রেজাউর রহমান
খালি গলায় সুমধুর আজান ভেসে আসা শহরে এখন উচ্চস্বরে অগণিত যান্ত্রিক আজানের এলোমেলো ধ্বনি হয়ে ওঠে শব্দসন্ত্রাস। ভোরবেলার পশ্চিমাকাশ উজ্জ্বল, পুবাকাশে ঘন মেঘ জমেছে। দিনটা শুরুই হলো কেমন যেন শেষ সন্ধ্যার বিবর্ণ আবহে। দোয়েল কোকিলের ভোরে ঘুম ছোটে কাকের কর্কশ চিৎকারে বিষণ্ণতা দিয়ে।
কর্মব্যস্ত দিনের চিত্রনাট্য আরো ভয়াবহ। লোকটি বাসের মহিলা যাত্রীদের অংশে ঠেসে বসে আছে – পর্দা তো বলাই বাহুল্য, সামান্যতম ভদ্রতার দূরত্ব না রেখেই। পরিণতি – ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে অসুস্থবোধ করা মহিলার উগরে দেওয়া বমিতে প্রায় গোসল হলো তার।
গাছগাছালির ছায়াময় 888sport appর পায়েচলা পথ সেই কবে যান্ত্রিক গতির কাছে বিলীন হয়েছে। তাই অল্প দূরত্বের পথেও সবাই চেপে বসে গাড়িতে হাঁটা গতির চেয়ে কমে। খাল-বিল আর নদীঘেরা 888sport appর নৌপথও বর্জ্য ফেলার নালায় পরিণত হয়েছে। নৌকার রং-বেরঙের পাল নেমেছে, উঠেছে বিকট শব্দের ইঞ্জিন, মাঝির কণ্ঠের গান কেড়ে নিয়ে।
বিষণ্ণমন অতীতচারী হয়ে ওঠে, দেশ নিয়ে ভাবনা ঠেলে দেয় ইতিহাসে। অথচ কত কিছু ঘটেছে যা ঘটবার, কত কিছু হয়েছে যা হওয়ার, কত কিছুই না করা হয়েছে যা করা দরকার, আদর্শবাদের সফল অভিযাত্রায়। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি। এদেশের মানুষ ১৯৫২ সালে ‘বাংলা ভাষা’, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ‘বাঙালি জাতি’ আর ’৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধে ‘888sport appsের’ আত্মপরিচয়ে অটল থাকতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আর সাংস্কৃতিক প্রত্যয় দেখিয়েছে কঠিন পরিস্থিতিতেও। ১৯৫৪-র প্রথম নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রথম সুযোগেই সবাই নেমে পড়েছিল মহাউদ্যমে আদর্শ দেশ ও জাতি গঠনের প্রতিটি স্তরে।
বাঙালি মুসলমান 888sport free betগরিষ্ঠ হয়েও 888sport appsে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) তখন অসাম্প্রদায়িক, 888sport apkমনস্ক, সাম্যবাদী শিক্ষিত তরুণ সমাজের উত্থান ও কর্মোদ্যোগ ছিল বিস্ময়কর। স্বপ্নের মতো শুরু হলো সকল দিকে যাত্রার প্রথম সোপান। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজবাদীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন দিয়ে যার প্রথম এবং প্রধান ধাপ সূচিত হয়েছিল।
একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনে যুক্তফ্রন্ট সরকার যা যা করণীয় তার সবকিছুই করছিল একের পর এক। ১৯৫৫ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও ড. কাজী মোতাহার হোসেনের মতো প্রাজ্ঞ ভাষাবিশারদের সমন্বয়ে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম কমিটি তৈরি। ড. কুদরাত-এ-খুদা ও ড. বরকত উল্লাহর মতো খ্যাতিমান 888sport apkীদের নেতৃত্বে সায়েন্স ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা। আবদুল জববার খান ও নাজির আহমেদের মতো সংস্কৃতি-সচেতন ব্যক্তিদের উদ্যোগে live chat 888sport উন্নয়ন সংস্থার যাত্রা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়ে ১৯৫৫ সালে নিজস্ব নতুন আধুনিক ভবনে চারু ও কারুকলা চর্চার পরিবেশ নির্মাণে 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানদের মতো গুণী মানুষের অবদান এবং বিস্ময়করভাবে 888sport live chat-888sport live football, সংগীত, সাংবাদিকতাসহ অন্যসব ক্ষেত্রেও মেধাবী সমাজসচেতন তরুণ সমাজের বিপুল সমাগম, যা পুরো পঞ্চাশের দশকজুড়ে ছিল সদাচঞ্চল দৃশ্যমান।
