বিশ্বজুড়ে এখন করোনা-আতংক। লকডাউনে গৃহবন্দি আমরা। এই করোনাকালে, ক্রান্তিকালে বাংলা 888sport live football-সংস্কৃতি জগতে নক্ষত্র-পতন ঘটল। আমাদের সময়ের থেকে চিরকালের মতো নিজেকে সরিয়ে নিলেন 888sport live footballিক দেবেশ রায়। ১৪ মে, ২০২০ মধ্যরাত্রে। বয়েস হয়েছিল। সামান্য কিছু অসুস্থতাও ছিল; কিন্তু মনের জোরের অভাব ছিল না। এভাবে চলে যাবেন ভাবেননি কেউই। আমৃত্যু তিনি ছিলেন তরুণ, লড়াকু এবং প্রতিবাদী। অগণিত লেখকের বন্ধু-দাদা-পরামর্শদাতা এবং অভিভাবক। তাঁর প্রয়াণে শুধু বাংলা 888sport live footballে শূন্যতার সৃষ্টি হলো না, শূন্য হয়ে গেল সাম্প্রতিককালের বহু লেখকের হৃদয়ও। বাংলা 888sport live football এবং বাঙালি লেখককুল অভিভাবকহারা হলেন।
দেবেশ রায়ের জন্ম ১৯৩৬-এর ১৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, অবিভক্ত বাংলায়, পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। পিতার নাম ক্ষিতীশ রায় এবং মা অপর্ণা দেবী। বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান দেবেশ। ১৯৪৩-এ তিনি পুব-বাংলা থেকে সপরিবারে চলে আসেন জলপাইগুড়ি। তাঁর প্রাণের শহর।
চা-বাগান, তিস্তা নদী – এসবের সঙ্গে মনেপ্রাণে জড়িয়ে ছিলেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে উত্তরবঙ্গের এই জেলা শহরে। বাল্য-কৈশোর তো বটেই, তাঁর কর্মক্ষেত্রও ছিল এখানেই। জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই আনন্দচন্দ্র কলেজের ছাত্রও ছিলেন তিনি। ছাত্রাবস্থা থেকেই কলকাতার সঙ্গে যোগ। পরে পাকাপাকিভাবে চলে এলেন কলকাতায়। কিন্তু তাঁর অস্থিমজ্জায় মিশে ছিল উত্তরবঙ্গের চা-বাগান, মাটি ও মানুষ।
বাড়িতেই পেয়েছিলেন 888sport live footballের পরিমণ্ডল। পিতামহ উমেশচন্দ্র রায় ছিলেন সুশিক্ষিত আধুনিক মানুষ। দাদা দীনেশ রায় ছিলেন 888sport live footballিক। দেবেশ রায় 888sport live footballজগতে পা রাখেন ১৯৫৩ সালে। তাঁর প্রথম গল্প ‘নিশিগন্ধা’ প্রকাশিত হয় জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত জলার্ক পত্রিকায়। ১৯৫৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হলো ‘হাড়কাটা’ নামে একটি গল্প। তখন তিনি উনিশ। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তারপর একটার পর একটা গল্প – ‘নাগিনীর উপমেয়’ (দেশ, ১৯৫৭), ‘আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’ (দেশ, ১৯৫৭), ‘অপরাহ্নের কান্না’ (একতা, ১৯৫৭), ‘সাত-হাটের হাটুরে’ (পরিচয়, ১৯৫৮), ‘দুপুর’ (দেশ, ১৯৫৮), ‘বত্রিশ আঙুলে’ (দেশ, ১৯৫৮), ‘পা’ (দেশ, ১৯৫৮), ‘কলকাতা ও গোপাল’ (পরিচয়, ১৯৫৯), ‘অসুখ’ (দেশ, ১৯৫৮), ‘পশ্চাৎভূমি’ (পরিচয়, ১৯৬০), ‘পায়ে পায়ে’ (দেশ, ১৯৬১), ‘অপেক্ষায়’ (দেশ, ১৯৬১) ‘দাহনবেলা’ (পরিচয়, ১৯৬১), ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’ (পরিচয়, ১৯৬২), ‘উদ্বাস্তু’ (পরিচয়, ১৯৬২) … চমকে দেওয়ার মতো সব গল্প। তাঁর প্রথম গল্পের বই দেবেশ রায়ের গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৬৯-এ। তাতে ‘আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’, ‘দুপুর’, ‘পা’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘পশ্চাৎভূমি’, ‘ইচ্ছামতী’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’ ও ‘উদ্বাস্তু’ – এই আটটি গল্প ছিল। দেবেশ রায়ের প্রথমদিকে লেখা গুরুত্বপূর্ণ গল্প ‘আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’ (১৯৫৭)। এই গল্পের তটিনী রাতে সব কাজ শেষ করে যায় তার শোবার ঘরে। অনেকদিন ধরে সেখানে শয্যাশায়ী অসুস্থ পঙ্গু স্বামী। প্রতিদিন নিয়ম করে দুই ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে তার দেওর শিশিরকে জিজ্ঞেস করে – ‘ঠাকুরপো তোমার কিছু লাগবে?’ শিশির প্রতিদিন বলে – ‘না।’ বড় বেদনাময় এবং ব্যঞ্জনাময় এই সংলাপ। মুখ ফুটে বলতে না-পারা আশ্লেষ বাসনার প্রতিধ্বনি এই সংলাপ।
