স্মিতবিভা গৌরী আইয়ুব

‘পৃথিবীর অনেক ঋতুর জল-বায়ু, রৌদ্র-ছায়া অতিক্রম করে একটি সুনির্দিষ্ট পথ ধরে তিনি হেঁটে আসছিলেন। স্মারক স্তম্ভে কোনো অমর অক্ষর লেখা হল কিনা, সেদিকে তাকানোর মতো অবকাশ কখনও পাননি।’

  • কামাল হোসেন, ‘গৌরী আইয়ুব, এক অনন্য ব্যক্তিত্ব’, চতুরঙ্গ, শ্রাবণ-আশ্বিন ১৪০৫
    888sport sign up bonusচারণে গৌরী আইয়ুব বারবার নিজেকে সাধারণ বলে উল্লেখ করেছেন। অসাধারণ হওয়ার তাঁর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু তাঁর নিকটজনেরা প্রায় সবাই তাঁদের 888sport sign up bonusকথায় গৌরীর অসাধারণ রূপটাই তুলে ধরেছেন।
    গৌরী আইয়ুব ছিলেন গৌরী দত্ত। জন্মেছিলেন বাবার কর্মস্থল পাটনায় ১৩ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৩১-এ। বাবা ধীরেন্দ্রমোহন দত্ত, মা নিরুপমা দত্ত। বাবা দর্শনের খ্যাতনামা অধ্যাপক ও পণ্ডিত ব্যক্তি। গৌরী শামিত্মনিকেতনে দর্শনে অনার্স পড়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে শামিত্মনিকেতনে প্রথম 888sport live footballমেলা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে সার্বক্ষণিক কর্মী ছিলেন তিনি। তাঁর শ্রম ও স্বভাবের কমনীয়তার জন্য তখনই অনেক গুণীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন গৌরী আজীবন সমাজ-উন্নয়নের কাজে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শরণার্থীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য মৈত্রেয়ী দেবীর সহযোগে ‘খেলাঘর’ নামে এক ব্যতিক্রমী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সৃজনশীল ও মননশীল 888sport live footballে তাঁর অবদানের জন্য সমাদৃত হয়েছিলেন। তাঁর 888sport liveের বিষয়বৈচিত্র্য উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত শায়েরদের রচনা এবং ভিন্নভাষার গল্প ও 888sport slot gameকাহিনি 888sport app download apk latest version করে সুনাম অর্জন করেন।
    গৌরী আইয়ুবের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৮১ সালে কলকাতায় র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্টদের একটি সভায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন শিবনারায়ণ রায়, গৌরকিশোর ঘোষ, নিরঞ্জন হালদার, হোসেনুর রহমান, গৌরী আইয়ুব প্রমুখ।
    নিরঞ্জনদা বা গৌরদা কেউ একজন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন গৌরী আইয়ুবের সঙ্গে। খুব মিষ্টি হেসে পরিচিত হলেন আমাদের সঙ্গে এবং তাঁর বাড়ি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। আমরা ওঁর বাড়ির কাছেই পার্ক সার্কাসের ব্রাইট স্ট্রিটে থাকি, তবু যাওয়া হয়নি। আবু সয়ীদ আইয়ুবের সঙ্গে পরিচিত হতে যাব, সে-সাহসটুকু সঞ্চয় করতে পারিনি। এমএ পড়ার সময়ে রবীন্দ্রনাথ পড়তে গিয়ে আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮) বইটির মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। পরে ভালো লেগেছিল তাই পান্থজনের সখা (১৯৭৭) ও পথের শেষ কোথায় (১৯৭৭) বারবার পড়েছি। মনে পড়ে, একদিন পার্ক সার্কাসে রাসত্মা পার হচ্ছি, একটা জিপ এসে আমাদের পাশে থামলো, গৌরীদি আঙুল দিয়ে ওঁর বাড়ির রাসত্মাটা দেখিয়ে দিলেন। তারপরেও কেন সংকোচ কাটেনি জানি না।
    অথচ আমার শিক্ষক হায়াৎ মামুদ, যাঁর সঙ্গে তখন আমাদের ঘনঘন ওঠা-বসা, ওঁর আত্মীয় হোসেনুর রহমান যিনি আমাদের পাড়াতেই থাকতেন, ওঁরা প্রায়ই যেতেন। হোসেনুর রহমানের স্ত্রী পূর্ণিমা রহমান মাঝে মাঝে আইয়ুবকে গান শোনাতেন। ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রয়াণ ঘটে। তখনো আমরা পার্ক সার্কাসে থাকি। এখন আফসোস হয় কেন তাঁকে একবার দেখলাম না।
