সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport live footballচিন্তার তাত্ত্বিক কাঠামো : প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, তাঁর মতো নানা গুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি।’ বুদ্ধদেব তাঁর অন্য-আরেকটি লেখায় এটিও বলেছিলেন, 888sport app download apk রচনার পাশাপাশি সুধীন্দ্রনাথ হচ্ছেন `great artificer in prose;’। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু জানিয়েছিলেন, ‘শব্দ-সমবায়ের সাহায্যে তিনি [সুধীন্দ্রনাথ দত্ত] যুগল সিদ্ধিলাভ করেছেন : একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে, বা অগত্যা চিন্তাকে তরল না-করে, লিখতে পেরেছেন জটিল ও তাত্ত্বিক বিষয়ে 888sport live, এবং তাঁর 888sport app download apkকে দিয়েছেন এমন এক শ্রবণসুভগ সংহতি ও গাম্ভীর্য, যাকে বাংলা ভাষায় অপূর্ব বললে বেশি বলা হয় না।’ অন্যদিকে, সাংবাদিক-গবেষক নিরঞ্জন হালদারের মতে, ‘সুধীন্দ্রনাথের নিকট যুক্তি-নির্ভরতা গদ্য রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভারতীয় ও ইউরোপীয় বিভিন্ন ভাষা এবং 888sport live football, দর্শন, 888sport live chat, 888sport apk, ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ-888sport apk প্রভৃতি বিষয়ে পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁর যুক্তির ধরনও ভিন্ন হতে বাধ্য। জনপ্রিয়তা অর্জনের বাসনা কখনও তাঁকে লিখতে উদ্বুদ্ধ করেনি।’ আর এর পাশাপাশি তিনি খানিকটা সতর্ক করবার ইচ্ছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘তাঁর বেশির ভাগ 888sport live একশ্রেণীর পাঠকের জন্য। সুধীন্দ্রনাথের 888sport app download apkর মতো 888sport liveগুলি পড়তে গেলেও এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি দরকার।… 888sport liveের ক্ষেত্রে প্রয়োজন আগ্রহের সঙ্গে জ্ঞান ও মননশীলতা।’ সুধীন্দ্রনাথের গদ্যের উপল-সন্ধানী পাঠকমাত্রেই মন্তব্যটির যথার্থতা স্বীকার করবেন।

দুই

নিরঞ্জন হালদার তাঁর 888sport liveে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport live footballবোধ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্রনাথ ছিলেন ভিন্ন মেজাজের কবি। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মানসিক পরিমণ্ডল, চর্চা ও চর্যা আর সব বাঙালী কবি থেকেই ভিন্ন। এজন্য কিন্তু তাঁকে কল্লোল-যুগের লেখকদের মতো রবীন্দ্র-বিদ্রোহের পতাকা তুলে ধরতে হয়নি। এটা তাঁর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে।’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত শুধুই রবীন্দ্র-বিদ্রোহের পতাকা তুলে ধরেননি বা ধরতে চানওনি। রবীন্দ্র-প্রতিভাকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতেও তিনি কখনো কার্পণ্য করেননি। এ-প্রসঙ্গে এটিও বলে রাখা দরকার যে, গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হলে রবীন্দ্র-স্নেহধন্য এই কবির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কের মাত্রায় নানারকম ওঠা-নামা লক্ষ করা যায়। এটা আমরা সুধীন্দ্রনাথের 888sport live footballিক জীবনের একেবারে প্রাথমিক-পর্ব থেকেই দেখতে পাই। রবীন্দ্রনাথকে লেখা এক চিঠিতে যুবক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত গভীর 888sport apk download apk latest version প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বোলপুরে ছিলুম গভীর আনন্দে। উত্তরায়ণে তিন রাত্তির কাটানোর ফলে একটা অনর্ব্বচনীয় গৌরব অনুভব করছি। তা ছাড়া আপনার চিরপ্রাণ চিত্তের বদান্যতায় আমার নির্জীব মন একটা অতিমর্ত্ত্য লোকের সন্ধান পেয়েছে। ফলে কৃতজ্ঞতাকে মৌন রাখা শক্ত।’ (চিঠির তারিখ : ১১ই জুলাই, ১৯২৮)।

অন্যদিকে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport live football-প্রবণতার স্বরূপটি আঁচ করতে পেরে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সুধীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন,  ‘ইন্টেলেক্টের ইঁট সাজিয়ে তুমি যদি কাব্যরূপ গড়তে যাও, তবে সেই সৃষ্টিতে প্রত্যেক ইঁট ঠিক আপন পরিমাণটির চেয়ে আর কিছু দিতে পারে না। কিন্তু সজীব গাছের প্রত্যেক অংশই আপনাকে ছড়িয়ে যাচ্চে – তার মধ্যে সৃষ্টির মায়া আছে যাতে করে সেই অংশগুলি সমগ্রকে সহজেই স্বীকার করে।’ (চিঠির তারিখ : ২৭শে আষাঢ়, ১৩৩৫)। তাঁর বক্তব্যকে আরো খানিকটা ব্যাখ্যা করে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কাব্যরূপের কথাগুলির প্রত্যেকটাই যদি রূপবান হয়, তবে সমস্ত রূপটিকেই অংশে অংশেই পাওয়া যায়। একেই বলে সৃষ্টি।’ ওই একই দীর্ঘ পত্রে রবীন্দ্রনাথ আরো বলেছিলেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখেচি সেটাকে অনাদর করা যায় না।’ আর তার পরপরই জানিয়েছেন, ‘সেইজন্যেই ইচ্ছা করি তোমার রচনাগুলিকে কোনো থিয়োরি দ্বারা পীড়ন না করে, অর্থাৎ তাকে সূক্ষ্মাগ্র জুতো কর্সেট প্রভৃতি না পরিয়ে উড়ে মেয়েদের মত জানু ও কনুই পর্য্যন্ত সাংঘাতিক ঘনসন্নদ্ধ অলঙ্কারের দ্বারা তার অঙ্গটাকে আচ্ছন্ন না করে তার সহজ দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে।’ রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত ভেবেছিলেন, তাঁর এইসব স্পষ্ট কথায় সুধীন্দ্রনাথ হয়তো নাখোশ হবেন। সে-কারণেই অনেকটা সান্ত্বনার সুরে বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবীর দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুসি করবার চেষ্টা কোরো।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বেশ খোলাসা করেই বলেন, ‘বুদ্ধিমানদের জন্যে আছে আইনস্টাইন, বার্ট্রান্ড রাসেল, হোয়াইটহেড, প্রশান্ত, সুনীতি চাটুজ্জে – মস্ত মস্ত লোক সব – তোমার আমার মতো মানুষ রসিকসভায় রসের জোগান দেবার ভার নিতে যদি পারি, তবে তার চেয়ে বেশি আশা নাই করলুম।’ তবে রবীন্দ্রনাথের উপদেশের প্রতি সুধীন্দ্রনাথ খুব-একটা কর্ণপাত করেছিলেন, তেমন-কোনো নমুনা না-তাঁর রচনাকর্মে, না-তাঁর চিঠিতে আমরা দেখতে পেয়েছি।

