মোস্তফা সুলতানপুরীর মনের কথা সবাই বুঝতে পারে। ঘটনাটা উল্টোও হতে পারতো। এমন হতে পারতো যে, সুলতানপুরী সকলের মনের কথা বুঝতে পারে এবং সে-সুবাদে সে-দেশের একজন নামজাদা আলেম পির হিসেবে পরিচিত হয়েছে। সুলতানপুরীর বাপের স্বপ্ন তাই ছিল। না হলে সরকারি ব্যাংকের ছাপোষা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যার নাম মোফাজ্জল রহমান, সে কেন তার ছেলের নাম রাখতে যাবে মোস্তফা সুলতানপুরী। কারণ সে স্বপ্ন দেখেছিল, তার ছেলে একদিন এ-দেশের, এ-অঞ্চলের নামকরা পির হবে। তার মজলিশে বয়ান হবে। দেশ-বিদেশের লোক তার ঐশ^রিক জ্ঞানের কাছে আশ্রয় চাইবে। তার ছেলে সকলের মনের কথা বুঝবে, সকলের দুর্দশা ঘুচাবে। ঠিক তার পিরসাহেব বদর সুলতানপুরীর মতো। মিরপুরের কাজীপাড়ার দ্বিতীয় গলিতে প্রতি বৃহস্পতিবার যখন অফিস শেষে মোফাজ্জল যায়, তার মনপ্রাণ ঠান্ডা হয়ে যায়। যেন বরফকুচি জল কেউ ঢেলে দিচ্ছে পুরো শরীরে, আত্মাও ঠান্ডা হয়ে যায়। এতই শান্তির জায়গা পিরজির এই দরগা। অমন বরফের মতো গলে জল হতে হতে প্রতিবার মোফাজ্জল রহমানের মনে হয়, আমার একটা ছেলে হলে তাকেও পির হিসেবে তৈরি করতে হবে। মানুষের খেদমত করবে। ক্ষমতা থাকবে, মানুষের মমতা পাবে। আর কী লাগে? কোন এক দূর অতীতে দিল্লির সুলতানপুর থেকে আগত পিরজির পরিবার। সে পুরানো কাহিনি। বদর সুলতানপুরের দাদাজানের আব্বা, তাঁর নিজের নামের সঙ্গে সুলতানপুরী জুড়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে চলছে। মোফাজ্জলের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল, তার যখন পুত্রসন্তান হলো, এক মাসের বাচ্চাকে নিয়ে পিরজির কাছে গিয়েছিল সে। মোফাজ্জল পিরজিকে বলেছিল, ‘আব্বা, আমার ছেলের মাথায় হাত বুলায় দেন। সেও যেন পুণ্য আত্মা হয়।’মনের ইচ্ছার কথা আমতা আমতা করে বলেছিলো। বলেছিলো, ‘আব্বা আপনি তালিম দেন। আপনার কাছে রেখে যাই ছেলেরে।’
পিরজির কোনো পুত্রসন্তান নেই। মোফাজ্জলের ইচ্ছা ছিল, তার পুত্রকে যদি পিরজি মানুষ করে, তো আর কী লাগে?
বদর সুলতানপুরী পিরসাহেব ছেলের মাথায় হাত রেখে দোয়া করেছিলেন আর বলেছিলেন, ‘তোর ছেলে, তুই ভালো করে মানুষ কর। আমার দোয়া থাকলো। শোন আমার নামে নাম রাখলে রাখবি। কিন্তু মানুষ নামে না কর্মে পির হয়, বুঝলি।’
মোফাজ্জল রহমান বোধহয় ভালো করে বোঝেনি। অতো কঠিন কথা কি বোঝা যায়। সে ছেলের নাম রেখেছিল মোস্তফা সুলতানপুরী। মহাপুরুষ, আওলিয়াদের জীবনকাহিনি পড়ে শোনাতো ছেলেকে ছোট থেকেই। কিন্তু মোফাজ্জল বোঝেনি এই নামধাম দিয়ে কিছু হবে না। হুজুর ঠিকই বলেছিলেন। কিছু মানুষ জন্মায় তার কর্মকে কাঁধে নিয়ে। সেটাকে ঠেকানো যায় না। এই যেমন তার ছেলে মোস্তফা সুলতানপুরী ছোট থেকে বড় হতে হতে এক হাড়বজ্জাত মানুষ হয়ে উঠছিল। পরীক্ষায় নকল, রিপোর্ট কার্ডে বাপের সই নকল করার মতো জালিয়াতি, কী করেনি সে। জুমাবারে একদিন পাড়ার মুরুব্বি আলী আহমেদ সাহেব সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। দোতলার বারান্দা থেকে ১৪ বছরের কিশোর সুলতানপুরী লাইফবয় লিকুইড সাবানের প্যাকেটে পানি ভরে ছুড়ে মেরেছিলো আলী আহমেদ সাহেবের মাথায়। খালি প্যাকেটের গায়ে লেগে থাকা আঠালো লিকুইড সাবান-মেশানো থকথকে পানি, আহমেদ সাহেবের শরীরে মাখামাখি, বুদ্বুুদের হালকা বেলুন ভাসছিল হাওয়ায়। তাই দেখে টিভির লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপনের নায়িকাদের কথা মনে করে হেসে কুটিকুটি সুলতানপুরী।
বিব্রত-বিধস্ত আহমেদ সাহেব যখন নালিশ করলেন, মোফাজ্জল তার ছেলেকে মেরে প্রায় আস্ত রাখেনি।
‘হারামজাদা কুত্তার বাচ্চা, তোর জুমার সময় মসজিদে থাকার কথা। তুই না আমারে বললি মসজিদে আসতেছস। না আইসা বজ্জাতি করতেছোস।’
বলেছে কম, হাত চলেছে বেশি। চুল টেনে এক গোছা ছিঁড়েও ফেলেছে একমাত্র ছেলের। চোখের কোনায় হালকা ঘুষি মেরে কালশিটে ফেলে দিয়েছে। আর পিঠে-পেটে মার তো চলেছেই।
কথা কম বলেছে, তবে যা বলেছে সবই খুব ধারালো, বিরাট রুই-কাতলের মাথা এক পোচে ফাঁক করে ফেলার ছুরির মতো ধারালো। বউকে বললো, ‘তুমি নিশ্চিত এই পোলা আমার? এই কুজাত তো আমার হওয়ার কথা নয়। নাকি তুমি অন্য কোথাও …’ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল পরিস্থিতি। মোফাজ্জলের বউ, সুলতানপুরীর মা, হামিদা বেগমও কম যায় না।
