888sport live footballের বাস্তবতা আর জীবনের বাস্তবতা এক নয়, আলাদা। মানুষ কেন 888sport live football পড়ে? জীবনের নির্মম বাস্তবতা থেকে, একঘেয়ে বাস্তবতা থেকে একটু এসকেপ নেওয়ার জন্য, একটু মুক্তির জন্য। কিন্তু 888sport live football যখন জীবনের বাস্তবতাকে হুবহু তুলে ধরে, তখন পাঠক অনেক সময় ঠিকঠাক এসকেপ নিতে পারে না। একই বাস্তবতা তাকে টানে না। এই বাস্তবভিত্তিক 888sport live football তাকে সেই রস দিতে পারে না, যা সে চায়। ফলে সংগত কারণেই সে 888sport live football থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এই বাস্তববাদী 888sport live footballের একটা দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউরোপে, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। অনিবার্যভাবে তার অভিঘাত বাংলা 888sport live footballেও পড়ে। বাংলা কথা888sport live footballের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে জীবনবাস্তবতার হুবহু প্রতিফলন। শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক কিংবা দেবেশ রায় প্রমুখ পর্যন্ত আমাদের প্রধান কথা888sport live footballিকদের অধিকাংশই বাস্তববাদী। তাঁদের গল্প-888sport alternative link জীবনবাস্তবতায় ভরপুর। বলছি না জীবনবাস্তবতা নিয়ে গল্প-888sport alternative link হয় না, হতে পারে না। অবশ্যই হয়, হতে পারে। হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। সেটা কথা888sport live footballের একটি ধারা। কিন্তু কেবল এক ধারাতেই কথা888sport live football হয় না। কথা888sport live footballের নানা ধারা। সব কথা888sport live footballিক যদি একই ধারাতে গল্প-888sport alternative link লেখেন, তখন পাঠকের মধ্যে বিরক্তি আসে, একঘেয়েমি আসে। আসাটা স্বাভাবিক।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বাস্তবেরই রূপকার। তাঁর গল্প-888sport alternative linkের চরিত্ররা বাস্তবেরই মানুষ। কিন্তু তাঁর হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড কিংবা লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা পড়ে মনে হয়, বাস্তবের মানুষদের নিয়ে তিনি এমন 888sport live football সৃজন করেছেন, যা বাস্তবসম্ভূত, কিন্তু বাস্তব নয়। বাস্তবে কেউ উড়ে যেতে পারে না, যেমন উড়ে যায় সুন্দরী রেমেদিউস। বাস্তবে কেউ প্রেমিকার জন্য তিপান্ন বছর, সাত মাস, এগারো দিবস-রজনী অপেক্ষা করে না, ফারমিনা ডাজার জন্য যেমন করেছে ফ্লোরেন্টিনো আরিজা। মার্কেজের গল্প-888sport alternative linkে এরকম নানা অলীক সব কর্মকাণ্ড ঘটে, যাকে আমরা বলি জাদুবাস্তবতা। তিনি তাঁর পাঠকদের বাস্তবতার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। বাস্তবেরই বর্ণনা করছেন অবাস্তব কৌশলে। প্লিনিও এ্যাপুলেইও মেন্দোজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘888sport alternative link গোপন সংকেতের মাধ্যমে পৃথিবী সম্পর্কে এক ধরনের ধাঁধার মধ্য দিয়ে বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে। 888sport alternative linkে যে-বাস্তবতা নিয়ে কাজ করছেন তা জীবনের বাস্তবতা থেকে ভিন্ন – যদিও অবশ্য জীবনের বাস্তবতায় তা গভীরভাবে প্রোথিত।’
সেলিম আল দীন তাঁর রচনাসমূহে জীবনবাস্তবতাকে হুবহু তুলে ধরেননি। জীবনবাস্তবতার বাইরে দাঁড়িয়ে এমন এক বাস্তবতা নির্মাণ করেছেন, যা 888sport live footballবাস্তবতা। সেখানে জীবনের হুবহু প্রতিফলন নেই। জীবন সেখানে বৃষ্টিধারার মতো বেঁকে গেছে। তা বাস্তবমুখী, কিন্তু হুবহু বাস্তব নয়। মার্কেস যে-ধাঁধার কথা বলেছেন, অধিকাংশ রচনায় সেলিম আল দীন সেই ধাঁধা নির্মাণ করেছেন। যেমন তাঁর স্বর্ণবোয়াল-এর কথাই ধরা যাক। এটি তাঁর শেষদিকের রচনা। সম্ভবত মাছ নিয়ে বাংলা ভাষায় বড় পরিসরে রচিত প্রথম 888sport live footballকর্ম স্বর্ণবোয়াল। এই আখ্যানের প্রধান চরিত্র একটি মাছ, চিরলি গাঙের এক বিশাল অজেয় মাছ, চকচকে বর্ণ যার, তার নাম স্বর্ণবোয়াল। নিকারি পাড়ার প্রবাদপুরুষ লিক্কত মাঝি বলেছিল এই স্বর্ণবোয়ালের গল্প। এই মাছ শিকারের নেশায় জীবন বলি দিয়েছে উপাখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র তিরমনের দাদা জনম মাঝি এবং পিতা খলিশা মাঝি। জনম মাঝি ষাট বছর বয়সে কোশা নৌকায় বসে বেউলা বিলের মোহনায় ভোররাতে ছিপ ফেলেছিল। তার বড়শিতে গেঁথে ছিল অধরা মাছটিকে। কিন্তু ছোট্ট কোশাসহ সেই মাছ টেনে নিয়েছে তাকে চিরলির গহিন গহ্বরে। জনম মাঝির স্বর্ণবোয়াল শিকারের নেশা রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে পুত্র খলিশার শরীরে। কিন্তু সেও পারল না মাছটিকে শিকার করতে। সে ব্যর্থ হলেও তার উত্তরাধিকারী তিরমন সেই অজেয় মাছকে জয় করতে পারবে – এই স্বপ্ন দেখে সে মৃত্যুসিথানে বসে। পিতার কাছে স্বর্ণবোয়ালের গল্প শুনতে শুনতে তিরমনের ভেতরও স্বর্ণবোয়াল শিকারের নেশা জেগে ওঠে। তাই পিতাকে মৃত্যুসিথানে রেখে মায়ের শত নিষেধ উপেক্ষা করে ভাদ্র শুরুর এক ঝড়ের রাতে তিতকামারের বড়শি নিয়ে সে যাত্রা করে স্বর্ণবোয়াল শিকারে।
