সৈয়দ শামসুল হক : নায়ের ভিতর থিকা ডাক দ্যায় ভুবন

আবুল মোমেন
গত শতাব্দীর পাঁচের দশক কেবল বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূচনাকাল ও স্বাধীন 888sport appsের গর্ভকালই নয়, এ দশকেই বাঙালি মুসলমানসমাজ যথার্থ অর্থেই আধুনিককালের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। সাতচল্লিশের দেশভাগ উপমহাদেশ জুড়ে অনেক অশুভ ঘটনা ও প্রবণতার জন্ম দিলেও এ যেন বাঙালি মুসলিমসমাজের জন্যে এক বিভাজনরেখা। কলকাতার উনবিংশ শতকের জাগরণ মুসলিমসমাজকে সরাসরি ছোঁয়নি, কিন্তু ঔপনিবেশিক পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে একদিকে এর পরোক্ষ প্রভাব আর অন্যদিকে সরাসরি পাশ্চাত্যের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও অনিবার্য হওয়ায় সমাজে জাগরণের সূচনা দেখা দেয়। ফলে সময়টা ছিল জেগে ওঠার, এ কালান্তর পর্বের তরুণ লেখক আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম বই, গল্পগ্রন্থের, নাম তাই যেন জেগে আছি, (প্রথম প্রকাশ ১৯৪৮)। মানবসমাজের
জাগরণ প্রধানত নানান সৃজনশীল ধারায় প্রকাশ পেতে থাকে। সনাতন বা
প্রচলিতের সঙ্গে এর নকীব ও কর্মীদের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব স্বাভাবিক ও অনিবার্য; তাছাড়া তাদের সৃজনকর্মের নতুনত্ব ও অভিনবত্ব প্রচলিতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর। ফলে এ-কালের তরুণ কুশীলবদের মধ্যে বিদ্রোহী চেতনা লক্ষ করা যায়, যা পুরনোকে ভেঙে নতুন কিছু গড়ার স্বপ্ন দেখে, অনেকেই স্বপ্নের জোরালো আবেগে তাড়িত হন।
সৈয়দ শামসুল হক এই দশকটিতেই তাঁর দীর্ঘ 888sport live footballযাত্রা শুরু করেছিলেন। উত্তরের শান্ত মফস্বল শহর কুড়িগ্রামে তাঁর জন্ম, এবং কৈশোর পর্যন্ত সেখানেই কাটিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্যে তিনি আসেন রাজধানীতে। তার আগেই, শৈশবেই, তাঁর মধ্যে লেখার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। মনে হয়, এই সাদামাটা বক্তব্যে সৈয়দ হকের লেখার তাড়নার সবটা বোঝা যাবে না। বোধহয় বলা উচিত, তাঁর আত্মপ্রকাশের স্বপ্নে যে-তীব্রতা ছিল তা তাঁকে দ্রুত সকল – মানসিক ও বাহ্যিক – মফস্বলিয়ানা ঝেড়ে ফেলে জায়মান আধুনিকতার সঙ্গে মানানসই হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। 888sport appর আধুনিক 888sport live football-সংস্কৃতির নবীন কারিগরদের মধ্যে যাঁরা তাঁরই মতো মফস্বল ও গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছিলেন, তাঁদের চেয়েও হককে সহজাতভাবে টেনেছে নাগরিক কবি, 888sport live chatী ও লেখকগণ – শামসুর রাহমান, ফজলে লোহানী, আমিনুল ইসলাম বা মর্তুজা বশীর সহজেই তাঁকে আকৃষ্ট করেছিলেন। তখনকার ধারা অনুযায়ী সৈয়দ হক বামপন্থী হননি, প্রগতিশীল রাজনীতিতে জড়াননি, ভাষা-আন্দোলনেও সরাসরি ভূমিকা নেননি, যদিও হাসান হাফিজুর রহমান-সম্পাদিত সংকলনে তাঁর 888sport app download apkটি অনেকেরই নজর কেড়েছিল, প্রশংসিত হয়েছিল। তখনকার সময়ের এবং জাতীয় ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজকের দিনের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যেসব 888sport live football ও সংস্কৃতি সম্মেলন তখন 888sport app ও 888sport app শহরে আয়োজিত হয়েছিল, তাতে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণের খবর পাই না।
সৈয়দ হক, সম্ভবত তখন খুবই সচেতন ছিলেন যে, তিনি রাজনীতি বা নির্দিষ্ট কোনো ভাবাদর্শে গা ভাসিয়ে চলবেন না, তাই তিনি যেন সযতেœ নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে চলেছেন। তাঁরই ভাষা ধার করে বলা যায়, সৈয়দ হক সচেতনভাবে এবং সযতেœ নিজেকে নির্মাণ করেছেন। জীবনে এবং সৃজনে তিনি আধেয় সম্পর্কে সচেতন তো থাকতেনই, সেইসঙ্গে আঙ্গিক ও বাহন (লেখার ক্ষেত্রে ভাষা, পোশাকের ক্ষেত্রে কাপড় ও ছাঁট) সম্পর্কেও খুঁতখুঁতেভাবে সচেতন ছিলেন বলে মনে হয়। তাঁর পরিচ্ছদ, কথোপকথন ও ভাষণের ভাষা ও ভঙ্গি, জীবনযাপন, সঙ্গীসাথি সবই যেন পরিকল্পিত নির্মাণ এবং চয়ন। বিশেষভাবে, এবং ভূয়সী প্রশংসার সঙ্গে বলতে হবে, তাঁর 888sport live