আবার আমরা দেখতে পাই, রবীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথ বেশ বিনয়সহকারেই বলেছিলেন, ‘আমার 888sport app download apkগুলোর সম্বন্ধে আপনি যে-অভিমত প্রকাশ করেছেন, তা বর্ণে বর্ণে সত্য। সে-বিষয়ে যতই ভাবছি, মনে হচ্ছে আপনার কাব্যবিবেচনা নিখুঁত।’ পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের ‘রসিকসভায় রসের জোগান দেবার ভার’ নেবার তত্ত্বকে সরাসরি খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অ888sport apk download apk latest version এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ বোধহয়, সৎ ও স্বতন্ত্র যে-কোনো বড়ো মাপের লেখকই পাঠকের মতামতকে খুব-একটা গুরুত্ব দিতে চান না। বোর্হেস (Jorge Luis Borges) সে-কারণেই বলতে পেরেছিলেন, ‘Yes, I never think about the reader, except in the sense of trying to write in a comprehensible way ― it’s a simple act of politeness, although it is towards persons completely imaginary or absent. I don’t believe that confusion is a merit.’ (১৯৮৪) অনেকটা সেরকম কৈফিয়ত দেওয়ার মতো করে সুধীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কেন ও-গুলো লিখেছিলুম, এবং কেন ও-গুলো বার করতে চাইছি। প্রশ্নের প্রথম ভাগের জবাব, আমি নিষ্কর্মা বলে; দ্বিতীয় ভাগের জবাব দেওয়া একটু শক্ত, তবে বন্ধুবান্ধবদের প্রবর্ত্তনাতেই বই ছাপানোর কথা মনে জাগে। এখন নিজের বুদ্ধির তারিফ করছি যে আপনার অনুজ্ঞা না-নিয়ে ছাপাখানার কবলে পড়িনি।’ এই কৈফিয়তের সঙ্গে তিনি এটিও স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, ‘আবর্জ্জনা-প্রপীড়িত বাঙলাকে নূতন

জঞ্জালের চাপে আরো ব্যথিত করা যুক্তিযুক্ত হবে না ভেবেই ও-তুচ্ছ 888sport app download apkগুলো আপনার সামনে হাজির করতে সাহসী হয়েছিলুম।’ 

এতোকিছুর পরেও কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, শেষ পর্যন্ত সুধীন্দ্রনাথ নিজের সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন। নতুবা নিজের রচনা-সম্পর্কে কেন বলবেন, ‘এ বললে মিথ্যা হবে যে, ও-গুলোকে সম্পূর্ণ অসার মনে করি। আমার বলবার কথা দু-একটা আছে; এবং তারা বোধ হয় কাব্যসভায় আসন পাবার অযোগ্য নয়। কিন্তু রচনায় যে-আনন্দ ও ব্যথা পেয়েছি তার জন্যে পাবলিকের কাছে বাহবা চাই না। আপনি সস্নেহ যত্নে সেগুলোকে পড়ে সমালোচনা করেছেন তাতেই আমার সাধনা সার্থক, আমি ধন্য।’ রচনাকর্মে নিয়োজিত থেকে আনন্দ পাওয়ার কথা বোর্হেসকেও আমরা স্বীকার করতে দেখি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘I like to write. Yes, that doesn’t mean I believe in the value of what I write, but, yes, in the pleasure of writing. I mean, if I were Robinson Crusoe, I believe I’d write on my island.’ (১৯৮৪)। এরপরে দুনিয়ার দুই প্রান্তের দুজন 888sport live footballিকের উপলব্ধির সাযুজ্যের ব্যাপারটি বুঝে নিতে পাঠকের তেমন-কোনো অসুবিধে হয় না।

তিন

এটা আমাদের কাছে একদমই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, 888sport live football-রচনার প্রাথমিক পর্বেই সুধীন্দ্রনাথ তাঁর 888sport live footballচিন্তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পথের ফারাক অনুধাবন করতে পেরেছিলেন; তাতে অবশ্য তিনি খুব বেশি বিচলিত বোধ করেননি। রবীন্দ্রনাথের মতামতের সঙ্গে কোনো প্রকার সংঘর্ষে না-জড়িয়েই নিজের দৃষ্টিভঙ্গির একটি যৌক্তিক ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার দিকে সুধীন দত্ত মনোযোগী হয়েছিলেন। এর বেশি রবীন্দ্র-বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়ে তিনি অযথা আপন শক্তির অপব্যয় করতে চাননি।

এটা বুঝতে তেমন অসুবিধা হয় না যে, 888sport live footballাদর্শের দিক থেকে দুজনার এই তফাৎ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেও ছিলেন যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা একটি পত্রে রবীন্দ্রনাথ এ-বিষয়ে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্রের লেখা পাঠকদের কাছ থেকে ভাবনার দাবি করে, কেননা মননশীল তাঁর মন। 888sport live football-রচনায় কারো বা চিত্তবৃত্তিতে কল্পনার কর্তৃত্ব কারো বা মননের।’ তিনি এটিও বেশ স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, ‘আরো একটা প্রবর্তনা আছে তাকে বলা যেতে পারে লোকহিতৈষা, তাতে শ্রেয়োবুদ্ধির ফসল চাষ হয়। আমার নিজের লেখা নিজে বিচার করতে সম্মতি যদি দাও তাহলে বলতে হয় আমার লেখায় প্রধানত কল্পনা আর শ্রেয়োবুদ্ধি এই দুটোরই চালনা।’ (চিঠির তারিখ : ১১ই এপ্রিল, ১৯৩৯)

এটি আমাদের কাছে বেশ আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হয় যে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport live football-প্রবণতার বৈশিষ্ট্যগুলি রবীন্দ্রনাথ খুবই তাৎপর্যের সঙ্গে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এই ব্যাপারে তাঁর তেমন-কোনো ভুল হয়নি। অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিতেই তিনি বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্রনাথের মুখ্য আনন্দ মননে, শিক্ষা দেওয়ার উপদেশ দেওয়ার আভাস যদি কোথাও দেখতে পাওয়া যায় সেটা নেহাৎ গৌণ, এমনকি মনে হয় তার প্রতি তাঁর অ888sport apk download apk latest version আছে।’ সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে যথার্থভাবেই ‘মননবিলাসী’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ‘মননে যার প্রয়োজনাতীত আনন্দ তার কাছে নিশ্চিন্ত সিদ্ধান্তের পাকা দাম নেই। তাই সুধীন্দ্র অনায়াসে বলতে পেরেছেন … তাঁর অনেক পুরনো মতের সঙ্গে এখনকার মত মেলে না অথচ তাই বলে তাঁর কাছে সেগুলো পরিত্যাজ্য বলে মনে হয়নি।’ আমাদের বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথের এই মূল্যায়নে এতোটুকুও ভুল নেই।

