কুয়াশা888sport app শীতের ভোরে হাঁটছেন তিনি। গায়ে-মোড়ানো চাদরটা বারবার পড়ে যাচ্ছিল শরীর থেকে। ডান হাতে লাঠি থাকার কারণে বাঁ-হাত দিয়ে চাদর ঠিক করার চেষ্টা করছেন, পারছেন না। দাঁড়িয়ে পড়লেন লেকের ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজের হাতল ধরে। এবার চাদরটা ঠিক করতে পারলেন। লাঠিতে ভর দিয়ে ঠকঠক করে আবার হাঁটতে গিয়েও থেমে তাকিয়ে রইলেন লেকের পানির দিকে। স্থির পানির ওপর ভোরের কচি রোদ ঝিকমিক করছে, দেখে প্রাণ জুড়ালো না। বরং চট করে মনে পড়ে গেল জীবনের কচিবেলার কথা – দুরন্ত এক শ^াস বেরিয়ে এলো কলজে ছিঁড়ে। এই তো সেদিনের কথা। কুয়াশামাখা ভোরে হেঁটে হেঁটে স্কুলে গিয়েছেন আর এখন লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। কত সহজে ফুরিয়ে যায় জীবন, খড়কুটোর মতো ভেসে যায় সময়!
লেকের ওপারে গাছগাছালির ঝোপ থেকে উড়ে আসছে শীতের বাতাস। কুয়াশার চাদরের ফাঁক গলে কাঁচা সূর্যের একচিলতে কাঁচাসোনা রোদ আছড়ে পড়ছে মুখে। দুলছে রোদ! গাছগাছালির দিকে তাকিয়ে বুঝলেন, গাছের পাতারা নড়ছে, পাতার দুলুনিই নাড়াচ্ছে ফালি ফালি রোদ। স্থির বাতাসেও পাতারা নড়ছে কেন? তবে কি বাতাস বইছে? অথচ বোঝার উপায় নেই বাতাসের প্রবাহ আছে।
রোজ হাঁটতে বের হন তিনি। লাঠিভর দিয়ে যতটুকু পারেন, হাঁটেন। অথচ এখন মনে হচ্ছে, তাঁর নিজেরই শ্বাস নেই। বুকের ভেতর বাতাস চলাচল নেই। শূন্য বুকে, শূন্য খাঁচা কি আর কোনো দিন পূর্ণ হবে না বাতাসে? বাঁ হাত দিয়ে চশমাটা খুলে গায়ের চাদরে ঘষে কাচে জমা কুয়াশা মুছলেন, তারপর চোখে পড়ে সামনে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখলেন – পাশ দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটে যাচ্ছে এক সুঠাম দেহের তরুণ। চেনা চেনা লাগল, পুরোপুরি চিনতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক একটা প্রতিচিত্র ভেসে উঠল ধূসর দৃষ্টিশক্তির ক্যানভাসে : নিজেও তরুণ বয়সে ছিলেন এমন সুঠামদেহের অলরাউন্ডার। সব ধরনের স্পোর্টসে ছিলেন তুখোড়,
ফুটবল-ক্রিকেটেও ছিলেন অদ্বিতীয়। অথচ এখন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ক্ষয়ে গেছে, দানব সময় গিলে ফেলেছে দেহকোষের সজীবতা, কোষে কোষে শুরু হয়ে গেছে ষড়যন্ত্রমূলক বিশৃঙ্খলা। এ বিশৃঙ্খলার আড়ালে ক্ষয়ে যাচ্ছে দেহের কোষ, ভাঁজ পড়ছে ত্বকে, কমে গেছে দেহের শক্তি। কী নিদারুণ বিয়োগান্ত জীবন! তুলনা করে তিনি স্তব্ধ হয়ে রইলেন। ক্ষয় জমে জমে পাহাড় হচ্ছে। পাহাড়সমান স্তব্ধতা নাড়িয়ে প্রতিদিন সূর্য ওঠে, সূর্য ডোবে, কালের গর্ভে ঢুকে যায় দিন-মাস-বছর। সূর্য ওঠার সময় মনেই হয় না এত দ্রুত ডুবে যাবে সূর্য। এত দ্রুত ক্ষয়ে যাবে দিন, এত দ্রুত পেরোবে রাত, সূর্য আবার উদয় হওয়ার আগেই গিলে খায় দেহকোষ। কী সাংঘাতিক নীরব ঘাতক প্রকৃতির চক্রে ধাবমান! এমনি ভাবনায়ও আচমকা নাড়া খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি।
বেশ কিছুক্ষণ পর একই পথ দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় বয়স্ক লোকটিকে দেখে সুঠামদেহের ছেলেটি থমকে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। ভালোমন্দ না বুঝেই সরাসরি প্রশ্ন করল, ‘আপনি আমির আলি আংকেল না?’
