সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ
১৯ অক্টোবর, ২০১৪ সকালে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন বাঙালির সমন্বয়বাদী চিন্তাধারার অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। পুরো নাম আবুল ফয়েজ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তাঁর পিতৃপুরুষরা ফারসি ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। ইংরেজি শিক্ষার শুরু দাদার আমল থেকে। দাদা, যিনি শুধু আহ্মদ নামে পরিচিত ছিলেন, ইংরেজি 888sport live footballে অনার্স ডিগ্রি নেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। পরে ডেপুটি হিসেবে যোগ দেন সরকারি প্রশাসনে ১৮৯৫ সালে।
সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের পিতা আবু আহ্মদ ফয়জুল মহী, মা আকিফা খাতুন। সালাহ্উদ্দীনের জন্ম ১৯২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তাঁর নানা সৈয়দ আজিজুল হক হস্তরেখার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তের প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্ভাবক। এ উদ্ভাবনের 888sport app download bdস্বরূপ ব্রিটিশ প্রশাসন তাঁকে উত্তর বিহারের মতিহারিতে কয়েক বিঘা খাসজমি উপহার দেন। তার ওপরে বিরাট অট্টালিকা, চারদিকে বাগান আর ফলের গাছ। সালাহ্উদ্দীনের শৈশব কেটেছে ওখানে। পরবর্তী জীবনে শান্ত-সৌম্য তিনি শৈশবে অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন; নানারকম অঘটন ঘটাতেন প্রায়ই।
বাবা ফয়জুল মহী ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন সাব-ডেপুটির পদে। বদলির চাকরি। তাই সালাহ্উদ্দীনের শিক্ষাজীবনও বদলিতে ভরা। চতুর্থ শ্রেণি পড়েছেন বাঁকুড়া জেলা স্কুলে, ষষ্ঠ থেকে বিষ্ণুপুরে। এরপর রাজবাড়ীতে পদ্মার পাড়ে রেলওয়ে কলোনিতে বাস। অষ্টম শ্রেণিতে ফরিদপুর স্কুলে। নবম শ্রেণি দমদম জংশনের কাছাকাছি ব্যারাকপুরের আশুতোষ ইনস্টিটিউটে। বাবা কলকাতায় বদলি হয়ে এন্টালি অঞ্চলে বাসা নিলে সালাহ্উদ্দীন ভর্তি হন তালতলা হাইস্কুলে। সেখান থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ (১৯৩৭)।
রিপন কলেজে ভর্তি হলেন আইএ পড়ার জন্য। শিক্ষক হিসেবে পেলেন বাংলায় প্রমথনাথ বিশী, ইংরেজিতে বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে, ইতিহাসে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অর্থনীতিতে ভবতোষ দত্ত প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তিকে। কিশোর ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ, শরৎচন্দ্রের পথের দাবী। কলেজে এসে হাতে পড়ল রজনী পাম দত্তের Political & Social Ideas of Communism; সঙ্গে মার্কস এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো।
বিভিন্ন সভায় যোগদান শুরু হলো। ১৯৩৭-এ অ্যালবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউস) সরোজিনী নাইডুর বক্তৃতা, ’৩৮-এ টাউন হলে সুভাষ বসুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের সভা। একই বছরে মুসলিম ইনস্টিটিউটে বক্তৃতা করতে এলেন বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়। উদ্যোক্তা হবীবুল্লাহ্ বাহার ও শামসুন্নাহার মাহমুদ। সালাহ্উদ্দীন প্রবলভাবে আকৃষ্ট হলেন এম এন রায়ের ভাবধারায়।
প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করে একই কলেজে বিএ ক্লাশে ভর্তি হলেন। বাবা বদলি হয়েছেন সাতক্ষীরায়। যুবক পার্ক সার্কাসে আবাস নিলেন। কলেজ বদল করে ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সুশোভন সরকারের ইতিহাসের পাঠ তাঁকে আরো বামপন্থার দিকে নিয়ে গেল। বন্ধুদলও গড়ে উঠল – পরবর্তীকালে প্রখ্যাত সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিক-888sport live footballিক আবু জাফর শামসুদ্দীন, সাব-অল্টারন ভাবনার পথিকৃৎ রণজিৎ গুহ, সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাবেবর প্রমুখ। সালাহ্উদ্দীন যুক্ত হলেন ট্রেড ইউনিয়নের কাজে। তাঁর দায়িত্ব পড়ল খিদিরপুরের বন্দর শ্রমিক ও তালতলার সাইকেল মজদুর ইউনিয়নে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু-আরবি শেখা বেশ কাজে লাগল।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সঙ্গে এম এন রায়ের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। সালাহ্উদ্দীনের মনে হলো, ভারতবর্ষে বিপ্লবের পথ সম্পর্কে মস্কোর চিন্তাভাবনা অবাস্তব; বরং রায়ের পথই গ্রহণযোগ্য। সেই ভাবনাতেই Radical Party-র সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা। দরিদ্র মানুষের প্রতি মমতাবোধ আর তাদের দায়শোধের চেতনায় রাজনীতিতে একটু বেশিই সক্রিয় হয়ে পড়লেন তিনি। ফলে ১৯৪২-এর অনার্স পাশ করলেন পরের বছর।
