আমিনুর রহমান সুলতান
শিস ও 888sport app গল্প
শাহীন আখতার
বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড
888sport app, ২০১৩
২১৫ টাকা
888sport appsের 888sport live footballের নানা শাখা সমৃদ্ধ হচ্ছে নতুন নতুন ভাবনা, সৃষ্টি ও 888sport live chat-রসোত্তীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে। আশির দশকের পুরো সময় ও নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকেও পাঠক-সমালোচক-লেখকের ভাবনা ছিল যে, ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে?
কিন্তু সাম্প্রতিক গল্পপাঠে তার ব্যতিক্রম লক্ষ করার মতো। অনেকে প্রায় দু-দশক ধরে নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন গল্প লেখার ভেতর। শাহীন আখতারও প্রায় দু-দশক ধরে 888sport alternative linkের পাশাপাশি গল্প লিখে আসছেন। তাঁর গল্পের বিষয়, পরিবেশ ও চরিত্ররা প্রাণশক্তি নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। তাঁর গল্পপাঠে পাঠক কখনো ক্লান্তিবোধ করেন না। সমকালীন পাঠকের কাছে একজন গল্পকারের নিজেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে দাঁড় করানো সহজ ব্যাপার নয়। কেননা, সমকাল দূরবর্তী আলোয় উদ্ভাসিত হয় অনেক ক্ষেত্রে। তবে শাহীন আখতার ব্যতিক্রম বলা যায়, তাঁর গল্প সৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য মহিমায়। শিস ও 888sport app গল্প তাঁর স্বাতন্ত্র্যধর্মী 888sport live chatীসত্তার স্বরূপ নির্ধারণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই গল্পগ্রন্থে গল্প888sport free bet ১০টি। গল্পগুলো হলো – ‘শিস’, ‘তাজমহল’, ‘আমবাগানের সখা’, ‘হাতপাখা’, ‘আসতান’, ‘আবারও প্রেম আসছে’, ‘সাপ, স্বামী, আশালতা ও আমরা’, ‘মেকআপ বাক্স’, ‘পাঁচটা কাক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা’, ‘বোনের সঙ্গে অমরলোকে’। তাঁর গল্পের সময়, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, নাগরিক পরিবেশ, নাগরিক মনোলোক, গ্রামীণ ও নাগরিক চরিত্রের নানা বর্ণবৈচিত্র্য ও জীবনের বাস্তবতাকে এমনভাবেই স্পর্শ করেছে – যা তাঁর নিজস্ব সহৃদয়তা ও সৃজনশীলতাকেই প্রকাশ করেছে।
‘শিস’ গল্পটির পটভ‚মি নগরজীবন; গ্রামজীবনও আছে, তবে তা খুবই সামান্য পরিসরে, প্রাসঙ্গিকক্রমে এসেছে। নাগরিক জীবনে নাগরিক মানসিকতাকে, নাগরিক অধঃপতনকে, নাগরিক গোপনীয়তাকে যে সবাই প্রশ্রয় দেয় না, আবার অনেকে প্রশ্রয় দিয়ে খুব স্নেহের সঙ্গে সে-প্রশ্রয়কে লালন করে – এই উভয়বিধ মানুষের উপস্থিতি রয়েছে ‘শিস’ গল্পে। আমিরন ও মীরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষাজীবন ও দাম্পত্যজীবনের পারিবারিক সম্পর্ক সমকালের বাস্তবতার স্বরূপকে যেভাবে উন্মোচিত করেছে তা খুবই মর্মস্পর্শী ও আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