তরুণের মুখে নিজের নাম শুনে প্রীত হয়ে আমির আলি জবাব দিলেন, ‘তুমি কে? চেনা চেনা লাগছে, পুরোপুরি চিনতে পারছি না তো তোমাকে?’
‘আমি অমিয়র ফ্রেন্ড। এ-পাড়াতেই থাকি।’
‘ওহ্! আচ্ছা! আচ্ছা! এত বড় হয়ে গেছ তুমি!’
‘আংকেল, আমি তো অমিয়র সঙ্গেই পড়তাম! আমি অর্ণব।’
‘ওহ্, তাই তো! প্রতিদিন দেখেছি অথচ নিজের ছেলের দিকে কখনো দেখার মতো করে তাকিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তোমাকে দেখে এখন বুঝতে পারছি, অমিয়ও অনেক বড় হয়ে গেছে। নিজেও বুড়ো হয়ে গেছি।’
আংকেলের শরীরের অবস্থা দেখে অর্ণবই নির্বাক হয়ে গেল। ক্ষণকালের জন্য চোখের সামনে ভেসে উঠল আংকেলের দুরন্ত সময়ের কথা। শূন্য দশকের শেষের দিকেও ছিলেন কেমন দাপুটে সমাজসেবক। পাড়ার সব অনুষ্ঠানেই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আমির আলি টেলিভিশন টকশোতে ক্ষুরধার বিশ্লেষণের তুবড়ি ওড়াতেন, পত্রিকার পাতায় উপসম্পাদকীয় বিভাগে লিখতেন সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে দুর্দান্ত সব কলাম। নামডাক, দাপট আর ঐশ^র্যে ধনবান এমন ব্যক্তির জীবনে ঘটে গেছে এমন পরিবর্তন! এত দ্রুত বুড়ো হয়ে গেছেন, ক্ষয়ে গেছেন! এত দ্রুত কোমর বেঁকে গেছে! এখন লাঠি হাতে হাঁটছেন লেকের পাড়ে! হাঁটতেও তো পারছেন না! এ মুহূর্তে তাঁর জন্য ভীষণ মায়া হলো অর্ণবের। মায়াবী কণ্ঠে বলল, ‘নিয়মিত শরীর চেক করান তো, আংকেল?’
‘অনেকদিন চেক করানো হয়নি।’
‘বলেন কী!’
‘তেমন সমস্যা টের পাইনি তো!’
‘আপনি হাঁটতেই পারছেন না। সমস্যা টের পাননি মানে? মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করাবেন না?’
