888sport live football-সৃজনে অনন্য পুরুষ সৈয়দ শামসুল হক

আতাউর রহমান
আমি জ্বালাধরা শুষ্ক চোখ নিয়ে বসে আছি। সামনে আমার সৈয়দ শামসুল হকের, আমার প্রিয় হকভাইয়ের হ্যামলেটের এক সুন্দর, গভীর ও মুক্ত 888sport app download apk latest versionের পা-ুলিপি নিয়ে। উনি নেই, হয়েছেন অমৃতলোকের অধিবাসী। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের নাটকের বাংলা ভাষায় 888sport app download apk latest versionে উনি ছিলেন তুলনাহীন। হ্যামলেট প্রযোজনা করবে 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমি এবং হকভাইয়ের ইচ্ছানুযায়ী নাটকটির নির্দেশনা দেব আমি। গত ৪০ বছর ধরে আমি আর হকভাই সুখে-দুঃখে, হাসি-ঠাট্টায়, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলাম। তাঁর কাছে আমি প্রশ্রয়ও পেয়েছি অনেক। তাঁর সর্বাধিক নাটকের নির্দেশক আমি। কোনোদিন নাট্যকার হিসেবে নির্দেশকের কাজে উনি বাধা হয়ে দাঁড়াননি। প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়েছেন কেবল। এটি একটি দলগত প্রযোজনার কাজ হবে। একাধিক নাট্যদলের অভিনেতারা এবং কারিগরি ও 888sport live chat-নির্দেশকরা যৌথভাবে এই প্রযোজনায় কাজ করবেন। উনি এই 888sport app download apk latest versionটি শেষ করেছিলেন লন্ডনের ‘রয়েল মার্সডেন ক্যান্সার হাসপাতালে’
শুয়ে-শুয়ে, কখনো নিজে লিখে, কখনো-বা তাঁর স্ত্রী, আমাদের ভাবি প্রতিভাবান লেখিকা আনোয়ারা সৈয়দ হককে দিয়ে শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে। নিমগ্ন লেখক ও 888sport live chatীই কেবল আসন্ন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে সৃজনের পথে এমনভাবে এগিয়ে যেতে পারেন। কর্কটরোগের নির্মম চেহারাকে তিনি এক অর্থে অবজ্ঞা করেছিলেন। 888sport appর ইউনাইটেড হাসপাতালে শুয়ে-শুয়ে তাঁর শেষ দিনগুলোতেও তিনি গান ও 888sport app download apk রচনা করে গিয়েছেন। আমি যখন হাসপাতালে দেখা করতে গেলাম, তিনি বলেছিলেন আরো তিনটি নাটক তিনি শেষ করে যাবেন। একটি আমার পছন্দের নাটক ইডিপাস অ্যাট কলোনাস, যার নামকরণ উনি করেছিলেন ‘ইদ্রিস পাপী’। ৮১ বছরের প্রান্তে এসে উনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। দেখে যেতে পারলেন না হ্যামলেট নাটকের প্রযোজনা। আমাদের জন্যে এই দুঃখ হবে অনিঃশেষ। হকভাইয়ের আশি বছরপূর্তি আমরা, 888sport live chatের সংসারের মানুষরা উদযাপন করি 888sport live chatকলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে। সেদিনের তাঁর ভাষণের একটি কথা আমার কানে প্রতিনিয়ত অনুরণন তুলছে – ‘আমি রবীন্দ্রনাথের আয়ু অতিক্রম করেছি, আমি কি মহাত্মা লালনের মত ১১৬ বছরের আয়ু পাব না? আমি কি 888sport appsের স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছরপূর্তি উদ্যাপনের অংশ হতে পারব না?’ এই বরাভয় মানুষকেই বলা যায় মৃত্যুঞ্জয়ী। উনি যেন বিধাতার কাছে বর চেয়েছিলেন যে, উনি যেন আরো কয়েকটা দিন বাঁচেন কেবল তাঁর 888sport live football-সৃজনের জন্যে। একজন বীর 888sport live footballস্রষ্টাই এমনটি ভাবতে পারেন।
