এসব হয়তো নেহাৎই কাকতালীয় যে, গ্যালিলিও যে-বছর (১৬৪২) মারা যান, সে-বছরই জন্ম হয়েছিল গ্যালিলিওর যথার্থ উত্তরসূরি 888sport apkীশ্রেষ্ঠ নিউটনের, আর ১৬৪২ সালের যে-দিনটিতে (৮ জানুয়ারি) গ্যালিলিওর মৃত্যু হয়, সে-দিনটিতেই (৮ জানুয়ারি ১৯৪২) ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমাদের কালের বিশ্বনন্দিত 888sport apkী স্টিফেন হকিং। আর হকিং যেদিন মারা যান (১৪ মার্চ ২০১৮) সে-দিনটিতেই ১৩৯ বছর আগে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন 888sport apkী আলবার্ট আইনস্টাইন। স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম-মৃত্যুর সঙ্গে বর্ষপঞ্জির দিন কিংবা অন্য কোনো 888sport apkীর জন্ম-মৃত্যুর দিনের এরূপ সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, 888sport apkীদের কাজের মধ্যে কিন্তু অন্তর্নিহিত আন্তঃসম্পর্ক থেকেই যায়। একজন 888sport apkীর একটি লেখায় একবার পড়েছিলাম যে, 888sport apkের সাধনা অনেকটা দৌড়বিদদের রিলে রেসের মতো – একজনের কাজ যেখানে শেষ হয় বা যে-পর্যন্ত পৌঁছায়, সেখান থেকেই শুরু করেন তাঁর পরবর্তী 888sport apkী এবং এভাবেই 888sport apkের সাধনা এগিয়ে যায়।
পিতার মৃত্যুর পর স্টিফেন হকিংয়ের তিনসন্তান রবার্ট, লুসি ও টিম হকিং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, কারণ আজ আমাদের প্রিয় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বড়মাপের একজন 888sport apkী এবং অসাধারণ এক মানুষ ছিলেন, যাঁর কাজ ও অবদান বহু বছর ধরে টিকে থাকবে।’
পিতার মৃত্যুর পরপরই যে-কোনোসন্তানই একজন বড়মাপের পিতা সম্পর্কে এমন উক্তি করতেই পারেন; কিন্তু পিতা স্টিফেন হকিং সম্পর্কে তাঁরসন্তানেরা যা বলেছেন তা বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি নয়, সে-কথা আমরা যথার্থভাবেই জানি।
নিজের জন্মের কথাটি হকিং এভাবে লিখেছেন : ‘আমার জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি। তারিখটা গ্যালিলিওর ঠিক তিনশো বছর পরবর্তী। তবে আমার অনুমান সেদিন আরো প্রায় দু-লাখ শিশু জন্মেছিল। আমি জানি না, তাদের ভেতর আর কেউ জ্যোতির্888sport apkে আকৃষ্ট হয়েছিল কিনা।
‘আমার বাবা-মা যদিও লন্ডনে থাকতেন, তবু আমার জন্ম হয়েছিল অক্সফোর্ডে। তার কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জন্মানার পক্ষে অক্সফোর্ড জায়গাটা ভালো ছিল। জার্মানদের সঙ্গে একটা চুক্তি ছিল : তারা অক্সফোর্ডে কিংবা ক্যামব্রিজে বোমাবর্ষণ করবে না, তার বদলে ব্রিটিশরাও হাইডেলবার্গ (Heidelberg) এবং গটিংগেনে (Gottingen) বোমাবর্ষণ করবে না। খুব দুঃখের কথা, অনেকটা সুসভ্য এই ব্যবস্থা অন্য শহরগুলিতেবিস্তৃত করা যায়নি।’ (শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত-অনূদিত কৃষ্ণগহবর, শিশু মহাবিশ্ব ও 888sport app রচনা)
