সরদার ফজলুল করিম : আমি মানুষ

একালের এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ছিলেন সরদার ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪)। তিনি তাঁর আমি মানুষ বইটির ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আমি কি মানুষ?’ যখন এ-প্রশ্নের আমি কোনো জবাব দিতে পারছিলাম না, সেই লা-জবাবের কারণে, নিজেই হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম, তখন আমার এক স্নেহাস্পদ কয়েকটি শিরোনামের মুদ্রণ আমার চোখের সামনে রেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই শিরোনামগুলোকে আপনি কি স্বীকার করেন না?’ আমি শিরোনাম কয়টির দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় স্নেহাস্পদকে বলেছিলাম : ‘তুমি আমাকে জীবন ফিরিয়ে দিলে। তোমাকে এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার জীবন দিয়ে।’ আমাদের কালের সক্রেটিস সরদার ফজলুল করিম এভাবেই জীবনের অর্থ খুঁজে পান। তিনি মনে করেন, মানবিক মূল্যবোধ এবং মানবচৈতন্যের পরিশীলিত ব্যবহারই মানুষকে মানুষ করে তোলে। স্বাধীন সাম্যচিন্তা ও মানবমুক্তির সুমহান দর্শন তাঁকে সারা জীবন প্রলুব্ধ করেছে। সে-কারণে 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও পরে বিভাগ পরিবর্তন করে স্থিত হয়েছিলেন দর্শন বিভাগের ছাত্র হিসেবে। কর্মজীবনের শুরুতেই অধ্যাপনায় যোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু অচিরেই তাঁর মনে হতে থাকে; এমনি আয়েশের চাকরি করা তো তাঁর জীবনের লক্ষ্য নয়। তাই পার্টির সিদ্ধান্ত মেনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনিও আত্মগোপনে চলে গেলেন। কিন্তু বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারেননি। ধরা পড়ে ঢুকে পড়লেন লাল দালানে। একটানা প্রায় আট বছর জেলজীবন, জেলে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জেল থেকে বের হয়ে এসে বিয়ে করেন, এক কন্যাসন্তানের পিতাও হন। কিন্তু না, স্বস্তির জীবন তাঁর নয়। আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর আবার শুরু হয় তাঁর জেলজীবন। দু-বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে তিনি বাংলা একাডেমিতে 888sport app download apk latest version বিভাগে যোগ দেন এবং শুরু করেন লেখালেখি। তারপর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে আটক করে। মৃত্যুর দ্বার থেকে মুক্তি পান দেশ হানাদারমুক্ত হলে। তারপর আবার বাংলা একাডেমির চাকরিতে যোগ দেন এবং পরে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। কিন্তু এবার আর দর্শন বিভাগে নয়, রাষ্ট্র888sport apk বিভাগে।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপরও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন। পাশাপাশি লেখালেখি করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি জীবনের প্রায় প্রান্তসীমায় পৌঁছে গিয়েছেন। কিন্তু মনের সজীবতা হারাননি। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯২৫ সালের ১লা মে – মহান মে দিবসে।

