888sport live footballের শত্রু ও মিত্র

অন্য সবকিছুর মতোই 888sport live footballেরও শত্রু আছে, যেমন রয়েছে মিত্র।

মিত্রের কথাটাই প্রথমে ধরা যাক। এক কথায় বলতে গেলে 888sport live footballের প্রধান মিত্র হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব। সকল 888sport live chatকলার ব্যাপারেই অবশ্য ঘটনাটি ওই একই; মানুষই 888sport live chatকলা সৃষ্টি করে, মনুষ্যত্বের তাগিদে এবং নিজের প্রয়োজনে। 888sport live footballও মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষের প্রয়োজনে। এবং মানুষের ভেতরকার তাগিদে। 888sport live chatকলার প্রধান মিত্র মানুষের ওই মানুষ্যত্বই, নির্ভরতাও ওইখানেই।

আদিম মানুষ তার বাসগুহায় ছবি এঁকেছে; গানও গেয়েছে, পাখি যেমন গান গায় ঠিক তেমন নয়, মানুষের গান পাখির গান থেকে ভিন্ন। মানুষের গানের সঙ্গে ভাষা এসেছে। কেননা মানুষ ডাক দিয়েছে অন্য মানুষকে, জানিয়েছে তার ভয়ের, আনন্দের, প্রয়োজনের খবর। আওয়াজ থেকেই ভাষার উৎপত্তি, এবং ভাষা থেকে 888sport live footballের। ভাষায় গান থাকে, ছবি থাকে, এবং থাকে অর্থ। অন্য 888sport live chatকলার থেকে 888sport live football এখানে স্বতন্ত্র, এবং ব্যাপকতর তার পরিধি। 888sport live footballে মানুষের অনুভূতি থাকে, এবং বুদ্ধিরও প্রকাশ ঘটে। ওই দুটি ক্ষেত্রে মানুষ যেহেতু ক্রমাগত এগিয়েছে, তাই 888sport live footballও এগিয়ে গেছে। আরম্ভে এসেছে পদ্য, পরে গদ্য। পদ্যে গান থাকে, গদ্যেও কিন্তু গানের উপস্থিতি ঘটে। পদ্যের যে ছন্দস্পন্দ তা গদ্যেও পাওয়া যায়, যদিও ভিন্নভাবে, এবং স্বল্পমাত্রায়। অনুভূতি আসে অভিজ্ঞতা ও কল্পনা থেকে, আর চিন্তা বিকশিত হয় অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই। চিন্তায় কল্পনা ও অনুভূতি যে অনুপস্থিত থাকে তা নয়। গান কেবল মানুষের কণ্ঠেই থাকে না, লিখিত আকারেও তাকে পাওয়া যায়, এবং সাম্প্রতিককালে একজন সংগীত-রচয়িতা ও গায়ক 888sport live footballের জন্য নোবেল 888sport app download bd পর্যন্ত পেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের যে-গ্রন্থটি নোবেল 888sport app download bd পেয়েছিল সেটিরও পরিচয় ছিল একটি গানের সংকলন হিসেবেই।

মানুষের গান মানুষই গাইবে, মানুষের 888sport live footballও মানুষই সৃষ্টি করবে। সৃষ্টি করবে এবং রক্ষাও করবে, মনুষ্যত্বের প্রয়োজনে এবং অন্তর্গত মনুষ্যত্ব দ্বারা। গানের পরেও গানের রেশ কাটে না; 888sport live footballপাঠেও তেমনটা ঘটে, শেষ হয়েও হয় না। গান মানুষের ভেতরে রদবদল আনে, 888sport live footballও মানুষকে বদলে দেয়। 888sport live football আসলে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আরো গভীর ও স্থায়ী ভাবে। 888sport live footballের দ্বারা সাধিত পরিবর্তন যেমন অনুভবের জগতে ঘটে তেমনি ঘটে চিন্তার জগতেও। এইখানেও দেখি 888sport live football গানকে বিশেষভাবে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

চিন্তা ছাড়া 888sport live football নেই। আর ওই চিন্তাতেই পাওয়া যাবে 888sport live footballের দার্শনিকতাকে। বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত এমন কোনো মহৎ কবির আবির্ভাব ঘটেনি, যিনি একই সঙ্গে বড় একজন দার্শনিকও ছিলেন না। কথাটা খুবই সত্য। দার্শনিকতা 888sport live footballকে গভীরতা দেয় এবং কালজয়ী হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে। তবে 888sport live footballের দার্শনিকতা দার্শনিকদের দার্শনিকতার মতো নয়, ভিন্ন বটে। দার্শনিকরা সাধারণীকরণ করেন, তাঁদের তত্ত্ব যুক্তির ওপর নির্ভর করে। 888sport live footballিকরা দর্শনের কথা বলেন অভিজ্ঞতার বিষয় হিসেবে। তাই বলে যুক্তির পারম্পর্যের অভাব যে 888sport live footballে ঘটে তা নয়। তবে 888sport live footballের স্রষ্টারা কিন্তু সাধারণীকরণ করতে চান না, নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করেন, যদিও তাঁরা যা বলেন তা সাধারণ সত্য হিসেবে গৃহীত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। দর্শন কখনো কখনো সিদ্ধান্ত থেকে দৃষ্টান্তে নেমে আসে; 888sport live football সব সময়েই দৃষ্টান্ত থেকে সিদ্ধান্তে যায়। আর যাচ্ছে যে সেটা বলে না, ঘোষণা করে না, কিন্তু দেখা যায় পৌঁছে গেছে সিদ্ধান্তে, পাঠক সেটা টের পায়; 888sport live footballের পাঠক 888sport live footballকে সেভাবেই দেখে, বিবেচনা করে, অনুভব করে। আর ওই গ্রহণেই রয়েছে 888sport live footballের সর্বজনীনতা। ধরা যাক, আমাদের অতিপরিচিত চরিত্র শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের কথা। হ্যামলেটের সমস্যাটি কি? মনে হবে প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণ। কিন্তু সমস্যাটা যদি ওইখানেই সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে হ্যামলেট হ্যামলেট হতো না এবং হ্যামলেটকে সর্বজনীন বলা যেত না। হ্যামলেট সর্বজনীন হয়েছে তার বিদ্রোহের কারণে। সে তরুণ; বয়স তার বেশি নয়, ইউরোপের খ্যাতিমান এক বিশ^বিদ্যালয়ে দর্শনের ছাত্র সে।