মুখে-চোখে বিদ্যুৎ খেলা করে তার। লোহায় গড়া। ওইদিন বাড়ি ছেড়েছিল ছেলের হাত ধরে। যাওয়ার আগে বলেছিল, ‘খাইচ্চর শুয়োরের বাচ্চা, পোলা তোর রক্ত পাইছে। তোর মতো বদমায়েশ। তাও বুঝোছ না যে তোর পোলা। পোলারে নিয়ে যাচ্ছি। নাইলে পুরা তোর মতো বেজন্মা হবে।’
যাওয়ার আগে এও বলে গিয়েছিল যে, ছেলের এই কালশিটে মুখ পুলিশকে দেখাবে। থানায় যাবে। মামলা করবে, এমন নির্যাতনকারী বাপ আর স্বামীর বিরুদ্ধে।
এরপর আট মাস, পাক্কা আট মাস পর বাড়ি ফিরেছিল হামিদা বেগম ছেলে সুলতানপুরীকে সঙ্গে নিয়ে। তার জন্য মোফাজ্জলকে যে-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, তার এক জন্মের শিক্ষা হয়ে গেছে। হামিদা বেগম কেস করেনি ঠিকই; কিন্তু দিনের পর দিন হামিদা বেগমের বাপ-মায়ের বাড়ি গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মোফাজ্জলকে। এরপর শ^শুরবাড়ির একে-তাকে ধরে যখন দেখা করলো, পায়ে পড়লো স্ত্রীর। ‘আমারে মাফ কইরে দাও। মাথা গরম হইছিলো। অন্যায় করসি গো।’
হামিদা বেগমের শর্ত ছিল তার বাড়ির সকলের সামনে মাফ চাইতে হবে। শুধু তার কাছে না, ছেলের কাছেও। কোনো বাপ এমন করে ছেলেকে পিটায়? মোফাজ্জল দুর্বল হৃদয়ের মানুষ। এতিম। সংসারে আছে শুধু বউ আর ছেলে। আর মাথার ওপর ভরসা তার পির ওমর সুলতানপুরী। এদের বাদ দিয়ে বদর ভাবতে পারে না। হামিদা বেগমের কথামতোই সে মাফ চেয়েছিল।
পিরজিও বলেছিলেন, ‘স্বামী হলো সংসারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। বিনা প্রমাণে এমন কটু কথা স্ত্রীকে বলা গুনাহ।’
হামিদা বেগম আর সুলতানপুরী ফিরে আসার পর কিঞ্চিৎ বদলে গিয়েছিল মোফাজ্জল। আর এমন গভীরে বদলেছিল যে, সেটা বাইরে থেকে কেউ বোঝেনি। বোঝার মতো কেউ ছিলও না। সে বুঝেছিল তার স্বপ্ন শেষ। তার এই ছেলে গড়েপিটে বড়জোর এক মাঝারি অফিসের ছোট কর্মচারী হবে, তার মতো। দিনরাত সবার বকা-লাথি-গুঁতা খাওয়া মানুষ হবে; কিন্তু পির হওয়ার মতো যোগ্যতা, মেধা আর সৎবুদ্ধি এই ছেলের নেই। ছেলেকে তাই আর আলগা শাসন করা ছেড়েই দিলো। আর কয়েক বছর বেঁচে ছিল মোফাজ্জল। এরপর হার্ট অ্যাটাকে মরে গিয়েছিল। হামিদা বেগম শক্ত মানুষ। স্বামীর অফিস থেকে পাওয়া খুচরো টাকা, জমানো কিছু টাকা, আর দেশের এক টুকরো জমি বিক্রি করে শহরেই থেকে গেল। কাপড়ের দোকান দিলো। নকশিকাঁথার শাড়ি, গায়ের কাঁথা, নানারকম জিনিস তৈরি করায় কর্মচারীদের দিয়ে। ডিজাইন, সেলাই সব নিজেই তদারকি করে। তারপর বিক্রি করে বড় বড় দোকানে। এখন তো বিদেশেও সাপ্লাই দেয়। মাঝে মাঝে খারাপ লাগে, স্বামী বেঁচে থাকতে এই ব্যবসাটা যদি ধরত, টাকা-পয়সার টানাটানি হতো না। নিজের ব্যবসা আর ছেলে সুলতানপুরীকে নিয়ে সে এতই ব্যস্ত হয়ে গেল যে, স্বামীর মৃত্যুর পর তার পিরজিকেও জীবন থেকে বাদ দিলো, কিংবা তার কথা মনেও ছিল না আর।
বাপ মরে যাওয়ার পর সুলতানপুরীর বজ্জাতি তেমন আর দেখা যায়নি। কিংবা সুলতানপুরী হয়তো আগের মতোই ছিল। বাপের চোখেই সব বজ্জাতি মনে হতো। হামিদা বেগম ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে জানে, লুতুপুতু করে মানুষ করলে, ছেলে তার স্বামীর মতো আকাম্মা হবে। যে নিজে কিছু না করে, পিরের ওপর ভূত-ভবিষ্যৎ চাপিয়ে দেবে। ছেলেকে ভুল করতে দিতে হবে। ভুল করতে করতে সে শিখবে। শুধু একবার যখন কলেজ যাওয়ার পথে শেফালির ওড়না ধরে টেনে তার কানে ফুঁ দিয়ে বলেছিল, ‘হাই সেক্সি’, তখন উত্তম-মধ্যম পিটিয়ে আস্ত রাখেনি ছেলেকে। শেফালির মা যখন এসে নালিশ করেছিল, সে বলেছিল, ‘দাঁড়ান ছেমড়া বাড়ি আসুক দেখতেছি। আপনাকেও বলি ভাবি, মেয়েরে এমন সাইজের ওড়না দিয়ে কলেজ পাঠায়েন না। ছেলেপেলেরা খুব বদ।’
সে জানে, তার ছেলেরই দোষ। শরীর পাকছে সদ্য, এসব কুকাম কিছুটা করবে। স্বাভাবিক। কিন্তু ঠিকমতো শাসন করলে বয়স হতে হতে ছেলে লাইনে আসবে। খুন্তি দিয়ে বেদম পিটিয়েছিল সেদিন ছেলেকে। এরপর অবশ্য ছেলে এমন আকাম করেনি মেয়েদের সঙ্গে। করলেও তার কানে আসেনি। সুলতানপুরী কলেজ পাশ করতে করতে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। নতুন শখ হয়েছিল 888sport app download apk লেখা। 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হলো সমাজ888sport apkে। 