সতীনাথ ভাদুড়ী : খুঁজে ফেরা

বহুদিন আগে সতীনাথ ভাদুড়ীর ওপর সংক্ষিপ্ত একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। লেখাটি পত্রিকায় (‘সংবাদ সাময়িকী’) ছাপা হয়েছিল। আমি নিজে জানতাম ওটা কিছু হয়নি। বালখিল্যতায় ভরা। ঢোঁড়াই প্রথম চরণ পড়ার পর মুগ্ধতা আর আবেগের অনিয়ন্ত্রিত প্রকাশ ছিল ওই লেখায়। মনে আছে, চ্যাপম্যানের 888sport app download apk latest versionে হোমার পড়ার পর কিট্সের যে-আনন্দানুভূতি তার সঙ্গে আমার ঢোঁড়াই পড়ার আনন্দের একটা মিল খুঁজে পেয়েছিলাম। নিজেকে অপরাধী ভেবেছিলাম এই ভেবে যে, কেন আরো আগে তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত হইনি।

সতীনাথকে আবিষ্কারের ঘটনাটা আজো আমার কাছে 888sport app download for androidীয় হয়ে আছে। ক্লাসের অবসরে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজতাম। খুঁজতে খুঁজতে একদিন পেয়ে গেলাম ঢোঁড়াইয়ের প্রথম চরণ। প্রচ্ছদহীন, মলিন, সম্ভবত প্রথম সংস্করণ। সেই থেকে শুধু ঢোঁড়াই নয়, ঢোঁড়াইয়ের স্রষ্টাকেও জানার ইচ্ছা আমাকে পেয়ে বসল। যত জেনেছি, বলা যায় যতটুকু জেনেছি, মনে হয়েছে কিছুই জানা হয়নি।

ঢোঁড়াই চরিত মানস সতীনাথের তৃতীয় 888sport alternative link। ঢোঁড়াইয়ের আগে   তিনি   লিখেছিলেন   জাগরী   এবং   চিত্রগুপ্তের   ফাইল।  গল্প-888sport alternative link মিলে সতীনাথের প্রকাশিত লেখার 888sport free bet পনেরোর বেশি নয়। এতো কম লেখার কারণ কি তবে তাঁর মাত্র পনেরো-ষোলো বছরের (১৯৪৮-৬৫) লেখকজীবন। তাও নয়। বেশি লিখতে তিনি চাননি। বেশি লেখার ব্যাপারে তাঁর কোনো উৎসাহ ছিল না। যা লিখেছেন তা নিয়েও কখনো আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগেননি। ঢোঁড়াই চরিত মানসের মতো 888sport alternative link লেখার পরও তিনি ‘ঢোঁড়াই’ 888sport liveে তাঁর অতৃপ্তির কথা বলেছিলেন।

নিজের লেখার ব্যাপারে অতৃপ্ত, প্রচারবিমুখ, নির্জন, নীরব মানুষটি নিজের ব্যাপারে কখনো মুখ খোলেননি। নিজেকে আড়ালে রেখে জীবনব্যাপী বস্তু আর সত্যের অন্বেষণ করে গেছেন। তাঁকে চিনতে হয় তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে, তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, 888sport live chatিত অনাড়ম্বর জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে। তবু তাঁকে কতটুকুই বা জানা যায়! সতীনাথ তাঁর গল্প-888sport alternative linkে কখনোই চিত্তাকর্ষক, রোমাঞ্চকর কোনো কাহিনির অবতারণা করেননি, যে-কারণে তিনি পাঠকপ্রিয় হতে পারেননি। তাঁর লেখায় যে-গল্প তিনি রচনা করেছেন, জীবনের যে-ছবি এঁকেছেন, জীবনের রঙে তা যেমন স্নিগ্ধ, তেমনই মধুর। জাগরীর বিলুর কাহিনি সতীনাথেরই কাহিনি। যেমন পথের পাঁচালীর অপুর কাহিনি বিভূতিভূষণের কাহিনি। বিলু, অপু – এই চরিত্রগুলি তাদের স্রষ্টাদের জীবনের অভিজ্ঞতা আর উপাদানে তৈরি বলে অক্ষরে অক্ষরে তাদের মিলিয়ে নিতে হয় না।

পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী নদীয়ার

কৃষ্ণনগরের সবুজ শান্ত প্রাকৃতিক সান্নিধ্য ছেড়ে সপরিবার চলে এসেছিলেন বিহারের পূর্ণিয়ায়। পূর্ণিয়ায় তখন বাঙালি সমাজের রমরমা। কেউ উকিল, কেউ কেরানি, কেউ বা ডাক্তার, সকলেই শিক্ষিত। পূর্ণিয়া তখন ছিল একটি জেলা শহর। জেলা শহর হলেও একেবারেই গ্রামের মতো। যানবাহন বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাট থাকলেও রাস্তাঘাটের অবস্থা ছিল শোচনীয়। সন্ধ্যা হতে না হতেই সারাশহর নিঝুম হয়ে যেত। রাস্তায় কেরোসিনের আলো জ্বলতো, তাতে আলোর চেয়ে অন্ধকার আরো গাঢ় হতো। সতীনাথের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া এই পূর্ণিয়া শহরেই। এই পূর্ণিয়াকেই বাংলা 888sport live footballে তিনি অমর করে রেখে গেছেন। সতীনাথই বাংলা 888sport live footballে সম্ভবত একমাত্র লেখক যিনি তাঁর লেখায় জন্মভূমি পূর্ণিয়ার বাইরে অন্য কোথাও কখনো যাননি। তাঁর লেখায় আলো ঝলমলে কোনো শহর নেই, বড় কোনো মেট্রোপলিস নেই, নেই চকচকে মানুষের উপস্থিতি; নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষই তাঁর লেখায় বিষয়। তারা সবাই পূর্ণিয়ার মানুষ। সতীনাথের অভিজ্ঞতার শিকড় প্রোথিত ছিল পূর্ণিয়ার মাটিতে। কলকাতায় গেছেন, ফিরে এসেছেন, ভালো লাগেনি তাঁর কলকাতা।

