বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা যেন ক্রমাগত শোকই উদ্যাপন করছি!
পঞ্চাশের দশকের 888sport live chat 888sport live football ইতিহাস ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের রথী-মহারথীদের একের পর এক আমাদের হারাবার পালা চলছে। তারই ধরাবাহিকতায় যেন প্রফেসর এমেরিটাস ডক্টর আনিসুজ্জামান চলে গেলেন। আর আমাদের 888sport live footballের আকাশ থেকে একটি তারকা যেন খসে পড়ল। 888sport live footballের অঙ্গনে এখন থাকল যেন শুধু বালুঝড় আর ক্ষমতার দাপট।
যদিও তাঁর জন্মস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গ, তবু তিনি আমাদের এই দেশটিকেই মাতৃভূমি হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। এই দেশের ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী যে-কোনো চেতনার আন্দোলনেই ছিল তাঁর সক্রিয় অংশ। বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসেও তিনি একজন দিকপাল। এহেন একজন 888sport live footballের দিকপালকে আমরা মাত্র অল্প কয়েকদিন আগেই হারালাম। বাংলার আকাশ শোকে মুহ্যমান হলো।
তিনি অসুস্থ – এ-খবর শুনে কত যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন তিনি বেঁচে থাকেন। কিছু না করলেও তিনি যেন বেঁচে থাকেন। বাংলা মায়ের সোনার ভাণ্ডার তো ক্রমে ক্রমে নিঃশেষ হতে চলেছে। তবে হয়তো কালের গতি মেনে সকলকেই একদিন চলে যেতে হয়।
888sport free betর দিক থেকে আনিসুজ্জামান হয়তো খুব বেশি বই লেখেননি, কিন্তু যে-কটি লিখেছেন, মুসলিম-মানস থেকে শুরু করে বিপুলা পৃথিবী – প্রতিটি বই-ই 888sport live footballের অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। দেশে-বিদেশে এজন্যে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। বিদেশেও তিনি বহুবার শিক্ষকতা করতে গিয়েছেন। তাঁর রচিত বইয়ে তিনি দেশ কাল সমাজ মুক্তিযুদ্ধ শোষিত মানুষের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন। কখনোই তিনি তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যকে জোরেশোরে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি। তবু পাঠক তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়েছেন।
আমি শুনেছি, কিশোর বয়সে আনিসভাই ছিলেন সৈয়দ শামসুল হকের ঘনিষ্ঠ একজন। বস্তুত সৈয়দ হকের 888sport live footballজীবনের শুরুই হয়েছিল এইসব বন্ধুর সাহায্যে এবং সাহচর্যে। আমাদের সাংসারিক জীবনেও দেখেছি দৈনন্দিন কথাবার্তাতেও আনিসভাই উঠে আসতেন। আমার 888sport live football-রচনাকালে কোথাও আটকে গেলে সৈয়দ হক আমাকে বলতেন, আনিসকে ফোন করো।
সৈয়দ হকের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ তিন পয়সার জোছনা খুলে দেখছি সেখানে কথা প্রসঙ্গে লেখা আছে,