তরুণরা বিদ্রোহ করে, হ্যামলেটের ভেতর তারুণ্যের ওই বিদ্রোহটা রয়েছে। কিন্তু কেবল যে বিদ্রোহের কারণেই তার সর্বজনীনতা তা বলা যাবে না। হ্যামলেটের বিদ্রোহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এমন বিদ্রোহ সব কালেই সত্য, সব দেশেই। এই রাজপুত্রের ভেতর সাহসের কোনো অভাব ছিল না। অত্যন্ত সাহসী সে। প্রয়োজনে রক্তপাত ঘটানোতেও তার দ্বিধা নেই। কিন্তু সে আবার দ্বিধার জন্যই বিখ্যাত। তার দ্বিধা এইখানে যে, সে জানে না অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার পথটা কী? সেটি কোথায় পাওয়া যাবে? কীভাবে? হ্যামলেট এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে। আত্মহত্যা যদি পৃথিবীর সমুদয় অন্যায় থেকে মুক্তির পথ বলে সে নিশ্চিতভাবে জানতো, তাহলে আত্মহত্যা করবে – এমন চিন্তা সে করেছিল। কিন্তু তার দার্শনিক মন বলেছে, মৃত্যুর পরে যদি দুঃস্বপ্ন হিসেবে পৃথিবীর অন্যায়গুলি সব ফিরে আসে তখন কী হবে? তখন সে পালাবে কোথায়? কেমন করে পাবে মুক্তি? আবার দার্শনিকতা আছে তার এই উপলব্ধিতেও যে, অন্যায় কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চতুর্দিকেই তো অন্যায় সুবিস্তৃত ও ক্রমবর্ধমান। তার পিতৃব্য তার পিতাকে হত্যা করেছে, হত্যা করে রাজসিংহাসন দখল করে নিয়েছে। তার মা ওই পিতৃঘাতককে বিয়ে করে রানি সেজেছেন। হ্যামলেট যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল সেই মেয়েটি অত্যন্ত দুর্বলচেতা। হ্যামলেটের ভাবী শ^শুর রাজার একজন গুপ্তচর – সে তার দুর্বল কন্যাটিকে ব্যবহার করছে হ্যামলেটের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে; রাজাই ওই পারিষদকে অমন দায়িত্ব দিয়েছে। হ্যামলেটের ছেলেবেলার দুই বন্ধু রাজার পক্ষে চলে গেছে; এবং তাকে হত্যা করার জন্য রাজা ষড়যন্ত্রের যে জাল বিছিয়েছে তার অংশীদার হয়ে গেছে। ওদিকে রাজাকে হত্যা করতে গিয়ে হ্যামলেট ভুলক্রমে তার ভাবী শ্বশুরকেই খুন করে ফেললো। খুন করে সেও অপরাধী হয়ে পড়লো তার সম্ভাব্য স্ত্রী ও স্ত্রীর ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তরুণী মেয়েটিও শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যাই করে বসলো। এভাবে একের পর এক নতুন নতুন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে হ্যামলেট দেখতে পাচ্ছে চতুর্দিকে কেবল অন্যায়, আর অন্যায়কারীর 888sport free bet কেবল বাড়ছেই, অন্যায়ের শক্তি ও বিস্তার, দুটোই ঘটছে। অথচ তার চারপাশে এমন কেউ নেই যে তাকে সাহায্য করবে, সব কথা যাকে সে খুলে বলতে পারে, যে বুঝবে তার গোপন ব্যথাটা কোনখানে। সংকটাচ্ছন্ন হ্যামলেটের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতার, একাকিত্বের, দায়িত্ব বহনে অপারগতার এবং ন্যায়-অন্যায়ের পৃথকীকরণের ভেতর যে দার্শনিকতা রয়েছে সেটা যে এক দেশে একজন ব্যক্তির ব্যাপারে সত্য তা তো নয়, ওই সংকট  যে-কোনো মানুষের জন্য সত্য হতে পারে, যদি তার ভেতর সংবেদনশীলতা ও দার্শনিকতা থাকে।

888sport live footballে দার্শনিকতা ও সংবেদনশীলতা একসঙ্গে যায়; তাই অনেক সময়েই দর্শন যা পারে না 888sport live football সেটাও করে ফেলে। মানুষকে নাড়িয়ে দেয়। দার্শনিক সত্যকে সে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ব্যাপার করে তোলে। 888sport live football ক্ষমতা রাখে মানুষকে বদলে দেওয়ার, ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক পরিবর্তন আনার।

888sport live footballের দর্শনটা অংকের যোগ-বিয়োগের মতো নয়, বীজগণিতের সমীকরণসুলভও নয়, অথচ এই দর্শনও যুক্তি মেনে চলে; যুক্তি মেনে যুক্তি যা করতে অসমর্থ তা করে ফেলে, মানুষের সংবেদনশীলতার ও দার্শনিকতার অংশ হয়ে যায়।