নিশিরাতে বেউলা বিলে শিকারে ধ্যানমগ্ন তিরমন দেখতে পায় নিকারি পাড়ার পূর্বপুরুষদের, যারা এখনো স্বর্ণবোয়াল শিকারের আশায় কোশা ভাসিয়ে রেখেছে চিরলির বুকে। গাঙের ওই পাড়ে মৃত জনম মাঝিও স্বর্ণবোয়াল শিকারে এসেছে এই রাতে। তিরমন ঠিক বুঝতে পারে না এরা কারা। সে জানতো তার জনম দাদা, অবইন দাদা এবং তার পিতা খলিশা তাকে প্রলুব্ধ করেছে স্বর্ণবোয়াল শিকারে। কিন্তু এরা কারা এই গহিন রাতে সারিবাঁধা বোয়াল শিকারি? সে হাঁক দেয়, ‘হেই গো সেলাম। কখন আসছেন আপনেরা?’ তাদের কেউ একজন বলে, ‘কতো কাল ধইরা ছিপ ফালায়া বইসা আছি। দিনে মিলাই রাইতে আসি। তা বইসা আছি তো বাজান বইসা আছি …।’
তিরমন বুঝতে পারে, এসব মানুষ নায়েবালির গান থেকে উঠে এসেছে। কিংবা এরা তারই খোয়াবের মানুষ। অথবা এ তার সৌভাগ্য সে তাদের দেখেছে, যারা তখন ছিল, এখন নেই। কিংবা হয়তো এ তিরমনের দেখার ভুল। যুগ-যুগান্তরের অজেয় এক শিকারকে জয় করার স্বপ্নে তিরমন এই রাতে শিকারে এসে যাদের দেখতে পাচ্ছে তারা হয়তো আদৌ সেখানে উপস্থিত ছিল না। যারা তিরমনের সঙ্গে শিকারে বের হয়েছে, পিতৃবন্ধু নায়েবালি বয়াতির কাছে তাদের কথা বহুবার শুনেছে তিরমন। এইসব ছায়া-শিকারিরা তাকে বলে যায় স্বর্ণবোয়াল শিকারে ধ্যানের প্রয়োজনীয়তার কথা।
ধ্যান করেছিল শিকারি তিরমন। তার ধ্যানের মধ্যে অবশেষে ধরা দিয়েছিল স্বর্ণবোয়াল। বড়শিতে যখন টান পড়ে, তখন সে ভেবেছিল, হবে বুঝি হয়তো কোনো ভেসে যাওয়া নৌকা বা কাছিম-আছিম, হয়তো বা জালিঢোঁড়া কিংবা গুজিআইড়। কিন্তু স্বর্ণবোয়াল যে তার টোপ গিলেছে – এ-কথা সে ভাবতেই পারেনি। সে অবহেলায় টান দেয় ছিপে। কিন্তু পরক্ষণেই টের পায় এ যে সেই খোয়াবের বোয়াল, স্বর্ণবোয়াল। শুরু হয় প্রচণ্ড লড়াই। স্বর্ণবোয়াল চেষ্টা করে বড়শি থেকে ছুটে যাওয়ার, তিরমনের চেষ্টা মাছটিকে ডাঙায় তোলার। টানা একদিন দুই রাতের তীব্র লড়াই। কিন্তু স্বর্ণবোয়াল ধরা দেয় না। জনম মাঝির মতোই টানতে থাকে তিরমনকে গহিন জলের দিকে। প্রাচীন বোয়াল শিকারিদেরও এখন আর দেখা যায় না। তারা এক উত্তরাধিকারীকে যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে, যুদ্ধের মন্ত্র বাতলে দিয়ে অন্তর্হিত হয়েছে। তাই একা একা ভয় পায় তিরমন। স্বর্ণবোয়ালের উদ্দেশে বলে, ‘যদি ধরা না দেবেন তবে রেহাই দেন আমারে। আমি নিকারির ছাওয়াল। আমি আপনেরে ছাড়বো না। তবে আপনি যদি নিজের কৌশলে নিজে ছুটবার পারেন আমি অখুশি হমু না। আমি হারজিত বুঝি না। আপনি গিলছেন আধার – আমি আটকাইছি। বাস। এইটা আমার পেশা। আমি ধরতে চাইব – আপনি ছুটতে চাইবেন। জগৎ সিরজন থিকা মাছ আর মানুষের এই খেলা। খেলা খেলা। এই খেলা চলবে।’
তিরমনের এই উক্তিতে প্রকাশ পায় মানুষের বীরত্ব। মানুষ হারতে চায় না, হেরে যাওয়া তার স্বভাবে নেই, সে চিরকাল জিততে চায়, সে চিরকাল জিতেই এসেছে। সংকটে সে কখনো নিজের জয়কে বিসর্জন দেয় না, দেয়নি আদিকাল থেকে আজ অবধি।
স্বর্ণবোয়ালের কাছে তিরমনের এই আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল বুঝি। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর সে যখন বোয়ালটিকে কূলের তিরতিরে জলে টেনে আনে, তখন উজ্জ্বল হয়ে পড়ে চারদিক। তীব্র খলবলানি আর আলোর ঝলকানিতে বিশ^চরাচর যেন মুগ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু না, স্বর্ণবোয়ালকে নিলামে ওঠানোর জন্য গগনধূলার বাজারে নিতে পারে না তিরমন। তার সকল স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়ে হঠাৎ বড়শি খুলে স্বর্ণবোয়াল তিরতিরে জল ছেড়ে গহিন জলে লাফ দেয়। মুহূর্তে অন্তর্হিত হয়। অজেয় মাছ অজেয়ই থেকে যায়।
তবে কে হারল আর কে জিতল? বোয়ালটিকে তো তিরমন ঠিকই শিকার করেছে, বড়শিতে গেঁথে কূলের তিরতিরে জলেও উঠিয়ে এনেছে, শুধু আনতে পারেনি গগনধূলার বাজারে। তাহলে কী দাঁড়াল হার-জিতের বিষয়টি? স্বর্ণবোয়াল ও তিরমনের মাঝে কেউ তো হারেনি, জেতেওনি। হার-জিত সমান সমান। সেলিম আল দীন এখানে গুঁজে দিচ্ছেন প্রশ্ন – তাহলে হার-জিত বলে কিছু কি আছে? এই বিশাল ব্যাপ্ত আকাশের নিচে কে হারে, কে জেতে? নায়েবালী বয়াতি যেমন মানে না হার-জিত। তার বিশ্বাস, জয়-পরাজয় বলে কিছু নেই। সব মিথ্যা।
জয়-পরাজয়ের নৌকা ওই এক আল্লাহর এক ঘাটেতেই বান্ধা হয়। কিংবা নিকারি পাড়ার প্রবাদপুরুষ লিক্কত মাঝি, যে কি না ঘড়িয়াল শিকার করত। তার কবরের পাশেই এক ঘড়িয়ালের কবর। মৃত্যুকালে লিক্কত অসিয়ত করে গিয়েছিল, তার মৃত্যুর পর শিকার করা ঘড়িয়ালকে যেন তার পাশেই কবর দেওয়া হয়। শিকার ও শিকারির দুই কবর পাশাপাশি বিদ্যমান। তাহলে হার-জিত কার? লিক্কত, না ঘড়িয়ালের? স্বর্ণবোয়ালে রূপক আখ্যানের মধ্য দিয়ে, একটা ধাঁধা সৃষ্টি করে, সেলিম আল দীন বলছেন, হার-জিত বলে কিছু নেই, সবই সমান সমান।
