স্বপ্নাবসান

অ্যাটর্নি অফিসের আবহাওয়ায়, ভাবভঙ্গি, আসবাবপত্র বা অভ্যাগতবৃন্দের মধ্যে এমন কিছু নেই যার সংস্পর্শে জেগে উঠতে পারে মেদুর-করুণ সুদূর অতীতের ছবি। দেবতাদের স্বাধিকারবোধ সম্ভবত খুব বেশি। একের আসরে অপরে আসতে চান না, বিশেষত আইনের অধিষ্ঠাত্রীর মন্দিরে স্বপ্ন-দেবীর আগমন অত্যন্ত বিরল। কিন্তু আজকে আমার ভাগ্যবিধাতা অন্যরূপ অভিরুচি করেছেন। এই চিরাভ্যস্ত আবেষ্টনে ও প্রতিবেশেও যে-888sport sign up bonus বাঁধা কর্মে অন্যমনা করে দিয়ে প্রকাশের ভাষা খোঁজে, তাকে দমিয়ে রাখবার ক্ষমতা আমার নেই। জানি না অদৃষ্টে কী আছে? প্যারিসের দেবী-নির্বাচনের ফলে হয়েছিল সর্বনাশ।

আমি যে শপথ করেছিলুম যে, এই সমস্ত বিষয় লিখে আর কাগজ নষ্ট করব না। কিন্তু এতদিন বেঁচে থেকে এই জ্ঞানলাভ হয়েছে যে, প্রলোভনকে জয় করবার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে তার কাছে আত্মসমর্পণ করা। আর যদি ভাঙতেই না পারলুম, তবে প্রতিজ্ঞা করে লাভ কী? অনুশোচনার মধ্যে যে-একটা তীব্র হর্ষ-বিষাদ আছে, তার প্রতিরূপ কি অন্যকিছুতে মেলে? তাই আজ ফের পঁচিশ বৎসর পরে কলম ধরলুম, মনের কথা বলতে। যে যাই বলুক, কাগজের উপর অবাধে কলম চালানোর শব্দ আমার কানে চিরদিনই মধুর; সে যেন মলয়ের চুম্বনে কিশলয়ের সমোচ্ছ্বাস।

পঁচিশ বৎসর পরে লেখনী ধরেছি শুনে, ভেবে যেন আপনারা ভীত হবেন না, বাংলাতেও বুঝি কোনো এক প্রুস্তের আবির্ভাব হলো। প্রুস্ত্ প্রথম পুস্তক লেখবার পর সতেরো বৎসর নীরবে থেকে হাত পাকিয়েছিলেন, বুদ্ধি শানিয়েছিলেন এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। আমিও পঁচিশ বৎসর চুপ করে আছি, কিন্তু উপরোক্ত কারণে নয়। এই পঞ্চবিংশতিবর্ষের স্তব্ধতায় আমার হাত পাকেনি, কাঁপতে শিখেছে; বুদ্ধি বাড়েনি, গেছে তেউড়ে। আর অভিজ্ঞতা? সে-কথা না তোলাই ভালো। ইতোমধ্যে আমি যা সঞ্চয় করেছি তা অর্থ, অভিজ্ঞতা নয়।

ইস্কুলে যখন পড়তুম, আমাদের পণ্ডিতমশাই প্রায়ই বলতেন, ‘যাহা নেই ভারতে, তাহা নেই জগতে।’ কথাটা কতদূর সত্য বলতে পারিনে, কিন্তু এটা নিশ্চয় জানি যে, ভারতে অপর সকল হওয়া সম্ভব হলেও চতুর্দশ খণ্ডব্যাপী 888sport alternative link লেখার সম্ভাবনা অল্পই। 888sport alternative linkের উপকরণ মানুষ ও সজীব মন, বিশেষ তার প্রসার যদি চৌদ্দ 888sport free bet অবধি হয়। এদের সঙ্গে সাক্ষাৎ 888sport appsে হয় না। অন্তত আমার তো হয়নি। লোকে বলে ডাক্তার এবং আইনজীবী সত্যিকারের মানুষ চেনে। আমার কাছে যাঁরা আসেন তাঁরা ‘মনুষ্যরূপেন মৃগাশ্চরন্তি’ না হলেও, মনুষ্যরূপী মৃগদের ধরবার মারবার কল-কৌশলের অন্বেষণেই আসেন। অ্যাটর্নির অফিসে পঁচিশ বৎসর অতিবাহিত করে হয়ত আমার শিক্ষা হয়েছে মৃগয়া সম্বন্ধে, হয়ত আমার কৃতিত্ব হয়েছে ফাঁদ-নির্মাণে, হয়ত আমি পারদর্শী হয়েছি গণিতশাস্ত্রে, কিন্তু চির-প্রাণের সন্ধান খুঁজে পাইনি। কাজেই আমা হতে প্রুস্তের অনুকরণ হবে না। আজকে যা লেখবার জন্য কলম চালাচ্ছি, তা এই পঞ্চবিংশতি বর্ষ-সঞ্চিত অভিজ্ঞতাপ্রসূত নয়, তার পূর্বের দশ-বিশ বৎসরব্যাপী স্বপ্নপ্রয়াণের শেষাঙ্কের কাহিনী মাত্র।

কয়েক লাইন উপরে যে ‘আপনারা’ বলে সম্বোধন করলুম, সে কাদের? পাঠকদের? অভ্যাসের এমনি দোষ। লেখক হবার, কবি হবার দুরভিলাষ যিনিই করেন, তাঁর আর একা থাকবার উপায় নেই। তিনি ভাবেন তাঁদের কলমের একটু আঁচড় দেখবার জন্য, তাঁদের মুখের কথার ঈষৎ উচ্চারণ শোনবার জন্যে শত দর্শক, লক্ষ শ্রোতা বিস্ফারিত নয়নে, বিস্তুতৃ কর্ণে অপেক্ষা করছে। ফলত তাঁর সব কথা বলতে হয় বিচার করে, সব কর্ম করতে হয় হিতাহিত বিবেচনার পরে। সংক্ষেপে তাঁর জীবন উচ্চচিন্তার, অমৃত সন্ধানের অভিনয় মাত্র। সহজ কবি কথাটা শুনতে বেশ, বস্তুত ওই শ্রেণির জীবের সহিত আলাপ-পরিচয় হওয়া দুষ্কর। আমারও একদিন এমন গেছে। তখন মহাসমারোহে নিজেকে লেখক বলে, আদর্শের উপাসক বলে, ‘mighty somnambulist of a shatterd dream’ বলে, স্বপ্নচারী বলে প্রতিপন্ন করতে মত্ত হয়ে পড়েছিলুম। কিন্তু সে-পাগলামি আজকে নেই। আজ যে লিখছি এটা শুধু আত্মপ্রসাদের জন্যে, এটা শুধু নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করবার জন্যে, এটা শুধু লেখার মধ্যে যে-আনন্দ আছে, যে-বিলাস আছে, সেইটি উপভোগের জন্যে। আজ লিখছি না লিখে উপায় নেই বলে, আজ লিখছি আত্মব্যঞ্জনার সেফটি ভালভের পথ দিয়ে বাষ্পাকুল হৃদয়কে লাঘব করবার জন্যে। যখন এই ক্ষণিকের উন্মাদনা ফুরিয়ে যাবে, উন্মাদনা কথাটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলুম, কেননা আজ একটা অশান্তির, অস্থৈর্য্যরে, অতৃপ্তির দানব আমার লেখনীর অগ্রে আবির্ভূত হয়েছে; হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও তা দিয়ে আর কারবারনামার জটিলতা বেরুচ্ছে না, মাথার মধ্যে কূটত্ব প্রবেশ করতে চাচ্ছে না। আমার প্রাণ-মন-বুদ্ধি খুঁজছে সেই mot juste সেই আসল কথাটি, সেই ঠিক কথাটি, সেই অবশ্যম্ভাবী কথাটি – যেটি পেলে আমার 888sport live footballিকের অহমিকা তুষ্ট হবে, আমার ভাব-নীহারিকা আকার পাবে, আমার অন্তরের অস্পষ্ট ক্রন্দসী মুখর হয়ে উঠবে, আমার চিন্তাসাগর-মন্থন-ধন লক্ষ্মী সুধাভাণ্ড হাতে নিয়ে আমার চোখের সামনে উদয় হবেন।- এই মুহূর্তের উন্মাদনা যখন ফুরাবে, খানকয়েক সাদা কাগজ নষ্ট করা যখন শেষ হবে, তখন এই আয়াসসাধ্য পত্রগুলি আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করব।

উপরোক্ত ছত্রগুলি পড়ে দেখলুম, মন্দ হয়নি। কিন্তু ওগুলি কি সত্য? না, যে-অভিনয়ের কথা কিছু আগে বলেছি, তাতেই ভরা। লিখতে বেশ লাগল, শুনতেও নেহাৎ খারাপ হয়নি, তাই কাটলুম না Ñ মায়া করলে। কিন্তু নিজের মনকে আঁখি ঠারার মতো বোকা আমি নই। আমি জানি, মুখে হাজার অন্যরকম বলি, লেখা সমাধা হলে পর ছাপাব, ভস্মীভূত করব না। লোকেও কিনবে এবং কেউ কেউ পড়বে, কেননা এ-রচনাটা বিজ্ঞাপিত হবে প্রেম-কাহিনী বলে। গল্প-লেখক বলে আমার একটা খ্যাতিও আছে। অনেক সময় মনে হয় এই খ্যাতিটা যদি না থাকত তো বাঁচতুম। কবি ও অ্যাটর্নি, এই উভয়ের সংযোগ শুভদায়ক নয়। সমালোচকেরা একটু নাক-সিঁটকে বলেন, ‘ওঃ উনি তো ব্যবহারজীবী। হ্যাঁ, তার পক্ষে লেখাটা মন্দ নয়, সখের রচনা হিসেবে বেশ চলতে পারে।’ আবার মক্কেলরা সন্দেহ করেন, বুঝি দেবাধিকারলুব্ধ বিমানবিহারীকে দিয়ে মর্ত্যবাসীর ন্যায্য প্রাপ্য, স্বত্ব, স্বার্থ অক্ষুণ্নভাবে রক্ষা করা কঠিন হবে। দুই নৌকায় পা-দেওয়া বেশিক্ষণ যুক্তিযুক্ত নয়; বি888sport sign up bonus-নদীর গর্ভে লুপ্ত হবার সম্ভাবনা সতত বর্তমান।

আমার বিশ্বাস যে, রচনাতে আমার একটা স্বাভাবিক ব্যুৎপত্তি আছে। সেটা যে ঐশীশক্তি বা গৌরবের বিষয় বা তাতে যে কোনো প্রতিভা প্রকাশ পায়, এ-কথা বলা ভুল। তবে মানসিক বা নৈসর্গিক বিষয়ে আমি বেশ গুছিয়ে লিখতে পারি। এই ক্ষমতাটাকে যে কেন প্রতিভা বলে বর্ণনা করা হয়, তা আমার কাছে দুর্বোধ্য। অনেকে পাকযন্ত্রের কোনো ক্ষতি না করে দিনে আট-দশ বার খেতে পারেন, বিনা চেষ্টায় বারো ঘণ্টা ঘুমুতে পারেন, বিনাক্লেশে বিশ-পঁচিশ মাইল হাঁটতে পারেন; অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজনৈতিক মীমাংসা করতে পারেন, আপাতসত্য নীতিগর্ভ বক্তৃতা আওড়াতে পারেন, পাড়ার অমুক ঘোষের চরিত্রের স্খলন, পতন, ত্রুটির আলোচনায় অতি মন্থর দিনকেও হনন করতে পারেন; এমন কি কেউ কেউ ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়ে, আইন-কেতাবের ধূলি-ধূসর বোঝা না নেড়ে, সমস্ত আটঘাট বেঁধে চুক্তিপত্রের গোলকধাঁধায় অনায়াসে বিচরণ করতে অসমর্থ নন। কই তাঁরা তো অমানুষ-শ্রেণিভুক্ত হন না। অমানুষ বলছি, কেননা জগতের সমক্ষে প্রতিভাশালী ব্যক্তি পাগল বা অতিকায় জন্তুর শামিল। আর আমারও এই যে লেখার শক্তি, এ-হচ্ছে বিশেষ ধরনের লেখার অভ্যাস। আমি ছন্দের নিয়ম রক্ষা করে অক্ষরের মিলের, চরণের মর্যাদা মেনে, উপমার সাম্য রেখে, অলঙ্কার ও ব্যাকরণের অবমাননা না করে স্বচ্ছন্দেই চলতে পারি; কিন্তু অভিযোগপত্রের ছেদহীন, ক্রিয়াহীন অসীমতার মধ্যে আমি হয়ে যাই একদম দিশেহারা। অতএব মক্কেলদের সন্দেহ সম্পূর্ণ অমূলক নয়।

যেটা আমার সহজে আসে, যেটা করতে আমার ভালো লাগে, সেটা করব, তাতে কারোর ক্ষুণ্ন হবার বা অভিযোগ করবার কিছু নেই। কারণ, আমি লিখি, অবশ্য সেটা কেউ কোনো দিন পড়বে এই প্রত্যাশায় লিখি, কিন্তু তার সঙ্গে আমার রচনা পড়বার জন্যে উপরোধ-অনুরোধ করিনে, বা মাথার দিব্যি দিইনে, বা পরকালের অনিষ্টের ভয় দেখাইনে। কাজেই যদি এই পাতাগুলি পাঠান্তে কারো মনে সন্তাপ উপস্থিত হয় বা কেউ অসন্তুষ্ট হন, তাহলে সে-দুঃখ স্বেচ্ছাকৃত, তার জন্যে আমায় ক্ষমাভিক্ষা করতে হবে না। অবশ্য অধ্যয়ন যাদের পেশা, অলক্ষ্য বাণ-নিক্ষেপ যাদের উপজীবিকা, নীতি ও নিয়মের চশমার ভিতর দিয়ে বিশ্বজগৎকে নিরীক্ষণ করা যাদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম, মন যাদের অলস, চিন্তা যাদের অবশ কিন্তু জিহ্বা যাদের ক্ষিপ্র,- অর্থাৎ কিনা যাঁরা হচ্ছেন পেশাদার সমালোচক, তাঁরা চিরপ্রথানুসারে বলবেন, অনেক কথাই বলবেন। কেউ বলবেন যে, আমার এই গল্পটির মধ্যে রুশ-888sport live footballের প্রতিচ্ছবি জাজ্বল্যমান। কেউ দেখাবেন যে, ফরাসি বস্তু-তান্ত্রিকদের বিকৃতভাবে আমার আখ্যায়িকাটি দুষ্ট। কেউ আবিষ্কার করবেন যে, আধুনিক ইংরেজি 888sport alternative linkের উচ্ছৃঙ্খল, আবিল বেনোজলে আমার মনপ্রাণ পরিপ্লুত। আবার কোনো বিচক্ষণ সমঝদারের সূক্ষ্মদৃষ্টিতে প্রবীণ বঙ্গীয় লেখকদের কাছে আমার অস্বীকৃত ঋণ স্পষ্টতম হয়ে উঠবে। প্রাচীনেরা আর্যরাজবৃন্দকে 888sport app download for android করবেন, দুর্গামন্ত্র জপ করবেন, পাশ্চাত্য সভ্যতার পূতিগন্ধে রামনাম উচ্চারণ করবেন, কলির সূর্যাস্তের আগুনের ঝলকায় চক্ষু মুদবেন, গীতা থেকে ধর্মসংস্থাপক, দুষ্কৃত-বিনাশক ভগবানের পুনরাগমনের শ্লোকটি উদ্ধৃত করে, নিরাশ হতে মানা করবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ম্লেচ্ছ প্রভুর ঔদাসীন্যে বিস্মিত হয়ে শাস্ত্র-কথিত তপ্ত তৈলকটাহের কথাটি মনে করিয়ে দিতে ভুলবেন না। অপরপক্ষে নবীনেরা হয়ে যাবেন অবাক প্রাচীনের আত্মম্ভরিতা দেখে, অসন্দিগ্ধ অন্ধতা দেখে; তাঁরা দেবেন উপমা নব-বসন্তের শাখায় বিগত বসন্তের সময়-বিস্মৃত জীর্ণ পাতার শিথিল আলিঙ্গনের সঙ্গে তাঁরা করবেন নাসিকাকুঞ্চন ভাবালুতাকে বাস্তবিকতা বলে চালানোর প্রবঞ্চনায়; তার পরে সত্যের নিরাবরণ রূপের বিস্তৃত বর্ণনা করে, ‘পিয়োর আর্টে’র জন্ম দিয়ে, 888sport live footballের সহিত কামশাস্ত্রের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের উল্লেখ করে, parents complex তথ্যটির আবিষ্কার করে, সাধু রচনার রীতিকলাপকে ফুৎকারে ধূলিতে লুটিয়ে, নবযুগের প্রচণ্ড মার্তণ্ডের জ্বালাময়ী রশ্মিতে অনিমেষ নয়নে, চিরন্তন নূতনের স্তোত্রে দীর্ঘ বক্তৃতার উচিত সমাপ্তি করবেন।

