সার্থক গল্পকার আলাউদ্দিন আল আজাদ

আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ

 

বাংলা888sport live football ভুবনে আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বলতেই হয়। তিনি কালের-মহাকালের কবি, চেতনার বর্ণনাকারী 888sport live chatী, রূপামত্মরশীল অনন্য প্রতিভা সন্দেহ নেই। দেশবরেণ্য কবি আজাদ নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে এক অভিজাত, বনেদি ও সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম নিলেও শৈশবটা তেমন সুখকর ছিল না। গ্রাম্যজীবনে কৃষিভিত্তিক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গী ছিল এবং সেইসঙ্গে মানসিক অসহায়ত্ব। মাত্র দেড় বছর বয়সে তাঁর মা মোসা. আমেনা খাতুন এবং দশ বছর বয়সে বাবা গাজী আবদুস সোবহান মারাযান। তখন থেকেই অভিভাবকহীন তাঁর জীবনজগৎ। তিনি ছিলেন বামপন্থী চিমত্মাচেতনার প্রগতিশীল মানুষ, পথে-প্রামত্মরে ও 888sport live chat-মননে মার্কসীয় ভাবধারা সমুন্নত রাখার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রথম শিক্ষাজীবন রামনগর জুনিয়র মাদ্রাসায়, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (অনার্স) মাস্টার্সে (বাংলা ভাষা ও 888sport live football) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। আগাগোড়া রম্নশ 888sport live footballের ভক্ত ছিলেন, তলসত্ময় ও গোর্কির অনুরাগী। ছাত্রজীবনেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্র-যুব আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনে তাঁর সুনির্দিষ্ট ভূমিকা  অনস্বীকার্য।

888sport appsের 888sport live footballের ইতিকথা এবং আবহমান বাংলা 888sport live footballের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ ঝোঁক। তাই দেখা যায় 888sport apps টেলিভিশনে আশির দশকের দিকে ‘হিরামন’ নামে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান করতেন, সেখানে 888sport appsের লোকজ-দেশজ, বিশেষ করে ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনি অবলম্বনে নাট্যরূপ দেওয়া হতো, আলাউদ্দিন আল আজাদ সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করতেন, তাঁর উপস্থাপনা অনবদ্য ছিল। কিশোর বয়সে সেই ধারাবাহিক নাটকগুলো আমাকে অনেকখানি অনুপ্রাণিত করত। তাঁর শব্দচয়ন-বাকভঙ্গিতে বিশেষ মাত্রা ছিল, ঠিক সেভাবেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য এবং ঐশ্বর্য বাংলা 888sport app download apkভুবনে নিঃসন্দেহে এক অনন্য সংযোজন। স্বদেশপ্রেম-সমাজসচেতনতা এবং সংগ্রামী চেতনা তাঁর কাব্যচর্চার প্রধান কেন্দ্রভূমি হয়েছিল। উলেস্নখযোগ্য গল্পগ্রন্থ – জেগে আছি (১৯৫০), ধানকন্যা (১৯৫১), জীবনজমিন (১৯৮৮) প্রভৃতি। 