888sport app download apk তখন নেশা। লিটল ম্যাগে 888sport app download apk ছাপা হয়। একবার কোনো বড় ভাইয়ের কল্যাণে ‘সূর্যের আলো’তে একটা 888sport app download apk ছাপা হলো। হামিদা বেগম কখনো বাধা দেয়নি। তার ব্যবসা তখন জমজমাট। কুমিল্লায় একতলা বাড়ি তুলেছে বাপের জমিতে। শেষ বয়সে থাকার আশ্রয় হলো। ছেলের একটা চাকরি আর ভালো বিয়ে হলেই হয়। শখ করে 888sport app download apk লিখতে চায়, লিখুক। সুলতানপুরীর যদি সামর্থ্য থাকতো তো চাকরি-বাকরি না করে 888sport app download apkই লিখতো শুধু। তাদের কোনো অভাব নেই। মায়ের ব্যবসা ভালো চলে। হাত ভরে খরচও করতে পারে, বিড়ি-সিগারেট, মেয়ে বান্ধবী পটানো, আর 888sport app download apk লেখা। কিন্তু সে তো এখন ছাত্র। পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর কাজ না করলে আম্মা আর টাকা দেবে না। কঠিন মানুষ সে। অগত্যা পাশ করার পর খুচরো কিছু প্রুফ দেখা আর রিসার্চের কাজ করতে করতে এক নামকরা এনজিওতে ঢুকে পড়লো। 888sport app download apk লেখার কারণে তার লোকজনের সঙ্গে খাতির অনেক বেড়েছে। সে শান্ত মানুষ হলেও ঠিক জায়গায় তেল কিংবা ঘি ঢালার কায়দাটা ঠিক রপ্ত করেছে। আব্বার পিরভক্তি ছোটবেলায় দেখেছে। আব্বার ভক্তির মাঝে নিখাদ বিশ^াস ছিল; কিন্তু সে যখন কারো প্রশংসা করে, তাতে বিশ^াস নেই। তবে কেমন করে প্রশংসা করতে হয়, সে-কলাটা সে বাপের কাছ থেকেই শিখেছে। কাজেও দেয়। নইলে এতো বড় এনজিওতে এই সাধারণ রেজাল্ট নিয়ে কি কাজ পাওয়া সম্ভব! কবি অনিন্দ্য জহিরভাইয়ের কল্যাণে কাজ পেয়েছে। দিন-রাতে অনিন্দ্যভাইয়ের আশপাশ ঘোরা, অখাদ্য 888sport app download apk সম্মেলনে যাওয়া, কী না করেছে। অনিন্দ্য জহিরভাইয়ের নিজের ব্যবসা, চিংড়ি-কাঁকড়া এসব এক্সপোর্ট করে। শখের কবি। নামকরা কবিই। টাকার অভাব নেই। তারপরও প্রতিবার তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট কিনে নিয়ে গেছে। কয়েক মাস পিছে পিছে ঘোরার পর কাজ জুটিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্যদা। এত বড় একটা এনজিও, 888sport promo codeর অধিকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর পায়খানা নির্মাণ, সবকিছুতে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য। ফান্ডের অভাব নেই। চাকরি যাওয়ারও খুব একটা আশঙ্কা নেই। ফিল্ডে যেতে হয় প্রায়ই। ফিল্ড সে দারুণ পছন্দ করে, প্রকৃতিতে 888sport app download apk খোলে। কাজের ফাঁকে, আর লম্বা ঘ্যানঘ্যানে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেইনিংয়ের ফাঁকে 888sport app download apk লেখে খাতা ভরে। আর গ্রামদেশে পেটপুরে খাঁটি খাওয়া-দাওয়া, পুকুরের মাছ, ঘরে পালা হাঁস-মুরগি। এ গ্রামের অনেক উন্নতি হবে, কোনো অভাব থাকবে না, এমন কত স্বপ্নে বিভোর থাকা গ্রামের লোকেরা, তাদের সবটুকু দিয়ে আপ্যায়ন করে। যত স্বপ্ন এনজিও দেখায়, তার সব কি আর পূরণ করতে পারে? ওই যতটুকু পারে তাও কম নয়। তার বিনিময়ে রাজার মতো সম্মান পায়। জোর করে তাই প্রতি মাসে ফিল্ড রাখে সুলতানপুরী। শহর আর ভাল্লাগে না।
তবু শহরে তো ফিরতে হয়। তার 888sport app download apkর প্রচার-প্রসার হচ্ছে বেশ। অফিসের পর প্রতিদিনই সভা-সমিতি, 888sport app download apkর আসর থাকে। বই প্রকাশের কাজ থাকে। আর বিয়েও তো করেছে তিন বছর হলো। ভার্সিটিতে যাদের সঙ্গে ঘুরেছে, তাদের সঙ্গে প্রেম শরীর মন সব দেওয়া-নেওয়া হলেও বিয়েটা হলো না। পরে খুব আজবভাবে বিয়ে হলো। চার বছর আগে বইমেলায় অনিন্দ্য জহিরভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল, লেখকমঞ্চের পাশে। সেদিন লেখকমঞ্চে অতিথি ছিলেন অনিন্দ্য জহিরভাই। বরিশাইল্যা উচ্চারণে কী যে বললেন কিছুই বোঝা যায়নি। সুলতানপুরী মনে মনে বলছিল, ‘হালার পুত ছাগল কোথাকার, বরিশাইল্যা ভাষাটা যদি ঠিকমতো কইতে পারতি তাও হতো, সেটাও ঠিকমতো কইতে পারোছ না। পরে বলছে তেমন খারাপ না।
আর সামনে দাঁড়িয়ে বলছিল, ‘খুব ভয় হতো অনিন্দ্যদা জানেন, মনে হতো রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লার পর আর কাকে পাবো আমরা? ভাগ্যিস আপনি এলেন। আপনার 888sport app download apkয় রুদ্রের আভা।’
এইসব খিচুড়ি মার্কা মেলানো-মেশানো মিথ্যা কথা যখন বলছিল, আর সিগারেট ফুঁকছিল, তখন তার বর্তমান বউ সামিহা পারভীনের সঙ্গে দেখা। সামিহা এসেছিল অনিন্দ্যদার বই হাতে।
রিনরিনে সুরে বলেছিল, ‘অনিন্দ্যদা একটা অটোগ্রাফ দেবেন?’
