সনৎকুমার সাহার মনীষাদীপ্ত রবীন্দ্রচর্চা

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের শান্ত সমাহিত চিত্তের গভীর উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্যের সীমা নেই। সে তালগাছের মতো একটিমাত্র ঋজুরেখায় আকাশের দিকে ওঠে না, সে বটগাছের মতো অসংখ্য ডালে-পালায় আপনাকে চারদিকে বিস্তীর্ণ করে দেয়। তার শাখাটি যেদিকে সহজে যেতে পারে তাকে সেই দিকেই সম্পূর্ণভাবে যেতে দিলে তবেই সমগ্র গাছটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং সকল শাখারই তাতে মঙ্গল।’ (রবীন্দ্রনাথ, ষোড়শ খণ্ড, ২০১৬ : ৮০)। সনৎকুমার সাহা ও তাঁর যাবতীয় লেখালেখির কথা যখন ভাবি আমরা তখন রবীন্দ্রনাথ-কথিত সেই বিস্তীর্ণ ডালপালায় ঘেরায় গাছের কথাই মনে পড়ে। মনে পড়ার কারণ হচ্ছে, এই বাঙালি ও 888sport apps তার যাবতীয় বিষয়-আশয় নিয়ে সনৎকুমার লেখায় বিচিত্রভাবে উঠে এসেছে। আর সেইসঙ্গে আমাদের ভাষা-আন্দোলন ও একাত্তরের গৌরব।

১.২

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তিনি কেমন 888sport apps কামনা করেন? এর উত্তর আমরা পেয়ে যাই তাঁর ওই লেখালেখির মধ্যেই। এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘ভাবতে শুরু করি, নতুন শতাব্দীর মানুষ অনেক বেশি মুক্ত মনের হবে। তার অদৃষ্ট নির্ভরতা কমে আসবে। সে আর কুয়োর ব্যাঙ থাকতে চাইবে না। তার মনের ওপর পরতে পরতে যে-যুগ-যুগান্তের অন্ধকার, তা একটু একটু করে কেটে যেতে থাকবে চারপাশের উত্তাপেই তা গলে যেতে শুরু করবে। ধর্ম, সম্প্রদায় এই বিষয়গুলো তাকে আর আগের মতো আচ্ছন্ন করে রাখবে না। মানুষে-মানুষে সম্পর্ক সম্বন্ধের স্বাভাবিক সমীকরণের প্রতিবন্ধকতাগুলো এক এক করে খসে পড়তে থাকবে।’ সেইসঙ্গে তিনি এইটুকুও চেয়েছেন – ‘খোলা চোখে তারা একে-অন্যকে দেখবে, আত্মগরিমার অভিমান নিয়ে কেউ মুখ ফিরিয়ে থাকবে না; কারণ, সে অভিমান কোনো সত্য বাস্তবতার ওপর দাঁড়ায় না। প্রত্যাদেশের কাছে মাথা বিকিয়ে থাকার চেয়ে বরং প্রত্যাদেশের রহস্য উন্মোচনেই সে বেশি আগ্রহী হবে। তার মেধা ও মননের সম্ভাবনা ও সীমাকে বহু বিচিত্র বিকাশের পথে সে আস্বাদন করে চলবে, তার স্বোপার্জিত চেতনালব্ধ জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটবে। মানুষের সভ্যতা এবং শুদ্ধ মানবিক সভ্যতা এক নতুন স্তরে উন্নীত হবে।’ (সনৎকুমার, ২০১০ : ১৩)। অর্থাৎ 888sport cricket BPL rate শতকে এসে তিনি কেমন 888sport apps চাইছেন, 888sport appsের মানুষের জন্য তিনি কী চাইছেন, তা থেকেই আমরা এই মানুষটির মানস-কাঠামো আর ব্যক্তিত্বের ধরনটি বুঝে নিতে পারি। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার যে, তাঁর সমস্ত চাওয়া-পাওয়া,
আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকেন সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই রবীন্দ্রনাথ সনৎকুমারের সংকটকালেরও রবীন্দ্রনাথ, ‘অন্তরের সত্য যেখানে তাঁর ধ্রুবতারা, সেখানে বাইরের ছোটমাপের পরিচয়সূত্র সব খসে খসে যায়।

জাত-পাতের গণ্ডি আর তাঁকে বাঁধতে পারে না। অকুণ্ঠে বলতে পারেন, “আমি ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন।” যে কোনো মানুষের অপমানই মনে করেন নিজের অপমান। সে মানুষ নির্বিশেষ। প্রতিবাদে, আর প্রতিকারের সংগ্রামে তিনি সেখানে সক্রিয় সাধক … প্রতিহিংসা দিয়ে, পরশ্রীকাতরতা দিয়ে ছোট করেন না নিজেকে, ছোট হতে বলেন না আর কাউকে।’ (সনৎকুমার, ২০০৮ : ৩)। এইভাবে রবীন্দ্রনাথের দান তাঁর নিজের জন্য আপন করে নিতে পারেন সনৎকুমার সাহা, যা দিয়ে তিনি মানুষের সঙ্গে মানুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারেন। আমাদের এ-প্রসঙ্গে শঙ্খ ঘোষের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকেই রবীন্দ্রনাথ থেকে, শান্তিনিকেতন থেকে, অনেককিছুই পান। আমি রবীন্দ্রনাথ পড়ে বা শান্তিনিকেতনে ঘুরে সবচেয়ে বড়ো শিক্ষার যে অংশটা দেখতে পাই, তা হলো এই সম্পর্ক তৈরি করবার সৌন্দর্যের – নিজেকে অন্যের কাজে যুক্ত করে দেবার সৌন্দর্যের শিক্ষা।’         

                                             (শঙ্খ, ২০০৯ : ৬৭)

২.

