সংগীত-সুধায় পূর্ণ প্রাণ

এবার হবে, কি হবে না – এই দোলাচলের মধ্যে যখন সংগীতপিপাসুদের মনে উৎকণ্ঠার কাঁটা খচখচ করছিল, তখনই জানা গিয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ষষ্ঠবারের মতো পাঁচ দিনব্যাপী ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৭’। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-আয়োজিত এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। স্কয়ার-নিবেদিত এ-উৎসবের আয়োজন সহযোগী ছিল ব্র্যাক ব্যাংক। সম্প্রচার সহযোগী ছিল চ্যানেল আই, মেডিক্যাল পার্টনার স্কয়ার হাসপাতাল, ইভেন্ট ব্যবস্থাপক বস্নুজ কমিউনিকেশনস এবং আয়োজন সহযোগী ইনডেক্স গ্রম্নপ, বেঙ্গল ডিজিটাল, বেঙ্গল বই ও বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল সিঙ্গাপুরের পারফেক্ট হারমনি।

বরাবর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে এ-উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবারের ভেন্যু ছিল ধানম–র আবাহনী মাঠ। আগের চেয়ে এবারের ভেন্যু পরিসর বেশ বড়। তাই দর্শক-শ্রোতার সমাগমও যে বেশি হবে তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। মাঠে গিয়ে উৎসবের প্রথম দিন থেকেই তার প্রমাণ মিলল। উপমহাদেশ তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর শেষ হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭। এই পাঁচ দিন নৃত্য-গীত-বাদ্যযন্ত্রে মোহিত হয়ে ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী, সংগীতের দোসর সমঝদাররা।

উৎসবের প্রথম দিন আয়োজন শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। যথারীতি এর আগে থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন সংগীতপ্রেমীরা। উৎসব শুরু হয় বিশ্বখ্যাত বেহালাবাদক ভারতের ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের বেহালাবাদন দিয়ে। উপমহাদেশের এই গুণী 888sport live chatীকে তুলনা করা হয় পশ্চিমা বিশ্বের সেরা বেহালাবাদক নিকোলা পাগানিনির সঙ্গে। বলা হয়, ‘ভারতের বেহালা-ঈশ্বর’। তিনি বেহালার সুরে জমিয়ে তোলেন আসর। তাঁর পরিবেশনা সুরপিয়াসীদের হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় কোমল অনুরণন। বেহালায় তিনি কখনো তোলেন দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের লয়, কখনো পশ্চিমা ধাঁচের ধ্রম্নপদী সুর। বিমোহিত দর্শক বারবার হাততালি দিয়ে তাঁদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বেহালায় রাগ আভোগী পরিবেশন করেন। তাঁর সঙ্গে মৃদঙ্গে শ্রীরামামূর্তি ধূলিপালা, তবলায় পণ্ডিত তন্ময় বোস ও মোর্সিংয়ে সত্য সাই ঘণ্টাশালা সংগত করেন।

পৌষের হিমেল বাতাসে ভর করে জেঁকে বসছিল শীত, সঙ্গে কুয়াশার হালকা আস্তরণ। শীতল এ-পরিবেশে আবাহনী মাঠে যেন বইছিল প্রাণের উষ্ণতা। সেই উত্তাপের আঁচ বাড়িয়ে দিয়েছিল কাজাখস্তানের একঝাঁক 888sport live chatীর অর্কেস্ট্রা। এবারই প্রথম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটল এ-পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল কম্পোজিশন উপস্থাপন করে কাজাখস্তানের ৫৬ সদস্যের আসতানা সিম্ফনি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা।

এরপর মঞ্চে আসেন ভারতীয় 888sport live chatী রাজরূপা চৌধুরী। তাঁর সরোদের সুর শান্তির পরশ বুলায় উপস্থিত সবার মনে। রাজরূপার পর সবার মন ভরান ভারতের 888sport live chatী বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর। তিনি পরিবেশন করেন ভারতের গোয়ালিয়র, কিরানা ও জয়পুর ঘরানার খেয়াল। পরে সেতার বাজিয়ে শোনান 888sport appsের 888sport live chatী ফিরোজ খান। এরপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষানবিশ সুপ্রিয়া দাস তাঁর খেয়ালে মুগ্ধ করেন সবাইকে। এই দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল ভারতীয় বংশীবাদক রাকেশ চৌরাসিয়া ও সেতারবাদক পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁদের বাঁশি ও সেতারের সুর যেন আবাহন করছিল আরেকটি উজ্জ্বল দিনের সূর্যকে।

ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত এ-উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, 888sport appয় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও স্কয়ার গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ-উৎসবের প্রতিটিতেই উপস্থিত থেকেছি, এটা আমার সৌভাগ্য। এ-উৎসবে আমরা পাঁচদিন নৃত্যগীতের মধ্যে অবগাহন করব। আমরা সবার আগে মানুষ হতে চাই, নিজেদের রুচিকে উন্নত করতে চাই। এ-উৎসব সে-পথেই প্রেরণা জোগাবে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সংগীত পরিশুদ্ধ করে আমাদের, আমাদের চিত্তকে উদার করে, আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করে। সংগীত আমাদের মুক্তচিন্তার অধিকারী করে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এ-উৎসবের মধ্য দিয়ে সেই মূল্যবোধ, চেতনাকে ধারণ করতে চাই। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংগীত আমাদের শক্তি জোগাবে। উৎসবটি আমাদের মধ্যে সে-চেতনার বিকাশ ঘটায়।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, শুধু 888sport appsে নয়, এটি এ-অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। বিশ্বের অন্যতম ধ্রম্নপদী উৎসবটি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে 888sport live chatীদের টেনে এনেছে। মহান 888sport live chatীদের সংগীতে নিজেদের সমৃদ্ধ করব।

উৎসবমঞ্চে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ঘোষণা দেন, আগামী বছর এ-উৎসব উৎসর্গ করা হবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে, ২০১৯ সালে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে এবং ২০২০ সালে ছায়ানট-সভাপতি সন্জীদা খাতুনকে।

উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসর শুরু হয় উপমহাদেশের কত্থক নৃত্যের অন্যতম দিকপাল অদিতি মঙ্গলদাস ও তাঁর দল দৃষ্টিকোণ ড্যান্স ফাউন্ডেশনের সম্মেলক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তারপর থেকে সুরের জগতে শুধুই ভেসে চলা। ভারতের প্রখ্যাত নৃত্য888sport live chatী অদিতি মঙ্গলদাস ও তাঁর দলের কত্থকের নান্দনিক মুদ্রা আর অপূর্ব নৃত্যলহরি মুগ্ধ করে উপস্থিত সবাইকে। ‘উৎসব’ শিরোনামের এই প্রযোজনায় শরীরের সঙ্গে আত্মার সংযুক্তি এবং আত্মসুখে নিমগ্নতার গল্প ধ্বনিত হয় নৃত্যঝংকারে। দলটির দ্বিতীয় পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ‘প্রিয়তমের খোঁজে’। তুর্কি বংশোদ্ভূত সংগীতসাধক এবং ফার্সি ও হিন্দি ভাষার কবি আমির খসরুর মানবপ্রেম ও ঈশ্বরপ্রেমের বর্ণনায় রচিত 888sport app download apkংশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন অদিতি ও তাঁর দল। তারানার মাধ্যমে শেষ হয় অদিতি ও তাঁর দলের পরিবেশনা। অদিতি মঙ্গলদাসের সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেন গৌরী দিবাকর, মিনহাজ, আম্প্রালি ভাণ্ডারি, অঞ্জনা কুমারী, মনোজ কুমার ও সানি শীর্ষদিয়া। দলটির সঙ্গে কণ্ঠ ও হারমোনিয়ামে সংগত করেন ফারাজ আহমেদ, তবলা ও পার্ধানে মোহিত গাঙ্গানি, পাখোয়াজে আশীষ গাঙ্গানি এবং বাঁশিতে ছিলেন রোহিত প্রসন্ন।

কত্থকশেষে ওঠে তবলার বোল। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতের মোহনীয় কারুকাজে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে মঞ্চে সাজানো তবলাগুলো। ভালো লাগায় ভরে যায় মন। এ পরিবেশনায় অংশ নেন প্রশান্ত ভৌমিক, সুপান্থ মজুমদার, এম জে জেসাস ভুবন, ফাহমিদা নাজনিন, নুসরাত-ই-জাহান ও শ্রেষ্ঠা প্রিয়দর্শিনী।

