888sport live football ও চিত্র888sport live chatী রানী চন্দ

মৃণাল ঘোষ

রানী চন্দ (১৯১২-৯৭) রবীন্দ্রসান্নিধ্যের এক গৌরবময়ী ব্যক্তিত্ব। মোটামুটি ১৯২৮ থেকে ১৯৪১-এ কবির প্রয়াণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর কাছাকাছি ছিলেন। কবির দেখাশোনা করেছেন। সেবা ও শুশ্রূষা করেছেন। লেখায় ও ছবি অাঁকায় প্রতিনিয়ত সাহায্য করেছেন। কবির শেষ পর্বের বেশকিছু লেখা রানীর অনুলিখনে লিখিত। এটা তাঁর গেŠরবের একটা দিক মাত্র। এর বাইরে তিনি আপন সৃজনশীলতায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক মানবী। একাধারে লেখক ও চিত্র888sport live chatী। তবে লেখক হিসেবে তিনি যতটা সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত, চিত্রী হিসেবে ততটা নয়। তাঁর লেখা অনেক বইয়ের মধ্যে গুরুদেব (১৩৬৯ বঙ্গাব্দ), 888sport live chatীগুরু রবীন্দ্রনাথ (১৩৭৯), শান্তিনিকেতনকে ঘিরে আত্ম888sport sign up bonusমূলক লেখা সব হতে আপন – এই বইগুলির জন্য তিনি চির888sport app download for androidীয়া থেকে যাবেন। অবনীন্দ্রনাথের বলা থেকে তাঁর আত্ম888sport sign up bonusমূলক দুটি বই অনুলিখন করেছিলেন রানী চন্দ। এই দুটি বই ঘরোয়া (১৩৪৮) ও জোড়াসাঁকোর ধারেও (১৩৫১) তাঁকে 888sport live footballজগতে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। এছাড়া তাঁর  রচনাবলির মধ্যে রয়েছে আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ (১৯৪৯), পূর্ণকুম্ভ (১৯৫৯), হিমাদ্রি (১৩৫৯), আমার মা’র বাপের বাড়ি (১৩৮৪), পথে ঘাটে (১৩৮৪) ও জেনানা ফটক (জুন, ১৯৮৩)।

লেখার পাশাপাশি কৈশোর থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন পর্বে নানা ধারায় ছবি এঁকেছেন। দিল্লি ও বম্বেতে প্রদর্শনীর সূত্রে ভারতের প্রথম মহিলা-888sport live chatীর সম্মান পেয়েছিলেন। কলাভবনে নন্দলাল বসুর কাছে ছবি অাঁকা শিখেছেন। শান্তিনিকেতন থেকে বিস্তৃত নব্য-ভারতীয় ঘরানার আঙ্গিকের প্রখ্যাত একজন 888sport live chatী ছিলেন তিনি। স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের জন্যও তিনি 888sport app download for androidীয়া। মহাত্মা গান্ধীর একান্ত অনুরাগিণী ও স্নেহধন্যা ছিলেন। সেই সূত্রেই ১৯৪২-এর ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কারাবাসও করেছেন ১৯৪২-এর আগস্ট থেকে প্রায় আট মাস। নন্দলালের প্রভাব এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদী চেতনার দায়বোধে ঐতিহ্য-আশ্রিত ভারতীয় চিত্ররীতিতেই তিনি কাজ করেছেন বরাবর। কিন্তু তাঁর  888sport live chatী-পরিচিতি খুব বেশি প্রসারিত হতে পারে নি। হয়তো তিনি মহিলা বলে। হয়তো আমাদের 888sport live chat-ইতিহাসের যাঁরা ধারক-বাহক, তাঁরা ততটা গুরুত্ব দেন নি বলে।