একটি বিষয় এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। ‘বনজঙ্গল ঝোঁপঝাঁপ আর ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পাকায় কাঁচায় বাড়ি’ – এই নিয়ে পূর্ণিয়া ভৌগোলিক দিক থেকে বাঙালির কাছে পৃথক একটি প্রদেশ হলেও 888sport live footballের দিক থেকে ছিল বৃহত্তর বঙ্গ। ভাগলপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, পাটনা – বাংলা 888sport live footballের সঙ্গে একসময় এই অঞ্চলের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। 888sport live footballিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন দ্বারভাঙ্গায়, ভাগলপুরে বনফুল (888sport live footballিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়), কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ণিয়ায়, যার সান্নিধ্য প্রায় নিয়মিতই পেতেন সতীনাথ সান্ধ্য-আড্ডার আসরে; এমনকি শরৎচন্দ্রের শৈশব-কৈশোরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই ভূখণ্ডের মাটির গন্ধ। পরশুরাম দ্বারভাঙ্গারই মানুষ আর শরদিন্দুর কর্মক্ষেত্র পূর্ণিয়া আর মুঙ্গেরে। 888sport sign up bonus অভিজ্ঞতাকে সজীব করে রাখে। কুশী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা মিথিলাভূমি দু-হাত ভরে দিয়েছে বাংলা 888sport live footballকে। বিস্তৃত এই অঞ্চলের মাঠ, নদী, অরণ্য, জনপদ থেকে তাঁরা আহরণ করেছিলেন তাঁদের 888sport sign up bonusর সঞ্চয়। তাঁদের 888sport live footballও সেই 888sport sign up bonusর সুবাসে সুবাসিত।

সতীনাথের লেখায় পূর্ণিয়া কতভাবেই না সামনে এসেছে। তাৎমাটুলি, জিরানিয়া, বিসকান্ধা, আল্টাবাংলা – ঢোঁড়াইকে ভাবলে জায়গাগুলির প্রাকৃতিক আবহ,

সহজ-সরল মনুষের নিদারুণ জীবনযাপনের ছবি আজো চোখে ভাসে। সতীনাথ গভীরভাবে জেনেছেন, দেখেছেন পূর্ণিয়ার মানুষকে। প্রায় এক দশকের রাজনৈতিক জীবনের নিরন্তর পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে তিনি জেনে নিয়েছিলেন এখানকার জীবনবৈচিত্র্য,

প্রাকৃতিক আবহ। এখানকার বৈশাখী অপরাহ্ণের ধূসর আকাশ, আকাশের নিচে একপাল মহিষ চলেছে মন্থর চরণে মাথা দুলিয়ে-দুলিয়ে, সঙ্গে একজন কি দুজন লোক। কোথাও মাথায় ঘাসের ঝুড়ি নিয়ে চলেছে কয়েকজন মেয়ে, এই রকম বৈশাখী সূর্য মাথায় করে ঘর থেকে দূর-দূরান্তে যেতে হবে তাদের দুমুঠো ঘাসের সন্ধানে – জীবনের এই ছবি সতীনাথ তাঁর লেখায় তুলে নিয়েছেন পূর্ণিয়ার মাটি থেকেই।

পূর্ণিয়া, পূর্ণিয়া আর পূর্ণিয়া। পূর্ণিয়া মিশে ছিল সতীনাথের প্রাণে-মনে। তাঁর জন্ম, শিক্ষা, রাজনীতি, রাজনীতি ত্যাগ, 888sport live footballিক জীবনের সূচনা, জীবনের শেষ মুহূর্তটি কেটেছে পূর্ণিয়ায়। যখন সব ছেড়ে একেবারে একা, দিন কাটছে একা একা, বই পড়ে, লিখে আর বাগান করে একান্ত নির্জনতায়, তখনো পূর্ণিয়াই হয়েছে তাঁর আশ্রয়। পূর্ণিয়া ছেড়ে কোথাও যাননি। তাঁর 888sport alternative linkেও একবারও তিনি পূর্ণিয়ার জেলাসীমা অতিক্রম করেননি। ছোটগল্পে কখনো কখনো চলে গেছেন দূর-দূরান্তরে সময়কে অতিক্রম করে, তাঁর 888sport alternative link তাঁকে বেঁধে রেখেছে পূর্ণিয়ার মাটিতেই। কারণ প্রতিটি 888sport alternative linkে যে সতীনাথ নিজেরই মুখোমুখি হয়েছেন – এক এক রকমভাবে।

আজ থেকে ১১৫ বছর আগে [২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯০৬] পূর্ণিয়ায় পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ীর গৃহে বিজয়া দশমীর দিন সতীনাথ জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ণিয়ার পাড়ায় পাড়ায় সেদিন বিজয়া দশমী আর দশেরার আনন্দ-উৎসব চলছিল। একদিকে বিসর্জনের বাজনা, অন্যদিকে দশেরার আনন্দ-উচ্ছ্বাস – চারিদিকে আনন্দের এই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে জীবনের আবির্ভাবের বার্তা ঘোষণা দিয়ে যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো তার জন্মলগ্নটিও যেন একটি রূপক হয়ে আছে। সতীনাথের আগমন ইন্দুভূষণের সংসারে কোনো বিস্ময় কিংবা আনন্দের বার্তা নিয়ে যে আসেনি এটা ধরে নেওয়া যায়। সংসার সম্বন্ধীয় ঊনবিংশ শতকীয় ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন ইন্দুভূষণ। সংসারে সন্তানের আগমন তাঁর কাছে ছিল একটা নিয়মিত ব্যাপার। ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী তাঁর ব্যক্তিত্বের কারণে সকলের সঙ্গে থেকেও ছিলেন সকলের থেকে আলাদা। সংসারে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। সৎ, নীতিবান, কর্তৃত্বপরায়ণ পিতার অনুশাসন উপেক্ষা করার সাহস ছিল না কারো। পত্নীর আনুগত্য, সন্তানদের বশ্যতা ইন্দুভূষণের কাছে ছিল পূর্বস্বীকৃত সত্য। পিতা এবং সন্তানদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল দূরত্ব। একমাত্র আশ্রয় ছিলেন মাতা রাজবালা দেবী। পিতার নির্লিপ্ত উদাসীনতা থেকে সতীনাথকে নিবিড় স্নেহের আশ্রয়ে তিনি আগলে রেখেছিলেন। জাগরীতে বিলুকে নিয়ে মায়ের 888sport sign up bonusচারণের মধ্যে দিয়ে সতীনাথের শৈশব, ছেলেবেলা অনেকটাই উঠে এসেছে।