আর আছেন আনিসুজ্জামান – সন্ধ্যার পর সন্ধ্যা দেশে-বিদেশে ভাবগম্ভীর বিদগ্ধ সভার প্রধান আসনে আর কত না ফিতে কাটায় কত না মোড়ক উন্মোচনে, আর এখনো তাঁর লেখাসকল হয়ে চলেছে সেই অনিন্দ্য হস্তাক্ষরে, আমার মতো ল্যাপটপ তিনি আজও ধরে ওঠেননি, শব্দের কি ব্যাকরণেরই কোনো সংশয় মনে উঠলে আজও তাঁরই কাছে ফোন করে মীমাংসা যান্ঞা করছি। (তিন পয়সার জোছনা, পৃ ১৮)
আরেক জায়গায় দেখছি তিনি লিখছেন, তাঁর জীবনের প্রথম বই তাশ বেরোবার কালে, ‘প্রেস থেকে প্রুফ নিয়ে ছুটে যাই কাপ্তান বাজারে, সেখানে বামাচরণ চক্রবর্তী রোডের বাসায় আনিসুজ্জামান, তাঁর বাবা মোয়াজ্জম সাহেব আমার বাবার মতোই হোমিওপ্যাথ, চেম্বার তাঁর ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনের রাস্তায়, বাসা থেকে ওইটুকু পথই নিজের গাড়ি করে যান, তখন 888sport appয় আর কজনেরই বা নিজের গাড়ি, কিন্তু আনিসকে কখনো বাবার গাড়িতে চড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ে না, আনিস বরং সাইকেলেই আমার চোখে এখনো, সাইকেলেই আনিস যেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমিও তাঁর দেখাদেখি কদিন বাড়ির সাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি কিন্তু সাইকেল আরোহণে নিজেকে ঠিক মেজাজে পাইনি বলে আবার পদযোগে নয়তো রিকশায় নিজেকে নিয়ে বেড়াই; এখন আনিস দেখছেন আমার বইটার মেকআপ আর প্রুফ কাটার কাজ – তখন ওটাই ছিল আমাদের সবার পক্ষে স্বাভাবিক, পরস্পরের কাজে এগিয়ে আসা, 888sport live footballের কোনো কাজে আমার-তোমার বলে আলাদা করাটা আমাদের তখন মাথাতেই ছিল না, আনিসও আমার বই বেরোবার কাজটাকে তাঁর 888sport live footballিক দায়বোধে স্বেচ্ছায় হাত লাগান, আনিস আমাকে মুগ্ধ করে রাখেন তাঁর দক্ষতা দিয়ে।’ (তিন পয়সার জোছনা, পৃ ৬৬)
আরেক জায়গায় সৈয়দ হক তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ তিন পয়সার জোছনায় লিখছেন,
বাবার বইয়ের কারণে প্রুফ কাটার কাজটা শিখেও বেমালুম ভুলে যাই একদিন, তারপরে বাড়ি পালানো, বোম্বের সেই পলাতক জীবন, ওখানে live chat 888sportে আমার গুরু কামাল আমরোহীর পদসেবা, অশোক চৌধুরীর মতো কমিউনিস্ট কর্মীবন্ধুর তাড়নায় বার্নার্ড শ’র নাটক পাঠ আর কার্ল মার্ক্সের দাস ক্যাপিটালের সরল পাঠ নিতে নিতে কোথায় তলিয়ে যায় এ বিদ্যে, 888sport appয় ফিরে যখন আসি, নিজের বই যখন ছাপতে দিয়েছি, আর আমার হাত চলে না প্রুফ কাটায়, বাংলা কত পরিচিত শব্দের বানানও তখন ঠিকমতো লিখতে পারি না – যেমন আনিসুজ্জামানই একদিন আমাকে ধরিয়ে দেন – স্রোত আমি লিখি শ্রোত! – অনেকক্ষণ আমি লিখি অনেক্ষণ! – ভুল লিখি ভূল! – হাঁটায় দিই না হ-এর ওপরে চন্দ্রবিন্দু!