সৈয়দ শামসুল হক বহুপ্রভা লেখক। তাঁর সোনার কলমের লেখনী 888sport live footballের সকল অঙ্গনকে সফলভাবে ছুঁয়েছে। আমি তাঁর 888sport live chatের সংসারের বন্ধু; এই অনুভব আমার জন্যে শ্লাঘার বিষয়। রবীন্দ্রউত্তর বাংলা 888sport live football-নির্মাণের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধদেব বসু এবং আমাদের দেশের সৈয়দ শামসুল হক বিচিত্র বর্ণে পল্লবিত করেছেন আমাদের 888sport live footballভা-ারকে। সৈয়দ শামসুল হক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যথার্থই উত্তর-সাধক।
সৈয়দ শামসুল হক আদি ও অকৃত্রিম কাব্যভাষাকেই প্রধানত তাঁর নাট্যভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কাব্যে যেমন রূপালঙ্কার, সংকেত, প্রতীক ও বিমূর্ততা ব্যবহার করার সুযোগ আছে, তেমনটি গদ্যভাষায় নেই। আমি গদ্যভাষাকে হেয় করছি না। গদ্য হচ্ছে আমাদের মুখের ভাষা; পদ্যের রয়েছে বর্ণনা উপস্থাপনের অনেক গুণাবলি। আড়াই হাজার বছর আগের গ্রিক নাট্যকার জগৎখ্যাত সফোক্লিস ও এস্কিলাস, সংস্কৃত ভাষার মহাকবি ও নাট্যকার কালিদাস এবং আধুনিক নাটকের পথপ্রদর্শক বিশ্বের সেরা নাট্যকার, ষোড়শ শতকের উইলিয়াম শেক্সপিয়র প্রমুখের সজ্ঞানে অনুগামী হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্য-সৃজনের সম্ভার বিপুল; তাঁর সব নাটক কাব্যভাষায় লেখা না হলেও নাটকগুলোর মূল সুর কিন্তু কাব্যিক, কারণ তিনি প্রধানত একজন কবি। সৈয়দ শামসুল হক প্রথমত একজন কবি বলেই যথার্থভাবে তিনি কাব্যভাষাকেই তাঁর নাট্যভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আধুনিক বিশ্বের একজন ইংরেজি কবি, যাঁর নাম টিএস ইলিয়ট, তিনি কাব্যভাষাতেই তাঁর বিশ্বনন্দিত নাটক মার্ডার ইন্ দ্য ক্যাথিড্র্যাল রচনা করেছিলেন। বিশ্বের একজন উত্তরাধুনিক নাট্যকার হলেন স্যামুয়েল বেকেট, যাঁকে নাট্য-সমালোচক মার্টিন এস্লিন থিয়েটার অব দ্য এবসার্ডের অন্তর্ভুক্ত একজন নাট্যকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেই নাট্যকারের জগদ্বিখ্যাত নাটক ওয়েটিং ফর গডোর সংলাপ যদিও সম্পূর্ণ গদ্যভাষায় রচিত; নাটকটি পড়ে শেষ করার পরে মনে হয়; এইমাত্র একটি বড় 888sport app download apk পড়া শেষ করে উঠলাম। নাটকের সংলাপ পদ্যে বা গদ্যে হওয়া উচিত, তা আমার আলোচ্য বিষয় নয়; গদ্য ও পদ্য উভয় সংলাপে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ নাটক রচনা করেছেন দেশ-বিদেশের নাট্যকাররা। যেহেতু, নাটকের ভূমিকা দ্বিজ; 888sport live football হিসেবে নাটক পড়া যেতে পারে, তবে নাটক পুস্তকের মতো কেবল বুক সেলফে সঞ্চিত রাখলে এর অভিপ্রায় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নাটক রচনা পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন একদল অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্মিলিতভাবে মঞ্চের ওপর