স্টিফেন হকিংয়ের বাবা ফ্রাংক হকিং ছিলেন চিকিৎসা888sport apkের স্নাতক। তিনি অক্সফোর্ডে চিকিৎসা888sport apkের পাঠ নেন। এরপর ট্রপিক্যাল ডিজিজ অর্থাৎ গ্রীষ্মপ্রধান দেশের ব্যাধি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ‘১৯৩৭ সালে তিনি পূর্ব আফ্রিকায় যান। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থলপথে আফ্রিকা পেরিয়ে একটা জাহাজ ধরে ইংল্যান্ডে পৌঁছান। সেখানে তিনি স্বেচ্ছায় সামরিক কর্মে যোগ দিতে যান।কিন্তু তাঁকে বলা হলো তাঁর চিকিৎসাবিদ্যায় গবেষণা আরো বেশি মূল্যবান।’
স্টিফেন হকিংয়ের মা ইসাবেলাও ছিলেন অক্সফোর্ডের ছাত্রী। প্রথমদিকে ট্যাক্স ইন্সপেক্টরের চাকরি নেন তিনি। তার আগে অন্য অনেকরকম কাজ করেন। সবশেষে কর পরিদর্শকের কাজটি ছেড়ে দিয়ে তিনি সেক্রেটারির কাজ নেন। ছেলেবেলায় স্টিফেনরা থাকতেন উত্তর লন্ডনের হাইগেটে। সেখানেই জন্ম হয় তাঁর চেয়ে আঠারো মাসের ছোট বোন মেরির। আরো প্রায় সাড়ে তিন বছর পর জন্ম হয় তাঁর অপর ছোটবোন ফিলিপ্পার। সবার ছোট ভাই এডওয়ার্ডের জন্ম অবশ্য এর অনেক পরে।
ছেলেবেলায় স্টিফেন পড়েছিলেন বায়রন হাউসে। নিজের এই স্কুল সম্পর্কে স্টিফেন হকিং লিখেছেন : ‘এখানকার [অর্থাৎ হাইগেট অঞ্চলের]সমস্ত বাবা-মা-ই তাঁদের ছেলেমেয়েদের বায়রন হাউসে পাঠাতেন। সেই সময়কার মান অনুসারে স্কুলটা ছিল খুবই প্রগতিশীল। আমার মনে পড়ে, বাবা-মা-র কাছে আমি নালিশ করতাম স্কুলে আমাকে কিছু শেখায় না। তখনকার প্রচলিত পদ্ধতি ছিল জোর করে ছাত্রদের শেখানো। এ-পদ্ধতিতে তাঁরা বিশ্বাস করতেন না। তার বদলে আশা করা হতো, ছাত্ররা বুঝতে পারবে না যে তারা শিখছে কিন্তু তারা পড়তে শিখে যাবে অজান্তে। শেষপর্যন্ত আমি পড়া শিখেছিলাম কিন্তু আট বছর বয়সে। বয়সটা একটু বেশিই হয়েছিল। আমার বোন ফিলিপ্পাকে শেখানো হয়েছিল প্রচলিত পদ্ধতিতে। সে চার বছর বয়সেই পড়তে পারত। নিঃসন্দেহে তার বুদ্ধি ছিল আমার চাইতে বেশি।’ (কৃষ্ণগহবর এবং…)
১৯৫০ সালে বাবার কর্মস্থল হ্যাম্পস্টেড থেকে লন্ডনের উত্তরপাশে মিল হিলে নবনির্মিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল রিসার্চে স্থানান্তরিত হলে হকিং পরিবার সেন্ট অ্যালবান্সের ক্যাথেড্রাল টাউনে একটা বাড়ি কিনে সেখানেই চলে আসে। জায়গাটা ছিল লন্ডন থেকে কুড়ি মাইল ও মিল হিল থেকে দশ মাইল উত্তরে। স্টিফেনের কথায় : ‘সেন্ট অ্যালবান্স ছিল প্রাচীন রোমান শহর ভেরুলামিয়ামের (Verulamiam) পরভেরুলামিয়াম ছিল লন্ডনের পরেই সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ রোমান জনপদ। মধ্যযুগে ব্রিটেনের সবচেয়ে বিত্তশালী মঠ ছিল ওখানে। এটা তৈরি হয়েছিল সেন্ট অ্যালবান্সের মন্দিরের চারপাশে। তিনি ছিলেন প্রথম রোমান শতায়ু যাঁকে খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসের জন্যমৃত্যুদণ্ডদেওয়া হয়েছিল। মঠের অবশিষ্ট ছিল শুধুমাত্র একটা বিরাট এবং কুশ্রী গির্জা আর প্রাচীন মঠের প্রবেশদ্বারের দালানটি। সেটা তখন ছিল সেন্ট অ্যালবান্স স্কুলের অংশ। পরে আমি সেই স্কুলেই পড়েছিলাম।’