সেলিম আল দীনের মধ্যে এই প্রবণতা ছিল যে, কোনো আখ্যান রচনার আগেই তিনি একটা তত্ত্ব দাঁড় করাতেন, একটা দর্শন দাঁড় করাতেন। তারপর আখ্যানটিকে সেই তত্ত্ব ও দর্শনের মধ্যে ফেলে লিখতেন। এই প্রবণতা সব লেখকের নেই, সেলিম আল দীনের ছিল। সম্ভবত তিনি নাটকের অধ্যাপক ছিলেন বলে এই তত্ত্বপ্রবণতা তাঁর ওপর ভর করেছিল। এই প্রবণতা ভালো না মন্দ দিক, তা অন্য আলোচনা।
স্বর্ণবোয়ালের দর্শন কী? কোন তত্ত্বে ফেলে স্বর্ণবোয়াল রচনা করেছেন সেলিম আল দীন? এই আখ্যানে তিনি পাশ্চাত্য দর্শনের বিপরীতে প্রাচ্য দর্শনকে দাঁড় করিয়েছেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের 888sport alternative link দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সিতে শিকার ধরা আর শিকার হারানোর চাইতেও প্রধান হয়ে ওঠে শিকারি সান্তিয়াগোর হার না মানা, পরাজয় স্বীকার না করার লড়াকু মনোভাব। হেমিংওয়ে মানুষের হার না মানার দর্শনকে বড় করে দেখিয়েছেন। স্বর্ণবোয়ালের অবস্থান সেই দর্শনের বিপরীতে। সান্তিয়াগোর সেই বিশাল মাছটির মতো তিরমনের স্বর্ণবোয়াল হারেনি, সে ধরা দিয়ে ফের পালিয়েছে। অপরপক্ষে তিরমনও হারেনি। কারণ সেও বোয়ালটিকে শিকার করেছে। কিংবা বলা যায় দুজনের কেউই জেতেনি। এই হার-জিতহীনতার দর্শনেরই আখ্যান স্বর্ণবোয়াল। এই আখ্যানের মধ্য দিয়ে সেলিম আল দীন তুলে ধরেছেন ভারতীয় দর্শন। ভারতীয় দর্শনে হার-জিত বলে কিছু নেই। ভারতীয় দর্শন হার-জিতকে স্বীকার করে না। বলে, এই বিশ্বপ্রকৃতিতে হার-জিত বলে কিছু নেই। শুধু লড়াই চলে নিরন্তর একের সঙ্গে অন্যের। তিরমন যেমন বলে, ‘জগৎ সিরজন থিকা মাছ আর মানুষের এই খেলা। খেলা খেলা। এই খেলা চলবে।’
অর্থাৎ, বোঝা গেল, সেলিম আল দীন এই রচনায় জীবনবাস্তবতার বাইরে এক 888sport live footballবাস্তবতা নির্মাণ করেছেন। বাস্তবে স্বর্ণবোয়াল বলে কোনো মাছ নেই। বোয়ালের রং কখনো স্বর্ণের মতো হয় না। বোয়ালের শরীরের রং ফ্যাকাশে সাদা হয়। কোনো শিকারি কোনো মাছকে নিয়ে টানা একদিন দুই রাত তীব্র লড়াই করে না। কোনো শিকারি কখনো রাতবিরাতে শিকার করতে গিয়ে তার পূর্বপুরুষদের দেখতে পায় না। দেখাটা অসম্ভব। কিন্তু তিরমন দেখতে পায়, তাদের সঙ্গে কথোপকথন করে। ডাঙায় তোলা কোনো মাছের খলবলানি আর আলোর ঝলকানিতে বিশ্বচরাচর মুগ্ধ হয় না। কিন্তু স্বর্ণবোয়ালের খলবলানি আর ঝলকানিতে হয়েছে। এটাই হচ্ছে 888sport live footballের বাস্তবতা। বাস্তবের ঘোড়া কখনো আকাশে উড়তে পারে না, কিন্তু 888sport live footballের ঘোড়া পারে। বাস্তবের মানুষ কখনো মৃত মানুষদের দেখা পায় না, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। 888sport live footballের মানুষেরা দেখা পায়, কথাও বলতে পারে, যেমন পেরেছে তিরমন। জীবনের বাস্তবতার বাইরে এই 888sport live footballবাস্তবতা নির্মাণের কারণেই স্বর্ণবোয়াল হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রম, দৃষ্টান্তহীন। জীবনের বাস্তবতা এখানেও আছে, কিন্তু সরাসরি নয়, তেরছাভাবে। মার্কেস যে ধাঁধার কথা বলেছেন, সেলিম আল দীন সফলভাবে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন সেই ধাঁধা।
কিংবা ধরা যাক সেলিম আল দীনের প্রাচ্য নাটকটির কথা। স্বর্ণবোয়াল ও প্রাচ্যের মূল সুর প্রায় একই। এখানেও কেউ হারে না, কেউ জেতে না। স্বর্ণবোয়ালে যেমন সর্বপ্রাণবাদের জয় ঘোষিত হয়েছে, প্রাচ্যেও তাই। প্রাচ্য স্বর্ণবোয়ালের আগে রচিত। প্রাচ্যের দর্শনকেই তিনি স্বর্ণবোয়ালে রিপিটেশন করেছেন। প্রাচ্য সেলিম আল দীনের বর্ণনাত্মক নাট্যরীতিভুক্ত রচনা। শামুকভাঙ্গা গ্রামের হতদরিদ্র সয়ফরচান বিয়ে করে কাজলাকান্দার কিশোরী নোলককে। মাঘের শেষে নাড়াপুচ্ছ শস্যক্ষেত আর গম-কলাই-তিসির ক্ষেত মাড়িয়ে পালকি, নৃত্য, বন্ধু ও কিশোর শ্যালক ইস্রাফিল এবং ময়মুরুব্বিসহ বউকে নিয়ে ঘরে ফেরে সয়ফর। তার ভিটাতে কেউ নেই। না বাবা-মা, না সহোদর। বোন ছিল একজন, সেও অকালমৃত। থাকার মধ্যে আছে এক দাদি। সুতরাং বাসরসজ্জার দায় প্রতিবেশী কুমারীদের ওপর। তারপর কুপ্পিনিভা নিস্তব্ধ বাসররাত। সয়ফরের যৌন-উত্তেজনার প্রারম্ভিক মুহূর্তে সাপে দংশন করে নোলককে। প্রথমে সয়ফর ভেবেছিল অন্য কিছু। প্রতিবেশীদের কেউ ভেবেছিল নতুন বউ বুঝি মৃগী রোগী। কিন্তু রক্তবমি করে নোলক। তারপর দেখা যায় তার পায়ের চিহ্ন ইঁদুরের গর্তের ভেতর, লেপা মেঝে ভেঙে এক বিঘত নিচে। সয়ফরের আর সন্দেহ থাকে না যে সাপেই কেটেছে নোলককে। শোকের বদলে সয়ফরের ভেতর জেগে ওঠে ক্রোধ। স্ত্রী-হন্তা সাপটিকে খুন করতে ঘোরের ভেতর ছেনি হাতে সে ছুটে চলে। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে চলে অবিরাম। সারারাত চলে অক্লান্ত খোঁড়াখুঁড়ি। কিন্তু সাপ কি কাউকে দংশন করে চুপ করে বসে থাকে? থাকে না। দংশনমাত্রই স্থান ত্যাগ করে। দ্বিতীয় দিন ভোরে সাপটিকে দেখতে পায় সয়ফর, নোলকের কবরের কাছে বাঁশঝাড়ের ভেতর। লকলকে জিভে বুকে ভর দিয়ে সে প্রতাপ দেখায়। সাপ ও সয়ফর দুজন মুখোমুখি হয়। সৌন্দর্যের ভয়ংকর প্রকাশে হত্যার কথা ভুলে যায় সয়ফর। সৌন্দর্য, ভয় ও রহস্যে তার অন্তরে সম্ভ্রম জাগে।
