সবলসিংহপুরের পুবদিক দিয়ে ছোট নদী মুণ্ডেশ্বরী বয়ে চলেছে। এপারে সবলসিংহপুর, ওপারে সরাসরি হরিশচক। আর উত্তরের শেষ দিকে পড়ে লতিফপুর। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর জায়গার নামে অনেক অদল-বদল ঘটে।
হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায় জায়গার নাম বদল করে। কোথাও আবার সংক্ষেপে লিখে। যেমন 888sport appsে নারায়ণগঞ্জ হলো এন.গঞ্জ। তেমনি আমাদের মুণ্ডেশ্বরীর ওপারে হরিশচকের উত্তরের গ্রাম লতিফপুর হয়ে গেছে নতিবপুর। এ এক মজার খেলা। মানুষের মনে বিদ্বেষ তাকে ছোট করে। মন বড় হলে আসে ভালোবাসা – মন হয় উদার। আমরা হাজার বছর
হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করেছি। বাংলার ইতিহাসে মুসলমান সাধকগণ তো ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এ-দেশে ইসলাম প্রচারে আসতে থাকেন। এঁরা হলেন – বাংলায় ইসলাম প্রচারকদের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হতো ওলিআল্লাহ। এই ধর্ম প্রচারকের আস্তানা হলো মাজার। যাঁরা আরব, তুরস্ক বা ইয়েমেন থেকে এসেছেন, তাঁদের কবরস্থান হয় ধর্মভীরু মানুষের দর্শনের জায়গা। যাকে বলে মাজার। এই মাজারকে পবিত্র পীঠ বা ধর্মীয় স্থান হিসেবে মানা হয়। আর এই পীরের মুরিদ বা সাগরেদ বা অনুসারীগণ বছরে দরগায় হুজুরের জন্ম বা মৃত্যু দিন পালন করেন, যাকে বলা হয় ওরস। ওরস এখন বার্ষিক 888sport sign up bonus পালনের দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমাদের হুগলিতে ফুরফুরা শরিফ খুব নামি মাজার। বর্তমান 888sport appsেও ফুরফুরা শরিফের অনেক মুরিদ বা শিষ্য বা ভাবশিষ্য আছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত সব ধরনের মানুষ। 888sport apkমনস্ক ব্যক্তিও আছেন, যাঁরা 888sport apkকে ধর্মের অতিলৌকিক জগতে-জালে ফেলতে চান না। ওই জায়গাটাকে বিশ্বাস ও ভালোবাসার জায়গা হিসেবে বিবেচিত করেন। প্রথম জীবনে নাস্তিকদের দেখা গেছে শেষ জীবনে আস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদীতে রূপান্তরিত হতে। 888sport apk অনেক জ্ঞান দেওয়ার পরও এত অজানা প্রশ্ন রয়ে গেছে যে, মানুষ অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে মরে।
রবি ঠাকুর পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটেছেন। বাংলা সংস্কৃতির একক ব্যক্তিক প্রভাবে সারা সংস্কৃতিজগতের প্রভাবকে আজ আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। বর্তমান বাঙালি-সংস্কৃতি মানে রবীন্দ্রসংস্কৃতি। এমন সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী মানব বাংলাকে সংস্কৃতি জগতের সবক্ষেত্রে বিচরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংকিং কোনো জায়গায় ছেদ পড়েনি। গ্রেট ব্রিটেনের জন আওয়েনের সমবায় (১৮২৪ খ্রি.) ধরে রবি ঠাকুর ও মুহাম্মদ ইউনূস বাংলার মাটিতে একই কায়দায় সংস্থা গড়েছেন। সমবায়ে মাইক্রো ক্রেডিটের বীজ প্রধান উপাদান। এ নিয়ে
বাদ-বিবাদের খুব বড় জায়গা নেই। নির্ভর ব্যক্তি-মানুষের ধরনের ওপর।
তো এবার আসি মুণ্ডেশ্বরী ও আজগুবিতলা নিয়ে। এই আজগুবিতলা সবলসিংহপুরের পুবদিকে মুণ্ডেশ্বরীতীরে একটি 888sport sign up bonusমন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আমি যে-সময়ের কথা বলছি তা বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকের কথা। তখনো ভারতবর্ষ অবিভক্ত। আমি জন্মগতভাবে অবিভক্ত ভারতের নাগরিক। আর এতে আমি গর্ববোধ করি। সময়ের চাকা আমাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করেছে। যদিও জুতা জাপানি হলেও ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি…। সত্যি বলতে কী, আমি রাজকাপুর ও তাঁর বংশধরদের প্রতি খুব প্রীতি অনুভব করি। আওয়ারা এখনো মনে হয় দশটি ভারতীয় live chat 888sportের মধ্যে জায়গা পাবে। মানুষ আর দেশের প্রতি ও বিশ্বমানবতার প্রতি এমন ভালোবাসা আর কারো মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ রায় বাঙালির ত্রিশের দশকের জীবনালেখ্য, মধ্যবিত্তের জীবনের টানাপোড়েন তুলে ধরেন। তাঁকে ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি বলাই ভালো। উচ্চমার্গের মানুষ। দেহাতি জীবনের রূপকার রাজকাপুর। দুই মেরুর মানুষ হলেও তাঁরা এক বিন্দুতে মিলিত … মানবতা, বিশ্ব-মানবতা। গাজা-ইসরায়েল-রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ সত্যি মানা যায় না। যুদ্ধ মানে শিশু-888sport promo code-অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জীবন কেড়ে নেওয়া। আর সংসারের একমাত্র রোজগেরে যুবকটির বলিদান।
হুগলির ফুরফুরা শরিফের মতো আমার মামাবাড়ি হাওড়া জেলায় সবচেয়ে নামি মাজার হলো হযরত আজনগাছি। বলতে গেলে এই আজনগাছি আর ফুরফুরা শরিফ প্রায় সমান্তরালভাবে নামি মাজার। যদিও আজনগাছি গুগল সার্চ দিলে মিলবে না। ফুরফুরা শরিফ পাওয়া যাবে। তারতম্য বোঝা ভার। যারা প্রতিপাদ্য সরবরাহ করে তাদের অজ্ঞতা বা পক্ষপাতিত্ব কারণ হতে পারে। এর একটি জ¦লন্ত উদাহরণ আমার চোখে পড়েছে।
প্রফেসর এ. এইচ. দানি উপমহাদেশের নামি ঐতিহাসিক। কাশ্মিরের অধিবাসী। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় আবার হিন্দু হয় কী করে, আমার মাথায় আসে না। অবশ্য এই উপমহাদেশে লেজেখেলানোর একটা ঐতিহ্য আছে। ভারতবাসী ভারতবাসী হলো না – হলো হিন্দু-মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মীয় দল। ফল যা ফলার তাই ফলেছে। ব্রিটিশ শাসকগণ ডিভাইড অ্যান্ড রুল এই নীতিকে সুচারুরূপে প্রয়োগ করতে পারে। ফলাফল ১৯৪৭-এ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান-হিন্দুস্থান। ত আর থ-এর প্রভেদ। এই বিভাগের জের এখন ডালপালা মেলে মহীরুহে পরিণত। গৃহবিবাদ, তিন দেশের বিবাদ রাজনীতির নিত্যনৈমিত্তিক খেলা। আজ যে ভাই, কাল সে শত্রু।
কুরু-পাণ্ডব হিন্দু-মুসলমান ছিল না। তবু কুরুক্ষেত্রের অবতারণা। একদিকে ১০০ ভাই মৃত। অন্যদিকে পাঁচভাই জীবিত। গল্পে মানানসই। এমনকি রবীন্দ্রপরিবারেও দেখি এক অংশ ব্রাহ্ম – আর এক অংশ ব্রাহ্মণ। প্রকৃতি প্রকৃতির মতো। আমাদের দৃষ্টিতে আজিব। মানুষ প্রকৃতিকে নিজের মতো করে সাজাতে চায়। বাধে বিরোধ। অলক্ষে। মানুষ নিজের সুবিধের জন্যে : কাটো গাছ, বাঁধো নদী, গড়ো অট্টালিকা … প্রকৃতি দিলো খরা, দিলো অতিবর্ষণ, ঢল, বন্যা … উষ্ণতা, মহামারি … করোনা, ডেঙ্গি … যুদ্ধ-হত্যা-আত্মহত্যা।
চলো তাড়াতাড়ি।
চড়ো গাড়ি।
সামনে গাড়ি …
পাশে গাড়ি …
পেছনে গাড়ি …
নগরপাল আনাড়ি।
প্রসঙ্গ অধ্যাপক এ. এইচ. দানি। তিনি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে ১৯৪৬ সালে ইতিহাসে গোল্ড-মেডালিস্ট। চাকরি অবধারিত। হলোও। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় নির্ধারিত নয়। অপেক্ষা … অপেক্ষা … অপেক্ষা … এসে গেল ১৯৪৭ সাল। ১৪-১৫ই আগস্ট ভারত বিভাগ। পাকিস্তানের জন্ম ১৪ই আগস্ট। ভারত ১৫ই আগস্ট। পাকিস্তান দুটি খণ্ড। পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিমে সিন্ধু, বেলুচ, সীমান্ত প্রদেশ ও পাঞ্জাবের অর্ধেক পশ্চিম পাঞ্জাব নিয়ে গঠিত হলো পাকিস্তান।
কাশ্মিরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিটি বেছে নিলেন পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান। শুভ্র চেহারার মানুষটিকে পূর্ব বাংলা মাথায় তুলে নিল। তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ও নিমতলী জাদুঘরের দায়িত্ব পেলেন।