    কবি শামসুর রাহমান কলকাতায় এলেন আইসিসিআরের অতিথি হয়ে। ফোনে যোগাযোগ করে আমাদের নিয়ে কবি বিষ্ণু দে ও আবু সয়ীদ আইয়ুবের বাড়ি গেলেন। দুজনেই তখন সদ্যপ্রয়াত। আবু সয়ীদ আইয়ুবের বাড়ি যাওয়ার পথে শামসুর রাহমান আমাকে বলেন, ১৯৫৩ সালে শামিত্মনিকেতনে 888sport live footballমেলায় ওঁরা যখন এসেছিলেন, মেলার প্রতিনিধি গৌরী তখন অসাধারণ সুন্দরী। বাড়িতে পৌঁছে স্ট্যান্ডে আটকানো গৌরী আইয়ুবের তরুণী বয়সের ছবি দেখিয়ে বললেন এই ছবির মতো। গৌরীদির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলে উনি ছোট্ট উত্তর দিয়েছিলেন, আমি ওদের চিনি। স্নিগ্ধশ্রী গৌরী শামসুর রাহমানের সামনে কোনো শোক দেখালেন না। দুজনে মৃদুস্বরে কথা বলছিলেন। নানা কথার ফাঁকে গৌরীদির একটা কথা কানে লাগল। তিনি মৃদুস্বরেই বলেছিলেন, একটা সময় এই বাড়িতে থাকার জায়গা হতো না, এখন ফাঁকা হয়ে গেল বাড়িটা। তাঁর কণ্ঠস্বর ও বলার ভঙ্গিতে এমন একটা বিষণ্ণতা ছিল যা উপস্থিত সবাইকে স্পর্শ করে।
    আমরা দ্বিতীয়বার গোলাম গৌরী আইয়ুবের বাড়িতে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গে। স্যার এসেছেন কলকাতায় গবেষণার কাজে। উঠেছেন আইসিসিএসআরের অতিথি-ভবনে, স্যারের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল আমাদের পাশের ঘরটিতে। গৌরী আইয়ুব তাঁর বাড়িতে একটা ঘরোয়া সভায় স্যারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন 888sport appsের সে-সময়ের সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলার জন্য। সময়টা ছিল জেনারেল এরশাদের শাসনামল। 888sport appsের পরিস্থিতি নিয়ে স্যার চমৎকার বক্তব্য রেখেছিলেন। শ্রোতারা আগ্রহভরে শুনেছিলেন এবং তাঁদের ঔৎসুক্য মেটানোর জন্য কিছু প্রশ্ন করেছিলেন।
    গৌরী আইয়ুবের 888sport sign up bonusকথার কিছু কিছু অংশ চতুরঙ্গে (১৪০৪ ও ১৪০৫ সনে) মুদ্রিত হয়েছিল। এই 888sport sign up bonusকথা পড়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হই। একই সময়ে চতুরঙ্গে (শ্রাবণ-আশ্বিন ১৪০৫) ‘মহিমাময়ী পরমাত্মীয়া’ রচনাটি পড়ে বেশ ভালো লাগে। আমার আবার অনুতাপ হয়েছে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে কেন তাঁর সান্নিধ্যে গেলাম না। নববইয়ের দশকের প্রথম দিকে (সালটা মনে নেই) গৌরী আইয়ুব চট্টগ্রামে এসেছিলেন, আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকি। গৌরীদি আমাদের বাড়ির কাছাকাছি এসেছিলেন কিন্তু গাড়ি যেহেতু আমাদের বাড়ির গেট পর্যন্ত যেত না, গ্রন্থিবাতে পর্যুদস্ত উনি আর আমাদের বাড়িতে পৌঁছতে পারলেন না। এই কথাটি তিনি আমায় বারদুয়েক বলেছেন। চট্টগ্রামে গৌরীদি আবু সয়ীদ আইয়ুবের ভাগ্নে বিখ্যাত 888sport apkী প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের বাড়িতে ওঠেন। জামাল নজরুল ইসলাম তাঁর বাড়িতে একটা ঘরোয়া বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। বৈঠকের মধ্যমণি গৌরী আইয়ুব। তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য ক্যাম্পাস থেকে শহরে ওঁর বাড়িতে এলাম। সেদিনের বৈঠকে গৌরী কিছু বলতে পারেননি। সভার পরিবেশ নষ্ট করে দিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর ক্ষোভ – কলকাতায় কেন 888sport appsের মনীষীদের নিয়ে আলোচনা হয় না। তিনি এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে, পরিবেশটা আর স্বাভাবিক হলো না। জামাল নজরুল ইসলাম ভীষণ বিব্রত। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারলেন না। ছেঁড়াতার আর জোড়া লাগেনি। আমরা গৌরী আইয়ুবের মুখে 888sport live football, সংস্কৃতি ও সমকালীন সমাজ-মানুষের কথা শুনতে আগ্রহী ছিলাম, তা আর হলো না। সন্ধে গড়িয়ে রাত হলো। সবাই প্রায় নির্বাক, বক্তা সেই সভাপ-কারী। গৌরীর এক আত্মীয় এসে ওঁর বাড়িতে খেতে নিয়ে গেলেন তাঁকে। আমরা ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে এলাম। ভদ্রলোক বুঝতেই পারলেন না তিনি কী ক্ষতি করলেন।