অভিনয়ের মাধ্যমে তা মূর্ত করেন। যে-নাটক মঞ্চায়িত হয় না, কেবল পড়াই হয়; তাকে ইংরেজিতে ‘ক্লসেট’ ড্রামা বলা হয়, অর্থাৎ আলমারিবদ্ধ নাটক। যুগপৎ দর্শন ও শ্রাব্য গুণের কথা মনে রেখেই সৈয়দ শামসুল হক তাঁর নাট্য রচনা শুরু করেছিলেন। বলা বাহুল্য হবে না যে, তাঁর 888sport live football-সৃজনের কনিষ্ঠতম সংসার হলো নাটক; অর্থাৎ কাব্য, 888sport alternative link, ছোটগল্প ও 888sport live রচনায় সিদ্ধহস্ত হওয়ার পরে তিনি নাট্য রচনা শুরু করেন। তিনি প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীন ও সার্বভৌম 888sport appsে গৌরবজনক সম্ভাবনাকে অবলোকন করে তিনি মঞ্চের জন্যে নাটক লেখায় উদ্বুদ্ধ হন। সৈয়দ শামসুল হক তাঁর প্রথম কাব্যনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়-এর ভূমিকায় আমাদের জানাচ্ছেন – ‘সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, বিদেশ থেকে ছুটিতে দেশে ফিরে, 888sport appর প্রবল নাট্যতরংগে ভেসে যাই এবং ফিরে গিয়ে রচনা করি ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ – এক সংকীর্ণ ঘরে, টেবিলের অভাবে দেয়ালে পা ঠেকিয়ে হাঁটুর উপর খাতা রেখে, অফিস যাতায়াতের পথে পাতালরেলে মনে মনে; এই রচনাটি শেষ করে উঠবার পরে মনে হয়, দীর্ঘদিন থেকে এরই জন্যে তো আমি প্রস্তুত হচ্ছিলাম।’ পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় থিয়েটার নাট্যদলের যোগ্য প্রযোজনায় এবং সুঅভিনয়ের কারণে দেশে-বিদেশে বিপুল সুনাম অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘থিয়েটার স্কুলে’র ছাত্রছাত্রীরা আমার নির্দেশনায় স্কুলের বার্ষিক প্রযোজনা হিসেবে এই নাটকটি ধানম-ি ২ নম্বর সড়কে অবস্থিত জার্মান কালচারাল সেন্টার মিলনায়তনে মঞ্চায়ন করে। নাটকটি আমি প্রচলিত মঞ্চায়নের সীমানা লঙ্ঘন করে কিছুটা নব-ব্যাখ্যায় ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে মঞ্চায়ন করাই। নাট্যকার সৈয়দ হক এই প্রযোজনা দেখে প্রীত হয়েছিলেন এবং দৈনিক সংবাদে তাঁর নিয়মিতভাবে প্রকাশিত কলাম ‘হৃৎকলমের টানে’তে লিখলেন, যার মর্মার্থ দাঁড়ায় – ‘আতাউর আমার পাশে বসে নতুনভাবে নাটকটি রচনা করেছেন’, নাট্যকার এমনটি ভাবেননি, এবং পাশাপাশি এও বলেছেন যে, আমিই নাকি ছিলাম সে-সময়ের শ্রেষ্ঠ নাট্য-নির্দেশক। এহেন মন্তব্যে আমি যথেষ্ট অনুপ্রাণিত বোধ করেছিলাম। স্মর্তব্য যে, সৈয়দ শামসুল হক আমার জন্মদিনে পঠিত তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছেন যে, ‘আমার তো একটি কথাই আছে সেই ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এর সময় থেকে, ওই নাটকের ছাপা বইয়ে ভূমিকায় লিখেছিও সে কথাটি যে, নাট্য-নির্দেশকের স্বাধীনতা রইলো তাঁর কল্পনা প্রয়োগ করবার। আতাউর সেই স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন তাঁর কল্পনা-প্রতিভায় এবং কখনোই তা স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে যায়নি। আমার প্রতিটি নাটকই তাঁর নির্দেশনায় মনে হয়েছে, যেন আমি আর তিনি দুজনে মিলে সমান অংশী হয়ে উঠেছি সৃজনে।’
