মাহবুবা সিদ্দিকী
সদ্য পার্থে এসেছি। সকালবেলা আলফ্রেসকোর১ নিচে বসে চা পান করছি। সামনে চমৎকার সবুজ লন, যদিও চাপড়া চাপড়া ঘাসের গুচ্ছ লনটার সৌন্দর্যকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে। এর মধ্যে ছোট ছোট হলুদ ফুল ফুটে আছে। আকাশ গভীর নীল। এমন নীল আকাশ দেখেছিলাম অনেকদিন আগে সেন্টমার্টিনে। একমাত্র খারাপ আবহাওয়া ছাড়া এখানে এমন নীল আকাশ সব সময়ই দেখা যায়। এই নীলের মধ্যে বিচিত্র অবয়ব নিয়ে ভেসে থাকে হালকা সাদা মেঘ – কোনোটা কাশফুলের গুচ্ছের মতো, কোনটা অন্য কোনো অবয়বে। রাতের আকাশে ফুটে থাকে বড় বড় জোনাকির মতো অজস্র তারা, চাঁদটাকে মনে হয় অনেক কাছে।
প্রতিদিন আলফ্রেসকোর নিচে বসা আমার কাছে নেশার মতো হয়ে গেল। এ-সময়ে আমাকে নিয়মিত সঙ্গ দিত একটি দোয়েল আর একটি কিশোর-বয়স্ক ম্যাগপাই। প্রতিদিন সকালে ওরা দেয়ালের ওপরে বসত। এটা দোয়েল কি-না জানি না, তবে অবিকল আমাদের দোয়েলের মতো দেখতে। কিন্তু কোনোদিনই আমি ওর কণ্ঠে শিস শুনিনি, চুপচাপ বসে থেকে অস্পষ্ট কিছু ধ্বনি শুনিয়ে বাতাসে পাখা মেলে দিত। পার্থে থাকাকালে আমি একদিনই দুটো দোয়েল দেখেছি গাছের নিচে শুকনো পাতার মধ্যে, এ ছাড়া কেনোদিনই একসঙ্গে দুটো দোয়েল চোখে পড়েনি। একটা কর্কশধ্বনি শুনে আবিষ্কার করেছিলাম ম্যাগপাইটাকে। এদের কণ্ঠস্বরই কেবল কর্কশ নয়, আচরণেও এরা রুক্ষ। সুযোগ পেলেই ড্রাইভ দিয়ে মাথায় ঠোকর দিতে ওস্তাদ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব শহরই গড়ে উঠেছে সমুদ্র-উপকূলে, পার্থও এর ব্যতিক্রম নয়। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া পুরো অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অর্ধেক হলেও এর বেশিরভাগই মরু অঞ্চল, যে-কারণে সর্বত্র জনবসতি গড়ে ওঠেনি। পার্থ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী। সম্প্রতি এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে লোহা, তামা, তেল এবং গ্যাসের খনি, সেইসঙ্গে সোনা, হীরা এবং 888sport app মূল্যবান পাথর। তৈরি হচ্ছে বিশাল বিশাল রাস্তা, চলছে বিশালাকার ট্রাক এবং লরি। লরিগুলো দেখলে রীতিমতো ভয় হয়। একদিন রাস্তায় একটি লরি দেখলাম, সেটির নাকি বিয়াল্লিশটি চাকা। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের পর সেটি আর যাবে না। এ-লরির জিনিসগুলো বোঝাই হবে আরো বড় গাড়িতে যেগুলো রোড ট্রেন (road train) নামে পরিচিত। খনি-অঞ্চলে চলাচলের উপযোগী করে এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে একটি সুবিধা হলো – গাড়ি আর অর্থ থাকলে তল্পিতল্পা ছাড়াই যখন-তখন বেরিয়ে পড়া যায়। কিছুদূর পরপরই পেট্রোল পাম্প। সেইসঙ্গে পরিচ্ছন্ন টয়লেটের সুবিধা। প্রয়োজনে পেট্রোল পাম্পে গাড়ি পার্ক করে রাতও কাটানো যায়। ২০০৪-এ মেলবোর্ন থেকে সিডনি আসার পথে এমন অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। পার্থ থেকে খনি-এলাকাগুলোতে যাওয়ার পথে এ-ধরনের সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে পরিকল্পনা চলছে। খনিজসম্পদের প্রাচুর্য নিয়ে পার্থবাসীর মনেও বেশ খানিকটা গর্ববোধ আছে। এরা চায় না, পার্থের সম্পদ অন্য কোথাও যাক। এমনকি কেউ কেউ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে একটি পৃথক দেশ হিসেবে কল্পনা করেও স্বস্তিবোধ করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিংহভাগ আকর লোহার (iron ore) খদ্দের চীন। এখানকার ডলারের মূল্যমান অনেকটাই নির্ভর করে এসব iron ore-এর রফতানির পরিমাণের ওপর। এখানকার প্রতিটি বাড়ি সবুজ লনে 888sport app এবং বাগানবেষ্টিত। মধ্য অক্টোবরের পরে আমি যখন পার্থে যাই, তখন আকার এবং রঙের বৈচিত্র্যে গোলাপ আমার মনোহরণ করেছিল। চিরদিনই আমি পুষ্পপ্রেমী। আমার সারাজীবনের 888sport slot gameের অধিকাংশই পাহাড়-সমুদ্র-প্রকৃতি; কিন্তু এত গোলাপ কখনো দেখিনি। প্রতিটি সাবাবেই (suburb) চমৎকার টালি-বাঁধানো ফুটপাত – ঝকঝকে পরিষ্কার, পাশে সার করে লাগানো কৈশোরোত্তীর্ণ সবুজ ম্যাপল গাছ। আমার পুত্রবধূ নাঈমা আর আমি প্রতিদিনই একটা লেককে সার্কেল করে হাঁটতাম। একদিন শুধু হলুদ গোলাপে ছাওয়া একটি লন দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মোটাসোটা এক ভদ্রলোক গোলাপগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। আমাদের দেখে চোখ তুলে তাকালেন। বললাম, ‘তোমার বাগানটা সুন্দর, তার চেয়েও সুন্দর তোমার গোলাপগুলো।’ মৃদু হেসে বললেন, ‘আরো সুন্দর ছিল।’ মধ্য ডিসেম্বরে আমি যখন দেশে ফিরি, তখন গোলাপের মৌসুম প্রায় শেষ – জায়গা করে নিয়েছে বিচিত্র বর্ণের উজ্জ্বল মৌসুমি ফুল।
হাঁটার পথেই দেখা হতো কমবয়সী থেকে বয়সী মানুষের সঙ্গে। কেউ একা, কেউ সঙ্গী নিয়ে, কেউ-বা সপরিবারে বৈকালিক 888sport slot gameে বেরিয়েছে, সঙ্গে তাদের প্রিয় ডগি। বাচ্চারা বল ছুড়ে দিচ্ছে, ডগি মুখে করে নিয়ে আসছে। কখনো ডগির সঙ্গে বাচ্চারাও দৌড়াচ্ছে। প্রতি বিকেলেই কুকুর নিয়ে বের হয় এরা। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে, কুকুর থাকে গ্যারেজ-বন্দি। সুতরাং বৈকালিক 888sport slot game অবধারিত। এখানে একটি পরিচিত দৃশ্য – অনেকেই হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে ঘুরছে। নাঈমাকে প্রশ্ন করতেই হাসতে হাসতে জানাল, কুকুর রাস্তায় বা ফুটপাতে ‘poo’ করলে পরিষ্কার করবে কে? ওই বিষ্ঠা পরিষ্কার করার দায়িত্ব মালিকের, নয়তো ধরা পড়লে জরিমানা। একটু পরপর থামের মধ্যে পলিথিন রাখা আছে, প্রয়োজনে যে-কেউ ব্যবহার করতে পারে। মনে মনে ভাবলাম, মানুষ বাড়লে কি আর এটা সম্ভব হতো? তবে রক্তে এদের শৃঙ্খলার অভ্যাস ঢুকে গেছে। সুতরাং সম্ভব। নেহরীন (নাঈমা) এবং আমার নাতি রাইয়ানের কুকুরভীতি দেখার মতো। শৃঙ্খলিত অবস্থায় প্রভুর হাতে-ধরা কুকুর দেখলেও ওরা দুজনেই আমার পেছনে লুকাত। এদের এই কুকুরভীতি এতই দৃশ্যমান যে, মালিক নিজেই কুকুরগুলোকে সরিয়ে নিতেন। একদিন হাঁটছি – আমার পুত্র সপরিবারে খুব সন্ত্রস্তভাবে একটা কুকুরের গতিবিধি লক্ষ করছে, যদিও মুখে একটা কৃত্রিম হাসি। কমবয়সী মালিক ভুল বুঝলেন। এগিয়ে এসে আমার পুত্রকে প্রশ্ন করলেন, ‘খুব ভালো ডগি, আদর করতে চাও?’ নিমিষে সবার মুখের হাসি উধাও এবং আমার পুত্র এমনভাবে ‘no’ শব্দটা উচ্চারণ করল যেটা আমার কানেও অত্যন্ত রূঢ় শোনাল। ওকে বললাম, ‘একটা ধন্যবাদ জানালেই পারতে। এমনভাবে কথা বলা কি ঠিক?’ সেও অনুতপ্ত – বলল, ‘বলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছি এভাবে কথাটা বলা ঠিক হয়নি, sorry মা।’
