চিন্ময় গুহ
‘এসেছি জলের কাছে পীড়িত খরার দেশ থেকে’। – বীতশোক ভট্টাচার্য।
সুনীলদার মৃত্যুর প্রায় চার বছর পর তাঁর অনুপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছি আমরা। তাঁর শান্ত, সুস্থিত, প্রাণবন্ত ঔদার্যকে, তাঁর নিরপেক্ষতাকে। তিনি ছিলেন এক বিদ্রোহী, rebel, যে-কোনো অনুশাসন – তা জীবনের হোক বা 888sport live footballের, অথবা সমাজের – তিনি প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছেন এক রাজকীয় অবহেলায়। সুতরাং তাঁর 888sport app download for androidে এই বক্তৃতা তো শ্রেণিকক্ষের নীরস শব্দরৌরব হতে পারে না! বরঞ্চ তা হয়ে উঠতে পারে এক চিৎকার, আর্তনাদ, কিংবা বেহাগ অথবা হংসধ্বনি রাগ! তা হয়ে উঠতে পারে রক্তপলাশ!
যখন আমাদের চারপাশে শব্দের শরীর থেকে রক্ত পড়ছে, বিসত্মৃত হচ্ছে অন্ধকারের ঈগল-ডানা, মাটিতে ছড়ানো আছে মৃত 888sport app download apkর ঊর্ণ-কঙ্কাল, তখন এই মেরুনিশীথে কী করছি আমি? আমার পায়ের কাছে কার শব?
আমি দেখতে পাচ্ছি দূরে, যেন হাজার নক্ষত্রপাখি উড়িয়ে দিয়ে একটি গাছের নিচে চাতালে এসে বসলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আলো-অন্ধকারে তাঁকে নাসির আলি মামুনের তোলা সাদা-কালো ছবির মতো দেখাচ্ছে। তাঁর মুখরেখা শান্ত নীল, আশপাশে সত্মাবকেরা কেউ নেই। তারা এখন ইতিহাসের নর্দমার দিকে রওনা হয়েছে। সুনীলদা একটি সিগারেট ধরালেন। সেই সিগারেটের আগুন অন্ধকারে লাল আংটার মতো জ্বলছে। আর সেই আলোয় তিনি পড়ছেন চে গুয়েভারার প্রতি, সত্যবদ্ধ অভিমান কাব্যগ্রন্থ থেকে। সেই অবি888sport app download for androidীয় পঙ্ক্তি : ‘চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়’ ধোঁয়ায় উড়ে আকাশের তারা হয়ে গেল।
অন্ধকার ভেদ করে তাঁর কণ্ঠস্বর আগের মতোই দৃপ্ত ও সুরেলা :
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা
আত্মার অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দ
শৈশব থেকে বিষণ্ণ দীর্ঘশ্বাস
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয় –
বোলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা
তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর
তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে
নেমে গেছে
শুকনো রক্তের রেখা
… … …
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।
৮ অক্টোবর ১৯৬৭ বলিভিয়ার স্পেশাল ফোর্সের দ্বারা গুলিবিদ্ধ ৩৯ বছর বয়সী চে গেভারাকে হাত-পা বেঁধে কাদার মধ্য দিয়ে হিঁচড়ে টেনে আনা হচ্ছে বাইয়েগ্রান্দের লা ইগেরা গ্রামের ভাঙাচোরা মাটির ইশ্কুলে। আমি ও সুনীলদা চমকে সরে যাই। আমরা কি তবে এখন বলিভিয়ায়? দেশের তো কোনো সীমারেখা থাকে না। চে-র চোখের দৃষ্টি ‘অসহনীয় তীক্ষ্ন ও শান্ত’। ৯ অক্টোবর তাঁকে ন-বার গুলি করা হবে। ১টা দশ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর সময় প্রত্যক্ষদর্শীর মতে তাঁকে যিশুখ্রিষ্টের মতো দেখাচ্ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি ইশ্কুলের শিক্ষিকা হুলিয়া কোরতেসকে বলেন, ‘সরকারি আমলারা যখন মার্সেডিস গাড়িতে ঘুরছে, তখন ওই রকম ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কি পাঠদান সম্ভব?’
888sport app download apk কার জন্য? বইয়ের (২০১২) তৃতীয় সাক্ষাৎকারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর যাবতীয় কবি, যাঁরা নিপীড়িত, তাঁদের হয়েও প্রতিশোধ নিতে এক কবি হিসেবে আমার উঠে দাঁড়ানো। জীবনানন্দ যাঁদের সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘শেস্নষ্মারক্তে মাখামাখি’ সেইসব কবিদের যন্ত্রণা-অবহেলার প্রতিশোধ নেবে পরবর্তী কবিরাই।’
বাঁহাতে বই, অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে (না কি উলটোটা? মনে পড়ছে না আমার) সুনীলদা পড়ছেন ‘কবির মৃত্যু : লোরকা 888sport app download for androidে’ –
দুজন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহী কবিকে নিয়ে গেল
টানতে টানতে
কবি প্রশ্ন করলেন : আমার হাত শেকলে বেঁধেছ কেন?
