সার্ক ও সমকালীন ভাবনা

আবদুল মতিন
South Asian Hope : SAARC/ will it survive
Abu Yousuf Md. Abdullah
Life and Hope Foundation, Dhaka, 2012
450 Taka

প্রফেসর আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত আছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বাণিজ্যতত্ত্ব এবং আঞ্চলিক সমন্বয় তাঁর আগ্রহের বিষয়। এ-আগ্রহ থেকেই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) বিষয়ে তাঁর গবেষণাকর্মের ফলাফল তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সাউথ এশিয়ান হোপ, সার্ক : উইল ইট সার্ভাইভ গ্রন্থে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যতত্ত্বের আলোকে সার্কের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আলোচনা করে সার্কভুক্ত দেশসমূহের অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সমন্বয়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তিনি এ-গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্মিলনগুলো যে ধারণা বা দর্শনের ওপর গড়ে উঠেছে তা এসেছে বিভিন্ন ‘বাণিজ্যতত্ত্ব’ বা ট্রেড থিওরি থেকে। ট্রেড থিওরিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সম্পদগুলোর মধ্যে কোনো সুষম বণ্টন নেই বরং তা একেক অঞ্চলে একেক পরিমাণের প্রাচুর্য রয়েছে। প্রত্যেক অঞ্চলকে তার আয়ত্তে থাকা সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে নিজ-নিজ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে হয়।
‘সার্ক’ নিয়ে বই রচনার বিষয়টি নতুন নয়; কিন্তু প্রফেসর আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিকোণ থেকে সার্কের মূল্যায়ন করেছেন। এখানে তিনি প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য-অঞ্চল সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণার অবতারণা করেছেন এবং একটি বাণিজ্য-অঞ্চল হিসেবে সার্কের সম্ভাবনাগুলো নতুনভাবে খুঁজে বের করেছেন। সার্ক অথবা সাফটার সম্ভাবনা এবং উন্নয়ন কীভাবে ভারতের ইতিবাচক ও মুখ্য ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল তার একটি বিশদ ব্যাখ্যা যেমনভাবে তিনি এ-বইটিতে তুলে ধরেছেন, তেমনি এর ধারাবাহিকতায় সার্কের সমস্যাগুলো এখানে অবলীলায় উঠে এসেছে। সার্কের অন্যতম এর একটি বাধা হচ্ছে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ অতিমাত্রার রাজনৈতিক চরিত্র। লেখকের মতে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস সার্কের মূল উদ্দেশ্য তথা সর্বজনীন স্বার্থকে সর্বদাই প্রভাবাচ্ছন্ন করেছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস সার্কের মূল উদ্দেশ্য তথা সর্বজনীন স্বার্থকে সর্বদাই প্রভাবাচ্ছন্ন করেছে।
লেখক উল্লেখ করেছেন, ‘এই কারণটি নাও হতে পারে যে, ভারত সার্কের বিষয়ে একটি অনীহামূলক মনোভাব নিয়ে আছে, যা বাণিজ্য-অঞ্চল হিসেবে সার্কের প্রায় সমস্ত সম্ভাবনাকে খর্ব করেছে।’ একই সঙ্গে আট জাতির এই অঞ্চলে বাণিজ্য ব্লক গড়ে না ওঠা এবং প্রসারিত না হওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করা যায়। এ-কারণে প্রফেসর ড. এ. ওয়াই. এম. আবদুল্লাহ তাঁর এ-আলোচনায় এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। ভারত এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে সার্কভুক্ত চারটি দেশের সরাসরি সীমান্ত সংযোগ রয়েছে এবং খুব কাছেই আরো দুটি দ্বীপদেশ মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য-বাধাসমূহ দূর করার বিষয়টি ভারতের একক মনোভাবের ওপরই নির্ভর করছে। প্রফেসর আবদুল্লাহ বিস্তৃত বর্ণনা করে দেখিয়েছেন, 888sport appsের মতো এ-অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নতির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে জ্বালানি শক্তির অপ্রতুলতা। তাই তিনি এই অঞ্চলে জ্বালানি-বাণিজ্যের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ভারত নমনীয় হলেই পাহাড়সমৃদ্ধ দেশ নেপাল, ভুটান এবং ভারত থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা নিয়ে 888sport apps অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হতে পারত। ভারত 888sport appsের উন্নয়ন চায় কি-না আজ এ-প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে ভারতের অসহযোগিতার কারণে। তবে লেখক এ-কথা বিশ্বাস করেন না যে, সামগ্রিক দায়দায়িত্ব এককভাবে ভারতের।