সৌন্দর্যের সেই শিক্ষাটা সনৎকুমার সাহাও পেয়েছেন। যে-কারণে তিনি বলতে পারেন যে, ‘রবীন্দ্রনাথের
নাচে-গানে, সবেতেই একটা ধরন – একটা ঢং পূর্বপরিচিত প্রত্যাশিত ছকের ভিতরে আকার পায়। সর্বাত্মক বলে একে স্বীকার করে নিলে এবং এতেই নিবিষ্ট থাকলে তা অপরূপ হলেও মানুষের করা এবং হওয়ার একটা ভাবনাবৃত্তে আটকে থাকে। এদিকে ক্রিয়ায়-প্রতিক্রিয়ায় বহুমুখী কর্মকাণ্ডে এই মানুষ যে ক্রমাগত নিজেকে নতুন করে নিতে থাকে, যে-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং সচেতন ছিলেন বরাবর, তার তাগিদে ভাবনার রূপ-রং-ভাব-ভঙ্গিমা, কোনোকিছুই আর স্থির থাকতে চায় না। ‘ক্ষণকালের আড়াল হতে চিরকালের তরে’ আশার বাণী সেখানে হারিয়ে যেতে বসে। ‘সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার ও দুটি নয়নে’ – একথা তাই আর বলা যায় না।’ (সনৎকুমার সাহা, ২০১২ : ১১)। তাঁর এই কথার সূত্র ধরেই তিনি আমাদের আরো জানিয়েছেন, ‘পূর্ণতার মায়া রবীন্দ্রনাথে সবটা ধরা পড়লে তৃষ্ণার শান্তিও সেখানে। আর কিছু পাবার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। রাবীন্দ্রিক মৌলবাদ 888sport app মৌলবাদের মতোই চোখে ঠুলি পরিয়ে দেয়। বৃত্তাবদ্ধ জীবন আর সৃষ্টিশীল থাকে না। পিছুটান তাকে পেয়ে বসে। রবীন্দ্রনাথ-অনুধ্যান শেষ পর্যন্ত ক্লান্তিকর পুনরাবৃত্তিতে শেষ হয়।’ কিন্তু এখানেও সনতের বড় ভরসার জায়গা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, তাঁর ভাষায়, ‘নতুনভাবে রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk পড়ার দিকে নজর পড়ল এই সময়েই। অবশ্য তিরিশের আধুনিক কবিরাও তখন জাতে উঠেছেন। 888sport app download apkর নান্দনিক মূল্যমানে পরিবর্তন পাঠকের আনুকূল্য কিছুটা হলেও পেতে শুরু করেছে। বুদ্ধদেব বসুর “888sport app download apk” পত্রিকার সৎ ও আন্তরিক প্রয়াস, জীবনানন্দ যাকে বলেছেন, ভিড়ের হৃদয় পরিবর্তন, তাতে কিঞ্চিৎ সফলতা যে পেয়েছে, তা অনুমান করা যায়। এর প্রভাব পড়ে রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়নেও।’ তাই তিনি বলতে পারেন, ‘আমাদের শ্রেয়োবোধ ও রবীন্দ্রনাথ চেতনায় সমে এসে এক বিন্দুতে মিলে সার্থকতার পথ দেখায়।’ (সনৎকুমার, ২০১২: ১১-১২) 

৩.