অনিন্দ্যদা তার শিঙাড়ার মতো তিন কোনা নাক ফুলিয়ে খ্যা খ্যা করে হাসছিল, ‘আররে আমার বই কেন? অহেতুক টাকা নষ্ট।’
সামিহার হাত থেকে বই প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছিল, ‘কী নাম লিখবো?’
শালা শুয়োর। মেয়েরা অটোগ্রাফ চাইলেই ব্যাটা এমন নাক ফুলিয়ে আর হায়েনার মতো হেসে হেসে বলে, সবসময়, ‘আমার বই কেন?’
ভাগ্যিস তখনো সুলতানপুরীর মনের কথা কেউ বুঝতো না। তাই প্লাস্টিক একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে কাণ্ড দেখছিল, আর সামিহাকেও। যে কেউ দেখে ভাববে সুলতানপুরীর পুরো জীবন অনিন্দ্যদার লক্ষ্যে।
এই অটোগ্রাফ ছবি তোলার ফাঁকে অনিন্দ্যদা জেনে নিয়েছিল সামিহা কাঁঠালবাগান থাকে, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। যেসব মেয়েকে পছন্দ হয় তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেয় লোকটা। তারপর সুলতানপুরীকেই সব ইনফরমেশন জোগাড় করতে হয়। মেয়ের ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি খুঁজে বের করতে হয়। তারপর কখনো ফেসবুক মেসেজে কিংবা ফোন করে অনিন্দ্য সেই মেয়েদের সঙ্গে খাতির জমায়। ‘আমি জানি না আমি কেন এই পাগলামি করছি এই বয়সে। কত কষ্ট করে ফোন নম্বর খুঁজে যে বের করলাম। মনে হচ্ছিল, তোমাকেই খুঁজছিলাম এতদিন। তোমাকে ছাড়া আমার 888sport app download apk আর হবে না। নইলে কত মেয়ে আমার পিছে ঘোরে, কোনোদিন কারো সঙ্গে কথা বলি না। বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না বুঝলা।’
সব মেয়েকে এই একই কথা বলে, গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে। সুলতানপুরী নিজের কানেই কতবার শুনেছে। মেয়েগুলোকে নিয়ে নিম্নমানের কিছু 888sport app download apk লেখে, এই, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে।’ ধরনের এলেবেলে ছড়া। তাতেই মেয়েগুলো গলে যায়। এই বিয়াওয়ালা, ভুঁড়িওয়ালা, তিন বাচ্চার বাপ, পঞ্চাশোর্ধ্ব, প্রায় টেকো লোকটার মধ্যে মেয়েরা কী পায় কে জানে? সবাই যে তার কথায় গলে, তা নয়। এই যেমন সামিহা। গলেনি। সুলতানপুরী কয়েকদিন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সামনে ঘুরে অবশেষে একদিন সামিহার দেখা পেয়েছে। ভাব করেছে হঠাৎ দেখা। তারপর হঠাৎ কী মনে হলো ভাব ধরে বললো, ‘আচ্ছা ভালো কথা, অনিন্দ্যদা বেশ কয়েকবার আপনার কথা বলেছে। আপনার সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ। আপনার 888sport app download apk-রুচির খুব প্রশংসা করেছে।’
ফাঁকতালে দুইজন তখন ফোন নম্বরও চালাচালি করে নিলো। সেদিন রাতে সামিহাই ফোন করলো, ‘ভাই শোনেন, আপনি আমার ফোন নম্বর অনিন্দ্যদাকে দিয়েন না প্লিজ।’
‘হায় হায়, ক্যান?’
‘আমি খোঁজ নিয়েছি আসলে, উনার তো খুবই বদনাম, লুইচ্চা। অনেক মেয়ের সঙ্গে ফ্লার্ট করে, প্রেম করে। তারপর ছেড়ে দেয় কয়দিন পর। উনার 888sport app download apk ভালো লাগে, আলাদা কথা, প্লিজ ফোন নম্বর দেবেন না।’
ফোন নম্বর দেয়নি সুলতানপুরী। বরং মেয়েটার প্রতি 888sport apk download apk latest version জন্মেছে। কী দারুণ ব্যক্তিত্ব। তারপর যা হয় আর কী, ও ফোন করে, সেও ফোন করে। কথা বলতে বলতে দেখা করতে করতে প্রেম। অনিন্দ্যদা অনেকদিন ধরে ফোন নম্বর চেয়ে ঘ্যানঘ্যান করার পর স্বীকার করতে হলো ব্যাপারটা। ‘তোর সঙ্গে ওই মেয়ের চলতাসে?’
‘হু।’
‘কতদূর?’
‘বহুদূর ভাই।’
‘শুইছস?’
