১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, ভারত ভাগ ও স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, পূর্ববাংলার মানুষদের জন্য ছিল এক উত্তাল সময়। ১৯০ বছরের গ্লানিময় পরাধীনতার অবসানে মানুষের মনে শুধু আনন্দের বার্তাই বহমান ছিল না, এদের চোখে-মুখে প্রকাশিত ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অদম্য প্রত্যয় ও পূর্ববাংলাকে একটি আধুনিক উন্নত প্রদেশে পরিণত করার নিভৃত অঙ্গীকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কল্যাণে তখন পূর্ববাংলায় কিছুসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত, বিচক্ষণ ও দেশ গড়ার জন্য নিবেদিত মানুষের অস্তিত্ব ছিল। তাছাড়া দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে কিছু শিক্ষিত মুসলমান পূর্ববাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য দেশান্তরিত হন। এদের অনেকে অচিরেই সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন হন।
স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরপরই পাশ্চাত্য আধুনিকতার ঢেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উত্তর-ঔপনিবেশিক পূর্ববাংলায় আঘাত হানতে থাকে। বিদেশি বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়া তরুণরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে এসে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উভয় অঙ্গনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ বাঙালিদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয় নতুন দর্শন ও আত্মপ্রত্যয়ে পূর্ববাংলার জন্য একটি নতুন ও আধুনিক পরিচয় (আইডেনটিটি) নির্মাণ করার। তেমনি এক তরুণ বাঙালি পুরকৌশলী মাজহারুল ইসলাম ১৯৫০ সালে এই সুযোগ ব্যবহারের জন্য পোস্ট-ওয়ার বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন বিশ^বিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়তে যান। অরেগনে অধ্যাপক হেইডেনের কাছে তিনি শেখেন আধুনিক স্থাপত্য ডিজাইনের তত্ত্ব, রীতিনীতি ও খুঁটিনাটি। সেখানে তিনি জানতে পারেন যে, ডিজাইন প্রক্রিয়ায় জমির ভৌত চরিত্র, নির্মাণসামগ্রী, সার্ভিসেস, জলবায়ু ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয়ের সুশৃঙ্খল ও নান্দনিক সমন্বয়ে স্থাপত্যের ত্রিমাত্রিক অবয়ব নির্মিত হয়। ইউরোপীয় ইতিহাস পড়াতে গিয়ে প্রখ্যাত অধ্যাপক ম্যারিয়ন ডিন রস তাঁকে সতর্ক করেন যে, সমকালীন প্রয়োজনে আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণ করা হলেও প্রত্যেক স্থপতিকে তাঁর দেশের ইতিহাস ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হয়। মাজহারুল ইসলাম সৃষ্টিশীলতার ক্ষমতা উপলব্ধি করেন এবং স্থাপত্য গঠন ও বিস্তার উভয়ের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। অরেগনে মাজহারুল ইসলাম একজন পুরকৌশলী থেকে ক্রমশ সৃজনশীল স্থপতিতে রূপান্তরিত হন। তিনি জানতেন, পূর্ববাংলার 888sport free betগরিষ্ঠ মানুষ হতদরিদ্র, কৃষিনির্ভর ও শিক্ষাবঞ্চিত। তিনি জানতেন, পূর্ববাংলার কম করে হলেও তিন হাজার বছরের স্থাপত্য ও সভ্যতার ইতিহাস আছে; কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের কারণে তা আজ আহত, নিষ্প্রভ ও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় ডিগ্রিপ্রাপ্ত পূর্ববাংলার প্রথম বাঙালি স্থপতি মাজহারুল ইসলাম দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দেশ গড়ার অদম্য প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫৩ সালে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে আসার পর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন প্রধান স্থপতি রেমন্ড ম্যাককনেল তাঁকে ইনস্টিটিউট অফ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফট্স ভবন ডিজাইন করার দায়িত্ব দেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ত্রিশ। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ডিজাইনে নির্মিত কলেজ ভবনটির নির্মাণকাজ ১৯৫৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৫৬ সালে শেষ হয়। 