অনেক বছর আগের একটা 888sport sign up bonus মনে পড়ে গেল। আমার এই ছেলেই তখন সম্ভবত কেজি টুতে পড়ত। ওর এক সহপাঠী ছিল ভীষণ দুষ্টু, তবে সে যে-কাজটি নিয়মিত করত তা হলো, বাড়ি থেকে আনা টিফিনের কিছুটা অংশ নিয়মিত স্কুলের একটা কুকুরকে খাওয়াত। একদিন দুষ্টুমি করে কুকুরটার দুই কান মলে দেওয়ার সময় কুকুরের কামড় খেয়ে বেচারাকে ইনজেকশন নিতে হয়েছিল। এই ঘটনাটিই ওর মনে ছাপ ফেলেছে কি-না জানি না। পেছনে তাকিয়ে দেখি কুকুরের মালিক দ্বিগুণ উৎসাহে তার ডগির গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে না-পাওয়া আদরের বেদনা ভুলিয়ে দিতে ব্যস্ত।
পৃথিবীর অন্যতম বাতাসবহুল শহর পার্থ, আর সমুদ্রের ধারে হলে তো কথাই নেই। পার্থে ধীরে ধীরে জন888sport free bet বাড়ছে, শুরু হয়েছে শহরায়ন। তবে সীমিত জন888sport free bet এবং প্রচুর জায়গা থাকায় পার্থ গড়ে উঠছে নান্দনিকভাবে। মূল শহরে হাতেগোনা কয়েকটি বহুতল অফিস ভবন – কিছু কিছু বাসভবনও গড়ে উঠেছে, তবে সেগুলোকে ঠিক বহুতল ভবন বলা যায় না। এখানে চমৎকার একটি নদী আছে – সোয়ান নদী। রাজহাঁসের মতোই দুলকিচালে বয়ে চলেছে। বিভিন্ন আইকনে এরা রাজহাঁসের ছবি ব্যবহার করে। যদিও জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ক্যাঙ্গারু। আপাতদৃষ্টিতে সোয়ান শান্তশিষ্ট নদী হলেও সমুদ্রের সঙ্গে যোগ থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এর শান্তশিষ্ট রূপ দ্রুত বদলে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় করে এরা গড়ে তুলছে পার্থকে। সোয়ান নদী থেকে একটা জলপ্রবাহ শহরে আনার কাজ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এই কৃত্রিম লেকের দুই তীর ধরে গড়ে উঠবে আকাশস্পর্শী ভবন, বাদ যাবে না গাছপালা এবং পুষ্পোদ্যান। কোলাহলমুক্ত ছিমছাম একটি শহর, টলটলে জলের প্রবাহ, গাছপালা, পুষ্পোদ্যান, বসার জায়গা, ফুটপাত এবং রাস্তা – যেন কল্পনার জগৎ। আর এই কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে এরা। এদের নান্দনিক-বোধের প্রশংসা না করে পারা যায় না।
পার্থের রাস্তাগুলো ক্রমশ চওড়া হচ্ছে – চলছে দিনরাত কাজ। মূল রাস্তাগুলোর পাশে কোনো বসতি থাকলে সেখানে উঁচু করে সীমানাপ্রাচীর তুলে দেওয়া হচ্ছে – উদ্দেশ্য রাস্তার যান্ত্রিক শব্দ যেন সাবাবের অধিবাসীদের বিরক্তির কারণ না হয়। সিডনি বিমানবন্দরে রাত দশটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত একই কারণে বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে। এ-ব্যবস্থা 888sport app কিছু দেশেও আছে। দুঃখ, হতাশা, বেদনা এবং ক্ষোভ জমে ওঠে মনে – যখন দেখি নিজ দেশে গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার পাইপ খুলে সকাল-দুপুর এমনকি মাঝরাতেও প্রচন্ড শব্দ তুলে নগরবাসীর ঘুম ভাঙিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি জানিয়ে দেয়, আমরা আছি – আমরা থাকব, যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য, শোষণ করার জন্য। মধ্যরাতে মনে পড়ে যায় সিকান্দার আবু জাফরের 888sport app download apkর পঙ্ক্তি – ‘কোথা হতে এলো এত ঈশ্বর! কত ঈশ্বর! কত ঈশ্বর।’ আরো আছে মধ্যরাতে আবাসিক এলাকায় ট্রাকের তীব্র হর্ন আর ব্যক্তিগত গাড়িতে অ্যাম্বুলেন্সের মতো হর্নের ব্যবহার। এসবের বিরুদ্ধে আইন আছে। মানে কে? প্রয়োগই বা করবে কে?
সুজলা-সুফলা বন-জঙ্গলে ছাওয়া 888sport appsের প্রকৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। আমরা নদী গ্রাস করেছি, পাহাড় ধ্বংস করেছি, এখন আমাদের চোখ সমুদ্রের দিকে। এরা অতি যত্নে অাঁকড়ে ধরে রেখেছে প্রকৃতিকে। প্রতিটি সাবাবের২ সঙ্গে আছে সবুজ ঘাসে-ছাওয়া একটি মাঠ, এক টুকরো জঙ্গল, সেইসঙ্গে একটি ছোট খাল বা লেক। আমরা যে-লেকটার ধার দিয়ে হাঁটতাম তার চারপাশে শনের ঝোপ, লেকের ওপরে ছোট একটি ব্রিজ আর ছড়ানো গাছপালা। হাঁসের দল সারাদিন মনের আনন্দে থেকে থেকে ডুবছে-ভাসছে, ক্লান্ত হলে গাছের তলায় বিশ্রাম নেয়। আবার কখনো চলে আসে ফুটপাতে। মনে পড়ে একদিন আমরা হাঁটছি আর একটি পরিবারও হাঁটছে। তাদের সঙ্গে দুটি শিশু। বড়টির বয়স চার-পাঁচ বছরের বেশি নয়। শিশুসুলভ চঞ্চলতায় হাত তুলে হাঁসগুলোকে তাড়া করতেই হাঁসগুলো শব্দ করতে করতে লেকের দিকে ছুটে গেল। শিশুটির মা তাকে আটকে ফেলে খুব নিচু স্বরে কিন্তু দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘নিষ্ঠুর হয়ো না।’ আমি অভিভূত হয়ে গেলাম, চকিতে ভেসে উঠল কতগুলো দৃশ্য, রাস্তার পাগল, দলবদ্ধ কিশোর, ঢিল, পথ-চলতি মানুষের তামাশা উপভোগ, বেধড়ক গরু পেটানো, অবোধ প্রাণীর চোখে কালো জলের রেখা; আর এখন তো আমরা মানুষ মারছি, ইট দিয়ে মাথা ছেঁচে দিচ্ছি, পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারছি। কী নিয়ে গর্ব করব আমরা! সবাই সবজান্তা, ভালো কথা বললে টিককিরি, উপদেশে বিরক্ত – তেড়ে আসতেও দ্বিধা করে না। এত অসহিষ্ণু এত নির্দয় হয়ে উঠছি আমরা!