১৯৬১ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁর পুস্তক প্রকাশ করল : মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল। একটি অনন্য গবেষণাকর্ম। আকর গ্রন্থ।
কিছুদিন আগে গুগল সার্চ দিয়ে দানি সাহেবের সব তথ্য পেলাম, শুধু একটি তথ্য বাদে। তা হলো, একটি আকর পুস্তকের নাম – মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল।
বলা বাহুল্য, তথ্য সরবরাহকারী নিশ্চয় একজন পাকিস্তানি হবেন এবং এই পুস্তকের নামটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিয়োগ করেছেন। এভাবে পৃথিবীকে কলুষিত করে চলেছে তথাকথিত জ্ঞানভাণ্ডার : গুগল।
অন্ধকার পেরিয়ে যাত্রার প্যান্ডেলে বসে আছি। শতরঞ্চি বিছানো। শরৎকাল। তাই তেমন একটা স্বস্তি নেই। কিছুটা গরম। তবে রাতে শিশির পড়ে। মধ্যরাতে গরমটা এখন কম। জীবনে প্রথম যাত্রা দেখা। অধীর আগ্রহে বসে। সময় কাটতে চায় না। যত দেরি হচ্ছে ততো ঢাক-ঢোল বাজছে উচ্চনিনাদে। আর সঙ্গে আছে হারমোনিয়াম। অনর্গল কসরত চালিয়ে যাচ্ছে বাজনদারগণ। আমাদের অধীর আগ্রহের পালা শেষ। যাত্রা শুরু হলো।
ঢাক-ঢোল আরো উচ্চনিনাদ। পালার নাম মনে নেই। তখনো ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনে। পালানোর জন্যে তোড়জোড় করছে। কিছুদিন আগে (১৯৪৬) হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধল সারা কলকাতা জুড়ে। বন্দে মাতরম আর আল্লাহু আকবরের লড়াই। বিষাদ সিন্ধুর কারবালার রণ। পালাটা কোনো বীরের দেশমাতৃকার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহ – ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে।
মঞ্চে রাজার প্রবেশ। মাথায় পাগড়ি। কোমরে তরবারি। বিশাল চেহারার রাজা। সারা শরীর চকমকে পোশাকে মোড়া। পেটটাও দশাসই। আছে লম্বা পাকানো গোঁফ। অনেকটা রাজপুত চেহারার। ভালো মানিয়েছে। পেছনে দুজন প্রহরী। তারাও প্রহরীমূলক সাজে সজ্জিত।
রাজা হাঁক দিলেন। হায়দরি হাঁক।
প্রহরী …
জি হুজুর … প্রহরী নিচু হয়ে কুর্নিশ করে।
মন্ত্রীকে ডাকো।
জি জনাব …
বুঝলাম এ কোনো মুসলমান জমিদার বা রাজা। রাজস্থানি নয়। বাংলার কোনো অঞ্চলের জমিদার।
রাজার তরবারি দেখে বোঝা যায় যে রাংতা মোড়া কাঠের তলোয়ার। বড় হয়ে কলকাতায় টিনের তলোয়ার নাটক দেখেছি। কেউ যদি কাঠের তলোয়ার নাটক লেখে – জমবে। নামের মধ্যেই একটা ব্যঙ্গ পাওয়া যাবে। উৎপল দত্তের অভিনয় দেখার মতো। নাট্যজগতে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল তারকা।
কলকাতায় যাত্রাপালা আর নাটক দুটিই সমান্তরালভাবে চলে। অনেকেই যাত্রায় নাম করে পরে আসেন নাটকে। যাত্রার অতিনাটকীয় ভঙ্গিটি বাদ দিয়ে।
যাত্রা মানেই অতিনাটকীয়তা। না হলে জমবে না। আর দেখতে হবে তো গ্রামে-গঞ্জে দর্শক কারা। কারা দেবে গাঁটের পয়সা।
যাক আমরা হরিশচকে ফিরে আসি। রাত তখন গভীর, প্রায় সাড়ে এগারোটা। ঢাকের নিনাদ না থাকলে ঝিঁঝিঁ আর উচচিংড়ের কলরবে কান পাতা দায় হতো।
মন্ত্রী এলেন।
রাজা কোনো একটি কাজের খোঁজ নিলেন। সেটা মন্ত্রীবাহাদুর সমাপ্ত করে উঠতে পারেননি। রাজা গম্ভীর।
কাজে অবহেলা। তা-ও খোদ মন্ত্রীর।
এমন সময় এক প্রহরী এসে মন্ত্রীকে কানে কানে কী যেন বলে গেল।
মন্ত্রীর মুখে হাসি।
হুজুর, কাজ হয়ে গেছে।
তাই!
এইমাত্র খবর দিয়ে গেল।
মন্ত্রী, পুরো ব্যাপারটা খোলাসা করুন।
হুজুর, ব্রহ্মপুত্রের ওপার থেকে গভীর রাতে ওরা আমাদের নীলফামারী তালুক দখল নেবে।
কি! এত বড়ো সাহস! রে পামর, রে নরাধম … আমার রাজ্যে হানা দেওয়া! দেখাচ্ছি মজা!