888sport appsের প্রথম আধুনিক ভবন হিসেবে স্বীকৃত আর্ট কলেজের স্থাপত্য ছিল এক মহান অর্জন। একই বছর ১৯৫৩ সালে ডিজাইনকৃত পাবলিক লাইব্রেরি (বর্তমানে 888sport app বিশ^বিদ্যালয় গ্রন্থাগার) ভবনের স্থাপত্য-সাফল্য, এশিয়া মহাদেশে আধুনিকতার এক অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে মাজহারুল ইসলামের অবস্থান নিশ্চিত করে। আর্ট কলেজের (২০০৮ থেকে চারুকলা অনুষদ, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপত্য ডিজাইনে সত্যনিষ্ঠা ও দেশজ গভীর শিকড়ঋদ্ধ প্রাসঙ্গিকতা, আধুনিকতার এক অনন্য আঞ্চলিক ব্যাখ্যা ও নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। সমকালীন পৃথিবীর নানাবিধ আধুনিক চাহিদা এবং 888sport appsের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও জলবায়ুর পরিপ্রেক্ষিতে রচিত আর্ট কলেজের স্থাপত্যে নমনীয়তা, ভারহীনতা ও উন্মুক্ততা এবং লাইব্রেরি ভবনের স্থাপত্যে গাম্ভীর্য, অভিকর্ষতা ও ভাসমানতা যথেষ্টভাবে প্রমাণ করে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের কর্মদক্ষতা ও সামর্থ্য। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক জুড়ে ডিজাইন প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি 888sport apk, প্রযুক্তি ও যুক্তির চর্চা করেছেন যার ফলে ডিজাইন ফল্গুধারার মতো উৎসারিত হয়েছে তাঁর
সিক্স-বি পেনসিল ও কাঠকয়লার খড়ি থেকে। তাঁর ডিজাইনে নির্মিত হয় একের পর এক বিশ্বমানের আধুনিক স্থাপত্যসম্ভার। এইসব প্রকল্পের বেশিরভাগই ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর আর্ট কলেজ, পাবলিক লাইব্রেরি ও নীপা (NIPA) ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (রংপুর, বগুড়া, পাবনা, সিলেট ও বরিশাল), 888sport apk গবেষণাগার (BCSIR), মতিঝিলে কৃষি ভবন (ADC) ও জীবন বীমা ভবন (EFU) ইত্যাদি। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলির মধ্যেই নিহিত আছে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের 888sport appsের জন্য একটি আধুনিক পরিচয় নির্মাণের দূরদৃষ্টি ও অঙ্গীকার।
দুই
আর্ট কলেজের স্থাপত্য যদিও পশ্চিমের আধুনিক স্থাপত্যের ধ্যান-ধারণা ও চিন্তাপ্রসূত তথাপি স্থপতি মাজহারুল ইসলামের অসাধারণ সংবেদনশীলতা, সৃজনীক্ষমতা এবং সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সর্বোপরি 888sport appsের জলবায়ু সম্পর্কিত বোধ ও অন্তর্দৃষ্টির কারণে তিনি একাই 888sport appsের জন্য একটি পরিশীলিত ও আধুনিক স্থাপত্যভাষা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা আজো তাঁর প্রাথমিক প্রাণশক্তি ও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। ড্রইংবোর্ডে পেনসিলের দাগ কাটার আগে তিনি স্বদেশ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি 888sport appর ব্রিটিশ ও মুঘল ভবনসমূহ তথা কার্জন হল, পুরনো হাইকোর্ট, বর্ধমান হাউজ, এস এম হল, লালবাগ দুর্গ, বড় ও ছোট কাটরা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি আধুনিক সমাজ নির্মাণে এসব অনমনীয় ও ভারী ভবনের কোনো প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাননি বরং এসব দালান তাঁর সৃজনশীল কর্মতৎপরতার স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবে বলে মনে করেন। তাই তিনি মুঘল ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করে বরং পশ্চিমের আধুনিক স্থাপত্যের উদার নীতিকে গ্রহণ করে উত্তর-ঔপনিবেশিক এক মনোভাব ধারণ করেন, যার ফলে শৈল্পিক অভিব্যক্তির স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তিনি আধুনিকতাকে সমাজজীবনের ধারক হিসেবে গণ্য করে উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুনত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম আর্ট কলেজের জমির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খুঁজে পান খোলামেলা পরিসর ও সবুজের সমারোহে। তিনি জমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধারণ করে আর্ট কলেজের ভবনটিকে তিন অংশে ভাগ করেন এবং একটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রলম্বিত বারান্দার সাহায্যে অংশগুলিকে যুক্ত করেন। সম্মুখের দোতলা ভবনটির নিচতলা দেয়ালবিহীনভাবে ফাঁকা রেখে বাইরের উন্মুক্ততাকে ভেতরে নিয়ে আসেন। ভবনের মাঝের অংশে আছে শ্রেণিকক্ষসমূহ যাতে আছে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস। ভবনের শেষপ্রান্তে আছে একটি গোল পুকুর ঘেঁষে বক্রাকার একটি অংশ। উন্মুক্ততা, হাঁটার পথ, বাগান ইত্যাদির সমন্বয়ে মাজহারুল ইসলাম কলেজ ভবনটির স্থাপত্য ডিজাইন ও সামগ্রিক পরিবেশ এমনভাবে রচনা করেন যেন তা 888sport live chatকলার ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল শিক্ষাক্রমের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ভবনটি স্থান ও কাল বিবেচনায় 888sport appর একটি সুন্দর আধুনিক ভবন হিসেবে আইকনিক মর্যাদা লাভ করে।
এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মাজহারুল ইসলাম অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে আল্ভার আল্টো কীভাবে তাঁর ভবনকে জমির