এরপর মঞ্চে আসেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। দর্শকদের অনেকেই এদিন শুধু এ-প্রবাদপ্রতিম 888sport live chatীর সন্তুরবাদন শোনার জন্যই এসেছিলেন। উপস্থিত সবার সেই কামনা যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পণ্ডিতজির সুমধুর সুর-সৃষ্টিতে। সবাইকে সন্তুরে মাতিয়ে রাখেন পণ্ডিত শিবকুমার। মঞ্চে এসে তিনি প্রথমে সান্ধ্যকালীন বন্দিশ রাগ ঝিঁঝুটি পরিবেশন করেন। এরপর তিনি আলাপ, ঝোড়,  ঝালা  ও গৎ পরিবেশন করেন। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। এই রাগ পরিবেশনার সময় শিবকুমার শর্মা বলেন, এ-উৎসবে আসা বরাবরই আনন্দের। একটু আগে মঞ্চে আসা বাংলার কিশোররা তবলা বাজিয়ে শোনাল। এদের দেখে আমি অবাক হই। এদের মধ্য থেকেই একদিন উঠে আসবে কিংবদন্তি। আমি এদের নিয়ে বড় আশা করি। সন্তুরকে ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের লোকজ বাদ্যযন্ত্র হিসেবেই চেনেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে এর জন্ম ভারতে নয়, পারস্যে। কালক্রমে ভারতবর্ষে এসেছে এ-বাদ্যযন্ত্র। পঞ্চাশের দশক থেকে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার নিরলস প্রচেষ্টা ও শ্রম এ-বাদ্যযন্ত্রকে নিয়ে গেছে সংগীতের আসরে উচ্চতর অবস্থানে।

সন্তুরের ধ্বনি মিলিয়ে যেতে না যেতেই বাতাসে ভেসে আসে খেয়ালের মন কেমন করা সুর। পণ্ডিত উলস্নাস কশলকর তাঁর অনবদ্য গায়কিতে বিমোহিত করে রাখেন সবাইকে। প্রথমে তিনি পরিবেশন করেন রাগ যোগকোষ, পরে গেয়ে শোনান সোহিনী রাগ। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন সুরেশ তালওয়ালকর। তাঁর পরিবেশনা শেষ হলে সেতারে সুর তোলেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। টুংটাং টুংটাং ধ্বনি নয়, যেন হৃদয়ের গভীরতম আবেগ ঝরে পড়ছিল সেতারের তার বেয়ে। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি শোনান বাগেশ্রী রাগ। এরপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কু-ু পরিবেশন করেন ধ্রম্নপদ। 888sport live chatীকে পাখোয়াজে সংগত করেন সুখাদ মু–; তানপুরায় ছিলেন জ্যাতাশ্রী রায় চৌধুরী ও টিংকু কুমার শীল। অভিজিত কু-ু পরিবেশন করেন রাগ বেহাগ। পণ্ডিত রনু মজুমদারের বাঁশি আর পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোসের সরোদের যুগলবন্দি পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। তাঁদের সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ সামসি এবং অভিজিৎ ব্যানার্জি। 888sport live chatীদ্বয় পরিবেশন করেন রাগ আহির ভৈরব। শেষে দর্শকদের অনুরোধে তাঁরা ভাটিয়ালি ধুন পরিবেশন করেন।

বরেণ্য ওস্তাদদের কণ্ঠমাধুরী, সন্তুর, সেতার, নৃত্যগীত, বাঁশির মূর্ছনা আর শেষে পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোসের সরোদের সুরলহরিতে যেন পূর্ণ হয়ে উঠছিল সংগীতপিপাসু হৃদয়গুলো। 888sport live chatীদের পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে রোমাঞ্চিত দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি ছিল রাতভর। প্রতিটি পরিবেশনাশেষে 888sport live chatীদের 888sport apk download apk latest version ও অভিনন্দন জানাতে আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে দর্শকদের হর্ষধ্বনির সঙ্গে করতালি ছিল নান্দনিক।