অন্যদিকে ত্রিমাত্রিক পরিবেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনায় একমাত্র বাঙালি স্থপতি মাজহারুল ইসলামের স্ব-উদ্যোগ ছিল 888sport appsের ইতিহাসের আধুনিক স্থাপত্যের সূচনা। এই ভূখন্ডে আধুনিক অথচ বাংলার জলবায়ুতে সংবেদনশীল স্থাপত্যের নিদর্শন সৃষ্টি করেছিলেন ১৯৫৫ সালেই 888sport appর চারুকলা ভবন নকশার মাধ্যমে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের এই ভূভাগে ষড়ঋতুর বিচিত্রতায় নীল জল আর সবুজ মাটির মিলন যে মোহনীয় নিসর্গ তৈরি করেছে, তা স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে প্রথম থেকেই একাধারে যেমন স্বপ্নচারী করে, অন্যদিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে নগরায়ণের চাপে অপরিকল্পিত পদক্ষেপে বিপদগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হওয়ার।
ত্রিমাত্রিক নকশা পরিকল্পনায় মাজহারুল ইসলামের উপলব্ধি তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রস্ত্ততিপর্বের অধ্যায়গুলোতেই পরিস্ফুট। বিংশ শতাব্দীর গোড়াতে ১৯৪২ সালে 888sport apkে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 888sport apkের প্রায়োগিক দিকে তাঁর আকর্ষণ তাঁকে প্রকৌশলী হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে ১৯৪৬ সালে। অথচ প্রকৌশল বিষয় যে সব নয়, একটি বোধময় নান্দনিক পরিসর সৃষ্টিতে, এ শুধু একটি কাঠামো নির্মাণের প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া মাত্র, তা বুঝতে পেরে শিক্ষাজীবনকে আরো প্রলম্বিত করে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৫২ সালে ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হয়ে ফিরে আসেন দেশ গঠনে। নতুন দেশে আধুনিক স্থাপত্য সৃষ্টিতে বিভোর হয়ে ওঠেন স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। দেশি স্থাপত্যের স্বরূপ সন্ধানে ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ুর প্রভাব কত ব্যাপক তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করে এ-বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন পরবর্তীকালে।
বিপুল জনগোষ্ঠীর এদেশে ভবিষ্যৎ চাহিদার প্রয়োজনে স্থাপত্য একটি সীমিত ক্ষেত্র। বর্ধিষ্ণু নগর অবকাঠামো পরিকল্পনার নকশা প্রণয়ন ছাড়া সামগ্রিক সমাধান অসম্ভব। তাই মাজহারুল ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাজধানী 888sport appসহ দেশের 888sport app শহর তথা সমগ্র 888sport appsকে বিশদ পরিকল্পনার আওতায় আনা। যেখানে প্রকৃতি নিজে বাঁচবে, বাঁচাবে মানুষকে, নগরায়ণ হবে সুস্থ মানব গঠনে বাস উপযোগী। তাঁর এই মহা-অভিযাত্রায় শামিল করেছিলেন পৃথিবীখ্যাত অনেক স্থপতিকে। 