কবি হিসেবে যদি রবীন্দ্রনাথের ভাব-প্রবণতার বিচার করতে যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে, তিনি ছিলেন আদ্যন্ত রোমান্টিক। তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্বের 888sport app download apkয় সেসবের স্বাক্ষর রয়েছে। সনৎকুমার সাহা তাঁর ‘কে তিনি? কেন তিনি?’ 888sport liveে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি যে রোম্যান্টিক, এমন ধারণাকে একমাত্র বিবেচনা করে জুতসইভাবে দাঁড় করানো বেশ মুশকিলই।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘তাঁর শান্তিনিকেতন-888sport liveমালা, মানুষের ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ নিয়ে ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত বক্তব্য, কালান্তরের ভাবনারাশি, পল্লীকথা বা বিশ্বভারতী-চিন্তা এদের কোনোটিকেই রোম্যান্টিক-গোত্রে ফেলা চলে না।’ আমরাও প্রাবন্ধিকের সঙ্গে একমত পোষণ করি। কিন্তু আমাদের বিচারের বিষয় তো ‘কবি রবীন্দ্রনাথ’। এই কবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চিন্তাবিদ, সমাজবিদ, দেশদরদি রবীন্দ্রনাথের একটা ফারাক তো রয়েইছে। তারপরেও সনৎকুমার সাহা যখন বলেন, ‘ঐতিহ্যের শিকড় থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিকতায়, এবং সচেতন বিবেচনাতেও তিনি তা আঁকড়ে ধরেছেন; কিন্তু আপন চেতনার পুষ্টিতে সমিধ আহরণে কোথাও কোনো ছুঁৎমার্গকে প্রশ্রয় দেননি। আপন বিবেকের কাছে যা সত্য বলে মনে হয়েছে, তাকেই সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করেছেন। একলা চলার সাহস হারাননি, আবার নিজের নামে আলাদা কোনো নিশানও তোলেননি। পাশাপাশি আর কারও বা কোনো মতবাদের অনুসারী হবার আগ্রহ পরম ঔদাসীন্যে, কিন্তু সভ্য-শোভন আচরণে উপেক্ষা করে চলেছেন।’ (সনৎকুমার, ২০১৪ : ১৫-১৬)। আমাদের কাছে বরং মনে হয়েছে, এই বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্যেই রবীন্দ্রনাথকে রোমান্টিক হিসেবে গণ্য করা যায়। তাতে তাঁর বিন্দুমাত্র সম্মানহানি ঘটে না। 888sport app download apkর ক্ষেত্রে এই কথাগুলো আরো বেশি সত্যি। এই সত্যটা রবীন্দ্রনাথেরও জানা ছিল। গভীরভাবে যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখবো যে সমাজ-বাস্তবতাকে রবীন্দ্রনাথ কখনোই অস্বীকার করেননি, শুধু 888sport live footballে তার প্রকাশটা ভিন্নভাবে ঘটিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে, ‘Man’s social world is like some nebulous system of stars, consisting largely of a mist of abstractions, with such names as society, state, nation, commerce, politics and war|।’ এই সামাজিক জগৎটা সমাজ, রাষ্ট্র, জাতি, বাণিজ্য, রাজনীতি, যুদ্ধ বিভিন্ন নামে নক্ষত্রজগতের মতো কুয়াশাচ্ছন্ন বলেই মানুষের ব্যক্তিসত্তার পাশাপাশি তার বাস্তবতার সত্যটাও কখনো-কখনো 888sport app পড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘In their dense amorphousness man is hidden and truth is blurred.’ (Rabindranath, 1961 : 31)। সেইসঙ্গে আমাদের এইটিও মনে রাখতে হবে যে, তিনি মানবসত্তার চেতনা-বিলোপের বিরুদ্ধে ছিলেন আজীবন।

৩.২

‘নবজাতক’ কাব্যের ভ‚মিকায় (‘সূচনা’) রবীন্দ্রনাথ সে-কারণে অকপটে বলেছিলেন, ‘আমার কাব্যের ঋতু পরিবর্তন ঘটেছে বারে বারে। প্রায়ই সেটা ঘটে নিজের অলক্ষ্যে। কালে কালে ফুলের ফসল বদল হতে থাকে, তখন মৌমাছির মধু-যোগান নতুন পথ নেয়। ফুল চোখে দেখবার পূর্বেই মৌমাছি ফুলগন্ধের সূক্ষ্ম নির্দেশ পায়, সেটা চারদিকের হাওয়ায়। যারা ভোগ করে এই মধু তারা এই বিশিষ্টতা টের পায় স্বাদে।’ ওই ‘সূচনা’য় তিনি আরো বলেন, ‘কাব্যে এই-যে হাওয়াবদল থেকে সৃষ্টিবদল এ তো স্বাভাবিক, এমনি স্বাভাবিক যে এর কাজ হতে থাকে অন্যমনে। কবির এ সম্বন্ধে খেয়াল থাকে না। বাইরে সমজদারের কাছে এর প্রবণতা ধরা পড়ে।’ (রবীন্দ্রনাথ, পঞ্চম খÐ, ২০১৩ : ৫৭)। সনৎকুমার সাহাও রবীন্দ্র888sport live footballের ‘সমজদার’ বলেই তাঁর কাছেও সেটি অধরা থাকেনি, এসব তাঁর দৃষ্টির বাইরে থাকেনি। তবে আমরা এ-ও খানিকটা বুঝতে পারি যে, শুধু এইটুকুতেই তিনি তৃপ্ত নন। তাঁর অতৃপ্তির কারণ, সনৎকুমার সাহার লেখা থেকেই উদ্ধৃত করছি – ‘বিষয়টা কিন্তু কিঞ্চিৎ অস্পষ্টই থেকে যায়। সত্য কঠিন, এটা মেনে নিই। কিন্তু তার রূপ এক না অনেক? লক্ষ্যেরও কি রূপ বদলায় না? যেমন বদলায় প্রেক্ষাপট? দ্বিতীয়ত, পথটা উলটে যায়। শান্তি থেকে সত্যতে নয়, সত্য থেকে শান্তিতে।’ (সনৎকুমার, ২০১৪ : ১৭) সনৎকুমার সাহার এই কথার সঙ্গে পাঠকের বিরোধিতার করবার কোনো সুযোগই নেই। কেননা, রবীন্দ্রনাথই তাঁর জীবন888sport sign up bonus বইটাতে আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেছেন, ‘রোমান্টিকের দিকটা বিচিত্রতার দিক, প্রাচুর্যের দিক, তাহা জীবনসমুদ্রের তরঙ্গলীলার দিক, তাহা অবিরাম গতিচাঞ্চল্যের উপর আলোকছায়ার দ্ব›দ্ব-সম্পাতের দিক।’ (রবীন্দ্রনাথ, সপ্তদশ খÐ, ২০১৭ : ১০৪) এই কথাগুলো 888sport app download for androidে রাখলে রবীন্দ্রনাথকে ভুল-বোঝার হাত থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।

৪.