২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই পালটে যাচ্ছিল আবাহনী মাঠের দৃশ্যপট। দলবেঁধে মাঠে প্রবেশ করছিলেন অসংখ্য মানুষ। হুড়োহুড়ি নেই। টিকিট নিয়ে কালোবাজারি নেই। সুরের জালে নিজেকে বাঁধতে আসা মানুষের স্রোত যেন মিশে যাচ্ছিল আবাহনী মাঠে। এমনই চিত্র ছিল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় রাতে। রাত সাড়ে ৭টায় সেতারের ঝংকার দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা সেতারে মায়াবী সুর তুলে পরিবেশকে করে তোলেন মোহময়, শোনান রাগ কিরওয়ানি। সুর-রসিকদের প্রত্যাশাকেও যেন ছাপিয়ে যায় তাঁদের পরিবেশনা। 888sport apps ফিরে পাচ্ছে উচ্চাঙ্গসংগীতের হারানো গৌরব – সে-বার্তাই যেন দিলেন পণ্ডিত কুশল কুমার দাশের শিষ্যরা। এ-পরিবেশনায় অংশ নেন প্রসেনজিৎ ম-ল, টিএম সেলিম রেজা, রিংকো চন্দ্র দাস, মেহরীন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জি, মোহাম্মদ কাওসার ও জাহাঙ্গীর আলম।

দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল ঘাটম ও কঞ্জিরার যুগলবন্দি। এ-যুগলবন্দি পরিবেশনার জন্য মঞ্চে আসেন গ্র্যামি বিজয়ী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম, তাঁর সঙ্গে ছেলে সেলভাগনেশ বিনায়ক রাম এবং নাতি স্বামীনাথন। একই মঞ্চে তিন প্রজন্মের পরিবেশনা। ঘাটম বাজান বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম, কঞ্জিরা সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম এবং কঞ্জিরা ও কোনাক্কলে স্বামীনাথন। পুরো সময় জুড়েই ছিল মুগ্ধতা। ঘাটমে শিবতা-ব, সেভেন অ্যান্ড হাফ বিট কম্পোজিশনে 888sport appর শুদ্ধ সংগীতপ্রেমীদের মনে থাকবে অনেক দিন। এরপর মালকোষ রাগে খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ১৮ সদস্যের এই দলে ছিলেন আশা খন্দকার, বিটু কুমার শীল, দেবজানি দাস, ড. ফকির সুমন, জিএম সাইফুল ইসলাম, জোহরা হোসাইন, মলিস্নকা ওঝা, গোলাম মোস্তফা, মমিন মিয়া, মুরাদ হোসাইন, নিউটন বৈরাগী, নিত্যগোপাল ঠাকুর, অর্বি শর্মি, শারমিন সুলতানা 888sport sign up bonus, কৃষ্ণগোপাল, সুমা ব্যাপারী, সুস্মিত সাহা ও তমালিকা হালদার।

খেয়ালশেষে সরোদ বাজিয়ে শোনান ভারতের প্রখ্যাত সরোদিয়া আবির হোসেন। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ শামসি এবং তানপুরায় অভিজিৎ দাশ। 888sport live chatী পরিবেশন করেন রাগ আভোগী। এরপর বাঁশিতে সুর তোলেন 888sport appsের খ্যাতিমান বাঁশরিয়া গাজী আবদুল হাকিম। তিনি দেশ রাগ, পিলু ঠুমরি ও কয়েকটি ধুন পরিবেশন করেন। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন দেবেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি এবং তানপুরায় ছিলেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী সামীন ইয়াসার ও এসএম আশিক আলভি।

বাঁশির সুর থামতেই মঞ্চে আসেন ভারতের পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের এ-শিক্ষকের পরিবেশনায় ছিল ধ্রম্নপদ। তাঁর কণ্ঠমাধুর্যে মাঠে সৃষ্টি হয় এক অনন্য পরিবেশ। তিনি পরিবেশন করেন রাগ মাড়ু ও রাগ তিলং। তাঁর সঙ্গে পাখোয়াজে সংগত করেন সুখাদ মু– এবং তানপুরায় ছিলেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কু-ু ও টিংকু কুমার শীল। তিনি মঞ্চ থেকে নামতেই বেহালা-হাতে মঞ্চে আসেন ভারতের বিদুষী কালা রামনাথ। তিনি বেহালা-বাদন শেষ করলেন রাগ বসন্ত বাজিয়ে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৩টা ৩১।