আমিরন গ্রামের মেয়ে। বাবা একজন ফুটপাতের ব্যবসায়ী। মাও সাধারণ গৃহিণী। গ্রাম থেকে উঠে আসা আমিরন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে মেয়েদের হলে ওঠার পর থেকে সে নাগরিক অধঃপতন, নাগরিক কৃত্রিমতাকে যতটুকু গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ততটুকু নাগরিক মার্জিত রুচি, সংস্কৃতি ও নাগরিক জীবনবোধকে আবিষ্কার করতে পারে না বলেই তার কাছে হলের অন্য মেয়েদের অদেখার বিশাল জগৎই প্রিয় বলে মনে হয়। লেখকের বর্ণনা এক্ষেত্রে উল্লেখ করছি, ‘আমরা শুধু জানতাম, ঘাসের কার্পেট মোড়া রমনা পার্কের ওপাশে নিবিড় বীথিপথটা মিন্টোরোড, যার ধারে ধারে মন্ত্রীদের রাজসিক আবাস। 888sport appর আশপাশে বাগানবাড়ি, প্রমোদভবন নিদেন কটেজ-টটেজ আছে কিনা জানা ছিল না। …এর বাইরে যে অদেখা বিশাল জগৎ, তা আমাদের বয়সী কাতান বেনারসি-জড়োয়ায় আচ্ছন্ন সুদূরতমার একচেটিয়া।’ কিন্তু এসময়ের ব্যতিক্রম মীরা। মীরা আমিরন ও হলের নেত্রীর আচরণের, হলের মেট্রনের আচরণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নাগরিক রুচিশীল মার্জিত জীবনবোধের সন্ধান করে। কিন্তু মীরা তার দাম্পত্যজীবনের সত্যটুকুকে আবিষ্কার করতে প্রয়াসী হয় – যখন সে তার স্বামীর দ্বারা শারীরিক সহিংসায় বিপর্যস্ত। স্বামীর সংসার রেখে মীরা এককক্ষের যে-বাসাটিতে বসবাসের জন্যে ওঠে, সেখানেই আমিরনের সঙ্গে দেখা হয়। একযুগ আগে তাদের পরিচয় ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবনে। গল্পকার মীরা ও আমিরনের পরিচয়ের সময়কালটাও উল্লেখ করেছেন – ‘…সত্তর দশকের শেষে আশির দশকের ছুঁই ছুঁই।’
আমিনরকে মীরা যেভাবে আবিষ্কার করেছিল তার বর্ণনা খুবই যথোপযুক্ত। কেননা, আমিরন এসেছিল একটা অজগাড়াগাঁ থেকে। বর্ণনাটি উল্লেখ করা হলো, ‘আমিরন তখন ম্যাদম্যাদা গন্ধযুক্ত ইটচাপা হলদেটে ঘাস যেন, লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল। এরপর ভাসে যখন তিমি মাছের মতো তোলপাড় করে…।’
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হলের 888sport app মেয়েরা যে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতো – তাদেরকেও ছাড়িয়ে বা টেক্কা দিয়ে আমিরনের আবির্ভাব চোখে পড়ার মতো। সঙ্গী হয় তার নেত্রী গোছের একটি সিনিয়র মেয়ে। লেখকের ভাষায়, ‘কোথাও পাত না পেয়ে নতুন দলে শামিল হয়েছে।’
কিছুদিনের মধ্যেই হলের ছাত্রীরা জানতে পারে যে, ‘আমিরন এক বৃদ্ধ মন্ত্রীর রক্ষিতা। একদিন অন্তর অন্তর মন্ত্রী গমনে বেরোয়। একটা কয়লা-রঙা টয়েটা ওর বাহন।’ মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমিরনের গ্রামসম্পর্কের একজন মামা। তিনি সে এলাকার চেয়ারম্যান। আমিরনের মা তার কাছে আবদার করেছিল – 888sport appয় মেয়ের যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।
হল থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার সময়মতো আসতে না পারলে এসব সামাল দিত হলের নেত্রী। হোন্ডাওয়ালা গুণ্ডার দল। আমিরনের মোটেও ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো না। আমিরন যেন তেলতেলা কচুপাতা, এক ফোঁটা পানির ভারও যার বইতে হতো না।