আট ভাইবোনের মধ্যে সতীনাথ ছিলেন ষষ্ঠ। আদরের আধিক্য যেমন ছিল না, তেমনি অবহেলা-অনাদরও ছিল না। ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে লালন করেছেন একাকিত্বকে। তাঁর 888sport alternative linkের চরিত্রগুলিও তাই হয়ে উঠেছে নিজের মধ্যে একা। জাগরী এবং দিগ্ভ্রান্ত 888sport alternative linkের চরিত্রগুলির কথা ভাবলে আমরা বুঝতে পারি, তারা প্রত্যেকেই নিজের মধ্যে একাকিত্বকে লালন করেছে। জাগরী এবং দিগ্ভ্রান্ত 888sport alternative linkে প্রত্যেকের গল্প যেমন তাদের একাকিত্বের গল্প, তেমনি হয়তো একথা বলা যায়, সতীনাথের নিজের একাকিত্বই ছুঁয়ে গেছে এই চরিত্রগুলিকে।

ছেলেবেলা থেকেই সতীনাথের বন্ধু ছিল না বললেই হয়। স্কুলে বন্ধু কম। যারা তাঁর বন্ধু তাদের সঙ্গে আবার খুবই অন্তরঙ্গ। ভালো ছাত্র। মেধাবী। শিক্ষকের কাছে কিশোর সতীনাথ অন্ধকারের আলোর শিখা। ক্লাসঘর কা রোশনি। ক্লাসে বন্ধুদের কৌতুক উপভোগ করতেন, নিজে কখনো করতেন না। স্বল্পভাষী। কথা বলতেন কম, শুনতেন বেশি। কথা তিনি বলতেন। কথা না বললে, অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতার অভ্যাস না থাকলে কী করে তিনি তাদের অন্তরঙ্গ জীবনের এমন ছবি তাঁর 888sport alternative linkে ফুটিয়ে তুলতে পারলেন। হাজারিবাগ জেলে থাকতে তাঁর সুযোগ হয়েছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশবার, আড্ডা দেবার। জেলজীবন, শুধু রাজনীতির পাঠ নেওয়া নয়, নিজেকে প্রস্তুত করার অন্তর্গত তাগিদ বোধ করেছেন। এই সময়েই তিনি গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়েছেন তুলসী দাসের রামচরিত মানস। সঙ্গে সবসময় থেকেছে এম. এন. রায় (মানবেন্দ্রনাথ রায়)। সতীনাথের চরিত্রের এসব স্বভাববৈশিষ্ট্য তাঁর ব্যক্তিমানসকে আমাদের সামনে তুলে ধরতে অনেকটাই সাহায্য করে।

বন্ধুমহলে জনপ্রিয়, শিক্ষকদের স্নেহভাজন সতীনাথ ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ডিভিশনাল স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। পূর্ণিয়া জেলা স্কুল থেকে পাটনা সায়েন্স কলেজ – পাটনা সায়েন্স কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করার  পর ওই কলেজেই তিনি বিএ পড়েন। এখান থেকেই ১৯২৮ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণি পান। ১৯৩০-এ পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন। ১৯৩১ সালে পাটনা ল’ কলেজ থেকে আইনে বিএল ডিগ্রি নেন। ১৯৩১ সালেই শুরু হয় তাঁর ওকালতি জীবন। সেখানেও তিনি সফল এবং উজ্জ্বল। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে সতীনাথের ছিল বিপুল এবং বিস্তৃত অধ্যয়ন। মার্কসীয় ডায়ালেকটিক্স থেকে শুরু করে ফরাসি 888sport live football, ইতিহাস, পুরাণ, মনস্তত্ত্ব – সবকিছুতেই ছিল তাঁর আগ্রহ। এই অধ্যয়নস্পৃহা তাঁর একাকী জীবনের সঙ্গী হয়েছিল, তাঁর বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 888sport live chatরুচি গড়তে সহায়ক হয়েছিল।

সতীনাথের জীবনের বহুমুখিনতা – তাঁর শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক জীবন, লেখকজীবন, ব্যক্তিজীবন, বিদেশগমন, অধ্যয়ন – সব মিলিয়ে জীবনের যে-ছবি উদ্ভাসিত হয় তাকে কেবল এক মহাকাব্যিক ক্যানভাসেই শুধু বাঁধা যায়। শুধু যদি তাঁর বৃক্ষপ্রীতির কথা ভাবি তাহলেও যে-মানুষটি সামনে এসে দাঁড়ান, তাঁর বৃক্ষপ্রেম আর রবীন্দ্রনাথের বৃক্ষপ্রেম একই সূত্রে বাঁধা। কিন্তু সতীনাথ সতীনাথই। সবাই যে-পথে চলে সতীনাথের পথ সেটা নয়।

সতীনাথ নিজেকে তৈরি করছিলেন – দেশের জন্য, মানুষের জন্য। বলা যায় নীরবে, নিভৃতে। তাঁর এই আত্মপ্রস্তুতি ছিল তাঁর নিজের মতো করে। আর অপেক্ষা নয়, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে দেশের জন্য, শুধু পৈতৃক পেশা ওকালতি আঁকড়ে থাকা যাবে না, কোনো পিছু টান না রেখে দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার এই তো প্রকৃষ্ট সময়। হাজারিবাগ জেলে থাকতেই তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে তো ১৯৪০ সালের কথা।