888sport alternative link – তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (১৯৬০), কর্ণফুলী (১৯৬২), ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪), জ্যোৎস্নার অজানা জীবন (১৯৮৬), পুরানো পল্টন (১৯৯২), কায়াহীন-ছায়াহীন (১৯৯৯) প্রভৃতি। কাব্যগ্রন্থ – মানচিত্র (১৯৬১), লেলিহান পা-ুলিপি (১৯৭৫), সূর্য-জ্বালার সোপান (১৯৬৫), নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ (১৯৮৩), সাজঘর (১৯৯০) প্রভৃতি আজাদের শ্রেষ্ঠ 888sport live footballসম্ভার। তাঁর ছোটগল্প নিয়ে আলোচনা করতে, তাঁর 888sport live footballের ভূগোল জানাটা আবশ্যক, এখানে সম্যক ধারণা দেওয়া হলো। শক্তিশালী 888sport live footballিক তিনি, কবি হিসেবে যেমন আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র, আবার 888sport alternative linkে-ছোটগল্পে বা 888sport liveেও জুড়ি মেলা ভার। পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকেই তাঁর স্ফুরণ চোখে পড়ে, গল্পে যেমন নিজেকে উজাড় করেছেন, তেমনি 888sport live footballের সমসত্ম শাখায় পদচারণ চোখে পড়ার মতো। তাঁর সমসাময়িক কবি-888sport live footballিকদের মধ্যে তিনি একমাত্র ব্যতিক্রম যে সব শাখায় বিচরণ করে সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরেছেন। আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন, ‘আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রথম গল্পকার, যিনি অতি অল্প বয়সে খ্যাতি অর্জন করেন’, সমাজতন্ত্র ও শ্রেণিচেতনা তাঁর গল্পের প্রধান বিষয়, গ্রামীণ জীবন-সমাজ সেইসঙ্গে তাঁর পারিপার্শিবক পরিবেশের যে পরিচয় তাঁর 888sport live footballে পাওয়া যায়, বিশেষ করে ধর্মান্ধতা কতটা ভেতরে শেকড় বিস্তার করে আমাদের সমাজজীবনকে অতিষ্ঠ করেছে এবং সেখান থেকে বের হওয়ার যে কোনো রাস্তা অবশিষ্ট নেই, সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশের গল্প তুলে ধরেছেন, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানিয়েছেন, পাশাপাশি ধনী-গরিবের আকাশসমান যে বৈষম্য, সেখান থেকে আর কোনো নিস্তার নেই, যদি না সমাজতন্ত্র আসে। করম্নণা নয়, ভিক্ষা নয়, ফিতরা-জাকাত নয়, চাই ফসলের ন্যায্য অধিকার, চাই বিপস্নব, সম্পদের সুষম বণ্টন, তখনই হবে বন্ধুত্ব-ভ্রাতৃত্ব, সমাজে ফিরে আসবে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি। কেউ কারো চেয়ে ছোট নয়, বড় নয়, মানুষ হবে মানুষের মতো, মানুষ পাবে বাঁচার অধিকার, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতা, বদলে যাওয়া সেই সমাজে সব কুসংস্কার-ধর্মান্ধতা বিলীন হবে, মানুষ বাঁচবে মানুষের ভালোবাসায়, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে গাইবে সাম্যের গান, মানবতার