নুরুন নাহার লিলিয়ান
এক টুকরো লম্বা কাপড় একটি দেশের জাতীয় পোশাক হতে পারে, এটা তাকাহাশি সাইতর চিন্তার মধ্যে নেই। অবশ্য সে নিজেই যেন বিচিত্র পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। অন্তর্মুখী মানুষটি স্বল্পভাষী হলেও তার ছোট একজোড়া চোখ যেন ভীষণ কৌতূহলী ও চঞ্চল। ইংরেজি ভাষা অনুশীলনের একটি দলে প্রথম তাকাহাশি সাইতর সঙ্গে লিরিক লিরার পরিচয়। জাপানের এ-দ্বীপটার নাম হক্কাইদো। এই সুন্দর দ্বীপটায় বিদেশিদের জন্য অনেক ধরনের আয়োজন আছে। ভাষা সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্রে প্রতি সপ্তাহে ইংরেজি ভাষায় একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে জাপানিসহ অনেক দেশের নাগরিক ইংরেজি ভাষায় তাদের নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরে। এইতো ছয় মাস ধরে লিরিক লিরা সেখানে নিয়মিত যাচ্ছে। গত মাসের কথা। হঠাৎ মধ্যম উচ্চতার একজন যুবক লিরিক লিরার পাশে হাসিমুখে বসল। সবাই তখন নিয়মিত আলাপ-আলোচনা করছিল। পাঁচ-ছয় মিনিট হবে, লিরিক লিরা একটা জিনিস লক্ষ করতে লাগল। পাশে বসা জাপানিজ ছেলেটি বারবার তার চোখের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। অনেক কৌতূহলে ভরা তার সে-চাহনি। লিরিক লিরা কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতে লাগল। সে ব্যাপারটা লক্ষ করলেও না বোঝার ভান করে আলোচনায় মনোযোগ রাখল। অনেকক্ষণ ধরে কথার মাঝপথে তার মনোযোগ লিরিক লিরার চোখের দিকে চলে যাচ্ছে। সে যেন মনে-মনে কী বলে যাচ্ছে! লিরিক লিরার পাশে বসা অনেকেই হয়তো ব্যাপারটা লক্ষ করেছে। সবকিছু বুঝলেও লিরিক লিরা খুব স্বাভাবিকভাবে নিজের মনোযোগ ধরে রাখল। হঠাৎ সেই জাপানিজ যুবক বলে উঠল, ‘আমি খুব দ্বন্দ্বে পড়েছি। পাশে বসা দু-একজন সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, কেন মিস্টার তাকাহাশি সাইত?’
আচমকাই পাশে বসা লিরিক লিরার দিকে ঝুঁকে সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ? তোমার চোখদুটো বড় এবং খুব সুন্দর করে সাজানো। তোমার দেশের সবারই এমন চোখ?
তার প্রশ্ন করার ধরন দেখে অনেকের মুখে হাসি চলে এলো। যদিও সবাই ভদ্রতার প্রয়োজনে পুরো হাসি হাসতে পারল না। অর্ধ-হাসিমাখা মুখ নিয়ে সবাই আরো একটু বেশি মনোযোগী হয়ে বসল। লিরিক লিরা একটু অপ্রস্ত্তত হলেও খুব স্বাভাবিকভাবে বলল, ‘আমার নাম লিরিক লিরা। আমি 888sport apps থেকে এসেছি। এখানে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণা করছি।’
888sport apps! তাকাহাশি সাইত কপাল কুঁচকাল। মনে হচ্ছে এই প্রথম সে 888sport appsের নাম শুনেছে। পাশের একজন বৃদ্ধমতো জাপানিজ ভদ্রলোক বললেন, এক সময়ে এ-দেশটা ভারতের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভেঙে পাকিস্তান ও ভারতে ছিল। পাকিস্তানের দুটি অংশ – পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে হয়েছে 888sport apps।
তাকাহাশি সাইত একটু জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বলল, অনেক ভাঙাচোড়া। আসলে পৃথিবীর মানচিত্র সম্পর্কে আমারই ধারণা কম। কিন্তু তোমাকে দেখে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো মেয়ে মনে হয়নি। অনেক বেশি সংমিশ্রিত তুমি।
লিরিক লিরা মজা করে বলল, ‘আমারও তাই মনে হয়!’