888sport live footballসমালোচক আবু সয়ীদ আইয়ুব তাঁর আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থে বলেছিলেন যে, গীতাঞ্জলির সব 888sport app download apk তাঁর মনে সাড়া জাগায় না। বিশেষ করে এই কাব্যের ‘888sport apk download apk latest version ভক্তির 888sport app download apk’, যেখানে কি না ‘প্রভু-ভৃত্য-সম্পর্ক-নির্ভর’ ব্যাপারটি গুরুত্ব পেয়েছে। বরং আইয়ুবের মতে, ‘গুণ ও মাত্রা উভয় নিরিখে গীতাঞ্জলি-র মূল সম্পদ হচ্ছে সেইসব গান যাতে ভক্তি এবং প্রেমের কিংবা ভক্তি এবং প্রকৃতি-অনুরাগের কিংবা তিনটেরই সংগম ঘটেছে।’ সেটা বলার অধিকার আইয়ুবের রয়েছে; কিন্তু মুশকিলটা হয় তখন যখন দেখি যে, আইয়ুবের মতো লোকও নিজের মতামতের ক্ষেত্রে এক জায়গায় স্থির থাকেন না। ওই বইতেই ‘গীতাঞ্জলি বিষয়ে একটি ব্যক্তিগত সমস্যা’ শীর্ষক অধ্যায়ের শুরুতেই আইয়ুব বলেছিলেন, ‘গীতাঞ্জলি … স্পষ্টতই ঈশ্বরপ্রেমের 888sport app download apk বা গান। এর অধিকাংশ গান শুনে আমি মুগ্ধ হই, এমন-কি সুর বাদ দিয়ে শুধু 888sport app download apkরূপে পাঠ করলেও আমার মন গভীরভাবে সাড়া দেয়।’ (আইয়ুব, ১৯৮৭ : ৬৯)। আইয়ুব যে-গানগুলিকে বলেছেন শুদ্ধ ভক্তির 888sport app download apk, সেইসব গানের একটি তালিকাও দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে – ‘আমার মাথা নত করে দাও হে’, ‘একটি নমস্কারে প্রভু’, ‘তোমায় আমার প্রভু করে রাখি’, ‘আর আমায় আমি নিজের শিরে বইব না’ প্রমুখ। অন্যদিকে, সনৎকুমার সাহা ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে’ এই গানটি সম্পর্কে বলছেন, ‘তলিয়ে দেখলে ধরা পড়ে, গোটা গীতাঞ্জলির এ মূল ভাবনা।’ আরো একটু অগ্রসর হয়ে তিনি জানান, এটি ‘বোধহয় রবীন্দ্রনাথের সারাজীবনে চেতনাপ্রবাহে একটি স্থায়ী বিন্দু। তাকে নানা সময় নানা রঙে তিনি উদ্ভাসিত করেছেন, তার প্রতিফলিত আলোয়, তাকে সামনে না এনেও, দূরে-এবং-কাছে, জগৎকে চিনিয়েছেন। কিন্তু এ থেকে সরে আসেননি।’ (সনৎকুমার, ২০১৫ : ১৪৬)। আইয়ুব আর সনৎকুমারের মধ্যে আমাদের সায়টা কিন্তু সনৎকুমারের দিকেই। এই 888sport app download apk বা গানটির কথাগুলো যদি খেয়াল করি, তাহলে দেখতে পাই, কবি বলেছেন, ‘আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে,/ তোমারি ইচ্ছ করো হে পূর্ণ আমার জীবনমাঝে।’ শুধু গীতাঞ্জলি কাব্যেই নয়, রবীন্দ্রনাথের ‘পূজা’র গানের যে-মূল ভক্তিভাব, সেটিও যেন এখানে প্রকাশিত। কবি তাঁর নিজের সকল অহংকার আপন চোখের জলে ডুবিয়ে দিয়ে পরম-সত্তার কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন।