সেস্নাগান। মার্কসীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ আজাদ বলেছেন, আর সে-জন্য চাই সমাজতন্ত্র। এবং এখানেই তাঁর সঙ্গে আমার অদ্ভুত মিল, আজাদের গল্পগুলো আমাকে প্রবলভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, মানুষকে দেখার যে চক্ষু এবং তাকে বিশেস্নষণ করার যে অভিপ্রায়, তাঁর গল্পে ঘুরেফিরে সেই চেতনা উপলব্ধি করি, তাঁর গল্প মানবতার মিছিলে যোগ হয়ে যায়। যেমন ‘মাঝি’ নামক গল্পের একটু পরিচয় তুলে ধরা যাক –

‘ঘুটঘুটে অন্ধকারে তিনটে লোক এলো ভূঁইয়াবাড়ির সামনে, একটু দাঁড়ালো এরপর আরেকটু এগিয়ে এলো, বাংলাঘরের বারান্দায় কি একটা ভারী বস্ত্ত কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখে বর্ষণের মধ্যে আবার অন্ধকারেই মিলিয়ে গেলো।’ ‘মাঝি’ গল্পে এভাবেই পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে, নৌকার মাঝি জহর আলীকে তার ন্যায্য পারানির পয়সা দেয়নি ভূঁইয়া, আড়তের গদিতে চাইতে গিয়েছিল। মানুষের সামনে চাওয়ার কারণে ইজ্জত চলে যায় এবং সে কারণে জুতো খুলে ঘাড়ে-গর্দানে বেশ কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় ভূঁইয়া, তা বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা; কিন্তু সে শোধ তুলেছিল তিন বাপ-ব্যাটায়, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে মাঝরাতে যখন নৌকায় চড়ে বাড়ি ফিরছিল, সেই পুরনো দগদগে ঘায়ের 888sport sign up bonus 888sport app download for androidে আসে। নিম্নবিত্ত মানুষেরা কখনো-কখনো যখন প্রচ- ঝাঁকুনি বা আঘাত করে বসে তখন কিন্তু সামলানো কঠিন, কাউকে ছোট-বড় জ্ঞান করা সমীচীন নয়, এভাবেই মানুষ প্রতিবাদ করে, প্রতিবাদী মানুষের চেহারা তখন ভয়াবহতার রূপ পায়, কারণ সে কোনোভাবে বাঁচার জন্য জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ, তার কাছে ইজ্জত-সম্মান যেমন, ঠিক তেমনি পয়সাটাও কোনো অংশে কম নয়, যার যেমন অধিকার এবং যার-যার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়াটাই রীতি, কিন্তু কেউ যদি কারোটা মেরে খায় তার তো পরিণাম ভালো হওয়ার নয়, এভাবেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। মনে রাখতে হবে, জোতদারের দশদিন আর গেরসেত্মর একদিনে অন্ধকারেই খতম। আবার পরবর্তী গল্পটা দেখুন, মানুষ সম্পর্কে মানুষের কী বিচার।

‘িআঁতুড়ঘর’ গল্পে মানুষের ভেতরের মানুষকে দেখার যে আকাঙক্ষা তা বেশ ফুটে উঠেছে, আমাদের সমাজের কতিপয় মানুষ আছে, জানি না তারা আবার কতটা মানুষের মর্যাদা পাবে, তারা মানুষের চেয়েও কুকুরকে বেশি মর্যাদা দেয়, হয়তো তারা কুকুরের বংশভূত, কিন্তু মানুষ যে আশরাফুল মাখলুকাত। গল্পে দেখা যায়  পথভিখারি অন্ধ সলিমদ্দি এবং তার সাত-আট বছরের ছেলে হাসু ঝড়বৃষ্টির মধ্যে সমত্মানসম্ভবা বউ রহমজানকে নিরাপদ একটা স্থানে