কথাগুলো কি একদম মিথ্যা? আগে আগে যখন আপাত-সত্য মন্তব্যে অধীর হয়ে পড়তুম, তখন তা-ই মনে হতো বটে; কিন্তু বয়সের সঙ্গে বাহ্বার বাসনা কেটে গেছে; কাজেই এখন ভাবি, সমালোচকদের অভিযোগ, যুক্তি, তর্ক, বুদ্ধি, বিবেচনার ধার না ধারলেও, তার মধ্যে কতকটা অজ্ঞানপ্রসূত সত্য আছে। বর্তমান সময়ে লেখক হবার প্রধান আপত্তি হচ্ছে যে, নূতন করে বলবার আর কিছু নেই। সভ্যতার অরুণোদয়ে আদিম কবিরা যখন রসনার ও রচনার প্রভূত শক্তি আবিষ্কার করেন, তখন ভাষার পূর্ণ পরিপুষ্টি সাধিত হয়নি, অজ্ঞাত সম্ভাবনার আকর তখনো অব্যয়িত ঐশ্বর্যে ভরপুর; ফলত বিনায়াসেই তাঁরা নূতনের সৃষ্টি করে ধন্য হয়ে গেছেন। তখন সর্বসাধারণের জন্যে শিক্ষা-সরবরাহের ব্যবস্থা হয়নি, মুদ্রাযন্ত্রের অত্যাচার শুরু হয়নি, প্রতিযোগিতার মানুষ-দৌড়ের মজা জগৎ বুঝেনি; কাজেই তাঁদের মামুলি-অনুভূতি-ভরা, যুক্তবর্ণ-গম্ভীর একঘেয়ে পয়ারগুলি আমাদের কাছে পদলালিত্যে, অর্থগৌরবে, ভাব-প্রবণতায় অতুল মনে হতো। তখন শ্রোতা ছিল অল্প, যারা বুঝত তারা কাব্যালোচনা করত, কাজেই অরসিকদের হাতে পড়ে তাঁদের কাব্যের অমর্যাদা ঘটবার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। যে কাব্য পড়তে জানে, তার আবৃত্তিতে সাধারণ 888sport app download apkও অপূর্ব মাধূর্যে মণ্ডিত হয়ে ওঠে, আর অজ্ঞদের নীরস, প্রাণহীন, বোধহীন, রুক্ষ্ম কণ্ঠস্বরে বহু পরিশ্রমসাধ্য বর্তমানের নব নৃত্যচপল, ঝঙ্কারমুখর ছন্দগুলিও শোনায় পাগলের প্রলাপের মতো। বিশেষত, প্রাচীন কবিদের উপাসক ও শিষ্যগণ হচ্ছেন একলব্য শ্রেণীয়, তাঁদের ইষ্টমূর্তি হচ্ছে মনগড়া। অজানিতের, অপ্রত্যক্ষের, কাল্পনিকের একটা পরম গুণ এই যে, তিনি দোষত্রুটি-হীন। ভক্তবৃন্দের কাছে অসন্দিগ্ধ ও অপঠিত হয়ে থাকার সৌভাগ্য আমাদের নেই।

পুরানো ঔপন্যাসিকদেরও আমাদের অপেক্ষা একটা বিশেষ সুবিধা এই ছিল যে মানুষ তখন ছিল সরল। বনস্পতির শাখা-প্রশাখা যেমন কালের সহিত বক্রতর হয়ে ওঠে, তেমনি নর-চরিত্রও জটিল, দুরূহ ও বৈষম্যবহুল হয়ে পড়ছে। কৃষিযুগের প্রথমে মালির কার্য্য সহজ, কিন্তু র্অকিড্-উৎপাদন শ্রমসাধ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ। তখন কতকগুলি আদিম সর্বজনীন মিথ্যার উপর নির্ভর করে গল্প বলা চলত: কিন্তু আজকাল কথককে নিজের মিথ্যা নিজে আবিষ্কার করে নিতে হয়। তখনকার পাঠক বা শ্রোতা সভ্যতার খাতিরে প্রণয়কে একটা কিছু অদ্ভূত, অলৌকিক পদার্থ বলে ভাবতে শেখেনি, তারা জানত যে প্রেমের সূত্রপাত আসক্তিতে অর্থাৎ একটা ক্ষুধায়। যেহেতু কোনো ক্ষুধার বিকৃত বর্ণনা করতে গেলে অবরতা, ইতরতা অথরা সত্যগ্রাহিতা অনিবার্য সেহেতু তারা প্রেমের অস্তিত্ব ইশারাতেই বুঝে নিয়ে তুষ্ট থাকত এবং সেকালের শিষ্ট প্রবৃত্তিগুলি, যেমন Ñ জয়াকাক্সক্ষা, অসীম, সাহসিকতা, পুষ্পবৃষ্টি, অগ্নিবৃষ্টি, সশরীরে স্বর্গ-নরকে গমন, বিধাতার রাগ-তাপ, পতিতপাবনের অমায়িকতা ইত্যাদি সম্বন্ধে অদ্ভুত অপূর্ব মিথ্যা কথা মুগ্ধচিত্তে শুনত। কাজেই সে-যুগে গল্প-বলার পেশা ছিল সহজ, কারণ যুদ্ধ-বিগ্রহ-সম্বন্ধে অনেক মিথ্যাই সহজে আবিষ্কার করা যায়, কেননা স্বচক্ষে যুদ্ধ দেখবার সৌভাগ্য বড় একটা হয় না, এমনকি যাঁরা নিজেরা যোদ্ধা তাঁদেরও নয়; স্বর্গ-নরক, ভগবান, সাহস ইত্যাদি বিষয়েও এই যুক্তি খাটে। কিন্তু অধিক বা অল্প পরিমাণে যে-অভিজ্ঞতা সকলেরই আছে, সে-সম্বন্ধে নূতন মিথ্যার সৃষ্টি করতে পারেন তাঁরাই, যাঁদের প্রতিভা বলে সেই অমানুষিক ব্যাধিটি আছে।

অতএব আমার মতো অপ্রতিভাশালীদের অনুরাগের আলোচনা করতে হলে পরের ধনে পোদ্দারি করা ভিন্ন গতি নেই। আধুনিক ভারতের গৌরব, আধুনিক ভারতের স্বকীয়তা হচ্ছে পাতিব্রত্যে, প্রণয়ে নয়; বিশেষত সে নব্যপ্রেমে তো নয়ই, যা আমাদের নবীন-পাঠকেরা সদা সর্বদা খোঁজেন। চষধঃড়হরপ ষড়াব, অর্থাৎ যার স্বপ্নাবেশে অনিন্দ্যসুন্দরী বিবাহিতা যুবতী ও কন্দর্পসমান অনূঢ় যুবক রাতের পর রাত, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর নিভৃতে নির্জনে একলা, ঠিক বলতে গেলে দোকলা, একত্রে বাস করেও সম্ভোগ-সুখের লালসে আত্মহারা হয়ে পড়েন না, তাদৃশ প্রীতি অস্মদ্দেশেই সম্ভব, যেখানকার আলোক সততই মলিন, সূর্য কুজ্ঝটিকার যবনিকা ভেদ করে রক্তকে উত্তাল নৃত্যে মাতিয়ে তুলতে পারে না, যেখানকার মানব888sport free bet এখানকার অপেক্ষা কম, যেখানের অন্ধকারে থেকে থেকে লোকের চোখ এতই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে যে, প্রতিবেশীর পর্দাটানা গৃহের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না, যেখানকার গৃহগুলির ছাদ বলে কিছু নেই, সবই চাল। কোন এক ভাবুকের ভাষায় আমাদের দেশের স্বভাব হচ্ছে, ‘তরুণস্তাবৎ তরুণীসক্ত’। কাজেই আধুনিকতা আমাদের আনতে হয় ধার করে, চুরি করে।

কিন্তু ভাগ্যদোষে চুরিও আজকাল হয়ে পড়েছে আয়াসসাধ্য, পরম আয়াসসাধ্য। আমি যদি আজ নব দুর্গেশনন্দিনী লিখি, তাহলে ‘স্বত্ব-সংরক্ষণ’ আইন ভাঙার অপরাধে গুরুতর জরিমানার আশঙ্কা আছে। এক বণিকের ঐশ্বর্য্য সহস্র শ্রমিকের সর্বস্বে। এমনতর লুণ্ঠনকে বলে সাফল্য, কৃতকার্যতা। তেমনি দশজন পাশ্চাত্য লেখকের সম্পদ নিয়ে আমাদের নামকরা, জনপ্রিয় 888sport alternative linkগুলি রচিত। স্তেনবৃত্তি আমরা সইতে পারি, কিন্তু দুর্গেশনন্দিনীর মতো দম্কা দস্যুতা আমাদের আর বরদাস্ত হয় না। কালের সঙ্গে আমাদের ধর্মবুদ্ধি বাড়ছে। না, তাকে চুরি কিছুতেই বলা চলে না, বরং তাকে ঋণ নামে অভিহিত করা যেতে পারে।

দিনকতক আগে সংস্কারকরা ভারতের নামে একটা অপবাদ দিতেন যে, ভারত স্থবির, তার চলবার শক্তি, জীবনীশক্তি চলে গেছে, সে আর বাইরের কিছু, নূতন কিছু চট করে নিতে পারেনা। আমরা, নব্যভারত, আজ তাই উঠেপড়ে লেগেছি প্রমাণ করতে যে, এ-অপবাদ অসত্য। অর্থনীতিবিদ বলেন যে, জগতের উন্নতির পরাকাষ্ঠা হবে সেইদিন, যেদিন শ্রমবিভাগ শুধু কোনো বিশেষ দ্রব্য-উৎপাদনে সীমাবদ্ধ না থেকে, শুধু গতিশীল, ফ্যাক্টরিশীল দেশের মধ্যে আটক না থেকে, সমস্ত বিশ্বজুড়ে চলবে। একটি শহরের একটি শ্রেণির গুটিকয়েক লোক যে আলপিনের মাথাটি তৈরি করবে তা নয়, একটি দেশের এমনকি একটি মহাদেশের সমস্ত অধিবাসী এমনি করে পিনের মুণ্ডে একনিষ্ঠা দেখাতে পারলে তবে মানবসভ্যতার সর্বোচ্চ সোপানে দাঁড়াবে। তাঁদের মতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের যেমন পৃথক পৃথক কর্মে এক একটা প্রাকৃতিক দক্ষতা থাকে, তেমনি একটা জাতির একটা বিশেষ কিছু পণ্যের নির্মাণে নৈপুণ্য আছে এবং সেইটিকে পূর্ণ বিকশিত করতে পারলেই জাতির মঙ্গল, অর্থাৎ তবেই তারা মানুষ নামটুকু রেখে বাকি সবরকমে যন্ত্রশ্রেণীয় হয়ে যাবে। অর্থনীতির এই কূট মতবাদটিকে 888sport live footballের কার্যে লাগানো কি কম কৃতিত্ব? এর পরে ভবিষ্যৎ যখন আমাদের দিকে পেছন ফিরে তাচ্ছিল্যের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ নির্দেশ করে বলবে যে, আমরা ব্রহ্মার মানসজাত বংশে কুলাঙ্গার, তখন আমরা মার্জনীয় গর্বের সহিত প্রত্যুত্তর দিতে পারব যে, আমরা ছিলেম সময়ের অগ্রদূত, 888sport apk ও কলার মৌলিক মিলন প্রমাণিত হয়েছিল আমাদের দ্বারা, 888sport alternative linkে শ্রম-বিভাগের স্রষ্টা হচ্ছি আমরা; অতএব অগ্রদূতদের প্রাপ্য আমরা পেয়েছি। আমরা সর্বত্র, সর্বদা অনাদৃত। আশা করি সেই সময় বারোয়ারি ইত্যাদি এক-আধখানি 888sport alternative linkের রজোদ্ধার অসম্ভব হবে না।

কিন্তু শ্রম-বিভাগের এই রূপটি, এই আভাসটি, বর্ণনা করবার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না, এটা হচ্ছে পথ-প্রাসঙ্গিক। আমার বলবার ইচ্ছে হচ্ছে যে, পশ্চিম যদি মন, বুদ্ধি, চিন্তা ইত্যাদির নির্মাণে শ্রেষ্ঠ হয়, বেশ তারা তাই করুক; তাদের ধারণা, সত্য-মিথ্যা, আসল-মেকি, খাঁটি-ভেজাল, মহৎ-তুচ্ছ, সমস্তই নির্বিচারে আমরা আমদানি করে আমাদের নিজের কাজে লাগাব। আমাদের ব্যক্তিত্ব, বিশেষত্ব হচ্ছে কথা, সুন্দর, অসুন্দর, অর্থবান, বাজে, সমস্তরকমের কথা; কাজেই তাদের ধারণা আমরা আমাদের কথায় খাটিয়ে শ্রম-বিভাগ মতটার কর্মকারিতা প্রমাণ করে দেবো। তাকে চুরি বললে ভারত-প্রসূত তুলোয় ম্যানচেস্টারের সুতো তৈরিকে বা ম্যানচেস্টারের সুতোয় 888sport appর শাড়ি-বয়নকেও বলতে হয় চুরি। বড়জোর এ-প্রয়াসকে পরিহসনীয় বলা চলে। কিন্তু তাতেও আমার বক্তব্য হচ্ছ এই যে, বাঙালি 888sport promo codeকে ফ্রয়েডীয় হুসঢ়যড়স ধহরধপ করা, বা বিকুঞ্চিত শান্তিপুরের ধুতির সহিত মার্কিন জিফারের কামিজ ও স্কচ-টুইডের কোট পরার চেয়ে সেটা অধিক হাস্যাস্পদ নয়। শুধু শেষোক্ত সংমিশ্রণ আমাদের চোখ-সওয়া, প্রথমোক্তটি নয়, এ-ই মাত্র প্রভেদ।

আমার এইসব যুক্তি সমালোচক-বুদ্ধির অতীত হতে পারে, কিন্তু এইবারে যা বলছি তাতে তাঁরা মুখে যতই রাগ প্রকাশ করুন, মনে মনে অপার গৌরব অনুভব করবেন। আমরা আধুনিকেরা প্রাচীনদের তুলনায় ঢের বেশি সুচিন্তিত, গভীর, মরমিয়া কথা বলি, কিন্তু বর্তমানের পাঠকরাও (এর মধ্যে সমালোচকরাও গণ্য) সেকেলে পাঠকদের চেয়ে অধিক মনস্বী হয়ে পড়েছেন, কাজেই তাঁদের এতে সšত্তষ্টি হয় না, তাঁরা চান অভাবনীয় নব্যয়ানা। তাই আমাদের নূতনের খোঁজে, এটা-ওটা-সেটা পাঁচটা মিশিয়ে একটা অদ্ভুত খিচুড়ি বানিয়ে দিতে হয়। পুরানো ফ্যাশনের ভোজ্য-রসিক বেনিডিক্টিনের অবিমিশ্র সৌরভের জন্য আক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু কক্টেলের বিস্বাদে যে অপূর্ব-কল্পিত বর্ণ-বিন্যাস আছে, সেটি স্বীকার করতেই হবে।

বর্তমানের চির-প্রসিদ্ধ হীনতার খণ্ডনে কলম চালিয়ে অনেক দূর এসে পড়েছি, কিন্তু লোকের কথার প্রতি আমার নিজের কোনো অনাস্থা নেই। বরং জনশ্রুতির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই জিহ্বার তাড়নেই আমি প্রথম লেখা আরম্ভ করি। আমার পিতার কবি বলে কিছু নাম-ডাক ছিল। অতএব মসীকে অসি অপেক্ষা বলস্বী ভাবা তাঁর পক্ষে মার্জনীয়। মার্জনীয় নয় শুধু সেই ভ্রান্তি যে, কবির পুত্রও কবি। উত্তরাধিকারসূত্রে কপি হওয়া অসম্ভব না হলেও কবি হওয়া শ্রমসাধ্য। কিন্তু তিনি ছিলেন সেকেলে কবি, এদেশী কবি, বাস্তবকে ভুলে যাওয়াতেই ছিল তাঁর গর্ব, আদর্শের অশেষ অন্বেষণেই তিনি নিজের কবি-আখ্যার সার্থকতা বোধ করতেন। কাজেই তাঁর একমাত্র পুত্র যে অলেখক হয়েও বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করতে পারে, তা তাঁর হৃদয়ঙ্গম হতোনা। এই জন্যে জ্ঞান হয়ে-অবধি শুনে আসছি যে, কবিত্বের প্রচ্ছন্ন অগ্নিতে আমার অন্তঃকরণ এতই উত্তপ্ত যে, মাঘ-চন্দ্রিকার দশনব্যাদক পূর্ণতার দিকে ঊর্ধ্বনেত্রে চেয়ে বিরলে না বসে থাকতে পারলে আর সে-উষ্ণতার প্রতিবিধান হবে না। সভা-সমিতিতে এমনতর সুনামের উপর ভর দিয়ে অর্থহীন দীর্ঘ বক্তৃতার গোড়াপত্তন করা মন্দ নয়, কিন্তু অভিভাবকদের মনে ঈদৃশ ধারণা উদয় হলে নিঃসহায় বালকের জীবনযাত্রা একটু বিদৃশ হয়ে উঠতে যে পারে, তা নিঃসন্দেহ। যৌবনের প্রারম্ভে প্রত্যুষে পাঁচটার সময় সূর্যোদয় দেখা সখের খাতিরে দু-একদিন চলতে পারে, কিন্তু আট বৎসর বয়সে নিত্যকর্ম হলে প্রীতিকর হয় না, বিশেষত যদি ঘুমচোখে সেই দৃশ্যটা ছড়ায় বর্ণনা করতে হয়। অপরাহ্ণে সমবয়সীদের সঙ্গ ছেড়ে শ্মশ্রুযুক্ত পিতার সহিত ধাত্রীকথিত প্রেতপ্রিয় নির্জন অরণ্যানীতে ঘুরে ঘুরে শ্লোকের পাদপূরণ করা এবং কাব্যকথা শোনা শিশুর শরীর বা মনের স্বাস্থ্যোন্নতির প্রকৃষ্ট উপায় নয়।

এমন কতদিন চলত বলতে পারি না। কিন্তু অল্প বয়সেই আমার পিতৃবিয়োগ হয়। সেই ক্ষতিটাকে সে-সময় শুভাদৃষ্ট বলেই মনে হয়েছিল। এমন মনোভাবকে বিকৃতচিত্তের পরিচায়ক বললে অন্যায় হবে। আমরা একলা থাকতুম, কেননা আমার পিতার আর একটা সাবেক ভ্রান্তি ছিল যে হিন্দু যৌথ পরিবারের মধ্যে সংকীর্ণতা, অলসতা ইত্যাদি ভয়াবহ দোষগুলি সতত বিরাজমান। আর যেহেতু কবির কর্তব্য মানুষকে নিজের আদর্শ দেখিয়ে শেখান, তার উচিত এ-সমস্ত বর্জন করে নির্জনে স্বাধীনতার আরাধনা করা। আজকে আমি আমার পিতার চেয়ে বেশি জ্ঞানী; আমি জানি, মুক্তি পারিজাত, গজমোতি, স্পর্শমান শ্রেণীয় একটি সুন্দর সংস্কারমাত্র, তার আস্বাদ কোথাও মেলে না, স্তব্ধ বিজন গিরিশৃঙ্গেও না, জনারণ্যেও না। কিন্তু সে-কথা এখন থাক। আমার মা একা আমার তত্ত্বাবধান করা যুক্তিসঙ্গত মনে করলেন না, আত্মীয়দের পরামর্শে আমি এক বোর্ডিংস্কুলে প্রেরিত হলুম।