১৯৪৪-এ ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় মায়ের মৃত্যুতে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। তাঁর মানসগঠনে এই মায়ের ভূমিকাই ছিল প্রধান। নামাজের পর মুনাজাতে আরবি দোয়ার বদলে গীতাঞ্জলির 888sport app download apk বলার সাহস দিয়েছিলেন তাঁকে এই মা-ই। এই মায়ের প্রভাবেই তাঁর চিন্তা-চেতনাকে কোনো বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসন বা সামাজিক বিধিবিষেধ বা অন্ধবিশ্বাস সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারেনি; উদার ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার বীজ অতিশৈশবেই মনে অঙ্কুরিত হয়েছিল। এর মধ্যে এমএ পাশ (১৯৪৫) করেন সালাহ্উদ্দীন।
ট্রেড ইউনিয়নের কাজের ব্যস্ততা ছিল। পরের বছরের পুরো সময়ই দিলেন শ্রমিক সংগঠনে। ১৯৪৬-এ যোগ দিলেন রেডক্রসে; দায়িত্ব কলকাতার বস্তি অঞ্চলে স্থাপিত শিশুদের জন্য দুধ-বিতরণ কেন্দ্রগুলোর তত্ত্বাবধান। এর মধ্যে ১৬ আগস্টের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতায় দাঙ্গা বাধল – তিন দিনের ভয়াবহ দাঙ্গা। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদরা দাঙ্গাবিরোধী স্কোয়াড গঠন করলেন; সারারাত জেগে পার্ক সার্কাস এলাকা পাহারা দিলেন, হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই বলে মিছিল করলেন। দীর্ঘদিনের প্রিয় পোশাক ধুতি-পাঞ্জাবি ছাড়তে হলো তাঁকে।
১৯৪৬ অন্যদিক থেকেও তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। জহুর হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হলো হামিদা খানমের। হামিদা ১৯৪২-এই দর্শনে এমএ ডিগ্রি নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করেন। ১৯৪৫-এ যোগ দেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে দর্শনের প্রভাষক হিসেবে। স্যার রাধাকৃষ্ণনের প্রিয় ছাত্রী, রবীন্দ্রসংগীত-শিক্ষক আবদুল আহাদের ছোটবোন। দাঙ্গা শেষ হতে না হতেই হামিদা উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন যাত্রা করেন; তিনি বৃত্তি পেয়েছেন লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে।
অল্পসময়ের মধ্যে শুরু হলো নোয়াখালির দাঙ্গা। দেশি-বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের একটা দল নিয়ে সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ গেলেন সেখানে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী আর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ভার নিলেন। মহাত্মা গান্ধী তখন নোয়াখালিতে। এমএন রায়ের প্রভাবে গান্ধীর ‘spritual fanatism’-এর প্রতি বিরূপই ছিলেন সালাহ্উদ্দীন। কিন্তু নোয়াখালিতে গান্ধীর কার্যকলাপ, বিশেষত গান্ধীর প্রার্থনাসভায় অংশগ্রহণ তাঁর মনোভাব বদলে দেয়। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের মনে হলো, গান্ধী ‘spritual humanism’-এর মূর্তরূপ। নোয়াখালির হাইমচর, কুমিল্লার ইব্রাহিমপুর ও দাউদকান্দিতে কাজ করে ’৪৭-এর জানুয়ারিতে রেডক্রসের কর্তা হিসেবে কুমিল্লা শহরে বাস করলেন কিছুদিন।
’৪৭-এর আগস্টে বাংলা ও ভারত বিভক্ত হলো। ডিসেম্বরে সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ 888sport appয় চলে এলেন। অচেনা শহর, এর আগে একবার মাত্র এসেছিলেন সেই ১৯৩০ সালে। 888sport appয় রেডক্রস দফতরে গেলেন যোগ দিতে। কিন্তু সে-দফতরের কর্তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ও স্বজনপ্রীতি তাঁকে ক্ষুব্ধ করল; তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করলেন রেডক্রস থেকে।