সেন্ট অ্যালবান্সে স্টিফেনকে প্রথমে একটা মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, যেখানে দশ বছর বয়সপর্যন্তছেলেরাও পড়তে পারত। এরপর অন্য একটা স্কুলে তাঁকে ভর্তি করা হয় এক বছরের জন্য। সেখান থেকেই তিনি ইলেভেন ক্লাসপরীক্ষা দেন। এপরীক্ষায় অবাক করার মতো একটা ব্যাপার ঘটল। স্কুলেরপরীক্ষায় অর্থাৎ ক্লাসের পড়ায় স্টিফেন যত নম্বর পেতেন, ইলেভেন ক্লাসেরপরীক্ষায় তারচেয়ে অনেক বেশি নম্বর পেলেন। এর ফলে সেন্ট অ্যালবান্স স্কুলে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পেলেন তিনি।
এই স্কুলে পড়ার সময়কার কথা বলতে গিয়ে স্টিফেন লিখেছেন : ‘আমার ছ-সাতজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তাদের অধিকাংশের সঙ্গে আমার এখনো যোগাযোগ আছে। আমরা খুব দীর্ঘ আলোচনায় মগ্ন থাকতাম। আর সব বিষয়েই আমাদের তর্ক হতো। যেমন, বেতার-নিয়ন্ত্রিত মডেল (প্রতিরূপ) থেকে ধর্মপর্যন্ত আবার প্যারাসাইকোলজি (Parapsychology) থেকে পদার্থবিদ্যাপর্যন্ত। যেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম, তার ভিতরে একটা ছিল মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর মহাবিশ্ব চালু করার জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল কিনা। আমি শুনেছিলাম সুদূর নীহারিকা থেকে আলো বর্ণালীর লালের দিকে বিচ্যুত হয় এবং এই জন্য মনে করা হয় মহাবিশ্ববিস্তারমান (নীলের দিকে বিচ্যুত হলে তার অর্থ হতো মহাবিশ্ব সংকুচিত হচ্ছে)। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, লালের দিকে এই বিচ্যুতির অন্য কোনো কারণ রয়েছে। হয়তো আলোক ক্লান্ত হয়ে পড়ত এবং আমাদের কাছে আসার পথে লাল হয়ে যেত। মূলগতভাবে অপরিবর্তনশীল এবং চিরস্থায়ী মহাবিশ্বকে মনে হতো স্বাভাবিক। পিএইচডির জন্য দুবছর গবেষণার পর আমি বুঝতে পারলাম আমার ভুল হয়েছিল।’
স্কুলে পড়ার সময় শেষের দু-বছরে স্টিফেন চেয়েছিলেন গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তাঁর মতোই চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়ুক। স্টিফেনকে তিনি মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গে তাঁদের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যেতেন। স্টিফেন লিখেছেন : ‘আমার বাবা আমার 888sport apkে আকর্ষণকে সবসময়ই উৎসাহ দিতেন। এমনকি তিনি আমাকে গণিতও পড়িয়েছেন। তবে আমার বিদ্যা যতদিন না তাঁর বিদ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে ততদিনপর্যন্ত। আমার এই পশ্চাৎপট আর বাবারকর্মক্ষেত্র এরকম থাকার ফলে আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, আমি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করব।…’ (কৃষ্ণগহবর এবং…)