তবু লণ্ঠন হাতে আরো কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকে তটিনী। একসময় আলো সরে গেলেও আলোর রেখা পড়ে থাকে দরজার বাইরে। তারপর বিকট শব্দে দরজা বন্ধ হয়। একইভাবে চলে বছরের পর বছর। তারপর একদিন পাশের বাড়িতে নতুন ভাড়াটে আসে। তারা আলাপ করতে আসে। তটিনী আর শিশিরকে স্বামী-স্ত্রী ভাবে। কেউই ভুলটা ভাঙিয়ে দেয় না। সেদিন রাতেও তটিনী বলে – ‘ঠাকুরপো, তোমার কিছু চাই?’ শিশির একইভাবে বলে, ‘না।’ শিশির মশারির মধ্যে থেকে অপেক্ষা করে কখন বিকট শব্দে দরজাটা বন্ধ হবে। কিন্তু আজ আর দরজা বন্ধ হয় না। শিশির অপেক্ষা করে। তটিনীও কান পেতে অপেক্ষা করে আহ্বানের। ‘সারারাত ভরে দুজন দুঃসাহসী পদধ্বনির কাল গুনবে, সারাটা রাত ধরে দুজন দুঃসাহসী পদক্ষেপের শক্তি সঞ্চয় করবে। সেই প্রতীক্ষা আর শক্তি সঞ্চয়ের সঙ্গে মিশে অস্তিত্বভরা অন্ধকার নিয়ে পৃথিবীটা নিজের মেরুদণ্ডের চারপাশে ঘুরবে। প্রভাত হবে।’
মনের কথাটা কেউই মুখ ফুটে বলতে পারবে না। এভাবে দুজনের দেহ শীতল হবে, হিম হবে, পঞ্চভূতে মিশে যাবে। ‘আর পৃথিবীটা নিজের মেরুদণ্ডের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে, দিনরাত-রাতদিন লিখে-লিখে, মুছে-মুছে, সূর্যের চারদিকে ঘুরে-ঘুরে শীতল হবে। আরো, আরো শীতল।’
দেবেশ রায়ের প্রায় মিথ হয়ে যাওয়া গল্পগুলির মধ্যে অন্যতম ‘দুপুর’ (১৯৫৮)। জ্যৈষ্ঠ মাসের এক দুপুরবেলার গল্প। একটি পরিবারের পাঁচটি মানুষের দুপুরযাপনের গল্প। দুপুর-অনুভবের গল্প। যতীনবাবু আর রেণুবালার তিনজন ছেলেমেয়ে – সতী, মুকুল, মায়া। প্রত্যেকেই গরমের দুপুরকে অনুভব করেছে তাদের মতো করে।
সতীর চোখে ‘দুপুর। টইটম্বুর, টসটস করছে দুপুরটা। মধ্যসমুদ্রের মতো নিস্তরঙ্গ, বিরাট, ব্যাপক; চুম্বক পাহাড়ের মতো আকর্ষক; ফুলশয্যার পুরুষের মতো স্থির, সবল, জ্বলন্ত।’
যতীনবাবুর অনুভবে – ‘অনেক ছেলের মা, শ্লথযৌবন 888sport promo codeর মতো দুপুরটা হাঁফসাচ্ছে। জিভ আর দুপাশের দুটো ছুঁচল দাঁত বের করে দুপুরটা পড়ে আছে মাদি কুকুরের মত।’
রেণুবালার মনে হয় – ‘ছোট্টখাট্ট ভুঁড়িঅলা মাঝবয়েসি এক ভদ্রলোকের মত দুপুরটা ঘুমুচ্ছে। দুপুরে শরীরের শক্তিটা চর্বি হয়ে যাচ্ছে, চর্বিটা হাড়টাকে ঢেকে দিচ্ছে, হাড়ের স্পর্শ আর পাওয়া যায় না, মোটা থলথলে ভুঁড়ি যেন গায়ের সঙ্গে লাগে আর পিছলয়।’
মুকুল ভাবে – ‘কিশোরীর মত দুপুরটা ধীরে-ধীরে ফুলে উঠেছে, ভরে উঠেছে। খুব চেনা, অথচ রহস্যময়। সুন্দর। দূরে দাঁড়িয়ে। মাঠে ফুটবল খেলতে-খেলতে দেখা কোনো দোতলা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ানো মেয়ের মত – দূরের, তাই মনের কাছের, তাই সুন্দর।’
মায়া দেখে – ‘দুপুরটা ফোটোয় দেখা পুরুষকে কল্পনা করার মতই বাস্তব অথচ অলীক। আর আশঙ্কায় দুরুদুরু, সম্ভাবনায় রঙিন, ব্যর্থতায় ধবধবে। বিশ বছরের মোটা মায়া শুয়ে আছে। ঘাম তার সারা শরীরে কোথাও নেই, কিন্তু দেহটার রঙ টকটকে।’
তপ্ত-তীব্র দুপুর বাড়ির প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। দুপুরের মধ্যে লীন তারা। তাদের অনুভব, ইচ্ছে-অনিচ্ছে,
চেতন-অবচেতন সব একাকার করে দিয়েছে দুপুর। গল্পটি শেষ হচ্ছে এভাবে – ‘পাঁচজন আবার পাঁচজনের দিকে চাইল। চেয়েই থাকল। যেন পাঁচজন পাঁচজনকে কিছু একটা বলবে, ঈষদোদ্ভিন্ন পাঁচটি ঠোঁটে তার আভাস। দুপুরটা ধীরে ধীরে বিকেল হয়ে গেল।’ ঘটনা চরিত্র … সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে এই গল্পে উদগ্র হয়ে আছে দুপুর। এই গল্পের প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছে দুপুর। দুপুরের জন্য একটা সিংহাসন এগিয়ে দিয়েছেন লেখক।
মহানগর – কলকাতা বারবার বিষয় হয়ে এসেছে তাঁর গল্পে। তাঁর একটি গল্পেরই নাম ‘কলকাতা ও গোপাল’ (১৯৫৯)। হেরো পরাজিত একটি যুবকের গল্প। বিশাল যৌথ পরিবারের ছেলে গোপালের চাকরি চলে যায় হঠাৎ। তারপর চাকরির সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় শুধু। সারা কলকাতা ঢুঁড়ে ফেলেও কোনো চাকরির ব্যবস্থা করতে পারে না। একদিন গভীর রাতে রাসবিহারী অ্যাভেন্যুর প্রস্রাবখানায় গোপালের চোখে পড়ে ভ্রূণ হত্যার বিজ্ঞাপন। আর সঙ্গে সঙ্গে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আত্মহত্যা করার। গলায় দেবার দড়ি, ইঁদুর-মারা বিষের জন্য ঘুরে বেড়ায়। তারপর সন্ধ্যাবেলা ক্লান্ত-শ্রান্ত-হতাশ-পরাজিত গোপাল কসবার লেভেল ক্রসিংয়ের ওভারব্রিজে উঠে পড়ে।