উঁচু-নিচু অবস্থানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মাটির সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং কীভাবে স্থানীয় নির্মাণসামগ্রীর টেক্সচার ও গ্রেইন ব্যবহার করেছেন, তা অবলোকন করেন। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম লি কর্ব্যুসিয়রের উন্মুক্ততা, স্বচ্ছতা, খোলা প্ল্যান, খুঁটি ও সমান ছাদের চিন্তা দ্বারাও বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তিনি এসব বিষয় তাঁর স্থাপত্যে সহজে মানিয়ে নিয়েছেন তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের জন্য একটি স্বদেশি, বাস্তব, ইহজাগতিক ও আঞ্চলিক স্থাপত্য রচনার লক্ষ্যে। কলেজ ভবনটির সম্মুখ অংশে নিচতলার খোলামেলা পরিবেশ, খুঁটি ও সমান ছাদ, বাধাহীন ও দরজাহীন প্রবেশপথ তৈরি করেছে। দরজাবিহীন প্রবেশপথ ও খোলামেলা চলাচলের ব্যবস্থা বাইরের সবুজ গাছপালার সঙ্গে মেলবন্ধনে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলে দিন ও রাত, বৃষ্টি, সূর্যাস্ত, তারাভরা আকাশ, ফুলের নানা বর্ণ, পাখির কিচির-মিচির শব্দ সবকিছুই কলেজ ভবনটিতে সহজেই প্রবেশ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ-রূপক দাবি করে জলবায়ুজনিত দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম আলো-বাতাসে সমৃদ্ধ খোলামেলা স্থাপনার ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা সত্ত্বেও প্রতিটি কক্ষে তালা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। নিরাপত্তার ব্যাপারটি মূলত নৈতিকতার বিষয়। মানুষের ওপর আস্থার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, গত ৬৭ বছরের ইতিহাসে কলেজ প্রাঙ্গণে নিরাপত্তাজনিত হুমকির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
স্থপতি মাজহারুল ইসলামের স্থানীয় নির্মাণসামগ্রী, কারু888sport live chat ও উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুজনিত কোমল আলোর প্রতি 888sport apk download apk latest versionবোধ থাকা সত্ত্বেও আধুনিক নির্মাণকৌশল ও যুক্তিযুক্ত স্থাপত্য গঠনের প্রতি থেকেছেন অবিচল। তিনি পলেস্তারাবিহীন ইট ব্যবহার করেছেন, যেন দালানের অবয়ব যান্ত্রিকতামুক্ত হয়। তিনি জালি ইট, সেগুন কাঠের তৈরি সূর্যপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ভাস্কর্যমণ্ডিত বক্রসিঁড়ি ব্যবহার করে স্থাপত্যের স্পর্শজনিত ও কাঠামোগত মান বর্ধন করেছেন, সেইসঙ্গে নির্মাণ করেছেন একটি বিশেষ স্থানিক ব্যঞ্জনা। আধুনিকতা দাবি রাখে নির্মাণসামগ্রীর প্রতি মমত্ব, অভিব্যক্তিসম্পন্ন কাঠামো ও ব্যবহারিক ন্যায্যতা, যা আসলে ভবনেরই মৌলিক উপাদান। এসব বিমূর্ত চাহিদা আঞ্চলিক স্থাপত্য রচনায় মূলত কোনো বাধার সৃষ্টি করে না।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবেশগত ধারণার বশবর্তী হয়েছেন। কবিগুরু বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে কলকাতা শহরের কোলাহল ও ভোগবাদী সমাজ থেকে দূরে অরণ্য-পরিবেশে আত্মার শান্তি ও আরাধনার উপযুক্ততা বিবেচনা করেছেন। বড় বড় গাছের ছায়াঘেরা জায়গায় তিনি ছোট ছোট ভবন নির্মাণ করেছেন, শিক্ষা, প্রশাসনিক ও 888sport app প্রয়োজনে। কিন্তু স্থাপত্য আধুনিকতাবর্জিত প্রাচীন ধারণায় রচিত হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধারণা আত্মস্থ করে আর্ট কলেজকে আরো বেশি কার্যকর, প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এটা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় যে, মাজহারুল ইসলাম তাঁর প্রথম প্রকল্পেই শুধু ইসলামী ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্য থেকে বেরিয়ে আসেননি, তিনি তাঁর প্রকল্পে পূর্ববাংলার মানুষের চাহিদা ও মাটির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছেন। তিনি সবধরনের অলংকরণ ও সাজসজ্জা বর্জন করে নির্মাণসামগ্রীর মৌলিক ও গুণগত বৈশিষ্ট্যের সহজ ও সরল ব্যবহারে বিমূর্ত গঠন নির্মাণ করেছেন, যা আধুনিক স্থাপত্যেরই চারিত্রির বৈশিষ্ট্য। তিনি যদিও লোকজ, স্থানীয়, ইসলামি বা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্য সম্পূর্ণ বর্জন করে পশ্চিমের আধুনিক বিমূর্ততাকে গ্রহণ করেছে, তথাপি তিনি স্থানীয় নানা উপসর্গ ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি পূর্ববাংলার জলবায়ু, ঋতু পরিবর্তন, পরিবেশগত ভারসাম্য, টেকসই অবস্থান ও সমাজ সচেতনতাপ্রসূত সরল, নিরহংকার ও প্রগতিশীল স্থাপত্য রচনা করেছেন। আর্ট কলেজ 888sport appsের স্থাপত্য ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই স্থাপত্য সর্বপ্রথম আধুনিক স্থাপত্যের সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল, যা ৭০ বছর পরে আজো অবিসংবাদিতভাবে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে।