সিপাহী দু’জন উত্তর দিল না;
সিপাহী দু’জনেরই জিভ কাটা।
অস্পষ্ট গোধূলির আলোয় তাদের পায়ে ভারী বুটের
শব্দ…
…কবি নিঃশব্দে হাসলেন
দ্বিতীয় গুলিতেই তাঁর বুক ফুটো হয়ে গেল
কবি তবু অপরাজিতের মতো হাসলেন হা-হা শব্দে।
স্বপ্নের মধ্যে যেমন হয়, 888sport app download apkটি নিঃশব্দে বদলে গেছে কখন। হয়ে উঠেছে কলেজ-জীবনে পড়া ‘তিনজন মানুষ’, যা তরুণ বয়সে আমাকে মথিত করে দিয়েছিল। সুনীলদা আমার স্বপ্ন বই থেকে পড়ছেন সেই 888sport app download apk। ‘গাড়িবারান্দার নিচে আমরণ অনশনে বসে আছে/ তিনজন শ্রমিক/ আজ তেরো দিন ধরে ওদের দেখছি -’। আমি ঠাহর করে বুঝতে পারি, আমার চারপাশে মৃত্যুর হাঙরমুখ খোলা।
সময় থেমে গেছে।
ঘড়ির হাত দুটি নতজানু।
সেজার ভালেখা, রাফায়েল আলবের্তি, না আখমাতোভার 888sport app download apkর 888sport app download apk latest version করতে-করতে সুনীলদা বললেন, ‘এঁকে চেনো?’
বৃষ্টি পড়ছে রিমঝিম। বৃষ্টির জল কি মাটিতে পড়ে
মায়ামুকুর হয়ে যায়?
দেখতে পাচ্ছি অক্সফোর্ডের শেলডোনিয়ান থিয়েটারের পাশ দিয়ে ব্রড স্ট্রিটের বুক চিরে সোজা হেঁটে আসছেন একজন পাঁচ ফুট উচ্চতার মানুষ। পরনে সুট, চোখে চশমা। চোখদুটি টেরা। ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে চিনতে পেরে সঙ্গে-সঙ্গে দৌড়তে শুরু করল। তিনি ফরাসিতে বলছেন, ‘Ah non! Ca ne m’intéresse pas!’ ‘না না, এ-বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই!’ তিনি বোদলেয়ান লাইব্রেরি বা বেলিয়ল কলেজ দেখতে আসেননি। তিনি দেখতে এসেছেন হতদরিদ্র মানুষের জীবন। আরে! এ তো সার্ত্র! কী মূর্খ আমি! এতক্ষণ চিনতে পারিনি!
ক্ষমতা ও ক্ষমতার দালালদের থেকে দূরে শত মাইল দূরে তিনি দাঁড়িয়ে। ১৯৮০ সালে মৃত্যুর পর ল্যুমানিতে পত্রিকা যাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘l’immense Sartre’ বলে, ‘লা লিবেরাসিয়ঁ’ বলেছিল বিংশ শতাব্দী ছিল ‘সার্ত্র-এর শতাব্দী’। সেই সার্ত্র! চলিস্নøশের দশকে যাঁর আবির্ভাব-লগ্নে রজে মারিত্যাঁ দ্যু গার বলেছিলেন, ‘সার্ত্র দিশার সন্ধানী সমস্ত তরুণকে টেনে নেবেন। …এক নতুন বাড়ি তৈরি হতে চলেছে যেখানে বাস করবে আগামী দিনের সত্য।’
আমি দেখতে পাচ্ছি প্যারিসের স্যাঁ-জেরম্যাঁ দে প্রের ফুটপাথে ঠেলাঠেলি হচ্ছে, দু-তিনটি পুলিশ ভ্যান, যাকে ফরাসি অপভাষায় বলে ‘স্যালাডের ঝুড়ি’ (‘পানিয়ে আ সালাদ’)। তরুণদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রাসত্মায় স্বয়ং সার্ত্র আর সিমোন দ্য বোভোয়ার বিক্রি করছেন নিষিদ্ধ মাওবাদী কাগজ লা কোজ দ্যু প্যপ্ল্ (‘মানুষের জন্য’)। বলছেন, ‘আমি বেআইনি কাজে বিশ্বাসী’। এমন অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য দেখেছে কেউ? সার্ত্রকে গ্রেফতার করা ছাড়া উপায় থাকে না, কিন্তু সেদিনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কারণ রাষ্ট্রপতি দ্য গলের ভাষায়, ‘ভলত্যেরকে কি বন্দি করে রাখা যায়?’