footballের ভাষার কথা। যখন যা লিখেছেন তার আঙ্গিক এবং ভাষা নিয়ে তিনি অবশ্যই ভাবনায় সময় দিতেন প্রচুর এবং যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে লেখায় হাত দিতেন। একটি সাক্ষাৎকারে সৈয়দ হক বলেছেন, তিনি পুরো বিষয় – 888sport alternative link হলে পুরো কাহিনি – ভেবে নিয়ে, বা তাঁর ভাষায় করোটিতে ধারণ করে, তারপর লিখতে শুরু করতেন, আচমকা কোনো সুন্দর পঙ্ক্তি বা লাইন কিংবা আইডিয়ার পেছনে তিনি ছোটেননি। নির্দিষ্ট রচনাটির প্রায় সবটা ভেবে কাজ শুরু করতেন – হয়তো লেখা এগিয়ে নিতে নিতে অনুপুঙ্খের নানা উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন, চয়ন ও নির্মাণ করে নিয়েছেন।
888sport live footballচর্চার শুরুতেই, এক অর্থে, তিনি সব্যসাচী – কাব্য ও গদ্য, 888sport app download apk ও গল্প দিয়েই লেখকজীবনে পদার্পণ করেন। তখন উভয় বাংলাতেই, 888sport live football ও সংস্কৃতি অঙ্গনে, বামপন্থারই জোয়ারের মধ্যে তরুণদের মনে 888sport app download apk পত্রিকার সম্পাদক এবং বাংলা 888sport live footballে আধুনিকতার অন্যতম প্রবক্তাব্যক্তি বুদ্ধদেব বসু – ঘোষিতভাবেই বামবিরোধী এবং কলাকৈবল্যবাদী হওয়া সত্ত্বেও – গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন, তাঁর অভিভাবকত্ব মেনেছিলেন অনেকেই। ওই সময়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরীর মতো প্রধান কবিরা বামপন্থী রাজনীতির আবাহন বা প্রত্যক্ষ রাজনীতির হলাহল থেকে দূরত্ব রেখে চলেছেন। সকলেই চেয়েছেন আধুনিক ও নাগরিক কবি হতে।
ছয়ের দশকের প্রথমার্ধে, অনেকটাই বুদ্ধদেব বসুর দৌত্যে, তরুণ কবি ও 888sport live footballিকদের মধ্যে ইউরোপীয় নাগরিক আধুনিকতার প্রতি ঝেঁাঁক বেড়েছিল। ফরাসি ভাষায় ব্যুৎপত্তি না থাকায় বুদ্ধদেব বসুর বোদলেয়রের 888sport app download apkর 888sport app download apk latest versionের যাথার্থ্য নিয়ে আজ দক্ষ ফরাসি ভাষাবিদদের কাছ থেকে অনেক সমালোচনা উঠলেও তখন ভূমিকা, কালপঞ্জি ও টীকাসহ এ-বইটি আধুনিকতা-পিয়াসি তরুণদের মনোজগতে ঘোর সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিমের অনুকরণে, অনেকটাই বুদ্ধদেবের গদ্যের আকর্ষণী-শক্তির গুণে, কবিযশোপ্রার্থী তরুণদের ঝোঁক গেল 888sport live chatবিপ্লব-উত্তর পুঁজিবাদের উত্থানকালীন ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা, তার নিঃসঙ্গতা ও মানসের বিবিক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ও প্রচলিতকে তীব্র ঘৃণা ও আমূল প্রত্যাখ্যানের প্রবণতার দিকে। ইউরোপীয় বাস্তবতার এই প্রভাব তখনকার গ্রাম ও মফস্বলপ্রধান দেশে কতটা বাস্তব বা প্রাসঙ্গিক সে-ভাবনার চেয়ে জরুরি মনে হয়েছে পাশ্চাত্যের আধুনিকতাকে ধারণ করা নিয়ে। এতে যে নিজের বাস্তবতাকে টপকে বা এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপার ঘটে, তা সংশোধনের তাড়না তাঁদের সকলকেই স্বদেশমুখী করেছে একসময়। এই সময়ে সৈয়দ হকের 888sport app download apk ও গল্পে পাশ্চাত্যমুখী আধুনিকতার দেখা মেলে সহজেই। তাঁর বিতর্কিত এবং বহুল আলোচিত 888sport alternative link খেলারাম খেলে যার (১৯৭৩) নামকরণে মার্কিন মুলুকের সে-সময়ের রাগী তরুণ লেখকদের আপ্তবাক্য প্লে-অন প্লেবয়ের ছায়া পাই। তবে তারও আগে আধুনিক ধ্রুপদী আইরিশ নাট্যকার জন এম সিং (১৮৭১-১৯০৯) লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত নাটক প্লেবয় অব দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড। খেলারাম খেলে যার মতো এটিও প্রথম পর্যায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিল। পরে অবশ্য এ-নাটক জনসমাদৃত হয়, তাঁর প্রধান কাজ হয়ে ওঠে। হকের ক্ষেত্রে অবশ্য প্রথমাংশটাই সত্য, কারণ পরেই তিনি তাঁর প্রধান কাজগুলো করেছেন। অবশ্য প্লেবয়দের সন্ধান আমরা পূর্বেকার 888sport live footballে যে একদম পাইনি তা নয়, যাকে বলা হয় পিকারেস্ক (ঢ়রপধৎবংয়ঁব) নভেল, যেখানে নায়ক এক সার্বক্ষণিক অভিযাত্রী, নানান রম্য ও রমণীয় অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এগোতে থাকেন, যেমন হেনরি ফিল্ডিংয়ের (১৭০৭-৫৪) টম জোনস, সার্ভেন্তেসের (১৫৪৭-১৬১৬) জন কিহোটে। 