তবে, সুধীন্দ্রনাথের মতামতকে মূল্য দিয়েও তাঁর ভিন্ন মতের সমালোচনাও করতে পিছপা হননি রবীন্দ্রনাথ। তিনি অকপটেই অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্র নানা বিষয়েই পড়াশুনো করেছেন কিন্তু কোনো বিশেষ বিষয়ে তাঁর মন জমাট বেঁধে যায়নি। জ্ঞানের ও ভাবের রাজ্যে তিনি যাযাবর।’ আবার, সেইসঙ্গে এটিও মেনে নিতে দ্বিধা করেননি যে, ‘ওঁর সঙ্গে আমার তহবিলের তুলনা হয় না কিন্তু একটা জায়গায় মেলে সে ওঁর পথ-চলতি মন নিয়ে।’ (চিঠির তারিখ : ১১/৪/১৯৩৯)

চার

রবীন্দ্র-888sport live footballের আলোচনায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যে-অনুপম দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, সেখানে তাঁর জ্ঞান, মনন আর প্রজ্ঞার পরিচয় যেমন পাই, তেমনি দেখতে পাওয়া যায় তাঁর ‘পথ-চলতি’ সতেজ আর প্রাণবন্ত একটি ‘মন’কে। ‘রবীন্দ্রপ্রতিভার উপক্রমণিকা’ 888sport liveে সুধীন্দ্রনাথ প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের কৃতিত্বকে আলাদাভাবে শনাক্ত করতে চেয়েছেন, শুধুই অন্ধভাবে রবীন্দ্র-পূজায় বা রবীন্দ্র-বিরোধিতায় অবতীর্ণ হননি। আর তাই তো বলতে পেরেছিলেন, ‘সত্য বলতে কী, রবীন্দ্রনাথ যদিও আন্তর্জাতিক ঐক্যবোধের অন্যতম উদ্যোক্তা, তবু তাঁর কৃতিত্ব ঐকান্তিক আত্মোপলব্ধি; এবং সে-কথা ভুলে তাঁকে আধুনিক জ্ঞান-888sport apkের, তথা যুগধর্মের, দিকপাল-রূপে দেখলে, আমাদের অন্ধভক্তিই ধরা পড়বে, তাঁর মান বাড়বে না।’ রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জেনেছিলেন যে,  ‘কাব্যরূপের কথাগুলির প্রত্যেকটাই যদি রূপবান হয়, তবে সমস্ত রূপটিকেই অংশে অংশেই পাওয়া যায়। একেই বলে সৃষ্টি।’ রবীন্দ্রনাথ-কথিত সেই রূপ আর তার সৃষ্টিকে সুধীন্দ্রনাথ গুরুত্ব দিতেন বলেই অন্ধ রবীন্দ্র-ভক্ত হিসেবে নিজেকে কখনো জাহির করেননি।

888sport live chat-888sport live footballের অনেক ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করে নিলেও আমাদের সমাজ-888sport live football-সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে নিঃসংশয়ে তাঁর অবদানের অতিরঞ্জিত কথাগুলিকে মেনে নিতে পারেননি। বরং, তিনি বলেছেন, ‘বস্তুত অবগতির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ পথপ্রদর্শক সুদ্ধ নন, তিনি রামমোহন-প্রমুখ আবিষ্কারকদের অনুগামী। … পক্ষান্তরে তাঁকে প্রাচ্য তত্ত্ববিদ্যার প্রচারক ভাবাও অসঙ্গত; এবং জড়বাদী পশ্চিম তাঁর বাণী শুনে অন্তর্দশনের মূল্য বোঝেনি, বরং প্রাচীর জড়ভরতেরাই তাঁর মারফতে পাশ্চাত্য অধ্যাত্ম-তত্ত্বের সন্ধান পেয়েছেন।’ এইভাবেই তিনি রবীন্দ্রনাথের স্বরূপকে চেনার চেষ্টা করেছেন। একটা জিনিস তিনি মানতেন যে, ‘রবীন্দ্রনাথের স্বরূপ পরিচয় না জানলে, আধুনিকেরা নিজেদেরও চিনতে পারবে না।’ বলা যায় যে, নিজের সেই স্বরূপটাকে চেনার জন্যেই তিনি নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের 888sport live football ও 888sport live footballচিন্তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

পাঁচ

রবীন্দ্রনাথ নিজের বিষয়ে বলতেন যে, ‘গদ্য 888sport liveের ভার বইতে আমার মন চায় না।’ আর সেজন্যেই সুধীন্দ্রনাথের কাছে এমন অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে,  ‘তোমার “স্বগত” পড়তে সুরু করেছি। এর মধ্যে চিন্তনীয় বিষয় তুমি ঠেসে দিয়েছ, তাও আবার এমন ভাষায় সে ভাষা সুগম নয়।’ (চিঠির তারিখ : মার্চ ১৯৩৯, ফাল্গুন ১৩৪৫)। এতোটা বলার পরেও তিনি আবার অমিয় চক্রবর্তীকে সেই গ্রন্থ বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্রনাথ তাঁর বইয়ে প্রয়োজন অনুসারে বিস্তর নতুন শব্দ চালিয়েছেন যাদের অর্থগুলি সজীব। তত্ত্ব888sport live footballে তাঁর জ্ঞান আছে তবু তিনি তত্ত্বজ্ঞানী নন, তিনি আর্টিস্ট।’ নিজের কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন, ‘তাঁর (সু.দ.) মননের আনন্দ বাছাই-করা শব্দের খেয়ায় চেপে বসেছে। শব্দগুলি অপরিচিত সুতরাং সাধারণ পাঠককে বুঝতে বাধা দেবে এ দুশ্চিন্তা তাঁকে ঠেকায়নি। তাঁর লক্ষ্য মুখ্যত রচনার প্রতি গৌণত পাঠকদের দিকে।’ (চিঠির তারিখ : ১১/৪/১৯৩৯)।

রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্য যে কতটা যথার্থ, সেটি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport liveসংগ্রহে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ‘যুগপ্রবর্তক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘যে-বাঙালীর বয়স এখনও পঞ্চাশের নীচে, তার মতিগতি প্রধানত রবীন্দ্র-প্রভাবিত; এবং যাঁরা তদূর্ধ্বে উঠেছেন, বিবেচক হলে, তাঁরাও মানতে বাধ্য যে বাংলার আধুনিক সংস্কৃতি একা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি।’ (রবিশস্য)। যুগপ্রবর্তক কবির কাব্যচেতনার স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্বের অন্দরমহলের খবরও সুধীন্দ্রনাথ দিতে চেয়েছিলেন পাঠককে। কেননা, তাঁর মনে হয়েছিল, ‘রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন যে তাঁর মনের ধর্ম লিরিক। বাঙালীর দৈনন্দিন জীবন তাঁর কাছে এমনই সঙ্কীর্ণ লেগেছিল যে এখানকার সর্বগ্রাহী এপিক চিত্তবৃত্তিকে তিনি অতঃপর আর প্রশ্রয় দেননি এবং সেইজন্যে আত্মোপলব্ধির প্রথম উন্মাদনাতেও তিনি উল্লাস খুঁজে পাননি – “মানসী” ও “সোনার তরী”-র ভিতরে ভিতরে পুঞ্জিত হয়ে উঠেছিল বিবিক্তির বিষাদ।’ সুধীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি রবীন্দ্রনাথের ‘নিষ্ফল কামনা’র মধ্যে দিয়ে যেন যথার্থভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠেছিল – ‘বৃথা এ ক্রন্দন!/ বৃথা এ অনল-ভরা দুরন্ত কামনা!’ তারপরই কবি বিষাদে খিন্ন হয়ে বলেছিলেন : ‘রবি অস্ত যায়।/ অরণ্যেতে অন্ধকার, আকাশেতে আলো।/ সন্ধ্যা নত-আঁখি/ ধীরে আসে দিবার পশ্চাতে।/ বহে কি না বহে/ বিদায়বিষাদশ্রান্ত সন্ধ্যার বাতাস।’ আবার সোনার তরীর ‘দুর্বোধ’ 888sport app download apkতেও যেন আত্মোপলব্ধির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন-বিষাদ কবিকে আরো ম্রিয়মাণ করে রেখেছিল – ‘তুমি মোরে পার না বুঝিতে?/ প্রশান্ত বিষাদভরে/ দুটি আঁখি প্রশ্ন করে/ অর্থ মোর চাহিছে খুঁজিতে,/ চন্দ্রমা যেমন ভাবে স্থিরনতমুখে/ চেয়ে দেখে সমুদ্রের বুকে।’ আমরা বলতে পারি এই রোমান্টিক বিষাদ, যা রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কাব্যজীবন জুড়ে বিরাজমান ছিল, তার শুরুটা দেখতে পাই মানসী-সোনার তরী, বিশেষভাবে মানসীতে।

সম্ভবত সে-কারণেই বুদ্ধদেব বসুর মতো প্রাজ্ঞ-সমালোচক মানসী কাব্যকে রবীন্দ্রনাথের ‘প্রথম প্রাতিস্বিক কাব্যগ্রন্থ’ হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি তাকে রবীন্দ্রনাথের ‘‘অনুবিশ^’ বলে আখ্যাত’ করেছিলেন। অন্যদিকে, আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতে, এই ‘মানসী-ই রবীন্দ্রনাথের সর্বপ্রথম কাব্যগ্রন্থ যাতে … ভাবের কুয়াশা কেটে গেছে, ভাষার পেশী শক্ত হয়েছে, হৃদয়াবেগ ঈষৎ সংযত, প্রকাশে অতি-বিস্তার নেই।’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘ছন্দোমুক্তি  ও রবীন্দ্রনাথ’ 888sport liveে এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘মানসী’-র কৃতিত্ব অসামান্য; এবং শুধু সেই পুস্তকের জোরে তিনি বঙ্গ888sport live footballে স্থায়ী সিংহাসন পেতেন। কিন্তু সে-প্রকরণ যখন ‘কল্পনা’য় এসে ঠেকল, তখন কবি হঠাৎ তাতে আগ্রহ হারালেন; এবং তারপরের বই ‘ক্ষণিকা’ যে-পরীক্ষার ফল, তাতে কোনও লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক কেন স্বেচ্ছায় হাত দেন, তা বোঝা শক্ত।’ আবার এরই রেশ ধরে পরবর্তী সময়ে রচিত ‘রবিশস্য’ 888sport liveে সুধীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘মানসী’ ও ‘সোনার তরী’-কে একত্রে নিলে, রবীন্দ্রনাথের ভূত-ভবিষ্যৎ, দুইই, আমাদের গোচরে আসবে, বাকী থাকবে শুধু তাঁর ক্ষণস্থায়ী প্রতর্ক, যার প্রজ্ঞাপারমিত রূপ ‘ক্ষণিকা’-র অনুপম ঐশ্বর্য।’ রবীন্দ্রকাব্যের অন্যতম সেরা আলোচক আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতে, ‘‘ক্ষণিকা’ কাব্যটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ‘প্রাক্-‘গীতাঞ্জলি’ পর্বের সবচেয়ে সার্থক রচনা।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইয়ুব বলেছিলেন, এই কাব্যে ‘গুরুতম ভাবের সঙ্গে লঘুতম ভঙ্গির মিতালি ঘটানো সম্ভব হয়েছে।’ আর সেই সঙ্গে ‘ছন্দ ক্ষিপ্ত ও অনায়াস, ভাষা ঘরোয়া ও অন্তরঙ্গ, ভাবের গাম্ভীর্যকে প্রায়ই মৃদু পরিহাসের পাতলা আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।’ এই কাব্যের 888sport app download apkগুলোতে সামান্য চোখ বুলিয়েই আইয়ুবের বক্তব্যের যথার্থতা আমরা বুঝে নিতে পারি – ‘এখন যাঁরা বর্তমানে আছেন মর্তলোকে/ ভালোই লাগত তাঁদের ছবি কালিদাসের চোখে…/ আপাতত এই আনন্দে গর্বে বেড়াই নেচে – /কালিদাস তো নামেই আছেন, আমি আছি বেঁচে।’ 888sport app download apkটির সমাপ্তি টানা হয়েছে পরিহাসের এই দ্যোতনা দিয়ে, যেখানে কবি বলেছেন – ‘প্রিয়ে, তোমার তরুণ আঁখির প্রসাদ যেচে যেচে/ কালিদাসকে হারিয়ে দিয়ে গর্বে বেড়াই নেচে।’ (‘সেকাল’)।

এখানে লক্ষ করার ব্যাপার যে, সুধীন্দ্রনাথ মনে করতেন, ‘ভাষা, ভাব আর ছন্দ, এই তিনের সন্নিপাতে কাব্য গড়ে ওঠে।’ আইয়ুব ঠিক সেই সুধীন্দ্র-মাপকাঠি দিয়েই ক্ষণিকা কাব্যের বিচার করেছেন। এতে আইয়ুবের পাশাপাশি 888sport live football-সমালোচক হিসেবে সুধীন্দ্রনাথের সক্ষমতার বিষয়টি আরো-একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাঠকের সামনে।