এত ভালোর মধ্যেও আছে কিছু দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ। পৃথিবীর সব দেশেই আছে। এরাই নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করে। সুন্দর এবং ছিমছাম যে-এলাকাটিতে আমরা থাকতাম সেখানে আরো দুই-তিনটি বাঙালি পরিবারের বাস। এর মধ্যে একজনের শখ ক্রিস্টালের বিভিন্ন ধরনের শোপিস, ঝাড়বাতি এবং 888sport app সৌখিন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা। কয়েকদিনের অনুপস্থিতির পরে ফিরে এসে ভদ্রমহিলা সারা ঘরজুড়ে পেয়েছেন ভাঙা ক্রিস্টালের টুকরো অথচ কোনো জিনিস খোয়া যায়নি। বিচিত্র মানুষের মনের গতি! জন888sport free bet বৃদ্ধি এবং শহরায়নের অগ্রগতির সঙ্গে এ-ধরনের প্রবণতা বাড়ছে।
ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের সমাজব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সব ধারণা সব সময় অভ্রান্ত নয়, ব্যতিক্রম সব দেশে – সব সমাজেই আছে। বিশেষ করে পার্থে এরা পারিবারিক বন্ধন এবং দায়বদ্ধতা স্বীকার করে এবং রক্ষা করতে সচেষ্ট। আমার পৌত্রের স্কুলে অনুষ্ঠান। প্রাইমারি স্কুল কিন্তু বিশাল এলাকাজুড়ে মাঠ, চমৎকার সাজানো-গোছানো, এক টুকরো জঙ্গলের মতো জায়গা – ঝোপঝাড় এবং কিছু ঘাস, প্রকৃতিকে এরা ভোলে না। অনুষ্ঠান শেষ হতে দেরি হবে। অডিটোরিয়ামের বাইরে বসে আছি। একজন অস্ট্রেলিয়ান মহিলা গেট দিয়ে ঢুকে হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন, পাশে বসে টুকটাক গল্প করতে লাগলেন। জানলাম, ওনার স্বামী অস্ট্রেলিয়ান আর্মিতে কাজ করেন এবং মেয়ে এই স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে, হাতের টিফিন বক্সে মেয়ের জন্য খাবার। ভাবছিলাম, এত অপরিচিতদের মধ্যে আমার সঙ্গে পরিচিত হতে আসার মধ্যে কোনো মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করছে নিশ্চয়। বোঝা গেল, যখন জানলাম, তিনি সদ্য সিডনি থেকে এসেছেন এবং এখনো কারো সঙ্গেই পরিচয় হয়নি। নিজেই বললেন, তাঁর স্বামীর কর্মক্ষেত্র এখন পার্থ, এখানে কাউকে চেনেন না। আমাকে একলা বসে থাকতে দেখে পরিচিত হতে এসেছেন। একটু পরে নাঈমা এসে যোগ দিলো। আমার প্রশ্নের উত্তরে মহিলা জানালেন, তিনি ঘরকন্না নিয়ে ব্যস্ত, স্বামী-সন্তান-সংসারের দেখাশোনা করা ছাড়াও তাঁর বৃদ্ধ মায়ের সেবা-শুশ্রূষা করছেন, তাই বাইরে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হননি। সিডনিতে আমার দেবরের বিদেশিনী স্ত্রীকেও দেখেছি তাঁর বৃদ্ধ এবং অসুস্থ দাদিকে সেবা করতে। মনে হলো, কত ভুল ধারণা নিয়েই না আমরা থাকি। এরাও মা-বাবাকে আশ্রয় দেয়, সেবা করে, বরং আমরাই বোধহয় পারিবারিক বন্ধন থেকে সরে যাচ্ছি। প্রকৃত সত্য, ব্যতিক্রম সবখানেই আছে। তাছাড়া পার্থ এখনো কাঠখোট্টা শহর হয়ে ওঠেনি। মজার ব্যাপার হলো, পার্থে এরা সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে রীতিমতো উদার। এরা তিন-চারটা করে সন্তান নেয় এবং কম সময়ের ব্যবধানে। কেউ মাত্র স্কুলে ঢুকেছে, কেউ হাঁটছে, কেউ স্ট্রলারে বসে বা শুয়ে মায়ের সঙ্গী হয়ে স্কুলে আসছে।
বিদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা দূরত্ব – বিশেষত সে-জায়গাটিতে যদি ট্রেন বা বাসের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ না থাকে। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়িই ভরসা। আমার পুত্র রাশেদ চলে যায় অফিসে স্টেশনে গাড়ি রেখে। ফেরার পথে ট্রেন থেকে নেমে গাড়ি নিয়ে ফেরে। আমাদের দেশে এভাবে গাড়ি ফেলে রাখার বিষয়টি রীতিমতো অভাবনীয়। আমার পুত্রবধূর লাইসেন্স সিডনির, এখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে এক এস্টেটের লাইসেন্স অন্য এস্টেটে ব্যবহারযোগ্য নয়। পার্থের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, তখনো হাতে পায়নি। এজন্য আমরা শনি-রোববার ছাড়া দূরে যেতে পারতাম না। এর মধ্যে সিডনি থেকে আমার দেবর এলো। নিয়মানুযায়ী সে কিছুদিন এখানে তার লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারবে, সুযোগটা আমরা লুফে নিলাম। যদিও তার হাতে সময় মাত্র দশ দিন এবং এরই মধ্যে তাকে বিভিন্ন কাজ সারতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখ করা উচিত, আমার এ-দেবর আমাকে মাতৃসম মনে করে এবং আমার সন্তানদের জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে সে দ্বিধাহীন। তার প্রথম কাজ নাঈমার ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করা। লাইসেন্স আনতে হবে পোস্ট অফিস থেকে। পোস্ট অফিস দেখে থমকে গেলাম, এ-ধরনের পোস্ট অফিস দেখার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। ১৯০৭ সালে মার্কেট স্ট্রিটে এটির যাত্রা শুরু। দেখে মনে হয় বড়সড় একটা দোকান। বই, খাতা, কলম, পেনসিল, ক্যালকুলেটর, ক্যালেন্ডার, ম্যাগাজিন – কী নেই। এরই একপাশে দু-তিনটি কম্পিউটার আর জনাচারেক তরুণ-তরুণী নিয়ে পোস্ট অফিস। কিন্তু কাউকেই চৌকস বলে মনে হলো না। একবার কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায় তো আরেকবার প্রিন্ট বের করতে পারে না, ফোন করে প্রশ্ন করে। আমার মনে হলো আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এসব কাজে কত দক্ষ। এসব কাজ ওদের কাছে নস্যি। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা পর একজন এসে সমস্যার সমাধান করলেন – লাইসেন্স পাওয়া গেল। পরে শুনেছিলাম, এখানকার অনেকেই নাকি পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করতে পছন্দ করেন, সুতরাং আগ্রহ এবং দক্ষতা কম। তবে সময় বদলে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে একটা লম্বা সফরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করা হলো, গন্তব্যস্থল অলবানি – যাওয়া-আসা মিলে দুই দিন। কিন্তু নাঈমা এবং রাশেদের বন্ধুপত্নী টিনা পূর্ণ সুস্থ না থাকায় অলবানির পরিবর্তে মার্গারেট রিভার দেখতে যাওয়াই স্থির হলো। কুইনানা হাইওয়ে (Kwinana) ধরে যাত্রা শুরু হলো। শহর পার হতেই মাইলের পর মাইল খোলা প্রান্তরে কোথাও ঘোড়ার খামার, কোথাও ভেড়ার খামার, কোথাও পাইন বন, জঙ্গল এবং কিছু কিছু আমগাছ। এরপর শুরু হলো ঢেউ খেলান চমৎকার মসৃণ রাস্তা আর দুধারে আঙুরক্ষেত। মাচা বেঁধে লতানো গাছগুলোকে মাচার উপরে তুলে দেওয়া হয়েছে – কিছুটা অন্য ধরনের