888sport app download for android করতে পারি, ইংরেজ রোমান্টিক কবি বায়রনের (১৭৮৮-১৮২৪) ডন জুয়ান অথবা আমাদের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) শ্রীকান্তকে, যাঁরা অবশ্যই বোহেমিয়ান, সনাতন মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করে, সামাজিক সব প্রথা ডিঙিয়ে নিজের খেয়ালে চলেছেন, জীবন কাটিয়েছেন। তবে সৈয়দ হকের বাবর আলী, টম জোনস বা কিহোটে কিংবা শ্রীকান্তের মতো জীবনের বড় পরিসরের গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের করে না, নিজেও জীবনের তাৎপর্যহীনতা কিংবা জৈব-তাড়নার গুরুত্বের কাছে সত্তার অন্যতর – কিংবা উচ্চতর – প্রশ্নের মুখোমুখি হয় না, বা পাঠককেও মুখোমুখি করে না।

দুই
ছয়ের দশকের শুরু থেকেই, রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও শিক্ষা-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেন বাঙালির প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আত্ম-আবিষ্কারের অভিযাত্রার পরিসর ও তীব্রতা বাড়তে থাকে। আর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের পর থেকে 888sport appsের জনজীবনে রাজনীতিই মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। কোনো সংবেদনশীল মানুষের পক্ষেই বাঙালির এই জাতীয়তাবাদী জাগরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। বরং মুখ ফেরাতে হয়েছে নিজের শিকড়ের দিকে। বুঝে নিতে হয়েছে নিজের আদত পরিচয়, প্রকাশ করতে হয়েছে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে নিজের অবস্থান এবং পক্ষপাত। এ সময় বড় ও মহৎ মোড় পরিবর্তন ঘটল সময়ের সবচেয়ে শক্তিমান কবি শামসুর রাহমানের। শামসুর রাহমান ফিরলেন নাগরিক মধ্যবিত্ত বাঙালির সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জাগরণের সূত্র ধরে। তিনি নাগরিক জীবনের কবিই থাকলেন, কিন্তু জড়িয়ে পড়লেন সেই নাগরিকের রাজনৈতিক স্বপ্নের সঙ্গে, তার প্রথম প্রকাশ ঘটল ভালোভাবে পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ নিজ বাসভূমেতে (১৯৭০)। এই সময় থেকে তিনি প্রায় হয়ে উঠলেন এক উদীয়মান জাতির কাব্য-ভাষ্যকার, এমন এক মুখপাত্র, যিনি 888sport app download apkয় তুলে আনেন আন্দোলিত জাতির স্বপ্ন, আবেগ এবং লড়াইয়ের চরম লক্ষ্য। আর লোক-লোকান্তর ও কালের কলসের কবি আল মাহমুদ ফিরলেন শাশ্বত লোকায়ত জীবনের দিকে। লোকভাষা, উপমা, চিত্রকল্পের এক নতুন মোহময় কিন্তু ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতার তাৎপর্যপূর্ণ রূপ তৈরি করলেন তাঁর সোনালী কাবিন (১৯৬৭) কাব্যগ্রন্থে।
রাজনীতি এবং জাতীয়তাবাদী স্বপ্ন যখন একটি জাতিকে জাগাতে থাকে, তখন নিশ্চিতভাবেই আবেগ ও আদর্শে তাড়িত হন কবি বা লেখক। কিন্তু সৈয়দ হক তাঁর 888sport live football888sport live chatে নির্মাণ-কৌশল, প্রকরণ ও আঙ্গিক এবং ভাষাশৈলীতে স্বকীয় ধারা নির্মাণে নিবিষ্ট ছিলেন এবং জাতীয় জাগরণের চেয়ে ব্যক্তির মনোজাগতিক ও মনোদৈহিক টানাপড়েন, সংকট তাঁকে ভাবিয়েছে বেশি। রক্তগোলাপ (১৯৬৪) এবং আনন্দের মৃত্যুতে (১৯৬৭) তাঁর এমন অনেক গল্প পাই। ওই উদ্দাম পাগলপাড়া সময়ে তাঁকে ভুল বোঝার সমূহ সম্ভাবনা সত্ত্বেও হক ভিড়ের মধ্যে মিশে যাননি। সৃজনশীল 888sport live football, 888sport app download apk ও কথা888sport live footballে রচনার ফল্গু একটু স্তিমিত হলেও এ-সময় তিনি নিজেকে নিয়োজিত করলেন live chat 888sport-সাংবাদিকতায়, live chat 888sport-পরিচালনায়, সংলাপ ও গান রচনায়, হয়তো ভিতরে ভিতরে নিজেকে আরো গুছিয়ে নিতে
থাকলেন পরিণত স্থায়ী রচনার জন্যে। তিনিই এদেশে প্রথম সার্বক্ষণিক লেখক। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে, লেখা থেকে উপার্জনের নিশ্চয়তা অর্জিত হলে সৈয়দ হকের আগেও বাংলা ভাষার কোনো কোনো লেখক লেখাকেই পেশা করেছেন, যেমন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু। কিন্তু সৈয়দ হক আর্থিক নিশ্চয়তার অপেক্ষা করেননি।