যে-হন্তারক সাপের খোঁজে সে দুই রাত উন্নিদ্র কাটিয়ে ক্লান্ত, হাতের নাগালে পেয়েও তাকে সে হত্যা করতে পারে না। ফণার সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে সে সাপটিকে ক্ষমা করে দেয়। সাপটি নোলকের নতুন কবরের ওপর দিয়ে শ্লথ গতিতে চলে যায় বন্য অন্ধকারে।
আগেই বলেছি যে, সেলিম আল দীন কোনো আখ্যান লেখার আগে একটা তত্ত্ব বা দর্শন দাঁড় করাতেন। তারপর আখ্যানটিকে সেই তত্ত্ব ও দর্শনের মধ্যে ফেলে লিখতেন। প্রাচ্যের দর্শন কী? তত্ত্ব কী? তা এই যে, পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে লখিন্দরকে দংশন করে সাপ, আর প্রাচ্যে করে নোলককে। অর্থাৎ প্রাচ্য হলো মনসামঙ্গলের বিপরীত আখ্যান। কিন্তু সাপকে কেন্দ্র করে রচিত এই আখ্যানের নাম প্রাচ্য হলো কেন? এর পেছনে তত্ত্ব কী? তা এই যে, প্রাচ্যের দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে এই আখ্যানে, তাই এর নাম প্রাচ্য। প্রাচ্যের দর্শন হচ্ছে, ক্ষমা, জীবপ্রেম, অদৃষ্টবাদ কিংবা অলঙ্ঘনীয় জাগতিক নিয়মকে শান্তচিত্তে মেনে নেওয়া হয়। ক্ষমা প্রাচ্যের মহত্তম শিক্ষা। প্রাচ্যদর্শন ক্ষমাকে উচ্চে তুলে ধরেছে। প্রাচ্য সব সময় ক্ষমার কথা বলে। সয়ফর সাপটিকে যে ক্ষমা করে দিলো – এ প্রাচ্যেরই দর্শন। রূপক আখ্যানের ছলে সেলিম আল দীন প্রাচ্যের গলায় পরিয়ে দিয়েছেন ক্ষমার মালা। তাই আখ্যানের নাম দিয়েছেন প্রাচ্য।
কিন্তু প্রাচ্যে ক্ষমা কোথায়? প্রাচ্যে কোন যুগে ছিল ক্ষমা? প্রাচীন ভারতের রাম কি রাবণকে ক্ষমা করেছিলেন? শ্রীকৃষ্ণ কি জরাসন্ধকে ক্ষমা করেছিলেন? পঞ্চপাণ্ডব কি কৌরবদের ক্ষমা করেছিলেন? অশোক কি কলিঙ্গবাসীকে ক্ষমা করেছিলেন? কৌটীল্য কি হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি? শ্রীচৈতন্যের লাশ কোথায় পুঁতে ফেলা হয়েছিল? প্রাচ্যের কোথায়, কোন দেশে ক্ষমা ছিল? ক্ষমার বদলে সর্বত্রই তো দেখা যায় যুদ্ধ আর রক্তপাত।
না, এভাবে দেখলে প্রাচ্য তথা ভারতীয় দর্শনে ক্ষমার দর্শনটি মিলবে না। যেতে হবে একটু গভীরে। ক্ষমা হিন্দুধর্মের ছয়টি প্রধান গুণের একটি। হিন্দুধর্মে ক্ষমা করার ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তি হলো, যে-ব্যক্তি ক্ষমা করে না সে ভুলের 888sport sign up bonus, নেতিবাচক অনুভূতি, রাগ এবং অমীমাংসিত আবেগের থলে বহন করে, যা তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। মহাভারতের বনপর্বে উল্লেখ, ‘ক্ষমা একটি পুণ্য। ক্ষমা হলো ত্যাগ, ক্ষমা হলো বেদ, ক্ষমা হলো শ্রুতি। ক্ষমা ভবিষ্যতের তপস্বী যোগ্যতা রক্ষা করে। ক্ষমা হলো তপস্যা, ক্ষমা হলো পবিত্রতা।’ আদিপর্বে উল্লেখ, ‘ন্যায়পরায়ণতা একটি সর্বোচ্চ কল্যাণ, ক্ষমা একটি সর্বোচ্চ শান্তি, জ্ঞান একটি সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তি, এবং কল্যাণ একক সুখ।’ অষ্টাবক্র গীতায় উল্লেখ, ‘জনক জিজ্ঞাসা করলেন, প্রভু, কীভাবে একজন প্রজ্ঞা অর্জন করেন? কীভাবে মুক্তি হয়? অষ্টাবক্র উত্তর দিলেন, হে প্রিয়, যদি তুমি মুক্তি চাও, তাহলে কল্পনাপ্রবণ আবেগকে বিষ হিসেবে পরিত্যাগ করো। ক্ষমা, নির্দোষতা, করুণা, তৃপ্তি এবং সত্যকে অমৃত হিসেবে গ্রহণ করো।’
বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনেও ক্ষমা আর জীবপ্রেমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধপন্থা অনুযায়ী ক্ষমার মূল চাবিকাঠিটি হলো ব্যক্তিকে তার অথবা নিজের ক্ষতিকারক বা ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে অথবা তার ভুল থেকে আলাদা করা। বৌদ্ধ দর্শন বলে, আমরা ধ্বংসাত্মক কাজ করি এবং ভুল-ত্রুটি করি। এর অর্থ এই নয় যে আমরা খারাপ। বৌদ্ধ দর্শনে ক্ষমার অর্থ হলো অপরাধ ও অপরাধীকে আলাদা করা। অর্থাৎ পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। ধর্মপদে উল্লেখ, ‘সে আমাকে গালি দিয়েছে, সে আমাকে আঘাত করেছে, সে আমাকে পরাস্ত করেছে, সে আমাকে ছিনতাই করেছে – যারা এই ধরনের চিন্তাভাবনা করে তাদের মধ্যে ঘৃণা কখনো বন্ধ হবে না।’
অপরদিকে জৈনধর্মে ক্ষমা একটি প্রধান গুণ, যা জৈনরা চর্চা করত এবং এখনো করে। জৈনরা কেবল মানুষের কাছে নয়, 888sport app প্রাণীর কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করে। জৈনরা প্রার্থনায় বলে থাকে, ‘খেমেমি স্যাভা-জেভ স্যাভি জীব খামন্তু আমি, মেটি মে স্যাভা-ভিসু, ভেরাস মেঝা না কেসাভি।’ অর্থাৎ আমি সমস্ত প্রাণীর কাছে ক্ষমা চাই, সমস্ত প্রাণী আমাকে ক্ষমা করুক। সব প্রাণীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা থাকতে পারে না।