দেখতে পাচ্ছি, র্যানো মোটর কারখানার হরতালের সময় কারখানার বাইরে পিপের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন সার্ত্র। বলছেন, ‘এবার বুদ্ধিজীবীদের সময় হয়েছে শ্রমিকদের কাছ থেকে শেখার।’ নির্বাচনকে বলছেন, ‘piège à cons’, ‘উজবুকদের জন্য ফাঁদ’।
তার আগে নোবেল 888sport app download bd প্রত্যাখ্যান করছেন ছেঁড়া কাগজের মতো। বলছেন, ‘Je ne veux pas institutionaliser ma révolte’, ‘আমি আমার বিদ্রোহকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলতে চাই না।’ এরই নাম কি প্রাচীন গ্রিকরা যাকে বলত ‘পারেজিয়া’ (Parrhesia)? খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে যে-শব্দটি প্রথম তাঁর নাটকে ব্যবহার করেন গ্রিক নাট্যকার এউরিপিদেস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৪-৪০৭)? ফরাসিতে ফুকো যার 888sport app download apk latest version করেছেন ‘franc-parler’। জার্মানে হতে পারে ‘Freimuthigkeit’। যার অর্থ ‘সব কথা বলা’। একজন পারেজিয়াস্ত সত্যের কাছে দায়বদ্ধ, তিনি আপস করেন না। rhetoric, বা বাগবৈদগ্ধ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেন না। মিথ্যেভাষণ বা নীরবতার চেয়ে স্পষ্টবাদিতা তাঁর কাছে প্রিয়, নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবন তিনি সুচিমিত্মতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই স্পষ্টবাদিতা পূর্ণতা পায়, যখন তার সঙ্গে যুক্ত হয় ‘mathesis’ বা প্রজ্ঞা।
দার্শনিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার সার্ত্র সবসময় মনে করেছেন সমাজের বাঁধা গতের আমূল প্রত্যাখ্যান ছাড়া তরুণদের সামনে আর কোনো রাসত্মা নেই। আমরা যেন অতীতের নাগপাশে বাঁধা না পড়ি। ১৯৬৮ সালের প্যারিসের ছাত্র-আন্দোলনের সময় তিনি সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অ্যাম্পিথিয়েটারে দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় ছাত্রছাত্রীদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আপনাদের কেবল একটিই সম্পর্ক থাকতে পারে, সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাঙার।’ বেতারে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ছাত্রেরা তাদের বাবাদের, অর্থাৎ আমাদের তৈরি ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে না, কারণ সেই ভবিষ্যৎ প্রমাণ করেছে আমরা অবসন্ন, ক্লান্ত, কাপুরুষ; এক বদ্ধ প্রক্রিয়ার কাছে সম্পূর্ণ আনুগত্যের জন্য গাভীতে পরিণত…’। আমি দেখতে পাচ্ছি, ২২ মার্চ ১৯৬৮ ছাত্র-আন্দোলনের নেতা দানিয়েল ও সিমন দ্য বোভোয়ার কোনো বাঁদির সঙ্গে দেখা করেন।
নতুন জীবন খুঁজছেন তিনি, অসিত্মত্বের নতুন অর্থ। সারা জীবন ধরে অন্তহীনভাবে দায়বদ্ধ (‘engagé’) ওই আশ্চর্য মানুষ জীবন ও জীবনভাবনাকে এক ধনুকের ছিলায় বাঁধতে চেয়েছেন। ‘বুর্জোয়া ফ্রান্সের সীমাহীন পচনের মধ্যে, যাবতীয় বৈপস্নøবিক চিমত্মার অভাবের মধ্যে, সেকেলে ও মধ্যমেধার শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে’ জীবনের নতুন সংজ্ঞা খুঁজতে চেয়েছেন তিনি। জীবনের ‘এই ঢেউ-খেলানো নরম কাদা, ভবিষ্যৎহীন…’, তাকে এক নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার এই ঐকামিত্মক চেষ্টা অসিত্মত্বকে করে তুলতে চেয়েছে অর্থময়।
সার্ত্রের মতে, আমরা কেউ সম্পূর্ণ মানুষ নই, আমরা মানুষের সংজ্ঞার দিকে এগোচ্ছি। আমরা being, être, আমরা ‘হয়ে উঠছি’। এই সীমাহীন শূন্যে কোনো প্রাক্-নির্ধারিত অতীত আমাদের বাঁচাতে পারবে না। ঈশ্বর বলে কিছু নেই, আছে শূন্যতা। আর সেইসঙ্গে আপন জীবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার সীমাহীন স্বাধীনতা। চারপাশে বিভ্রমের ফাঁদ, ‘সত্তা ও শূন্যতা’য় (১৯৪৩) তিনি যার নাম দিয়েছেন ‘mauvaise foi’, যা অসত্যের ভিতের ওপর নির্মিত এক কাপুরুষের রক্তহীন অসার জীবনকে অতিবাহিত করতে হাতছানি দেয়, যার ফাঁস থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব পথনির্মাণের দিশা দেখাতে চেয়েছেন সার্ত্র। তিনি যে প্রথম থেকেই ভলত্যের-কথিত ‘লিখিয়ে ইতর’ (canaille écrivante) হতে চাননি।