এদিন সবশেষ পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। শুরুতেই তিনি গেয়ে শোনান ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলির বিখ্যাত রাগ গুণকেলি – গাও গুণকেলি গুণীয়ামমে – গুণকি বাত সামঝানমে। তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত যোগেশ সামসি। সংগীত আর সুরের আবহে তখন চারদিকেই সাদা কুয়াশার চাদর। এরপর তিনি গাইলেন – যামিনী হলো যে ভোর … বাঁশি বাজে। যোগিয়ায় মুগ্ধ দর্শক। যেন সুর ছাড়া আর সবকিছুই তখন হারিয়ে গিয়েছে। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী শেষ করলেন ভৈরবীতে মীরার ভজনে – নায়না বায়ন পারি। তাঁর পরিবেশনার শেষে, মাঠে দাঁড়িয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক সম্মিলিত করতালিতে তাঁকে সম্মান জানান।

শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ রাত। ছুটির দিন থাকায় এদিন শ্রোতার উপস্থিতিও ছিল 888sport app দিনের তুলনায় অনেক বেশি। রাত ১০টা বাজার আগেই পূর্ণ হয়ে যায় আসনগুলো। শুরুতে ছিল দেশের 888sport live chatীদের শাস্ত্রীয় নৃত্যের জমকালো পরিবেশনা। ছিল দুই বিখ্যাত 888sport live chatী ওস্তাদ রাশিদ খান ও পণ্ডিত যশরাজের খেয়ালের মনোজ্ঞ পরিবেশনা। নৃত্যের ছন্দে ও খেয়ালের মায়াবী সুরে উপস্থিত হাজারো দর্শক যেন মুহূর্তেই মোহিত হয়ে যান। তাঁদের হৃদয় ভরে ওঠে ভালোবাসা ও শান্তির আবেশে।

তিন ঘরানার শাস্ত্রীয় নাচের সম্মিলনে শুরু হয় চতুর্থ দিনের আয়োজন। দর্শকদের নয়ন জুড়ায় মণিপুরি, কত্থক ও ভরতনাট্যম। শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করেন 888sport appsের নৃত্য888sport live chatী সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। নৃত্য প্রযোজনা ‘নৃত্য চিরন্তন : মণিপুরি, ভরতনাট্যম, কত্থক নৃত্যার্ঘ্য’ শীর্ষক দুই পর্বে ভাগ করা পরিবেশনাটির নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, শিবলী মহম্মদ এবং ভাবনা। সার্বিক নৃত্য পরিচালনা ও সমন্বয়কারী ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা ও সুইটি দাশ, ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী, জুয়াইরিয়াহ মৌলি; কত্থক পরিবেশন করেন স্নাতা শাহরিন, মেহনাজ হক তুষার।

মণিপুরি নৃত্যে তাল-তানচেপ-৪ মাত্রায় রাধা রূপ বর্ণনা করেন সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা; নৃত্য ও সংগীত পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, কণ্ঠে গুরু কলাবতী দেবী। গানের কথা নেওয়া হয় বৈষ্ণব কবি গোবিন্দ দাসের একটি ভক্তিমূলক 888sport app download apk থেকে। এরপর তাল-সপ্ততাল ২০ মাত্রায় কালীয় দমন পরিবেশন করেন সুইটি দাস; নৃত্য ও সংগীত পরিচালনা করেন বিপিন সিংহ, কণ্ঠে ছিলেন দ্রৌপদী দেবী। মণিপুরি নৃত্যের সর্বশেষ অংশে তাল-তানচেপ-৪ মাত্রা, চালি তাল-৮ মাত্রা, এবং মেনকুপ-৬ মাত্রায় পরিবেশিত হয় শিবস্ত্ততি। এ অংশের নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন বিম্বাবতী দেবী, সংগীত পরিচালনায় গুরু লাকপতি সিং এবং কণ্ঠে দ্রৌপদী দেবী।

ভরতনাট্যম অংশে কীর্তি রামগোপালের নৃত্য পরিচালনায় ও ডিএন শ্রীভাৎসার সংগীত পরিচালনায়, বৃন্দাবনী রাগ ও আদি তালে সূরিয়া কথুরাম পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী। এরপর শিবস্ত্ততি পরিবেশন করেন জুয়াইরিয়াহ মৌলি। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন কীর্তি রামগোপাল, সংগীত পরিচালনায় ছিলেন রামা সুব্রহ্মণ্যন শর্মা। শিবস্ত্ততির পর কীর্তি রামগোপালের নৃত্য পরিচালনায় ও শ্রী পদ্মচরণের সংগীত পরিচালনায় এবং পূর্বী কল্যাণী রাগে ও আদি তালমে শিবকৃতি পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী।