প্রাচ্যের আরেকটি দর্শন হচ্ছে সর্বপ্রাণবাদ। অর্থাৎ এই পৃথিবী কেবল মানুষের একার নয়, পশুপাখি আর কীটপতঙ্গেরও। এই পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীরই সমান অধিকার। একটা ব্যাঙেরও বাঁচার অধিকার আছে। কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষে দেখতে পাই সর্বপ্রাণের জয়জয়কার। ভারতীয় পুরাণে কোনো প্রাণকেই গৌণ করে দেখা হয়নি, প্রত্যেক প্রাণকে ভাবা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ, দেখা হয়েছে মানুষের পরিপূরক হিসেবে। হিন্দু দেব-দেবীরা তো নিজেদের বাহন হিসেবে নিয়েছেন বিভিন্ন প্রাণীকে। শিবের বাহন নন্দী বা ষাঁড়, দুর্গার বাহন সিংহ, বিষ্ণুর গরুড় বা ঈগল, ব্রহ্মার রাজহাঁস, গণেশের ইঁদুর, কার্তিকের ময়ূর এবং ইন্দ্রের হাতি। এভাবে প্রত্যেক দেবতার বাহন বিভিন্ন প্রাণী। কোনো দেবতার বাহন মানুষ নয়। একেক প্রাণীকে নিজেদের বাহন করে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।
বাল্মীকির রামায়ণ মহাকাব্যে মানুষের পাশাপাশি বানর, হনুমান, ভল্লুক, পাখি, সর্প প্রভৃতির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। রামায়ণে ১০৮০ বার ‘বানর’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন বাল্মীকি। ৪২০ বার বানরদের ‘কপি’ সম্বোধন করেছেন। বানরদের ‘হরি’ সম্বোধন করা হয়েছে ৫৪০ বার। ছদ্মবেশ ধারণে পটু হওয়ায় বানরদের ‘কামরূপীন’ও বলেছেন। পবনপুত্র মহাবীর হনুমান ছাড়া তো রামায়ণ প্রায় অসম্পূর্ণ। মহাভারতেও কি সর্বপ্রাণকে উপেক্ষা করা হয়েছে? মোটেই না। কুরুক্ষেত্রের অদূরে কর্ণের অসহায় মৃত্যুর কারণ একটি গরু। একদিন তিনি নিরপরাধ এক গোবাছুরকে একটি কর্দমাক্ত ডোবায় ভুলবশত বাণ নিক্ষেপ করে হত্যা করেছিলেন। গরুর মালিক অভিশাপ দিয়েছিল, যেভাবে এই বাছুর অসহায় অবস্থায় মরেছে, ঠিক একইভাবে কর্ণও একদিন এমনই অসহায় অবস্থায় মারা পড়বেন। কেউ তার সাহায্যকারী থাকবে না। মহাভারতের মহাপ্রস্থান অধ্যায়ে দেখি কুকুরের গুরুত্ব। পাণ্ডবরা যখন মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা করলেন তখন তাদের পিছু নিল একটি কুকুর। দেবরাজ ইন্দ্র যুধিষ্ঠিরকে বললেন স্বর্গে প্রবেশ করতে। যুধিষ্ঠির বললেন, এই কুকুর আমার ভক্ত। আমার ইচ্ছা কুকুরটিও আমার সঙ্গে স্বর্গে যাবে। ইন্দ্র বললেন, মহারাজ, আপনি স্বর্গসুখের মালিক হয়েছেন। এই কুকুরকে এবার ছাড়ুন। যার কুকুর থাকে সে স্বর্গে যেতে পারে না। যুধিষ্ঠির বললেন, এই কুকুর ছাড়া আমি স্বর্গ চাই না।
আর সাপ? নাগরাজ বাসুকি তো শিবের গলায় নেকলেস হয়ে শোভা বৃদ্ধি করছে। শ্রীবিষ্ণু শুয়ে আছেন শীষনাগের ওপর ভর করে। সমুদ্র মন্থনের সময় কূর্ম তথা কাছিমের রূপ ধরে মান্দার পর্বতকে নিজের পীঠে তুলে নিতে সংকোচ করেননি বিষ্ণু। হীরণ্যাক্ষের হাত থেকে ভূদেবী তথা পৃথিবীকে উদ্ধার করতে তিনি বরাহের রূপ ধারণ করতেও সংকোচ করেননি। হিরণকশ্যপকে বধ করতে তিনি সিংহের রূপ ধরতেও দ্বিধা করেননি। মধ্যযুগের পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গল কাব্যেও দেখতে পাই সাপের উচ্চ আসন। চাঁদ সওদাগর কিছুতেই সর্পদেবী মনসার পূজা দেবেন না। মনসা সমুদ্রে ডুবিয়ে দিলেন চাঁদের নৌবহর। চাঁদপুত্র লখিন্দরের বাসরঘরে ঢুকে লখিন্দরকে করলেন দংশন। এক পর্যায়ে চাঁদ সওদাগর মনসাকে পূজা দিতে বাধ্য হলেন। যে-সাপকে তিনি নিকৃষ্ট মনে করলেন তার কাছেই তাকে হার মানতে হলো। এখানেই সাপের মাহাত্ম্য, এখানেই সর্বপ্রাণের গুরুত্ব।
শুধু প্রাণী কেন, ভারতবর্ষে গাছপালা-তৃণলতাকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়েছে। বট, তুলসী, বেল, অর্জুন, অশোক, কলাসহ প্রত্যেক গাছ-বৃক্ষকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। সে-কারণেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বড় কোনো বৃক্ষ দেখলে তাকে প্রণাম করে, তার বেদিতে ফুল-ফল দেয়। নদী-সমুদ্রও ভারতীয় পুরাণে গুরুত্বপূর্ণ। শিব তার জটায় ধারণ করে আছেন নদী গঙ্গাকে। অর্থাৎ ভারতবর্ষ সর্বভূত তথা সর্বপ্রাণের মধ্যে মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে
পেয়েছিল। সে-কারণেই উপনিষদে উল্লেখ, ‘যে মানুষ আপনাকে সর্বভূতের মধ্যে ও সর্বভূতকে আপনার মধ্যে এক করিয়া দেখিয়াছে সে-ই সত্যকে দেখিয়াছে।’