888sport appsে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) ষাটের দশকজুড়ে যে-আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল স্থপতি লুই আই কান, পল রুডলফ, বব বুই, রিচার্ড ভ্রুম্যান, স্ট্যানলি টাইগারম্যান ও ডকসিয়াটিসসহ আরো অনেকের অংশগ্রহণে, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ছিলেন এর একমাত্র যোগসূত্র। ১৯৫৯-৬০ সালে শেরেবাংলা নগর (তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী) ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার মহাপরিকল্পনার জন্য তাঁকে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত করেছিলেন তাঁর শিক্ষক ও কালজয়ী স্থপতি লুই আই কানকে 888sport appsে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নকশা পাওয়ার ইচ্ছা থেকে, যা সত্যিই আজ বিশ্বস্থাপত্যের বিরল নিদর্শন হয়ে উঠেছে।
নন্দনতত্ত্ব, প্রকৃতি, জলবায়ু এবং এর পাশাপাশি দেশ, মানুষ ও সমাজ সচেতনতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠতে সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ তৈরির প্রয়াসে তিনি উদ্যোগী হলেন একটি স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত স্থাপত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে। ১৯৫৯ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সাহায্যে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সমন্বয়ে মাজহারুল ইসলামের উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হলেও এটি ছিল 888sport appsে স্থাপত্য শিক্ষার শুভ সূচনা। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে সম্পূর্ণ তাঁর দর্শনে প্রতিষ্ঠিত না হলেও স্থাপত্য অনুষদকে অন্তর্ভুক্ত করে যে আহছানউল্লাহ্ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ উন্নীত হয়ে 888sport apps প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতেও তাঁর অবদান ছিলঅনেক।
স্থাপত্যিক পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা কোনো একক মস্তিষ্কপ্রসূত ড্রইংবোর্ডের নকশা নয়, তা হলো নাগরিক জীবনের পরস্পর নির্ভরশীল বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রাকৃতিক দ্বান্দ্বিকতা ঘটবার অবকাঠামোগত সুবিধাদির প্রয়াস রাখা। যেখানে প্রকৃতি নিজের জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক মিথস্ক্রিয়া ঘটাতে পারে, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের পরিবেশগত বন্ধুত্ব নিশ্চিত হয়, যেখানে মানুষ নিজেদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উপভোগ করতে পারে। তবেই সে-নগর হবে জীবন্ত, সুশৃঙ্খল ও সবার জন্য বাসযোগ্য। মার্কসীয় দর্শনের অনুসারী হওয়ার জন্য নগর পরিকল্পনায় মাজহারুল ইসলাম মানবিকতাকে মুখ্য করে দেখতেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পুঁজি-স্ফীতি ঘটানোর ‘নীল নকশা’ হিসেবে নয়। নগরের খন্ডিত পরিকল্পনার তাৎক্ষণিক সমাধান দিলেও তা হয়ে ওঠে ক্ষণস্থায়ী, যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারে প্রণীত। আপামর গণমানুষের জন্য পরিকল্পনা হতে হবে সুদূরপ্রসারী, দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টা এবং কণ্টকাকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগের পথ। তাঁর এই আদর্শবাদী পথের যাত্রায় তিনি হলেন সঙ্গীহীন – একা। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে দেশ হলো উন্নয়নবঞ্চিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন একটি স্বাধীন দেশে তাঁর স্বপ্ন পূরণের আশায়। অথচ স্বাধীনতার পর স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই দেশ চলতে শুরু করলো উল্টোপথে, ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে।