নিয়ে আসে, এবং পরক্ষণে সমত্মান প্রসব করে, কুকুরের থাকার জায়গাটাকে নিরাপদ স্থান ভেবে বাছাই করলেও প্রকৃতপক্ষে তা নিরাপদ নয়। বিপত্তি বাধে যখন ছেলের সংবাদ শুনে সলিমদ্দি আজান দেয়, বাড়ির সব কাজের লোক-দারোয়ান-ড্রাইভার থেকে সাহেব পর্যমত্ম ছুটে আসে, কিন্তু সাহেব ভালোভাবে নেয়নি, চাকরদের হুকুম করেন, আগামীকাল সকালে আপদগুলোকে বাইরে রাস্তায় সরিয়ে দিতে, ‘যত্তোসব রাবিশ, শুয়োরের বাচ্চারা বিয়োবার আর জায়গা পায় না…’ মানুষ যে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা এ-গল্পে দেখতে পাওয়া যায়। সলিমদ্দি-রহমজানরা আজ রাস্তায় পড়ে থেকে ভিক্ষা করে খায়, কিন্তু তাদেরও একটা সুন্দর জীবন ছিল, মাটি দিয়ে নিকোনো আর ছন দিয়ে ছাওয়া দুটো ছোটঘর, দুই কানি জমি, একটা তাঁত ও হাঁস-মুরগি নিয়ে নিরিবিলি সংসার, খালপাড়ের জমির

আল নিয়ে দেওয়ান বাড়ির সঙ্গে কাইজা বেঁধে যায়, একজনের মাথা ফাটে, ফৌজদারি মামলায় ফতুর হয় বাপ, তারপর মামলা চালাতে বেচতে-বেচতে জীবন শেষ, আজ সবই 888sport sign up bonus, রাস্তা-ফুটপাত আর পরের বাড়ি বা দোকানের সামনের খালি জায়গাটুকুই হলো তাদের আশ্রয়, জীবনের পরিসমাপ্তি এখানেই, কিন্তু মানুষের মানবতাবোধ নষ্ট হয়ে গেছে, কুকুর আর মানবসমত্মানের মধ্যে আর কোনো ফারাক নেই।

ধর্মান্ধতা যে আমাদের সমাজদেহটাকে কুরে-কুরে নিঃশেষ করছে তা ‘বৃষ্টি’ গল্পের মধ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে না বলে মৌলানা সাহেব গাঁয়ের ভেতর খুঁজে বেড়ান, কার মেয়ের পাপে এমন অনাসৃষ্টি; কিন্তু কাজের মেয়ে জৈগুন জানায়, বাতাসীর ঘরে একজন লোককে সে দেখেছে। কারণ ওর স্বামী রজবালি বেঁচে থাকতেও বাতাসীকে নিয়ে নানান কথা উড়েছে, ওর কারণে আলস্নাহপাক জমিনে বৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে মৌলানা সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী মারা গেছে দুবছর আগে, সংসার নিয়ে তেমন আর চিমত্মা নাই, বয়স ষাট যখন, কিন্তু মজু প্রধান নাছোড়বান্দা, 888sport cricket BPL rate-বাইশ বছরের তার মেয়ের ঘরের নাতনির সঙ্গে হাজি কলিমুলস্নাহর বিয়ে দিয়ে দেয়। বাতাসীকে নিয়ে একটা সাড়া পড়ে গেছে, যেহেতু তার স্বামী নাই, হাজি সাহেব তসবিহ্ হাতে গভীর চিমত্মায় মগ্ন, অল্পবয়সে স্বামী মারা যাওয়ার এই দোষ, স্বামীসঙ্গ একবার যে পেয়েছে সে সেই স্বাদ কি ভুলতে পারে? কেতাবে শাস্তি আছে, গলা-ইসত্মক মাটিতে পুঁতে এর মাথায় পাথর মারতে হবে, যতক্ষণ না প্রাণটা বেরিয়ে যায়। হাজি সাহেব যখন তন্ময় হয়ে ভাবছেন, তখন খালেদ তার নতুন মাকে বাপের বাড়ি থেকে আনছে, খালেদের ছোটভাই সাজুকে কোলে নিয়েছে জোহরা, নতুন মাকে সাজুর বেশ ভালো লেগেছে, তাই নাইওর করতে গেলে সাজু কোলে উঠে গিয়েছিল, জোহরার কোল থেকে ঘুমিয়ে থাকা ভাইকে