কত্থক নৃত্যের শুরুতে তিনতালে গুরু বন্দনা করেন মেহরাজ হক তুষার। এরপর শুদ্ধ নৃত্য পরিবেশন করেন স্নাতা শাহরিন। তিনতালের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশিত এ-কত্থক নৃত্যের সংগীত ও নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শিবলী মহম্মদ।

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৃত্য পরিচালনা ও রাহুল চ্যাটার্জির সংগীত পরিচালনায় (রবীন্দ্রসংগীত) এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে মণিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক সম্মিলনে নটরাজের প্রতি নৃত্যের মালিকা নিবেদন করা হয়।

নৃত্যের ঝংকারশেষে সরোদের সুর ছড়ান বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের পরিচালনায় সরোদ পরিবেশন করেন ইলহাম ফুলঝুরি খান, ইশরা ফুলঝুরি খান, আম্ববারিশ দাস ও সাদ্দাম হুসেন।

রাত ৯টা ৩১ মিনিটে মঞ্চে এলেন ওস্তাদ রাশিদ খান। রামপুর সহসওয়ান ঘরানার প্রবাদপ্রতিম এই 888sport live chatী প্রথমে পুরিয়া রাগে গাইলেন – প্রীত লগন প্রিয়া। তিনি তাঁর নিজের সৃষ্টি – প্রিয়ারঞ্জনী রাগে আরেকটি খেয়াল শোনালেন। মাঠ জুড়ে তখন অদ্ভুত এক মুগ্ধতা, পিতা রাশিদ খানের সঙ্গে পরিবেশনায় তাঁর সন্তানও ছিলেন। কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন নাগনাথ আদগাঁওকার, তবলায় ছিলেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হারমোনিয়ামে অজয় যোগলেকর ও সারেঙ্গিতে ছিলেন ওস্তাদ সাবির খান। উৎসবের চতুর্থ দিনের অন্যতম আকর্ষণ ওস্তাদ রাশিদ খান ভারতের রামপুর সহসওয়ান ঘরানার অন্যতম ধারক। ওস্তাদ এনায়েত হুসাইন খান এবং তাঁর ভাগ্নে ওস্তাদ গোলাম মোস্তফা খানের পর তিনি এ ঘরানার প্রচার ও প্রসারে কাজ করছেন। সারগাম ও সারগাম তানকারীর সঙ্গে বিলম্বিত খেয়াল পরিবেশনের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।

ওস্তাদ রাশিদ খানের খেয়ালশেষে ছিল সরোদ ও বেহালার যুগলবন্দি। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ একসঙ্গে পরিবেশন করেন রাগ সিমেন্দ্রমধ্যম। তাঁদের সঙ্গে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। মৃদঙ্গমে ছিলেন অর্জুন কুমার।

হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের খেয়ালে যে-কজন হাতেগোনা জীবন্ত দিকপাল রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত যশরাজ। শাস্ত্রীয় সংগীতের যশস্বী এই 888sport live chatী প্রথমবারের মতো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের মঞ্চে খেয়াল পরিবেশন করেন। তিনি প্রথমে রাগ যোগ-এ খেয়াল পরিবেশন করেন। এরপর ছিল দুর্গা রাগে ভজন পরিবেশনা। তাঁকে তবলায় সংগত করেন রামকুমার মিশ্র, হারমোনিয়ামে পণ্ডিতা তৃপ্তি মুখার্জি, কণ্ঠে রত্তন মোহন শর্মা এবং মৃদঙ্গমে শ্রীধার পার্থসারথী।