ছয়

‘রবিশস্য’ 888sport liveেরই এক জায়গায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, ‘বস্তুত রবীন্দ্র-রচনাবলীর উত্তরকাণ্ড একটু বেশী শুদ্ধ; এবং প্রকরণকে প্রসঙ্গের উপরে প্রাধান্য দিয়েই তাঁর প্রতিভা পরিণতির দিকে এগিয়েছে।’ নিজের বক্তব্যকে আরো খানিকটা খোলাসা করতে গিয়ে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত চিত্রাঙ্গদা-ও উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘স্থানে স্থানে ইন্দ্রিয়াসক্তির গুণ-গান যতই উগ্র হোক না কেন, সম্পূর্ণ নাটিকাখানি নিতান্ত নীতিপ্রধান; এবং তার সারমর্ম এই যে কামনার পরিতৃপ্তি যেহেতু মানুষের আত্মপ্রসাদ জাগায় না, আত্মধিক্কার ঘটায়, তাই শারীরিক মিলনের চেয়ে আধ্যাত্মিক ঐক্যবোধ, কেবল ন্যায়ত নয়, কার্যতও ভালো।’ এখানেই তিনি থামেননি। নিজের মতামতকে আরো জোরালো করবার জন্যে সুধীন্দ্রনাথ এটিও যোগ করেছেন যে, ‘আধ্যাত্মিক ঐক্যবোধ’ সম্পর্কে ‘এই সনাতনী সিদ্ধান্ত রবীন্দ্র888sport live footballের ধ্রুবপদ।’ আর সেই সূত্র ধরেই আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে সুধীন্দ্রনাথ বলতে পেরেছিলেন, ‘তাহলেও ‘চিত্রাঙ্গদা’-য় কথাটাকে তিনি যত ঋজু, যত বিস্তারিত, যত রূপকবর্জিতভাবে বলেছেন, অন্যত্র তার তুলনা নেই; এবং সেইজন্যে ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে বিশেষত এই বইখানি বাঙালী বিবেচকদের কাছে অশ্লীল ঠেকেছিল।’

আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে, এখানে সুধীন্দ্রনাথ কাদের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন। চিত্রাঙ্গদার প্রতিক্রিয়ায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো 888sport live footballিক সেদিন লিখেছিলেন, ‘দুর্নীতি কাব্যে সংক্রামক হইয়া দাঁড়াইতেছে। তাহার উচ্ছেদ করিতে হইবে। যাঁহারা ধর্ম ও নীতির দিকে, তাঁহারা আমার সহায় হোন।’ (জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৬)। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় চিত্রাঙ্গদার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার চাইতেও বেশি করেছিলেন অধর্মের অভিযোগ। ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কাব্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে তাঁর অনেকটা এ-রকম মনে হয়েছিল – ‘অশ্লীলতা ঘৃণার্হ বটে কিন্তু অধর্ম ভয়ানক। ঘরে ঘরে “বিদ্যা” হইলে সংসার আঁস্তাকুড় হয়; কিন্তু ঘরে ঘরে এই চিত্রাঙ্গদা হইলে সংসার একেবারে উচ্ছন্নে যায়। সুরুচি বাঞ্ছনীয়, কিন্তু সুনীতি অপরিহার্য।’ আর সেই সূত্রে তিনি খুবই কঠিন স্বরে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রবাবু এই পাপকে যেমন উজ্জ্বল বর্ণে চিত্রিত করিয়াছেন, তেমন বঙ্গদেশে আর কোনও কবি অদ্যাবধি করেন নাই।’ এই গ্রন্থের মধ্যে তিনি কোনো 888sport live chat-সার্থকতা দেখতে পাননি, তার পরিবর্তে দেখেছিলেন এক প্রকারের ‘কুনীতি’কে। আর সে-কারণেই তথাকথিত নীতিবাদীদের মতো করে নির্দেশনা জারি করে বলেছিলেন, ‘আমি “চিত্রাঙ্গদা”-র সমালোচনা করিতে বসি নাই। ইহার সুন্দর ভাষা ও মধুর ছন্দোবন্ধ, ইহার উপমা-ছটা অতুলনীয়। মাইকেলের পর এত মধুর অমিত্রাক্ষর আর বোধহয় কেহই লিখিতে পারেন নাই। তথাপি এ-পুস্তকখানি দগ্ধ করা উচিত।’ এখানে কোনো 888sport live football-সমালোচনার আভাসমাত্র নেই; বরং, সমালোচনার নামে একজন নীতিবাদীর ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিফলন যেন দেখতে পাই।

এসব আলোচনাকে তেমন-একটা গুরুত্ব না-দিয়ে, তাঁর ‘ছন্দোমুক্তি ও রবীন্দ্রনাথ’ 888sport liveে সুধীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আমার মতে রবীন্দ্রনাথও আর্ষপ্রয়োগক্ষম কবি; এবং সেইজন্যে তিনি আবাল্য কাব্যকে মুক্তির বিজন পথে তাড়িয়ে বেড়িয়েছেন।’ আর তার সঙ্গে তিনি এটিও যুক্ত করতে একেবারেই দ্বিধা করেননি যে, ‘রবীন্দ্রপ্রতিভার অত্যাশ্চর্য গুণ হচ্ছে তাঁর প্রণালীর অদ্ভুত অস্থৈর্য, তাঁর অশেষ পরিবর্তন ও অনবতুল বৃদ্ধি।’ বোধ করি সেই দিকটি খেয়াল রেখেই বুদ্ধদেব বসু তাঁর কাব্য-বিশ্লেষণ পদ্ধতির একেবারে গভীরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের এমন কোনো একটি বই নেই, যা সামগ্রিকভাবে তাঁর প্রতিভূ, কিংবা যাতে তাঁর সর্বপ্রকার গুণপনার পরিচয় আছে, কিংবা কোনো একটি কাব্যকে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তিও বলা যায় না।’ 888sport live footballচিন্তার দিক থেকে বুদ্ধদেব বসুর চেয়ে আলাদা হয়েও এর নেপথ্যেও কারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন সুধীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথম শ্রেণীর কবিদের রচনায় একটা সুনির্দিষ্ট ধারা স্পষ্ট; একটা সীমাবদ্ধ সরণী বেয়ে তাঁরা উৎকর্ষে ওঠেন; এবং একবার গন্তব্যে পৌঁছালে, তাঁদের আর কোনও দ্বিধা, দ্বন্দ্ব বা চাঞ্চল্য থাকে না।’ কিন্তু, অন্যদিকে, ‘রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballে এই কঠিন সন্তোষ অবর্তমান; তাঁর কাব্যের ক্ষিপ্র স্বভাব পূর্ণতা তথা কৈবল্যের পরিপন্থী।’ সেই নিরিখেই তিনি সাহসে ভর দিয়ে বলতে পেরেছিলেন যে, ‘আমার বিচারে “লিপিকা” অমূল্য পুস্তক। তার কারণ শুধু এ নয় যে এতদিন পর্যন্ত বাংলা মুক্তচ্ছন্দের একমাত্র নিদর্শন কেবল এই গ্রন্থে পাওয়া যেত; অধিকন্তু প্রাকৃত বাংলার প্রভূত শক্তি ও যথার্থ সৌন্দর্য প্রথম এখানেই আত্মপ্রকাশ করেছিল।’ আর সেদিকে খেয়াল রেখেই তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পেরেছিলেন যে, ‘রূপকার হিসাবে রবীন্দ্রনাথ যতই সচেতন হোন না, তাঁর কাব্য মুখ্যত প্রেরণা-প্রসূত।’

