আলো আর অাঁধারের মাঝখানে এক রকম অস্তিত্ব আছে – সেখানে কিছু থাকে না, কিছু ঘটে না, কিছু বোঝা যায় না, কিছু দেখা যায় না। কোনো দৃশ্য নয়। বাইরে তাকালে মুখ ভারি হয়, মন না-বোঝা দুঃখে ভরে যায়।
পাশে বসা সহকর্মী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে, এই রকম সময়ে বড় মন খারাপ করে। দ্রুত মিলিয়ে যাওয়া আলো আর আসন্ন অন্ধকারের পথে চলতে থাকা গাড়ির জানালার দিকে মুখ ফেরানো তাকে দেখি আমি। প্রায় দৃশ্যহীন ধূসর চরাচরের কিছু স্পষ্ট নয়, আরো কিছুক্ষণ আগে বৃক্ষরেখা ছিল সেখানে, দিগন্তের সীমায় কিছু রংও হয়তো ছিল, এখন সবই প্রায়
বর্ণহীন আকাশের কোলে মিশে গেছে। হয়তো ছিল রাস্তার দু’পাশের ক্ষীণ জলস্রোতে শাপলার বাগান কি ছিল ঘর-বাগিচার আড়ালে কি পাশে কর্মরত জন কি বিকালের স্নিগ্ধতায় টলটলে জলের আধারে নিজ মুখের ছবি দেখায় বিভোর পল্লীবালা।
পেছনের আসনে বসা আমরা দুজন। সামনের আসনে চালকের পাশে বসা প্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রধান। হয় তাঁরই বসার কথা পেছনে। মূলত একাকী। আজ আমরা দুজন জরুরি প্রয়োজনে সভার দ্বিতীয় দিনেই শহরে ফিরব বলে তিনি স্বেচ্ছায় তাঁর গাড়িতে আমাদের নিয়ে চলেছেন। অস্বস্তি এড়ানোর জন্যেই নিশ্চয়, নিজে চালকের পাশে গিয়ে বসেছেন। ওই মুহূর্তে তিনিও শব্দহীন। মন খারাপের আবহ কি তাঁকেও স্পর্শ করে, আমাদেরই মতন?
কিছুক্ষণ আমার কথার রেশ গাড়ির বাতাসে ছিল না। মন খারাপের হাওয়া সব ঢেকে দিয়েছিল। জনগণের কল্যাণ পরিকল্পনা, নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন – ত্রৈমাসিক সভার কিছু সমস্যার আলোচনা যেকোনো স্থানেই করা চলে, চাই কি এই পথযাত্রাতেও। সর্বকর্ম নিয়ামকের উপস্থিতিতে কথাবার্তায় সাবধানী আমরা নিঃসন্দেহে, কিন্তু তিনিও সে-সব শুনুন এ-ও তো চাই।
দু-একটা বিষয়ে কিছু বলার পরে সন্ধ্যা নামবে বলেই বুঝি আমরা চুপ করে যাই। আর তখনই মন খারাপের সময় উঠে আসে। তিনদিনের ষাণ্মাসিক সভা – শহর থেকে দূরের কেন্দ্রীয় সভা ভবনে সারাদেশের সব কর্মকর্তারই উপস্থিতি আবশ্যিক। আহার-নিদ্রার সব ব্যবস্থা সেখানেই – বিনোদনেরও। বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত বলেই সভার মাঝ থেকে আমাদের উঠে আসা।
সময় বৈরী, পরিবেশ বৈরী এই সব কথাই বারবার উঠে আসে নানা আলোচনায়। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারের বিরূপ মনোভাবের কথাও। অনেকদিন ধরেই এমন চলছে। সম্প্রতি নানা হয়রানি, নানা অসহযোগিতার ঘটনা জানে সকলেই। কি করে সেসব সামলানো যায় তাও আলোচ্য বিষয়ে থাকে। কিন্তু আলো-অাঁধারের সন্ধ্যায় মন খারাপের ব্যাপারটি? গত তিন মাসের কথা ভেবেই কি মন খারাপ আমার সহকর্মীর? কেবল আলো-আঁধারের প্রদোষে কেন, সর্বদাই বিষণ্ণতা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখলেও বলবার কিছু ছিল না। অথচ কত সহজে সে প্রতিদিনের জীবনে ফিরে এসেছে এ নিয়েও বলাবলি করি আমরা।