স্কুলের পড়া শেষ করার পর স্টিফেন হকিং সতেরো বছর বয়সে অক্সফোর্ডে পড়ার জন্য একটা স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি পেয়ে অক্সফোর্ডের তিন বছরের পড়া শেষ করেন তিনি। এরপর : ‘মনে হয়েছিল তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় আমার গবেষণা করার মতো দুটি মূলগত বিষয় আছে। একটা হলো মহাবিশ্ব তত্ত্ব (cosmology) অর্থাৎ অতি বৃহৎ নিয়ে গবেষণা আর একটা ছিল মৌলকণা (elementary particles) অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র নিয়ে গবেষণা। আমি ভাবলাম, মৌলকণাগুলির আকর্ষণ কম। কারণ যদিও নতুন নতুন অনেক মৌলকণা আবিষ্কৃত হচ্ছে, তবু উপযুক্ত কোনো তত্ত্ব সে-সময় ছিল না। তাঁরা শুধুমাত্র কণাগুলিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে সাজাতে পারতেন, যেমন করা হয় উদ্ভিদবিদ্যায় (botany)। অন্যদিকে মহাবিশ্ব তত্ত্বে ছিল একটা সুসংজ্ঞিত তত্ত্ব – আইনস্টাইনের ব্যাপক অপেক্ষবাদ।’ (কৃষ্ণগহবর এবং…)
অক্সফোর্ড থেকে ডিগ্রি লাভ করার পর স্টিফেন হকিং গবেষণা করতে গেলেন ক্যামব্রিজে, কারণ ‘অক্সফোর্ডে তখন মহাবিশ্ব তত্ত্ব নিয়ে কেউ গবেষণা করতেন না’, কিন্তু তখনকার দিনে ব্রিটেনের সবচেয়ে বিখ্যাত জ্যোতির্888sport apkী ফ্রেড হয়েল ছিলেন ক্যামব্রিজে। তবে ক্যামব্রিজে স্টিফেনকে গবেষণা করতে হলো ডেনিশ স্ক্রিয়ামার কাছে। এতে প্রথমে হতাশ হতে হলেও পরে কিন্তু তাঁর লাভ হয়েছিল, কারণ ‘হয়েল খুব বেশি বাইরে থাকতেন এবং তাঁর কাছ থেকে খুব বেশি সময় পাওয়া যেত না। অন্যদিকে স্ক্রিয়ামা সেখানেই থাকতেন, সবসময় উদ্দীপনা দান করতেন।’
এদিকে অক্সফোর্ডের শেষ বছরে স্টিফেন হকিং লক্ষ করলেন যে, তাঁর চলাফেরা কি রকম জবড়জং হয়ে পড়ছে। ক্যামব্রিজে পৌঁছার কিছুদিন পর তাঁর শারীরিক অসুবিধার রোগ নির্ণয় করা হলো। ইংল্যান্ডে রোগটার নাম এ.এল.এস. (Amyotrophic Lateral Sclerosis ALS) বা মোটর নিউরন ডিজিজ (Motor Neurone Disease)। আমেরিকায় একে লু গেরিগের ব্যাধিও (Lou Gehrig’s disease) বলে। চিকিৎসকরা রোগ নিরাময়ের কোনো নিদান দিতে পারলেন না। অসুখটা তাড়াতাড়ি বাড়ছিল। স্টিফেনের মনে হচ্ছিল, পিএইচডি করার মতো অত দিন বাঁচবেন না। তবে ‘সময় যত যেতে লাগল রোগও তত ধীরগতি হতে লাগল।’ তাঁর কাজও এগোতে লাগল। এই সময়েই জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে তাঁদের বিয়ে হলো।
স্টিফেন হকিং এই পর্যায়ে তাঁর গবেষণার বিবরণ দিয়ে লিখেছেন : ‘১৯৭০ সাল পর্যমত্ম আমার গবেষণা ছিল মহাবিশ্ব (cosmology) নিয়ে অর্থাৎ বৃহৎমানে মহাবিশ্ব নিয়ে। এই সময়ে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ছিল অনন্যতা (singularities) নিয়ে। দূরতর নীহারিকাগুলি নির্দেশ করে – তারা আমাদের কাছ থেকে দূরে অপসরণ করছে : মহাবিশ্বের বিস্তার বেড়ে চলেছে। এর নিহিতার্থ হলো, অতীতে এই নীহারিকাগুলি নিকটতর ছিল। তারপরে প্রশ্ন ওঠে : ‘এমন কি কোনো সময় ছিল যখন নীহারিকাগুলি পরস্পরের উপর চাপানো ছিল এবং মহাকাশের ঘনত্ব ছিল অসীম?…’ এই সময়ে (১৯৬৫-৭০) স্টিফেন হকিং কাজ করেছিলেন রজার পেনরোজকে সঙ্গে নিয়ে। পেনরোজ তখন ছিলেন লন্ডনের বার্কবেক কলেজে।