পাশের একজন বৃদ্ধা জানতে চাইল, তোমার এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
লিরিক লিরা বলল, ‘আমরা সংকর জাতি। শুধু তাই নয়, কঠিন ইতিহাস ভাঙতে ভাঙতে আমাদের কাছে অনেক ভাষা এবং সংস্কৃতির ছোঁয়াও রেখে গেছে। কারো কারো রক্তে অজানা সংমিশ্রিত গোপন ভালোবাসাও বহমান। তাই হয়তো কখনো কখনো জাতি নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।’
তাকাহাশি সাইত বলল, খুব কঠিন কথা। তবে বিশ্বায়নের এ-যুগে সঠিকভাবে জাতি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তো তোমার দেশের জাতীয় পোশাক সম্পর্কে কিছু বলো। লিরিক লিরা সামনে রাখা নোটখাতার সাদা পাতায় একটি সাধারণ শাড়ি পরা মেয়ের ছবি এঁকে বোঝানোর চেষ্টা করল।
‘শাড়ি!’ এই পোশাকটার নাম শাড়ি। তাকাহাশি সাইতের বিস্ময়ভরা কণ্ঠে যেন আরো একটু বেশি উচ্ছলতা প্রকাশ পেল। তার জানার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। আশপাশে বসা সবাই তাকাহাশি সাইতর চঞ্চলতা উপভোগ করতে লাগল। আমার বাস্তবে শাড়ি পরা একটি মেয়েকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। জানি না, তোমার আঁকা ছবিটা নাকি বাস্তবের মেয়েটা সুন্দর হবে। আমি বুঝতে পারছি না, একটা লম্বা কাপড় কেমন করে ‘শাড়ি’ নামের পোশাকে পরিণত হয়।
লিরিক লিরা বলল, আমি একদিন তোমাকে এ-পোশাকটা পরে দেখাব।
তাকাহাশি সাইত খুব আনন্দ পেল। তার চোখে-মুখে, কথায়-আচরণে নতুন বিস্ময়ের ছোঁয়া দেখা গেল।
‘তুমি এ-পোশাকটা পরে আমার সামনে দাঁড়াবে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে। উফ! আমি একদম বিশ্বাস করতে পারছি না – !’
তাকাহাশি সাইতর কথা শেষ না হতেই লিরিক লিরা বলল, সেটা খুব শিগগির তোমার চোখ বাস্তবে দেখবে। তোমাকে শুধু গ্রীষ্মকালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
গ্রীষ্মকালের জন্য কেন?
লিরিক লিরা উত্তর দিলো, শাড়ি শীতকালের উপযোগী পোশাক নয়!
এটা আমার জন্য খুব কঠিন। কারণ গ্রীষ্মকাল শুরু হবে আরো দুমাস পর। শাড়ির প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। তাকাহাশি সাইত আবার প্রশ্ন করল, শীতকালে কি শাড়ির প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়ে যায়? লিরিক লিরা বলল, শাড়ির সঙ্গে বাতাসের এবং চারপাশের প্রকৃতির রঙের এক গভীর সম্পর্ক আছে। প্রকৃতির বিচারে শাড়ির অনেক রকমের ব্যবহার আছে। একজন 888sport promo code যখন শাড়ি পরে, প্রকৃতি তাকে অনেক রূপ দেয়।
তোমার দেশে কয়টি ঋতু?
ষড়ঋতুর দেশ 888sport apps, প্রতি দুমাস পরপর ছয়বারে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে সাজে। তাকাহাশি সাইত একটু মজা করে বলল, বুঝলাম তোমার দেশের প্রকৃতি একটু বেশি চঞ্চল। খুব দ্রুত মেজাজ পাল্টায়!
এভাবে প্রতি সপ্তাহে লিরিক লিরা এবং তাকাহাশি সাইতর মধ্যে কথাবার্তা হয়। ভাষা-সংস্কৃতি, জীবনপদ্ধতি এবং মানুষ। অনেক কৌতূহল আর প্রশ্ন!
ষড়ঋতুর দেশ 888sport apps, প্রতি দুমাস পরপর ছয়বারে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে সাজে। তাকাহাশি সাইত একটু মজা করে বলল, ‘বুঝলাম তোমার দেশের প্রকৃতি একটু বেশি চঞ্চল। খুব দ্রুত মেজাজ পালটায়!’