সবুজ। বানবারি পৌঁছে খোঁজ শুরু হলো মার্গারেট রিভার কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেল না। রাস্তার দিকনির্দেশনা, গাড়ির জিপিএস (GPS) সর্বত্র দেখা যাচ্ছে মার্গারেট রিভার এখানেই, এমনকি মার্গারেট রিভার দর্শনে আগ্রহীদের জন্য একটা রেস্ট হাউসের সন্ধান পাওয়া গেল কিন্তু নদীর দেখা মিলল না, যা পাওয়া গেল তা কোথাও সংকীর্ণ কোথাও খালের মতো, ওপরে ব্রিজ আছে পারাপারের জন্য। এত নামডাক যে-নদীর, সেটি নিশ্চয়ই বড় হবে – এমন তো হতে পারে না যে, এরা নদী দখল করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে। সুতরাং নদী কোথাও আছে। সবাই ক্ষুধার্ত সুতরাং ছোট একটি কমপ্লেক্সে যাত্রাবিরতি। এখানে খাবারের দোকান, কাপড়ের দোকান এবং 888sport app কয়েকটি দোকান মিলে ছোট্ট একটি শপিং কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। সম্ভবত পর্যটকরাই খদ্দের। খাবার দোকানটিতেই ভিড় এবং দীর্ঘ ‘কিউ’ দিয়ে যে-খাবারটি সবাই কিনছে সেটি Fish and Chips। আমার কাছে নতুন হলেও এদের কাছে খুবই পরিচিত এবং পছন্দের। প্লেট-ভর্তি আলুর চিপসের মধ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে ভাজা সামুদ্রিক মাছ। পাকিস্তানি দোকান, কর্মচারীরাও পাকিস্তানি। জীবিকার সন্ধানে 888sport appsি, ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং এশিয়ার 888sport app দেশের অধিবাসীরা আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে – প্রত্যন্ত অঞ্চলও বাদ নেই। জীবিকা বলে কথা। এবার ফেরার পালা। ফেরার আগে আবার মার্গারেট নদীর খোঁজ, পাওয়া গেল এক চমৎকার নদী। তবে মার্গারেট কি-না নিশ্চিত হওয়া গেল না। সুরক্ষিত এ-নদীটির পাড় থেকে সরে আসতে ইচ্ছে করছিল না – ‘মন চাহে না যেতে ফেলিলে একি দায়ে’, তবু ফিরতে হয় বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। এবারের যাত্রা অগাস্থায় – সমুদ্র-দর্শনে। আমরা যখন পৌঁছলাম তখন বিকেল সাড়ে ৩টা, মাত্র বিশ মিনিট আগে ফেরি চলে গেছে। অনুতাপের সীমা রইল না, দেখা হলো না ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগরের মিলনরেখাটি, দেখা হলো না আমার প্রিয় ডলফিনের হুটোপুটি এবং আনন্দ-কোলাহল। এখানে সৈকত খুব বেশি চওড়া নয়। তারই মধ্যে বিশালাকৃতির পাথর ফেলে এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে সমুদ্রের কিছুটা ভেতরে যাওয়া যায়। একটি ব্রিজ আছে। এটি দিয়েও সমুদ্রের কিছু ভেতরে যাওয়া যায়। ব্রিজ থেকে পানিতে কেউ যেন লাফিয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্ক করে নোটিশ দেওয়া আছে; কিন্তু কে শোনে! একদল তরুণ এই কাজটিই করছে একাধিকবার এবং এরা এশিয়ান। দু-তিনজন ভদ্রলোক একটি কমবয়সী বাচ্চা নিয়ে ঘোরাঘুরি শেষ করে পার্কেই আহারপর্ব শেষ করে গাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লেন। বোঝা গেল এরা মুসলমান, তবে কোন দেশের তা বোঝা গেল না।
আমার পৌত্র রাইয়ান আর আমি হাত ধরাধরি করে প্রায় সমুদ্রের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। আমার নয় বছর বয়সী নাতিটা ভীতুর ডিম। তাকে আনতে কষ্ট হলেও পাথর পেরিয়ে যখন সমুদ্রের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হলো, তখন সে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বসেই রইল। রীতিমতো সমুদ্রপ্রেমিক। নামার সময় এই সমুদ্রপ্রেমিক ভীতু বালক আমার হাত ধরে অভিভাবকের মতো নিচে নামিয়ে আনল, কোন পাথরে পা রাখলে আমি পড়ে যাব না সে-নির্দেশনাও সে-ই দিলো। আশ্চর্য! ছোট্ট একটি শিশু কখন যে পরিণত বয়সের মানুষের মতো আচরণ করে, কখন তার হৃদয় কোন আবেগে উদ্বেলিত হয় – বলা কঠিন। মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথের উক্তি – ‘বালিকা রতন আর বালিকা রহিল না। সেই মুহূর্তেই সে জননীর পদ অধিকার করিয়া বসিল।’ আর দশ-বারো বছর বাঁচলে এ-শিশুটি তরুণ হবে, আমার মহাপ্রস্থানের পথে কাঁধ দেবে, কবরে দেবে একমুঠো মাটি। জীবন কী বিচিত্র! পাথর থেকে নামার সময় আমার নাতির কান্ড দেখে হাসছিলেন এক ভদ্রলোক। একটু হাসিবিনিময়। পাড়ে এসে দেখলাম তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ক্যারাভানে সংসার নিয়ে বেরিয়েছেন। সমুদ্রস্নানের পরে তাঁদের কাপড় শুকোচ্ছে ভ্যানের পাশে এবং দুজনেই গাড়ির ভেতর আধশোয়া হয়ে বইপড়ায় নিমগ্ন। হয়তো এখানেই কাটাবেন কয়েকদিন তারপর আবার যাত্রা। এরা অবসর উপভোগ করতে জানে, বাঁচতে জানে – জীবনের পাত্র পূর্ণ করে বাঁচে।
এ-সৈকতটা থেকে আর একটু দূরেই আর একটা ঢালু জায়গা নির্জন ঝোপের পাশ দিয়ে নেমে সৈকত ছুঁয়েছে। ওখানে নামলেও বেশিক্ষণ থাকার সাহস হলো না। অস্ট্রেলিয়ার পোকামাকড়ের বিষাক্ততার কথা সর্বজনবিদিত। এর পাশেই সবুজ লনে-ঘেরা সুন্দর একটি বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি, অবসরযাপন এবং সমুদ্র-দর্শনের চমৎকার ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে একদিন গেলাম বিখ্যাত অ্যারলুয়েন (Araluen) পার্ক দেখতে। এই বোটানিক পার্কটিকে তারা অভিহিত করেছে ‘পাহাড়ের মাঝে স্বর্গ’ (heaven in the Hill) নামে। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে অাঁকাবাঁকা পথে গাড়ি চলছে, পথের দুধারে এই প্রথম চোখে পড়ল শস্য এবং সবজিক্ষেত। সবুজ আর সবুজ, ছবির মতো সুন্দর এবং গোছানো। তবে শৈশবে দেখা প্রান্তরের পর প্রান্তর জুড়ে বাতাসে ঢেউ খেলে যাওয়া সবুজ ধানক্ষেতের সৌন্দর্য আজো 888sport sign up bonusতে অম্লান। সেই ধানক্ষেত ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস যেন আজো আমাকে ছুঁয়ে যায়। অতঃপর পাহাড়ের ওপরে পৌঁছানো গেল, প্রবেশপথের পাশেই গাড়ি রাখার জায়গা। বিকশিত পুষ্পভারে সজ্জিত মাঝারি গড়নের কিছু গাছ ছায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারই একপাশে টিকিট কাউন্টার। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল প্ল্যাকার্ডে লেখা সাবধানবাণী – ‘Be aware of snakes’। আমার বীর পৌত্র গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গেল। অনেক কষ্টেও তাকে নড়ানো গেল। পুষ্পসাজে সজ্জিত মনোমুগ্ধকর একটি পার্ক। সাধে কি এরা বলে, ‘মন্ত্রমুগ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্ত্তত হও’ (Prepare to be enchanted)!
উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত উপত্যকা, দো-অাঁশ জাতীয় মাটি, প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং শীত মৌসুমের ঠান্ডা অ্যারলুয়েনকে একটি বিশ্বমানের পার্কে উন্নীত করেছে। ১৯২৯ সালে জে. জে. সাইমন ১৫০ একর জমির ওপরে ‘YAL’ (Young Australia League)-এর জন্য একটি ‘হলিডে ক্যাম্প’ স্থাপন করেন, পরবর্তীকালে এখানে গড়ে ওঠে তাঁর স্বপ্নের উদ্যান। দীর্ঘ উপত্যকাটির খাঁড়িতে বহমান জলধারার কারণে এখানে শীতল এবং আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজমান, যা একটি আদর্শ উদ্যান তৈরিতে সাহায্য করেছে। সাইমন এ-উপত্যকাটির নামকরণ করেছেন ‘Araluen’ – একটি ‘aboriginal’ শব্দ – যার অর্থ একাধারে ‘জলের সংগীত’, (singing waters), ‘বহমান জল’ (Running Waters) অথবা ‘লিলির জগৎ’ (Place of Lilies)। দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত গাছপালা এখানে তাদের বংশবিস্তার করেছে। ‘প্রভাতবেলায় হেলা ভরে করে/ অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে/ রডোডেনড্রনগুচ্ছ’ যেমন এখানে আছে তেমনি আছে ‘সাঁওতাল মেয়ের কালো গাল’ আলো করা ক্যামেলিয়া। আরো আছে ম্যাগনোলিয়া, লাইলাক এবং লিলি। গড়নে এবং রঙের বৈচিত্র্যে এরা অসাধারণ। গাঢ় রঙের বৈচিত্র্যে সৃষ্টি হয়েছে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। থোকায় থোকায় ফুটে আছে বিচিত্র বর্ণের গোলাপ। ঝরে পড়া গোপালের পাপড়ি প্রতিটি গোলাপগাছের নিচে রচনা করেছে পুষ্পশয্যা।
এ-উদ্যানটির ভেতরের বিভিন্ন নির্মাণকাজে সহায়তা করেছেন মূলত লিগের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা। স্থপতি ছিলেন পার্থের আর্কিটেক্ট W.G. Bennett। অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় কাঠ ও পাথর। পার্কে আছে ‘Tea Room’, ‘Gift Shop’, ‘ইলেকট্রিক স্কুটার’ এবং ছোট্ট ট্রেন, তবে সব ধরনের সুবিধা পেতে হবে দর্শনীর বিনিময়ে। আছে বার-বি-কিউ করার সুবিধা এবং অবাধ ছবি তোলার সুযোগ, তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ-সুবিধাগুলো পেতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হয়। 888sport app পার্কের মতো ইন্টারনেট বা অন্য কোনোভাবে যোগাযোগ করে বিয়ে এবং 888sport app অনুষ্ঠান করা যায়। নির্ধারিত পথ ছাড়া ঝোপঝাড়ে ঢোকা, সাঁতার কাটা নিষেধ, যা এরা মেনে চলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৮৮ জন ‘YAL’ সদস্যের 888sport app download for androidে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘Grave for unforgotten’।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘YAL’ অ্যারলুয়েন পার্ক বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলে স্থানীয় জনগণের চাপে স্টেট গভর্নমেন্ট ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে পার্কটি কিনে নেয় এবং ১৯৯০-এর জুলাইয়ে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে একীভূত করা হয়। ২০০৯-এর ৩০ নভেম্বর এটি ‘Development of Environment Conservation (DEC)’-এর কাছে তিন বছরের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
যতদূর মনে পড়ে, ২৪ নভেম্বর আমরা ‘ইয়ানচিপ’ পার্কে যাই। আমাদের সঙ্গে ছিল আমার পুত্রের বন্ধু অনিমেষ এবং তার স্ত্রী টিনা। কোথাও সবুজ, কোথাও বিবর্ণ জঙ্গল পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম পার্কে। সুন্দর সংরক্ষিত পার্ক, পার্কের রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সুন্দর লেক। টিকিট কাউন্টারের কাজ সেরে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম, সবাই ক্ষুধার্ত। প্রায় নির্জন জায়গা। এমনিতেই জনবসতি কম আর এসব পার্কে মূলত পর্যটকরাই বেড়াতে আসেন। আমরা বারান্দায় একটা টেবিল বেছে নিলাম, প্রকৃতি-দর্শন এবং ক্ষুধা নিবারণ দুটি কাজই একসঙ্গে হবে। চারদিকে বিচিত্র পাখির ডাকের মধ্যে একটা কর্কশ কণ্ঠ শোনা গেল – ঘাড় ঘোরাতেই দেখি লাল ঠোঁটের সাদা কাকাতুয়া। এর অন্য একটি নাম আছে। সেটি মনে পড়ছে না। শুধু গাছের ডালেই নয়, মাটিতেও নির্ভয়ে দুলকিচালে হেঁটে বেড়াচ্ছে। পুরো পার্কটাই যেন তাদের অভয়ারণ্য। মাঠে একটা টেবিলে একজন মহিলা আহার-পর্ব সারছিলেন। কোনো কাজে একটু উঠেছেন ঘাড় ফিরিয়ে দেখেন তাঁর স্যান্ডউইচ উধাও – কাকাতুয়ার কান্ড!
আমার প্রধান লক্ষ্য এখানকার ক্রিস্টাল গুহা দেখা, তার আগে পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য নাঈমা, টিনা আর আমি একটা বেঞ্চে বসলাম। আমাদের সামনে কিছুটা সবুজ মাঠ, তারপরে একটা পিচঢালা পথ, আবার কিছুটা সবুজের পরে একটা লেক। একটু পরেই আমাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আরো কিছু দৃশ্য যোগ হলো। একটি ছোট্ট খোলা জিপে বধূবেশী এক তরুণী। তবে তার গাউনটি সাদা নয়, হালকা বাদামি, অনেকটা ধানি রঙের কাছাকাছি। একটু দূরেই লেকের পাড়ঘেঁষা পার্কে সুবেশধারী অতিথিদের সমাবেশ। সবাই হেঁটে পার্কে ঢুকছেন। মিউজিক বাজছে, তবে তারস্বরে নয় – মৃদুভাবে। অতিথির 888sport free bet একেবারে নগণ্য। নববধূর গাড়ি অনুষ্ঠানের কাছাকাছি আসতেই দুটি ছোট মেয়ে গাড়ির সামনে দুপাশে সুদৃশ্য দুটি ছাতা মেলে ঝুঁকে দাঁড়াল। আর একজন তরুণী হবু-বধূর হাত ধরে নামিয়ে অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে গেল। এত কম অতিথি দেখে আমি বিস্ময় প্রকাশ করতেই টিনা জানাল – এখানে অল্পসংখ্যক অতিথির উপস্থিতিতে শুধু বিবাহ-পর্ব সারা হবে, রাতে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে পার্টিতে আসবেন অন্য অতিথিরা।