যুবক সতীনাথ। কল্পনায় তাঁর ছবিটা আমরা এঁকে নিতে পারি এভাবে – দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার আকাক্সক্ষায় উদ্দীপ্ত এক তরুণ, মুখে কোনো ঔদ্ধত্য নেই, চেহারায় নিরাসক্ত নির্লিপ্তি, ঠিক গীতায় শ্রীকৃষ্ণের বর্ণিত নিরাসক্ত কর্মের প্রতিমূর্তি। কখনো কোনো দাবি করেন না, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই তাঁর, তাঁর মন সায় দেয় না এতে। ওকালতি করছেন, হয়তো বাবার ইচ্ছায়, ব্রিজ খেলছেন নিজের ইচ্ছায়, শেষের দিকে খেলেছেন টেনিস, খেলায় হারলে কিংবা জিতলে তাঁর মুখের ছবিতে কোনো ভাবান্তর ঘটে না। ‘অত্যন্ত মোটা জামাকাপড় পরা এক যুবক গ্রাম পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন গ্রামান্তরে। দিনের রৌদ্র উপেক্ষা করে। রাতের অন্ধকারে হেঁটে চলেছেন। সঙ্গে একটা টর্চলাইট পর্যন্ত নেই। বক্তৃতা দিচ্ছেন – সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবিরোধী বক্তৃতা। সবার সাথে একসাথে আশ্রম জীবনযাপন করেছেন (টিকাপট্টি আশ্রমের জীবন), উনিশশো চল্লিশ সালে হাজারিবাগ সেন্ট্রাল জেলে কারাবন্দি জীবন যাপন করেছেন। কিন্তু সকলের মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন একলা।’ (সতীনাথ ভাদুড়ী, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি) বনফুল সতীনাথ সম্পর্কে তাঁর সতীনাথ 888sport sign up bonusতে কী বলেছেন আমরা একটু দেখে নিতে পারি, – ‘চায়ের আড্ডায়, তাসের আসরে, খেলার মাঠের

হই-হই বা নিমন্ত্রণ বাড়ির হট্টগোলে তাকে বড়ো একটা দেখা যেত না। পরনিন্দার গুজগুজ ফুসফুসেও আনন্দ পেত না সে। নিজের চারিদিকে স্বাতন্ত্র্যের পরিবেশ সৃষ্টি করে নিরালার নির্জন মহিমা উপভোগ করতেই সে ভালোবাসত। পাদপ্রদীপের সামনে এসে গলায় মালা পরে, হাততালি কুড়োবার লোভ ছিল না তার।’ এই ছিলেন সতীনাথ।

সতীনাথ যদি তাঁর ব্যক্তিজীবন সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দিতেন, যদি তাঁর মন, চিন্তাভাবনার অলিগলির হদিস আমরা জানতে পারতাম, তাহলেও তাঁর সম্পূর্ণ একটি জীবনচরিত লেখা কি সম্ভব হতো! তিনি কেন টিকাপট্টি আশ্রমে গিয়েছিলেন তার কোনো সদুত্তর আমরা পাই না। কেনই বা তিনি দক্ষিণ আমেরিকা যেতে চেয়েছিলেন, আমরা জানি না। তিনি তো বলা যায় জন্মের পর থেকেই নিঃসঙ্গ এক জীবন কাটিয়েছেন। তবে কি তাঁর অবচেতনে কোনো অস্থিরতা কিংবা আস্থাহীনতার বোধ কাজ করতো। তাও নয়। যাঁর এমন গভীর জ্ঞানস্পৃহা, দেশ, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা, যিনি নিজের বাগানে ফুল ফুটিয়ে, পাখিদের আসার অপেক্ষায় থেকে 888sport live footballচর্চা করে সময় কাটিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতার কোনো হদিস পাওয়া যায় না।

একইভাবে রাজনীতি করেছেন; কিন্তু রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে  কখনো  কিছু  বলেননি।  তিনি  কি  গান্ধীবাদী  ছিলেন? গান্ধী-নির্দেশিত পথে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নিয়েই তো তিনবার কারাবরণ করেছেন। তিনি জানতেন গান্ধী আর এম. এন. রায়ের পথ এক নয়। সতীনাথের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্বন্ধে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন আমরা একটু দেখে নিতে পারি – ‘… সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি বামপন্থী। কেতাব পড়ে এ বামপন্থা তিনি অর্জন করেননি। এ তিনি অর্জন করেছেন গ্রামে গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে। এ তিনি অর্জন করেছেন ঢোঁড়াই-এর মতো গ্রামীণ আর্থসামাজিক প্যাটার্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হতে। তা হলে গান্ধির ভূমিকা কোথায়? সেটা রাজনীতিতে নয় – কম্যুনিকেশনের ক্ষেত্রে। ভারতবর্ষের মানুষের বিশ্বাস-সংস্কার-অভিপ্রায়কে স্পর্শ করেছিলেন গান্ধিজি – যে ভাষায় করেছিলেন, রামচরিত মানসের ভাষার টেক্সচারের সঙ্গে তার মিল খুঁজতে চেয়েছিলেন সতীনাথ। জনমানস কথাটি তখনই – সেই হাজারিবাগ সেন্ট্রাল জেলে, কিংবা তার একটু আগেই সতীনাথকে অধিকার করেছিল। তাই এম. এন. রায় থেকেও গান্ধিজিতে অবস্থান। সাময়িক অবস্থান বটে। কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে থাকতেই তিনি গ্রামে গ্রামে ভূমিকম্প পরবর্তী রিলিফ বণ্টন ইত্যাদির ব্যাপারে স্থানীয় নেতা ও কায়েমি স্বার্থের এক অভিপ্রায়ী সহাবস্থান প্রত্যক্ষ করেছেন। সুতরাং জনজীবনের গভীরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অধ্যয়নের ভিতর দিয়ে অভিজ্ঞতাকে তাৎপর্য দিতে চেয়েছেন।’ (সতীনাথ ভাদুড়ী, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা  আকাদেমি)

