সুধীরদা : 888sport sign up bonusর টুকরো

সুধীর চক্রবর্তী। বাংলা 888sport live footballের আসরে সোনার জলে খোদাই করা একটি নাম। কৃতী লেখক ও গবেষক। তাঁর কলমের ডগায় শব্দেরা অনায়াসে হাজির হয় বাধ্য অনুগামীর মতো। সারাজীবনে তিনি অজস্র 888sport app download bdে ভূষিত হয়েছেন। লেখার হিসাব নিতে বসলে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠবে। এইসব গ্রন্থ কোনো নির্দিষ্ট পথে একই মুখে এগিয়ে চলতে রাজি নয়, বিষয়ের বিচিত্র বিস্তার সেখানে। এর পাশাপাশি তিনি একজন বরেণ্য অধ্যাপক। চারদিকে ছড়িয়ে আছে কত নামী ছাত্রছাত্রী। কিন্তু তবুও বলবো, এইটুকুই কি তাঁর প্রকৃত পরিচয়? না, তা মোটেই মনে হয় না আমাদের। দূর থেকে দেখা তাঁর লেখকসত্তার সবটুকু ছাপিয়ে সেই ব্যক্তিমানুষটির মুখমণ্ডলে সর্বদা ছড়িয়ে পড়তো এক আশ্চর্য আলোকবিভা। যে-বিভায় মেশানো ছিল বৈদগ্ধ্যের উজ্জ্বল দ্যুতি, বুদ্ধির ক্ষুরধার দীপ্তি আর রসিকতা-মাখানো আলোর ফুলকি। তাই কেবল তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে যাঁরা তাঁকে জানেন, সে-জানা যে সম্পূর্ণ নয় তা বলাই বাহুল্য।

খেয়াল করলে দেখি, প্রথিতযশা লেখকের তিরোধানে সাধারণত কিছু চেনা শব্দের ব্যবহার প্রচলিত আছে। যেমন, ‘888sport live footballক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি’, ‘তাঁর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হলো’ ইত্যাদির মতো চেনা শব্দবন্ধ। কিন্তু সেদিন বিকেলে যখন সুধীরদার খবরটা পেলাম, চকিতে মনে হলো, এইসব পরিচিত শব্দ কি তাঁর মতো মানুষের চলে যাওয়াকে যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে? কখনোই পারে না। তিনি কেবল তাঁর নিজের সময়ের মধ্যে, একটা বিশেষ সীমানায় গণ্ডিবদ্ধ ছিলেন না, একেবারে নতুনদের সঙ্গেও তাঁর মনের যে-পাকা সেতুটা গড়ে উঠেছিল – সে ছিল বড় শক্ত বাঁধনে বাঁধা। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কখনো তাঁকে কোনোরকমের ‘সেকেলেপনা’ স্পর্শ করতে পারেনি। বয়সের বিস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁকে যেন পরম বন্ধুর মতো সব কথা বলা যেতো। মনে পড়ে, বেশ কিছুকাল আগে তাঁর সত্তর বছর বয়সের অনুষ্ঠানে শান্তিনিকেতন থেকে সশরীরে হাজির হতে পারছি না বলে মন একটু খারাপ। শেষমেশ একটা ছড়া লিখে খামে ভরে তাঁকে ডাকে পাঠিয়ে দিলাম, যার প্রথম লাইনটা এমন ‘সুধীরদাদার সত্তর? তা হয় নাকি – ধুত্তোর!’ সত্যিই, কোনোদিন তাঁর বয়স বাড়েনি, এ সেই রবি ঠাকুরের গানের কথা – ‘আমাদের পাকবে না চুল গো আমাদের পাকবে না চুল’ ভঙ্গিমা যেন! শেষদিন পর্যন্ত তাঁর মনের কোনায় ‘বাহাত্তুরে ধরা’ বার্ধক্যের শ্যাওলা ছাপ এক চিলতেও ফুটে উঠতে পারেনি। কিন্তু মনের গহন অন্দরে কি কোথাও কোনো অসহায়তার বীজ লুকিয়ে ছিল না? নিশ্চয় ছিল, তবে প্রতিটি মুহূর্তে সেগুলো তিনি পেরিয়ে গিয়েছেন, তীব্র অবহেলায় মাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। আমরা যারা তাঁকে কাছ থেকে জানি, তারা এও জানি, চূড়ান্ত অসুস্থতায় শয্যাশায়ী প্রথমা কন্যাকে ঘিরে তাঁদের প্রতিদিনের জীবনে কি অসহনীয় বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই চালাতে হয়েছে এবং আজো তাঁর স্ত্রী নিবেদিতাদিকে চালাতে হচ্ছে। বাড়িতে এমন অসুস্থ রোগী থাকলে স্বভাবতই নানান সাহায্যের দরকার পড়ে, সেই সঙ্গে কাজ করে দেবার লোকেরও। আর সেইসব লোকের প্রতিনিয়ত দাবির সমস্তটা সহ্য করে রোজকার রুটিন চালিয়ে যাওয়া কি কঠিন – তা ভুক্তভোগীরা সকলেই জানি। এসব নিয়ে নিবেদিতাদি আমাদের কাছে কখনো অনুযোগ জানালেও সুধীরদার মুখে কোনোদিন এ-বিষয়ে একটা শব্দও উচ্চারিত হতে শুনিনি। আশ্চর্য তপস্যার মতো নিজের সৃষ্টিশীল মনকে তিনি যেন ক্রমে বজ্রকঠিনভাবে নির্মাণ করে নিয়েছিলেন। বরং কোনো এক মুহূর্তে একবার আমায় বলেছিলেন, মনের মধ্যে নতুন এক লেখার ভাবনা ভেবে চলেছেন তিনি –    যা কি না, এক বৃদ্ধ পিতা ও তাঁর অসুস্থ কন্যার উপাখ্যান। যেখানে দোতলার ছাদে গিয়ে প্রতিদিন বৃদ্ধ পিতাকে শয্যাশায়ী কন্যার ভিজে জামাকাপড় রোদ্দুরে মেলে দিতে হয়। ক্রমে বড় হয়ে ওঠা মেয়ের পোশাক ছড়িয়ে দিতে হয় ছাদের রেলিংয়ে। তারপর পড়ন্তবেলায় আবার সেগুলো তুলে নিতে আসতে হয় ছাদে। তবে শুধু কি এই আসা-যাওয়া? সেই অসহায় পিতা তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানে, ছাদের কোন দিকের আলসেতে রোদ্দুর কতক্ষণ স্থায়ী হয়, বিকেলের পড়ে-আসা রোদ্দুরে আশেপাশের নারকেলগাছের পাতায় পশ্চিমের আলো কেমন ম্লান হয়ে আসে – তার সবটুকু। তবে আত্মজৈবনিক এ-লেখা তিনি লিখেছিলেন কি না জানা নেই। হয়তো ব্যক্তিজীবনের দুঃখ-বিপর্যয় সবার সামনে মেলে ধরতে নারাজ তাঁর 888sport live chatীমন অবশেষে বেঁকে বসেছিল! তাই কলমকে তাঁর বিষয়-ভাবনা পর্যন্ত পৌঁছাতে দেননি। এটাই তাঁর আরেকটা দিক, ব্যক্তিগত শোক কঠিন অর্গলে আবদ্ধ করে রাখা।

তাঁর কাজের দিকে ফিরে তাকালে মনে হয়, সুধীর চক্রবর্তী কখনো পরিশীলিত বাঁধা-ছকের সীমানায় নিজেকে আটকে রাখেননি। নতুন নতুন ভাবনাজাগানো কাজের পরিপ্রেক্ষিতে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলে নিজেকেও যেন বেশ ঝকঝকে বোধ হতো। সর্বদা যেন নতুন নতুন ভাবনার বীজ ঘোরাফেরা করতো তাঁর মাথায়। শুধু তাই নয়, তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদেও কখনো ম্লানতা লক্ষ করিনি। সর্বদা পরিচ্ছন্ন ধুতি-পাঞ্জাবিতে শোভিত এমন নিখাদ বাঙালি-ব্যক্তিত্বেরও আজ বড় অভাব বোধ হয়। তবে সে মোটেও আজকের মিইয়ে যাওয়া নিষ্প্রাণ ল্যামিনেটেড মলাটসর্বস্ব অগভীর বাঙালি নয়, সেই সজীব, সকৌতুক, প্রাণময় ব্যক্তিত্ব সহসা 888sport app download for androidে আসে না। আবার কাজের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যের অন্ত নেই। এক হাতে ধরে আছেন নিম্নবর্গের অচেনা উপাখ্যান, তাদের জীবন ও গান; আবার অন্যদিকে রবীন্দ্রসংগীতের আশ্চর্য ভুবন। তার পাশেই ছড়িয়ে আছে দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত বা দিলীপ রায়ের গানের জগৎ। আধুনিক বাংলা গানে এমন অনায়াস বিচরণ আর কার মধ্যে পেয়েছি –    সহজে মনে করতে পারি না। আর বাউল-ফকিরের গান, সে-কথাই বা আজ কে বলবে? নিজেও অসাধারণ গাইতেন, ডিএল রায় বা দিলীপ রায়ের গানে তাঁর তেজোদীপ্ত উচ্চারণ আজকের দিনে কোথায়? আধুনিক গানের যে-কোনো আলোচনা সভায় তাঁর অসাধারণ বাচনভঙ্গির সঙ্গে তাঁর অনায়াস ঋজুকণ্ঠের যুগল সম্মিলন শোনার সৌভাগ্য যাদের হয়নি – নিঃসন্দেহে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে দ্বিজেন্দ্রলালের গান এক বিরল অভিজ্ঞতা বইকি। সে-গান শ্রোতার মন ছুঁয়েছে সুরের কেরামতির জোরে নয়, গাইয়ের ভেতরের ওজস্বিতায়। শৌখিন গবেষক তিনি কোনোদিনই ছিলেন না, নিয়ত এ-গ্রাম থেকে সে-গ্রাম চষে বেড়িয়েছেন। প্রকৃত অর্থে গান আর গ্রাম ছিল তাঁর আজীবনের সঙ্গী, অনন্ত পরিক্রমা।

আবার অন্যদিকে তাঁর রসিকতার কোনো তুলনা নেই, কথায় কথায় উপচে পড়তো নির্মল হাসির বুদ্ধিদীপ্ত ফুলকি। তার মধ্যেই মিশে থাকতো স্যাটায়ারের টুকরো, বিদ্রূপের প্রচ্ছন্ন ইশারা, হয়তো বা প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদ – সেই রসিকতার বিচিত্র স্রোত বুঝি তাঁর সঙ্গে ফুরিয়ে এলো। মনে পড়ে, এক প্রখ্যাত কবি, কলকাতার বড় প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন, তবু তাঁর কাছে সংশয়াচ্ছন্ন মনের গোপনকথা জানাতে এসেছেন। সুধীরবাবুও বিলক্ষণ জানেন যে তরুণ কবির এই আশঙ্কা নেহাত মনগড়া ও সহানুভূতি আদায়ের কপট প্রয়াস। তাই পরম কৌতুকে সেই অনুজ কবিকে আশ্বাস দিয়েছেন আরো এক বড় কবির ভাষায়। মুচকি হেসে তাকে বলেছেন, তোমার আবার চিন্তা কি, ওখানে তোমার অবস্থান তো ‘সুনীল সাগরের শ্যামল কিনারে’ –    অগত্যা সেই তরুণ কবিকেও অধোবদনে সম্মতি জানাতে হয়েছে। রবিঠাকুরের গানের এই ‘সুনীল’ আর ‘সাগর’ যে এখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর সাগরময় ঘোষ, সে-কথা আজ আর