স্টিফেন হকিং ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত কৃষ্ণগহবর নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর নিজের কথায় : ‘১৯৭০ সালে আমার মেয়ে লুসির জন্মের কয়েকদিন পর এক রাত্রে কৃষ্ণগহবরের কথা ভাবছিলাম। তখন আমি বুঝতে পারলাম, আমি আর পেনরোজ অনন্যতা প্রমাণ করার জন্য যে-প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি সেগুলি কৃষ্ণগহবরের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে ঘটনা দিগন্তের এলাকা অর্থাৎ কৃষ্ণগহবরের সীমানা কালে কালে হ্রাস পেতে পারে না এবং দুটি কৃষ্ণগহবরের সংঘর্ষের পর তারা সংযুক্ত হয়ে যদি একটি কৃষ্ণগহবর গঠন করে, তাহলে অন্তিম গহবরের দিগন্ত প্রাথমিক কৃষ্ণগহবরগুলির দিগন্তের এলাকার (area) চেয়ে বেশি হবে। সংঘর্ষে কতটা শক্তি বিচ্ছুরিত হবে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ সীমা এর ফলে তৈরি হলো। আমি এতই উত্তেজিত হয়েছিলাম যে, সে-রাত্রে বিশেষ ঘুমোতে পারিনি।’ (কৃষ্ণগহবর এবং…)
১৯৭৪ সালে তিনি যে আশ্চর্যজনক বিষয় আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন তা হলো ‘কৃষ্ণগহবর সম্পূর্ণ কৃষ্ণ নয়-ক্ষুদ্রমানে পদার্থের আচরণ বিচার করলে দেখা যায়, কৃষ্ণগহবর থেকে কণিকা এবং বিকিরণ বের হতে পারে। কৃষ্ণগহবর তপ্ত বস্তুপিণ্ডের মতো বিকিরণ উৎসর্জন (emit) করতে পারে।’
দুই
১৯৭৪ সাল পর্যন্ত স্টিফেন নিজে নিজেই খেতে পারতেন, বিছানায় উঠতে পারতেন আর বিছানা থেকে নামতেও পারতেন। তাঁর স্ত্রী জেনই তাঁকে সাহায্য করতেন। এরপর একজন গবেষক-ছাত্র তাঁর বাড়িতে থাকতেন এবং বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থার বদলে সেই ছাত্রটিই তাঁকে বিছানায় উঠতে সাহায্য করতেন। ১৯৮০ সালে স্টিফেন একজন কম্যুনিটি নার্স এবং একজন প্রাইভেট নার্সের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা সকালে ও বিকেলে দু-এক ঘণ্টা করে আসতেন। ১৯৮৫ সালে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন তাঁর ট্রাকিওস্টমি অপারেশন (শ্বাসনালির একটি অস্ত্রোপচার) হয়। এরপর থেকেই তাঁর চবিবশ ঘণ্টাই নার্সের যত্নের প্রয়োজন হতো। এই সময় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।
এই সময়কার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, অপারেশনের আগে থেকেই তাঁর কথা বেশি বেশি জড়িয়ে যাচ্ছিল। শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠজনরাই কথা বুঝতে পারতেন। নিজের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলি তিনি একজন সেক্রেটারিকে বলতেন এবং সেক্রেটারি সেগুলি লিখে দিতেন। তিনি বৈজ্ঞানিক-বক্তৃতা দিতেন একজন দোভাষীর সাহায্যে। সেই দোভাষী তাঁর কথাগুলি আরো স্পষ্ট উচ্চারণে বলে দিতেন। কিন্তু ট্রাকিওস্টমির পর কথা বলার ক্ষমতা তাঁর সম্পূর্ণ চলে যায়। কিছুদিন পর্যন্ত তাঁর ভাব প্রকাশ করার একমাত্র উপায় ছিল এক একটি অক্ষরের সাহায্যে বানান করে বলা। তাঁর কথায় : ‘যখন কেউ বানান লেখা কার্ডে সঠিক অক্ষরটা দেখাতেন, তখন