কিন্তু বৃদ্ধ মন্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যুর পর আমিরনকে নেত্রী তার রুম থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমিরনের নিজস্ব চার সিটওয়ালা রুমেও ফেরত যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ না চুকিয়েই তাকে আবার তার গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হয়। গ্রামেও তাকে বৃদ্ধমন্ত্রীর গঞ্জনা সইতে হয়।
জেলার ডিসির শ্যালক আমিরনকে পছন্দ করে বিয়ে করার পর আমিরন আবার 888sport appয় স্বামীর ফ্ল্যাটবাড়িতে বসবাস করে দুইসন্তানসহ। আমিরনের ফ্ল্যাটবাড়ির পেছনের ফ্ল্যাটেরই এক কামরাবিশিষ্ট রুম ভাড়া নেয় মীরা। আর এই পর্যায়ে মীরার দাম্পত্য সম্পর্ক ও আমিরনেরও যে দাম্পত্যজীবন ফুটে ওঠে তাতে 888sport promo code-পুরুষের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অনেক অসংগতি পরিলক্ষিত হয় – যা, উভয়ের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। বিশেষ করে এক্ষেত্রে মীরার দাম্পত্য সম্পর্ক খুবই সংকটের। যেখানে 888sport promo code-পুরষের সমমর্যাদা ও সমঅধিকার অনেক দূরের প্রসঙ্গ বলে মনে হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গল্প ‘পাঁচটা কাক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা’। মুক্তিযুদ্ধের গল্প হিসেবে এটি গতানুগতিক ধারার নয়। জীবনের, যুদ্ধের ভয়াবহ রূপ এই গল্পে নেই সত্য, প্রত্যক্ষভাবে বন্ধুর হাতে কোনো মুক্তিযোদ্ধার সম্মুখযুদ্ধ বা গেরিলা যুদ্ধেরও উপস্থিতি নেই, তারপরও এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা গল্পে উঠে এসেছে – যার ভ‚মিকার ফলে মুক্তিকামী কয়েকটি মানুষের প্রাণ বেঁচে যায়, বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আশ্রয় নিতে ছুটে যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ব্যতিক্রম শুধু গল্পকারের আব্বা।
গাঁয়ের সুরমা বুবি নামে একজন বুড়ি উপোস থাকার কারণে একটি ডেরকি-মুরগি বিক্রির জন্যে থানা সদরের হাটে নিয়ে যায়। কিন্তু পাক আর্মি তার কোল থেকে মুরগিটা তুলে নিয়ে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে চলে যায়। ডেরকির কক্কক্ ধ্বনি অনুসরণ করে বুঝি পৌঁছে যায় আর্মি ক্যাম্পে। সেখানেই সে ছাব্বির হোসেনকে আর্মির লিস্টে কথকের আব্বাসহ আরো ছয়জনের নাম লেখাতে দেখেছিল।
ছাব্বির হোসেন মাদ্রাসার দাখিল ক্লাসের ছাত্র এবং কথকের আব্বার আধ-খোরাকির লজিং মাস্টার। ছাব্বির যুদ্ধের সময় সকাল দুপুর কোথায় যায় বা থাকে, এ-খবর কথকের আব্বা না রাখতে পারলেও হাটে মুরগি বিক্রি করতে যাওয়ার সূত্রে বুবি ঠিকই দেখে নেয় তাকে আর্মি ক্যাম্পে।
হাট থেকে ফেরার পথে পাঁচটি কাক তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে আসতে দেখে। কথকের আব্বা ছাড়া সবাইকেই বুবি খবরটা পৌঁছে দিতে পেরেছিল। অশুভ সংকেতের প্রতীক হয়ে পাঁচটি কাক উড়ে আসে আর একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রাখে বোবা বুড়ি।