আলজিরিয়ার যুদ্ধের সময় ‘ফরাসি জনগণের নামে’ অত্যাচারিত আলজিরীয়দের পক্ষে দস্তখত করছেন ১২০ জন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে। ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদের পর (যখন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘জাতিবিনাশ’, genocide-এর অভিযোগ আনেন) মরিস বঁস্নাশো, লাকাঁ, ল্যফেব্© ও অন্যদের সঙ্গে সার্ত্র ল্য মঁদ পত্রিকায় বিপস্নস্নবী ছাত্রদের সপক্ষে সই করেন। প্যারিসে বার্ট্রান্ড রাসেল-আয়োজিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সভাপতিত্ব করছেন।
অন্ধকারের মধ্যে শুনছি অসংখ্য তরুণ সমস্বরে চিৎকার করছে, ‘সার্ত্র, সার্ত্র, সার্ত্র!’ প্যারিসের বুলভার স্যাঁ-জেরম্যাঁয় ‘কাফে দ্য ফ্লোরে’ বসে আছেন সার্ত্র ও সিমন। তাঁদের দুজনের অনিশ্চিত শৈশব, স্বতন্ত্র চিমত্মার প্রাখর্য তাঁদের যৌথ জীবনযাপনকে প্রতীকী করে তুলেছিল।
দর্শন, 888sport live football, রাজনীতি ও ইতিহাস মিশে গিয়েছিল এক রক্তবিন্দুতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সত্তা ও শূন্যতা লেখার পর থেকে আধুনিক সময় সম্পাদনা করার পাশাপাশি নাটক ও 888sport alternative linkে অসিত্মত্বের সংকট ও সমাধানের পথ খুঁজছিলেন সার্ত্র। 888sport alternative link নিয়ে তাঁর দার্শনিক পরীক্ষা চার খ– পরিকল্পিত ‘স্বাধীনতার পথগুলি’ তৃতীয় খণ্ডের পর পরিত্যক্ত হয়, কারণ তিনি ‘ব্যর্থ’ হচ্ছিলেন। 888sport live chatমাধ্যম হিসেবে থিয়েটারই তাঁকে স্বসিত্ম দিচ্ছিল। 888sport alternative link লিখতে তাঁর ইচ্ছাই করছিল না, কারণ তা অতিমাত্রায় ‘সরল’, মার্কসবাদ ও মনোবিশেস্নøষণের প্রকোপে 888sport alternative link ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু থিয়েটারকেও শেষ পর্যন্ত এক ‘কৃত্রিম ও প্রতারক নির্মাণ’ বলে মনে হলো তাঁর। তাই 888sport live football-সৃষ্টির প্রয়াসে ইতি টেনে আত্মজীবনী শব্দেরা লিখতে শুরু করেন। এবং নোবেল 888sport app download bd পাওয়ার পরই বুঝতে পারেন তিনি আবার ব্যর্থ হয়েছেন। আর প্রাক্-নিয়ন্ত্রিত আত্মপ্রবঞ্চনা নয়, এবার তিনি নিজেকে দাঁড় করান সাক্ষাৎকারীর প্রশ্নবাণের সামনে। সার্ত্রের ভাষায় :
র্যা ডিকালিজমের শেষ ধাপ পর্যন্ত আমি যেতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবেই আমি সারা জীবন নানা কারণে অনেক ছোট-বড় ভুল করেছি, কিন্তু আসল কথা হলো প্রতি ক্ষেত্রেই আমি যথেষ্ট র্যাপডিকাল হতে পারিনি।
পঞ্চাশের দশকের শেষে ‘দ্বান্দ্বিক যুক্তির সমালোচনা’ লেখার সময় দিনে কুড়িটি পর্যন্ত করিডেন ট্যাবলেট খেতে হচ্ছিল। অ্যাম্ফেটামাইন তাঁর লেখার গতি তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল, তিনি তিনগুণ বেগে লিখতে চাইছিলেন। সেটি ছিল একটি মার্কসবাদী গ্রন্থ, যা কমিউনিজমের বিরুদ্ধে রচিত। তাঁর মতে, ‘কমিউনিস্টরা বিপস্নøবকে বেঁকিয়ে-চুরিয়ে মিথ্যায় পরিণত করেছে’। স্তাঁদাল ও স্পিনোজাকে মিলিয়ে দিয়ে সার্ত্র নেমে এসেছেন অংশগ্রাহকের ময়দানে। সার্ত্রের ফ্ল্যাটে ষাটের দশকের গোড়ায় দুবার বোমা পড়ে।
ফ্লবের সম্পর্কিত বিরাট বইটি লেখার সময় দিনে পনেরো ঘণ্টা পরিশ্রম করেছেন। অবশেষে ১৯৭৫ সালে যখন নিভে এলো তাঁর ‘দ্বিতীয় চোখের আলো’; সিমন দেখলেন তাঁর হাত থেকে হুইস্কির গেলাস পড়ে যাচ্ছে, হাতের লেখা অস্পষ্ট। ‘দ্বান্দ্বিক যুক্তির সমালোচনা’র দ্বিতীয় পর্ব শেষ হলো না। তিনি মিশেল কঁতাকে বললেন, দর্শন বা 888sport live footballকর্ম শেষ হয় না।
La mort, je n’y pense pas. Elle ne vient pas dans ma vie, elle sera dehors. Un jour ma vie cessera, mais je veux qu’elle ne soit obérée par la mort en aucun cas. Je veux que ma mort ne rentre pas dans ma vie, ne la définisse pas, que je sois toujours un appel à vivre.