অর্ণবের কথায় ধমকের সুর আছে। আমির আলি বুঝলেন, ছেলেটির কণ্ঠস্বরে লুকিয়ে আছে যত্নের একটা মনোভাব। এ বোধ এখনো বিলুপ্ত হয়নি তাঁর। অন্যের যত্ন-আত্তি পাওয়ার আশা মনে মনে পুষে রাখেন। সে-আশা পূর্ণ হয় না তাঁর। ছেলের জগতে ছেলে আছে। স্ত্রী নেই। অনেক আগেই ছেড়ে গেছেন এ জগৎসংসার। সব 888sport sign up bonus ধূসর হয়ে যাচ্ছে। তবু বেঁচে থাকার জন্য অন্যের দেখভাল পেতে ইচ্ছে করে। গোপন এ-তাড়না কেন লুকিয়ে থাকে মনে? গোপনে কেন কাঁদায়? এ-আকাক্সক্ষার সলতের ক্ষীণ আলো এখনো কেন জ্বলছে? কেন নিভে যায় না সব? নাড়া দেওয়া প্রশ্নের কোমল দাপটের মধ্যে থেকে স্নেহের চোখ তুলে অর্ণবের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন আমির আলি। যৌবনের ময়দানের দুরন্ত পথ মাড়িয়ে এসে এ-কোন অবহেলিত জীবনের কোণে আশ্রয় মিলেছে তাঁর! অনুভব করতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে আবার অর্ণবের দিকে তাকালেন কিছুক্ষণ পর।
মমতা-মেশানো ধমক দিয়ে অর্ণব আবার বলল, ‘চলুন। ওই যে, সুধা সদনের পাশে ওই দ্বীপের গাছগাছালির তলে সহজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো – একদম চেকআপ না করার চেয়ে ওখানে গিয়ে দেখি অন্তত একবার, আপনার বর্তমান অবস্থাটা কী।’
নিজের ক্ষয়ে যাওয়া দেহমনের স্তব্ধতার মধ্যেই প্রতিদিনের বসবাস তাঁর। ক্ষয়রোগ ঘুণপোকার মতো নীরবে খেয়ে চলে সব নির্যাস। প্রতিটি দিন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর-মন থেকে ঝরে যেতে থাকে জীবন-যৌবনের তারারা। দেহের আলোর শিখা দ্রুত মøান হতে হতে মানুষ হয়ে যায় সিনিয়র সিটিজেন, তারপর কেবল সাড়ে তিন হাত ভূমির প্রতীক্ষা।
প্রতীক্ষাপ্রহরে রোগশোকের পরীক্ষা করে কী লাভ? এমন দর্শনতত্ত্ব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বলেই বোকার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন আমির আলি।
ডান হাত দিয়ে অর্ণব চেপে ধরল আংকেলের বাঁ হাত। অধিকারবোধ থেকে তাড়া দিয়ে বলল, ‘চলুন এখনই। এখানে যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, মাপিয়ে দেখি।’
আমির আলি বাধা দিলেন না। সুবোধ বালকের মতো এগিয়ে বৃত্তাকার দ্বীপের পূর্বপরিধির কাছে গিয়ে দেখলেন, একটা ছোট বোর্ডে প্রায় পঞ্চাশ ফন্টে কম্পিউটার কম্পোজ করে সাদা কাগজে লেখা আছে : রক্ত পরীক্ষা একশ টাকা, ব্লাডপ্রেসার মাপা পঞ্চাশ টাকা, ওজন মাপা বিশ টাকা। তিনটি আইটেমের প্রতিটি পরীক্ষা করতে লাগবে একশ সত্তর টাকা। হিসাব করা অঙ্কটা কল্পচোখে ভাসিয়ে বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন তিনি অর্ণবের মুখের দিকে।
আংকেলের চোখের ভাষা মুহূর্তেই পড়তে পারল অর্ণব। আশ^স্ত করে বলল, ‘বুঝেছি, আপনার কাছে টাকা নেই। আমার পকেটে আছে। বসুন আপনি।’ কথা শেষ করতে করতে আংকেলকে চেয়ারে বসিয়ে অনভিজ্ঞ লোকটিকে বললেন, ‘নিন, শুরু করুন, তিনটি পরীক্ষাই করুন।’
রক্তচাপ মাপতে গিয়ে গোল হয়ে গেল অপারেটরের চোখ। কপালে ভাঁজ পাকিয়ে একবার মেপে আবার মাপল সে – ২০০ বাই ১১০। হাইপ্রেসার। মুখে উচ্চারণ না করে লোকটি অসহায়ভাবে তাকাল অর্ণবের দিকে। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো সাংঘাতিক খারাপ অবস্থা। এবার রক্তের গ্লুকোজ তথা ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য গ্লুকোমিটার হাতে নিয়ে বাঁ-হাতের আঙুলের পাল্পে পিন ফুটিয়ে রিডিং সøাইডে রক্ত নিয়ে রেজাল্ট মেপে আরেকবার টাস্কি খেল লোকটি – গ্লুকোজ লেভেল ২০। হাই সুগার। হাই ডায়াবেটিস।
লোকটির সঙ্গে আলাদা কথা বলে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে অর্ণব বলল, ‘আংকেল, আপনি কি জানেন আপনার ব্লাডপ্রেসার বা ডায়াবেটিসের কথা?’
‘জানি তো। নিয়ন্ত্রণেই তো ছিল!’
‘নিয়মিত ওষুধ খান?’