তিন মাসের আগের এক সন্ধ্যা শেষে তার মোটরসাইকেল থামিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পেছনে বসা অফিস-পিয়নের ব্যাগে প্রতিষ্ঠানের আসন্ন সভা-সমাবেশ ইত্যাদি বিষয়ক প্রচারপত্র খুঁজে পাওয়ায় দু’জনকেই থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে জেলহাজতে। প্রতিষ্ঠানটির পদস্থ কর্মকর্তাদের কোনো চেষ্টাই সেটি ঠেকাতে পারে না। প্রায় ছ-সপ্তাহ ধরে আইন-আদালতের নানা কসরত শেষে তাদের জামিনে ছাড়িয়ে আনা যায়। এবারের ষাণ্মাসিক সভায় ওই দুজনকে প্রায় বীরোচিত সংবর্ধনাই দিয়েছে সকলে। তবুও মন খারাপ তো হতেই পারে। কিন্তু কেবল দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণেই কেন?
কিছুক্ষণ আগের আলাপ আবার ফিরিয়ে আনি, বলি ‘লোকে কিছুতেই বিশ্বাস করে না যে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।’ আমার কথায় কোনো জড়তা ছিল না, নিচু গলায়ই বলা যদিও।
সামনের আসনে বসা তাঁর কানে আমার কথা পৌঁছুলে তিনি বুঝি একবার পেছনের দিকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করেন, ‘তাই বুঝি।’ সামান্য হাসির শব্দও বুঝি শুনি আমরা। ‘কেউ বুঝি বিশ্বাস করে না যে দরিদ্র মানুষকে মোবিলাইজ করা কেবল তাদেরই জীবনের জন্যে।’
‘এ-রকম তো ঘটে না। সবাই ভাবে পড়ে থাকা মানুষকে সামনে নিয়ে যাওয়ার কথা যে বলে সে-ও নিশ্চয় কিছু চায়। ইতিহাসে সব গণজাগরণের পেছনেই তো এমন কিছু দেখা যায়।’ ঝোঁকের মাথায় বলে ফেলেই নিজেকে সামলে নেই।
দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টায় অনেককাল কেটেছে তাঁর আমরা জানি। আমার সহকর্মীটিও এককালে জনকল্যাণের চিন্তায় এক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল ছাত্রকাল থেকেই। এখন এই প্রতিষ্ঠানে এসে সেও ওই রকম কর্মে যুক্ত। নিজের দিকে তাকালেও ওই রকমই দেখি। কর্মজীবনে নানা পথে ঘুরলেও যৌবনকালের সেই মানবকল্যাণ চিন্তা কখনো ছাড়েনি। ঠিক ওই কারণেই এই প্রতিষ্ঠানে না-এলেও এক রকম স্বপ্নপূরণের চিন্তা তো ছিলই।
দুই
যৌবনকালের স্বপ্নই আসলে 888sport sign up bonus। ধরা যাক, যে-বালির গভীর রাত্রির খেলাঘরে সঙ্গিনী হবে ভেবে ঘর, চারপাশ, জানালা চাই কি বাতিটিরও যে-ছবি চোখে ছিল সে কেবল চোখ বুঁজলেই দেখা যায়। অথবা সমুদ্রসৈকতে দীর্ঘকাল পরে দেখা যে সহপাঠিনী আমাকে চিনতেও পারেনি সে-ও তো এককালে সুখসঙ্গীই ছিল বলা যায়।
যে আমার ঘরে আসবে বলে সবকিছু স্থির ছিল, ঘর সাজানো ছিল, তাকে দেখার জন্যে ছাদের ওপরে ছবিঘরের সিঁড়ি দিয়ে তিনবার ওঠানামা করেছি, তাকে কোনোদিন চোখে দেখিনি, অথচ তার মুখরেখার ভাঁজও তো আমি জানি। সে কি স্বপ্ন নয়?