যাকে দর্শন বলছি তাকে মতাদর্শ নামে চিনলেও ক্ষতি নেই। এবং এটা সত্য যে, 888sport live footballের সঙ্গে মতাদর্শের সম্পর্কটা অনিবার্য ও অপরিহার্য। নৃত্যকে যেমন পৃথক করার উপায় নেই নৃত্য888sport live chatী থেকে, 888sport live footballকেও তেমনি বিচ্ছিন্ন করা যায় না তার অন্তর্গত দর্শন থেকে, সম্পর্কটা এমনই অঙ্গাঙ্গী। মতাদর্শ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, যা দিয়ে লেখক জীবন ও জগৎকে দেখেন। রবীন্দ্রনাথকে কী আমরা আলাদা করতে পারি, তাঁর জীবনদৃষ্টি থেকে? জালিয়ানওয়ালাবাগের বর্বর হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেটা তাঁর মতাদর্শেরই অংশ বটে। জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে তিনি যে ‘সভ্যতার সঙ্কট’ লিখেছিলেন সে-লেখা তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। কাজী নজরুল ইসলাম যে নজরুল হয়েছিলেন তা তাঁর ভেতরে বিপ্লবী যে-সত্তাটি ছিল তারই তাগিদে। তাঁর সময়ে অন্য কবিরা চেষ্টা করেছেন।

রবীন্দ্র-বলয়ের বাইরে যাওয়ার; সে-কাজে নজরুল যে অমন সাফল্য অর্জন করেছিলেন তার কারণ নজরুলের বিদ্রোহটা 888sport live footballের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল না; সেটি ছিল মতাদর্শিক। অন্যরা পারেননি, কারণ তাঁদের বিদ্রোহটা সীমিত ছিল; চিন্তার ব্যাপারে তাঁদের মৌলিকতা ছিল অগভীর। জীবনানন্দ দাশও স্বতন্ত্র হতে পেরেছিলেন তাঁর দার্শনিক স্বাতন্ত্র্যের কারণে। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি ইউরোপে বিস্ময়কর সম্মান পেয়েছে; এর প্রধান কারণ অবশ্যই রচনার নান্দনিক সৌন্দর্য, কিন্তু ওই সৌন্দর্য রচনার অন্তর্গত দার্শনিকতাকে বাদ দিয়ে নয়; বস্তুত দার্শনিকতাই মূর্ত হয়ে উঠেছে নান্দনিকতার মধ্য দিয়ে ও নান্দনিকতাকে ধারণ করে। তবে এ দার্শনিকতা তত্ত্বের ব্যাপার থাকেনি, পরিণত হয়েছে অনুভূতিতে। বুদ্ধি সেখানে এক হয়ে গেছে হৃদয়ের সঙ্গে, ওই দুইয়ের ভেতরকার দ্বন্দ্বটা অক্ষুণ্ন রেখেই; যুক্তি থেকেছে, তবে গণিতের মতো নয়, অভিজ্ঞতার মতো। সময়টা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বক্ষণ; পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির দ্বন্দ্বে বিপন্ন ইউরোপ তখন একটা নতুন স্বর ও সুর চাইছিল, এবং রবীন্দ্রনাথ সেটা সরবরাহ করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এবং 888sport live footballের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সময়ে ব্রাহ্মণ্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের যে তৎপরতা চলছিল সেগুলিকে তিনি একাধারে করুণ ও কৌতুককর করে তুলেছেন তাঁর গোরা 888sport alternative linkে।

কখনো কখনো এমনও ঘটে যে, লেখক যা বলতে চাইছেন, তাঁর লেখা সেটা বলে না। এর কারণ এই যে, বুদ্ধি দিয়ে লেখক যা স্থির করেছেন তাঁর হৃদয়ানুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সেটির শাসন মানছে না। এ ব্যাপারে ফরাসি ঔপন্যাসিক বালজাকের দৃষ্টান্ত সুপরিচিত। বালজাক নিজে ছিলেন রক্ষণশীল; কিন্তু তাঁর লেখাতে তাঁর সময়ের ফরাসি সমাজের যে ছবি তিনি এঁকেছেন তা সমাজপরিবর্তনকারী প্রগতিশীল আন্দোলনকে সাহায্য করেছে, বিপ্লবের অভিমুখে এগিয়ে যেতে। সেজন্য এই মতটা চালু আছে যে, লেখককে বিশ্বাস না-করে বিশ্বাস করতে হবে তাঁর লেখাকে।

প্রথম জীবনে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে দেখতে পেয়েছিলেন পুতুলের মতো অসহায় অবস্থায় ও অবস্থানে; পরে দেখলেন মানুষের সংগ্রামশীলতা, দেখতে পেলেন মানুষ কীভাবে নিজের অবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছে; এই দৃষ্টিভঙ্গিটি অর্জনে তাঁকে সহায়তা করেছে মার্কসবাদী দর্শনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। কিশোর বয়সেই সুকান্ত ভট্টাচার্য যে অসাধারণ সব 888sport app download apk লিখেছেন সে-কাজ কী সম্ভব হতো যদি তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না হতেন? 888sport cricket BPL rate বছর বয়সে সোমেন চন্দ অনন্যসাধারণ যে একটি ছোট গল্প লিখেছিলেন ‘ইঁদুর’ নামে;  সে-কাজটি তিনি কিছুতেই করতে পারতেন না, যদি তিনি মার্কসবাদী না হতেন। এবং তিনি যে অত অল্প বয়সে প্রাণ হারালেন, সেটাও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অস্ত্রাঘাতেই। ওই প্রতিপক্ষও নিজেদের বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী বলতো, কিন্তু তারা মার্কসবাদী ছিল না; আর বিরোধটা ছিল সেইখানেই, যার মাঝখানে পড়ে সোমেন চন্দের মতো অসামান্য মেধাবান একজন 888sport live footballিক অকালে বিদায় নিলেন।

