা এবার সত্যি উল্লসিত হয়ে উঠলেন।
সংগীত-উৎসবের শেষ 888sport live chatী ছিলেন পণ্ডিত উলহাস কাশালকার। গোয়ালিয়র, আগ্রা ও জয়পুর এই তিন ঘরানার তালিমই নিয়েছেন তিনি। সংগীত পরিবেশনের সময়ে একটি ঘরানা থেকে অন্য ঘরানার গায়কিতে স্বচ্ছন্দে বিহার করেন তিনি। এই কারণে তাঁকে এই তিন ঘরানারই প্রতিনিধি বিবেচনা করা হয়।
উলহাস পরিবেশন করলেন মিয়া কি টোড়ি। প্রথমে বিলম্বিত খেয়াল, পরে দ্রুত একতালে তারানা গেয়ে মুগ্ধ করেছেন সকলকে। স্বরবিস্তারে তাঁর সংযমী পারদর্শিতা উল্লেখযোগ্য। সাবলীল প্রবাহ ছিল তাঁর সংগীত-পরিবেশনায়। উৎসবের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল ভৈরবী রাগে ভজন : ‘তুম হো জগৎ কি দাতা, রাখিও লাজ মোর’। শেষরাতের অনুষ্ঠানও সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল মধ্যরাতে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে ভোর পাঁচটা হয়ে গেল।
চারদিনের এই সংগীত-উৎসব 888sport appsের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। উদ্যোক্তদের হিসেবানুযায়ী প্রথম তিনরাতে দশহাজার করে শ্রোতা অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। শেষরাতে এই 888sport free bet পনের হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। 888sport appsে এত শ্রোতা এতটা সুশৃঙ্খলভাবে উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন, এই বিশ্বাস বোধহয় কারও, এমনকি উদ্যোক্তাদেরও, ছিল না। এই দেশ ও জাতি অনেকটা অগোচরে নিজেদের প্রস্তুত করছে, এই অনুষ্ঠান এই সত্যকে প্রকট করেছে। প্রস্তুতি চলছে নানা ক্ষেত্রে। সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়, যেদিন এই অলক্ষ্য সব প্রস্তুতিকে অবলম্বন করে আমাদের এই জাতি নব-উত্থানের মহাসংগীত রচনা করবে।