খেয়ালশেষে প্রথমবারের মতো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে চেলোর পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। পাশ্চাত্য ঘরানার হলেও ১৯৯৩ সালে একটি কনসার্টে যোগ দিতে ভারতে এসে সংগীতের নতুন পথে চলতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কল্যাণে চেলো পেয়েছে নতুন মাত্রা। তাঁর হাতে শব্দযন্ত্রটির আকারেও অনেকটা বদল ঘটেছে। তিনি রাগ নন্দকোষ পরিবেশন করেন। তাঁর পরের পরিবেশনা ছিল ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ – এ দুটি রবীন্দ্রসংগীত। তখন মাঠের অধিকাংশ দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে তালে তালে তালি দিয়ে তাঁদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সাসকিয়ার সঙ্গে তবলায় পণ্ডিত যোগেশ সামসি এবং তানপুরায় ছিলেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কু-ু ও টিংকু কুমার শীল।

উৎসবের চতুর্থ দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল ইমদাদখানি ঘরানার 888sport live chatী পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখার্জির সেতার। তাঁর পিতা একসময় 888sport appsে ছিলেন, এ-কথা জানাতেই দর্শকের করতালি ছিল আপনজনকে বরণ করে নেওয়ার মতো। সেতারের জাদুতে শুরু হলো আরেক মুগ্ধতা – সৌমেন নন্দীর তবলায় ললিত তখন ডেকে আনছে দিনের প্রথম প্রহর। তিনি শেষ করলেন প্রভাতের রাগ ভৈরবীতে, চেনা সুর – বাবুল মেরা – নৈহর ছুটওহি  যায়…। বাহাদুর শাহ জাফরের পদ্য তখন মাঠজুড়ে স্পর্শ করছে সবাইকে।

উৎসবের শেষ দিনে অধিবেশন শুরু হয় ওড়িশি নৃত্য দিয়ে। বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র পরিবেশন করেছিলেন নৃত্যের ক্যারিশমা।

সুজাতার পরিবেশিত ‘অর্ধ888sport promo codeশ্বর’ নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের শেষরাত্রির পরিবেশনা। তাঁর নৃত্যের মুদ্রাগুলো যেন ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল চোখ। নাচের মুদ্রার মধ্য দিয়ে নিঃশব্দ কথোপকথন চলছিল দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে। বিস্ময়ে বিমূঢ় হাজারো দর্শক। আর চারদিকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে নেচে যাচ্ছিলেন বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র। রাগ মলিস্নকা ও তাল মলিস্নকার এই পরিবেশনার নৃত্যরচনা ও পরিচালনা করেছেন পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র এবং সংগীতে ছিলেন পদ্মশ্রী রঘুনাথ পানিগ্রাহী ও পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্র। এরপর তাঁর পরিবেশনা ছিল ‘রামায়ণ-লং’। নৃত্যের এ-অংশটি ভক্ত কবি জগন্নাথ দাস-রচিত ওড়িশি রামায়ণ থেকে নেওয়া। এটি মূলত একটি নৃত্যনাট্যের অংশবিশেষ। এটি পরিচালনা করেন গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্র।

নৃত্যশেষে শুরু হয় উৎসবের সমাপনী অধিবেশন। এ-অংশে এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্যার ফজলে হাসান আবেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ছায়ানটের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং আবাহনী লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষে তাঁর মা আমিনা আহমেদ।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 888sport appsের হারিয়ে যাওয়া উচ্চাঙ্গসংগীতের ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারে কাজ করছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এ-প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় প্রতিবছর এই উৎসব নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এটাও গর্বের ব্যাপার। যত দিন বেঁচে আছি তত দিন এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারলে আরো ভালো লাগবে।

প্রধান অতিথি স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, 888sport live chat-888sport live footballে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। তাই অনেক আশঙ্কা কাটিয়ে এই উৎসব আয়োজন করতে পারা অনেক ইতিবাচক ব্যাপার।

ড. সন্জীদা খাতুন বলেন, উৎসব আমাদের জন্য খুব জরুরি। কিন্তু শুধু 888sport appয় উৎসব আয়োজন করলে হবে না। সংগীত ও সংস্কৃতির এ-ধরনের উৎসব সারাদেশে নিয়ে যেতে হবে। এ-ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই আমাদের মধ্যে মমত্ববোধ জেগে উঠবে। কারণ মানুষকে ভালোবাসতে পারাই মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ।

সমাপনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। তিনি অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আয়োজনের সহযোগী সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি শুধু পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি। কিন্তু এ-উৎসব আয়োজনের সব পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। সবশেষে তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা না থাকলে আমরা এ-উৎসব আয়োজন করতে পারতাম না।