প্রথম চমক এলো মুক্তিযুদ্ধের আগের বছর ১৯৭০ সালে – বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা নামে দীর্ঘ কাব্যের মাধ্যমে। এখানে সৈয়দ হকের হাতে 888sport app download apk তাঁরই জীবন ও প্রতিবেশের ছবি, ঘটনা, চরিত্র তুলে আনে, আর সব ছাপিয়ে এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে তাঁর আন্তরিক উচ্চারণ প্রবাহিত হয়েছে – কখনো দুর্বার গতি, কখনো 888sport sign up bonusকাতরতায় মন্থর, কখনো উদ্দীপনায় উদ্দাম, কখনো-বা উৎকণ্ঠায় সচকিত, কখনো শোনা গেছে দ্বিধান্বিত স্বর, কখনো-বা প্রগলভ চঞ্চল উচ্চারণ। 888sport app download apk ফিরে এলো জীবন, ইতিহাস ও এই মাটির কাছে। তা পেরিয়ে যখন প্রকাশিত হয় পরাণের গহীন ভিতরে (১৯৮১), চোদ্দো পঙ্ক্তির দৃঢ় বাঁধুনিতে আঞ্চলিক ভাষার জৌলুস যখন ফুটে বেরোয়, তখন আমরা সৈয়দ শামসুল হকের পুনর্জন্মের পূর্ণতা দেখলাম, যিনি জীবনকে নিজের প্রতিবেশ ও জনমানুষ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে দেখলেন। সোনালী কাবিনের কথা মনে পড়তে পারে কিন্তু পার্থক্যটাও যেন আমাদের নজর না এড়ায়। আল মাহমুদ আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগে মুসলিম ধর্মসাংস্কৃতিক প্রতিবেশ রচনা করেও আধুনিক মানসের প্রকাশ ঘটালেন আর সৈয়দ হক ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমাজের প্রান্তজনের মুখের ভাষার আধুনিক প্রয়োগে নতুন মাত্রা যোগ করলেন। এ কাব্যে রচিত হলো স্বদেশ সমকাল স্বজন-নিবেদিত সব পঙ্ক্তি – তাঁরই সোদর, সোদরপ্রতিম মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে। সেইসঙ্গে তাদের প্রাধান্য ও অবদানকে মর্যাদা দিয়ে তিনি নিজের সৃষ্টির যেন প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করলেন এবং জনপ্রিয় হয়েও হকীয় স্বাতন্ত্র্যও বজায় রাখলেন। হকের আজীবনের সাধনা যেন নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে চলল।

তিন
কিন্তু তিনি তো সৈয়দ শামসুল হক। এটুকু অর্জনে তৃপ্ত নন, কেবল দেশজ আল্পনায় তাঁর পট পূর্ণতা পাবে না, বরাবর বুঝতে চেয়েছেন পশ্চিমের আধুনিকতা। পঠনপাঠন চলেছে বরাবর, বিলেতপ্রবাসের সুযোগ হাতছাড়া করেননি। পাড়ি দিলেন লন্ডনে, থাকলেন বেশ কিছুদিন – মুক্তিযুদ্ধ ও পঁচাত্তরের মতো ঘটনা ঘটে গেল তাঁর প্রবাসজীবনে।
বহু কাল পরে বাংলা 888sport live football পেল সার্থক কাব্যনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, ১৯৭৬ সালে। মাটিলগ্ন দেশজ ভাষায় দেশের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়ের দায়বদ্ধতায় লেখা এ-নাটক। এর কোনো পূর্বসূরি বাংলাভাষায় পাওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথের বিসর্জনের (১২৯৭ বঙ্গাব্দ) সঙ্গে এর তুলনা চলবে না, কাব্যনাটক হলেও হক তাঁর নাটককে আদ্যন্ত 888sport app download apkর পরিচিত ছকে বাঁধেননি, এটি এমন 888sport live football যা রচনায় কবি-নাট্যকার লক্ষ রেখেছেন মঞ্চায়নের দিকে, অভিনয়ের প্রয়োজন বুঝে ভূমিকায় নির্দেশকের জন্যে নির্দেশনায় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। নাটকের করণকৌশল নিয়ে রচিত অনুপম বুদ্ধিদীপ্ত এক রচনায় তিনি নাটক লেখার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আসলে, প্রথম নাটক রচনা বলেই, আমি গোড়ার দিকে আদৌ ধরতে পারিনি যে – নাটক হয় জীবন্ত মানুষের স্বর নিয়েই রচিত – ছাপা পৃষ্ঠায় নাটক থাকে অনুপস্থিত… উচ্চারণেই তার মুক্তি, কণ্ঠেই তার জন্মগ্রহণ, মঞ্চেই তার জীবন।’ তাই তিনি ধরার চেষ্টা করেছেন আমাদের মাটিলগ্ন মানুষের কথা বলার ধরনগুলো, যেমন – তাদের উপমা ব্যবহার ও তুলনা দেওয়ার অকৃপণ অভ্যাস, একই ভাবকে জোড়ায় বা আরো বেশি উপমা-চিত্রকল্পের অলংকারে সাজিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। এভাবে মঞ্চে – অবশ্যই দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রীর গুণে – হকের নাটকটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। ফলে 888sport app download apk নয়, তিনি সংলাপই রচনা করেছেন, ইতিহাসের পাতা থেকে আখ্যান খুঁজে নেননি, নিয়েছেন যে-ইতিহাস সদ্য ঘটে গেছে গোটা জাতির একেবারে প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে-পড়া অংশগ্রহণের মাধ্যমে। মনে রাখতে হয়েছে, যা-ই লেখা হোক, যে-আখ্যান বা চরিত্র নির্মিত হোক, তা যে-কোনো দর্শকের মনের তাজা 888sport sign up bonus, কারো কারো, বা অনেকেরই ক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত রক্তাক্ত আবেগের তারে তা নাড়া দেবেই।
ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি বিরাট, কারণ পাকিস্তানি দখলদারদের দোসর এক গ্রাম্য মাতবর এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাকে হক নতপরাস্থ করলেন আত্মজার প্রশ্নবাণ ও অভিযোগের তীক্ষè তরবারির ঘায়ে। হকের প্রতিভা এ-সময় ঝলসে উঠেছে বারবার। জাগ্রত বিদ্রোহী 888sport promo codeকে নিরস্ত করতে পির যতই আল্লাহর দোহাই দেন, মেয়ের প্রশ্ন কিন্তু ততই যেন ধারালো হয়ে ওঠে :
মানুষের অধিকার নাই তারে সোয়াল করার।
তবে আছে অধিকার নামটি নিবার
উচ্চারণ ক্যাবল করার।
আর তাই বা’জান আমার
আল্লাতালার নাম নিয়া তিনবার
আমারে পাঠান তিনি পাপের রাস্তার
’পরে, পাপ হাজারে হাজার
মানুষ নিশ্চিতে করে, সাক্ষী নাম
সেই তো আল্লার।
এই নাটকের প্রসঙ্গে আমরা রবীন্দ্রনাথের বিসর্জনের কথা তুলেও বরং আরো পিছিয়ে গিয়ে মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্যের কথা টানতে পারি। তৎসম শব্দ-নির্ভর পঙ্ক্তিতে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এ-কাব্যে সেই নগণ্যকে ছাপিয়ে-ওঠা অনন্য বক্তাকে পাই, এখানেও ভাষা অলংকারসমৃদ্ধ, ব্যক্তিপ্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিকতাকে অভিযুক্ত করে, ঘা দেয়, এবং কাহিনির বিপরীতে গিয়ে রাবণপুত্রকেই মাইকেল নায়ক করেছেন এবং তাকে বধ করেছেন আর কেউ নন স্বয়ং শ্রীরাম।
মহাকাব্যের প্রকৃত নায়ক রাম, তথাপি মাইকেলের নাটকে নিহত রাবণপুত্রের জীবনের নাটকীয় পরিসমাপ্তির সূত্রে উঠে আসে যুদ্ধ এবং জীবনের গভীরতর সূক্ষ্মতর উপলব্ধির কথা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়তে মাতবরের আবরণ কন্যার অভিযোগের ধারালো আঘাতে আঘাতে ফালাফালা হয়ে যায় আর উলঙ্গ হয়ে পড়ে রাজাকারের ঘৃণ্য চরিত্র। চরিত্রগুলো আঞ্চলিক ভাষার অসাধারণ কাব্যিক উচ্চারণের মাধ্যমে নিজ নিজ অবস্থানে স্পষ্ট হতে থাকে আর পাঠক-দর্শক কেবল এক মুখ্য চরিত্রের পরিবর্তে মাতবরকন্যাকে, তার সংলাপের অসাধারণ কাব্যিক দ্যোতনায়, ঘা-খাওয়া পরিচিত একজন রূপে চিনে নিয়ে বুঁদ হয়ে শোনে তারই ফরিয়াদ, তারই ক্রন্দন। নাট্যকারের শক্তি ফুটে ওঠে কাব্যে বা কাব্যিক সংলাপে, কাব্যের অলংকার আতিশয্য হয় না, বরং হয়ে ওঠে অনিবার্য। নাটকের অনিবার্য পরিণতি আড়াল করে দারুণ কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টির সুযোগ এমন জনসম্পৃক্ত আবেগঘন সমকালীন ইতিহাসের আখ্যানে হয়তো মেলা মুশকিল। তাই অনিবার্য পরিণতি বদলায় না। আমরা এই সূত্রে মাইকেলের কথাও টানব না, বরং টানব শেক্সপিয়র ও সফোক্লিসের প্রসঙ্গ। সৈয়দ হক এ-নাটককে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ আর জয়-পরাজয়ে সীমাবদ্ধ রাখেন না, তাঁর গ্রিক আর শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডি পাঠের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। গ্রিক কোরাসের আঙ্গিক গ্রহণ করেন গ্রামবাসীর মাধ্যমে, কিন্তু তিনি দ্বন্দ্বের বিষয় করে নিয়ে আসেন সমাজে অন্যায় অমানবিক কাজের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মের ব্যবহারকে। তিনি ‘নাটকের করণকৌশল’ অংশে লিখেছেন – ‘আমি চেয়েছি এই মুক্তিযুদ্ধকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আরো বড় একটি মুক্তির জন্যে দর্শককে প্রাণিত করতে – সে-মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, ধর্মের নৌকায় নৈতিক অন্যায়কে পার করিয়ে দেবার যুগযুগান্তরের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে।’ মাতবরকন্যার উদ্ধৃত সংলাপ পরের দিকে আরো জোরালো ভাষায় খুলে ধরে ধর্মীয় কুসংস্কারের জাল :
নাম, আর কিছু নাই, খালি এক নাম,
নিরাকার নিরঞ্জন নাম,
নামের কঠিন ক্ষারে লোহাও মোলাম
সেই এক নাম।
নামের তাজ্জব গুণে ধন্য হয় পাপের মোকাম;