সতীনাথ কেন হঠাৎ পূর্ণিয়ার টিকাপট্টি আশ্রমে যোগ দিয়েছিলেন সেটা কেউ জানে না। সে তো ১৯৩৯ সালের কথা। বলা যায়, তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন। মানসিকভাবে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ‘অধ্যয়নের ভিতর দিয়ে অভিজ্ঞতাকে তাৎপর্য’ দেওয়ার জন্যে যে-মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন সেটা শুরু হয়েছিল আগে থাকতেই। সবকিছুই করতেন, পড়াশোনা, ওকালতি, খেলাধুলা; কিন্তু আত্মপ্রস্তুতিটাই ছিল আসল কথা। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই না করে শুধু ওকালতিতে যুক্ত থাকা সেই আন্দোলনমুখর দিনগুলিতে তাঁর কাছে নৈতিকতাবিরোধী অপরাধ বলেই হয়তো মনে হয়েছিল। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা, নিপীড়িত, শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো জীবনের মহত্তম কাজ বলেই তিনি জানতেন। রাজনৈতিক নেতা হতে তিনি চাননি। তিনি যে গান্ধীবাদী ছিলেন – একথাও কখনো তিনি বলেননি। গান্ধীজীর কাছ থেকে যে-শিক্ষাটা তিনি নিয়েছিলেন সেটা হলো নৈতিক শিক্ষা।

রাজনীতিতে তাঁর যোগ দেওয়া যেমন ছিল আকস্মিক, তেমনি রাজনীতি ত্যাগ করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেস সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ১৯৪২ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার পরও তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। পূর্ণিয়ার ভাট্টাবাজারের বাড়ি তখন হয়ে উঠেছিল জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়। সতীনাথ পূর্ণিয়া জেলার মানুষের কাছে তখন ভাদুড়ীজি। কিন্তু কংগ্রেস সম্বন্ধে সতীনাথের সংশয়াত্মক জিজ্ঞাসা ক্রমশই বাড়ছিল। ভাদুড়ীজি থেকে তিনি যে আবার সতীনাথ ভাদুড়ী হবেন, তাঁর নিজের অজান্তে তারও প্রস্তুতি চলছিল। আর নয় রাজনীতি। কংগ্রেস, কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি, ইউরোপ 888sport slot gameশেষে তিনি ফিরে যাবেন তাঁর পছন্দের জীবনে। একান্ত নির্জনতায়। এবার শুধু নিজের মুখোমুখি। ‘নির্জন বাড়ি। একজন মালি। একটা কুকুর। আর রইল গাছ। যা তাঁকে প্রতীক্ষার আনন্দ দেয়।’

রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে সতীনাথ পরিপূর্ণভাবে ১৯৪৮ সাল থেকেই লেখার সঙ্গে যুক্ত হন। জাগরী কিন্তু লেখা হয়েছিল ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলের নির্জন কারাকক্ষে বসে। ১৯৪২ সালে। জাগরীই সতীনাথের    সবচেয়ে    জনপ্রিয়    888sport alternative link।    এটি    একটি   রাজনীতি-সচেতন পরিবারের কাহিনি। সতীনাথ কোনো রাজনৈতিক 888sport alternative link লিখতে চাননি। সেটা কখনোই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। রাজনীতি-প্রভাবিত ব্যক্তিমনের যে-সংশয়, যে-আত্মজিজ্ঞাসা, তার মধ্যে দিয়ে তিনি সত্যকে উন্মোচিত করতে চেয়েছেন। আত্মজিজ্ঞাসার মধ্যে দিয়ে জাগরীর চারটি চরিত্রই বুঝতে পারে, তারা এতোদিন নিজেদের যেভাবে চিনেছে, পরস্পরের কাছে পরস্পরের যে-আদর্শ সত্তাটি পরিচিত ছিল, আসলে তারা তার কোনোটাই নয়। আত্মজিজ্ঞাসার মধ্যে দিয়ে প্রত্যেকেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকের অবচেতন থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় আমিটির কাছে প্রত্যেকেই হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।

বিশ্বাসের সংকট, আত্মপরীক্ষা সতীনাথের সকল 888sport alternative linkের বিষয়। জাগরী তাঁর প্রথম 888sport alternative link – চারটি চরিত্র, ফাঁসির আগের সন্ধ্যা, বিলুর আত্মজিজ্ঞাসার মধ্যে দিয়ে কাহিনির শুরু। বাবা, মা, দুই ভাই একটি অন্তিম মুহূর্তের অপেক্ষা করেছে এবং চারজনই সম্পূর্ণ একাকী আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন। এ-ধরনের বাংলা 888sport alternative link আগে কি আমরা পড়েছি! সতীনাথ ভাদুড়ীর 888sport alternative linkগুলির বিষয়ভাবনা আর প্রকরণগত অনন্যতার কথা ভাবলে অবাক লাগে। বাংলা 888sport live footballের আর কোনো লেখক কি তাঁর মতো বাংলা 888sport alternative link 888sport live footballের ঐতিহ্যের সীমানা থেকে বাইরে গিয়ে বিষয় সন্ধান করেছেন।