একদিকে স্বাধীন 888sport appsের জনস্রোত রাজধানী 888sport app শহরমুখী হয়ে উঠলো। রাষ্ট্রের প্রশাসন ও জনসেবা বিতরণ বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীতে দিন দিন কেন্দ্রীভূত করা হলো। ফলে শহরের জন888sport free betর চাপ বাড়তে থাকলো জ্যামিতিক বৃদ্ধিকেও হার মানিয়ে।
সদ্য স্বাধীন দেশে মাজহারুল ইসলাম নবীন স্থপতিদের সংগঠিত করে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন 888sport apps স্থপতি ইনস্টিটিউট। একটি পৃথক স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সচেষ্ট ছিলেন শুরু থেকেই। কারণ 888sport appsের অনন্য ভূপ্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক নগর পরিকল্পনার প্রজ্ঞা অন্য কারো কাছ থেকে আশা করা যে নির্বুদ্ধিতা তা তিনি অনেক আগেই বুঝে গেছেন। দেশের অর্থনীতির মূল জলপথ, বিপুল মৎস্য সম্পদের আধার খাল-বিল, নদী-নালা যে ভূখন্ডের প্রাণপ্রবাহের ধমনী, শিরা-উপশিরা, যার কল্যাণে এদেশের মাটি জাদুর মতো ফলায় ধান-পাট, ফলমূল, রবিশস্য সারাবছর। অথচ সেই প্রাণসম জলধারা নিয়ন্ত্রণের নামে যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ, সড়কপথের উন্নয়নের নামে উজান থেকে ভাটিতে নেমে আসা নদী, শাখা নদীর ওপর সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করে ব্যাহত করা হলো জলস্রোতের স্বাভাবিক গতি। ফলে নদীতে চর জেগেছে, নদীর নাব্যতা হারিয়েছে, নদীভাঙন ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। লোক দেখানো স্থানীয় উন্নয়নের কারণে সমগ্র অঞ্চলকে করা হয়েছে বিপদগ্রস্ত। 888sport appsে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের সুযোগে চলেছে এসব আত্মঘাতী কর্মকান্ড।
নগরবিদ মাজহারুল ইসলাম এসব পরিকল্পনাহীন তান্ডবে ব্যথিত হতেন। সময় আর সুযোগ পেলেই অনুধাবন করাতে সচেষ্ট হতেন সরকারি প্রশাসনকে, রাজনীতিকদের, আমলাদের। স্বাধীন দেশেও উপনিবেশী চিন্তাধারার পরম্পরায় অব্যাহত আছে আজো। নদী নিয়ন্ত্রণ, নদী শাসন ইত্যাদি নামকরণেই বোঝা যায় খাল-বিল, নদ-নদীর অবদান এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বিধানের চিন্তা কতটা অবহেলিত এসব নীতিনির্ধারণী সংস্থার কাছে। দেশের প্রকৃত উন্নয়নে সচেতনতা তৈরির জন্য স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনার শিক্ষক-ছাত্র, স্থপতি-বুদ্ধিজীবীদের সম্পৃক্ত করে আশির দশকে ‘চেতনা’ নামে সংগঠন করেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলে তিনি আবার উদ্যোগী হন সুস্থধারায় স্থাপত্যচর্চা ও সঠিক নগর পরিকল্পনার পরিবেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শামিল করতে। এবার তিনি ‘888sport app আমার 888sport app’ শিরোনামে গভীর বিশ্লেষণ ও গবেষণাধর্মী নগর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন সকলের সামনে। তাঁর এ-গবেষণায় 888sport app শহরের আদি ভূপ্রকৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মহাপরিকল্পনার নকশা উপস্থাপনা চিন্তাশীল সবাইকে আলোড়িত ও আশাবাদী করে তোলে।
দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, পুবে বালু নদী, উত্তরে টঙ্গী খাল এবং পশ্চিমে তুরাগ নদ ঘেরা 888sport app পৃথিবীর বুকে একটি অনন্য এবং প্রাণ প্রাচুর্যে সম্ভাবনাময় শহর। বেশ কিছু বিদ্যমান ক্ষীণকায় ও মৃতপ্রায় খাল-জলাশয় সংস্কার ও উদ্ধার করে এর নৌযোগাযোগ পথকে শক্তিশালী ও সমন্বয় করে শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনা যায়। মাজহারুল ইসলাম তাঁর এই মহাপরিকল্পনায় সবুজ প্রান্তর, লেক-জলাশয়কে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে বিরাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। 888sport live chat, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্রসহ 888sport app অঞ্চল বিন্যাসে বর্তমান অবস্থাকে মাথায় রেখে কিছু নতুন প্রস্তাবনার মাধ্যমে একটি সুশৃঙ্খল প্রাণবন্ত রাজধানী শহরের রূপরেখা তুলে ধরেন; যার মধ্যে পুরনো তেজগাঁও বিমানবন্দর ও 888sport app সেনানিবাসসহ কিছু স্থাপনা শহর থেকে সরিয়ে অন্যত্র স্থাপন করে পুনর্বিন্যস্ত পরিকল্পনায় আরো জায়গার সংকুলান করেন। এছাড়া রাজধানী শহরের অনতিদূরে ‘গার্ডেন সিটি’র আদলে চারদিকে কিছু ‘স্যাটেলাইট সিটি’ তৈরি করে মানুষের বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করেন। 888sport appমুখী মানুষের চাপ কমাতে প্রশাসন ও সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাব করেন।
একটি শহরের প্রাকৃতিক জলাশয়, পল্লবিত বৃক্ষরাজি, উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর, মুক্ত আকাশ, প্রশস্ত পায়ে চলার পথ, সুশৃঙ্খল পয়ঃপ্রণালি, বৈদ্যুতিক তারসহ 888sport app তারের মাটির নিচে সার্ভিস ড্রেন থাকা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই যে আসল সৌন্দর্য স্থপতি মাজহারুল ইসলামের এই মহাপরিকল্পনায় তা হলো মূল দর্শন। প্রাকৃতিক উপাদানের এই সান্নিধ্য যা দেয় তা হলো এক অতুলনীয় মানবিক শহরের রূপকল্প। জলধারার শীতল বিশুদ্ধ বাতাস, ছায়াঘেরা পায়ে চলার পথে ফুলের মিষ্টি সুবাস, দোয়েল-কোকিলের মিষ্টি মধুর সুর, ঊষা আর গোধূলিলগ্নে জলে-আকাশে আলোর রঙিন খেলা। ষড়ঋতুর একেক সাজে সেজে উঠবে নগর-জনপদ। আপনিতেই গড়ে উঠবে প্রাণপ্রাচুর্যে সুস্থ ও সংবেদনশীল নগরজীবন। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে জঞ্জাল তৈরি ও অহেতুক অর্থ অপচয়ের অবকাশ যেখানে নেই।
যে-মহান ব্যক্তিগণ বাংলা, বাঙালি আর 888sport appsের মর্যাদাপূর্ণ ভিত্তি গড়তে চেয়েছেন, তখনই যুগে যুগে বাঙালীর সোনালী সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতে হঠাৎ কোথা থেকে এক কালো অধ্যায় নেমে আসে গ্রিক ট্র্যাজেডির উপাখ্যান হয়ে। বিশ্বকবি আখ্যানে রবীন্দ্রনাথকে বন্দি করা হয়েছে গীত বিতানের শক্ত কভারে, বঙ্গবন্ধুকে ‘সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা’ করা হয়েছে ইতিহাসের ফ্রেমে। আর স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে থামানো হয়েছে 888sport appsের ‘আধুনিক স্থাপত্যের পথিকৃৎ’ বিশেষণে। তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সমসাময়িক যুগের অচল আদর্শবাদী ধারার প্রবক্তা হিসেবে।