নিমের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঁচিয়ে যান ছয়টি মানুষ ও কথকের আব্বাকে। লেখকের বর্ণনা উল্লেখযোগ্য, ‘অসাড় জিব নিয়ে বুবির তিন কুড়ি বছর কেটেছে নানা কসরত করে সামান্য কটা ধ্বনি ফোটাতে। আজ সে অনেকখানিই সার্থক। আব্বা ছাড়া লিস্টির বাকি ছ’জন তো তার বোবা কথাতেই গাঁ ছেড়ে পালিয়েছে। এখন আলপথে শুয়ে বুবি মনে করতে পারে না, আব্বা না ডেরকি। কাকে সে সারাদিন খুঁজেছে আর কাকেই বা সঙ্গে করে ঘরে ফিরতে হবে। কাক নিয়ে আব্বার বাড়ি ফেরার পথজুড়ে শুয়ে থাকে। আব্বা পথ বদল করেন।… তিনি সদরে যাওয়ার ইটের রাস্তায় ওঠেন। ওখানেই ছাব্বির হোসেন আছে। গত পাঁচ বছরে কোনো প্রতিদান ছাড়াই তিনি যার মুখে এক বেলা অন্ন দিয়েছিলেন, এই দুর্দিনে সে কি তাকে বাঁচাবে না?… আব্বার সদর পর্যন্ত যাওয়া হয় না।… তার সামনে মাটি ফুঁড়ে বেরোয় এক দঙ্গল আর্মি। দু’পায়ের মাঝখানের দূরত্ব বাড়িয়ে আব্বা ক্রমে পরিণত হয় গতিবিদ্যতায়।
গুলির শব্দে সুরমা বুবি কেঁপে উঠে স্থির হয়ে যায়। আশ্চর্য অদূরে এমন বিকট আওয়াজ শুনে কাকগুলো উড়ে যায় না, কোনো শব্দও করে না। বুবির প্রাণহীন দেহ ঘিরে পাঁচটা কাক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের চোখে জল।’
মৃত্যুচিন্তা নিয়ে 888sport app download apk প্রচুর লেখা হয়েছে। গল্পও তুলনামূলকভাবে কম লেখা হয়নি। তবে মৃত্যুচিন্তা বা ভাবনায় প্রত্যেক কবি ও গল্পকার বা 888sport app লেখকের রয়েছে নিজস্ব দর্শন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গল্পে মৃত্যুর আলোকে মানবজীবনের মূল্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন, চেতনায় ধারণ করে নবজীবনের আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।
শাহীন আখতারের মৃত্যুভাবনার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় ‘বোনের সঙ্গে অমরলোকে’ গল্পের ভেতর দিয়ে। গল্পটি অস্থিবাদী চেতনার কথাও মনে করিয়ে দেয়। মৃত্যুর ভেতর দিয়েও নিজের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে চান শাহীন আখতার। অনেকে হয়তো এভাবেই নিজেকে অস্তিত্বশালী করতে চান মৃত্যুর পরও। আর মৃতুটাকেই অমরলোক হিসেবে ভাবতে ও প্রতিষ্ঠা দিতে প্রত্যাশী হোন।
তবে ভাবনার ক্ষেত্রটি তার স্বপ্নভূমি। মানুষ একাকী হলে, মানুষের জীবন নিঃসঙ্গতায় যাপিত হলে, মৃত্যুভাবনার প্রকাশ ঘটা স্বাভাবিক। তবে স্বপ্নের ভাবনা যে এলোমেলো এ-ব্যাপারে লেখক ঘোরের মধ্য থেকেই প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তবে গল্পের কথকের অমরত্বকে বোনের অমরত্বের ভাবনার সঙ্গে মেলাতে চেয়েছেন। উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি,
কি কর! কী মনে করে এলি?
আসলাম। আমি বাঁচতে চাই, আপা!
বাঁচতে চাস? ও-তো সবাই চায়।
কেউ চায় না আমি পড়াশোনা করি। আমি পড়তে চাই।
পড়তে চাইলে পড়বি। কিন্তু এতে করে কি বাঁচা যায়?
বাঁচতে পারব না?
না মানে কেউ তো জনম জনম বেঁচে থাকে না। এ আর কি।
ওহ্!