‘ভাই বিয়া করতেসি।’
অনিন্দ্যদা তব্দা খেয়ে ছিল কয়দিন। উনাকে ঠিক ক্ষ্যাপানো যাবে না। উনি ক্ষেপলে এই কবিসমাজে টেকা মুশকিল হয়ে যাবে সুলতানপুরীর। পরে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে, নতুন মেয়েদের ফোন নম্বর জোগাড় করে দিয়ে মন পাওয়া গেছে আবার অনিন্দ্যদার। আর পুরো সময় অকথ্য-অসভ্য যা যা গালি আছে, মনে মনে দিয়েছে বেটাকে। ভাগ্যিস, তখনো তার মনের কথা অন্যরা কেউ বুঝতো না।
ঘটনা তো ঘটলো এই কয়েক মাস আগে। অনিন্দ্যদার ছায়ায় থাকতে হয়েছে এতদিন টিকে থাকার জন্য। তবে সুলতানপুরী বুঝে গেছে যে, তার আসলে অনিন্দ্য জহিরকে তেমন প্রয়োজন নেই আর। তার 888sport app download apk সমাদৃত হচ্ছে বেশ। কলকাতার এক ভালো প্রকাশক বই ছাপার আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলা একাডেমির এক 888sport app download apk latest version 888sport app download apk সংকলনে তার একটা 888sport app download apk ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version হয়েছে। দুজন প্রকাশক রাজি সামনের বইমেলায় তার বই ছাপানোর জন্য। বেশিরভাগ তথ্যই সে অনিন্দ্যদাকে দেয় না। আস্তে আস্তে সরে আসতে হবে এই ছায়া থাকে। এমন ভাবে অনেক সময় ধরে, বছর ধরে, যে কেউ যাতে বুঝতে না পারে। অনিন্দ্যদাও না। কাউকে শত্রু বানানো যাবে না। কে কখন কাজে আসে? যদি কাল চাকরি চলে যায়, এই অনিন্দ্যদাকেই হয়তো লাগবে, আরেকটা চাকরি জোগাড় করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই তেল মাখামাখি করাটা কমাতে হবে। সুলতানপুরী নিজেও কবি হিসেবে খারাপ নয়। বরং সে বিশ^াস করে, সে অনিন্দ্যদার চেয়ে ভালো লেখে।
এই যেমন সেই দিনটিতে সে গিয়েছিল এক 888sport live football সংবর্ধনা গ্রহণ করতে। বেশ ভালো একটা সংবর্ধনা, ২৫ হাজার টাকা 888sport app download bd দেবে, ক্রেস্ট, মানপত্র। বেশ নামিদামি লোক আসে অনুষ্ঠানে। তার হাতে 888sport app download bd তুলে দিলেন আতিয়া পারভীন। আতিয়া আপা এক নামকরা পত্রিকার সম্পাদক, দারুণ 888sport app download apk লেখেন। বয়স পঞ্চাশ প্রায়। খুব মার্জিত। সুলতানপুরী খুব সম্মান করে ভদ্রমহিলাকে, তাঁর গুণের কারণেই। কিন্তু একটা জিনিস ভারি অস্বস্তি দেয় মনে মনে। সেদিন 888sport app download bd নিতে মঞ্চে উঠলো, আতিয়া আপা যখন ক্রেস্ট দিচ্ছেন হাতে, তখন সুলতানপুরীর পুরনো সেই অস্বস্তি পিনপিন করে বুকে ফুটলো, মনে মনে বললো, ‘পুরো গণ্ডার একটা। কী নোংরা নখ, ছি।’ একদম মনে মনে বললো। তারপর হাসিমুখে একটা আবেগময় ভাষণ দিয়ে, মাঝারি মাপের হাসি ঝুলিয়ে মঞ্চ থেকে নামলো। পুরো অনুষ্ঠানে আতিয়া আপা কেন যেন আর সুলতানপুরীর সঙ্গে কথাই বললেন না। সুলতানপুরী সেদিন খুশিতে আর আবেগে ভাসছিল। তারপর অনুষ্ঠান শেষে অনিন্দ্যদা আর তার চেলা-চামুণ্ডাদের বারে নিয়ে গিয়ে মদ খাওয়াতে হলো। অনুষ্ঠানের দুদিন পর যখন সুলতানপুরী এক কাজে আতিয়া আপাকে ফোন দিলো, আপা ধরলেন না। কত মেসেজ দিলো রিপ্লাই দিলেন না। আপা তো এমন করেন না সাধারণত। এরপর একদিন আপার পত্রিকা অফিসে চলে গেল। কথাই বলতে চাচ্ছেন না আপা।
অনেকক্ষণ চেষ্টা করে সুলতানপুরী জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু কি হয়েছে আপা? আপনি আজকাল আমার সঙ্গে কথাই বলতে চাচ্ছেন না। সেদিন অনুষ্ঠান শেষেও …’
আপা চুপ।
‘আপা আপনি আমারে এতো স্নেহ করেন। কোনো ভুল কি করে ফেলছি? তাইলে বলেন, আমি মাফ চাই। তবু চুপ করে থাইকেন না আপা, প্লিজ।’
‘তুমি জানো না, তুমি কি করছো?’
‘আপা জানলে তো আমি মাফ চাইতাম। আপনার পিছ পিছ ঘুরতেছি। জানার জন্যই তো। বলে ফেলেন আপা।’
‘তুমি সেদিন মঞ্চে আমারে গণ্ডার বলছো। আই কান্ট বিলিভ ইট। গণ্ডার! কত সাহস তোমার?’
সুলতানপুরী ঢোক গেলে। সে গণ্ডার বলেছে, এ-পৃথিবীতে এটা কারো জানার কথা নয়। কারো না। সে মনে মনে বলছে। বলেছে, তার কারণ আছে। এতো সুন্দর এক মানুষ আতিয়া আপা, কিন্তু বিশাল বিশাল তাঁর হাত-পায়ের নখ। হলুদ হলুদ। মনে হয় এখনই আঁচড়ে শিকার ধরবে। গা শিরশির করে। সেই নখ দেখে সুলতানপুরীর খালি মনে হয় গণ্ডারের কথা। যদিও সে গণ্ডারের নখ কখনো দেখিনি। গুগল করে দেখা যায়; কিন্তু দেখেনি। ইন্টারনেটে কি আর দেখার জিনিসের অভাব!
সুলতানপুরী বলে, ‘আপা আমি কাকে বলছি এ-কথা যে আপনি গণ্ডার, এতো খারাপ কথা আমি ক্যান বলবো? ছি।’
‘এই ছেলে, সেইদিনের ছেলে, আমারে ভেলকি দেখাও। কাউকে বলা লাগবে কেন? তুমিই তো সেদিন স্টেজে অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার সময় ফিসফিস করে বললা গণ্ডার একটা। বলো নাই?’
সুলতান মনে মনে বলে, ‘গণ্ডারই তো, উফফ হলুদ হলুদ নোংরা নখ।’
‘সুলতান, কী বললা তুমি? এই এক্ষনি তো বললা! আমার নখ হলুদ নোংরা?’