এবার আমির আলি মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
‘আংকেল, আপনার দুটো রোগ আছে, জানেন। অথচ চেকআপ করেন না, ওষুধও খান না। বিষয়টা কি ঠিক? আপনাকে দেখেই বুঝেছি, নিজের প্রতি অযত্ন করেন। বুঝেছি ঘরের কেউ আপনার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখে না। এজন্যই আপনাকে ধরে নিয়ে এলাম পরীক্ষা করাতে।’
আমির আলির মাথা আরো নিচু হয়ে গেল। মনে মনে অর্ণবকে আশীর্বাদ করলেন তিনি। মুখ ফুটে কিছুই বললেন না। ঘন আঁধারে ঢেকে গেছে তাঁর মুখ। কারোর কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই, ঠিক কথাটা। জীবনের কাছেও কি নেই বেঁচে থাকার প্রত্যাশা? মৌন বাক্য চেপে ধরল তাঁর ধূসর বোধের অবশিষ্ট সজীব অংশটুকু। ভোরের রোদ উঠছে … বাড়ছে, প্রখর থেকে প্রখরতর হবে, মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করবে, ঢলে পড়বে সূর্য পশ্চিমে, মøান হতে থাকবে রোদ্দুর – ঠিক যেন জীবনের বাস্তবছায়া। প্রতিদিনই প্রকৃতি উপহার দেয় এ-সত্য। কেউ কি টের পাই আমরা সেই সত্যের অনুরণন? ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ালেন আমির আলি। অর্ণবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগোতে লাগলেন নিজ ফ্ল্যাটের দিকে।
দুই
কাকডাকা ভোরে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে একাকী বেরিয়ে এসেছিলেন আমির আলি। লিফটে চড়ে এসে বড় করিডোর পেরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দেখলেন খোলা দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ডাইনিং স্পেস পর্যন্ত। যাওয়ার সময় কি দরজা খুলে রেখে গিয়েছিলেন? মনে করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কোনো নতুন ঘটনা, বিষয়-আশয় আজকাল 888sport app download for android করতে পারেন না। 888sport app download for android যে করতে পারেন না, তাও বোঝেন না। তবে অতীতের ঘটনা সহজে ভোলেন না। নতুন আর অতীত মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় – ভুল হয় তখন। আর ভুলের মাশুলও দিতে হয়। বিষয়টা নিয়তই উদ্বেগ বাড়িয়ে রাখত নিজের ভেতর। ‘দরজা কি খুলে রেখে গিয়েছিলেন?’ নিজের মনে জেগে ওঠা এখনকার প্রশ্নটা কয়েকগুণ বেশি আতঙ্ক জাগিয়ে তুলল মনে। লাঠির আওয়াজ না তুলে, দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘরের ভেতর ঢোকার সময় দেখলেন ফ্লোরে পড়ে আছে আজকের দৈনিক পত্রিকাটি। হাতে তুলে নিতে হলে বসতে হবে হাঁটু গেড়ে। উবু হয়ে নেওয়া যাবে না। চিকিৎসকের নিষেধ আছে। নিষেধের কথা এ-মুহূর্তে মনে পড়ল না। নিচু হয়ে তুলতে গিয়ে কোমরে চোট খেলেন। পড়ে যাচ্ছিলেন, দেয়ালে ঠেস দিতে পারার কারণে পতন থেকে রক্ষা পেয়ে হাঁটু গেড়েই বসলেন। পেপারটা চোখের সামনে তুলে ধরলেন। বসা অবস্থাতেই চোখ গেল একটা শিরোনামের দিকে ‘প্রবীণ মানুষের 888sport free bet বৃদ্ধি আগামী দিনে 888sport appsের জন্য বড় সামাজিক চ্যালেঞ্জ।’ চোখও বুড়ো হয়ে যাচ্ছে – শিরোনামটি পড়তে গিয়ে টের পেলেন নির্মম সত্যটা। বড় ফন্টে লেখা, তবু পড়তে অসুবিধা হচ্ছে। যেহেতু প্রবীণ বিষয়ে লেখা, তাই পত্রিকাটি বগলদাবা করে দেয়ালের সঙ্গে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। আর তখনই উচ্চকণ্ঠের ধমক শুনলেন, ‘দরজা খুইলা রাইখা বাইর হইছেন ক্যান এত সয়ালে?