আমরা ক্রিস্টাল গুহার দিকে হাঁটতে লাগলাম। কাছেই গুহা। এখানে বেশ কিছু দর্শনার্থী। 888sport app দর্শনার্থীদের সঙ্গে আমি আর আমার পুত্র খুব সাবধানে গুহায় নামতে লাগলাম কারণ একসঙ্গে কয়েকজন, অথবা দ্রুত গুহায় নামা নিষেধ। ভেতরে খুব কম আলো দেওয়া আছে। বেশি আলো, বেশি শব্দ গুহার ভারসাম্য নষ্ট করে। অতিরিক্ত কম্পন বিনষ্ট করতে পারে এই মূল্যবান সম্পদকে। অতিরিক্ত পানি যাতে গুহায় প্রবেশ করতে না পারে সে-ব্যাপারে এরা যেমন সচেতন, তেমনি এর প্রাকৃতিক আর্দ্রতাও যেন নষ্ট না হয় সে-ব্যবস্থাও করা আছে। ভেতরটা ঠান্ডা আর গুহার ছাদে শিশিরবিন্দুর মতো পানি জমে আছে – এগুলোই একসময়ে হয়তো ক্রিস্টালে রূপান্তরিত হবে। গুহা আবিষ্কারের ইতিহাস বলে চলেছেন একজন মহিলা গাইড। মাঝে মাঝে টর্চ ফেলছেন বিচিত্র ক্রিস্টালগুলোর ওপর। এ-ক্রিস্টালগুলোর অধিকাংশই কিছুটা হালকা খয়েরি আর কিছু খয়েরি সাদা মেশানো। কোনোটা ছাদ থেকে নেমে এসেছে গাছের শেকড়ের মতো, কোনোটা বল্লমের তীক্ষ্ণ ফলার মতো, আবার কোথাও জটার মতো। একটা মূর্তির মতো ক্রিস্টালের ওপর টর্চের আলো ফেলে গাইড বলে উঠলেন, ‘দেখো, দেখো ঠিক যেন যিশু।’ আমার মনে হলো ‘এতো রবীন্দ্রনাথ।’ গুহায় অসংখ্য ক্রিস্টাল। ঘুরতে ঘুরতে মনে পড়ে গেল ২০০৪-এ নিউ সাউথ ওয়েলসে দেখা ছোট্ট একটি গুহার কথা। বড় একটা টিলার মতো ঢিবি একদিকে গুহার মুখ। গুহায় ঢুকে দর্শনার্থীরা যখন একটি সমতল জায়গায় মিলিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল, তখনই দপ করে সব আলো নিভে গেল। নিকষ কালো অন্ধকার, ঠান্ডা সুনসান নিস্তব্ধতা। কয়েক সেকেন্ড পরেই আলো জ্বলে উঠল। এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করা শুধু উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করার জন্য। এ অল্প সময়ের মধ্যেই আমার মনে হলো এই নিস্তব্ধতা, এই নিকষ কালো অন্ধকার আর ঠান্ডায় প্রকৃতি রচনা করে চলেছে তার অনবদ্য সৃষ্টির কাজ কী নিপুণ দক্ষতায়! এ-গুহাটা ছিল ছোট। অপ্রশস্ত একটি জলের ধারা, তার ওপরের পাথুরে ছাদ থেকে সাদা এবং স্বচ্ছ ক্রিস্টালগুলো নেমে এসে বিচিত্র মূর্তির আকার নিয়েছে। চমৎকার এ প্রাকৃতিক 888sport live chat মনকে বিস্ময়াভিভূত করে।
ক্রিস্টাল গুহা থেকে বেরিয়ে দেখলাম ক্যাঙ্গারু আর কোয়ালা। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে দেখা হয়েছে ক্যাঙ্গারু পার্ক, কোয়ালা পার্কে গাছে গাছে কোয়ালা আর কোয়ালাশিশু, সে-তুলনায় এ-888sport free bet নিতান্তই নগণ্য।
দিন-ক্ষণ-তারিখ আমার প্রায় মনে থাকে না বললেই চলে, কিন্তু নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখটা খুব মনে পড়ে। আকাশে পূর্ণ চাঁদ ঝকঝকে জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে প্রান্তর। এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। কী অপূর্ব প্রশান্তি! মনে পড়ল আমার এই প্রবাসী ছেলেটি যখন ছোট্ট ছিল তখন ওর পাঠ্যবইয়ের একটি পঙ্ক্তি – ‘দুধভরা ঐ চাঁদের বাটি ফেরেশতারা উলটায়’। এ-অংশটুকু ওর খুব পছন্দের ছিল, পড়ত আর একাই হাসত। মনে হয় দুধের বাটি উলটে দেওয়ার বিষয়টি ওর কাছে খুব মজার ব্যাপার ছিল। সে নিজেও তার গ্লাস ভরা দুধ চুপি চুপি বেসিনে উলটে ফেলে দিত তার ফুপুর যোগসাজশে। কত 888sport sign up bonus! প্রান্তর-ভাসানো এই জ্যোৎস্নায় মনে হলো, আহা! এ-মুহূর্তে আমি যদি ওই রবীন্দ্রসংগীতটা শুনতে পারতাম ‘নিবিড় অমা তিমির হতে বাহির হল জোয়ার-স্রোতে/ শুক্লরাতে চাঁদের তরুণী… উৎসবের পসরা নিয়ে…/ পূর্ণিমার কূলেতে কি এ/ ভিড়িল শেষে তন্দ্রাহরণী \’
২৮ তারিখ সকাল থেকেই প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস, ৩০ তারিখ মেঘ ও রৌদ্রের খেলা এবং ঠান্ডা। পার্থের আবহাওয়া এমনই খেয়ালি।
আমার দেশে ফেরার সময় এগিয়ে আসছে। ছেলের একান্ত ইচ্ছা আমার উপস্থিতিতেই একটা বাড়ি কেনা। যে-বাড়িটায় ওরা আছে, সেটা অনেক বড় এবং মালিক আর্মির কেউ একজন। এরা সবাইকে ভাড়া দেয় না। তাদের পেশার লোকজনই অগ্রাধিকার পায়। সিডনি থেকে হঠাৎ বদলি হয়ে এখানে ওরা এই বাড়িটা এক বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছিল। এখন সময় শেষ এবং নেভির একজন ভাড়া নিচ্ছেন। আমার দেবর আর পুত্র মিলে ইন্টারনেটে বাড়ির খোঁজ শুরু করল। ছেলের সময়াভাব, আমরাই বাড়ি দেখতে লাগলাম। এখানে ভাড়া বাড়ি হোক বা নিজের বাড়িই হোক, সামনের এবং পেছনের লন পরিচ্ছন্ন রাখা, ঘাস কাটা এবং আগাছা পরিষ্কার করার দায়িত্ব বাড়িতে বসবাসকারীর, নয়তো বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। ভাড়া নেওয়ার আগে এখানেও অগ্রিম দিতে হয়। তবে বাড়ির মালিককে নয়, এজন্য একটা independent governing body আছে। এদের কাছে অর্থ জমা দিতে হয়। রিয়াল এস্টেটের এজেন্টরা সাধারণত তিন মাস পরপর ভিজিটে আসে, কোনো সমস্যা হলো কি-না, কিছু ভাংচুর হলো কি-না তা দেখতে। বিষয়গুলোর একটিও নঞর্থক হলে কাটা যাবে deposit-এর অর্থ থেকে। বাড়ি ভাড়া দেওয়া থেকে কেনাবেচা সবকিছুই রিয়াল এস্টেটের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই হয়। বাড়ি দেখানোর সময়েও মালিক থাকেন না। আমাদের বাড়ি কেনার সময়ে এ-ধরনের দুটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ইন্টারনেটে যোগাযোগ করার পরে ওরা একটি সময় নির্দিষ্ট করে দেয়। সবাই ওই সময়ের মধ্যেই বাড়ি দেখতে যান। মধ্যস্থতাকারীরা পুরুষ বা মহিলা যিনিই থাকুন কথাবার্তা এবং পোশাক অত্যন্ত চৌকস। বাড়ি দেখানোর সময়ে কোনো মালিকই উপস্থিত থাকেন না। একটি বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ছিলেন। কিন্তু আমরা ঢোকার পূর্বমুহূর্তে তাঁরা ক্যারাভ্যানে উঠে বসে থাকলেন। আর একটি বাড়িতে মহিলা একলা থাকেন, একমাত্র সঙ্গী পোষা কুকুর। সন্তানরা নিজেদের কর্মস্থলে থাকে। দোতলা বাড়ি তার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয় তাই বেচার উদ্যোগ। বাড়ি দেখার জন্য আমরা যখন ঢুকলাম, তিনি লনের পাশে রাখা গাড়িতে গিয়ে বসলেন।
আমাদের বাড়ি কেনার সময়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে ক্রেগ নামে এক তরুণ। আমরা 888sport appsি শুনে বেশ কৌতূহলী হলেন এবং জানালেন তিনি দিল্লির মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন পড়তে, সেখানেই তাঁদের পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয়। এই যুগলের দুটি সন্তান এবং তারা সুখী। ক্রেগ পৈতৃক ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত। আমার মনে হলো দেশের কথা। কত উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ে চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। দক্ষতা এবং সততার সঙ্গে ওই ধরনের ব্যবসা করতে পারলে দুপক্ষই লাভবান হতো। মধ্যস্থতাকারী, সোজাসাপটা ভাষায় আমরা যাকে দালাল বলি, মানুষ তাদের এড়িয়ে চলতে চায়। আমাদের সততার বড় অভাব। কারো ওপর আস্থা রাখা বড় কঠিন। বাড়ি পছন্দ হলে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের পরে সবচেয়ে বেশি অর্থ যিনি অফার করবেন প্রথমত তাকেই মনোনীত করা হয়। সামনের লনের ‘For sale’ প্ল্যাকার্ড সরিয়ে সেখানে রাখা হয় ‘Under offer’ এবং বিক্রি হয়ে গেলে লেখা থাকে ‘Sold’ অর্থাৎ আর কারো ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতার ভূমিকায় চীনারাই অগ্রগামী। পার্থে বাঙালি বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বাড়ছে এই চৈনিকরা। এরা ব্রিফকেসভর্তি নগদ ডলার দিয়েও বাড়ি কেনে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই অগ্রাধিকার পায়।