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগপ্রাপ্তির আশায় যাই একবার। যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। নিজ অফিসের চেয়ারটিও দেখতে পাই চোখে। যদিও নিযুক্তির চিঠি কখনো আসেনি। স্বপ্নভঙ্গের শুরুতে তো থাকে স্বপ্নই।
বিদেশে লেখাপড়া শেষে ফিরি কেবল সবচেয়ে বড় ডিগ্রিই নিয়ে নয়, ওই রকম ডিগ্রিই ছিল না তখন এই দেশে কারো। বিদেশেই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাধিকারীর সঙ্গে দেখা হয় সস্নেহে তিনি চলে আসতে বলেছিলেন ডিগ্রির শেষেই। তাই ক্লাসরুমে উজ্জ্বল চোখে আমার দিকে তাকানো শতমুখের ছবি যদি আমি দেখে থাকি তাহলে সেটি 888sport sign up bonus নয়, স্বপ্নই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়ও পা দেইনি দীর্ঘকাল ডিগ্রি লাভের পরে। প্রজ্বলিত বাসনা নির্বাপণে সহায়ক ছিল এককালের সহপাঠী, তৎকালীন কিছু অসূয়াপীড়িত শিক্ষক। বিভাগীয় প্রধান।
শহরতলিতে প্রতি শীতেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ইটভাঁটার চিমনি। এখন যেমন দেখা যায় তখনো দেখা যেত। অমনি শীতে লাল রঙের শক্ত ইট খুঁজে বেড়ানোর কথা মনে আছে। মনে আছে নানা দোকান ঘুরে উৎকৃষ্ট সিমেন্ট কি রড কি কাঠ কেনার কথা। আর সেই ইট, সিমেন্ট, বালি, লোহা, কাঠ মিলিয়ে যে দালান হয় সেটির সবক’টি ঘরে থাকার কথা ছিল আমারই, সপরিবারেই হয়তো, কিন্তু এখন সেখানে যে থাকে সে আমি নই। বিনা কালিতে লেখা দলিল পরীক্ষা করছেন মহামান্য বিচারক আজ কতকাল। ধর্মাশ্রয়ী দখলদারকে হঠাবে এমন সাহস কার? তা ওই বাড়ির সবক’টি ঘরে বাস করার যে-888sport sign up bonus সে-ও তো স্বপ্নই।
সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ক্ষণকালের জন্য হলেও, বাহারি রঙিন, সেটিও 888sport sign up bonusতে আছে। চড়া দামে কেনা। কেবল দরজা খুলে চেয়ারে বসাই বাকি ছিল। সম্মানের সঙ্গে সম্বোধনও করেছিল কেউ কেউ। প্রায় ঈশ্বর যিনি তাঁরও, শুনেছিলাম সমর্থন ছিল, তবুও আনুষ্ঠানিকতা তো আছে আর সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে কার্যসম্মতি মিললেও সম্মতি মেলে না অন্তরীক্ষের সরকারি শক্তিধর কারো। তা এটিও তো 888sport sign up bonusই। আসলে স্বপ্ন।
তিন
বহুতল ভবনটি অনেকদূর থেকেই দেখা যায়। আমিও দেখি এবং কাছে এসে সামনে দাঁড়ালে কিঞ্চিৎ বিস্মিতও হই। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এমন আয়োজন, মুহূর্তে ভুলে যাই বড় কাজের জন্য যোগ্য প্রস্ত্ততি প্রয়োজন, এ-কথাই বুঝি।