চুরি-চামারি হইলে তো হগলে আমরার ঘাড়ে দোষ চাপাইবো?’ বিশ বছর ধরে কর্মরত গৃহকর্মী দুর্দানা বেগমের আক্ষেপে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না আমির আলির। আপন মনে পত্রিকাটি নিয়ে ঢুকলেন শোবার ঘরে। লাইট অন করে টেবিলের ওপর পত্রিকাটি বিছিয়ে বড় ফন্টের হাইলাইট করা ইনসার্টটি পড়তে লাগলেন – ‘জন888sport free betর সাড়ে সাত শতাংশ প্রবীণ, এখন ষাটোর্ধ্ব মানুষ এক কোটি ১২ লাখ। আগামী
৪০ বছরে তা পাঁচগুণ বেড়ে সাড়ে চার কোটিতে দাঁড়াবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা-ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায় – মানুষ যত প্রবীণ হয়, সে তত দরিদ্র হয়। প্রত্যেক প্রবীণ নাগরিককে ২৪ ঘণ্টা সুরক্ষা দিতে হবে। এগুলো বার্ধক্যের অধিকার।’
পত্রিকা পড়া বন্ধ করলেন তিনি। অর্ণবের বলা-কথা মনে করার চেষ্টা করলেন। পুরোপুরি মনে করতে পারলেন না। এত দ্রুত নতুন 888sport sign up bonusকথা উড়ে যায় মাথা থেকে? ঘাবড়ে গেলেন ভেবে। হঠাৎ আবার চোখ গেল ‘দরিদ্র’ শব্দটার ওপর। দরিদ্র হওয়া মানে গরিব হয়ে যাওয়া। শব্দটার অর্থ উড়ে যায়নি 888sport sign up bonus থেকে। নিজে তো দরিদ্র ছিলেন না। অতীত 888sport sign up bonus বলে দিচ্ছে বর্ণাঢ্য জীবন ছিল তাঁর, বৈভবের ঘাটতি ছিল না। তবে জীবনযাপনে শৃঙ্খলা ছিল না, খরচ করতেন লাগামছাড়া, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয়নি, ভাবেননি। এখন চিকিৎসা ব্যয় তো দূরের কথা, প্রতিটি কাজে টাকার জন্য চেয়ে থাকতে হয় ছেলের দিকে। ছেলে যে টাকা দেয় না, তা নয়। হাতখরচা যে নিতে হবে, এ বোধ তাঁর মধ্যে নেই। যখন যা প্রয়োজন তা দেওয়ার চেষ্টা করে ছেলে। তবু নিজেকে গরিবই মনে হচ্ছে। পত্রিকার নিউজ ঠিকই আছে। পত্রিকা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলেন তিনি। ঢুকেই বুঝতে পারলেন ফ্লোর নোংরা হয়ে গেছে। ‘নোংরা’ শব্দের সঙ্গে বিধিনিষেধ যুক্ত থাকায় নিজের ওপর আরোপিত পারিবারিক নির্দেশ মনে পড়ল। বাইরের স্যান্ডেল নিয়ে শোবার ঘরে তো নয়ই, বাসাতেই ঢোকা যাবে না। অথচ বাথরুমে ঢুকে গেছেন তিনি। এ মুহূর্তে বুঝতে পেরে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ঘরে পরা স্যান্ডেলটা খুঁজছেন, পাচ্ছেন না। ডাইনিং স্পেসে এসে দুর্দানা বেগমের উদ্দেশে বললেন, ‘ঘরে পরার জুতাজোড়া খুঁজে দেবে, দুর্দানা?’