এত ওপর থেকে লোক আর গাড়িঘোড়ার মাঝখান দিয়ে কালকের রাতের সেই পেচ্ছাবখানাটা হঠাৎ নজরে পড়ে। ‘কলকাতা, কলকাতা। হঠাৎ ঘুমটা যেন আরও পাকিয়ে ধরল সারা শরীরটাকে, মনটাকে। কলকাতা। আমি একা নই। আমি কলকাতার নই। প্রায় নিদ্রিত গোপাল রেলিঙ ধরে দাঁড়াতেই ট্রেনটা এসে গেল। ওভার ব্রিজের রেলিঙ ধরে গোপাল ঝুঁকে যায়, যেন ঘুমোতে গড়িয়ে পড়ে। ওভারব্রিজ আর মাটির মাঝখানের শূন্যতার মধ্যে পড়ে যাবার ঠিক পূর্বের হ্রস্বতম মুহূর্তে সে ভাবতে চেয়েছিল – ‘আমার মরার কোনো মানেই হয় না।’ আর, এই বাক্যটা পুরোপুরি উচ্চারণে ভাবতে পারার আগেই ইঞ্জিনের ধাক্কায় সে চাকার তলায় চলে গিয়েছিল।’ গোপাল পঞ্চাশের দশকের কলকাতার বেকার যুবকদের প্রতিনিধি। কলকাতা গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে এখানে তার সকল নাগরিক চরিত্র নিয়ে। পরে ‘কলকাতা’ (১৯৬৩) নামে একটি গল্প লিখেছিলেন দেবেশ রায়।
দেবেশ রায় প্রথম থেকেই সচেতন ছিলেন গল্পের আঙ্গিক এবং উপস্থাপনভঙ্গি সম্পর্কে। ১৯৫৯-এ বিমল করের উদ্যোগে ‘ছোটগল্প : নতুন রীতি’ নামে যে গল্প- আন্দোলন হয়েছিল একসময় তার অনুরাগী ছিলেন। যদিও কিছুদিন পরে বেরিয়ে এসেছিলেন এই আন্দোলন থেকে। গল্পের বিষয়কে তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন সমাজভিত্তিতে। তিনি মনে করতেন এটা একজন লেখকের দায়। ১৯৭৬ সালে লেখা ‘বাংলা ছোটগল্পের আধুনিকতা’ 888sport liveে তিনি লিখছেন –
‘গল্প-888sport alternative linkের, কথা888sport live footballের, প্রকরণগত শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠার দায় আজকের আধুনিক লেখক হিসেবে আমাদের ওপর বর্তায়। গল্প-888sport alternative link খবরের কাগজের গ্রন্থরূপ নয়, গল্প-888sport alternative link শব্দাশ্রিত 888sport live chat। আর-সব 888sport live chatের মতই তাই এই 888sport live chatের ক্ষেত্রেও এই প্রাথমিক উপকরণের ওপর 888sport live chatীর ক্ষমতার প্রতিষ্ঠার দ্বারাই আধুনিক কথা888sport live footballিকের প্রাথমিক বিচার হবে। আধুনিক ভাষা ছাড়া আধুনিক গল্প-888sport alternative link রচনা সম্ভব নয়। যে-লেখক ভাষাসচেতন নন, তিনি ভাল গল্পকার হলেও আধুনিক গল্পকার নন। কিন্তু সচেতনভাবেই ত তৈরি করে তোলা যায় ভাষার এমন এক ছদ্ম-আধুনিকতা, যাতে গুরুবাদ, নিয়তিবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদের কথা লেখা যায়, বা আউল-বাউলদের লোকায়ত ভঙ্গিতে যৌনবিষয়কে সামাজিক সমর্থন দেওয়া যায়, বা 888sport app download apkয় ধ্যেয় সৌন্দর্যবোধ বা পাপবোধকে নতুন চেহারায় নেওয়া যায়। আধুনিক লেখকের ভাষাসচেতনতা আর আধুনিক লেখকের ভাষাকৌশলের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য।’ (ভূমিকা, ‘দেবেশ রায়ের ছোটগল্প’, প্রতিক্ষণ, ১৯৮৮)
888sport live footballের সেই আধুনিকতাও তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন মার্কসবাদের মধ্যে। ওই 888sport liveের শেষে তিনি বলছেন – ‘এই বর্তমান যুগের মর্ম বুঝতে, মার্কসবাদের 888sport apk আমাদের দৈবনেত্রের উন্মীলন ঘটায়। আমাদের এই আধুনিকতার গূঢ় তাৎপর্য ধরা পড়ে। আমার কাছে তাই মার্কসবাদ বিনা কোনো আধুনিকতা নেই।’