সৈয়দ শামসুল হক তাঁর প্রথম নাট্য রচনাতেই জয় করে নিলেন পাঠক ও দর্শক হৃদয়। নাটকটির নাম পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। আমি মনে করি, সৃজনগুণে এই নাটকটি বিশ্বের সেরা নাটকগুলোর অন্যতম হিসেবে গণ্য হতে পারে। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটককে অনেকে অতি সরলীকরণ করে কেবল মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নাটকটি নিঃসন্দেহে রচিত এবং নাটকটির ঘটনা মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রবাহিত। এই নাটকে জীবনের মৌল জিজ্ঞাসাগুলো প্রথিত হয়েছে অনন্য কুশলতায়। রূপালঙ্কার ও উপমা ব্যবহারেও যে সৈয়দ শামসুল হক সিদ্ধহস্ত, তা নাটক পাঠেই বোঝা যায়। আঞ্চলিক ভাষার যথার্থ ব্যবহারে যে নাট্যকার পারঙ্গম তা পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকের সমগ্র শরীর জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। জনতা মাতবর সাহেবের উপস্থিতি চায়, সেটাই তারা নাটকের অন্যতম চরিত্র পীর সাহেবকে জানাতে চায়। উত্তরে পীর সাহেব বলেন –
পীর : আসবে আসবে সে, না আইসা কি পারে? ঝড়ের খবর আগে পায় বড়গাছের ডাল, বানের খবর আগে পায় যমুনার বোয়াল, খরার খবর পয়লা জানে ছিলা-শকুনের বাপ, আর জারের খবর পয়লা জানে আজদাহা সাপ, সে না আইসা কি পারে?
এমন গভীর ও অর্থবহ উপমার সাক্ষাৎ আমরা কম 888sport live football-সৃষ্টিতে পাই। পীরের আরেকটি সংলাপে আমাদের যাপিত জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অপরাধের একটি গ্রহণযোগ্য চিত্র পাওয়া যায়।
পীর : হাবিল ও কাবিল ছিল দুই ভাই, তথাপি হাবিল নিজের আপন ভাই সেই যে কাবিল তার জান নিয়াছিল, দুনিয়ার পরথম খুন। তারপর সেই পাপ কী ভাবে সে করে গুম এই ডরে লাশ কান্ধে নিয়া সমস্ত দুনিয়া হাবিল দৌড়ায়। এমন জায়গা নাই সারা দুনিয়ায় যে পলায় – কোথাও পলায়।
এই নাটকে বিশ্বনিয়ন্তা সম্পর্কে আমরা একটি মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াই। এই নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র ‘মেয়ে’র কণ্ঠে আমরা নিম্নোক্ত সংলাপ শুনি।
পীর : খবরদার, বেটি খবরদার, / তাঁর ভাষা অর্থে নয় ঈমানেই হয় পরিষ্কার।
মেয়ে : বাবা, তাই যদি হয়, তবে অন্তরে আমার/ কারো চেয়ে কিছু কম ঈমান ছিল না। পরিষ্কার/ তবু ক্যান কিছুই বুঝি না? আল্লাতালার/ নাম যদি দয়াময়/ যদি তিনি সত্যই পারেন দিতে বান্দারে নির্ভয়/ যদি সত্যই সকল শক্তি তাঁরই হাতে হয়/ যদি সত্যই সকল বিষ তাঁরই নাম ক্ষয়/ তবে, কোথায় সে দয়াময় আছিলেন, কোথায়, কোথায়? – /কোথায় নির্ভয়দাতা আছিলেন, কোথায়, কোথায়? – / যখন আমার ঘরে কালসাপ উইঠা আসছিল/ যখন আমার দেহে কালসাপ জড়ায়া ধরছিল/ যখন আমার বুকে কালসাপ দংশাইয়াছিল/ বলেন, জবাব দেন, কোথায়, কোথায়?/ বেহেস্তের কোন বাগিচায়/ বলেন থাকলে পর বান্দার কান্দন তার কানে না পশায়?