(আমি মৃত্যুর কথা ভাবি না। সে আমার জীবনে আসবে না, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে। একদিন আমার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, কিন্তু আমি চাই না মৃত্যু তাকে কোনো অবস্থাতেই ভারাক্রান্ত করুক, তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করুক। আমার জীবন হয়ে থাক বাঁচার জন্য এক আবেদন। 888sport app download apk latest version : লেখক।)
১৯৮০ সালের মার্চে মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে শিষ্য পিয়ের ভিকতরকে বলেন :
‘আমাকে আবার গ্রাস করছে নৈরাশ্য। ভয় হচ্ছে, এই দুর্গতির অবসান হবে না। কোনো লক্ষ্য নেই, আছে ছোট-ছোট উদ্দেশ্য…এমন কিছু নেই যা মানুষকে আগ্রহী করতে পারে, শুধু আছে বিশৃঙ্খলা।
আমি প্রতিরোধ করছি এবং আমি আশা নিয়েই মরব, কিন্তু সেই আশাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এ-কথা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে হবে, কেন এখনকার এই বীভৎস পৃথিবী দীর্ঘ ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে একটি মুহূর্তমাত্র। ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে হবে, কেন এখনকার এই বীভৎস পৃথিবী দীর্ঘ ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে মধ্যে শুধু একটি মুহূর্তমাত্র।’ (888sport app download apk latest version : অরুণ মিত্র)
মৃত্যুর আগে সার্ত্র বললেন, আশাই হলো প্রত্যেক অভ্যুত্থান ও বিপস্নবের প্রধান চালিকাশক্তি, এবং আশাই সমস্ত ভবিষ্যৎ-ভাবনার ভিত।
আমি দেখতে পাচ্ছি, সার্ত্রের মরদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, মঁপারনাস সমাধিক্ষেত্রের দিকে। ১৮৮৫ সালে ভিকতর য়্যুগোর মৃত্যুর পর একশ বছরে কখনো এত ভিড় হয়নি।
‘এই নরম কাদা, ভবিষ্যৎহীন…’ তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সার্ত্র, অগ্নিদগ্ধ বিবেকের মশাল হাতে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতের সেই সিগারেট এখনো জ্বলছে। যেন আগুন জ্বলছে অন্ধকার আকাশের বনে। ‘চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।’ ‘চে, তোমার মৃত্যু…’
বিড়বিড় করে আমায় বললেন, ওঁকে চেনো? সুপুরুষ, মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি, চোখে ফিতে দিয়ে বাঁধা প্যাঁশনে চশমা। আমি চমকে উঠেছি! ইনি কি জোলা? এমিল জোলা (১৮৪০-১৯০২)? ফ্রান্সের উনিশ শতক শুধু বালজাক, স্তাঁদাল, ফ্লবেরের শতাব্দী নয়, এমিল জোলারও শতাব্দী। রক্তদীপময় বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সুবিচার ও সত্যের সন্ধানে তাঁর কলম থেকে কয়েক বিন্দু রক্ত ইতিহাসের পাতায় চুঁইয়ে পড়ছে, আর সেই পৃষ্ঠারা রাতের আকাশে ডানা মেলে উড়ছে সিন্ধুসারসের মতো।
আমার সামনে একটি খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠা খোলা। সেই কাগজের নাম ভোর। তারিখ বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারি, ১৮৯৮। বিরাট হরফে লেখা ‘J’accuse…!’ (I accuse…!) ‘আমি অভিযোগ করছি’! লিখেছেন জোলা। আর সঙ্গে পাঁচ পয়সা (সাঁতিম) দামের সেই দৈনিক সংবাদপত্র হয়ে উঠছে ইতিহাসের এক স্বর্ণফলক।
খোলা তলোয়ার হাতে ফরাসি ঔপন্যাসিক এমিল জোলা দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের খাড়ির ওপর। রাষ্ট্রপতিকে সাড়ে চার হাজার শব্দের এক বিস্ফোরক চিঠিতে লিখছেন নানা, জেরমিনাল 888sport alternative linkের স্রষ্টা জোলা। তাঁর দুঃসাহস, যা তাঁকে মৃত্যুর সামনে ঠেলে দেবে, চিরদিনের মতো বদলে দিচ্ছে 888sport live football-স্রষ্টার সংজ্ঞা। জন্ম হচ্ছে নতুন এক শব্দের : ‘Intellectuel’। যাঁর কাজ হলো ক্ষমতা ও ‘ক্ষমতার দাসেদের’ (কালিদাস নাগকে লেখা রম্যাঁ রলাঁর চিঠি : ‘les laquais du pouvoir’: ‘the lackeys of power’) কাপট্যকে উদ্ঘাটিত করা।