বইটিতে তিনি লিখেছেন, ভারত ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ এবং 888sport apkভিত্তিক 888sport live chatপ্রতিষ্ঠায় বিশ্বের দরবারে স্বীকৃত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের এই সমৃদ্ধির কর্মকৌশল যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপানের সঙ্গে একধরনের পারস্পরিক-সংযোগ স্থাপন করেছে। এছাড়া ঐতিহ্যগত বিদ্যমান সম্পর্কের কারণে ভারত-রাশিয়ার বন্ধন এখনও অটুট আছে। আবার রশিয়া এককভাবে সার্কের উন্নয়নে পরিপূরক হিসেবেও কাজ করতে পারে। লেখক মনে করেন, সার্ক কার্যকর হলে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক সুবিধাদি সমঝোতার সঙ্গে ভোগ করতে পারবে।
888sport appsের মধ্যে দিয়ে ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারত তার অবহেলিত সেভেন সিস্টার্সকে মূল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে সমর্থ হবে কিন্তু 888sport apps এখান থেকে তেমন কোনো কিছুু পাবে না।  এ-বিষয়টিকে সামনে নিয়ে তিনি বলেন, যদি 888sport appsের ভেতর দিয়ে ‘ট্রানজিট’ না হয় তাহলে ভারতকে নিজস্বভাবে উৎপাদিত পণ্য সেভেন সিস্টার্সে সরবরাহ করতে হলে পরিবহন খরচ হিসেবে উৎপাদিত পণ্যে উচ্চমূল্য যোগ করতে হবে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে 888sport appsসহ 888sport app দেশ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তাদের পণ্য সেভেন সিস্টার্সের জন্য উৎপাদন ও বিপণনে উৎসাহিত হবে। আর এটি হবে সার্কভুক্ত 888sport app সদস্যদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এবং ভারতের জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে ভারতকে একসঙ্গে নিজের অবহেলিত অঞ্চলের সুবিধা এবং 888sport app দেশের সুবিধাও চিন্তা করতে হবে। তা না হলে আঞ্চলিক সমন্বয় বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রফেসর আবদুল্লাহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ভিন্ন ধরনের ও স্থায়ী রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর উল্লেখ করে বইটিতে দেখিয়েছেন, সার্ক দেশগুলোতে প্রায় একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ‘বাণিজ্য অঞ্চল’ গঠনে তেমন অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না। এই দেশগুলোর জটিল আইনি পদ্ধতিও এক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এবং বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে এর চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। একটি বড় দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর।  অন্যদিকে ভারতের অবস্থান এর ঠিক বিপরীত এবং সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য ভারতকে নিজের স্বার্থেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা প্রয়োজন।
চীন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারকারী দেশ হওয়ায় লেখক মনে করেন, ভারত যদি অব্যাহতভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে অবহেলা করতেই থাকে, তাহলে চীন ভারতকে বাদ দিয়ে সার্কের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে আসবে। আর কৌশলগত কারণেই চীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং উৎপাদনগত বিষয়ে ভারতের অপ্রতিরোধ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। যদি চীন সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার করে তাহলে একদিকে এই অঞ্চলে চীনের একটি শক্তিশালী প্রভাববলয় তৈরি হবে, অন্যদিকে 888sport appsের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ভারতকে বাদ দিয়ে চীনের দিকে ঝুঁকবে। ফলে এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব খর্ব হবে এবং এক পর্যায়ে কেউ তা সহ্য করবে না। এতে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরিশেষে, আমরা বইটিতে দেখতে পাই, বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে লেখক কার্যকর সার্ক গড়ে তুলতে ভারতের উদার মনোভাবের প্রয়োজনীয়তাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, পাশাপাশি তিনি মনে করেন, এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের পক্ষ থেকে সার্ককে বাদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ সার্কের উন্নয়নে এগিয়ে না এলে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাববলয় অতিদ্রুততার সঙ্গে তৈরি হবে, যা ভারতের জন্য সুখকর হবে না; অন্যদিকে ভারতে অনুন্নত অঞ্চলকে উন্নত করে মূল অর্থনীতির সঙ্গে একসুতোয় বেঁধে দিতে সার্ক একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। লেখক বিশ্বাস করেন, সার্ক হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি আর এর ওপরই নির্ভর করছে দক্ষিণ এশিয়ার ভাগ্যহত মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের একটি বড় উপায়।