২০১২ সালে তাঁর জন্মশতবর্ষ 888sport app download for android করে কলকাতার সুতানুটি বইমেলার পক্ষ থেকে ‘রানী চন্দ জন্মশতবর্ষ স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁর জীবনীমূলক একটি বইয়েরও পরিকল্পনা করা হয় তখন। রানী চন্দ : জীবন, কুড়োনো কথায় নামে বইটি লেখেন 888sport app download apk চন্দ্র। ‘সূত্রধর’ প্রকাশনা থেকে বইটি প্রকাশিত হয় ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে। এই বইটিরই পাঠ-প্রতিক্রিয়া থেকে এই 888sport live football ও চিত্র888sport live chatীর অবদান সম্পর্কে যেটুকু অবহিত হওয়া যায়, সেটাই এই লেখার প্রাথমিক উৎস। আধুনিক যুগে বাংলা তথা ভারতের মানবী-888sport live chatীর সৃজনের ধারাবাহিকতায় রানী চন্দের অবদান কম গুরুত্বের নয়। সে-তুলনায় তাঁকে নিয়ে সামগ্রিক পর্যালোচনা খুব বেশি হয়নি। কমল সরকারের ভারতের ভাস্কর ও চিত্র888sport live chatী গ্রন্থে (১৯৮৪) তাঁর সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক লেখা আছে। সে-আলোচনাতেই অন্য যে-কয়েকটি উৎসের নির্দেশিকা আছে সেগুলি হলো – (১) বিচিত্রা, চৈত্র ১৩৩৮-এ প্রকাশিত উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘888sport live chatী শ্রীমতী রানী দে’, (২) জানকীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিত্রাঙ্কনে বাংলার মেয়ে’ এবং (৩) মার্চ অব ইন্ডিয়া (দিল্লি) পত্রিকার মার্চ-এপ্রিল ১৯৪৯ 888sport free betয় অবধানম সীতারামনের ‘রানী চন্দ’ শিরোনামে ইংরেজি লেখা।

রানীর জন্ম ১৯১২ সালের ১৯ অক্টোবর। তাঁর বাবা কুলচন্দ্র দে। মা পূর্ণশশী। মাত্র চার বছর বয়সে রানী তাঁর বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা ছেলেমেয়েদের নিয়ে 888sport appর গেন্ডারিয়া গ্রামে চলে আসেন। 888sport appই ছিল তাঁদের দেশ বা আদি বাসস্থান। কুলচন্দ্র পুলিশ কর্মচারী ছিলেন। কবি হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। রানীর জন্মের সময় কুলচন্দ্র মেদিনীপুরে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই রানীর জন্ম। কুলচন্দ্র ও পূর্ণশশীর ছিল চার ছেলে ও দুই মেয়ে। রানীর বড়দাদা মুকুল দে (জন্ম ১৮৯৫) এবং সেজদাদা মনীষী দে (১৯০৬-৬৬) দুজনেই নব্য-ভারতীয় ঘরানার প্রখ্যাত 888sport live chatী ছিলেন। কলাভবনে নন্দলাল বসুর কাছে শিখেছেন। মুকুল রবীন্দ্রনাথের বিশেষ স্নেহধন্য। রানীর মেজদাদা পরাগরঞ্জন দে। ছোট ভাই সুহাস। রানীর দিদি ছিলেন অন্নপূর্ণা ঘোষ। কবি হিসেবেই কুলচন্দ্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রেই মুকুল ও মনীষী শান্তিনিকেতনে ছবি অাঁকা শেখেন। পরবর্তীকালে 888sport live chatী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ইউরোপে চিত্রশিক্ষার পর ১৯২৭ সালের ডিসেম্বরে মুকুল চন্দ্র দেশে ফিরে আসেন। ১৯২৮ সালে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৩ পর্যন্ত তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯২৮ সালেই রবীন্দ্রনাথ কিছুদিন কলকাতায় এসে আর্ট স্কুলে অধ্যক্ষ মুকুল দে-র কোয়ার্টার্সে অবস্থান করেন। তখন তাঁর ছবি অাঁকার পর্ব চলছে। আর্ট স্কুলের কোয়ার্টার্সে তিনি ছবি অাঁকায় নিমগ্ন ছিলেন। সেই সময়ই মুকুলের দুই ছোট বোন অন্নপূর্ণা ও রানী রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসেন। সেই থেকেই রানী রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা। রবীন্দ্রনাথের ছবি অাঁকা সেইসময় থেকেই তিনি নিবিষ্টভাবে নিরীক্ষণ করেন। তখন রবীন্দ্রনাথ দুই বোনকে পড়াতেনও। পরবর্তীকালেও রানী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের চিত্রসাধনার নিবিষ্ট সাক্ষী।