আমরা দেখি যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর পুনশ্চ কাব্যের ‘ভূমিকা’য় বলেছিলেন, ‘‘গীতাঞ্জলি’-র গানগুলি ইংরেজি গদ্যে 888sport app download apk latest version করেছিলাম। এই 888sport app download apk latest version কাব্যশ্রেণীতে গণ্য হয়েছে। সেই অবধি আমার মনে এই প্রশ্ন ছিল যে, পদ্যছন্দের সুস্পষ্ট ঝংকার না রেখে ইংরেজিরই মতো বাংলা গদ্যে 888sport app download apkর রস দেওয়া যায় কিনা।’ এরপর তিনি নিজের কাব্য-তৎপরতা বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘আমি নিজেই পরীক্ষা করেছি, ‘লিপিকা’-র অল্প কয়েকটি লেখায় সেগুলি আছে।’

রবীন্দ্রনাথের এর পরের কথাগুলো বাংলা ছন্দের দুনিয়ায় এক নতুন পথের সম্ভাবনার দিকে আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে বাধ্য করে। তিনি বলেছিলেন যে, লিপিকার 888sport app download apkগুলি ‘ছাপাবার সময় বাক্যগুলিকে পদ্যের মতো খণ্ডিত করা হয়নি, বোধ করি ভীরুতাই তার কারণ।’ একটা উদাহরণ দিলেই রবীন্দ্রনাথের কথাগুলির মর্মার্থ অনুধাবন করতে আমাদের সুবিধা হবে। লিপিকার ‘বাঁশি’ 888sport app download apk থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করি : ‘বাঁশির বাণী চিরদিনের বাণী – শিবের জটা থেকে গঙ্গার/ ধারা – প্রতিদিনের মাটির বুক বেয়ে চলেছে; অমরাবতীর শিশু/ নেমে এল মর্তের ধূলি নিয়ে স্বর্গ-স্বর্গ খেলতে।/ পথের ধারে দাঁড়িয়ে বাঁশি শুনি, আর মন যে কেমন করে বুঝতে পারিনে। সেই ব্যথাকে চেনা সুখদুঃখের সঙ্গে মেলাতে যাই, মেলে না। দেখি, চেনা হাসির চেয়ে সে উজ্জ্বল, চেনা/ চোখের জলের চেয়ে সে গভীর।’

রবীন্দ্রনাথের এই টানা গদ্য-888sport app download apkগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সমালোচক শিশিরকুমার ঘোষ বলেছিলেন, ‘আঙ্গিকের পিছনে থাকে অনুভবের চাপ। তার নানান আভাস ছড়ানো আছে গদ্য 888sport app download apkয়। শুধু বিষয় নির্বাচনে নয়, উপমার মধ্যেও স্বগতোক্তির মতন শোনায় কবি-কণ্ঠস্বর।’

কবি-কণ্ঠস্বরের এই রেশ তাঁর উত্তরপর্বের 888sport app download apkগুলিতেও নানাভাবে শুনতে পাওয়া যায়। সেদিকটাতে খেয়াল করেই উত্তরপর্বের পরিশেষ ও পুনশ্চ সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ বলেছিলেন : ‘এই গ্রন্থ-দুইখানিতে রবীন্দ্রনাথ ভাষা, ধ্বনি ও প্রসঙ্গের দিক দিয়ে যেখানে পৌঁছেছেন, তারপরে আর এগোনো অসম্ভব। সাত্ত্বিক কবিমাত্রেই গদ্য-পদ্যের বিবাদ মেটাতে চেয়েছেন, কিন্তু কৃতকার্য হননি। এতদিন পরে রবীন্দ্রনাথের অধ্যবসায়ে হয়তো সে-বিরোধ ঘুচলো।’ তাঁর বক্তব্যকে একটা চূড়ান্ত জায়গায় নেওয়ার জন্যে সুধীন্দ্রনাথকে বলতে হয়েছে – ‘যে-বিচিত্রতার প্রয়োজনে মহাকাব্য গীতি888sport app download apkর কাছে হার মেনেছিল, তার সিদ্ধি হয়তো এইখানে। কারণ এই প্রকাশভঙ্গি জীবনের মতোই পরিবর্তনশীল, এর বিশ্বব্যাপ্তি বায়ুর অনুকারী, ক্ষুধায় এ সর্বভুক্ অগ্নির তুল্য।’ আর তা-ই, আধুনিক কবিদেরকে সতর্ক করে দিতে সুধীন্দ্রনাথ ভোলেননি। তিনি এই সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ‘সর্বভুক্ অগ্নির তুল্য’ আর ‘সেইজন্যে তার আসঙ্গ নিরাপদ নয় … তাই ভয় পাই, তপস্যাকঠিন রবীন্দ্রনাথের পক্ষে যেটা মোক্ষ, আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়তো সর্বনাশের সূত্রপাত।’

সাত

‘প্রকার ও প্রকারীর অভেদই … 888sport live chatসৃষ্টির মূল সূত্র’ – এই বিশ^াস থেকেই সুধীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সূর্যাবর্ত’ 888sport liveে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ হাল বাংলার সিদ্ধিদাতা গণেশ। … রবীন্দ্রপ্রতিভা মুখ্যত ভাবয়িত্রী হলেও কারয়িত্রী পরিকল্পনাতেও তিনি অদ্বিতীয়; এবং 888sport live chatের সর্ববিধ বিভাগেই তাঁর সাফল্য যেমন বিস্ময়াবহ, তেমনই বাঙালীর দৈনন্দিন জীবনেও তাঁর দান সুস্পষ্ট।’ সেইসঙ্গে সুধীন্দ্রনাথ তাঁর নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে এমন মতও হাজির করেছিলেন, ‘স্বকীয় মনীষার স্বতন্ত্র অভিব্যক্তি খুঁজতে গিয়ে তিনি মাতৃভাষাকে যে-অভিনব রূপ দিয়েছেন … তাঁর চিত্তবৃত্তির অনুকরণ যদিও আজ আর তেমন প্রশংসা পায় না, তবু অনেকের মতে রাবীন্দ্রিক বিশ্ববীক্ষাই তরুণ 888sport live footballের মূলধন।’ তাঁর কথাকে আরো সবিস্তারে বলতে গিয়ে সুধীন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল, ‘কাব্য আর দর্শন বিভিন্ন বস্তু; এবং কবির সমস্ত শক্তি যেকালে রূপসন্ধানে নিয়োজিত, তখন তত্ত্বের জন্যে তিনি অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য। এ-নিয়ম দান্তে থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সকল মহাকবির সম্পর্কে খাটে।’ আর তাই সুধীন্দ্রনাথের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘দান্তে যেমন “সুমা”-র রসানুবাদ করে খৃষ্টান আখ্যা পেয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তেমনই উপনিষদের অনুগত বলে, হিন্দু সভ্যতারই কবি।’ সেক্ষেত্রে তরুণ বাঙালি কবির কর্তব্যবোধকে আরো-একবার 888sport app download for android করিয়ে দিয়ে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন, ‘বাঙালী কবি যদি গতানুগতিকতার অপবাদ খণ্ডাতে চায়, তবে রবীন্দ্রনাথের আওতা থেকে খোলা জল-হাওয়ায় বেরিয়ে এসে তাকে দেখাতে হবে যে, তিনি 888sport appsে বৃথাই জন্মাননি, জন্মে স্বজাতিকে স্বাবলম্বন শিখিয়েছেন।’ এর কারণ হচ্ছে, সুধীন্দ্রনাথ 888sport live footballের গতিশীলতায় বিশ^াস করতেন, তার নিরন্তর পরিবর্তনে আস্থা রাখতেন। আর সে-কারণেই একেবারেই দ্বিধাহীনভাবে বলতে পেরেছিলেন যে, ‘রাবীন্দ্রিক গদ্য ছন্দে পয়ার, ত্রিপদী একাবলীর উপযুক্ত মধুর মনোভাব ব্যক্ত করেই আধুনিক বাঙালী কবির রক্ষা নাই, যুগধর্মে দীক্ষাগ্রহণ তার অবশ্য কর্তব্য।’ তাঁর এ-888sport liveের উপসংহারে এসে সুধীন্দ্রনাথ খুব কঠিন একটা সত্য উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেন – ‘এ-কথা না মেনে তার উপায় নেই যে প্রত্যেক সৎকবির রচনাই তার দেশ ও কালের মুকুর, এবং রবীন্দ্র888sport live footballে যে-দেশ ও কালের প্রতিবিম্ব পড়ে, তাদের সঙ্গে আজকালকার পরিচয় এত অল্প যে উভয়ের যোগফলকে যদি পরীর রাজ্য বলা যায়, তাহলে বিস্ময়প্রকাশ অনুচিত।’