স্বপ্নে ভাবনার যে-বিস্তার তাতেও সম্ভবত একটা ঐক্য থাকে – শুরু ও শেষটার মধ্যে যদিও থাকে নানান অসংগতি। এলোমেলো অনেক ভাবনা। গল্পের শুরুটা ও শেষটার স্থানিক ঐক্য এরকম :
গল্পের শুরুতে ছোট বোনের আগমনের স্থানিক বর্ণনা :
হ্যাজাক জ্বালিয়ে রাস্তার যেখানটায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, সেই অন্ধকার ভূগর্ভ থেকে আমার ছোট বোন সাড়ে পাঁচতলায় উঠে আসে। স্ট্রিটলাইটের আলোকিত ফুটপাত ধরে কিংবা সুনসান রাস্তায় রিকশা চেপেও যদি আসত, আমি ঠিকই দেখতে পেতাম। সেই বিকেল থেকে রাস্তার ওপরের বারান্দায়ই তো আমি দাঁড়ানো।
গল্পের প্রায় শেষ অংশে ছোট বোনের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার স্থানিক বর্ণনা :
আশ্চর্য, সাড়ে পাঁচতলা থেকে নামতে আমাদের সিঁড়ি ভাঙার দরকার হলো না। এ কী করে হয়। এ স্বপ্ন না তো!…
ভোরের নরম আলোয় আমরা পাশাপাশি হাঁটছি। ও যেন আমার কৈশোরের সেই দুই-তিন বছর বয়সী ফ্রক-পরা ছোট বোনটি – আমার সঙ্গে যাবে বলে কেঁদেকেটে মা-বাবাকে রাজি করিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। এখন পার্থক্য হলো আগের মতো ও আর আমার হাত ধরে নেই। ওকে স্পর্শও করতে পারছি না আমি। যেন ও আমার ছাড়া নিঃসঙ্গ কালো মূর্তি, এক পা এগিয়েও নেই, পিছিয়েও নেই – সমান তালে পা ফেলে ফেলে চলেছে। ওর এই ছদ্মবেশের কারণ কী, কেন ও মুখোশ পরেছে, এ ছাড়া বাইরে বেরোনো ওর চলে না নাকি! এসব ভাবতে ভাবতে যেখানটায় রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে, আমরা এর সুড়ঙ্গের ধারে এসে পড়ি।
মানুষ একাকী হলেও দ্বৈতসত্তার অধিকারী হয় চেতন-অবচেতনে। কিন্তু ভেতরের বোধটাই যে একক সত্তায় পরিণতি পায় তার দর্শনকে গল্পকার তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘সামনে অনির্বচনীয় সেই গুহামুখ। পাশে বাঁশের খুঁটিতে ক্ষীণ আলোর একটি বাল্ব জ্বলছে। ও প্রথম সুড়ঙ্গের গর্ভগৃহে লাফিয়ে নামে। সঙ্গে সঙ্গে আমিও লাফ দিই। এ যে অতলস্পর্শী খাদ, আমি গড়িয়ে গড়িয়ে পাতালে নামছি। এত ভয় পেয়ে গেলাম যে ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি’ জিজ্ঞেস না করে আমি আর পারলাম না। ঠিক তখন বহুদূর থেকে আমার বোনোর কণ্ঠ নিঃসৃত নয়, যেন আমারই গলা চিরে বেরিয়ে দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে, মশারির ভেতর ধ্বনিত হয় – অমরলোকে।’
তাঁর গল্পে 888sport live chatরসের রয়েছে নানা প্রবণতা। ফোকলোর প্রবণতা অন্যতম। ‘হাতপাখা’ তাঁর ফোকলোরকে ধারণ করে রচিত গল্প। মৈমনসিং গীতিকার ঐতিহ্যে গড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা ফোকলোরের দিক থেকে নানাভাবে সমৃদ্ধ। সহজ পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে বাতাসপ্রাপ্তির জন্যে লোকপ্রযুক্তির অন্যতম উপাদান ‘হাতপাখা’। আর এ ‘হাতপাখা’য় নেত্রকোনা অঞ্চলে শুধু নকশি যুক্ত হয়নি, যুক্ত হয়েছে