জাগরী লেখা হয়েছে চার মাস ধরে; কিন্তু কাহিনির ব্যাপ্তি মাত্র এক রাত্রির। বারো ঘণ্টা। প্রসঙ্গত, গোপাল হালদারের 888sport alternative link একদার সময়সীমা চব্বিশ ঘণ্টার আহ্নিক আবর্তনে বাঁধা। জাগরীতে মাত্র বারো ঘণ্টার ‘888sport sign up bonusস্রোতে ছায়া ফেলেছে পূর্ণিয়ার বিচিত্র পটভূমির চলিষ্ণু ছায়াচিত্র।’ বিলুর 888sport sign up bonusচারণায় শুধু সে নিজে নয়, অন্য তিনজন – বাবা, মা এবং ভাই ছাড়াও আরো অসংখ্য চরিত্র, অজস্র ঘটনা সামনে উঠে এসেছে। জাগরীতে সতীনাথ অসাধারণ এক 888sport live chat-আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন। প্রথম 888sport alternative linkে এতো পরিণত প্রকাশভঙ্গি ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। অসাধারণ এই 888sport live chatরীতির মাধ্যমে সতীনাথ একের 888sport sign up bonusচারণায় অন্যকে স্পষ্ট করে তুলেছেন। নিরাসক্ত ভঙ্গিতে নিজেকে দূরে রেখে নিজেকে এবং কাছের ও দূরের সবকিছু তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। জাগরীতে লেখকের ব্যক্তিকতা নয়, নৈর্ব্যক্তিকতাই তাই প্রধান বিষয়।

জাগরীতে লেখক যে 888sport live chat-আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন (ঝঃৎবধস ড়ভ পড়হংপরড়ঁংহবংং) তা হলো, চরিত্রের মনোবিশ্লেষণের মাধ্যমে তার মনোজগৎকে মেলে ধরা, চরিত্রগুলি আত্মমগ্নতায় ভুলে থেকে বাস্তবতাকে প্রকাশ করে; স্বগত কথন ভঙ্গিতে চিন্তাস্রোতের মধ্যে দিয়ে বাস্তব অনুষঙ্গের সূত্র ধরে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। জাগরীর চারটি চরিত্রই একই পরিবেশে,একই সময়ে এবং একই ঘটনার আবর্তে নিজ নিজ আত্মপরীক্ষায় এভাবেই মগ্ন হয়েছে।

চেতনাপ্রবাহ রীতির ব্যবহার পাশ্চাত্য 888sport live footballে অনেক আগেই হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রুস্ত, জয়েস এবং ভার্জিনিয়া উলফের নাম করা যায়। বাংলা 888sport alternative linkে গোপাল হালদার তাঁর একদা 888sport alternative linkে এই রচনা রীতির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথই প্রথম পরিপূর্ণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পথ দেখিয়ে গেছেন তাঁর চতুরঙ্গ 888sport alternative linkে। সতীনাথ তাই এক্ষেত্রে প্রথম কিংবা একক নন। জাগরীতে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে এই 888sport live chat-আঙ্গিককে ব্যবহার করেছেন। বলা যায়, একেবারেই দুর্বলতামুক্ত এবং ত্রুটিহীন তাঁর প্রয়োগ-নৈপুণ্য।

সতীনাথের সব 888sport alternative linkের বিষয়ই সম্পর্কের সংকট। জাগরীতে পারিবারিক সম্পর্কের সংকট, ঢোঁড়াই চরিত মানসের বিষয় ব্যক্তি এবং সামাজিক বিন্যাসের টানাপড়েনের সংকট। তাঁর সব 888sport alternative linkের কাহিনি গতানুগতিকার বাইরে গিয়ে নতুন এক বিষয়ের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেও তাঁর সব 888sport alternative linkের কাহিনির মধ্যে একটা সাদৃশ্যও লক্ষ করা যায়। তিনি আমাদের নিয়ে যান আধুনিক শহর থেকে দূরে পূর্ণিয়ার মতো জেলা শহরে, যার গায়ে তখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি, যে-শহর ট্রাডিশনকে ধরে রেখেও ভেতরে ভেতরে ভাঙতে শুরু করেছে, সেখানকার সামাজিক কাঠামো এবং পরিবারজীবনই সতীনাথের নিরীক্ষার বিষয় হয়েছে। আর ‘এই নিরীক্ষার কালে সতীনাথের কাছে প্রধান হয়ে উঠেছিল ব্যক্তিমানসের অন্তর্গত টেনশন। জাগরী থেকে শুরু করে দিগ্ভ্রান্ত পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিক্ষিপ্ত ও প্রতিক্রিয়ান্বিত ব্যক্তিমানসের নিগূঢ় অন্তর্গতির রূপায়ণ – তাঁর 888sport alternative linkের ভাষা তাই মনোলোকের ভাষা। … এবং সেই মনোলোক মেট্রোপলিটান মানুষের মনোলোক নয়। যেখানে ট্রাডিশন ম্রিয়মাণ এবং নিস্তেজ, সেখানকার ভাষা এ নয়, কেননা সেখানকার চেতনাও এ নয়। একটা ছোটো মফস্সল নগর, যার সামাজিক স্তরবিন্যাস ঠিক ‘রিজিড’ হয়ে ওঠেনি, যেখানকার সার্বিক কাঠামো থেকে গ্রামীণ জের এখনো ঘুচে যায়নি, সেই শহরের মানুষগুলির মানসিক অখণ্ডতায় যে সব বিপর্যয় ঘটে, বাইরের ঘটনা তত নয়, সেই মানস বিপর্যয়তার জটিল আঁকাবাঁকা স্রোত সতীনাথের বিষয়।’ (সতীনাথ ভাদুড়ী, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি)

ঢোঁড়াই চরিত মানস সতীনাথের সব সৃষ্টিকে ছাপিয়ে যাওয়া কীর্তি। এ-888sport alternative linkে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। অবাক লাগে ভাবতে, সতীনাথ কত গভীরভাবে, কত কাছ থেকে মানুষকে দেখেছেন। সকলের সঙ্গে মিশেছেন, নিচের তলার মানুষের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গতা ছিল ভদ্রজনের চাইতে অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে সতীনাথ

প্রস্তুত হচ্ছিলেন ঢোঁড়াই চরিত মানস লেখার জন্যে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত যে-মানুষগুলিকে তিনি দেখেছিলেন, তাদের কথা না লিখলে তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা অপূর্ণ থেকে যেত – একথা তিনি বুঝেছিলেন। তাই ঢোঁড়াই চরিত মানস তাঁকে লিখতেই হতো। নানাভাবে তিনি সংগ্রহ করছিলেন এই সব