৪.২

শুধু গানে কিংবা 888sport app download apkয় নয়, আপনজনদের কাছে লেখা চিঠিপত্রেও রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই ইচ্ছার কথাটি নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের এই আকাঙ্ক্ষা দেখি কত অসামান্যভাবেই-না ফুটে উঠেছে –  ‘যিনি অপাপবিদ্ধ নির্ম্মল পুরুষ, যিনি চিরজীবনের প্রিয়তম, তাঁর মধ্যে সম্পূর্ণ আপনাকে সমর্পণ করে দেবার জন্যে মনের মধ্যে এমন কান্না ওঠে যে ইচ্ছা করে বহু দূরে বহু দীর্ঘকালের জন্যে কোথাও চলে যাই। যতই নানাদিকে নানা কথায় নানা কাজে মন বিক্ষিপ্ত হয় ততই গভীর বেদনার সঙ্গে সুস্পষ্ট বুঝতে পারি তিনি ছাড়া আর কিছুতেই আমার স্থিতি নেই তৃপ্তি নেই – তাঁকে ছাড়া আমার একেবারেই চলবে না।’ (রবীন্দ্রনাথ,  তৃতীয় খণ্ড, ১৪১০ : ১১)। সেই প্রসঙ্গের জের টেনে সনৎকুমার সাহা সংগত কারণেই বলতে পারেন যে, ‘“গীতাঞ্জলি” তাই পিছিয়ে পড়ার 888sport app download apk নয়; মানুষ থেকে মুখ ফেরানোও নয়। প্রতিভার বনবাস এখানে ঘটে না। রবীন্দ্রনাথকেই তাঁর পূর্ণ বিভাতেই এখানে পাই। … তার কেন্দ্রভ‚মিতে প্রকৃতির আশ্রয়ে প্রেমে পূর্ণ হতে চাওয়া অসহায় মানুষ।’ (সনৎকুমার, ২০১৫ : ২০৫)। এর পাশাপাশি আমরা অবাক হয়ে এটিও খেয়াল করি যে, আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থে আইয়ুব যে-সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, সেখান থেকে সরে এসে তাঁর পথের শেষ কোথায় গ্রন্থে অনেকটা সংশয়হীনভাবেই বলেছেন, ‘গীতাঞ্জলি পর্বের গানগুলিতে ব্যক্ত ঈশ্বর-প্রেম নিভৃত নির্জন কক্ষের ব্যক্তিগত রসানন্দে ভরপুর ব্যাপার, অনুভূতির সত্যতা এবং পূর্ণতাই সেখানে বড়ো কথা, অনুভ‚ত বিষয়ের ঐকান্তিক সত্য গৌণ। এই হৃদয়গত ঈশ্বর-প্রেমে 888sport promo code-প্রেমের মতো রয়েছে বাস্তব ও কল্পনার, দৃষ্টি ও সৃষ্টির সমন্বয়।’ (আইয়ুব, ১৯৮৪ : ১৬৭)। শুধু গীতাঞ্জলির কথাই-বা বলা কেন, রবীন্দ্রনাথের সারা জীবনের কাব্যচর্চার মধ্যেই রয়েছে এই বাস্তব ও কল্পনার আর দৃষ্টি ও সৃষ্টির এক অনবদ্য সমন্বয়। এখানে আধ্যাত্মিকতার চেয়ে বরং মানবপ্রেমই যেন গুরুত্ব পেয়েছে, যা কি না আমাদের সত্যের পথে, কল্যাণের পথে ধাবিত করে। রবীন্দ্র-গবেষক সুপ্রিয়া রায় (Supriya Roy) যখন বলেন, ‘His [Rabindranath] concept of beauty, according to Indian tradition, was integrated with Truth and Goodness’, তখন সেটি আমাদের কাছে অতিশয়োক্তি বলে মনে হয় না। (Rabindranath, 2019 : 9)

৫.

সনৎকুমার সাহা যে-রবীন্দ্রনাথকে আমাদের সামনে হাজির করেছেন তা একদিকে যেমন সমন্বিত সুষমায় পরিব্যাপ্ত, তেমনি অন্যদিকে সেটি নিজের গরজেই সম্পূর্ণ মানবিক। প্রাবন্ধিকের যুক্তি-কাঠামোর অপূর্ব বিন্যাসের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে যেন আবারো নতুন করে আমরা চিনে নেওয়ার তাগিদটুকু অনুভব করি। কতভাবেই-না তিনি – সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ – বলে গেছেন, লিখে গেছেন, গেয়ে গেছেন আমাদেরই লোক তিনি। অনেকেই সে-কথা বিশ্বাস করেছেন, অনেকেই করেননি।

কেউ-কেউ আবার সংশয়ে দুলেছেন, কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। যাঁরা তাঁকে ‘আমাদের লোক’ মনে করে কাছে টেনে নিতে পেরেছেন, ভাগ্যবান তাঁরা। আবার কেউ-কেউ তো ছিলেন, হয়তো এখনো আছেন,
মনে-মনে তাঁকে স্বীকার করেও মুখে সেটি বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। মানব-মনের নানা জটিলতার এ-ও তো একটা রকমফের। এই অস্বীকার করার মধ্যে একটা বিদ্রোহ-প্রবণতা রয়েছে, যাকে বলা যায় 888sport live footballিক-বিদ্রোহ। বুদ্ধদেব বসু মনে করতেন, ‘প্রয়োজন ছিলো এই বিদ্রোহের।’ আর এরই মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে তাঁরা ‘সত্য করে’ পেতে চেয়েছিলেন। আবার, জীবনানন্দ দাশের কথা মনে পড়ে। কেমন নিঃশব্দে রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে তিনি একেবারে নিজের মতো করে লেখালেখিতে মজ্জমান ছিলেন। অন্যদিকে বুদ্ধদেব বসুর দিকে তাকালে দেখা যাবে ভিন্ন-এক চিত্র। একদিকে যেমন রবীন্দ্রনাথে আপ্লুত, অন্যদিকে তেমনই আবার বিদ্রোহী। বুদ্ধদেবই আমাদের এক অনামা যুবকের কথা জানিয়েছিলেন, ‘যে রাতে বিছানায় শুয়ে পাগলের মতো ‘পূরবী’ আওড়াতো, আর দিনের বেলায় মন্তব্য লিখতো রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করে।’ না-বলে দিলেও আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ওই যুবকটি স্বয়ং বুদ্ধদেব বসু। এইভাবেই তিনি তাঁর তরুণতর বয়সে রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে একটি ‘ভারসাম্যের আকাক্সক্ষা আর আত্মপ্রকাশের পথের সন্ধান’ খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু দূরে সরে যেতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে ফিরে আসার জন্যেই। (বুদ্ধদেব, ১৩৬১ : ১৪৭) নতুবা প্রৌঢ় বয়সে এসে এই ভাষায় তিনি কেন লিখবেন, ‘যেন এক দৈব আবির্ভাব – অপর্যাপ্ত, চেষ্টাহীন, ভাস্কর, পৃথিবীর মহত্তম কবিদের অন্যতম : আমার কাছে, এবং আমার মতো আরো অনেকের কাছে, এ-ই হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর তুল্য ক্ষমতা ও উদ্যম ভাষার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে বিরল; এবং ভাষাব্যবহারের দক্ষতায়, 888sport app download apkয় ও গদ্যরচনার যুগপৎ অনুশীলনে, বহু ভিন্ন-ভিন্ন বিষয় ও রূপকল্পের সার্থক প্রযোজনায় – সব মিলিয়ে, অন্য দেশে বা কালে, তাঁর সমকক্ষ ক-জন আছে, বা কেউ আছেন কিনা, তা আমি অন্তত গবেষণার বিষয় বলে মনে করি।’ এইভাবেই বহু পথ-পরিক্রমা শেষে বুদ্ধদেব বসুর কাছে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন এক ‘মাতৃভূমির নব্যতম অবতার’। (বুদ্ধদেব, ১৯৯১ : ১১)