অথচ এসব মহান পুরুষের প্রদর্শিত আদর্শবাদী পথে কাজ করতে এবং এর সুফল পেতে সে অসীম ধৈর্য, আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ মানসিকতা, সর্বোপরি আপামর মানুষ ও দেশের জন্য ভালোবাসা লাগে, তা নেই কারো। রঙিন চশমায় মরুভূমি শহর দুবাই, আবুধাবী, ব্যাংকক কিংবা সিঙ্গাপুর মডেলে চাকচিক্যময় উন্নয়নে তাৎক্ষণিক সুবিধা সংবলিত প্রস্তাবনায় সরকার ও জনগণ সবাইকে ভুলিয়ে এমন এক সুবিধাবাদী পথ ও ভোগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাতে কেউ আর অপেক্ষায় থাকতে নারাজ, এখনই নগদ পেতে উন্মুখ। শহরের সৌন্দর্য ও সুবিধা বর্ধনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অধিক যন্ত্রযানের রাস্তা প্রশস্ত করার অজুহাতে ফুটপাত ছেঁটে অবাধে গাছ কেটে সাময়িক সমাধান দেওয়া হচ্ছে। সড়কদ্বীপ, সড়কের দুই পাশে, মাঝের বিভাজনে ব্যয়বহুল ইস্পাতের রেলিং, বৃক্ষরাজি ঢেকে দিয়ে বিশাল বিজ্ঞাপন বোর্ড, অপ্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্ত উড়ন্ত সড়ক, আরো কতকিছু গড়তে এসব ব্যস্ততা। পুকুর, দীঘি, ঘাট, বটবৃক্ষের ছায়া বিস্মৃত হয়েছে অনেক আগেই। 888sport appর জলাশয় ভরাট করে আবাসিক কিংবা 888sport live chatপ্লট বাণিজ্যে এখন সবাই সিদ্ধহস্ত – রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, 888sport app সিটি করপোরেশনসহ সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। অপরিকল্পিতভাবে নগদ লাভের আশায় আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট ইত্যাদি তৈরি করে নাগরিক জীবনে জট পাকানো, নাভিশ্বাস ওঠানো, অব্যবস্থার ষোলকলা পূর্ণ করেও থেমে নেই এসব তথাকথিত উন্নয়ন তান্ডব।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারের ডামাডোলে আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে সবুজ পরিবেশ গড়ার স্লোগানের আড়ালে সুযোগসন্ধানীদের অপতৎপরতা। নতুন ফর্মুলায় একধরনের প্যাকেজ সার্ভিসের আদলে নগর উন্নয়নের উদ্যোগ লক্ষ করা যায় 888sport appsে। অল্প সময়ে আধুনিকতার মোড়কে সমস্যার জাদুকরী সমাধান দেওয়া হয় এসব পরিকল্পনায়। এছাড়া এতে আরো থাকে উন্নত পরিবেশ এবং বিস্ময়কর হারে মুনাফা অর্জনের নিশ্চয়তা! এ ধরনের অলীক প্রকল্পের যাচাই পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, তুলনামূলক নিরীক্ষণ, পরিকল্পনার নকশা প্রণয়ন, প্রকল্পের খরচ জোগান, কাঠামো নির্মাণসহ সব কষ্ট ও ঝামেলা শুধু ওইসব কোম্পানির কাজ আর প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সব ভোগবিলাস নগরবাসীর!
আর তথাকথিত সচেতন মানুষের ‘না হওয়ার চাইতে তবুও একটা কিছু হয়েছে, এটাও তো কেউ করে না’ জাতীয় বক্তব্যে সন্তুষ্টির ঢেঁকুর তোলা দল দিন দিন ভারী হয়ে ওঠায় সত্যিকার অর্থে সুস্থ স্বাভাবিক নগরজীবনের বিপদ আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