সরদার ফজলুল করিমের পিতার নাম খবিরউদ্দিন সরদার। মায়ের নাম ছফুরা বেগম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলার আটিপাড়া গ্রামে। গ্রামের স্কুলেই তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়। তারপর ভর্তি হন বরিশাল জিলা স্কুলে। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪০ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। সে-বছরই ভর্তি হন 888sport app ইন্টারমেডিয়েট কলেজে এবং ১৯৪২ সালে সেখান থেকে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আইএ পাশ করেন। 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথমে ভর্তি হন ইংরেজিতে অনার্স পড়ার জন্য। কিন্তু মনের সুপ্ত বাসনা ছিল দর্শন পড়ার। তাই বিভাগ পরিবর্তন করে দর্শন বিভাগেই নাম লেখালেন। ১৯৪৫ সালে তিনি বিএ (সম্মান) ও ১৯৪৬ সালে এমএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। এবার কর্মজীবনের শুরুতেই অধ্যাপনা জীবনের শুরু 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। একই সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির কাজ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টির ওপর মুসলিম লীগ সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইতোমধ্যে ১৯৪৮ সালে তিনি একটি সরকারি বৃত্তি পেয়ে বিলেত যাওয়ার সুযোগ পান। সে-কথা পার্টির নেতা কমরেড মুজাফ্ফর আহমদকে (১৮৮৯-১৯৭৩) বলেন। কিন্তু অনুমতি না মেলায় বিলেত যাওয়ার ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন। পার্টির নির্দেশে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পদেও ইস্তফা দেন এবং একসময়ে পার্টির 888sport app নেতাকর্মীর মতো আত্মগোপনে চলে যান। কিছুকাল পর তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং একটানা প্রায় আট বছর জেলে থাকেন। জেলে থাকাকালে তিনি পাকিস্তান কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম রাজিয়া সুলতানা। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং জেলে যান। ইতোমধ্যে তাঁদের প্রথম কন্যা স্বাতীর জন্ম হয়েছিল। প্রায় তিন বছর জেলে আটক থাকার পর তিনি বেরিয়ে আসেন। ১৯৬৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে 888sport app download apk latest version বিভাগে এবং পরে অধ্যক্ষ পদে সংস্কৃতি বিভাগে যোগ দেন। গবেষণার পাশাপাশি তিনি তখন থেকে লেখালেখিও শুরু করেন। বিশেষ করে 888sport app download apk latest versionের কাজ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হন এবং ছাড়া পান বিজয় দিবসের পর। ১৯৭২ সালে তিনি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের (১৯১৩-২০০০) অনুপ্রেরণায় 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে রাষ্ট্র888sport apk বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন এবং ১৯৮৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তারপরেও কোনো না কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে মাঝে মাঝে কাজ করেছেন। পারিবারিক জীবনে তাঁর এক কন্যা ও দুই ছেলে। সবাই প্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ স্থানে।

সরদার ফজলুল করিম প্রথম কোন বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি যখন 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন কিছুকালের জন্য ড. কাজী মোতাহার হোসেনের (১৮৯৭-১৯৮১) বাসায় থাকতেন। সে-সময় তাঁর এক ছেলে সুলতান পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। তাকে 888sport app download for android করে সরদার ফজলুল করিম একটি 888sport app download apk লিখেছিলেন। ধারণা করা হয় (কাজী মোতাহার হোসেন) এটিই তাঁর লেখা প্রথম 888sport app download apk। ড. সন্জীদা খাতুন এ-888sport app download apkটির কথা তাঁর 888sport sign up bonusকথায় উল্লেখ করেছেন।

ওরে ভাই সুলতান

কাঁদায়ে মোদের প্রাণ

কোন পথে কার কাছে গেলি?

সেদিন ও সকাল বেলা

একত্রে করিনু খেলা

লুকোচুরি কত ঠেলাঠেলি।

মাস্টার ভাইয়ে ঘিরে

সকালে সন্ধ্যায় ফিরে

আর না করিবি কোলাহল?

নূরু ও নবার সাথে

স্কুলে যাওয়া রিকশাতে

ফুরায়ে গিয়াছে নাকি বল?

(অতীত দিনের 888sport sign up bonus, পৃ ২৩)

পরিণত বয়সে তিনি কবি লুক্রেটিয়াসের 888sport app download apkর বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। তার খানিকটা এখানে তুলে ধরা হলো :

সে আমাদের দৃষ্টি দিল

সে আমাদের জ্ঞান দিল

অস্তিত্বের রহস্যের।

আমরা জানলাম বস্তুর প্রকৃতি কি,

তার নীতি কি,

তার অস্তিত্বের সীমা কি।

(সেই সব দার্শনিক, পৃ ৩০-৩১)

বাংলা একাডেমিতে চাকরি করার সময় তিনি 888sport app download apk latest version-888sport live footballের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর প্রকাশিত 888sport app download apk latest versionগ্রন্থের মধ্যে প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, এরিস্টটলের পলিটিক্স ও অ্যাঙ্গেল্সের অ্যান্টিডুরিং উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া তিনি রচনা করেছিলেন দর্শনকোষ, ইতিহাস কোষ, নানা কথা, নানা কথার পরের কথা, রুমীর আম্মা, নূহের কিশতি, 888sport app বিশ^বিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ (২০০০), চল্লিশের দশকের 888sport app (১৯৯৪), গল্পের গল্প, যুক্তিবিদ্যা, সেই সে কাল : কিছু 888sport sign up bonus কিছু কথা (২০০১), আমাদের 888sport live football, আমি মানুষ (২০১০), সেই সব দার্শনিক (২০১০), শ্রেষ্ঠ 888sport live (২০১২) প্রভৃতি। ইতোমধ্যে তাঁকে নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তার মধ্যে শান্তনু মজুমদারের লেখা জীবন জয়ী হবে, রতনতনু ঘোষের সরদারের সংলাপ, মশিউল আলমের লেখা বাবা এবং মোহাম্মদ আলীর সরদার ফজলুল করিম : জীবন জিজ্ঞাসা। তাঁকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের আগ্রহও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। সারা জীবন তিনি সাধনায় আত্মনিবেদিত।