আমায় স্বাধীনতা দিলে আমার লেখার ব্যাধি হয়ত চিরদিনের জন্য ছেড়ে যেত, কিন্তু আমার দু®কৃতি আমার খ্যাতিও আমার সঙ্গে সঙ্গে ইস্কুলে গিয়ে হাজির। সহপাঠীরা সাধারণত চমৎকার প্রত্নতাত্ত্বিক। তখন শুরু হলো আমার নির্যাতন, ঠিক বলতে গেলে চিকিৎসা। পাঠশালার শিক্ষার বিরুদ্ধে বা গুরুমশাইদের বিরুদ্ধে অনেক বক্তব্য থাকতে পারে, কিন্তু ছাত্রদের যে দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার কতকগুলি উৎকৃষ্ট প্রাথমিক উপায় জানা আছে, তা সর্বদা স্বীকার্য। আমি তাদের স্থূল বিদ্রƒপ সহ্য করে তাদের পরিবর্জন ভাঙবার বিভিন্ন মার্গের অনুসন্ধানে বেশ তুষ্ট থাকতে পারতুম এবং দিনকতক বাদে আমার সমাজচ্যুতি শেষ হতোই হতো, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, কথাটা উঠল শিক্ষকদের কানে। সেখানকার কর্তৃপক্ষদের একটা প্রধান গর্ব ছিল যে, তাঁদের শিক্ষাপদ্ধতি হচ্ছে সম্পূর্ণ আধুনিক। আমাদের ইস্কুলের প্রসপেকটাসে বড় বড় অক্ষরে লাল কালিতে ছাপা ছিল, ‘ছাত্রদের স্বাভাবিক বৃত্তি, অভিরুচি, ক্ষমতা, ঝোঁকগুলিকে এখানে বাধা দেওয়া হয় না। আমরা জানি যে, শিশুই হচ্ছে মানবের পিতা। বর্তমান বালকের মধ্যে ভবিষ্যতের যে মহাপুরুষ লুপ্ত রয়েছেন তাঁর আগমনের পথ আমরা পরিষ্কার করে দিই মাত্র।’ কিন্তু দুরদৃষ্টবশত ছাত্রকুলের অকূলে তাঁদের অতিমানুষের অন্বেষণ এতদিন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। কাজেই আমার অসাধারণ খ্যাতি তাঁদের শ্রবণগোচর হতেই তাঁরা আমাকে আঁধার ঘরের শেষ সলতের মতো যত্ন আরম্ভ করে দিলেন। পিতৃদত্ত শিক্ষার পুনরারম্ভ হলো, আমার সম্বন্ধে হেডমাস্টার এক সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন এবং হঠাৎ একঘণ্টার মধ্যে আমি সহপাঠীদের ঘৃণ্য থেকে মান্য ও অনুসরণ্য হয়ে পড়লুম। একেই বলে দাস-চিত্তবৃত্তি। এবারে আমার দুঃখ আরেকটু বাড়ল। স্বাভাবিক সৌন্দর্য-বর্ণনা করার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশীয় কবিদের দুর্বোধ্য লাইনগুলি মুখস্থ এবং অনুকরণ করবার আদেশ পেলুম। আর শিখলুম শাঠ্য। সে-বয়সে অপর জাতির বিষম ভাষায় কাব্য যে ভালো লাগত তা বলতে পারি না, কিন্তু জিজ্ঞাসার উত্তরে সেগুলিকে উপাদেয়-আখ্যা দেওয়া ছাড়া আর গতি ছিল না। আর বাড়ল বেগার। সঙ্গীদের আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ে-থা হলে আমার আহার-নিদ্রার অবকাশ থাকত না। বেনামি কারবারের মৌলিক তথ্যটা আমার সেই সুদূর-অতীতে শেখা।

কিন্তু কেমন করে বলব যে সে-সমস্ত প্রয়াস মিথ্যা, নিষ্ফল, অহিতকর। যে-শিক্ষার জাদু-গালচে বঙ্গগৃহের নিষেধ-শাসনের অভ্রভেদী প্রাকার লঙ্ঘন করে 888sport live footballের স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচরণের পন্থা উন্মুক্ত করে দেয় সে-কি কোমলমনা বালকের পক্ষে বৃথা? কখনোই না। আর একটা কথা, 888sport app download apk-লেখা সে যে শিক্ষণীয়, সুরচনা সে যে আয়াসসাধ্য। সাধারণের একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস আছে যে, কবি মায়ের পেট থেকে পড়েই কাব্যে কান্না জুড়ে দেয়; যে, কবিত্ব সে একটা মেওয়ার মতো কিছু, অপেক্ষ-সাপেক্ষ মাত্র, তার জন্যে কিছু পরিশ্রম করতে হয় না। কিন্তু মেওয়াও শুধু সবুরে ফলে না, উৎকৃষ্ট মেওয়ার প্রত্যাশী হলে, অনেক খুঁজে ভালো মেওয়ার চারা জোগাড় করতে হয়, অনেক দুর্গন্ধ সহে সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়, অনেক পিঠে-কোমরে ব্যথা করিয়ে সেই চারা রোপণ করতে হয়, অনেক জল-তাপ ভুগে জল-সেচন করতে হয়, তার পরে যখন প্রথম ফল ফলে, দৃঢ়চিত্তে সেই ফল খাবার লোভ সংবরণ করে, তা দিতে হয় ফেলে। এমনি অনেক চেষ্টার পরে ভালো মেওয়া হয়ত ফলতে পারে, আবার ব্যর্থ-শ্রম হবার আশঙ্কাও অনুপস্থিত নয়। অতএব আজকালকার প্রেরণাচালিত কবিদের আমি দূর থেকে ঈর্ষা করি এবং প্রণাম করি, কিন্তু তাঁদের শক্তির হদিস খুঁজে পাই না। কৈশোরে যখন সংশোধনে, বর্জনে অধীর হয়ে যেতুম, তখন আমাদের গুরুরা আমাদের আশ্বাস দিতেন বলে ফ্লোবেয়ার কথা, যিনি সম্বন্ধবাচক পদের উৎকর্ষসাধন-মানসে একটি বাক্যের পরিমার্জনা করতেন তিন সপ্তাহ ধরে। অবশ্য আমি কখনো সেই অধ্যবসায়ের অংশী হতে পারিনি। কিন্তু আমাদের বাল্যে নবজাত শিশুকেও দু-একদিন চিনির জলে ভেজান সলতে চোষাতে অভ্যাস না করিয়ে মাতারা স্তন্যদানে সাহসী হতেন না।

অনেক কথা বললুম, এর মধ্যে বাজেও আছে কাজেরও আছে; কিন্তু আমার আখ্যায়িকাটি, যেটি বলবার অছিলেতে এই সমস্ত প্রসঙ্গের অবতারণা, সেটি এখনো যত দূরে তত দূরেই, তার নামগন্ধ শুদ্ধ এখনো করিনি। পাঠকেরা হয়ত অস্থির হয়ে গেছেন, কিন্তু আমার উক্তি শুনতে তাঁরা বাধ্য, কেননা রাজনীতি, সমাজনীতি, দণ্ডনীতি, কামনীতি, 888sport promo code-বিদ্রোহ ইত্যাদি বিষয়ে নব্য লেখকদের অফুরন্ত মন্তব্য পড়তে যখন তাঁরা কুণ্ঠিত নন, বার্ধক্যের মার্জনীয় বাচালতা, বয়সের অক্ষতিকর অধিকার অগ্রাহ্য করা অন্যায় হবে। কিন্তু তাঁদের ভয় নেই, আমার গল্প আর আটক থাকবে না। বৃদ্ধ হলেও বাজে বকার সীমা আছে।

আজকে যখন চিরপ্রথানুসারে বেয়ারা চারটার সময় অফিসে চা এনে দিলে, তখন আমি নিত্যনৈমিত্তিক     হস্তান্তর-পত্রের খসড়ার অর্থ বোঝবার প্রাণপণ যত্ন করছিলুম এবং অকৃতকার্য হচ্ছিলুম। আজকেও অন্যমনে চায়ের পেয়ালাটা মুখে তুললুম, কিন্তু তার পরিণাম হল আশ্চর্য। অভ্যস্ত একাগ্রতা আজ আর এলনা, উল্টে দলিলের যতটুকুও বা মানে মাথায় ঢুকেছিল, কার্যে যতটুকুও বা আগ্রহ ছিল, এক চুমুক চা গলধঃকরণ করতেই, সেটুকুও ধুয়ে-মুছে গেল সাফ হয়ে, মন চলল উড়ে, কোথায় কে জানে! অ্যাটর্নির পেশা নির্বাচন করার আত্ম-নির্বুদ্ধির প্রতি কিঞ্চিৎ কটূক্তি করে বিবাগী অন্তরকে অমুক চাটুজ্জের পিতৃপিতামহের আর্থিক জীবনে পুনর্নিবিষ্ট করবার নিষ্ফল চেষ্টা করলুম একবার, দুবার, তিনবার। শেষে ব্যর্থমানস হয়ে, মন দিলেম চা-র প্রতি। দেখলুম আজকের চা-টা অন্যদিনের মতো নয়, তাতে দুধ নেই চিনি নেই, আছে কয়েক ফোঁটা নেবুর রস, এবং সেটি দার্জিলিংয়ের  মামুলি শিরোভূষণ নয়, চৈনিক পরিশ্রমের চরমোৎকর্ষ, এই মাত্র প্রভেদ। সেই স্যন্দিত সুবর্ণ-রসের শক্তি কিন্তু অদ্ভুত, সে যে শুধু ক্লান্তির গ্লানি মুছিয়ে দিলে তা নয়, অর্থের মমতাসুদ্ধ দিলে ভুলিয়ে। মনে হলো যেন এমন চা কোথায় খেয়েছি, কিন্তু অতীতের কোন সুগন্ধ যে তাতে মাঝে মাঝে আভাস দিচ্ছিল, তা কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলুম না। শেষে যখন অন্তিম ঢোকটা গিলে, আন্তরিক অনিচ্ছা-সহিত পেয়ালাটাকে ধীরে ধীরে পিরিচের উপর নামিয়ে রাখলুম, তখন হঠাৎ 888sport app download for androidপটে জেগে উঠল পনেরো বৎসর পূর্বের এক সন্ধ্যার স্পষ্ট ছবি। (এখানে সমালোচক বলবেন, প্রুস্তের প্রতিচ্ছায়া। সেই মহালেখকের কাছে আমার পরম ঋণ আমি নতশিরে স্বীকার করছি।)

মনে হলো যেন, কোনো চৈনিক পরির ইন্দ্রজালে আমার অফিস-কামরার সংকীর্ণ প্রাকার-চারটি ধসে পড়ে সেই উপাদানেই নির্মিত হয়ে উঠল সেই বিজন সেনের পরিচিত লাইব্রেরি-কক্ষ। ঘরখানা এতই প্রকাণ্ড আর দরজা-জানলা এতই অপ্রচুর যে তার চির-সান্ধ্যছায়ার মধ্যে বসে প্রান্তগুলো ভালো করে লক্ষ হতোনা। মনে হতো, তার ব্যাপ্তি যেন জ্ঞানের অস্পষ্ট প্রদোষ থেকে প্রজ্ঞানের সায়াহ্ন-ধূমলিমা অবধি। আর বই, শ্রেণির পর শ্রেণি, তাকের পর তাক, শেলফের পর শেলফ, বই, বই চারদিকে কেবল বই। কোথাও-বা সংস্কৃত অনলংকৃত মূলবর্ণের আস্তরণের মধ্য থেকে প্রকাশ পাচ্ছে গ্রিসীয় কলার, রোমক আর্টের চিরন্তন বিশুদ্ধ নগ্নতা; কোথাও-বা কাঞ্চনবহুল স্খলদাঞ্চলের ভিতর থেকে আভাস দিচ্ছে শ্লথ, অর্ধাবৃত রিনেসেন্স্-সুন্দরী, কোথাও-বা ঔজ্জ্বল্যহীন, নীরস শুষ্ক মলাটের মধ্যে বাঁধা রয়েছে মন্থরগতি, স্থূলবুদ্ধি, বৃহদায়তন অষ্টাদশ-শতাব্দীয় ইংল্যান্ড। কোনো কোণে রোমান্টিক-যুগের বিচিত্রিত ভাবালুতাকে ঢেকে রেখেছে ইন্দ্রধ্বনুচ্ছটা; এক কোণে ¯তূপীকৃত পীত পুস্তকগুলি স্খলিতপ্রায় ফরাসি-সভ্যতার আশু, অবশ্যম্ভাবী মরণ জ্ঞাপন করছে। কোনো শেলফে রক্ত-পাটল বন্ধনীর মধ্যে বিরাজ করছে ডস্টওয়েভস্কি, যেন কোনো শষ্পহীন উত্তপ্ত গিরিশৃঙ্গ বহ্নুৎপাতের উচ্ছৃঙ্খলতাকে কষ্টে দমন করে রেখেছে; তার পাশে চিকন সবুজ মলাটের মধ্যে টুরাগিনিএভ্গুলি, যেন নবদূর্বাশ্যাম তটকে চুমে বসন্তের বিগলিত তুষার কলগাথায় সমুদ্রের পানে ধেয়ে চলেছে; তার পাশে এক কোণ থেকে উঁকি মারছে হরিৎ চেকোভগুলি, যেন অশোকডালে বসে অচিন ক্ষুদ্রায়তন পাখি ক্ষুদ্র, ক্ষিপ্র, অরূপ তানে শাশ্বত সত্যকে দূর-দূরান্তরে প্রচার করছে। একদিক ছেয়ে টিকিটমারা বহুবর্ণ আধুনিক পুস্তকগুলি, রং-বেরঙের উর্দিপরা, রণক্লান্ত, অপভাষী সৈনিকের মতো শিষ্টাচারের প্রতি, সাধুতার প্রতি, ধর্মের প্রতি, নীতির প্রতি, সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি, সত্য-মিথ্যার প্রতি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি অবজ্ঞার, সন্দেহের অট্টহাসি হাসছে। সকলের চেয়ে নিচে বর্ণবৈচিত্র্যহীন, ফিকে গোলাপি, সোনার জলে আঁকা বাংলা 888sport live football তুলার আবরণে সনাতন তুচ্ছতা, সনাতন ভঙ্গুরতা যত্নে রক্ষা করবার চেষ্টা করছে। তার নিচে পোকায়-খাওয়া, সময়জীর্ণ সংস্কৃত পুঁথির পিঙ্গলপত্রগুলি বাহিরের ক্বচিৎ হাওয়ায় কঙ্কালের মতো খসখস করে উঠছে।

বিজন সেনের বাড়িতে প্রতি রবিবার আমাদের আড্ডা বসত। সেই সুবৃহৎ কক্ষের মাঝখানটিতে আসমানি রঙের রেশমের কউচ-কেদারার কোমল আলিঙ্গনে ছয়টি শ্লথ বপুকে হেলিয়ে দিয়ে আমরা জীবনের আলোচনায় বিভোর হয়ে যেতুম। আর যাতে করে অত আরামের মধ্যে নিদ্রাতুর হয়ে না পড়ি, মিসেস সেন নকল কটেজ পটারির পেয়ালা ভরে আমাদের নেবু-সুগন্ধিত চৈনিক চায়ের সরবরাহ করতেন একপাশের একখানা ‘ঠানদি’-চেয়ারের বিরাটত্ব থেকে।

মিসেস সেনের জীবনে দুটো সংরাগ ছিল, একটি হচ্ছে 888sport app download apk, অপরটি প্রণয়। শুনেছি যৌবনে নাকি তিনি নিজে কাব্য লিখতেন, কিন্তু এখন আমাকে প্রণোদিত করেই তাঁর উৎসাহ চরিতার্থতা পেত। হাজার অনুরোধ-উপরোধ সত্ত্বেও তার প্রথম জীবনের মর্মোচ্ছ্বাস আমরা বের করতে পারিনি। আমরা যে মিসেস সেনকে জানতুম তিনি ছিলেন অকাল-জরাজীর্ণা, পলিতকেশিনী, ক্ষীণাঙ্গী, তাঁর মধ্যে পূর্ণযৌবনা রূপসীর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যেত না অথবা তার স্থান বার্ধক্যের গাম্ভীর্য অধিকার করেনি। তিনি যেন বার্ধক্য-লক্ষণযুক্তা কোনো ভাবালু কিশোরী – জীবনের দুঃখ-গ্লানিকে অনুরাগের অরুণিমায় ঢেকে রাখবার জন্য সতত ব্যস্ত। কিন্তু লোকে বলত যে, পূর্ণিমা সেন বয়েসকালে নাকি বিখ্যাত সুন্দরী ছিলেন, আজকালকার অনেক বিচক্ষণ, গম্ভীর নীতিবান বৃদ্ধের কিন্তু তখনকার দিনের উড্ডীয়মান যুবকের বিস্মৃত চরণচ্যুতির উপলক্ষ। তিনি আমাদের সেই অনর্গল তর্কে যোগ দিতেন না, শুধু মধুর হাসতেন এবং ভগ্ন রৌপ্যঘণ্টার মতো মৃদুল, অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞাস করতেন, আর চা চাই কিনা। আমি ছিলেম তাঁর প্রিয়পাত্র, কারণ সে-দলের মধ্যে কবি ছিলেম আমি একলা। আর যেহেতু তাঁর চোখে কবিরা পরম প্রণয়ী, আমাকে সেই বাক্যুদ্ধের থেকে পৃথক থেকে তাঁকে শোনাতে হতো আমার প্রণয়-জীবনের শেষ অভিজ্ঞতার ইতিহাস। বাস্তবিক যে     অন্তরের ব্যাপারে আমার খুব, বা একটুও, কৃতিত্ব ছিল, তা নয়, তিনিও সে-কথা ভালো করে জানতেন। তবুও আমার কল্পিত প্রণয়িনীদের ইতিবৃত্তগুলিকে সত্য বলে বিশ্বাস করে তিনি আনন্দ পেতেন, এবং আমিও তাঁর স্বেচ্ছাকৃত অন্ধতা বিদূরিত করবার কোনো প্রয়াস করতুম না। কাজেই আমাদের মিলত ভালো।