খ্যাতিমান নগরবিদ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম তাঁর প্রদর্শিত মহাপরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসাপেক্ষে অনেক অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি না করেও নগরের চাহিদা মেটানো সম্ভব দেখিয়েছেন। তাতে প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ততার নিজস্ব নিয়মে নগরের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুই-ই রক্ষা পাবে। কিন্তু উন্নয়নের ধ্বজাধারী কর্তৃপক্ষ এবং হালুয়া-রুটির অংশীদারদের ইট-বালু, লোহা-সিমেন্টের ভোগবিলাসের সকল সুবিধা সংবলিত মেগা প্রজেক্ট না হলে হয় না। এসব কারণে একসময়ে নীতিনির্ধারণী অংশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মাজহারুল ইসলাম ক্রমান্বয়ে দূরে সরে গিয়ে হলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
গণতন্ত্র আছে, তাতে নেই গণমানুষের জন্য পরিকল্পনা। নগরায়ণে নেই সেই নগরবিদ, আছে বাণিজ্যবিশারদ, ধান-পাটের জমিতে কৃষক নেই, আছে বালু ভরাটের ড্রেজিং মেশিন। 888sport live chatপল্লী পরিণত হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্রে। দেশের অর্থনীতিতে উৎপাদিত পণ্যের ভূমিকা গৌণ হয়ে মূল হয়ে উঠছে ভোগীর সেবাপ্রদান কর্মকান্ড, ক্রমান্বয়ে পরিণত হচ্ছে বায়বীয় উদ্বাস্ত্ত অর্থনীতি। নিয়তির অমোঘ যাত্রায় জমির উর্বর নরম মাটি যাচ্ছে ইটভাটার গরম চুল্লিতে। চিরসবুজ বন উজাড় হচ্ছে নিমিষেই চিরকালের জন্য। জলধারা পরিণত হয়েছে বক্স-কালভার্টে, তাই উধাও হয়েছে নীল আকাশে রঙিন মেঘের ‘প্রতিচ্ছবি’ নামক প্রপঞ্চ। সূক্ষ্ম সংবেদনশীল বোধের জায়গা দখল করেছে বিকারগ্রস্ত স্থূল রুচির মাতম। এই মাতমে কার চেয়ে কে কত বেশি আওয়াজ তুলবে, চলছে তার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা।
আত্মপ্রবঞ্চনার স্মারক হয়ে উঠছে বিভিন্ন প্রকল্পের নামকরণেও। বাণিজ্যিক কারণে বিদেশি ভাষা ব্যবহারের হিড়িক। আবার বৃক্ষশূন্য করে তৈরি করা প্রকল্পের নাম ছায়াময় বৃক্ষরাজির নামে। সবুজ উদ্যান অধিকার হারিয়েছে প্রাকৃতিক নামের, জনপথে হাঁটার জো নেই জনমানুষের। ভবন কিংবা আবাসন প্রকল্পের নাম ফুলের নামে – অথচ বসবাস করতে হয় নাক চেপে। তথাকথিত চাকচিক্যে, রঙের বাহ্যিক প্রলেপে আর নজরকাড়া নামকরণের মোড়কে নগর পেয়েছে কসমোপলিটন, মেট্রোপলিটন আখ্যা। অথচ ভেতরটা শূন্য করে আত্মাটা উড়ে গেছে সেই কবে। ওই শূন্যতায় নিঃশব্দে বড় হচ্ছে বিশাল এক ‘কৃষ্ণ গহবর’।
ঈদের ছুটিতে নিরিবিলি মেঘলা অপরাহ্ণে শৈশবে বেড়ে ওঠা হাতিরঝিল এলাকার দক্ষিণদিকের রাস্তা ধরে হাঁটছি, রবিঠাকুরের ‘দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইল না’ গানটি যেন আরো গভীর অনুভবে ছুঁয়ে গেল। চোখের সামনে ধীরে ধীরে বদলে যাওয়া এই বিশাল জলরাশি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণকায় হয়ে যাওয়া দেখেছি। সরকারি ও বেসরকারি মহলের সর্বগ্রাসী দখল থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার ফসল হচ্ছে এই ‘হাতিরঝিল প্রকল্প’। কয়েকটি সংস্থার আপস ফর্মুলার এই প্রকল্পে প্রশস্ত ‘মেটাল রোড’ ও প্রায় এক ডজন ‘বিচিত্র সেতু’র প্রাধান্যে আবারো ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ’ মুখ্য না হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে উপলক্ষ হিসেবে!
তবুও আশায় বুক বাঁধতে চাই, নগরায়ণে নগরবিদের ভূমিকা দিন দিন আরো জোরালো আর প্রকৃতি ও মানুষমুখী হবে বাস্তবিক অর্থে। তবেই পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য সংশপ্তক মাজহারুল ইসলামের আজীবন সংগ্রাম সফল হয়েছে বলা যাবে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.