সুরের অবগাহনে চাররাত্রি

 গোলাম মুস্তাফা

surer obogahone

 দ্বিতীয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হলো ২৮ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর। এই অনুষ্ঠান নিয়ে বেশ শঙ্কা ছিল। গত বছর প্রথম উৎসব অনুষ্ঠানের সময়ই উদ্যোক্তারা প্রতিশ্রুতি দি

য়েছিলেন, প্রতিবছর একই সময় অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব। আয়োজনের ঘাটতি ছিল না, তবু হরতাল-অবরোধের কারণে এই উৎসব আদৌ করা যাবে কিনা এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু সব আশ

ঙ্কা ও সন্দেহ কাটিয়ে নির্দিষ্ট দিন, ২৮ নভেম্বর ঠিক সন্ধে ৬টায় উদ্বোধন হলো উচ্চাঙ্গসংগীতের এই বৃহত্তম আয়োজনের। চার রাতব্যাপী অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে ভারতের আইটি

সি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি। এবার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সহযোগীর ভূমিকায় ছিল স্কয়ার গ্রুপ ও ব্র্যাক ব্যাংক।

চারদিনের এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে জ্ঞানতাপস প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের উদ্দেশে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। 888sport appsে ভারতের হাইকমিশনার পংকজ সরণ ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। অনুষ্ঠানে আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর বলেন, শ্রোতাসমাগমের বিবেচনায় বেঙ্গল-আয়োজিত অনুষ্ঠানটিকে বিশ্বের বৃহত্তম উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর বলা যায়। স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এ-ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে দেশের করপোরেট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জানালেন, এরকম অনুষ্ঠান একটানা অন্তত পনেরো বছর ধরে করা গেলে বিশ্বমানের উচ্চাঙ্গসংগীত888sport live chatী এই 888sport appsেই তৈরি হবে। উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চা ও প্রসারের জন্য তিনি করপোরেট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা প্রার্থনা করে বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অন্তত দুজন করে সংগীতশিক্ষার্থীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে এই কাজ অনেক সহজ ও সফল হবে।

জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মারকগ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশনাও হয় এই অনুষ্ঠানে। গ্রন্থ-সম্পাদক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের জীবন ও জ্ঞানসাধনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন।

মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে একটি সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়। চর্যাপদের সময় থেকে বাংলাগানের বিবর্তন-ইতিবৃত্ত তুলে ধরাই ছিল এ-পরিবেশনার উদ্দেশ্য। বাংলাগানের বিবর্তনধারাটি এ-পরিবেশনায় সুস্পষ্ট হয়েছে – এ-কথা বলা যাবে না। ধারাভাষ্যে চর্যার কাল সম্পর্কিত তথ্যও সর্বজনমান্য নয়। এসব বিষয়ে আরেকটু প্রস্ত্ততি ও সতর্কতা বাঞ্ছনীয় ছিল।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বেনারস ঘরানার কত্থক 888sport live chatী বিশাল কৃষ্ণের নৃত্যপরিবেশনের মধ্য দিয়ে। বিশাল কৃষ্ণ বেনারস ঘরানার বিশিষ্ট পন্ডিত শুকদেব মহারাজার প্রপৌত্রী। তাঁর নৃত্যানুশীলনের সূচনা হয় তিন বছর বয়সে, মাতামহী কত্থকসম্রাজ্ঞী  ড. সিতারা দেবীর কাছে। পরে পন্ডিত রবিশঙ্কর মিশ্র ও পিতা মোহন কৃষ্ণের কাছেও তালিম নেন। কত্থকের গাণিতিক অঙ্গে পারদর্শিতার জন্য বিশাল ‘বিস্ময়-নর্তক’ নামে সমাদৃত। বিশাল কৃষ্ণ তাঁর পরিবেশনা শুরু করেন  দেবীস্ত্ততি ‘জয় জয় জগ জননী দেবী’ দিয়ে। চারুকেশী রাগ ও তিন তালে পরিবেশিত হয় এ-নৃত্য। এরপর নটরাজ গোপীকৃষ্ণের একটি নৃত্যরচনা পরিবেশিত হয় পাখওয়াজের বোলে। দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে 888sport live chatীর কুশলতা উপভোগ করছিলেন, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পরপর তিনটি গৎ – কৃষ্ণ গদ্, ঘুঙ্গট গদ্  ও ময়ূর গদ্ পরিবেশন করে বিশাল তাঁর উৎকর্ষের পরিচয় দিলেন। বিশেষ করে তাঁর পিতামহীর সৃষ্ট ময়ূর গদে বর্ষায় ময়ূরের অভিব্যক্তির নৃত্যায়ন ছিল অনবদ্য।  সবশেষে একটি থালার ওপর নূপুর নাচের কুশলতা দেখালেন 888sport live chatী। ঘোটক চালে ঘোড়ার চলন দেখালেন, অনিয়মিত তালে তেহাইয়ের সঙ্গে অনবদ্য নৃত্যশৈলী দেখিয়ে দর্শকদের তৃপ্ত করেছেন। বিশালের সঙ্গে তবলায় ছিলেন কুশল কৃষ্ণ, সেতারে জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদন ও বোলের দায়িত্বে ছিলেন মোহন কৃষ্ণ। কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করেছেন দেবাশীষ সরকার। দেবাশীষের কণ্ঠসামর্থ্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