বিজন সেন ছিলেন কিন্তু ঠিক উল্টো ধরনের। বাক্যই ছিল তাঁর আনন্দ, তর্ক ছিল তাঁর পেশা, 888sport live football ছিল তাঁর সখ। মিসেস সেনের মতে, তাঁর মার্জিত, সুচারু, সবল বার্ধক্যে ঘুণ ধরিয়েছিল তিনটি দুর্বলতা। প্রথমটি হচ্ছে স্থানে-অস্থানে তাঁর সংস্কৃত-পাণ্ডিত্য পরিচয়ের প্রয়াস। ইংরেজি ও বাংলায় তাঁর ব্যুৎপত্তি অসাধারণ ছিল বটে, কিন্তু সমালোচকেরা তাঁকে ইংরেজি-নবিশ বলত বলে প্রৌঢ়ে তিনি দেবভাষা শিক্ষা শুরু করেন। ফলে বিদ্যার চেয়ে বিদ্যাভিমানটা গিয়েছিল বেড়ে। তাঁকে চটাবার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিল তাঁকে ইংরেজিবিদ্ উপাধি দেওয়া। আমার মনে আছে, এক বিয়েবাড়িতে বহুদিন বাদে তাঁর সহিত সাক্ষাৎ হওয়ায় এক বন্ধু আনন্দ-প্রকাশ করাতে, তিনি, ‘always at your service’ বাক্যটির বৈদ্যুতিক তরজমায় ‘মে ত্বং দাসঃ’ পদটির ব্যবহার অম্লানবদনে করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় দুর্বলতা, রাজনৈতিক আসব-তরে দুর্দান্ত স্পৃহা। 888sport live footballের ক্ষেত্রে একাধিপত্যে তাঁর আশা মিটত না, কেননা 888sport live football, বিশেষত পাশ্চাত্য 888sport live football, তিনি সত্য বুঝতেন; তাঁর মন সর্বদা লালায়িত ছিল পলিটিক্যাল একচ্ছত্রত্বের জন্যে। সাধারণ সময় হলে তাঁর বুদ্ধির টানে না হোক, তাঁর অর্থের চুম্বকত্বে তিনি অনেক নেতাকেই পদ-লুণ্ঠিত করতে পারতেন; কিন্তু অসহযোগের পশ্চিম-বর্জন-যজ্ঞে সাগ্নিক হোতার আসন গ্রহণ করা তাঁর মতো পুরানো ধরনের প্রতীচি-প্রিয় শান্তিকামীর পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হয়নি। কাজেই ম্যানচেস্টার-বস্ত্রের ধ্বংসাগ্নি-ধূম-কলঙ্কিত অহিংসাপূর্ণ অসহযোগকে গালিকলুষ করবার নিষ্ফল ব্রত তিনি তাঁর শেষ জীবনের আদর্শ করেছিলেন। এর সঙ্গে ছিল তাঁর বয়স ভাঁড়াবার ব্যর্থ দুর্বলতা। বয়স-সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ-বৎসর-সূচক নীরব হাসি হেসে, প্রসঙ্গের পরিবর্তন করতেন। কিন্তু এই দুর্বলতার ফলে, সমবয়স্কদের বর্জন ব্যতীত কোনো ক্ষতি হতোনা, বরং আমাদের মতো ছোকরাদের চর্ব-চোষ্যের বিপুল আয়োজন থাকত। তাঁর কোনো উত্তরাধিকারীও ছিল না, অতএব এই অতিথি-সৎকারে কারুর আপত্তি থাকা অন্যায়।

যে-রবিবারের 888sport sign up bonus আজ আমার মনে মুহুর্মুহু উদয় হচ্ছে, সেদিন আমি ঈষৎ চটে গিয়ে নীরবে বসেছিলুম। আমাদের কলাবিদের সঙ্গে আমার মতের মিল কিছুতেই হতো না, কিন্তু সেদিন তিনি একটু বাড়াবাড়ি করছিলেন। সময়ের সহিত চলার তাঁর অভ্যাস আমার বেশ জানা ছিল, কিন্তু ফ্যাশানের গতি যদি ঘোড়দৌড়ের সমান ক্ষিপ্র, তীব্র হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ক্ষুদ্র, ক্ষীণজীবী ধীরগামী মানুষের তার সঙ্গে পাল্লা দিতে যাওয়া ধৃষ্টতামাত্র। ফলে গমনবেগ বাড়ে না, কিন্তু নিশ্বাসটা একটু অশ্লাঘনীয় রকমের দ্রুততাপ্রাপ্ত হয়। গুহা-888sport live chat, দিল্লি, কাঙড়া ইত্যাদিকে যখন তিনি বজ্র-নির্ঘোষ সমালোচনায় ধ্বংস ভ্রংশ করে আদিম জৈনদের ও প্রথম বৈষ্ণবদের আলেখ্যরাজ্যের শ্রেষ্ঠ আসন দিলেন, তখন আমার সঙ্গেও তাঁর কিঞ্চিৎ যুদ্ধ ঘটল। আমি বলেছিলুম যে, অজন্তা বা বাগ সম্বন্ধে কোনো তর্ক করার প্রয়োজন নেই এবং মুসলমানেরা ও রাজপুতেরা 888sport promo codeর দেহ-সম্বন্ধে অথবা পরিপ্রেক্ষিত-বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হলেও পুরুষের গঠন এবং বর্ণবিন্যাসের রীতি জানত, কাজেই সেই যুগের ইউরোপীয় কলার সমকক্ষ না হলেও, চিত্রাঙ্কনীতে তাদের কৃতিত্ব অল্প নয়। কিন্তু যাদের তুলির দৌড় খানকয়েক পুঁথি চিত্রিত করা অবধি, অথবা আলপনার পদ্ধতি দিয়ে খানকয়েক কীট-নিবারক পাটা অঙ্কিত করেই যাদের প্রতিভার পরাকাষ্ঠা, গম্ভীর ভাষায় কলার আসরে যে কী করে তাদের আবাহন করা যায়, তা আমার বুদ্ধির অগোচর। আমরা ফ্যাশানের খাতিরে ভুলে যাই যে, শুধু নিয়ম থাকলেই যে আর্ট হয়, তা না হলেও, নিয়ম ছাড়াও আর্টের অস্তিত্ব থাকেনা। অস্থিতত্ত্ব, পেশিতত্ত্ব, বর্ণতত্ত্ব, সাম্যতত্ত্ব বিষয়ে নিখুঁত হলেও একটা আলেখ্য অপদার্থ হতে পারে, কিন্তু শ্রেষ্ঠ চিত্রের মধ্যে সেই অনামা-গুণটির সঙ্গে সঙ্গে এই অপর সাধারণ নিয়মগুলোও রক্ষিত হওয়া চাই। সংযমের বেদনা ব্যতীত সৃষ্টির আনন্দ পাওয়া যায় না। তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, যেহেতু ছবি-আঁকাই তাঁর পেশা তিনি চিত্রাঙ্কন সম্বন্ধে আমার অধ্যাপনা নিতে নারাজ। যারা কলা-সম্বন্ধে বোঝে তারা জৈনচিত্র ও বৈষ্ণব-পাটাকে ভারতীয় কলার পূর্ণ বিকাশরূপে দেখে। আমার বেনেবুদ্ধি যদি সে-জিনিসের কদর না বোঝে, আমার জ্ঞান-বৃদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা তাঁর কর্তব্য নয়। তাঁর জীবনের ব্রত হচ্ছে সৃষ্টি করা, সৃষ্টির নিয়মরচনা নয়। ভগবানের কাছে তাঁর প্রার্থনা যেন ক্রিটিক হওয়ার প্রগল্ভতা থেকে তিনি তঁাঁকে রক্ষা করেন। এরপরে আমি চুপ করে গিছলুম। মাসিকের মলাট বা সালসার সুফল রেখায় রঞ্জিত করেই হয়ত আমাদের আর্টিস্টের প্রয়াস ধন্য হতো, কিন্তু সে-কথা আর আমি উত্থাপন করলুম না, কী লাভ?

অবশ্য আমার আহত আত্মগৌরবের সাহচর্যে আমাদের অধ্যাপক রণবেশ ধারণ করেছিলেন, কিন্তু যাঁর সমস্ত সুখদুঃখ, সমস্ত প্রবৃত্তি, সমস্ত মনুষ্যত্ব নির্ভর করছে প্রাচীন ভারতের খানকয়েক শানের উপর, তাঁর সহায়তা বিশেষ ফলদ নয়। এতদিনের ভিত্তি সময়ের বশে কিঞ্চিৎ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। কাজেই তাঁর যুক্তির মৌলিক অকার্যতা, অর্থাৎ আর্যাবর্তের লুপ্ত পাথর-বাঁধান রাজপথগুলির সর্বগুণাকরত্বই যখন আর্টিস্টের বাক্য-কামানের চোটে ধূলিসাৎ হয়ে গেল, তখন তিনি তাড়াতাড়ি চশমা মোছায় মন দিলেন, এবং আমিও সাধারণ তর্কে ব্যক্তিবিশেষের বুদ্ধি-বিচারের অভদ্রতার কথা উল্লেখ করে মিসেস সেনের পাশে গিয়ে বসলুম। কলাবিদ বাক্যুদ্ধ করতে লাগলেন বাক্পটু বিজন সেনের সহিত।

কিন্তু সেদিনে মিসেস সেনের কাছে দশ-বারো বাটি চা ধ্বংস করেও, আমার মানসচারিণী ফৈরঙ্গ-রূপসীর চিচি-ধ্বনিত প্রেমব্যঞ্জনা কিছুতেই জমল না, কেননা আমার মন ব্যস্ত ছিল কতকগুলি এলোমেলো অসংলগ্ন চিন্তা নিয়ে। আমার সম্পূর্ণ আধুনিক মন সেই পুরানো ভারতের শান-বাঁধানো রাজপথগুলোর জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল। আমি কল্পনানেত্রে দেখছিলুম ভবিষ্যৎ কলকাতার ধুলাহীন, কর্দমহীন পাথরমোড়া চেহারা। আমি ভাবছিলুম যে, সেই সুদূর সুদিন আজ যদি আসত তাহলে বিমলা আর পাতিব্রত্যের অছিলায় আমার উপর অমন অত্যাচার করতে পারত না। প্রতিদান-অনিচ্ছুর পরিচর্যা করা কি দস্যুতার নামান্তরমাত্র নয়? আমার স্বাভাবিক আলস্য যদি ন-মাসে, ছ-মাসে একদিন কাটে, আমার টেবিলের ধুলোও সেই দিনে সাফ হবে। আমি যদি অপরিচ্ছন্নতা সহ্য করতে রাজি থাকি, তাহলে ওপর-পড়া হয়ে তার প্রতিবিধান করা আর আদর-কাড়ানোর হীনতা একই কথা। সত্যিকারের বিমলার এই অভ্যাসটা আমার পক্ষে মোটেই সুবিধাজনক নয়, বরং বিড়ম্বনা। যেমন, কাল রাত্তিরে দুটো চোখে  বাসনার সর্বভুক জ্বালিয়ে আমার ঘরে এসে অনাহূত প্রবেশ। সেটা কি 888sport promo code-শোভন? দিনের পর দিন বিশ্বাসনীয় মিথ্যাকথার সৃষ্টি করা আমার কর্ম নয়, তার জন্যে যে-প্রতিভার প্রয়োজন তা আমার নেই। অবশ্য তার বয়স বাড়ছে। কাল রাত্তিরে সে বললে যে, আগামী পৌষে তার বয়স ষোলো ভর্তি হয়ে যাবে। আর তা না বললেও আমার নিজের তো চোখ আছে। দিন দিন যে তার দেহ চাঁদের মতো কলায় কলায় ভরে উঠছে। সেই জন্যই তো অমন আদর-কাড়ানোর প্রতি আমার ভয়। আমিও তো রক্তমাংসে গঠিত, আমারও তো প্রবৃত্তিগুলো স্বাভাবিক, যৌবনোচিত। আমি যদি সংযম করতে পারি, সে পারে না? না বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে লজ্জা-শরম, ধৈর্য-শৌর্য সমস্ত বিমলা হারিয়ে ফেলছে! ওকি ও বোবা ভিখারির মতো ফ্যাল ফ্যাল করে মুখের দিকে কামনাপূর্ণ নেত্রে চাওয়া-! আর আমিই-বা কাঁহাতক্ ছুতো বার করি। আমার সাধুতা সম্বন্ধে তার বিশ্বাস কি ক্রমশই শিথিল হয়ে আসছে না? বয়সের ওজরে তাকে থামানো আর সম্ভব হবে না। আর হলেও-বা কী করছি। কাল রাত্তিরে একটা অসহ্য মুহূর্তে যখন তাকে শুধু ফাঁকা চুমু দিয়ে বিদায় দিলুম, তখন যে সেইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে ষোলো বৎসর পূর্ণ হলেই তাকে আমার কাছে শুতে দেব। কী মূর্খতাই করেছিলুম, বিয়ের পরে মাকে বলে যে, আমার শপথ ষোলো বৎসর বয়স না হলে বিমলাকে আমার সঙ্গে এক বিছানায় শুতে দেবো না। আর কিছু বছর বাড়িয়ে বললেই হতো। আবার অপরপক্ষে, বিমলাকে এমনি করে ঠেকিয়ে রাখা, সে কি তার প্রতি সুবিচার হচ্ছে? সে বেচারি তো আর নিজের ইচ্ছেমতো, সবদিকে ভেবে, সবকথা জেনে আমায় পছন্দ করেনি। সকলের চেয়ে মুশকিলের কথা হচ্ছে যে, আমার এই আভ্যন্তরিক দ্বন্দ্ব কাউকেই বলবার জো নেই। যখন সাহায্যের উপদেশের সত্য দরকার তখন সকলেই নীরব; বরং উলটো মা বিমলাকে টুইয়ে দেন। এই সমস্যার মীমাংসা কোথায়?

ইতোমধ্যে মিস্টার Boss -এতে আর সুকুলবাবুতে লেগেছিল প্রতুল বচসা। মিস্টার Boss – অসভ্য ভাষায় বসু মহাশয় – একজন নবীন ব্যারিস্টার, সবে বিলেত থেকে প্রত্যাগত। সাত বছর অক্সফোর্ডে থেকে, বারচারেক পরীক্ষায় ফেল হয়ে, তাঁর মনে দুটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে, প্রাচ্যবাসীরা বর্বরতা ছাড়িয়ে এখনো বেশি দূর এগোয়নি, আর বাংলাতে 888sport live football বলে কোনো সামগ্রী নেই। তবে এ-কথা অবশ্য স্বীকার্য যে, পিনেবোরসদৃশ অমিশ্র ভাবালুতাকে সত্যের নামে চালানোর মতো অসীম সাহস বাংলাতে কারুর কোনদিন হয়নি, এমনকি শরৎবাবুরও না। এছাড়া মিস্টার বস্ লোকটি মন্দ ছিলেন না। ইংরেজিতে তাঁর বর্ণনা করতে হলে বলতুম, he was an amiable ass । সুকুলবাবু, তাঁর পদবিটা ভুলে গেছি, কেননা, তিনি শুধু পদবি ধরে সম্বোধন করলে, সেই অপমানে বাক্যহারা হয়ে যেতেন, সুকুলবাবু ছিলেন একজন উদীয়মান অ্যাটর্নি। শুনেছি, তাঁর কৈশোরের পশ্চিমযাত্রার ইচ্ছাটা সফল হয়নি তাঁর স্বজনবর্গের গোঁড়ামির দরুন। অবশ্য এ-জনশ্রুতি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, জানি না, তাঁকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন যে, তাঁর প্রতি এমন সন্দেহ করা আর তাঁকে বাপান্ত করা সমান কথা। তাঁর বন্ধুবান্ধব তাঁর ছাত্রজীবনের ঔজ্জ্বল্য দেখে, আঁধারের দেশে বালারুণের সমান কনকচ্ছটা বিস্তার করতে তাঁকে অনেক ধরা-পাকড়া করেন। কিন্তু সেসব প্রস্তাব তিনি ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কথাটা সত্য হতে পারে, কেননা বিবি-বিবাহের প্রতি তাঁর একটা ভীষণ আতঙ্ক লক্ষিত হতো এবং ভারতের অবনতির প্রধান কারণ যে বিলেতি মদের আমদানি, তাতে আর তাঁর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। আজকাল তিনি হয়ে পড়েছিলেন একজন প্রচণ্ড স্বদেশপ্রেমিক, কেবল খদ্দর পরতেন না, বিজন সেনের ভয়ে। সেনেদের দুয়ার সর্বদা অবারিত থাকত, কিন্তু খদ্দরধারীদের সে-পথে প্রবেশ নিষেধ ছিল। কাজেই মিস্টার বসেতে এবং তাঁতে কলহ স্বাভাবিক। এবং সেই চিরসমরে সুকুলবাবুর বিজয় অনিবার্য। তার কারণ হচ্ছে এই যে, মিস্টার বস্ বেশি কথা বলতে পারতেন না, পাছে কথার খাতিরে কোনো বর্বরতা বা অসভ্যতা ঘটে। কিন্তু সুকুলবাবু স্বদেশপ্রেমিক, অতএব অশিষ্টতা, অসংযত বাক্যপ্রয়োগ এবং বন্যয়ানা তাঁর একচেটে ও তাতে নিজেকে হীন করা ছেড়ে নিজেকে গরিমামণ্ডিতই করতেন। সেদিনেও মিস্টার বস্ ব্যারিস্টারেরা যে অ্যাটর্নিদের খোশামোদ করে, এই অপবাদের প্রতিবাদ করতে পারলেন না, অসভ্যতার ভয়ে।