১৯২৮ সালে মুকুলচন্দ্রের আর্ট স্কুলের বাড়িতে তিন সপ্তাহ কাটিয়ে জোড়াসাঁকোর বাড়ি ফিরেই রবীন্দ্রনাথ চলে যান শান্তিনিকেতন। সঙ্গে নিয়ে যান রানী আর অন্নপূর্ণাকে। অন্নপূর্ণা সুকণ্ঠী ছিলেন। তাঁকে তিনি পাঠান সংগীতভবনে। রানীর ছিল চিত্রকলায় আগ্রহ। তাঁকে তিনি কলাভবনে ভর্তি করে দেন। সেখানে নন্দলাল বসু ও বিনায়ক মাসোজির কাছে তিনি ছবি অাঁকা শিখতে শুরু করেন। সেই যে শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রানীর সংযোগের সূচনা, সেটাই তাঁর সারাজীবন পরিব্যাপ্ত করে রাখে। অনিল চন্দ লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিক্সে শিক্ষা শেষ করে শান্তিনিকেতনে আসেন। বড় চাকরির প্রলোভন ত্যাগ করে এখানে রবীন্দ্রনাথের একান্ত সচিবের কাজে যোগ দেন। বিশ্বভারতীর দারিদ্রে্যর পরিস্থিতিতে তাঁর বেতন ছিল মাত্র ৬০ টাকা। রবীন্দ্রনাথের আকর্ষণে সেই কাজকেই তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে রবীন্দ্রনাথ সদলবলে বম্বে যান। সেখানে শাপমোচন ও তাসের দেশের অভিনয় হবে। সেই দলে অনিল ও রানীও ছিলেন। সেখানে ১৯৩৩-এর নভেম্বর মাসে (বাংলা ৭ অঘ্রান) রবীন্দ্রনাথ অনিল ও রানীর বিবাহ অনুষ্ঠান করেন। শান্তিনিকেতনে ফিরে নবদম্পতির রবীন্দ্রসান্নিধ্যে অবস্থানের যে-সূচনা, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাতে কোনো ছেদ ঘটেনি।

গুরুদেব বইতে রানী তাঁর রবীন্দ্রসান্নিধ্যের অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। যখন প্রথম শান্তিনিকেতনে আসেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছিলেন, ‘তোর ছবির দিকে ঝোঁক – ছবিতেই মনপ্রাণ দিয়ে লেগে যা। আর সময় নষ্ট করিস নে।’ (পৃ ১৬)। সে-উপদেশ রানী নিষ্ঠাভরে পালন করেছেন। তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে আইফ্যাকসের উদ্যোগে।

তাতে যথেষ্ট খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজে এবং শান্তিনিকেতনের শ্রীভবনে তাঁর রচিত মিউর‌্যাল রয়েছে। বুদ্ধকে নিয়ে তিনি একটি চিত্রমালা এঁকেছিলেন। কমল সরকারের বই থেকে জানি, সেই চিত্রমালা সংগৃহীত হয়েছে পাটনা মিউজিয়ামে। উডকাট ও লিনোকাটে একসময় তিনি অনেক কাজ করেছেন। সে-রকম একটি অ্যালবাম তিনি নন্দলালকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই অ্যালবামটি সম্প্রতি কলাভবনে সংগৃহীত হয়েছে। তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সেই ছবি সেখানে প্রদর্শিতও হয়েছে।

এ সমস্ত সত্ত্বেও নিজের ছবি সম্পর্কে তিনি খুব বেশি কথা বলেন নি তাঁর গুরুদেব বা সব হতে আপন বইতে। গুরুদেব বইটিতে তিনি 888sport app download for androidীয় করে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথের জীবনান্তের আগের শেষ কয়েকটি দিন। অত বড় এক প্রতিভা, সারাটি জীবন যাঁর সার্থকতার নানা আলোকে আলোকময়, ধীরে ধীরে অবসানের প্রান্তবর্তী হচ্ছেন, এক করুণ মোহনীয়তা ধরা রয়েছে তাঁর লেখায়। লেখক হিসেবে তাঁর সার্থকতার দৃষ্টান্ত ধরা রয়েছে এখানে।