    গৌরী জন্মস্থান পাটনায় পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পাটনা কলেজে বিএ ক্লাসে পড়ার সময়ে ছাত্ররাজনীতি করার কারণে কারাবন্দি হন। এই অপরাধে বাবা তাঁর পড়া বন্ধ করে দেন; পরে শামিত্মনিকেতনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শামিত্মনিকেতনে এসে ১৯৫০ সালে গৌরী বিশ্বভারতীতে বিএ অনার্স ক্লাসে ভর্তি হন। তাঁর সহপাঠী ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়ের পুত্র পুণ্যশেস্নাক। বিষণ্ণমনে পাটনা ছাড়লেও শামিত্মনিকেতনের পরিবেশ অল্পদিনের মধ্যে তাঁকে ভরিয়ে দেয়। প্রকৃতি এবং কিছু মানুষ তাঁর ভালোবাসার জগৎ তৈরি করে দেয়। শামিত্মনিকেতনে এসে অধ্যাপকদের মধ্যে প্রবোধচন্দ্র সেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ক্ষিতিমোহন সেন, প্রবোধচন্দ্র বাগচী – এঁদের সঙ্গে গৌরীর হৃদ্যতা হয়েছিল। এছাড়া অনিল চন্দ, রানী চন্দ, অন্নদাশঙ্কর রায়, লীলা রায়, প্রতিমা দেবী ও ইন্দিরা দেবীর কথা উল্লেখ করেছেন। গৌরীর 888sport sign up bonusকথা আমাদের বলেছে, দেশি ছাড়াও কিছু বিদেশি তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। চেকোশেস্নাভাকিয়ার মিলাডা কলাবোভা, বর্মিজ বন্ধু অং সো, কলাভবনের ছাত্র ছিলেন, সুন্দর ছবি আঁকতেন। হাঙ্গেরীয় এটা ঘোষ।
    রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামের প্রথম বাংলা 888sport app download apk latest versionক ও সবুজপত্র গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সদস্য কামিত্মচন্দ্র ঘোষের স্ত্রী এটা ঘোষ। অসুস্থতার কারণে আইয়ুব শামিত্মনিকেতন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এটা ঘোষের ঠিকানায় গৌরীকে চিঠি লিখতেন। গৌরীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল দুজনের মধ্যে। শামিত্মনিকেতনে প্রতিমা দেবী ও ইন্দিরা দেবীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এটা ঘোষের। শামিত্মনিকেতনের অনুষ্ঠানগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিতেন তিনি। হাঙ্গেরিয়ান লোকনৃত্য শিখিয়ে মেয়েদের স্টেজে তুলেছেন। হাসিখুশি মানুষটির ভেতর একটা বঞ্চনার সত্য লুকিয়ে ছিল। স্বামী কামিত্ম ঘোষ মৃত্যুর আগে ইচ্ছাপত্রে জানিয়েছিলেন, এটা ঘোষ যদি দেশ ত্যাগ না করেন বা পুনর্বিবাহ না করেন, তবেই কামিত্ম ঘোষের বাড়িটির উত্তরাধিকারী হতে পারবেন। যাঁর জন্য দেশ ছেড়েছিলেন, এদেশকে আপন করে নিয়েছেন – স্বামীর ওই শর্ত তাঁকে মানসিক আঘাত করে। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ শরীরে নিষ্কপর্দক অবস্থায় দেশে ফিরে যান। বুর্দা নামের ফরাসি ছাত্রীর সঙ্গেও গৌরীর সখ্য গড়ে উঠেছিল। তাঁর কাছে ফরাসি শিখতেন গৌরী এবং তাঁর বন্ধুরা।
    গৌরী যখন শামিত্মনিকেতনের ছাত্রী, আবু সয়ীদ আইয়ুব তখন শিক্ষক হিসেবে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। গৌরীদের ক্লাসে এথিকস পড়াতেন তিনি। ওখানকার রীতি-অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক নিজের বসার আসনটিও বইখাতার মতো বয়ে নিয়ে যেতেন। নতুন শিক্ষক, আসন আনেননি, গৌরী তাঁরটি দিয়ে অন্যজনের সঙ্গে বসলেন। ক্লাসশেষে উপস্থিতি খাতা না আনায় শিক্ষক বিব্রত। গৌরী চট করে খাতার পেছনের পাতা ছিঁড়ে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের নাম লিখে শিক্ষকের হাতে দেন। শিক্ষক একপলক দেখে ভাঁজ করে জ্যাকেটের পকেটে রাখলেন। অনেকদিন পরে ওঁরা যখন ঘনিষ্ঠ হন আইয়ুব হাসতে হাসতে কাগজটি বের করে গৌরীকে দেখিয়েছিলেন। আইয়ুবের প্রথম ক্লাসেই তাঁর পাঠদানের কৌশল ও 888sport live chatিত বাকবৈদগ্ধ ছাত্রছাত্রীদের ভালো লেগেছিল।