যে-আগুন তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের নামিয়ে আনল 888sport live footballিকের গজদন্তমিনার থেকে, বাঘনখ দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল সমাজপতিদের মেকি মুখোশমুখ, তার নাম ‘l’affaire Dreyfus’, ‘দ্রেফ্যুস কেলেঙ্কারি’।
ফ্রান্সের আলজাসের এক নগণ্য ইহুদি আর্টিলারি অফিসার আলফ্রেদ দ্রেফ্যুস (১৮৫৯-১৯৩৫)। তাঁকে ঘিরে ১৮৯৪ সালে এক বিতর্ক দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। যা সমগ্র ফ্রান্সকে দ্বিখণ্ডিত করে দেবে, এবং বারো বছর ধরে উপচে উঠবে কাদা ও আগুন। ওই ঘটনা রাষ্ট্রীয় অবিচারের এক প্রতীক হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িক অবিচারের এই ভয়ংকর দৃষ্টামেত্মর বিরুদ্ধে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে সংবাদপত্র, বিশেষত এমিল জোলার মতো মহা888sport live chatী। সেই বিতর্ক খুলে দেয় সমাজমনের সব ক্ষত, 888sport live chatী-888sport live footballিকের সামনে একটি প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কে তোষণ করবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে, আর কে তা প্রত্যাখ্যান করে তৈরি করবে মানুষের প্রকৃত ইতিহাস?
সুতরাং ‘I accuse…!’
পুরো ঘটনাটির সূত্রপাত ১৮৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, অর্থাৎ ফরাসি বিপস্নব-পরবর্তী রোবেসপিরীয় ‘সন্ত্রাসের যুগে’র ঠিক একশ বছর পরে, যখন আলফ্রেদ দ্রেফ্যুস নামে ফরাসি সেনাবাহিনীর ওই ইহুদি সৈনিকের বিরুদ্ধে জার্মান দূতাবাসে ফরাসি জরুরি সামরিক তথ্য পাচারের অভিযোগ আনা হয়। বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তাঁর যাবজ্জীবন কারাদ- হয় এবং তাঁকে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয় ফরাসি গায়ানার ‘শয়তানের দ্বীপে’, যেখানে তিনি পাঁচ বছর শাসিত্মভোগ করেন। দুবছর পর জর্জ পিকার নামে এক লেফটেন্যান্ট জেনারেল একক অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে, আসল অপরাধী জনৈক খ্রিষ্টান সেনাপতি, যাঁর নাম ফেরদিনাঁ-ভালস্যাঁ এসেত্মরাজি। সেনাবাহিনীর কর্ণধারেরা তৎক্ষণাৎ ওই তথ্য লুকিয়ে ফেলেন, এবং একটি সামরিক আদালত দুদিনের বিচারের প্রহসনের পর নিরপরাধ বলে তাঁকে মুক্তি দেয়। এরপর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জাল দলিলপত্রসহ আলফ্রেদ দ্রেফ্যুসের নামে নতুন করে অভিযোগ আনা হয়।
সত্য ঘটনাটি চেপে দেওয়ার খবর দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মূল অপরাধীর মুক্তির চরম পরিণতি ১৩ জানুয়ারি ১৮৯৮-এর ভোর কাগজের বিস্ফোরণ, যার নায়ক বাস্তববাদী কথা888sport live chatীদের পুরোধা এমিল জোলা, আধুনিক পাশ্চাত্যের প্রথম ‘ইন্টেলেকচুয়াল’। ‘J’accuse…!’ এই শিরোনামটি জর্জ ক্লেমাঁসোর দেওয়া। রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স ফোরকে লেখা খোলা চিঠির পাশাপাশি নানা আর জেরমিনাল 888sport alternative linkের স্রষ্টা ফরাসি সেনাবাহিনীর জেনারেল পেলিওকে লেখেন, এই ভাবে ফ্রান্সকে সেবা করছেন তিনি! ‘আপনি তলোয়ার চালান, আমি কলম। ইতিহাস বিচার করবে কার জয় হবে।’