888sport live footballিক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন অতুলনীয়। যেমন চরিত্র সৃষ্টিতে, তেমনি গদ্যরীতিতে নান্দনিক সৌন্দর্যের সংযুক্তিতে বাংলা 888sport live footballকে তিনি মুক্তির পথে অগ্রসর করে দিয়ে গেছেন; কিন্তু শেষ জীবনে পথ হারিয়ে তিনি ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনবাদী হয়ে পড়লেন, এবং হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে সামাজিক অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকলেন। প্রথম জীবনে তিনি সাম্য নামে বই লিখেছেন; সে-রচনাটি জনপ্রিয় হয়েছিল, কিন্তু জনপ্রিয়তা দেখেই সেটিকে তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন; কেননা ততোদিনে তিনি সাম্যে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। 888sport appsের কৃষকের দুর্দশা নিয়ে তাঁর মতো হৃদয়স্পর্শী রচনা আর কেউ লিখেছিলেন বলে আমরা জানি না, কিন্তু যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকের জন্য ওই

দুঃখ-যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই ব্যবস্থার প্রত্যাহার তিনি চাননি; কারণ তাঁর ভয় ছিল তাতে সামাজিক বিপ্লব ত্বরান্বিত হবে, এবং তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, তিনি সামাজিক বিপ্লবের ‘অনুমোদক’ নন। কারণটা ব্যক্তিগত নয়; কারণটা শ্রেণিগত স্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ যার সঙ্গে জড়িত।

888sport live footballে মতাদর্শ আসলে নানাভাবে কাজ করে, ক্ষতিকর ভাবেও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে দেখা গিয়েছিল যে, ইংরেজ লেখকদের অনেকেই প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েছেন, অথচ পাঠকদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল উল্টো ঘটনা, পাঠকরা হয়ে উঠেছিল প্রগতিশীল। ফলে 888sport live footballে চলে এসেছিল প্রতিক্রিয়াশীলতা।

আজ থেকে একশ বছর আগে ফ্রানৎজ কাফকা ‘রূপান্তর’ নামে যে ছোটগল্পটি লেখেন, বিশ্ব888sport live footballে যেটি একটি অমূল্য অবদান। গল্পের নায়ক একজন তরুণ। সে চাকরি করে একটি কারবারি প্রতিষ্ঠানে; তার উপার্জনের ওপর নিজেকে তো বটেই বাবা, মা ও বোনটিকেও নির্ভর করতে হয়। প্রতিদিন সাতসকালে উঠে তাকে ট্রেন ধরার জন্য ছুটতে হয়; দিনমান কাটে কারবার-প্রতিষ্ঠানের কাজে। এক সকালে সেই যুবক, গ্রেগর সামসা, দেখে যে সে দানবীয় আকারের এক পতঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আয়তনে তার শরীর ঠিকই আছে; কিন্তু অনেকগুলি হাত-পা গজিয়ে গেছে। সে আর স্বাভাবিক মানুষটি নেই। চলতে-ফিরতে পারে না; লোকে তাকে দেখলে আঁতকে ওঠে।

এ-গল্পটা কেবল গল্প নয়, প্রতীকও। এটি পুঁজিবাদী নিষ্পেষণের প্রতিচ্ছবি বটে। আর্থ-সামাজিক ওই ব্যবস্থা মানুষকে মানুষ থাকতে দেয় না, পতঙ্গ বানিয়ে ছাড়ে। কাফকা পুঁজিবাদকে প্রত্যক্ষ রূপে দেখেছেন; তাকে চিনেছেন। পুঁজিবাদ যে মনুষ্যত্বের ভয়াবহ শত্রু তা তিনি মর্মে মর্মে জেনেছেন। এর হাত থেকে মুক্তির উপায় অবশ্য ততোদিন অনেকেই জেনে গেছে। রুশদেশে সামাজিক বিপ্লব ঘটেছে, এবং সেখানকার মানুষ মুক্ত হয়েছে। কাফকার আপনজনদের মধ্যে কেউ কেউ সমাজবিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কাফকা নিজে সে-পথে এগোতে পারেননি। তাঁর স্বাস্থ্য ভালো ছিল না, বেঁচেছিলেন মাত্র ৪১ বছর; স্বভাবে মোটেই অসামাজিক ছিলেন না, কিন্তু তাঁর কোনো পারিবারিক জীবন ছিল না, বিয়ে করার মতো সাহস জড়ো করতে পারেননি। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ইহুদি বংশোদ্ভূত, ইউরোপে ইহুদি-বিদ্বেষের সরাসরি শিকার হয়েছেন; এক সময়ে ভেবেছিলেন বিয়ে করে সপরিবারে প্যালেস্টাইনে চলে যাবেন, প্যালেস্টাইন তখন ইংরেজদের কর্তৃত্বাধীন। কিন্তু তাঁর বিয়ে করা হয়নি, প্যালেস্টাইনে যাওয়াও ঘটেনি। এখন যদি জীবিত থাকতেন তাহলে প্যালেস্টাইনে জায়েনবাদের নিকৃষ্টতম বর্বরতা দেখে নিশ্চয়ই মর্মাহত হতেন। আরো ভয়াবহ ভাবে জানতে পারতেন পুঁজিবাদ কীভাবে মানুষের বাঁচার অধিকার কেড়ে নেয়।