আমিও সেই তর্কে কিছুক্ষণের জন্যে যোগ দিয়েছিলুম। তার কারণ দুটি : প্রথমটি হচ্ছে নিজের চিন্তার দৌরাত্ম্য থেকে নিজেকে বাঁচাবার অভিপ্রায়ে; দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে তখনো তর্কের মাহাত্ম্যের উপর, তর্কের সর্বদুঃখহরতার উপর, তর্কের সাফল্যের উপর আমার আস্থা ছিল অটুট। তখনো আমার শিক্ষা হয়নি যে সত্য সহস্রাক্ষী ভিন্ন লোককে ভিন্ন ইশারায় আহ্বান করে। তখনো জানতুম না যে সত্য ব্যষ্টির জন্যে, সমষ্টির জন্যে কখনো নয়। কাজেই একটা শ্রেণির উপর ঈদৃশ অপবাদ দেওয়া আমার সহ্য হতো না। কিন্তু তর্ক বেশিদূর এগুলো না, আমরা মাথা আবার নিজের কথায় ভরে উঠল, চিন্তা আবার আমায় পেয়ে বসল।

বিলেত! বিলেত!! চওড়া তক্তকে রাস্তাগুলি! দুপাশে পরিচ্ছন্ন নিয়ম-চালিত জনতাশ্রেণি! যানবাহনের আওয়াজ ব্যতীত সমস্তই নিস্তব্ধ! তর্ক নেই, বাক্য নেই, প্রতিবেশীর প্রতি কৌতূহল নেই! ফুলের রাশ, আলোর লহর, দোকানের পর দোকান বিশ্বের বিলাসিতা পুঞ্জীভূত করে রেখেছে! 888sport promo code, 888sport promo code, যেদিকেই চাও সেদিকেই 888sport promo code! বঙ্কিম রেখা, চপল নীলনয়ন, সুঠাম পদ, অর্ধাবৃত তনু, রক্তাধর, মুক্তা-ছড়ানো হাসি! আর তাদের সেই ভাষা! তাতে অস্পষ্ট কিছু নেই, অব্যক্ত কিছু নেই, অসুন্দর কিছু নেই! তাতে প্রণয়ের গূঢ়তম ব্যাকুলতা বাণী খুঁজে পায়, চিন্তার সূক্ষ্মতম কূটত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়, বিষাদের অনামা তিক্তমধুরতা বিকশিত হয়ে ওঠে; ভাবনার ব্যঞ্জনাতীত আতঙ্ক মুক্তিলাভ করে! লিখতে যদি হয় তো সেই ভাষায়, সত্যই রাজার যোগ্য, সম্রাটের যোগ্য, দেবতার যোগ্য ভাষা বটে!

মনে পড়ে, পশ্চিম আমাকে যেদিন ডেকেছিল। সেই ছুটির দিনে সিন্ধুপুলিনে বসে, সায়াহ্ন-রক্তিম সাগরের পানে তাকিয়ে আমার প্রাণও অরুণ হয়ে উঠেছিল কোনো এক অপরিচিত চাঞ্চল্যে। মনে হয়েছিল, বুঝি সপ্তসমুদ্রের অজানা ওপার থেকে নামহীনা কোনো বিদেশিনী আমাকে আহ্বানলিপি পাঠিয়ে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল, সেই সন্ধ্যার অখণ্ড শান্তি ভেঙে গিয়েছিল তারই অলখ অগ্রদূতের শব্দহীন উদ্দাম নর্তনে। সেই কাঁচা বয়সে যখন বাঙালি বালক মায়ের আঁচলে লুকোতে চায়, আমি কবির সঙ্গে বলে উঠেছিলেম, ‘আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি!’ সে হচ্ছে তখনকার কথা যখন কত ধানে কত চাল, তা বুঝতুম না। আর আমার দুরদৃষ্ট আমার মাও বুঝতেন না। তিনি যখন দেখলেন যে, আমার যে-পৈতৃক সম্পত্তি আছে তাতে কষ্টে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হতে পারে, কিন্তু মুরগি-মাটন, হ্যাটকোটের খরচ কুলাবে না, তখন তাঁর সামান্য স্ত্রীধন অলংকারাদি বেচতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। কিন্তু আমার বিলেত যাওয়ার দৌড় পোদ্দারের দোকান ছাড়াতে পারেনি। কেননা, প্রথমত, আমার পিতা ছিলেন কবি, পয়সা অর্জন তিনি ঘৃণ্য মনে করতেন; দ্বিতীয়ত, লড়াই, এলো, ফলত যা তাঁর এক পুত্রকে সাবমেরিনকে বলি দিতে কুণ্ঠিত হলেন। কাজেই তখন আমার আবার কবির ভাষা ধার করে বলতে হয়েছিল,

‘ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর! তুমি যে বাজাও

            ব্যাকুল বাঁশরি!

মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই, সে কথা

            যে যাই পাশরি।’

কিন্তু সে-সমস্ত তো গেল পুরানো কথা। এখন বিচার্য হচ্ছে আমার ভবিষ্যৎ জীবন। অলংকার বিক্রির টাকা তো আর চিরস্থায়ী হবে না। কোষ যে শূন্যপ্রায়। আর এই গত কয়েক বৎসর মায়ের টাকায় এমন স্বচ্ছন্দে জীবন কাটিয়েছি যে বিলাসিতা হয়ে গেছে আমার মজ্জাগত। স্ত্রীলোকের টাকায় দিনকাটানো সম্বন্ধে আমার কোনো কুসংস্কার নেই, কিন্তু টাকার স্বভাব হচ্ছে গড়িয়ে যাওয়া; ভাবছি বেশ সচ্ছল অবস্থা, হঠাৎ দেখি রূপার চাক্তিগুলি তীব্রবেগে অদৃশ্যে উধাও হলো। অতএব এক্ষেত্রে শ্বশুরমশায়ের উপদেশ নেওয়াই কি শ্রেষ্ঠ পন্থা নয়? কিন্তু কাজটা? আইন জিনিসটাকে আমি চিরদিনই একটা ঘৃণামিশ্রিত ভয়ের সঙ্গে দেখে আসছি। এটা যে এখনো আমি স্পষ্ট বুঝতে পারিনি, কে বিচারক আর কে অপরাধী। আবার অপরদিক থেকে দেখতে গেলে এটাও স্বীকার্য যে, এমন সুযোগ অল্পের ভাগ্যেই আসে। প্রথমত তো আজকাল কোথাও আর্টিকলস নিতে গেলে ৫০০০ টাকা গুনে দিয়ে তবে কথা। সেটা আমার অমনিতে হবে। না, আমাকে মানতেই হবে যে আমার শ্বশুর সত্যই উদারপ্রকৃতির লোক। তিনি তো কথাই দিয়েছেন যে, কাব্য লেখা ইত্যাদি পাগলামি ছেড়ে যদি আমি রীতিমতো তাঁর অফিসে বেরুতে রাজি থাকি, তাহলে যতদিন না রোজগার শুরু করি তিনি আমাকে মাসিক ৫০০ টাকা করে দেবেন এবং পরে পাশকরা মাত্র আমায় অংশীদার করে নেবেন। অতএব এ-কথা বলা চলে না যে, পাঁচ বছর বেগার খাটার মতো অবস্থা আমার নয়। একমাত্র আপত্তি হচ্ছে যে, কাজটা আমার অপছন্দ। আচ্ছা, সত্যিকথা কইতে গেলে কি এটাও আমায় স্বীকার করতে হবে না যে, অধ্যাপনার কার্যও আমার ভালো লাগবে না? অবশ্য আগ্রা ইউনিভার্সিটিও আমায় ৫০০ টাকা দিতে রাজি, কিন্তু সেই ৫০০ টাকায় আমায় থাকতে হবে চিরকাল। উপস্থিত ৫০০ টাকায় চলতে পারে বটে, কিন্তু যদি ছেলেপুলে হয়? না, সত্যই আমি বুড়ো হয়ে পড়ছি। কেবল এইসব দুশ্চিন্তা। বিমলার সঙ্গে আমার যে-সম্পর্ক, তাতে ছেলেপুলে হওয়া সম্ভবপর কি? কিন্তু এইভাবে তো আর বেশিদিন চলবে না। আর বড়জোর মাসখানেক। বিমলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যদি বন্ধ করতে চাই তাহলে কি আগ্রায় পালানোই প্রশস্ত নয়? কিন্তু তা করে কী ফল? তাকে যখন বিয়ে করেছি, তখন তার সঙ্গে বন্ধনটা অত আল্গা রাখলে চলবে কেন? সে তো আমার আচরণকে সত্যই অন্যায় বলতে পারে। বাঙালি মেয়ের পক্ষে পনেরো বছর, না ষোলোই বলতে হয়, কিছু কম বয়স নয়। এখন তার দাম্পত্য-সম্পর্ক যে কীরূপ হওয়া উচিত, সে-বিষয়ে ধারণাগুলো নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে। আঃ, কেন যে মরতে বিয়ে করলুম! আমার যে ওই দুর্বলতা, জেনেশুনে কাউকে কষ্ট দিতে পারি না। কাজেই মা যখন বললেন যে, আমি বিয়ে না করলে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হবেন, তাঁর জীবনের আর বেশিদিন বাকি নেই, তাঁর শেষ সাধ পুত্রবধূর মুখ দেখে মরা, তখন আর না বলতে পারলুম না। তাঁর প্রতি আমার অনেক কর্তব্য থাকতে পারে, কিন্তু নিজের জীবন বলি দেওয়াটা সেই কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আচ্ছা জীবন বলি দেওয়ার কথা উঠছে কী করে? বরং আমি যেভাবে চলেছি সেটাই কি জীবন বলি দেওয়া নয়? আমি যে শৈশবের এক 888sport promo code-স্বপ্নের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। সে যদি আমার ভালোবাসার এক কণাও প্রতিদান দিতে রাজি থাকত, তাহলে কি সেই পত্রখানার জবাব দিত না! উঃ, সেই চিঠিখানা। কী করে সে চিঠি লিখলুম! নিজেকে কি মানুষে এমনি করেই পরের হাতে তুলে দিতে পারে! কিন্তু তখন বিয়ের আতঙ্ক আমায় একেবারে অভিভূত করে ফেলেছিল। মনে হয়েছিল যে, মরণে আর বিবাহে বুঝি কোনো পার্থক্য নেই। আমার জীবনের, বিশেষ করে, আমার যৌবনের শবযাত্রা বুঝি সেই বিবাহের শোভাযাত্রা। কাজেই আমার কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল। আমি ভেবেছিলুম, মরবার কালে আবার সংকোচ কিসের, শরম কিসের, কুণ্ঠা কিসের। এখনই যে শেষ বোঝাপড়ার সুযোগ অতিবাহিত হয়ে যাবে। তখন যে উত্তরের প্রত্যাশায় সে-লিপিখানা তাকে পাঠিয়েছিলুম, তা নয়। পরের স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করবার মতো অসীম সাহস আমার কোনোদিনই নেই। তখন ভেবেছিলুম, আমি তো চললুম কোন নিরুদ্দেশের পথে, অতএব, যার জন্যে এতদিন প্রতীক্ষা করেছিলুম, তাকে সেই ব্যর্থ আশার নিষ্ঠুর বেদনার একটু ইঙ্গিত দিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু বিয়ের পরেও যখন দেখলুম যে, আমার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটল না, আমার   অন্তরের ক্ষুধার নিবৃত্তি হলো না, তখন ভাবতে লাগলুম, সে বুঝি-বা উত্তর দেবে। কিন্তু মাধবী সেখানা পেয়ে কী হাসিই হেসেছে। হাঃ-হাঃ, সত্যই আমার আত্মম্ভরিতা অপরিমেয়। সে যদি আমাকে একটুও ভালোবাসবে, তাহলে কি অপরকে বিয়ে করত? তাকে তো আর জোর করে বিয়ে দেওয়ার কেউ ছিল না। বাল্যের সেই 888sport sign up bonus, সেটা বোধকরি স্বপ্ন888sport sign up bonus। মাধবী কোনোদিন আমাকে চায়নি। আর তখন চাইলেও এখন চায় না। নয়তো কী হিসেবে সে নিরুত্তর রইল? অবশ্য আমি ঠিক করেছিলুম যে তাকে তিন বছর সময় দেবো। দু বছর হয়েছে, আর এক বছর অপেক্ষায় কী ফল? এখনো আশা? আর এদিকে বিমলা আমার একটু দৃষ্টি-আকর্ষণ করার জন্যে কী চেষ্টাই না করছে। এখন তাকে যদি কাছে ডাকি, সে পায়ে লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু আর এক বছর বাদে? শেষে কি এ-কূল ও-কূল দুইই যাবে? যদি তার সঙ্গে ঘর করতেই হয়, তার গোড়াপত্তন শীঘ্র করাই ভালো। না, আর দেরি নয়, আজই তাকে ডাকব। আর শ্বশুরের কথা শোনাই ভালো। লেখা খুব হয়েছে, এইবার ইতি।

এতক্ষণে বিজন সেন বেশ জমিয়ে তুলেছিলেন। তিনি নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, প্রণয় ব্যতিরেকে, অন্ততপক্ষে 888sport promo code ছাড়া গল্প হতে পারে কিনা, এবং নিজেই তার উত্তর দিচ্ছিলেন। তাঁর মতে, শুধু পুরুষকে নিয়ে যেহেতু জগৎ চলতে পারে না, 888sport alternative linkেরও তেমনি 888sport promo code চাই। ঔপন্যাসিকের পক্ষে প্রণয়-ব্যঞ্জনার মতো আর সদভ্যাস নেই। হৃদয়ের ব্যাকুলতা জানাতে হলে মিথ্যার প্রয়োজন, সুন্দর ভাষার প্রয়োজন, উপমার প্রয়োজন। এই সমস্ত উপাদান বাদ দিয়ে কি গল্প বলা যেতে পারে? কাজেই আমাদের দেশে বক্তৃতার ক্ষমতা অনেকের থাকলেও, গল্প বলার ক্ষমতা অত্যন্ত বিরল, কেননা এখানে পুরুষের সহিত 888sport promo codeর দেখা-সাক্ষাৎ ঘটে মধ্যরাত্রের তন্দ্রাতুর বাসকে, আর সে-888sport promo code হচ্ছে নিজের স্ত্রী। নিজের ভার্যা ভোগ্য হতে পারে, কিন্তু লোভ্য কখনো নয়। নিজের স্ত্রী হচ্ছে বাসনা-নিবৃত্তির একটা সামগ্রী মাত্র। অতএব তাকে শুধু আলিঙ্গন দিলেই চলে, তাকে কেবল ক্ষুধার উদ্রেক-অশিষ্ট, অবর, সাদাসিধে কথায় বুঝিয়ে দিলেই চলে, তাকে ভক্তি, পূজা, প্রেম দেবার কোনো দরকার নেই। পাতিব্রত্য, ঠিক বলতে গেলে পাত্নিব্রত্যই আমাদের 888sport live footballের এই দুর্দশা ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রাচীন ভারত এই সত্যটা জানত, কাজেই সংস্কৃতে প্রেমকে অনঙ্গ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অনঙ্গকে ধরতে হলে অনেক কারচুপি চাই। তাহলেই দেখা যাচ্ছে যে, 888sport promo codeকে স্বাধীন না করলে, 888sport alternative linkের উৎকর্ষ সাধিত হবে না।

ইতির ঢাকনা দিয়ে আমি আমার চিন্তাকে চাপা দিতে চেষ্টা করেছিলুম। কিন্তু বিজন সেনের মন্ত্রে সেই লক্ষফণা বাসুকী আবার আমার মাথার মধ্যে গর্জন শুরু করে দিল। প্রেম! 888sport promo code! না, না, বিজন সেনের কথা মিথ্যা। তাদের বাদ দিয়ে জীবন বেশ স্বচ্ছন্দেই চলে, বরং তারা এসে যখন পন্থারোধ করে দাঁড়ায় তখনই জীবন অশ্রুপ্লাবিত হয়ে যায়, তখনই সংসার হয়ে পড়ে জটিল, বিশ্বের সকল সৌন্দর্য চলে যায় তখনই। হ্যাঁ, এ-কথা মানতে হবে যে, 888sport live footballের আসরে তাদের বসানো সহজ, কিন্তু বাস্তবিক প্রণয়-জ্ঞাপনার মতো শক্ত কাজ আর নেই। যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি, শুনেছি শুধু নাম, যাদের সঙ্গে কখনো কথা কইনি, দেখেছি মাত্র রূপ, তাদের নিয়ে অনেক কাব্য রচনা করা যেতে পারে, মিসেস সেনকে অনেক গল্প বলা যেতে পারে। কিন্তু যাকে সত্যিকারের ভালোবেসেছি, তাকে তো কই কোনোদিন প্রাণের কথা বলতে পারিনি। আমার 888sport promo code আমার কল্পনাকে মুক্তি দিয়েছে বটে, আমার লেখনীকে স্বাধীন করেছে বটে, কিন্তু আমার জিহ্বাকে করেছে একদম জড়। যে-প্রণয় সত্য অনুভূত, সে-সম্বন্ধে যে আমি সতত মূক। মাধবী! মাধবী! তাকে বলবার জন্যে বিনিদ্র-শয়নে কত কথাই রচনা করেছি, কিন্তু সে যখন সামনে এসেছে, যখন তার সেই হরিৎ-ধূসর চোখ এক মুহূর্তের জন্যে আমার মুখে ন্যস্ত হয়েছে, অমনি সে-সমস্ত দীপ্ত বচন তুষার হয়ে জমে গেছে। 888sport promo codeকে আমরা স্বাধীন করব, সেটি আমাদের কর্তব্য হতে পারে, কিন্তু আমাদের স্বাধীন করবে কে?