উদ্ভট উদ্ভট ঘটনা ঘটে এসব ধনী দেশে। এসব দেশেও দরিদ্র আছে, ফুটপাতে ঘুমানোর মতো মানুষও আছে। একবার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আলাপ-আলোচনার পরে স্থির করলেন, এসব দরিদ্র মানুষের কষ্টের অভিজ্ঞতা তাঁদের অর্জন করতে হবে, তবেই তাঁরা দরিদ্র মানুষের জন্য সত্যিকারের কিছু করতে পারবেন। যথারীতি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে রাত্রিযাপন বিষয়ে সমাধা হলো কিন্তু সমস্যার কী সমাধান হলো তারাই জানেন। আসলে এটা ছিল একটা ‘networking event’।
বিখ্যাত শপিংমল ‘Woolworth’ এবং ‘Coales’, পৃথিবীজুড়ে শত শত এদের শাখা। আমাদের দেশের মীনাবাজার, আগোরা, নন্দনের যাত্রাও এ-ধরনের শপিং মলের অনুকরণেই তবে স্বল্পপরিসরে। একবার ছোট ছোট দুগ্ধ ব্যবসায়ী দুধের দাম বাড়িয়ে দেয় কিন্তু বড় শপিংমলগুলো বাড়তি দাম প্রত্যাখ্যান করে পুর্বানির্ধারিত মূল্যেই দুধ বেচতে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান ASIC-এর কাছে জবাবদিহি করতে গিয়ে তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে এই বলে যে, তারা ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করেছে, নিজের নয়। ক্ষতিগ্রস্ত হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিশ্বজুড়ে বণিক সম্প্রদায় একই সূত্রে বাঁধা।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার গুণগত মান ভালো হলেও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মান আশানুরূপ নয়, বিশেষত অঙ্ক এবং 888sport apkের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে 888sport apkের স্থান ২৫তম। শিক্ষা কমিশনের অভিযোগ, lack of funding-এর জন্য দায়ী।
পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের মতো পার্থেও কিছু শিক্ষিত বাঙালি এবং ভারতীয় ট্যাক্সি চালান। আমাদের পরিচিত এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকও ওই কাজ করছেন। তাঁর স্ত্রী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করছেন, বাড়ি কিনেছেন, বাচ্চারা স্কুলে পড়ছে। নিজেদের গাড়ি সুতরাং যেদিন ভালো লাগে না, সেদিন গাড়ি নিয়ে বের হন না। বিকেলে বাচ্চাদের সঙ্গে সাইকেল চালান। ভালো আছেন। তবে ট্যাক্সি সার্ভিসের কমিশনার, যতদূর মনে পড়ে অধ্যাপক এলেনের মতো এরা যা উপার্জন করেন তা যথেষ্ট নয়। কারণ ১৯৯০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত লাইসেন্স চার্জ বেড়েছে চারশোগুণ। চালকরা যা উপার্জন করেন তার প্রায় সিংহভাগই চলে যায় সরকারি তহবিলে। সুতরাং লাইসেন্স চার্জ কমানোর সিদ্ধান্তের প্রতি এরা জোর দিয়েছেন। এতে শুধু ট্যাক্সিচালকরাই উপকৃত হবেন না, কম ভাড়ায় যাত্রীদেরও সেবা দেওয়া যাবে।
ডিসেম্বরের এক বিকেলে চমৎকার মসৃণ ঢেউ-খেলানো পথ ধরে আমরা গেলাম ‘Freementile Port’-এ। পোর্টের একটু আগে ডানদিকে একটা চরকি, মেলায় যেমন দেখা যায় অনেকটা সেরকম। এসব চরকি আধুনিক সংস্করণ, এখন সবখানেই দেখা যায়। পোর্টে অনেক লঞ্চ নোঙর করা। মৎস্যশিকারিরা এগুলো নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। আমরা সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ালাম। যেমন বাতাস তেমনি ঠান্ডা, সেইসঙ্গে উন্মাতাল ঢেউ; বেশিক্ষণ দাঁড়ানো গেল না। অনিমেষের প্রস্তাবমতো আমরা একটা ক্যাফের বারান্দায় পাতা চেয়ারে বসলাম – উদ্দেশ্য একই সঙ্গে লঞ্চ, ঢেউ আর সমুদ্রদর্শন সেইসঙ্গে টাটকা সামুদ্রিক মাছভাজার স্বাদ গ্রহণ। কিন্তু বাতাসের দাপটে সেখানেও বসা গেল না। একটু পরে ক্যাফের ভেতরে জায়গা পেয়ে আমরা একটি বড় টেবিল ঘিরে বসলাম। দেয়ালে হ্যাটপরা একজন মানুষের ছবি, পাশে দোকানের নাম লেখা ‘Kailesh Fish Market Cafe’। আমরা অনিমেষের আমন্ত্রিত অতিথি। সুতরাং অতিথি-সৎকারের দায়িত্বটা সেদিন তার। অনিমেষ 888sport appsের ছেলে হলেও পড়ালেখার সূত্রে দিল্লিতে রাশেদের সঙ্গে ওর পরিচয়। সেদিনের আমন্ত্রণের উপলক্ষ আমি। সুতরাং আমিই মধ্যমণি। আমার জন্য স্পেশাল ডিশ। ওরা পাঁচজন মিলে যে-ডিশ নিল তার চেয়েও বেশি মূল্য আমার ডিশের। এ-ডিশটিতে বিভিন্ন ধরনের অচেনা সামুদ্রিক মাছ আর আলুর চিপস তো এদের সবকিছুতেই আছে। ধোঁয়া-ওঠা খাবারের ওপরে রিং রিং করে কাটা খাবারটা আমাকে আকর্ষণ করছে। একটা টুকরো মুখে দিলাম কিন্তু আমার বাঙাল জিভে খাবারটা মোটেই সুস্বাদু মনে হলো না, কেমন স্পঞ্জি। পাশের টেবিলে কয়েকজন তরুণ, সম্ভবত এরা জাপানি, কাঁকড়ার খোলস ভেঙে মহানন্দে খেয়ে চলেছে। হঠাৎ মনে হলো, আমি যেটা খাচ্ছি সেটা অক্টোপাস নয় তো! অনিমেষকে প্রশ্ন করতেই উত্তর দিলো ‘আন্টি খান, খুব ভালো মাছ, বেবি অক্টোপাস।’ আমি জানি, এ-মাছ মূল্যবান, এমনকি অনেক বাঙালিও এর ভক্ত। কিন্তু আমি ভেতো বাঙালি ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে কাঁটাচামচ ছেড়ে দিয়ে বললাম, ‘অসম্ভব! আমি এটা খাব না।’ রাশেদ বলল, ‘অনিমেষ অনেক শখ করে তোমার জন্য স্পেশাল ডিশ নিয়েছে, খাও মা।’ আমি অনড়, হাত গুটিয়ে বসে রইলাম। শেষ পর্যন্ত ছেলের ডিশ আমি নিলাম, বিভিন্ন মাছের সঙ্গে বেবি অক্টোপাসের সৎকার করল ওরা দুই বন্ধু। ঘটনাটা মনে করলে অস্বস্তি বোধ হয়, লজ্জিত হই, তবে বেবি অক্টোপাস না খাওয়ার জন্য নয় – ওরকম অশোভনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য।