তিরিশ হাজার বিক্রির সংবাদপত্রটি সেদিন তিন লাখ কপি বিক্রি হয়। এক মুহূর্তে সারা দেশ ভাগ হয়ে যায়। কেউ চায় নতুন করে দ্রেফ্যুসের ন্যায়বিচার, দেশপ্রেমের ভেকধারী অধিকাংশ মানুষ এমিল জোলার শাসিত্ম। বুদ্ধিজীবীরা দ্বিখ–ত হলেন। এ এক ঐতিহাসিক ‘আমরা-ওরা’। মিশেল ভিনকের ভাষায়, ‘রাসত্মায় যখন ইহুদি-বিরোধী চিৎকার, সেনাবাহিনীর পক্ষে ও জোলার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, তখন দেখা গেল এক নতুন শক্তির জন্ম হচ্ছে : বুদ্ধিজীবী।’ ‘দিগমেত্মর সব দিক থেকে’ এক ক্ষুদ্র ইহুদি অফিসারের পক্ষে দাঁড়ালেন বুদ্ধিজীবীরা। একদিকে নতুন বিচারের দাবি তুলছেন জোলা, আনাতোল ফ্রাঁস, 888sport apkী এমিল দুক্লো, 888sport live footballিক জ্যুল র্যানার, তরুণ প্রম্নস্ত, চিত্র888sport live chatী ক্লোদ মনে, সমাজ888sport apkী এমিল দ্যুর্কহাইম, একোল নরমাল স্যুপেরিয়রের গ্রন্থাগারিক লুসিয়্যাঁর। অন্যদিকে, মরিস বারেসের মতো নতুন জাতীয়তাবাদীদের মতে, ‘ওই অভিজাতেরা জনতাকে ঘৃণা করে তাদের থেকে আলাদা হতে চায়। দক্ষিণপন্থী নেতা আলব্যের দ্য মুন স্বয়ং জোলার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনেন ও রাজ্যসভায় তাঁর শাসিত্মর দাবি তোলেন। জোলার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ‘দ্রেফ্যুসবাদী’ মুক্তচিন্তক মানুষেরা, ২৬১ জন শিক্ষক, ২৩০ জন 888sport live footballিক ও সাংবাদিক, রাষ্ট্রের ওপর দ্রেফ্যুসের নিরপেক্ষ পুনর্বিচারের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। অন্যদিকে, দ্রেফ্যুসপন্থীদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিরোধীদের কাগজ লা লিব্পারোল, মুক্তকথায় একটানা বিষোদ্গার চলে।
একটি প্রাথমিক মানবিক প্রশ্নকে ঘিরে ফ্রান্সের সমাজ, রাজনীতি ও দর্শন তিক্ত হয়ে ওঠে। একদিকে মাত্র কয়েক জনের উদ্যোগে সাম্প্রদায়িকতাহীন মুক্তচিমত্মার প্রয়াস, অন্যদিকে জার্মানি কর্তৃক আলজাস-লারেন অধিকারজনিত (১৮৭১) কারণে জার্মানি সম্পর্কে অধিকাংশ লোকের (collectivité) সীমাহীন ঘৃণা, অন্ধ ইহুদিবিদ্বেষ ও জাতীয়তাবাদ। দ্রেফ্যুসপন্থী মানেই সে রাষ্ট্রবিরোধী। একদিকে ন্যায়বিচার ও সত্যের প্রশ্ন, অন্যদিকে দেশের তথাকথিত প্রতিরক্ষা, সমাজসংরক্ষণ ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা। আমাদের মনে পড়বে বারেসের কুখ্যাত উক্তি : ‘যুক্তি দিয়ে চিমত্মার সমন্বয় হবে না, তার সঙ্গে দরকার আবেগের শক্তি।’ বারেসের মতো জাতীয়তাবাদের নায়কদের মতে, দ্রেফ্যুসপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ‘শেকড়হীন, বহিরাগত’, ‘স্বদেশের ধারণা থেকে বিচ্ছিন্ন’। তিনি বলতে দ্বিধা করেননি যে, ‘জাতীয়তাবাদ মানে আত্মপূজা’। বারেসের বয়ানে এই আত্মপ্রেম হয়ে উঠল গীতি888sport app download apk। এই গঁৎ আমাদের পরিচিত।
ন্যায়বিচারের প্রশ্নে বুদ্ধিজীবীদের প্রতিরোধ এক মহান ঐতিহ্যের সূত্রপাত করে। শুরু হয় সংঘাত রাজপন্থী, ক্যাথলিক, গোঁড়া জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে মুক্তচিন্তক সমাজবাদীদের। ফরাসি বিপস্নবের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের প্রশ্নকে ইতিহাসের তুলাদ– পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এ যেন ফরাসি বিপস্নবের দেশের নতুন অগ্নিপরীক্ষা।
জাতীয়তাবাদে মন্ত্রমুগ্ধ ফরাসিদের কাছে জোলা নাকি ভেনিসীয়, তিনি ফরাসিই নন। তাঁর পিতা ইতালীয়। তিনি ‘বহিরাগত’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে জনমতের চাপে ১৮৯৯ সালে দ্রেফ্যুসকে ফ্রান্সে ফিরিয়ে আনা হয়। এক বিষাক্ত পরিবেশে দ্রেফ্যুস এবারো অপরাধী সাব্যস্ত হলেন, এবার দশ বছরের কারাবাস, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় ১৯০৬ সালে দ্রেফ্যুসকে সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত করে পুনর্বহাল করা হয়।