আমার মনে পড়ে যেদিন মাধবীর সঙ্গে প্রথম দেখা। তখন ইস্কুলে পড়ি, বয়স কত ঠিক মনে নেই, কিন্তু পনেরোর বেশি নয়, কেননা তখনো মেয়েমানুষ বললে আমরা ঘৃণায়, ক্ষোভে অধীর হয়ে পড়তুম। আমারও মনোভাব যে এমনি ছিল, তা নয়, কিন্তু বয়স্যদের অবজ্ঞার ভয়ে আমার অন্তর্নিহিত 888sport promo code-বন্দনা বাক্যহীন হয়েছিল। ঈদৃশ অবস্থা সম্ভব শুধু পনেরো আন্দাজ বয়েসে, তার পূর্বে 888sport promo codeর প্রয়োজন উপলব্ধি হয় না, তার পরে, সেই প্রয়োজন লজ্জা-শরম, মান-অপমান     সমস্তকেই ছাড়িয়ে ওঠে।

সেদিন আমাদের স্কুলের জন্মতিথি ছিল। উৎসবান্তে প্রায় অধিকাংশ ছেলেই যে যার দেশে চলে গেছে, বাকি সকলে এখনো খেলার মাঠ থেকে ফেরেনি। আমি কিন্তু তাদের সঙ্গে যাইনি, কারণ সেদিন নিজেকে উপমাতীত, সমকক্ষহীন বলে মনে হচ্ছিল। এই গর্বটা মার্জনীয়, কেননা সমস্ত অভ্যাগতদের সম্মুখে 888sport app download bdের গাদা আমার হাতে তুলে দিয়ে, আমাদের হেডমাস্টার আমাকেই তার স্কুলের একমাত্র আশা-ভরসা তাঁর শিক্ষাপদ্ধতির চরম প্রতিষ্ঠা বলে বলেছিলেন। তার উপরে আমি আবার যখন আমার স্বরচিত ‘অলি, পিপীলিকা ও বালক’ নামক 888sport app download apkটি আবৃত্তি করলুম, তখন সেই হলগৃহ অন্তহীন করতালিতে প্রায় ফেটে পড়েছিল। 888sport app download apkটি এই:

অলি বলে, আমি তুষ্ট ঘরামি,

            রত সঞ্চয় কর্মে,

রানীর আদেশে মধু বহি ক্লেশে

            জিজ্ঞাসাহীন মর্মে।

পিঁপিড়া সুশীল রক্ষণশীল

            বলে, কিছু নহে ব্যর্থ;

দল বেঁধে গিয়ে মৃতেরেও নিয়ে

            ভরে রাখি নিজ গর্ত।

বালক কুমতি শুনে এই নীতি

            ব্যাদানিয়া রহে আস্য,

বুঝেনা কারণ আজ্ঞাপালন

            কেন সুখ, নহে দাস্য।

আমরা মানুষ নাহি তবু হুঁস,

            কীট দিবে শেষে দীক্ষা?

হউক শুদ্ধি, স্বভাব বুদ্ধি

            ভুলে লহ গুরু-শিক্ষা ॥

কিন্তু আমার এই অপূর্ব গৌরব-কুসুমে কীটের মতো ছিল পূর্বদিনের 888sport sign up bonus। আমি যখন আমার 888sport app download apkটি আমার শিক্ষকের কাছে নিয়ে গিছলুম,Ñ বিষয়টা তিনিই নির্বাচন করে দিয়েছিলেন Ñ তখন তাতে নিম্নলিখিত এই আটটি লাইন ছিল:

বলে পিপিলীকা, খিল কুঞ্চিকা

            পারেনা রাখিতে বন্ধ,

শর্করা হতে যবে বায়ু-স্রোতে

            বাহিরায় মৃদুগন্ধ।

বিধির বিধানে কর্মের টানে

            দস্যুতা তাও কৃত্য।

ললাট-দীর্ণা, চিন্তা-শীর্ণা

            গৃহিণী বিজীতা নিত্য ॥

আমার নিজের বিশ্বাস ছিল যে, সমগ্র 888sport app download apkটার মধ্যে এই আট লাইনই সর্বশ্রেষ্ঠ ও ভগবৎ-প্রেমে পরিপ্লুত। কাজেই গুরু মহাশয় যখন এগুলো পড়ে রক্তমুখী হয়ে আমায় গালি দিতে আরম্ভ করলেন, তখন আমার চেয়ে স্তম্ভিত লোক আর জগতে ছিল না বললেই চলে। তিনি আমাকে নানারূপ মধুর সম্ভাষণ করার পরে বলেছিলেন যে, আমার সৌভাগ্য হেডমাস্টার বাংলা বুঝেন না, নচেৎ এমনিতর বিশ্বাসঘাতকতার পরে তাঁর মনুষ্যচরিত্রের উপর চিরদিনের জন্য ধিক্কার জন্মে যেত। আমার কাছ থেকে তাঁরা সকলে এত প্রত্যাশা করেছিলেন বলেই কি আমি এমনি করে নীচ প্রবৃত্তির পরিচয় দিচ্ছি? তিনি এই পদ্যটা জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করতেন, কিন্তু শেষের চার লাইনের সত্যিকার কবিত্বের জন্য তা করলেন না। এরূপ যেন ভবিষ্যতে আর না হয়, তাহলে তাঁর স্বাধীন শিক্ষার উপর একটা ঘৃণা জন্মে যাবে। অতঃপর সেবারের মতো আমায় ক্ষমা করে, তিনি নিজে পিঁপড়েদের রক্ষণশীলতা এবং অবিশ্রান্ত অধ্যবসায়ের উপর চারটি লাইন জুড়ে দিয়েছিলেন।

গুরুমশায়ের সেই হিতোপদেশে ও অমায়িক ক্ষমাশীলতায় আমার মনে কোনো কৃতজ্ঞতা বা আত্মোপলব্ধি জেগে ওঠেনি, বরং একটা আত্মম্ভরিতায় আমার প্রাণ ভরে উঠেছিল যে, কাব্য-সম্বন্ধে আমি তাঁর চেয়ে ঢের বেশি বুঝি ও ভালো লিখি; তিনি অজ্ঞ, কাজেই আমার 888sport app download apkর মর্যাদা বুঝতে অসমর্থ। কিন্তু আমার কবিত্বের গর্ব বেশিক্ষণ টিকল না। হঠাৎ 888sport app download for androidে এলো দুই-তিন দিন পূর্বের ব্যর্থ-মানসের কথা। সেদিন রাত্রিতে পূর্ণচন্দ্রের চুম্বনে একটা কী অভূতপূর্ব উৎকণ্ঠার মধ্যে আমার গাঢ় নিদ্রা ভেঙে গিয়েছিল। তারপরে আর কিছুতেই ঘুমুতে পারিনি। সারারাত শুয়ে শুয়ে চাঁদের হাসিতে, কিশলয়ের গুঞ্জরণে, বায়ুর নিশ্বাসে, তরুলতার লীলায় আমি কে-এক চিরন্তনীর প্রথম সংবাদ পেয়েছিলুম, কিন্তু সেই নিখিল বাসনা, রমণীর জন্য ব্যাকুলতা, ব্যক্তিপ্রেমের বিপুল রভস 888sport promo codeদ্বেষী সহপাঠীদের সম্মুখে স্পষ্ট করে বলতে সাহস হয়নি। অথচ আমার এমন আত্মসংযম ছিল না যে, সেই আকুলতা, সেই হর্ষবিষাদ, সেই ভাববিলাস অন্তরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখে দিই। কাজেই হাতে কলম নিতে হয়েছিল তার অভিব্যক্তি করতে মন্দাক্রান্তার দোহাই দিয়ে।

চত্বারঃ প্রাক্ সুতনু গুরবো

            দ্বৌ দশৌকাদশৌ চেৎ

মুগ্ধে বর্ণৌ তদনু কুমুদা-

            মোদিনী দ্বাদশান্ত্যৌ।

তদ্বচ্চান্তৌ যুগরসহসৈ

            র্যত্র কান্তে বিরামো

মন্দাক্রান্তাং প্রবরকবয়

            স্তন্বি তাং সঙ্গিরন্তে – ॥

মনে হয়েছিল, বাঃ, বেশ সহজ। কালিদাস যখন একখানা পুরা কাব্য তাতে লিখে ফেললেন, তখন আর তাকে বাংলায় পরিণত করা শক্ত কী? কিন্তু যখন মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধতা থেকে প্রদোষের কাকলি পর্যন্ত অনেক অভিধান উলটে, অনেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে

ফাল্গুনরাত্রির চিকন কবরীর

            মুক্ত বৈভব গগন গায়,

কান্তার শীর্ষের অমল ফুলবৎ

            পূর্ণচন্দ্রের বিকাশ্ তায়Ñ

এই চার লাইন অতি কষ্টে ঘষেমেজে দাঁড় করিয়ে, অনেক কেটে-ছিঁড়েও, নিষ্ফল অন্বেষ দয়িতা মিলে কই, এই ছত্রটায় বিশুদ্ধতা আনতে না পেরে, সে-সমস্তটাকে বদলে

নিষ্ফল্ ওই চাঁদ, বিফল ফুলবন,

            ব্যর্থ প্রেম, নাই প্রিয়ার খোঁজ্।

অথবা

যৌবন্-উচ্ছল বিফল বনতল্,

            কই গো প্রেয়সীর দরশ কই?

-এই পঙ্ক্তি-কতিপয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে অক্ষম হলুম, তখন আমার সব রাগটা পড়ল রমণীদ্বেষী সঙ্গীদের উপর। তাদের অত্যাচারের জন্যে কি 888sport app download apk লেখা ছেড়ে দিতে হবে? আমি যদি তরুণীর ভালোবাসা চাই, সে-কথা স্পষ্ট বলতে পারব না কেন? চারদিকেই অত্যাচার; একদিকে ছন্দের, একদিকে সহপাঠীদের ব্যঙ্গের। কিন্তু আসল যে আমার সাহসের অভাব, সেটা একবারও আমার মনে হয়নি। কিন্তু নিজের দোষ স্খালনের জন্যে এটুকু বলা কর্তব্য যে, সমস্ত রাত ধরে মাত্রার, চরণের এবং অক্ষরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার পরে মানুষের ন্যায়বুদ্ধি খুব প্রখর হয়ে ওঠে না।

এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আমাদের বালিকা-বিদ্যালয়ের সামনে এসে পড়েছিলুম, তা আমার নজরে পড়েনি। হঠাৎ আমার চমক ভাঙলো কার হাসিতে। ওঃ সে কী হাসি, সে যেন আনন্দের অবিরত উৎস। আমার মনে হলো বুঝি মুর্তিমান স্ফূর্তি স্বর্গমর্ত্যরে মাঝখানের অমৃতসাগর সন্তরণ করে এসে আমার সামনে তার গা-ঝাড়া দিচ্ছে আর দিগি¦দিকে ঠিকরে পড়েছ সুধাশিকর। আমি থেমে গিয়ে দ্বিতলের জানলার পানে চাইলুম। সেথায় দেখলুম যে, সেই অপরিচিতা বালিকাটি দাঁড়িয়ে আছে, যার হরিৎ-ধূসর চোখ সেদিন স্কুলহলে 888sport app download apk-আবৃত্তির সময় আমার দিকে কী-একরকম করে চেয়ে আমার মনে একটা অভূতপূর্ব সংকোচের সৃষ্টি করেছিল। মেয়েটি অদৃশ্যা এক সঙ্গিনীর উদ্দেশে আমার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে কী বলছিল আর হাসছিল। তার আনত মুখের উপরে সায়াহ্ন-আভা একটা অলৌকিক অরুণিমা মাখিয়ে দিয়েছিল। সেটা ঠিক কীরূপ বলা শক্ত। তবু, উপমাটা একটু দূরানীত হলেও, আমার মনে হয়েছিল, সেটা মামুলি দুধে-আলতা নয়; চন্দ্রালোকে রৌপ্য-পাত্রস্থিত জলে চুনি যে ফিকে শোণিমা বিস্তার করে, সেটা সেই রং। পড়ন্ত রৌদ্রের একটি কণা তার আয়ত আঁখিতে কী এক অভাবনীয় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, মনে হচ্ছিল ও তো মানুষের চোখ নয়, ও বুঝি দু-টুকরো ধুপছায়া মখ্মল। তার গণ্ডের দু-পাশ বেয়ে মাটির দিকে নেমেছিল দুইটি স্ফীত অরাল কেশের ধারা, যেন কৃষ্ণপ্রস্তর-প্রতিফলিত কোনো পাগলা ঝোরা অর্ধপথে আপনগতি থামিয়ে বিজড় হয়ে গেছে।

সে তার রূপের আকর্ষণীতে আমার দৃষ্টিকে আর নিচে নামতে দিচ্ছিল না। যদিও বুঝেছিলুম যে এই হাসি আমাকে দেখে, তবু মনে হয়েছিল যে, আমি উপলক্ষ মাত্র, এর আসল হেতু জীবনানন্দ। কিন্তু তার সেই খুশিতে আমার চিত্তও খুশিতে ভরে গেল না, বরং জেগে উঠল একটা গুরুভার ব্যর্থতা, একটা অখিল অপূর্ণতা, একটা অসীম বিষাদ। হঠাৎ অকারণে আমার মাথায় সেই অসম্পূর্ণ মন্দাক্রান্তা ভেসে এল, এবারে আর অপূর্ণ আকারে নয়, বাকি চার লাইনসুদ্ধ। আমি বলে উঠলুম,

ফাল্গুন রাত্রির চিকন কবরীর

            মুক্ত বৈভব গগন গায়,

কান্তার শীর্ষের অমল ফুলবৎ

            পূর্ণচন্দ্রের বিকাশ তায়।

উদ্দাম-যৌবন-বিভল-বনতল,

            রুদ্ধদ্বার আজ ঘুচাও, ভাই

নিষ্ফল কাক্সক্ষার আশুই সম ভাগ

            নাই তো মোর তার হিয়ায় ঠাঁই

আবার সেই হাসির ফোয়ারা আমায় লজ্জায় পরিপ্লুত করে দিয়ে উৎসরিত হয়ে উঠল; কিন্তু আমি নড়তে পারছিলুম না, যেন আমার পায়ে শিকড় গজিয়েছিল। আমার সময়ের সংজ্ঞা হারিয়ে গিয়েছিল, আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঊর্ধ্বমুখে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার চমক ভাঙলো খেলা থেকে প্রত্যাগত সখাদের আহ্বানে। তখন আমি তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিলুম; কেননা আমি অনুসরণীয়, আমার স্পর্ধার, আমার সম্মানের পক্ষে মেয়ে-ইস্কুলের জানলার নিচে উপর দিকে তাকিয়ে লাঞ্ছিত হওয়াটা মোটেই হিতকর নয়, তাতে করে এমনকি সমস্ত বিদ্যালয়ের মানহানি হতে পারেÑ এই আমার মাধবীর সঙ্গে প্রথম দেখা।

পরে মাধবীর পরিচয় পেলুম। তার বাপ-মা কেউ ছিল না, বড় ভাই একমাত্র অভিভাবক। সে-ও আমাদের স্কুলের খ্যাতিতে মুগ্ধ হয়ে গৃহ ছেড়ে সেখানে পড়তে এসেছিল। এতদিন তাকে দেখিনি, তার কারণ তার শরীরের অসুস্থতা, বেচারা এসে অবধিই ভুগছিল, সবে সেরে উঠেছে। মাধবী বাঙালি নয়, মহারাষ্ট্র ব্রাহ্মণ, জন্মস্থান বোম্বাই। বয়সে আমার চেয়ে বছরখানেক বড় হবে, কেননা আমার চেয়ে এক ক্লাস উঁচুতে পড়ত।

আমার তার সঙ্গে আলাপ করা বিশেষ শক্ত হয়নি; বালিকা-বিদ্যালয়ে আমার গতিবিধি ছিল অবারিত। আমি আদর্শ, অতএব আমার চারিত্রে যে বাসনা-কামনার লেশমাত্র থাকতে পারে, এ-কথা নাকচ করতে কর্তৃপক্ষের সাহসে কুলায়নি। এর উপরে আবার আমার সমর্থন করেছিল আমাদের স্কুলের আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি।

কিন্তু ওই পর্যন্তই, সে-আলাপকে ঘনিষ্ঠতায় পরিণত করতে সমর্থ হইনি। লোকে বলে আমি সাধারণত বাক্পটু, কিন্তু তার সামনে গেলে আমার যত্নে-রচিত উক্তিগুলি কোথায় যে উধাও হয়ে যেত, আমি তার সন্ধান পেতুম না; আমায় পেয়ে বসত একটা কিসের অজ্ঞাত সংকোচ। হয়ত পনেরো-কুড়ি মিনিট চুপ করে থেকে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতুম, ‘মাধবী, তুমি কি টেনিস খেলতে ভালোবাসো?’ সে তার সেই অলস, রভসভরা চোখদুটো আমার মুখের উপর তুলে, আমার হৃদয়ে ব্যাকুল স্পন্দন জাগিয়ে, আমার ধমনীতে অগ্নিপ্রবাহ ছুটিয়ে শিথিল স্বরে আমায় উত্তর দিত, ‘না, মোটেই না।’ হয়ত আমি জানতে চাইতুম, সে কোন কবিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। সে খানিকক্ষণ বিজ্ঞের মতো চুপ করে থেকে জবাব দিত, ‘কাউকে না।’ চাঁদের দিকে তাকিয়ে অনন্তের সন্ধান পায় পাগলেরাই। অতএব এরপরে তাকে যে আমার কাব্যের থেকে দু-একটা তর্জমা শুনিয়ে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করব, সেটি আর হয়ে উঠত না।