ও মাই গড। এ-কথাও তো আমি মনে মনে বলছি। সুলতানপুরী ভাবে। দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। সুলতানপুরীর তার আব্বার পিরজানের কথা মনে হয়। যিনি নাকি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারতেন, আব্বা বলছেন। আতিয়া আপাও তো দেখি সেই রকম, আধ্যাত্মিক। সুলতানপুরী চিন্তা করে, কেমন করে সম্ভব? উনি সব বুঝলেন। আগে বোঝেননি? আহা রে, যতবার আপার সঙ্গে দেখা হয়েছে, উনার নখের দিকে চোখ পড়লে উনাকে মনে মনে গণ্ডার বলেছি। নাকি আগে বুঝলেও বলেননি। জানি না, কিন্তু আপার সামনে যাওয়ার সাহস নেই। ভয় লাগছে সুলতানপুরীর।
কাউকে বলে না কথাটা প্রথমে। প্রথমদিন ভাবে, আতিয়া আপার ঐশ^রিক ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। যদিও সুলতানপুরী যে খুব বিশ^াসী মানুষ তা নয়। বরং ছোটখাটো পাপকাজ হরহামেশাই করে। কিন্তু তার হালকা বিশ^াস জন্মাচ্ছে যে, আতিয়া আপা বিশেষ ক্ষমতার মানুষ হয়ে উঠছেন। পরের কয়দিন মনে হলো, এটা নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা। এমনও হতে পারে যে, অনেকেই এর আগে আপার নখের দিকে তাকিয়ে তাঁকে গণ্ডার বলেছে। সে প্রথম নয়। এজন্য সুলতানপুরী যখন নখের দিকে তাকিয়ে ছিল মঞ্চে, আপা নিশ্চিত ছিলেন সুলতানপুরী আপাকে মনে মনে গণ্ডার বলছে। তবে সে নিশ্চিত আতিয়া আপা কাউকে কথাটা বলেননি। উনার ব্যক্তিত্ব প্রখর, ‘জানো সুলতানপুরী বলেছে যে আমার নখ গণ্ডারের মতো, এ-কথাটা উনি বলবেন না। বলার কথা নয়।
এই ভুংচুং ধারণা দিয়ে নিজেকে সামলে নিচ্ছিলো সুলতানপুরী। কিন্তু এর মধ্যে পরপর এত ঘটনা ঘটে গেল যে, তার জীবন নিয়ে সকল ধারণা উল্টেপাল্টে গেল। আতিয়া আপার ঘটনার তিনদিন পর, অফিসের বস রহমত নেওয়াজভাইয়ের একদম পাশে বসে একটা ডকুমেন্ট রিভিউ করছিল। দুজন মিলেই। একটা প্রজেক্টের কনসেপ্ট নোট আর বাজেট।
রহমতভাই বললেন, ‘সুলতান স্যালারিতে এতো টাকা রেখেছো ক্যানো? এক প্রজেক্ট থেকে এতো টাকা স্যালারিতে দেওয়া যাবে নাকি? আরো প্রজেক্ট আনো, তারপর স্যালারি বাড়ানোর চিন্তা। প্রকিউরমেন্টে বরং অ্যাড করো টাকাটা।’
মেজাজ এমন খারাপ হলো সুলতানপুরীর। বাইরে থেকে অবশ্য বোঝা যাবে না। বহুদিনের প্র্যাকটিস। মুখ তেলতেল হাসিতে ভরিয়ে বাজেট কাটছাঁট করলো। আর মনে মনে বললো, ‘শালা খাচ্চর।’
রহমতভাই কটমট করে সুলতানপুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। ‘কাকে খাচ্চর বললা তুমি, আমাকে?’
‘আমি?’ সুলতানপুরী আরেকটু হলে ফিট হয়ে যাবে।
‘এই যে ফিসফিস করে বললা?’
সুলতানপুরীর উপস্থিতবুদ্ধি ভালো। সে এক ঝটকায় বলে ফেললো, ‘ও ভাই আপনাকে বলছি নাকি, ডোনারকে বলতেসি। কী পরিমাণ বাজেট কাট করছে দেখছেন? অথচ ডেলিভারেবল ডাবল করে দিছে।’
বলেই দৌড়ে বের হয়ে এলো ওই ঘর থেকে। বসকে বুঝতে দিলো না। বলল, বাথরুমে যাবে। নিশ^াস আটকে যাচ্ছে। একই ঘটনা। আতিয়া আপাও তো একই কথা বলেছিলেন যে, সুলতানপুরী নাকি ফিসফিস করে কথাগুলো বলে। সে বলে মনে মনে। সে-কথা ফিসফিস করে শোনা যায়? কী আজব!
চলতেই থাকলো। এরপর ঘটলো আম্মার সঙ্গে। সুলতানপুরীর আম্মা এখন কুমিল্লায় থাকে। তার ব্যবসা এখন নিজ গতিতে চলে। সে কুমিল্লায় তার নিজের বাড়িতে থাকে। চারপাশে ভাইবোনের পরিবার থাকে। ফোনে প্রতিদিন তদারকি করে ব্যবসা। ম্যানেজার রাখা হয়েছে। আর দুই মাসে একবার 888sport appয় আসে। পুত্রবধূ সামিহার সঙ্গে তার খুব একটা বনে না। দুইজনেরই অধিকারবোধ প্রবল। কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। আর তার মাঝে আটকে হাঁসফাঁস করে সুলতানপুরী। তবে এ-কথা সত্যি যে, আর দশটা শাশুড়ি-বউয়ের মতো তারা ঝগড়া করে না। বিয়ের কয়েক মাস পর হামিদা বেগম নিজেই কুমিল্লা গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। সারা জীবন নিজের নিয়মে চলা মানুষ, নিজের নিয়মেই বাকি জীবন থাকতে চায়। সুলতানপুরী বাধা দেয়নি। বরং সময় পেলেই প্রায় প্রতি মাসে এক-দুদিনের জন্য মাকে গিয়ে দেখে আসে। অফিসের এই ঘটনার পর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিল। শুক্রবারে মায়ের কাছে গেল। হামিদা বেগম ছেলেকে পেয়ে পুটপুট করে দিনদুনিয়ার গল্প শুরু করল। গল্প না বলে অভিযোগ বলা ভালো। ভাই, বোন, দোকানের কর্মচারী সবার নামে অভিযোগ। আম্মার বয়স হচ্ছে। দুনিয়ার কিছুই আর তার ভাল্লাগে না বলে মনে হয়। মনে মনে ভাবে, ‘ভাগ্যিস আমার সঙ্গে আম্মা থাকে না। আম্মা থাকলে সামিহার সঙ্গে আমার সংসার টিকত না। দিন দিন আরো খাইষ্টা হচ্ছে বুড়ি …’