সেলিম আল দীনের প্রাচ্যেও ঘোষিত হয়েছে সর্বপ্রাণবাদের গুরুত্ব। প্রাচ্য মূলত একটি প্রাচ্যদেশীয় লৌকিক গল্প। লৌকিক বিশ^াস-অবিশ^াসের বিষয়গুলোই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। নাট্যকারও প্রাচ্যের কথাপুচ্ছে বলেছেন যে, প্রাচ্য মূলত মনসাপুরাণের উল্টো দিকটা কী রকম – এমন ভাবনা থেকেই লিখিত। বাংলা-ভারতের লোকপুরাণ অনুযায়ী, প্রতি বাড়িতেই একটি করে সাপ থাকে। সেটা বাস্তুসাপ। তার ভয়ে বাড়িতে অন্য কোনো সাপ ঢুকতে পারে না। তাই ওটাকে মারতে নেই। মারলে অমঙ্গল হয়, নানা বিষাক্ত সাপ বাড়িতে ঢোকে, অধিবাসীদের অনিষ্ট করে। কিন্তু বাস্তুসাপ কারো ক্ষতি করে না। তাই সয়ফরচান যখন সাপটিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছেনি ঘোরায় এমন সময় তার দাদির হাত এসে খপ করে তার ছেনি বাগানো হাত ধরে ফেলে। বলে, ‘না, এইটা বাস্তুসাপ। খবদ্দার।’
আখ্যানের মধ্যভাগেও দেখা যায় সাপটি একদিন ঘুমন্ত দাদির বুকের ওপর ফণা তুলে বসে আছে। তাহলে সে নোলকের অন্বিষ্ট করল কেন? এর একটা লৌকিক কার্যকারণ দিয়েছেন লেখক। তা হচ্ছে, সাপটির আবাসে পড়েছিল নোলকের পা। ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সে দংশন করতে বাধ্য হয়। যেমন, ‘দেখা যায় নোলকের পায়ের চিহ্ন ইন্দুরের গাতার ভিতর। লেপা মেঝে ভেঙে এক বিঘত নিচে। সয়ফরের আর সন্দেহ থাকে না। উপরে লেপাপুছা ছিল গুড়ি চাউলের শাদা লাল আলপনা ছিল। ভিতরে ইন্দুরের গাতা। বৃদ্ধা দাদির হাত থেকে কুপ্পি ছিনিয়ে নিয়ে লাফিয়ে উঠে সয়ফর পায়ের পাতায় সাপের দংশন খোঁজে।’
আরো একটি লৌকিক কার্যকারণ দেখতে পাই প্রাচ্যের প্রারম্ভিক ভাগে। যেমন, ‘আখ খেতের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা পথে উল্টাসুঙ কুইশার পাতায় দীর্ঘ সাড়ে তিন হাত একটি সাপের ছোলঙ পড়ে থাকতে দেখে ইস্রাফিল বিস্মিত হয়। … সাপের ছোলঙের বিস্ময় ও নামী চরের বিপদ – দুটো মিলে স্থির করতে পারে না কি করবে সে। … তবে ভয়কে পাশ কাটিয়ে আস্ত সাপের খোলসের বিস্ময় তাকে নতুনতর খেলা ও আনন্দ দেখায়। সে বুঝতে পারে সুরুতালিকে ভয় দেখান দরকার। ইস্রাফিল ধীরে আঁশ না ছেড়ে মত সাপের ছোলঙটি কুইশারের নিচের মরাপাতা থেকে খসায়। তারপর নীলাকাশে সাপপা ঘুড়ির লেজের নাচনে নাচায় খানিক সেটি।’
লৌকিক প্রবাদ, সাপের ছোলঙ নিয়ে খেলা করলে কিংবা সেই ছোলঙকে অবহেলা করলে, পায়ে দললে সাপ প্রতিশোধ নেয়। তাই নোলককে সাপে কাটার পর ইস্রাফিলের আক্ষেপ, ‘ক্যান হাইগো খোদা আমি ঠ্যাঙ্গামারির চরে ফানক সাপের ছোলঙ উড়াইলাম। সেই সাপে পরতিশোধ নিছে।’
প্রাচ্যে মূলত মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের কথাই ব্যক্ত হয়েছে। ‘কোনটা তবে কী থেকে পৃথক হবে’ – এটি প্রাচ্যের একটি সংলাপ। সংলাপটি সয়ফরচানের। মানুষ ও প্রকৃতি এক ঐক্যে এসে মিলিত হয় এখানে যে, মানুষ থেকে অন্য প্রাণীদের পৃথক করা যাবে না। প্রকৃতিকে ধ্বংস করা মানে মানুষের জয় নয়। অন্য প্রাণীদের বিনাশ করে মানুষ নিজেরই বিনাশ ডেকে আনছে। মানুষ কোনো একক প্রাণী নয়, এককভাবে বাঁচতে পারে না। তার জন্য অনেক কিছুর দরকার হয়। সাগর, নদী, পাহাড়, বৃক্ষ, প্রাণী, চন্দ্র, সূর্য – সবই মানুষের সহায়ক শক্তি, বা পড়শি। মানুষ যদি এসবকে বাদ দিয়ে একা বাঁচতে চায়, তবে বিপন্ন হবে তাদের অস্তিত্ব। কিন্তু এ-সত্য মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না সহজে। সয়ফরচান পেরেছিল। প্রাচ্যের অন্তপর্বে লেখা, ‘সয়ফর ছেনি হাতড়ে নেয়। সাপটি তার দিকে তাকিয়ে সতর্ক হয়। ফণা নামাতে গিয়ে আবার সাঁই করে লকলকে জিভে বুকে ভর দেয়। সেই ভর দেড় হাত উঁচুর কম নয়। একবার ডানে একবার বাঁয়ে নড়ে নড়ে ফণার প্রতাপ দেখায়। প্রতাপ না সৌন্দর্যরাঙা বাহার। ফাল্গুনের ভোরের রাঙা মেঘাবলী বিচিত্রিত কমলাবর্ণের ফণা। সে উদ্ভিদ। মাটি ভেদ করে উঠেছে। বৃক্ষরাও ভূমিভেদী বিচিত্র ফণা। সে ফণা দোলে চিকন বাতাসে। কোনটা তবে কি থেকে পৃথক হবে। হায় সয়ফর দ্বিখণ্ডিত হয়। তবে কে কার মতো।’
‘হায় সয়ফর দ্বিখণ্ডিত হয়।’ সাপ নয়, দ্বিখণ্ডিত হয় সয়ফর নিজেই। বাহ্যিক অনৈক্যের মাঝে ঐক্যের সন্ধান পেয়ে সে নিজের কাছে পরাজিত হয়। এই যে ঐক্য – বৃক্ষ ও সাপে ভেদ নেই – মূলত এ-ঐক্যই প্রাচ্যের মূল সুর। মানুষের জন্য বৃক্ষ প্রয়োজন। প্রয়োজন সাপেরও। কারণ সাপও বৃক্ষের মতোই ভূমিভেদী, সেও প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতিকে বিচ্ছিন্ন করে মানব-অস্তিত্ব অসম্ভব। মানুষ ও প্রকৃতি কোনোটাই কোনোটা থেকে পৃথক নয়, একে অন্যের পরিপূরক। সাপটি প্রকৃতির সৌন্দর্য। তারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে ঠিক মানুষের মতোই। সাপ থাকবে তার আবাসে, মানুষ থাকবে মানুষের আবাসে। পরস্পরের সীমানা লঙ্ঘন করলেই প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দপতন ঘটে। নোলকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তার পা সীমানা ডিঙিয়ে সাপের সীমানায় পড়েছিল বলে সাপ নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে দংশন করতে বাধ্য হয়েছিল। এটাই হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। সয়ফর এ-নিয়মকেই শান্তচিত্তে মেনে নেয়। এই হচ্ছে প্রাচ্যের মূল সুর, মূল দর্শন।