    ক্লাসের বাইরেও আইয়ুবের সঙ্গে দেখা হতো গৌরীর। ২২শে শ্রাবণ শামিত্মনিকেতনের বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে আইয়ুবের সঙ্গে গৌরীর দৃষ্টিবিনিময় হতেই তিনি মৃদু হেসেছিলেন। এরপর সিংহসদনে সপ্তাহব্যাপী সান্ধ্য-অনুষ্ঠান চলছিল। গৌরীর ওপর ভার পড়েছিল হিন্দি ভবনের অধ্যক্ষ বাজপেয়ীর রবীন্দ্র-রচনার হিন্দি 888sport app download apk latest version পাঠের। অনুষ্ঠান-চলাকালে গৌরীর সঙ্গে আইয়ুবের দৃষ্টিবিনিময় হয় এবং সেই সময়ে গৌরীর একটা অন্য অনুভূতি হয়; তিনি নিজের ভেতর একটা শিহরণ অনুভব করেন।
    শামিত্মনিকেতনে শিক্ষকতার শুরুতে আইয়ুব টাটা ভবনে বাস করতেন। বিকেলে ভবনের সামনের বেদিতে বসে থাকতেন। গৌরী ও তাঁর সখী ওই পথেই বেড়াতে বেরোতেন। অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা হলে হাসিবিনিময় ঘটত। ফেরার পথে অন্ধকারে ঢেকে গেলে আর দেখা হতো না। হাসির আওয়াজে আইয়ুব ওঁদের উপস্থিতি টের পেতেন – ‘একজনের উচ্চ কলহাস্য’ অন্যজনের ‘মুখের স্মিত হাসিটি’ যা দেখতে পাওয়া যেত না। পরে আইয়ুব গৌরীকে বলেছিলেন, ‘তোমাদের একজনের হাসি শুনবার মতো আর একজনেরটা দেখবার মতো।’ অধ্যাপককে দেখার জন্য ছাত্রীদের ওই পথে বৈকালিক 888sport slot gameের উদ্দেশ্য তিনি টের পেয়েছিলেন, পরে তিনি গৌরীকে বলেছিলেন, ‘তখনো বুঝতে পারছিলাম না আসলে কার আগ্রহ বেশি এবং কে কাকে সাহস জোগাচ্ছে?’
    গৌরী ও আইয়ুবের সম্পর্ক দিনে দিনে ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় দর্শন মহাসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়াকে উপলক্ষ করে গৌরী কলকাতায় এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন। আইয়ুব তাঁর বন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন সিনেট হাউসের সভাশেষে গৌরীকে তাঁর ৫ নম্বর পার্ল রোডের বাড়িতে যেন পৌঁছে দেন। ওইদিনের কথা গৌরী তাঁর 888sport sign up bonusচারণে উল্লেখ করেছেন। গৌরীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ওঁর ঘরে সোফায় বসতে দিলেন। ‘উনি এসে সোফায় আমার পাশে বসলেন … কয়েক ঘণ্টা কিছু গভীর অন্তরঙ্গ কথা এবং কিছু স্পর্শের ভিতর দিয়ে কোন স্বর্গরাজ্যে তিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তা আজও ভাবতে বসলে মনের মধ্যে শিহরণ জাগে।’
    অধিবেশন শেষ করে গৌরী ফিরছিলেন শামিত্মনিকেতনে এক আত্মীয় যুবকের সঙ্গে। স্টেশনে যাত্রীর ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ আইয়ুব তাঁকে বললেন, ‘তোমার টিকিট আমার সঙ্গে কাটা হয়েছে এদিকে এস।’ … সেকেন্ড ক্লাসেও সেদিন বেশ ভিড় ছিল। বাধ্য হয়েই ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিলেন দুজন। ট্রেন শামিত্মনিকেতনে পৌঁছানোর সময়টুকু দুজন পরস্পরের হাত ধরে রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন, সেটাও আইয়ুবের কালো শালের অন্তরালে। গৌরী বলেছেন, ‘তবু সেদিন আমরা যেন দুঃসাহসী হয়ে উঠেছিলাম।’ গৌরীর কাছে এই দিনটি ‘বহু মূল্যবান ও সযত্নে লুকিয়ে রাখার মতো কোনো সম্পদ।’

পৌষমেলার পর অসুস্থতার কারণে আইয়ুব কলকাতায় ফিরে যান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী অসুখের কারণে ১৯৫২ সালের পর আইয়ুব আর শামিত্মনিকেতনে ফিরে যাননি। গৌরী নানা সুযোগে কলকাতায় এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। আইয়ুব অবশ্য নিয়মিত পত্রে যোগাযোগ রাখতেন।