সব হতে আপন বইতেও রানীর 888sport live football-প্রতিভার বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে আছে। শান্তিনিকেতনের পরিমন্ডল, রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, নন্দলাল ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের নানা উজ্জ্বল মুহূর্ত এ-বইয়ের প্রধান উপজীব্য। এরই মধ্যে কখনো কখনো ঝলক দিয়ে ওঠে তাঁর ছবি অাঁকার প্রসঙ্গ। নন্দলাল-সান্নিধ্যের সেরকম একটি বর্ণনার কিছুটা অংশ আমরা উদ্ধৃত করতে পারি।

নন্দদা আমার আপনজন – খুবই আপনজন। সেই শৈশবে আমার বাবা মারা যাবার পরে নন্দদা আসতেন, আমাকে কোলে তুলে নিতেন – আদর করতেন – সব মনে আছে আমার। বড়ো হয়ে আবার যখন কলকাতায় এলাম – নন্দদা আসতেন, আমি ছবি অাঁকতাম – সংশোধন করে দিতেন, রঙ দেওয়া শেখাতেন। খাতার পাতায় কত ছবি এঁকে দিয়ে যেতেন। নন্দদাকে যে আমি জানি।…

প্রায় মেঝে হতে ওঠা জানালা – জানালার ধারে ডেস্কের ভিতর ছবি অাঁকার সরঞ্জাম – রঙ তুলি কাগজ পেন্সিল রাখলাম। ‘তালাই’য়ের উপরে বসলাম। ডান দিকে একটা কাঠের খুরোর উপরে মাটির গামলা ভরা জল। বোর্ডের উপরে ছবির কাগজ ড্রয়িং পিন দিয়ে আটকে ডেস্কের উপর রেখে গামলার জলে তুলিটা ভিজিয়ে কাগজের উপরে ঝুঁকে পড়লাম। …পটুয়া  পট দেখাচ্ছে – একখানা ছবি শুরু করেছিলাম। নন্দদা বলে গেলেন, ‘এখানাই আগে শেষ কর্।’ (পৃ ৫, ৬, ৭)

এই হলো কলাভবনে তাঁর ছবি অাঁকার সূচনা পর্ব। তারপর তা নানা দিকে বিস্তৃত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বৈতভাবে ছবি এঁকেছেন দু-একবার। অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গেও এঁকেছেন।

একটা সময় নানা কাজে শ্লথ হয়েছে তাঁর ছবির চর্চা। রবীন্দ্রনাথ নেই। অবনীন্দ্রনাথ এসেছেন শান্তিনিকেতনে দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। লক্ষ করলেন রানী আর ছবি অাঁকছে না। রানীর কথায় – ‘আমার ছবি অাঁকার মনটাই কেমন উধাও হয়ে আছে। ছবি অাঁকার কথা মনেও আসে না। দিন যায়।’ (পৃ ২৪২) অবনীন্দ্রনাথ তখন একটা খেলা তৈরি করলেন। রানীকে বললেন উদয়নের একটি স্কেচ করে আনতে। তারপর তাতে নিজ হাতে রং লাগালেন। ছবি শেষ হলো। দুজনেই সই করলেন। এইভাবে শান্তিনিকেতনের স্থাপত্য, নিসর্গ নিয়ে দুজনের সম্মিলিত অঙ্গনে তৈরি হলো একটি চিত্রমালা। অবনীন্দ্রনাথ এই প্রয়াসের নাম দিয়েছিলেন, ‘দুর্গা নাম জপ করা’। এই গুরুত্বপূর্ণ চিত্রমালাটি একদিন কোথায় হারিয়ে গেল। রানী লিখছেন, সব হতে আপন বইতে :

এতকাল ধরে আমার শখ ছিল – আমার এই শেষ বইখানাতে শান্তিনিকেতনের সেই ছবিগুলো ছাপাব। তা আর হল না। ছবিগুলি জিৎভূমেই ছিল, এখন দেখি নেই। জানি না কোথায়? আর কি তাদের ফিরে যাব? (পৃ ২৪৫)