৫.২

শঙ্খ ঘোষ, অন্যদিকে তাঁর একটি লেখার সূত্রে, ভিন্ন-এক অভিজ্ঞতার কথা আমাদের শোনান : ‘কয়েক বছর আগে, আমার কয়েকজন প্রবাসী কবিবন্ধু প্রায় একই সঙ্গে ফিরে এলেন দেশে। পুরোনো-সব বন্ধুরা মিলে পুনর্মিলনে বসা হলো একদিন, সন্ধ্যাবেলায়, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেদিন ঘর ছিল  অন্ধকার। সেই আবছা অন্ধকারে বসে আছেন কৃত্তিবাস পত্রিকার কবিদল, একদিন যাঁদের সবাই জেনেছিলেন কালাপাহাড় হিসেবে। এঁদের মধ্যে কেউ বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি পান না কিছু। কেউ-বা বলেন, পড়েননি তিনি রবীন্দ্রনাথ। সময় পেলে কখনো পড়ে দেখবেন হয়তো, এমন আশ্বাসও শোনান, কেউ কেউ। কিন্তু ওই সন্ধ্যায় যখন আর কথা নেই কোনো, যখন প্রস্তাব হলো গানের, অনিবার্যভাবে গলায় তখন উঠে এল রবীন্দ্রনাথেরই গান। … খোলা প্রান্তর যেন চলে এল ঘরে, নিবিষ্ট হয়ে এল গোটা দলটি। সবারই গলায় একে একে গুনগুনিয়ে উঠল সুর, রবীন্দ্রনাথেরই সুর : সাম্প্রতিকের সঙ্গে তাঁর ঘোষিত ব্যবধান এক মুহূর্তে উড়ে গেল কোথায়।’ (শঙ্খ, ১৯৯১ : ১৫-১৬)। এইভাবেই বুদ্ধদেব বসুর প্রজন্মের সঙ্গে ব্যবধান ঘুচে যায় কৃত্তিবাসী-প্রজন্মের। কেন্দ্রে থাকেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর সমস্ত সত্তা নিয়ে। শুধুই যে রবীন্দ্রনাথের গান বা 888sport app download apkর বেলায় এই ধরনের অভিজ্ঞতা, ব্যাপারটা সে-রকম নয়। তাঁর গল্প-888sport alternative link-888sport live নিয়েও এই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতাও কারো-কারো আছে।

৬.

চোখের বালি 888sport alternative linkটি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই বিব্রত হয়েছেন। কখনো রক্ষণশীলদের কাছ থেকে আঘাত এসেছে রুচিভ্রংশতার দোষে, আবার কখনো আধুনিকেরা তাঁকে ভর্ৎসনা করেছেন যথেষ্ট পরিমাণে সাহসী হতে পারেননি এই অনুযোগে। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি তাঁর 888sport live football পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘যে বঙ্গদর্শনের বক্ষে একদিন বঙ্কিমবাবুর ও বাঙ্গালা ভাষার সুবিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠতম  নবেল “বিষবৃক্ষ” ও “চন্দ্রশেখর” প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহাতেই আজ রবি বাবুর “চোখের বালি” বাহির হইতেছে।’ সুরেশ সমাজপতি এই 888sport alternative linkে দেখতে পেয়েছিলেন ‘সর্বপ্রকার 888sport live football-নীতির শৈথিল্য’। আর সে-কারণেই তাঁর মনে হয়েছে : ‘রবিবাবু এত বড় লম্বা ও এমনতর কুৎসিত 888sport alternative linkে হাত দিয়া একেবারেই ভাল করেন নাই। ভগবান তাঁহাকে যে শক্তি দিয়াছেন, তাহা এরূপ কার্যের উপযোগী নহে।’ কাজেই ‘রবিবাবুর এই বই অতঃপর “বঙ্গদর্শনে” বাহির হওয়া বন্ধ হইলেই, বোধ হয়, ভাল হয়। কারণ, তাঁহার এই “চোখের বালি” বঙ্কিমবাবুর হউক, তাঁহার হউক বা আর যাহারই হউক, বঙ্গদর্শনের মুখে চ‚ণকালী মাখিয়া দিতাছে।’ কালীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল একটু ভিন্ন, যদিও তাতে শেষ পর্যন্ত সুরেশ সমাজপতিরই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন : ‘রবিবাবু তাঁহার 888sport alternative linkের চরিত্রগুলির বিষয় চিন্তা করেন কি? তাঁহার যে কোনও 888sport alternative link পড়িলেই বুঝা যায়, তাঁহার 888sport alternative linkের
নায়ক-নায়িকারা সকলেই যেন কলেজ-ফেরত, তাহাদের আড়ষ্ট-আড়ষ্ট কথাগুলি তর্জ্জমা করা, ঠিক যেন মুখস্থ করা বুলি আওড়াইবার জন্যই রঙ্গমঞ্চে দাঁড়ায়। সেগুলা কি আমাদের ঘরের ছবি? চোখের বালি ও নৌকাডুবির মত ছায়াবাজি আর কোনও বাঙ্গালী ঔপন্যাসিক পাঠককে উপহার দিয়াছেন কিনা, জানি না। … উহাকে সামাজিক বিশৃঙ্খলার ছবি ব্যতীত আর কিছুই বলা যায় না। অধিকাংশ নায়ক-নায়িকাই কদর্যভাবে বিভোর। তাঁহার এই ছায়াবাজির সহিত আমাদের সমাজের নাড়ীর কোনই সংযোগ নাই; সংযোগের আশাও নাই।’ (বিজলি, ২০০৯ : ৩৯১)