নিজের কাঁধে নিতে গিয়ে খালেদের অন্য অনুভূতি জাগ্রত হলো, কপোতের বুকের মতো উষ্ণ, প্রবালের মতো কোমল কিসের মধ্যে যেন তার বাঁ হাতের আঙুলগুলি ক্ষণিকের জন্য হঠাৎ হাওয়ায় চাঁপার কলির মতো কাঁপুনি খেয়ে গেল, নিমেষে তার সমসত্ম শরীরটা শিরশিরিয়ে উঠল ভরা মেঘে বিদ্যুৎ সঞ্চারের মতো। জোহরা নানাভাবে প্রলোভন দেখায় বিশেষ ইঙ্গিতে, নানান কথা এবং নানান ছল। খালেদ বলে, কী হলো আপনার? জোহরা বলল, তুমি কিচ্ছু জানো না, কিচ্ছু বোঝ না! এমন রগরগে মেয়ে জোহরা তার স্বামী কিনা ষাট বছরের বুড়ো ভাম, নানা বলেছিল দু-এক বছর সবুর কর, বুড়ো মরলে সম্পত্তি তোর, তখন জোয়ান দেখে জুটিয়ে দেব। রাতে বুড়ো কপালে কোমল হাতের ছোঁয়া পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নাক ডাকতে থাকে, জোহরার মনে হয় একটা মৃতলোক, বুক থেকে পা পর্যমত্ম শাদা কাপড়ে 888sport app। ‘সারাদিন কোথায় ছিলে’, চুপি-চুপি বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই জোহরার কথা শুনে খালেদ থমকে দাঁড়ায়। ‘না খেয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে, না’? হঠাৎ ডান হাত তুলে খালেদের গালে চড় মেরে ক্ষেপ্তের মতো জোহরা বলে, আমি আর কষ্ট সইতে পারব না, বাড়ি থেকে চলে যাও, চলে যাও তুমি… হাজি সাহেব বেশ চিমত্মায় আছেন, তিনদিন তিনরাত্রি হাদিস-কিতাব ঘেঁটে একটা ফতোয়া তৈরি করেছেন, শুক্রবার রাত্রে বিচার বসে, আলোচনা চলছে, মোক্ষম একটা শাস্তি হবে এই অনাচারের, যেন সমাজের কেউই আর এমন কাজ করতে না পারে, সে-সময় দক্ষিণ দিক থেকে পালে-পালে কালো মেঘ এসে সমসত্ম আকাশ ছেয়ে ফেলে, চাঁদ বারবার আড়ালে পড়ে, গাছপালা ও খামারে-নদীতে আলো-ছায়ার লুকোচুরি। আজ রাত্রে কিছু ঘটবে, বৃষ্টি হবে, বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে সমসত্ম পৃথিবী, ঠিক এমনি সময় হাজি সাহেবের বাড়ির পেছন দিকে আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে একটা মানুষের ছায়ামূর্তি, পা টিপে খোলা জানালার কাছে এসে অনেকক্ষণ সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে, ঘরে আলো নেই, প্রেতপুরির মতো বাড়িটা ঝিম ধরে, তারপর অনেকটা সময় পর দরজা খুলে খাটের কাছে এসে দাঁড়ায়। বুকে ওর ভয় থাকলেও আমের বোল নাকি চুলের গন্ধ মাতোয়ারা করে, সে পিছিয়ে গেলেও একটা কোমল হাত আকর্ষণ করল, সে তখন নিজেকে ছেড়ে দিলো, বৃষ্টির ভেতর একসময় ছায়ামূর্তি অদৃশ্য হলেও এলোমেলো কাপড়ে জোহরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির খেলা দেখতে লাগল, তারপর নিজেকে বৃষ্টির পানিতে ভাসিয়ে দিলো, সে এখন কারো বারণ মানবে না, কারণ বছরের পয়লা বৃষ্টিতে সর্দি হয় না আবার ফসলও খুব ভালো হয়, জোহরার রহস্যময় কথাগুলো কেউ বুঝল কি বুঝল না সেটা বড় কথা নয়, কিন্তু যে বোঝার সে ঠিকই বুঝে গেল, অদৃশ্য ছায়া দূরে সরে গেলেও জোহরার ঠোঁটে হাসির রেশ লেগে রইল। সে এখন বৃষ্টির মতোই ছন্দহীন। গল্পে যে জাদুবাসত্মবতা কাজ করেছে তা পাঠককে মুগ্ধ করেছে, ধর্মের খোলসে মানুষ কিন্তু তার ভেতরে আরেক রহস্য, সে রহস্যের ভেদ দেখতে পাওয়া যায় আজাদের গল্পে।