তিন
স্থাপতি মাজহারুল ইসলামের বিশাল দুটি প্রকল্প হচ্ছে : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাস দুটি ডিজাইন করার সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি কেমন হবে তা নিয়ে ভেবেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, ভোগের কোনো সুযোগ থাকে না, শুধু থাকে উচ্চশিক্ষা ও নির্মল আনন্দের জন্য উৎসর্গকৃত উপযুক্ত পরিবেশ। ক্যাম্পাস হচ্ছে বুদ্ধিচর্চার স্থান, নিজস্ব পরিচয়ে উদ্ভাসিত ও নানা চরিত্রের মানুষের মিলনমেলা। ক্যাম্পাস হচ্ছে গভীর অনুভূতি-জাগানিয়া এক আবেগময় স্থান, যা শিক্ষা অর্জনের মূল উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করে। ক্যাম্পাস হচ্ছে অভিজ্ঞতা অর্জনের, 888sport live chatচর্চার ও সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের তীর্থস্থান। শিক্ষার্থীদের কিছুদিনের জন্য এক স্বর্গরাজ্য, জীবনের এক মূল্যবান অধ্যায়। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ক্যাম্পাসের স্থাপত্য নিয়ে ভেবেছেন। তিনি ভেবেছেন ক্যাম্পাসের স্থাপত্যে প্রতিফলিত হবে শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য। ক্যাম্পাস-স্থাপত্যে বহিঃপ্রকাশ ঘটবে প্রাতিষ্ঠানিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি ও সমাজের মূল্যবোধ। ক্যাম্পাসের স্থাপত্যে থাকবে নিজস্ব পরিচয়, গর্ব করার মতো ত্রিমাত্রিক পরিবেশ, যা ক্যাম্পাসের গণ্ডির বাইরে এবং সমাজকে স্বচ্ছ ও উন্নত ধারণা দেবে। ক্যাম্পাস দুটি যথাক্রমে 888sport app ও চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত কিন্তু বেশ দূরে অবস্থিত। তাই তিনি নানাবিধ প্রয়োজন ও সুবিধার সমন্বয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খুদে শহর হিসেবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেন উভয় ক্যাম্পাসের জন্য। ক্যাম্পাসে ছড়ানো-ছিটানো নানা ধরনের দালানের সমন্বয়ে স্বকীয়তা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় না। তাই তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে পাহাড়ি ভৌগোলিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখে একই জ্যামিতিক গঠন স্থাপত্যে বারবার ব্যবহার করে সংগতিপূর্ণ মেলবন্ধন রচনা করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ডিজাইনে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম 888sport appsের স্থাপত্য ইতিহাসের গভীরে গিয়ে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির আশ্রয় নেন, যা 888sport appsের পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক পরিচয় বা আইডেনটিটি নির্মাণের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। গভীর আবেগে স্থপতি ইসলাম তাঁর স্থাপত্য প্রস্তাবনায় পূর্ববাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের সম্ভাব্য পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা করেন। পূর্ববাংলাকে আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে তিনি পাহাড়পুর ও ময়নামতির স্থাপত্যবিন্যাস, বিশেষ করে বর্গাকৃতি উঠানের চারপাশ ঘিরে বর্গাকৃতি বৌদ্ধবিহারের আদলে উঠান ঘিরে বর্গাকৃতির স্থাপনাসমূহ কৌণিক বা তির্যক ফরমের বা গঠনের ব্যবহার করে এক অনবদ্য কম্পোজিশন ও যুগান্তকারী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেন।
পূর্ববাংলার স্থাপত্যে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, ইত্যাদিসহ কয়েক হাজার বছর ধরে পোড়ামাটির ইট ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থপতি ইসলাম সম্পূর্ণভাবে পলেস্তারাবিহীন পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করেই জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে তাঁর স্থাপত্যে যেমন প্রগাঢ় নান্দনিক অভিব্যক্তি রচনা করেছেন, তেমনি এক কালোত্তীর্ণ স্থাপত্য-ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে জ্যামিতিক বিন্যাস, চত্বরবেষ্টনী, সামগ্রিক সংগতিপূর্ণ ভবনসমূহের ঐকতান, উঁচু-নিচু ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে জলাশয়ের আঁকাবাঁকা বুনট ও গঠনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে জ্ঞানচর্চার এক অভূতপূর্ব ক্ষেত্র রচনা করেছেন। ওই ক্যাম্পাসে দালানের ঘনত্ব, বিন্যাস, ইট ব্যবহারের মুনশিয়ানা, সূর্যের উষ্ণতা প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আলোর প্রাচুর্য ও বাতাসের সঞ্চালন প্রক্রিয়া, সবকিছু