এরপর মঞ্চে এলেন বিদুষী গিরিজা দেবী। মঞ্চে বসেই গিরিজা দেবী জানালেন, তিনি বেশ ক্লান্ত। ভেবেছিলেন আসতে পারবেন না, কিন্তু 888sport appর দর্শকদের আগ্রহ ও রসগ্রহিতার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত ক্লান্তি দূরে সরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেঙ্গলের এই আসর সম্পর্কে বললেন, ‘ইয়ে এক উঁচি দরওয়াজা কা প্রোগ্রাম।’ শুরু করলেন যোগকোষ রাগে ‘অ্যায় ঝাঝরিয়া ঝনকে, এ মাই ক্যায়সে ঘর আউ’ এই খেয়াল দিয়ে। বেনারস ঘরানার এই 888sport live chatীর বয়স চুরাশি পেরিয়েছে, কিন্তু কণ্ঠের সাবলীলতা ও মাধুর্য আজো ক্ষুণ্ণ হয়নি। বেশ স্বচ্ছন্দে গেয়ে গেলেন প্রথমে বিলম্বিত একতালে, পরে দ্রুত লয়ে।  দ্রুত তিনতালের বন্দিশ ছিল ‘বহুত দিন বিতে আব না মোরা শ্যাম আয়ে’। এই অংশে গিরিজা দেবীর কণ্ঠে যে-আকুতি ছিল তাতে শ্রোতারাও যেন 888sport live chatীর সমব্যথী হয়ে উঠেছিলেন। এরপর তিলক কামোদে গাইলেন একটি ঠুমরি, ‘আও পিয়া মোরে আও, জিন যাও রাতিয়া’। গাওয়ার আগে ঠুমরির উদ্ভব ও বিবর্তনের কথা বললেন বিদুষী গিরিজা। গোড়ার দিকে খেয়ালকে ভেঙে, ছোট করে, ঠুমরি পরিবেশিত হতো। পরে এর মধ্যে দোহা ও 888sport app download apk সংযোজিত হয়, কিন্তু ঠুমরির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় এর চলনে। এই চলনবৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য দেখালেন তিনি তাঁর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায়। গিরিজা দেবী সবশেষে গাইলেন একটি দাদরা, ‘পুরব দেশ সে আয়ি এক গুড়িয়া, জাদু ডাল গেয়ি রে মোর হরি সংগ্না’। এই দাদরায় সুরারোপ করেছিলেন গিরিজা দেবী অনেক আগে একদিন ঝোঁকের মাথায়। এই আসরেই প্রথম গাইলেন নিজের সুরারোপিত এই দাদরাটি।  গিরিজা দেবীর যে-কোনো অঙ্গের গানই শ্রোতাদের তৃপ্ত করে, কিন্তু সেই রাতে অতৃপ্তি ছিল 888sport live chatীরই। তিনি আরো গাইতে চেয়েছিলেন। বললেন, ‘পরের বার আর আসতে পারব কিনা জানি না। আজ আমি চৈতী, কাজরী যা শুনতে চান শোনাব।’ কিন্তু তাঁকে অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করার সুযোগ ছিল না আয়োজকদের। গিরিজা দেবীর সঙ্গে তবলায় সহযোগিতা করেছেন সঞ্জয় অধিকারী, হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ভট্টাচার্য, সারেঙ্গিতে সারওয়ার হোসেন। কণ্ঠে অপরাজিতা লাহিড়ীর সহযোগিতা ছিল অনবদ্য।

গিরিজা দেবীর পর গৌতম সরকার, ইফতেখার আলম প্রধান, স্বরূপ হেসেন ও মোহাম্মদ জাকির তবলায় শোনালেন ত্রিতাল-বাদন। 888sport live chatীচতুষ্টয় নানা ধরনের টুকরা, তেহাই ও চক্রদার পরিবেশন করেছেন কুশলতার সঙ্গে।

সেতারিয়া অয়ন সেনগুপ্ত  বয়সে তরুণ কিন্তু এরই মধ্যে বাদনশৈলীতে পারঙ্গম হয়ে উঠেছেন। পন্ডিত মণিলাল নাগ ও পন্ডিত কুশল দাসের যোগ্য শিষ্য অয়ন প্রথমে বাজালেন মারু বেহাগ। আলাপ, জোড় ও ঝালা – সবটাতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। পরে বাজালেন মিশ্র খাম্বাজে একটি ধুন। অয়নের বাজনায় গায়কি ঢং ছিল, বর্তমানে গায়কি ঢঙের তালিম নিচ্ছেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছ থেকে।

বিদুষী কৌশিকী দেশীকান (চক্রবর্তী) আভোগী রাগে গাইলেন বিলম্বিত খেয়াল ‘ক্যায়সে কহু মন কি দুখুয়া’। পরে দ্রুত ত্রিতালে গাইলেন ‘লগন মেরি লাগি শ্যাম’। দ্রুত সরগম ও তানে কৌশিকীর পারদর্শিতা ছিল মনে রাখার মতো। ‘তেরে নয়না জাদু ভরে’ ঠুমরিটিও ছিল উপভোগ্য। সবশেষে পরিবেশন করলেন বাংলা ঠুমরি ‘ফুরাতে চাহে না জেগে থাকা রাত, মেলিয়া থাকে শুধু আঁখিপাত’। ঠুমরিতে ছোট ছোট তানের সুন্দর প্রয়োগ করেছেন 888sport live chatী। 

ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান ও ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর শিষ্য পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার সরোদে ধরলেন রাগ কৌশিকী-কানাড়া। দরবারি কানাড়া ও মালকোষের সমন্বয়ে গঠিত এই রাগটির পরিবেশনায় তেজেন্দ্র নারায়ণ কুশলতা দেখিয়েছেন সন্দেহ নেই। আলাপ-জোড়-ঝালা – সবপর্বেই তিনি ছিলেন পারঙ্গম। এরপরে তিনি বাজিয়েছেন ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ-রচিত রাগ চন্দ্রনন্দন। ১৯৫০-এর দশকে  ওস্তাদ আলী আকবর এ-রাগটি সৃষ্টি করেন মালকোষ, চন্দ্রকোষ, নন্দনকোষ কৌশি কানাড়ার সমন্বয়ে। চন্দ্রালোকে কৃষ্ণ ও গোপীদের লীলাক্রিয়ার ভাবটি করুণা ও শৃঙ্গার রসে উন্মোচন ঘটানো হয়েছে এ-রাগে। এ-রাগের পরিবেশনায়ও পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ।