আমি ভুরু তুলে সম্মতি জানাতাম। বৈজ্ঞানিক গবেষণা তো দূরের কথা, এভাবে কারো সঙ্গে কথাবার্তাও বলা বেশ শক্ত ছিল। তবে ওয়াল্ট ওলটোজ্ (Walt Woltosz) নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ আমার দুরবস্থার কথা শুনেছিলেন। তিনি ইকোয়ালাইজার (equalizer) নামে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেছিলেন, সেটা তিনি আমাকে পাঠিয়ে দেন। এই যন্ত্রে আমার হাতের একটা সুইচ টিপলে পর্দায় অনেকগুলি শব্দের তালিকা ভেসে ওঠে। তা থেকে যে কোনো একটা শব্দ আমি বেছে নিতাম। যন্ত্রটা মাথা কিংবা চোখ নাড়িয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। আমি কি বলতে চাইছি সেটা একবার ঠিক হলে সেটা বাক্য সংশ্লেষককে (speech synthesizer) পাঠাতে পারি।’
স্টিফেন প্রথমে ইকোয়ালাইজারটা চালাতেন একটা ডেস্কটপ কম্পিউটারের উপরে। পরে ক্যামব্রিজ অ্যাডাপ্টিভ কমিউনিকেশনসের ডেভিড মেসন তাঁর হুইল চেয়ারে একটা ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC বা Personal computer) এবং একটা বাক্য-সংশ্লেষক লাগিয়ে দেন। এই ব্যবস্থা স্টিফেন হকিংয়ের বেশ কাজে লাগে। মিনিটে প্রায় ১৫টা শব্দ তিনি ব্যবহার করতে পারতেন। এই ব্যবস্থা যে-কোনো মানুষের জন্যই অত্যন্ত জটিল ব্যবস্থা বলেই আমাদের মনে হয়। কিন্তু স্টিফেন হকিং এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন এবং নিজের অদম্য মনোবলের সাহায্যে তাঁর বই ও বৈজ্ঞানিক 888sport live লেখার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন।
কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বা A Brief History of Timeবইটির প্রথম খসড়া স্টিফেন হকিং লিখেছিলেন তাঁর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ও ট্রাকিওস্টমি অপারেশন হওয়ার আগে। হকিং ১৯৮২ সালে প্রথম সাধারণ মানুষের জন্য মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটা বই লেখার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর কথায় : ‘…মহাবিশ্বকে যে সমসত্ম বিধি শাসন করে, সেগুলিকে সম্পূর্ণ করে জানার পথে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে… একটা ভাবানুভূতি আমি বহন করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। মহাবিশ্বের ক্রিয়াপ্রণালি সম্পর্কে প্রায় সবাই জানতে উৎসুক, এ-বিষয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই গাণিতিক সমীকরণ বুঝতে পারেন না – ব্যক্তিগতভাবে আমিও সমীকরণগুলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করি না। অংশত এর কারণ, আমার পক্ষে সমীকরণ লেখা শক্ত কিন্তু আসল কারণ হলো সমীকরণ সম্পর্কে আমার স্বজ্ঞাবোধ (intuitive feeling) ছিল না। তার বদলে আমি চিন্তা করি চিত্রের বাগ্বিধিতে এবং এই পুস্তকে আমার উদ্দেশ্য ছিল এই সমস্ত মানসচিত্র কয়েকটি পরিচিত উপমা এবং চিত্রের সাহায্যে ভাষায় প্রকাশ করা। আমার আশা ছিল গত পঁচিশ বছরে পদার্থবিদ্যার যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে সে-সম্পর্কে উত্তেজনা এবং কৃতিত্ববোধের অংশীদার সবাই হতে পারবে।’