অপরপক্ষে কে আছে তা জানার আগেই আমি পেছনে চেয়ে দেখি ফনুচাচা নেই। বুকটা ধক্ করে ওঠে। কিসের পালা দেখা। আমার তখন পিলে চমকে গেছে, অত 888sport app-ঢোলের আওয়াজের মধ্যে কে শুনতে পাবে আমার ডাক। পাঁচ-ছ বছরের বালকের আক্কেল গুড়ুম। পেছনে গিয়ে একবার রোঁদ দিলাম চাচাকে পাওয়া যায় কি না। কোথাও খুঁজে পেলাম না। অগত্যা আমি চাচার খোঁজ ছেড়ে দিয়ে ঘরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
ধীরপায়ে প্যান্ডেল ছেড়ে ঘরের উদ্দেশে রওনা দিই। সামান্য এগোনোর পর আলো অদৃশ্য হয়ে গেল। এখন থেকে আঁধার সঙ্গী। কিছুটা হাঁটার পর কেমন একটা হালকা লাগল আঁধারটা। হয়তো তারার আলো। বা আঁধারে চোখ সয়ে নিয়েছে। খুব সাবধানে ধীরলয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে চলি।
খানিক পর কবরস্থানটা চোখে পড়ল। ভয়ের বদলে আমার মনে সাহস এলো। যাক রাস্তা ঠিক ধরেছি। কবরের ওপর সাদা জামাটা অন্ধকারে দুলছে। আমার মনে একটু ভয় আবার একটু সাহস … মরা মানুষ মরা … সে কার ক্ষতি করবে। ভয় তো জীবন্ত মানুষকে। সে শত্রু হতে পারে। তেমনি হতে পারে মিত্র। মনের নানা দ্বন্দ্ব খেলা করে চলে। একজন বালকের মনে কত কী অজানা চিন্তা খেলা করতে পারে। বয়স্কদের চিন্তা দিক ধরে চলে। বালক অসীম চিন্তার আধার। দুনিয়া সম্বন্ধে ধারণার পুঁজি বড় স্বল্প। তাই গণ্ডিটা নানাদিকে ধাবমান।
কবরস্থান ফেলে একটু গাছপালার কমতি পেলাম। পায়ে চলার বড় রাস্তাটা ঠিক পথ দেখাচ্ছে। আমি পা পা করে এগোচ্ছি। দিক্ভ্রান্ত নই। স্থিরচিত্ত। ঠিক নিশানায় এগোচ্ছি।
অদূরে দোতলা বাড়িটা আবছা দেখতে পাচ্ছি। মনে বল এলো। কিন্তু ভয় আর একদিকে দিয়ে উঁকি মারে। পাকা দেয়াল গাঁথা চৌহদ্দি মানুষের চেয়ে বেশি উঁচু। ঘরে প্রবেশের একটিমাত্র দ্বার। অন্য কোনো দিক দিয়ে টপকানোর উপায় নেই। যাক সেটা পরের কথা। আগে তো ফটকে পৌঁছাই।
যাক নির্বিঘ্নে ফটকে পৌঁছে গেলাম। বেশ শক্ত ফটক। দরজায় কড়া লাগানো। জোরে জোরে কড়া নাড়ি।
প্রায় পাঁচ মিনিট গেল কড়া নাড়া।
সব বিফল।
ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।
এবার মা বলে জোরে ডাক দিই। বেশ কয়েকবার ডাকলাম। বিফল। এবার ফুপু বা পিসির পালা।
গলা ফুলিয়ে ডাকছি : ফুপু … উ … আরো মিনিট পাঁচেক গেল। কোনো উত্তর নেই। মা আর ফুপুকে ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে কাঠ। আর জোর নেই। তাছাড়া ভেতরে জমছে রাগ ও অভিমান। চাচার ওপর। কেউ বাদ যাচ্ছে না। কিছু নিজের ওপরও।
হঠাৎ মনে হলো দরজার ফাঁক গলে একটা আলো এসে পড়েছে।
আর মানুষের কথাবার্তার আওয়াজও ভেসে এলো। ক্রমশ সেই আলো দরজার ওপারে এসে দাঁড়াল।
ভেতর থেকে 888sport promo codeকণ্ঠের ডাক : কে বাবা, ফজলু?
এটি আমার নানার দেওয়া নাম। বাবা এসব নাম পাল্টে দিয়েছেন। শুধু মা-খালারা এখনো তাঁদের বাবার দেওয়া নামকে সম্মান করে ঘরে ডাকেন।
ফুপু দু-তিনবার ডাকলেন। কোনো জবাব দিচ্ছি না। শুধু চোখ দিয়ে জল ঝরছে আর অভিমানে হেঁচকিও উঠছে।
ফুপুর পর মা ডাকতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি নীরব। শুধু কান্নার ফোঁপানির আওয়াজ মিলবে কেউ যদি কান খাড়া করে।
মা শেষে ফুপুকে বলে, বোন, তুমি দরজা খোলো।
না, না, কেউ আওয়াজ দিচ্ছে না, দরজা খোলা ঠিক হবে না। গভীর রাত …
মা মেহমান মানুষ, ফুপুকে মেনে চলেন। ফুপু আমার নাম ধরে আরো তিন-চারবার ডাকলেন।
আমার অভিমান আরো বাড়ছে। কোনো উত্তর দিচ্ছি না।
দু’পক্ষই চুপ।
একসময় মনে হলো মা আমার ফোঁপানির আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। তিনি ফুপুকে বললেন, বোন দরজা খোলো, তোমার ভাইপো ঠিক আছে।
তাহলে জবাব দিচ্ছে না কেন? আর সঙ্গে ফনু থাকলে তো জবাব দিত।
মা বললেন, বোন আমি তো আমার ছেলেকে চিনি, আমি বলছি তুমি দরজা খোলো।
ফুপু নিমরাজিমনে দরজা খুললেন, আর হারিকেনের আলো আমার চোখে-মুখে এসে পড়ল।
মা হাত ধরে টানলেন।
ফুপু বললেন, ফনু কোথায়?
আমি চাচাকে দেখতে না পেয়ে একাই ফিরে এসেছি। ভয়ে ভয়ে বলি। ফুপু বললেন, তুমি অপেক্ষা করতে।
আমি ভয় পেয়ে গেছি।
মা গজরাতে লাগলেন, বারবার ফনুকে বলেছি কখনো হাত ছাড়বে না। ছেলেকে একা বসিয়ে বন্ধুদের কাছে গেছে …
আমার মনে ছোটবেলার এ-ঘটনাটা বেশ গভীরভাবে গেঁথে আছে। আমার কাছে এ যেন শ্রীকান্তের রাতের বেলা শ্মশান-অভিযানের মতো। শ্রীকান্তকে বাংলা ভাষায় সবাই চেনে। অমর কথা888sport live chatী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী শ্রীকান্ত গ্রন্থে অমর দুর্দান্ত কিশোর চরিত্র শ্রীকান্ত।
শ্রীকান্ত ছিল খেটে খাওয়া মানুষের একজন। আর আমি পোষা পাখি। মধ্যবিত্তের সন্তান। বাবা-মা সারাজীবন আগলে রেখেছেন – কোনো দুরন্ত পাল্লায় যেন না পড়ি। সুবোধ বালক করে রাখা ছিল যাঁদের মূল লক্ষ্য। আর তাঁদের সাধনা ব্যর্থও হয়নি। সারাজীবন সুবোধ বালকই রয়ে গেলাম। না আছে উচ্চাশা। না আছে মানুষকে দেওয়ার মতো কোনো ক্ষমতা। রবীন্দ্রনাথ এই জন্যেই বলে গেছেন : … ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুঈন … তাহলে এখন হয়তো ‘হামাসের’ দলে যোগ দিতাম বা হতাম ‘হিজবুল্লাহ’। পররাজ্যগ্রাসী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকতাম। পীড়িতের পক্ষ নিতে পারতাম। আজ লেজ গুটিয়ে বসে আছি সম্রাট নিরোর মতো। বাঁশি বাজাচ্ছি … এদিকে রোম পুড়ছে।
আমার সবচেয়ে দুঃখ জীবনে প্রথম যাত্রাপালাটা দেখতে গেলাম, তা-ও পুরোটা দেখা হলো না। এমনি কপাল। আসলে জীবনকেই তো যাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়। একটি 888sport live chatধারায়। তাই জীবনের সঙ্গে 888sport live chatের সংযোগ অঙ্গাঙ্গি। জীবন আর 888sport live chat একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
পরদিন সকালে বা শেষ রাতে ফনুচাচাকে কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল এটা বেমালুম বিস্মৃত। কোনো কিছু মনে পড়ছে না। অনেক চেষ্টা করেও তা মনে করতে পারি না। কিন্তু এমন একটা ঘটনা তো কোনোভাবেই উবে যেতে পারে না। চাচা বকুনি খেলেন বা কী কৈফিয়ত দিয়েছিলেন কিছুই মনে পড়ছে না। আমি ফুপুর বাসায় ফিরেছি – ব্যস অধ্যায় সমাপ্ত। একেবারে যবনিকা পতন। যাত্রার বিসমিল্লাহতেই যে গলদ হলো তার প্রতিক্রিয়া কিছু মনে নেই। অথচ ১৯৭১ সালে পুরনো কলকাতার মানিকতলায় তৃপ্তি মিত্রের অভিনয়ের কথা মনে আছে। কাহিনি সমরেশ বসুর সওদাগর। কী অপূর্ব অভিনয়। ছোটখাটো মানুষটি – পাবনার মেয়ে এমন হৃদয়স্পর্শী অভিনয় করে গেলেন, দর্শক মুগ্ধ। নিজের কথা আর কী বলব। আমিও একজন দর্শক তো। মনে পড়ে টিনের তলোয়ার নাটকের কথা। উৎপল দত্তের অভিনয় লা জবাব। যেমন বহুরূপীর পাগলা ঘোড়াতে শাঁওলী মিত্র। বহুরূপী-পরিচালিত শম্ভু মিত্র আর এক নাট্য-দিকপাল। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রেশটের 888sport app download apk latest version তিন পয়সার পালাতে পর্দা ওঠার আগে প্রধান সব চরিত্র নৃত্যশৈলী মণ্ডিত হয়ে এক এক করে প্রবেশ করে। এর মধ্যে অজিতেশবাবুর নৃত্যভঙ্গি সবার মন কেড়ে নেয়। লম্বা-চওড়া যুবক অজিতেশ যেন ইউক্যালিপ্টাস বৃক্ষের মতো উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রবেশ করেন। তাঁর নৃত্যশৈলীটি এখনো আমার 888sport sign up bonusপটে ভাসছে। সেই ৫২-৫৩ বছর আগের কথা।
আমার বান্ধবী মন্দিরা নন্দী নৃত্য888sport live chatী। সে এই নৃত্যাংশটির ভূয়সী প্রশংসা করে। বলেই বসে, কি নাচ!
মন্দিরা নন্দী 888sport appর বিখ্যাত চিকিৎসক মন্মথনাথ নন্দীর কনিষ্ঠ কন্যা। বর্তমানে ড. মন্দিরা ভট্টাচার্য, দিল্লিবাসী।
নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপিকা ছিলেন।
যাত্রা বা পালাগান আমাদের বাংলা সংস্কৃতির একটি লোক888sport live chatধারা। এর সমান্তরাল আছে গাজীর পট। আর 888sport app সব পটচিত্র। বিশেষ করে মেদিনীপুরের পটচিত্র। যাত্রা একটি অপূর্ব 888sport live chatমাধ্যম। লোকজীবনকে এমন করে ফুটিয়ে তোলার আর জুড়ি নেই। এরই সমান্তরালভাবে গড়ে উঠেছে পুতুলনাচ। আর এক অপূর্ব লোকনাট্যধারা। দর্শক প্রচুর শিক্ষা ও বিনোদন লাভ করে। 888sport appsের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচের দল নামকরা।
সিনেমার অভিঘাতে গ্রামবাংলায় গড়ে ওঠে টিনের বাক্সে স্থিরচিত্রের প্রদর্শনী। তার সঙ্গে চিত্রের ঘটনার আনুষঙ্গিক বর্ণনা।
দেখ, দেখ আগ্রার তাজমহল দেখ …
ক্ষুদিরামের ফাঁসি দেখ …
এভাবে দৃশ্যান্তর ঘটে ও চলে ধারাবর্ণনা। শৈশব যাঁদের গ্রামে কেটেছে তাঁরা এর স্বাদ পেয়েছেন। মোবাইল আসাতে সব বিনোদন হয়ে গেছে এককেন্দ্রিক। সারা বিশ্বজগৎ এখন হাতের মুঠোয়।
রবীন্দ্রনাথের বাল্মিকী প্রতিভা, শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা এই 888sport live chatধারারই অনভিঘাত।
এমনকি রবীন্দ্র-নাটকে প্রচুর সংগীতের প্রভাব দেখা যায়, এই ধারার অন্তর্লীন সূত্র ধরে।
জসীমউদ্দীন এই ধারায় নির্মাণ করেন নক্সী কাঁথার মাঠ ও সোজনবাদিয়ার ঘাট।
কবি ওহীদুল আলম এই ধারার কাজ করেছেন।
মাইকেল মধুসূদনের নামও এই সঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে। এই রকম রাজকীয় মেজাজের প্রতিভাধর 888sport live chatী বাংলায় জুড়ি মেলা ভার।
ফনুচাচার কথা বলতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। এই হলো শিক্ষকদের চাকরিগত দোষ বা গুণ। সবাইকে শিক্ষা দিতে চায়। কিন্তু উচিত শিক্ষা দেওয়ার মুরোদ নেই। বর্তমান যুগে ছাত্ররা শিক্ষকদের উচিত শিক্ষা দিচ্ছে। অবশ্য ইতিহাস বলে, ভুল-ত্রুটি নিয়েই মানবজীবন। এমনকি আমরা যেসব দেবতা বা দেবদূতের কথা শুনি, তাদের জীবনেও অনেক ত্রুটি আছে। যেমন, ভগবান রাম প্রজাদের কথা শুনে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দেন। অথচ সীতা ছিলেন নির্দোষ। তাহলে রামচন্দ্র কেমন ভগবান? যিনি সত্যিটাই ধরতে পারলেন না? আসলে কাহিনির প্রয়োজনে এসব ঘটে। কাহিনির একটা কাঠামো আছে। কাহিনি চাচ্ছে এমন একটা ঘটনা ঘটে, কাহিনি-স্রোত বইতে থাকুক। কাহিনির প্রয়োজনে এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে মহাকাব্যে বা আজকের সিনেমার গল্পে। ‘শাহনামা’ মহাকাব্যে যুবক সোহরাব রুস্তমকে বাগে পেয়েও মারেনি। অথচ পারস্যের শ্রেষ্ঠ বীর রুস্তম সোহরাবকে হত্যা করল। এটা না ঘটলে কাহিনিটি চিরকালের 888sport app download for androidীয় কাহিনি হতে পারত না। কমেডির চেয়ে ট্র্যাজেডি মানুষের মনে দাগ কাটে হাজারগুণ বেশি।
মহাভারতে আমরা দেখি হাহাকারপূর্ণ কুরুক্ষেত্র। শত সন্তানহারা পিতা ধৃতরাষ্ট্র ও তাঁর স্ত্রী গান্ধারির আহাজারি। সমস্ত কুরুক্ষেত্র জুড়ে শোকপ্রবাহ নিয়ে অবস্থান করে। কুরুক্ষেত্র আজো বাংলা ও ভারতবর্ষে একটা প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন সম্রাট অশোক আপন ভাইদের হত্যা করে সিংহাসন লাভ করেছিলেন। কিন্তু সিংহাসনে শান্তি পাননি। দেশে-বিদেশে বুদ্ধের শান্তির বাণী প্রচারের জন্য নিজ সন্তানদের দেশ-বিদেশে পাঠান।
পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জোগাড় করি বাখারি মানে বাঁশের চলতা … তারপর চলতে থাকে কচুগাছ নিধন আর মুখে সেই বীররসযুক্ত হুঙ্কার … রে পামর … রে নরাধম … কচুগাছ কাটা পড়তে থাকে। বাখারির অস্ত্র বলে কাটে না। ডাঁটা ভেঙে লুটিয়ে পড়ে। আমার হুঙ্কার চলতেই থাকে। আর বেচারা, নিরীহ কচুগাছ কচুকাটা না হলেও ডাঁটাসমেত আহত হতে থাকে।
খানিক পর মা এসে নিবৃত্ত করে। পরদিন আমরা হরিশচক ছেড়ে রওনা দিই সবলসিংহপুর অভিমুখে।
মুণ্ডেশ্বরী তেমনি শীর্ণ। বালিতে পা ডুবে যাওয়া। স্বচ্ছ জলধারা পায়ের ওপর দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে। তার শিহরণ খুব আনন্দ দেয়। মনে হয় এমনি করে দাঁড়িয়ে থাকি।
এই বালিভরা নদীতটে দু-একটা ভোলামাছ দেখতে পাই। ভোলামাছকে পূর্ববাংলায় বলে বেলেমাছ। যথার্থ। বালিময় জায়গায় এরা বসবাস করে। পূর্ববাংলায় চলতি কথায় বলে : বাইল্যা। এটা আধা তৎসম শব্দ। যেমন জাউল্যা থেকে জাইল্যা … সবশেষে জেলে। মৎস্য পাকড়াও করা যাদের জীবিকা। তেমনি সম্ভবত এর মৌলিক সংস্কৃত নাম ছিল বাউল্যা থেকে বাইল্যা – আর বাইল্যা থেকে বেলেমাছ।
পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় পূর্ববঙ্গ বা 888sport apps অঞ্চলে তৎসম ও অর্ধতৎসম শব্দ বেশি ব্যবহার হয়। এসব নিয়ে এদেশে তেমন কোনো গবেষণাকর্ম হয়নি। এক্ষেত্রে ফোনেটিক্স বা ধ্বনিতত্ত্ব প্রধান হাতিয়ার। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পরলোকগত অধ্যাপক আবদুল হাই এই ব্যাপারে ধ্বনিতত্ত্ব নামে একটি আকর কাজ করেছেন। লন্ডনে উচ্চশিক্ষা লাভ করার পর। বড় পরিতাপের বিষয় – ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। তরুণ অধ্যাপকদের অবহেলা ও অসহযোগিতার কারণে রেলগাড়ির তলায় পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। এই ট্র্যাজেডি আজো আমাকে খুব পীড়িত করে।
হরিশচক থেকে ফিরেও আমার বীররসচর্চা আরো বেশ কিছুদিন চলেছিল। বাখারির তরবারি দিয়ে কচুগাছ নিধন ও হুঙ্কার : রে পামর … রে নরাধম তোর হলো এই শাস্তি।
বাল্যকালের খেলার ধরন দ্রুত পরিত্যক্ত হয়। অচিরে কচুগাছ নিধন বন্ধ হয়ে গেল। এবার শুরু হলো ফনুচাচার সহকারী হিসেবে ভোলামাছ ধরার চেষ্টা।
নতুন পুকুর তেমন সুবিধের নয়। কারণ পাড় খাড়া। তাছাড়া পুকুরে বালি নেই। কাদা। চারদিকে গাছ বলে পাতা পড়ে পচে আর কাদা বাড়তে থাকে। এমনকি গরমকালে দেখেছি সকালের দিকে মাছ সব খাবি খাচ্ছে। অর্থাৎ পুকুরের জলে অক্সিজেনের অভাব। ক্ষুদি ক্ষুদি পানাও আছে। এরা পুকুর জুড়ে রাজত্ব করে। মরে গেলে জলে কিছুটা গন্ধও হয়। শীতকালে পুকুরের জলের ওপরদিকে একটা গোলাপি আস্তরণ পড়ে। মনে হয় যেন প্লাস্টিকের পর্দা মোড়ানো। এই জলেই চলে মহিলাদের স্নান ও থালা-বাটি মাজা। আমরা পুরুষরা যেতাম পাশে কাজী খিলাফত হোসেনের দিঘিতে। খুব সুন্দর দিঘি। চারদিকে মোটা বাঁধ। বাঁধানো ঘাট উত্তর দিকে। জল ঘোলা নয়। স্বচ্ছ। ছোট ছোট খুদি শালুক আছে। আছে 888sport app জলজ গুল্ম। গায়ে কাঁটার মতো পাতা। ওর ভিতর যাওয়া যায় না। গা চুলকায়। আমরা এই দিঘিতে যেতাম বড়দাদা বা দাদার সঙ্গে। তাঁরা আমাদের নাভিতে ও নাকে-কানে সর্ষের তেল আঙুলে নিয়ে বুলিয়ে দিতেন যাতে জল ঢুকে না যায়। আমরা তখন তিন ভাই। দুপুরবেলা বড়দাদা বা দাদারা দুই ভাই একসঙ্গে হলে পাঁচজন। বাড়িতে পাঁচজন পুরুষ মানে এক ব্যাটালিয়ন। দাদারা খুব খুশি তাদের লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি হচ্ছে বলে। আগেকার দিনে জন888sport free bet মানে পুরুষের জন888sport free bet, সংসারে বেশি মানে শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ। মেয়েদের তেমন করে ধরা হতো না। বরং আপদ মনে করত। পালতে হবে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত। বিয়ে দিয়েই কি শান্তি! ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না, শাশুড়ি-ননদ জ্বালাচ্ছে এসব নিয়ে মহিলা মহলে থাকত দুশ্চিন্তা – আমার পিসি বা ফুপুর বিয়ে আমাদের গ্রামে। দুটো পাড়া পরে। নাম পুবপাড়া। পাকা দোতলা বাড়ি। পিসান বা ফুপাকে প্রায়ই দেখতাম খাকি রঙের হাফশার্ট পরে থাকতে, যাতে দুটো পকেট ছিল। হাফপ্যান্টও পরতেন একই রঙের। মনে হয় কোনো প্রতিরক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। নাম শেখ নজর আলী। জানাই হয়নি তাঁর পেশা কী ছিল। আমার ফুপাতো ভাই একজন – নাম শেখ আনসার আলী। ছোট বোন ছিল বেশ নাদুস-নুদুস – নাম শামসুন নাহার। দুজনেরই বাবাঘেঁষা রং – অর্থাৎ গাঢ় শ্যামলা। আনসার ভাইয়ের ডাকনাম আনসু। একটা ঘটনা মনে পড়ছে আনসু ভাইকে নিয়ে। আমাকে কাঁধে নিয়ে আনসু ভাই চলেছে। আমার খুব মজা। হঠাৎ পেছন থেকে আমার মেজভাই দুষ্টুমি করে দেয় ধাক্কা। আমি পড়লাম আনসু ভাইয়ের কাঁধ থেকে। তবে ভাগ্য ভালো। হাত দুটো আগে পড়ায় কোনো বিপদ ঘটেনি; কিন্তু বেচারা আনসু ভাইয়ের ডান হাত গেল ভেঙে।
চলল আবার ছোটাছুটি। ব্যান্ডেজ করতে হলো। হাত কাঁধের সঙ্গে বাঁধা ফিতেয় ঝুলানো। প্রায় মাসখানেক লাগে হাত ঠিক হতে।
সবটাই হলো খেলার ছলে। আর মেজভাই এতো ছোট ছিল যে, মা-ও তাকে বেশি বকতে পারেনি, কারণ পাশে ছিলেন পিসি। তিনি সব মেনে নিয়ে ফয়সালা করে নেন।
আমার পিসি ছিলেন খুব মিষ্টি স্বভাবের মানুষ। আমাদের বড় বেশি আদর করতেন। বড়ভাইয়ের সন্তান। বংশধর সব। চারদিকে বাঁশগাছ তার মধ্যে আমরাও পরপর চার ভাই জন্মাই। ফলে বাঁশঝাড় আরো পাকাপোক্ত হয়ে উঠল।
গ্রামবাংলায় ছেলেদের খুব কদর। মেয়ে হলে মুখ কালো। এটা এখনো আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, মেয়েরা সংসারে ফুলের মতো। তাদের চলাফেরা … ঘুরে বেড়ানো প্রজাপতির মতো লাগে। আর একটা ব্যাপার আছে। মেয়েরা জন্মগ্রহণ করা বাপের বাড়ি কখনো ভুলতে পারে না। তারা মা-বাবার যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। ছেলেরা এ-ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। ইউরোপ-আমেরিকার কথা আলাদা। তাদের ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদ সবকিছুর ওপরে। তাই ছেলেদের দায়িত্ব বর্তায় না বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মা-বাবার ভার নেওয়ার ব্যাপারে।
দেশভাগের পর ওদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। ফুপু আমিনা বেগম মারা গেছেন। মারা গেছে বোন শামসুন নাহারও। আনসার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ এখনো পাইনি। জানি না বেঁচে আছেন কি না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.