প্রথম রজনীর শেষ পরিবেশনা ছিল পন্ডিত রাজন ও সাজন মিশ্রের। খেয়াল অঙ্গে পারদর্শী বেনারস ঘরানার এই দুই ভ্রাতা তালিম  পেয়েছেন পিতামহ বড়ে রামদাস মিশ্র ও পিতা হনুমান প্রসাদ মিশ্রের কাছ থেকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁরা বললেন, ‘সংগীতই আমাদের উপাসনা।’ তাঁরা শুরু করলেন রাগ ভাটিয়ার, বিলম্বিত একতালে ‘উচাৎ গেয়ি মেরি নিন্দিয়া’ – এই বন্দিশ দিয়ে। দীর্ঘসময় ধরে মন্দ্রসপ্তকে বিস্তার করেছেন, মন্দ্রসপ্তক থেকে তারসপ্তক পর্যন্ত তাঁদের সুরবিস্তার ছিল বেশ সাবলীল ও মনোমুগ্ধকর। একজন করছিলেন সরগম, অন্যজন সেটিই তানরূপে পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।  এরপর ওস্তাদ আমির খসরু-রচিত ‘বানকে পাঞ্ছি ভা-ই বাওয়ারে অ্যায়সে বাজায়ে সাওয়ারে’ বন্দিশটি পরিবেশন করলেন গুজরি-টোড়িতে। একই রাগে তাঁরা দ্রুত ত্রিতালে একটি তারানাও পরিবেশন করেন। তারানায় তান ও সরগমের প্রয়োগে তাঁরা ছিলেন অসাধারণ। রাত্রির শেষপ্রহরে দ্রুত তিনতালে ‘আয়ও প্রভাত সব মিলে গাও বাজাও’ বন্দিশটি পরিবেশনের সময় ঊষার আগমন যেন সত্যিই অনুভূত হচ্ছিল। অনুষ্ঠান সমাপ্ত হলো ভৈরবী রাগে ‘ভবানী দয়ানী মহা বাক-বাণী’ ভজনটি  দিয়ে। পন্ডিত রাজন-সাজনের সঙ্গে হারমোনিয়ামে সংগত করেছেন রূপশ্রী ভট্টাচার্য, তবলায় পন্ডিত সমর সাহা। সকলেই কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন, তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় পন্ডিত সমর সাহার তবলা-বাদনের কথা। তবলা-বাদকগণ এখন আর শুধু সঙ্গতকার নন। মূল গায়ক বা বাদকের মতোই শ্রোতাদের সমান মনোযোগের দাবিদার তাঁরা। পন্ডিত সমর সাহা সে-কথাই প্রমাণ করলেন। মিশ্রভ্রাতাদের সঙ্গে তাঁর সংগত চলেছে সমান তালে। বেনারস ঘরানার সমর সাহা প্রথমে পিতা সুধাংশু শেখর সাহা ও ভ্রাতা তারক সাহার কাছে তালিম নেন, পরে পন্ডিত সচ্চিদানন্দ গোস্বামী ও বেনারস ঘরানার পন্ডিত শ্রীকৃষ্ণকুমার গাঙ্গুলির কাছে তালিম পেয়ে তবলা-বাদনে অনায়াস পারদর্শিতা অর্জন করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সন্ধ্যা শুরু হয় ভরতনাট্যমের বিশিষ্ট 888sport live chatী বিদুষী আলারমেল ভাল্লির নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। নৃত্য-ব্যাকরণে তিনি পারদর্শী, কিন্তু এই ব্যাকরণের সীমা ছাড়িয়ে নৃত্য পরিবেশনায় তিনি নান্দনিকতার উৎকর্ষে পৌঁছে যান। তাঁর নৃত্য যেন এক ব্যক্তিগত অন্তর্লীন 888sport app download apk। নৃত্যের ধ্রুপদী আঙ্গিকের ব্যাপারে তিনি আপসহীন, তবু নিজস্ব একটি নৃত্যভাষা তিনি ইতোমধ্যেই সৃষ্টি করেছেন। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য, এ-কারণেই তিনি সমাদৃত। পন্ডিত পদানুল্লার চোক্কালিঙ্গম পিল্লাই ও তাঁর পুত্র সুববারায়া পিল্লাইয়ের কাছে ভরতনাট্যমের পদানুল্লার পদ্ধতির তালিম গ্রহণ করেন। বিশিষ্ট কয়েকজন পন্ডিতের কাছে সংগীতের শিক্ষাও গ্রহণ করেছেন। এর ফলে তাঁর নৃত্যে সাংগীতিক ব্যঞ্জনা বেশ ভালোভাবেই অনুভূত হয়।

এ-সন্ধ্যায় আলারমেল প্রথমে পরিবেশন করেন ‘আদিত্য নমস্ত্তবিয়াম’ বা সূর্যপ্রণাম। সূর্য অনন্ত শক্তির আধার, প্রকৃতির শক্তি ও সৌন্দর্য উন্মোচিত হয় সূর্যের কিরণস্পর্শে। ‘সহস্র যুগধারিণী প্রভাতেরে নমস্ত্তরি’ এই বন্দনা দিয়ে শুরু হয় তাঁর সূর্যপ্রণাম।  রাত্রির অবগুণ্ঠন ভেদ করে ধীরে ধীরে  সমগ্র প্রকৃতিতে কুমকুমের আবিরের মতো সূর্যালোকের বিচ্ছুরণ এবং আলোর স্পর্শে জগতে জীবন-চাঞ্চল্য কীভাবে সঞ্চারিত হয় সেই ভাবানুভূতি রূপায়ণ করেছেন 888sport live chatী। সূর্যকিরণের স্পর্শে শুধু তমসাই বিদূরিত হয় না, এক কমনীয় উজ্জ্বলতায় সমগ্র পৃথিবী উদ্বেল ও উচ্ছল হয়ে ওঠে, মানুষের চিত্ত হয় প্রসারিত। ছন্দোময় দ্যোতনায় এই জগৎ জেগে ওঠে। অপূর্ব চারুতা ছিল আলারমেলের এই নৃত্য পরিবেশনায়।

এরপর পরিবেশিত হয় পঞ্চদশ শতকের তেলেগু কবি আন্নামাচারিয়ার একটি 888sport app download apkর নৃত্যায়ন। আন্নামাচারিয়াকে বলা হয় তেলেগু পদ888sport app download apkর পিতামহ। কর্ণাটকি সাংগীতিক ঐতিহ্যে তিনি প্রায় ছত্রিশ হাজার ‘কৃতি’ রচনা করেছেন বলে অনুমান করা হয়। ভজনও রচনা করেছেন অনেক। তাঁর রচনা অনেকদিন ধরে তিরুমালার একটি মন্দিরের নিচে লুপ্ত ছিল। মন্দির খনন করে তাঁর রচনার কিছু অংশ তাম্রপাত্রে খোদাই অবস্থায় পাওয়া গেছে। আলারমেল দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে আন্নামাচারিয়ার 888sport app download apkর নৃত্যায়ন নিয়ে কাজ করেছেন। স্বর্গীয় দেবী লক্ষ্মীর বন্দনা করে রচিত একটি 888sport app download apk অবলম্বনে নৃত্য পরিবেশন করলেন আলারমেল। বিষ্ণুর সভায় নৃত্যরতা লক্ষ্মীর নান্দনিক নৃত্য দেখে আধফোটা কুঁড়ির মতো বালিকারা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। যখন সে মাটিতে আলতো করে পায়ের আঘাত হানে, তার পায়ের মলের সুমধুর ধ্বনি শোনা যায়। লক্ষ্মীর পায়ের হীরকখচিত মল থেকে বিচ্ছুরিত আলোয় সবাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে। যেন সৌন্দর্যের এক অনিন্দ্য প্রস্রবন প্রবাহিত হয় লক্ষ্মীর নৃত্যধারায়। আলারমেলের এই পরিবেশনায় ছিল কাব্যময় নান্দনিকতা।

সঙ্গম যুগের একটি তামিল 888sport app download apkর নৃত্যায়ন ছিল আলারমেলের আরেকটি অসাধারণ পরিবেশনা। তামিল ভাষায় সঙ্গম 888sport app download apkগুলো রচিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় শতকের মধ্যে। এ. কে. রামানুজনের মতে, সঙ্গম 888sport app download apkগুলো তামিল 888sport live footballের পরিণত ধ্রুপদী রচনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আবেগের সঙ্গে পরিমিতি, সরলতার সঙ্গে কারুকার্যের সূক্ষ্মতা, সংক্ষিপ্ত চরণে ভাবের গভীরতা – এসব বৈশিষ্ট্য সঙ্গম 888sport app download apkকে সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করেছে। এই 888sport app download apkগুলো সাধারণত কাহিনি-আশ্রয়ী। আলারমেল তাঁর নৃত্যে একটি হৃদয়স্পর্শী কাহিনিই বর্ণনা করলেন। জ্ঞানের উচ্চারণ নামের এই নৃত্যকাহিনিতে সম্পর্কের অধিকারবোধ নিয়ে এক দার্শনিক মীমাংসা প্রতিফলিত হয়েছে। প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া এক কন্যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিপন্ন মাতা। কন্যার ওপর তাঁর অধিকার ছিন্ন হচ্ছে ভেবে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছেন। পরে একদল  জ্ঞানী সাধু তাঁকে বললেন, সম্পর্কের অধিকার একসময় ত্যাগ করতে হয়। চন্দনগাছের জন্ম পর্বতে, কিন্তু তাঁর সৌরভ ভোগ করে সে-ই, যে চন্দনের প্রলেপ গায়ে মাখে। মুক্তোর ওপরও সমুদ্রমাতার অধিকার থাকে না, মুক্তোর অলঙ্কার যে পরিধান করে, তারই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তোর ওপর। কন্যাকেও একসময় পাত্রস্থ করতে হয়। অধিকারবোধ সম্পর্কে এই মীমাংসা শেষ পর্যন্ত পলাতক কন্যার মাতা মেনে নেন, সবাইকে মেনে নিতে হয়।