এই কথাগুলি সেদিনকার রবীন্দ্র-ভক্তদের সন্তুষ্ট করতে তো পারেইনি, এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এতে খুব-একটা প্রীতি হননি। সুধীন্দ্রনাথের এ-সব 888sport live রচনার অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ একবার নিজের সম্পর্কে খানিকটা খেদ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এ পর্য্যন্ত আমি অনেক মার খেয়েছি কিন্তু মরি নি, অতএব এই মারগুলিতে আমার গৌরব বৃদ্ধি করেচে – বাংলা 888sport live footballে আমি অভিমন্যু, অথচ অভিমন্যুর শেষ দশা আমার ঘটেনি।’ এখানে বলে রাখা দরকার যে, সুধীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কাব্যরূপের বাহন হোলো শব্দ, বাক্য। শব্দের মধ্যে ধ্বনি আছে, অর্থ আছে – কাব্যরূপে দুইয়েরই প্রয়োজন – কিন্তু অর্থটি মুখ্যত সংবাদ দেবার জন্যে নয়। অবশ্য সংবাদ দেওয়াও চাই কিন্তু সেটা গৌণভাবে।’ রবীন্দ্রনাথের এই কথাগুলিকে নানাভাবে মান্যতা দেবার চেষ্টা করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ। তারপরও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর লেখা পত্রে নানারকম সমালোচনার একটা রেশ দেখতে পাই। এমনকি রবীন্দ্রনাথ নিজেও যে সবসময় তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন, জোর দিয়ে সে-কথাও বলা যাবে না। তাঁর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কী-কী হতে পারে, সে-বিষয়ে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরো ঘটনাটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সেদিকে ইঙ্গিত করেই তিনি রবীন্দ্রনাথকে এক চিঠিতে বলেছিলেন, ‘আমার পক্ষে লেখা বিপজ্জনক; কেননা আমার লেখা যাঁরা বোঝেন না তাঁদের 888sport free bet বেশী বটে, কিন্তু যাঁরা বুঝেও বুঝতে চান না, অথবা ইচ্ছে করে ভুল বোঝেন, তাঁদের 888sport free bet আরো অনেক বেশী।’ (চিঠির তারিখ : ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৯৪০)। এতোসব ভুল বোঝাবুঝির দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি তাঁর মতামত প্রকাশের উদাহরণ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো করে খুবই আস্থার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার বিবেচনায় আর কোনো মহাকবির সম্বন্ধে এত বড় কথা আগে কেউ বলেনি; এবং সেইজন্যেই আমি ভেবেছিলুম যে উল্লিখিত মন্তব্যে আপনার প্রতি আমার অসীম 888sport apk download apk latest versionই জ্ঞাপন করছি।’ আর তারপরই যার-পর-নাই খেদ নিয়ে লিখেছেন, ‘কিন্তু এমনই আমার ভাগ্য অথবা কলমের জড়তা যে হিতে বিপরীত ঘটলো, আমার একাধিক পাঠক ওই উক্তির মধ্যে আমার ঔদ্ধত্য আর কালাপাহাড়ির সাক্ষ্য খুঁজে পেলেন। তবে এজন্যে আপনাকে নালিশ জানানো উচিত নয়; কারণ আপনি বাংলা 888sport live footballেরই জনক, বাঙালী পাঠকের নির্ব্বুদ্ধিতা আর আমার অক্ষমতা বিধাতার দান।’ পাঠকের নির্বুদ্ধিতাকে দায়ী করেও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত শেষ পর্যন্ত নিজেকেই দায়ী করে ‘মুখরক্ষা’ করতে চেয়েছিলেন। এর কারণ হচ্ছে, আপাত জটিল মনে হলেও সুধীন্দ্রনাথের মধ্যে ছিল এক প্রকৃত জ্ঞানীর সরলতা। আর তাই বুদ্ধদেব বসুকে লেখা একটি চিঠিতে এমন অকপটে তিনি বলতে পেরেছিলেন যে, ‘আমি সম্পূর্ণ মানি … যে-লেখা সাধারণবোধ্য নয়, তার কোনো সার্থকতা নেই। কিন্তু লিখতে গেলেই আমি একটা প্রচণ্ড বাধা অনুভব করি এবং সেই বাধা কাটিয়ে উঠতে আমার সমস্ত শক্তি খরচ হয়ে যায়, দুরূহতা অতিক্রম করা আর সাধ্যে কুলায় না। সেইজন্যেই আমি এত কম লিখি, এবং লেখা শেষ করে সাধারণ লেখক যে আরাম পান, তা আমার কপালে জোটে না। তবু চেষ্টায় আমি বিমুখ নই।’ (চিঠির তারিখ : ১৫ই এপ্রিল, ১৯৪৬) তবে, এতোসব কিছুর পরেও কিছু কথা কিন্তু থেকেই যায়। যিনি সমাজের উঁচু তলায় বসবাস করেও এভাবে বলতে পারেন, ‘সম্পত্তি বা যাকে বলা হয় আর্থিক অগ্রগতি, সেই বিষয়টাই প্রবলভাবে প্রাতিস্বিক। এর অর্জনপদ্ধতির পিছনে কোনো সামাজিক নীতিবোধ নেই, আছে কেবল 888sport apk [শক্তি]। সম্পত্তি এবং তার অধিকারের প্রক্রিয়া সামাজিক বন্ধনকে চূর্ণ করে সমাজজীবনের প্রাণশক্তিকেই শোষণ করে নেয়। এই নির্বিবেক প্রক্রিয়া সমস্ত পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে – তৈরি হচ্ছে এমন এক শক্তি যা মানুষকে ভুলিয়ে, চাপ দিয়ে অবিহিত কাজ বা সার্বত্রিক সন্ত্রাসের পথে নিয়ে যায়।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৯২২)। কিংবা, যিনি বিশ^াস করতেন যে ‘প্রকৃত সুখ কিন্তু মোটেই ব্যয়বহুল নয়। তার উৎসে আছে সৌন্দর্য আর প্রাণের প্রাকৃতিক ঝরণাধারা, যোগ-সম্পর্কের সামঞ্জস্য। উচ্চাকাক্সক্ষা তার আপন আত্মকেন্দ্রিকতার পথ অনুসরণ করে সেই সামঞ্জস্যের যোগবন্ধনকে ছিন্ন করে দেয়, সম্পর্কে ফাটল ধরায়, পার্থক্য সৃষ্টি করে।’ (888sport app download apk latest version : সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়)। তখন তাঁর রচনাকর্মের বিরাট জগৎকে ‘পরীর রাজ্য’ হিসেবে বর্ণনা করা কতোটা সংগত, সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।