মিলে বাহুল্যবর্জিত, নিরহংকার অথচ স্থায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের এক মহাআখ্যান রচিত হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যেমন পাল আমলের চর্যাপদ থেকে যাত্রা শুরু করে মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, ইসলামী 888sport live football, শাক্তপদাবলি, বাউল গান এবং ইউরোপীয় সংগীত ও 888sport live footballের ভেতর দিয়ে পরি888sport slot game শেষে গীতাঞ্জলিতে পৌঁছেছিলেন, তেমনি স্থাপত্যগুরু মাজহারুল ইসলাম পাল আমলে নির্মিত পাহাড়পুর ও ময়নামতির বৌদ্ধ বিহার (মূলত শিক্ষাকেন্দ্র) থেকে যাত্রা শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ, সুলতানি, মুঘল, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও ইউরোপীয় আধুনিক স্থাপত্য পরিক্রম করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপত্যে পৌঁছান। হাজার বছরের পুরনো পূর্ববাংলার বৌদ্ধ বিহার যেন বিংশ শতাব্দীতে আধুনিকতার জাদুস্পর্শে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের স্থাপত্যে ও মাস্টারপ্ল্যানে পুনর্জীবন লাভ করেছে।
চার
মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণনগরের সুন্দরপুর গ্রামে তাঁর নানাবাড়িতে (কাজীবাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ওমদাদুল ইসলাম (১৮৯৩-১৯৮০) ছিলেন কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে গণিতের অধ্যাপক। মাজহারুল ইসলাম কৃষ্ণনগর হাই স্কুল, রাজশাহী সরকারি হাই স্কুল ও রাজশাহী সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেন। তিনি ১৯৪০ সালে 888sport apk বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৪২ সালে পদার্থবিদ্যায় অনার্সসহ বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কৃষ্ণনগর স্কুলে পড়ার সময় বালক ইসলাম কুমারপাড়ায় পোড়ামাটির পাত্র ও দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণ করা দেখে অভিভূত হন। পরে রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে কষ্টিপাথরে তৈরি দেবদেবীর ভাস্কর্য ও রিলিফ কাজ দেখে মানুষের সৃষ্ট 888sport live chatকর্ম তাঁর অবচেতন মনে সৌন্দর্য সৃষ্টির প্রতি এক গভীর উপলব্ধির সঞ্চার করে। মাজহারুল ইসলাম ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পুরকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন এবং ১৯৪৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে পুরকৌশলী মাজহারুল ইসলাম 888sport appয় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে যোগাযোগ, বিল্ডিং ও সেচ (সিবিঅ্যান্ডআই) মন্ত্রণালয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। শিবপুরে পড়ার সময় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ছাত্রনেতা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেঙ্গল রেনেসাঁস-উৎসারিত আভিজাত্যমণ্ডিত কাব্যিক মানবতা, নেতাজি সুভাষ বোসের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শ, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন এবং সর্বোপরি মার্কস ও লেনিন-প্রণীত সমাজতন্ত্রের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হন। বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে ক্রমে একজন আদর্শবান, সৎ ও আপসহীন ব্যক্তিত্বে পরিণত করে যার পরিণতিতে তিনি অর্জন করেন বহু শত্রু ও যৎসামান্য বন্ধু।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ও বিকাশে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদবিরোধী অপশক্তি নিধনের সংগ্রামে তাঁর জীবনব্যাপী অবদান সর্বজনবিদিত। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
পাঁচ
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলার মহান 888sport live chatী 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬), যিনি কলকাতা কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফ্টে শিক্ষকতা করছিলেন, 888sport appয় চলে আসেন। শিগগিরই ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে 888sport appয় ইনস্টিটিউট অফ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্টস (আর্ট কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। পুরান 888sport appর কয়েকটি ভবন ভাড়া করে আর্ট কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আরো কয়েকজন 888sport live chatী কলকাতা থেকে 888sport appয় এসে আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এঁদের মধ্যে আনোয়ারুল হক, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ ও মোহাম্মদ কিবরিয়া উল্লেখযোগ্য। কলেজটির একটি স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয়তা প্রকটভাবে দেখা দেয়। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রেসকোর্সের উল্টোদিকে শাহবাগ অঞ্চলে কলেজটির জন্য একটি জায়গা নির্ধারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রকফেলার ফাউন্ডেশন অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসে। আর্ট কলেজ ডিজাইন ও নির্মাণকালে (১৯৫৩-৫৬) স্থাপতি ইসলামের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকবৃন্দ বিশেষ করে প্রিন্সিপাল জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া ও পরে রশিদ চৌধুরীর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 888sport live chatীদের প্রগতিশীল মানসিকতা ও কর্মকাণ্ডের কারণে আর্ট কলেজ অচিরেই বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। স্থপতি ইসলাম তখন থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে পড়েন। ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের বাধা সত্ত্বেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় তিনি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের রাজনৈতিক দল মস্কোপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কোষাধ্যক্ষ হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর তিনি 888sport apps আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানের জান্তা সরকার (১৯৫৮-৬৮) পূর্ববাংলার পাট ও চা থেকে অর্জিত অর্থ লুট করা ও বাঙালিদের নানাভাবে অবহেলা করা সত্ত্বেও পূর্ববাংলার মানুষকে শান্ত ও সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল পূর্ববাংলার একমাত্র উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানে পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ডিজাইনের জন্য স্থপতি ইসলাম কমিশনপ্রাপ্ত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ক্যাম্পাস এবং 888sport apps প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ভবন ডিজাইনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্থাপত্য ও প্রকৌশল উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ‘ল্যুই বার্জার’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মকবুলার রহমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ল্যুই বার্জারের সহযোগী হয়। এসব প্রকল্প ইউএসএইড (USAID) কার্যক্রমের অধীনে কার্যকর হয়।
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিতীয় রাজধানী নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৯ সালে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবোটাবাদের অন্তর্গত নাথিয়াগলি হিল স্টেশনে অনুষ্ঠিত গভর্নরস কনফারেন্সে দ্বিতীয় রাজধানীর প্রস্তাব গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পূর্তমন্ত্রী স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে দ্বিতীয় রাজধানীর পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি নিজে এ-পরিকল্পনা না করে পৃথিবীবিখ্যাত কোনো স্থপতিকে দিয়ে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পূর্তমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম জানতেন যে, দ্বিতীয় রাজধানী আইয়ুব খানের উচ্চাকাক্সক্ষী প্রকল্প। তখন আইয়ুব সরকারের লক্ষ্য ছিল ইসলামী স্থাপত্যকে রাষ্ট্রীয় স্থাপত্য হিসেবে উৎসাহিত করা। স্থপতি ইসলামের ভয় ছিল, বিদেশি স্থপতিরা এ-ধরনের অবস্থায় যেন বিব্রতবোধ না করেন। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম তিনজন বিশ্বখ্যাত স্থপতির নাম প্রস্তাব করেন। তাঁরা হলেন – ফ্রান্সের লি কর্ব্যুসিয়র, ফিনল্যান্ডের আলভার আল্টো ও যুক্তরাষ্ট্রের ল্যুই আই কান্। শেষ পর্যন্ত স্থপতি কান্ রাজি হন। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম যখন ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় মাস্টার্স করতে যান, তখন তিনি কান্ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। কান্ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (১৯৪৭-৫৭) ছিলেন। স্থপতি ল্যুই আই কান্ সংসদ ভবনসহ শের-ই-বাংলা নগরের পরিকল্পনা করেন। 888sport appsের সংসদ ভবন বিশ্বে সর্বকালের একটি মহান স্থাপত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃত। কালোত্তীর্ণ সংসদ ভবন কমপ্লেক্স 888sport appsের স্থপতিদের জন্য অন্তহীন প্রেরণার এক উৎস হিসেবে আজও বিদ্যমান।