মার্কসবাদী দেবেশ রায় সক্রিয় রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন ছাত্রাবস্থা থেকে। যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন দীর্ঘদিন। জলপাইগুড়ি জেলার কমিউনিস্ট পার্টির জেলা-সম্পাদকও ছিলেন তিনি। রাজনীতি করতে গিয়ে শিখেছিলেন রাজবংশী ভাষা, যা পরবর্তীকালে তাঁর লেখালেখিতে কাজে লেগেছে। ছোটবেলা থেকে সমাজ-রাজনৈতিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেন একাই। এই প্রসঙ্গে শ্রদ্ধেয় শঙ্খ ঘোষের একটা অভিজ্ঞতার উল্লেখ করা যেতে পারে। জলপাইগুড়িতে একবার প্রবল বন্যা হয়েছিল। ত্রাণ ছাড়া আর কোনো খাবার ছিল না। সেই ত্রাণও বন্ধ হয়ে গেল। শঙ্খবাবু তখন ছিলেন জলপাইগুড়িতে। তিনি লিখছেন – ‘সেই অবস্থার মধ্যে হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম, ত্রাণ-প্রসঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েছে দেবেশ, বলছে : ‘মারুন এইখানে, যদি সাহস থাকে।’ দেবেশ যাকে রাজনৈতিক দৈনন্দিনতা বলে জানে, তার টানেই তার এই ছুটে যাওয়া, এই বন্দুকের সামনে দাঁড়ানো। একা দেবেশ? হ্যাঁ, সে-মুহূর্তে একাই।’ (পরিচয়, জুন ২০২০) আমৃত্যু তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। এককভাবেই গর্জে উঠেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। খবরের কাগজে যে উত্তর-সম্পাদকীয় স্তম্ভগুলি লিখতেন সেখানেও প্রকট হয়ে থাকত প্রতিবাদ। ক্ষমতার বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ করে গেছেন তিনি। এই প্রতিবাদ তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতার সাক্ষ্য দেয়।
রাজনীতি করতে গিয়েই তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছিল ভারতবর্ষের মানবিক মানচিত্র। তথাকথিত প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাপনকে নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন রাজনীতির সূত্রেই। আর সেই জীবনই বারবার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। তাঁর গল্পে, তাঁর 888sport alternative linkে।
দেবেশ রায়ের প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত 888sport alternative link যযাতী (১৯৭৩)। যদিও প্রথম সচেতনভাবে লেখা গুরুত্বপূর্ণ 888sport alternative link মানুষ খুন করে কেন (১৯৭৬); 888sport alternative linkটি লিখেছিলেন ১৯৭০-৭১-এ। তারপর আপাতত শান্তি কল্যাণ হয়ে আছে (১৯৭৩), স্বামী-স্ত্রী (১৯৭৮), মফস্বলী বৃত্তান্ত (১৯৮০), বেঁচে বর্তে থাকা (১৯৮৪), সহমরণ (১৯৮৮), তিস্তাপারের বৃত্তান্ত (১৯৮৮), হনন আত্মহনন (১৯৯০), জীবন চরিতে প্রবেশ (১৯৯০), ইতিহাসের লোকজন, আত্মীয় বৃত্তান্ত, সময় অসময়ের বৃত্তান্ত (১৯৯৩), লগন গান্ধার (১৯৯৫), তিস্তা পুরাণ (২০০০), মারবেতালের পুরাণ (২০০৪), অতল তলের জলে (২০০৭), খরার 888sport world cup rate, 888sport live chatায়নের 888sport world cup rate, দাঙ্গার 888sport world cup rate, একটি ইচ্ছামৃত্যুর 888sport world cup rate, বরিশালের যোগেন মণ্ডল (২০১০) ইত্যাদি।
লক্ষ করার বিষয় – 888sport alternative linkের নামকরণে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে ‘বৃত্তান্ত’ এবং ‘888sport world cup rate’ শব্দটি। একবার ‘পুরাণ’ শব্দের ব্যবহারও করেছেন। ‘কথা’ শব্দের ব্যবহারও ছিল। আত্মীয় বৃত্তান্ত 888sport alternative linkটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল আত্মীয় কথা নামে। তিনি সচেতনভাবে আখ্যানের নামকরণের ক্ষেত্রে এই শব্দগুলির ব্যবহার করেছেন। প্রথম থেকেই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বাংলা 888sport alternative linkের প্রচলিত ইউরোপীয় মডেল। তিনি চাইতেন দেশজ আখ্যান রচিত হওয়া উচিত দেশীয় মডেলে, যে-মডেলে মধ্যযুগে বাংলা 888sport live football রচিত হয়েছে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে এখনো পর্যন্ত প্রচলিত বাংলা 888sport alternative linkের ধাঁচটাকে ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাইলেও তো সবসময় তা পারা যায় না। একজন আধুনিক লেখকের এই সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি বারবার। তিনি শুধুমাত্র একজন 888sport live footballিক ছিলেন না, ছিলেন 888sport live footballতাত্ত্বিক, 888sport live footballচিন্তক। 888sport live footballনির্ভর তথ্যসমৃদ্ধ এবং তাত্ত্বিক 888sport live লিখেছেন প্রচুর। 888sport alternative link নিয়ে, 888sport alternative linkের নতুন ধরনের খোঁজে, 888sport live chatের প্রত্যহে, উপনিবেশের সমাজ ও বাংলা সাংবাদিক গদ্য ইত্যাদি গ্রন্থে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত 888sport liveে 888sport live footballের এই সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনা করেছেন 888sport alternative linkের দেশজ মডেল নিয়ে। দেবেশ রায়ের একটি 888sport liveের অংশবিশেষ প্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ধৃত করছি –