এভাবে প্রতি সপ্তাহে লিরিক লিরা এবং তাকাহাশি সাইতের কথাবার্তা হয়। ভাষা-সংস্কৃতি, জীবনপদ্ধতি এবং মানুষ। অনেক কৌতূহল আর প্রশ্ন! লিরিক লিরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উত্তর উপস্থাপন করে। কয়েক সপ্তাহে খুব বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার জোয়ারে কেটে গেল। তবে বন্ধুত্বের রূপ দেখে কারো বোঝার উপায় নেই খুব অল্প সময়ের এক সম্পর্ক। কোনো সপ্তাহে দুজনের একসঙ্গে কথা বলতে বলতে অনেকদূর হেঁটে যাওয়া। কখনো একসঙ্গে ইয়াকি সোবা নুডুলস কিংবা অরগানিক সবজি রেস্টুরেন্টে সালাদ দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করা। কখনো আবার হিমশীতল তুষারপাতের বিকেলে একসঙ্গে কফি হাউসে গরম কফি পান করা। কোনো কোনো বন্ধের দিনে একসঙ্গে জাপানিজ ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান উপভোগ করা। কখনো বাংলা 888sport live footballের বিখ্যাত সৃষ্টিগুলো ইংরেজিতে তুলে ধরা। বেশ জমজমাটভাবে একটি সাধারণ ছোট্ট সম্পর্ক এক অসাধারণ আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে যেতে লাগল। তুষার888sport app সফেদ গালিচার মতো পথে তুষার ছুঁয়ে-ছুঁয়ে পাশাপাশি নীরব হেঁটে যাওয়া। গভীর অন্ধকার আকাশ থেকে আসা একটু সন্ধ্যা আর সেই সন্ধ্যার আলো ছুঁয়ে-ছুঁয়ে নামা তুষারকণা। অনেক অনেক নীরবতা! কখনো কখনো সেই নীরবতা একটু গোপন হয়ে ওঠে মনের কোনো এক পরিবেশে। লিরিকের পাশের বোঁচা নাকের সাদা ধবধবে চেহারার এই লাজুক যুবকটি কখনো হয়তো তার মনের কথাটি বলতে পারবে না। চারদিকে শীতের ভয়ংকর উচ্ছ্বাস। সেই উচ্ছ্বাসে তুষারকণাগুলো সাদা পাখির মতো হিমশীতল বাতাসের সঙ্গে অদ্ভুত খেলা খেলছে। তাকাহাশি সাইত ক্রমশ ঘেমে ওঠে। লিরিক মোবাইল ফোনে দেখল শীতের তাপমাত্রা মাইনাস দশ ডিগ্রি। বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না। তুষার888sport app আকাশে লিরিক 888sport appsের গোধূলি খোঁজে। হঠাৎ তাকাহাশি সাইত বলল, লিরিক নামটাও কিন্তু ইংরেজি। লিরিক মাথা নেড়ে বলল, বাংলা অর্থ হলো গীতি বা গান।
তাকাহাশি সাইত একটু স্বাভাবিক ভঙ্গি নিয়ে বলল, তোমাকে আমার সত্যিই লিরিক্যাল মনে হয়। তাই কৌতূহলী হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। তোমার 888sport appsি বড় উজ্জ্বল কালো চোখদুটো আমার ভালো লেগেছে। ওর বোকা-বোকা কথায় লিরিক লিরা হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে, আমাদের দেশটা আরো অনেক বেশি লিরিক্যাল। অনেক বিচিত্রতায় ভরপুর।
তোমার নামটা বাংলা না হয়ে ইংরেজি হলো কেন? এবার লিরিক হাসি থামিয়ে একটু নিশ্বাস নিয়ে বলল, আসলে ইংরেজি অনেক শব্দ আমাদের পূর্বপুরুষদের শব্দ-ব্যবহারের ইতিহাস থেকে পাওয়া।
যেমন – এই ভূখন্ডের মানুষদের এক সময়ে ইংরেজরা শাসন করেছে। তাই ইংরেজি অনেক শব্দ আমাদের কথায়, জীবনযাপনে নিজ অধিকারে রয়ে গেছে। মানুষ হয়তো ওই শব্দগুলোর প্রকৃত বাংলাই ভুলে যাচ্ছে। তাকাহাশি সাইত বলল, যদিও ব্যাপারটা একই সঙ্গে দুঃখজনক এবং মজার। তবে সব দেশের মানুষেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করা উচিত। প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আর নিজস্ব সংস্কৃতিতে তা বসবাস করতে দেওয়া এক নয়। লিরিক