888sport live footballে ইতিহাস থাকে, এবং ইতিহাসের ভেতর থেকেই 888sport live footballিকরা 888sport live footballের চর্চা করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের নায়িকারা পুরুষদের ছাড়িয়ে যায় নিজেদের গুণে; বিধবা 888sport promo codeদের দুঃখ হৃদয় দিয়ে বুঝেছেন তিনি; কিন্তু বিধবা-বিবাহ সমর্থন করতে পারেননি। কারণ সমকালীন ইতিহাসের রক্ষণশীল ধারার তিনি অনুগত ছিলেন। সমাজে মেয়েদের দুঃখ-বেদনা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জানতেন; 888sport promo code মুক্তির পক্ষে তিনি জোরালোভাবে লিখেছেন; কিন্তু তাঁর পক্ষেও 888sport live footballে বিধবা মেয়েদের বিবাহ দেওয়াটা সম্ভব হয়নি। কারণ তাঁর ভয় ছিল, পাঠক সেটা পছন্দ করবে না। অথচ বিদ্যাসাগর কিন্তু সমসাময়িক ইতিহাসের ভেতর থেকেই বিধবা বিবাহের জন্য আন্দোলন করেছেন। কারণ তিনি বিদ্রোহী ছিলেন, অনেকটা বিপ্লবীই বলা যায়। তবে এটাও সত্য যে, আইনসম্মত করার পরেও বিধবাবিবাহ জনপ্রিয় হয়নি; এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি জয়যুক্ত হতে পারেননি। সমকালীন ইতিহাস তাঁর উদ্যোগকে সহায়তা দেয়নি।

জীবনানন্দ দাশ যে মহৎ কবি হয়ে উঠেছিলেন তার একটা কারণ তাঁর ইতিহাস-চেতনা। মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে তথাকথিত রাক্ষসদের নায়ক করে মেঘনাদবধ কাব্য লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে তৎকালীন ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের আর্ত হৃদয়ের যে ক্রন্দন, সেটা ওই কবির শুনতে পাওয়াতে। এবং তাঁর নিজের ভেতরে বিদ্রোহী চেতনা এবং দেশপ্রেম দুটোই প্রবল থাকায়। গদ্যে লেখা প্রহসন দুটির একটিতে তিনি তাঁর কালের ‘আধুনিকতা’র অভ্যন্তরে যে একটি কৃত্রিমতা ছিল সেটি উন্মোচিত করে দিয়েছেন, অপরটিতে জমিদারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রজারা কীভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ভুলে একাট্টা হয়ে লড়ছে তার ছবি এঁকে মুক্তির পথ কোন দিকে তার আভাসটি তুলে ধরেছেন।

ইতিহাস আছে টলস্টয়ের 888sport alternative link যুদ্ধ ও শান্তিতে। কিন্তু সে-ইতিহাস যুদ্ধবিগ্রহের নয়, যদিও 888sport alternative linkের ভেতরের সময়টা যুদ্ধেরই। টলস্টয় তাঁর 888sport alternative linkটি লিখেছেন যুদ্ধকালে মানুষের জীবনযাপন নিয়ে। এবং সেখানে যে ইতিহাসটা পাওয়া যায় তা ইতিহাসবিদদের লেখার তুলনায় অনেক বেশি জীবন্ত ও মানবিক। 888sport live footballে যে ইতিহাস আমরা পাই সেটি মানুষের কাহিনি, ঘটনার ধারাবিবরণী নয়। ইতিহাসকে মানবিক করার কাজটি কেউ করতে পারে, এবং করেও।

আন্না কারেনিনা 888sport alternative linkে টলস্টয় সমকালীন সমাজ কী ভাবে রুশ বিপ্লবকে অনিবার্য করে তুলেছে সেটা দেখিয়েছেন। তাঁর কালের বুর্জোয়া সমাজের সবচাইতে সংবেদনশীল ও প্রাণবন্ত প্রতিনিধি হচ্ছে আন্না নামে এক কল্পিত 888sport promo code। কিন্তু ওই 888sport promo code জীবনের চরিতার্থতা খুঁজে পেল না তার সমাজের অমানবিক নৃশংসতার কারণে। শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যা করলো। রেললাইনকে টলস্টয় দেখেছেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিভূ হিসেবে; সেই রেললাইনের ওপর চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজেকে নিক্ষেপ করে জীবনযন্ত্রণার অবসান ঘটালো তার আন্না। এর উল্টোদিকে সৃষ্টিশীল কাজও চলেছে, সংবেদনশীল মানুষেরা মৌলিক সামাজিক পরিবর্তনের পথ খুঁজছে, বিপ্লবের জন্য কাজ করছে। পতন ও সৃষ্টিশীলতা, দুয়ে মিলে জানিয়ে দিচ্ছে যে, বিপ্লব না ঘটে পারে না। সে-বিপ্লব ঘটেছে বইকি।

888sport live footballপাঠের বেলাতে এই রকমের একটি মত সুপ্রতিষ্ঠিত যে, সেখানে গমনটাই মুখ্য, গন্তব্য নয়। চলতে গিয়ে নানা দৃশ্য আর বিচিত্র সব ঘটনার দেখা পাওয়া যাবে, ট্রেনের দূরযাত্রীরা যেমনটা পেয়ে থাকে; যাত্রাপথে ও চলমান কালে। ওই অভিজ্ঞতাটাই হলো মূল্যবান, গন্তব্যে পৌঁছলে তো আনন্দলাভের সমাপ্তি। এই মতবাদ কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা 888sport live footballে গমন সত্য, গন্তব্যও সত্য; আদতে গমনটা মোটেই গন্তব্যহীন নয়। গন্তব্যে পৌঁছলে অভিজ্ঞতা পূর্ণতা পায়। গন্তব্য জানা