চোরের আস্তানা হয় বড় কোনো পীরের মাজার।
তিনি এই তরুণীর মাধ্যমে, তাঁর ভাষায়, ‘আরো বড়, আরো প্রয়োজনীয় একটি মুক্তিযুদ্ধের’ আবাহন জানিয়ে গেছেন। আজকের 888sport appsে তা যে কত জরুরি, কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কবি যে সত্যদ্রষ্টা তারই প্রমাণ রেখে গেলেন যেন বাংলাভাষার এই প্রকৃত কবি। কিন্তু সমকালীন নাটকের ইতিহাসে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নিঃসন্দেহে অবি888sport app download for androidীয় এক সৃষ্টি।
এ সময়ে আরো দুটি নাটকে সৈয়দ হক তাঁর প্রতিভার দুঃসাহসের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। নূরলদীনের সারাজীবন দুশতাধিক বছরের পুরনো কাহিনি – ব্রিটিশ আমলে সংঘটিত অসংখ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রকে ঘিরে রচিত হয়েছে। ব্রিটিশ আমল বা ব্রিটিশ আগমন নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক নাটক – বিশেষত সিরাজদ্দৌলার সূত্রে – আমাদের অত্যন্ত পরিচিত। তার অনিবার্য মেলোড্রামা, কিংবা বিদেশি চরিত্রের নাটুকেপনাকে হক তাঁর শক্তিশালী কলম এবং আধুনিক 888sport live footballবোধের জোরে এক ঝটকায় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ঠেলে দিলেন। রচনা করলেন, বা ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ করলেন, বর্তমান ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি এবং জন-এষণা মাথায় রেখে। সেটা এমনই কার্যকর হলো যে, নূরলদীনের অন্তিম আবাহন আজো, এমনকি নাটকটি
রচিত-মঞ্চস্থ হওয়ার প্রায় তিন দশক পরেও, শ্রোতাকে শিহরিত-সচকিত করে। নাটকটির কালোত্তীর্ণ হয়ে-ওঠার এ হলো জলজ্যান্ত প্রমাণ। ঈর্ষা তাঁর অন্য গুরুত্বপূর্ণ নাট্যনিরীক্ষা। ঈর্ষা মানুষের আদিম প্রবৃত্তি, এ নিয়ে শেক্সপিয়র লিখেছেন অমর ট্র্যাজেডি ওথেলো। এখানে হক মঞ্চনাটকের সাফল্যের পথে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে দিলেন – মাত্র সাতটি সুদীর্ঘ সংলাপের ওপর এটিকে দাঁড় করিয়ে। পাঠে এ নিয়ে সমস্যা না হলেও মঞ্চায়ন হয়ে ওঠে নির্দেশকের জন্যে দারুণ এক পরীক্ষা, দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ, কুশীলবদের জন্যে তা ছিল আরো বড় পরীক্ষা। নাটকের সফল মঞ্চায়ন, নাট্যকারের নিরীক্ষার সাফল্যেরই প্রমাণ দেয়।

চার
বোঝা যায় সৈয়দ হকের লেখকজীবন দশজন বাঙালির মতো কৈশোরের তাড়না কিংবা তারুণ্যের আবেগের পরিণতি নয়; হ্যাঁ তিনি সচেতনভাবেই নিজেকে নির্মাণ করেছেন। তিনি হতে চেয়েছেন নিজের মতো, স্বতন্ত্র, পশ্চিমের অভিজ্ঞতা ও নিরীক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক; স্বভাবের টানে নয়, স্বাভাবিক সচেতন প্রয়াসেই তিনি লেখক। এ তাঁর সহজ-সরল স্বতঃস্ফূর্ত যাত্রাপথ নয়, পথটাও তাঁকে নির্মাণ করতে হয়েছে, কোন পথে এগোবেন, কীভাবে পাড়ি দেবেন, লেখার বাহন কেমন হবে, কেমন হবে এর কাজ, এর ধ্বনি এর অন্তর্গত ভাব সবই ভেবে ঠিক করে নিয়েছেন হক নিজেই।
একটা কথা হয়তো এখানে বলা যায়, কথা888sport live footballেই এটি ঘটে, তাঁর নির্মিতির ঝোঁক কখন যেন পাঠক ধরতে পারেন, বোঝেন এসবই লেখকের সচেতন কারুকার্য – তিনি বানিয়ে তুলছেন একটি গল্প, কখনো ফেনিয়ে তুলছেন চরিত্র বা সম্পর্ক। নাটক যেহেতু ক্রিয়াত্মক 888sport live chat, একে মঞ্চে উপস্থাপন করতে হয়, দর্শক প্রস্তুত থাকেন চরিত্র, সম্পর্ক, নাটকীয়তা নির্মিত হয়ে-ওঠার জন্যে, তাই হক কথা888sport live footballের চেয়ে নাটকেই বেশি সফল।
লেখা নিয়ে তাঁর ভাবনার ব্যাপ্তি ও গভীরতা, এবং এ নিয়ে তাঁর নিবিষ্টতা, জেদ, সাহস এবং সক্ষমতার প্রমাণ মেলে দুটো বইয়ে – হৃৎকলমের টানে (১৯৯১) এবং মার্জিনে মন্তব্য/ গল্পের কলকব্জায় (১৯৯৫)। দুটিই লিখেছেন সাপ্তাহিক কলাম হিসেবে, প্রথমটি দৈনিক সংবাদের ‘888sport live football সাময়িকী’তে আর দ্বিতীয়টি সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। লেখকের জীবন সহজ নয়, আবার কেবল যে কঠিন চ্যালেঞ্জে ঠাসা তাও নয়, এখানে আছে নিজেকে তৈরি করার, আবিষ্কার করার, বিশেষত ভাষাশৈলী ও প্রকরণ নির্মাণের কৌশল আয়ত্ত করার মতো সৃষ্টিশীল অভিজ্ঞতার অবকাশ, জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগানোর এবং আপন দক্ষতা-সক্ষমতা-পারঙ্গমতার এবং নিজেকে আবিষ্কার ও প্রকাশের অপার আনন্দ, গভীর তৃপ্তি।