‘এ কি কথা! ঘরে জুতা পরবেন ক্যান? চপ্পল পরবেন, তা চপ্পল তো আছে, যেহানে রোজ থাহে, খাটের পাশে।’
হ্যাঁ। মনে পড়েছে। কিন্তু দুর্দানা বেগমের কথার দাপটে হঠাৎ ঘাবড়ে গেলেন তিনি। মহা ভুল হয়ে গেছে ভেবে অপরাধবোধে আক্রান্ত হয়ে ফিরে এলেন শোবার ঘরে। কী রকম একটা চাপ বোধ করছেন মাথায়, বুঝতে পারলেন না। আকস্মিক চোখের আলো নিভে গেল, মানসচোখে ভর করে তিনি উড়ে চলে গেলেন অতীতের সোনালি দিনে, বিড়বিড় করে স্ত্রীর উদ্দেশে বলছেন, ‘তোমার ওষুধ কি খাওয়া হয়েছে, ইভা? চেকআপ করানো দরকার। আজ তোমাকে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।’
সাহেব স্যান্ডেল খুঁজে পেয়েছেন কি না, দেখতে এসে তাঁর বিড়বিড় করে
বলা-কথা স্পষ্টই শুনে ফেলল দুর্দানা বেগম। তখনই ঘরে উড়ে এসে আছড়ে পড়ল
চিৎকার-বোমা। অমিয়র উদ্দেশে দুর্দানা বেগম বলতে লাগল, ‘ভাইজান দেহেন, খালুজান কী কয়? খালাম্মার নাম ধরে কী যেন্ কয়, হুইন্যা যান। মনে অয় খালুজানের মাথায় গণ্ডগোল শুরু হইয়া গ্যাছে।’
দুর্দানা বেগমের হঠাৎ চিৎকারে কুঁকড়ে গেলেন আমির আলি। লুকোনো মমতার খোলা জানালাটা তাঁর আচমকা সেঁটে গেল। বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন তিনি।
চিৎকার-বোমার আওয়াজে নিজের ঘরে থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো অমিয়। ‘কী হয়েছে?’ ‘কী হয়েছে?’ বলেই সে উড়ে এসেছে বাবার ঘরে। দুর্দানা বেগমের মুখে সব শুনে ক্ষণকাল স্তব্ধ থেকে, কঠিন স্বরে অমিয় ঘোষণা করল, ‘একাকী তোমার বাইরে বেরোনো আজ থেকে বন্ধ, আব্বু।’
ছেলের মুখে বাবার বন্দিত্বের রায়ের কথা শুনে কিছুটা বিচলিত হয়ে কী যেন বলতে চাচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু বলতে পারলেন না। কথার খেই হারিয়ে ফেললেন। কথার লাইন ঢুকে গেল তার আপন খেয়ালে। নিজের শূন্য চোখে ভেসে উঠল দিনের দোদুল্যমানতা। দোদুল্যমান চক্রে খুঁজতে বসলেন নিজের ছেলেকে। অতীত 888sport sign up bonus থেকে উঠে এলেন ইভামণি, নিজের স্ত্রী। খোলা চিন্তনজালে পাক খেতে খেতে এ-জন্ম ও-জন্মকে এক করে ফেলেছেন তিনি; সময়দানবের পিঠে চড়ে বসা জনমের পথভোলা পথিক যেন। ছেলের চোখের ভেতর দিয়ে তিনি দেখে ফেললেন দ্রুত ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের ভেতর ওঁৎ পেতে থাকা আরেক জীবন। মর্মমূলে বেদনার রং ফেনিয়ে না উঠলেও কষ্টের ছোবল খেয়ে নির্বাক হয়ে রইলেন।
তিন
ডোরবেলের শব্দ পেয়ে সাধারণত দরজা খোলে দুর্দানা বেগম। দরজা খোলা হচ্ছে না দেখে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে অমিয়ই দরজা খুলল। বাইরে দাঁড়ানো অর্ণবকে দেখে বিস্ময়ের কুয়াশাপাত ঘটল অমিয়র চোখে। গেল বছর পাড়ার
সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল দুজনের। তারপর থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। অর্ণবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও ব্লক মেরে দিয়েছিল অমিয়। সেই অর্ণবই
জালি-ব্যাগ হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, অবিশ^াস্য ঘটনা!