ক্যান যে মনে মনে বললো, মনে মনে যে সে ক্যান এখনো ভাবে, ধুর, নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে। আম্মা সব বুঝছে, যেমন করে বুঝেছেন আতিয়া আপা, যেমন করে বুঝেছে অফিসের বস রহমতভাই, উফফ। ‘বেজন্মা পোলা, বাপের মতো হইসস, ফিসফিস করে আমারে গালি দিচ্ছস? সারাজীবন আমার রক্ত পানি করা টাকা খাইলি, আর এখন বউ বউ করোছ। তোর বউ তো একটা হারামজাদি, আমার ছেলেরে নষ্ট করসে …’
আর পারা যাচ্ছে না। ওইদিন বিকেলে কাজ আছে বলে 888sport appয় ফিরে এলো সুলতানপুরী। শরীর খারাপ বলে অফিস থেকে ছুটি নিল। শেষ কবে টানা ২৪ ঘণ্টা বাসায় ছিল সুলতানপুরী মনে করতে পারে না। টানা দুদিন বাসায় শুয়েই কাটালো। বউয়ের ধারেকাছেও যাচ্ছে না, নানা কায়দা করে। কখন কী বলে ফেলে মনে মনে। গেস্টরুমেই দুদিন শুয়ে ছিল। সামিহা বিকেলে এসে খোঁজ নিল, ‘কী হইছে তোমার?’ সুলতানপুরীর কপালে হাত রাখলো, ঠোঁট রাখলো। এইসব ছলাকলা আবার সে খুবই ভালো পারে। এরপর যা হওয়ার হলো। সামিহার গলায় মুখ ঘষতে ঘষতে মনে হলো, নাহ্ জীবনটা আরামের। একটু ঘরমুখী হতে হবে এখন। এই বাইরের বাটপারদের সঙ্গে কম মিশতে হবে। মন নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সামিহার কাছে থাকলেই মন শান্ত হয়ে যায় বরফের মতো। আদর করতে করতে হাতটা সামিহার পেটের কাছে নিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল সুলতানপুরীর। ভাবলো, ‘এমন থলথলা পেট হইসে মহিলার। কামকাজ না করে সারাদিন বাসায় বসে খেলে এমনই হয়। কী ছিল আর কী হইসে।’ মুখে বুঝতে দিলো না যদিও। প্রেমিক প্রেমিক হাসিটা ঝুলিয়ে আদর করতেই চেয়েছিল, কিন্তু হলো না। তুলকালাম হলো সেদিন বাসায়। ‘আমার চর্বি হইসে! আমি আরামে থাকি? হারামজাদা। সারাদিন তোর সংসারের জন্য খেটে মরি। বাটপার, তুই বাইরে কী কী করোস আমি জানি না? নিজের চেহারা দেখসোস, ফকিরনির পোলা … ’
চলছে। সুলতানপুরী অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলো – সে এগুলো বলেনি। কিন্তু ওই যে একই কথা, ফিসফিস শুনতে পেয়েছে সামিহা। সামিহাকে সমস্যাটা খুলে বললো সব। ‘গাঁজা খাইস নাকি? কী বলো এসব।’ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সামিহা তাকে।
বাসার অশান্তি সামলাতে না পেরে দুদিন পর ফিল্ডট্রিপ নিয়ে বান্দরবান চলে গেল সুলতানপুরী, একা। মাথা ঠান্ডা করা জরুরি। ঘটনাগুলো বোঝা জরুরি। ফিল্ডের কাজ সেরে আরো দুদিন কাটিয়ে এলো। মারমাদের ভাষা, সংস্কৃতির বিকাশ নিয়ে একটা প্রজেক্ট করছে। কাজের বাইরে বেশিরভাগ সময় ওখানকার মানুষেরা তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলত। সুলতানপুরী চুপ থাকতো। ওদের নিয়ে আলাদা করে ভাবেনি। শুধু একবার ওখানকার এক লোকাল এনজিওর কো-অর্ডিনেটর মহিলা যখন তার পাশে বসে ছিল দুপুরে খাবার সময়, সুলতানপুরী এক ঝলক মনে মনে ভেবেছিল, ‘কী সুন্দর ঠোঁট মহিলার। কমলালেবুর মতো। মনে হয় …’ মহিলা কটমট করে একবার তার দিকে তাকালো। উঠে অন্য টেবিলে বসলো খেতে। এই মহিলা বাংলা জানে কি না সে নিশ্চিত নয়, ইনিও কি ফিসফিস শুনলেন? তাঁর নিজস্ব ভাষায়? কে জানে? জিজ্ঞেস করার মতো সাহস হয়নি। একবার ভাবলো ‘স্যরি’ বলে যাবে। তারপর ভাবলো, কেন? মহিলা যদি উল্টো খেপে যায়। তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলো, অর্ধেক খাবার প্লেটে রেখেই।
একটা জিনিস সে নিশ্চিত, সে যখন কারো কাছে বসে, তখন তারা মনের কথা শুনতে পায়। আর সেই মানুষকে নিয়ে ভাবা নোংরা কটু অশ্লীল কথাগুলোই শুনতে পায়। ভালো কিছু শুনতে পায় না। আর সে খেয়াল করেছে, ভালো কথা মুখেই বলা হয়। খারাপ কথাগুলো বলে মানুষ মনে মনে।
একটা ঘরে অনেক মানুষ থাকলে সবাই বোধহয় তার মনের কথা শুনতে পায় না। সে খেয়াল করেছে। সবাইকে নিয়ে তো সে মনে মনে ভাবেও না। যাকে নিয়ে ভাবে শুধু সে-ই, যদি অনেক কাছে থাকে, তাহলে শুনতে পায়। এর একটা বিহিত করতে হবে। দূরে দূরে থাকতে হবে। এবং মনে তালা দিতে হবে। এই ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব সে বুঝে উঠতে পারছে না। সে একজন কবি, তার ওপর একজন মানুষ। যথেষ্ট বুদ্ধিওয়ালা মানুষ। মনে মনে সে ভাববে না? আর মনের এই ভাবাভাবি কি কন্ট্রোল করা যায় নাকি? আজব।
888sport appয় ফিরে সে সামিহার কাছে মাফ চায়। পুরো ঘটনাটা আরেকবার বোঝায়। ‘দেখো এখন কিন্তু শুনতে পারছো না কিছু তাই না? কিন্তু আমি খারাপ বললেই শুনতে পারবা।’
‘তো খারাপ ভাইবো না।’
‘কী বলো এটা? মানুষ সারাক্ষণ ভালো ভাবে? আমি কি সুফি সাধক? সুফি সাধকরাও সারাক্ষণ ভালো ভাবতো? তুমি খারাপ কথা ভাবো না?’
‘ডাক্তার দেখাও, নাজমার ভাই পাগলের ডাক্তার। উনাকে দেখাও।’
‘আমি কি পাগল?’