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম আধুনিক স্থাপচ্যচর্চাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে একটি আধুনিক সমাজ নির্মাণে আজীবন সচেষ্ট ছিলেন। প্রথাগত সব ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে 888sport appsের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ আধুনিক ও যুগোপযোগী স্থাপত্যের স্বরূপ নির্ণয়, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন নিবেদিত। তাঁর স্থাপত্যের ক্রমবিকাশের গভীর যুক্ততার জন্য তাঁর দর্শনে পরিবর্তন আসে। তাঁর প্রথম প্রকল্প আর্ট কলেজের স্থাপত্যে তিনি যেমন ছিলেন উন্মুক্ততা ও পরিচ্ছন্নতা প্রয়াসী, তেমনি জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের স্থাপত্যে তিনি ছিলেন প্রকটতা ও জটিলতা আশ্রয়ী আর তাঁর শেষ প্রকল্প জাতীয় আর্কাইভের স্থাপত্যে সন্ধান করেছেন অসীমতা, অলীকতা ও মায়া। তিনি ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি ছিলেন পুরোপুরি বাঙালি। তাঁর ধারণাটি ছিল এমন যে, আমরা মুঘল নই, ইংরেজও হতে পারব না। তাই চলুন আমরা বাঙালি হই। বাঙালি হওয়ার বাসনার মধ্যেই সুপ্ত ছিল স্থপতি মাজহারুল ইসলামের বাংলা ভাষা ও 888sport appsের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং সূক্ষ্ম জাতীয়তাবোধ। কলকাতা প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন প্রধান স্থপতি ও খ্যাতিমান অধ্যাপক সন্তোষকুমার ঘোষ নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন, ‘আমাদের দুই বাংলার স্থপতিদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, মাজহারুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্থপতি।’
ছয়
১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের হত্যার পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী জান্তা সরকারের শাসনকালের (১৯৫৮-৬৮) পূর্ব পর্যন্ত যথেষ্ট টালমাটাল ছিল। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বৈশি^ক সময়টা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যবর্তী শীতল যুদ্ধের। যুক্তরাষ্ট্র-পরিচালিত ‘পশ্চিম ব্লক’-এর মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান অবস্থান নেয়। ভারত সোভিয়েত ব্লকের মিত্র শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান ও ভারতের বৈরী সম্পর্ক তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ববাংলার বেশিরভাগ শিক্ষিত ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ ছিলেন বাম রাজনীতিতে বিশ^াসী, বিশেষ করে শোষণমুক্ত সমাজ তৈরির অভিপ্রায়ে মার্কস-লেনিন ও সোভিয়েতপন্থী। ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার ‘কমিউনিস্ট কন্ট্রোল অ্যাক্ট-১৯৫৪’-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাম রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। একই সময় পাকিস্তানে ওই অ্যাক্ট কার্যকর করে বাম আন্দোলন ও সম্ভাব্য বিপ্লব প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে বামপন্থী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। পাকিস্তানের দুই প্রান্তেই বাম রাজনীতি কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং অনেক বামপন্থী নেতাকে হয় জেল অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হয়। তবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বাম-নিষিদ্ধতা কিছুটা শিথিল অবস্থায় কার্যকর থাকায় বাম রাজনৈতিক দলগুলি লুকিয়ে অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখে। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ছিলেন সোভিয়েতপন্থী এবং ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ। ১৯৬৩ সালে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম তৎকালীন প্রধান স্থপতি রেমন্ড ম্যাক্কনেলের সঙ্গে মতের মিল না থাকায় সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে প্রখ্যাত পুরকৌশলী শেখ মহম্মদ শহীদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে স্থাপত্য উপদেষ্টা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বাস্তুকলাবিদ’ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ‘বাস্তুকলাবিদে’র তিন নম্বর পরীবাগের অফিস থেকেই স্থপতি মাজহারুল ইসলাম একাধারে স্থাপত্য ও প্রকৌশল ডিজাইন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও গোপনে বাম রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেই সময় ‘বাস্তুকলাবিদ’ অফিসের বাইরে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মচারীদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। ‘বাস্তুকলাবিদে’র