এই আখ্যানেও জীবনের বাস্তবতার হুবহু প্রতিফলন ঘটেনি। বাস্তবে কেউ একটি সাপকে হত্যা করার জন্য রাতভর ইঁদুরের গর্ত খোঁড়ে না। বাস্তবে কেউ হন্তারক সাপকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দেয় না, তার ফণার সৌন্দর্যে অভিভূত হয় না। সেলিম আল দীন এই আখ্যানে সৃষ্টি করেছেন 888sport live footballের বাস্তবতা। এই বাস্তবতা জীবনসম্ভূত হলেও বাস্তব নয়। সে-কারণে আখ্যানটি পড়তে পড়তে আমাদের মধ্যে বিরক্তি আসে না, একঘেয়ে লাগে না।
ধাবমান উপাখ্যানেও সেলিম আল দীন জীবনবাস্তবতার বাইরে এক 888sport live footballবাস্তবতা নির্মাণ করেছেন। এই আখ্যানেও আমরা দেখতে পাই সর্বপ্রাণবাদের গুরুত্ব। স্বর্ণবোয়ালের প্রধান চরিত্র মাছ, প্রাচ্যের সাপ এবং ধাবমানের মোষ। ধাবমানের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি মোষ, যার নাম সোহরাব। তার রাগ আছে, দুঃখ আছে, শোক আছে, বেদনাও আছে। সেও মানুষের মতো ভাবতে পারে। তার ও মানুষের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। তার যে কেবল বেঁচে থাকার অধিকার আছে, তা নয়, সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুর অধিকারও আছে। এমনকি মৃত্যুর পর স্বর্গ বা নরকেও তার স্থান হওয়া উচিত।
ধাবমান পড়ে আমার মনে হয়েছিল, আচ্ছা, এ কি সম্ভব? একটি মোষ কি কথা বলতে পারে? একটি মোষ কি মানুষের মতো আচরণ করতে পারে? সর্বোপরি একটি মোষ নিয়ে কি একটা আখ্যান রচনা হতে পারে? এ কি বিশ^াসযোগ্য? পরবর্তীকালে জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্ম পড়ে আমার সেই সংশয় দূর হয়। অ্যানিমেল ফার্মে যদি পশুরা চরিত্র হতে পারে, তবে ধাবমানে কেন নয়? শরৎচন্দ্র যদি মহেশকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করতে পারেন, সেলিম আল দীন কেন মোষ সোহরাবকে করতে পারবেন না?
দুই
এই গদ্যের শিরোনাম দিয়েছি ‘দৃষ্টান্তহীন 888sport live footballের রূপকার।’ সেলিম আল দীন দৃষ্টান্তহীন কী 888sport live football রচনা করলেন? চাকা, হরগজ, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, পুত্রসহ তাঁর অধিকাংশ রচনাই দৃষ্টান্তহীন। অর্থাৎ এমন আঙ্গিকে তাঁর পূর্বজ কেউ 888sport live football সৃষ্টি করেনি। সেলিম আল দীনের পরিচিতি নাট্যকার হিসেবে। উপাধি নাট্যাচার্য। তাঁর এই পরিচিতি গড়ে ওঠার প্রধান কারণ তাঁর রচনাসমূহকে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চে পরিবেশন করতেন, করে থাকেন। সে-কারণেই তাঁর এই পরিচিতি লাভ করেছে ব্যাপক পসার। যদি তাঁর রচনাসমূহ মঞ্চে না উঠত, তবে তাঁর অন্য পরিচিতি হতে পারত। সেই পরিচিতি নিশ্চিতভাবেই কথা888sport live footballিক বা ঔপন্যাসিক। 888sport live footballবোদ্ধারা তাঁকে দুটির কোনো একটি পরিচয়ে পরিচিত করতেন। বলতেন, তাঁর রচনাসমূহ 888sport alternative linkেরই নতুন ফর্ম, নতুন ধারা।
সেলিম আল দীনের বইগুলো পড়ার সময় মনে হয়, নাটক নয়, 888sport alternative link পড়ছি। কখনো কখনো মনে হয়, তার মধ্যে কথা888sport live footballের প্রবণতা ছিল। আবার কখনো কখনো মনে হয়, না, তার মধ্যে আসলে কাব্যপ্রবণতা অধিক ছিল। আবার কখনো মনে হয়, তার মধ্যে নাট্যপ্রবণতাই অধিক ছিল। স্বর্ণবোয়াল পড়ে কে না বলবে এটি 888sport alternative link নয়? চাকা, হরগজ, প্রাচ্য, নিমজ্জন, ধাবমান বা পুত্র পড়ে কে না বলবে এগুলো 888sport alternative link নয়? এগুলো আমি 888sport alternative link হিসেবেই পাঠ করেছি। তাঁর এসব রচনাকে 888sport alternative link বললে ভুল কিছু বলা হবে না। কেননা, একথা সবার জানা যে, সেলিম আল দীন ‘ননজেনরিক’ 888sport live footballধারার অনুসারী। অনুসারী না বলে প্রবর্তক বলাটাই শ্রেয়। কেননা তিনিই এই 888sport live footballধারা প্রবর্তন করেছিলেন। অর্থাৎ তাঁর রচনাসমূহকে 888sport live footballের প্রচলিত কোনো ফর্মে ফেলা যায় না। কীর্ত্তনখোলা-পরবর্তীকালে তাঁর রচনাসমূহকে নাটক যেমন বলা যেতে পারে, তেমনি 888sport alternative link, গল্প, 888sport app download apkও বলা যেতে পারে। নিমজ্জনে যেমন :
তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ * তোমার দুই হাতেই তো ধরা ওই দূর নীলাভ্রের ছত্রদণ্ড * দুই কানে কালাকালের বিস্তারিত সমুদ্রের উদ্বেলিত আহ্বান * পাঠ করো পাঠ করো অন্ধকারের নিঃশব্দ নিশিলেখা * সেইখানে বোধিদ্রুম * পাঠক করো নতুন কালের গ্রন্থ। চলো মানুষ। চলো মানুষ * যুগযুগান্তরের দিগন্তরেখা ভেদ করো। বিকীর্ণ ঊষালোকে তোমাদের সমবেত যাত্রা। দেশকাল ভূগোল ভেদকারী দিব্য মানবলোকে। সে যাত্রার শেষ নাই। সীমা নাই। সে কেবল চলা * চলতে থাকা * হরষে অপার দুঃখে মহাবিশ্বের নাভিকেন্দ্রে পৌঁছাবার অফুরন্ত অভিযাত্রা। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে সৃষ্টির বীজাঙ্কুর পুঁতে দেবে * এই মর্তলোকের বৃক্ষপুষ্পছায়াসংসর্গের 888sport sign up bonus বহন করে বীজ পুঁতে দেবে * শুভ ভাবনার বৃক্ষ বীজ। সে বীজ তোমার হাতের মুঠোয়। … চলো নতুন ভাবনাভূমিতে নব্যকালের নিশ্চিত গ্রহভূমিতে। আলোহীন উল্কাপিণ্ডের গায়ে সঙ্গীতের সুর লিখে দাও রাষ্ট্রহীন দেশহীন কালহীনতার আনন্দিত সর্বমানবের মিলিত উৎসবের ভাষায়। ধূমকেতুর জ¦লন্ত পুচ্ছে ঢেলে দাও সুগন্ধের নির্যাস। চাঁদ চাষ করো। কার্পাস তুলার চাষ। সেই কার্পাসের পোশাক হোক সকল মানুষের সৌরযাত্রার বসন। চলো মানুষ।