আমাদের এই দুর্ভাগা দেশেই এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। চিত্রের ইতিহাস সংরক্ষণের দায় এখানে কেউ বহন করে না।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রানী ও অনিলের জীবন অন্য খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৫১ সালে অনিল চন্দ নির্বাচনে জিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি মিনিস্টার হলেন। দিল্লিতে চলে গেল তাঁদের সংসার। এরপর তিনি অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডিক্র্যাফটস বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। তখন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁদের 888sport slot game করতে হয়। যে-রানী একসময় দেশের স্বাধীনতার জন্য কারাবরণ করেছেন, সেই স্বাধীন দেশকে অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। সেসব অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু ছবিতে এর কোনো প্রকাশ ঘটে নি। ১৯৭৬ সালে (৮ বৈশাখ) অনিল চন্দ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। তারপর প্রায় ২০ বছর রানী শান্তিনিকেতনে ছিলেন একা। সমগ্র শান্তিনিকেতনের মানুষ ও প্রকৃতি ছিল তাঁর সঙ্গী। সব হতে আপন বইতে সেই শান্তিনিকেতনকেই তিনি নন্দিত করেছেন। তাঁর একমাত্র পুত্র অভিজিৎ রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয় ছিল। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের সময় তার বয়স ছিল ছয়। অভিজিতের ছেলে অভীক। এরকম এক সুখী, সম্ভ্রান্ত, সমৃদ্ধ জীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পঁচাশি বছর বয়সে।

তাঁর ছবির ধরন, যেটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে আমাদের, পরিপূর্ণভাবেই নব্য-ভারতীয় ধারার আঙ্গিকের অনুসারী। বৃদ্ধজীবনের যে-চিত্রায়ণ করেছিলেন তিনি, তাতে নিপুণভাবে অজন্তার রেখাশৈলী ব্যবহার করেছেন। খুবই পরিচ্ছন্ন সংবেদনময় সেই রেখা। টেম্পারায় তিনি যখন অাঁকেন ফুলগাছের ফুটে থাকা ফুলের ছবি, তখন স্বাভাবিকতার মধ্যে এক আলোর উদ্ভাস নিয়ে আসেন। জীবনের সদর্থকতাকেই সবসময় তিনি নন্দিত করে গেছেন। লেখাতে যেমন, তেমনি ছবিতেও। লিনোকাটের ছবিগুলিতে সাদা-কালোর বিভাজন করেন তীক্ষ্ণভাবে। অাঁধারের সাহচর্যে আলোরই জয়গান থাকে সেখানে। মাথায় ও কাঁখে কলসি নিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেয়ে। খোলা  জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাইরে মুক্ত আলো। তাতে অজস্র পাখি উড়ছে। শীতে পর্যুদস্ত এক বৃদ্ধ মানুষের মুখ। বাস্তবতার মধ্যেও এখানে রয়েছে অভিব্যক্তিবাদী ছোঁয়া। এরকম তাঁর কয়েকটি ছবির দৃষ্টান্ত থেকে তাঁর 888sport live chatীমনের অভিমুখ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়।

রানী চন্দ রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনেই সমর্পণ করেছেন তাঁর জীবনের সমগ্র ধ্যান। 888sport live chatী-খ্যাতির জন্য তাঁর তীব্র কোনো অভীন্সা ছিল না। সেটুকু সুযোগ পেয়েছেন এঁকে গেছেন। শান্তিনিকেতন থেকে জেগে ওঠা নব্য-ভারতীয় ধারার বিকাশ, সেখানে তাঁর নিজস্ব অবদান রয়েছে। কিন্তু তাকে অতিক্রম করে নতুন কোনো আঙ্গিক তিনি তৈরি  করেন নি। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪-৮০) বা রামকিঙ্কর (১৯০৬-৮০) তাঁর থেকে একটু অগ্রবর্তী। তাঁরই সময় জুড়ে তাঁরা কাজ করে গেছেন শান্তিনিকেতনে। আধুনিকতাকে নতুন মাত্রায় সঞ্জীবিত করেছেন। রানী চন্দের সব হতে আপন বইতে তাঁদের ছবির প্রসঙ্গ আসেই নি। রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল আর মহাত্মা গান্ধী এই তিনটি আলোকবৃত্তের মধ্যেই তিনি তাঁর জীবনের ধ্যানকে সংহত রেখেছেন। এর বাইরে অন্য কিছুর প্রতি তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। এই আলোকের ধ্যানের কাছে তাঁর নিজস্ব চিত্রীসত্তাও একটু অবগুণ্ঠিত হয়েই থেকেছে।