থাকলেও 888sport slot gameের আনন্দ মোটেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মোট কথা, 888sport live footballপাঠ উদ্দেশ্যহীন নয়, হতে পারে না। এবং সে-উদ্দেশ্য কেবল যে নান্দনিক সুখানুভব তা নয়, দার্শনিক উপলব্ধিও বটে। 888sport live footballের গভীরে দর্শন থাকে বলেই একই রচনা বারবার পড়া যায়, এবং প্রত্যেকটি পাঠকেরই নতুন মনে হয়। তার কারণ অবশ্য এটাও যে, দর্শন আছে ঠিকই, কিন্তু সে-দর্শন মোটেই গাণিতিক নয়, পরিপূর্ণরূপে 888sport live footballিক বটে।

888sport live footballের মিত্র যদি হয় মনুষ্যত্ব তাহলে শত্রুটা কে? শত্রু হচ্ছে অমানবিকতা, যার কেন্দ্রে রয়েছে সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা। 888sport live football চায় মানুষকে যুক্ত করতে – মানুষের সঙ্গে,

 প্রকৃতির সঙ্গে, ইতিহাসের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের মৈত্রী গড়া তার লক্ষ্যগুলির একটি। মানুষকে সংবেদনশীল, দর্শনমনস্ক ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন করার দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। অপর পক্ষে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন, মুনাফালিপ্সু এবং স্থূলভাবে ভোগবাদী করে তোলা।

সন্দেহ নেই যে 888sport live football বর্তমানে সংকটের ভেতর রয়েছে। লোকে এখন আগের মতো বই পড়ে না, পড়তে চায় না। এর একটা কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অগ্রগতি একদিকে মানুষকে অত্যন্ত ব্যস্ত রাখছে জীবিকার ও মুনাফা অর্জনের কাজে এবং ব্যস্ত রেখে মানুষকে অসামাজিক করে তুলছে, সংকুচিত করছে তার মনুষ্যত্বকে। অন্যদিকে প্রযুক্তির উন্নতি গ্রন্থকে যেমন সহজলভ্য করছে, তেমনি করে তুলেছে পড়ার যত না তার চেয়ে অধিক দেখার বস্তুতে। বই তো দেখার বস্তু নয়, পড়ার বিষয়। পড়তে হয় মন দিয়ে তো বটেই, কান ও চোখ দিয়েও। 888sport live footballের অভ্যন্তরে যে সংগীত থাকে তা চোখে দেখা যায় না, কান পেতে শুনতে হয়। আর বই মানে বই-ই; ছাপানো বাঁধানো একটি জিনিস, তাকে সঙ্গে রাখা যায়, কাছে রাখতে পারি, পেতে পারি শেলফে, এবং পাঠাগারে। গ্রন্থ পাঠের ব্যাপারে যন্ত্রের হস্তক্ষেপ অহেতুক বিড়ম্বনা সৃষ্টির কারণ।

তাই বলে বইয়ের দুর্দশার জন্য যন্ত্র 888sport apk ও প্রযুক্তি কিন্তু দায়ী নয়। দায়ী সম্পদের পুঁজিবাদী মালিকানা। যন্ত্রের যারা মালিক তারা চায় না মানুষ বই পড়ুক, বিশেষ করে 888sport live footballের বইয়ের ব্যাপারে তাদের ভীষণ অনীহা। কারণ 888sport live footballপাঠ মানুষকে সংবেদনশীল করবে; আর সংবেদনশীলতা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রাথমিক স্তর। পুঁজিবাদ মানুষের মনুষ্যত্বের তো অবশ্যই, এমনকি প্রাণ ও প্রকৃতিরও শত্রু, শত্রু তাই সে 888sport live footballেরও। পুঁজিবাদ বাজার চায়, মানুষ চায় না। সবকিছুকেই সে পণ্য করে তোলার ইচ্ছা রাখে। বস্তুর অভ্যন্তরীণ মূল্য বাড়ায় না, বিজ্ঞাপন ও মোড়কের সাহায্যে তার দাম বাড়াতে থাকে। পুঁজিবাদের বিশেষ আগ্রহ মারণাস্ত্র, মাদক ও পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিক্রিতে। কারণ তাতে মুনাফা সর্বাধিক। মানুষের ক্ষতিবৃদ্ধি নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।