প্রাকৃতজনের জীবন সম্পর্কে তথ্য। তাঁর পরিচিত ঢোঁড়াইকে দেখার কারণেই হোক কিংবা মাটিঘেঁষা নিরক্ষর সাধারণ মানুষগুলির প্রতি তাঁর সহমর্মিতার কারণেই হোক,

সমগ্র গ্রামীণ সমাজকে একটি 888sport alternative linkে

 তিনি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল গ্রামের সাধারণ মানুষের মন কীভাবে বদলাচ্ছে, কীভাবে তারা নিজেদের ভুলভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে মানুষ হিসেবে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিচ্ছে – সেই বিষয় নিয়ে একটি 888sport alternative link লেখার।

‘ঢোঁড়াই’ সতীনাথের শ্রেষ্ঠ 888sport alternative linkের সফলতম সার্থকতম নায়ক। লেখক তাকে রামচন্দ্রের আদলে গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে রামচন্দ্র হতে পারেনি। সে একেবারেই তুচ্ছ, ব্যর্থ, সাধারণ একজন মানুষ হয়েই শেষ পর্যন্ত থেকে গেছে। তুলসী দাসের রামচরিত মানস, অযোধ্যা কিংবা তাৎমাটুলি নয়, ঢোঁড়াই চরিত্রের জন্ম লেখক সতীনাথেরই মনের গভীরে। ঢোঁড়াই চরিত মানস দুটি চরণ পাঠের পর যে-গভীরতা, যে-বিশালতার স্বাদ পাওয়া যায় তা মহাকাব্য পাঠের বিশালতার চাইতে কোনো অংশে কম নয়। এ-888sport alternative linkের কাহিনি ঘাত-প্রতিঘাতে, ব্যর্থতায় ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে নিজেকে গড়ে তোলার কাহিনি।

‘ঢোঁড়াই’-এর ব্যক্তিজীবনের দুই পর্বেই আছে আশাভঙ্গের করুণ ইতিবৃত্ত। পিতৃহারা, মাতৃস্নেহবঞ্চিত, ভিক্ষান্নে প্রতিপালিত তার জীবন। জীবনে একটার পর একটা আঘাত পেতে পেতে সে যেমন নিজেকে চিনেছে, তেমনি সেই ঘাত-প্রতিঘাতের অভিজ্ঞতা তাকে অন্যকে চিনতেও সাহায্য করেছে। সংসার এবং সমাজের হৃদয়হীনতা তাকে নিঃসঙ্গ করলেও সে থেমে যায়নি কিংবা ভেঙে  পড়েনি। সে তার কর্মদক্ষতা দিয়ে জয় করেছে সব প্রতিবন্ধকতাকে। সংসার এবং সমাজের সব ভ্রুকুটিকে দূরে সরিয়ে সে হয়ে উঠেছে মহাকাব্যের নায়কের মতো মহানায়ক। সত্য আর আদর্শের প্রতীক। অন্ত্যজ সমাজের অতি সাধারণ ঢোঁড়াই নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠেছে শ্রেণি মানুষের প্রতিনিধি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আবার ফিরে আসতে হয়েছে ব্যক্তিজীবনের দোলাচলে।

জ্ঞান হবার পরপরই ঢোঁড়াই অনুভব করে মায়ের সঙ্গে তার মনের দূরত্ব, তাৎমা সমাজের ওপর জন্মায় তার ক্ষোভ। গান শুনিয়ে পয়সা রোজগার করতে গিয়ে সে বুঝতে পারে, কারো দয়া নয়, দয়ার সঙ্গে মিশে থাকে অবিচার আর ফাঁকি। দয়া ব্যাপারটাকে সে ঘৃণা করতে শেখে। ঢোঁড়াই বুঝতে পারে, সমাজজীবন কোনো জড় পদার্থ কিংবা স্থাণু বস্তু নয়। জীবন বদলায়, সমাজও বদলায়। আঘাত পেতে পেতে তার যে-অভিজ্ঞতা তা দিয়ে সে নিজে বদলেছে, সমাজকেও বদলাতে সাহায্য করেছে। জন্ম থেকে কারান্তরালে নিজেকে সমর্পণ করা পর্যন্ত বারবার ঢোঁড়াই শুধু পাল্টে গেছে। এভাবেই সে আবিষ্কার করেছে তার ভেতরের ক্ষমতার ঐশ্বর্যকে।

ভিক্ষাবৃত্তি ত্যাগ করার মধ্যে দিয়ে ঢোঁড়াই-এর ব্যক্তিজীবনের দৈন্য প্রথমবারের মতো ভেঙেছে। রামিয়াকে ঘিরে যে-স্বপ্ন সে দেখেছিল তাও ভেঙে যায় রামিয়ার সঙ্গে তার বিচ্ছেদের মাধ্যমে। এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই ছিন্ন হয় তাৎমাটুলির সঙ্গে তার শিকড়ের সম্পর্ক। 888sport alternative linkে ঢোঁড়াইকে আমরা দেখি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে। কখনো সে গাড়ির চালক, কখনো আবার মাটিকাটা কাজের মজুর, কখনো তাকে দেখি মাটি কাটার কাজ ছেড়ে সে পাক্কীর পথে গরুর গাড়ি চালিয়ে ছুটছে। কোয়েরীটোলায় এসে হয় তার নতুন অভিজ্ঞতা, জমির সঙ্গে হয় তার সম্পর্ক। দ্বিতীয় চরণে জমির লড়াইয়ে কিংবা রাজনৈতিক জীবনসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সে বুঝতে পারে বিশ্বাসের ভূমি বড় দুর্বল, নড়বড়ে হয়ে গেছে। তার আদর্শ বারবার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ক্রমাগত সংগ্রামে আর ব্যর্থতায় ঢোঁড়াই-এর মন অস্থির হয়। যা কিছুকেই সে জীবনে আপন বলে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল, সেখান থেকেই সে পেয়েছে আঘাত। তার মতো জীবনজিজ্ঞাসায় ক্ষতবিক্ষত ব্যক্তিমানুষের পক্ষে অন্তঃসারশূন্য এই জগতের প্রতি বিশ্বাস রাখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। রামায়ণের আশ্রয়েও সে আর শান্তি খুঁজে পায় না।