এমনি করে দু-তিন বছর কেটে গেল, গোপনে প্রণয়গাথা লিখে আর প্রকাশ্যে মাধবীর কাছ থেকে পরিহসিত হয়ে। সে আমার নিকট হবার সকল প্রয়াস উপরোক্ত উপায়ে সর্বদাই ব্যর্থ করত। ফলত এতদিনেও, প্রত্যহ তিন-চার ঘণ্টা তার কাছে কাটিয়েও আমি তার কিছুই জানলুম না, কিন্তু সে বোধকরি আমার আমর্ম সমস্তই বুঝে নিয়েছিল, কেননা শুনেছি 888sport promo codeদের হৃদয়-বিষয়ে একটা স্বাভাবিক অনুভবশীলতা আছে।

এদিকে ক্রমশ পারিপার্শ্বিকদের কাছে আমার গৌরব ক্ষুণ্ন হয়ে আসছিল, আমি শিক্ষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে পড়ছিলুম। আমি যে তাঁদের প্রদর্শনীয়। কাজেই যখন আমার সেই সমস্ত উচ্চ ‘সম্ভাবনা’ অঙ্কুরেই নষ্টপ্রায় হয়ে এলো তাঁরা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন। আজকাল আর আমার হাত দিয়ে নীতিগর্ভ 888sport app download apkবলি বেরুত না, অবশ্য আমি পদ্যলেখা ছেড়ে দিইনি, কিন্তু এখনকার কাব্য আর শিক্ষকদের পাঠ্য ছিলনা; আমার বাগ্মিতায় স্কুল-তর্কশাল-গৃহভিত্তিগুলো আর কেঁপে উঠতনা; আমার মন ছিল না তাঁদের উপদেশে, আমার প্রাণ ছিল না আবৃত্তিতে, আমার একাগ্রতা ছিল না পাঠে। সকলের চেয়ে মুশকিলের বিষয় হয়ে পড়েছিল যে, আমি আমার সহপাঠীদের আস্থা হারিয়েছিলুম, এমন কি বোধহয় তাদের ঘৃণার্হও হয়ে গিয়েছিলুম। যেখানের শিক্ষাপদ্ধতি স্বাধীনতার বড়াই করে সেখানের শাসন সাধিত হয় আদর্শের জোরে। সেই আদর্শই যদি চরণচ্যুত হব-হব হয় তবে শিক্ষকরা সত্যই উদ্বিগ্ন হতে পারেন। কিন্তু তাঁদের দুশ্চিন্তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবার আগেই আমার অন্যমনের কারণ অপসারিত হলো। মাধবী পরীক্ষা পাশ করে দেশে ফিরে গেল ডাক্তারি পড়তে।

মাধবীকে আমি কতটা ভালোবেসেছিলুম, তা সে যতদিন কাছে ছিল বুঝিনি; এমনকি সে যাবার পরেও কিছুদিন হৃদয়ঙ্গম করতে সময় লেগেছিল, কেননা তখন ছিলেম আমূর্ছিত। ক্রমশ যখন অল্প অল্প করে চেতনা ফিরে এলো, সৌন্দর্যে যখন পুনর্বিস্ময় জাগল, বাসনা যখন দ্বিগুণ বেগে আমার অন্তরাত্মাকে পুড়িয়ে দিতে লাগল, তখন জানলুম, 888sport promo code কাম্য, তার কারণ তারা মাধবীর জাতি; প্রকৃতি সুন্দর, তার কারণ তার মধ্যে মাধবীর উপমা খুঁজে পাওয়া যায়; জীবন মধুর, তার কারণ তাতে মাধবীর সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটবার সম্ভাবনা আছে। তখন আমার দিনগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্যে প্রতীক্ষার, আমার সমস্ত কার্যগুলো তারই আয়োজন, আমার সমস্ত প্রবৃত্তি, সমস্ত চিন্তা তার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা। আমার বুদ্ধি বলত যে, রূপসী হিসেবে মাধবীর স্থান খুব উঁচু নয়, এমনকি সন্ধ্যারাগদীপ্ত মাধবী আর আটপৌরে মাধবী Ñ এ-দুয়ের মধ্যে অনেক প্রভেদ, কিন্তু আমার মন সে-কথা মানতে চাইতনা। আমি জানতুম, মাধবীর চিন্তাশক্তি নেই, মাধবীর অনুভূতি মামুলি, মাধবীর বুদ্ধিবৃত্তি স্থূল, কিন্তু 888sport sign up bonusতে তার সেই একাক্ষরাবৃত্তি উক্তিগুলি অর্থমর্যাদায় অনবতুল হয়ে উঠত। তারপরে যখন তার বিয়ের খবর পেলুম, যখন সেই সংবাদে সংযমগত একটা শ্লথ মুহূর্তে নিজে বিয়ে করতে রাজি হলুম, তখনো তার সহিত আশু মিলনের মরীচিকা ভুলতে পারিনি। ভেবেছিলুম, কোনো এক অলৌকিক শক্তির সাহায্যে, কোনো অঘটন সংঘটনের ফলে অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠবে, দুঃস্বপ্নের শেষে আমার সিক্ত উপাধানের মধ্যে, আমার ব্যাকুল বক্ষের উপরে মাধবীকে দেখতে পাব। সেই জন্যেই আমি নিজের দেহকে অপবিত্র হতে দিইনি, তা দিয়ে যে দেবতার অর্ঘসাজন হবে। সেই জন্যেই বিমলাকে কাছে ঘেঁষতে দিইনি। সেই জন্যেই প্রফেসারি ও ওকালতির মধ্যে নির্বাচন করতে পারিনি। সেই জন্যেই তার উদ্দেশে লিখেছিলুম,

স্বপনেতে সদা ভুঞ্জিতা তুমি

            তব মুখ হৃদে সঞ্চিত,

রবে চিরদিন বাঞ্ছিতা, প্রিয়ে,

            রব আমি চির বঞ্চিত ॥’

সহসা আমার চিন্তাসৌধ ভেঙে পড়ল বিজন সেনের বজ্রনির্ঘেষে। তিনি খুব উত্তেজিত স্বরে বলছিলেন, ‘চরকা! চরকা!! চরকা দিয়ে দেশের দাসত্ব মোচন হবে? কচু হবে। তোমরা খদ্দরের আবরণে এক দাস্যকে ঢাকতে চাচ্ছ, কিন্তু বুঝতে পারছ না যে তাতে করে যে আরেক দাস্যের অপ্রতিহত বিরাট স্বরূপ দেখতে পাবে তাতে অন্তরাত্মা আঁতকে উঠবে। এখন আমরা সঙ্কুচিত হয়ে আছি পশু-বলের কাছে, আমরা কাঁপছি ব্রিটিশ সিংহের গর্জনে। এই দাসত্বের মূলে একটা সনাতন সত্য আছে যে, জোর যার মুল্লুক তার, অর্থাৎ তার সঙ্গে এটাও জানা আছে যে, যদি কোনোদিন আমাদের তাকত বা কৌশল সিংহকে হারাতে পারে তাহলে মুল্লুক আমাদের। সিংহের বুদ্ধি বেশি নয়, তাকে একটি শশকেও হারিয়েছিল; সিংহ কৃতজ্ঞ তার পায়ে যদি কোনোদিন কাঁটা ফোটে আর তা যদি আমাদের ডাক্তারিতে সেরে যায়, তাহলে তার কাছ থেকে পারিতোষিকের আশা আছে; সিংহের অন্ত হচ্ছে ফাঁদে, সে-সময় আমরা মূষিক হলেও তার চারদিকে বিনা কুণ্ঠায় তাণ্ডব নাচতে পারব; পরিশেষে সিংহমাত্রেই শিকারির বধ্য, তাহলে তো আর কথাই নেই। সিংহের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় সহস্র, বিশেষ যদি সে-সিংহ সভ্য সিংহ, সার্কাসের সিংহ হয়, শেঁকো টেঁকো নানারূপ ওষুধ আছে। কিন্তু মহাত্মাদের স্বৈরিতা থেকে আত্মরক্ষার কোনোই উপায় নেই, কেননা আত্মা যে কায়াহীন, প্রাণহীন। গুরু মরলে তার আত্মা অবাধে শিষ্যের উপরে অর্শাতে পারে। অতএব আত্মার অত্যাচার চিরন্তন, বিশ্বজনীন, সর্বব্যাপী, বিশেষত যদি সে-আত্মা অহিংস হয়। যুক্তির জবাবে যখন অলৌকিকতার রূপকথার সৃষ্টি করা হয়, তর্কের জবাবে যখন ঈশ্বরের দোহাই দেওয়া হয়, ভগ্ন প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করলে যখন অসম্ভব যুক্তিশর্তের উদ্ভাবন হয়, যুবকের স্বাভাবিক হিংস্রতার স্বাভাবিক অসহিষ্ণুতার প্রতিবর্ত্তে পযখন যিশুকে অনুকরণ করতে বলা হয়, তখন বিশ্ববিদ্রোহী ও পরম নাস্তিকও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

আমি অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলুম, তাই ভাবলুম এবারে কিছু না বললে, লোকে মনে করবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিজন সেনকে ক্ষেপিয়ে দেবার ইচ্ছাটাও ছিল। তাই বললুম, ‘দেখুন, আমাদের দেশের মাটির গুণ হচ্ছে যে, যা এখানে একবার আসে তা মৌরসি পাট্টা পায়। এমনি করে কলেরা, প্লেগ, পরিশেষে ইনফ্লুয়েঞ্জা আমাদের পরম আত্মীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই এই দেড়শত বৎসরব্যাপী দাসত্ব কোনোদিন ঘুচবে বলে মনে হয় না। তাই তাকে যদি আকৃতি বদলে দিয়ে আমাদের সনাতন দাসত্বের প্রতিকৃতি করে দিতে পারি তাহলে মন্দ কী। এ-কথা প্রত্নতাত্ত্বিকরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে, মনু-পরাধর-মেধাতীতি চালিত ভারত স্বাধীন ছিল। অতএব চরকা-কল্পতরুর শিকড় যতই দৃঢ় হবে, স্বরাজ-ফল ততই শীঘ্র পাওয়া যাবে। ওতে বাধা দেবেন না। চরকাকে আধ্যাত্মিক করে তোলাতে আপনি কুণ্ঠিত হচ্ছেন, কিন্তু এ-কথা বোধ হয় আপনি বিস্মৃত হয়েছেন যে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের গতি চক্রাকার, অর্থাৎ চরকার অনুরূপ, শুধু তাই নয় চরকার সুতোর বিবর্তন হচ্ছে সৌরজগতের অন্তর্বৃত্তের মতোই প্রায়। আধ্যাত্মিকতার আর এর চেয়ে কী জোর সার্টিফিকেট থাকতে পারে।’

প্রাচীন ভারতের নাম শুনে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক মান্ধাতার আমলের শান-বাঁধানো রাস্তার ইতিহাস বলবার জন্য উৎব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বিজন সেন তাঁকে বাধা দিয়ে ক্রুদ্ধস্বরে বলতে শুরু করে দিলেন; ‘সত্যিই কি মহাত্মার মত এই?’ আমি বললুম, ‘তা ঠিক বলতে পারিনে, কিন্তু জনশ্রুতি এইরূপ।’ তিনি বললেন, ‘তা যদি হয় তাহলে তাঁর পশ্চিম-বর্জনের ভিত্তিই যে থাকে না। এর চেয়ে ঘোরতর ব¯ত্ততান্ত্রিকতা আর কী থাকতে পারে? প্রুসীয় সভ্যতাও যে এর কাছে হার মেনে গেল। আর যদি যন্ত্রকেই পূজা করতে হয় তাহলে যেখানে যন্ত্রের চরমোৎকর্ষ সাধিত হয়েছে তাকে বাদ দিই কী হিসেবে? চরকার আর ম্যানচেস্টারের মিলের মধ্যে হচ্ছে সেই তফাৎ যেটা পরিলক্ষিত হয় অর্ধসভ্য আর সম্পূর্ণ সভ্য মানুষের মাঝে। উভয়েই স্বভাবপ্রসূত তুলো গাছের ঐশ্বর্য অপহরণ করে নিজের কাজে লাগালো, কিন্তু চরকা প্রসব করে অমার্জিত অশুভ্র স্থূলত্ব, মিল উৎপাদন করে সূক্ষ্ম, চিক্কণ অণিমা। এ-দুয়ের মধ্যেই যদি বিচার করতে হয় তাহলে মিলের শ্রেষ্ঠতা নিশ্চিত।’ আমার কাছে বিজন সেনের যুক্তিটা খুব উঁচুদরের বলে মনে হলোনা। তাই বললুম, ‘কিন্তু এ-কথাও অস্বীকার্য যে মিল-চালকের মধ্যে প্রাণশক্তির কোনো লেশ খুঁজে পাওয়া ভার এবং চরকা-চালক অর্ধজীবিত হলেও তার ভিতরে জীবনের বৈচিত্র্য দেখা গেলেও যেতে পারে।’

বিজন সেন আরো উত্তেজিতভাবে বললেন, ‘হ্যাঁ, তা হওয়া সম্ভব যদি চরকা-চালানো সখমাত্র থাকে, কিন্তু তাকে যে তুমি কতর্ব্য করে তুলতে চাইছ। সে যাই হোক, আমি চরকা-চালকের এবং মিল-মজুরের কথা বলছিলাম, তারা উভয়েই নিকৃষ্ট জীব, তাদের পূজা করতে আমাদের কেউ কখনো উপদেশ দেয়নি। আমাদের পূজা চাইছেন একদিকে চরকা-স্রষ্টা, অন্যদিকে মিল-আবিষ্কারক। এ-দুজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশ করা কি এতই শক্ত? এ-কথা কি তুমি স্বীকার করবে না যে, যে-লোক মিল বানিয়েছিল, তার চিত্ত-বৃত্তি, তার বুদ্ধিমত্তা, চরকা-রচয়িতার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে? তা যদি তুমি অস্বীকার করো তাহলে জানব তুমি আর স্বাধীন চিন্তা করতে সমর্থ নও, তুমি আর শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে তর্ক করার যোগ্য নও, তুমি দাস, দাস, পদদলিত ক্রীতদাসমাত্র।’

তর্কে আমার রক্ত গরম হয়ে উঠেছিল। মাধবী-বিমলা নামক উভয়-সঙ্কটের অস্তিত্বই আমি ভুলে গিয়েছিলুম। নূতন উৎসাহে বাক-যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছিলুম, কিন্তু মিসেস সেন আমাদের ক্ষান্ত করে দিলেন। তিনি বললেন, ‘বিজন, তুমি ভুলে যাচ্ছ যে এটা একটা ভদ্র পরিবারের বৈঠকখানা, নিখিল ভারত-কংগ্রেস-কমিটির মিটিংগৃহ নয়। এ নিরীহের উপরে তোমার অব্যর্থ-যুক্তির অস্ত্র চালিয়ে কী হবে? ওগুলিকে জমিয়ে রেখে দাও, ওর সহায়তা নিয়ে বরং মহাত্মাকে দ্বৈরথে আহ্বান করো। দেখতে পাচ্ছ না, এ বেচারা একজন ঘোরতর পশ্চিমপ্রেমিক। তোমার প্রিয় দেশের জন্যে martyrdom সইছে।’

মিসেস্ সেনের এটা একটা চিরন্তন ঠাট্টা ছিল। আমার হালফ্যাশনের সুটগুলিকে তিনি crown of thorn, hair shirt ইত্যাদি আখ্যা দিতেন।

মিসেস সেনের কথায় আমার মন বাড়ি ফেরবার জন্যে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠছে। আমার মনে হলো যে, এই সমস্ত কাল্পনিক হিতাহিতের বিচার করবার সময় আমার নেই, নিজের হিতাহিতই যে আমি ধার্য করতে পারি না। আমার বোধ হলো সারাদেশের ভবিষ্যৎ-মার্গ নিয়ে তর্ক করা তাদেরই শোভা পায়, যারা নিজেদের চলার পথ একেবারে ঠিক করে রেখেছে। এ-সমস্ত বক্তৃতা এক অন্ধকে আরেক অন্ধের চালনা করার মতো হাস্যাস্পদ এবং সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত করুণ, অতিশয় মর্মস্পর্শী। সকলে ব্যক্তিত্ব হারাবে, স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা আর থাকবে না, সে কি এখনই র্দুদৃষ্ট। আহা, যদি কোনো উপায়ে আমি আমার চিন্তার হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে যেতুম। যাক, সে-কথা নিয়ে দুঃখ করে কী হবে! এটা নিশ্চিত যে, সেই বুদ্ধিরিক্ত, শূন্যগর্ভ, অসার বিতণ্ডার ভিতর নিশ্চেষ্টভাবে বসে থাকা চিন্তাদমনের শ্রেষ্ঠ উপায় নয়। চাই কাজ, হাড়ভাঙা, নির্বোধ কাজ, যাতে নিশ্বাস ফেলবার অবকাশসুদ্ধ থাকবে না। নচেৎ সেই চিরসমস্যা মীমাংসার জন্য মস্তিষ্কের ভিতর নীরব চিৎকার করতে থাকবে। তাকে বন্ধ করবার অন্য কোনো উপায় নেই। বিজন সেনের বাড়িতে আর বসে থাকবার কোনো ছুতো নেই। সন্ধ্যা হয়েছে, অতএব সম্ভবত বিনা বিপদেই বোধহয় আমার হ্যাট-কোট-888sport app দেহখানি রাস্তা দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব। এখানে বলে রাখা উচিত যে, আমি যে-সময়ের কথা বলছি, তখন কিশোরদের স্বদেশপ্রীতি এত অধিক ছিল যে, আমার মতো martyrদের পথেঘাটে নানারূপ মধুর সম্ভাষণ তো শুনতে হতোই, এমনকি এক-আধখানা ইটপাটকেলের কোমল স্পর্শও পৃষ্ঠদেশে সইতে হতো, বিশেষত বিজন সেনের পার্শ্বেই পশ্চিমবর্জনের একজন মস্ত পুরোহিত মিস্টার কর থাকতেন। অন্ধকারের উপর নির্ভর করে আমি সেদিনের মতো বিদায় নিলুম।