‘ইয়োরোপীয় 888sport alternative linkের মডেল আমাদের স্বাদেশিক অখণ্ডতাকে একটা ছাঁচে ফেললেও সেই অখণ্ডতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয় আর আমাদের সামাজিক বহুবৈচিত্র্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণাও ধ্বংস করে। ইয়োরোপীয় সেই মডেল আমাদের সমাজের মানুষ ও সেই মানুষের জীবন বুঝে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যখন আমাদের আদিবাসী জীবন নিয়ে 888sport alternative link লিখি, তখন সেও হয়ে দাঁড়ায় ইয়োরোপীয় মডেলের নৃতাত্ত্বিক 888sport alternative link, সেও সাহেবরা একরকম শিখিয়েছিল। ভারতের প্রধান মানবধারার অন্তর্গত হয়ে সেই আদিবাসী আসে না।
888sport alternative linkের ফর্ম বা মডেল বলব কাকে? ঔপন্যাসিকের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে যা 888sport alternative linkে পরিণত করে সেটাই ত ফর্ম। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে গল্প-888sport alternative link লেখার নানা চেষ্টায় বারবার হয়ত এখানেই ঠেকে গেছি। ঠেকে যে গেছি তাও হয়ত সব সময় বুঝিনি, বুঝি না। এখন যখন নিজের অতীতটাকে একসঙ্গে দেখার মত চড়াইয়ের দিকে চলছি আর সেই চড়াই থেকে যতই চোখের সামনে বাংলা 888sport alternative linkের সমতল বিস্তৃততর হচ্ছে, ততই অসহায়ও ক্ষমতাহীন ক্ষোভে বুঝতে পারছি – ইয়োরোপীয় মডেলে আমাদের পরিত্রাণ নেই। আমি আগেও বলেছি, কাহিনী বলার একটা নিজস্ব ধরন আমাদের ছিল পাঁচালি, কথকতা, কীর্তন আর কবিগান। …
আমি চাইলেও ত এখন আর মঙ্গলকাব্য লিখতে পারব না, কথকতা লিখতে পারব না। মঙ্গলকাব্য আর কথকতার সঙ্গে আধুনিকতার সব সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। কার্পেন্তিয়ারের 888sport alternative linkের আদিবাসীরা জীবনের সঙ্গে আর তাদের বাসভূমির সঙ্গে যে সংরাগে বাঁধা ছিল, শেষ আঠারো শতকে কলোনির শহর কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি সে সংরাগে তার বাসভূমির সঙ্গে বাঁধা ছিল না। প্রথম থেকেই ত সে নিজ বাসভূমে পরবাসী, প্রথম থেকেই তার ঘর হইতে আঙিনা বিদেশ। সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয়ে সেই পরাশ্রয়ী অস্তিত্বের লোভ এত প্রবল আর ক্ষমতা এত কম যে লোক888sport live chatকেও সেই শহুরে জীবন গ্রাস করে নিয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষের মত দেশে লোক-জীবনও এত বিচিত্র, জটিল ও বিস্তৃত যে সাম্রাজ্যবাদের আশ্রিত মধ্যবিত্তও তা শেষ করে দিতে পারেনি। এই সেদিনও ত মীরা মুখোপাধ্যায় মধ্য-প্রদেশের বস্তার থেকে ডোকরা 888sport live chatকে উদ্ধার করে আনলেন এক নতুন ভাস্কর্যের প্রধান ভিত হিসেবে।
আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি শুধু একজন ঔপন্যাসিকের 888sport live chat সংকটের কথা ভাবছি – এমন কোনো ঔপন্যাসিক যে আজ বা আগামীকাল 888sport alternative linkের এমন এক ভাষার অধিকার চাইতে পারে যে ভাষায় তার কথা সত্য মনে হবে, বানানো মনে হবে না। আমি এমন একজন ঔপন্যাসিকের 888sport live chat-সংকটের কথা ভাবছি যে আজ বা আগামীকাল চাইতে পারে সে যে-বাক্যটি রচনা করবে আর সেই বাক্যের ভিতরে যে অর্থটি ভরে দিতে চাইবে তার মাঝখানে একমাত্র সংযোজক হিশেবে সেই থাকবে, লেখক হিশেবে, কথক হিশেবে; সে কোনো কলোনির প্রজা হিশেবে কলোনির কোনো শিক্ষা তার বাক্যের ভিতরে ভরে দেবে না। আর এমন একজন ঔপন্যাসিকের কথা ভাবছি যে আজ বা আগামীকাল চাইতে পারে – সে স্বাধীন, তার লেখা স্বাধীন ও সেই লেখার নিহিত অর্থও স্বাধীন।’ (‘888sport alternative link ভাবনা’, এবং মুশায়েরা, মার্চ ১৯৯৭)