লোকঐতিহ্যসমৃদ্ধ বচন, বাণী, 888sport app download apkর পঙ্ক্তি। গল্পের কথকের ফুপা চাকরিসূত্রে নেত্রকোনায় ছিলেন। কিন্তু ১৯৪৫ সালে তার আকস্মিক মৃত্যু হলে কথকের বাবা ১৬ বছর বয়সে নেত্রকোনায় গিয়েছিলেন। নেত্রকোনা থেকে নদীপথে কুমিল্লায় লাশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আট-দশ ঘণ্টা লাগার কারণে ইসলামিয়া লাইব্রেরির মালিক কর্মকর্তার সহায়তায় নেত্রকোনায় কবরস্থ করা হয়েছিল। নেত্রকোনা থেকে আসার পথে 888sport sign up bonusস্বরূপ তাঁর বাবা সঙ্গে এনেছিলেন ফুপার একটি হাতপাখা। হাতপাখায় রঙিন সুতায় লেখা ছিল, ‘সাক্ষী হইও হিজল গাছ নদীর কূলে বাসা/ তোমার কাছে কইয়া গেলাম মনের যত আশা।’
নেত্রকোনা যে লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান এবং ঐতিহ্যের কাছেই গল্পের কথকের যাওয়া এবং অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসা তা অভিজ্ঞতার আলোকে উঠে এসেছে। প্রসঙ্গক্রমে কবি নির্মলেন্দু গুণ, গোলাম এরশাদুর রহমান, 888sport live chatী আনোর, মাওলা, মাওলার ভক্ত মহিলা-যে-কাপড়ের বুকে বতিবার নকশা ফুটায় তাদের উল্লেখ গল্পটাকে আরও অর্থবহ করেছে। একজন বেশ্যা খুন হওয়ার পর তার লাশ কবর দেওয়া পর্যন্ত ঘটে যায় কিছু অমানবিক ঘটনা – সঙ্গে সঙ্গে মানবিক ঘটনা। এসব ঘটনা নিয়েই গল্প ‘মেকআপ বাক্স’।
মালা নামের একজন বেশ্যা খুন হওয়ার পর তার বোন গার্মেন্টস শ্রমিক মল্লিকা হাসপাতালের লাশকাটা ঘর থেকে ডোমকে রাজি করিয়ে লাশ সংগ্রহ করে কবর দেওয়ার জন্যে। কিন্তু মল্লিকাও জানে বেশ্যার লাশ কবর হয় না, নদীতে ভাসিয়ে দিতে হয়। তার আকাক্সক্ষা সহোদরাকে সে কবরস্থ করবে। তাই রাতেই লাশ নিয়ে শহরের কয়েকটি কবরস্থানে ছুটে যায়। লেখকের বর্ণনা উল্লেখ করা হলো, ‘সেই রাতের প্রথম প্রহরে বৃষ্টি নামে, দ্বিতীয় প্রহরে আকাশে চাঁদ ওঠে, শেষ প্রহরে গুড়গুড়িয়ে মেঘ ডাকে। অথচ প্রহরে প্রহরে মেঘ-বৃষ্টি-জ্যোৎস্নার বিচিত্র খেলায়, প্রতিটি কবরস্থান থেকে মল্লিকা ওই একই জবাব পায়।… লাশটা যে একজন বেশ্যার।… দূর থেকে দেখে ফটকের সামনে বিশাল গণজমায়েত। লোকগুলোর মাথায় টুপি আর হাতে বিস্তর লাঠিসোঁটা। তারা মাথা ফাটাফাটি করবে, জেলে কয়েদ খাটবে, মল্লিকা এই প্রথম দিনের আলোয় পরিষ্কার বুঝতে পারে – তবু সাড়ে তিন হাত মাটি তারা ছাড়বে না মরা বেশ্যা মেয়েটির জন্য।’
অবশেষে সে কাউকে না জানিয়ে একটি নদীর কিনারে মালাকে কবর দিয়ে ওই নদীতীরের পরিত্যক্ত কুঁড়েঘরে থেকে যায়, মালার কবর পাহারা দেওয়ার জন্য। সে তখন ভুলে যায় তার কর্মব্যস্ততাও।
বিচিত্রধর্মী ও ‘পরস্পর বিচ্ছিন্ন’ মানুষের দেখা মেলে শাহীন আখতারের গল্পগুলোতে। ফলে ঐতিহ্যের সঙ্গে উত্তরাধিকারের সমন্বয় সাধন করে গল্প রচিত হলেও সময়ের সঙ্গে জীবন বাস্তবতার যে অসংগতি তাকে নতুনভাবে 888sport live chatমণ্ডিত করেছেন তিনি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.