রাস্তায় বেরিয়ে যখন দেখলুম যে গাড়ি-ঘোড়ার ভিড় মোটেই কমেনি এবং লোকজনের যাতায়াত অন্যদিন অপেক্ষা বেশি, তখন মনে হলো যে, সেদিন সন্ধ্যার পরে বিজন সেনের প্রতিবেশী সেই নেতাটির গৃহে একটা বিরাট সভার অধিবেশন আছে। কাজেই টুপিটাকে চোখের উপর টেনে দিয়ে, সিগারেটটাকে মুখের কোণে বাঁকিয়ে ধরে, হাতদুটোকে পেন্টুলুনের পকেটে পুরে আমার মতে যেটা ইংরেজি-গমন, তার অনুকরণ করতে শুরু করে দিলুম, পলিটিক্যাল-তীর্থযাত্রীরা যদি শ্বেতাঙ্গ বলে ভাবে, এই আশাতে। ফলত পথে দু-একজন আমার পানে কটমটিয়ে চেয়ে যদিও আমার হৃৎকম্প ধরিয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু বোধহয় তাঁরা ঠিক করতে পারেননি, আমি সিংহচর্মাবৃত রাসভ, কী সত্যই পশুরাজ স্বয়ং      অন্ততপক্ষে ‘সন্দেহ-প্রসাদ’ থেকে আমি বঞ্চিত হইনি।

এমনি করে চলতে চলতে যখন পার্কে এসে পড়লুম, তখন লোকের ভিড় নেই। আমি বললুম, ‘একটু দাঁড়াও, তোমার সঙ্গে কথা আছে।’ সে ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘তুমি নিজেই বলেছ রাস্তা কথা কওয়ার জায়গা নয়, পরে হবে অখন।’ আমি বললুম, ‘কাল তুমি আমার বাড়িতে চা খেতে যাবে।’ ‘না, দিনতিনেক আমি অত্যন্ত ব্যস্ত, তার পরে হবে। বরং তুমি তরশুদিন আমার কাছে এসো।’ বলে সে আমাকে তার ঠিকানা দিলো। তারপরে আমি প্রতিবাদ করবার পূর্বেই ট্যাক্সি দ্রুতচালে বেরিয়ে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলুম, এতদিন পরে এত প্রত্যাশিত পুনর্মিলন এই! জীবনের ব্রাহ্মলগ্ন বাজে কথাতেই কেটে গেল। আর বেশিদূর এগুতে সাহস হলোনা। তার মনোভাবের পরিচয় যা পেয়েছিলুম সেটিকে ভালো করে বুঝতে চেষ্টাসুদ্ধ করলুম না। বাড়ি ফিরে গেলুম বটে, কিন্তু ভবিষ্যতের যে-সমস্ত কর্তব্য ঠিক করেছিলুম, তা অকৃত রইল!

তিনদিন যে আমার কী করে কাটল, তা ভগবানই জানেন। মাধবীর বাসাতে গেলুম পাঁচটার সময় বিকেলে। আমার মনে আছে, যাবার পূর্বে প্রায় একঘণ্টা ধরে চিন্তা করেছিলুম, কী পরে যাব। অবশেষে ইংরেজি পোশাক পরিহার করে যাওয়াই প্রশস্ত মনে করলুম, যদিও খদ্দর পরবার মতো হীনতা স্বীকার করতে পারলুম না। আমি যখন পৌঁছলুম তখন মাধবী কোনো এক নেতার সঙ্গে কথাবার্তায় ছিল ব্যস্ত। আমার উপর হুকুম এলো অপেক্ষা করতে। তার আত্মীয়েরা মধ্যবিত্ত অবস্থার লোক, গৃহস্বামী কী এক সরকারি চাকরি করতেন। তাঁরা আমি মাধবীর অতিথি বলে আমায় আদর-অভ্যর্থনা করলেন বটে, কিন্তু তাঁদের মন যে আমার প্রতি প্রসন্ন নয়, তা বুঝতে আমার বেশিক্ষণ লাগল না; তাঁরা যেন আমার দিকে সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। সে-সংশয়ের কারণ কী, ঠিক নির্ণয় করতে পারলুম না। সেটি কি সরকারি-চাকুরের রাজনৈতিক দলের প্রতি অবশ্যম্ভাবী অবিশ্বাস, না মাধবীর পুরুষবন্ধু বলে আমার উপর সন্দেহ?

কতক্ষণ যে তেমনি সন্দেহের কটাক্ষ সহ্য করতে করতে একলা বসে থাকতে হয়েছিল, মনে নেই। আমার কাছে কিন্তু সেই অপেক্ষা মনে হয়েছিল এক যুগ। শেষে যখন ঈর্ষার বিষে আমার শরীর-মন অবসন্ন হয়ে পড়ল, আমার আত্মসম্ভ্রম বলে আর যখন কিছু বাকি থাকল না, ফিরে যাবার আর শক্তিমাত্র রইল না, ইচ্ছা তো দূরের কথা, তখন মাধবী সেই নেতাটিকে বিদায় দিয়ে আমায় আহ্বান করলে। সেই আচরণের জন্যে তাকে কিছু বলতে সুদ্ধ সাহস হয়নি। কী ফল? জানতুম তাকে ভর্ৎসনা করতে গেলে এমন একটা কিছু শুনব যার ফলে অভিমানের মোহটুকুও আর থাকবে না। সে যে আমাকে তার বাড়িতে আসতে দিয়েছে, সেটিই কী আমার পরম সৌভাগ্য নয়? তার উপরে কীসের অধিকার?

তার সঙ্গে কী-যে কথা হয়েছিল ঠিক মনে নেই; তবে এটা শপথ করে বলতে পারি যে, ভালোবাসার নামগন্ধও করিনি। কেননা, মনে মনে ভয় ছিল, তার উত্তর আমার আশানুযায়ী হবে না। শুধু এইটুকু মনে আছে যে, সে আমাকে তার বিবাহের ট্র্যাজিডিটা শুনিয়ে দিতে ছাড়েনি। তার স্বামী তার শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিলেত চলে গিয়েছিলেন, তাকে সঙ্গে নিতে কিছুতেই রাজি হননি। সেই অপমান সে দেশের পূজায় ভুলতে চেষ্টা করছে। তার দুঃখ অনেক; সে লোক-পরম্পরায় শুনেছিল তার স্বামী নাকি বিলেতে অত্যন্ত ইতরভাবে জীবনযাপন করছিলেন। তাঁর দেশে ফেরবার কথা আরো এক বছর বাদে। সে ঠিক করেছে, তিনি এলে সে তাঁকে পরিহার করবে। প্রতিশোধ দিতেই হবে। মোদ্দাকথা বুঝেছিলুম যে, তার দেশপ্রীতি আত্মপ্রীতিরই রূপান্তরমাত্র। আমার নিজের কথাও উঠেছিল। যেমন, তাকে সেই চিঠি লেখবার পরে আমি বিয়ে করলুম কী হিসেবে? সে-পত্রখানি কি তবে কেবলমাত্র আমার সাধুরচনার ক্ষমতা দেখাবার জন্যে? কথায় কথায় সে এটাও নিশ্চয় জেনে নিয়েছিল, আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক দাম্পত্যোচিত নয়। তার জন্যেই যে আমি এইরূপ লক্ষ্যহীন জীবনযাপন করছি, তা তার অজ্ঞাত ছিল না বোধহয়, কেননা যতদূর 888sport app download for android আছে, সে-কথা আমাকে একবারও বলতে হয়নি বা সে নিজেও তোলেনি।

তাকে ছেড়ে যখন সদর রাস্তায় বেরুলুম, তখন মনে হলো যে, তাকে নূতন করে পেতে গিয়ে আমি আবার আমার জগতের সঙ্গে সম্বন্ধ-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি। কারণ আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলুম যে, আমি তার সঙ্গে দেশসেবায় রত হব। আগামীকল্য যখন তার কাছে যাব তখন আমায় পরে যেতে হবে খদ্দর। এই খবর শুনলে আমার একমাত্র বন্ধু বিজন সেনের যে কী অবস্থা হবে, সে-কথা ভেবে কিছু আনন্দ উপলব্ধি করলুম। হঠাৎ মনে পড়ল যে, আমি তার কাছে যতক্ষণ ছিলুম, সে আমার হাতে হাত রাখতে কুণ্ঠিত হয়নি। তবে কি সে সত্যই আমায় ভালোবাসে? বাড়িতে গিয়ে যখন পৌঁছলুম, তখন এই তুচ্ছ ভিত্তির উপরে আমি গড়ে তুলেছিলুম এক অদ্ভূত, অপূর্ব মেঘসৌধ। তখন একবারও মনে হয়নি যে, ঈদৃশ ইমারত অল্পায়ু এবং সেখানি যখন চুরমার হয়ে পড়বে তখন তার প্রাকারের তলায় চাপা পড়ে গৃহকারকের অন্ত্যেষ্টিও সমর্পিত হতে পারে।

এমনিভাবে দিনে দিনে অল্প অল্প করে তার সঙ্গে যে-ঘনিষ্ঠতা আমি গড়ে তুলছিলুম, তাতে আশার চেয়ে নিরাশার অংশটিই বেশি। তার সঙ্গে যে-সম্পর্ক পাতিয়েছিলুম, তাকে ঘনিষ্ঠতা বলা কিছুতেই চলে না। সে হচ্ছে কুকুরের সঙ্গে মানবের যে-সম্বন্ধ। যখন সে সদয় হয়ে আমায় পায়ের কাছে বসতে দিত আমি সপ্তম স্বর্গ হাতে পেতুম; আবার যখন বিরক্ত হয়ে আমার প্রতি ঔদাস্য দেখাত, তখন আমি পার্থিব দেহেই কুম্ভীপাকের সকল যন্ত্রণা সহ্য করতুম। এক-একদিন যখন কোনো বিরাট সভার ক্ষণিক উত্তেজনা থেকে ফিরে আসতুম, তখন মনে হতো, এ-সকলি মিথ্যা। তখন মনে হতো যে, যে-মাধবী ইংরেজি ভাষার শ্রাদ্ধ করে জনমনে ঘৃণার বহ্নি জ্বালিয়ে দিয়ে, জয়ধ্বনি-আরক্ত আননে গৃহে ফিরে এল, সে-মাধবী আমার আদর্শ মাধবী নয়। সে হচ্ছে এক অল্পমতি, স্তুতিপ্রিয়, বিস্ময়কামী মাধবী, তার চারিত্র্যে মহত্ত্বের স্থান নেই; তার রূপে অপরূপের লেশ নেই; তার কথায় অনন্তের বার্তা নেই। কিন্তু আমার এই বিদ্রোহকে আমি ত্রস্ত হয়ে দমন করতুম। আমার এই শেষ আদর্শটুকুও যদি যায় তাহলে বাঁচব কী নিয়ে! আর সমস্তই ত্যাগ করেছিলুম, আমার লেখা, আমার বন্ধু, আমার পত্নী; বাকি ছিল ওই মাধবী। কাজেই তাকে আমি সহজ চোখে দেখতে কিছুতেই চাইতুম না।

তারপর সেই শেষ রাত্রি। সেদিন একঘণ্টার পরে মাধবীর বক্তৃতা থেমেছিল বটে, কিন্তু করতালি আর থামতে চায়নি। সেই জনসমুদ্র গর্জন করে উঠেছিল ঝটিকাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মতো। ‘মহাৎমা গান্ধিজি কি জয়’ গানে আকাশখানা আস্ত থাকলেও, মাধবীর নামকীর্তনে উঠেছিল টলমলিয়ে। তারপরে মাধবীর যানখানাকে যখন যুবকবৃন্দ টানতে আরম্ভ করলে, তখন মাধবী আমার পরে একবার চরিতার্থতার কটাক্ষ নিক্ষেপ করে আমাকেও পাশে ডেকে নিয়েছিল। অনেক সময় ভাবি, আমাকে তেমন করে সম্বর্ধনা না করলেই আমাদের উভয়ের পক্ষে ভালো হতো। কিন্তু তার কৃতজ্ঞতার কারণ ছিল। সেদিনের তার সেই সপ্তদিবায়ু বক্তৃতার লেখক ছিলেম আমি।

আমরা যখন মাধবীর বাসায় পৌঁছলুম, তখন প্রায় রাত্তির নয়টা হবে।

আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলুম, তাই ঠিক করেছিলুম যে, মাধবীকে নামিয়ে দিয়ে সেই ট্যাক্সিতেই বাড়ি ফিরব। তাদের বাসার সদর-দরজা বন্ধ ছিল, কড়া নেড়ে কবাট খোলবার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে মাধবী বলল। ‘ট্যাক্সিটাকে বিদায় করে দাও না।’ আমি বললুম, ‘তাহলে যাব কীসে?’ সে বললে, ‘যাবার জন্যে অত তাড়া কেন, যেও অখন। তোমায় ক্লান্ত দেখাচ্ছে একটু বসে যাও।’ বলে একটুক্ষণ চুপ করে থেকে আমি জবাব দেবার পূর্বেই আবার বললে, ‘আজ বাড়িতে কেউ নেই, সকলে বায়োস্কোপ দেখতে গেছে। থাকবার মধ্যে শুধু চাকর-লোকজন।’ আমি উত্তর দেবার আগে তার মুখের দিকে চাইলুম। দেখলুম তার চোখ দুটো জ্বলছে নীরব নিমন্ত্রণে।

আমার শিরা-উপশিরার ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ-প্রবাহ বহে গেল। ক্লান্তিনত মাথা মনে হলো যেন অভ্রভেদ করে উঠল; ভাবলুম, আমি জগতে শ্রেষ্ঠ, সেরা, প্রতিদ্বন্দ্বীহীন। কিন্তু পর মুহূর্তে একটা কীসের অজানা, অনামা আতঙ্কে আমার চিত্ত ভরপুর হয়ে উঠল। আমি জানতুম সে আহ্বানের অর্থ কী? কিন্তু তারপরে? আর কি কিছু বাকি থাকবে? জীবনের এই শেষ আদর্শটিকে এমনভাবে বলিদান দিতে মন সরল না। আমি বললুম, ‘কিন্তু লোকে কী বলবে?’

সে বুঝেছিল আমার মনে একটা বিষম দ্বন্দ্ব চলছে। তাই কিঞ্চিৎ রুক্ষ্মস্বরে জবাব দিলো, ‘তোমার ভয় যদি আমার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে যেতে পারো।’ এই কথা বলেই সে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে। গ্যাস দীপালোকিত কলকাতা আমার চোখে অন্ধকার হয়ে এলো; একটা কীসের পিণ্ড যেন আমার গলা রোধ করে দিচ্ছিল। আমি চিৎকার করে উঠলুম, ‘মাধবী!’ সে অর্ধরুদ্ধ দ্বার থেকে মাথা বার করে জিজ্ঞাসা করলে, ‘কী?’ আমি বললুম, ‘আমি আসছি।’ সে অর্ধ-বিরক্ত অর্ধ-তুষ্ট স্বরে বলল, ‘তোমার যা ইচ্ছে।’

যখন সদর রাস্তায় বেরুলুম সাড়ে এগারটা বেজে গেছে। আমি কবাটটাকে সন্তর্পণে বন্ধ করতে করতে ভাবছিলুম, ‘এই?’ এই চুমোর জন্যে লোকে পাগল। এই আলিঙ্গনের মাঝে লোকে সময়ের সংজ্ঞা হারায়, জীবনের দুঃখ ভুলে যায়, মরণের বিরাট নির্যাস খুঁজে পায়। এই 888sport promo codeর জন্যে লোকে খুনশুদ্ধ করতে কুণ্ঠিত হয় না। এই প্রেমের নামে কবিদের লেখনী সজীব হয়ে উঠে! এ-ই সব! এই ফাঁকির জন্যে আমি পাগল হয়েছিলাম। মাধবীর অনাবৃত রূপের কথা মনে হলো। সত্যই কি তাকে একদিন আমি জগতে অনবতুল বলে ভেবেছিলুম? তার সেই কঞ্চির মতো উরুর, পায়রার মতো বক্ষের 888sport sign up bonus আমার মনে একটা বিতৃষ্ণা জাগিয়ে দিচ্ছিল। তার চুমুতে যে একটা শুষ্কতার স্বাদ পেয়েছিলুম, তাতে আমার গা গুলিয়ে উঠছিল। সেই সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো মিসেস সেনকে বলবার মতো একটা গল্প পাওয়া গেল বটে। কিন্তু পরমুহূর্তেই 888sport app download for android হলো যে, সেনের দুয়ার আমার ডাকে আর খুলবে না। আমার অতীত জীবন সে যেন কোনো জন্মান্তের 888sport sign up bonus, সে যেন একটা সুখস্বপ্ন মাত্র। আবার মনে হলো এতদিনের সমস্যার অত্যন্ত সহজেই মীমাংসা হয়ে গেল। এখন আর আমার অ্যাটর্নি হতে কোনো আপত্তি নেই, বিমলার চরণে মনপ্রাণ সমর্পণ করতেও কোনো বাধা নেই, অবশ্য যদি আমার মনপ্রাণের কোনো     ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। জানলুম ভবিষ্যতে আমি মুক্ত। কিন্তু সেই জ্ঞানে অন্তরে একটুও আনন্দ পেলুম না। একটা বিপুল, অসীম, বিরাট বিষাদ আমারি দেহখানাকেসুদ্ধ যে করছিল নিষ্পেষণ।

আমি এই সমস্ত ভাবতে ভাবতে হেঁটে চলে যাচ্ছিলুম, এমন সময় পেছন থেকে ডাক এল, ‘বাবু!’ বাবু!’ ফিরে দেখি সেই ট্যাক্সিওয়ালা বেটা আমার পিছু পিছু ছুটে আসছে। তার ভয় আমি বুঝি তাকে ভাড়া না দিয়েই পালাতে চাই। তার কথা একদম ভুলে গিয়েছিলুম। তিনঘন্টা অপেক্ষা করার মূল্য অল্প নয়।