‘না আমি সেটা মিন করিনি, সাইকিয়াট্রিস্ট।’
সুলতানপুরী স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, সামিহা তাকে পাগল ভাবছে। সে যায় ডাক্তারের কাছে, নাজমা না কার জানি ভাই। নাজমা কে – সে তাও চেনে না। তবু যায়। সামিহাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দেয়। ভেতরে ভেতরে আজকাল খুব অসহায় লাগে। ডাক্তার কী বোঝে কে জানে। বলে, ‘কই দেন তো গালি আমাকে, দেখি বুঝতে পারি কিনা।’
‘ভাই জোর করে গালিগালাজ করলে শুনবেন না। পরীক্ষা করে দেখছি আমার স্ত্রীর ওপর।’
ডাক্তার একগাদা ঘুমের ওষুধ দেয়। ‘ঘুম লাগবে আপনার।’
ধুর, অহেতুক সময় নষ্ট হলো সুলতানপুরীর। চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় ভুলে গালি দেয়, মনে মনে, ‘শুয়োরের বাচ্চা, এত্তগুলান টাকা নিলো, কোনো কাজের না।’
ডাক্তার প্রায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। সে দ্রুত বের হয়ে আসে। বাসায় ফিরে দেখে সামিহার মুখ কালো। বলে, ‘আলমভাই বলছে তোমার মধ্যে পাগলামি দেখা দিয়েছে। তুমি উনাকেও ফিসফিস করে গালি দিছো?’
‘আলমভাই কে?’
‘কী বলো এসব। ডাক্তার, নাজমার ভাই। যাকে মাত্র দেখায় আসলা। উনি ফোন করছিলো … ’
সুলতানপুরী চুপ করে থাকে। গেস্টরুম ছেড়ে বের হয় না আজকাল। অফিসে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য। এসেই কিছু একটা বলে বের হয়ে আসে। যতক্ষণ থাকে, মনের মধ্যে তালা মেরে রাখার চেষ্টা করে। এটা কী সম্ভব! অসহ্য। এর মধ্যে অনিন্দ্যদা নানাজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে পাগল করে দিচ্ছে। না গেলে আর চলছে না। নিজেকে প্রস্তুত করে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যায়। এভাবে তো আর চলতে পারে না। মনে মনে কী বলছে সে-ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে।
অনিন্দ্যদা তাকে সামনে বসিয়ে ধুমায় গালি দিচ্ছে। তার পাশে নতুন কিছু
চেলা-চামুণ্ডাও আছে। সুলতানপুরী নাকি কী এক 888sport live football 888sport app download bd পাচ্ছে। দুই লাখ টাকা। তার বই ‘অচিনপুরের সূর্য’ বইটার জন্য। অনিন্দ্যদা নিশ্চিত সুলতানপুরী লবিং করে 888sport app download bd পাচ্ছে। সুলতানপুরী এতো ক্লান্ত মনে মনে, এতটুকুও বলে না যে, সে 888sport app download bdের ব্যাপারে কিছুই জানতো না। মাত্র শুনেছে। আর মনের এসব স্বাভাবিক ভাবনা তো কেউ শুনতেও পায় না। হায়রে।
অনিন্দ্যদা বলেই যাচ্ছে, ‘সুলতান বেশি বাড়ছো তুমি না? আজকে তোমারে এখানে আমি আনছি। এই যে চাকরি করো, কেমনে পাইছো? এই 888sport app download bd এবার আমার পাওয়ার কথা। আমারে ল্যাং মেরে 888sport app download bd নিবা? এতো সহজ? অনিন্দ্য জহিররে চেনোনি। আমি এখন বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি।’
আর পারে না সুলতানপুরী। তার মন বলে ওঠে, ‘শালার পুত তোর নাম হইলো জহিরুদ্দিন মওলা। নাম লুকায় কবি হস। অনিন্দ্য উচ্চারণ করতে পারিস তুই? তোর 888sport app download apk হয়? কুত্তার পায়খানা এরচেয়ে ভালো। তুই 888sport app download bd পাবি কেমনে?’
এর পরের কথা সুলতানপুরীর আর মনে নেই। সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। বাসায় কে দিয়ে গেছে সেটা সে জানে না। সে শুনেছে, অনিন্দ্য জহিরের এক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। সে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে। সেদিন সুলতানপুরীর মনের কথা সবার সামনে বলে দেয়। সুলতানপুরী নিজেও স্বীকার করে যে, সে এসব বাজে কথা বলেছে, তারপর ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
888sport app download bdের দিন সুলতানপুরী একাই যায়। সামিহা যেতে চায় না। দূরে দূরে থাকে আজকাল। বাপ-মায়ের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকে। পাগল স্বামীর সঙ্গে আর কে থাকে? 888sport app download bd নিতে যাওয়ার আগে, আম্মাকে ফোন দেয়। ‘আম্মা তুমি কি আমার ওপর রাগ করে আছো?’
আম্মা একটুও রাগ করে নাই। কাঁদে, খুব কাঁদে, ‘তোর বাপ মরার পর, পিরজির দরগায় আর যাইনি। তাঁরে অসম্মান করছি। সেই বদ-দোয়ায় আজকে তোর এই অবস্থা নাকি রে আব্বা আমার …’
888sport app download bd অনুষ্ঠানে গিয়ে চুপ করে কোনায় বসে থাকে। প্রায় চোখ বন্ধ করেই 888sport app download bd নেয়। কখন কী ভেবে ফেলে, কে কী শুনে ফেলে। আতিয়া আপার সঙ্গে দেখা হলো খানিকটা দূর থেকে। আপা কথা বলেন না। তবে হাতে-পায়ের নখে ঘন লাল নেইলপলিশ মাখা। অনেক দূরে বসে ভাবে, ‘যাক একটা ভালো কাজ তো হলো। গণ্ডারের নখ আর কাউকে দেখতে হবে না।’ অনিন্দ্যদা নাকি দেশের বাইরে। অনুষ্ঠানে আসেনি। কত মানুষ সুলতানপুরীকে খুঁজছে। সেলফি তুলবে, অটোগ্রাফ নেবে। মন সামাল দিতে দিতে সুলতানপুরী বড্ড অসহায় বোধ করে। এমন বাকহীন জীবন দিয়ে সে কী করবে? অনুষ্ঠানের মাঝখানে বেরিয়ে চলে আসে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.