উদ্ধৃতি দীর্ঘ হলো। কিন্তু দেবেশ রায়ের 888sport alternative linkভাবনা বুঝতে সুবিধা হবে এই অংশটুকু পড়লে। তাঁর লেখায় ‘বৃত্তান্ত’ ‘888sport world cup rate’ ‘পুরাণ’ ‘কথা’ শব্দগুলি কেন ব্যবহৃত হয়েছে বোঝা যাবে এখান থেকেই। তিনি নিজের আখ্যানের পথ নিজেই অনুসন্ধান করতে চেয়েছিলেন। নতুন এক আখ্যান রচনা করতে চেয়েছিলেন, যা আসলে বৃত্তান্ত বা 888sport world cup rate বা কথা, যা আসলে আমাদের দেশজ কথকতার সঙ্গে মেলে। তিনি যতটা না ঔপন্যাসিক তার থেকে তিনি আখ্যানকার, কথাকার, কথা888sport live chatী। কথক তিনি। ইউরোপীয় ঘরানার ঔপন্যাসিক নন, তিনি বাংলার ঐতিহ্যগত কথক। কথোয়াল।
আমাদের দেশজ পুরাণ মঙ্গলকাব্য মহাকাব্যের মতো বড়মাপের ক্যানভাসে তিনি ধরতে চান তাঁর আখ্যান। সমাজ-রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জীবনাভিজ্ঞতার আখ্যান তাঁর 888sport alternative link। তা তো বৃত্তান্ত বা 888sport world cup rate হবেই। ঘটনার মধ্যে ছোট ছোট অজস্র ঘটনা। কাহিনির মধ্যে উপকাহিনি। পর্ব-পর্বান্তরে বিন্যস্ত করেন আখ্যান। শেষ পর্যন্ত বিষয় এবং আঙ্গিকে তাঁর 888sport alternative link একটা মহাকাব্যিক মাত্রা পেয়ে যায়।
দেবেশ রায় সময়ের কাছে দায়বদ্ধ মনে করেন নিজেকে। তাঁর আখ্যানে সমকালকে ধরতে চান। কিন্তু ব্যক্তিনিরপেক্ষ সময় নয়। পূর্বোক্ত ‘888sport alternative link ভাবনা’য় তিনি বলেছেন, ‘888sport alternative linkের অন্বিষ্ট সমাজ নয়, সময় নয়, ইতিহাসও নয় 888sport alternative linkের অন্বিষ্ট ব্যক্তিমানুষ। এই সমাজ, সময় আর ইতিহাস ব্যক্তিমানুষের চরিত্রও মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক জটিল করে দেয়। ফলে মানুষের সংজ্ঞা বারবারই নতুন করে খুঁজতে হয়। তাই মানুষকে খুঁজতে গিয়ে এই সমাজ, সময় আর ইতিহাসকেও খুঁজতে হয়। সমাজ, সময় আর ইতিহাসধৃত ব্যক্তিমানুষ হচ্ছে 888sport alternative linkের অন্বিষ্ট।’
একদিকে ব্যক্তিমানুষ আর একদিকে সময় – এই দুয়ের মধ্যে সংগতি আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন তিনি তাঁর মহাকাব্যিক আখ্যানগুলির মধ্য দিয়ে। তাই তাঁর চরিত্ররা ব্যক্তি মানুষ হয়ে থাকেনি। যখন ঐতিহাসিক কোনো চরিত্রকে নিয়ে তিনি আখ্যান রচনা করেন, তখন সেই ব্যক্তি মানুষও অন্বিত হয়ে থাকে সময়ের কাছে। বরিশালের যোগেন মণ্ডলেও (১৯১০) যোগেন সময়-নিরপেক্ষ একক কোনো মানুষ হয়ে থাকেনি। যোগেন মণ্ডল ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আখ্যান রচনার আগে রীতিমতো গবেষণা করেছিলেন লেখক। স্বাধীনতা-আন্দোলন, মুসলিম লীগ, দেশভাগ ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। আখ্যানের মধ্যেও বারবার এসেছে ঐতিহাসিক তথ্য। যদিও ইতিহাসকে নিখুঁতভাবে অনুসরণ করেননি। তিনি ইতিহাস রচনা করেননি। যোগেন মণ্ডলের জীবনীও নয়। তিনি লিখেছিলেন আখ্যান। এটি কোনো মানুষের জীবনকাহিনি হয়ে থাকেনি, সমগ্র দেশ-কালের কাহিনি হয়ে উঠেছে। যোগেন মণ্ডল একক কোনো ব্যক্তি মানুষ নয়। শূদ্র যোগেন মণ্ডলের পাকিস্তানযাত্রায় 888sport alternative link শেষ। তাতেই প্রায় বারোশো পৃষ্ঠা। আরো বড় হতে পারত। হঠাৎই থামিয়ে দিয়েছেন। শঙ্খবাবুকে বইটি দিতে গিয়ে লেখক বলেওছিলেন – ‘আরো বড় হবার কথা, কিন্তু থামিয়ে দিতে হলো।’ পূর্বোক্ত লেখায় শঙ্খবাবু ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন। এই মহাগ্রন্থ সম্পর্কে তিনি বলেছেন – ‘অনেকদিন আগে দেবেশ বলেছিল : ‘একজন ঔপন্যাসিক লিখতে চাইছে ব্যক্তির ঐতিহাসিকতা। ব্যক্তির ইতিহাস মানে ব্যক্তির জীবন নয়। সেই জীবন যে-ইতিহাসের অংশ সেই ইতিহাসে সেই ব্যক্তিকে স্থাপন করাই 888sport alternative linkের কাজ।’ এই 888sport alternative linkে সেই কাজটাই করেছেন দেবেশ। 888sport alternative link শেষ হচ্ছে এভাবে – ‘যোগেন নিজেকে দেখতে চায়, ভারতবর্ষ নামে হাজার-হাজার বছরের ধ্যানের একমাত্র প্রতিনিধি সে, এক শূদ্র। চলেছে পাকিস্তানে। সেই ধ্যানের স্বদেশকে সত্য রাখতে। শূদ্র ছাড়া সে-দায় আর কে নেবে?’