অংশীদার পুরকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন চীনপন্থী। তৎকালীন বাম সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে মার্কসবাদী নামে একটি পত্রিকা ছাপিয়ে দেওয়ার অপরাধে তিনি ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়ে কারাবাসে যান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ১৭ই ডিসেম্বর তিনি কারামুক্ত হন। এ ঘটনার পর স্থপতি ইসলাম যথেষ্ট সতর্ক হন। সরকারি স্থপতি হিসেবে আর্ট কলেজের ডিজাইন করার সময় থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের খ্যাতিমান 888sport live chatী, 888sport live footballিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, সেনাকর্তা, আইনবিদ ও অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে মাজহারুল ইসলামের পরিচিতি ও সখ্য হয়। এঁদের কল্যাণে স্থপতি ইসলাম ‘বাস্তুকলাবিদ’ অফিসের আবরণে ন্যাপের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন 888sport apps প্রতিষ্ঠার পর পর ‘বাস্তুকলাবিদে’র সরকারি প্রকল্পগুলি 888sport apps সরকার নবায়নের পরিবর্তে প্রত্যাহার করে নেয়। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম এ-ধরনের পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে হতবাক হয়ে পড়েন। ‘বাস্তুকলাবিদ’ বন্ধ হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কাজ তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। ৮৯ বছর বয়সে 888sport appsের শ্রেষ্ঠ স্থপতির সৃজনশীল প্রতিভার সমাপ্তি ঘটে।
সাত
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম 888sport appsে স্থাপত্য শিক্ষা ও পেশার উন্নয়নের জন্য ১৯৭২ সালে 888sport apps স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন। তিনি ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও এক টার্ম (১৯৬৮-৬৯) সভাপতি ছিলেন। এছাড়া নবীন ও উৎসাহী স্থপতিদের নিয়ে আশির দশকে ‘চেতনা’ নামে একটি পাঠচক্র গড়ে তোলেন। 888sport appsের খ্যাতিমান 888sport live chatী, 888sport live footballিক, কবি, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ অনেকেই ওই পাঠচক্রে ক্রমশ সম্পৃক্ত হন। ১৯৮০-৮১ সময়কালে সৌদি আরব সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল ভবনের জন্য ডিজাইন প্রতিযোগিতা ও আগা খান স্থাপত্য 888sport app download bdের জন্য প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক ছিলেন মাজহারুল ইসলাম। ১৯৯৩ সালে 888sport apps স্থপতি ইনস্টিটিউট (বাস্থই) স্থাপত্য শিক্ষা ও পেশায় মূল্যবান অবদানের জন্য তাঁকে বাস্থই-এর প্রথম স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস (আই.আই.এ) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষকুমার ঘোষের নেতৃত্বে মাজহারুল ইসলামকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আধুনিক স্থাপত্যের বিকাশে তাঁর অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস্ স্থপতি ইসলামকে সম্মানী ফেলোশিপ প্রদান করে। এই বছর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস্ তাঁকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আধুনিক স্থাপত্য বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য গ্র্যান্ড মাস্টার্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। ১৯৯৯ সালেই 888sport apps গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার তাঁকে স্বাধীনতা 888sport app download bdে ভূষিত করে।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ছিলেন 888sport appsে আধুনিক স্থাপত্যের পথপ্রদর্শক, স্থাপত্যগুরু। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল, মানবতাবাদী, রাজনীতি-সচেতন, সংস্কৃতিমনস্ক, সৎ, সাহসী এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। ছিলেন সুদর্শন এক আপাদমস্তক বাঙালি যিনি চিন্তায় ও মননে ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে এগিয়ে। 888sport appsের স্থাপত্য ইতিহাস নির্মাণে তাঁর বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও মহৎ অবদানের জন্য তিনি চিরকাল 888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর চিন্তা, স্বপ্ন ও বেদনাগুলি আমাদের হৃদয়ে ও 888sport appsের অস্তিত্বে থেকে যাবে চিরকালের জন্য। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে 888sport app download for android করি বিনম্র 888sport apk download apk latest versionয়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.