প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করি। কোনো এক পরিচয়সূত্রে আমার কথা শুনে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি আমাকে। জনকল্যাণের কর্মে নিয়োজিত তাঁদের সঙ্গে আমি কি যোগ দিতে পারি না! মাঠ-ঘাটের মানুষের জন্যে ছাত্রজীবনে ত্যাগের যে-সংকল্প ছিল, ছিল বুঝি কিছু কর্মের 888sport sign up bonusও সেইকালের, স্বপ্ন হয়ে আবার চোখে ভাসে বুঝি।
ভবনটির বহুতলে ছড়ানো বিভিন্ন বিভাগের কর্মকান্ড দেখান আমাকে প্রধান পরিচালক। দারিদ্র্য বিমোচনের নানা প্রসঙ্গ ও উপায়ের কথাও উঠে আসে। ত্যাগই সব নয়, কর্মকৌশলের যে কত প্রয়োজন, স্পষ্ট হয়।
অবশেষে মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে নিয়ে যান পরিচালক। বৃত্তাকার বহুতল ভবনের মাঝামাঝি প্রায় অর্ধতল জোড়া তাঁর অফিস, ব্যক্তিগত সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর প্রভৃতির জন্যে ব্যবহৃত অংশ পার হয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁর কক্ষের দরজায় দাঁড়াই। নিজে এসে দরজা খুলে দেন তিনি। কুশলবিনিময় শেষে বসেন তিন পাশে টেবিল দিয়ে ঘেরা তাঁর চেয়ারে। প্রতিদিনের সাধারণ সুতি কাপড়ের পোশাক, কেবল কাজের সুবিধার জন্যে তিনপাশ জোড়া প্রশস্ত টেবিল, মুহূর্তে বুঝে যাই।
আমার কথা শুনতে চান তিনি। ফিরে আসার গল্প বলি তাঁকে – নানা স্বপ্নে জড়ানো সব গল্প, বলি তাঁকে স্বপ্নভঙ্গের কথাও। সব শুনে তিনি বলেন, ‘আসুন আমাদের সঙ্গে, দেখি ভাঙা স্বপ্ন আবার জোড়া দেওয়া যায় কিনা।’
চার
প্রত্যুষে স্নান সেরে নিই। অর্ধবৃত্তাকার ঝুলবারান্দার দরজা খুলে দিলে পুবের আলোয় ঘর ভরে যায়। ওই মুহূর্তের বাতাসটি ঈষৎ শীতল স্পষ্ট বোঝা যায়। তাপ সঞ্চারিত হবে কিছু পরেই। মাধবীলতায় 888sport app সদর দরজার ওপরে তোরণটি চোখে পড়ে। রঙিন ফুলে 888sport app। যেন কুঞ্জগৃহের প্রবেশপথ। কিন্তু সেই ভুল এক মুহূর্তে দূর হয় দরজা খুলে দিলে। দেখা যায় দাঁড়ানো সশস্ত্র প্রহরী। একাধিক। আমি আমার বারান্দা থেকে দেখতে পাই। এই নিরাপত্তা আমার সম্মানে নয়, পদমর্যাদার জন্যেও নয়। দ্বিতলবাসী উচ্চস্থানিক অন্য কারোর জন্যে। আমি বিনামূল্যে উপকারভোগী মাত্র।
তবুও এ আমার পছন্দ। নিজেই নির্বাচন করেছি বাসস্থান। জানালার শার্সি ভাঙবে না কেউ, দরজার কড়ায় আওয়াজ তুলে কি বেল টিপে দরজা খোলা – তারপরে হাত বাঁধা মাটিতে পড়ে দ্যাখো নিয়ে যাচ্ছে আজীবনের সংগ্রহ খুঁদ-কুড়ো। মুখ দিয়ে শব্দ বেরুবে না। মুখে কাপড় গোঁজা। ও-রকম কোন ভয় আমার নেই।