একটা দীর্ঘশবাস ছেড়ে বলল, ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান আমাদের শাসন-শোষণ করেছিল। তাই তাদেরও কিছু জিনিস আমাদের সংস্কৃতিতে আছে। শুধু তা নয়, আরবি, ফার্সি, ফরাসি, হিন্দি এবং সংস্কৃত এমন অনেক ভাষার কিছু শব্দ বিদেশি শব্দ হিসেবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, কথাবার্তায় ব্যবহৃত হয়। তাকাহাশি সাইত চোখ বড় করে খুব গম্ভীর মুখ করে বলল, যুদ্ধের ভয়াবহতা আমি বুঝি। আমি ইতিহাস থেকে জেনেছি। জাপানের হিরোশিমায় বাতাসে এত বছর পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিসাপ ভাসে। তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমরা প্রতিনিয়ত একটা যুদ্ধের মধ্যে আছ।
লিরিক লিরা বলল, একদম ঠিক। 888sport apps নামক ভূখন্ডটি সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তাই যুদ্ধই আমাদের স্বাভাবিক জীবন।
তাকাহাশি সাইত খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, আমি ভেবে অবাক হচ্ছি, এত টিকে থাকার যুদ্ধের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস, সরলতা, জীবনের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা কেমন করে পেলে তুমি?
লিরিক লিরা একটু আন্তরিকতা নিয়ে বলল, আমাদের উর্বর মাটির ঘ্রাণ, অন্ধকার আকাশের জ্যোৎস্না, বৃষ্টির বিলাসিতা আর দুমাস পরপর প্রকৃতির রং বদলই এসব প্রাকৃতিক নিয়মে শিখিয়ে দিয়েছে। তাকাহাশি সাইত একটু মুচকি হাসিমাখা মুখ নিয়ে বলল, দুমাস পর জাপানে বসন্ত আসতে শুরু করবে, 888sport appsে কী হবে? লিরিক লিরা অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে বলল, বাংলা নববর্ষ। তখন ইংরেজি ১৪ এপ্রিল 888sport appsে পহেলা বৈশাখ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সে-সময় সারাদেশ বৃহৎ আনন্দে মেতে উঠবে। ছেলেমেয়েরা লোকজ সাজসজ্জা আর রঙিন পোশাকে ঘুরে বেড়াবে। বিশেষ করে মেয়েরা লাল শাড়ি পরবে। সবাই প্রিয়জনকে উপহার দেবে।
তাকাহাশি সাইত বলল, লাল শাড়ি কেন?
আসলে লাল-সাদা রঙের এক অদ্ভুত সমাহার! বেশিরভাগ এই রং ব্যবহার করলেও যে-কোনো উজ্জ্বল রঙিন রঙের শাড়িও পরে।… কথাগুলো বলতে-বলতে সামনে অদুরি পার্কের পাশে রাখা চেয়ারে বসল। অনেকক্ষণ দুজনে হেঁটেছে। তাই দুজনে একটু ক্লান্ত। তাকাহাশি সাইত মুখোমুখি চেয়ারটায় খুব আন্তরিকতা নিয়ে বসল। প্রচুর লোক থাকে এই অদুরি পার্কে। লিরিক লিরা নিশ্বাস ছেড়ে আশপাশের লোকজনের দিকে তাকাল। তাকাহাশি সাইতও আশপাশে একবার তাকিয়ে লিরিক লিরার দিকে চোখ সরাল। এই প্রথম লিরিক লিরা দেখল তাকাহাশি সাইত তার দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে। জাপানি ছেলেমেয়েরা সাধারণত একটু লাজুক স্বভাবের হয়। সর্বদা কথা বলার সময় সরাসরি তাকিয়ে কথা বলে না। মাথা নিচু রাখা ওদের স্বভাব। লিরিক লিরা বুঝতে পারছে, সে হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে। আচমকা শান্ত কণ্ঠে তাকাহাশি সাইত বলল, তোমার কী রঙের শাড়ি পছন্দ? লিরিক হাসি-হাসি মুখ নিয়ে বলল, শাড়ি! আমার লাল শাড়ি পছন্দ। তবে আমার কাছে এখন কোনো লাল শাড়ি নেই। সামনের পহেলা বৈশাখ, আমাকে অন্য রঙের শাড়ি পরতে হবে।
তাকাহাশি সাইত বলল, এখানে তুমি মাঝে মাঝে শাড়ি পরো?