আলারমেল সবশেষে পরিবেশন করেন স্বরলয়া বা নৃত্যলহরী। হংসনাদম (হংসধ্বনি) রাগে পরিবেশিত এই লহরীতে চার চার মাত্রার তালকে ভেঙে পাঁচ-তিন মাত্রায় অত্যন্ত দুরূহ পায়ের কাজ প্রদর্শন করেন এ-888sport live chatী। তাল-লয় নিয়ে এরকম ভাঙাগড়া আলারমেলের সহজাত।

আলারমেলের নৃত্যের পরই ছিল অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন এই আলোচনা-অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। তিনি বাংলাগানের সঙ্গে হিন্দুস্তানি কালোয়াতি গানের পার্থক্য আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাগানের প্রধান অবলম্বন বাণী, হিন্দুস্তানি সংগীত রূপায়িত হয় সুরের আশ্রয়ে ও স্বরের বিস্তারে। অনুষ্ঠানে সংগীত সম্পর্কে আলোচনা করেন আলিম উর রহমান।   দ্বিতীয় রাতের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় পন্ডিত বারীন মজুমদারের উদ্দেশে।

এরপর বেহালা বাজালেন সাকের সাহু। সাকের বেহালায় তালিম নিয়েছেন পন্ডিত রাধাকৃষ্ণ ঝার কাছ থেকে। এখন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে শিখছেন গায়কিরীতির বাদন। 888sport live chatীর বাজনায় বেহাগ রাগটি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল।

কর্ণাটকি সংগীতে তারকারূপে খ্যাত বোম্বে জয়শ্রীর প্রকৃত নাম জয়শ্রী রামনাথ, তবে বোম্বে জয়শ্রী নামেই তিনি খ্যাত। 888sport live chatী জন্মেছিলেন কলকাতায়, সংগীত-সাধনা শুরু করেন মুম্বাই গিয়ে। গোড়ার দিকে তালিম নিয়েছেন হিন্দুস্তানি সংগীতে, পরে চেন্নাই গিয়ে পন্ডিত লালগুদি জয়রামনের কাছে কর্ণাটকি সংগীতের দীক্ষা নেন। পরিচালক আঙ লির লাইফ অব পাই ছবির জন্য সংগীত রচনা করে সেরা মৌলিক সংগীত শাখায় ২০১৩ সালের অস্কার 888sport app download bdের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তাঁর গায়কির জন্য অনেকে তাঁকে ভারতরত্ন শুভলক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনীয় মনে করেন।

দ্বিতীয় রজনীতে এই বোম্বে জয়শ্রীই কর্ণাটকি সংগীতের সম্ভার নিয়ে  বসলেন শ্রোতাদের সামনে। পূরবী কল্যাণ, কাফি, বেহাগসহ বেশ কয়েকটি রাগের দক্ষিণী রূপ পরিবেশন করলেন 888sport live chatী। তাঁর সঙ্গে মৃদঙ্গ বাজিয়েছেন মনোজ শিব, বেহালায় সংগত করেছেন গণেশ প্রসাদ। বোম্বে জয়শ্রী উচ্চ মার্গের 888sport live chatী। কিন্তু শ্রোতাদের উদ্দেশে কোনো কথা না বলে একটানা গেয়েই গেলেন। দক্ষিণী সংগীত সম্পর্কে আমাদের শ্রোতাদের ধারণা খুবই ক্ষীণ। ভালো হতো যদি তিনি তাঁর পরিবেশিত রাগ এবং তাল সম্পর্কে কিছুটা পরিচিতিমূলক কথা বলতেন।

888sport appsের 888sport live chatী অসিত দে এই রাতে পরপর দুটি রাগ পরিবেশন করলেন, – প্রথমে পুরিয়া কল্যাণ, পরে জনমসম্মোহনী। শেষের রাগটি শুভকল্যাণ নামেও পরিচিত। দুটি পরিবেশনাই ছিল ভালো। 888sport live chatী শ্রোতারঞ্জনের সহজ পথ ধরেননি। নিষ্ঠার সঙ্গে সুবিচার করেছেন রাগ দুটির প্রতি।

দ্বিতীয় রাতের আসর জমিয়েছিলেন সেতারিয়া পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। বাদনে এবং অভিব্যক্তিতে দর্শকরঞ্জনের প্রয়াস ছিল, কিন্তু পারদর্শিতার ঘাটতি ছিল না। যোগকোষে আলাপ, জোড় ও ঝালা বাজালেন পরিচ্ছন্ন কুশলতার সঙ্গে। বিশেষ করে ঝালায় তিনি ছিলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ঝালায় তাঁর অবি888sport app download for androidীয় দ্রুততায় শ্রোতারা উল্লসিত হয়েছেন, কিন্তু দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে বাদনে শৈথিল্য দেখাননি। রাগদারিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। ‘ইয়ারে মান বিয়া বিয়া’ বন্দিশটি বাজালেন, তবে তাঁর আগে গেয়ে শোনালেন। প্রমাণ করলেন কণ্ঠেও তিনি সমান সমর্থ। উপভোগ্যতার সকল উপাদানই ছিল পূর্বায়ণের পরিবেশনায়। এরপর বিলাওয়াল রাগে একটি ধুন বাজিয়ে শোনালেন। ধুনের বোল শ্রোতারা সহজেই চিনে নিলেন – ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি’ ও ‘দেখেছি মনের মানুষ কাঁচা সোনা’।