আমি স্নানশেষে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। পোশাক পরবার মুহূর্তে দেখি সদর দরোজা খুলে দিচ্ছে সান্ত্রি। আমার ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ সাদা গাড়িটি ঢুকছে। ভাঙা স্বপ্ন জোড়া দেওয়ার জন্যে মালমসলা তো কিছু চাই-ই।
রাস্তার দু’পাশের দেয়ালে নানা ভাইয়ের স্ত্ততি, মুক্তির দাবি কি আত্মপরিচয়, সহস্র জলসার বিজ্ঞাপন, পাঠমন্ডল, প্রসাধনী কি তেজবর্ধক ওষুধের পরিচিতি চোখে পড়ে তবুও। সকালের আলোয় গাড়ির ঝাঁকুনিতে চোখ বন্ধ হতো ঠিকই কিন্তু দেখা যায় রাস্তার উপরিতল কেবল অসমানই নয়, সহস্র নিচু গর্ত, খানাখন্দে পূর্ণ। বাস ডিপো ছাড়ানোর মুখে দেখা যায় যত্রতত্র থেমে আছে নানা যান। নানা কৌশলে তাদের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় ভিন্ন যানের চালক। আরো কিছু এগোলে দেখা যায়, মহাসড়কের কায়া শীর্ণ করে দাঁড়িয়ে আছে দু’পাশে অযুত ট্রাকের বহর। ওই মুহূর্তে সবক’টির হালকা শরীর। শুনি শত ট্রাকের অধিপতি খলনায়কের গল্প, শুনি আমার সহকর্মীর চালকও চাবি ঘোরায় হাতে নিজের দুটি ট্রাকের।
এই অংশের রাস্তা সদ্যপ্রস্ত্তত, মসৃণ। দ্রুতবেগে গাড়ি চলে। চোখ বন্ধ করে ওই 888sport sign up bonus স্বপ্নে পাঠাই। আর সেই মুহূর্তে গাড়িটি থামে। রাস্তার পাশে জলপাই রং ত্রিপলের ছাউনি। সামনে বসে আছেন পদস্থ কর্তা। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী দু’পাশে অস্ত্রধারী এসে দাঁড়ায়। কোন্ প্রয়োজনে কোন্ গন্তব্যের দিকে চলা জিজ্ঞাসা করে। জানি এ এক কঠিন সময়, বাদানুবাদের নয়। সঙ্গের ব্যাগটিতে রাখা কাগজপত্র প্রাতিষ্ঠানিক সভায় নিয়ে যাওয়ার জন্যই, অন্য কোনো প্রয়োজনে নয়। এমন কি এই ব্যাগটিতে কাগজপত্র ছাড়া আর কিছু নেই এ-কথা মুখে বলাই যথেষ্ট নয়, চাইলে দেখাতেও হবে। কিন্তু সান্ত্রি আর দেরি করায় না।
গন্তব্যে পৌঁছানোর পূর্বে আরো একবার। এবারো সৈনিক কাছে আসে, মুখের দিকে তাকায়। হাত বাড়ায় বুঝি তারপরে সরিয়ে নেয়। ওই মুহূর্তে মনে পড়ে বেকার কন্যা, অশান্ত পুত্র, অসুখী সদা উৎকণ্ঠিত স্ত্রীসহ বিচ্ছিন্ন পরিবারটির কথা। সৈনিক বলে, ঠিক আছে যান।
ভাঙা স্বপ্ন জোড়া দেওয়ার জন্যে এটিকেও 888sport sign up bonusতে পাঠাই।
পাঁচ
সভাকক্ষ পরিপূর্ণ। ষাণ্মাসিক সভায় সারাদেশের উন্নয়ন কেন্দ্র থেকেই প্রতিনিধি পাঠানো নিয়ম। পালিতও হয়। নিজ নিজ কেন্দ্রের অগ্রগতি, আর্থিক বিবরণ, অসুবিধা, সমস্যা সবই তুলে ধরতে হয়। সভাকক্ষটিকে অন্য সময়ে প্রেক্ষাগৃহ হিসেবে ব্যবহার করা চলে বলেই শেষের দিকের সারিতে যাঁরা বসেন তাদের কথা শোনা যায় না। এজন্যে সকলকে সুশৃঙ্খলভাবে মঞ্চে এসেই যা বলার বলতে হয়। সভার জন্যে বিশেষভাবে প্রস্ত্তত মঞ্চ, খুব উঁচু নয়। একটিমাত্র ধাপে পা রেখেই উঠে যাওয়া যায়।