এভাবে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় পাঠক ও দর্শককে নিয়ে যায় জীবন-দর্শনের মর্মমূলে। এই নাটকটি 888sport live football সৃষ্টি এবং মঞ্চায়নের গৌরবে দীর্ঘজীবী হবে, এমন আশা আমি নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করছি।
সৈয়দ শামসুল হক ঈর্ষা শিরোনামে একটি নিরীক্ষামূলক কাব্যনাটক রচনা করেছেন, যে-নাটকটি দীর্ঘ সাতটি কাব্যসংলাপে সমাপ্ত। নাটকে চরিত্র তিনটি – প্রৌঢ়, যুবতী এবং যুবক। এই তিনটি চরিত্রই উচ্চারণ করে সাতটি দীর্ঘ সংলাপ, প্রতিটি সংলাপের স্থায়িত্ব গড়ে প্রায় ২০ মিনিটের মতো। নাটকের তিনটি চরিত্রই চিত্রকর – ‘প্রৌঢ়’ চরিত্রের কণ্ঠে আমরা তিনটি সংলাপ শুনতে পাই এবং ‘যুবক’ এবং ‘যুবতী’ প্রত্যেকে উচ্চারণ করে দুটি করে সংলাপ। আমার নির্দেশক জীবনের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল ঈর্ষা নাটকের মঞ্চায়ন। যখন 888sport appsের নাটকের মানুষেরা বলাবলি করছিল, এই নাটকটি কেবল শ্রুতি নাটক হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে, আমি তখন এই নাটকটি নিয়মিতভাবে মঞ্চায়নে প্রণোদিত হই এবং এই নাটকের মঞ্চায়ন আমার নাট্য-নির্দেশক জীবনে বড় ধরনের সাফল্য নিয়ে আসে। বাংলা থিয়েটারের প্রবাদপুরুষ শম্ভু মিত্র কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে নাটকটির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা থেকে শম্ভু মিত্রের অভিজ্ঞতার উদ্ধৃতি দিচ্ছি – ‘শম্ভু মিত্র অপার নিবিষ্ট হয়ে দেখলেন ও অভিনয় শেষে আমাকে বললেন, এ এক অসামান্য অভিজ্ঞতা তাঁর জন্যে; আতাউরের নির্দেশনা – বিশেষ করে আলোর কাজ প্রসঙ্গে বললেন, ইংরেজীতেই – দ্যাট ওয়াজ এ স্ট্রোক অব আ জিনিয়াস। আর আমার লেখার ব্যাপারে শম্ভু মিত্র যা বললেন, তা নিজমুখে বিনয়ের সঙ্গে উদ্ধৃত করছি – বললেন, আপনার নাটক দেখে মনে হয়েছে আপনি রবীন্দ্রনাথের মতো কথাগুলো মাথার ভেতরে শুনে উঠেছেন, আর নাটকের ভাবনা-জোড়গুলো মনে করিয়ে দিয়েছে শেক্সপীয়ারকে, আমি তো বিস্ময়ে হতবাক। পৃথিবীর অমন শ্রেষ্ঠ দুজন নাট্যকারের সঙ্গে একই বাক্যে আমার নাম!’ আমি এই নাটকের নির্দেশক হিসেবে মনে করি ঈর্ষার মতো এমন কাব্যময় এবং প্রেমিক-প্রেমিকার মনোজগতের প্রতিবিম্বিত এবং প্রতিস্মরিত রূপ নিয়ে এমন নাটক পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি লেখা হয়নি। বোঝা যায় সৈয়দ হক বিপুল পরিশ্রম করেছেন ঈর্ষা নাটকের প্রতিটি চয়ন সৃষ্টি করতে এবং শব্দ ও বাক্যের অন্তর্গত রূপ প্রকাশের প্রয়াসে, যা 888sport live football সাধনারই নামান্তর। একটি অনন্য উপমার উদ্ধৃতি দিচ্ছি ঈর্ষা নাটক থেকে। 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিনের অন্তিম রোগশয্যায় উনি বলছেন – ‘তারে আমি আবার আঁকতাম, আবার পাইলে তারে বিয়া করতাম – বলেই এ পাশ ফিরলেন/ চোখেমুখে কষ্টের হাত থেকে কেড়ে আনা আশ্চর্য হাসি নিয়ে, যেন ঘন বার্ন্ট সিয়েনার ভেতর থেকে বিচ্ছুরিত লেমন ইয়োলো। এ অন্য জয়নুল, দুর্ভিক্ষের জয়নুল নয়, গুণটানা মাঝির জয়নুল নয়, নয় মনপুরার জলোচ্ছ্বাসের দীর্ঘ এক পটের জয়নুল; ব্যক্তিগত, অন্তর্গত, একা জয়নুল, নীল আকাশের নিচে/ সবুজ ধানের ক্ষেতে লাল শাড়িপরা 888sport promo codeটির নিজস্ব জয়নুল।’ জয়নুলের প্রসঙ্গ টেনে সৈয়দ হক আমাদের জানাচ্ছেন – ‘শেষ শয্যায় নীরব রবীন্দ্রনাথ, ব্যাকুল, দুচোখে/ শুধু কাকে যেন খুঁজতেন, কেউ কেউ এখনও বলেছে, মৃদুস্বরে শোনা গেছে, ‘বৌঠান’ বলে তাঁর উচ্চারণ। – বৌঠান? মানুষ যে কী ভাবে কখন কিসে কার কাছে বাঁধা পড়ে যায় – কেউ জানে?’ সৈয়দ হক একজন মনো888sport apkীর মতো বড় সত্য কথা আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে, মৃত্যুকালে জ্ঞান থাকলে দূর অতীত 888sport sign up bonusতে ফিরে আসে। এই নাটকের আশ্চর্য ঋদ্ধ সংলাপ বলে শেষ করা যাবে না – ‘কোন কোন নদী মানচিত্র থেকে মুছে যায়, শুধু স্বপ্নেই থেকে যায়, বহে যায় – পুরাতন ব্রহ্মপুত্র যেমন এখন।’ কী অপূর্ব দক্ষতায় বর্ণিত হয়েছে মানুষের 888sport sign up bonusকাতরতা। নাটকের প্রৌঢ় চরিত্র নাটকের যুবতীকে বলছে – ‘ভালো হতো যদি টিপের রঙটি হতো ক্রোম ইয়োলো, তুমি কি জান যে প্রতি কণা ক্রোম ইয়োলো গর্ভবতী গ্রীন দিয়ে? এক জীবনের ব্যবধানে বিশেষ এ ইয়েলোটি হয়ে যায় গ্রীন?’ হলুদ ও সবুজ রঙের আবর্তে নাট্যকার শ্রীম-িত করে বুঝিয়েছেন জীবনের অনিঃশেষ যাত্রাপথকে। এভাবে সমগ্র নাটকজুড়ে আছে অনাস্বাদিত রূপকল্প, চিত্রকল্প ও উপমার সমাহার, যা নাট্য-সংলাপকে দিয়েছে অভাবিত অনন্যতা। আমি বিশ্বাস করি ঈর্ষা নাটকটি মঞ্চায়নের জন্যে আর কখনো পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। এই নাটক দর্শক ও পাঠকের হৃদয় জয় করবে নিশ্চয়।
সৈয়দ শামসুল হকের এখানে এখন কাব্যনাটক প্রযোজনা-পুষ্টির অভাবে দর্শকদের প্রায় অজানাই রয়ে গেছে। এই নাটকের একটি অপূর্ব সংলাপের অংশবিশেষ শোনা যাক – ‘মানুষকে মানুষের মুখ চিনতে হলে/ অন্য কোন আলোকের দরকার হয়/ মানুষকে মানুষেরই স্বর শুনতে হলে/ কোনো এক প্রলয়ের দরকার হয়।’ এই নাটকটি অনাগত কালের নাট্যজীবীদের জন্যে তোলা রইল।
সৈয়দ শামসুল হক উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জুলিয়াস সিজার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আরেকটি কাব্যনাটক রচনা করেছেন এবং নাম দিয়েছেন গণনায়ক। সৈয়দ শামসুল হক এই নাটকের ঘটনাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন 888sport appsকে। উনি আমাদের জানাচ্ছেন – ‘আমার ভাষায় আমার পাঠক এবং দর্শককে ঘটনার অন্তর্নিহিত সত্যের সংবাদ দেবার জন্যেই বঙ্গদেশীয় পটভূমি আমাকে ব্যবহার করতে হয়; গূঢ় কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়।’ নাট্যকার জুলিয়াস সিজার নাটকের মার্কাস ব্রুটাস এবং মার্কাস এন্টানিয়াসের নাম দিয়েছেন যথাক্রমে হুমায়ুন এবং রশিদ। এই নাটকে সৈয়দ হক শেক্সপিয়রের নাট্যভাষার সমকক্ষ স্টাইলে অপূর্ব সুন্দর সংলাপ রচনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি শেক্সপিয়রের নাটকের সমান্তরাল চরিত্র জুলিয়াস সিজার নিহত হওয়ার পরে নাট্যকার অন্যতম প্রধান চরিত্র হুমায়ুন – তাঁর বক্তৃতার শেষ অংশে বলছেন – ‘ভালবাসায় অশ্রু, কীর্তিতে উল্লাস, সংগ্রামে গৌরব, আর উচ্চাকাক্সক্ষার মৃত্যু।’ ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের ভয়াবহ সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে নাটকের অন্যতম চরিত্র সানাউল্লাহ একটি সংলাপের শেষ অংশে বলছেন – ‘প্রকৃতি মানুষেরই একান্ত আত্মীয়। আনন্দে ঝলমল করে, শোকে ক্রন্দন করে, বিক্ষোভে গর্জন করে, যেমন এখন।’ এই নাটকটি বর্তমান লেখকের নির্দেশনায় বেশ কয়েক বছর আগে ‘চক্রবাক’ নাট্যদল মঞ্চায়ন করেছিল। আশা করি, ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন নাট্যদল এই রাজনৈতিক ভাবধারার নাটকটি মঞ্চায়নে আগ্রহী হবে।
নূরলদীনের সারাজীবন সৈয়দ শামসুল হকের একটি অতিপরিচিত কাব্যনাটক, বলা যায়, এটি একটি গৃহবান্ধব নাম। আলী
যাকের-নির্দেশিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত নূরলদীনের সারাজীবন দেশ-বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এই কাব্যনাটকে সৈয়দ শামসুল হক প্রধানত রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা সংলাপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ব্রিটিশ সাহেবদের সংলাপ হিসেবে সৈয়দ শামসুল হক ব্যবহার করেছেন পরিশুদ্ধ বাংলা ভাষা। তিনি শচীন সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা বা তৎকালীন 888sport app ঐতিহাসিক নাটকে ব্যবহৃত ব্রিটিশ চরিত্রের সংলাপ রচনায় ‘হামি’, ‘টুমি’ ইত্যাদি পরিহার করেছেন। এই নাটক থেকে রংপুরের তৎকালীন ব্রিটিশ কালেকটরের একটি সংলাপের উদ্ধৃতি দেওয়া গেল – ‘তাইতো তাইতো বটে। ভুলেই গিয়েছি। আপনার পতœীর আতিথ্য, ঝলসানো বৃষমাংস, লোহিত কোহল, স্বদেশে না বঙ্গদেশে আছি কোনো খেয়াল ছিল না।’ সৈয়দ শামসুল হক এই নাটক সম্পর্কে যা নিবেদন করেছেন তার কিছু অংশ নিম্নে উদ্ধৃত হলো –
এই কাব্যনাট্যটি লিখে ফেলার পর আমার আশা এই যে, এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন যেসব গণনায়ককে আমরা ভুলে গিয়েছি তাদের আবার আমরা সম্মুখে দেখব এবং জানব যে আমাদের গণআন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ও অনেক বড় মহিমার – সবার ওপরে, উনিশশো একাত্তরের সংগ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইতিহাস থেকে আমি পেয়েছি নূরলদীন, দয়াশীল ও গুডল্যাডকে; কল্পনায় আমি নির্মাণ করে নিয়েছি আব্বাস, আম্বিয়া, লিসবেথ, টমসন ও মরিসকে। নূরলদীনের আত্মা ও প্রেরণা আমি ইতিহাসের ভেতর থেকে সংগ্রহ করেছি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক সংকট আমি সম্ভবপরতার ক্ষেত্র থেকে আবিষ্কার করে নিয়েছি।
সূত্রধাররূপী বরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে উচ্চারিত এই নাটকের প্রস্তাবনা আজ ঘরে-ঘরে পরিচিত। প্রস্তাবনার কিছু অংশ নিম্নে উদ্ধৃত হলো –
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;
যখন 888sport sign up bonusর দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,
তখন কে থাকে ঘুমে? কে থাকে ভেতরে?
