সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অপ্রকাশিত ছোটগল্প

রচনা-পরিচয়

স্বপন মজুমদার

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০) গল্প লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি, যদিও প্রকাশ করেননি একটিও। ১৯২৪-এর গোড়ার দিকে তিনটি গল্প পাওয়া যায় তাঁর খসড়া-খাতায় (এরই একটি Ñ ‘দুকূলহারা’- সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার বিভাব পত্রিকার বইমেলা 888sport free betয় [২৫:২, ফেব্রুয়ারি ২০০৪])। এই গল্পগুলির সংস্কার বা পরিমার্জনের পরিচয় আছে তাঁর পরবর্তীকালের পাণ্ডুলেখের মধ্যে। গল্প লেখার এই উৎসাহ সাময়িক উত্তেজনা ছিল না সম্ভবত সুধীন্দ্রনাথের জীবনে। লিখেই কি নিজেকে নির্মুক্ত করতে চাইছিলেন তিনি?

বিচিত্র প্রসঙ্গ-অবতারণা, লেখা ও লেখকদের নামোল্লেখ, সমাজে কবির স্থান, সর্বোপরি গদ্যভাষা ও প্রকাশভঙ্গির তির্যগতার নিরিখে মনে হয়, তিরিশের দশকেও গল্প লেখায় অনেকটাই সময় ও মনোযোগ ব্যয় করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ। মৌলিক রচনার সঙ্গে গল্প-888sport app download apk latest versionেরও কয়েকটি নজির আছে তাঁর পাণ্ডুলিপির মধ্যে। ‘স্বপ্নাবসান’ সম্ভবত তাঁর দ্বিতীয় পর্যায়ের গল্পের অন্তর্গত।

সুধীন্দ্রনাথের গল্প, আমি অন্যত্র বলেছি, ‘আত্মপ্রক্ষেপময়’। বর্তমান গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বোর্ডিং স্কুলে পড়তে যাওয়া, অ্যাটর্নি অফিসে শিক্ষানবিশি থেকে শুরু করে প্রুস্ত-প্রীতি, চরকা-বিতর্ক বা বিলেত-মুগ্ধতার প্রসঙ্গ অনেকটাই হয়তো তাঁর জীবন-ঘটনা বা চিন্তা-প্রবণতার সঙ্গে মিলে যাবে।

প্রণয়, এবং ব্যর্থ প্রণয়, সুধীন্দ্রনাথের গল্পগুলোর প্রধান আখ্যান। ‘স্বপ্নাবসানে’ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অন্ত্যকৈশোর বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি ব্যবহারের দ্বিধাসংকট। কিন্তু সে-কাহিনীগত সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি সুধীন্দ্রনাথ। এ-গল্পের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ প্রায় মনে হয় 888sport liveের প্রস্তুতি। পাণ্ডুলিপির ২১ পৃষ্ঠায় (সুধীন্দ্রনাথের বেশির ভাগ পাণ্ডুলিপি আইনি বয়াননামার মতো ফুল্স্ক্যাপ কাগজ লম্বালম্বি দুভাগ করে ডানদিকে লেখা) পৌঁছেও তাঁকে লিখতে হলো : ‘অনেক কথা বল্লুম, এর মধ্যে বাজেও আছে কাজেরও আছে; কিন্তু আমার আখ্যাই[য়ি]কাটি, যেটি বলবার অছিলেতে এই সমস্ত প্রসঙ্গের অবতারণা, সেটি এখনো যত দূরে তত দূরেই, তার নামগন্ধ শুদ্ধ এখনো করিনি।’

মাধবীর সঙ্গে নতুন করে দেখা করাতে তাঁকে আকস্মিক ঘটনা-সমাপতনের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আবার তার সঙ্গে মিলনের পরমুহূর্তেই ‘বিতৃষ্ণা’ জেগে ওঠবারও কোনো সংগত প্রাক্-প্রস্তুতি নেই গল্পে। বরং বিজন সেন বা শ্রীমতী সেন স্বল্প অবকাশেও নিজেদের স্বভাব প্রকাশ করতে পেরেছেন। সব থেকে অস্পষ্ট উত্তমপুরুষ কথক।

সুধীন্দ্রনাথের গল্পে আয়োজন যতটা থাকে উত্তরণ বোধহয় ততটা হয় না। ‘স্বপ্নাবসানে’ও তাই। আর বর্ণাশুদ্ধির যে-অজস্রতা সুধীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপির স্বভাবচিহ্ন, তারও অভাব নেই এই পাণ্ডুলেখে। তা সত্ত্বেও, কবি সুধীন্দ্রনাথকে জানবার প্রয়োজনে এই দুর্বল গল্পগুলোও কোনো-কোনো চকিত ইঙ্গিত দিয়ে যায় পাঠককে; সম্ভবত তাঁর গল্পের আকর্ষণ এই উপকরণ-মূল্যেই।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ্ কালচারাল টেক্সট্স্ অ্যান্ড রেকর্ডসে’র সৌজন্যে ও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ফাউন্ডেশনের অনুমতিক্রমে মুদ্রিত। এই রচনাটি মুদ্রণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এবং এর রচনা-পরিচয় লিখে দেওয়ার জন্য আমরা অধ্যাপক স্বপন মজুমদারের কাছে ঋণী। অনিবার্য কারণে এই রচনায় সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পাণ্ডুলিপির বানান রক্ষা করা সম্ভবপর হয়নি।