গৌরীর জীবনে সে-সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা শামিত্মনিকেতনে ১৯৫৩ সালের 888sport live footballমেলা। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিসত্মানে ভাষা-আন্দোলনের শহিদদের 888sport app download for android করার জন্য এই আয়োজন। মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায় এবং তার দুজন সম্পাদক – নিমাই চট্টোপাধ্যায় ও গৌরী দত্ত। সভায় তিনদিন ধরে 888sport app download apk, কথা888sport live football, শিশু888sport live football, 888sport live888sport live football ও লোক888sport live football ইত্যাদি বিষয়ে গত পাঁচ বছরে কী কাজ হয়েছে, এই বিষয়ে 888sport live পঠিত হয়। পূর্ব পাকিসত্মান থেকে কাজী মোতাহার হোসেন, মুহাম্মদ মনসুরউদ্দীন, শামসুর রাহমান এবং কায়সুল হক এসেছিলেন। তখন বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ছিল না, তাই আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ হয়েছিল, তাও ঘাটতি
থাকায় শামিত্মনিকেতনের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে এক টাকা, দু-টাকা, পাঁচ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়েছিল। ‘সমস্ত ব্যাপারটা সহজেই সার্বজনীন হয়ে গেল।’ (গৌরী আইয়ুব, ‘সেই 888sport live football মেলা’, সত্যেন্দ্রনাথ রায় ও 888sport app সম্পাদিত, 888sport live football মেলা : শামিত্মনিকেতন, ১৯৮২।)
১৯৫৩ সালের 888sport live footballমেলার বর্ণনা দিয়ে শঙ্খ ঘোষ গৌরী সম্পর্কে লিখেছেন, ‘একই সঙ্গে শান্ত আর দীপ্ত এরকম ব্যক্তিত্ব বড় সুলভ নয়, সুলভ নয় বুদ্ধিতে সংস্কৃতিতে সুরুচিতে কমনীয় এক স্বচ্ছ কোন মুখশ্রী। কমল হীরের পাথর থেকে যে আলো এসে পৌঁছবার কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সেই আলোর যেন আভাস ছিল সেদিনকার সেই কর্মসচল স্মিত মুখ মেয়েটির মধ্যে।’ (‘আত্মবিশ্বাসে সহজ’, চতুরঙ্গ, শ্রাবণ-আশ্বিন ১৪০৫)
বিশ্বভারতীতে দর্শন বিষয়ে এমএ তখনো চালু হয়নি। গৌরীর বাবা ধীরেন্দ্রমোহন দত্ত মেয়েকে কলকাতায় পাঠাতে রাজি হননি। তাই অনার্সশেষে গৌরী বিশ্বভারতীতে বিটি পড়েন। বিটি পাশ করে আসানসোলের কাছে ঊষা গ্রামে মেথডিস্ট মিশন স্কুলে যোগ দেন। ছুটির দিনে কলকাতায় এলে আইয়ুবের সঙ্গে যোগাযোগ হতো। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কলকাতায় এসে এমএ পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। আইয়ুবের পরামর্শমতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশনে এমএ-তে ভর্তি হন। বাবার মতের বিরোধিতা করায় পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক সাময়িক ছিন্ন হয়ে গেল। কড়ি ও কোমলে গড়া চিত্ত নমনীয় হয়নি।
এমএ পড়ার সময়ে গৌরী নতুন করে ছাত্রী হলেন আইয়ুবের। ছাত্রীকে আধুনিক 888sport app download apk পড়ে শোনাতেন; রবীন্দ্রনাথ তো ছিলেনই, এরপর সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের 888sport app download apk। ইংরেজ কবি ইয়েটস, এলিয়ট এবং রুপার্ট ব্রম্নকের 888sport app download apk। 888sport app download apkর পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি ছোটগল্প পড়ে শোনাতেন। ছাত্রীকেও পড়ে শোনাতে বলতেন ইংরেজি উচ্চারণ শুধরে দেওয়ার জন্য। ইংরেজি গল্পের 888sport app download apk latest versionের দায়িত্ব পড়েছিল গৌরীর ওপর। ডি.এইচ. লরেন্সের ‘সেকেন্ড বেস্ট’ গল্পের গৌরীকৃত 888sport app download apk latest version আইয়ুবের ভালো লেগেছিল। 