সরদার ফজলুল করিম বহু সভা ও সেমিনারে যোগদান করেছেন এবং মূল্যবান ভাষণ দিয়েছেন। সেগুলো বহুল প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর মেধা ও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বহু সংস্থা ও সংগঠন তাঁকে বহু সম্মাননা, 888sport app download bd ও পদক দ্বারা সম্মানিত করেছে। তার মধ্যে বাংলা একাডেমি 888sport app download bd (১৯৬৭), স্বাধীনতা 888sport app download bd (২০০০) এবং জাতীয় অধ্যাপক (২০১১) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া দৈনিক জনকণ্ঠ, 888sport appsের কমিউনিস্ট পার্টি, 888sport apps যুব ইউনিয়ন, 888sport apps উদীচী 888sport live chatী গোষ্ঠী, ঋষিজ 888sport live chatী গোষ্ঠীসহ বহু সংগঠন ও সংস্থা তাঁকে সম্মাননা ও পদক দ্বারা সম্মানিত করেছে। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো।

চল্লিশের দশকে 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি প্রগতি লেখক সংঘে যোগদান করেছিলেন। তিনি হল ইউনিয়ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বও দিয়েছেন। সে-সময় কার্জন হলে মঞ্চায়িত বিন্দুর ছেলে নাটকে অভিনয় করেছিলেন, যা ড. সন্জীদা খাতুনের 888sport sign up bonusচারণ থেকে জানা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘… কিন্তু আমাদের সরদার ভাই (সরদার ফজলুল করিম) যে শাড়ি পরে ঘোমটা দিয়ে মন্দাকিনী সেজেছিলেন সে নিয়ে আমি আর সেজদি হেসে মরেছিলাম।’ (প্রথম আলো ঈদ 888sport free bet ২০১২, পৃ ১২৭)। উল্লেখ্য, সেকালে ছেলেরাই মেয়েদের চরিত্রে অভিনয় করতেন। পরবর্তীকালে অবশ্য মেয়েরাও অভিনয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন।

সরদার ফজলুল করিমের লেখালেখি ও আলাপ-আলোচনায় তাঁর নিজের জীবনের দর্শন সম্পর্কে জানা যায়। তিনি বলেছেন, জীবনকে যে যেমন মনে করে, সেটাই তাঁর জীবনদর্শন। স্কুলজীবনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী 888sport alternative linkটি পাঠ করেই তিনি স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে মার্কসবাদ তাঁর জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন করেছিল। তিনি স্বেচ্ছায় আত্মনিয়োজিত হয়েছিলেন মানবমুক্তির মহান সংগ্রামে। সে-স্বপ্ন আজো পূরণ হয়নি। তবু তাঁর মনে স্থায়ী কোনো নিরাশা বাসা বাঁধতে পারেনি। তিনি জোর গলায় বলেন, আমরা বিপ্লবের মধ্যেই আছি … কেউ কমিউনিস্ট না থাকলেও আমি একাই কমিউনিস্ট থেকে যাব … ইত্যাদি। তাঁর মতে, সাম্যবাদের মূল কথা হলো মানুষকে মানুষ হতে হবে। মানুষের মধ্যকার অসমতা ও শ্রেণিবৈষম্য দূর করতে হবে। তবে আদর্শমূলক সমাজব্যবস্থায় যাঁরা নেতৃত্ব দেন তাঁরা আদর্শবান না হলে সে-আদর্শ ব্যবস্থা টেকে না। এ প্রাজ্ঞ মানুষটি আজীবন প্রগতির পতাকা-হাতে গণমানুষের লড়াই-সংগ্রামে একাত্ম থেকেছেন। নিজের পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘আমি মানুষ’। নিজের ব্যবহৃত লাঠিখানা ছাড়া চলাফেরায় কারো সাহায্য নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ভালোবাসতেন গল্প করতে, আড্ডা দিতে। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে, আজিজ মার্কেটের বাবুল রেডিওতে বা অন্য কোনোখানে। বই পড়তে ভালোবাসতেন। ভালো লাগা অংশ বারবার পড়তেন। ঠিক শিশুদের মতো।