স্টিফেন হকিংয়ের মহাবিশ্ব সম্পর্কিত প্রথম বই অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম : ফ্রম দ্য বিগ ব্যাং টু বস্ন্যাক হোলস প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে, আমেরিকায়। বইটি নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায় ছিল তিপ্পান্ন সপ্তাহ। এ যাবৎ বইটির এক কোটি কপিরও বেশি বিক্রি হয়েছে আর বিভিন্ন ভাষায় বইটির অনূদিত সংস্করণের 888sport free bet তেত্রিশের বেশি। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় হকিং বইটি লেখা ও প্রকাশের বিবরণ নিয়ে একটি রচনাও লিখেছিলেন ব্রিফ হিস্ট্রি অব ব্রিফ হিস্ট্রি নামে। তখন আমেরিকায় বইটির সপ্তদশ মুদ্রণ চলছিল আর ব্রিটেনে চলছিল দশম মুদ্রণ। নিজের বইয়ের এই জনপ্রিয়তার বিস্ফোরণ নিয়ে তাঁর মনেও প্রশ্ন কিছু কম ছিল না। এই রচনাটিতেই তিনি সে-প্রশ্নটি তুলেছিলেন : ‘এত লোক বইটি কিনলেন কেন? আমি যে বস্তুনিষ্ঠ সে-সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া আমার পক্ষে শক্ত। সেজন্য আমার মনে হয়, অন্য লোকে যা বলেছিল সেই অনুসারে চলব। আমি দেখেছি অধিকাংশ সমালোচনাই আমার পক্ষে হলেও তারা বিশেষ কোনো আলোকপাত করেনি। তারা সবাই একটা ফর্মুলা মেনে চলতে চেয়েছে : স্টিফেন হকিং-এর লু-গেরিগ-এর (Lou gehrig) ব্যাধি আছে (আমেরিকার সমালোচনাগুলিতে) কিংবা মোটর নিউরন ডিজিজ আছে (ব্রিটিশ সমালোচনাগুলিতে)। তিনি একটা হুইল চেয়ারে আটকে থাকেন, কথা বলতে পারেন না এবং এক্স সংখ্যক আঙুল নাড়াতে পারেন (এক্ষেত্রে মনে হয় X এর মান এক থেকে তিন এর ভেতরে ঘোরাফেরা করে। 888sport free betটা নির্ভর করে। সমালোচক আমার সম্পর্কে কোন ভুল 888sport liveটা পড়েছেন তার ওপর)। তবু তিনি বৃহত্তম প্রশ্নের ওপর এই বইটি লিখেছেন : কোত্থেকে আমরা এসেছি আর কোথায় আমরা চলেছি? হকিং যে প্রস্তাব করেছেন সেটা হলো মহাবিশ্ব কেউ সৃষ্টি করেনি এবং ধ্বংসও হয় না : এটা শুধুমাত্র রয়েছে। হকিং কাল্পনিক কালের কল্পন উপস্থিত করেছেন। সেটা বুঝতে আমার বেশ কষ্ট হয়। তবু হকিংয়ের বক্তব্য যদি সঠিক হয় এবং আমরা যদি একটা সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব খুঁজে পাই তাহলে আমরা সত্যিই ঈশ্বরের মনটা জানতে পারব (প্রফ দেখার সময় আমি বইয়ের শেষ বাক্যটি প্রায় কেটেই দিয়েছিলাম। সে বাক্যটি হলো – আমি ঈশ্বরের মনটা জানতে পারব। এটা যদি করতাম তাহলে বিক্রিটা অর্ধেক হয়ে যেত)।’
এমন অবস্থায় প্রশ্ন থেকে যায়, যাঁরা বইটি কেনেন তাঁরা কেন সেটি কেনেন। এ-প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টাও আছে হকিংয়ের সেই লেখাটিতে : ‘অনেকে এ-কথাও বলেছেন যে, লোকে বইটি কেনেন তার কারণ তাঁরা বইটির সমালোচনা পড়েছেন কিংবা বইটির উল্লেখ সর্বাধিক বিক্রীত পুস্তকের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু বইটি তাঁরা পড়েননি। তাঁরা বইটি তাঁদের বুককেসে কিংবা কফির টেবিলে সাজিয়ে রাখেন।… অন্যদিকে আবার আমি জানি, অন্তত কিছু লোক বইটি পড়েছে। তার কারণ রোজই আমি গাদা গাদা চিঠি পাই, তাতে অনেকে প্রশ্ন করেন, আবার অনেকে বিস্মৃত মন্তব্য করেন। তাতে বোঝা যায়, সবটা না বুঝলেও বইটি তাঁরা পড়েছেন।…’ (কৃষ্ণগহবর…)