888sport app download apk latest version গল্পটি সমকালীন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। পরে আইয়ুবের উৎসাহে গৌরী একটি রুশ গল্পের 888sport app download apk latest version করেছিলেন। আইয়ুব নিজের আগ্রহের বিষয় দর্শন ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে ছাত্রীর আগ্রহ সৃষ্টির ব্যাপারে মনোযোগ দেন। স্টেটস্ম্যান পত্রিকার পেছনের পাতায় মুদ্রিত আকাশের মানচিত্র দেখিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের পরিচয় করাতেন। বার্ট্রান্ড রাসেলের Problems of Philosophy ও Mysticism and Logic বই দুটির ছাত্রীর মুখে পাঠ শুনতেন। এখানে শিক্ষকের উদ্দেশ্য ছিল দুটি – ছাত্রীকে রাসেলের ইংরেজি স্টাইল দেখানো, দর্শনকে জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব সমস্যা হিসেবে দেখবার অভ্যাস গড়ে তোলা। আইয়ুব শুভলক্ষ্মীর কণ্ঠে মীরার ভজন শুনতেন। গৌরীকে ইউরোপীয় চেম্বার মিউজিকের রেকর্ড শুনিয়ে আনন্দ পেতেন। বেছে বেছে দুজনে বাংলা এবং অবি888sport app download for androidীয় কিছু ইংরেজি ছবিও দেখেছেন। আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতে, ‘দু’জন মানুষের ভালবাসা যদি কিছু সার্থক ইন্টারেস্টকে ঘিরে পরিণতি লাভ করে, তাহলে সে ভালবাসা সার্থক হয়, এবং দিনে দিনে পূর্ণতর হয়ে ওঠে। নইলে শুধু ভালবাসার জন্য ভালবাসা যেন শিকড় কেটে দেওয়া গাছের মতো আসেত্ম আসেত্ম শুকিয়ে সংসারের ঊষর জমিতে ক্রমে হারিয়ে যায়।’
গৌরীও এর সমর্থনে বলেছেন, ‘তাঁর সাহচর্য আমার জীবনকে এমন ফলবান করে তুলেছিল যে তার ভিতর দিয়েই আমরা পরস্পরকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারছিলাম।’ (গৌরী আইয়ুব, আমাদের দুজনের কথা ও 888sport app, কলকাতা ১৪২১, পৃ ৯১)
১৯৫৬ সালে আইয়ুব ও গৌরী বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন আইয়ুবের বয়স পঞ্চাশ, গৌরীর পঁচিশ। লোকপরম্পরায় জানতে পেরে গৌরীর মা ও বোন তাঁকে তিরস্কার করে চিঠি লিখেছিলেন। বাবা ধীরেন্দ্রমোহন আইয়ুবকে কঠোর পত্র লিখেছিলেন। কিন্তু কন্যাকে লিখেছেন অন্যকথা, গৌরীর বিয়ের জন্য তিনি একটা বীমা করেছিলেন, ওটা মেয়াদ শেষে হাতে পেয়েছেন, টাকাটা পাঠিয়ে দিতে চান। কন্যা বিনীত উত্তর দেন, বাবার অমতে তিনি বিয়ে করছেন, সুতরাং এই টাকায় তাঁর অধিকার নেই। এ-সময় থেকেই পিতা-পুত্রীর চিরবিচ্ছেদ ঘটেছিল।
আইয়ুব গৌরীর রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল কলকাতায় আইয়ুবের ৫ নম্বর পার্ল রোডের বাড়িতে। বরের সাক্ষী ছিলেন আইয়ুবের বড়ভাই ড. গনি এবং কনের পক্ষে ভাইঝি মীরা ও নিকটাত্মীয় অমিতাভ চৌধুরী। অমিতাভ চৌধুরী (দেশ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক) এই বিশেষ দিনের বর্ণনা দিয়েছেন, ‘গৌরী যেমন নিরাভরণ থাকতে ভালবাসত, ঠিক তেমনই একটা চেয়ারে বসে, ঠিক যেমন ওর চিরকালের স্মিত মুখখানা ছিল, সেই মুখটি তুলে, চোখে শান্ত একটি হাসি মাখিয়ে আমাকে বলল, ‘যাক একদিন তবু সময়মতো কোনও একটা কাজে যে এসেছ, তা দেখা গেল।’ (‘গৌরী আমাদের জীবনের অন্যতম বিস্ময়’, কৃতজ্ঞতার অশ্রম্নবিন্দু, পৃ ২২)
আধুনিক বাংলা 888sport app download apkর প্রথম সংকলন করেছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। পরবর্তী সংস্করণ করেন বুদ্ধদেব বসু। সিগনেট প্রেসের উৎসাহে পঁচিশ বছরের প্রেমের 888sport app download apk সংকলন করেছিলেন, সহকারী ছিলেন নরেশ গুহ। ১৯৫৬-তে বইটি প্রকাশিত হয়। গৌরীর বয়স তখন পঁচিশ। গৌরীকে বইটি উপহার দিয়েছিলেন আইয়ুব ‘পঁচিশ বছরের গৌরীর জন্য’ কমা দিয়ে বইয়ের নাম। নিচে নিজের নামটি লিখেছিলেন।