১৯৪৮ সালের আগস্টের মাঝামাঝি জগন্নাথ কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন। অধ্যক্ষ আবদুর রহমান খান বাছাই পরীক্ষা নিয়েছিলেন প্রদর্শনমূলক ক্লাস লেকচারের মাধ্যমে। একই দিনে কলেজে যোগ দেন বাংলার প্রভাষক অজিতকুমার গুহ। জগন্নাথ কলেজে তখন দিনের বেলা শুধু ইন্টারমিডিয়েটের ক্লাশ হতো; বিএ ও বিকমে ছিল সন্ধ্যাকালীন কোর্স। বাসা নিলেন জয়নাগ রোডে; কলেজে যাতায়াত করতেন সাইকেলে। শুরু হলো তাঁর শিক্ষকজীবন। ইতিপূর্বে এমএন রায় 888sport appয় এলে তাঁর বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করলেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ; সঙ্গে আলোচক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা।
এ-বছরে হামিদা খানম উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে ফিরে এলেন। কলকাতা হয়ে বোম্বাই গিয়ে তাঁকে 888sport app নিয়ে এলেন সালাহ্উদ্দীন। হামিদা খানম যোগ দিলেন 888sport appর ইডেন কলেজে। ২৯শে ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে ২১শে ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণের ঘটনার পর অধ্যক্ষ আবদুর রহমান খাঁর সভাপতিত্বে জগন্নাথ কলেজের শিক্ষকরা প্রতিবাদ সভা করেন। সরকারের নিন্দা করে তাতে বক্তৃতা দেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ, অজিত গুহ প্রমুখ। পরদিন অজিত গুহকে গ্রেফতার করা হয়।
এ-বছরে ফুলব্রাইট বৃত্তি পান স্বামী-স্ত্রী দুজনে। কিন্তু বিরূপ পুলিশ-রিপোর্টের জন্য সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়। এমনকি জনৈক শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে ফাইলটা নষ্ট করে ফেলার আগে পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। বছরের শেষদিকে হামিদা খানম যান নিউইয়র্কে; সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। The Indian Muslim & Separate Electorate বিষয়ে গবেষণা করে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। মার্কিন মুল্লুকে নানা জায়গায় বেড়ানোর সূত্রে একবার প্রিনসটন গিয়ে 888sport apkী আইনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করেন দুজনে।
দেশে ফিরে যোগ দেন জগন্নাথ কলেজে। ইতোমধ্যে সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল কলেজে উন্নীত হয়েছে। তাতে ইতিহাসের খন্ডকালীন শিক্ষক হলেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা এলো। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানেরও আমন্ত্রণ পেলেন; তবে অস্থায়ী ভিত্তিতে – শর্ত, শুধু ক্লাস চলাকালীন বেতন পাওয়া যাবে, আর ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে প্রতিবার নতুন করে যোগদান করতে হবে। এ-শর্ত অসম্মানজনক মনে হয়েছিল তাঁদের, তাই সে- কাজে যোগ দেননি।
১৯৫৪ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। নভেম্বরের মাঝামাঝি রাজশাহী গিয়ে কাজে যোগ দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তখনো গড়ে ওঠেনি। পুরনো নীলকুঠি বড়কুঠি, কয়েকটি সরকারি ভবনের অংশবিশেষ, বেশকিছু ভাড়া বাড়ি – এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস বিভাগের নবনিযুক্ত প্রধান ড. এ আর মল্লিকের সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে যোগদানে দেরি হবে। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদই ইতিহাস বিভাগ শুরুর দায়িত্ব নেন – তৈরি সিলেবাস অনুযায়ী ক্লাসের ব্যবস্থা, রুটিন, এমনকি 888sport appয় এসে দোকান থেকে বই কিনে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বাসা নেন পাঠানপাড়ায়। হামিদা খানম তখন ইডেন কলেজের উপাধ্যক্ষ; তিনি 888sport appতেই থেকে যান।
১৯৫৬ সালে ছ’মাসের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণা করেন। জাপানিদের ঐতিহ্যবোধ, অতিথিপরায়ণতা, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা তাঁদের মুগ্ধ করে।
ফিরে এসে বছর দুয়েক পরে (সেপ্টেম্বর ১৯৫৮) লন্ডন যান উচ্চশিক্ষার জন্য। SOAS-এ গবেষণা, অপ্রতুল বৃত্তি; হামিদা খানম মাসে নিয়মিত চারশো টাকা পাঠাতেন স্বামীর জন্য। তাঁর গবেষণা-তত্ত্বাবধায়কের প্রস্তাব ছিল বাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের কোনো দিক নিয়ে গবেষণার। ইতিপূর্বে SOAS-এ এ-ধারায় কাজ করেছেন এ আর মল্লিক, লতিফা আকন্দ ও সুফিয়া আহমেদ। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ তাতে সম্মত হননি; কেননা সম্প্রদায়ভিত্তিক চিন্তায় তিনি আগ্রহ খুঁজে পাননি। প্রস্তাব করলেন, বুদ্ধিবৃত্তির ইতিহাস নিয়ে কাজ করবেন। উনিশ শতকে বাংলার সমাজচিন্তা ও সমাজবিবর্তন নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন। রামমোহন রায়, ব্যারিস্টার আবদুর রসুল, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখের অবদান নতুন করে মূল্যায়িত হলো। পাশাপাশি আমীর-উল-ইসলামের উদ্যোগে ‘পূর্বসুরী’ চক্রে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার নিয়ে আলোচনায়ও অংশ নিতেন।