সংগ্রাম শেষ হয় না। তাৎমাটুলিতে রামিয়ার কাছে ফিরে যেতে চাইলেও ঢোঁড়াই যেতে পারে না। পথের আহ্বান যে একবার শুনেছে সে আর পিছু ফিরে যেতে পারে না। এই পথই ঢোঁড়াইকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখিয়েছে, অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের রাজ্যে নিয়ে এসেছে, এই পথ দিয়েই সে একদিন পেয়েছিল বৃহৎ জীবনের সন্ধান। সবশেষে আবার সে ফিরে গেছে শ্রেণিভেদহীন, জাতপাতহীন যে-কারাগারে সে-ও এই পথ ধরেই। ব্যক্তিবিশেষের না হয়ে শেষ পর্যন্ত সে যে সকলের হয়ে উঠতে পেরেছে, সেই শক্তিও তো সে পেয়েছে এখান থেকেই। সত্যের প্রতি, ন্যায়ের প্রতি তার অবিচল বিশ্বাস তাকে জীবনের সব বাধা একটার পর একটা অতিক্রম করতে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে।

ঢোঁড়াই বিশ্বাস করেছে মানুষকে। বিশ্বাস করে সে বারবার ঠকেছে, পরাজিত হয়েছে। আবার এখান থেকেই সে নতুন করে বাঁচবার জন্য সংগ্রামের শক্তি সঞ্চয় করেছে। 888sport alternative linkে লেখক যে-সময়টিকে ধারণ করেছেন তা হলো ভারতবর্ষের ইতিহাসের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সবচেয়ে দুর্যোগময় এবং সংকটময় সময়। সমগ্র ভারতবর্ষের নিম্নবিত্ত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, অধিকার সচেতনতাবোধ সংগ্রামী ঢোঁড়াই-এর জীবনবৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে বিধৃত হয়েছে। হেরে গিয়ে সে থেমে থাকেনি, সমাজ-সংসার থেকে পাওয়া সব আঘাতকে উপেক্ষা করে নিজের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কঠিন কাজে সে ব্রতী হয়েছে।

মহৎ 888sport alternative link পাঠকের মনকে দ্রবীভূত করে জীবন-জিজ্ঞাসায়, আত্মসমালোচনায়। ঢোঁড়াই চরিত মানস পড়ার পর পাঠকের মনে মহত্ত্ববোধ জাগে বিরাট বস্তুকে আশ্রয় করে। আর তার ভিত সম্ভ্রম, 888sport apk download apk latest version ও বিস্ময়। সাধারণ মানুষ ঢোঁড়াই শেষ পর্যন্ত সত্য ও ন্যায় রক্ষা করতে গিয়ে শূন্যতার মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করে। পাঠককে তা নিশ্চয়ই বিস্ময়ে অভিভূত ও 888sport apk download apk latest versionবনত করে। সে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য সবকিছু দিয়ে পরিবর্তে পেয়েছে শূন্যতা। মানুষ যে জন্মমুহূর্ত থেকেই একা – একথা সতীনাথ যেমন জানতেন, তেমনি ঢোঁড়াইকেও জানতে হয়েছে। অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাকে যুক্ত হতে হয় অনেকের সঙ্গে। সংগ্রামশেষে আবার তাকে ফিরে আসতে হয় শূন্যতার মাঝে, একক রূপে। ব্যক্তি ঢোঁড়াই সেভাবেই ফিরে গেছে ভারতবর্ষের শ্রেণি-জাত-বর্ণহীন বিশাল কারাগারে। ঢোঁড়াই চরিত মানস পড়ার পর পাঠকের মনে বিশ শতকের তিরিশ-চল্লিশের ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক ছবি ভেসে ওঠে। তার থেকেও বেশি মানব বিবর্তনের ইতিহাস 888sport alternative linkের মধ্যে দিয়ে নতুন করে পাঠকের মনে

জীবন-জিজ্ঞাসার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।

ঢোঁড়াই চরিত মানস ‘সমাজ সত্যে অন্বিত ব্যক্তি মানুষের সংগ্রাম মুখর জীবনের কাহিনী।’ অজস্র চরিত্র আর ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ যে ঢোঁড়াই চরিত মানস এ-লেখার মধ্যে দিয়ে তাকে ছুঁয়ে গেছি মাত্র। ঢোঁড়াইকে নিয়ে লেখার জন্য এ-লেখা নয়। চেষ্টা করেছি সতীনাথকে জানার, বোঝার, তাঁর জীবন, কর্ম এবং লেখার মধ্যে দিয়ে চেয়েছিলাম লেখাটাকে সতীনাথ ভাদুড়ী এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় পূর্ণিয়ার মধ্যে বেঁধে রাখতে। আজ থেকে চল্লিশ বছরেরও বেশি আগে প্রথম সতীনাথ ভাদুড়ী পড়েছিলাম। ঢোঁড়াই-এর হাত ধরেই তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। সেই থেকে পূর্ণিয়া আমাকে তাঁর লেখার মুগ্ধতার জাদুতে বেঁধে রেখেছে। একবার পূর্ণিয়া যাবার খুব ইচ্ছে হয়েছিল। যাওয়া হয়নি। উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত গেলেও বিহার যাওয়া হয়নি। ঢোঁড়াই প্রথম পর্বের তাৎমাটুলি আর শেষের জিরানিয়ার মানুষ, প্রকৃতি আজো চোখে ভাসে। চোখে ভাসে পাক্কীর পথ ধরে নিঃসঙ্গ, একা, পরাজিত ঢোঁড়াই-এর দাঁড়িয়ে থাকা, তার পথ চলা। বুকের মধ্যে উঠে আসে কান্নার ঢেউ।

– ছবি : ইন্টারনেট