আলাউদ্দিন আল আজাদ সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী কথা888sport live footballিক, ‘ঠান্ডাভাত’ গল্পে পাঠক তাঁর পরিচয় পাবে, যে-গল্প লেখা নিজের চেনা-জানা পৃথিবীর মানুষ ও সমাজ নিয়ে। মানুষ তার নিজের শেকড়ের কথা ভুলে যায়, চেনা-পরিচিত জগৎ থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, নিজের ভাই-ভাবি, মা-বাপকেও ভুলে থাকে প্রাচুর্যের অহংকারে, লোকমা-লোকমা ঠান্ডাভাত মুখে দিচ্ছে আর দুই চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে বুড়ো লোকটার, যে লোকটা এবং তার বউ 888sport app শহরে এসেছে তাদের ছোটভাই আফজালুর রহমানকে খুঁজতে, কত যুগ দেখেনি, যাকে সে কোলে-পিঠে মানুষ করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে শুধু প্রতিবেশীদের নজরকাড়ার জন্য, অথচ আজ তার বাড়ির বারান্দায় বসেই ঠান্ডাভাত খাচ্ছে; কিন্তু একটা বাধা একটা বিত্ত একটা কাঁটাতার হয়ে তাদের সামনে, ইচ্ছে করলেই সেই কাঁটাতারের বেড়া উপড়ে ফেলা যায় না, পঞ্চাশ টাকা ছুড়ে বলে ওঠে, গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে যাও, কারণ এখানে এখন কোনো ভাই থাকে না, থাকে মসত্মবড় অফিসার, যে একটা সমাজ-সংসার এবং আভিজাত্যের কাছে দায়বদ্ধ, পেছনের 888sport sign up bonus ভুলে সে এখন অন্যজগতের মানুষ। মনস্তাত্ত্বিক এ-গল্পে মানুষকে এভাবে বিশেস্নষণ করতে হয়, এভাবে চিনতে হয় – আজাদই আমাদের সেভাবে দেখিয়েছেন। গ্রামের সহজাত জীবনের চেতনাগত ঐতিহ্য মধ্যবিত্তের বা নিম্নমধ্যবিত্তের যে আকাঙক্ষা তা গল্পে যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি ভালোবাসার হাহাকার প্রতিক্রিয়া স্বতন্ত্ররূপে দেখা দিয়েছে। আফজালুর রহমান তারপরও নিজেকে সেই পূর্বের জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি, চেনামানুষ অনেক সময় অচেনা হয়ে যায়, আর পরিচিত মানুষের আড়ালে পড়ে থাকে ধূসররঙা অন্ধকার।

চাচা নিকা করে দেড় গ-া বাচ্চা পয়দা করেছে, চাচার বউ হলো এখন ইয়াছিনের মা, ওর বাপ একদিন ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। ‘নোনা’ গল্পে এমনই একজন হতভাগ্য ছেলেকে দেখা যায়, নোনাপানি, বান তো আজন্মা, পাথুরে মাটির বুক থেকে ফসল নিংড়ে বার করতে খাটুনির শেষ নেই, তাও প্রায় একলা করে ইয়াছিন সেই ফজর থেকে মাগরেব অবধি বারোমাস, তাও নাম নেই, আরো রোজগার আশা করে, মা-ও ওই একই সুতোয় গাঁথা মালা; কিন্তু ইয়াছিন তাদের দাস হয়ে থাকতে চায় না, জাহাজের জেটিতে