পূর্বায়ণের পরে আসরে বসলেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। শুরু করলেন মালকোষ। বললেন, ‘ভোরের রাগ রেখে দিলাম আমার অগ্রজপ্রতিম ওস্তাদ রইস খানের জন্য।’ শুরু করলেন বন্দিশ ‘খুদা তেরি মর্জি, হালাৎ নে খুবসুরৎ জিন্দেগি দি’। বিলম্বিত লয়ে বিস্তারিত আলাপে বন্দিশটিই হয়ে উঠেছিল খুবসুরৎ। 888sport live chatীর স্বরচিত এই বন্দিশে সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিবেদন ও কৃতজ্ঞতার যে-ভাব ফুটে উঠেছিল তাতে শ্রোতাদের মনও একধরনের মুগ্ধ আবেশে তন্ময় হয়ে উঠেছিলেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মনিবেদনের মেজাজটি চরমে উঠল, যখন 888sport live chatী পরম আকুতি ভরা কণ্ঠে গাইলেন ‘আজব তেরি দুনিয়া আল্লা মিয়া, মর্জি তেরি রাখলি সারি, সবকুছ তুম পর ওয়ার কিয়া’। এরপর মধ্যম ত্রিতালে গাইলেন ‘মঙ্গল দে সুদামা’। মন্দ্রসপ্তকে দীর্ঘক্ষণ অনবদ্য স্বরবিস্তার করেছেন, তারসপ্তকেও ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ। সপ্তকের বিভিন্ন স্বরকে ‘সা’ ধরে সরগম করে শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছেন 888sport live chatী। এরপর অজয় চক্রবর্তী পরিবেশন করলেন তাঁর গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ-রচিত একটি তারানা। এখানেই থামলেন না, একটি ঠুমরি ধরলেন। ‘ও কিস মুসিবৎ সে বসে হাম, সবে গম করতে হ্যায়, রাতভর আ সনম আ সনম করতে হ্যায়, ক্যায়া করু সজনী আয়ে না বালম’। ঠুমরির পরিবেশনাও ছিল অনবদ্য। সেই রাতে যেন তাঁর সবকিছু উজাড় করে দিতে চেয়েছেন। এরকম প্রাণবন্ত পরিবেশনা সচরাচর শোনা যায় না। শেষে গাইলেন প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়-রচিত ও পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ী-সুরারোপিত একটি প্রভাতি গান ‘যামিনী হলো যে ভোর বাঁশি বাজে যোগিয়ায়’।

পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে তবলায় সমান তালে সংগত করেছেন পন্ডিত যোগেশ সামসি। সওয়াল-জওয়াবে মাতিয়ে দিয়েছিলেন এই দুই পন্ডিত। যোগেশ সামসির প্রতি যথাবিহিত সম্মান জানাতে ভোলেননি অজয় চক্রবর্তী। পরিবেশনার মাঝখানেই বললেন, ‘পন্ডিত যোগেশ সামসি শুধু একজন সম্পন্ন তবলা 888sport live chatীই নন। সংগীতের সব শাখাতেই  তাঁর বিচরণ স্বচ্ছন্দ। তিনি একজন পরিপূর্ণ সংগীতজ্ঞ।’

রাতের শেষ প্রহরে এলেন সেতারিয়া ওস্তাদ রইস খান, সঙ্গে পুত্র ফারহান খান। সেতারে শুরু হলো পিতা-পুত্রের যুগলবন্দি। শুরু করার আগে কিছুটা আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে ওস্তাদ রইস খান বললেন, ‘গত চল্লিশ কি পঞ্চাশ বছর ধরে 888sport appsে এসে সেতার বাজানোর আকাঙ্ক্ষা করে আসছি। এখন আমি পাকিস্তানের, কিন্তু আমি তো আসলে হিন্দুস্তানের। আমার আম্মা এই 888sport appsেরই। আমি এখন বয়সের ভারে কাবু, সায়টিকার ব্যথা আমাকে প্রায় অচল করে দিয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা এতটাই বেশি যে, এখন আর মাপতেও ইচ্ছে করে না। প্রায়ই চারশোর ওপরে থাকে। হয়তো কাল সকালেই আমার মৃত্যু হবে। কিন্তু মৃত্যুর আগে একবার এই 888sport appsে এসে আপনাদের আমার সেতার শোনাতে পারছি, এই জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আমি শুকরগুজার করি বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির প্রতি যাঁরা আমার বহুদিনের আরজু পূরণ করেছেন।’

এরপর ভোরের রাগ চারুকেশী শুরু করলেন তন্ময় হয়ে। সময় বেশি ছিল না, ফজরের সময় হয়ে আসছিল। কাজেই সংক্ষিপ্ত করতে হলো বাদন; কিন্তু স্বল্প সময়েই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে ফেললেন। আলাপে ও জোড়ে অসামান্য পারদর্শিতা ছিল। চারুকেশী মিষ্টি রাগ, এই রাগের মিষ্টত্ব আরো উপভোগ্য হয়ে উঠল রইস খানের পেলব বাজনায়। পরে একটি ধুন বাজালেন আফগানি ও বাংলা সুরের মিশ্রণে। পুত্র ফারহান খানের বাজনা শুনে মনে হলো ওস্তাদ রইস খান এক যোগ্য উত্তরসূরিই রেখে যাবেন। এই রাতেও তবলায় অসাধারণ সংগত করলেন পন্ডিত সমর সাহা। রইস খান তো বলেই ফেললেন, ‘সমর সাহা আজ আমার সঙ্গে প্রথম বাজাচ্ছেন, কিন্তু এতটাই তাল-মিল, যেন মনে হচ্ছে আমরা চল্লিশ বছর ধরে একসঙ্গে বাজাচ্ছি।’

তৃতীয় সন্ধ্যার আসর শুরু হলো রাজরূপা চৌধুরীর সরোদ বাদন দিয়ে। পন্ডিত সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরীর কাছে তালিম নেওয়া রাজরূপা সরোদ বাদনে পন্ডিত রাধিকা মোহন মৈত্রের শৈলী অনুসরণ করে থাকেন। রাজরূপা তাঁর বাদন শুরু করলেন শ্যামকল্যাণ রাগের আলাপ দিয়ে। জোড় বাজালেন গমকি ঢঙে। পরে রাগেশ্রী পরিবেশন করলেন বিলম্বিত ত্রিতালে। পন্ডিত যোগেশ সামসি ছিলেন তবলায়। 888sport live chatীর বাদন কুশলতা ও শৈলী শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে – একথা মানতেই হবে।

এরপর শুরু হলো তৃতীয় দিনের আলোচনা পর্ব। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী ছিলেন এ-পর্বের প্রধান অতিথি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাহফুজ আনাম। গওহর রিজভী এ-বছরের মধ্যেই একটি সংগীত অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করার তাগিদ এবং এ-ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরও একটি অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা জানালেন। তৃতীয় রজনীর অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় বিশিষ্ট নৃত্য888sport live chatী বুলবুল চৌধুরীর উদ্দেশে।

আলোচনা পর্বের পর মঞ্চে এলেন 888sport live chatী কুমার মরদুর। তাঁর পিতা সোমনাথ মরদুর কিরানা ঘরানার 888sport live chatী। কুমারের প্রাথমিক তালিমের সূচনা পিতার কাছেই। পরে কিরানা ঘরানার পন্ডিত ফিরোজ দস্ত্তরজির কাছে তালিম নেন। রাগ শুদ্ধকল্যাণে বিলম্বিত একতালে বন্দিশ ‘তুম বিনা কৌন’ দিয়ে শুরু করলেন কুমার। তাঁর বলিষ্ঠ ও সুললিত কণ্ঠের পরিবেশনা মুগ্ধ হওয়ার মতো। কণ্ঠের  বিস্তার ও স্থিরতা ছিল মনোমুগ্ধকর। এরপর দ্রুত তিনতালে গাইলেন ‘মনদের বাজো বাজো রে’। দ্রুত তানেও 888sport live chatী অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। পরে কাহারবা রাগে গাইলেন কবিরের একটি ভজন ‘মন ফুলা ফির-এ জগৎ মে’। কুমারের সমগ্র পরিবেশনা শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিয়েছিল।