আট

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন সেই সুধীন্দ্রনাথই আবার তাঁর ‘দিনান্ত’ 888sport liveে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের তিরোধান, কেবল আমার কেন, প্রত্যেক অর্বাকপঞ্চাশ বাঙালীর পক্ষে পিতৃবিয়োগের সমকক্ষ; এবং এ-উক্তি উৎপ্রেক্ষামূলক রূপক-মাত্রই নয়, পিতা-শব্দের পরিচিত সংজ্ঞা-কটা যাঁদের বিদিত, তাঁরাই জানেন যে কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য।’ (১১ই আগস্ট, ১৯৪১)। রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballকর্মে ‘ভাষা ও অভিজ্ঞতার সংযোগ’ দেখতে পেয়েছিলেন বলেই এ-রকম বড়োমাপের একটি কথা বিনাদ্বিধায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলতে পেরেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা 888sport live footballের পিতৃ-পদবাচ্য নন, আধুনিক মনো888sport apkে যে-প্রক্রিয়ার নাম আরোপ, তারই সার্বভৌম অভিব্যাপ্তিতে তিনি প্রত্যেক শিক্ষিত বাঙালীর মানস প্রতিমূর্তি।’ আর এরইসঙ্গে এটিও যোগ করতে ভোলেননি যে ‘পৃথিবী-সম্বন্ধে আমার যে-অল্প অভিজ্ঞতা আছে, তার নির্বন্ধে আমি অগত্যা মানতে বাধ্য যে নিছক কবিত্বে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হোন বা না হোন, নিপট মনুষ্যত্বে তাঁর সমকক্ষ আমাদের যুগে খুব বেশী জন্মায়নি।’ এ-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কসূত্রকে সামনে এনে বলেছিলেন, ‘যখন মনে পড়ে যে আমার ভাগ্যে তাঁর সাক্ষাৎ স্নেহ প্রচুর পরিমাণে জুটেছিল, তখন প্রাণধারণের গ্লানিও আর অসহ্য লাগে না, খেদ-ক্ষোভের তলায় তলায় বুঝতে পারি তাঁর সংস্পর্শে আমার দিনগত পাপের বোঝা কতখানি ক্ষয়ে গিয়েছিল।’

নয়

রবীন্দ্রনাথ সবসময়ই মনে করতেন যে, ‘মানুষ যখন তার কীর্ত্তির জন্যে বৃহৎকালের ক্ষেত্র না পায় তখন সে নিজের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করতেই পারে না। সে আপন অভাবকে হীনতাকেই ব্যক্ত করে।’ সেদিক থেকে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আমৃত্যু পুরোপুরি মুক্ত ছিলেন। সে-কারণে তিনি অকপটেই এমনভাবে বলতে পারতেন যে, ‘888sport live footballসাধনায় সাধ ও সাধ্যের সামঞ্জস্য দুর্ঘট বলে, আমার লেখা যদিও অবোধ্য, তবু আমি পড়তে ভালোবাসি প্রাঞ্জল রচনা।’ আর সে-কারণেই রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballবিচারের বেলাতেও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যেমন কখনোই তাঁর জায়মান 888sport live footballাদর্শকে যেমন বিসর্জন দেননি, তেমনই ‘কাণ্ডজ্ঞান, সাংসারিক ও সামাজিক সুবুদ্ধি’ – তাও পুরোপুরিভাবে সেইসব 888sport liveের কাঠামো ও বিষয়বস্তুতে বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। যে-কারণে বুদ্ধদেব বসুর মনে হয়েছিল যে, ‘Sudhindranath’s critical essays are an illumination.’

আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘মনের নির্মিতিই ভাবুক’। আর সে-কারণেই তাঁর 888sport live footballকর্মের মধ্যে ‘তিনি রসশাস্ত্রের দাবি ও অন্বীক্ষাশাস্ত্রের বিধি অক্ষুণ্ন’ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballবিচারের বেলাতেও সেসবের এতোটুকুও অন্যথা ঘটেনি। আর তাই তাঁর রবীন্দ্র888sport live football-মূল্যায়নের মধ্যে গঠনের সৌন্দর্য যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি আমরা পাই – অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির যুগ্ম সম্পূর্ণতা।

আকর গ্রন্থ

সুধীন্দ্রনাথ দত্তের 888sport liveসংগ্রহ, সম্পাদক : অমিয় দেব, কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৯৫।

সহায়ক গ্রন্থ

১.        অরুণ সেন, এই মৈত্রী এই মনান্তর, কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৭৭।

২.       আবু সয়ীদ আইয়ুব, রচনাসংগ্রহ, সম্পাদনা : পূষণ আইয়ুব ও চম্পাকলি আইয়ুব, কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ২০২২।

৩.       রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিঠিপত্র : একাদশ খণ্ড, বিশ^ভারতী : পুনর্মুদ্রণ, ১৪১৭।

৪.       রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিঠিপত্র : ষোড়শ খণ্ড, বিশ^ভারতী : ১৪০২।

৫.       সুধীন্দ্রনাথ, সম্পাদক : নিরঞ্জন হালদার, কলকাতা : রামায়নী প্রকাশ ভবন, ১৯৭৫।

৬.       সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসংগ্রহ, ভূমিকা : বুদ্ধদেব বসু, কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ১৯৮৪।

৭.       সৌরীন ভট্টাচার্য, কেন আমরা রবীন্দ্রনাথকে চাই এবং কীভাবে, কলকাতা : অনুষ্টুপ, ২০১১।