নির্বাক অমিয়কে অবাক করে
সহজ-স্বাভাবিক ঢঙে, যেন কোনো কালে দুজনার মধ্যে কোনো বিবাদ ঘটেনি, এমনভাবে ঘরে ঢুকে অর্ণব বলল, ‘এই ব্যাগে আংকেলের জন্য ডালিম এনেছি। আংকেলকে ডাক।’
অর্ণবের গলার স্বর চিনতে পেরে নিজেদের ঘর থেকে ঘরোয়া পোশাকে বেরিয়ে এলো আলপু, অমিয়র স্ত্রী। তার চোখেও বিস্ময়। দুই বন্ধুর হৃদ্যতার অনেক গল্প শুনেছিল, গল্পের ঝাঁপি ঠেসে গিয়েছিল, বাস্তবে দেখেছিল প্রবল শত্রুতা আর বিবাদের সব বেপরোয়া ঘটনা, দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই আনন্দে চকচক করে উঠল আলপুর মুখ। সে-ই স্বাগত জানাল অর্ণবকে, ‘আপনি বসুন, ভাইয়া। আমিই ডেকে আনছি বাবাকে।’ আলপু বুঝতে পারল, অর্ণবের অন্তর থেকে অভিমানে পোড় খাওয়া কুৎসিত দাগ মুছে গেছে, দুই বন্ধুর ঘোষিত দূরত্বের মাঝেও বেঁচে ছিল সম্পর্কের কুঁড়ি, তাই নষ্ট হয়নি সম্পর্ক। সেই কুঁড়িতে ফুল ফুটেছে, নিশ্চয় উড়ে গেছে অভিমানের বিষবাষ্প। এ সম্পর্কের কী রং, জানে না সে। তবু তার মনে প্রশ্নের উদ্ভব ঘটল, কী করে সম্ভব হলো, এমন দুর্বোধ্য বিষয়ে কীভাবে ঘটল সহজ সমাধান? মনের ভেতরে উঠে আসা প্রশ্ন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিভ্রান্ত করার আগেই আলপু ডেকে আনলেন শ^শুরকে।
অর্ণব দাঁড়িয়ে সালাম জানানোর পর আমির আলি বললেন, ‘তোমাকে চেনা চেনা লাগছে।’
‘জি, আংকেল। আমি অর্ণব, অমিয়র বন্ধু। আজ ভোরেই তো লেকের ওপারে দেখা হয়েছিল।’
‘ওহ্! দেখা হয়েছিল? আচ্ছা। আচ্ছা।’
অমিয় ধাক্কা খেল বাবার কথা শুনে। আলপুও। সকালের ঘটনা বিকেলেই ভুলে গেছেন বাবা?
চিন্তিত হয়ে অমিয় বাবার উদ্দেশে কড়া গলায় প্রশ্ন করল, ‘ভোরে একাই গিয়েছিলে লেকের পাড়ে?’
সন্তানের কঠিন প্রশ্নেও টনক নড়ল না আমির আলির। তাঁর আবেগ ভোঁতা হয়ে গেছে। দাঁড়িয়েই রইলেন নিশ্চুপ।
অর্ণব আবার প্রশ্ন করল, ‘প্রেসার আর ডায়াবেটিসের ওষুধ খেয়েছেন?’
নিজের ওষুধ খাওয়ার কথা ভুলে যান তিনি। খেলেও অনেক সময় মনে করতে পারেন না যে খেয়েছেন। এখনো 888sport app download for android করতে পারলেন না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
অমিয় আর আলপুর উদ্দেশে এবার অর্ণব বলল, ‘ভোরে আংকেলের সুগার মেপে দিয়েছিলাম লেকের পাড়ে। অনেক হাই লেভেল ছিল সুগারের মাত্রা, প্রেসারও বেশি ছিল। আমার মনে হয় তাঁর ওষুধ খাওয়ানোর দিকে নজর বাড়াতে হবে তোদের। ইনভেস্টিগেশন ও ফলোআপও নিয়মিত করাতে হবে।’
সন্তান বাবাকে অবহেলা করে – বিষয়টি কি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে অপমান করতে এসেছে অর্ণব? চকিত একই রকম প্রশ্ন জাগল অমিয় ও আলপুর মস্তিষ্কে। ওদের জ্বালাবোধ উৎকট আকার ধারণ করার আগেই অর্ণব আবার বলল, ‘আমার আব্বুও ঠিকমতো ওষুধপত্র খেতেন না, এ বয়সে যে নিয়মিত চেকআপ করাতে হয়, তাতেও ছিল আব্বুর নিদারুণ অবহেলা। আমরাও তাঁর দিকে খেয়াল করিনি। এখন ব্রেইন অ্যাটাক, মানে স্ট্রোক করে দেহের এক পাশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। হুইলচেয়ারেই কাটছে তাঁর জীবন। এখন সবাই ছুটছি, তাঁর দেখভাল করছি, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না আমরা – কথাটা কতটুকু সত্যি, বুঝতে পারছিস?’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.