কাহিনির মধ্যে একটা চলমানতা আছে। তা শেষ হওয়ার নয়। যেমন শেষ হয়ে যায় না আমাদের ঐতিহ্যগত লোকায়ত বৃত্তান্ত। স্বাধীনতা-আন্দোলন পর্বের গুরুত্বপূর্ণ উপেক্ষিত অংশ এই আখ্যানে প্রতিফলিত হয়েছে।
শুধু এই একটি 888sport alternative link নয়, তাঁর অধিকাংশ 888sport alternative linkে আছে এই চলমানতা। তিস্তাপারের বৃত্তান্ত সম্পর্কেও লেখক বলেছিলেন, ‘শেষ না করলে এ বৃত্তান্ত চলতেই থাকবে।’ তাঁর অধিকাংশ আখ্যানকে মহাআখ্যানের মর্যাদা দেওয়া যায়। বরিশালের যোগেন মণ্ডলের মতো বড় না-হলেও তাঁর বহু 888sport alternative link আয়তনের দিক থেকেও বেশ বড়। সময় অসময়ের বৃত্তান্ত 888sport alternative linkে সাতটি অধ্যায় ছাড়াও আছে ‘গ্রন্থবন্ধন’ এবং ‘গ্রন্থমুক্তি’ নামে পৃথক দুটি অংশ। আশির দশকের খবরের কাগজে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টিংয়ের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে এই আশ্চর্য পুরাণ-আখ্যান। এখানেও মহাসময় প্রকট হয়ে আছে। তাঁর আখ্যান সময়-সমাজ এবং পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি কখনো।
তিস্তাপুরাণও বৃহৎ আয়তনের আখ্যান। শেষ, আর এক শেষ, আরম্ভ, আরম্ভের পর, আর এক আরম্ভ, শেষান্তর এবং কথান্তর এই সাতটি পর্বে বিন্যস্ত এই আধুনিক পুরাণ। উত্তরবঙ্গের নদ-নদী, আরণ্যাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে রচিত এই আখ্যানেও এসেছে রাজবংশী জনজাতির কথা।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে তিস্তাপারের বৃত্তান্ত (১৯৮৮) 888sport alternative linkটির। ১৯৯০-এ 888sport live football একাদেমি 888sport app download bdপ্রাপ্ত এই 888sport alternative linkটি তো বাংলা 888sport live footballের মাইলস্টোন। ১৯৮০ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় আলাদা আলাদাভাবে এই আখ্যানের পর্বগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। আদি, বন, চর, বৃক্ষ, মিছিল এবং অন্ত্য – মোট ছটি পর্বে, বহু উপ-পর্বে, মোট দুশো পনেরোটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। উত্তরবঙ্গের তিস্তা এবং তিস্তা-তীরবর্তী উপেক্ষিত-প্রান্তিক মানুষদের প্রাত্যহিক যাপনকে কেন্দ্র করে রচিত এই আখ্যান। এই অঞ্চলের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি সব এসেছে এই মহাকাব্যিক আখ্যানে। এসেছে এই অঞ্চলের লোক-ইতিহাসও। তিস্তা তো শুধু উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক মানচিত্রের অংশ নয়, সে উত্তরবঙ্গের মানবিক মানচিত্রেও স্থায়ী দাগ কেটে দিয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতিতে তিস্তার অনিবার্য প্রভাব।
কৃষকদের সঙ্গে জোতদারদের দ্বন্দ্ব, রাজবংশীদের সমাজ-মানস, জল্পেশ মন্দির, শ্রীদেবীর উদ্দীপক নাচের অনুষ্ঠান, তিস্তা ব্যারেজকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের তথাকথিত উন্নয়ন এবং নিম্নবর্গীয় কৃষকদের সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া – সব নিয়েই এই মহাআখ্যান। সার্ভে পার্টি গয়ানাথ জোতদারের জোতজমিতে জরিপ করে। গয়ানাথ ডুয়ার্সের জমি-জঙ্গল দখলে রাখতে চায়। দখলে রাখতে চায় নদী-মাটি-গাছপালাও। একই রকমভাবে চা-বাগানের মালিকেরাও দখল নিতে চায়। অন্যদিকে তিস্তাপারের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের অসহায়তা বাড়ে।
আর সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বাঘারু। শ্রী ফরেস্টার চন্দ্র বাঘারু বর্মন। তার বাঁ পাছা আর ডান পিঠে বাঘের থাবার দাগ। পরনে তার নেংটি। শালগাছের মতো ঢ্যাঙা চেহারা। এখানকার আদিম মানুষ সে। তার জন্ম হয়েছিল গভীর ফরেস্টে। গয়ানাথ জোতদারের মানষি বাঘারু। জোতদার আর উন্নয়নের আগ্রাসনে তাকে উৎপাটিত হতে হয়। তার কোনো মিছিল নেই। পার্টি নেই। নদীও নেই। সে বন জঙ্গল চা-বাগান পেরিয়ে ডায়নার চরে উপস্থিত হয়েছে। তার পথপরিক্রমার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন লেখক ‘বাঘারুর নির্বাসন’ উপপর্বে। বহমান তিস্তার বর্ণনায়ও এসেছে চারপাশের অঞ্চলের চিত্র।
এই আখ্যানেও এসেছে রাজনীতি। আর সেই রাজনীতি মূলত তিস্তা ব্যারেজকে কেন্দ্র করে। উত্তরখণ্ড আন্দোলনসহ নানান বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির কথা আছে। সরকার চেয়েছিল এইসব আন্দোলনকে অগ্রাহ্য করে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাঘারু উন্নয়নকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে হেঁটে গেছে জঙ্গলের দিকে।