সন্তুরের সম্ভার নিয়ে আসরে বসলেন পন্ডিত শিবকুমার শর্মা। প্রথমে তালিম নিয়েছিলেন কণ্ঠসংগীত ও তবলায় পিতা পন্ডিত উমা দত শর্মার কাছে। পরে, তেরো বছর বয়সে, পিতার নির্দেশেই সন্তুর বাদন শুরু করেন। পুত্রকে সন্তুর বাদনে উৎসাহিত করার কারণও ছিল। কাশ্মিরি এ-লোকবাদ্যটি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্তুরের বর্তমান রূপে উন্নীত করেন উমা দত। পরে শিবকুমারও সন্তুরের অনেক পরিমার্জন করেছেন।

শিবকুমার প্রথমে পরিবেশন করলেন রাগ ঝিনঝোটি। আলাপেই মাতিয়ে দিলেন শ্রোতাদের। সন্তুরে কোমল পর্দার ধ্বনি কতটা মধুর হতে পারে বুঝিয়ে দিলেন, নাড়া দিলেন শ্রোতাদের সংবেদনের একেবারে গভীরে। মিশ্র কৌশিক ধ্বনিতে বাজানো ধুনটিও ছিল অসাধারণ নৈপুণ্যের স্বাক্ষর। এ-প্রসঙ্গে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবনের একটি গল্প মনে পড়ে গেল। সারাজীবন তিনি নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন, শিখিয়েছেন অনেককেই। মৃত্যুর আগে নাকি বড়ভাই ফকির আফতাবউদ্দীন একরাতে স্বপ্নে তাঁকে বললেন, ‘আলম (আলাউদ্দীনের ডাক নাম) বহুদিন যন্তর বাজালি, এবার অন্তর বাজা।’ শিবকুমার সেইরাতে যন্তর নয়, অন্তরই বাজালেন যেন।

পন্ডিত স্বপন চৌধুরী 888sport appsে এসেছিলেন প্রায় দুই দশক আগে পন্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে তবলা সংগত করার জন্য। এবার এলেন তবলায় একক বাদন শোনানোর জন্য। লক্ষ্ণৌ ঘরানার পন্ডিত শঙ্কর কৃষ্ণ বিশ্বাসের কাছে তালিম নিয়েছেন তবলায়। পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়ে, কিন্তু সংগীতের আহবানে সাড়া না দিয়ে পারেননি। বেছে নিলেন তবলাকেই। তবলায় সংগত করেছেন পন্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খান, ওস্তাদ আমীর খান, পন্ডিত ভীমসেন যোশী, পন্ডিত নিখিল ব্যানার্জি, পন্ডিত বালমুরালীর মতো বিখ্যাত 888sport live chatীদের সঙ্গে।

শুরুতেই বললেন, তিনি এবার পেশকারি করবেন না। প্রথমেই বাজালেন তিনতালের ঠেকা। এরপর ওয়াজিদ হুসেন খাঁ-রচিত একটি রেলা। লক্ষ্ণৌ ঘরানার খলিফা ওস্তাদ আবিদ হুসেইন খাঁর কয়েকটি পুরনো রচনা তবলায় মুখর করে তুললেন। বাদনে নিজের কিছু উদ্ভাবনও প্রদর্শন করলেন সাবলীলভাবে। স্বপন চৌধুরীর সঙ্গে সারেঙ্গিতে সহযোগিতা করলেন আল্লারাখা কলাবন্ত। চম্পাকলি রাগে দুজনের পারস্পরিক সংগত ছিল শ্রুতিসুখকর। শ্রোতাদের প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ বাজালেন না। তবে প্রতিশ্রুতি দিলেন পরেরবার বাজাবেন দীর্ঘক্ষণ, মন ভরিয়ে দেবেন তবলারসিকদের। স্বপন চৌধুরী বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনের প্রশংসা করলেন, আশা প্রকাশ করলেন, একদিন 888sport appsিদের হাতেই শোভা পাবে  উচ্চাঙ্গসংগীতের পতাকা।

এই রাতে 888sport appsের প্রতিনিধিত্ব করলেন রীনাত ফাওজিয়া। সেতারে কিরওয়নি বাজালেন বেশ নৈপুণ্যের সঙ্গে। আলাপ-জোড়-ঝালায় ছিলেন পারদর্শী।

পদ্মা তালওয়ালকার শৈশবে গাইতেন মন্দিরে, ভক্তদের সমাবেশে। পরে পিতা-মাতার উৎসাহে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীত শিক্ষা শুরু করেন গোয়ালিয়র ঘরানার পন্ডিত পিম্পল খারের কাছে। জয়পুর ঘরানার শ্রীমতী মগুবাই কুর্দিকারের কাছেও তালিম নিয়েছেন দীর্ঘদিন। কিরানা ঘরানার গায়কিতেও তিনি সিদ্ধ। ওস্তাদ আমীর খাঁ, পন্ডিত ভীমসেন যোশী ও পন্ডিত  কুমার গন্ধর্ব ও কিশোরী আমনকারের  সংগীত তাঁকে প্রভাবিত করেছে অনেকখানিই।

পদ্মা তালওয়ালকার গাইলেন  যোগকোষ রাগে ‘এ্যায় সুঘর বড়া পায়ো’। বিলম্বিত তিনতালে বন্দিশটির আলাপ ছিল 888sport live chatীর সমর্থতার স্বাক্ষর। মধ্যলয়ে ত্রিতালে গাওয়া ‘পীর পরায়ি জানি নেহি’ বন্দিশটিও ছিল শ্রুতিসুখকর। মুড়কি ও তানে 888sport live chatীর সাবলীল নৈপুণ্য ছিল উপভোগ্য। একটি তারানা পরিবেশন করলেন তিলক কামোদ রাগে। পরিবেশনা শেষ করলেন মীরা বাঈয়ের ভজন ‘মারো প্রণাম বান্কে বিহারজি’। পদ্মা তালওয়ালকারের সঙ্গে তবলায় সংগত করেছেন তাঁর পুত্র সত্যজিৎ তালওয়ালকার। বোঝা গেল পিতা পন্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের কাছে ভালো তালিমই পেয়েছেন সত্যজিৎ। কণ্ঠে রসিকার সহযোগিতাও ছিল উল্লেখ করার মতো।