মঞ্চে এসে মহাপরিচালক তাঁর পাশে পরিচালকবৃন্দকে বসতে বলেন; কিন্তু কয়েকদিন আগের মহাসমাবেশে তাঁর পাশে এসব কর্মকর্তা নয়, ছিল দেশের শক্তিধর, ক্ষমতাবান বলে খ্যাত মহাজন সব। বিশাল প্রান্তর প্রায় পূর্ণ ছিল প্রতিষ্ঠানটির সভ্য ও সমর্থক দিয়ে সেদিন। মঞ্চ থেকে কিছুদূর সামান্য ডাইনে সম্পূর্ণ কার্যাবলি live chat 888sportে তোলবার জন্যে টেলিভিশন ক্যামেরা। বিশেষ ব্যবস্থায় সেটিকে মাটি থেকে অনেক উঁচুতে তোলবারও ব্যবস্থা আছে। মহাজন সকলে এসে মঞ্চে বসলে সঞ্চালক সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন। গণতন্ত্রের জন্যে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যে, বঞ্চিতের জন্যে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে এই সমাবেশে তাঁরা বলেন, কিন্তু শহর ও শহরতলির কি আরও দূরের নানা গ্রামগঞ্জ থেকে ঢোল-কাঁসা পিটিয়ে, প্রথমে বাসে পরে মিছিল করে, হাঁটিয়ে যাদের সমাবেশস্থলে আনা হয় তারা কিছু শুনতে পায় না। কোলাহল কি ক্লান্তি কি বাধ্যতামূলক উপস্থিতির উদ্বেগ, অসন্তোষ তাদের স্থির থাকতে দেয় না। উদ্দীপনী সব স্লোগানে গলা মেলায় তারা। এদের এক বক্তা এই মহতী সভার আয়োজনের জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিক গোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জানান। জনতার আন্দোলন কিছুতেই থামবে না। দাবিপূর্ণ হবেই, এই তাঁদের দৃঢ়বিশ্বাস। সূর্যের তাপে স্বেদস্নাত, ঝলসানো মুখ জনতা তাদের দাবি কি না-বুঝেই সম্ভবত বক্তার দৃঢ়বিশ্বাসকে সমর্থন করে। হাততালি, স্লোগানের শব্দে ময়দানের ঘাস, মাটি সব ভরে গেছিল ওইদিন।
সাধারণ দৈনন্দিন সুতির পোশাকে উঠে দাঁড়ান সর্বকর্মের নিয়ামক। কিছুকাল আগের সমাবেশ সার্থক করবার জন্যে সকলকে ধন্যবাদ জানান। নাগরিক গোষ্ঠী ওই সমাবেশে সাহায্যের জন্যে তাদের প্রতিষ্ঠানটিকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে, বলেন তিনি। এ জন্যে কিছু ত্যাগ, কিছু কষ্ট স্বীকার তো মেনে নেওয়াই যায়।