দেবেশ রায়ের বহু লেখার কেন্দ্রে আছে তিস্তা। একাধিক 888sport alternative linkের নামের মধ্যে দেখা গেছে তিস্তা শব্দের ব্যবহার। নামের মধ্যে তিস্তা না-থাকা বহু 888sport alternative linkের কেন্দ্রেও আছে তিস্তা। বহু গল্পও লিখেছেন তিস্তা অঞ্চলকে নিয়ে। গল্পের নামের মধ্যেও আছে তিস্তা শব্দের ব্যবহার। যেমন ‘তিস্তা দেশ’, ‘তিস্তাপারের মানুষ’ ইত্যাদি। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন তিস্তাপারের মানুষ। তিস্তাকে তিনি ধারণ করেছিলেন অস্থি-মজ্জায়। কলকাতাবাসী হওয়ার পরেও নিজেকে জলপাইগুড়ির মানুষ ভাবতে ভালোবাসতেন। ফলে তাঁর জীবনে এবং লেখায় তিস্তা এবং তিস্তাপার অমোঘ হয়ে থেকেছে চিরকাল। শুধু 888sport live footballিক নন, বাংলা 888sport live footballে সম্পাদক দেবেশ রায়ের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি সম্পাদনাকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। কলেজের বার্ষিক পত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন তিনি। পঞ্চাশের বছরগুলিতে উত্তরবাংলা এবং ষাটের দশকের প্রথমদিকে উত্তরদেশ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। পরিচয়-সম্পাদক বন্ধু দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকালমৃত্যুর পরে ১৯৭৯ সালে পরিচয় সম্পাদনার দায়িত্ব এসে পড়ে দেবেশ রায়ের ওপর। ১৯৮৫ পর্যন্ত পরিচয় পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পাদনায় অসামান্য কয়েকটি 888sport free bet প্রকাশিত হয়েছিল। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য ‘দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় 888sport app download for android 888sport free bet’, ‘বিষ্ণু দে সপ্ততিবর্ষ পূর্তি 888sport free bet’, ‘বিষ্ণু দে 888sport free bet’, ‘গোপাল হালদার সম্মান 888sport free bet’, ‘পরিচয়ের সুবর্ণজয়ন্তী সংকলন’, ‘পিকাসো 888sport free bet’, ‘মার্কস 888sport free bet’, ‘সুশোভন সরকার 888sport free bet’, ‘বিশেষ গল্প 888sport free bet’ ইত্যাদি। এই পত্রিকায় প্রমীলা মেহতা ছদ্মনামে 888sport live লিখতেন দেবেশ। 888sport app download apk latest versionও প্রকাশিত হয়েছিল ছদ্মনামে।
১৯৮৩ সালে প্রতিক্ষণে যুক্ত হন। ১৯৮৪-৮৫-তে সম্পাদনা করেন ইংরেজি Point Counter Point। ২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সেতুবন্ধ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তরুণদের নতুন নতুন লেখায় ভরিয়ে তুলতেন সেতুবন্ধের পাতা। ২০২০-এর ফেব্রুয়ারিতে তাঁর সম্পাদনায় শেষবারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল পত্রিকাটি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫-এ কলকাতার ‘Centre for Studies in Social Science’-এ যোগ দিয়েছিলেন গবেষণাকর্মের জন্য। বহু গবেষণাগ্রন্থের প্রণেতা দেবেশ রায়। তাঁর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ এবং 888sport liveগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি – সময় সমকাল, ব্যক্তিগত ও গোপন সব ফ্যাসিবাদ নিয়ে একটি বই, অলৌকিকতার টানে : রবীন্দ্রনাথের গান, রবীন্দ্রনাথ ও তার আদি গদ্য, সময় সমকাল, 888sport alternative link নিয়ে, 888sport alternative linkের বিবিধ সংকট, 888sport alternative linkের নতুন ধরনের খোঁজে, 888sport live chatের প্রত্যহে, উপনিবেশের সমাজ ও বাংলা সাংবাদিক গদ্য, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : নিরন্তর মানুষ, আঠার শতকের বাংলা গদ্য, উপনিবেশের সমাজ ও বাংলা সাংবাদিক গদ্য, বিপরীতের বাস্তব ও রবীন্দ্রনাথের গল্প, ব্যক্তিপুরুষেরা ইত্যাদি।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লেখা শ্লথ হয়ে যায়নি। গল্পে-আখ্যানে-888sport liveে নিরন্তর তিনি নিজেকে ভেঙেছেন শেষদিন পর্যন্ত। শরীর দুর্বল হলেও তাঁর চিন্তা-চেতনা দুর্বল হয়ে যায়নি। তাই মৃত্যুর কিছুদিন আগে লেখা রচনাও ছিল ধারালো। ঝকঝকে। চিন্তক-888sport live footballতাত্ত্বিক চিরনবীন 888sport live footballিক দেবেশ রায় আমৃত্যু ছিলেন সমাজ-সময়-888sport live football এবং রাজনীতি সচেতন।
আজ তিনি নেই। কিন্তু বাঙালি পাঠকদের কাছে থেকে গেছে তাঁর অজস্র রচনা; আর অনুজ লেখকদের কাছে রয়েছে প্রিয় ‘দেবেশদা’র সঙ্গে অজস্র আড্ডার 888sport sign up bonus।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.