তাঁর প্রথম ও মধ্য জীবন কেটেছে নিদারুণ অস্থিরতার মধ্যে, তাঁর নিজের ভাষা, বিষয়, মাধ্যম, আঙ্গিকের খোঁজে বিচলিত অতৃপ্ত সত্তার ঝুঁকিপূর্ণ প্রব্রজ্যায় পাওয়া-না-পাওয়ার উৎকণ্ঠার মধ্যে। এক সময় দক্ষ বাজিকরের মতো ভাষা, ভঙ্গি, আঙ্গিক তাঁর আয়ত্তে এলো, অনুগত প্রজার দৌলতে যেন 888sport live footballের রাজ্যপাট খুলে বসলেন তিনি। নাটক ও 888sport app download apk, এবং আত্মজীবনী তাঁর খাস মহলের দোসর হয়ে উঠল।
এই যে এক তরুণ মফস্বল শহর থেকে এসে নিজেকে মহানগরীর অগ্রসর আধুনিক ব্যক্তিতে উত্তীর্ণ করার ব্রতে নেমেছিল তার সেই সাধনার মধ্যে অর্জনের এষণাই ছিল মুখ্য, এবং তার সহজাত প্রতিফল কিছু বর্জন তো বটেই। তাতে স্বকীয়তা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতা – অতীত ও শিকড়ের সঙ্গে – অনিবার্য হয়ে ওঠে। 888sport apps, আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিবেচনায় বলছি, আজ অবধি যথার্থ নাগরিকসমাজ তৈরি করতে পারেনি, এটি হয়ে আছে আত্মীয়সমাজ। বাঙালির এ স্বজন-সংলগ্ন হয়ে থাকার স্বভাব তাকে মানসিকভাবেও করে রাখে পরমুখাপেক্ষী, ব্যক্তিগত অবস্থান প্রায়ই অস্পষ্ট দোদুল্যমান এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের দাবি কখন যে শোভন-অশোভন, উচিত-অনুচিতের বেড়া ভেঙে একাকার করে ফেলে তা বলা দুষ্কর। এ এক অস্থির ঘিঞ্জি প্রত্যাশামুখর দুর্বলতা এবং দুর্নীতিতে মাখামাখি হয়ে থাকা সমাজ, যাকে আদর্শের ঘেরাটোপ পরিয়ে গ্রহণ করা যত সহজ বাস্তবে তত নয়। আদর্শ ও বাস্তবের দ্বন্দ্ব হকের জীবনেও ছাপ ফেলে যায়।
আমরা দেখি সৈয়ক হক একসময় বাঙালি ছাপমারা পোশাক এড়িয়ে খাঁটি পশ্চিমা পোশাক গায়ে চড়াচ্ছেন। কবি-লেখকদের জন্যে তখনো দূরের অভিজাত এলাকা গুলশানের বাসিন্দা হলেন, লম্বা সময় লন্ডনে বাস করলেন, ইংরেজি ভাষা ও ব্যক্তিজীবনে ইংরেজিয়ানা রপ্ত করলেন, পুত্রের নামকরণে সে-ছাপ স্পষ্ট। কিছু পশ্চিমা কেতাও অনুসরণ করতেন। নাগরিক বাঙালির এলেবেলে ‘আনস্মার্ট’ জীবনের প্রভাব এড়িয়ে চলতেন। তাঁর আশিপূর্তির স্মারকগ্রন্থে প্রথম তারুণ্যের এক বন্ধু লিখেছেন তাঁর এই কাছে থেকেও দূরত্ব বজায় রাখার কথা।

পাঁচ
এ-কথা মানতেই হবে, সব 888sport live chatই নির্মাণ বটে; কিন্তু এ নিয়ে অতিসচেতনতার বিপদও আছে। এ-পথে সহজ অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে, স্বাভাবিক আর সহজাত থাকে না, নির্মিতির শ্রমের ছাপ থেকে যায়, আর তখন একটু কৃত্রিমতার ত্রুটি ঘটে যেতে পারে। আমি আন্তরিকভাবেই চাইছি না, এ-বক্তব্যটা রূঢ়ভাবে আসুক, তাহলে সৈয়দ হকের প্রতি অবিচার হবে। কারণ তিনি এ-সম্ভাব্যতাকে – কিছু বিসর্জন দিয়ে হলেও – একভাবে উতরে গেছেন। নাটকে শ্রোতাকে তিনি এমন টানে রাখতে পারেন যে, তার তদ্গত বিহ্বলতা ভাঙে নাটকের সমাপ্তিতে। সেখানে সৈয়দ হক অনুপম, অতুলনীয়। হৃৎকলমের টানে এবং মার্জিনে মন্তব্য ও গল্পের কলকব্জা একইভাবে বাংলাভাষায় একেবারেই ভিন্নস্বাদের সার্থক দুটি গ্রন্থ। সেইসঙ্গে আত্মজীবনী দুটি – প্রণীত জীবন (২০১০) এবং তিন পয়সার জ্যোৎ¯œাও (২০১৪) কেবল ব্যক্তির জীবনপথের কাহিনি নয়, জীবনদর্শনের এবং সমকালীন ইতিহাসের ব্যাখ্যাও তাতে মেলে। আত্মকাহিনিতেও ভাষাকে তিনি যেমন বাক্সময় রেখেছেন, তেমনি দিয়েছেন চিত্রল শরীর। কিন্তু তা বলে কোথাও অতিকথন নেই, ভাষা মেদহীন শাণিত বটে, তবে রঙিন উজ্জ্বল দ্যুতিময়।
কিন্তু 888sport apps রাজনৈতিকভাবে এমনই এক ভূখ- যার হাত থেকে কোনো সংবেদনশীল মানুষ নিস্তার পায় না। একটা দেশের হাজার বছরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং দরিদ্র-অসহায় জনগোষ্ঠীর বিপুল ত্যাগে নির্মিত রাজনৈতিক ইতিহাস চোখের সামনে ছোঁ মেরে তুলে নেবে কেউ, দেশ ও মানুষকে রিক্ত সর্বস্বান্ত করে দেবে, তার সত্তা ও আত্মা জব্দ করে ফেলবে, তাকে সাংস্কৃতিক উদ্বাস্তুতে রূপান্তরিত করবে – এ-সর্বনাশ চোখের সামনে ঘটতে থাকবে আর কেউ নিশ্চেষ্ট বসে থাকবে, আপন সৃজনকর্মে বুঁদ হয়ে, তা কি সম্ভব?