বিয়ের পর গৌরী বছরখানেকের মধ্যে মা হয়েছিলেন। পুত্র পূষনের জন্ম ১৯৫৭-তে। আইয়ুব ও গৌরীর সমস্ত সৌনদর্যটুকু নিয়ে জন্মেছিল পূষন। অধ্যাপনা, পুত্রের পরিচর্যা, স্বামীর কাজে সহায়তা, অসুস্থতায় সেবাদান প্রভৃতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন গৌরী। বুদ্ধদেব বসু মন্তব্য করেছিলেন, ‘গৌরী শুধু মহাভারতের সাবিত্রীর সঙ্গে তুলনীয়।’ বিয়ের পর গৌরী তাঁর ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন, দেয়ালে রং, জানালায় সুন্দর পর্দা, খাটে রঙিন চাদর, কুশন। বুদ্ধদেব বসুর কন্যা মীনাক্ষী লিখেছেন, ‘এরপর আইয়ুবের বাড়ি আর শুধু নীরস তত্ত্ব আলোচনার জায়গা রইল না, যে বাড়ির প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠল গৌরীর আতিথ্যপস্নাবিত ওদের দুজনের সংসার। … ইলেকট্রিক বাল্বের সূক্ষ্ম তারগুলি যেমন বাইরে থেকে চোখে পড়ে না, তেমনি ছিল আইয়ুবের সম্পাদনার কাজে গৌরীর হাত।’ (মীনাক্ষী দত্ত, অ্যালবাম থেকে কয়েকজন, কলকাতা ২০০৭, পৃ ১৩৫-১৩৭)
১৯৬১ সালে আবু সয়ীদ আইয়ুব মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেব যোগদান করেন। গৌরীও স্বামীর সঙ্গে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যগত কারণে ওঁদের নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে আসতে হয়।
ঊষা গ্রামে মেথডিস্ট মিশন গার্লস স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে গৌরী কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরে কলকাতায় সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বাকি সময় শ্রীশিক্ষায়তন কলেজে এডুকেশন বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এই কলেজে শিক্ষকতাশেষে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে গৌরী সমাজসেবায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে যে-দাঙ্গা হয় গৌরী তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সেই দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি, মৈত্রেয়ী দেবী ও ড. এ ডবিস্নউ মাহমুদ মিলে ‘কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব কমিউনাল হারমনি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, আমৃত্যু তিনি ছিলেন এর সভানেত্রী। ১৯৭১ সালে 888sport appsে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মৈত্রেয়ী দেবী ও গৌরী আইয়ুব 888sport apps সীমান্তের কাছে বয়রা গ্রামে ক্যাম্প নির্মাণ করেন। এছাড়া সরকারি ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে ঘুরে শরণার্থীদের মনোবল সৃষ্টি করেন। পরের বছর ১৯৭২ সালে অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুদের গড়ে তোলার জন্য একটি আশ্রম তৈরি করেন। আশ্রমটির অবস্থান ছিল বাদুতে, নাম খেলাঘর। গৌরীর এবং মৈত্রেয়ীর আকর্ষণে অনেকে এই আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। সমাজের অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিও এই অনাথ বাচ্চাদের সংস্পর্শে আসেন। খেলাঘরের সভাপতি ছিলেন মৈত্রেয়ী দেবী, সম্পাদক গৌরী। অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুদের শিক্ষার ভার নিয়েছিলেন গৌরী। মৈত্রেয়ী দেবীর মৃত্যুর পর খেলাঘরের সভাপতি হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় রেখেছিলেন।
ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে ’৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা জারি হয়। এই আইনের বিরুদ্ধে কিছু বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদ জানান। জ্যোতির্ময় দত্ত, প্রশান্ত বসু ও শম্ভু রক্ষিত কলকাতা নামে একটি পত্রিকাও বের করেন। তিনজনই নানা প্রতিকূলতায় ফেরারি অবস্থায় পত্রিকা বের করে গেছেন। গৌরকিশোর ঘোষের ব্যবস্থা-অনুযায়ী র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট দলের সভাপতি শামিত্মব্রত সেন গৌরীকে প্রতি সপ্তায় দুশো টাকা করে দেবেন। এই টাকা সংগ্রহ করে ফেরারিদের চলবে ‘আহার-আশ্রয়-চলাচল’। গৌরী ছিলেন ফেরারদের ‘ব্যাংক’, ডাকঘর, আধদ- জিরোবার জায়গা’। গৌরীর এই ভূমিকাকে সমর্থন দেননি স্বামী আবু সয়ীদ আইয়ুব। তিনি তখন পারকিনসন্স রোগে পীড়িত, শয্যাবন্দি। গৌরীর কারাবাসের আশঙ্কায় তাঁর এই অবস্থান। গৌরকিশোর ঘোষসহ সে-সময়ে কিছু বুদ্ধিজীবীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। স্বাধীনচেতা গৌরী পুলিশের গ্রেফতারকে উপেক্ষা করে স্বামীর অমতে কাজ চালিয়েছেন।
সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি তাঁর 888sport live football রচনার প্রয়াসও উল্লেখনীয়। তাঁর গ্রন্থ888sport free bet তিন। প্রথমটি গল্পগ্রন্থ – তুচ্ছ কিছু সুখ দুঃখ (১৯৮৬), পনেরোটি গল্পের সংকলন। চোদ্দোটি গল্পই 888sport promo codeকে ঘিরে। সমাজের অনুশাসনে 888sport promo codeমনের প্রত্যাশাভঙ্গ ও বঞ্চনাবোধ এই গল্পগুলোতে 888sport live chatরূপ লাভ করে। পুরুষ চরিত্র একটি। গল্পের কথক। দ্বিতীয় গ্রন্থ 888sport slot gameকাহিনি – দূর প্রদেশের সঙ্কীর্ণ পথ (কলকাতা ১৯৯০) জাপানি কবি মাৎসুত বাশোউয়ের রচনা ওকুনো হোসেমিচি গ্রন্থের বাংলা 888sport app download apk latest version। জাপানি কবি ক্যায়োকা নিওয়ার সঙ্গে যৌথভাবে 888sport app download apk latest version করেছিলেন। ভূমিকা লিখেছেন গৌরী নিজেই। তৃতীয় গ্রন্থ এই যে অহনা (কলকাতা ১৯৯৬)। নাতনি অহনার উদ্দেশে লেখা, প্রবাসে নাতনির সঙ্গে কাটানোর দিনলিপি। বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকা – আনন্দবাজার পত্রিকা, চতুরঙ্গ, দেশ, জিজ্ঞাসা, কবিতীর্থ, শ্রয়ন, অলকা প্রভৃতিতে গৌরীর বেশকিছু 888sport live প্রকাশিত হয়। এগুলো এবং বাকি 888sport live গৌরী আইয়ুবের রচনাসংগ্রহে বিষয়ভিত্তিক শিরোনাম-অনুযায়ী মুদ্রিত হয়েছে। গৌরীর কিছু 888sport liveে রয়েছে সমকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতির বিশেস্নষণমূলক আলোচনা, অন্য শ্রেণির 888sport live সমাজের আবহমানকালের সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের যুক্তিনির্ভর পরামর্শ। আবু সয়ীদ আইয়ুবের সম্পাদনার গালিবের গজল এবং মীরের গজলের দুটি গ্রন্থসংকলন প্রকাশিত হয়। গৌরী গ্রন্থ-দুটোর গজল চয়ন ও কবি-পরিচিতি লিখেছিলেন। নবজাতক পত্রিকায় গৌরীকৃত কাইফি আজমির উর্দু 888sport app download apkর 888sport app download apk latest version বেরিয়েছিল। চতুরঙ্গ
পত্রিকায় প্রকাশিত 888sport sign up bonusচারণমূলক রচনা ‘মহিমাময়ী পরমাত্মীয়া’য় হৃদয়বতী গৌরীর পরিচয় বিধৃত। অনুলেখকের সাহায্যে আমাদের দুজনের কথা নামে গৌরী আত্মকথা লেখেন। চতুরঙ্গ পত্রিকায়
এর কিছু কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছিল। রচনাটি অমর প্রেমের
কাহিনি, প্রায় রূপকথার মতো। এই রচনার সাবলীলতা পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে।
বর্ণাঢ্য জীবন, পার্থিব জগতের প্রতি আকর্ষণ, সাধারণ-অসাধারণ সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি সমভালোবাসা – সবকিছুর বাঁধন কেটে সাতষট্টি বছর বয়সে ১৯৯৮ সালের ১৩ জুলাই ৪-৫৫ মিনিটে গৌরী আইয়ুব অপার্থিব জগতে চলে যান। তাঁর মৃত্যুর মুহূর্তটির সাক্ষী তাঁর প্রিয়ভাজন লিখেছেন, ‘মৃত্যু কত শান্ত, সুন্দর ধীরগতিতে মানুষের অসিত্মত্বকে মহাশূন্যতার অন্ধকারে বিলীন করে দেয়, এ দুর্লভ ঘটনার সাক্ষী থাকাও এক বিরল অভিজ্ঞতা।’ (কামাল হোসেন, ‘অনুলেখকের কথা’, আমাদের দুজনের কথা ও 888sport app, পৃ ৩৮।)