সভাকক্ষের সকলেই তাতে প্রতিবাদ জানায়। এ-তো তাদের কর্তব্য, জনগণের জন্যেই জীবনপাতে প্রস্ত্তত তারা – তিনি তো জানেন। সকলে একসঙ্গে এই কথা বলতে চাইলে তিনি তাদের থামান এবং একে একে মঞ্চের সামনে না এসেও নিজ স্থান থেকেই যা বলার বলবার অনুমতি দেন। সারাদেশে ছড়ানো সব উন্নয়ন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলেই তাদের কোন কষ্টের কথা স্বীকার করে না। সানন্দে সকলে সমাবেশে যোগ দিয়েছিল এ-কথাই জানায়। আর যদি থাকে আরো কোনো কষ্টের কাজ, ত্যাগের প্রয়োজন, সদাপ্রস্ত্তত তারা সেই কষ্ট স্বীকারে, ত্যাগে। শেষে সভাকক্ষে উপস্থিত কয়েকশো কণ্ঠ একত্রে দেশ, তাদের নেতা – সকলের জয় কামনা করে নানারকম ধ্বনি দেয়। নিয়ামক সকলকে শান্ত হয়ে বসতে বলেন। সভার কিছু আলোচ্যসূচি, করণীয় আছে তো।
ছয়
মধ্যাহ্নের আহারকালে নানা টেবিল ঘিরে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহ-পরিচালক ইত্যাকার নানা পদস্থ কর্মকর্তা নানা কর্মসূচি, আলোচ্য বিষয় ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে থাকেন। মহাসমাবেশের কথাও বলেন অনেকেই। তার সাফল্যের কথাও। তার ভবিষ্যৎ কর্মসূচির কথা। সামনে কেমন দিন আসতে পারে সে-সব কথাও। যদিও মুখে কেউ বলেন না যে, সে-সব দিনে কী ঘটবে, কিন্তু করণীয় কি তাঁরা জানেন।
সাত
সেদিনের মতোই আজো ফেরার মুখে আলো পড়তে থাকে। ছোট রাস্তা ছেড়ে বড় সড়কে উঠলে আলোর চিহ্নটুকু মুছে যায়।
আজ গাড়িতে আমরা দুজনই। সামনের আসনে চালক একা। একই অঞ্চলে থাকি বলে একসঙ্গে যাতায়াত।
সিমেন্টের মেঝেতে কম্বল পেতে শোয়া কি দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে সারি সারি বসা হাজতির সঙ্গে সময় কাটানো কিছু নয়। কয়েক সপ্তাহই তো – বলেছিল আমার সহকর্মী। কিছু না সেসব – যদি মেলে স্বপ্নপূরণের সন্ধান তাতে।
বড় রাস্তায় ওঠবার মুখেই বলে সে, ‘জীবন অনেক শেখায়, তাই না।’
আমি কিছু বলি না। মাঠের ফসল ক্রমে কৃষ্ণসবুজে চলে যায়। নয়ানজুলিতে শালুক ফোটা কি না দেখা যায় না। দেখা যায় আলোহীন দিনশেষে বাঁশের পারাপারের সেতু। গাড়ি থামে আবার।
সদাসতর্ক প্রহরী কাছে এলে আমিই জানালা খুলি। বলি, ফিরছি ঘরে। সারাদিনের কাজ শেষে। পরিচয়পত্র দেখাই। অস্ফুটে নামটি পড়ে সে। বারবার।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করলে জানালা তুলে দিই। মাঠের শেষে দূরের গাছপালা আলাদা করে চেনা যায় না। মাথার ওপর থেকে নেমে আসা আকাশ মিশেছে বৃক্ষশীর্ষে। সামান্য তার ছায়া বুঝি আছে সেখানে। না-দিন না-রাত্রির এই সময়ে ভয়ানক মন খারাপ করে। আমরা কেউ সে-কথা বলি না, অন্ধকারের দিকে তাকাই না, আলোর দিকেও নয়। ভাবি, এই দিনের 888sport sign up bonus কী করে স্বপ্নে পাঠাব আমি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.