সৈয়দ হক বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা দিয়েই ফিরতে শুরু করেছিলেন। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় যেন এক পুনর্জন্মের আঁতুড়। তাঁর স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, দূরত্ব এবং কিছুটা বা কৃত্রিমতাকে নিয়েই তিনি একসময় হয়ে উঠলেন – বিশেষত শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পরে – আমাদের 888sport live footballাঙ্গনের প্রধান সারথি, বটবৃক্ষ। শামসুর রাহমান ষাটের মধ্যভাগ থেকে 888sport appsের রাজনৈতিক ইতিহাসের অসাধারণ কাব্যভাষ্য রচনা করে গেছেন; কিন্তু নিজেকে দলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে দূরে রেখেছিলেন। হক এক্ষেত্রে, এই একটি ক্ষেত্রে, প্রবলভাবে আবেগাক্রান্ত ছিলেন। তলস্তয়-বর্ণিত লেখকের নিস্পৃহতার তোয়াক্কা করেননি তিনি। বরাবরের সাহসী লেখক এক্ষেত্রেও প্রায় নির্বিচারী হওয়ার সাহস দেখালেন। তিনি একাত্তরের রণক্ষেত্রে ছিলেন না, কিন্তু আশির দশকে ফিরে তাঁর বুঝতে দেরি হয়নি কী ছিল একাত্তর এবং তার সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা। আরো বেশি করেই যেন বুঝলেন পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত ঘটনার তাৎপর্য, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকার বিশালতা। ফলে হক এবার রণক্ষেত্রে নামলেন, মূল অস্ত্র লেখনি বা কলম, কিন্তু তাঁর অবস্থান ও দলীয় পক্ষপাত স্পষ্ট করে নিলেন। পথের আন্দোলনে শরিক হলেন, 888sport app download apk পরিষদসহ সব আন্দোলনমুখী কাজে ভূমিকা নিলেন। এটা আমৃত্যুই চালিয়ে গেলেন।
তাঁর কল্পনার ‘জলেশ্বরীতলা’র গাঁ-গেরাম, জলাশয়, বনবাদাড়, মানুষজন সবার সঙ্গে, সবাইকে নিয়ে তিনি থাকবেন। এ এক দুরূহ জাদুকরী জীবন – দূরত্ব ও নৈকট্য, পশ্চিমা যাপন ও নিতান্ত গেঁয়ো বাঙালির জীবন, পশ্চিমের আধুনিকতর ভাবনা ও চিরায়ত বাঙালি জীবনের ভাবমার্গ এবং সর্বোপরি খর্বক্লিষ্ট আত্মক-ুয়নে মত্ত সমকালীন সমাজে তিনি, পশ্চিমের ভাবনাজগৎকে জানা সৈয়দ হক, দৃঢ়ভাবে তাঁর অবস্থানে অটল থাকলেন এবং পক্ষপাত প্রকাশ করে গেলেন জোরালো কণ্ঠে। তাই হয়তো তাঁর মনে হয় ‘নায়ের ভিতর থিকা ডাক দ্যায় আমারে ভুবন’।
এই কণ্ঠও তিনি নির্মাণ করে নিয়েছেন এবং দীর্ঘ অভ্যাসে এ তাঁরই কণ্ঠ তাঁরই বলার ভঙ্গি যা কখনো তাঁর রচিত 888sport live footballে অনুপস্থিত ছিল না। সৈয়দ হক যেন এক কথক, বাগ্মী, ভাষ্যকার – 888sport app download apk, নাটক, কথা888sport live football, 888sport live সবখানেই তিনি স্বকণ্ঠে নিজস্ব বাগভঙ্গিতে সবসময় যেন উপস্থিত। তাঁর কথা ভাবলেই এই অকৃত্রিম কণ্ঠে ভেসে আসে তাঁর জাদুকরী পঙ্ক্তি – কত কত পঙ্ক্তি আমার কানে বাজতে থাকে। এখনই শুনছি হকভাই পড়ছেন, হ্যাঁ তাঁরই অননুকরণীয় অকৃত্রিম ভঙ্গিতে –
এ কেমন শব্দ এই, এ কেমন আদব?
কাতারে কাতার খাড়া, আমি তার ভেদ বুঝি নাই।
নিজের চিন্তার পাখি উড়ায়া যে দিমু কী তাজ্জব,
খানিক হুকুম মানে, তারপর বেবাক জানাই।
শব্দের ভিতর থিকা মনে হয় শুনি কার স্বর,
একজন, দুইজন, দশজন, হাজার হাজার – 