৬.২

অন্যদিকে আমরা দেখবো, রবীন্দ্রনাথের চোখের বালি 888sport alternative linkটির 888sport live chatমূল্য বিচার ও পর্যালোচনা করতে এসে সনৎকুমার সাহা বলেছিলেন, এই 888sport alternative linkের ‘চূড়ান্ত সার্থকতা বিধবা বিনোদিনীর বিয়ে হলো কি হলো না, এর উপর নির্ভরশীল নয়।’ তাহলে সার্থকতা কোথায়? – সে-সম্পর্কে সনৎকুমার অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন, ‘বিনোদিনীর প্রাণিসত্তা বিনোদিনী হয়ে উঠে তাতে পূর্ণতা পেল কি না, এবং সেইসঙ্গে আর সবাই তাকে ঘিরে একইভাবে নিজেদের বিকশিত করল কি না, এইটিই দেখবার বিষয়।’ (সনৎকুমার, ২০১৫ : ২১০)। তাঁর নিজের বক্তব্য সবিস্তারে বলতে গিয়ে সনৎকুমার বলছেন, এই 888sport alternative linkে চরিত্রগুলো ‘প্রত্যেকে যে যার মতো।’ এইটা মেনে নিয়েও, সনৎকুমারের ভাষায়, ‘অস্বীকার করা যায় না, বিষয় মাহাত্ম্যে বিধবা তরুণীর মর্মজ্বালা এখানে প্রধান হয়ে ওঠে। শুরুতে পরিস্থিতির নির্মাণেই তার বীজ লেখক রোপণ করে রেখেছিলেন। পরে তাকে বিন্দুমাত্র উপেক্ষা করেননি। সাহসের সঙ্গে তার পরিণতির স্বরূপ – একটি স্বরূপ, একমাত্র নয় – তিনি তুলে ধরেছেন। বাস্তবের সত্যকে কোথাও বিকৃত করেছেন বলে মনে হয় না।’ এরপরই তিনি রবীন্দ্রনাথের শৈল্পিক দক্ষতার কথা আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দিয়ে বলেন যে, ‘ঘটনাপ্রবাহ বিনোদিনীকে বিয়ের কনে আর সাজায়নি। তিনিও তা মেনে নিয়েছেন। এটা তাঁর ভীরুতা নয়, 888sport live footballিক সততা। জীবনের রঙ্গমঞ্চে বিনোদিনীকে নতুন ভূমিকায় টেনে নিয়ে যাবার প্রয়োজন আর ছিল না। কাহিনির প্রেক্ষাপটে তার আগেই সে পূর্ণতা পেয়েছে। এর পরে কোনো আতিশয্য 888sport live footballের 888sport live chatরূপকে অক্ষুণ্ন রাখত না।’ (সনৎকুমার, ২০১৫ : ২১১)। বিনোদিনীর এই পরিণতির জন্য আর্থ-সামজিক দিকটাকেও আমরা একেবারে অস্বীকার করতে পারি না। মার্কিন লেখক বেল হুক (Bell Hooks) 888sport promo code-পুরুষের আর্থিক অসমতার কথা তো অনেক আগেই বলেছিলেন। ’তাঁর মতে, ‘Most women do not have the freedom to separate from men because of economic inter-dependence.’ (hooks, 1984 : 77)। বিনোদিনী তো আর্থিক-সামাজিক কোনোদিক থেকেই আত্মনির্ভরশীল ছিল না, সেই সমাজ-বাস্তবতায় সেটি অর্জন করা হয়তো তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। সে-কারণেই এই পরিণতি তাকে মেনে নিতে হয়েছে; এখানে লেখকও নিরুপায়। আর তাই, শুধু 888sport live chatরূপ অক্ষুণ্ন রাখার কথা বলে সেটি অস্বীকার করা মানে সমাজবাস্তবতার প্রসঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা। এইটা মেনে নিতে আমাদের মন একেবারেই সায় দেয় না। এইখানে সনৎকুমার সাহার সঙ্গে আমাদের চিন্তার পার্থক্যটা স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হতে থাকে।

৭.