নিমজ্জন থেকে উদ্ধৃত অংশটুকু পড়ে কি 888sport app download apkর রস আস্বাদন করা যাচ্ছে না? নিশ্চিতভাবেই যাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে একে কথা888sport live football হিসেবেও পড়া যাচ্ছে। আবার যখন মঞ্চাভিনেতাদের মুখে এই কথাগুলো উচ্চারিত হয়, তখন মনে হয়, আরে! এ তো নাটকেরই সংলাপ! নাটকের জন্যই লেখা হয়েছে এসব কথা।
সেলিম আল দীন এই 888sport live footballরীতির নাম দিয়েছেন ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদ’। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী 888sport live chatতত্ত্ব। পাক্ষিক আনন্দ আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথমদিকে নাটক লিখতে গিয়ে আমি আঙ্গিক এবং বিন্যাস নিয়ে খুব একটা চিন্তা করিনি। যা মনে এসেছে তাই লিখে গেছি। কীর্ত্তনখোলা নাটকটি লেখার সময় আমার মনে হলো, নাটক কেন 888sport app download apkর গভীরতা অর্জন করতে পারবে না। কেনই বা তাতে 888sport alternative linkের বিস্তৃতি থাকবে না। ইউরোপীয় একরৈখিক নাটককে আমার কাছে পানসে মনে হতে লাগল। সংলাপের পর সংলাপ দিয়ে ইউরোপীয় গাঁথুনি আমার একঘেয়ে মনে হতে থাকল। অনুবর্তনের ভারে ক্লিষ্ট ইউরোপীয় নাট্যধারা আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হলো। ঠিক সেই সময় আমার মাতৃভূমির কালজয়ী লেখকেরা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। কখনো মুকুন্দরাম, কখনো আবার শাহ মুহম্মদ সগীর। কখনো বা আলাওল কিংবা কখনো আসামের শংকর দেব। নাটককে আমি 888sport app download apk-888sport alternative linkের যুগল বন্ধনে একটা পূর্ণাঙ্গ 888sport live football-কর্ম হিসেবে দেখার চেষ্টা করি। এটাকেই পরে আমি ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদ’ নামে 888sport live chatতত্ত্বের আকারে প্রকাশ করি। ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদ’ আসলে এমন একটি 888sport live chatকর্ম যাতে থাকে পদ্যের সুষমা, 888sport alternative linkের গতিময়তা আর সুরের সুমিষ্টতা। এ 888sport live chatতত্ত্বের ভিত্তিতে আমার প্রতিটি নাটকে নৃত্য-গীত পদ্য-পয়ার যুক্ত থাকে।’ (সূত্র : সেলিম আল দীন বললেন, সংকলক ও সম্পাদক : নিঝুম শাহ, বিদ্যাপ্রকাশ)।
সেলিম আল দীনের এই ননজেনরিক রীতি দৃষ্টান্তহীন। দ্বৈতাদ্বৈতবাদ 888sport live chatতত্ত্ব দৃষ্টান্তহীন। এই রীতিতে কেউ আগে লেখেননি। আর দৃষ্টান্তহীন তাঁর ভাষা। তাঁর আখ্যানের শব্দচয়ন কারো সঙ্গে মেলে না। পড়লেই বোঝা যায় বাংলা 888sport live footballে ভাষার যে ধারাবাহিকতা, সেই ধারাবাহিকতায় পড়ে না সেলিম আল দীনের ভাষা। তা একেবারেই আলাদা, স্বতন্ত্র। আরো দৃষ্টান্তহীন তাঁর বাক্যগঠন। কমা, সেমিকোলন বা হাইফেনের কোনো ব্যবহার নেই তাঁর বাক্যে। কারণ এসব চিহ্ন পাশ্চাত্য থেকে আসা। তিনি উপনিবেশের সমস্ত চিহ্ন তাঁর 888sport live football থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছেন। প্রাচ্যে, অর্থাৎ ভারতবর্ষে, অর্থাৎ বাংলায় এসব চিহ্ন ছিল না। তিনি সেই ‘না থাকায়’ ফিরে যেতে চেয়েছেন। অর্থাৎ শেকড়ের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছেন। নিজের রচনায় ব্যবহার করতেন স্টার চিহ্ন বা তারকাচিহ্ন, আর ব্যবহার করতেন ড্যাশ। প্রাচীন বাংলা 888sport live footballে দাড়ি ছিল। দাড়িকে সোজা করে দিলে ড্যাশ হয়। কমা ছিল না, কমার পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেছেন তারকাচিহ্ন। ধাবমানের মধ্য দিয়ে তিনি ঔপনিবেশিক অবলেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়ার একটা চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতিও গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ভাষ্যানুযায়ী, ‘ধাবমান হচ্ছে পাশ্চাত্য রীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে আসার চূড়ান্ত নিরীক্ষা। পরবর্তী সকল রচনায় ঐতিহ্যবাহী বাঙলা রীতির সম্পূর্ণ প্রয়োগ ঘটানোর প্রচেষ্টা থাকবে আমার। তাতে থাকবে না পাশ্চাত্য নিয়ম-রীতির একটি চিহ্নও।’
এই ধরনের নিরীক্ষা বাংলা 888sport live footballে নজিরবিহীন। আর সে-কারণে সেলিম আল দীনকে বলছি দৃষ্টান্তহীন 888sport live footballিক। তিনি দৃষ্টান্তহীন 888sport live footballের রূপকার।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.