কাউকে বলে দিতে হবে না। অনেক পরে এই গল্প তাঁর মুখেই শুনেছি, এমন আরো কতো গল্প – এমনটাই ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। এমন একজন কৃতী মানুষকে কিভাবে যে আমার মেন্টর হিসেবে পেয়েছিলাম, তা ভাবলে আজ অবাক হই। প্রকৃতপক্ষে উনি ছিলেন আমার দাদার শিক্ষক। অধ্যাপকীয় দূরত্বে থাকা দাদার সেই ‘স্যার’ কীভাবে যে একদিন আমার ‘সুধীরদা’ হয়ে উঠেছিলেন, সে-কথা আজ 888sport app download for androidে আসে না। আর কেন জানি না, আমাদের মতো অর্বাচীন ছেলেদের প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ স্নেহ। আমাদের মনেও কতো নতুন ভাবনা উসকে দিয়েছেন, কতো অজানা বিষয় নিয়ে জোর করে লিখেয়েছেন। তাঁর সম্পাদিত সেই অনন্য পত্রিকা ধ্রুবপদের কথাই বলি, যার প্রতিটি 888sport free betই ছিল পরম আশ্চর্য। ওঁর স্নেহের বকুনিতে সেই পত্রিকার একাধিক 888sport free betয় লিখেছি। কখনো মৃদু ধমকের সুরে বলেছেন, ‘আমার পত্রিকায় তোমার লেখা থাকবে না, তা হয় নাকি?’ আর বিষয়-ভাবনা? সেখানেও তাঁর জুড়ি মালা ভার। ওই পত্রিকার রবীন্দ্র888sport free betর জন্য দেশ-বিদেশে মুদ্রিত রবীন্দ্রনাথের ওপর আঁকা কার্টুনবিষয়ক লেখার চিন্তা উনিই আমার মাথায় ঢুকিয়ে ছিলেন। আবার ‘যৌনতা ও সংস্কৃতি’ 888sport free betয় ‘রবীন্দ্রচিত্রকলায় নগ্নপুরুষ ও 888sport promo code’ বিষয়ে লেখাটিও সুধীরদার প্ররোচনায়। ওদিকে ‘রঙের রবীন্দ্রনাথ’ ঘিরে একদা জমে ওঠা তীব্র বিতর্কের আবহ সুধীরদার অনুরোধে তাঁর ভাষায় ‘একটু খেলিয়ে’ অর্থাৎ একটু বিস্তারিতভাবে ‘গবেষণার অন্দরমহল’ 888sport free betয় লিখেছিলাম। আজ পরিতাপের কথা, সেই 888sport free betগুলোর বেশ কয়েকটা আমার বইয়ের তাক থেকে অদৃশ্য, বন্ধুদেরই কেউ কেউ পড়তে নিয়ে ফেরত দিতে ভুলে গিয়েছে। সে-দুঃখের কথা আজ আর এখানে বলে লাভ নেই। সুধীরদা হঠাৎ চলে যাওয়ার পরে পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, তাঁর বইয়ের বিপুল সম্ভার তো রইলো, তাঁর কাজ আগামীদিনের পাঠক হয়তো আরেক রকমে তা গ্রহণ করবে। কিন্তু সে-সব ছাপিয়ে বারে বারে মনে হচ্ছে তাঁর বাড়ির আড্ডার আসরের প্রতিমুহূর্তে সেই বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতার নির্মল প্রবাহটি আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। সেই সরস বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণী কলমের সঙ্গে হারিয়ে গেল সত্যিকার ঝলমলে এক বাঙালিসত্তা, বুঝি হারিয়ে গেল কৃষ্ণনাগরীয় রসিকতার সেই নির্মল তীক্ষ্ণ অনুভূতি। হায়, আজকের বাঙালি যে ক্রমে তার সহজ আনন্দের হাসিটিকে প্রায় মুছে ফেলতে বসেছে।