পন্ডিত উদয় ভাওয়ালকার গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ধ্রুপদে তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ জিয়া ফরিদউদ্দীন ও জিয়া মহিউদ্দীন ডাগরের কাছ থেকে। ধ্রুপদের বিলীয়মান যুগে যে কয়জন ভারতীয় সংগীতের এই ধারাটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন উদয় ভাওয়ালকার তাঁদের অন্যতম। প্রথমেই উদয় জানালেন এই সংগীত উৎসব সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতার কথা। পুনের সাওয়াই গন্ধর্ব ভীমসেন সংগীত উৎসব বেশ বড় মাপেই হয়ে থাকে। প্রায় পনেরো হাজার শ্রোতা উপভোগ করেন এই উৎসব। উদয় ভাওয়ালকার বেঙ্গল উৎসবের শ্রোতা সমাবেশ দেখে বললেন, ‘ইয়ে তো উসসে ভি বহুত বড়া হো গিয়া।’ একই কথা বললেন আগের রাতে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। এরই মধ্যে মঞ্চের পেছনের পর্দায় ভেসে উঠল একটি তথ্য – তৃতীয় রাতে শ্রোতা সমাগম হয়েছে ৩১ হাজার ৬৮৩ জন। হরতাল-অবরোধের কারণে অনেকেই আসতে পারেননি। চট্টগ্রাম-রাজশাহী থেকে ১২ হাজার জন নিবন্ধন করেছিলেন, কিন্তু আসতে পারেননি। 888sport appsের সংগীত ইতিহাসে এ এক অনন্যসাধারণ উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য বটে।

উদয় ভাওয়ালকারের পরিবেশনায় ফিরে আসি। দরবারি রাগের ধ্রুপদ পরিবেশনায় সুর ও স্বরে 888sport live chatীর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়েছেন। ধ্রুপদের প্রাচীন শাস্ত্রীয় বন্দিশ ঋড়জ-গান্ধার্ব-মধ্যম-পঞ্চম-ধৈবত-নিষাদ গেয়ে শোনালেন শেষে। 888sport live chatীর সঙ্গে পাখোয়াজ ও কণ্ঠে সহযোগিতা করেছেন যথাক্রমে প্রতাপ আওয়াধ ও চিন্তন উপাধ্যায়।

শ্রোতারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি শোনার জন্য। রাতের শেষ প্রহরে মঞ্চে এলেন এ-কালের কৃষ্ণ নামে খ্যাত হরিপ্রসাদ। প্রথমে বাজালেন রাগ প্রভাতেশ্বরী। হরিপ্রসাদের বাঁশিতে ভর করে যেন প্রভাতেশ্বরী  নেমে আসার প্রস্ত্ততি নিলেন এই মর্ত্যভূমিতে। প্রভাতের আগমনকে  আরো স্পষ্ট করার জন্য বাজালেন আরেকটি প্রভাতি রাগ  ললিত। আলাপ-জোড়-ঝালায় তাঁর পারঙ্গমতা নিয়ে আলোচনা করা বাহুল্য। বাঁশিতে যে প্রভাতি আবহ  সৃষ্টি করেছিলেন সেটিই মুখ্য। শ্রোতাদের মুগ্ধতার সীমা ছিল না। শেষে পন্ডিত সমর সাহার সঙ্গে পরিবেশন করলেন রূপক তালে একটি অসাধারণ যুগলবন্দি। সমর সাহার তবলা বাদন এই রাতেও শ্রোতাদের আলোড়িত করেছে। পন্ডিত চৌরাশিয়ার সঙ্গে পাখোয়াজ বাজিয়েছেন ভবানী শঙ্কর এবং বাঁশিতে সহযোগিতা করেছেন বিবেক সোনার। হরিপ্রসাদের বাজানো কীর্তনের ধুনটিও ছিল অসাধারণ নৈপুণ্যে ভরা, মনোহরণকারী।

উৎসবের শেষদিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এয়ার মার্শাল এ. কে. খন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। এ-উৎসবের প্রধান ও নেপথ্য সংগঠক লুভা নাহিদ চৌধুরী ধন্যবাদ জানালেন সকল কর্মী, পৃষ্ঠপোষক ও শ্রোতাদের।

সমাপনী দিনের প্রথম পরিবেশনা ছিল তামান্না রহমান ও তাঁর সহযোগীদের নৃত্য। বিদুষী কলাবতী দেবীর পরিচালনায় প্রথমে পরিবেশিত হলো ‘এসো হরি হৃদমাঝারে’ নৃত্যটি। এরপর কালিয়দমনের নৃত্যায়ন। মণিপুরি নৃত্য প্রধানত ভাবগম্ভীর, ইঙ্গিতময় ও সংযত। তামান্না রহমানের পরিবেশনায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিস্ফুট করার প্রয়াস ছিল। দশ অবতারের গুণকীর্তন করে রচিত জয়দেবের ‘দশাবতারে’র নৃত্যরূপও পরিবেশন করেছেন তামান্না। পরিবেশনায় অভাব ছিল সাবলীলতার, মনে হলো আরো অনুশীলন প্রয়োজন।

অরুণ ভাদুড়ি, মানস চক্রবর্তী ও কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের শিষ্যা শুচিশ্রী রায় কোনো নির্দিষ্ট ঘরানার গায়কিতে  নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তাঁর অন্যতম গুরু কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঘরানায় আবদ্ধ থাকা পছন্দ করতেন না। এই রাতে শুচিশ্রী প্রথমে গাইলেন আনন্দিকল্যাণ। বিলম্বিত একতালে পরিবেশিত এই খেয়ালের বন্দিশ ছিল ‘এ বারে সাইয়া তোহে সকল বন ঢুন্ঢু’। একই বোলে গাইলেন দ্রুত একতালে। বিলম্বিত খেয়ালে বোল বিস্তারে শুচিশ্রী বেশ পারদর্শিতাই দেখিয়েছেন। এরপর দ্রুত ত্রিতালে গাইলেন ‘পায়েল মোরে বাজে ঝনন ঝনন’ বন্দিশটি। শেষে তিনি গাইলেন একটি পূর্বি – ‘সাওয়ারিয়া পেয়ারা রে মোরি বাইয়া’। শুচিশ্রীর কণ্ঠ মধুর ও লালিত্যময়। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত করেছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সারেঙ্গিতে সারওয়ার হোসেন, হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়।

পন্ডিত শিবকুমার শর্মার পুত্র পন্ডিত রাহুল শর্মা সন্তুরে বাজালেন রাগ গোরখ কল্যাণ। বিলম্বিত বাজিয়েছেন তিনি রূপক তালে। লয়কারিতে রাহুলের অধিকার প্রশংসনীয়। গোড়ার দিকে কিছুটা আড়ষ্ট মনে হলেও পরে বাজনা হয়ে উঠেছিল সাবলীল। রাহুল শর্মার অবশ্য একটি সমস্যাও আছে। সন্তুর বাদনে পিতা শিবকুমার শর্মার সঙ্গে তুলিত হন। এই তুলনায় তিনি কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন, এটা তো অস্বাভাবিক নয়, অন্তত এই বয়সে।