মৃত্যুর তিন মাস কয়েকদিন আগে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অভিভাষণটি রচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ ওই সভ্যতার দানকে। অথচ আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি, চলছে; এবং ‘অকিঞ্চিতকর উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ যে ভস্মস্তূপকে’ দেখে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত পীড়িত বোধ করছিলেন সেটা আসলে ছিল ইউরোপেরই দান; ইউরোপীয় পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদই ওই ধ্বংসকাণ্ড ঘটিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তাকে ওই পরিচয়ে অভিহিত করেননি। এর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে আমেরিকা ও জাপানে তিনি যে অভিভাষণ দিয়েছিলেন তাতেও আসলে মুক্তিসংগ্রামী জাতীয়তাবাদকে নয়, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেই বলেছিলেন; যদিও ওই নামে তাকে ডাকেননি।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে, কিন্তু তৃতীয় একটি বিশ্বযুদ্ধের শংকা ও প্রস্তুতি দুটোই সমান তালে এগোতে থাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয় কোনো বিশ্বযুদ্ধ বাধেনি ঠিকই, কিন্তু নানা পথে ও বহু ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঠিকই চলেছে। হ্যাঁ, উন্নতি ঘটেছে, এবং সেটা অবিশ্বাস্য পরিমাণে ও অপ্রতিরোধ্য গতিতে; কিন্তু যতো ঘটেছে উন্নতি ততো বেড়েছে বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতা। উন্নয়নের তৎপরতা বিশ্ববাসীকে, এবং বিশ্বকেও, ধ্বংসের শংকার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পুঁজিবাদী সভ্যতার সাম্প্রতিক অবদান হচ্ছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ, যার হাতে কেবল যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুই ঘটেছে তা-ই নয়, মানুষের মনুষ্যত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। করোনাকে বলা যায় পুঁজিবাদের যথার্থ প্রতীক ও বিশ্বস্ত দূত; তার বাণী ছিল, বাঁচতে হলে সর্বপ্রকার সামাজিকতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দাও এবং আত্মস্বার্থ রক্ষার আদিম গুহাতে আক্ষরিক অর্থেই প্রত্যাবর্তন করো। আর এখন এই মুহূর্তে যখন এই লেখাটি লিখছি তখন প্যালেস্টাইনে জায়নবাদী ইসরায়েল গাজার অবরুদ্ধ মানুষের ওপর গণহত্যার যে ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সেটাও পুঁজিবাদী সভ্যতারই দান। গাজাতে মানুষের বসবাস ছিল সর্বমোট ২৩ লক্ষ, সেখানে ২৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু ও 888sport promo code। ২২ লক্ষ মানুষ সেখানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এবং ফিলিস্তিনিদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির যতকিছু অর্জন ছিল সবটাকেই নিশ্চিত করে দেওয়ার তৎপরতায় কোনো বিরতি ঘটছে না। একদা হিটলার যে-কাজ করেছিল, আজ নেতানিয়াহু সেই কাজই করছে; এবং বিস্ময়কর যা তা হলো, হিটলারের হাতে যারা অতি নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন, সেটা আজ করছে তাদের পক্ষের-বলে-দাবিদার কিছু মানুষ। এটা বিস্ময়কর এদিক থেকে যে, মানবসভ্যতা তো এতদিনে অনেক দূর এগিয়েছে; কিন্তু এটা আবার স্বাভাবিকও, কেননা পুঁজিবাদী উন্নয়নের ভেতরেই রয়েছে আধিপত্যবাদের ওই মানুষ্যত্ববিনাশী নৃশংসতার বীজ।

১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ আশা করেছিলেন, ‘মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে।’ বলা বাহুল্য, সে আশা পূরণ হয়নি, উল্টো ‘মহাপ্রলয়ের’ ধ্বংসলীলা আরো প্রসারিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসবে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে’, এবং ‘সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে এই পূর্ব দিগন্ত থেকেই’। তা তেমন একটা ঘটনা ঘটেছিল বইকি, তাঁর এই আশাবাদ প্রকাশের আট বছরের মধ্যেই চীন দেশে মস্ত বড় এক বিপ্লব ঘটেছিল। কিন্তু সেই চীনও আজ আর ‘বিপ্লবী’ নেই, বিপ্লবের সমুদয় ফসলকে আত্মসাৎ করে চীনের হর্তাকর্তারা এখন পথ ধরেছে পুঁজিবাদের।

উন্নয়নের সর্বশেষ ও ‘সর্বোৎকৃষ্ট’ অবদান হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই বুদ্ধিমত্তা মানুষের হয়ে এবং মানুষের তুলনায় অনেক বেশি নিপুণতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করবে। মানুষের শ্রম কমবে, উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের কোনো দ্বন্দ্ব দেখা দেবে না। ফলে পরিবেশ হবে পরিপূর্ণ রূপে শান্তিপূর্ণ। অনেকটা গোরস্তানের মতো।

কিন্তু বিপদ যেটা ঘটতে পারে সেটা অতিশয় ভয়ংকর। কারো কারো মতে, অ্যাটম বোমার চেয়েও বড় রকমের ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। প্রাচুর্য আসবে, কিন্তু মানুষ তার সৃষ্টিশীলতা ও সংবেদনশীলতা হারাতে থাকবে। অর্থাৎ মানুষ আর মানুষ থাকবে না, যান্ত্রিক হয়ে পড়বে, এবং আরো যা ভয়াবহ তা হলো, যন্ত্র মানুষের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে চাইবে। ওই দুষ্কর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যর্থ হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। আর ওই বুদ্ধিমত্তার মালিকানা যেহেতু চলে যাবে কতিপয়ের হাতে, তাই তাকে ব্যবহার করা হবে মানুষের বিদ্রোহ দমনে; অবশ্য তৎপূর্বেই মানুষ যদি বিদ্রোহ করার সক্ষমতা খুইয়ে না ফেলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা 888sport live footballকেও ছাড় দেবে না। অনেকে এখনই হাতে লেখেন না, লেখেন যন্ত্র ব্যবহার করে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শাসনামলে যন্ত্র নিজেই লিখে দেবে লেখকের হয়ে। কৃত্রিম সে-লেখা আর যা-ই হোক 888sport live football হবে না। 888sport live footballের সঙ্গে এই যে নিষ্ঠুর শত্রুতা, এর সমস্তÍটাই ঘটবে পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়।