১৯৬১ সালে যখন ডিগ্রি নিয়ে ফিরে এলেন, তখন দেশে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার ক্যাম্পাস গড়ে উঠছে দ্রুত; ভরে উঠছে সজ্জন বান্ধবে – এ আর মল্লিক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, মুশারফ হোসেন, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ফজলুল হালিম চৌধুরী, বদরুদ্দীন উমর, আরো অনেকে। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদরা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ পরমতসহিষ্ণু গণতন্ত্রের পক্ষে; সামরিক আইন বা তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান ছিল দৃঢ়। অবশ্য ১৯৬১ সালে মণি সিংহ আত্মগোপনরত অবস্থায় সালাহ্উদ্দীন আহ্মদকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ার আহবান জানালে তিনি রাজি হননি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বন্ধুদলেরই কয়েকজন মিলে প্রকাশ করেন রুচিশীল 888sport live footballপত্রিকা পূর্বমেঘ।
১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উত্তাল। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রক্টর শামসুদ্দোহা পুলিশের গুলিতে নিহত হলে সারা দেশ তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে-পথ বেয়ে আসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালে অধিকাংশ সময় কর্মস্থলের বাইরে ছিলেন তিনি।
স্বাধীন 888sport appsে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবু মহামেদ হাবীবুল্লাহর আহবানে মঞ্জুরি কমিশনের খন্ডকালীন গবেষণা- পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল পর্যায়ে গবেষণার প্রস্তাব ও নিয়মকানুন তৈরিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৮ সালে যোগ দেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। তাঁর আগ্রহে বিভাগে পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯৮৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। নববইয়ের দশকে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিছুদিন। শেষজীবনে (১৯৯১) জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা লাভ করেন তিনি; মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে দুদিন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব এক্সেলেনসে যাতায়াত করতেন।
পঞ্চাশের দশক থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে বহু 888sport liveপাঠ ও বক্তৃতা করলেও সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের প্রথম বই প্রকাশিত হয় বেশ দেরিতে – Social Ideas and Social Change in Bengal (১৯৬৫) নাইডেন থেকে। তারপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বের হতে থাকে তাঁর 888sport live সংকলনসমূহ - Bangladesh : Tradition & Transformation (১৯৮৭), বাঙালির সাধনা ও 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৯২), 888sport apps : জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র (১৯৯৩), Bengali Nationalism and Emergence of Bangladesh (১৯৯৪), ইতিহাসের সন্ধানে (১৯৯৫), 888sport apps : অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ (২০০০), উনিশ শতকে বাংলার সমাজচিন্তা ও সমাজবিবর্তন (২০০০), 888sport appsে গণতন্ত্রের সংকট (২০০২), India, Pakistan, Bangladesh : Perspective on History, Society and Culture (২০০১, কলকাতা), বরণীয় ব্যক্তিত্ব, 888sport app download for androidীয় সুহৃদ (২০০৩); 888sport apps কোন পথে (২০১২), ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র (২০১৩), বঙ্গবন্ধু বাঙালি : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমকালীন ভাবনা (যন্ত্রস্থ) প্রভৃতি।