তর্ক যখন ক্রমে সিত্মমিত হয়ে এলো, জ্বলে উঠল আলো। তরুণ রম্যাঁ রলাঁ প্রথমদিকে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও জোলার প্রতিবাদের পর দ্রেফ্যুসপন্থী হয়ে যান। দুপক্ষের দুর্বলতাই তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। প্রত্যেক ইহুদি, তিনি লিখলেন, দ্রেফ্যুসের সততা সম্পর্কে আগে থেকেই নিশ্চিত। রলাঁ লিখলেন ভয়ংকর এক নাটক লে লু (‘নেকড়েরা’)।
না। ওই যে, দাঁড়িয়ে আছেন জোলা, এমিল জোলা। শাসকের দেওয়া 888sport app download bdের ওপর প্রস্রাব করতে প্রস্ত্তত। দ্রেফ্যুসের পাশে, হাতে একটি কলম যা খোলা তলোয়ারের মতো ধারালো।
যে-মানুষটি তৃতীয় নেপোলিয়নকে সদম্ভে ধিক্কার দিতে ভয় পাননি, চিরপ্রতিবাদী ভিকতর য়্যুগোর শবানুগমনে গেছেন লাল গোলাপ হাতে, বিবাহ করেছেন এক দেহোপজীবিনীকে। ১৯০১ সালে নোবেল 888sport app download bd প্রবর্তিত হওয়ার পর প্রথম দুবার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লেখক বিবেচনায় যাঁর নাম ওঠে, কিন্তু দেওয়া হয়নি।
১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, দ্রেফ্যুসের শাপমুক্তির চার বছর আগে, ঘরের চিমনি বন্ধ হয়ে কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনা, না হত্যা? তাঁর শত্রম্নরা কদর্য আনন্দে উচ্ছ্বসিত। জনৈক আঁরি রশফর লেখেন, শেষ পর্যন্ত নাকি তিনি ‘দ্রেফ্যুসের অপরাধ প্রমাণ হওয়ায়’ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু নর্ম্যান্ডির এক ওষুধ-বিক্রেতাকে আঁরি বুরঁফস নামে জোলার বাড়ির চিমনি-ঝাড়ুদার জানায় যে, সে ‘ইচ্ছে করে’ চিমনির মুখ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ জোলাকে দম আটকে হত্যা করা হয়েছে।
কে হত্যা করল জোলাকে? রাষ্ট্র? না 888sport free betধিক্যের ঘৃণা?
প্যারিসে জোলার শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। এভাবে কি বদলে যায় ইতিহাস? এসেছেন দ্রেফ্যুস! জোলাকে সমাধিস্থ করা হবে মঁপারনাস সমাধিক্ষেত্রে, যেখানে একদিন আনা হবে সার্ত্র ও সিমন দ্য বোভোয়ারের শবাধার। ছ-বছরের মধ্যে তাঁকে আনা হবে ফ্রান্সের মহামানবের মহত্তম গ্যালারি পাঁতেয়ঁতে, ভিকতর য়্যুগো আর আলেকসাঁদ্ দ্যুমার শবাগারের পাশে।
‘J’accuse…!’ আমি অভিযোগ করছি…! সেই সুতীক্ষ্ণ চিৎকার ছিঁড়ে ফালা-ফালা করে দিচ্ছে পৃথিবীর ঘনায়মান অন্ধকার।
আমি দেখতে পাচ্ছি, আকাশের নক্ষত্রমালা থেকে নেমে আসছে নীল বর্শা। জীবন ও 888sport live football মিলে যাচ্ছে এক বাণ-বেঁধার বিন্দুতে।
সুনীলদা এখনো সেই অলীক গাছের নিচে চাতালে বসে আছেন।
অন্ধকারের বাদুড়-ডানা পার হয়ে দূরে টিলার ওপরে রক্তনীল আকাশের গায়ে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে সক্রেতিস, ভলত্যের, জোলা, জাঁ-পল সার্ত্র…। আরো অনেকে। জোলার শিষ্য রম্যাঁ রলাঁর বীজমন্ত্র ছিল : ‘Un jour je renaitrai pour de nouveaux combats’। ‘একদিন আমি নতুন করে জন্ম নেব নতুন যুদ্ধের জন্য’।
এঁরা সেই মানুষ যাঁরা চরম হতাশার মুহূর্তেও মানুষের আত্মায় খুঁজেছেন সেই ধাতু যা যন্ত্রণাকে প্রতিহত করে শূন্যতাকে অতিক্রম করার শক্তি জোগায়।
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ কলকাতার রোটারি সদনে প্রদত্ত বক্তৃতা। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.