কাজের সন্ধান করে, কুড়ি টাকা কোমরে গুঁজে দিয়ে নলিটি পেয়েছে, নলি মানে রেজিস্ট্রেশন কার্ড, জাহাজে কাজ পাওয়ার প্রথম সিঁড়ি, মাঝে-মাঝে দেশি-বিদেশি জাহাজে খালাসি নেয়, যাদের নলি আছে, তারাই কাজের জন্য হাজির হওয়ার অধিকার রাখে। সেদিন ইয়াছিন যায়, শেষরাতের প্রথম পাখি ডেকে ওঠার সময় বাড়ি থেকে বের হয়, পেটে ক্ষুধা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেও তার নাম ধরে ডাকা হয়নি। কারণ যাদের ডাকা হয়েছে, তাদের মামার জোর যেমন আছে আবার টাকারও জোর আছে, কিন্তু তার কোনো জোরই নেই, মাঝখানে তার পেটে ক্ষুধার রাক্ষস ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে ওঠে, সে ক্লামত্ম-শ্রামত্ম হয়ে পতেঙ্গার সমুদ্রতীরে এসে দাঁড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, তার আর কোথাও যাওয়ার নেই, নেশাগ্রসেত্মর মতো এক িআঁজলা পানি মুখে দেয়; কিন্তু নোনাপানি পেটে গিয়ে আবার উগরে ফেলে, এভাবেই মানুষের আশা-স্বপ্ন মিলিয়ে যায়, নোনাপানির মতো সবকিছু বিস্বাদ লাগে, গল্পের চরিত্রের কাছেও বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয়। মানুষ তো এভাবেই বাঁচে নিজের সঙ্গে এবং প্রকৃতির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ করে।

চারশো ঘর প্রজা, তার মধ্যে আড়াইশো ঘরের বিরম্নদ্ধে আদালতে মামলা রম্নজু করেছে নায়েব, বকেয়া খাজনা পরিশোধ না করার শাস্তিস্বরূপ প্রজাদের প্রতি এমন আচরণ; কিন্তু প্রজারা খাজনা দেবে না, গ্রামে কে বা কারা আগুন দেয়, পুলিশ চৌকি বসিয়ে আসামিকে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু কেউই স্বীকার করে না। সত্তর বছরের বুড়ি, যার এককালে একটা নাম ছিল ‘বুবি’, সময়ের স্রোতে সে নাম কোথায় তলিয়ে গেছে, এখন ছেলেবুড়ো সবাই তাকে সুন্দরী বলে ডাকে। ‘সুন্দরী’ গল্পটি এই বুড়িকে কেন্দ্র করে বেড়ে উঠেছে, যার এককালে সবই ছিল, বাপ ছিল তার জাতচাষি, যেমন শক্তিশালী তেমনি সাহসী, সেবার আকালের বছর, শিলাবৃষ্টিতে জমিজমা সব ভেসে যায়, ইচ্ছে থাকলেও মহাজনের খাজনা দিতে পারেনি, কিন্তু মহাজন শুনবে না কোনো কথা, একটা ফ্যাসাদ বাধে। কিন্তু বাপ তার ওদের কাবু করতে পারেনি, বুকের ওপর শক্ত কাঠ রেখে সাতটি জোয়ান মানুষ দিয়ে চাপা দেওয়া হয়, তারপর বেশিদিন আর বাঁচেনি বাপটা। সুন্দরীর সব কথা মনে পড়ে, সেই খাজনা নিতে এসেছে সেপাই, তাঁবু ফেলে গ্রামের মানুষকে রাত্রের অন্ধকারে ধরবে, কঠিন শাস্তি দেবে, কিন্তু সুন্দরী রাত্রের অন্ধকারে সব খবর পেয়ে যায়, গ্রামবাসীকে দূরে পাঠিয়ে দেয় এবং সে নিজের ঘরে থাকে, তারপর বাঁশের দরজা ভেঙে তিনজন তার ঘরে ঢুকলে সে তখন একটা পুলিশকে দায়ের কোপ মারে, মহাজনের চামচা শ্রেণির মানুষগুলো বলে ওঠে, এই বুড়িই সবকিছুর মূল। এর কারণেই গ্রামবাসী খাজনা দেয়নি। সুন্দরী