এরপর মোহনবীণা হাতে মঞ্চে আসেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট। মোহনবীণা শব্দযন্ত্রটি 888sport appsে খুব প্রচলিত নয়। এই শব্দযন্ত্রটি তৈরিই করেছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট। ২০ তারের হাওয়াই গিটারের বদল ঘটে হয়েছে এই মোহনবীণা। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন শৌভেন চট্টোপাধ্যায়। রাগ মরু বেহাগ ও ধুন পরিবেশন করেন তাঁরা।

মোহনবীণার সুরের রেশ না কাটতেই খেয়ালের সুর ছড়িয়ে দেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি। বিষ্ণুপুর ঘরানার এই 888sport live chatী শোনান রাগ যোগ। খেয়ালশেষে মাঠজুড়ে সেতারের ইন্দ্রজাল – মঞ্চে সেনিয়া মাইহার ঘরানার দুই সেতার পণ্ডিত কুশল দাস ও তাঁর ছেলে কল্যাণজিৎ দাস। রাত বেড়েই চলেছে, সঙ্গে সেতারে যোগ কোষের যুগলবন্দি। এরপর কুশল দাস একটি ঠুমরিও শোনালেন। তবলায় ছিলেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়, তানপুরায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী এসএম আশিক আলভি এবং অপূর্ব কর্মকার।

মধ্যরাতশেষে খেয়াল পরিবেশন করেন পণ্ডিত কৈবল্যকুমার। রাগ গোরখ কল্যাণ ও খাম্বাজে ঠুমরি শোনান তিনি। সঙ্গে তবলায় সংগত করেন শ্রীধর মন্দ্রে, হারমোনিয়ামে সুধাংশু কুলকার্নি, তানপুরায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমার মালাকার ও অভিজিৎ দাশ।

ঘড়ির কাঁটা যখন ভোর ৪টা ছুঁয়েছে তখনই এলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাই তখন দাঁড়িয়ে করতালিতে স্বাগত জানালেন এই কিংবদন্তিকে। তিনি প্রণাম জানিয়ে বললেন, প্রতিবারই বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের সমাপ্তির সময়ে আমি থাকতে পেরেছি। আমি আবারো আসতে চাই। আপনাদের শোনাতে চাই বাঁশি।

টানা এক মিনিট করতালির পর শুরু করলেন ললিত রাগের বাদন। দুচোখ বন্ধ চৌরাসিয়ার। পিনপতন স্তব্ধতায় পরিপূর্ণ ধানম–র আবাহনী মাঠ। সময় স্থির। সবকিছু হারিয়ে গিয়ে তখন শুধু সুর। রাতজাগা নাগরিক পাখিরাও ডাকছে না। শেষ হলো ললিত। এবার জনপ্রিয় লোকসুরের জাদু। চেনা সুর এত শুদ্ধ, এত পূর্ণ হতে পারে সেটা এই ভোরের আগে অজানা ছিল সবার।

পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়াকে বাঁশিতে সংগত করেন বিবেক সোনার ও ইউকা নাগাই, তবলায় ছিলেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, পাখোয়াজে পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর এবং তানপুরায় ছিলেন মুশফিকুর ইসলাম।

ভোর ৫টার কিছু পরে পর্দা নামে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ষষ্ঠ আসরের। পূর্ণ মাঠ ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে। কারো মুখেই রাতজাগার ক্লান্তি নেই। আছে সুরের অমৃতধারায় ডুবে থাকার প্রশান্তি।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে আরো ছিল 888sport appsের সংগীতসাধক ও তাঁদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আয়োজন করে ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী। ছিল বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের একটি বইয়ের স্টল।

ষষ্ঠবারের মতো এই উৎসব উপভোগের মধ্য দিয়ে এ-কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, শাস্ত্রীয়সংগীত সামগ্রিক সাংস্কৃতিক প্রয়াস ও বিকাশকে নবমাত্রা দান করেছে। সবার মধ্যে, বিশেষত নতুন প্রজন্মের মধ্যে, সৃষ্টি করছে সংগীতের শেকড়ের প্রতি অনুরাগ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এ বিশাল আয়োজন এদেশে সংগীতচর্চা, সাধনা ও উপভোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মহামিলনমেলা।

ছবি : অডিও ভিজ্যুয়াল ডিপার্টমেন্ট, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে