আজ থেকে ১০০ বছর আগে, 888sport appর এক ব্রাক্ষ্মকন্যা হরিপ্রভার, উয়েমন তাকেদা নামে এক জাপানি যুবককে বিয়ে করা এবং তাঁর সঙ্গে জাপানযাত্রা ও ফিরে এসে বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা নামে একটি বই লেখা আমার কাছে অসম্ভব বা রূপকথার মতো মনে হয়েছে। দুশ্দশক আগে পূর্ববঙ্গ ও 888sport app সম্পর্কে গবেষণার সময়ে বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা বইটি আমি প্রথম দেখেছিলাম। গবেষণায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রয়োজন হবে না ভেবে সেটি আর ভালোভাবে নেড়েচেড়ে দেখিনি। কিন্ত্ত লেখিকার নামটি আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকেছিলো-হরিপ্রভা তাকেদা। সে জন্যে বইটির কথা মনে ছিল। মনে পড়ে, পরে অনেকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছিলাম, কিন্ত্ত কেউ তেমন গুরুত্ব দেননি। কারণ বইটি কেউ পড়েননি বা দেখেনওনি।
১৯৯৯ সালে 888sport appর 888sport live footballপ্রকাশ বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা পুনর্মুদ্রণ করে। বইটি সংগ্রহ করে তার ভূমিকা লিখেছেন মনজুরুল হক। এছাড়া তাঁর একটি নিবন্ধও আছে বইটির শুরুতে, ্লহরিপ্রভা তাকেদার জাপানশ্ নামে। কায়ুহিরো ওয়াতানাবের ্লহরিপ্রভার দেখা জাপানশ্ নামেও ছোট আরেকটি নিবন্ধ সংকলিত হয়েছে। দুটি নিবন্ধে যে নতুন কোনো তথ্য আছে তা নয়, কারণ, তাঁরা মূলত হরিপ্রভার বইয়ের ওপরই নির্ভর করেছেন। তা সত্ত্বেও নিবন্ধ দুটি কৌতূহলোদ্দীপক এবং হরিপ্রভাকে প্রাথমিকভাবে জানতে তা সাহায্য করে।
মাসখানেক আগে, লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে কাজ করার সময়ে হঠাৎ করে হরিপ্রভা তাকেদার কথা মনে পড়ে। আমি কাজ করছিলাম পূর্ববঙ্গের বই নিয়ে – যার সময়কাল ১৯০০ পর্যন্ত সীমিত। আর হরিপ্রভার বই বেরিয়েছিলো এর একযুগ পরে। তখন আমার সময় অপর্যাপ্ত। কিন্ত্ত, মনে হলো বইটির গুরুত্ব আমরা কখনও তেমনভাবে অনুভব করিনি। খানিক খোঁজাখুঁজির পর বইটির সন্ধান পাওয়া গেল। পড়েও ফেললাম আবার। কিন্ত্ত হরিপ্রভা তাকেদা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা গেল না। সেই অপর্যাপ্ত সময়ে, আমার প্রধান কাজ তখন হয়ে উঠলো হরিপ্রভা তাকেদার খোঁজ করা।
আজ থেকে ১০০ বছর আগে 888sport app শহরের অবয়বগত চেহারা, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল, তা মনে রাখলে হরিপ্রভা তাকেদার এবং তাঁর লেখা বইটির গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে। তখন মূল শহরের ব্যাপ্তি ছিল পুরনো ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন পর্যন্ত। বাকি এলাকাগুলো ছিল মূল শহরের বাইরে। ১৯০৫ সালে বঙ্গবিভাগ হওয়ার কারণে 888sport app নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী হয়ে ওঠে। রাজধানী হিসেবে 888sport appকে তখন গড়ে তোলার জন্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ওই সময়েই গড়ে ওঠে আজকের রমনা, যা ছিল তখন ছিমছাম এক উপশহর। বাকি এলাকা, বলা যেতে পারে, ছিল ছোট ছোট গ্রাম।
বিশ শতকে পা দিলেও 888sport app থেকে তখনও উনিশ শতকের রেখা মিলিয়ে যায়নি। বারবনিতাদের শহর হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। আর
শহরটি বিখ্যাত ছিল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এলাকা হিসেবে। অবশ্য, উনিশ শতকের আশির দশক থেকে শহরের পুনর্জাগরণও হচ্ছিল। তবে শহরের মানুষজন ছিল অতিশয় দরিদ্র, সমাজ ছিল বহুধাবিভক্ত, সংস্কারে-কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। যে ব্রাক্ষ্ম-সমাজ উনিশ শতকের সত্তর দশকে শহরে আধুনিকায়নের সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিল তাও তখন বিভক্ত হয়ে প্রায় অবলুপ্ত হওয়ার পথে। সে-সময়ে হরিপ্রভা বিয়ে করেন জাপানি তাকেদাকে। আমার অভিজ্ঞতায়, বাঙালি ললনারা ভালোবেসে অনেক বিদেশী যুবককে আজকাল বিয়ে করছে বটে কিন্ত্ত খুব কম বাঙালি মেয়েকে জাপানি বিয়ে করতে দেখেছি। যদিও প্রচুর বাঙালি যুবক অধুনা জাপানি ললনাদের বিয়ে করে সুখে-শান্তিতে ঘর-সংসার করছে। এই যে, সংস্কার ভেঙে এগিয়ে যাওয়া এবং সে-সময়ে তা যে অসম সাহসের ব্যাপার, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর এই দম্পতি 888sport appতেই বসবাস করেছেন। তবে, এঁদের সম্পর্কে তেমন কোনো গবেষণা না হওয়াতে বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য প্রায় নেই বললেই চলে।
হরিপ্রভা আমার ভেতর এমন এক কৌতূহলের সৃষ্টি করলেন যে, ওই অপর্যাপ্ত সময়টুকু আমি তাঁর পেছনেই ব্যয় করলাম। খুব যে কিছু জেনেছি তা নয়, তবে যেটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়েছে যে, পারিবারিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছিলেন, তাই তাঁকে প্রণোদনা জুগিয়েছিলো। ওই পারিবারিক পরিবেশ না পেলে তাঁর পক্ষে তাকেদাকে বিয়ে করে 888sport appয় থাকা এবং তাঁর সঙ্গে জাপানে যাওয়া সম্ভবপর হতো না।
হরিপ্রভার লেখা ও প্রকাশ করা (প্রকাশক হিসেবে) দুটি বই, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, সংবাদ, পুনর্মুদ্রিত বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা প্রভৃতি থেকে হরিপ্রভা ও তাকেদার একটি জীবনচিত্র রচনা করেছি।
দুই
উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে 888sport appয় ব্রাক্ষ্ম-আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। পূর্ববঙ্গের ব্রাক্ষ্ম-আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে 888sport app। পূর্ববঙ্গে ব্রাক্ষ্ম-মতাবলম্বীর 888sport free bet ছিল হাতেগোনা, কিন্ত্ত একটি গোষ্ঠী হিসেবে সমাজে তাঁরা একটি জোরালো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। হিন্দুসমাজের কলুষ-বর্জন, সংস্কার, শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ, সমাজসেবা, সভা-সমিতি গড়ে জনমতগঠন, পত্রিকাপ্রকাশ- এক কথায়, সমাজ উন্নয়নে ও আধুনিকায়নে তাঁরা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 888sport promo codeমুক্তি ছিল তাঁদের বিশেষ এজেন্ডা। ব্রাক্ষ্ম যুবকরা, 888sport app ও মফস্বলে অনেক বালিকাকে বাল্যবিবাহের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। 888sport appর বিখ্যাত ব্রাক্ষ্ম নবকান্ত চট্টোপাধ্যায় লক্ষ্মীমণি নামে এক স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে কলকাতায় শিবনাথ শাস্ত্রীর আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। লক্ষ্মীমণির মা তাকে পতিতালয়ে বিত্র্কি করে দিতে চেয়েছিলেন। 888sport appয় তখন এ-নিয়ে তুমুল বিতর্কই শুধু নয় লক্ষ্মীমণি চরিত নামে একটি বইও বেরিয়েছিলো।
শশিভূষণ মল্লিক ছিলেন দরিদ্র এক ব্রাক্ষ্ম, কেশবচন্দ্রের অনুসারী নববিধান-মতাবলম্বী। নববিধান সমাজ তখন খুবই হীনবল। শশিভূষণ ছিলেন উদ্যমী, মহিলাদের -বিশেষ করে নিরাশ্রয়ীদের – দুরবস্থা তাঁকে ব্যথিত করেছিল এবং একক প্রচেষ্টায় (তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের সাহায্যে) তিনি 888sport app উদ্ধারাশ্রম নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। উদ্ধারাশ্রমের নাম পরে বদল করে রাখা হয় ্লমাতৃনিকেতনশ্। মনজুরুল হক যে ্লমাতৃনিকেতনশ্কে হরিপ্রভার মাতুলালয় বলেছেন, তা ঠিক নয়। উদ্ধারাশ্রম স্থাপন করা হয়েছিল ১৮৯২ সালে। এক বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় (১৯০৩) :
্ল্ল888sport app উদ্ধারাশ্রম
প্রায় বার বৎসর পূর্ণ হইতে চলিল অসহায় বালিকা ও বিধবাগণের রক্ষার্থে এই আশ্রমটি সংস্থাপিত হইয়াছে। সহূদয় দয়ালু ব্যক্তিগণ ভগবানের প্রেরণায় যাহা কিছু সাহায্য প্রদান করেন তাহারই উপর আশ্রমস্থিদিগের ভরণপোষণ নির্ভর করে। আশ্রমে আপাতত দুগ্ধপোষ্য শিশু হইতে বয়স্কা পর্যন্ত ৯ জন আছে। মাসিক নির্দিষ্ট আয় ১০ টাকার অধিক নহে। 888sport app বিভাগের কমিশনার মাননীয় মি. এরনি মাগুয়ি সি.আই.ই মহোদয় বিগত মার্চ মাসে আশ্রম পরিদর্শন করিয়া যে মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন তাহা হইতে সারাংশ নি¤েœ উদ্ধৃত করা গেল :
ও ভববষ ঃযব রহংঃরঃঁঃরড়হ রং ফড়রহম ধ সঁপশ হববফবফ ড়িৎশ রহ ধহ ধফসরৎধনষব ংঢ়রৎরঃ ধহফ রিঃয ধ মড়ড়ফ ফবধষ ড়ভ ংঁপপবংং নঁঃ রিঃয যড়ঢ়বষবংংষু রহধফবয়ঁধঃব ৎবংড়ঁৎপবং.
উদ্ধারাশ্রম প্রথমে শহরেই ছিল কিন্ত্ত খুব একটা সাহায্য-সহায়তা কখনো পায়নি। ব্রাক্ষ্ম-সমাজের ইতিহাসেও এর উল্লেখ নেই। এর একটি কারণ হতে পারে, যাঁরা বিবরণগুলো লিখেছিলেন তাঁরা নববিধান সমাজভুক্ত ছিলেন না।
১৯০৩-এর দিকে শশিভূষণ উদ্ধারাশ্রম স্থানান্তর করেন খিলগাঁয়। বলা যেতে পারে, শহর থেকে অনেক দূরে এক গ্রামে, কারণ, শহরে জায়গা কিনে আশ্রম স্থাপন করার মতো সংগতি তাঁর ছিল না। পা-ুনদী যখন এর পাশ দিয়ে বয়ে যেত তখন খিলগাঁ ছিল এক বর্ধিষ্ঞু অঞ্চল। এক সময়ে খিলগাঁ ্লশহর খিলগাঁশ্ নামে পরিচিত ছিল। শশিভূষণ যখন সেখানে আশ্রম স্থাপন করেন, তখন তা ফুলবাড়িয়ানিবাসী জমিদার বংশীলোচন মিত্র ও গোপাললোচন মিত্রের জমিদারির অন্তর্গত এবং ক্ষয়ের পথে। এর অবস্থা তখন কী ছিল তা জানা যাবে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠিতে ঃ
্ল্ল … গ্রামে লোকশূন্যতাহেতু দিঘী, পুষ্করিণী, রাস্তাঘাট সকল দলদামজঙ্গল দ্বারা পরিপূর্ণ হইয়াছে। পুষ্করিণী থাকিতেও জলকষ্ট।
সড়কসমূহ জঙ্গল-আবৃত থাকায় যাতায়াত কষ্ট হইতেছে। হিংস্র জন্ত্তর ভয়ে সমুদয়ের জড়সড় থাকিতে হয়। এ অভাব মোচনক্ষম লোক খিলগাঁয় দেখা যায় না।শ্শ্
জমি শস্তা হওয়া সত্ত্বেও ঋণ করে তিনি আশ্রমটি করেছিলেন। পত্রিকার খবরে জানা যায় (সঞ্জীবনী, ১৩০৫):
্ল্ল আজ প্রায় দুই বৎসর হইল, আমাদের 888sport appস্থ কয়েকজন সহূদয় বন্ধু এই পাপস্রোতের গতিরোধ করিবার জন্য প্রাণপণে পরিশ্রম করিতেছেন … তাঁহাদের উদ্যোগে কয়েকজন বেশ্যা রাজদ্বারে শাস্তি পাইয়াছে। বালিকা রাখার জন্য 888sport appয় একটি উদ্ধারাশ্রম স্থাপিত হইয়াছে। সম্প্রতি সেই আশ্রমের জন্য একটি উপযুক্ত বাড়ি ক্রয় করা হইয়াছে। … ১১ শত টাকা ঋণ করিয়া উক্ত আশ্রম বাড়ি ক্রয় করা হইয়াছে। … সকলে সাহায্য করিলে অতি অল্পদিনেই আশ্রম ঋণমুক্ত হইতে পারে …।শ্শ্
খিলগাঁয়ে স্থানান্তরিত হওয়ার পর আশ্রমের নাম পরিবর্তিত করে রাখা হয় মাতৃনিকেতন। শশিভূষণের স্ত্রীর নাম ছিল নৃপেন্দ্রবালা। প্রথমে তাঁদের ছিল চার মেয়ে : হরিপ্রভা, শান্তিপ্রভা ও সত্যপ্রভা। কনিষ্ঠা সত্যপ্রভা পুকুরে ডুবে মারা যায় ১৯০৩ সালে। পরে খুকি নামে আরেকটি কন্যার পিতা হন শশিভূষণ। শশিভূষণের পালিতা কন্যা ছিল দুজন – প্রিয়বালা এবং সুরবালা। পুরো পরিবারই মাতৃনিকেতনের দেখাশোনা করতেন। পিতা নিজেকে পরিচয় দিতেন সেবক হিসেবে এবং মাতা ও কন্যারা পরিচয় দিতেন সেবিকা হিসেবে। ১৯১৫ সালেও আশ্রম বা শশিভূষণের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাঁর একটি আবেদনে জানা যায় :
্ল্লঅসহায় বালক-বালিকা ও নিরাশ্রয়ী অবলাদিগকে আশ্রয় দিবার উদ্দেশ্যে অষ্টাদশ বর্ষ অতীত হইল উপরোক্ত আশ্রম [মাতৃনিকেতন] প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এ পর্যন্ত ৯০ জন বালক-বালিকা ও বয়স্কা আশ্রয় পাইয়া ২২ জন বিবাহিত হইয়াছে, ৫০ জন অন্যত্র গিয়াছে, ৭ জনের মৃত্যু হইয়াছে। অধুনা ১১ জন আশ্রমে থাকিয়া প্রতিপালিত হইতেছে। দীন জননী জগন্মাতা এই দীনহীনদিগের একমাত্র আশ্রয় ও যথাসর্বস্ব। তাঁর প্রেরণায় এই দীনহীনদিগের প্রতি দয়া করিয়া যিনি যাহা প্রদান করিবেন তাহা সকৃতজ্ঞ হূদয়ে গৃহীত হইবে।
মাতৃনিকেতন বিনীত নিবেদক
খিলগ্রাম, পোঃ রমনা শ্রী শশিভূষণ মল্লিক।
888sport appশ্শ্
পরিবারটি ছিল দরিদ্র, কিন্ত্ত শিক্ষিত। শশিভূষণ বেশ কশ্টি বই রচনা করেছিলেন। হরিপ্রভা লিখেছিলেন বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা এবং প্রকাশ করেছিলেন কেদার-নলিনী । তাঁর বইটি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ছোটবোন শান্তিপ্রভা। এ সমস্ত বই প্রকাশিত হতো আশ্রম থেকে। এসব বিত্র্কি করে আশ্রমের খরচ মেটাবার চেষ্টা করা হতো। কিন্ত্ত, বই বিত্র্কি করে খুব বেশি কিছু পাওয়া যেত বলে মনে হয় না। এ-বিষয়ে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন কেদার-নলিনীর প্রকাশিকা ্লআশ্রম সেবিকাশ্ হরিপ্রভা-
বিজ্ঞাপন
নি¤œলিখিত পুস্তকগুলি ক্রয়ার্থে 888sport app উদ্ধারাশ্রমে পাওয়া যায়। উহার কিছু কিছু ক্রয় করিলে আশ্রম ও প্রচার বিভাগের যথেষ্ট সাহায্য হইতে পারে।শ্শ্
শশিভূষণের যে-কটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলি হলো-
১. পাপীর জীবনে ভগবানের লীলা।
ইস্ট বেঙ্গল প্রেসে মুদ্রিত। ২য় সং ১৮৮৬; ৩য় সং ১৮৯০;
মূল্য ৪ আনা ও ৬ আনা। প্রতি সংস্করণে ছাপা হয়েছিলো ১০০০ কপি।
২. লক্ষ্য, উপায় ও দৃষ্টান্ত
ইস্ট বেঙ্গল প্রেসে মুদ্রিত। ১ম সং ১৮৮৮; মূল্য ১ আনা, ছাপা হয়েছিলো ৫০০ কপি।
৩. উপাসনাতত্ত্ব
ইস্ট বেঙ্গল প্রেসে মুদ্রিত। ১ম সং ১৮৮৮; মূল্য ২ আনা। ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি।
৪. অ নৎরবভ গবসড়রৎ ড়ভ ঃযব ষধব ইড়নঁ চধৎধসবংযাধৎ গধষষরশ ঊধংঃ ইবহমধষ চৎবংং, ১৮০৩. ১৮৯৩, ঢ়ৎরপব ২ ধহধ, ৫০০ পড়ঢ়রবং.
৫. ঞযব উধপপধ জবংপঁব ঐড়সব
অংঁঃড়ড়ংয চৎবংং. ১৮৯৮. ১০০০ পড়ঢ়রবং.
ও জবঢ়ড়ৎঃ ড়ভ ঃড়ি ুবধৎং ড়িৎশ ফড়হব নু ঃযব হবষিু বংঃধনষরংযবফ ইৎধযসড় ওহংঃঁঃরঃরড়হ শহড়হি ধং ঃযব উধপপধ জবংপঁব ঐড়সব.
৬. ঈড়ফ’ং উবধষরহম রহ ঃযব খরভব ড়ভ ধ ঝরহহবৎ
ঊধংঃ ইবহমধষ চৎবংং, ১৮৮৯.৪০০০ ঈড়ঢ়রবং
হরিপ্রভার দেওয়া বিজ্ঞাপনে যে-কটি বইয়ের নাম পাই-সেগুলোও-অনুমান করে নিচ্ছি – শশিভূষণের বই।
৭. পূর্ব ও উত্তর বিভাগ
৮. বিধানকুসুম অর্থাৎ নববিধানতত্ত্ব
৯. সাধ্বী নগেন্দ্রবালা
১০. সতীত্ব
১১. 888sport promo codeজীবনের উদ্দেশ্য
১২. ব্রক্ষ্মাবতরণ বা অবতারবাদ
১৩. শক্তিপূজা ও কার্তিক পূজা
১৪. অ ইৎরবভ গবসড়রৎ ড়ভ এবড়ৎমব গঁষষবৎ
এ রকম একটা পরিবেশে হরিপ্রভা বড় হয়ে উঠেছিলেন। কেদার-নলিনীর একটি চিঠি থেকে হরিপ্রভা সম্পর্কে কিছু জানা যায়। আগেই বলেছি এর প্রকাশিকা ছিলেন হরিপ্রভা; কিন্ত্ত এর কাহিনীটি বললে হরিপ্রভার দৃঢ়তা সম্পর্কে জানা যাবে।
নলিনী ছিল 888sport appর এক পতিতার মেয়ে। সে সৎ জীবন-যাপন করতে চেয়েছিল। 888sport app উদ্ধারাশ্রম তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং লালন-পালন করে। পরে তার বিয়ে দেওয়া হয় বগুড়ার ব্রাক্ষ্মকর্মী কেদারনাথ সাহার সঙ্গে। কেদার আগের স্ত্রীকে ত্যাগ করে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিলেন। নলিনীকে বিয়ের আগে কেদারের সঙ্গে শশিভূষণের এবং পরে কেদার-নলিনীর সঙ্গে হরিপ্রভা প্রশান্তিপ্রভার চিঠিপত্র নিয়ে কেদার-নলিনী প্রকাশিত হয় (১৯০৩)। হরিপ্রভা তাঁদের দেখতে একবার বগুড়া গিয়েছিলেন। কেদার লিখেছিলেন, ্লহরিপ্রভার স্বভাবসুলভ নম্রতা এবং শিষ্টতা তাঁর চোখে পড়েছিল যখন হরিপ্রভা বগুড়া গিয়েছিলেন।শ্ কেদার আরেকটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ্লহরিপ্রভার পরীক্ষা বোধহয় এতদিনে শেষ হইয়া গিয়াছে। … ভাদ্রমাস হইলে মাসিক আশ্রমের জন্য ৫ টাকা এবং শ্রীমতী হরিপ্রভার পড়ার খরচের জন্য ৫ টাকা দিব।শ্
হরিপ্রভা কোথায় পড়াশোনা করেছিলেন বা কতটুকু পর্যন্ত পড়েছিলেন, তা জানা যায়নি, তবে স্কুলে যে পড়েছিলেন (হয়ত এন্ট্রান্স পর্যন্ত), তা নিশ্চিত। খুব সম্ভব ইডেন স্কুলেই পড়েছিলেন। নবকান্ত চট্টোপাধ্যায় এবং আরো কিছু ব্রাক্ষ্মকর্মীর প্রচেষ্টায় মেয়েদের জন্য 888sport appয় ইডেন স্কুল স্থাপন করা হয়েছিল। এবং তখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য ইডেন ছিল অন্যতম।
তিন
জাপানের অবস্থা একসময়ে 888sport apps থেকে ভালো ছিল না। ১৮৬৮ সালে জাপানের সম্রাট মুৎসুহিতো সর্বময় ক্ষমতা ফিরে পান। এর আগে তাঁর হয়ে ক্ষমতাপ্রয়োগ করতেন তাঁর প্রধান অমাত্য, যাকে বলা হতো শোগুন। এদো বা টোকিওতে ছিল শোগুনদের ক্ষমতাকেন্দ্র। সম্রাট থাকতেন কিয়োতোতে। ১৮৬৮ সালের পর সম্রাট চলে আসেন টোকিও। জাপানের অবরুদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে দেন তিনি। তখন বিদেশীরা যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের খোঁজে জাপানে আসতে থাকে তেমনি জাপানিরাও পাশ্চাত্যের জ্ঞান-আহরণ ও ভাগ্যান্বেষণে জাপান ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। এঁদের অধিকাংশ গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও পেরু। পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরির পিতা-মাতা ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন পেরুতে। জাপানে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এক জাপানি মেক্সিকান তরুণীর, যার পিতা মেক্সিকোয় চলে গিয়ে সেখানে বিয়ে করেছিলেন। তরুণীটি জাপানে পিতার পরিবারের কাছে থেকে পড়াশোনা করতেন। আমার এক জাপানি বন্ধু বলেছিলেন, জাঞ্জিবারে তিনি এক জাপানি বৃদ্ধার খোঁজ পেয়েছিলেন যাকে পতিতাবৃত্তির জন্যে জাপান থেকে নিয়ে আসা হয়।
উয়েমন তাকেদা ১৯০৩ সালে জাপান ছেড়েছিলেন। ওয়াতানাবে
জানাচ্ছেন, পুরনো দলিলপত্র-অনুযায়ী ১৯০৩ সালে মোট ১৪ হাজার জাপানি বিদেশে বসবাসের জন্যে জাপান ত্যাগ করেন। এঁদের মধ্যে ১১ হাজার ৬শশ্রও বেশি লোকের গন্তব্য ছিল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, বাকিরা ছড়িয়ে পড়েন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে ২৪ জন আসেন ভারতে। তাকেদা ছিলেন তাঁদের একজন।
এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, ভারতের রাজধানী কলকাতা ছেড়ে তাকেদা 888sport app এসেছিলেন। তাকেদা পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন না। তখনকার জাপানি আইন-অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠপুত্র পিতার সম্পত্তির অধিকারী হতেন। তাঁর পরিবারও ছিল অসচ্ছল। তাই হয়তো তাকেদা জাপান ছেড়েছিলেন। কেন তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন তা জানা যায়নি। খুব সম্ভব কলকাতায় চাকরির ক্ষেত্রে তিনি কোনো সুবিধা করতে পারেননি। 888sport appয় তখন স্থাপিত হয়েছে বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরি। তাঁদের প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন ছিল। তাকেদার হয়তো রসায়নশাস্ত্র সম্পর্কে জানা ছিল এবং কোনো না কোনো ভাবে সোপ ফ্যাক্টরির কারো সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল। চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন 888sport appয়। এছাড়া কলকাতা ছেড়ে তাঁর 888sport appয় আসার কোনো কারণ দেখি না। শান্তিপ্রভা লিখেছিলেন, ্ল্লতাকেদা সান্ ইতোপূর্বে বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরিতে সাবান নির্মাতার কার্য করিতেন।শ্শ্
সরকারি রিপোর্টে জানা যায়, কাপড়কাচা বা বাঙ্গালা সাবানের জন্যে 888sport app ছিল বিখ্যাত। গেজেটিয়ারে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরাশগঞ্জ ও ফরিদাবাদে সাবানতৈরি ছিল কুটির888sport live chatের মতো। উনিশ শতকের শেষার্ধে বা বিশ শতকের শুরুতেও এসব এলাকায় প্রায় একশশ্র মতো সাবান-নির্মাতা পরিবার বাস করতেন। বিশ শতকের শুরুতে স্থাপিত হয় বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরি। মালিক ছিলেন কৃষ্ঞচন্দ্র সাহা, সত্যমোহন দাস এবং অক্ষয়কুমার দাস। এম ডব্লিউ তাকেদা নামে এক জাপানি ভদ্রলোকের সাহায্যে এ কারখানা উৎপাদন শুরু করে। ১৯০৬-০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় 888sport live chatমেলায় বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরির সাবান গুণগতমানের জন্যে প্রথম 888sport app download bd (স্বর্ণপদক) পেয়েছিল।
তাকেদা বেশিদিন বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেননি। শান্তিপ্রভা লিখেছেন, ্ল্লবিবাহের পর ্ল888sport app সোপ ফ্যাক্টরিশ্ নামে কারখানা খুলিয়া নিজে সাবান প্রস্তুত ও বিক্রয় করিতেন।শ্শ্ মনজুরুল হকও একই কথা উল্লেখ করেছেন এবং লিখেছেন, ্ল্লধারণা করা যায়, ওই কারখানা প্রতিষ্ঠায় শ্বশুরালয়ের সহায়তা হয়তো তিনি পেয়ে থাকবেন।শ্শ্
প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে উপর্যুক্ত তথ্যগুলোর সংগতি নেই। শশিভূষণ মল্লিকের সাংসারিক অবস্থা যেমন ছিল তাতে তাঁর পক্ষে সাবান কারখানায় পুঁজিবিনিয়োগ সম্ভবপর ছিল না। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, তাকেদার কারখানা ছিল নিমতলিতে। নববিধান সমাজের সভ্যরা পুরনো নবাববাড়ি (পুরনো 888sport app জাদুঘর যেখানে ছিল) এলাকাটি কিনে নিয়ে স্থাপন করেন বিধানপল্লী নামে একটি আবাসিক এলাকা। এ কারণেই বোধহয় শশিভূষণের পরিবারের সঙ্গে তাকেদার আলাপ হয়। অনুমান করে নিচ্ছি, নববিধানের সভ্য হিসেবে শশিভূষণ তখন হয়তো বিধানপল্লী বা নিমতলিতেই থাকতেন। খিলগাঁয় তিনি যান আরো পরে। এভাবেই হরিপ্রভার সঙ্গে তাকেদার আলাপ হয়। খুব সম্ভব, বাংলাভাষাও তিনি শিখে নিয়েছিলেন। নাহলে হরিপ্রভার সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় সম্ভবপর ছিল না। শুধু তাই নয়, বাঙালিয়ানাও তিনি রপ্ত করে নিয়েছিলেন। তাঁর বিয়ের ছবিতে দেখা যায় তিনি ধুতি-কোট পরে আছেন যেমনটি পরতেন সে-সময়ে ্লভদ্রলোক বাবুরাশ্। ধুতি পরিহিত কোনো জাপানির ছবি আজ পর্যন্ত আমার নজরে পড়েনি।
আর একটি বিষয়। তাঁর কারখানার নাম ্ল888sport app সোপ ফ্যাক্টরিশ্ ছিল না এবং তা ১৯০৬ সালে (অর্থাৎ বিয়ের পর) স্থাপিত হয়নি। শান্তিপ্রভা এমন ভুল করলেন কীভাবে জানি না। কারণ, ১৯০৩ সালে প্রকাশিত কেদার -লিনীর শেষ প্রচ্ছদে একটি বিজ্ঞাপন আছে :
্ল্লঅতি উৎকৃষ্ট ও সুলভ
হিন্দু-জাপানী সাবান।
গধহঁভধপঃঁৎবফ
ইু ঃযব
ওহফড়-ঔধঢ়ধহবংব ঝড়ধঢ় ঋধপঃড়ৎু
উধপপধ.
অ চড়ৎঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঝধষব ঢ়ৎড়পববফং রিষষ মড় ঃড় ঃযব সধরহঃবহধহপব ড়ভ ঃযব উধপপধ জবংপঁং ঐড়সব ড়ৎ যবষঢ় ষবংং মরৎষং. ডরফড়ংি ধহফ ড়ৎঢ়যধহং.
ঞৎরধষ ধহফ ঢ়ধঃৎড়হধমব ংড়ষরপরঃবফ.
অর্থাৎ তাকেদার সাবান কারখানার নাম ছিল ্লইন্দো-জাপানিজ সোপ ফ্যাক্টরিশ্ যা ্লহিন্দু-জাপানি সাবানশ্ প্রস্তুত করতো এবং তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯০৩ সালে। বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, কারখানার আয়ের একটা অংশ তিনি উদ্ধারাশ্রমে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এতে বোঝা যায়, শশিভূষণের পরিবারের সঙ্গে তাকেদা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তারপর বিয়ে। শান্তিপ্রভা লিখেছেন ্ল্লএই সময় হইতে (১৯১২) প্রায় ছয় বৎসর অতীত হইল, জাপাননিবাসী শ্রীযুক্ত উয়েমন তাকেদার সহিত নবসংহিতা অনুসারে হরিপ্রভার শুভ পরিণয় কার্য 888sport app নগরে সম্পন্ন হইয়াছিল।শ্শ্
নবদম্পতি খুব সম্ভব নিমতলিতেই বসবাস করতেন। সরকারি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাকেদার কারখানা বেশিদিন চলেনি। পরবর্তীকালে বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরিও আমদানিকৃত শস্তা সাবানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠেনি। খুব সম্ভব, তাকেদা-দম্পতি, জাপানযাত্রার আগেই কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। হতে পারে, কারখানা গুটিয়ে তাকেদা জাপানযাত্রার প্রস্তুতি নেন। শান্তিপ্রভা লিখেছেন-
্ল্ল888sport app উদ্ধারাশ্রমের যাহার বর্তমান নাম মাতৃনিকেতন ভূতপূর্ব সেবিকা স্বর্গীয়া সাধ্বী নগেন্দ্রবালা মল্লিকের জৈষ্ঠ্যা কন্যা শ্রীমতি হরিপ্রভা তাকেদা তাঁর পতিসহ ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা নভেম্বর 888sport app হইতে জাপান যাত্রা করেন। সুদীর্ঘকাল স্বদেশ ও আত্মীয়স্বজন হইতে বিচ্ছিন্ন থাকায় তাঁহার বৃদ্ধ পিতামাতা পুত্র ও পুত্রবধূকে দেখিবার জন্য আগ্রহান্বিত হন। স্বদেশ ও আত্মীয়স্বজনদিগকে দেখিবার উদ্দেশ্যে তাকেদা সান সপরিবারে জাপান যাত্রা করেন।
যাত্রার পূর্ব দিবস ২রা নভেম্বর শনিবার প্রাতঃকালে 888sport appর সন্নিকটবর্তী পল্লী খিলগাঁ মাতৃনিকেতনে বিশেষভাবে ব্রাক্ষ্ম-উপাসনা হয়। পল্লীস্থ অনেক পুরুষ ও মহিলা উপাসনায় যোগদান করিয়াছিলেন এবং যাত্রীদিগকে বিদায় দিবার কালে সকলেই অশ্রুবিসর্জন করিয়াছিলেন।
পর দিবস ৩রা নভেম্বর 888sport appস্থ বাসাবাটিতে যাত্রার প্রাক্কালে পুনঃব্রক্ষ্মোপাসনা হয়। 888sport app নববিধান ব্রাক্ষ্ম সমাজের সম্পাদক শ্রীযুক্ত বাবু গোবিন্দচন্দ্র দাস ও শ্রীযুক্ত বাবু শশিভূষণ দত্ত ও সাধারণ সমাজের সভ্য শ্রীযুক্ত বাবু সতীশচন্দ্র ঘোষ, শ্রীযুক্ত হরিশ্চন্দ্র ঘোষ ও রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সিংহ বিদ্যানিধি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহাশয় উপাসনায় যোগদান করেন। ব্রাক্ষ্মকৃপা সম্বল করিয়া তাহার চরণতরী আশ্রয়পূর্বক তাঁহাকেই কা-ারি জানিয়া তাঁহার ইচ্ছার স্রোতে ভাসিতে ভাসিতে তাঁহার রাজ্যের দিকে অগ্রসর হইয়া যাহাতে তাঁহার মহিমা দেখিতে দেখিতে ও তাঁহার গৌরব প্রচার করিয়া স্বজাতির ও স্বদেশের বিশেষত বঙ্গমহিলার মুখোজ্জ্বল করিয়া শ্রীমতী ধন্য হইতে পারেন তজ্জন্য প্রার্থনা হয়।
এই স্থলে উল্লেখ করা আবশ্যক, শ্রীমতি হরিপ্রভা জাপানযাত্রা করিতে উদ্যোগী হইয়াছেন শুনিয়া দিনাজপুরের সহূদয় মহারাজা বাহাদুর স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ২৫ টাকা প্রেরণ করিয়াছিলেন।শ্শ্
আশ্চর্য যে, তাঁদের বিয়ে বা জাপানযাত্রা – যা ছিল প্রচলিত ধারার বাইরে-সে-সম্পর্কে সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় কোনো খবর নেই। তার মানে কি এ নিয়ে কোনো আলোড়ন হয়নি সমাজে? 888sport appর রক্ষণশীল নিস্তরঙ্গ সমাজে এরকম একটি ঘটনা কোনো অভিঘাত সৃষ্টি না-করার বিষয়টি খুব অদ্ভুত। এমনও হতে পারে, তাকেদা এক দশকে 888sport appর বাঙালি -মাজের সঙ্গে এমন ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছিলেন যে বাঙালি স্ত্রী নিয়ে তাঁর জাপানযাত্রা তেমন কোনো আলোড়ন তোলেনি।
চার
তাকেদা-দম্পতি জাপানে ছিলেন চার মাস। ১৯১৩ সালেই তাঁরা 888sport app ফেরেন। তারও প্রায় দুশ্বছর পর বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা প্রকাশিত হয়। ডিমাই ৮ আকারের ৬১ পৃষ্ঠার বইটি ওয়ারীর ভারত মহিলা প্রেসে মুদ্রণ করেন দেবেন্দ্রনাথ দাস। ১১.১১.১৯১৫ সালে তা ্লকুমারী শান্তিপ্রভা মল্লিকশ্
কর্তৃক প্রকাশিত হয় মাতৃনিকেতনের সাহায্যার্থ। 888sport live footballপ্রকাশ যেহেতু বইটির পুনমুর্দ্রণ করেছে সেজন্যে বই সম্পর্কে আর বিস্তারিত আলোচনা করব না, সংক্ষিপ্ত একটি রূপরেখা দেবো মাত্র।
১৯১২ সালের ৩ নভেম্বর হরিপ্রভা ও তাকেদাকে নারায়ণগঞ্জে স্টিমারে উঠিয়ে দেন হরিপ্রভার পরিবার। 888sport appর জাপানি ব্যবসায়ী কোহারা ও তাঁর বৌ 888sport app থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনে তাদের তুলে দেন ও উপহার দেন পঞ্চাশ টাকা। এর অর্থ, 888sport appয় তাকেদা ছাড়াও দু-একজন জাপানি ব্যবসায়ী ছিলেন। হয়তো, তাঁদের আহ্বানেই তাকেদা 888sport appয় এসেছিলেন। তারপর গোয়ালন্দ। কলকাতা পৌঁছলেন পরদিন।
তাঁরা কলকাতায় ছিলেন তাকেদার গ্রামের বন্ধু সিমেজ সানের বাসায়। তাকেদা কলকাতা থেকে জাপানে যাওয়ার জাহাজের টিকেট কাটলেন। ্ল১৯০ ভাড়া, ৪১ খোরাক।শ্ এটি একজনের না দুজনের, তা অবশ্য উল্লেখ করেননি। হতে পারে দুজনের।
৫ নভেম্বর জাহাজে উঠলেন হরিপ্রভা ও তাকেদা। ্ল্লভয়ানক গোলমাল ও বিশৃঙ্খলা। জাহাজটি মালের জাহাজ; থাকিবার স্থান ঠিক হয় নাই। … ১১টার পর নির্দিষ্ট কামরায় গেলাম। ঘরখানি বোধহয় ৭ হাত লম্বা, ৪ হাত চওড়া, ৫ হাত উচ্চ, এর চেয়ে কম ছাড়া বেশি নয়। আলমারির তাকের মতো দুইটী দুইটী করিয়া তিনদিকে ছয়টী তাক। প্রত্যেকটিতে একজন করিয়া ৬ জন থাকিবার ব্যবস্থা আছে। অপর্যাপ্ত আলো। প্রায় ৬০০ ছাগল ভেড়া এই জাহাজে করে সিঙ্গাপুর যাইতেছে। সেইগুলো আমাদের খুব নিকটে। বাথরুমে ওইগুলোর পাশ দিয়ে যেতে হয়। আর আমাদের ঘরের পাশে জাহাজের ভাঁড়ার ঘর। সে ঘরে বোধহয় শুকনো মাছ আছে। এই দুইয়ের গন্ধে আমরা আর টিকিতে পারি না।…শ্শ্ এভাবে 888sport slot game করেছিলেন হরিপ্রভা।
১০ নভেম্বর পৌঁছলেন রেঙ্গুনে। সেখানে তাঁদের পরিচিত একজনের বাসায় ছিলেন। ১৩ তারিখ রেঙ্গুন থেকে রওয়ানা হলেন। এবার কেবিন বদল করাতে একটু ভালোভাবে থাকতে পারলেন। ১৭ তারিখ পেনাঙ। ১৮ তারিখ পেনাঙ ছাড়লেন। সিঙ্গাপুর পৌঁছলেন ২০ তারিখ। ্ল্লসমুদ্রের তীরবর্তী স্থানগুলো বড় সুন্দর। সমুদ্রের তীরেই ছোট ছোট পাহাড়, তদুপরি সুদৃশ্য পুষ্পবৃক্ষাদিপূর্ণ বাগানপরিবেষ্টিত ছবির মতো সুন্দর সুন্দর বাড়ি। জাহাজঘাট থেকে হেঁটেই শহরে গেলাম। অনেকটা দূর। রাস্তায় ধুলা নাই, তৈলে সিক্ত। শহরের রাস্তার উভয় পাশের্ব দোকান, তৎসম্মুখে ফুটপাথ। ফুটপাথের ওপর ছাদ। রৌদ্রবৃষ্টিতে পথিকদের কষ্ট হয় না।শ্শ্ এখানেই হরিপ্রভা প্রথম ট্রামে চড়েন।
২২ তারিখ সিঙ্গাপুর থেকে রওয়ানা হলো জাহাজ। সমুদ্রপীড়ায় আক্রান্ত হলেন স্বামী-স্ত্রী। তদুপরি জাহাজে প্রায় ১০০০ চীনা আরোহী, সব উপবাস। ৯ দিন পর পৌঁছলেন হংকং যদিও যাত্রার সময়কাল ছিল ৫/৬ দিন।
হংকংও ভালো লেগেছিলো হরিপ্রভার। ্ল্লশহরটি একদিকে যেমন সুদৃশ্য, তেমনি জাঁকজমকে পূর্ণ। … রাতে সমুদ্র হইতে হংকংয়ের দৃশ্য আরও মনোহর। পাহাড়ের উপর শহরে ও গৃহে গৃহে আলো দেখিয়া বোধহয় যেন অসংখ্য নক্ষত্র আকাশে শোভা পাইতেছে। বাস্তবিক স্থানটি বড়ই সুন্দর। এখানে নানা দেশীয় লোকের বাস। অধিকাংশই বোধহয় চাইনিজ।শ্শ্
৪ ডিসেম্বর জাহাজ হংকং থেকে রওয়ানা হলো, ৯ তারিখ পৌঁছলো সাংহাই। ্ল্লএখানে অসম্ভব শীত। এত ওভারকোট ইত্যাদি শীতবস্ত্র পরিধান করিয়াও শীতে শরীর যেন অবসন্ন হইয়া যাইতে লাগিল। শহরটা বেশ পরিষ্কার। এত পরিষ্কার শহর ভারতে দেখি নাই।শ্শ্
্ল্ল১৩ ডিসেম্বর প্রাতে জাপানের প্রথম পোর্ট ্লমোজিশ্ পৌঁছিলাম। আজ আমার বড়ই আনন্দ! কারণ জাপান রাজ্যে আসিয়াছি। এখানে ডাক্তার জাহাজের আরোহীদের পরীক্ষা করিলেন। আমরা নৌকা করে নেমে বেড়াতে গেলাম। জাপান দেখে বেশ আনন্দ হইল। … এখানে অনেক জাপানি আমাকে দেখে ব্যগ্র হয়ে দেখিতে লাগিল।শ্শ্ সেখান থেকে গেলেন কোবে। হোটেলে ছিলেন তাঁরা। সেখানে সাংবাদিকরা এলেন ছবি তুলতে আর সাক্ষাৎকার নিতে।শ্শ্ ইন্ডিয়ায় তাকেদা সানের এক জাপানি বন্ধু কারওয়াগুচি সান আমাদের বিবাহের পর কাশী হইতে যে পত্র লিখেছিলেন তাহা দেখান হইল। পত্রখানির মর্ম এই ্ল্লতুমি যাহাকে বিবাহ করিয়াছ তাঁহার পিতা অতি সৎলোক বলিয়া খ্যাত। অনেকের নিকট তাঁহার সুনাম শুনিতে পাই। এই সকল সুলোকের সহিত সর্ব্বদা সদ্ভাবে থাকিবে। আশা করি তুমি যুদ্ধে পশ্চাৎপদ হওয়ার ন্যায় জাপানিদের দুর্নাম করিবে না।শ্শ্