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সনৎকুমার সাহাকে অন্তত রবীন্দ্র-পুজোর মেকি-আবরণে নিজের চলার পথ তৈরি করতে হয়নি কখনো। বরং তাঁর লেখালেখিতে যেমন, তেমনি তাঁর জীবনযাত্রার প্রাত্যহিকতায় রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন – আমরা তাতে কোনোভাবেই বিস্মিত হই না। কেননা, আমাদের জানা আছে যে, একমাত্র তাঁর পক্ষেই এভাবে বলা সম্ভব, ‘কাছে থেকেও দূর রচনা করা, এবং সেই দূর থেকে দৃশ্যমান বাস্তবতার ভেতরের পূর্ণতাকে ফুটিয়ে তোলাতেই তার সৌন্দর্যের প্রকাশ। এবং এই সৌন্দর্যই তার রসরূপ।’ একেই সনৎকুমার সাহা বলেছেন 888sport live chatের ‘প্রাণময়তার প্রতিফলিত বিভা।’ (সনৎকুমার, ২০১৫ : ৩৭)। নির্বিকারভাবে নয়, কিংবা কোনো অবতারবাদের মুখোশ লাগিয়ে নয়, বরং সচেতনভাবে, ‘বুদ্ধি ও মনকে পুরোপুরি জাগিয়ে রেখে’ রবীন্দ্রনাথকে তিনি গ্রহণ করেছেন। শুধুই 888sport app download apk নয়, রবীন্দ্রনাথের গল্প-888sport alternative link সম্পর্কেও সনৎকুমার সাহার আলোকদীপ্ত বিশ্লেষণ আমাদের নতুন করে রবীন্দ্র888sport live football সম্পর্কে ভাবতে শেখায়, নতুন আলোয় প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করার  দীক্ষা দেয়। এই কৃতিত্বকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার কোনো উপায় আজকের দিনে নেই।

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

১. আবু সয়ীদ আইয়ুব, ১৯৮৪। পথের শেষ কোথায় (প্রথম প্রকাশ : জুলাই ১৯৭৭), দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

২. আবু সয়ীদ আইয়ুব, ১৯৮৭। আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ  (প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ১৯৬৮), দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৩. বিজলি সরকার (সম্পাদনা), ২০০৯। রবীন্দ্রনাথের বঙ্কিমচন্দ্র, বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র, নৈহাটি।

৪. বুদ্ধদেব বসু, ১৩৬১। 888sport live footballচর্চা, সিগনেট প্রেস, কলকাতা।

৫. বুদ্ধদেব বসু, ১৯৯১। 888sport live-সংকলন (প্রথম প্রকাশ : ১৯৬৬), দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ২০০৩। চিঠিপত্র : তৃতীয় খণ্ড (প্রথম প্রকাশ : ১৩৪৯), বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা।

৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ২০১৩। রবীন্দ্র-রচনাবলী : পঞ্চম খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা।

৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ২০১৬। রবীন্দ্র-রচনাবলী : ষোড়শ খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা।

৯. শঙ্খ ঘোষ, ১৯৯১। এ আমার আবরণ (প্রথম প্রকাশ : ১৯৮০), প্যাপিরাস, কলকাতা।

১০. শঙ্খ ঘোষ, ২০০৯। মুখ জোড়া লাবণ্যে, প্যাপিরাস, কলকাতা।

১১. সনৎকুমার সাহা, ২০০৮। কথায় ও কথার পিঠে, দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, 888sport app।

১২. সনৎকুমার সাহা, ২০১০। এই বাংলায়, শোভা প্রকাশ, 888sport app।

১৩. সনৎকুমার সাহা, ২০১২। ফিরে দেখা রবীন্দ্রনাথ, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড, 888sport app।

১৪. সনৎকুমার সাহা, ২০১৪।  দেখা-অদেখা, ঐতিহ্য, 888sport app।

১৫. সনৎকুমার সাহা, ২০১৫। রবীন্দ্রনাথ : তাঁর আলোয় তাঁর ছায়ায়, চন্দ্রাবতী একাডেমি, 888sport app।

১৬. Bell Hooks, 1984. Feminist Theory : From Margin to Center, South End Press, Boston.

১৭. Rabindranath Tagore, 1961. On Art and Aesthetics (Edited by Prithwish Neogy), Inter-National Cultural Centre, New Delhi.

১৮. Rabindranath Tagore, 2019. On Art, Artist and Aesthetics (Edted by Supriya Roy), Seribaan, South 24 Parganas. ৎ

সনৎকুমার সাহা

দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও শিক্ষক। চিরকুমার। জন্ম ১৯৪১ সালের ১৮ই ফেব্রæয়ারি রাজশাহীতে। বাবা শচীকান্ত সাহা। ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ এবং ১৯৬৫ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতি ও অর্থনীতি-গণিতে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ১৯৬২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ 888sport apps স্টাডিজের বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। 888sport apps ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সম্মাননা : 888sport cricket BPL rateে পদক, বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা – 888sport live : সমাজ সংসার কলরব, 888sport app download apk-অ888sport app download apk রবীন্দ্রনাথ, সম্পদে-সংকটে অর্থনীতির ইতিহাস, চর্চা ও প্রয়োগ, আমার আঙিনায়, চেনা-শোনা, পৌরাণিক-সাম্প্রতিক’, এই বাংলায়, ইতিহাসের প্রেক্ষাপট : রেনেসাঁ থেকে সমাজতন্ত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত দশক ইত্যাদি।