হকিংয়ের লেখা থেকে আমরা জানতে পারি, বইটি লেখার আগে তাঁর এমন একটা বাসনা মনের গোপন মণিকোঠায় ছিল যে, বিভিন্ন বিমানবন্দরের বইয়ের দোকানের র্যাকে সাজিয়ে রাখা বইগুলোর মতোই একটি বই তিনি লিখবেন, যদিও সেটি রগরগে প্রেমের গল্প কিংবা গরম গোয়েন্দাকাহিনি হবে না, সেটি হবে মহাবিশ্বের সূচনা ও পরিণতি সম্পর্কে লেখা একটি 888sport apkের বই, যা উপভোগ্য হবে সব শ্রেণির পাঠকের কাছে। হকিংয়ের সে-বাসনা যে পূর্ণ হয়েছে সে-কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পরবর্তীকালে ব্রিফ হিস্ট্রির আরো সহজ ও চিত্রিত একাধিক অনুসরণমূলক বই তিনি লিখেছেন ইলাস্ট্রেটেডব্রিফ হিস্ট্রি, ব্রিফার হিস্ট্রি ইত্যাদি নামে। কন্যা লুসি হকিংয়ের সঙ্গে লিখেছেন শিশুতোষ তিনটি বই। তাঁর জনবোধ্য 888sport apkবিষয়ক বইয়ের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অপর বইটি হচ্ছে দ্য ইউনিভার্স ইন অ্যা নাটশেল।
হকিং-সম্পাদিত (ওয়ার্নার ইজরেলের সঙ্গে সহ-সম্পাদনা) একটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও সমৃদ্ধ গবেষণামূলক রচনার সংকলন হচ্ছে থ্রি হানড্রেড ইয়ারস অব গ্র্যাভিটেশন। আর বছর কয়েক আগে প্রকাশিত দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন (লিউনার্ড ম্লোদিনোর সঙ্গে সহলিখিত) বইটিও নজর কেড়েছে জনবোধ্য 888sport apkের বইয়ের নিবিষ্ট পাঠকদের। তবে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, শুধু জনবোধ্য 888sport apk বইয়ের লেখক নন হকিং, তিনি ছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থ888sport apkী, মহাবিশ্ববিদ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল কসমোলজি’র পরিচালক। ১৯৬৪ সালে রজার পেনরোজের সঙ্গে বিকিরণ আপেক্ষিকতার সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব তাঁর প্রথম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। পরবর্তীকালে তাঁর আবিষ্কার হলো ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহবরের বিকিরণ, 888sport apkীরা যার নাম দিয়েছেন ‘হকিং রেডিয়েশন’ বা হকিং বিকিরণ। সম্ভবত আলবার্ট আইনস্টাইনের পর তিনিই সেই 888sport apkী, যিনি পৃথিবীর মানুষকে নাড়া দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। গুরুতর শারীরিক অসামর্থ্য সত্ত্বেও স্টিফেন হকিং বিগত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং 888sport apkচর্চায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য নবীনদের অফুরন্ত উৎসাহ জুগিয়েছেন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.