যে নিজের ঘাড়ে সমসত্ম দোষ-অপরাধ নিল, তার কারণ সে নিজেই বিদ্রোহ করতে চেয়েছে, বাপের মৃত্যু তাকে কতটা রক্তাক্ত করেছে এখানে তার একটা প্রমাণ পাওয়া যায়। এভাবেই মানুষ নিজের অধিকার-স্বাধিকার আন্দোলনে শরিক হয়। বাংলার মানুষ চিরকালই শ্রেণিবিন্যাস এবং ইংরেজ শাসন-শোষণের বিরম্নদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করেছে, দেশকে-জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে, জোতদারের সঙ্গে সংঘর্ষ করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেমন এ-গল্পে ‘সুন্দরী’ হয়ে উঠেছে একটা প্রতীক, যার হাত ধরে বলিষ্ঠ হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ।

‘আমাকে একটি ফুল দাও’ গল্পে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখি, যে দুবছর বাইশ দিন পর দেশে নিজের বাড়িতে ফিরছে, এই ওমর ফারম্নক 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সৈনিক, যাকে মৃত বলে দেশবাসী ধরে নিয়েছে, তার প্রিয় আত্মীয়-স্বজনের কাছে সে যেমন মৃত, তেমনি তার ভালোবাসা স্বপ্নার কাছেও সে মৃত। তার পৃথিবী আবার অন্ধকারে ভরে গেল, তার স্বপ্ন-সাধ সব নিমেষে তলিয়ে গেল, বন্ধু হায়দারের কথা শুনে সে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। এভাবে একজন মানুষ মৃত হয়ে বাঁচে কীভাবে, দেশ স্বাধীন হলেও সে সবকিছু হারিয়ে রাস্তার ভিখারি বই তো কী! বাপ চেনে না, অন্ধ মাও চেনে না, ভালোবাসার স্বপ্না যে কিনা ছোটভায়ের বউ হয়েছে আজ, সেও চেনে না, এমনকি ছোটভাইও চেনে না, সবাই যেন মুখ ফিরিয়ে রাখে। সে কীভাবে তাদের সামনে দাঁড়াবে সেই আগের মতো, নিজের কাছে পরাজিত হয় ভালোবাসা-মানবতা। আজাদ মানুষের হৃৎপি–র ভেতর হাত দিয়ে দেখেছেন সত্যিকার সোনা-হীরা-মুক্তা। আসলে মানুষই মানুষের জন্য জগৎকে সাজিয়েছে, ভরিয়ে তুলেছে সৌন্দর্যে অথচ তারপরও কোথাও একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে, এই না-পাওয়ার বেদনা নিয়ে দিন যাচ্ছে, সময় যাচ্ছে এবং এর ভেতর দিয়ে একটু-একটু করে মানুষ পৃথিবীটাকে চিনতে শিখছে।

888sport appsের কথা888sport live footballের যে ভিত্তি নির্মিত হয়ে আছে সেই বাসত্মবতায় দাঁড়িয়ে আজাদের 888sport live chat-চেতনার যে বিশেষত্ব পাঠকের চোখে পড়ে তা হচ্ছে, বর্ণনাময় 888sport live chatমাধুরী, বাক্যগঠনের অভিনবত্ব – সেইসঙ্গে গল্পে প্রতীকধর্মী চিত্রকল্প ব্যবহার। 888sport appsের মাটি মানুষ যেমন কথা বলে তাঁর গল্পের আখ্যানে, তেমনি জীবনের বিভিন্ন দিক উপস্থাপিত হয় কাঠামোর ক্যানভাসে। তাঁর গল্প মূলত জীবনের কথা বলে, দেশ বা জাতির কথা বলে, প্রকৃতি এবং জীবের বৈচিত্র্যময় অবস্থানের কথা বলে। বাংলা888sport live footballে তিনি ছোটগল্পের একজন সৃজনশীল কারিগর – এ-কথা বলতে কারো দ্বিধা নেই।