শেক্সপিয়রের হ্যামলেট এবং কাফকার গ্রেগর সামসার মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। সময়ের দিক থেকে তিনশো বছরের কাছাকাছি, সামাজিক অবস্থান তাদের পুরোপুরি ভিন্ন। একজন ভবিষ্যতের রাজপুত্র, অন্যজন বেতনভূক নিম্নবিত্ত কর্মচারী; কিন্তু মিল এইখানে যে, দুজনেরই প্রাণহানি ঘটে অল্প বয়সে। এবং এইখানেও যে, দুটি ঘটনাই ঘটেছে রাষ্ট্রের শাসনাধীনে। রাষ্ট্র দুটি অবশ্য এক রকমের নয়। হ্যামলেটের বসবাস ছিল রাজতন্ত্রের অধীনে; সামসা ছিল প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে; কেবল তা-ই নয় রাষ্ট্র যে ব্যবস্থার লালনপালনকারী সেখানে সম্পদের মালিকানা ছিল ব্যক্তিগত, যে জন্য অন্য মানুষদের মতো এদের বেলাতেও জীবন তার মূল্য হারিয়েছিল। টলস্টয়ের আন্না কারেনিনার আত্মহত্যা ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে; তার স্বামী এবং প্রেমিক উভয়েই ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ, উচ্চ রাষ্ট্রকর্মচারী; তারা কেউই পারেনি আন্নাকে চরিতার্থতা দিতে; উল্টো তারাই মেয়েটিকে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর দিকে। রাষ্ট্র কেবল যে এই মানুষগুলির সঙ্গেই শত্রুতা করেছে তা নয়; রাষ্ট্রের শত্রুতা 888sport live footballের সঙ্গেও। চরিত্রগতভাবেই রাষ্ট্র হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী; রাষ্ট্র চায় অনুগত সেবক, 888sport live football চায় সংবেদনশীল ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন মানুষ। দুয়ের লক্ষ্য এক তো নয়ই, বরং পরস্পরবিরোধী। রাষ্ট্র 888sport live footballিককে পারিতোষিক দিতে পারে, অনেক সময় দেয়ও; কিন্তু 888sport live footballের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা মিত্রের নয়, শত্রুর বইকি।

রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ছিল, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ আমরাও বিশ্বাস করি যে, ওই বিশ্বাসই ভরসা। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির পুরাতন পথ ধরে এগোলে মুক্তি আসবে না, বরং বিপর্যয়ই আরো নিকটবর্তী, ব্যাপক ও গভীর হবে। সভ্যতার শত শত বছরের অগ্রগতির ধারা দাসব্যবস্থা ও সামন্তবাদকে ভেঙে পুঁজিবাদে এসে পৌঁছেছিল, এবং পুঁজিবাদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মানবমুক্তির, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি সে রক্ষা করতে পারেনি, নিজের চরিত্রের কারণে। আগের সভ্যতার মতোই পুঁজিবাদী সভ্যতার চরিত্রও নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ব্যক্তিমালিকানার দ্বারাই। মুক্তির জন্য আজ তাই নতুন এক সভ্যতা গড়ে তোলা আবশ্যক, এবং সেই সভ্যতা হবে পুঁজিবাদবিরোধী, সরলার্থে সম্পদের সামাজিক মালিকানাভিত্তিক।

ওই সভ্যতা গড়ার জন্য 888sport live football আমাদের সহায়তা দেবে। কারণ 888sport live football চরিত্রগতভাবেই সামাজিক। 888sport live football ব্যক্তিই পাঠ করে এটা ঠিক, কিন্তু পাঠ করে একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে, এবং যত পাঠ করে ততোই সে আরো সামাজিক হয়। আর 888sport live football যিনি সৃষ্টি করেন তিনি মেধাবান অবশ্যই, কিন্তু তিনি সমাজেরই মানুষ, এবং মানুষের প্রয়োজনে ও মানুষের জন্যই তাঁর সৃষ্টিনিমগ্নতা ঘটে।

888sport live football সমাজ বদলে সাহায্য করবে; কিন্তু 888sport live footballের কাছে তো আমরা সঠিকভাবে যেতেই পারবো না সমাজ যদি না বদলায়। সমাজ বদলানোটাই এখন মুখ্য প্রয়োজন; এবং সে প্রয়োজনে সামাজিক বিপ্লব আবশ্যক। কাজটা রাজনৈতিক, কিন্তু সেটি সম্ভব হবে না প্রয়োজনীয় সাংস্কৃতিক জাগরণ না ঘটলে। সমস্যাটা আজ সারাবিশ্বের; সাংস্কৃতিক জাগরণের জায়গাটাও কেবল স্থানীয় হলে চলবে না, তাকে হতে হবে আন্তর্জাতিক। বস্তুত একই সঙ্গে সে হবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক। জাগরণটা স্থানেই ঘটবে, তবে তার লক্ষ্য হবে বিশ্ব থেকে পুঁজিবাদকে বিতাড়িত করা। ওই লক্ষ্যে সে হবে আন্তর্জাতিক।

সার কথাটা হলো, 888sport live footballের চর্চা চাই। এবং 888sport live football চর্চার ক্ষেত্রে রচনার অন্তর্গত ইতিহাস ও দর্শনকে যেন না ভুলি। ইতিহাস এবং দর্শনের পাঠও আজ বিপদগ্রস্ত। কারণটা অভিন্ন; এবং সেটি অন্যকিছু নয়, উন্নয়নের পুঁজিবাদী ধারা ভিন্ন।

[‘কালি ও কলম 888sport live football সম্মেলন ২০২৪’-এ পঠিত। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।]