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে।
নূরলদীনেরও কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ী ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাসায়,
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’
আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে ব্যক্ত করতে চাই যে, 888sport appsের মুক্তিকামী মানুষের কাছে এই নাটকের জনপ্রিয়তা কোনোদিনই হ্রাস পাবে না।
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের তিনটি কাব্যনাটক, যথা – ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট এবং ত্রয়লাস ও ক্রেসিদা 888sport app download apk latest versionের ক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হক একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর 888sport app download apk latest versionের তুল্য শেক্সপিয়রের নাটকের 888sport app download apk latest version বিশ্বের 888sport app download apk latest version-888sport live footballে আমি বিরল বলে মনে করি। সৈয়দ হকের বিশেষ কৃতিত্ব হলো যে, পাশ্চাত্যের ইংরেজি ভাষা ও বাক্যলগ্ন ও শব্দের দ্যোতনাকে প্রাচ্যের ভাষাতে অনন্য কুশলতায় রূপান্তরিত করেছেন। ম্যাকবেথ নাটকের ডাকিনিদের পাঁচটি ইংরেজি সংলাপের সৈয়দ হক-কৃত বাংলা 888sport app download apk latest version শোনা যাক।

1 Witch   :   Thrice the brinded cat hath mew’d.

2 Witch   :   Thrice and once the hedge-pig whin’d.

3 Witch   :   Harpier cries; ‘tis time’, tis time.

1 Witch   :   Round about the cauldron go;

In the  poison’d entrails throw.

Toad that under cold stone

Days  and nights has thirty-one

Swelt’red venom sleeping got

Boil thou first i’ th’ charmed pot.

All :            Double, double toil and trouble;

Fire burn, and cauldron bubble.

অনুদিত সংলাপ –
১ম ডাকিনি : ডোরাকাটা মার্জার মিউ মিউ তিনবার।
২য় ডাকিনি : শুয়োরের ঘোঁৎ ঘোঁৎ তিনবার একবার।
৩য় ডাকিনি : ‘এই বেলা’, ‘এই বেলা’, প্যাঁচাটার চিৎকার।
১ম ডাকিনি : ঘুরঘুর চার ধার পাক দিই কড়াটার;
কড়ায় ছুরি কড়ায় ছুরি –
বিষের বিষে নাড়িভুঁড়ি,
ম-ুকটি ঘুমের ঘোরে
ঠান্ডা শিলের তলায় পড়ে
দিবস রাতে একত্রিশে
পুরো মাসের ঘামের বিষে
গতরটি তার গেছে বেড়ে;
আগেই সেটা সেদ্ধ কড়ায় দে’ রে।
সকলে : লাগ দেখি লাগ দ্বিগুণ দ্বিগুণ;
টগবগ কড়া, গনগন আগুন।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে, সৈয়দ হকের সমগ্র 888sport live football নির্মাণের মধ্যে তাঁর নাট্য-888sport live football অতি-উজ্জ্বল অংশ অধিকার করে আছে এবং তিনি বাংলা ভাষার একজন অনন্য এবং অগ্রগণ্য নাট্যকার হিসেবে অনাগত কাল ধরে বিবেচিত হবেন। বিষয়বস্তুর গভীরতা ও বিস্তারে এবং পাশাপাশি নাট্যভাষা নির্মাণে সৈয়দ শামসুল হক তাঁর সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, এই অভিমত আমি ব্যক্ত করছি নির্দ্বিধায়। আমি যেহেতু নাট্যবৃত্তের মানুষ, তাই তাঁর নাট্য-সৃজনের কথাই উল্লেখ করলাম। তিনি 888sport live footballের সকল শাখায় অনাগত কাল ধরে স্বমহিমায় বহমান থাকবেন, তাঁর আশিতম জন্মদিনে এই আমার একান্ত কামনা। 

(সৈয়দ শামসুল হকের অশীতিতম জন্মদিন উপলক্ষে লেখা)