ইতিহাস-অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের প্রধান আগ্রহ বাঙালির সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশধারার সূত্র অন্বেষণ ও মানচিত্র তৈরি। উনিশ শতকে তাঁর আইকন রামমোহন রায়, বিশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতীয় মুসলমানদের অনগ্রসরতার কারণও তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এবং মুসলমান সমাজের প্রগতিশীল ধারাকে শনাক্ত করেছেন। তাঁর প্রত্যয়, বাঙালি ধর্মীয়-বিবেচনায় বিভক্ত হলেও মূলত সমন্বয়বাদী চেতনার মানুষ। তাঁদের জীবনধারায় ও আচরণে লৌকিক বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা প্রবল, ফলে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এক মোহনায় মিলতে পেরেছে। নানা বিভেদ ও বৈষম্য সত্ত্বেও বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখন্ডতায় আস্থাশীল ছিলেন তিনি।
বিশ শতকের ষাটের দশক থেকে পূর্ব বাংলায় জাতীয়তাবাদী উত্থানও তাঁর ইতিহাস-গবেষণায় গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষেত্রে আইকন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় 888sport apps রাষ্ট্রের প্রকৃত বিকাশের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ধর্ম এবং রাজনীতি উভয়কেই কলুষিত করছে, এ-কথা বারবার বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানবতার ওপরে আর কোনো আদর্শ স্থান পেতে পারে না। 888sport appsের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করে দেখার যে-কোনো প্রয়াসের প্রতিবাদ করেছেন তিনি। সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ যে-কোনো সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে ইতিহাসের বৃহত্তর পটভূমির ক্যানভাসে স্থাপন করে বিচার-বিশ্লেষণ করতেন।
আপন মত ও বিশ্বাসে তিনি ইস্পাতদৃঢ় ছিলেন। একই সঙ্গে ছিলেন পরমতসহিষ্ণু। মত বা আদর্শের কারণে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ তিনি পছন্দ করতেন না। একেবারে বিপরীত রাজনৈতিক মতের বদরুদ্দীন উমরের মতো অনেকে ছিলেন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের শেষ বইটি (যন্ত্রস্থ) উমরকে উৎসর্গীকৃত। কোনো ব্যক্তির প্রশংসা বা সমালোচনায় অতিসরলীকরণ তিনি এড়িয়ে চলতেন এবং সময়ের প্রেক্ষাপটে বিচার করতেন।
ব্যক্তির অভিজ্ঞতা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জেনে তার থেকে সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের বিবরণ তৈরি করা – মৌখিক ইতিহাসচর্চার এ-ধারাটিও 888sport appsে প্রবর্তন করেছিলেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। ১৯৮৫ সাল থেকে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় 888sport apps জাতীয় জাদুঘরে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, সরদার ফজলুল করিম ও এনামুল হককে সঙ্গে নিয়ে এ-প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন তিনি। ১৯৯০-এর মধ্যে ১২০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ধারণ করেন তাঁরা। এসব সাক্ষাৎকারে বাংলা ও বাঙালির রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের মূল্যবান উপকরণ পাওয়া গেছে। পরে সুকুমার বিশ্বাসের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের মাধ্যমে আরো কিছু সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তিনি।
888sport apps ইতিহাস-পরিষদ, 888sport apps জাতিসংঘ সমিতি, এশিয়াটিক সোসাইটি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর স্থাপন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এর ট্রাস্ট্রের চেয়ারম্যান ছিলেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ।
উচ্চপদের প্রতি তাঁর একরকমের বিরূপতা ছিল। ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলতেন যে, পাওয়ার ও পজিশনের ‘পি’ (P)-র প্রতি আসক্ত হলে ‘পিসে’র ‘পি’ বিগড়ে যায়। ১৯৭৬ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের 888sport free betগরিষ্ঠ দল থেকে তাঁর নাম উপাচার্য-প্যানেলে দেওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। আবার, ১৯৭৯ সালে উপরাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার তাঁকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার অনুরোধ জানালে তাও তিনি গ্রহণ করেননি।
সহজ-সরল অথচ সংস্কৃতিবান এক জীবনের উদাহরণ রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.