১৭ ডিসেম্বর আমার দেশে ফেরার কথা। তখনো কিংস পার্ক দেখা হয়নি। এক ছুটির দিনে আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে বিকেলে গেলাম কিংস পার্কে। বিশাল এলাকাজুড়ে এ-পার্ক এবং রাস্তা থেকে বেশ ওপরে (টিলার ওপরে) এবং যথারীতি সাজানো-গোছানো। চাদর বিছিয়ে বসে আছেন কোনো কোনো দম্পতি, কোথাও সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন মা, শিশুরা খেলছে, কেউ-বা ঘাসে গড়াগড়ি দিচ্ছে, 888sport app পার্কের মতোই চিরাচরিত দৃশ্য। বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিক, 888sport promo code-পুরুষ ও শিশুদের 888sport app download for androidে পার্কে দুটি 888sport sign up bonusস্তম্ভ। পার্কের সামনের অংশ ছাড়িয়ে ক্রমেই আমরা ভেতরের দিকে ঢুকছি, পিচঢালা পথ বেয়ে গাড়ি চলছে তো চলছেই। দুপাশে জঙ্গল তবে অধিকাংশ গাছই সতেজ সবুজ নয়, বিবর্ণ। অনেকটা আমাদের দেশের শীতকালের পত্রহীন গাছের মতো। আমরা যতই এগোচ্ছি সুনসান হয়ে আসছে চারদিক, কোথাও কোনো শব্দ নেই, পাখির ডাক নেই, কেমন গা-ছমছম করা নিস্তব্ধতা। হঠাৎ মনে পড়ল কিছুদিন আগে এই পার্কেই তো একজন অ্যাডভোকেটের স্ত্রীর পুঁতে রাখা মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অনেক অনুসন্ধানের পর পুলিশ এখান থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। তার অ্যাডভোকেট স্বামীই তাকে হত্যা করেছে এমন সন্দেহ করলেও কোর্টে বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় ভদ্রলোক ছাড়া পান। পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতেও বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় ভদ্রলোক এখন দায়মুক্ত।
এই গা-ছমছম করা নিস্তব্ধতা থেকে ফিরে আসার জন্য আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সেইসঙ্গে নাঈমাও। আসলে আগে থেকে শোনা এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটাই আমাদের মনের ভয়কে বাড়িয়ে তুলেছিল। আমরা পার্কের সামনের দিকে এক জায়গায় দাঁড়ালাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা, বাতাস বইছে, সোয়ান নদীর পাড় ধরে জ্বলে উঠেছে সার-সার বাতি, রাস্তায় গাড়ির আলো, দূরে হাতেগোনা কয়েকটা সুউচ্চ ভবন। তবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পার্থ।
এরই মধ্যে একটা বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেল গাড়ি দুর্ঘটনায় একজন মহিলা নিহত হলেন। ওই মহিলা তাঁর স্বামী-সন্তানসহ কিছুদিন আগেই পার্থের বাসিন্দা হয়েছিলেন। শুনেছিলাম এরা অন্য কোনো দেশের। তাঁদের তিনটি সন্তানের মধ্যে এই ধরনের দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলে তারা সেখানকার পাট চুকিয়ে দিয়ে পার্থে বসতি গড়েছিলেন, বদলে দিতে চেয়েছিলেন নিয়তিকে। কিন্তু নিয়তি তো অমোঘ, যে-পথে মানুষ তাকে এড়াতে চায় সে-পথই তাকে হাত ধরে নিয়ে যায় অনিবার্য পরিণতির দিকে। ঈডিপাস চেয়েছিল নিয়তিনির্ধারিত পরিণামকে বদলে দিতে কিন্তু যে-পথে মুক্তি খুঁজেছিল সে-পথই তাকে নিয়ে এসেছিল থিবিতে, অনিবার্য নিয়তিনির্ধারিত পরিণামের দিকে ঠেলে দিতে। এই দম্পতিও দেশ ছেড়েছিলেন কিন্তু নির্মম নিয়তির কাছে তাঁরা হেরে গেলেন। একমাত্র জীবিত সন্তানকে নিয়ে মহিলা ড্রাইভ করছিলেন। তাঁর সন্তান যেদিকে বসেছিল অন্য একটি গাড়ি সেদিকে ধাক্কা দিলে আতঙ্কিত মা সেদিকে যাওয়ার সময় অন্য একটি গাড়ির ধাক্কায় এবার তিনি নিহত হলেন।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ। আরেকটি ঘটনা, আমি তখন গোল্ডকোস্টে, ওখানেই শোনা গেল দুর্ঘটনার কথা। বুলাডেলা নামে একটি জায়গায় ঘটে ঘটনাটি। দুই পৌত্রকে নিয়ে ড্রাইভ করছিলেন দাদি। ঘটনাক্রমে বিশাল একটি লরির প্রায় নিচে ঢুকে যায় গাড়িটি। মহিলা বেঁচে গেলেও পেছনে বসা শিশুদুটির মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে গড়ে উঠেছে একটি 888sport sign up bonusসৌধ, নিয়মিত ফুল দেওয়া হয় সেখানে, হয়তো প্রিয়জনরাই দেন। হাইওয়ে ঘুরে গেছে অন্যদিকে, এখন স্থানীয়রাই ওই রাস্তাটি ব্যবহার করেন।
আরো একটি দুঃসংবাদ টেলিভিশনে, আমেরিকায় এক তরুণ স্কুলে ঢুকে শিশুদের হত্যা করেছে। সব টিভিতে একই খবর, টিভির পর্দাজুড়ে কতগুলো নিষ্পাপ, পবিত্র মুখ – পরিবার-পরিজনের কান্না – মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে বারবার।
ভিসা শেষ হতে আরো কিছু সময় আছে কিন্তু আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে দেশের জন্য। মন বলছে, ‘চল নিজ নিকেতনে।’ চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। তেমন কোনো পিছুটান নেই তবু ওই রিকশার ভিড়, ওই কোলাহল যেন জীবনের গান। যখন খুশি, যেখানে খুশি যাওয়ার বাধাহীন বন্ধন আমাকে টানছে। এখানে সারাদিন সুনসান নীরবতা, বাতাসের, ক্বচিৎ গাড়ির শব্দ, সন্ধ্যা হতেই জনশূন্য পথ আর রাত সাড়ে আটটা-নয়টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে আমার ইচ্ছে ঘুড়ির মতো চলা জীবনের কোনো মিল নেই। এখানে সুখ আছে, স্বস্তি আছে – আছে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা। তবু যেন কীসের অভাব! দেশে যাকে চিনি না, সেও যেন অচেনা নয়। অলস সময় কাটে পথ-চলতি রিকশা, গাড়ি, ফেরিওয়ালা আর মানুষ দেখে। এখানে সব আছে কিন্তু মনের আত্মীয়তা কই?
সবার আপত্তি সত্ত্বেও দেশে ফেরার প্রস্ত্ততি নিলাম। ভোরে বের হতে হলো। বিমানবন্দর দূরে নয়, রাস্তা এমনিতেই ফাঁকা থাকে, এখন প্রায় নির্জন। ছেলে পাশে বসে ড্রাইভ করছে। তার মন বিষণ্ণ – চোখ ভেজা। কী প্রশান্ত সকাল, পরিচ্ছন্ন রাস্তাগুলো বিছিয়ে আছে, চারদিকে সবুজ। স্প্রিনকলরগুলো (sprinkler) চালু হয়ে গেছে, ঘাসের বুকে করুণাধারার মতো ঝরে পড়ছে পানি, কী অদ্ভুত প্রশান্ত পরিবেশ চারদিকে! হঠাৎ অনেকদিন আগের একটা 888sport sign up bonus ভেসে এলো। আজিমপুরের রাস্তা – লেডিস পার্ক, টলটলে জলের পুকুর, শিশিরভেজা সবুজ ঘাস, কুয়াশামাখা ভোর, আমরা আমাদের বাবার সঙ্গে প্রাতঃ888sport slot gameে বেরিয়েছি। হঠাৎ করেই যেন বাতাসে ভেসে এলো শিউলি ফুলের গন্ধ। মনে হলো দেশ আমার, দরিদ্র দেশ – তবু তুমি আমারই।
টীকা
১. বাড়ির পেছনদিকের লন-সংলগ্ন গাড়িবারান্দার মতো জায়গা।
২. এক-একটি পাড়ার মতো এলাকা (শহরতলি); স্কুল, খেলার মাঠ, ছোট শপিংমল প্রতিটি সাবাবেই আছে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.