মুগ্ধ হই আনিসের শব্দ দখল আর শব্দের বানানের ওপর দখল দেখে, মুগ্ধতা শুধু কি এই কারণেই? – আনিসের সুচারু হস্তাক্ষর, নানা রাজনৈতিক ইস্তেহার রচনায় তাঁর সাবলীল মুসাবিদা, বামপন্থার রাজনীতিতে মাতাল কত তরুণ আর বিখ্যাত অগ্রজদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা – আমাকে মুগ্ধ করে রাখত; আরও আছে! (তিন পয়সার জোছনা, পৃ ৬৮)
সৈয়দ হক ২০১৬ সালে চলে যাওয়ার দিন শহিদ মিনারে যখন মানুষের ঢল, সেই ভিড়-ভাড়াক্কার মধ্যে আনিসুজ্জামান ছিলেন সৈয়দ হকের কফিনের পাশে। নিজে বয়স্ক এবং অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই দৃশ্য তো ভোলার নয়। আর কারো কফিনের সামনে আমি তো আনিসভাইকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। সেই দৃশ্যের কথা আমি কৃতজ্ঞচিত্তে 888sport app download for android করেছি আমার মেমোয়ার্সে। ইচ্ছা ছিল এই মেমোয়ার্সের শেষ পৃষ্ঠাটি তাঁকে দেখাব; কিন্তু ভাবলেও সেটা আর করা হয়ে ওঠেনি।
বিভিন্ন সভা-সমিতিতে আনিসভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আবুল খায়ের-আয়োজিত বিশাল সেই মিউজিক ফেস্টিভালে আনিসুজ্জামান ছিলেন একজন পুরোধা। যেমন ছিলেন 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী। দেশের মানুষের জন্যে সুস্থ ধ্রুপদী আয়োজনে এঁদের জুড়ি মেলা ভার ছিল।
আনিসুজ্জামানের 888sport live football নিয়ে আজ কোনো কথা বলতে চাইনে। আজ শুধু 888sport sign up bonusচারণ। আর এই 888sport sign up bonusচারণে আজ ভাইয়ের স্ত্রীও উঠে আসছেন। বেবী ভাবিকে সেই কবে থেকে দেখছি। এরকম অমায়িক মানুষ খুব কম চোখে দেখা যায়। শুনেছি তিনি রিটায়ারমেন্টের আগে ছিলেন ভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান। তাঁর চরিত্রের ভেতরে লাইব্রেরির একটি পরিবেশ যেন আজো বিরাজমান। ধীর, স্থির, নিশ্চুপ, শান্ত।
আনিসভাই যে এত কাজ করেছেন তার পেছনে এই মানুষটি না থাকলে কাজ করা কঠিন হয়ে যেত।
সেদিন রফিক আজাদের জন্মবার্ষিকীতে আনিসুজ্জামানকে যখন সভাপতিত্ব করতে দেখি, মনে হয় সেটাই ছিল তাঁর শেষ সভাপতিত্ব কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, আমি তাঁকে সুস্থ দেখতে পাই না। আমি তাঁকে অনুরোধ করি, তিনি যেন কখনো বেবী ভাবি ছাড়া কোথাও না বেরোন। তা যত বড় অনুষ্ঠানই হোক না কেন। এবং ভাগ্যের পরিহাসে সেটিই ছিল তাঁর কোনো অনুষ্ঠানে শেষ সভাপতিত্ব করা।
তাঁর শেষ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবার জন্যে তাঁর বাসাতেও গিয়েছিলাম আমি। সেদিন তাঁর বাসায় মানুষের ঢল নেমেছিল। ফ্ল্যাটে, সিঁড়িতে, করিডোরে এত মানুষের ভিড় হলো যে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি চিন্তিত হলাম। আমি চলে এলাম তাঁকে সালাম জানিয়ে।
সেই ছিল আমার শেষ দেখা তাঁর সঙ্গে।
সেই মাসেই তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তারপর হলেন করোনায় আক্রান্ত। এরপর তো আর কিছু আমার বা আমাদের বলার নেই। এরপর যা কিছু বলার সে তো সম্ভব শুধু অশ্রুজলেই। অথবা –
কীভাবে বিদায় জানাবো তোমাকে, যে তোমরা সংগ্রাম করে গেছো শুধু সবুজ ঘাসের; একটি ফুলের নিরাপত্তার জন্যে নেমেছো কালের মিছিলে, প্রখর রোদে ছিনিয়ে এনেছো রক্তজবার লাল, শেকল ছিঁড়েছো দুপায়ের স্বাধীনতার পায়রা ওড়াবে বলে, একটুও চোখে দেখোনি সুসম সময়, কিন্তু হারাওনি মনোবল, দ্রোণাচার্যের মতো অস্ত্রের বদলে ক্রমাগত দিয়ে গেছ জ্ঞানের বিচ্ছুরিত বিভা। আলোকিত করেছো বাংলার মননের জগৎ।
আর নিঃসীম চরাচরে গেয়ে গেছ মানবতার গান।
জ্ঞানতাপস আনিসুজ্জামান, সালাম, সালাম।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.