কোবে থেকে রওয়ানা হয়ে নাগোয়া। তাকেদার বাড়ির বা গ্রামের নামটি পাওয়া যায়নি। ওয়াতানাবের অনুমান, সেটি ্ল্লবর্তমান কোওনান শহরের অন্তর্গত অথবা তার পাশের্ব অবস্থিত।শ্শ্ রাস্তাটুকু 888sport slot game করেছিলেন ট্রেনে এবং হরিপ্রভার তা খুব ভালো লেগেছিল। কারণ সবকিছুই ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাছাড়া ্ল্লস্টেশনে মাঝে মাঝে সংবাদপত্র বিত্র্কি হয়। এখানে দৈনিক সংবাদপত্রের ছড়াছড়ি। ট্রেনে সকলের হাতে এক একখানি পত্রিকা। স্টেশনে ভাত ও চা, মিঠাই, দুধ ইত্যাদি বিক্রয় হয়। রাস্তায় চলিতে চলিতে ভাত খাওয়া বন্ধ হয় না। ছোট কাঠের বাক্সে করিয়া ভাত-তরকারি এক একটা খোপে রাখিয়া বিক্রয় করে। সঙ্গে ভাত খাওয়ার দুটি কাঠি ফিতা দিয়া বাঁধা থাকে। ১ বাক্সভাত চার আনা, আট আনা বিক্রয় করে।শ্শ্
হরিপ্রভা ও তাকেদাকে নিতে এসেছিলেন হরিপ্রভার দুই দেবর। ্ল্লআমরা নামিতে নামিতেই দেখি স্টেশন ক্রমে লোকারণ্য হইতেছে। সকলে ্লইন্দোজিনশ্ দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিয়াছে।শ্শ্ স্টেশন থেকে গ্রামের বাড়ি ছিল দূরে। সেখানেও ছিল প্রচুর ভিড়। হরিপ্রভা যতদিন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছিলেন ততদিন এই ভিড় লেগেই ছিল। এক সময়ে, ্ল্লএদেশী আহার আমার পক্ষে অরুচিকর বলিয়া আমার নিজের তরকারি প্রায়ই নিজে রান্না করিতে আরম্ভ করিলাম।শ্শ্
জাপানের বিভিন্ন শহর তাঁরা পরি888sport slot game করেছেন। হরিপ্রভা সেসব অঞ্চল বা শহরের বর্ণনা দিয়েছেন, মাঝে মাঝে যোগ করেছেন নিজের পর্যবেক্ষণ। যেমন – ্ল্লমেয়েদের পতি, বাড়ির আত্মীয়-স্বজন ও শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা পরম ধর্ম। ইহার কোনরূপ অন্যথা হইলে স্ত্রী অত্যন্ত লাঞ্ছিত হন। এমনকি শাশুড়ির অপছন্দ হইলে স্বামী অনায়াসে স্ত্রী পরিত্যাগ করিতে পারেন।শ্শ্ তবে ্লইন্দোজিনশ্ হরিপ্রভাকে তাঁর শাশুড়ি পছন্দ করেছিলেন। চার মাস পর ১২ এপ্রিল জাপান থেকে তাঁরা ভারতের দিকে রওয়ানা হন এবং ২৫ দিনে ভারত পৌঁছান। তাঁর শাশুড়ি, ননদ এসেছিলেন তাঁদের কোবে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। হরিপ্রভা সবশেষে লিখেছেন, ্ল্লবিদেশে এমন সরলস্বভাব, স্নেহপরায়ণা ্লশ্বশ্রু ঠাকুরাণীর মাশ্র মতো যতœ-ভালোবাসা পাইয়া ইহার সহিত বাস করিতে ইচ্ছে হয়, কিন্ত্ত সে সম্ভাবনা কোথায়?শ্শ্
হরিপ্রভা ও তাকেদা 888sport app পর্যন্ত ফিরে এসেছিলেন। কিন্ত্ত তারপর কী হয়েছিল সে-সম্পর্কে আর কোনো তথ্য কোথাও পাইনি।
হরিপ্রভার বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রার গুরুত্ব কী? তাঁর বই থেকে পৃথিবী না-দেখা, না-জানা এক সাধারণ বঙ্গমহিলার চোখে জাপান, জাপানি সমাজ সম্পর্কে জানতে পারি – যে জাপান ছিল ভারতবাসীর, বাঙালির তো বটেই, অজানা। রবীন্দ্রনাথের জাপান যাত্রী প্রকাশিত হবার পর জাপান সম্পর্কে সাধারণের জানার তৃষ্ঞাটা মেটে। ওয়াতানাবে একজন জাপানি। হরিপ্রভার বই পড়ে তিনি লিখেছেন, ্ল্লহরিপ্রভার লেখার মধ্যে এমন জিনিসের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা এখন কদাচিৎ চোখে পড়ে অথবা আদৌ দেখা যায় না। … কিন্ত্ত যেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় সেটা তাঁর লেখায় বর্ণিত তখনকার জাপানিদের মানসিকতা। … তাঁর অসাধারণ পর্যবেক্ষণশক্তি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।শ্শ্ আমার মনে হয়েছে জাপানি-সংস্কৃতির মৌল বিষয়গুলো তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যা তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাপান যাত্রী প্রকাশিত হওয়ার চার বছর আগে হরিপ্রভার গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। মনজুরুল হক লিখেছেন, ্ল্লসেদিক থেকে বাংলা ভাষায় রচিত জাপানসংক্রান্ত প্রথম পূর্ণাঙ্গ কোনো গ্রন্থের মর্যাদা একে অনায়াসে দেওয়া চলে। শুধু বাংলা ভাষাতেই নয়, চীন বা পূর্ব এশিয়ার বাইরে এশিয়ার অন্য কোনো ভাষায় এর আগে জাপানসংক্রান্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নে সন্দেহমুক্ত হতে হলেও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।শ্শ্ হরিপ্রভার বইয়ের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে তা ঠিক। কিন্ত্ত আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে তা হলো জীবন সম্পর্কে মফস্বল শহরের এক মহিলার দৃষ্টিভঙ্গি, যা এ শতকের যে-কোনো আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তুলনীয়। সেই অর্থে হরিপ্রভা তাকেদাকে 888sport app শহরের প্রথম আধুনিক মহিলা বলা কি খুব অযৌক্তিক হবে?


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.