না। 888sport appsিদের কিছু নিজস্ব অনুষ্ঠান হয় সংগঠন থেকে। তখন সবাই শাড়ি পরে।
ও আচ্ছা। তুমি ছাড়াও অনেক 888sport appsি আছে?
আছে, তবে বেশিরভাগ গবেষণা, চাকরি, উচ্চশিক্ষার কারণে এখানে এসেছে; স্থায়ী কারো সঙ্গে পরিচয় হয়নি।
তাকাহাশি সাইত একটু মনোযোগসহ লিরিকের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনল। তার ছোট চোখদুটো যেন এবার ভীষণ স্থির এবং শান্ত। কী যেন খুঁজছে!
ওর তাকানোর ধরন অনেক কিছু বলতে চাইল। অনেক প্রশ্ন আর রহস্যঘেরা চাহনি। লিরিক হয়তো অনেক কিছু মনে-মনে জেনে গেছে, কিন্তু না, সে একবার চাহনি লক্ষ করে চোখ সরিয়ে নিল।
কয়েক সপ্তাহ পর। বরফ888sport app পথপ্রান্তর জেগে উঠতে শুরু করল। তুষার চাদরে 888sport app আকাশ একটু একটু আলোর ঝলকানি দিতে লাগল। ব্যস্ত শহরের মানুষগুলো শীতের পোশাক ছেড়ে নতুন সাজে পথপ্রান্তর রাঙিয়ে তুলল। প্রকৃতির এ এক ভিন্ন রূপ। পরপর দুই সপ্তাহ তাকাহাশি সাইত ভাষা সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্রে এলো না। তার মোবাইল নম্বরটা নেওয়া হয়নি। ই-মেইলের কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। লিরিক লিরা যেন তাকে মনে-মনে খুঁজতে লাগল। সে কি ব্যস্ত নাকি অসুস্থ? অন্য কোনো ভুল? খুব সংবেদনশীল মন জাপানিদের। কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছে? এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল তার মস্তিষ্কে। এভাবেই আরো কয়েকদিন গেল। সেদিন পহেলা বৈশাখ। বিকেলে 888sport appsিদের নিজস্ব সংগঠনের অনুষ্ঠান। লিরিক লিরা কোনো কিছু না ভেবেই 888sport appsি সাজে হক্কাইদো ভাষা সংস্কৃতি কেন্দ্রে গেল। সবাই যেন অবাক। সবাইকে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান উদ্যাপন সম্পর্কে বর্ণনা করল; কিন্তু যাকে মন এবং চোখ খুঁজছে তাকে দেখা গেল না। কেন জানি লিরিক লিরার ভীষণ মন খারাপ হলো। তারপর ভাষা সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় কথা। হঠাৎ একজন মহিলা অফিসকর্মী পেছন থেকে ডেকে তাকে একটি প্যাকেট দিলো। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় লিরিক লিরা ভাবনাশূন্য হয়ে গেল। একটি টুকটুকে লাল শাড়ি। সঙ্গে একটি শুভেচ্ছা কার্ড। সেখানে লেখা, পহেলা বৈশাখ-শুভেচ্ছা!!
একটি সবুজ মারুয়ামা পাহাড়, একটি লাল শাড়ি, একটি 888sport appsি মেয়ে এবং তার একজোড়া কাজলচোখ। সব মিলে তৈরি হতে পারে একটি ধ্বংসাত্মক ঘটনা। আমি জেনেছি মেয়েটির একটি মানুষকে ঘিরে একটি সুখের রাজ্য আছে। সেই মেয়েটির দেশ-সংস্কৃতি সম্পর্কে আমি জেনেছি। তার সংস্কৃতি এবং দেশের প্রতি আমার 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসা রইল। জানি, মেয়েটি আমাকে ক্ষমা করবে।
লিরিক লিরা চুপচাপ শাড়ি এবং কার্ড সযতনে হাতে নিয়ে সেই অদুরি পার্কের দিকে হাঁটতে লাগল। গরমে একটু-একটু ঘাম কপাল থেকে নেমে গাল ভেজাল। লিরিক লিরা শুধু মনে মনে ভাবতে লাগল, সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতিগুলো হয়তো এমনই নীরব আর লুকানো থাকে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.