পন্ডিত উলহাস কাশলকর জয়পুর, আগ্রা ও গোয়ালিয়র ঘরানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁর গায়কিতে এই তিন ঘরানারই বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। সাধারণত স্বল্পশ্রুত ও কঠিন রাগ পরিবেশনায় উলহাস কাশলকর সিদ্ধ। এই রাতেও তিনি প্রথমে শুরু করলেন কামোদের মতো একটি অপেক্ষাকৃত কঠিন রাগ; কিন্তু 888sport live chatী পরিবেশন করলেন অনায়াস সাবলীলতার সঙ্গে। ‘এ মোতি মালনিয়া’ বন্দিশটি পরিবেশন করলেন বিলম্বিত  লয়ে। এরপর ত্রিতাল মধ্যলয়ে পরিবেশন করলেন ‘কারে জানে না দুঙ্গি মোরে বিছড়ে বালমওয়া’। তাঁর গমক, তান, মুড়কি ছিল অসাধারণ শ্রুতিসুখকর। এরপর আড়না রাগে চৌতালে পরিবেশন করলেন আরেকটি খেয়াল ‘আয়িরে কাজরা’। এতে 888sport live chatী পালটা তানের প্রয়োগ দেখিয়েছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে। শেষে দ্রুত ত্রিতালে পরিবেশন করলেন একটি তারানা।

রুদ্রবীণার বাদন আজকাল প্রায়ই শোনা যায় না। উনিশ শতকে সুরবাহারের প্রচলন হওয়ার পর রুদ্রবীণার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এই বিলীয়মান যন্ত্রের বাদন শোনার বিরল অভিজ্ঞতা পাওয়া গেল ওস্তাদ বাহাউদ্দিন ডাগরের কল্যাণে। তিনি ওস্তাদ জিয়া মহিউদ্দিন ডাগরের পুত্র। তিনি রুদ্রবীণা বাজিয়ে থাকেন ডাগরবাণী ঢঙে। পিতার কাছেই তালিম নিয়েছেন, প্রথমে সুরবাহারে, পরে রুদ্রবীণায়।

ওস্তাদ বাহাউদ্দিন ডাগর বাজালেন চন্দ্রকৌষ।  আলাপ-জোড়-ঝালায় সিদ্ধহস্ত ডাগরের আলাপে গমকারি ছিল। তাঁর সামগ্রিক পরিবেশনা ছিল পেলব-মধুর।

ওস্তাদ রাশিদ খাঁ শুরু করলেন মালকোষ রাগে, বিলম্বিত একতালে ‘তু হ্যায় মালিক মেরি’ বন্দিশটি দিয়ে। দীর্ঘসময় ধরে করলেন আলাপ। সুরের নানারকম বিন্যাস ঘটিয়ে মালিক শব্দটি যেভাবে বারবার উচ্চারণ করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল স্রষ্টার প্রতি তাঁর আকুতিভরা নিবেদন পৌঁছানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন রাশিদ খাঁ। এরপর ত্রিতালে পরিবেশন করলেন ‘ইয়াদ আয়ত মোহে পিয়াকি বাতিয়া, ক্যায়সে গুজারু সখি উনবিন রাতিয়া’। দ্রুত ত্রিতালে গাইলেন ‘আজ মেরি ঘর আয়িরে বালমা’। রাশিদ খাঁ এই রাতে যেন উতলা হয়ে উঠেছিলেন গাইবার জন্য। শ্রোতাদের চেয়ে তিনি নিজেই যেন উপভোগ করছিলেন তাঁর গান। উদ্দাম দাপটের সঙ্গে গেয়ে গেলেন প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা। শেষে গাইলেন ভৈরবী রাগের বিখ্যাত ঠুমরি ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’। রাশিদ খাঁ গেয়েছেন অসাধারণ, তবে এই ঠুমরিটি শুনলে বড়ে গুলাম আলির কথা মনে পড়ে যায়। এই ঠুমরি গাইবার অধিকার বুঝি একমাত্র বড়ে গুলাম আলিরই ছিল।

রাশিদ খাঁ দীর্ঘ সময় ধরে গাইলেন, ফলে বিদুষী পারভীন সুলতানার জন্য খুব বেশি সময় ছিল না। তিনি নামাজি, কাজেই ফজরের আগেই শেষ করতে হবে। পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীর কীর্তিময়ী  শিষ্যা পারভীন সুলতানা 888sport appয় এসেছিলেন প্রায় কুড়ি বছর আগে স্বামী সংগীত মার্ত – ওস্তাদ দিলশাদ খানের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পরে এসেও গাওয়ার সময় বেশি পেলেন না। অনুষ্ঠান শেষে বললেন, পরেরবার আয়োজকদের বলব, আমাকে আরো সময় দিতে।

পারভীন সুলতানা প্রথমে গাইলেন গুজরি টোড়িতে খেয়াল ‘ঘর আয়ো আলমা’। বন্দিশটি গেয়েছেন বিলম্বিত একতালে। এরপর  দ্রুত ত্রিতালে গেয়েছেন ‘যারে যারে কাগওয়া’। তার সপ্তকে সুরের বিস্তারের জন্য পারভীন সুলতানার খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। এই সমর্থতার পরিচয় এবারো দিলেন। ভৈরবীতে ‘ইয়াদ সাতায়ে দিন রয়না মিতওয়া, আয়না তুম বিন চানওয়া’ ঠুমরিটি গাইলেন অসাধারণ পারদর্শিতার সঙ্গে। খুবই সুরেলা ছিল ঠুমরিটি। শেষে কুদরত live chat 888sportের ‘হামে তুমসে প্যায়ার কিতনা, ইয়ে হাম নেহি জানতে, মগর জি নেহি সকতে তুমহারে বিনা’ গানটি। ভৈরব রাগাশ্রিত এ-গানটি দিয়েই শেষ হলো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীতের দ্বিতীয় উৎসব।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য যে উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা ছিল তা কাটিয়ে এরকম ব্যাপক মাত্রার অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে – এ-সাফল্যকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। চার রাতে প্রায় এক লাখ শ্রোতা অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।  অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও 888sport live chatানুরাগী মানুষ সংগীতের সুরে নিজেদের পরিশীলিত করেছেন। তবে এই সময়ে অবিবেচক কর্মকান্ডের জন্য যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের কথাও 888sport app download for android করেছেন শ্রোতারা। এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে সবাই নিহতদের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়েছেন অনুষ্ঠানস্থান ত্যাগের আগে।

চার রাতের এই উচ্চাঙ্গসংগীত সম্মেলনে আমাদের অর্জন অনেক। আমরা জেনেছি, 888sport appsে সুষ্ঠু সংস্কৃতির অনুরাগীর 888sport free bet কম নয়, শুদ্ধ সংগীতের রসগ্রহিতাও অনেক। নানা বিপর্যয়ের মধ্যেও 888sport appsের মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। চার রাতের সুরের অবগাহনে সবাই যেন আরো শুদ্ধ হয়ে উঠেছে।